আমরা সবাই মোটামুটি কম-বেশি মিথ্যা বলি। একেবারে সাধু-সন্ন্যাসী না হলে একদমই মিথ্যা বলিনা এই রকম মানুষ পাওয়া আসলেই খুব কঠিন। এমনকি আমাদের মাঝে এই বিশ্বাসও বেশ প্রবল যে আসলে কিছু সময়ে মিথ্যে বলাটা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। কিংবা মনে করি দুই-একটা নিরীহ মিথ্যা-যেমন ধরেন, ধানমন্ডীর জ্যামে বসে আমি এখন শাহবাগ মোড়, এই টাইপ মিথ্যা বললে আসলে কোন ক্ষতি নাই। কিন্তু আসলেই কি তাই?
স্যাম হ্যারিসের ‘লায়িং’ বইটি পড়ছিলাম। সত্য-মিথ্যা বিষয়ক এরকম অনেক পরিচিত প্রশ্নের উত্তরই দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বইটিতে। বইয়ের সাইজ অনেকটা আমাদের সদ্যপ্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ-এর বইয়ের মত, এক বসায় শেষ করে দেয়া যায়। মাত্র ৪৮ পৃষ্ঠার বই। স্যাম হ্যারিস নিজে নিউরোসায়েন্টিস্ট হলেও খুব ভারিক্কী কথাবার্তা যে উনি লিখেছেন তা নয়, বরং বেশ সাবলীল ভাষায় সহজ যুক্তিতে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন কেন নিরীহ মিথ্যে, বা প্রয়োজনীয় মিথ্যে গুলোও পরিহার করা উচিত।
প্রথমে প্রয়োজনীয় মিথ্যা নিয়ে কথা বলা যাক। হ্যারিস নিজে অনেক উদাহরণ দিয়েছেন, আমি না হয় ব্যক্তিগত একটা উদাহরণই দিই। গত বছর আমি ভার্সিটি’তে একটা পরীক্ষা ইচ্ছে করে মিস করলাম। গভীর রাতে ক্লাস মনিটরকে ফোন দিয়ে জানালাম, আমি কাল পরীক্ষা দিবনা। স্যার কে যাতে বলা হয় যে আমার দাদী মারা গিয়েছেন(যিনি আসলে চার বছর আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন), তাই আমি পরীক্ষা দিতে পারিনাই। এই মিথ্যেটা বলেছিলাম যাতে স্যার পরে আমার পরীক্ষা নেন। আমি যদি বলতাম, স্যার, আমার পরীক্ষার প্রস্তুতি খুব বাজে ছিল, তাই আমি সেদিন পরীক্ষা দিইনাই, এইটা শুনে কখনোই আশা করা যায়না যে স্যার আমাকে পরে সেই পরীক্ষা আবার দিতে দিবেন। তাই আপাত দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, আসলে এখানে একটা সিরিয়াস টাইপ মিথ্যে বলাটাই প্রয়োজন ছিল। আমার নিজেরও তাই মনে হতো। হ্যারিসের বই পড়ে একটু অন্য রকম ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। তাঁর মতে, ধরুন, আমি যদি ওই সত্যটা বলতাম যে আমি ইচ্ছে করেই পরীক্ষা দেইনাই, সেক্ষেত্রে আমাকে হয়ত স্যার ফেইল করিয়ে দিতেন, বা কোনমতে পাস করিয়ে দিতেন, কিন্তু এই ফেইল করার মাঝেও আমি হয়ত বুঝে যেতাম, ভালো করে টের পেতাম যে জীবনে কিছু ফাও মিলেনা, বা আমার খেয়াল খুশি মত আসলে সব কিছু চলেনা। সেই পরীক্ষায় ফেল করলে আমি হয়ত এরপর থেকে আরও সিরিয়াস হতে পারতাম আমার পড়াশুনার ব্যাপারে যা হয়ত আমার জন্য দূর ভবিষ্যতে ভালোই হতো। শর্ট টার্ম সুবিধার জন্য এই প্রয়োজনীয় মিথ্যে বলা হয়ত ভবিষ্যতে আমারই ক্ষতি হচ্ছে। একবার পার পেয়ে গেলে হয়ত এরকম আমি মাঝে মাঝেই পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো না থাকলেই আমি পরীক্ষা দিতে যাবনা। আর এই প্রয়োজনীয় মিথ্যে আসলে আরও অনেক অস্বস্তিকর মিথ্যের জন্ম দিয়েছিল। ক্লাস মনিটর এর কাছে থেকে আমার দাদীর বানোয়াট মৃত্যু সংবাদ শুনে আমার কিছু বন্ধু আমাকে এসএমএস করা শুরু করল যে আমার এই শোকে তারা সমবেদনা জানাচ্ছে। চিন্তা করুন, কি রকম লজ্জাজনক অবস্থা। আরও সমস্যা হচ্ছে যখন তারা সত্য জানতে পারল, আমার ধারণা তারা কনশাসলি না হলেও সাবকনশাসলি আমার উপর একটু হলেও আস্থা হারিয়েছে। স্রেফ সরাসরি সত্যটা বলে দিলে হয়ত আখেরে যেমন আমার জন্য ভালো হতো, আবার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের সামনে এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতিরও সম্মুখীন হওয়া লাগতো না।
কিংবা ধরুন খুব গুরুতর অসুখের কথা। স্যাম হ্যারিস অসুখ-বিসুখ নিয়ে বেশ ভালো একটা উদাহরণ দিয়েছেন। কেউ যদি কোন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন এবং বেশিদিন তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা না থাকে, আমরা অনেক সময়ই তাকে প্রকৃত সত্য জানান দিতে চাইনা। আমাদের যুক্তি থাকে, এই কঠিন সত্য হয়ত সেই মানুষটি হজম করতে পারবেনা। কিন্তু যে মানুষটি হয়ত কদিন পর চলেই যাবে, তাঁর ব্যাপারে আমাদের এত বড় সিদ্ধান্ত না জানানোর অধিকার আদৌ আছে কিনা? হয়ত যদি সে জানত, প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠার পর সে হয়ত তাঁর আপনজনদের সাথে অনেক কিছু শেয়ার করত, আরও বেশি কাছে টেনে নেয়ার চেষ্টা করত বা কোন ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা, ইচ্ছা, অনিচ্ছা সে জানিয়ে যেতে পারত। প্রকৃত সত্য জানতে না দেবার জন্য হয়ত তাকে আমরা জীবনের শেষ মুহূর্তে জীবনের স্বাদ থেকেই বঞ্চিত করে ফেলি। সেইটা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য?
এরপর ধরুন নিরীহ মিথ্যা বা ‘হোয়াইট লাই’-এর কথা। লেখার শুরুতে যেমন বললাম, ধানমন্ডী তে বসে শাহবাগ এ আছি-এই টাইপ আর কি। আরও চিন্তা করুন, এই মিথ্যে বলার সময় আপনার সাথে আরও একজন বন্ধু পাশেই বসা ছিল। আপাত দৃষ্টিতে সে হয়ত কিছুই মনে করবেনা, কিন্তু তার ঠিকই মনে থাকবে, আপনি এরকম ক্ষেত্রে অবলীলায় মিথ্যে বলেন। সে নিজেও তাই খুব সূক্ষ্মভাবে হলেও, অবচেতন ভাবে হলেও, আপনার উপর আস্থা হারাতে থাকবে। তাই বরং মিথ্যে বললেও মনে হয় একেবারে কোনই সাক্ষী রাখা উচিত না। আবার এইটাও মাথায় রাখতে হয় কাকে কখন কি মিথ্যে বলছেন, যখন তখন আবার বেফাঁস কিছু যাতে না বলে বসেন, এইটাও খেয়াল রাখতে হয়। মিথ্যে বলার হ্যাপা তাই অনেক। স্যাম হ্যারিস এর চাইতেও নিরীহ মিথ্যে যেমন ধরুন, আপনার বন্ধু আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করে, ‘এই সানগ্লাসে আমাকে কেমন লাগছে? ‘, সেখানেও ভদ্রতাবশত খুব মানিয়েছে এরকম বলার চাইতে, সত্য বলাটাই ভালো এইটা দেখাতে চেয়েছেন। তবে হ্যাঁ, একেবারে মুখের উপর বাজে ভঙ্গিতে না বলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সত্য মেসেজটা দিতে পারলেই ভালো, মোট কথা ইউফেমিজম আর কি।
তারপরও এমন কিছু সময় তো থাকেই যেখানে আসলেই হয়ত মিথ্যের কোন বিকল্প নেই। কেউ যদি কোন কারো দিকে অস্ত্র তাক করে থাকে এবং সেই মুহূর্তে আপনার একটি মিথ্যে তাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে, এরকম ক্ষেত্রে মিথ্যে বলাই যায়। কিন্তু এরকম ‘এক্সট্রিম’ কেসে আসলে খুব কম মানুষই হয়ত জীবনে মুখোমুখি হয়। কিংবা ধরুন, আপনি নিজেই ইলিগাল বা বেআইনি কিছু করেছেন যা স্বীকার করলে আপনার জেল বা আরও বড় শাস্তি হতে পারে, এতেও আসলে আপনার মিথ্যে বলা ছাড়া হয়ত উপায় নেই। বেআইনি কাজ করার এইটা একটা সমস্যা যে এখানে মিথ্যে বলা ছাড়া উপায় নাই। এখানে এইটাও বলা প্রয়োজন, আইন নিজেই যদি ত্রুটিপূর্ণ হয়, যেমন ধরুন কোন দেশে যদি নিয়ম থাকে অন্য ধর্মাবলম্বী কোন মানুষকে বিয়ে করা অবৈধ, তখন হয়ত পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার জন্য মানুষকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ধর্মান্তরিত হতে হয়, মিথ্যে বলতে হয়। তাই এরকম হাস্যকর রকমের ত্রুটিপূর্ণ আইন মানুষকে বাধ্য করতে পারে একজন সৎ ও স্বাভাবিক মানুষকে মিথ্যে বলতে।
এরকম আরও বেশ কিছু ইন্টেরেস্টিং বিষয় নিয়ে স্যাম হ্যারিস লিখেছেন। যাই বলার চেষ্টা করেছেন, অনেক উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। একেবারে বেসিক থেকেই শুরু করেছেন, একেবারে সাধারণ প্রশ্ন যেমন, ‘ডু আই লুক ফ্যাট ইন দিজ ড্রেস?’ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা নিয়েও আলোচনা করেছেন। সমালোচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে, আমার মত সাধারণ পাঠকের হয়ত যোগ্যতা হয়নি বইটির প্রতিটি অনুচ্ছেদের ব্যাপ্তি বুঝে উঠার, তারপরও আসলে বই শেষ করার পর মনে হয়েছে, বইটি কলেবরে একটু বেশিই ছোট, প্রতিটি অধ্যায়েরই মনে হয় আরও গভীরে যেতে পারতেন। কিংবা যে উদাহরণ গুলোই দিয়েছেন, এর চাইতেও আরও শক্তিশালী উদাহরণ, বিশেষ করে ‘লাইজ ইন এক্সট্রেমিজ’, অংশে টানতে পারতেন। পাঠককে হয়ত আরও জটিল জটিল সিচুয়েশনে ফেলে তারপর তার অবস্থান ব্যাখ্যা করলে আরও হয়ত নিজের ধারণাটুকু পোক্ত করতে পারতেন। বইয়ের শুরুতেই আনা ফ্র্যাঙ্ক এর কথা উল্লেখ করে ওই সময়েও নাৎসি বাহিনীকে সত্য বললেই লাভ হতো, এরকম একটা কথা এক সেমিনারে স্যাম হ্যারিসের এক প্রফেসর প্রমাণের চেষ্টা করেছিলেন এবং হ্যারিসের ভাষ্যমতে সেই যুক্তি প্রমাণে তিনি সফলই ছিলেন। কিন্তু ঠিক যুক্তি গুলো কি, বা এরকম ‘এক্সট্রিম কেস’-এ সত্য বলে কি লাভ হতে পারত, আমি এখনও ঠিক নিশ্চিত না। যাই হোক, শেষ মেষ, ভালোই লাগছে বইটা। 🙂
অপ্রিয় সত্য কথা বলিতে নাই। কাজেই অনেক ক্ষেত্রে তা মনে করে এমন কাজটি করতে হয়। এটাকে আমার এক পরিচিত বলতেন এটা Legal না হলেও Illegal না, extralegal ;
এ নিয়ে অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। আজকেই আমার হাজব্যান্ডকে কমলাপুর নামিয়ে দিয়ে আমি আর আমার মেয়ে আজিজ মার্কেটে আসব। ট্রেণ ৪ঃ৪০ মিনিটে। ফার্ম গেট থেকে বিকেল ৩ টায় রওনা দিয়েছি। সোনারগাঁ, মগবাজারে ট্রাফিক জামে বসে থেকে থেকে যখন মৌচাকের জামে সময় তখন ৪ঃ ২০। দুই বার সবুজ সিগন্যাল পেয়েও যেতে পারিনি। তৃতীয়বার আমাদের গাড়িটিই সবার আগে। পুলিশের সার্জনসহ পুলিশ ডিউটি করছে। আমি আমার হাজব্যান্ডকে বললাম তুমি গিয়ে বল আমাদের গাড়িটি ছেড়ে দিতে। তুমি তা না হলে ট্রেণ পাবে না। যথারীতি সে যাবে না। মেয়ে বলল, মা, উদ্ভট কথা। তা হলে সবাই এমন দাবি করবে আর পুলিশ তা শুনতে গেলে সে ম্যানেজ করবে কীভাবে? ট্রেণ না পেলে টিকেট নষ্ট হবে আর বাসে যাবে।ড্রাইভার কিছু না বলেই নেমে গিয়ে সার্জনকে বলে আসল আর আমাদের ছেড়ে দিল। আমি, আমার হাজব্যান্ড বেশ খুশি। স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে ড্রাইভার বলল, সে ট্রেণের কথা বলেনি। বলেছে গাড়িতে রোগী আছে।
আমি কিন্তু তার এ মিথ্যা কথার জন্য রাগ করতে পারিনি। কারণ আমার স্বার্থ জড়িত। আমার মেয়ে একটু রাগ করলেও আমি কেমন যেন খুশিই হলাম।
বাসায় এসে চিন্তা করছি, আমি কি অনৈতিক কাজ করলাম! এটা কি Illegal, না extralegal ??
আমি নিজে চেষ্টা করি ১০টায় আসবো বললে ১০টাতেই আসার,যদিও অনেক সময় তা সম্ভব হয়না(মূলত ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের জন্য), কেও যখন ফার্মগেটে এসে বলে শাহবাগ এসে গেছি তখন খুব মেজাজ খারাপ হয়,বাঙালী ১০টা বললে সবসময় ধরে নেয় ১১টায় পৌছালেও চলবে,এটা খুবই বাজে একটা অভ্যাস।
লেখাটা ভালো লেগেছে,বেশ প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা :-)।
৪৮ পৃষ্ঠার বইয়ের পুরোটাই রিভিউতে বলে দিলেন নাকি? 😛
আলোচনা ভালো হয়েছে। একদিকে যেমন বিজ্ঞানীরা এটা স্থাপন করছেন যে এথিকসের উৎপত্তি আসমানী কিতাব থেকে নয় বরং আমাদের চিন্তাভাবনা থেকে, যে কারনে অন্যান্য উন্নত প্রাণী যেমন শিম্পাঞ্জীতেও তা দেখা যায়, তেমনই এথিকস নিয়ে এ ধরনের আলোচনাও ভালো।
আপনাকে একটা প্রশ্ন – মিথ্যার ভালোমন্দ নিয়ে দার্শনিক আলোচনা তো অনেকই হয়েছে, সেই বঙ্কিমও লিখে গেছেন, তার বাইরে স্যাম হ্যারিস এটায় নতুন কী যোগ করতে পেরেছেন? উনি তো নিউরোসায়েন্টিস্ট, ওনার পরিপ্রেক্ষিত থেকে কিছু?
আমি নিজে স্যাম হ্যারিসের বই পড়ে উঠতে পারিনি, তার কিছু প্রবন্ধই পড়েছি কেবল। তবে তিনি নাস্তিক মহলেও বিতর্কিত, এটা শুনেছি।
@কৌস্তুভ, হেহেহে, আর বলেন না, আমিও ভাবতেছিলাম যে সবই কি বলে দিলাম নাকি! 😛 এইজন্য পরে কিছু অংশ বাদ দিয়ে দিয়েছি লেখা থেকে, এখানে তাই শুধু নিরীহ আর প্রয়োজনীয় মিথ্যের উপরই শুধু আলোচনা সীমাবদ্ধ রেখেছি, বইয়ে এর বাইরেও আরও আলোচনা আছে। আর সত্যি বলতে কি, ‘লায়িং’ নিয়ে আসলে আর কোন দার্শনিক বা লেখকের কোন তত্ত্ব বা লেখা পড়ি নাই, তাই ঠিক বলতে পারছিনা স্যাম হ্যারিস নতুন কিছু যোগ করতে পেরেছেন কিনা। তবে বইটা একদমই সাবলীল এবং সহজ ভাষায় লিখা, নিজে নিউরসায়েন্টিস্ট হলেও বিজ্ঞানের কথা খুব কমই টেনেছেন। বরং সহজ কিছু যুক্তি দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে মিথ্যে বলার কোন লং টার্ম পজিটিভ ইউটিলিটি নেই। আর নাস্তিক হলেই মানুষ তো একটু- আধটু বিতর্কিত হয়ই, তবে স্যাম হ্যারিস কিছু বিষয়ে আসলেই অনেক র্যাডিকাল অবস্থান নিয়েছেন। কিছুদিন আগে উনি এয়ারপোর্টে র্যান্ডমলি সিকিউরিটি চেকের বদলে ‘প্রফাইলিং’ (মোট কথা মুসলিম দের বেশি করে চেক করো) এর পক্ষে মত দিয়েছিলেন এবং এইটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশ ভালোই আলোচনা- সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
স্যাম হ্যারিসের প্রায় সবগুলো বইই পড়েছি। ‘এন্ড অব ফেইথ’ দিয়ে শুরু করেছিলাম তারপরে ‘লেটার টু এ খ্রিষ্টান নেশন’ হয়ে … গতবছর পড়লাম মরাল ল্যান্ডস্কেপ। বেশ ভাল লেগেছিল। অভিভূত হয়ে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসও দিয়ে দিয়েছিলাম। 🙂
প্রথমদিককার বইগুলোর মধ্যে একটু প্রচারণা বেশি ছিল, এখনকার বইগুলো বরং অনেক পরিণত, বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে ভরপুর।
আপনার রিভিউটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ডকিন্সের পাশাপাশি ডেনিয়েল ড্যানেট, ক্রিস্টোফার হিচেন্স, ভিক্টর স্টেঙ্গার এবং স্যাম হ্যারিসের মত লেখকদের পাঠক বাঙালিদের মধ্যে বাড়ছে, এটা খুবই আশার কথা।
@অভিজিৎ দা, খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে। ‘এন্ড অব ফেইথ’ এর কোন পিডিএফ লিঙ্ক আছে নাকি? থাকলে একটু শেয়ার করেন, এইটাও পড়তে ইচ্ছে করছে। স্যাম হ্যারিস এর টেড টক দেখার পর থেকেই তার বই গুলো পড়ার ইচ্ছে ছিল। 🙂 এরপর তার অনেক ডিবেট দেখলেও বই ঠিক পড়া হয়ে উঠেনাই। ভালো থাকবেন।
আমি কোনো দেবতা না, বা হতেও চাইনা। আমি প্রতিদিন জেনেশুনেই অনেকবার মিথ্যা বলি। স্বীকার করতে আমার কোন আপত্তি নেই!
@আদনান, আমরা কেউই তো দেবতা না, এজন্যই লেখার শুরুতেই বলেই নিয়েছি যে আমরা সবাই মোটামুটি কম-বেশি মিথ্যে বলি। কিন্তু প্রশ্নটি হচ্ছে, এই আচরণ কত টুকু যৌক্তিক?
@রিজওয়ান,
মানুষ যুক্তির ব্যবহার জানে, কিন্তু জীবনের খুব কম ক্ষেত্রেই সে যুক্তির ব্যবহার করে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে যুক্তি ব্যবহার করে জীবন-যাপন করতে গেলে মানুষ উন্মাদ হয়ে যাবে, সে হয়ে যাবে নরকবাসী। যেমন ধরেণ আমি বই পড়তে ভালোবাসি, এবং এই কাজটিকে আমি একটা ভালো কাজ বলে মনে করি। এখন যদি কোনো সরকার বই পড়া বাধ্যতামূলক করে দেয় আর না পড়লে মারপিট শুরু করে তবে আমি জানি আমি বই পড়া ছেড়ে দেবো।
কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার পরীক্ষা সংক্রান্ত মিথ্যর উদাহরন দিয়ে বলা যায়, বেআইনি কাজের কথা স্বীকার করে নিলে সাময়িক জরিমান গুনলেও পরে হয়ত আইনি কাজ করার স্পৃহা বাড়ত।
যাহোক, বইটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ!
@কাজি মামুন, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আসলে অপরাধের মাত্রাও মনে হয় প্রভাব ফেলে, যেমন ধরুন কেউ যদি কাওকে খুন করে বসে আর সেইটার শাস্তি যদি হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড, তাহলে আসলে এই অপরাধ স্বীকার করার বোকামি কেউ করবেনা, বা এই অপরাধ স্বীকার করার কোন যুক্তিই অপরাধীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আসলে নেই। কিন্তু ধরুন, ছোট খাটো ভুল যেগুলো আছে, সেগুলো মনে হয় স্বীকার করে নিলেই ভালো। ভুল গুলো অস্বীকার করতে করতে এক সময় এই মিথ্যে গুলো, ভুলগুলো ‘সেলফ ডিনায়িং’ ভুল বলে নিজের কাছে মনে হতে পারে, মানে একটা সময় গিয়ে হয়ত মনেই হবেনা এগুলো ভুল। তাই এই ছোট খাটো ভুল গুলো একদম শুরুর দিকে ধরা পড়লেই বা স্বীকার করে নিলেই ভালো। কেউ যদি প্রথম দিনেই নকল করে ধরা পড়ে, তাইলে তার মনে হয় আবার নকল করার সম্ভাবনা কম।
বইটা অনুবাদ করতে ইচ্ছা হইছিল এক সময়। কিন্তু অন্যান্য ইচ্ছার মতন এই ইচ্ছাও সময়ের সাথে সাথে মৃত্যুবরন করছে। ভালোই লাগছিল বইটা। বই থিকে আরেকটা মিথ্যার(?) উদাহরন দেই। যেমন, আমি এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অফিসের গেটের সামনে থেকে আপনাকে কল দিলাম। বললাম আমি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলছি, আপনি কি রজওয়ান? ঘটনা সত্য মিথ্যা কোনটা বলব আমরা? :))
হ্যারিস উদাহরনটা দিছিল হোয়াইট হাউস আর ফেসবুক দিয়া।
@সাইফুল ইসলাম, এই কাজটা অনেকের উপকারে আসতো। প্লিজ, সুবানাল্লাহ বইল্যা, শুরু করে দেন।
@সাইফুল ইসলাম, হেহে, উদাহরণটা মনে আছে আমার। 🙂 আর আপনি শুরু করেন অনুবাদ করা, এই বই অনুবাদ করা অন্য যে কোন বইয়ের চাইতে কম কষ্টকর হওয়ার কথা। বিসমিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ বইলা শুরু কইরা দেন।
হ্যারিসের একটাই বই পড়েছি- দ্যা মোরাল ল্যান্ডস্কেপ। আমি একে food for thought না, feast for thought বলব 🙂
চমৎকার রিভিউ (Y)
@পৃথ্বী, দ্যা মোরাল ল্যান্ডস্কেপ-এর কথা অনেক শুনেছি। এখনও পড়া হয়ে উঠেনি। এইটারও কি কোন পিডিএফ লিঙ্ক আছে? থাকলে একটু দিয়েন এখানে। ধন্যবাদ। 🙂
@রিজওয়ান, http://libgen.org/search?req=The+Moral+Landscape&nametype=orig&column%5B%5D=title&column%5B%5D=author&column%5B%5D=series&column%5B%5D=periodical&column%5B%5D=publisher&column%5B%5D=year
[dl1] ক্লিক করতে হবে। এটা কাজ না করলে [dl4]।
@পৃথ্বী, ধন্যবাদ। ডাউনলোড থেকে পেলাম ২৩১ পৃষ্টার পিডিএফ।
@রিজওয়ান,
আল্লাহর আইন অমান্য করে ধর্মানুভুতিকে আঘাত দিয়ে মানুষের প্রেমানুভুতি উস্কে দেয়ার জন্যে আপনাকে ফুলেল (W) মাইনাস। (N)
তয় লেখা ভালা পাইছি বিধায় গোলাপী (F) (F) শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। (Y)
@আকাশ মালিক, সেই ভাই, এত সংবেদনশীল মানুষের অনুভূতি যে কখন কোথায় টোকা পড়ে, বলা মুশকিল। 😛 মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। 🙂
স্যাম হ্যারিস এক সপ্তাহের জন্য বইটা ফ্রি ডাউনলোড হিসেবে রেখে দিয়েছেন,
http://www.samharris.org/blog/item/the-fall-of-jonah-lehrer/
@পৃথ্বী, বইয়ের লিঙ্কটি দিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। লেখার শেষে আমিই এই লিঙ্কটি দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম শেষ মেশ। যাই হোক, আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। 🙂
একটা ভিন্ন আংগিকের সুন্দর রিভিউ পেলাম। :clap (Y)
দারুণ লিখেছেন ভায়া।
আসলে এসব করে থাকি – অনেক ক্ষেত্রে অবচেতন থেকে। আবার কখনো কখনো অন্যকে বোকা বানাতে গিয়ে – এ ধরণের মিথ্যের আশ্রয় নিই। এক ধরণের অদেখলাপনা থেকে করে থাকি, সে সাথে অন্যের কাছে নিজেকে জাহির করতে।:-Y
অপ্রাসংগিক হলেও বলে রাখি, ১৮৮২,৩য় সংশোধনী (যতদুর মনে পড়ে), স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট এ ধর্মান্তরিত না হয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করা যায়- বাংলাদেশে। সেক্ষেত্রে ধর্ম পরিত্যাগের ঘোষণা দিতে হয় অবশ্য।
ভালো থাকবেন। (F)
@অসীম, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। এই অপ্রয়োজনীয় মিথ্যে গুলো বলতে বলতেই হয়ত নিজের অজান্তেই অন্যের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলি ধীরে ধীরে। মিথ্যে বলাটাও আসলে কিছুটা অভ্যাসের মত, একবার মিথ্যে বলে ধরা না খেলে মনে হয়, বেশ তো, এরকম তো করাই যায় মাঝে মাঝে, নিরীহ মিথ্যে থেকে শুরু হয় যে অভ্যাসের সেটি হয়ত এক সময় বেশ বাজে স্বভাবেই দাঁড়ায়। যারা খুব অবলীলায় ‘হোয়াইট লাই’ বলতে পারে, তারা হয়ত একসময় আরও সিরিয়াস কোন প্রোপাগান্ডা চালাবে। এমনকি ভদ্রতা বিষয়ক মিথ্যে গুলোও যে আদতে কোন কাজে আসেনা, এইটাও স্যাম বেশ ভালো ভাবেই দেখিয়েছে। পড়ে ফেলুন বই টা, আমার রিভিউয়ের চাইতেও ভালো লাগবে আশা করা যায়। 🙂
@রিজওয়ান,
ফ্রি ডাউনলোড পেলাম না।
@অসীম, @অসীম, আরেকটা লিঙ্ক দিলাম, দেখেন কাজ করে কিনা?
@রিজওয়ান, ধন্যবাদ। সৈকত চৌধুরীর বদান্যতায় পেয়ে গেলাম।
@অসীম,
আপনাকে লিংকটা দিচ্ছি
http://www.samharris.org/images/uploads/LYING.pdf
@সৈকত চৌধুরী,
আগাপাছতলা কামে আইছে। মিথ্যা রে নামাইছি। অসংখ্য ধন্যবাদ।