হিকমত সাহেব রাগ করে বেরিয়ে গেল- ছদ্মরাগ। তার বেরিয়ে যাওয়াটা যেন এক ঢিলে দুই পাখী মারা। লাঞ্চের সময় হয়েছে, অফিস ছেড়ে এমনি বেরোতে হতো তাকে- না হয় দু-চার মিনিট আগেই বেরুল সে। তাতে নিজের বিরক্তিটাও দেখানো হলো সবাইকে, আবার বিরতিও নেওয়া হলো। সহকর্মী বলে নয়, লোকগুলো কেমন জানি। সময় নেই অসময় নেই সুযোগ পেলেই হলো, রস করতে একমুহুর্ত দেরী করে না। তাকে নিয়ে এত রসিকতা করার কি আছে? সে কি ভাড়, না আধুনিক যোকার? প্রায়ই এমন করে ওরা। সপ্তাহে পাঁচদিনের চারদিন হিকমত সাহেবকে নিয়ে রস না করলে ওদের পেটের ভাত যেন সেদ্ধ হয় না। বিয়ে করার পর থেকেই যেন ওদের হাস্য-কৌতুকে বাতাস লেগেছে- সুড়সুড়ীর বাতাস। বিয়ে কি মানুষ করে না? বউকে ভালবাসে না কে? কারও দোষ হয়না, দোষ হয় হিকমতের। বুঝতে পারে না হিকমত, শত চেষ্টায়ও কোন কারণ খুজে পায়না- লোকগুলোর এত মজার উৎসটা কি? এক সময় ভাবনায় ভঙ্গ দেয়। আগে বেরিয়ে এসে ভালই করেছে। কি আর করা। ওদের মজা করায় বাধ সাধা তার সাধ্যের বাইরে। এখন সব অভ্যেস হয়ে গেছে। একটু খারাপতো লাগবেই। তবে কলিগরা যে তাকে ইর্ষা করে এইটা সে বুঝেছে। করবে নাই বা কেন? তার মতন অমন সুন্দরী, শিক্ষিত বউ কারও ভাগ্যে জুটেছে কোন কালে? এসব ভেবে মনে মনে একটু খুশিই হয় হিকমত।
হিকমত সাহেব ছোটপদের প্রকৌশলী। দুর্জনেরা বলে মেট্রিক পাশ। কথাটা কানে কানে ঘুরে তার কানেও আসে। তখন দমে যায় মন। বউও মাঝে মধ্যে ইঙ্গিত দেয় সে সবের। বউয়ের ঠান্ডা কথায়ও ঝাল থাকে দেদার। তার ধাক্কায় প্রতিজ্ঞা নেয় হিকমত পুরাপুরি প্রকৌশলী তাকে হতেই হবে। বিনা বেতনে বছর তিনেক ছুটি নিয়ে মালকোঁচা মেরে পড়াশুনায় নামতে হবে। কিন্তু দু-চার দিন যেতে না যেতেই চুপসে যায় ফুটো বেলুনের মত সব প্রতিজ্ঞা। সংসার বলতে হিকমতের ঐ টুকুনই- একটা ছোট ছেলে, আর বউ। খুব বড় কোন বোঝা নেই ঘাড়ে। তারপরেও বউএর দেখভাল, চাকরী-বেতন-সঞ্চয়, উপরিপাওনা সব কিছু রেখে কেমন করে আবার পড়ার বেঞ্চিতে গিয়ে বসবে? মন চায় না ভেতর থেকে। মন না চাইলেও সেভাবেই সে এগুচ্ছে। সেই মতই হিকমত আই, এ থেকে এম.এ পাশ করিয়েছে বউকে। সাধ্য সাধনায় চাকরীও একটা যোগাড় করে দিয়েছে। বউ-এর চাকরীতে, পড়াশুনায় যাতে মেহনতের কিছুটা কমতি হয় তার জন্যে ঘরকন্যা আর নিজের চাকরীটা একসাথেই সামলিয়েছে সে। বউগত প্রান হিকমতের। বউ তার বিদুষী- মহাবিদুষী। কজনের ভাগ্য হয় এমনতর? কোন চাহিদা কি অপূর্ণ রেখেছে সে তার বউ এর? তারপরেও বউ খোটা দেয়, সুযোগ পেলেই খোটা দেয়, “তুমি আমার জন্য কিছুই করনি। মানুষ কত কি ক রে”!
বউয়ের কথায় কিছু মনে নেয় না হিকমত। মনে মনে ভাবে হয়তো বউ তার ভুল কিছু বলেনি। কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি লাগবে তোমার, আমারে কইবা তো”।
-কি বলতে হবে, তুমি দেখ না? আমার কোন ব্যাংক একাউন্ট নেই, বাড়ী নেই, ঘর নেই।
বউয়ের শরীরে হতাশা উথলে উঠে। তাতে হিকমতের মন নির্ভেজাল ব্যথায় ভরে যায়। তাইতো, কি করেছে সে এত দিন? এসব হিসাব তো তার এতদিন একবারও মনে আসেনি। এরপর আর কোন কিছু বলতে হয়নি তাকে। বউয়ে নামে ব্যাংকে স্থায়ী আমানত করেছে, জমি কিনেছে, আরও কতকি! বউ তার বিদুষী। তার মুখে কি নাই নাই শব্দ শোভা পায়?
হিকমত সাহেব কাজে কামে ভাল। ডিপার্টমেন্টে তার সুনাম আছে। উপর-অলাদের তোয়াজে, তোষামোদে মানিয়ে চলার কলাটা তার রপ্ত আছে। সময় হলেই কাজে লাগায় সেসব। তবে কাজের সময় একমনে কাজ করা তার স্বভাব। অফিস ঘরটা তার বেশ বড়। সেখানে পাচ ছয় জনের বসার ব্যাবস্থা আছে। চেয়ার টেবিলে বসে যে যার মত কাজ করছে। রূলার, পেন্সিল নিয়ে আঁকজোক করছে কি যেন। হিকমত সাহেবও ব্যস্ত- নিশ্চুপ ডুবে আছে কাজে। দুপুর পড়ে গেছে। হল ঘরটার ভেতরে একসাথে অনেকগুলো পাখা ঘুরছে। বাইরে টাটানো রোদ্দুর। এ সময়টায় সবাই চুপচাপ কাজ করে। হাত কয়েক দুরে নিজের আসনে বসে জুলফিকার সাহেব বলে উঠলেন, “কি ব্যাপার হিকমত সাহেব, বউকে নাকি গান শেখাচ্ছেন”? অপরিসর আবাসিক কলোনীর বাসিন্দাদের ভেতরে কারও উত্থান বা পতনের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে- লুকানো যায় কচিৎ। সেই মত জুলফিকার সাহেবও কলোনীর সব খবর রাখে।
-গান শেখাতো প্রায় শ্যাষ। নামকরা ওস্তাদের কাছে শিখতাছে। ওর গানের গলা খুব ভাল। আগামী সপ্তাহে বেতারে অডিশান দেবে। আমার মনে হয় টিকে যাবে। রেডিওতে গান প্রচার হইলে সব শুনতে পাইবেন। কিন্তু আপনি এসব জানলেন ক্যামনে, জুলফিকার সাব?
হিকমত আজকাল আর তেমন প্রসঙ্গ না উঠলে বৌয়ের গুনপনার কথা চাউর করে বেড়ায় না। মানুষ জনের চোখ টাটায়, হিংসে করে। সেজন্য তারা সুযোগ বুঝে খোঁচা মারে। এসব ভাল লাগে না তার। তারপরেও সবাই যখন জেনে গেছে জানুক। যখন বড় শিল্পি হয়ে বেরিয়ে আসবে তখন কোথাকার খোঁচা কোথায় যাবে! ভবিষ্যত সাফল্যের উজ্জল আলোতে হিকমত সাহেবের মুখটা সহসা যেন আলোকিত হয়ে উঠে। হিকমতের প্রশ্নের উত্তরে শুধু উপরে নীচে মাথাটারে নাড়ে জুলফিকার সাহেব- আর্থাৎ জানে জানে, সে সব জানে।
অন্য আরেক টেবিল থেকে আকমল সাহেব শব্দ করে কাঁশার থালার মতন বেজে ওঠে, “আপনাকেতো অত কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি। শুধু প্রশ্ন করা হয়েছে ভাবীকে গানের তালিম দিচ্ছেন কিনা। ভাই আমাদেরও তো বউ আছে! ঐ বিয়ের প্রথম বছরই একটু রাগ রাগিনী বাজে। তারপর সব শেষ। আপনার দেখি সাত বছরেও শেষ হ’ল না”।
আকমল সাহেবের খোঁচামারা রসের তীর এসে হিকমতের শরীরে বেঁধে। মনটা একটুখানি কুকড়ে যায়। যুৎসই একটা কোন জবাব দিতে পারলে মনটা চাঙ্গা হতো।
-ক্যান, আমি মাইপা মাইপা কথা কমু ক্যান। আমি কি ঘটি নাকি যে, সব মাইপা করতে হইবো!
হিকমতের কথায় কাজ হয়। এই অফিস ঘরটার ভেতরে একমাত্র আকমল সাহেবই পৈত্রিক সূত্রে ওপার-বাংলার সাথে সম্পর্কিত। কিছুটা দমে গেল আকমল সাহেব। খোঁচামারা হিকমতের খাছলত না, তারপরেও মারতে হলো। সত্যিতো, খোঁচা মেরে মনটা তার একটু চাঙ্গা হয়ে উঠলো যেন।
পৃথিবী বদলায়। সেই সাথে সাথে মানুষও পাল্টে যায়। এটাকে যারা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না তারা কষ্ট পায়। তবে মানুষ ইচ্ছে করলে তার বদলে যাওয়ার গতিটাকে সহ্যের সীমার ভেতরে রাখতে পারে। এমন একটা ইচ্ছের বেজায় ঘাটতি আছে হিকমতের। সেটা সে বোঝে না- বুঝতে চায়ও না, তাই কষ্ট পায় সে এবং ভবিষ্যতেও অনেক কষ্ট তার হয়তো পেতে হবে। হিকমতের চোখের সামনে দিয়ে তার বউ একটু একটু করে অনেকখানি বদলে গেছে। বদলে যাবার কারনটা ধরতে না পারলেও ফলাফলের যন্ত্রনাটা ঠিকই শরীরে, মনে ধরে সে। খুব কাছে থাকলেই মনের সব খবর পাওয়া যায় না, এটা যেমন সত্যি- আবার দূরে থাকলে মন চলে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে, এটাও তেমন সত্য নয়। আটপৌরে মন হিকমতের। ঘরের বউয়ের অত বেশী ভক্ত দেখতে অভ্যস্ত না সে। অন্যের মুখে অত প্রশংসা শুনেও তার কাজ নেই। ভক্তেরাও কেমন জানি। কি এক নিষিদ্ধ গন্ধম খোজে তারা তার ধর্মপত্নির ভেতরে। এ গন্ধম তো তার একার, কারও কোন অধিকার নেই তাতে। অথচ কি আশ্চর্য্য, তার অত বিদুষি বউ ভক্তদের ডাকে সাড়া দেয়! তার ডাক উপেক্ষা করে! শিক্ষা-দীক্ষা, পেশা আর গান নিয়ে দাড়িপাল্লার একপাশে বসে বউ, আরেকপাশে হিকমত। অবাক হয়ে দেখে সে, ভারে ভারে একেবারে মাটিতে ঠেকেছে তার বউ আর সে উঠেছে শূন্যে। দুনিয়াটা বড়ই বাস্তব। সব বুঝলেও দেরী হয়ে যায় অনেক তার। তবে একবারও মনেমনে ভাবে না হেকমত- বউকে তার অত বেশী ভারী বানালো কে?
সম্পর্কের বারোটা বাজে হিকমতের। পথে ফেরাতে হাত তোলে বিদুষী বউয়ের শরীরে। ফলাফল যা হবার তাই হলো- সংসার ভেঙ্গে অনেকগুলো টুকরো হয়ে যায়। সব হারায় হিকমত- ছেলে, আমানত, জমি, সম্মান- কান্ডজ্ঞানও বেশ কিছুটা হারিয়ে ফেলে। এও কি সম্ভব! এই তো সেদিনও তো ছিল সে- সেই মুখ সেই হাসি সেই অস্তিত্ব নিয়ে প্রতি সকালে যার দেখা মিলতো জীবনের খুব কাছাকাছি। এ কি তবে অন্য এক ধরনের মৃত্যু? কোন কিছু তেমন ভাবে আর ধরতে না পেরে হিকমত ঝুলে থাকে সম্ভব অসম্ভবের ঠিক মাঝখানে। আসলে সে এখন কিছুটা উন্মাদ- সামাজিক উন্মাদ। খাওয়া, পরা, পেশা- সব ঠিক, শুধু একটা অঙ্গ খোড়া। কোন অঙ্গ সেটা? সেটা আক্কেলই হবে হয়তো। আর তাই বিস্ময়ে হা হয়ে যায় সতীর্থতা। হিকমতের মুখে বউয়ের আবারও প্রশংসা শুনে সবাই বলে- ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধানই ভানে। মানুষের কথায় কিচ্ছু যায় আসেনা হিকমতের। তার বিশ্বাস- সব দোষ মানুষের, চাটুকারদের। তা না হলে তার অমন বিদুষী বউ এর এমন হয়! বউ তার দ্বিতীয় সংসার পাতলো সেচ্ছায় সজ্ঞানে- একথা বিশ্বাস করতে তার মন চায় না। ছেলের জন্য, বউয়ের জন্য তার মন কাঁদে, চোখ কাঁদে বিরামহীন, কিন্ত সে কাঁন্দন কেউ দেখতে পায় না। কাউকে দেখানো সম্ভব না তা। আর তাই হারানো পরিবারের সুখ-দুঃখের খোজ নিতে লোক লাগিয়ে রাখে হিকমত। তারা খবর এনে দেয় তাকে, “তোমার বউয়ের কিন্তু আরেকটা ছেলে হয়েছে”।
ছোট্ট অপরিসর কলোনীতে এসব উত্থান পতনের খবর চাউর হতে বেশী সময় লাগে না। কিন্তু কেউ মুখ ফুটে কোন কথা জিজ্ঞেস করেনা হিকমতের কাছে, শুধু কেমন অদ্ভুত চোখে তাকায়। কেউ কিছু না বললেও সে তো মুখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। তাকে বলতেই হবে। কারণ সে হচ্ছে ঢেঁকি- এক অদ্ভুত ঢেঁকি। অফিস ঘরটা ইদানিং বড্ড বেশী নিরব, নিশ্চুপ থাকে। মানুষগুলোর হয়েছে টা কি? যা কিছু মজার কথা একা হিকমতই বলে। কারণে অকারণে প্রসঙ্গ ছাড়া মনটাকে খুলে ধরে অফিস ঘরে সবার সামনে হাট করে, “আমি আমার ঘরের দরজা খুইলা রাখছি ওর জন্য। একটা কেন, যতখুশি বাচ্চা নিয়া আমার কাছে আসার উপায় আছে ওর। আমি সবতেই রাজী”। হিকমতের মনের এসব তাবৎ কথা এই ঘরে সবার জন্য। হলে কি হবে? কেউ কোন কথা উল্টে জিজ্ঞেস করেনা। প্রসঙ্গটার আশপাশ দিয়ে হেটেও যায় না কেউ সরাসরি। হয়েছে কি লোকগুলার? ওরা কি শুধু কাজের কথাই জানে? আগের মত মজা করা কি ভুলে গেছে লোকগুলো? কোন প্রশ্নের উত্তর আসেনা হিকমতের মাথার ভেতরে। নীরবতার ভারী কালো পাথর বুকে পিঠে চাপিয়ে আর কত বাচা যায়! বাঁচার মত বাঁচতে হলে শব্দ তুলতে হয়, আওয়াজ দিতে হয়। সেই কারনেই তো হিকমতের মাথার ভেতরে মস্ত ঢেঁকিটায় পারানী পড়ে। সেই পারানী তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে শব্দ হয়ে। শব্দে শব্দে বিদুষী বৌয়ের প্রশংসা ছড়িয়ে দেয় আকাশে, বাতাসে। আওয়াজ তাকে দিতেই হবে। কারন সে একটা ঢেঁকি- অদ্ভুত ঢেঁকি, অভ্যাস বশে- যে ঢেঁকিতে পারানী পড়ে বিরামহীন বোকামী আর নির্বুদ্ধিতায়, হয়তো অবোধ ভালবাসায়ও।
আপনার গল্পগুলো পড়লে মন খুব ভারাক্রান্ত হয়। নিজের অনিচ্ছায় কাঁদি। ভাবনার খোরাকও পাই। খুব ভাল হয়েছে গল্পটা। মাঝে মাঝে হাসির গল্প লিখলে খুশি হবো। (W)
@রওনক আরা,
হাসতে হাসতে ভাবা, কাঁদতে কাঁদতে ভাবা দুটোই দরকার। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটা অনেক ভালো লাগলো। লেখককে অনেক ধন্যবাদ…. (F)
@বাইশে শ্রাবণ,
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ভাল লেগেছে জেনে অনুপ্রানিত হয়েছি।
:thanks:
অসাধারণ! আমার ভাল লেগেছে।
@অনিরুদ্ধ,
মনে হলো অনেক যত্ন নিয়ে পড়েছেন। খুব গুরুত্বপুর্ন একটা কোট করেছেন। তীব্র ভালবাসার টান আসলে কোন যুক্তি-তর্কের আশপাশ দিয়ে যায় না- এই জিনিসটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভাল লেগেছে জেনে উৎসাহ বোধ করছি। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
হিকমতের চরিত্র চিত্রণ ভালো লাগল।
@গীতা দাস,
ভাল লেগেছে জেনে লেখার একটা অর্থ খুজে পেলাম। আমাদের চারপাশে এমন অনেক চরিত্র পাওয়া যাবে খুজলে। সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভালোবাসার সঙজ্ঞা বোধ করি কারো পক্ষেই আয়ত্ব করা সম্ভব নয়, একটি নিরবচ্ছিন্ন নিটোল বোধের নাম-ই ভালোবাসা; চিরন্তন মায়ার ব্যালকনিতে যার বাস।
চমৎকার লাগলো গল্পটি।
@শনিবারের চিঠি,
ভালবাসা একটা অপ্রকাশযোগ্য ব্যাখ্যাতীত অনুভুতি। একটা চরিত্রের মাধ্যমে সেটাকে আমার সাধ্যে যতটুকু কুলায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। তবে আমার মনে হয়েছে আমি ততো বেশী কিছু প্রকাশ করতে পারিনি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
কাহিনী খুবই সাধারন আটপৌরে হলেও তার উপরে যেভাবে মাল মশলা, অলংকার চড়িয়েছেন তাতে পুরা লেখাটা বেশ শক্তিশালি এবং শৈল্পিক হয়েছে। বিভিন্ন ডায়লগের বা টুকরো ঘটনার মূল্যায়ন বা আবহ সজ্জা বেশ ভাল হয়েছে। লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@রওশন,
কাহিনী বিন্যাসের চেষ্টা করিনি। একটা টুকরো অনুভূতি একটা টুকরো সময়ের ভিতর দিয়ে বের করে আনা হয়েছে। যার ফলে কিছু অলংকরনের চেষ্টা করেছি। কতটুকু সফল হয়েছি তার বিচার পাঠকের। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
খুব ভালো লাগলো গল্পটা। ভালোবাসাটা আসলে কি? মনে হয় মনের সংগোপনীয় টানাপোড়েনটাকে বুঝতে শেখা। দু-পক্ষই যদি বুঝতে পারে তাহলে মাঝে একটি ফুল ফোটে, যাকে ভালোবাসার ফুল বলে লোকে। যদি এক পক্ষ বোঝে, তাহলে মান-অভিমান থেকে হানাহানি পর্যন্ত সবই ঘটতে পারে। যদি দুপক্ষই না বোঝে, সেক্ষেত্রে মাঝে শুণ্যতা বিরাজ করে বলে কিছুই ঘটে না। আর যদি এমন হয় যে দু’ পক্ষই বোঝে বটে তবে এক পক্ষ অন্যপক্ষের ভালোবাসাকে পুঁজি করে ব্যবসা করে, তখন মাঝে অন্ধকারের উন্মেষ হয়। আর সেই অন্ধকারে সবই হাড়িয়ে যায়। বর্তমান গল্পটি ২য় ধারার হলেও প্রাঞ্জল এক মর্মবেদনা, বিরহবেদনার অম্লান উপাখ্যান। হিকমত সাহেবের ত্যাগ। বক্রভাবে দেখা গেলেও (যেহেতু ঢেঁকি) হিকমত সাহেবের তার ছেড়ে যাওয়া স্ত্রী-কে ফিরে পাবার বাসনা আসলে তাঁর হাড়িয়ে যাওয়া সৃষ্টিকে কেবল ফিরে পাবার বাসনা মাত্র। দেহটি নয়, ঐ দেহ জুড়ে যে মনস্তত্ত্ব, গভীরতা, সৌষ্ঠব, আত্মপ্রত্যয়, দাঁড়াবার ক্ষমতা তৈরী হয়েছিলো, তাকেই ফিরে পাবার চেষ্টা, কারণ এ যে একান্তভাবেই হিকমত সাহেবের সৃষ্টি! নিজের সৃষ্টিকে কি কেউ হাড়াতে চায়?
@কেশব অধিকারী,
আপনার মূল্যায়ন যথার্থ। অনেক সময় ও যত্ন নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। :thanks: