আদি হতে আজ অবধি পৃথিবীর সন্তান তুমি
জন্ম নিয়েছো প্রতিনিয়ত মানবশিশুরূপেই, অথচ
মানুষের পরিচয় কখনো জোটে নি তোমার।
পুরাণের নীলকণ্ঠেশ্বর যেমন শুষে নেয় বিষ
তুমি গায়ে মাখো সমাজের বিষাক্ত পুঁজ, আজন্ম বিষাদে।

যতনামেই ডাকি তোমায় সবখানেই অবজ্ঞা অস্তিত্বের।
এ সমাজ ততবার হয়ে ওঠে কুলাঙ্গার পিতার মত
আপন অন্যায় মুছে দেওয়ার চেষ্টায়
যে অস্বীকার করে যায় আপন সন্তান!
তবুও ধরনীমাতা এতটুকু দ্বিধাগ্রস্থ নয় তোমার প্রসবে।
চেতনার বীর্যধারীদের মুখে তুমি শোভা পাও কাকের ন্যায়
যার অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না লোক দেখানো পাখিপ্রেমিক হিসেবে
অথচ উচ্ছিষ্ট ব্যতীত অন্য কিছুই তোমার জন্য সুপারিশযোগ্য নয়।

লিঙ্গ পরিচয়ে তুমি অন্যের দ্বারস্থ অস্তিত্বের অপরাধে
শব্দরাজিতে তোমার খোঁজ মেলে বঞ্চনা আর অচ্ছুৎ ভ্রুকুটিতে
হিজড়া অকুয়া জেনানা অথবা বৃহন্নলা
পরিচয় পর্ব শেষে অপমানিত শব্দরা স্তব্ধ হয়ে যায় সৃষ্টির বেদনায়।
তোমার জন্য রাষ্ট্র অথবা সংঘ
দর্শণ অর্থনীতি সমাজনীতি ও বিজ্ঞান
অথবা সাধের সংস্কৃতি আর স্বপ্নের সাম্যবাদ
কোথাও দেখিনা এতটুকু ভিন্ন ইতিহাসের আখ্যান!
সর্বত্রই একক ও অপরিবর্তনীয় তুমি মিথ্যা ঈশ্বরের মতন।

পুঁজির মালিকের চেয়ে যে বেশ্যার দালাল উত্তম
সে তো জেনেছি বহুকাল আগেই, অথচ
উদ্বৃত্ত শ্রমের মূল্য নিয়ে নিত্য হাহাকার যে ঘরে
সেখানেও কী ভীষণ নীরবতা তোমাকে নিয়ে।
অস্পৃশ্য তোমার কোথাও আছে কী শ্রমের অধিকার?

অথর্ব আমি এইসব দেখে চিনি সীমাবদ্ধতার সূত্র
বুঝি, দ্রোহে আর বিপ্লবের তুমিও অংশীদার।
একদিন তুমিও জেগে উঠবে ফুজিয়ামার মত, পাবে অংশীদারিত্ব
সম্মানের শিল্প-সাহিত্য-সমাজচেতনায়, নিশ্চিত একদিন; আপাতত
মুছে যাক গ্লানির পরিচয়, সীমারেখা টানা শত শব্দময় অভিধান
পৃথিবীর সন্তান তুমি, তাই নাম দিলাম ‘পৃতান’।