লিখেছেন: আসির তুষার

আজকে জর্জ ওরওয়েলের এনিম্যালফার্ম পড়তে পড়তে রাজনৈতিক ক্ষমতার সুব্যবহার নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম । সবচেয়ে অদ্ভুত লাগে যখন নিজের পিঠে নিজেই গুলি মারে, আর সাবলীলভাবে নিজের শ্ত্রুকে দোষী করানো হয় । আর আমরা আমজনতারা যেন কখনো কিছু বুঝতে চাই নাহ পারি নাহ। যাহ বলা হয় তাই ধর্মগ্রন্থের বাণীর মতো অকৃত্রিমভাবে বিশ্বাস করতে চাই । আবারো টুইনটাওয়ার ধ্বসে পড়বে , রাইখস্টেগ পুড়ে যাবে , গ্রেনেড হামলা হবে ।

আচ্ছা ধ্বংস হওয়া , পুড়ে যাওয়া এই দুটো শব্দই খুঁজতে ছিলাম । নক্ষত্রের (মহাকাশের কৃষ্ণ আলোয় স্বাভাবিকভাবে ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ডের সাথে রাজনীতির মিল রয়েছে ) জীবনের অন্তিম পর্যায় পৌঁছানোর পর বিভিন্নভাবেই মৃত্যুর পূর্ববর্তী পর্যায় যায় , নীরব মৃত্যু বেছে নেয় অথবা ব্যাং-য়িয়(বিস্ফোরণীয় থেকে ব্যাংয়িয় লেখতে ভালো লাগে ) মৃত্যু । ব্যাংঈয় মৃত্যুতে দুর্লভ সুপারনোভার উপস্থিতিতে পুরো ঘটনাটি জুড়ে থাকে বিস্ফোরণ এবং বিস্ফোরণ । নক্ষত্রটির মনমেজাজ খারাপ থাকলে সবটুকু ভরই বিস্ফোরণে নিঃশেষ করে দেয়, আর মনমেজাজ ভালো থাকলে টানাটানি করে ছোট্ট গোলীয় কেন্দ্র ধরে রাখতে সক্ষম হয় । অর্থাৎ নক্ষত্রের বহিঃস্তর উড়ে টূরে চলে যায় অন্য কোথাও , কিন্তু মূল কেন্দ্র থেকে যায় । ফলে প্রায় পুরো ভর কেন্দ্রিভুত হওয়ায় ঘনত্ব খুবই বেশি হয় । এই কেন্দ্র ব্যাপক ঝামেলার করে নিউট্রন তারা বা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয় ।ওই কেন্দ্রে তখন বিভিন্ন জটিল ক্রিয়া সংঘটিত হতে থাকে ; ইলেট্রন ডিজেনারেসি প্রেশার আরও কতো কঠিন টার্ম রয়েছে । এখন ওইসব পুরোপুরি ব্যাখ্যা করছি নাহ । সাধারনভাবেই মহাকর্ষীয় টানে যে কেন্দ্রীভূত হতে থাকে থাকে নক্ষত্রটি । ধ্বসে পড়তেই থাকেই থাকে নিজের উপর । তবে কিছু নিয়ম তো মানতেই হবে , এজন্য বাধ্য হয়ে পলির বর্জন নীতি মানতেই হয় । শক্তিস্তরের ইলেকট্রন গুলো ক্রমাগত নিম্নশক্তিস্তরে আসতে থাকে , এর সহজ কারণ হচ্ছে , এতো গুলো বছর নক্ষত্রের বহির্গতচাপের ফলে মহাকর্ষীয় চাপ খুব বেশি সুবিধা করতে পারে নি।তবে এতোদিন পরে যখন বহির্গত চাপ অনুপস্থিত ; এজন্য আর কারো ধার নাহ ধরেই টেনেটুনে ব্যাসার্ধ কমিয়ে চলছেই । কিন্তু তখনি পলি তার বর্জন নীতি নিয়ে তর্কাতর্কি করা শুরু করলো । মহাকর্ষও আমাদের মতোই পুরোপুরি স্বাধীন হতেই পারে নি। একান্ত বাধ্য হয়েই পলির কথা শুনতে হয় । এখন নিম্নশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ যতগুলো ইলেক্টট্রন থাকা সম্ভব ততগুলো ইলেকট্রন তা পূর্ণ করে দেয়ার পরেও মহাকর্ষ চেষ্টা করবে আরও ইলেকট্রন যেন ওই একই শক্তিস্তরে বিরাজ করে , কিন্তু পলি তা হতে দিবে নাহ উল্টো ইলেকট্রন গুলো উচ্চতর শক্তিস্তরে স্থানান্তর হতে থাকবে , ফলে মহাকর্ষের বিপরীতে একটি চাপ প্রয়োগ হবে এবং আবার সাম্যবস্থার সৃষ্টি হবে । একেই বলে ইলেকট্রন ডিজেনেরারেসি প্রেশার । তবে কিছু নক্ষত্র একটু অবাধ্য । তাদের মহাকর্ষ শক্তি কিছুটা বেশি। এর ফলে খুবই অদ্ভুত কিছু ঘটনা কেন্দ্রে ঘটতে থাকে । মহাকর্ষের প্রভাবে ইলেকট্রন ও প্রোটন – নিউট্রনে পরিণত হতে থাকে । পরে আবার ইলেকট্রনের মতই আবার নিউট্রন ডিজেনারেসি প্রেশার সৃষ্টি হয় । আমরা তখন এমন একটি নক্ষত্র পাবো যাহ নাকি পুরোপুরিই নিউট্রনে গঠিত ।(পৃষ্ঠে অবশ্য প্রটন , ইলেকট্রন থাকে তবে নিউট্রনের মোট পরিমাণের তুলনায় কম ) খুব সম্ভবত এই কারনেই নক্ষত্রটিকে নিউট্রন নক্ষত্র বলে । হ্যা , আমিও একই কথাই ভাবছি নামগুলো এতো বেশি অভিয়াস । অনুমান করার থ্রিল নেই ।

আমি লেখতে বসেছিলাম পালসার নিয়ে , কিন্তু নক্ষত্রের বিবর্তন নিয়েই অনেক কিছু বলে ফেলেছি । আরও বলবো হয়তো ।

পালসার এর ক্ষেত্রেও নামটিই সব বলে দিচ্ছে । যেই নক্ষত্র স্পন্দিত হয় তাকেই পালসার বলে । নিউট্রন নক্ষত্র নিয়ে আমার এতো হাদুমপাদুমের পিছনে সরল ব্যাখ্যা হচ্ছে, অনুমান করা হয় পালসার হচ্ছে খুবই দ্রুত ঘূর্ণায়মান নিউট্রন তারা যার চৌম্বিক মেরুদ্বয় থেকে তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ হয় । কিছুটা সুপারম্যানের হিট ভিশনের মতো ।

সবার মনেই প্রশ্ন আসতে পারে হোয়াইট ডোয়ারফও তো পালসার হতেই পারে । আমার মনেও এই প্রশ্নই এসেছিল । কিন্তু হোয়াইট ডোয়ারফ পালসার হতে পারবে না কিছু সহজ কারণের জন্য । এস্ট্রনমিতে খুবই সাধারণ নীতি হচ্ছে , কোন বস্তু তার নিজস্ব উজ্জ্বলতা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ,আলো তার ব্যাস অতিক্রম করতে যেই সময় নেয় তার থেকে কম হতে পারে নাহ । আমরা বুঝার সুবিধার জন্য একটি দ্বিমাত্রিক গোলকের (বৃত্ত) কথা চিন্তা করি । উজ্জলতা যদি হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়েও যায় ; গোলকের নিকটতম দূরত্ব থেকে আসা আলো আমাদের কাছে আগে পৌঁছাবে , তারপর আস্তে আস্তে আরেকটু দুরতম দূরত্ব থেকে আলো এসে আমাদের কাছে পৌঁছাতে থাকবে । উজ্জলতার সম্পূর্ণ পরিবর্তন তখনই আমারা বুঝবো যখন গোলকের সবচেয়ে দুরতম প্রান্ত থেকে আলো এসে আমাদের কাছে পৌঁছাবে । দুইটি প্রান্ত ( নিকট ও দুর ) একই সাথে আলো নির্গত হলেও ব্যাস অতিক্রম করতে যেইটুকু সময় লাগে তারপরেই আমারা মূলত বুঝতে পারবো উজ্জলতার পরিবর্তন হয়েছে ।হোয়াট ডোয়ারফ পালসার হওয়ার জন্য একটু বেশি বড় । এজন্য ধরে নেয়া যায় যে হোয়াট ডোয়ারফের থেকে ছোটো কোন নক্ষত্র(নিউট্রন তারা) তাড়িতচৌম্বক বিকিরণের স্পন্দন সৃষ্টি করবে । স্পন্দনের মাঝখানে যেই সময় টূকু অতিবাহিত হয় তা খুবই ক্ষুদ্র ;ফলে হোয়াট ডোয়ারফ যদি হঠাৎ উজ্জল হয়েও উঠে , সেটা আমাদের বুঝতে যেই সময় লাগবে তা স্পন্দনের মাঝের সময় থেকে বেশি। আর ভেরিয়েবল তারার উজ্জলতা আরও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় ।

এখন আসি নিউট্রন তারার ঘূর্ণন গতির ব্যাখ্যা । নিউট্রন তারা অস্বাভাবিক হারে ঘুরে । আমাদের কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারণা রয়েছে । একটি উদাহরণ দেই, আমি যদি আমার দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে দিয়ে ঘুরতে থাকি ।( ধরে নেই এমন একটি তলে রয়েছি যেখানে তলের ঘর্ষণ বল অপেক্ষাকৃত কম । আইস স্কেটারদের কথা কল্পনা করা যেতে পারে ) এখন আমি যদি হাত দুটো নিজের শরীরের কাছাকাছি রেখে আবার ঘুরার চেষ্টা করি , এইবার আমার ঘূর্ণন গতি বৃদ্ধি পাবে । এর কারণ হচ্ছে কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ ….
কৌণিকভরবেগ = ভর .কৌণিক বেগ.ব্যাসার্ধ

এখন কৌণিক ভরবেগ উভয়ক্ষেত্রে হাত ছেড়ে বা গুটিয়ে রেখে সমান । দ্বিতীয়ক্ষেত্রে , হাত গুটিয়ে নেয়ার ফলে আমার ব্যাসার্ধ কমে যাবে কিন্তু কৌণিক বেগকে অবশ্যই বৃদ্ধি পেতে হবে কৌণিক ভরবেগের মানকে ধ্রুব রাখার জন্য( ভর ধ্রুব ) । এখন আরেকটু বড় উদাহরণ দেখি , রেড জায়ান্ট তারার বিবর্তনের একটু পর্যায় , তখন এর ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায় । তখন তারাটি অনেক ধীর গতিতে ঘুরতে থাকে । কিন্তু সুপারনোভা হয়ে শুধু যখন অত্যন্ত বেশি ঘনত্বের কেন্দ্র থেকে যায় । তখনও কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ নীতি মেনে চলে । ব্যাসার্ধ কম , স্বাভাবিকভাবেই কৌণিক বেগ বৃদ্ধি পায় । এখন নক্ষত্রের ক্ষেত্রে সবকিছুর হিসাবই চুড়ান্ত পর্যায়ের । এর ফলেই নিউট্রন তারা প্রছন্ড বেগে ঘুরে ।

পালসার থেকে যে জ্যোতিঃরেখা( beam এর ভালো বাংলা প্রতিশব্দ পাই নি ) নির্গত হতে যেই শক্তির প্রয়োজন নিজস্ব ঘূর্ণন গতি থেকে প্রাপ্ত । মনে করি কোন বস্তু একটি নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে w কৌণিক দ্রুতি নিয়ে ঘুরতে থাকলে ঘূর্ণন শক্তির মান ১/২ Iw^২ । এখানে I হচ্ছে জড়তার ভ্রামক। ধরি, f হচ্ছে ফ্রিকোয়েন্সি , তাহলে w=২.পাই.f । সুতরাং ঘূর্ণন শক্তি = ২.পাই^২. f^২. I । এখন একটি নিউট্রন তারার পর্যায়কাল ১০ মিলিসেকেন্ড হলে ও ভর ১ সৌরভর এবং ব্যাসার্ধ ১০ কিমি হলে ঘূর্ণন শক্তি হবে ~ ১০^৫০ ।
ঘূর্ণন শক্তির পরিবর্তনের হার হবে
d(১/২ Iw^২)/dt = d(2পাই^২ f^২ I)/dt=(4পাই^২If) (dn/dt) …(1)

আমরা সবাই কমবেশি ক্র্যাব নেবুলার কথা জানি ।সেই ১০৫৪ সালের কাহিনী।আকাশে ধুম করে জ্বলজ্বল করে উদয় হয়েছিলো ক্র্যাব নেবুলার। তখনকার এস্ট্রোনমাররা কিছুটা হলেও হতবাক হয়েছিলো। হবারই কথা ।প্রত্যাকদিন তো আর সুপারনোভা আকশে দেখা যায় না।মনে করি ক্র্যাবনেবুলায় পালসার আছে,সমীকরণে আদর্শ পালসারের ক্ষেত্রে যে মান থাকার কথা তা বসিয়ে( যেমন ১ সৌরভর ,ব্যাসার্ধ ১০ কিমি) পাওয়া যায় ~(১০^৩৮ erg)/s । এখন ক্র্যাবনেবুলা থেকে ঠিক এই পরিমাণেই তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ হয় । ফলে ক্র্যাবনেবুলার মাঝে খুব সম্ভবত পালসারে আছে । এস্ট্রোফিজিসিস্টরা আবার সবকিছুতেই সন্দেহ প্রকাশ করে । চোখের সামনে ব্ল্যাকহোল দেখলেও বলবে যে ” এই অদ্ভুত কালা হোলের ব্ল্যাকহোল হবার সম্ভাবনা ৯৫% । এর পিছনে কারণ , এইডা ম্যান হোলের সাথেও অনেক মিল খায় ” । এজন্য তাদের সাথে তাল মিলানোর চেষ্টায় আমারও সবসময় বলতে হবে যে ” সম্ভবত” ”খুব সম্ভবত”।

অনেক লাফ ঝাঁপ মারছি কিন্তু এখনও পালসারের আবিষ্কার নিয়ে কিছু বলি নাই। ১৯৬৭ সালে দুর্ঘটনাবশতই পালসার আবিষ্কৃত হয় । আমি ভুল করলে আম্মুর কাছে ঝাড়ি খেতে হয় ; সৌভাগ্য হলে কিছু চড়-থাপ্পড়ও জোটে। অন্যদের অবস্থাও কমবেশি একইরকম । কিন্তু এই পদার্থবিদরা ভুল করলে নরওয়ের কতিপয় মানুষ তাদেরকে টাকাপয়সা দেওয়ায়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায় । উইলসন -পেনযিয়াস যেভাবে পেয়েছিল । এন্থনি হেউইশ কাক্কুও পেয়ে আমার হাইপোথিসিসটা সত্য প্রমাণ করে । ক্যামব্রিজে , এন্থনি ,মিস জে . বেল এবং আরও কিছু সহকর্মী একটি নতুন রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশে কোথাও বেতার তরঙ্গেরর তীব্রতার ফ্লাকচুয়েশন হচ্ছে নাকিপর্যবেক্ষণ করতে নিয়েই পালসার আবিষ্কৃত হয় । হেউইশের নোবেল নিয়ে একটু কন্ট্রভারসি আছে ।পরে বলবো …