আমার গনহত্যা তোমার গনহত্যার চেয়ে বড়ো
-সফিক
খেয়াল নেই ঠিক কোন সময়টিতে, আট দশ বছর আগে সিএনএন ইন্টারন্যাশনালের একটা নিউজ প্রোগ্রাম দেখছিলাম। সংবাদে একটা প্যানেল আলোচনা চলছিলো গনহত্যা নিয়ে। সম্ভবত প্যানেলে আফ্রিকার রুয়ান্ডা গনহত্যার বিচারের একটি রায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। প্যানেলে মডারেটর ছাড়াও একজন আফ্রিকান, একজন জুইশ এবং সম্ভবত একজন ক্যাম্বোডিয়ান অথবা একজন আর্মেনিয়ান অংশ নিয়েছিলো। আলোচকরা সবাই গনহত্যা ঠেকানোর জন্যে আর্ন্তজাতিক সমাজের দৃঢ়তার এবং গনহত্যার সুষ্ঠু বিচারের আবশ্যকীয়তা নিয়ে একমত হয়ে সৌহার্দের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কথাপ্রসংগেই একজন প্যানেলিস্ট রুয়ান্ডার গনহত্যাকে দ্বিতীয় মহাযু্দ্ধের সময়ে ইউরোপের ইহুদীদের উপরে চালানো গনহত্যাযজ্ঞ হলোকস্টের (Holocaust) সাথে তুলনা করলেন। আর যায় কোথায়! প্যানেলের জুয়িশ মহিলাটি মুহুর্তের মধ্যে জ্বলে উঠলেন। গলা চড়িয়ে বলা শুরু করলেন হলোকস্ট এর সাথে আর কোনো গনহত্যার তুলনাই হতে পারে না। নাৎসীদের পরিচালিত হলোকস্ট, যা বর্তমানে ইহুদীরা শোয়াহ (Shoah যার অর্থ হিব্রুতে catastrophe) বলতে প্রেফার করে, ইতিহাসে একক, অনন্য একটি ঘটনা। মহিলা ফিরিস্তি দেয়া শুরু করলেন কি কি কারনে হলোকস্ট অতুলনীয় এবং অনন্য। তার কথা তোড়ে অন্যেরা আর কোনো কিছু বলারই ফুরসত পেলো না।
যারা পশ্চিমের লেখালেখি আর মিডিয়া জগতে গনহত্যা, হলোকস্ট এবং এসংক্রান্ত বিশ্বরাজনীতি নিয়মিত অনুসরন করেন, তাদের কাছে উপরের ঐ জুয়িশ মহিলার আউটবার্স্ট একটি অতিপরিচিত ঘটনা। জুয়িশ ইন্টেলেকচুয়াল এবং সামাজিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের একটি অংশ গত কয়েক দশক ধরে ইতিহাসে হলোকস্টের অনন্য অবস্থানকে ধর্মীয় মৌলিক বিশ্বাসের মতোই আকড়ে ধরে আছে এবং সবার মাঝে প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রচার করে আসছে। এদের কাছে হলোকস্টের অনন্য-একক অবস্থান জুয়িশ পরিচয়েরই অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিনত হয়েছে।
দ্বিতীয় মহা্যুদ্ধের পর আজ পর্যন্ত হলোকস্ট নিয়ে যতো আলোচনা, গবেষনা, শিল্প-সাহিত্য, প্রচার হয়েছে, বিংশ শতাব্দীর আর কোনো গনহত্যা নিয়ে তার ৫ শতাংশও হয় নি। এর অন্যতম কারন হলো এই গনহত্যার শিকার জাতিগোষ্ঠী এবং গনহত্যা পরিচালনাকারী জাতি দুটিই আধুনিক বিশ্বসমাজ সংষ্কৃতিতে সবচেয়ে প্রমিনেন্ট জাতিগুলির অন্যতম। হলোকস্ট নিয়ে লেখালেখি-গবেষনার পরিমান ইতিহাসের অন্য যেকোনো ঘটনার চেয়ে বেশী, এই ধারাটির ব্যাপ্তি এতো বিশাল যে গত দু্ই দশকে ‘হলোকস্ট কেনো অতুলনীয় ও অনন্য’ এই প্রশ্নটিই এক স্বতন্ত্র, প্রতিষ্ঠিত গবেষনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। গুগলে ‘Holocaust genocide unique’ এই শব্দগুলো দিয়ে সার্চ দিলে এই বিষয়ে অজস্র পাব্লিকেশনের লিংক এবং অনেক ইন্টারেস্টিং আর্টিকেল পাওয়া যাবে।
অজস্র তর্ক-বিতর্ক, যুক্তি-তথ্যের মধ্যে হলোকস্ট এর অনন্যতার দাবীদাররা কয়েকটি প্রধান পয়েন্টই ঘুরে ফিরে উপস্থাপন করে।
হলোকস্ট এর অনন্যতার দাবীদাররা প্রথমেই যে যুক্তিটি তুলে ধরেন তা হলো ইতিহাসে হলোকস্টই একমাত্র ঘটনা যেখানে একটি পুরো জাতিকে আমূলে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিলো (১)।
নাৎসীরা ও তাদের দোসরেরা ইউরোপের প্রতিটি ইহুদীকে , বৃদ্ধ-নারী-শিশু নির্বিশেষে, মেরে ফেলার লক্ষ নিয়েছিল। বিশ্ব জয় করতে পারলে তারা এই নিধনযজ্ঞ সারা পৃথিবীজুড়েই বিস্তৃত করতো। দ্বিতীয় প্রধান যুক্তিটি হলো, ইতিহাসে হলোকস্টই একমাত্র গনহত্যা যার কোনো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক উদ্দ্যেশ্য ছিলো না। নাৎসীরা ইহুদীদের সরিয়ে দিয়ে তাদের ভূমি দখল করতে চায় নি। নাৎসীরা যদিও ধনী ইহুদীদের সম্পদ, আর্ট, জুয়েলারী আত্মসাৎ করেছিল, কিন্তু এটা তাদের মূল লক্ষ্যের মধ্যে ছিল না। হলোকস্টের ৯০% শিকারই পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের দরিদ্র কৃষক, শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ী ইহুদী সম্প্রদায়। ইহুদীরা নাৎসীদের ইউরোপ জয়ের পথেও কোন সামরিক বাধা ছিলো না। নাৎসী নিধনযজ্ঞ সবচেয়ে তুঙ্গে উঠেছিলো ১৯৪৩ এর মধ্য হতে ১৯৪৪ এর শেষ পর্যন্ত। হাজার হাজার ট্রেন, লক্ষের বেশী সৈন্য,পুলিশ, গার্ড নিয়োজিত ছিলো সারা ইউরোপ থেকে ইহুদীদের ধরে এনে ডেথ ক্যাম্প গুলোতে মেরে ফেলার কাজে। অথচ এই সময়টাতে জার্মান সেনাবাহিনী রাশান, ইটালিয়ান, ফরাসী সব ফ্রন্টেই তীব্র লোকবল, সরঞ্জাম, যানবাহন সংকটে ভুগছিলো এবং মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকেপ্রবল সামরিক চাপের মধ্যে ছিলো। সামরিক প্রয়োজনীয়তার চেয়েও ইহুদী নির্মূলের প্রায়োরিটি ছিলো বেশী। আরেকটি অন্যতম যুক্তি হলো যে হলোকস্টই প্রথম গনহত্যা যেখানে জাতি নির্মূলের জন্যে আধুনিক বিজ্ঞান-সভ্যতার পূর্ণ প্রয়োগ করা হয়েছিলো। নাৎসীদের পরিচালিত গনহত্যা ছিল না ইতিহাসের এর আগের গনহত্যা গুলির মতো হিংস্র-বন্য বর্বরতায় পূর্ণ রক্তস্রোত, বরং এটা ছিল সর্বোচ্চ উন্নত একটি দেশের, তার আমলাতন্ত্র, ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ইন্ডাস্ট্রির সুপরিকল্পিত সমন্নয় করে ইউরোপ থেকে কোটি মানুষকে সবচেয়ে এফিশিয়েন্ট ঊপায়ে নির্মূল করার প্রয়াস।
হলোকস্ট এর অনন্যতা পক্ষে বিপুল প্রকাশনা-প্রচারনা’র বিপরীতে বেশ কয়েকজন ইতিহাস-বিশেষজ্ঞ উঠে দাড়িয়েছেন হলোকস্ট কে ইতিহাসে কোনো একক-অনন্য অবস্থান দেয়ার বিরূদ্ধে। রুডলফ রুমেল (http://en.wikipedia.org/wiki/Rudolph_Rummel) বিংশ শতাব্দীর গনহত্যা বিষয়ে একজন বিশ্বস্বীকৃত বিশেষজ্ঞ। রুমেল এর মতে ইতিহাসে তো নয়ই, এমনকি বিংশ শতাব্দীর গনহত্যাগুলির মধ্যেও হলোকস্ট বিশেষ স্থান পেতে পারে না।(৫) রুমেল দেখিয়েছেন বিংশ শতাব্দীতেই স্ট্যালিন (৪.৩ কোটি), মাও (৩.৭ কোটি), হিটলারের (২.১ কোটি) এর চেয়ে অনেক বেশী সিভিলিয়ান এর সরাসরি মৃত্যুর জন্যে দায়ী। আর নাৎসীদের হত্যার লিস্টে ইহুদীদের (.৫৩ কোটি) চেয়ে অনেক বেশী রয়েছে পূর্ব ইউরোপের স্লাভ জনগোষ্ঠী (১.০৫ কোটি)।
এছাড়া, হলোকস্টে যেমন ইহুদীদের কেবল তাদের এথনিক, রক্তের সম্পর্কের জন্যে টার্গেট করা হয়েছিলো তেমনি নাৎসীরা টার্গেট করেছিলো জিপসী ও স্লাভদের তাদের জাতীয়তার জন্যেই, ৭১ এ পাকিস্তানীরা টার্গেট করেছিলো হিন্দু ও বাঙ্গালীদের, রুয়ান্ডায় হুটুরা টার্গেট করেছিলো টুটসি দের। হলোকস্টকে অনন্য দাবীর বিরুদ্ধে সোচ্চার আরেকজন ইতিহাসবিদ হলেন ডেভিড স্ট্যানার্ড, যিনি উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকার আদিবাসীদের উপরে ইউরোপীয়ান কলোনিয়ালিস্টদের পরিচালিত গনহত্যা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন।(১) ১৬ শ শতাব্দী থেকে ১৯ শ শতাব্দী পর্যন্ত স্প্যানিশ, বৃটিশ, আমেরিকানদের হাতে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোটি কোটি আদিবাসীর মৃত্যু হয়। হলোকস্টে ইউরোপের ৬০ থেকে ৬৫ % ইহুদী মেরে ফেলা হয়, আমেরিকায় ৪ শতকের গনহত্যায় আদিবাসীদের সংখ্যা প্রি-কলাম্বিয়ান সময় থেকে ৯৫% কমে যায়। এমনকি দ্রুতহারে গনহত্যায়ও হলোকস্ট অনন্য নয়। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় মাত্র ৩ মাসে হুটু ঘাতকেরা সাড়ে আট লক্ষেরও বেশী প্রতিবেশী টুটসি জাতিভুক্তদের হত্যা করে। জনগোষ্ঠীকে আমূল নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যও হলোকস্টের অনন্য বৈশিষ্ট্য নয়। ইতিহাসে অনেকবারই বিভিন্ন স্থানে একটি পুরো জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছিলো এবং অনেকক্ষেত্রে সেসব গনহত্যা তাদের লক্ষ্যে সফলও হয়েছিলো। এছাড়া আরো অনেকেই বলেছেন নৃশংসতা, ব্যাপকতা, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তি, কোনো দিক দিয়েই হলোকস্টকে গনহত্যার ইতিহাসে অনন্য বলা যাবে না।
হলোকস্ট এবং অন্যান্য গনহত্যা গুলির তুলনামুলক আলোচনায় হাজার হাজার পাতা লেখা যাবে এবং সেটা খুব একটা ইন্টারেস্টিং আলোচনাও হবে না। এর চেয়ে অনেক বেশী ইন্টারেস্টিং বিশ্বসভ্যতায় হলোকস্ট এর শিক্ষা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ইহুদীদের মধ্যে পরিষ্কার বিভক্ত দুটি ধারার প্রতিক্রিয়া।
ইজরায়েল ও অন্যান্য বিভিন্ন দেশের ইহুদীদের এর বড়ো অংশের কাছে হলোকস্ট এতোই অনন্য যে এটা এখন ধর্মীয় বিশ্বাসের পর্যায়ে চলে গেছে। এই অংশটি হলোকস্টকে সভ্যতার একক ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তারা এতোই বদ্ধপরিকর যে তাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোনো কিছুকে প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিতে তারা নারাজ। হলোকস্ট-অনন্যতার দ্বাররক্ষী এই হাই প্রিস্ট দের বিভিন্ন উক্তি ও কার্যকলাপের এক লম্বা লিস্ট পাওয়া যাবে ৬ নং রেফারেন্সের The Holocaust and Genocide আর্টিকেল টিতে। আর্টিকেলটি থেকে কয়েকজনের কিছু উক্তি,
আমেরিকার হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের চেয়ারম্যান, “regarded comparison of the Holocaust with any other form of genocide as ‘blasphemous, as well as dishonest.’”।
“Of all he events in human history,” declares Ivan Avisar, “none is more compelling and disturbing than the Holocaust… The Holocaust was a unique or unprecedented historical experience… Hitler’s intent to exterminate an entire people is incomparable to any other episode of malice in the annals of human history.”
“We are not comparable. We are unique…, “ declared Abba Hillel Silver, “This fact is the one key to an understanding of Jewish experience. To attempt to fit us into the framework of the commonly-held conceptions of race and culture, to liken us to other nations, is to miss the very quintessence of Jewish culture, to overlook the essential text and thesis of our life.”
হলোকস্ট সারভাইভার এলি ভিজেল, যিনি পশ্চিমা মিডিয়ায় বহুল পরিচিত তার আত্মজীবনী ‘নাইট’ এর জন্যে এবং ইজরায়েল ও গনহত্যা বিষয়ে তার মতামতের জন্য, বলেছিলেন,
“To cheaply universalize the Holocaust would be a distortion of history,” says Elie Wiesel, and then, in vintage Orwellian doublespeak, “The universality of the Holocaust lies in its [Jewish] uniqueness.’ (৬)
হলোকস্টকে অনন্য রাখার চেষ্টা ইউরোপ-আমেরিকার একাডেমিক জগৎ-এও প্রবল। অনেক ইউনিভার্সিটিতে মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে স্পেশাল হলোকস্ট চেয়ার যাদের মূল কাজই হলো ইতিহাসে হলোকস্ট এর অনন্য অবস্থান প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাওয়া। এছাড়া ইতিহাস ডিপার্টমেন্ট গুলিতে যেসব ঐতিহাসিক হলোকস্টকে অনন্য স্বীকার করতে নারাজ, তাদের মার্জিনালাইজ করার সক্রিয় চেষ্টাও রয়েছে। জন ফক্স নামের একজন হলোকস্ট এর কলেজ কোর্স শিক্ষকের মতে, “Some historians or writers are deemed acceptable for entry into the fold of the chosen: if you accept the totally absurd uniqueness theory…, not only are you home dry but if you are non-Jewish you are actually feted. If you don’t, you are excluded and damned to hell in terms of your profession.” (৬)
শুধু একাডেমিয়া ও মিডিয়াতেই হলোকস্ট এর অনন্যতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধ নেই, বিশ্বাসীরা আর্ন্তজাতিক রাজনীতি, সংষ্কৃতি, সামাজিক পরিমন্ডলেও অত্যান্ত সক্রিয়। দঃ আফ্রিকার আর্কবিশপ ডেসমন্ড টুটু, বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী, বেশ কয়েকবার ইহুদীদের এই গোষ্ঠীর আক্রমনের শিকার হয়েছেন তার দেশের বর্ণবাদী সরকারকে নাৎসীদের সাথে তুলনা করায়। তার নিজের ভাষায়,
“There is a kind of Jewish arrogance,” says Tutu, “one can only call it that… I sometimes say that apartheid is as evil as Nazism and there have been Jews who say I am insulting them. Jews seem to think they have a corner on the market of suffering.” (৬)
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার হলোকস্ট এর এক স্মারক বক্তৃতায়, ইহুদীদের সাথে নাৎসী গণহত্যার অন্যান্য ভিক্টিমদের স্মরন করায় বিতর্কের মুখে পড়েন। জেরুজালেমের হিব্রু ইঊনিভার্সিটির প্রফেসর এহুদা বায়ের বলেন কার্টার হলোকস্ট থেকে ইহুদীদের আলাদা করে সর্বব্যাপী ইহুদী বিদ্দেষকে উৎসাহিত করছেন। ডেভিড স্ট্যানার্ড এর কথায়, “To Baer, the simple acknowledgement of the suffering of others constituted Jew-hating.” আমেরিকার বিখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান নেতা জেসি জ্যাকসন, ১৯৭৯ সালে ইজরায়েল সফরে যেয়ে তীব্র আক্রমনের শিকার হন শ্রেফ এই কারনে যে তিনি হলোকস্টকে ইতিহাসের অনন্য ট্র্যাজেডী না বলে অন্যতম ট্র্যাজেডী বলেন।
অনেকেই ‘সোফি’স চয়েস’ (http://en.wikipedia.org/wiki/Sophie’s_Choice(film)) মুভিটির কথা শুনেছেন। উইলিয়াম স্টাইরনের উপন্যাস থেকে ১৯৮২ সালে বানানো এই ছবিটির মূল চরিত্র এক পোলিশ ক্যাথলিক নারী, যে তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সহ নাৎসী কন্সেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী হয়। মুভিটির সবচেয়ে তুঙ্গ মুহুর্তে একজন নাৎসী অফিসার সোফিকে তার ছেলে অথবা মেয়ে, যে কোনো একজনের জীবন বেছে নিতে বলে। মেরিল স্ট্রিপ মতো অভিনেত্রী, যিনি অজস্র আলোচিত চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং প্রতি বছরেই যার জন্যে অস্কার নমিনেশন থাকে বাধা, তিনি তার জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছেন এই ছবিটিতে। স্টাইরনের উপন্যাস এবং মুভি দুটোই কিছু ইহুদী সমালোচকদের তোপের মুখে পড়ে হলোকস্ট ও নাৎসী ক্যাম্প কে অইহুদী অভিজ্ঞতা থেকে দেখানোর সাহস করায়। একজন টিপিক্যাল সমালোচকের আক্রমন নিয়ে এক পোলিশ বংশদ্ভুত লেখক বলেছিলেন,’ “Rosenfeld’s attack on… Styron is based on two premises: an unwillingness to see the universal implications of the Holocaust and indignation at Styron’s assumption that a Polish Catholic woman could be viewed as a representative victim of the camps.”। (৬) এই ধরনের ইহুদী সাংষ্কৃতিক ব্যাক্তিরা হলোকস্টকে ইহুদীদের একান্ত নিজস্ব সাংষ্কৃতিক ও নৈতিক উৎস মনে করে থাকে এবং তারা হলোকস্ট এর অন্য ঐতিহ্যে অন্য কোনো জাতিকে সামান্যতম ভাগ বসাতে দিতে নারাজ।
হলোকস্টকে অনন্য করার এই প্রবনতা কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকেই ছিলো না। বরং যুদ্ধের পরে নতুন রাষ্ট্র ইজরায়েল এর অধিকাংশ নাগরিক এর কাছে হলোকস্ট ছিলো লজ্জাজনক একটি অধ্যায়। বিশেষ করে ইউরোপের লক্ষ লক্ষ ইহুদী নাৎসী ক্যাম্পে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ভেড়ার মতো নিশ্চিৎ মৃত্যু মেনে নিলো এই প্রশ্নটি ছিলো প্রকট। সেসময়ে সারভাইভরদের চেয়ে আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিলো যুদ্ধের ইউরোপে যে কিছু ইহুদী সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়েছিল তাদের বীরত্বের প্রতি সম্মান জানানো। এই চিত্রটি সম্পূর্ন পাল্টে যায় ১৯৬৭ এর ৬-দিনের যুদ্ধের পর। ইজরায়েল এক মিরাকিউলাস যুদ্ধে মিশর, সিরিয়া, জর্ডানের মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে পশ্চিম তীর, সিনাই, গোলান সহ বিশাল এলাকা জয় করে। এই অভাবিত জয় এর পরে বিশ্বব্যাপী ইহুদীদের বৃহৎ অংশ হলোকস্ট এবং ১৯৬৭’র যুদ্ধকে দেখতে শুরু একই সূত্রে গাথা ঈশ্বরের প্ল্যান হিসেবে। তারা বিশ্বাস শুরু করে হলোকস্ট এর নিদারুন ঘটনার কারনেই এই বৃহত্তর ইজরায়েল ইহুদীদের প্রাপ্য। তারা প্রচার শুরু করে অন্য সব দেশ, জাতি, ইতিহাসের সাথে ইজরায়েলকে এক মাপকাঠিতে মাপা উচিৎ হবে না। অন্যক্ষেত্রে যেটা অন্যায় দখল বলে মনে হতে পারে, ইজরায়েল এর ক্ষেত্রে সেটা ন্যায়সংগত অধিকার। বলাই বাহুল্য যে বিশ্বসমাজে ইজরায়েল এর আলাদা ট্রিটমেন্ট পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠাই হলোকস্টকে অনন্য ও একক ঘটনা দাবী করার মূল উদ্দ্যেশ্য। বিশেষ করে ৮০’র দশক থেকে যখন পশ্চীম তীর আর গাজায় ইজরায়েল এর অবৈধ দখল সারা বিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়ে তখন থেকে হলোকস্ট এর বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে প্রচারনা বাড়তে শুরু করে।
সেলিব্রেটি লইয়ার এবং হারভার্ড প্রফেসর অ্যালান ডারশোভিৎস এর সরাসরি কথা, “The world owes Jews and the Jewish state [of Israel], which was built on the ashes of the Holocaust, a special understanding.”। (৬) হলোকস্ট এর ঐতিহাসিক জিগমুনড বাউম্যান স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে ইজরায়েল হলোকস্টকে ব্যবহার করে “as the certificate of its political legitimacy, a safe-conduct pass for its past and future policies, and, aboveall, as the advance payment for the injustices it might itself commit.” (১) র্যাব্বাই ইয়াকব নিউজনার এর মতে, “The ‘Holocaust’ is the Jews’ special thing, It is what sets them apart from others while giving them a claim upon others. That is why Jews insist on the ‘uniqueness’ of the Holocaust.” (৬) জোনাথন উচারে’র স্বীকারক্তি, “I think there is absolutely no question, as I look at the American Jewish experience that we have appropriated both the Holocaust and the creation of the state of Israel in a mythic fashion. The myth has even been given a name, though not by me, ‘From Holocaust to redemption.’ Israel is a resurrection and all the world’s great religions have a resurrection myth.” (৬)
ইহুদী জাতীয়তাবাদীদের আরেকটি স্পষ্ট প্রবনতা হলো যে তারা বিভিন্ন সময়ে নিজেদের পক্ষে কোনো পয়েন্ট কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে হলোকস্ট এর রেফারেন্স টানতে মোটেই দ্বিধা করে না। যখনই সুবিধা হয় তখনই হিটলার, নাৎসী আর হলোকস্ট এর কথা তুলতে দেরী হয় না। কিন্তু তাদের মতের বিরুদ্ধপক্ষ কোনো প্রসংগে হলোকস্টের কথা তুললেই ঢি ঢি পড়ে যায় এই বলে যে অপ্রাসংগিকভাবে হলোকস্ট এর রেফারেন্স টেনে এর পবিত্র স্মৃতির অপমান করা হচ্ছে। তারা এটা বুঝিয়ে দিতে চায় যে হলোকস্ট এর প্রসংগ তোলার অধিকার সবার নেই। এইসব হলোকস্ট এর গেটকিপারদের কার্যকলাপে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে আসলে সত্তর বছর আগের গনহত্যা নিয়ে তাদের ততটা আগ্রহ নেই যতটা আগ্রহ আছে বর্তমানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে। বর্তমানের রাজনৈতিক স্বার্থই অতীত ইতিহাসের অনন্যতা দাবীর প্রধান কারন।
এতক্ষন ইহুদীদের একাংশ কিভাবে হলোকস্ট কে অনন্য প্রতিপন্ন করে ইহুদী জনগোষ্ঠী ও ইজরায়েল এর জন্যে বিশেষ অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে সেটা দেখলাম। হলোকস্ট এর অনন্যতা নিয়ে ইহুদীদের আরেক অংশের প্রতিক্রিয়া না দেখালে চিত্রটা অসম্পুর্ন থাকে।
২০০ বছর আগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইহুদীদের উপর হতে নানা রেস্ট্রিকশন তুলে দিয়ে পর্যায়ক্রমে নাগরিক অধিকার দেয়া হতে শুরু হলে নতুন মুক্তি পাওয়া ইহুদী সমাজের মধ্যে দুটি ভিন্ন ধারা ক্রমেই স্পষ্ট হয়। শিল্পবিপ্লব আর আধুনিকায়নে প্রভাবে দ্রুত পরিবর্তনশীল ইউরোপে ইহুদীদের বড়ো অংশ নিজেদের স্বকীয় পরিচয় ধরে রাখার জন্যে হাজার হাজার বছরের পুরনো ট্রাডিশন আরো শক্তভাবে আকড়ে ধরে। অন্যদিকে ইউরোপীয়ান ইহুদীদের আরেকটি বড়ো অংশ ইউরোপীয়ান এনলাইটেনমেন্টে অনুপ্রানিত হয়ে ইউরোপের সেকুলার বুর্জোয়া জীবন-জিবিকার দিকে এগিয়ে যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ একেবারে ইহুদী ধর্ম ত্যাগ করে নামমাত্রে ক্রিশ্চিয়ানিটি গ্রহন করে মেইনস্ট্রীমে মিশে যাবার জন্যে আবার কেঊ কেউ সনাতন ইহুদী ধর্মকে আধুনিক বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদের আলোয় নতুন করে ঢেলে সাজাতে চায়। শিক্ষিত ইহুদীদের বিরাট অংশ রিফর্ম জুডাইজম বা প্রগ্রেসিভ জুডাইজমের অনুসারী হয়। সেকুলার এবং রিফর্মড ইহুদীরা দ্রুতই ইউরোপের ব্যবসা-বানিজ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সংষ্কৃতি, সমাজ-রাজনীতিতে সামনের সাড়িতে স্থান করে নেয়। ইহুদীরা সবচেয়ে উন্নতি করে জার্মানভাষী দেশগুলোতেই। ১৯ শতকের শেষ দশকগুলি থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর যুগটিতে ইহুদীরা জার্মান রাষ্ট্র ও সমাজের সাথে এতোটাই একীভূত হয়ে পড়ে যে জার্মান ইহুদীদের বৃহৎ অংশই জায়নিস্ট আন্দোলন (ইহুদীদের জন্যে পৃথক রাষ্ট্র) এর তীব্র বিরোধী ছিলো।
হাজার বছর ধরে ইউরোপে রাষ্ট্র ও সমাজের অত্যাচারের অভিজ্ঞতা নতুন মুক্তিপাওয়া শিক্ষিত ইহুদীদের বিশেষভাবে সহানুভূতিশীল করে তোলে মানবিকতাবাদ, যুক্তিবাদ, সাম্যবাদের পক্ষে আর বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে। ইহুদীরা ইউরোপের বিভিন্ন গনতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক বিপ্লবে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ইউরোপে গনতন্ত্র আর সাম্যবাদের পক্ষে ইহুদী বংশদ্ভুতদের অবস্থান এতোটাই প্রমিনেন্ট ছিলো যে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিরা আর্ন্তজাতিক সমাজতন্ত্রকে ইহুদী বিশ্ব-ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করতো। ইহুদীদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী ইউরোপের দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী, ক্যাথলিক, ফ্যাসিবাদী ইত্যাদি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ইহুদী-বিদ্বেষের মূল কারন ছিলো না। বরং এসব গোষ্ঠী মনে করতো দেশবিহীন, আর্ন্তজাতিকতাবাদী সেকুলার ইহুদীরা ইউরোপের জাতীয়, ধর্মীয়, ঐতিহাসিক পার্থক্য ঘুচিয়ে এক নতুন সমাজ গড়তে চায়।
ইউরোপে হিটলার ক্ষমতায় আসার সময় থেকে সেক্যুলার এবং প্রগতিশীল ইহুদীদের প্রধান আশ্রয় হয়ে পড়ে আমেরিকা। গত সাত দশক ধরেই ইহুদীরা আমেরিকার সবরকমের প্রগতিশীল রাজনীতি, সামাজিক-সাংষ্কৃতিক আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা রেখে আসছে। বর্ণবাদ বিরোধীতা, যুদ্ধ-সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা, সব রকমের ডিসক্রিমিনেশন এর বিরোধীতা, ইত্যাদি ইস্যুতে ইহুদীদের অধিকাংশ সবসময়েই প্রগতিশীলতার পক্ষে ছিলো। এর মূল কারন আমেরিকার শিক্ষিত-প্রতিষ্ঠিত ইহুদীদের অধিকাংশ প্রগ্রেসিভ, রিফর্ম জুডাইজম এর অনুসারী। রিফর্ম জুডাইজম এর মানবিক ও আর্ন্তজাতিক প্রিন্সিপাল গুলি নিয়ে পরে কখনো আলোচনা করা যাবে।
আমেরিকার প্রগ্রেসিভ ইহুদী বুদ্ধিজীবি, সাংষ্কৃতিক ব্যাক্তিদের বেশীরভাগই মনে করেন যে হলোকস্ট কে অনন্য হিসেবে দেখা সমগ্র মানবজাতি তো বটেই এমনকি ইহুদীদের জন্যেও অত্যেন্ত ক্ষতিকর। কোনো কিছুকে অনন্য-একক প্রতিপন্ন করা মানেই সেটাকে যুক্তি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যার নিয়মের বাইরে অবস্থান দেয়া, সেটাকে অব্যাখ্যেয় (Inexplicable) মেনে নেয়া। হলোকস্টকে অব্যাখ্যেয় বললে আমরা বুঝতে ব্যর্থ হবো মানুষের মধ্যে এরকম ভয়াবহ নৃশংসতার উৎস কোথায়। কিছুকে অনন্য বলার অর্থ সেটি পুনরায় অন্যকোথাও ঘটার সম্ভাবনাকে অগ্রাহ্য করা। কিন্তু আমরা বার বার দেখেছি যে তীব্র বিদ্বেষে কোনো একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ণ করার প্রচেষ্টা কেবল নাৎসীদের ট্রেডমার্ক নয়। একই ভয়ংকরতা দেখা গিয়েছে পরে অন্য স্থানে, অন্য জাতির মধ্যে। বিভিন্ন গনহত্যার শিকার গোষ্ঠীদের মধ্যে যন্ত্রনার পার্থক্য করা অসাধু এবং অনৈতিক। নাৎসী ডেথ ক্যাম্পের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাথে স্ট্যালিনের গুলাগের অভিজ্ঞতার পার্থক্য খোজা অনুচিত, বিশেষ করে যখন দুই ক্ষেত্রেই প্রায় অবশ্যাম্ভী পরিনতি ছিলো মৃত্যু। প্রগ্রেসিভদের মতে হলোকস্ট কে অনন্য দাবী করে ইহুদী জাতীয়তাবাদীরা কেবল অন্য গনহত্যার ভিক্টিমদের অপমানই করছে না, ইহুদীদের প্রতি অন্যান্য জাতির বিরক্তিকেও উস্কে দিচ্ছে। তারা মনে করে হলোকস্ট ভিক্টিম হিসেবে ইহুদীদের বিশেষ দ্বায়িত্ব পৃথিবীর সব ধরনের গনহত্যা, গন অত্যাচারের প্রতি সংবেদনশীল থাকা।
প্রগতিশীল ইহুদীদের অনেকেই জাতীয়তাবাদী ইহুদীদের নিজস্ব এবং জাতীয় স্বার্থে হলোকস্টকে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সোচ্চার। এই বিরোধীতা অবশ্যাম্ভীভাবেই তাদের জাতীয়তাবাদী ইহুদীদের বিশেষ আক্রমনের লক্ষ্যে পরিনত করে। যেহেতু ইহুদীদের ইহুদী-বিদ্বেষী বলা হাস্যকর শোনায় সেহেতু এদের জন্যে বাধা টাইটেল হলো self-hating jew। আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত self-hating jew সম্ভবত নোয়াম চমস্কি। তার খুব কাছেই আছেন নরম্যান ফিংকেলস্টাইন (http://en.wikipedia.org/wiki/Norman_G._Finkelstein)। ২০০১ সালে ফিংকেলস্টাইনের লেখা The Holocaust Industry (http://www.amazon.com/The-Holocaust-Industry-Reflections-Exploitation/dp/1859843239) বইটি, একটি বিশেষ গোষ্ঠী হলোকস্টকে কিভাবে নিজ স্বার্থ ও মতের পক্ষে নগ্নভাবে ব্যবহার করে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী লেখা। ফিংকেলস্টাইন তার লেখার জন্যে যে জাতীয়তাবাদী ইহুদীদের কাছ থেকে তীব্র হেনস্থা শিকার হয়েছিলেন এবং এখনো হচ্ছেন।
আব্রাহাম বার্গ ইজরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট এর স্পীকার ছিলেন এবং এক সময়ে আধুনিক ইহুদীদের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান World Zionist Organization এর নেতা ছিলেন। বার্গ ২০০৭ সালে একটি বই লেখেন The Holocaust is Over; We Must Rise from Its Ashes (হলোকস্টের সমাপ্তি ঘটেছে; আমাদের উঠে দাড়াতে হবে মৃতের স্তুপ থেকে), যেখানে তিনি বলেন যে হলোকস্ট কে আলাদা ভাবে গন্য করার অবসান হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় আহত জাতির পক্ষে সর্বব্যাপি ভয়ংকর ঘটনার ছায়া থেকে বেড়িয়ে, উপর থেকে সবার পার্সপেক্টিভ থেকে ইতিহাসের মধ্যে ঘটনার অবস্থান দেখতে পারা সহজ হয় না। বার্গ বলেন যে হলোকস্ট ইহুদীদের জন্য বিশেষ অর্থবহ ঘটনা হলেও বিশ্বসমাজের বাকী সবার জন্যে কেবল বিংশ শতাব্দীর একের পর এক নৃশংশ গনহত্যার অন্যতম। সুতরাং হলোকস্টকে দেখতে হবে যে কোনো জাতির capacity to do absolute evil এর উদাহরন হিসেবেই। বার্গ তার বই এর জন্যে অনেক দিক থেকে তীব্র সমালোচনার লক্ষ্য হন এবং যথারীতি তার কপালে self-hating jew এর তকমা জোটে। (৩)
প্রগতিশীল ইহুদীদের চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যাবে যেকোনো সাইন্স ফিকশন ভক্তের প্রিয় ব্যাক্তিত্ব আইজাক আসিমভ এর নিজের ভাষ্যে, (৬)
“ ১৯৭৭ সালে এক আলোচনা সেমিনারে আরও অন্যান্যদের সাথে আমি মঞ্চে ছিলাম এলি ভিজেল এর সাথে। এলি ভিজেল, যিনি হলোকস্ট সারভাইভ করেছেন এবং সারাক্ষন সেটা নিয়েই কথা বলেন। আমি এলি’র একটা বক্তব্যে খুবই বিরক্ত হলাম যখন এলি বললেন যে তিনি কখনো বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেন না কারন অনেক বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ার হলোকস্ট পরিকল্পনা-পরিচালনায় অংশগ্রহন করেছিলো। কি অদ্ভুদ জেনারালাইজেশন! ঠিক এভাবেই হাজার বছর ধরে ইহুদী-বিদ্বেষীরা বলে এসেছে যে ‘আমি ইহুদীদের বিশ্বাস করতে পারি না কারন কোনো এক সময়ে কিছু ইহুদীই প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে মেরেছে’।
আমি এলি’র কথাবার্তায় চুপ না থাকতে পেরে বলে উঠলাম, “ মিঃ ভিজেল, কোনো একটি গোষ্ঠী বা জাতি চরম বর্বরতার শিকার হয়েছে বলেই সেই গোষ্ঠীকে বিশেষ রকম নিস্পাপ, পুন্যবান বলা যাবে না। বর্বরতা-গনহত্যার শিকার হওয়া থেকে একটা কথাই ডেফিনিটলি বলা যাবে যে ঐ সময়টিতে গোষ্ঠীটি ছিলো অপেক্ষাকৃত দূর্বল, অত্যাচার ঠেকানোর শক্তি তাদের ছিলো না। পরিস্থিতি ভিন্ন হলে, দূর্বল গোষ্ঠীটি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী হলে হয়তো তারাই অত্যাচারীর ভূমিকায় নিতো।“
ভিজেল উত্তেজিত হয়ে বললো, “একটা উদাহরন দেখাও দেখি যখন ইহুদীরা অন্যের উপরে অত্যাচার করেছিলো”। আমার কাছে উত্তর রেডীই ছিলো। “ খ্রীঃ পূঃ দ্বিতীয় শতকে প্যালেস্টাইনে ম্যাকাবিয়ান রাজত্বের সময়ে, জুডিয়া’র অধিপতি জন হাইরক্যানিউস, এডম দেশ জয় করে এবং এডমবাসীদের বলে দেয়, হয় সবাইকে ইহুদী ধর্ম গ্রহন করতে হবে নইলে সবাই তলোয়ারের নীচে পরবে। এডমবাসীরা বুদ্ধিমানের মতো ধর্মান্তর গ্রহন করলো। অবশ্য নতুন ইহুদীরা বেচে গেলেও সবার কাছে আদি ইহুদীদের চেয়ে নীচু শ্রেনীর ট্রিটমেন্ট পেতো কারন ইহুদী হলেও তারা এডমবাসী এটা কেউ ভুললো না।“
ভিজেল গলা চড়িয়ে উত্তর দিলো, “সেটাই ছিলো একমাত্র উদাহরন”।
আমি বললাম, “সেটাই ছিলো জানা ইতিহাসের একমাত্র সময় যখন ইহুদীরা অন্যদেশ জয় করতে পেরেছিলো। একের মধ্যে এক, খুব ভালো ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দেয় না।“
এর পর আর কথা বাড়ে নি। ইচ্ছে করলে আমি আরো বলতে পারতাম বাইবেলে ডেভিড আর সলোমনের সময়ে কানানবাসীদের কি হাল হয়েছিলো সেটা বিস্তারিত বলতে। আমি যদি ভবিষৎদ্রষ্টা হতাম তবে হয়তো আগে থেকেই উল্লেখ করতে পারতাম আজকের দিনে ইজরায়েলে প্যালেস্টাইনীদের উপরে যা হচ্ছে তার কথা। আমেরিকান ইহুদীরা হয়তো পরিস্থিতি আরেকটু ভালোভাবে উপলদ্ধি করতে পারতো যদি প্যালেস্টাইনীরা ইজরায়েলে ক্ষমতায় থাকতো আর ইহুদী কিশোরেরা প্যালেস্টাইনী ট্যাংকের দিকে ঢিল ছুড়তো।
ঠিক এরকমই এক তর্ক একবার আমি করেছিলাম আব্রাহাম ডেভিডসন নামের এক ব্রিলিয়ান্ট সাইন্স ফিকশন লেখকের সাথে। আব্রাহাম সে সময়ে অর্থোডক্স (সনাতন) জুডাইজমের খুব ভক্ত ছিলো। আব্রাহামও এলি ভিজেল এর মতো আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো ইহুদীরা কবে কোন জাতির সাথে অসহিষহ্নু আচরন করেছে। আমি আব্রাহামকে বললাম, “তুমি আর আমি এমন এক দেশে থাকি যেখানে ৯৫% লোকই ইহুদী নয়। তবু আমরা খুব ভালো ভাবেই আছি এই দেশে। যদি চিত্রটা অন্যরকম হতো, আমরা যদি জেন্টাইল (অ-ইহুদী, সাধারনত ক্রিশ্চিয়ানদের বোঝায়) হতাম এবং ৯৫% অর্থোডক্স ইহুদীদের দেশে থাকতাম তবে আমরা কতটা ভালো থাকতাম বলে মনে হয় তোমার?” আব্রাহাম আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় নি।”
এতোক্ষন ধরে এইসব হলোকস্ট, ইহুদী, ইতিহাসে অনন্যতা এসব নিয়ে লেখা পুরোটাই আসলে মূল বক্তব্যের উপক্রমনিকা। এই কথাগুলি লেখার চিন্তা মাথায় এসেছিলো এক মাসেরও কিছু আগে, রোহিংগা রিফিউজী নিয়ে যখন কদিন মিডিয়া আর ব্লগজগতে বেশ আলোড়ন চলছিলো। তখন সময়ের অভাবে লেখা হয়নি।
রোহিংগা ইস্যুতে আমার ব্যক্তিগত প্রথম চিন্তা হলো রোহিংগা রিফিউজী নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অবস্থান বিতর্কিত হলেও পুরোপুরি অসমর্থনযোগ্য নয়। দারিদ্রতার অজুহাতে রিফিউজীদের ফিরিয়ে দেয়া কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। কিন্তু প্র্যাক্টিকাল এবং ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিতে রোহিংগাদের দীর্ঘস্থায়ী আশ্রয় না দেবার যুক্তিকতা রয়েছে। এটা পরিষ্কার যে বার্মার সামরিক জান্তা সরকার এবং বার্মার বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর বৃহদাংশ, রোহিংগাদের নিয়ে একটা ‘ফাইনাল সলিউশন’ চায়। সুযোগ পেলে তারা দ্রুত ১০০% রোহিংগাদেরকেই বার্মা থেকে বিতাড়ন করবে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রোহিংগাদের দীর্ঘমেয়াদী আশ্রয় দিলে তা বার্মাতে রোহিংগাদের এথনিক ক্লিনসিংকেই উৎসাহিত করবে। বাংলাদেশ সরকার আর্ন্তজাতিক সমাজকে এই বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষন না করে বার বার কেনো যে নিজেদের অসামর্থ্যের অজুহাত তুলছে এটা আমার কাছে অপরিষ্কার। তবে এই ব্লগেই রোহিংগাদের আশ্রয় দেয়া-না দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, এ নিয়ে কথা বাড়ানোও এই লেখার উদ্দ্যেশ্য না।
রোহিংগা আশ্রয়প্রার্থীদের ছবি যখন মিডিয়াতে প্রকাশ পাওয়া শুরু হলো তখন অবশ্যাম্ভীভাবেই এই ছবিগুলো অনেককে মনে করিয়ে দিলো ৭১ এর বাংগালী রিফিউজিদের কথা। জাতির কাছে মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে শক্তিশালী কালেক্টিভ ইমেজগুলির মধ্যে ভারতে আশ্রয়ের জন্যে ছুটে চলা হতবিহবল বৃদ্ধ-শিশু-নারী-পুরুষের সাদাকালো ছবিগুলি অন্যতম। আমাদের স্মৃতিতে ঐ অসাধারন ছবিগুলি স্থায়ীভাবে গেথে রয়েছে। এজন্যে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে মিডিয়া-ব্লগে বলেছিলো যে জাতির কোটির বেশী রিফিউজি ৭১ এ চরম বিপদের সময়ে দরিদ্র ভারতে আশ্রয় পেয়েছিলো, সেই জাতির বর্বরতার শিকার, আশ্রয়হীন মানুষদের প্রতি আরো বেশী সংবেদনশীল হওয়া উচিৎ। কিন্তু দেখা গেলো এই তুলনা আসা মাত্রই প্রগতিশীল, মানবতাবাদীর ব্যাজ পরা অনেকে মৌচাকে ঢিল পরার মতো আলোড়িত হয়ে উঠেছে। অনেকে নানা পয়েন্টসহ লম্বা ফিরিস্তি দিলো কি কারনে এই তুলনার কথা মুখে আনাও ধৃষ্টতা তার সপক্ষে। কেউ আবার মানবতাবাদের মা বাবাকে গালাগালি করে বুঝিয়ে দিলো আমাদের মতো গরীব দেশের এই রাজনৈতিক ভাবে সেন্সিটিভ সময়ে মানবতার কথা ভাবা ক্ষতিকর বিলাসিতা।
বাংগালী জাতির জন্যে বিংশ শতাব্দী অত্যেন্ত traumatic একটি শতক। সবচেয়ে বড়ো মনুষ্য-সৃষ্ট দূর্ভিক্ষ, অন্যতম ভয়াবহ গনহত্যা, নীরব ও সরব এথনিক ক্লিনসিং, একের পর এক প্রলয়ংকরী প্রাকৃতিক দূর্যোগ এরকম একের পর এক আঘাত এসেছে বাংগালীদের উপরে। কিন্তু এর কারনে বাংগালীরা বিশ্বের জাতিদের মধ্যে কোনো বিশেষ স্থান দাবি করতে পারে না। আমরা বলতে পারি না অন্য সবার জন্যে প্রযোজ্য মানদন্ড আমাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না। বরং এই মৃত্যুর মিছিল থেকে আমাদের সারা বিশ্বজুড়ে, সর্বসময়েই মানবিকতার লংঘন এবং আনুষ্ঠানিক নৃশংশতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। আমাদের মানবতাবোধ, ন্যায়বিচার প্রত্যাশা ১৯৭১ এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে আমরা লক্ষ প্রানের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন জাতির প্রকৃত আত্মিক উন্নতির পথ রুদ্ধ করবো।
৭১ এর অনন্যতা বিষয়ে আলোচনা অত্যেন্ত বিতর্কিত এবং এসম্পর্কে কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমি এই লেখার কলেবর আর বাড়াতে চাচ্ছি না। যদি কেঊ এনিয়ে আলোচনায় আগ্রহী হয় তবে কমেন্ট সেকশনে এ নিয়ে কথা বলা যাবে।
রেফারেন্সঃ
১। The dangers of calling the Holocaust unique By David E Stannard
http://www.codoh.com/library/document/530
২। Lecture 1: Is the Holocaust Unique?
http://www.jewishagency.org/JewishAgency/English/Jewish+Education/Compelling+Content/Jewish+Time/Festivals+and+Memorial+Days/Holocaust+Memorial+Day/Meanings/meanings1.htm
৩। Is the Holocaust Unique?
৪। Debating the uniqueness of the Holocaust
http://www.codoh.com/library/document/529
৫। The Holocaust Obsession
৬। THE HOLOCAUST AND GENOCIDE
http://www.bibliotecapleyades.net/sociopolitica/sociopol_holocaust09b.htm
৭। Rethinking the Holocaust By YEHUDA BAUER
http://www.nytimes.com/books/first/b/bauer-rethinking.html
৮। The Guiding Principles of Reform Judaism
http://ccarnet.org/rabbis-speak/platforms/guiding-principles-reform-judaism/
রোহিঙ্গা ইস্যুতেও লেখকে নির্মোহ আবেগহীন বাস্তব মন্তব্য খুবই ভাল লেগেছে 🙂
অসাধারণ…গতানুগতিকের বাইরে একটি লেখা।
লেখককে ধন্যবাদ।আর উপসংহারটাও দুর্দান্ত 🙂
শুধু ইহুদিদের সিঙ্গল আউট করা হল কেন?
ইউক্রেনের ইতিহাসে লেখা হয় হলডোমারের চেয়ে বড় গণ নিধণ আর হয় নি।
আরমেনিয়ামদের কাছে আর্মেনিয়াম জেনোসাইড, হলোকাস্টের থেকে অনেক বড় ঘটনা বলে বিবেচিত।
সব জাতিই তার ক্ষুদ্র ইতিহাসে নিমজ্জিত। অধিকাংশ ভারতীয়দের কাছে বিবেকানন্দর মতন যুগপুরুষ আর নেতাজির মতন দেশপ্রেমী পৃথিবীতে জন্মায় নি। অধিকাংশ আওয়ামী লিগারের কাছে মুজিবই যুগশ্রেষ্ঠ পুরুষ।
জাতীয়তাবাদের শুরুইত কুয়োর ব্যাঙদের নিয়ে।
যাহাকিছু আমাদের তাহাই শ্রেষ্ঠ-এই বিশ্বাসেই চলে জাতীয়তাবাদ।
তবে হলডোমার এবং হলোকাস্ট এই দুই এর তুলনা এমনিতে মুশকিল এই জন্যে যে, এদের হিটলার আর স্টালিনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে কোন তৃতীয় শক্তি ছিল না। ইউক্রেনের দাবিতে এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান হলডোমার আর হলোকাস্টকে সমান ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাও সাহায্যের জন্যে ভারতে পালানোর উপায় ছিল-ইহুদিদের পালানোর কোন স্থান ছিল না ইউরোপে। ইউক্রেনেও লোকজনের অন্য উপায় ছিল না।
বল্কান স্লাভ জেনোসাইড বা আর্মেনিয়াম মূলত সিভিল ওয়ার থেকে উদ্ভুত জেনোসাইড এবং মাত্রা ও কালে বোধ হয় হলোকাস্ট বা হলডোমারের সাথে এক বেঞ্চে বসায় যোগ্যতা পাবে না।
@বিপ্লব পাল,
ইহুদীদের সিংগেল আউট করার কোনো উদ্দ্যেশ্য এই লেখার পিছনে ছিলো না। কেউ যদি এই মেসেজ পায় তবে সেটা আমার কমিউকেট করার ব্যর্থতা। আমি উল্লেখ করেছি এই পুরো লেখার উদ্দ্যেশ্য বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কিছু বাংলাদেশী’র অ্যাটিচিউড। কারো ইতিহাস অতুলনীয় নয় এটাই মূল কথা।
আমি লেখাতে উল্লেখ করেছি যে গত আধুনিক যুগে বিশ্বে, প্রগ্রেসিভ ইহুদীদের মতো ছোট একটি জাতি গ্রুপ, আর্ন্তজাতিকতা, মানবিকতা, জ্ঞান-যুক্তিবাদের জন্যে যতটা অবদান রেখেছে অন্য কেউ তার ধারে কাছে নেই। ২০১০ এর আমেরিকার সেনসাসে দেখা গেছে ভারতীয় বংশদ্ভুতরা এখন আমেরিকার সবচেয়ে ধনী (ইহুদীদের পিছনে ফেলে) এবং শিক্ষিত গোষ্ঠী। ইহুদী-আমেরিকানরা, আমেরিকার গনতন্ত্র, মানবতা, ন্যায়-বিচারের জন্যে যতটা কমিটেড, আশাকরি ভারতীয়-আমেরিকানরা সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত মাইনরিটি হিসেবে সেরকমই কমিটমেন্ট দেখাবে।
@সফিক, আপনার দেয়া মেসেজটি খুব সহজেই ধরতে পেরেছি। এতটা সহজবোধ্য ভাবে মেসেজটি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। হলোকাস্টকে নিয়ে যে বাজারীপনা চলছে লেখক সেটার প্রতি ইন্ডিকেট করেছেন, এখানে কোন ইহুদিকে ভিকটিমাইজ করা হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না আমার @বিপ্লব পাল।
দারুণ লেখা।
আমি জার্মানিতে হলোকাস্ট মেমোরিয়াল দেখেছি, ওয়াশিংটন ডিসিতেও। সেখানে এত বড় একটা মিউজিয়াম করায় অবাকই হয়েছিলাম খানিক। অবশ্য তখনও নাদান ছিলাম, আমেরিকান রাজনীতিতে মস্তবড় ইহুদী লবির সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।
আর জার্মানিতে যেমন হলোকাস্ট সম্পর্কে মেমোরিয়াল করেছে, আমেরিকা কী কিউবা থেকে ইরাক নিয়ে মিউজিয়াম করতে পারবে?
গণহত্যা গণহত্যাই। আমরা নিজেরাই এর শিকার হয়েছি একাত্তরে।
গণহত্যার শিকার একটি জাতি কিভাবে অন্য গণহত্যাকে খাটো করে দেখতে পারে তা বুঝা অবশ্য মুশকিল। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে হয়েছে বিপরীতটা- নিজেরাই যেন নিজেদের উপর চলা গণহত্যাকে অস্বীকার করলেই বাচি।
Holocaust কে অন্য গণহত্যা থেকে আলাদা রূপ দেয়ার চেষ্টা অসততা ছাড়া আর কিছুই না। অনেকে আবার Holocaust কে অস্বীকার করাকে জঘন্য অপরাধ মনে করেন। হ্যা, একটি গণহত্যাকে অস্বীকার করা জঘন্য অপরাধ, কিন্তু এটা কেন শুধু একটিমাত্র ক্ষেত্রে?
খুব কাজের একটি লেখা। লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
Elie Wiesel কে আমার সব সময়ই কপট মনে হয়েছে। ৭/৮ বছর আগে তাঁর Night অনুবাদ করেছিলাম, কিন্তু ছাপানো হয়নি। আমি তাকে আর বিশ্বাস করিনা মানুষ হিসেবে। তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা তাকে ঠিক মানুষ করতে পারেনি। আমি বরং Primo Levi কেই বেশি পছন্দ করি।
@আদনান,
Night এর অনুবাদটা আপত্তি না থাকলে দিয়া দিতে পারেন মুক্তমনায়। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার একটা দলিল থাকল আর কী। 🙂
সফিক, এত চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। আমেরিকা ইসরাইলের স্পন্সার হওয়ার পর থেকেই এর আসল ইতিহাসটা বিকৃত হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী যুগে যুগে ঘটা সব জেনোসাইডের বিরুদ্ধেই সচেতনতা তৈরি করা উচিত, কিন্তু হলোকাস্টের ব্যাপারটাকে যে এপিক প্রপোরশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটা আসলেই অকল্পনীয়। জানামতেই আট লাখেরও বেশী টুটসি মারা পরেছিল রুয়ান্ডায়, সার্বদের উপর আজকে থেকে নাকি, কত দশক ধরেই না চলেছে অত্যাচার, নেটিভ ইন্ডিয়ানদের যেভাবে সিস্টেমিকভাবে মেরে কেটে সাফা করে দেওয়া হয়েছে তার কথাই বা ক’জনা বলে, আর ৭১ এর কথা না হয় নাই বা বললাম। এদের পেছনে আমেরিকার মত শক্তিশালী স্পন্সর জোটেনি দেখেই বোধ হয় তাদের কথা ফেনিয়ে ফেনিয়ে লেখা হয় না বিশ্ব-ইতিহাসের পাতায়। ইসরাইল এবং হলোকাস্টের ব্যাপারটা আমেরিকার রাজনৈতিক এজেন্ডার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট তো অনেক দূরের কথা, প্রেসিডেন্টের পদে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই তাদের ইসরাইল হিযরত করে প্রমাণ করতে হয় যে তারা যথেষ্ট পরিমাণে ‘আমেরিকান’।
@বন্যা আহমেদ,
সবাই না, তবে আমি বেশকিছু ইহুদিকে জানি যারা মনে করে যে কষ্ট ভোগে শুধু তাদেরই একচেটিয়া অধিকার রয়েছে। তাছাড়া তাদের হলোকাষ্ট তো একটা ব্যবসা! কেউ কেউ তো দারূন কামাচ্ছে!
@বন্যা আহমেদ,দিনে দিনে আমেরিকায় ক্রিশ্চিয়ান আর ইহুদী কনজারভেটিভ দের সখ্যতা এতো বাড়ছে যে অচিরেই হয়তো দেখা যাবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট ঘোষনা দিচ্ছে যে নির্বাচনে জিতলে Inaugural ভাষন দেবে জেরুজালেম থেকে, ওয়াশিংটন থেকে নয়। এখনই তো অনেক রক্ষনশীল পলিটিক্যাল নেতা-নেত্রী একই সাথে আমেরিকা-ইজরায়েল এর পতাকার ল্যাপেল পিন পরে কোটের উপরে।
চমতকার তথ্য ও যুক্তি সমৃদ্ধ লেখা।
ইহুসী হলোকাষ্ট সম্পর্কে তেমন কিছু বলার নেই, অনেকেই বলেছেন। ব্যাপারটি খুবই ভয়াবহ ও ঘৃন্য ও হলেও এর জের ধরে বিশেষ মর্যাদা পাবার দাবী সমর্থন করা যায় না। মূল অভিযুক্ত পক্ষ যেখানে নিজেদের দায় মেনেই নিয়েছে, নিজেরাই দায়ীদের খুঁজে শাস্তির ব্যাবস্থাও করছে, আর্থিক ক্ষতিপূরন দিয়েছে সেখানে এই নিয়ে আর বিশেষ মাতমের তেমন কিছু নেই। ইতিহাসের অংশ হিসেবেই এটা থাকা উচিত। তবে আরেক ধরনের প্রবনতা আছে ইহুদীদের ধর্মগত ভাবে প্রতিপক্ষ হিসেবে এই গনহত্যাকে লঘু করার কিংবা আদৌ হয়নি এমন ধারনা প্রচার করার, এটাই কোন ভাবেই সমর্থনীয় নয়।
বাংলাদেশের গনহত্যার বিষয়টি আলাদা। এখানে পরিষ্কারভাবে দায়ী পাক সরকার অভিযুক্তদের বিচার শাস্তি, আর্থিক ক্ষতিপূরন তো দুরের কথা এমনকি আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে মৌখিক দূঃখপ্রকাশও করেনি। যুদ্ধপরাধীদের বিচার করবে লিখিতভাবে এমন চুক্তিতে সই করে ১৯৫ জন সেনা যুদ্ধপরাধীদেরও বিচার করেনি, এভাবে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবেই শুধু গনহত্যার দায় নয়, বেঈমানীর দায়ও বয়ে বেড়াচ্ছে। অবশ্য তিক্ত হলেও সত্য যে এখানে আমাদেরও কিছুটা দায় পরোক্ষ হলেও আছে। আমরা পাকিস্তানের ওপর সেভাবে চাপ দেওয়া তো দুরের কথা, এমনকি গনহত্যা/গনধর্ষনের বিষয়টিও তেমন ভাবে বহিঃবিশ্বে প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করতে পারিনি।
বর্তমানের রোহিংগা সমস্যা নিয়ে দৃষ্টিভংগীও আমারই কথা। মানবতার দাবী সকলের আগে, বিপন্ন মানুষকে সাহায্য করার প্রায়োরিটি সবার আগে, সে যে জাতি ধর্ম বর্নের হোক না কেন। তবে সব সময় ব্যাপারটি এত সরল থাকে না।
– আসলেই তাই। ব্যাপারটি বেশ বিতর্কিত হলেও এক কথায় বলা যায় না যে সরকার বিপন্ন মানুষদের ফিরিয়ে দিয়ে ভুল বা অন্যায় করেছে। এই ইস্যুতে ব্লগে ব্লগে বহু তর্কাতর্কি হয়েছে। তাতে মনে হয়েছে সচেতন জনতা যারা রোহিংগাদের দেশের মাটিতে আশ্রয় দেওয়ার ঘোর বিরোধী তাদের মূল পয়েন্ট বাংলাদেশ নিজেও দরিদ্র দেশ এখানে নয়, মূল পয়েন্ট রোহিংগাদের হাত ধরে জামাত শিবিরের ভোট ব্যাংক বেড়ে যাবে এখানে। আমি ঠিক বুঝি না এসব ক্ষেত্রে কি বলা যায়। অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে অভিযোগ সত্য হবার সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে এটাও চিন্তা করেছি যে আজ নিজামী মুজাহিদ এদেরও অসহায় পরিবার বা নিষ্পাপ শিশু জীবন রক্ষার্থে আমার কাছে এলে কি আমি তারা বড় হয়ে রাজাকার হবে এই আশংকায় তাড়িয়ে দেব? বিপন্ন মানুষের প্রথম পরিচয় কি হওয়া উচিত?
এসব নিয়ে নানান গরম তর্ক হয়েছে, একটি জিনিস বুঝেছি যে আমরা এমনই এক দেশের নাগরিক যাদের অন্য দেশের বিপন্ন লোকের প্রতি মানবতা দেখানোরও ক্ষমতা নেই, না, সেটা দারিদ্র্যের কারনে নয়। সেটা হল আমরা নিজেরাই নিজের দেশের নাগরিক কে কে নাগরিক না সেটা যাচাই করতে পারব না বলে, নইলে রোহিংগারা আমাদের দেশের পাসপোর্ট পাবে, জামাত শিবিরের ভোট ব্যাংক বৃদ্ধি করবে এসব অভিযোগ কেন চিন্তা করতে হয়।
– খুবই ভাল পয়েন্ট। শতভাগ একমত। নিজেদের ভেতর তর্কাতর্কি না করে এ লাইনে দাবী তোলা উচিত ছিল। তবে অভিজ্ঞায় দেখেছি যে এসব ক্ষেত্রে বিতাড়িত পক্ষের হয়ে কোন না কোন দেশের সরকারের দাঁড়াতে হয়, চালাতে হয় কূটনৈতিক ততপরতা, পক্ষে বড় শক্তি পাওয়া গেলে আরো ভাল। ‘৭১ সালে ভারত সরকার সরাসরি আমাদের শরনার্থীদের পক্ষ না নিলে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সহানুভূতি অর্জন মোটেও সহজ সাধ্য হত না।
– আবারো বলতে হয় আমার অনুভূতিই প্রকাশ পেয়েছে। তবে আগেই বলেছি যে মূল আপত্তি আমার কাছে গরীব দেশের কারনে তেমন মনে হয়নি। জামাতি ভোট ব্যাংক বেড়ে যাবে এই কারনই মূখ্য মনে হয়েছে। সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছি এই ইস্যুতে যারা মানবতার পক্ষের কথাবার্তা বলছেন তাদের অনেককেই এক পর্যায় জামাত শিবিরের ছদ্মবেশী এজেন্ট চিহ্নিত করার প্রয়াসে। এই তালিকায় জাফর ইকবালের মত লোকেও বাদ পড়েননি। ওনারও অপরাধ ছিল মানবতার দাবী কথা বলা, জামাত শিবিরের ভোট ব্যাংক বেড়ে যাবে এ লাইনে বিপ্নন মানুষ তাড়িয়ে দাও জাতীয় কথাবার্তা না বলা। রোহিংগা ইস্যুতে দ্বি-মতের অবকাশ অবশ্যই আছে, আশ্রয় না দেবার পক্ষেচিন্তা করার মত পয়েন্ট আছে, তাই বলে মানবতার কথা বললে জামাত শিবির চিহ্নিত করার মানে বুঝি না।
জামাত শিবির, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আসলে শুধু সরাসরিই নয়, পরোক্ষ ভাবেই দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। দেশের এক বড় সংখ্যক মানুষের চিন্তা চেতনা মনে হয় অনেক সময়ই জামাত শিবির ফোবিয়ার কারনে অনেক সময়ই সরল পথে চলে না। বুয়েটের সাধারন ভিসি হঠাও আন্দোলন যা দেশের সব সরকারের আমলেই সাধারন এক চিত্র (হয়ত বুয়েট না, অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি) সেখানেও একদল লোকে নিদারুন মেধার পরিচয় দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র প্রমান করে ফেলেছেন। এই রকম অতি প্রতিক্রিয়াশীল আচরন আসলে কাদের উপকারে আসে সেটা ভাবার সময় এসেছে।
@আদিল মাহমুদ, জামাত ফোবিয়া’র যুক্তিসংগত কারন আছে নিশ্চই। কিন্তু জাফর ইকবালের উপরে যখন অভিযোগ আসে পরোক্ষভাবে জামাতের পক্ষে কাজ করার তখন এটাকে জামাত ফোবিয়া বলার উপায় নেই। এটা সোজা ভাষায় প্রতিটি ইস্যুতেই with us or against us.
আপনি যদি অন্যব্লগে আর না লেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তবে আশাকরি এখানেই ইতিহাস, রাজনীতি, ধর্ম নিয়ে লিখবেন।
@সফিক,
খুবই সত্য কথা। এক মৌলবাদ ঠেকানোর ছূতায় আরেক ধরনের মৌলবাদের উত্থান কোন শুভ সংবাদ নয়।
জাফর ইকবাল যাইই বলেন তাইই বেদবাক্য এমন হতে পারে না, এমনকি সেটা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক হলেও। ওনার অতি আবেগময় কিছু কথা আমার কাছেও গ্রহনযোগ্য মনে হয় না, মাঝে মাঝে হাস্যকরও ঠেকে, যেমন বেশ ক’বছর আগে উনি একবার আবদুল গাফফার চৌধূরীকে জাতির বিবেকের সাথে তূলনা করেছিলেন।
দ্বি-মত আর গালিগালাজে যে তফাত অনেক এই সহজ কথা বোঝার মত বুদ্ধিশুদ্ধিও অনেকের লোপ পেয়েছে।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ চমতকার বিশ্লেষনের জন্য।
লেখাটা অনেক তথ্যসমৃদ্ধ এবং সুন্দর। প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ইহুদীদের নিয়ে লেখা খুঁজতেছিলাম। আমি জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল ইহুদী আর প্রগতিশীল ইহুদীদের এতদিন আলাদা ভাবতাম না, কেন জানি না। বিষয়টা পরিষ্কার ছিল না আমার কাছে। হলোকস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানার আগ্রহ ছিল।
রিজওয়ান এর মত করে আমিও বলি, “তবে একটা জিনিস মাথায় ঢুকলনা, মুক্তমনার মত একটা সাইট যা কিনা ইহুদি-নাসারা’র ফান্ডিংয়ে চলে, সেইখানে এই লেখা ছাপা হল ক্যামনে?” হাহাহা
আমি সংখ্যার নিরিখে গনহত্যার প্রকোপ পরিমাপ করতে রাজি নই। প্রতিটি গনহত্যাই যে কোন জাতির জীবনে অসহায় এক ব্যাথাতুর জীবন নাট্য – সেটা হলোকাস্টই হোক, আর পচিশে মার্চের গনহত্যাই হোক। তবে ইসরাইলীরা যেভাবে ব্যাপারটির বানিজ্য করেছে, সেটার চাপে অন্য সবকিছু চাপা পড়ে গেছে নিঃসন্দেহে।
মুক্তমনায় সফিক সাহেবের মন্তব্য পড়ে বেশ ভাল লেগেছিল, কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে তিনি কোন লেখা দেনই। এইটাই সম্ভবতঃ সফিকের প্রথম লেখা মুক্তমনা ব্লগে। লেখাটির জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
সফিকের লেখায় এবং মন্তব্যে সবসময়ই তথ্যের প্রাচুর্য থাকে, থাকে ইতিহাস পঠনে মনোযোগের ইঙ্গিত। এই লেখাটি পড়ে ব্যাপারটি আরো দৃঢ় হল। উনার কাছ থেকে আরো বেশি করে লেখা আশা করছি মুক্তমনায়।
@অভিজিৎ, আমি বাংলা লিখতে আর টাইপ করতে খুব স্বচ্ছন্দ নই, তাই পড়তে আর কমেন্ট করতেই ভালো লাগে। তবে আশা করি আরও লিখবো। Practice makes .. perfect (in my case, good enough!)
হলোকস্ট ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে এই ইহুদী সহানুভূতির বাণিজ্য আরও কতদিন যে চলবে! :-X আপনার তথ্যবহুল লেখা অনেক ভালো লেগেছে। তবে একটা জিনিস মাথায় ঢুকলনা, মুক্তমনার মত একটা সাইট যা কিনা ইহুদি-নাসারা’র ফান্ডিংয়ে চলে, সেইখানে এই লেখা ছাপা হল ক্যামনে? 😛
@রিজওয়ান,
এইবার মনে হয় জামাতের ফান্ডিং পাইছে। 🙂
@অভিজিৎ,
এটা আর নতুন কি।
আপনি এবং ফরিদ ভাই জামাত শিবিরের দীর্ঘ দিনের গোপন সদস্য এমন তথ্য প্রমান ওয়ালা লেখা তো মনে হয় একজন মহান ব্লগারের কলম থেকেই বেরিয়েছে।
আপনাদের প্রসংশা করতেই হয়, আসলেই মুক্তমনা, কোন বাছ বিচারের বালাই নাই। এক্কেবারে প্রফেশনাল; কাফের নাছারা ইহুদী, জামাত শিবির যারই টাকা পান তার হয়েই প্রচারনায় নামেন।
@আদিল মাহমুদ,
হ। ব্লগে শুধু না ফেবুকের বিভিন্ন গ্রুপে গিয়ে কুচটা রায় থুড়ি আপনার ‘মহান ব্লগ লেখক’ প্রমাণ করার চেষ্টা লইছিল অভিজিৎ রায় জামাতি। যেখানেই কয়, পাবলিক হাসে। লেটেস্ট ঘটনা ঘটছে বইপড়ুয়া নামের একটা গ্রুপে। পাব্লিক বিরক্ত হইয়া হেরে গ্রুপ থিকা খেদায় দিসে। মহান ব্লগ লেখক কাইন্দা কাইন্দা কয় ‘প্রতিক্রিয়াশিলতার হাত’ নাকি অনেক লম্বা হইয়া গেছে।
আমি খালি একটা কথাই বলছিলাম –
যখন তুমি দেখবা সদা-প্রলাপী ইসলামী ফ্যানাটিক আর কুচটার মত হিন্দু ফ্যনাটিক দুইজনই তোমারে আক্রমণ করতাছে, তখন বুঝবা তুমি সঠিক পথেই আছ।
আমি এখনো এই নীতিতে বহাল আছি। যেইটা আপনি বলছেন – কোন বাছ বিচারের বালাই নাই। এক্কেবারে প্রফেশনাল; কাফের নাছারা ইহুদী, জামাত শিবির যারই টাকা পাই … 🙂
লাস্ট টাইম এই ব্যাপারে আপনের লগে যখন কথা হইসিলো আপনে কিন্তু স্বীকার করছিলেন যে আপনে অর্ধেক টেকা পাইছেলন। :)) শুধু তাই না অন্য ব্লগে গিয়া আমগো মত ইহুদি নাসারাদের দালালগো সাপোর্ট করতে গিয়া গালিও খাইছলেন, হিঃ হিঃ সবই দ্যাকছি। নুন খাইবেন মাগার আর গুন হাইবেন না তা তো হয় না। যতই ভেক ধরেন, পাবলিক কইলাম ভোদাই না।
@অভিজিৎ,
গ্যাঞ্জামটা কি নিয়া হইছিল? হেরে কিছু মালপানি দ্যান নাই? আপনেগো লুভেরও কুনো শেষ নাই, সব কেবল নিজেরাই খাইবার চান। আমারেও তো কতদিন ঘুরাইছিলেন।
হেই মিয়া তো আমার নামেও হুনছি কই কই কি কইছিল, এক ছুড ভাই একবার কপি পেষ্ট দেখাইছিল। হে এইডাও বুঝে না যে আমিও তার মতই ভিক্টিম 🙁 । আমারে আপনেগো লগে এক পাল্লায় ফালায় কি কি সব কইছিল, আমি নিরীহ মানুষ কারো সাথে পাঁচে নাই, আর আমার উপরে কেমুন গজব খালি আপনেগো লাইগাই নাজিল হইছিল। হেই মিয়ার লগে আমার কুনোদিন কুনো গ্যাঞ্জাম তো দূরের কথা ভালা সম্পর্কই আছিল।
@আদিল মাহমুদ,
গ্যাঞ্জাম কিছু না। মুক্তমনায় বিভিন্নজনের দাবড়ানি খাওনের পর থেকেই উনার মাথা একটু আউলাইছিল। আমার আর ফরিদভাইয়ের রবীন্দ্রনাথের উপর লেখাটার পর থেকেই উনার চুলকানি মহা বাইড়া গেছিল। সব জায়গায় গিয়া ‘অভিজিৎ জামাতি’ হেইডা প্রমাণের মিশনে নামছিল।
এখন পাবিলিক বুইঝা পায় না, ‘অভিজিৎ রায়’ নামের মালাউন জামাত কর্ব ক্যান। তাও অবশ্য উনি চেষ্টা ফেস্টা কইরা গেছে অনেক – ফরহাদ মজহার নাকি আমগো পিছনে আছে বইলা জিগির তুলছিলো কইয়া … হাঃ হাঃ।
লেটেস্ট কাহিনি হৈল – বইপড়ুয়া গ্রুপে এক পাঠক আমার ‘স্বতন্ত্র ভাবনা’ বইটা ভাল লাগছিল বইলা একটা পোস্ট দিছিল। ব্যাস হের গায়ে ফোস্কা পইড়া গেছিল। ভেউ ভেউ কইরা উঠল – হেইটা নাকি জামাতি বই। পাবলিকে জিগায় – ভাই আপনে কি বইটা পড়ছিলেন? কয় ‘এই বই পড়ার দরকার নাই’। বইয়ের সমালোচনা করার নুন্যতম ক্রাইটেরিয়া যে বইটা একটু আধটু হইলেও পড়া – হেইটাই সেই ব্লগ লেখক ভুইলা গেছিল। আমার খুব মজা লাগছিল। বইটা না পড়াই উনি বুইঝা গেছিল হেইডা নাকি জামাতি বই… হেঃ হেঃ
আপনেরে দিয়াই শিক্ষা হইছে। টেকা গলার তলে নাইমা গেলেই পাবলিক ভুইলা যায়। 🙂
আমি কয়দিন আগে একজনের থিকা হুনছিলাম – অতীতে কী সব মানসিক সমস্যার কারণে নাকি তিনি দীর্ঘদিন সাইকিয়াট্রিক ট্রিটমেন্টে আছিলেন। এখনো মাঝে মধ্যেই আবেগ যেমনে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চইলা যায় – তাতে মনে হয় ঘটনা সত্য হইলেও হৈতারে। সাবধানে থাইকেন, পারলে ধারের কাছে যাইয়েন না। আমিও বরং অফ যাই। বেশি কথা বইলা ফেলাইছি। বোবার কোন শত্রু নাই – এই কথাডা ভুইলাই গেছিলাম।
@অভিজিৎ,
একদম সত্য কথা। রাজ্জাক চাচার এক পুরান বাংলা সিনেমায়ও এইটার প্রমান দেখছি। রাজ্জাক চাচার ডবল রোল, দিনের বেলা বোকচোদের মতন ভ্যাবলা থাকে, বোবা কালার ভং ধরে, রাইতের বেলায় আবার চরম রূপ। পরচুলা বেল বটম প্যান্ট পইরা শুরার বুতল হাতে ক্যাবারে ড্যান্সারগো নিয়া বোবা চাচায় ডিস্কো নাচে।
আলোচিত ব্যাক্তি তো শুনছি যেইখানেই গেছেন সেইখানেই সাইধা সাইধা গ্যাঞ্জামে পড়ছেন। শুধু এইটাই কই যে ওনার সাথে আমার এক যায়গায় মিল আছে, আমরা উভয়েই রবীন্দ্র সাবরে প্রেরিত পুরুষ মানি। আমরা অবশ্য ধমাধম ধর্ম অনুযায়ী মানতে বাধ্য।
@অভিজিৎ,
এই ধরণের পাবলিক, আমারে একটা খবর দিয়ে, যশোরে পাঠায়ে দিয়েন। আমি সব ঠিক করে দেব। আমরা আবার এই ধরণের পাবলিকদেরকে ধোলাই দিতে খুব বিখ্যাত।
@অভিজিৎ, মাঝে মাঝে এই ফান্ডিংগুলার এক আধটু কে’ম্যান আইল্যান্ডের ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে নিয়ে জয়েন্ট একাউন্টে ট্র্যান্সফার করলেই তো পারো, তাইলেই তো অর্ধেক দাম্পত্য কলহ মিটে যায় :-Y । সপ্তাহে দুইবার করে ‘মুক্তমনা কেন বন্ধ করা হবে না’ টাইপের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য মনে হয় এটা একটা ভালো ইন্সেন্টিভ হিসেবে কাজ করতে পারে…
@বন্যা আহমেদ,
কী করুম… আদিল মাহমুদ আমারে বুঝাইল যে, অভিজিতের উপর তো লোকজনের অনেক সন্দেহ, তাই হের ব্যাঙ্ক একাউন্টে যেন টেকাগুলান রাখি। অনেক বিশ্বাস কইরা আদিল মাহমুদের একাউন্টে পাঠাইছিলাম, এহন দেহি আমারে চিনে না। আমও গেল ছালাও গেল দেখতাছি। চোরের উপরেও বাটপার আছে … 🙁
@অভিজিৎ,
সেইসব টয়াকা ব্যাবাক হজম হইয়া গেছে, তাই ওখন আবার ফিরা আইছি।
আমার কাছে অবাক লাগে যে ইস্টার্ন ইউরোপিয় হলোকস্ট যতোটা গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়, মোটেও ততোটা গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়না বলকান হলোকাস্ট। এইটার মুল কারণ মনে হয় ঐক্যবধ্যতার অবতার একনায়ক মার্শাল টিটোর নষ্টামী। বলাই বাহুল্য সার্বদের বিরুদ্ধের পরিচালিত বলকান হলোকস্ট নৃসংসতার দিক দিয়ে ছিলো অনেক অনেক বেশী ইন্টেন্স। ইয়েসেনোভাক এক্সাটার্মিনেশন ক্যাম্পে জবাই করে, জীবন্ত পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হতো। টিটো সোভিয়েটবিরোধী ছিলো বিধায় কমুনিস্ট হওয়া স্বত্বেও পেয়েছে আমেরিকার সহানুভুতি, যেই কারণে আমেরিকাও এমনকি বলে যে- ইয়েসোনোভাকে মাত্র ১০০,০০০ মানুষ হত্যা হয়; অথচ বাস্তবতা যেখানে কিনা ইয়েসেনোভাকে হত্যা করা হয় ১ মিলিয়ন মানুষ যেটা কিনা আপনি পোস্টেও বললেন এবং ইয়াদ ভাসেম (হলোকস্টের ব্যাপারে যাদেরকে কিনা অথরিটি হিসেবে ধরা হয়) এর পরিসংখ্যানও এই ১ মিলিয়নের কথাই বলে। বলকানে সেই অটোমান সময় হতেই সংঘটিত হয় সবচেয়ে বেশী জেনোসাইড এবং সফলভাবে অস্বীকার কিংবা গুরুত্বহ্রাসও করা হয় সবচেয়ে বেশী জেনোসাইড। আমিও ইউরোপিয় ইতিহাসের, বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের একজন উতসাহী পাঠক। এই ব্যাপারে আরও পোস্ট চাই।।
@আল্লাচালাইনা, বল্কান ইতিহাস নিয়ে কেউ তেমন একটা লিখতে চান না কারন অতীত থেকেই বল্কান ইতিহাস এতো প্যাচালো যে এই অন্চল বিষয়ে এক্সপার্ট ছাড়া অন্যদের জন্যে ফলো করা কষ্টকর। সবচেয়ে বড় কথা বল্কান ইতিহাসে কোনো গুড গাই-ব্যাড গাই ন্যারেটিভ নেই, সব পক্ষের হাতই এতো কলংকিত যে ফর্মূলাবদ্ধ একটা ন্যারেটিভ লেখা কঠিন।
হলোকাস্টের ফলাফল ইহুদী রাষ্ট্র ইজরায়েল তৈরীতে বিশ্বজনমত টানতে টনিক হিসেবে কাজ করেছে। সহানুভুতি পেয়েছে ইজরাইল আর পাছায় বাঁশ খেয়েছে/খাচ্ছে/খাবে ফিলিস্তিন। আজকে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাশালী দেশ হিসেবে ইজরাইলের উত্থানের বড় একটা ফ্যক্টর ইহুদী সহানুভুতি, যেটা বিপুল পরিমান আমেরিকান ডলারের সাহায্য পেতে কাজ করেছে। আরেকটা ব্যাপার অবশ্যই ইহুদীদের জাতীয়তাবাদী চেতনা।
কিছুদিন আগে গুন্ট্যার গ্রাস একটি কবিতা প্রকাশ করেছেন নাম বাঙলায় বলা যায় “যা বলতেই হবে” পড়েছেন হয়ত যেখানে ইজরায়েলিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। ইজিরায়েলিদের অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে, আর কত?
হলোকাস্টের সময় ইহুদী ডিফেন্সের একটা ভালো চিত্র পাবেন ড্যানিয়েল ক্রেইগের ডিফায়েন্স(Defiance) মুভিটা দেখলে। মেরিল স্ট্রিপের মুভিটা দেখা হয় নাই। দেখতে হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমি লিখেছিলাম হয়ত পড়েছেনও। জাতীয়তাবাদ ভালো, একটা কাপুরুষ জাতিকে লৌহ দন্ডের মতন জাগিয়ে তুলতে জাতীয়তাবাদের থেকে বড় মতাদর্শগত শান্ডার তৈল আপনি আর পাবেন না। কিন্তু সমস্যা হয় অন্যদিকে। উত্থিত জাতিয়তাবাদের ঝান্ডা তখন আর নিজেদের ছাড়া কাউকেই মানুষ হিসেবে মানতে রাজি থাকে না। যেটা হয়েছে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে। অনলাইনে বহু জাতীয়তাবাদী কুতুবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম রোহিঙ্গাদের জায়গায় বাঙলাদেশী আর বাঙলাদেশের জায়গায় ইন্ডিয়া থাকলে এবং আমাদেরকে গ্রহন করতে না চাইলে তখন এইসব দেশপ্রেমি জাতীয়তাবাদীদের মুখে কী কথা থাকত। কোন কুতুবই তার জাতীয়তাবাদের কুতুব মিনারের উপরে দাঁড়িয়ে উত্তর দিতে আসে নি। আসতে পারবেও না। ক্ষমতার দন্দ্ব, পুঁজিবাদ, জাতিয়তাবাদ(যেটা মূলগতভাবে খারাপ কিছু না) মানুষকে পশু বানায়। যার জন্য রোহিঙ্গাদেরকে আমাদের কাছে “মানুষ” মনে হয় না। এরা হল বিদেশী আলাদা কোন গোষ্ঠী। দৃষ্টিভঙ্গী খুবই সংকীর্ণ করে দেয়। আপনি বৃহত দৃষ্টিভঙ্গীতে তাকান একবার পৃথিবীর দিকে। দেখবেন সেখানে রোহিঙ্গা, বাঙালি বলে আলাদা কোন জাতি নেই, সেখানে আছে শুধু মানবজাতি। যাদের নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমান রশদ থাকা সত্ব্বেও কিছু শুয়োরের বড় পেটের জন্য বেশিরভাগই না খেয়ে থাকছে, না পড়ে থাকছে, না জেনে থাকছে, থাকতে বাধ্য হচ্ছে। আর এই নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলেই আপনাকে বলছে লেনিনিষ্ট, কমিউনিষ্ট, বিচ্ছিন্নতাবাদী, দেশদ্রোহী।
লেখা আমার কাছে চমৎকার লেগেছে। নিয়মিত চাই লেখা। 🙂
@সাইফুল
খুবই সত্য কথা। রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো ইস্যু যদি অব্যহত থাকে, বা প্রতি দশকে একাধিকবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তাহলে আমার মতে বাংলাদেশ আর্মির উচিত আরাকান আক্রমন করা। যদিও এইখানে আন্তর্জাতিক অনুমোদিতার প্রশ্ন থেকে যায় এবং প্রশ্ন থেকে যায় যে- আদৌ বাংলাদেশ আর্মির বার্মিজ আর্মির উপর সামরিক সুপিরিয়রিটি আছে কিনা। মানবতার খাতিরেই এইটা করা উচিত বলে আমি মনে করি।
@আল্লাচালাইনা,
আমি ভাই সহজ সরল মানুষ। মন্তব্যটার সুর সার্কাস্টিক কিনা ধরতে পারতেছি না। 🙁
যাই হউক, একটা কিছুতো হইবই। 🙂
@সাইফুল ইসলাম, না সার্কাস্টিক না। তুমি তোমার দেশের একটা এথনিক মাইনরিটিকে পিটায়া আমার দেশে পাঠাইতে থাকবা রিপিটেডলি, আর আমাকে কি সেটা বসে বসে দেখতে নাকি, ফাইজলামি নাকি? মিলিট্রি সুপিরিয়রিটি থাকলে আমি আসলেই মনে করি বাংলাদেশের আরাকান আক্রমন করা উচিত ছিলো।
@আল্লাচালাইনা,
কিন্তু এতে অনুমান হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার খুব ভালো লোক। তারা সেখানে যুদ্ধ করে মানবতার ঝাণ্ডা উঁচু করে আসবে। কিন্তু সত্যি কথা সম্ভবত এই যে বাংলাদেশ সেই যুদ্ধে জিতলে নিজের আখের গোছানোতে ব্যস্ত হবার ঢের চান্স থাকবে। ওই অঞ্চলের শান্তি, রোহিঙ্গাদের গতি, কিছুই হয়তো হবে না। ভারতের মতো সসম্মানে চলে যায় কয়জন? তাছাড়া আন্তরাষ্ট্রীয় যুদ্ধে ইনিশিয়েট করার দায় বাংলাদেশকে নিতে হবে তখন, যেটার জের ভয়াবহ খারাপ। বাংলাদেশ সশস্ত্রভাবে বার্মা দ্বারা আক্রান্ত না হলে ওই যুদ্ধের কোনো নৈতিক গ্রাউন্ডই বাংলাদেশের নেই। আম্রিকার যেমন নেই ইরাক আক্রমণের। যদিও চাইলে ভাবতেই পারেন যে ভালো লোক আম্রিকা সরকার সেখানে মানবতার ঝাণ্ডা খাঁড়া করতে গেছো।
রোহিঙ্গাদের নিজেদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিশ্বকে বার্মার ব্যাপারে খড়গহস্ত হতে হবে। তবে বিশ্বের ভূমিকা নিয়ে আমার আস্থা কম। নিপীড়িত জনগোষ্ঠির নিজের ভেতরেই যথেষ্ট রসদ আছে বলে আশা পোষণ করি।
@রূপম (ধ্রুব),
সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হবে না, এইটা আমার কাছে মনে হয়েছে এমনকি ওন সান সুকীকেও রোহিঙ্গা বিরোধী অবস্থান নিতে দেখার পর। আসলেই তো, গনতন্ত্র আসলেও কি এই সমস্যা সমাধান হতে যাচ্ছে? না যদি হয় তাহলে আর কি পথ খোলা থাকে?
হ্যা বাংলাদেশ নিজের আখের গোছানোতে ব্যস্ত থাকবে এর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে, আন্তর্জাতিক সুপারভিশন ছাড়া বাংলাদেশের মতো একটা দেশ নিজে নিজে আরেকটা দেশে আর্মি নামাবে এমনটা আমি কখনই আকাঙ্ক্ষা করিনা, উল্টো আমি বরং মনে করি আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে স্টেশনড আর্মির উপরও প্রয়োজন ইইউ বা ইউএন এর সুপারভিশন।
না যুদ্ধ বাধানোর দায় বাংলাদেশকে নিতে হবে না, বাংলাদেশ অবশ্যই রাতের আঁধারে নাতসী জার্মানির অপারেশন বার্বারোসার মতো আক্রমন করবে এটার কথা আমি বলিনি। অবশ্যই আক্রমনের আগে আন্তর্জাতিক সমাজের অনুমোদন পরে তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহন থাকতে হবে। হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস ও টেরোরিজমের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ প্রায়শই প্রতিবেশী দেশের মিলিটারি ইন্টার্ভেশনকে অনুমোদন দেয়, আফ্রিকায় আল শাবাব বিরোধী যুদ্ধে সাম্প্রতিক কালে যেমন অনুমোদন দিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়নের ইন্টার্ভেনশন।
মিরিটারি এসাল্টে যাওয়ার নৈতিক গ্রাউন্ড এখনও হয়তো নেই, তবে আগামী দুই দশকে যদি আরও চারবার রোহিঙ্গা সঙ্কট জন্ম নেয় তখন? প্রত্যেক সঙ্কটে যদি লাখ তিনেক করে রিফিউজি জড়ো হয় আমাদের বর্ডারে তখন? এইখানে আপনাকে বুঝতে হবে যে প্রশ্নটা জাতিগত দাঙ্গার। এমন না যে বার্মার মিলিটারি জান্টা শুধু রোহিঙ্গাদের অপছন্দ করে, তাদের দেশ হতে উতখাত করতে চায়- বৃহত জনগোষ্ঠি এমনকি ওন সান সুকীর মতো নোবেল বিজয়ী শান্তিদুতও রোহিঙ্গাদের রিরুদ্ধাচার করে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি একটি ক্রনিক সমস্যা, এটা সিরিয়াস ইন্টার্ভেনশনের অনুপস্থিতিতে দুর হতে যাচ্ছে না, এখনও এই ব্যাপারে আমরা সম্পুর্ণ নিশ্চিত হতে পার না, তবে আগামী বছর বিশেকের মধ্যে পারবো খুব সম্ভবত। ভবিষ্যতে আসলেই যদি অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে একটি সামরিক ইন্টারভেনশন প্রয়োজনীয় হয় এবং ইউএন একমত হয় এই ইন্টারভেনশনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে, তাহলে সেই ক্ষেত্রে এই লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ তাদের একটি খুবই খুবই গুরুতবপুর্ণ পার্টনার হিসেবে আভিভুত হতে পারে আফগানিস্তান সঙ্কটে যেমন কিনা পার্টোনার হয়েছিলো পাকিস্তান। ইউএন আভিযান চালালে চালাবে সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন বা পাকিস্তান হতে- অপরপক্ষে বাংলাদেশ হচ্ছে বার্মার নেক্সট ডোর প্রতিবেশী। শুধুমাত্র ভৌগলিক নৈকট্যের জন্যই বাংলাদেশ হবে এই ইস্যুতে প্রবল বার্গেইন পাওয়ার সম্পন্ন একটি পার্টি। আমি মনে করি এই বার্গেইন পাওয়ার কে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উচিত আরাকানে আন্তর্জাতিক আগ্রাসন ডেকে আনা। এইটার সাথে বাংলাদেশের ইন্টারেস্টও সরাসরি জড়িত, ১। বাংলাদেশ-মায়ানমার বর্ডারে আর ভবিষ্যতে রিফিউজি জমা হবে না, কোন হিউম্যানিটারিয়ান লোডের মুখোমুখী হতে হবে না গরীব দেশকে। আর, ২। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বসবাসকারী রিফিউজিদেরকে তাদের মাতৃভুমিতে পুনর্বাসনের একটি ব্যাবস্থা হবে।
@আল্লাচালাইনা,
আফগানিস্তান সঙ্কটে আন্তর্জাতিক জোটের ভূমিকা, তাতে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ, এই সবেরই ভালোত্ব ডিবেটেবল। খারাপের পাল্লা তর্কান্তরে অধিক ভারী।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অনুমোদন নিয়ে যুদ্ধে গেলে আন্তর্জাতিক জোট তাকে একা একা যেতে দিবে না, চট্টগ্রামে জোটেরা স্থায়ী ঘাঁটি গাড়বে। তখন আর সিঙ্গাপুর ফিলিপাইন বা পাকিস্তান থেকে আগ্রাসন চালাতে হবে না। এখন সেটা ভালো হবে না খারাপ হবে? আপনি ভাবতে পারেন ভালো হবে। ভাবতে পারেন আন্তর্জাতিক জোট মহান নিয়ত নিয়ে তার বিভিন্ন আগ্রাসন চালায়। ভাবতে পারেন মানবতার খাতিরে আগ্রাসন, যুদ্ধ জায়েজ আছে। কিন্তু মতান্তরে, এইসবে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশিই হয়। অবশ্যই আফগানিস্তানের নারী অত্যাচার বর্বর, বার্মার রোহিঙ্গা অত্যাচার ঘৃণ্য। কিন্তু আগ্রাসনে যদি সার্বিক পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে, তাহলে সেটাকে অপশন হিসাবে চিন্তা করা যায় না। আগ্রাসনের সাফল্য ইতিহাসে অত্যল্প। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই সেখানে যে যার আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিও কোনো মহান দয়ালু তায়ালা ঈশ্বর নয়। এই আক্রমণে তার নগদ ইন্টারেস্ট যে হবে চট্টগ্রাম বন্দর আর আরাকান অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ, তা বলাই বাহুল্য। সেইটা কারো কারো কাম্য হতে পারে, সবার তাতে একমত হওয়া নির্ঘাত অসম্ভবপর।
আমরা অনেকে ঘটন-অঘটনে উচ্চতর শক্তির উপর অনেক আশা নিয়ে নির্ভর করতে অভ্যস্ত। এটা সম্ভবত যুগ যুগ ধরে শক্তিশালী পরাক্রম ঈশ্বরের উপর মানসিকভাবে নির্ভর করার ফল। ঈশ্বরের অভাবে এখন আছে আমাদের নিজ দেশের রাষ্ট্রকাঠামো কিংবা আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রজোট। ঈশ্বর যেহেতু নেই, তার মহানুভবতা অপ্রমাণ করা দুরূহ। কিন্তু একালের ঈশ্বর রাষ্ট্র-ব্যবস্থা যেহেতু মানুষ দ্বারা গঠিত, তার অমহানুভবতা, দুষ্টচরিত্রপনা একেবারে প্রামাণ্য। তাই তাদের উপর আস্থার সাথে নির্ভর করার আগে দশবার ভাবতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার অবসান চাই। কিন্তু নিশ্চয়ই আমরা নিজ হাতে অবস্থার অবনতি ঘটাতে চাই না, যেখানে সেটা সম্ভাব্য।
@সাইফুল ইসলাম, আপনার লেখা পড়েছিলাম। এজন্যেই এখানে রোহিংগাদের নিয়ে কথা বাড়াতে চাই নি। রোহিংগা রিফিউজিদের ইস্যুতে অনেক প্র্যাকটিক্যাল কনসিডারেশন আছে। কিন্তু সেসব বাদ দিয়ে কেউ কেউ রোহিংগারা কিরকম অমানুষ, দুশ্চরিত্র রিফিউজি আর আমরা কেমন মডেল, আদর্শবান রিফিউজি ছিলাম, এসব কথা তুলেছিলো। এদের একটু শোনানো দরকার যে বর্তমানে ইন্ডিয়ান মিডিয়াতে বাংলাদেশী অবোৈধ অভিবাসীদের নিয়ে কি রকম নিয়মিত কথাবার্তা হয়।
চমৎকার তথ্যবহুল একটা লেখা পড়লাম এখানে। হলোকস্ট নিয়ে মাতামাতি পক্ষের ও বিপক্ষের বক্তব্য এত গুছিয়ে লেখার জন্য অনেক বড় ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য। আমিও অবশ্য হলোকস্টকে জুয়িশদের বাপ দাদার সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করার বিপক্ষে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আপনি যা বলেছেন তার সাথে একমত।
খুব ভালো লেগেছে। শেষের অনুচ্ছেদের সাথে শতভাগ সহমত, আমরা বিশেষ কোনো অবস্থান দাবি করতে পারিনা বিশ্বের দরবারে কিন্তু যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠতে পারি।
😀
খ্রিস্টোফার হিচেন্সও খুব সম্ভবত অর্ধেক ইহুদি।
প্রগতিশীল ইহুদিদের এই মতাদর্শিক অবস্থান পরিস্কার নির্দেশ করে ইহুদিরা কত চমৎকারভাবে তাদের সমাজের সাথে ইন্টিগ্রেট করেছে, সংকীর্ণ ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে মানুষ পরিচয়টাকে আলিঙ্গন করতে পেরেছে। মুসলমানরা এখনও ধর্মীয় আইডেন্টিটির সংকীর্নতার উর্ধ্বে উঠতে পারেনি, ব্যাপারটা দুঃখজনক। একটা বইতে পড়ছি যে ইউরোপের মুসলমানদের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের দিকে হেলে পড়ার পেছনে পশ্চিমাদের বর্ণবাদ ও মালটিকালচারালিজমের কড়া ভূমিকা আছে, কিন্তু সেক্ষেত্রে এত কিছুর পরও ইহুদিরা কিভাবে ইন্টিগ্রেট করল আর মুসলমানরা কেন পারল না তা আমার বোধগম্য নয়। অবশ্য ইউরোপে অভিবাসী হিসেবে মুসলমানদের বয়সও বেশ কম।
রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রথমে যা বলেছিলেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু
ভারত মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়নি, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে নিরুপায় হয়েই আশ্রয় দিয়েছে(বাংলাদেশে এখনও প্রচুর রোহিঙ্গা আছে)। আর ভারত যদি বাঙ্গালীদের আশ্রয় দিতেই থাকত, তবে কস্মিনকালেও “বাংলাদেশ” এর জন্ম হত না, ৯ মাসের যুদ্ধের অর্ধেকেরও বেশি সময় ভারত আর প্রবাসী সরকারের উপর রাজনৈতিক সমাধানের জন্য মার্কিন চাপ ছিল যা আসলে আমাদের জন্য এক প্রকার আত্মহত্যা ছিল। বাংলাদেশ বার্মা সরকারের উপর চাপ না দিয়ে রোহিঙ্গাদের গণহারে আশ্রয় দিতে থাকলে(উল্লেখ্য যে শরণার্থীদের এরুপ অনুপ্রবেশের জন্য সীমান্ত এলাকার মানুষদেরই দুর্ভোগ পোহাতে হত, তাদের আপত্তিকে সম্পূর্ণরুপে উপেক্ষা করে এবং পুরো ব্যাপারটার কোন রাজনৈতিক সমাধানের পরিকল্পনা না করেই লোকজন কিভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ দিচ্ছিল তা আমার বোধগম্য নয়) আখেরে বার্মা সরকারেরই লাভ হত, যেটা আপনি নিজেও উল্লেখ করেছেন। যেসব প্রগতিশীলের কথা আপনি বলছেন, তারা রোহিঙ্গাদের গুলি করে মারার কথা বলেনি, তার বলেছিল বার্মার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে। বিশ্বমোড়লরা যেভাবে খুনীরে না ধইরা খুনীর প্রতিবেশীদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছিল আর দেশেরও কিছু লোক যেভাবে তাতে তাল দিচ্ছিল, মনে হলে এখনও হাসি পায়।
‘৭১ এর বাংলাদেশী শরণার্থী সমস্যা আর ২০১২ এর রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার যদি কোন কমন ডিনোমিনেটর থেকে থাকে, তবে তা হল যে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়াটা কোন সমাধান না, বরং এটা সমস্যাটাকে আরও তীব্র করবে। শরণার্থীদের আগমন ঠেকানোর জন্য ভারত সরকার যেভাবে এদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছিল, বাংলাদেশ সরকার সেভাবে সামরিক হস্তক্ষেপ না করলেও অন্তত বার্মার সরকারকে চাপে রাখতে পারত।
ইতিহাসের একটি বৃহত্তম এবং জঘন্যতম গনহত্যা এখন ‘যুদ্ধপরাধ’ তকমা নিয়ে লঘুপাপে বিবর্তিত হয়েছে। জাতির একটা বড় অংশ আবার সেই ‘লঘুপাপ’ নিয়েও সন্দিহান এবং অভিমানী ( এ কি অসভ্যতা) ! হওয়াটাই স্বাভাবিক। নিকটাত্মীয়রা তো সবাই ‘গন্ডোগোলের সময়’ ছহি সালামতেই ছিল ! আরা থাকবেই না কেন ? তারা তো আর ‘মুক্তিদের’ মত গুন্ডাগীরি করে বেড়াইনি ! এমন দেশে এ কি কাহিনী শোনাতে এলেন ?
@সংশপ্তক, এইটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপুর্ণ কথা বলেছেন। ৭১ এর গনহত্যার একটা ডাইমেনশন অহরহই পর্যাপ্ত গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়না যে- এইটা ছিলো একটি ‘এথনিক ক্লিনসিং’। হিন্দু হলেই সামারি এক্সিকিউশনের শিকার হয়েছে বাঙ্গালী, পাকিস্তানীদের হাতে; গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে হিন্দুদের নির্দিষ্টভাবে আলাদা করে ডিপোর্ট করা হয়েছে; শুধুমাত্র হিন্দু বলে হত্যা করা হয়েছে এবং এই কুকর্মটির উতস ছিলো ততকালীন পাকিস্তানী মুসলমানদের হিন্দুবিদ্বেষ নামক একটি কুসংষ্কার। অথচ এথনিক ক্লিনসিঙ্গে অংশগ্রহনকারীরা বিচার দুরের কথা মেজর জিয়ার বরে পুনর্বাসিত হয়েছে, রাষ্ট্রযন্ত্রে বসেছে বলাই বাহুল্য যেই পুনর্বাসনের পক্ষে হয়তোবা জনমতের সমর্থন ছিলো খুবই খুবই কম, বর্তমানে তারা এমনকি জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে গাড়িতে পতাকা লাগিয়েও ঘুরে বেড়ায়। বাংলাদেশ ব্যতীত ‘এথনিক ক্লিনসার’রা পৃথিবীর আর কোথাও এমন রাজসিক ট্রিটমেন্ট পেয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। সেলুকাস…!
@আল্লাচালাইনা,
সঠিক পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ “হিন্দু এথনিক ক্লিনসিং”। আর যেসব বাংগালী মুসলমানেরা মুক্তিবাহিনীদের সহায়তা করেছিল বা ভারতপন্থী বলে সন্দেহ করেছিলে তাদেরকে হিন্দুদের সমর্থক বা (মুরতাদ) হিসেবে দেখে হত্যা করেছিল। পাকিস্তানী সৈন্যদের বোঝান হয়েছিল, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম = ভারতের ষড়যত্র = হিন্দুদের ষড়যন্ত্র।
হিন্দুদের অত্যাচার নিপীড়ন করাকে বাংলাদেশের জনগণ তেমন খারাপ চোখে দেখে না। সেজন্যই ৭১ এ হিন্দু নিধনকারীরা সরকারে গেলেও জনতার লেভেলে কোন আউটরেজ হয় না। স্বাধীনতার পর সব দলই হিন্দুদের নিপীড়ন/শোষন করেছে। আওয়ামী লীগের (মুক্তিসংগ্রামের ধ্বজাধারী) রেকর্ডও এ ব্যাপারে যথেষ্ট কালিমালিপ্ত। জনতার ভোট পেতে এগুলো কোন ইস্যু হয় নি। হিন্দু (পৌত্তলিকদের) বিদ্বেষ ইসলামের এক কোর দর্শন। কোরান হাদিসএই এর সূত্র। বাংলাদেশের মুসলিমরাও এ থেকে মুক্ত নয় (সাধারণ জনতার অধিকাংশের কথা বলছি)। এটাই বাস্তবতা।
@আল্লাচালাইনা,
৭১ এর গনহত্যার overwhelming majority ছিলো হিন্দু। আমরা সেই গনহত্যার victim দের সম্মান জানিয়েছি ৪০ বছর ধরে পাকিস্তানীদের ৭১ এর লক্ষমাত্রা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করে।