নষ্ট রাত্রি
ছোট গল্প

আদনান আদনান

উৎসর্গ
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

রাত প্রায় বারোটার দিকে তিনি টের পান যে তার শিশ্নটি হারিয়ে গেছে।
কামাল খাঁনের রাত জেগে বই পড়ার খুব অভ্যাস। তিনি চেম্বার থেকে বাড়িতে ফেরেন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে। আর পৌনেদশটার দিকে তিনি পড়তে বসেন, যা শেষ হয় রাত বারোটার একটু আগে আগে। আজ রাতে তিনি পড়ছিলেন মিলান কুন্ডেরার “নোবডি উইল লাফ”। গল্পটা পড়তে পড়তে তিনি হো হো করে হেসে উঠছিলেন কিছুক্ষণ পর পর। খুব মজা পাচ্ছিলেন নায়কের পরিণতি কল্পণা করে। আর বারবার তার কাফকার উপন্যাসগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো, বিশেষ করে দ্যা ট্রাইয়ালের কথা। তিনি শরীরের ভিতরে একটা চাঙ্গা ভাব অনুভব করছিলেন। জীবনের তিনটি প্রধান প্রশ্নের উত্তর তিনি সাহিত্যে খোঁজেন সবসময়। আমরা কোথার থেকে এলাম? এখানে আমাদের কিভাবে জীবন যাপন করা উচিৎ? আর আমরা কোথায় যাচ্ছি? তিনি উত্তর আজও খুঁজে পাননি, কিন্তু জীবনকে তিনি অর্থহীন ভাবেন না। বরং সাহিত্য, শোভা, আর সংসারের মাঝে তিনি খুঁজে পেয়েছেন আনন্দ। মানুষের দুঃখ তাকে দুঃখ দেয়। মানুষের সুখ তাকে সুখ দেয়। তিনি যতটা সম্ভব মানুষের উপকার করেন। জীবনের থেকে এর বেশি তিনি আশা করেন নি কখনো। তিনি ভাবতে ভালবাসেন যে তিনি একজন সুখি মানুষ। নিজেকে তার মাঝে মাঝেই স্বার্থপর বলে মনে হয়, কিন্তু তিনি আত্মহত্যায় বিশ্বাসি নন।
তার বয়স পঞ্চাশের একটু ওপাশে, কিন্তু চল্লিশের একপাও ওপাশে দেখায়না তাকে। আগে বেশ লম্বাই ছিলেন, কিন্তু বয়সের সাথে সাথে কেমন যেন হঠাৎ করেই একটু কুঁজো হতে শুরু করেছেন। দাঁড়িগোফ তার পছন্দ না, তাই প্রতিদিন সকালে শেভ করেন। চশমা পরেন। আর অধিকাংশ সময়ে পরেন কাল রঙের শার্ট-প্যান্ট। শরীরে কোন মেদ না থাকায় কিছুটা ছোঁকড়া ছোঁকড়া দেখায় তাকে। তার ডান চোখটা একটু টেরা, কিন্তু তিনি তা স্বীকার করতে রাজি নন। তার বাপের কোন টাকা ছিলো না। কিছুই কখনো দিতে পারেন নি তিনি, আর রেখেও যান নি কিছু। এ নিয়ে অবশ্য কামাল খাঁনের কোন ক্ষোভ নেই। তিনি নিজের চেষ্টায় ও অনেক কষ্টে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন দেশ স্বাধীনের কিছু আগে কলকাতা থেকে। তার পরের থেকে তিনি যশোর শহরেই আছেন। তার গ্রাম যশোর শহর থেকে উনিশ কিলোমিটার দক্ষীণে মোবারাকপূরে। প্রতি মাসে তিনি সাইকেল চালিয়ে একবার এখনো গ্রামে যান। তিনি প্রায়ই বলেন, “জীবন তো গ্রামে, আর শহরে শুধু বেঁচে থাকা জীবনের অপেক্ষায়।”
কামাল খাঁনের মূলত উপন্যাস আর ছোট গল্প পড়ার দিকেই ঝোঁক বেশি। তিনি এমনভাবে নিয়মিত পড়াশুনা করেন যেন তা তার দায়িত্ব। না পড়লে দারুণ কোন ক্ষতি হয়ে যাবে তার বা অন্য কারো। আগে অনেক উপন্যাস পড়তেন, কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে পড়ছেন শুধু ছোট গল্প। তিনি কখনো একটার বেশী বই এক সাথে পড়েন না। বর্তমানে মিলান কুন্ডেরার কিছু গল্প পড়ে খুব মজা পাচ্ছেন। তিনি খুব ধিরে পড়েন। এক এক পাতা পড়তে তার কখনো কখনো কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে যায়। তবে তিনি প্রথমে গল্পটা একবার দ্রুত পড়ে নেন। তারপর যখন দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার পড়েন তখন তিনি খুব ধিরে পড়েন। তিন বারের কম তিনি কোন গল্পই পড়েন না। তার বিশ্বাস একটা গল্প লিখতে লেখকের যদি পাঁচ বছর লেগে যায়, আর তা পড়তেও যদি কারো পাঁচ বছর লেগে যায় তবে তাতে কোন ক্ষতি নেই। দিনে তিনি কখনো বারো পাতার বেশি পড়েননা। এর বেশি পড়াকে তিনি অপরাধ বলে মনে করেন। এক জীবনে কতটা বই একটা মানুষ পড়তে পারে? কতটা বই একটা মানুষের পড়া উচিৎ? দশ বা বরো? এর বেশি পড়ে সত্যিই কি কিছু বোঝা সম্ভব? তিনি সুখ পান সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, শামসুর রাহমান, আর হুমায়ুন আজাদ পড়ে। তিনি তাঁদেরকে বাঙলার হিরকখন্ডত্রয় বলে মনে করেন।
তিনি একজন অভিজ্ঞ পাঠক। তারপরও কুন্ডেরার গল্পটির নায়িকা ক্লারা কেন যেন তার ভিতরে একটা কামভাব জাগিয়ে তোলে। ক্লারাকে তিনি যেন চোখের সামনে দেখতে থাকেন। তার ক্লারাকে প্রচন্ড রকম করতে ইচ্ছে করে। তিনি নিজেই লজ্জা পেয়ে যান যখন বুঝতে পারেন যে ব্যপারটা ভুল হয়ে যাচ্ছে। তিনি শিশ্নটিকে ছুঁয়ে দেখতে গেলে শিশ্নটিকে খুঁজে পান না। যদিও তিনি কামতাপ ও কামচাপ অনুভব করতে থাকেন, কিন্তু শিশ্নটিকে খুঁজে পান না। ওটির যেখানে থাকার কথা সে সেখানে নেই। অন্ডকোষ সহ শিশ্নটি নেই। এ কি কান্ড! তিনি চমকে ওঠেন প্রথমে, তারপর হেসে ওঠেন। এ কিভাবে সম্ভব? নিজেকে উন্মাদ বলে মনে হতে থাকে। একবার ভাবেন স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু তাও বা কিভাবে সম্ভব? স্বপ্নেরও তো একটা রসবোধ থাকা দরকার। আর আছে বলেই হয়তো তার এই খেলা! সামনে পিছনে নিচে সবখানে ছুঁয়ে দেখেন, কিন্তু না, তা নেই। বুকপঁকেটে দেখেন। নেই। চেয়ারের উপরে ও নিচে দেখেন। বইটির পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখেন। নেই। অবাক হন নিজের কর্মকান্ড দেখে। নিজেকে তিনি একজন যুক্তিবান মানুষ বলেই জানেন। কিন্তু এ তিনি কি করছেন? কি ভাবছেন? কি দেখছেন? তিনি লুঙ্গি খুলে একটা ঝাড়া দেন। নেই। জামাটা খুলেও একটা ঝাড়া দেন। নেই। বাথরুমে যান একবার। প্যান্টের পকেটে খোঁজেন বেশ কয়েকবার। অফিসের প্যান্ট ও শার্ট ঝেড়ে দেখেন। নেই। তিনি মেঝেতে বসে পড়েন। হেসে গড়াগড়ি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে উঠে বসেন। এটা কিভাবে সম্ভব? যাবে কোথায়? পড়ার ঘরে বা বাথরুমের বাইরে তো হারাণোর কথা না। মনে আছে গোসলের সময় ওটিকে ছুঁয়েছিলেন একবার। তারপর থেকে তো এই ঘর ছেড়ে আর যান নি। তাহলে যাবে কোথায়? তিনি চিৎকার করে ওঠেন। তিনি আবার সারা ঘরে খুঁজে দেখেন আরো একবার। ঘর বলতে তো শুধু পড়ার টেবিল, চেয়ার, আর কিছু বই। এ সামান্য কিছু জিনিসের ভিতরে হারাবে কোথায় ওটা? বুঝে উঠতে পারেন না তিনি কি করবেন, বা তার কি করা উচিৎ। তার কি পুলিশে খবর দেওয়া উচিৎ? পুলিশকে খবর দিয়ে কি বলবেন? “যে আমার শিশ্ন হারিয়ে গেছে, আমাকে তা খুঁজে পেতে সাহায্য করুন?” নিজেকে তার এতো বোকা আর কখনো কোনদিন মনে হয়নি।
সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে সারা বাড়ীটা একবার খুঁজে দেখবে। একাবার মনে হয় যে তার উচিৎ হবে তার স্ত্রীকে জাগিয়ে তোলা। কিন্তু চিন্তাটা তার ভালো লাগেনা। কেউ কি কখনো তার স্ত্রীকে গভীর ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে বলেছে, “আমার শিশ্ন হারিয়ে গেছে, আর আমি তা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না”? সে বাইরের ঘরে সাইকেলের আশে পাশে আর ছিটের নিচে দেখেন। শিশ্ন নেই। রান্নাঘরেও দেখেন। নেই। তার নিজের শোবার ঘরে আর অন্য দু’ঘরেও নেই। বাইরে দরজার আশে পাশেও খুঁজে দেখেন। নেই। বাড়ির দো’তলায় উঠতে তিনি ভয় পান, লজ্জাবোধ করেন। অনেকক্ষণ তিনি দো’তলায় ওঠার দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকেন। তার সাত মেয়ে ঘুমিয়ে আছে দো’তলার এক ঘরে। তারা সবাই সন্ধ্যার পরেই ঘুমিয়ে পড়ে। তাদের সবারই ভোর রাতে উঠে পড়তে বসার অভ্যাস। তিনি মেয়েদের ঘরটি বাদে বাকি তিনটি ঘরে শিশ্নটিকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হন। মেয়েদের ঘর ভিতর থেকে আটকানো থাকে। তিনি কঁড়া নাড়তে সাহস পাননা। কি বলবেন তিনি যখন তার মেয়েরা তার কঁড়া নাড়ার কারণ জানতে চাইবে? শুধু এই চিন্তাটা তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে থাকে। তিনি কেঁদে ফেলেন। নিজেকে মৃত বলে মনে হতে থাকে। লজ্জায় তার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। ঘামতে শুরু করেন তিনি। তিনি সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারেন না। দ্রুত নিচে নেমে আসেন। রান্নাঘরে যান পানি পানের জন্য, আর তিন চার বা পাঁচ গ্লাস পানি গিলে ফেলেন। মনের ভিতরে তার একটা খটকা লেগেই থাকে। মেয়েদের ঘরটা বাদে তিনি অন্য সব যায়গায় খুঁজেছেন। তাদের ঘরে তো ওটা লুকিয়ে থাকতেই পারে। পারে না কি? তাদের ঘরটাই তো দো’তলার সবচেয়ে বড় ঘর। হারাতে যখন পারে, সে লুকিয়েও থাকতে পারে! তিনি স্ত্রীকে জাগিয়ে তোলা ছাড়া আর অন্য কোন পথ দেখতে পারেন না।
তার সন্দেহ হতে থাকে যে সে হয়তো শিশ্নটি চেম্বারেও হারিয়ে আসতে পারেন। মনে পড়ে গোসলের সময় ছুয়ে দেখেছেন, কিন্তু এমনও হতে পারে যে তা গতকালের বা তারও আগের স্মৃতি। তিনি সাইকেলটা নিয়ে একবার বেরুবেন বলে ভাবেন। কিন্তু মোড়ের পুলিশটির কথা মনে পড়ে যেতেই তার ইচ্ছেটা কিছুটা দমে যায়। যদিও পুলিশ, বাবলু, তাকে খুব ভালো করে চেনে, তারপরও তিনি ভয় পেতে থেকেন যে তাকে কিছু প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হতে পারে। কি বলবেন তিনি বাবলুকে? “বাবা আমার শীশ্নটি হারিয়ে গেছে, চলোতো আমার সাথে আমরা দু’জনে মিলে দেখি শালাকে খুঁজে পাওয়া যায় কি না!” বাবলু হয়তো তাকে মাতাল ভাববে, বা ভাববে মাথাটা গেছে। হয়তো তাকে ধরে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবে যাতে তার কোন ক্ষতি না হয়। এসব ভাবতে ভাবতে তার মনে একটা ভয় জমাট বাঁধতে থাকে। এমন কি হতে পারেনা যে তার শিশ্নটি বাড়িতে ফেরার সময় রাস্তায় পড়ে গেছে? তার চেম্বার বাড়ির থেকে তিন মাইল মতো দূরে। যদি রাস্তায় হারিয়ে থাকে তো এতক্ষণে তা হয়তো রিকশা বা কোন গাড়ির নিচে পড়ে শেষ, বা কোন কুকুর বা কাকে মুখে করে নিয়ে গেছে। তার শরীর ঠান্ডা হয়ে উঠতে থাকে। আর যদি কেউ তা পড়ে পায় রাস্তায় আর তা তুলে বাড়ি নিয়ে কোথাও ফেলে রাখে? তার কি উচিৎ হবে কাগজে একটা বিজ্ঞাপণ দেওয়া? সে শিশ্নটির কি বর্ণনা দেবে? সে কি তার শিশ্নটিকে কোনদিন খুব ভালো করে দেখেছে? শিশ্নটি দেখতে কেমন? তাতে কি কোন তিল ছিলো? ছিলো কোন আঁচিল? শান্ত অবস্থায় লম্বাই সে কতটুকু? তিনি কোন বর্ণনা-ই দাড় করাতে পারেন না। আর তাছাড়া এই বিজ্ঞাপণ কি কোন কাগজ ছাপবে? ছাপলেও কেউ কি প্রমান ছাড়াই তাকে ফিরিয়ে দেবে শিশ্নটি? অন্য কেউ ও তো তার শিশ্নটি হারিয়ে থাকতে পারে? অসম্ভব তো নয়। আর তিনিই কি তার শিশ্নটিকে চিনতে পারবেন? হয়তো তার স্ত্রী চিনতে পারবে, কিন্তু তিনি চিনতে পারবেন না। এ ব্যপারে তিনি মোটামুটি নিশ্চিত হন। আর তখনই প্রথমবারের মতো তিনি বুঝতে পারেন যে তার শিশ্নটি আর কোনদিন খুঁজে না ও পাওয়া যেতে পারে। তিনি বুঝতে পারেন যে তার মুখ লাল উঠছে, আর তার সারা শরীর ঘামে বৃষ্টিতে ভেজার মতো হয়ে ওঠছে। তিনি হন্তদন্ত ভাবে দরজা খুলে শোবার ঘরে ঢোকেন।

তার স্ত্রী ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। তিনি প্রথমে কিছু বুঝতে না পেরে কামাল খাঁনকে একগ্লাস পানি আনতে বলেন। তার স্ত্রীর নাম শোভা। বয়সে কামাল খাঁনের থেকে কিছু কম। তবে লম্বায় তার থেকে সামান্য বেশি। এই বয়সেও যৌবন তার শরীর থেকে পালিয়ে যায়নি। লম্বা নাক-মুখ-চিবুকে তাকে অসাধারণ দেখায়। আর তার চোখ সারাক্ষণ হাসতে থাকে। অনেকেই এখনও বলে, “আপনার সৌন্দর্য তো সে’কালের ইন্ডিয়ান নায়িকাদের মতো”। কামাল খান জীবনে কখনো অন্য কোন নারীর সাথে শোননি, প্রয়োজন বলে মনে করেননি। তার দৃষ্টিতে কখনো শোভার সৌন্দর্যের বলয় পেরিয়ে যেতে পারিনি অন্য কেউ। আর তাছাড়া তিনি প্রায়ই নিজে নিজে বলে উঠেন, “শুধু শোভা-ই আমাকে বোঝে”।
তিনি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে বলেন, “আমার তোমারে কিছু বলার আছে”।
“কি? কেন? বাজে কতো এখন?”
“খুবই জরুরী একটা বিষয়”।
শোভা খাটের উপরে উঠে বসতে বসতে বলে, “কোন খারাপ খবর নাকি?” তিনি সবসময় তার মেয়েদের নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা-ই থাকেন। সাতটা মেয়েকে মানুষ করা তো আর কোন সহজ ব্যপার না! ছেলের আশার তারা সংসার বড় করেন নি। বরং বড় সংসার তাদের দু’জনেরই পছন্দ। বড় মেয়ের বয়স ছাব্বিশ, আর ছোটটির বয়স চৌদ্দ। তারা সবাই মেধাবী। তিরিশের আগে তারা সবাই বলে দিয়েছে তারা কেউ বিয়ে করবেনা। তারা তাদের মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে তাদের সৌন্দর্য, আর বাবার কাছ থেকে পেয়েছে ছিপছিপে শরীরের গঠন।
“না তেমন কিছু না। তবে অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটে গেছে।“
“অদ্ভুত? এত রাতে আবার কি ঘটলো? আমারে আবার বলো না যে তুমি অদ্ভুত কিছু একটা পড়েছো। সেরকম কিছু হলে সকালে শোনা যাবে। এখন শুয়ে পড়া যাক”।
“বিষয়টা জরুরী। আমার উচিৎ তোমারে জানানো”।
খাটের পাশে উঠে বসে শোভা, ঘরের আলো জ্বালিয়ে সে বলে, “বলো শুনি কি ব্যাপার।”
“আমার মনে হয় আমার শিশ্নটি হারিয়ে গেছে।”
“কি বলছো এসব? পাগল হয়ে গেলে নাকি? শীশ্ন হারাবে কিভাবে? এত রাতে এসব মজা করার কি কোন মানে হয়?”
“সত্যিই হারিয়ে গেছে।”
“আরে উন্মাদ নাকি তুমি?”
কামাল খাঁন তার স্ত্রীকে দেখায় যে সত্যিই তার শিশ্নটি নেই। শোভা খাটের থেকে নেমে দেয়ালের দিকে সরে যায়। সে ভয় পেয়ে যায়। সে পরিস্কার সেখতে পায় যে কামালের ঐ জায়গাটা তেলা, যেন সেখানে কোনদিন কিচ্ছু ছিলনা। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কামাল খাঁনও দাড়িয়ে থাকেন বস্ত্রহীন।
শোভা বলে, “এ কিভাবে সম্ভব? এ কিভাবে হলো?”
“কে জানে! আমি সবখানে খুঁজেছি। হতে পারে চেম্বারে পড়ে গেছে। হতে পারে রাস্তায় পড়ে গেছে। যদি রাস্তায় পড়ে থাকে তো তার আর পাবার সম্ভাবনা নেই। শুধু ওদের ঘর বাদে আমি আর অন্য সবখানে খুঁজেছি। আমার মাথায় কিছু খেলছেনা। আমি কি করবো? আমার কি করা উচিৎ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। হতে পারে মেয়েদের ঘরে ওটা লুকিয়ে আছে। জানি তা সম্ভব না, তবে কে জানে, হতেও তো পারে!”
“কি বলছো এসব? ওদের ঘরে কি করবে ওটা? তোমার মাথায় এসব কিভাবে এলো? তোমার তো লজ্জা পাওয়া উচিৎ। তোমার কি লজ্জা করছে না এসব বলতে?”
“আমি তো কথাটা বলতে মরে যাচ্ছি। মাটির নিচে নেমে যাচ্ছি। কিন্তু ঐ একটা জায়গা বাদে আমি আর সবখানে খুঁজেছি। মনের ভিতরে খুঁতখুঁত করছে আর কি। অন্য কিছু না।”
“তোমার লজ্জা পাওয়া উচিৎ।”
“আহাঃ আমাকে নিশ্চিত হতে হবে তো!”
“নিশ্চিত হতে হবে?”
“যাওনা, দেখো ওখানে আছে কিনা। থাকলে থাকতেও তো পারে।”
শোভা দেখতে পায় যে কামাল কাঁপছে, ঠীক মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। সে আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

সে মেয়েদের ঘরের কড়া নাড়ে খুব জোরের সাথে। ভিতর থেকে আমিনা বলে, “কি, আব্বা নাকি?”
“না, আমি। দরজাটা একটু খোল তো।”
“কেন? এত রাতে কি হলো আবার?”
“মহাসর্বনাশ হয়ে গেছে।”
আমিনা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বলে, “কি, কি হয়েছে মা? সব ঠিকটাক আছে তো? আব্বার কি শরীর খারাপ?”
শোভা ঘরের ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমিনা অবাক হয়ে ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্যরাও ততক্ষণে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। সবাই একটা ভয় পেয়ে যায় যেন।
সারু কম্বলটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে উঠে বসে বলে, “কি মা? তোমারে এত ভয় পাওয়া দেখা যাচ্ছে কেনো? ব্যপার কি বলো তো!”
“তোমাদের আব্বার…তোমাদের আব্বার ওটা হারিয়ে গেছে।”
কাকলি বলে, “কোনটা? কি?”
“তারশিশ্নটি হারিয়ে গেছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।”
আমিনা বলে, “কি?”
“সে তো সারা বাড়ি খুঁজে ক্লান্ত। শুধু তোদের ঘরটা খুঁজতে বাকি।”
কথাটা শোনার পরে তার মেয়েরা সব খাটের উপরে লাফ মেরে উঠে জড়সড় হয়ে বসে। আর তারা ঘরের মেঝেতে এদিক ওদিক ওটাকে খুঁজতে থাকে। তাদের চোখে মুখে একটা ভয় নেমে আসে।
শোভা বলে, “তোদেরকে সব সাবধানে থাকতে হবে যতক্ষণ না ওটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কোন শিশ্নকেই বিশ্বাস করা যায়না।”
সামিন বলে, “কিভাবে হারালো? অবাক কান্ড যে!”
“কে জানে কিভাবে হারালো। কিন্তু ঘটনা সত্য। আমি দেখেছি”।
সাবিনা বলে, “মা, আমরা সবাই মিলে কি একটা স্বপ্ন দেখছি? এমন অবাস্তব ঘটনা কি সম্ভব?”
“সম্ভব। নিজের চোখেই তো দেখলাম”
মালিহা বলে, “আর ওটা আমাদের ঘরে থাকতে পারে শুনে তো আমার ঘিণ্ণা লাগছে।”
এমন সময় মপাঁশা হেসে ওঠে খিলখিল করে। সে সবার ছোট।
সামিন বলে, “তোর তো লজ্জা পাওয়া উচিৎ। তুই হাসছিস কেনো? তোরে তো মার লাগানো দরকার। বড় ফাজিল হয়েছো না?”
মপাঁশার মুখ কালো হয়ে ওঠে। সে চুপ মেরে যায়।
শোভা ঘরের সবখানে খুঁজে দেখে। নেই। কিছুটা শান্তি পায় সে। মেয়েরা মায়ের খোঁজা দেকে অবাক হয়। তাদের চোখ তাদের মায়ের গতিবিধির সাথে নড়তে থাকে ঘরময়। শোভা ঘর থেকে বের হয়ে যাবার আগে বলে, “দরজা ঠিক মতো লাগিয়ে দে। আর সবধানে থাক। আমরা অন্য এক জগতে বাস করছি আজ রাতে। কোন শিশ্নকেই বিশ্বাস করা যায়না।”

শিশ্নটিকে পাওয়া যায়নি শুনে কামাল খাঁনের মনটা একদম ভেঙ্গে পড়ে। তিনি মেঝেতেই শুয়ে পড়েন। শোভাও তার পাশে শুয়ে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। কামাল খাঁনের মার্কেজের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে তাঁর ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অফ সলিচ্যুডের কথা। তিনি নিজের ভিতরে এক চরম নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন। উপন্যাসটি ছিলো তার পড়া প্রথম ইংলিশ উপন্যাস। ওটা পড়ার পরে তিনি বুঝতে পারেণ যে বাঙলায় কোন উপন্যাস নেই। যা আছে তার সবই ব্যর্থ। তিনি এক চরম সত্যের মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলেন। তার আগের বিশ্বাস সব ধ্বসে পড়তে থাকে ঐ মহান উপন্যাসটি পড়ার পরে। অনেক পরে বাঙলায় শুধুমাত্র হুমায়ুন আজাদের তিনটি কাজকে (যাদুকরের মৃত্যু, মহান শয়তান, আর শুভব্রত, তার সম্পর্কিত সুসমাচার) তার ঐ পর্যায়ের কাছাকাছি বলে মনে হয়। এও একটা সুখের বিষয় বলে মনে করেণ তিনি। তিনি নিজেই এক সময় লিখতেন, কিন্তু তার প্রথম গল্প “অলৌকিক নরক” এর পরে তিনি আর কোন ভাল গল্প লিখতে পারেননি। তাই লেখা ছেড়ে শুধু পাঠকই হয়েছেন, আর তাতেই তিনি সুখি। তিনি বিড়বিড় করে প্রায়ই বলেন, “কি লাভ লিখে যদি মার্কেজের থেকে ভালো না লেখা যাই”? “অলৌকিক নরক” গল্পটি তিন বন্ধুকে নিয়ে এক কাহিনি। যারা সবাই চরম কামুক। গল্পের শেষে অলিদ দীর্ঘ তিন বছর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয় তার প্রেমিকাকে বেশ্যা বানাতে। আদনান পরকিয়া প্রেমে বিশ্বাসি। যে অপেক্ষায় আছে থাকে প্রিয় মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার জন্য। আর ফরিদ বাড়ির কাজের মেয়েটিকে যৌনদাসিতে রুপান্তরিত করে। মেয়েটিও যৌনদাসিত্বে নিজেকে আবিষ্কার করে সুখি হয়ে ওঠে। সারা জীবন কামাল খান একটা বিশ্বাস ধরে রেখেছেন আর তা হলো, “লেখকের কাজ শুধু কোন একটা বিষয়কে তুলে ধরা আর শিল্প সৃষ্টি করা। তার আর অন্য কোন সামাজিক দায়িত্ব নেই”। “অলৌকিক নরক” এই বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করেই লিখেছিলেন । আজ তিনি এই অবস্থায় পড়ে আরো বেশি করে বুঝতে পারছেন একজন লেখকের কতটা নির্মম হওয়া উচিৎ। তিনি শোভাকে বলেন, “যদিও ঘটনাটা অসম্ভব, কিন্তু তা এখন আমাদের জীবনেরই একটা অংশ। আমাদের দায়িত্ব শুধু দেখে যাওয়া”। শোভা বলে, “তুমি একটু ঘুমাতে চেষ্টা করো। সকালে দেখা যাবে কি করা যায়। হতে পারে আমরা সবাই একটা হাস্যকর স্বপ্ন দেখছি”। কামাল খাঁন হো হো করে হেসে উঠেন। শোভার ভয় হয় কামালের জন্য, কিন্তু নিজেকে সে সামলে রাখে।

ওদের মা চলে যাবার পরে মেয়েরা ঘুমাতে সাহস পায়না। তারা আলো নিভাতেও ভয় পায়। মশারি ঠিক মতো গুঁজে শুয়ে থাকে তারা সবাই পাশাপাশি দু’টো খাটে।
মপাঁশা জিজ্ঞস করে, “যদি এই ঘরে আসে তো আমরা কি করবো?”
মালিহা বলে, “আমি মনে হয় চিৎকার করতে শুরু করবো।”
সাবিনা বলে, “আমি খুব মজা পাবো। জীবনে এমন একটা ঘটনার সাথে জড়াতে পেরে আমার ভালই লাগছে, তোরা যা-ই বলিসনা কেনো।”
সামিন বলে, “যেহেতু ওটা আব্বার সাথে আর লাগানো নেই, সেহেতু কি ওটাকে আর আব্বার জিনিস বলা যায়?”
কাকলি বলে, “তোর কি মাথার ঠিক আছে? কি বলছিস এসব?”
সামিন বলে, “তুই কি জোক পছন্দ করিসনা? আর তোর কি শিশ্ন পছন্দ না?”
আমিনা বলে, “শিশ্ন আমার খুবই পছন্দের একটা জিনিস। আর তাছাড়া এই হারানো শিশ্নটি তো আর আব্বার নেই। আমি সামিনের সাথে একমত।”
সাবিনা বলে, “আমি তো ওটাকে খুঁজে পেতেই চাইছি। খুব মজা হবে।”
সারু বলে, “আমার খুব লজ্জা লাগছে। আমাদের ঘুমানো উচিৎ।” সে আলো নিভিয়ে দেয়।
সামিন বলে, “আমার তো শিশ্নটির জন্য একরকম খারাপ-ই লাগছে। হয়তো যে ভয় পেয়ে লুকিয়ে আছে কোথাও। সারাটা জীবন তো ঐ নিচেই ঝুলে থেকেছে সে, অন্ধকারে। এখন সে স্বাধীন। এখন সে নিজের ইচ্ছেমতো যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। আমার মনে হয় সে আর আব্বার কাছে ফিরে যাবেনা। আমি খুঁজে পেলে আমি তাকে সুন্দর একটা জীবন দেবো। সে স্বাধীন। কিন্তু আমার থেকে সুন্দর জীবন আর তাকে কে দেবে! তাছাড়া যদি সে স্বাধীন না-ই হতে চাইতো তো এতক্ষণে আব্বার কাছে ফিরে যেতো। স্বাধীনতা কে না চায়!”
সাবিনা বলে, “আর আমার ভাগ?”
আমিনা বলে, “আমি সবার বড়, আমাকে প্রথমে দিতে হবে।”
সারু বলে, “তোর কি কিছুতেই মেটেনা? তুই তো একের পর এক ধরছিস আর ছাড়ছিস।”
আমিনা বলে, “আমি যেমন ঠিক তেমনই। আমি তো আর একটা নকল জীবন যাপন করতে পারি না!”
সামিন বলে, “আমরা সবাই না হয় ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবো। বেশ মজা হবে।”
সারু বলে, “আমরা ওটার বেশ্যা হবো?”
মালিহা খিলখিল করে হেসে ওঠে। মপাঁশাও।
সামিন বলে, “কি রে ঘুমাসনি, তোরাও ভাগ নিবি নাকি?”
মপাঁশা বলে, “আমি হবো ওটার ছোট বউ।”
মালিহা বলে, “আমি বউ হতে চাইনা, বেশ্যা হতে চাই।”
আমিনা বলে, “ওটা কোথায় কে জানে? শিশ্ন নারীর থেকে বেশী দূরে থাকার কথা নয়! মা তো এখন বৃদ্ধাই প্রায়। ওটার তো আমাদের কাছেই আসার কথা। ঠিকই আসবে দেখিস কুকুরের মতো গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে। ”
সারু বলে, “হয়তো লুকিয়ে আমদের কথা শুনছে।”
সামিন হেসে ওঠে। বলে, “আমি পেলে আমি ওটার বারোটা বাজিয়ে দেবো।” বলে, আবার সে হেসে ওঠে।
কাকলি বলে, “কাউকেই কিন্তু আমরা বলবোনা। ওটা একান্ত-ই আমাদের হবে। আমাদের নিজস্ব একটা শিশ্ন।”
আমিনা বলে, “ওটা দেখতে কেমন কে জানে? আব্বারে তো এখনও ছোঁকড়া দেখায়।”
মালিহা বলে, “ওটা দেখতে হবে একটা বড়সড়ো ইঁদুরের মতো।”
সবাই হেসে ওঠে।
কাকলি বলে, “কে নির্ধারণ করবে যে কে ওটাকে পাবে কোন রাতে?”
মপাঁশা বলে, “আমি সবার ছোট। আমি কি সবার আগে পেতে পারি?”
আমিনা বলে, “আগে তো পাই ওটাকে, তারপর দেখা যাবে। আমরা সাবাই ব্যবহার করবো।”
কাকলি বলে, “আমাদের ভিতরে একটা গন্ডগোল হতে পারে। একটা নিয়ম তো দরকার।”
সাবিনা বলে, “ঠিক আছে আমি ঠিক করবো কে কখন কিভাবে পাবে।”
সামিন বলে, “না, তুই খেয়ে শেষ করে ফেলবি। আমি তোরে চিনি খুব ভালো করে।”
সারু বলে, “সাবিনা তুই কেন রাখবি? তোরে সে অধিকার কে দিলো?”
মপাঁশা বলে, “আমি রাখবো। আমি তোদের সবাইকে ভালবাসি। আমি সবাইকে সমান ভাগ দেবো।”
মালিহা বলে, “শিশ্ন হাতে গেলে তোর চেহারা পাল্টে যাবে। আমি মানুষ চিনি।”
মপাঁশা বলে, “তুই আমার কি জানিস?”
মালিহা বলে, “জানি, জানি, আমি এখন আর ওসব কথা তুলতে চাচ্ছিনা।”
সাবিনা বলে, “আমরা ওটাকেই বলবো বেছে নিতে আমাদের একজনকে প্রথম বার। তারপরে এক একজন এক একরাতে নেবে।”
আমিনা বলে, “অতো কমে তোর হবে!”
“হবে। হবে না কেন?”
সামিন বলে, “আমার হবেনা। তাছাড়া আমার রাতে পছন্দ না। আমি দিনে চাই।”
কাকলি বলে, “অতো করলে ওটা ক্লান্ত হয়ে যাবে। ম’রে যাবে।”
আমিনা বলে, “আরে নাহ! শিশ্নের কাজ তো শুধু করা। ক্লান্ত হবেনা। ওটা খুশিই হবে।”
মালিহা বলে, “সবকিছুই তো একদিন ক্লান্ত হয়ে যায়। সবচেয়ে সুন্দরির প্রেমিকও তো একদিন ক্লান্ত হয়ে যায়।। ক্লান্তি নামা-ই তো মহানিয়ম!”
কাকলি বলে, “তুই তো দেখছি দার্শনিক বণে গেলি রে!”
মালিহা বলে, “আমি সঠিক। দেখিস তোরা।”
মপাঁশা বলে, “আমরা কেনো ওটার বেশ্যা হবো? ওটা হবে আমাদের কৃতদাস।”
আমিনা বলে, “তুই না বউ হবি ওটার?”
মপাঁশা বলে, “কৃতদাসকে করতে মজা বেশি মনে হয়।”
মালিহা বলে, “ভাবতেই ভালো লাগছে যে আমাদের একটা শিশ্ন থাকবে ইচ্ছেমতো ব্যবহারের জন্য।”
আমিনা বলে, “দেখি ওটা কাজ কেমন করে। আমার মনের মতো হ’লে আমি আর বিয়ে করছিনে।”
সামিন বলে, “তোরে সুখ দিতে গেলে তো ওটা মারা যাবে।”
সাবিনা বলে, “এটা অতিরঞ্জণ। শীশ্ন ক্লান্ত হয়না কখনো। আমরা সাতজনে দিনে সাতবার করে করবো। ওটা হয়ত আরো সাতবার করে চা’বে। ওটার পরাণ কোনদিন ভরেণা হাজার বার করলেও”।
সারু বলে, “আমিও বিয়ে করছিনে। আমি তো এখনই ওটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।”
সামিন বলে, “আহাঃ আমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিস কেনো? চিন্তায়ই তো অর্ধেকের বেশি কামসুখ। তোর তো তা জানার কথা! কে না বসে বসে কামচিন্তা করতে পছন্দ করে? যারা অস্বীকার করে তারা মিথ্যে বলে।”
মালিহা বলে, “বিয়ের কি দরকার? আমরা ওটাকেই খাঁটাবো। আমার মনে হয় ওটা দারুণ খাঁটবে আমাদের জন্য।”
কথা বলতে বলতে এক সময় ওরা সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোরের প্রথম আলো সামিনের চোখে লাগতেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে শুয়ে শুয়েই দেখতে পায় যে একটি শিশ্ন শুয়ে আছে মেঝের উপর তাদের দু’খাটের ঠিক মাঝখানে। সে খাটের থেকে নেমে হাতের তালুতে তুলে নেয় শিশ্নটিকে। ওটি হাতের থেকে মাথাটা একপাশে নিচে ঝুলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকে। শিশ্নটিকে খুব ক্লান্ত দেখায়, যেন সারা রাত তারও ঠিকমতো ঘুম হয়নি। সে শিশ্নটিকে তার কস্মেটিক ড্রয়ারে রেখে বাথরুমে যায়। ড্রয়ারটি সে বন্ধ করেনা। তার চোখে এক রকম কামোন্মত্ত হাসি ফুটে ওঠতে দেখা যায়।
নিচের ঘরে কামাল খাঁন প্রস্তুতি নিতে থাকেন চেম্বারে যাবার। সারা পথ তিনি ওটিকে খুঁজতে খুঁজতে যাবেন, আর আশা করবেন চেম্বারে খুঁজে পাবার। তাকে সাইকেলটা বের করতে শোনা যায়। আমি ড্রয়ারের ভিতরে কাঁপতে থাকি একদল মেয়ের তীব্র-ঝাঝালো যোনির গন্ধে।

বাঙলায় লেখা “নষ্ট রাত্রি” আমার প্রথম ছোট গল্প। অনেক ভুল-ত্রুটি হয়তো রয়ে গেলো, যা আশা করছি আপনাদেরকে এড়িয়ে টিকে থাকতে পারবেনা বেশিক্ষণ। আমি শ’তিনেক ছোট গল্প লিখেছি গত পাঁচ বছরে। আমি সাধারণত মানুষের নষ্ট হয়ে ওঠা, বা তাদের নষ্টামি নিয়ে লিখি। লেখা হয় ঠিকই, কিন্তু ছাপানো আর হয়ে ওঠেনা অনেকটা নিজেরই অলসতার কারণে। আর তাছাড়া আমার লেখার বিষয়গুলোও আবার একটু অন্য রকম (“নষ্ট রাত্রি” পড়ে আমি নিশ্চিত আপনারা তা বুঝতে পারছেন কিছুটা), যা বাঙলাদেশে ছাপাতে হলে বেশ সাহসের প্রয়োজন। আপনাদের উৎসাহ পেলে ভবিষ্যতে আরো কিছু ছোট গল্প মুক্তমনায় পোষ্ট করার ইচ্ছে রইলো। ই-মেইলঃ [email protected]