চলে গেছেন হুমায়ুন, শেষ হয়ে গেছে সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এক যুগ, যে যুগ আর কোনদিন হয়ত ফিরে আসবে না। রবীন্দ্রনাথের পাশে সাহিত্য সমালোচনার মারপ্যাঁচে তার হয়ত ঠাই হবে না, তবে পাঠকের হৃদয়ে তাঁর চিরস্থায়ী আসন নেবার মত তূল্য আর কেউ সহসা আসবেন এমন ভরসা পাই না। আমার এই লেখার উদ্দেশ্যে আসলে ভক্ত পাঠকের শোক প্রকাশ বা স্মৃতিচারন গোছের কিছু নয়, এক অপ্রিয় দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি বলাটাই ভাল। এই দায়িত্ব পালনের এটা উপযুক্ত সময় নয় জানি, তবে করতে বাধ্য হচ্ছি।
এই বিপুল জনপ্রিয় লেখক যে শুধু পাঠক/দর্শক বন্দনাই পেয়েছেন তা নয়, সাথে সাথে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিতর্কে জড়িয়েছেন, কিছু লেখালেখি সম্পর্কিত, কিছু তার ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কিতও বটে। লেখালেখির ব্যাপারে সম্প্রতি তার অপ্রকাশিত ‘দেওয়াল’ উপন্যাসের প্রথম আলোয় দু’ অধ্যায় ছাপা হবার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন (আমিও তাতে স্বাভাবিক ভাবেই ছিলাম নিজস্ব তথ্য যুক্তির ভিত্তিতে), ব্যাপারটি এমনকি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। মুশকিল হল এর জের ধরে কেউ কেউ তার ওপর অন্যায্য ভাবে অন্য দায়ও চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন তিনি কত ভয়াবহ বংগবন্ধু বিদ্বেষী কিংবা রাজাকারি চেতনায় বিশ্বাসী তা প্রমান করতে। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হচ্ছে যে তিনি তাঁর ‘জোছনা ওঁ জননীর গল্প’ বইতে নাকি বংগবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন নিয়ে ইচ্ছেকৃত ভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। গুরুতর অভিযোগের তীর হল তিনি নাকি সে বইতে প্রমান করার চেষ্টা করেছেন যে বংগবন্ধু সেদিন ভাষন শেষ করার সময় জয় বাংলার সাথে সাথে ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলেছিলেন।
এই অভিযোগ প্রথম শোনার পর আমি যারপর নাই বিস্মিত হই। বিস্ময়ের কারন বংগবন্ধু যে ‘৭ই মার্চের সেই কালজয়ী ভাষনের শেষে জিয়ে পাকিস্তান আসলেই বলেননি এটা আমি নিশ্চিত ভাবে প্রথম বুঝতে পারি হুমায়ুন আহমদের এই বই পড়েই। এই একই বই পড়ে কারো পক্ষে বিভ্রান্ত হওয়া কিংবা উলটো ধারনা পাওয়া কিভাবে সম্ভব সেটা আমার মোটা মাথায় ঢোকে না। ধরে নিচ্ছি যে সমালোচনাকারীরা আসলেই বইটি পড়েছেন।
এই ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বিষয়টি হুমায়ুন বই এর শুরুতে ভূমিকা (পূর্ব কথা) আকারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কিছু ঐতিহাসিক বিভ্রান্তি বর্ননা করার সময় ব্যাখ্যা করেছেন। তার জবানীতেই শোনা যাক ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বিষয়ে আসলেই তিনি ‘জোছনা ওঁ জননীর গল্প’ বইতে কি লিখেছিলেন।
জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের বিখ্যাত ভাষন প্রসংগেও একই ব্যাপার। জাষ্টিস মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সাহেবের বিখ্যাত গ্রন্থ বাংলাদেশের তারিখ প্রথম সংস্করনে তিনি উল্লেখ করেছেন ভাষনের শেষে শেখ মুজিবুর রহমান বললেন ‘জয় বাংলা। জিয়ে পাকিস্তান’। দ্বিতীয় সংস্করনে তিনি ‘জিয়ে পাকিস্তান’ অংশটি বাদ দিলেন। কবি শামসুর রহমানের লেখা আত্মজীবনী যা দৈনিক জনকন্ঠে ‘কালের ধূলোয় লেখা’ শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেখানেও তিনি বলেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ কথা ছিল ‘জিয়ে পাকিস্তান’। আরো অনেকের কাছে আমি এ ধরনের কথা শুনেছি, যারা আওয়ামী ভাবধারার মানুষ। সমস্যা হল আমি নিজে ৮ এবং ৯ই মার্চের সমস্ত পত্রিকা খুঁজে এরকম কোন তথ্য পাই নি। তাহলে একটি ভুল ধারনা কেন প্রবাহিত হচ্ছে?
বংগবন্ধু যদি ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলে থাকেন তাহলে তাতে দোষের কিছু নেই। তিনি যা বলেছেন অবশ্যই ভেবে চিন্তেই বলেছেন। পাকিস্তানের সংগে তার আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে। তাকে সময় নিতে হবে। ৭ই মার্চে যুদ্ধ ঘোষনার মত অবস্থা তার ছিল না। বংগবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন গেটেসবার্গ এড্রেসের চেয়েও গুরুত্বপূর্ন বলে আমি মনে করি। এখানে কোন অষ্পষ্টতা থাকা বাঞ্জনীয় না।
ওপরের অংশ পড়ে আপনাদের কি মনে হয়? হুমায়ুন কি এ বইতে বংগবন্ধু ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলেছিলেন এটা সরসারি বা কৌশলে প্রমানের চেষ্টা করেছেন, নাকি উল্টোটাই করেছেন? আমার তো পরিষ্কারই মনে হয়েছে যে উল্টোটাই তিনি প্রমানের চেষ্টা করেছেন। তিনি অবশ্যই সংশয়ে ভুগেছেন, যার মূল কারন আওয়ামীপন্থী লোকদের জবানীতেই ‘জিয়ে পাকিস্তান’ এর সন্ধান পাবার পর। তবে সে সংশয় নিরসনে নিজেই কিছু গবেষনা করে নিশ্চিত হয়েছেন যে আসলে বংগবন্ধু সেদিন জয় বাংলার সাথে জিয়ে পাকিস্তান বলেননি, কারন ততকালীন কোন পত্রিকায় এর কোন রেফারেন্স নেই। অর্থাৎ যারা সেদিন ‘জিয়ে পাকিস্তান’ শুনেছেন বলে দাবী করেছেন তাদের দাবী যে কোন কারনেই হোক সঠিক নয়। নিজেই তাই সত্য আবিষ্কার করে প্রশ্ন করেছেন যে ‘তাহলে একটি ভুল ধারনা কেন প্রবাহিত হচ্ছে?
এরপর সত্য প্রকাশের সাথে কিছু বাস্তব বিশ্লেষনও দ্বিতীয় প্যারায় করেছেন যা খুবই বাস্তব সম্মত। বংগবন্ধু সহ সাড়ে সাত কোটি বাংগালী ৭ই মার্চ, ’৭১ তারিখে পাকিস্তানেরই নাগরিক ছিল, বংগবন্ধু বাংলার লোক হলেও পাকিস্তানের জাতীয় নেতা হিসেবে জিয়ে পাকিস্তান বলাটা তার পক্ষে মোটেই অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। অর্থাৎ এ নগন্য বিষয় নিয়ে ঘোঁট পাকানোও আসলে অসত উদ্দেশ্যেই করা হয়। এ নিয়ে বহুদা কমপ্লেক্সে ভোগারও আসলে কোন প্রয়োযন নেই। আর যেখানে আদৌ ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলাই হয়নি সেখানে তো আর কোন কথাই আসে না।
আমি বুঝতে পুরোই অক্ষম যে বিভ্রান্তিটি এমন চমতকার তথ্য যুক্তি সমেত ব্যাখ্যা করার পরেও কিভাবে তার লেখা পড়ে কারো বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে? আমার কাছে অবশ্য ২০০৪ সালে প্রকাশিত বইটির প্রথম সংস্করনই আছে, সেখান থেকেই কথাগুলি কোট করেছি, অন্য কোন সংস্করনে কি হুমায়ুন ভিন্ন কিছু বলেছেন? কেউ জানালে বাধিত হব। আমার ভুল হচ্ছে কিনা যাচাই করতে বইটির ভেতরেও ‘৭ই মার্চের ভাষন ঘটিত বর্ননা পড়েছি যা অবশ্যই ইতিহাসের দলিল নয়। কিন্তু সেখানেও (১০৪/১০৫ নং পাতায়) জিয়ে পাকিস্তান ঘটিত আর কোন কথা নেই।
আমার লেখার উদ্দেশ্য এখানে ‘জিয়ে পাকিস্তান’ ক্যাঁচাল নিয়ে আলোচনা নয়, হুমায়ুন সাহিত্যের সামগ্রিক আলোচনা সমালোচনাও নয়। আমি নিজে হুমায়ুন ভক্ত হলেও অন্ধ ভক্ত নই। তীব্র ভাবে হুমায়ুন সমালোচনা করেছি, এমনকি তার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখারও কিছু মৌলিক দূর্বলতা যা আমার চোখে খুব তীব্রভাবে লাগে তার সমালোচনা করেছি। সাথে সাথে এটাও স্বীকার করি যে এখনো তার বই হাতে পেলে সেটাই আগে পড়ি, তাঁর সাহিত্য মান কত নীচু তা বুঝি না বলে নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে হয়। এখানে আমার শুধু বক্তব্য তিনি যা বলেননি তার দায় তাঁর ওপর চাপানোর চেষ্টা করা যে কোন আদর্শবাদের দোহাই দিয়েই হোক না কেন ঠিক নয়। আর যে কোন লেখাই পড়ে বোঝার চেষ্টা ছাড়া আলোচনা সমালোচনায় নামা কোন কাজের কথা নয়। তার লেখার সমালোচনা করার আরো বহু ভাল পয়েন্ট আছে। অবশ্য কেউ ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ বইতে ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বিষয়ে ভিন্ন কিছু লেখা আছে রেফারেন্স সহ দেখালে আলোচনা স্বাপেক্ষে কথাগুলি প্রত্যাহার করে নিতে পারি।
অনেক ধন্যবাদ আদিল ভাই পোস্টটির জন্য। প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ তার সাম্প্রতিক দেয়াল (যা তিনি শেষ করে গিয়েছেন বলে দাবি উঠেছে) উপন্যাসটির মাধ্যমে নতুন করে বিতর্কে এসেছেন। প্রথম আলোয় এর নির্বাচিত অধ্যায় প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকের মতো আমিও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম। প্রতিবাদ করেছিলাম ইতিহাস থেকে বিচ্যুতির। যেমন ফারুককে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর। এখন এই প্রতিবাদের হেতু কি? একটা উপন্যাসে হুমায়ুন যদি ফারুককে মুজিবের সন্তানও বানান কোনো সমস্যা হতে পারে না। হবে তখনই যখন ওই লাইনটি ইতিহাস হিসেবে ধরে নিয়ে বিতর্কে নামা হবে।
এই চর্চাটি শুরু হয়েছিলো জোছনা ও জননীর গল্প বইটির মাধ্যমে। এখন আমরা জানি নির্মল সেন থেকে শুরু করে হাবিবুর রহমান অনেকেই এই উল্লেখটি করেছেন। কিন্তু অনলাইনে ৭ মার্চ প্রসঙ্গে হঠাৎই কোনো ছাগু এসে এক লাইন লিখে দিলো- মুজিব তো ৭ মার্চ জিয়ে পাকিস্তান বলেছেন। কই পাইলেন কথাটা? হুমায়ুন আহমেদ লিখছেন তার বইয়ে। হুমায়ুন কোনো ইতিহাস বই লেখেন নাই, তারপরও তার সেই গল্পেরও এত জোর যে সেটা নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্কে নামে ছাগুরা। এমনকি আহমদ ছফাও এর বাইরে নাই। ‘৯৩ সালে প্রকাশিত একাত্তর : মহাসিন্ধুর কল্লোল নামে এক রচনায় লিখছেন : ’একটা কথা বলি, শেখ সাহেব যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে জয় বাংলার সঙ্গে সঙ্গে জয় পাকিস্তান শব্দটিও উচ্চারণ করেছিলেন। এখন এই ভাষণ নিয়ে নানা বিতর্ক বিতন্ডা চলছে। আমি এত ছোট্ট মানুষ! আমাকে সাক্ষ্য দিতে কেউ ডাকবে না। আমি যেমন শুনেছি, তেমনি বললাম। হতে পারে আমার শ্রুতির বিভ্রম ঘটেছিল।’…
খেয়াল করেন ‘৯৩ সালে এমন একটা বিতর্ক শুরু হলো। এবং যেসব লেখকের উল্লেখ করা হয়েছে যারা এইরকম শ্রুতিবিভ্রমের শিকার বলে আমি মনে করি তাদের এই স্বীকারোক্তিমূলক স্মৃতিচারণ শুরু ১৯৭৭ সাল থেকে। ওইসময়ের আগে কেউ কোনো বইয়ে কোনো লেখায় এই দাবি করেন নাই মুজিব জিয়ে পাকিস্তান বলেছেন তার বক্তৃতায়, বা পাকিস্তান জিন্দাবাদ। উপরে অভিজিৎ দা একটা ভিডিও ফুটেজ দিয়েছেন যেখানে সেই বক্তৃতার স্বাক্ষী একজন বিহারী মুজিবকে এই দোষে অভিযুক্ত করছেন যে তার যেখানে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলার কথা, সেখানে তিনি বলছেন জয় বাংলা।
উপরে কালযাত্রী বারবার এডিটেড বক্তৃতার কথা বলছেন। বক্তৃতার কি শুধু রেডিও ভার্সন ছিলো যা আপনি এডিটেড বলছেন? তাহলে ভিডিও ফুটেজ এলো কোত্থেকে? নাকি দুইটাই একই মাপে এডিটেড? দেশ-বিদেশে সব জায়গায় এডিটেড? কোনও ছবিতে কি চোখে পড়ে নাই বিদেশী সাংবাদিকদের উপস্থিতি? তাদের টিভি ক্যামেরা? রেকর্ডিং? আপনাকে শুধু একটা কথা বলবো। মন দিয়া বক্তৃতাটা একবার শুনেন প্লিজ। বক্তৃতার ফ্লো বলে একটা কথা আছে। শেষ লাইনে আসার পর আপনি আপনার বিবেচনা বোধ এবং মেধার প্রয়োগ ঘটায়া চেষ্টা কইরেন জয় বাংলার পর পাকিস্তান জিন্দাবাদ কিংবা জিয়ে পাকিস্তান কথাটা ঢুকাইতে। দেইখেন সেটা সম্ভব মনে হয় কিনা।
পাকিস্তানী ফুটেজটায় রেডিও বক্তৃতার অংশ ব্যবহার করা হইছে। মুজিবের জয় বাংলার পর পাবলিকের জয় বাংলার যে সোচ্চার ধ্বনি, তাতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ আবিস্কার কষ্ট কল্পনা। আর সেটা যদি বিতর্কিত এবং সেনাসদরে গোপনে মাথা বিক্রি করা বুদ্ধিজীবিদের তরফে হয়, তখন সেটারে মানা শুধুমাত্র গর্দভদের পক্ষেই সম্ভব।
@পিয়াল ভাই,
আপনাকে এখানে পেয়ে ভাল লাগল।
মূল বিতর্ক আসলে আমার এই পোষ্টের উদ্দেশ্য ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল হুমায়ুন সম্পর্কে প্রচলিত একটা ভ্রান্ত ধারনা সম্পর্কে আলোকপাত করা।
দেওয়ালের সেই দুই পার্ট নিয়ে আমার তেমন কোন দ্বি-মত নেই, হুমায়ুন খুব দূর্বল কাজ করেছেন। আমার ধারনা এক্ষেত্রে ৭২-৭৫ আমলে তার ব্যাক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকট ভূমিকা রেখেছে, সম্ভবত তার পরিবার রক্ষী বাহিনীর সন্ত্রাসের সরাসরি শিকার হওয়া তার মনোজগতে স্থায়ী ভূমিকা রেখেছে। দেওয়ালের সেই দুই পার্ট পড়লে বোঝা যায় যে তার মানশ পটে বংগবন্ধু একজন স্বৈরাচারী শাসক, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক সেই স্বৈরাচারী শাসককে সরানোর পবিত্র দায়িত্ব পালন করছে। নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারনে উনি প্রবল ভাবে আবেগ তাড়িত হয়ে নিজে যা মনে করেন তার স্বপক্ষে যাইই পাওয়া যায় তাকেই কোন রকম সতর্ক ক্রস রেফারেন্স ছাড়া দলিল হিসেবে মেনে নিয়েছেন, যেমন মাসকারেনহাসের রেফারেন্সে টুংগিপাড়ায় বংগবন্ধুর বাড়ি জনরোষে লুটপাটের ঘটনা, কারন স্বৈরাচার পতন ঘটলে এমনই হওয়ার কথা যা উনি বিশ্বাস করতে চান।
কথা হল দেওয়ালের জের ধরে এর ৮ বছর আগে প্রকাশিত আরেক বইতে উনি যা বলেননি তা তার নামে ভ্রান্তভাবে চাপানোর অপপ্রয়াসও সমর্থন করা যায় না। আপনার মন্তব্য আগেই পড়েছি রাব্বানির সৌজন্যে। আমার মনে হয় না যে বই এর ভিন্ন ভার্ষনে ভিন্ন কিছু এ সম্পর্কে ছিল (নিশ্চিত না অবশ্যই)। ছাগুরা যদি হুমায়ুন আহমেদ এর জোছনা জননী রেফার করে জিয়ে পাকিস্তান চালাতে চায় তবে চপোটাঘাত তাদের গালে এই বই দিয়েই পড়ার কথা। তাদের মুখের ওপর দেখালে হয় যে হুমায়ুন নিজেই গবেষনা করে জিয়ে পাকিস্তান তত্ত্ব ভুল ধারনা বলে জানিয়েছেন। বেচারা হুমায়ুনকে ঊল্টো গালাগালা করার তো মানে হয় না।
ভাষন এডিশনের হাইপোথিসিস আমার কাছে বাস্তবতার বিচারে তেমন ফিজিবল মনে হয় না। সংশয় সব কিছু নিয়েই প্রকাশ করা যায়। ৯১১ ইনসাইডার জব এমন ধারনা বহু আপাত তথ্য প্রমানেও সবচেয়ে বড় ফাঁক আমার কাছে যে কারনে (৯১১ ইনসাইডার জব হলে এই কাজে বহু শত লোকের ভূমিকা থাকতে বাধ্য, তাদের সবাইকে বুশ প্রশাসন আমেরিকার মত দেশে গায়েব করে ফেলেছে বা মুখ বন্ধ রাখাচ্ছে এটা ভাবা পাগলামিরই নামান্তর) সেই একই কারনে এই এডিশন হাইপোথিসিসেরও সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হল এডিশনের সাথে সরাসরি জড়িত একজন কারো ক্রেডিবল ভাষ্য। এই অডিও/ভিডিও এডিশন হলে হতে হবে কেন্দ্রিয়ভাবে সমন্বিত, জড়িত থাকতে হবে দেশে বিদেশের বহু লোককে। এরা কেউই মুখ খুলছেন না হতে পারে না।
বংগবন্ধু/মুক্তিযুদ্ধের বহু কিছু বিকৃত করা হয়েছে ৭৫ এর পরের ধারায় বিনা বাধায়, সেখানে জিয়ে পাকিস্তান বানিয়ে দেওয়া কোন ব্যাপারই ছিল না। নাজমুল হুদা ‘৯১ সালের টার্মে কম চেষ্টা করেনি। এডিশনের কাজে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ ভাবে অনেকেরই জড়িত থাকার কথা। এদের কাউকে সে আজ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি এটা হতে পারে না।
তবে কালযাত্রীর দেওয়া রেফারেন্সে চিন্তা করার মত ব্যাপার আছে। বিশেষ করে নির্মল সেনের ভাষ্য খুবই ভাবার মত। প্রথমত উনি বংগবন্ধুর খুবই আপন লোক ছিলেন, বংগবন্ধুর আপন বহু লোকই ছিলেন, তবে এমন সত নির্লোভ চরিত্র কয়জন ছিলেন জানি না। উনি জেনে শুনে মিথ্যা বলবেন এ আমি বিশ্বাস করি না। এই ভার্ষন আরেকটি কারনে অতি গুরুত্বপূর্ন এ কারনে যে নির্মল সেন এ ব্যাপারে বংগবন্ধুকে পরে জিজ্ঞাসা করে ব্যাখ্যা নিয়েছিলেন বলে দাবী করেছেন, অর্থাৎ এটা নেহায়েত ভুল শোনার মত ঘটনা নয় যা আমার ধারনা অন্যদের বক্তব্যের ব্যাপারে প্রথমেই ধারনা করা যায় (বেশীরভাগই আসলে শোনা কথা রীলে করেছেন)। বাস্তবতার বিচারে সম্ভাবনা আছে জয় পাকিস্তান বলার, তবে সেটা হয়ত জয় বাংলা বলার পর উল্লেখযোগ্য বিরতীর পর নিয়ম রক্ষার্থে একেবারে নীচু স্বরে বলা যা রেকর্ডিং এ আসেনি, এমনও হতে পারে সেটা কেবল পেছনে তাকিয়েই বংগবন্ধু বলেছিলেন যে কারনে কেবল সামনের সারিতে বসে থাকা অল্প সংখ্যক কয়েক জনই এটা হয়ত শুনতে পান, আম জন্তা এমনকি সংবাদ মাধ্যমেরও কেউ শুনেননি। এমন সম্ভাবনার সূত্র নির্মল সেনের কথাতেই আছেঃ
একমাত্র এভাবেই হয়ত সম্ভব একই জনসভায় উপস্থিত আম জনতার জিয়ে/জয় পাকিস্তান জাতীয় কিছু না শুনতে পাবার এবং সামনের সারির কারো কারো শুনতে পাওয়া দাবী করার যাদের ভাষ্য উড়িয়ে দেবার মতন নয়। এটা নিশ্চিত যে মূল ভাষনে জয়/জিয়ে পাকিস্তানের রেকর্ড/দলিল কোথাও নেই, এডিশনও করা হয়নি।
@আদিল মাহমুদ, ভাষণটা শুনলে কি মনে হয় ওইখানে থামাথামি আছে? আপনে কি ফুটেজ দেখেন নাই? সেখানে কি মুজিব পিছনে ফিরা কিছু বলতেছে মনে হয়?
httpv://www.youtube.com/watch?v=MgBVALiuLqM
বদরুদ্দিন উমররা বহুদিন আগে এই লাইন ধরছে। এইটা দিয়া আসলে কি প্রমাণিত হয় আমি আসলেই বুঝি না। মুজিব পাকিস্তান জিন্দাবাদ বললে সেইটা অশুদ্ধ হয় না। কিন্তু ব্যাপারটা দিয়া আসলে আরোপ করার চেষ্টা আছে যে মুজিব স্বাধীনতা চান নাই। তাইলে ছয় দফা দিয়া কি বুঝায়। পাকিস্তানীরা কেনো রিজেক্ট করতেছে একটা প্রদেশের স্বায়ত্ব শাসন। কারণ ওইটা একরকমের স্বাধীনতাই তো!
পুরা মহাভারতের ‘অশ্বথামা হত, ইতি গজঃ’ হইয়া গেছে বস 😀
ভাষণের সময় এই লোকগুলার অবস্থান আসলে কই ছিলো? আপনার কি ধারণা স্টেজের উপর। নট আ সিঙ্গল ওয়ান ওয়াজ দেয়ার। আই ডাউট ইট ভেরি মাচ। মুজিবের প্রতি লাইনে ক্রাউডের যে রেসপন্স, যে চিৎকার, এবং আমি আগেই বলছি বক্তৃতার ফ্লো যেখানে পাকিস্তান জিন্দাবাদ আসে না।
ওহ আরেকটা কথা, হুমায়ুনের জোছনা জননীর গল্প বইটা বেশ দামী বই। তাই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই হু হু কইরা বিক্রি হয় নাই। এবং এর ৭ মার্চের ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়টা নিয়া তারপরপরই বেশ জোরালো বিতর্ক ওঠে। হুমায়ুনের সংশোধনী আসে এরপর। আপনি বলতেছেন প্রথম সংস্করণেরই পরবর্তী কোনো প্রকাশে। কিন্তু আমার স্পষ্ট খেয়াল আছে, কারণ বইটা আমি কিনছিলাম।
তবে বটমলাইন হইলো যারা পাকিস্তান জিন্দাবাদ শোনার জন্য মানসিকভাবে তৈরি ছিলো তারা হয়তো শুনছে এমন কিছু। এবং সেটা যারা বিশ্বাস করে তাদের আপনে টাইম মেশিনে চড়াইয়া রেসকোর্স ঘুরায়া আনলেও লাভ নাই। তারাও শুনবে মুজিব পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতেছেন। এরা ভাষণটা শোনার মতো কমনসেন্সটা কখনও প্রয়োগ করে নাই। জাস্ট বদরুদ্দিন উমর কইছে, ওইটাই সহী
আরেকটা ব্যাপার এই দাবি সিরাজুল আলম খান থেকে শুরু করে খলিফাদের যারাই জাসদে গেছে তাদের কেউ করছে বলে শুনি নাই। তারা নিজেদের অনেক কিছুর দাবিদার বানাইছে। মুজিবরে গালিগালাজ কম করে নাই। কিন্তু তিনি পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলছেন এই অপবাদ দেয় নাই। দাবিটা এমন সব লোকজনের যাদের প্রত্যেকের ব্ল্যাক স্পট আছে। খারাপ লোকজনের সঙ্গে আতাত আছে
@অমি রহমান পিয়াল,
পিয়াল ভাই, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি হাতের কাছে আসলে একটু খোঁজ খবর দিবেন প্লিজ।
@অমি রহমান পিয়াল,
ভিডিও/অডিওতে এইটা নিশ্চিত যে জয় বাংলা বলার আগে পেছনে তাকিয়ে সিরাজুল আলম বা অন্য কারো পরামর্শ নেবার মত ন্যূনতম অবকাশ সেখানে নাই। এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। পেছনে তাকিয়ে অন্য কারো পরামর্শ নিতে অন্তত ১০ সেকেন্ডের অবকাশ নিতে হবে। তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মতে এইসব অডিও/ভিডিও যা পাওয়া যায় সেইগুলা সবই এডিটেড ভার্ষন, যেটা বাস্তবতার বিচারে খুবই অসম্ভব, যে কারনে আজ পর্যন্ত একজন লোকেও এই এডিশনের প্রত্যক্ষ এমনকি পরোক্ষ স্বাক্ষ্যও দিতে আসে নাই। বটম লাইন হল, এডিশন হাইপোথিসিস পুরাই বাতিল। তবে ভিডিওতে জয় বাংলা বলার সময় থেকে মঞ্চ থেকে বংবন্ধুর নেমে যাওয়া পর্যন্ত মঞ্চে কি হচ্ছিল সেই অংশ নেই, সেটা থাকলে আমার দ্বিতীয় ক্ষীন সম্ভাবনা চিন্তাই করতাম না, এমনকি নির্মল সেনের স্বাক্ষ্য থাকলেও। ভিডিওতে জয় বাংলা বলার আগ থেকেই উজ্জীবিত জনতার সিন, মঞ্চের সিন নাই। ৭১ সালে ছাত্রলীগের নেতারা রমনা রেসকোর্স মাঠে অডিও ভিডিও সব এডিট করে এশ বিদেশের সব সাংবাদিকদের সাপ্লাই করল এমন তত্ত্ব খুবই উন্মাদীয় শোনায়। ছাত্রলীগের নেতারা হাইটেকে সেই আমলে খুব মেধাবী ছিল এটা প্রথমেই মানতে হবে।
দ্বিতীয় খুব ক্ষীণ সম্ভাবনা রেকর্ডিং শেষ হবার পর ইনফর্মাল মুডে বলে থাকলেও থাকতে পারেন যেটা রেকর্ডিং এ আসে নাই। আমার এই সম্ভাবনা বিচারে আনার মূল কারন নির্মল সেনের ভাষ্য। বদ ওমর, আতাউস সামাদ কি বলে আমি তেমন কেয়ার করি না। বদ ওমরের কথা না বলাই ভাল। নুরুজ্জামান সাহেবের ভাষ্য হিসেবে যা কালযাত্রী দিয়েছেন সেটা আসলে নুরুজ্জামান সাহেবের নিজ কানে শোনা না, অন্য লোকের বরাতে শোনা। কার্যত সম্ভব হলেও এই হাইপোথিসিস এরও তত্ত্বীয়ভাবে বড় ফাঁক আছে। নির্মল সেনের ভাষ্য সরাসরি তাকে আবার জিজ্ঞাসা করা গেলে ভাল হয়। সেই আমলের বদ উমর টাইপ বামপন্থীরা অনেকে বংগবন্ধুর আন্দোলন পদ্ধুতির কড়া সমালোচক হলেও নির্মল সেন এই দলের কোনদিন মনে হয় নাই।
কারন ইতিহাস বলে যে সেদিন ৭ই মার্চ ছাত্রলীগ নেতারা, বিশেষ করে ৪ খলিফার কড়া চাপ ছিল সেদিনই বংগবন্ধু যেন সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। বংগবন্ধুই বরং তখনো সরাসরি তেমন চুড়ান্ত পদক্ষেপ না নিয়ে কৌশলে সাপও মরে লাঠিও না ভাংগে এই নীতি নেন। সিরাজুল আলম ছিলেন সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষনা করার কড়া পক্ষপাতি। শুনছিলাম যে তারা এমনকি বক্তৃতার মাঝে বংগবন্ধুর পাঞ্জাবী ধরেও টানাটানি করছিলেন রিমাইন্ডার দিয়ে। সেই সিরাজুল আলম বংগবন্ধুকে পরামর্শ দিবেন জয়/জিয়ে পাকিস্তান শ্লোগান দিতে এটা তত্ত্বীয়ভাবে খুবই অসম্ভব। কালযাত্রীর মতে ছাত্রলীগের নেতারা এডিশন করল কিন্তু ৭২ এর পর তারা মুজিব বিদ্বেষী হবার পরও এই নিয়ে কোন কথা বললনা কেন সেই প্রশ্নও খুবই যুক্তিসংগত।
হুমায়ুনের বই এই ভার্ষন পরিবর্তনের যে কথা বলছেন সেইটা বই এর সেই বিতর্কিত প্রথম ভার্ষন দেখা গেলে ক্লীয়ার হত। একই বইমেলায় এক ভার্ষন বের হল, এরপর বিতর্ক হল, হুমায়ুন আবার দ্রুত এডিটেড ভার্ষন একই বইমেলায় বার করে ফেলল এটা আপনি ছাড়া অন্য কেউ বললে প্রথমেই সংশয় প্রকাশ করতাম। পুরা প্রসেসটায় একটু সময় লাগবে না? বিতর্ক জমে হুমায়ুন মিয়ার কানে যেতেও তো সময় লাগবে। সেটা হলেও বলতে হয় যে উনি ভুল করে থাকলেও নিজেই তা সংশোধন করে গেছেন।
@আদিল মাহমুদ,
রোজা শুধু আমি রাখিনা আরো মানুষে রাখেন দেখা যায়। অজয় রায়ের লেখাটা পড়েছেন? একটা কথা আমার মন্তব্যে লিখতে ভুলে গেছি, বদরুদ্দীন উমর বলেছেন- আব্দুল গাফফার চৌধুরী তখন তার পাশেই বসা ছিলেন এবং তিনিও শুনেছেন। গাফফার ভাই সেটা স্বীকার করেন না। তাচ্ছিল্যের সুরে ৭ই মার্চের ভাষণকে কী সুন্দর লিখিত ভাষণ বলে লেখা উল্লেখ করে উমর বুঝাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু তার চোখের সামনে রাখা, অন্য কারো লেখা ভাষন শুধু পড়ে শুনায়েছেন। শুনা কথা থেকে বলছি- এই বদরুদ্দিন উমর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালের নয়টি মাস মোল্লাদের বেশ ধরে পাকিস্তানি সেনাদের কৃপানজরে থাকতে চেয়েছেন। স্বাধীনতার পর ছাত্র লীগের কিছু তরুণ তাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিল, বঙ্গবন্ধুই উমরকে তখন বাঁচিয়েছিলেন। এই বদরুদ্দিন উমরেরা বিগত চল্লিশটি বছর বাংলাদেশে ছাগু চাষাবাদ ব্যতিত অন্য কিছু এ দেশকে দিতে পারেন নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করতে গিয়ে তারা বলেন- জনগনই মুক্তিযুদ্ধের নায়ক ছিলেন তারা যুদ্ধের জন্যে কারো আদেশ নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন না। বাহ! এবার বুঝুন ছাগু কতো প্রকার ও কী কী?
স্যরি আদিল ভাই, কান টানলে মাথা চলে আসে’র মতোই আপনার মূল বিষয় থেকে দূরে কিছু বিষয়ের অবতারণা করতে হলো।
@আকাশ মালিক,
রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে আমার রোজা রাখলে পরিসংখ্যান বলে যে ওজন আরো বাড়ে।
বদ ওমরের কথা আমি ২ পয়সার বেশী পাত্তা দেই না, একই ভাবে গাফফার চৌ। এর কথাও বেশী আমলে নেই না। বদ ওমরের ভূমিকা ‘৭১ সালে কি ছিল তা আমারো জানার কৌতূহল আছে, উনি নিজে আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলেননি বা আমি হয়ত বা শুনিনি।
বদ ওমর বাদ দেন। নির্মল সেনের কথা কিছু বলেন শুনি। ভাল কথা, নির্মল সেনকে যে আপনি যেই লেখা দেখাচ্ছেন সেই লেখার লেখক অজয় রায় নিজেই অসীম শ্রদ্ধা করেন সেটা কি জানেন কিংবা মনে আছে? নির্মল সেন অজয় বাবুর শুধু শ্রদ্ধার পাত্রই নন, বন্ধুও। সেই শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্বের টানে অজয় রায় বছর দুয়েক আগে নির্মল বাবুর চিকিতসার জন্য কিছু ফান্ড সংগ্রহ করেছিলেন এই মুক্তমনাতেই, আমিও পরে সেটা আমুতে প্রচার করি। বিরল মানের সত, নির্লোভ, অকুতোভয় সাংবাদিক/রাজনীতিক বলেই নির্মল সেন আমারো অসীম শ্রদ্ধা পান। অজয় স্যারের কথাতে দেখুনঃ
http://blog.mukto-mona.com/?p=6435
এখন বলেন, এই নির্মল বাবুকে আমি বদ ওমরের পাল্লায় কিভাবে মাপি?
আমি নিরপেক্ষভাবে দুই জন শ্রদ্ধেয় লোকের মতদ্বৈততা কিভাবে হতে পারে তার একটি সম্ভাবনা দেখার চেষ্টা করেছি মাত্র (মূল কারন প্রাথমিকভাবে ধরে নিয়েছি উভয়েই সঠিক বলছেন), এমন অবশ্যই হয়েছে বলে দাবী করিনি। সেই সম্ভাবনার মাঝে হাসি ঠাট্টার উপকরন পাওয়া গেলে সেটাকে আমারই সৌভাগ্য মনে করব, অন্তত আপনাদের মজা তো দিতে পারছি।
গবেষনা করতে গেলে সম্ভাব্য সব কিছুই আমলে আনতে হয়, এরপর হতে পারে যাচাই বাছাই করে গ্রহন বর্জনের পালা। নির্মল বাবুর যেই ভার্ষন প্রথম আলো ব্লগে ছাপা হয়েছে সেটাও সম্ভাবনার বিচারে জেনুইন নয় তাও হতে পারে, তা এই মুহুর্তে আমার পক্ষে সরাসরি যাচাই সম্ভব নয়। অন্তত এটা বলে দিন যে নির্মল বাবু ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন, বংগবন্ধুর সাথে এ নিয়ে পরবর্তিকালে তার কথাবার্তা সবই বানিয়ে বলেছেন, তাহলে আমিও রোজা রাখি।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি প্রথম আলোর লেখাটা পড়েছেন? আজব ঢাকা নামের এক ব্লগার তার নিজস্ব ব্লগে সেই লেখা নির্মল সেন নামে দিয়েছেন। তার মন্তব্যগুলো প্রমাণ করে তিনি কী উদ্দ্যেশ্যে তা ব্লগে দিয়েছেন। আর নির্মল সেন নামের ঐ লেখায় জিয়ে পাকিস্তান নাই, আছে জয় পাকিস্তান। প্রমাণ প্রমাণ বলে দাবী করা হচ্ছে, এবার শেষ কথা বলি- যারা দাবী করছেন বঙ্গবন্ধু জিয়ে পাকিস্তান বলেছিলেন, তারাই তাদের বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণ হাজির করুন। যতদিন তা করতে পারছেন না ততোদিন বঙ্গবন্ধু জিয়ে পাকিস্তান বলেন নি এটাই সত্য।
@আকাশ মালিক,
সেই প্রশ্ন করতে পারেন, সেটা লজিক্যাল। আমিও বলেছি যে এটা আসলেই নির্মল সেনের ভাষ্য কিনা সেটাও অবশ্যই বিবেচ্য। মূল বই এর কপি পাওয়া খুব কঠিন হবার কথা নয়। তবে মূল কপিতে একই জিনিস পাওয়া গেলে? নিজের ফাঁদে শেষে নিজেই ফেঁসে যাবেন
মোদ্দা কথা, বদ ওমরের পাল্লায় নির্মল সেনকে মাপা ঠিক নয়, নির্মল সেনের বক্তব্য বাতিল করতে নির্মল সেন কেন্দ্রিক আলোচনা করেন, বদ ওমর ধরে টানাটানি বা রোজা রাখার সহি পদ্ধুতি শিক্ষা বিষয়ক নয়। অভিজিতের কথা পড়ুন, সেটা অনেক বেশী লজিক্যাল। এভাবে চিন্তা করলে ফেঁসে যাবার সম্ভাবনা নেই।
আগেই বলেছি যে বার্ডেন অফ প্রুফের কারনেই ভিডিও এডিশন তত্ত্বের গ্রহনযোগ্যতা এখনো শূন্যর কোঠায়, নির্মল সেনের স্বাক্ষ্যও সে পয়েন্টে ফেল মেরে যায়।
@আদিল মাহমুদ,
আসলে আদিল ভাই, খুবই পরিতাপের সাথে জানাচ্ছি যে, এই কথাটা কেন যে বেশিরভাগ মুসলিম বলে থাকেন আমার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার না। রোজা একটা ধর্মের ধর্মীয় অঙ্গ, আর এটা মানুষ মান্তেও পারে, নাও মানতে পারে, তবে এইসববে কেন যে বিজ্ঞানময় করে প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে, এবং তার দরকার কি সেটাও মাথায় আসে না।
রাতের বেলা বেশি আহার করলে নাকি রক্তে এল ডি এল কোলস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় বেশি। সেখানে রোজার দিনে আমরা রাতেই খেয়ে থাকি বেশি। ইফতার, রাতের মুল খাবার, তারপর সেহরি। মানে রাতে মোট চারবার খাওয়া হচ্ছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাজাপোড়া জাতীয় জিনিস। তাই আপনার নিচের
এই কথার সাথে আমিও একমত যে ওজন বাড়ারই কথা। আমি গরমের দিনে রোজা থাকি না। শিতের দিন থাকতাম তবে সারা মাসে ৩/৪ টা করে; যতদুর মনে পরে, প্রথমটা আর শেষটা শীতকালে বাদ যায়নি ।
তবে একবার পরীক্ষা করার জন্য ২৬ টা রোজা ছিলাম। ওজন বেরেছিল কিনা মাপি নাই, তবে কমে নাই এটা ভালই বুঝেছি। কারন কমলে তো প্যান্ট ঢিলা হয়ে যেত, সেটা হয়নি।
তাছাড়াও সারাদিন খাদ্য পানীয় গ্রহন না করার কারনে রাতের বেলা ক্ষুধাও বেশি লাগে। আর তাই খেতেও হয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমানে। কাজেই শরীরের জন্য রোজা খুব ভাল জিনিস, এটা আমার কোনদিনই মনে হয়নি, যদিও গত রোজাতেও আমাকে একই বানী শুনতে হয়েছে প্রত্যেকবারের মতই। :-s
@অমি রহমান পিয়াল,
🙂
আমার নিজস্ব একটা হাইপোথিসিস আছে এ নিয়া। নির্মল সেন মিথ্যা কথা বলতেসে বইলা আমার মনে হয় নাই। তবে স্মৃতিবিভ্রম ঘটতেই পারে। পাকিস্তান পিরিয়ড একটা লম্বা পিরিয়ড। এই পিরিয়ডে মুজিব কোন না কোন ভাষণে পাকিস্তান জিন্দাবাদ কইয়া বক্তৃতা শেষ করতেই পারে। সেইটার সাথে কারো কারো ৭ই মার্চের ভাষণ প্যাচায় যাইতে পারে। অসম্ভব কিছু না। আর নির্মল সেনের স্মৃতিবিভ্রমের আলামত তো তো উপরেই পাওয়া গেছে। শেখ রাসেল নাকি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিল -‘সেদিন তুমি আজকের জনসভায় জয় পাকিস্তান বলতে গেলে কেন?’। শেখ রাসেলের বয়স ছিল ৬ কি ৭। একটা শিশুর পক্ষে রাজনীতির জটিলতা অনুধাবন করে পিতাকে প্রশ্ন করা অসম্ভবই বটে। এমনকি কালযাত্রীও ইঙ্গিত করেছেন – এ ব্যাপারে নির্মল সেনের স্মৃতিবিভ্রম ঘটে থাকতে পারে। এই ক্ষেত্রে বিভ্রম ঘটলে পাকিস্তান জিন্দাবাদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। এক ভাষণের সাথে অন্য ভাষন হয়ত মিলিয়ে ফেলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চের ভাষণে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেছিলেন – এর স্বপক্ষে কোন বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ নাই। একেকজন একেক কথা কয়। যাই হোক, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলুক আর ‘চিচিং ফাক’ বলুক – দাবী করলে তার স্বপক্ষে অডিও বা ভিডিওর প্রমাণ দিতে হবে। বার্ডেন অব প্রুফ বলে কথা। সব অডিও ভিডিও তো এক সাথে গায়েব হয়ে যেতে পারে না।
@অভিজিৎ,
সে সম্ভাবনা আছে, যতদুর জানি যে নির্মল সেনের বর্তমানে আসলেই স্মৃতিবিভ্রম গোছের কিছু হয়েছে, উনি অনেক সময় চেনা লোকজনও চিনতে পারেন না। এই লেখা ঠিক কবে উনি লিখেছেন তা জানা গেলে ভাল হত। ওনার ভাষ্য শোনা গেলে আরো ভাল হত যা হয়ত অজয় রায় পারেন। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনকে অন্য কোন ভাষনের সাথে মেলাচ্ছেন কিনা তা হয়ত বের হত। রাসেলের বরাতে গুরুতর রাজনৈতিক প্রশ্ন আমার কাছেও অস্বাভাবিক লেগেছে। বংগবন্ধু আন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে আর দশটা বাংগালী পরিবারের মত নিয়ম মাফিক পূর্ন পারিবারিক পরিবেশে ডাল ভাত খাচ্ছেন এটাও কেমন কেমন ঠেকে। যতদুর জানি যে সে সময় তার নাওয়া খাওয়ার কোন ঠিক স্বাভাবিক কারনেই ছিল না। অধিকাংশ সময়ে তাকে খেতে হত একাধিক দর্শনার্থী সহযোগে।
আদিল ভাই, আপনাকে অনেক মিস করি। মিছরির ছুঁড়ির জুড়ি মেলা ভার।
এবার পোস্টের কথায় আসি!
হুমায়ূনের এই ব্যাপারটা জানি, এটা উনি ‘জোসনা ও জননীর গল্প’ এর দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকাতে পড়েছি। সবই ঠিক ছিল কিন্তু একটা সমস্যা রয়েই গেছে আর তা হলঃ
বোল্ড করা অংশটুকুর কোন দরকার ছিল না। এটাই হুমায়ূন সাহেবের বুদ্ধিদীপ্ত মিক্সিং। উনি যখন পত্রিকা বা অন্য কোথাও ‘জিয়ে পাকিস্তান’ এর অস্তিত্ব খুঁজে পেলেনই না, তখন যদির কথায় কেন গেলেন?? উনি দারুন শিল্পময় আঁচড়ে মানুষের মাথায় সন্দেহের পোঁকা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আর কোন প্রমাণিত সত্য নিয়ে যদি-কিন্তু এর সাধারণ ভ্যাজাল করতে পারে সাধারণ বোকারা। কিন্তু হুমায়ূন তা না, তিনি এটা করেছেন একটা উদ্দেশ্য থেকেই।
@#দেবা ভাই#,
বোল্ড করা অংশটকুই আমার মতে সবচেয়ে মূল্যবান অংশ, যেটা সূস্থ বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন যে কোন লোকেরই স্বীকার করার কথা। এ কথার সাথে আমিও ১০০ ভাগ একমত। বিভিন্ন লোকের স্বাক্ষ্য, এমনকি নানান যায়গায় রক্ষিত ভাষনের কপি বার করলেও এ বিতর্ক ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে কাটানো সম্ভব নয়, কোন না কোন ভাবে তর্ক করাই যাবে। ওপরে কালযাত্রীর কথা দেখেন, সংশয় জাগানোর মত কিছু ব্যাক্তিত্বের সূত্র দিয়েছেন যেগুলি জামাতি বা স্বাধীনতা বিরোধী অপ্রচার বলে এক কথায় ওঁড়ানো যায় না, কেবল সংশয়ই প্রকাশ করা যায় মাত্র। এভাবে ফল হবে কেউ গোঁ ধরে থাকবে যে আসলে জিয়ে পাকিস্তান জাতের কিছু বলা হয়নি, আবার কেউ পালটা গোঁ ধরবে যে বলা হয়েছিল, দুই পক্ষেরই গন্যমান্য লোকজন স্বাক্ষী রেডি আছেন যাদের ওড়ানো যায় না। বড় জোর বলা যায় যে যারা জিয়ে পাকিস্তান আছে বলে মনে করেন তারা রেকর্ড শোনান, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধু বললেই হয় না, প্রমান দেখান, অন্তত কেউ সে এডিটিং এর সাথে জড়িত ছিলেন এমন কাউকে হাজির করেন।
কিন্তু বোল্ড করা অংশ মেনে নিলে এ বিতর্কেরই তেমন দরকার পড়ে না, কারন এটা নির্জলা সত্য কথা। বাস্তবতা বলে যে ৭ই মার্চের পরেও বংগবন্ধু এবং সাড়ে সাত কোটি বাংগালী পাকিস্তানী নাগরিকত্ব ত্যাগ করেনি, বংগবন্ধু নিজেও সেই পাকিস্তানী জান্তাদের সাথেই শান্তিপূর্ন আলোচনা চালিয়ে গেছেন, তাদের ওপর বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়েননি, যদিও মার্চ মাসের প্রথম দিকে সেটা তিনি পারতেন। আপোষ আলোচনায় যেমন দৃঢ়তা দেখাতে হয় তেমনি ন্যূনতম কিছুটা হলেও ছাড় দিতে হয়, কৌশলগত কারনে এক শ্লোগানে কিছু যায় আসে না। বংগবন্ধুকে তখন পাক জান্তা চিহ্নিতই করছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের নেতা হিসেবে, সেখানে এই শ্লোগান বক্তৃতার শেষে কৌশলগত কারনে দেওয়ার মাঝে অস্বাভাবিকতার কিছু থাকতে পারে না। হুমাইয়ুন এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, এর মাঝে তেমন কোন গুরুতর ষড়যন্ত্রের কিছু নেই।
এটা বলা হয়েছে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই, যেখানে সত্যের খাতিরে বলতেই হয় যে নিরপেক্ষভাবে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিহাস বিচার করার মত মানসিকতা খুব বেশী লোকের নেই সেসব লোকের উদ্দেশ্যেই। যে দেশে লোকে বিতর্ক তোলে যে বংগবন্ধু ৯ মাস দেশেই ছিলেন না কাজেই মুক্তিযুদ্ধে তার তেমন অবদান নেই, কিংবা কেন তিনি ৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দিলেন না কাজেই তিনি আসলে স্বাধীনতা নয়, প্রধানমন্ত্রীত্ব চাচ্ছিলেন, কেন তিনি ২৫শে মার্চ রাতে পালিয়ে গেলেন না সে দেশে লোককে এভাবেই হাতে তুলে খাওয়ানো ছাড়া গতি নেই।
অনেক ধরেই আপনারে খুঁজছিলাম, ব্লগে অনুপস্থিত দেখে চিন্তিত হয়ে গিয়েছিলাম , অবশেষে এইখানে আপনার পোস্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে আপনি বেঁচে আছেন !
এইখানে আপনার কমেন্ট পড়ে মনে হল বাংলা ব্লগের উপরে আপনে কোন কারনে চরম হতাশ এবং ব্লগ হতে এক ধরনের গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন।
দয়া করে ওই হঠকারি কাজটা করবেন না আমার পরিচিত অনেকেই আপনার ধর্ম রাজণীতি নিয়ে পোস্ট নিয়মিত পড়ে থাকে তাদের অনেকের চিন্তাধারার পরিবর্তনে আপনার যুক্তিবাদি লেখা অনুঘটকের কাজ করেছে যদিও এদের অনেকেই বাংলায় টাইপ করতে পারে না বলে সেই কথা আপনাকে বলতে পারে নাই ।
আপনে ব্লগ ছাড়লে এই ধরনের নীরব পাঠকেরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
অনেক দিন পর আদিল ভাইয়ের একটা লেখা পড়লাম; খুব ভালো লাগলো।
হুমায়ুন আহমেদের ব্যাপারটা পরিস্কার হলো। দেয়াল হয়ত তার অনেস্ট মিসটেক ছিলো। আরও গবেষণা করে এবং সতর্ক হয়ে লেখা উচিত ছিলো এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। হয়ত ভেবেছিলেন ‘হাতে সময় বেশী নেই”, কে জানে?
শেখ মুজিব তাঁর ৭ই মার্চ ভাষণের শেষে জিয়ে/জয় পাকিস্তান বা পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেছিলেন কিনা সে বিতর্ক আর শেখ মুজিব তাঁর ৭ই মার্চ ভাষণের শেষে জিয়ে পাকিস্তান বলেছিলেন, এই দাবী হুমায়ুন আহমেদ নিজে করেছিলেন কিনা সেই বিতর্ক দুটো পৃথক বিতর্ক, এই দুটো বিতর্ককে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। হুমায়ুন আহমেদ যে নিজে সেই দাবী করেননি সেটা এই ব্লগ থেকেই পরিস্কার। এটা নিয়ে আর বিতর্ক হতে পারে না। তিনি হাবিবুর রহমান আর শামসুর রহমান যে এই দাবী করেছিলেন সেটাই উল্লেখ করেছিলেন। আসল বিতর্ক হল হাবিবুর রহমান বা শামসুর রহমান সত্য বলছেন কি না। অর্থাৎ শেখ মুজিব আসলেই তাঁর ৭ই মার্চ ভাষণের শেষে জিয়ে/জয় পাকিস্তান বা পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেছিলেন কিনা সেটা আমাদের পক্ষে কোনদিনই জানা হবে না খুব সম্ভবত। কারণ ঐ ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার করা হয় নি সেদিন। পরের দিন তার এডিটেড ভার্শন দেয়া হয়েছিল। আমরা এখন যে ভাষণ শুনি সেটাও এডিটেড। কাজেই নিজে উপস্থিত ছিলেন না এমন কেউ যদি জোর গলায় বলেন যে না মুজিব কখনই তা বলেননি বা অবশ্যই বলেছিলেন তারা উভয়ই তাদের পক্ষপাতমূলক ধারণার কারণেই তা বলছেন। কারণ কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই এখন। কেবল ঐ ভাষণে যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁরাই জানেন আসল সত্যটা। তাঁরা যেটাই বলুন না কেন সেটাও যাচাই করা আমাদের সম্ভব না। আর যদি মুজিব তা বলেই থাকেন তাহলে তা শুনেও ভয়ে অনেকে প্রকাশ্যে তা স্বীকার করতে অনিচ্ছুক হতে পারে, কারণ সরকারের ঘোষিত অবস্থান হচ্ছে যে মুজিব ৭ই মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যে অবস্থানকে আদালতের মাধ্যমে আইনী বৈধতা দেয়া হয়েছে। আর মুজিবই স্বাধীনতার ঘোষক বলে রায় ৭ই মার্চে মুজিবের জয় পাকিস্তান বলার সাথে সাংঘর্ষিক। তারপরও কেউ কেউ প্রকাশ্যে সেরকম দাবী করেছেন, আদালতের রায়ের আগে অবশ্য । হাবিবুর রহমানের বইয়ের প্রথম সংস্করণে দাবীটি ছিল, কিন্তু পরের সংস্করণ থেকে সেটা সরিয়ে ফেলা হয় সেই ভয়ের কারণেই হয়ত। বাকী সবাই আমরা শুধু সম্ভাব্যতার বিচার করতে পারি। মুজিবের পাকিস্তান জিন্দাবাদ বা জয় পাকিস্তান বলাটা অসম্ভব বা অসঙ্গত নয়। কারণ ৭ই মার্চের পরও মুজিব আপোষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন আর ক্ষমতা হস্তান্তরের শর্ত দিচ্ছিলেন। দেখা যাক কারা এই দাবী করছেন যে মুজিব তাঁর ভাষণ জয় পাকিস্তান বা পাকিস্তান জিন্দাবাদ দিয়ে শেষ করেছিলেন।
১। A sector commander remembers Bangladesh Liberation War 1971 বইতে কর্নেল নুরুজ্জামান লিখেছেন যে মুজিব তাঁর ভাষণ পাকিস্তান জিন্দাবাদ দিয়ে শেষ করে কয়েক মুহূর্ত বিরতি দিয়ে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে পর মুহূর্তে জয় বাংলা বলেন।
(দ্রঃ A freedom fighter’s testament, Shahid Alam’s review of A sector commander
remembers Bangladesh Liberation War 1971,,Daily Star 2010-11-27)
লিঙ্কঃ http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=163764
২। সাংবাদিক নির্মল সেন তাঁর “আমার জীবনে একাত্তর” বই, প্রকাশকঃ বর্তমান সময়, পৃ ১১ তে লিখেছেন যে মুজিব জয় পাকিস্তান দিয়ে ভাষণ শেষ করেছিলেন। তাঁর সেই লেখার সেই অংশটার উদ্ধৃতি পাওয়া যাবে এই লিঙ্কেঃ
http://oporajita-oporajita.blogspot.com/2010/03/blog-post_4361.html
অথবা
http://prothom-aloblog.com/users/base/ajobdhaka/210
৩। অলি আহাদ লিখিত জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫ বইএর পৃষ্ঠা- ৩৮৬, ৪র্থ সংস্করণ- ফেব্রুয়ারী ২০০৪ তেও লিখেছেন “বঙ্গবন্ধু শেষ করেছেন এভাবে, জয় বাংলা। জয় পাকিস্তান।”
(লিঙ্কঃ http://www.sonarbangladesh.com/blog/classicpost/53793
৪। বদরুদ্দীন উমর এক তাঁর “একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়কেরা” লেখায়
( http://www.droho.net/?p=1781 ) বলেছেন যে তিনি নিজে শুনেছিলেন শেখ মুজিব ভাষণ শেষ করেছিলেন জয় পাকিস্তান বলে।
৫। সাংবাদিক আতাউস সামাদ তাঁর ‘যেভাবে আমরা পেলাম দিনটি’ কলামে (সূত্রঃ যুগান্তর, ০৭/০৩/১১) লিখেছেনঃ “তিনি ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তোলার পর একটু থেমে শান্তভাবে বললেন, ‘জিয়ে পাকিস্তান’।”
(লিঙ্কঃ http://www.sonarbangladesh.com/article.php?ID=5024 )
কর্নেল নুরুজ্জামান আর নির্মল সেনের সাক্ষ্যকে উড়িয়ে দেয়া বেশী কঠিন আমার মতে। দুজনের বিশ্বাসযোগ্যতা অবিতর্কিত বলেই জানি।
@কালযাত্রী,
সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে আসল সত্যটা কি সেটা জানা প্রয়োজন, ইতিহাসের স্বার্থেই। কালযাত্রী খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনপুট দিয়েছেন, তারপরেও ব্যাপারটা আমার কাছে কনভিনসিং কিছু মনে হয়নি। যদি মুজিব সত্যই সেদিন, অর্থাৎ, উনিশ শো একাত্তর সনের সাতই মার্চ জয় বাংলা না বলে ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলে শেষ করেন, তাহলেও এমন কিছু সমস্যা নয়, বরং তৎকালীন প্রেক্ষাপটে সেটা একটা বাস্তবতাই ছিলো। মনে রাখতে হবে তখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় নাই, পচিশে মার্চের গনহত্যাও হয় নাই। আর তাছাড়া নির্বাচনে জয়লাভের পর ন্যায়সঙ্গত ভাবে তিনি তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দাবিদার। কিন্তু সেই দাবিটাই উনি প্রত্যাখ্যান করেছেন আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না বলে – ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই, আজ থেকে …।‘, অন্ততঃ ভাষণে তাই আছে।
মূল প্রসঙ্গে আসি। যারা ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলে বক্তৃতা শেষ করেছে দাবী করে তাদের একাউন্টও একজনের সাথে আরেকজনেরটা মেলে না, কেউ বলে মুজিব বলেছিলেন ‘জিয়ে পাকিস্তান’, কেউ বা দাবী করে উনি বলেছিলেন ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, কেউ বা বলে উনি ‘জয় পাকিস্তান’ বলে নাকি বক্তৃতা শেষ করেছিলেন। যদি উনি সত্যই ওটা বলে থাকতেন, তবে এতরকমের ভাষ্য থাকার কথা ছিলো না।
কর্নেল নুরুজ্জামান, নির্মল সেন কিংবা বদরুদ্দিন উমরের সাক্ষ্য যেমন আছে (অবশ্য সোনার বাংলা ব্লগে প্রকাশিত আর্টিকেলে তথ্য কতটা ফ্যাকচুয়াল তা প্রশ্নস্বাপেক্ষ, বইয়ের স্ক্যান কপি পাওয়া গেলে ভাল হত), তেমনি আছে আরো অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যই। এমনকি এই মুক্তমনার সাথে সম্পর্কিত সম্পৃক্ত অনেকেই সেদিন রেসকোর্সের ভাষণে উপস্থিত ছিলেন। যেমন অজয় রায়ের একটি ভাষ্য আছে এখানে –
৭ই মার্চের ভাষণের পরের দিন অর্থ্যাৎ ৮ই মার্চ দৈনিক পাকিস্তান, ইত্তেফাক, পাকিস্তান অবজারভার, দি পিপল পত্রিকাগুলোতে কোথাও জয় পাকিস্তান নিয়ে কোন ধরনের তথ্য ছাপা হয়নি। আর তাছাড়া কোন রেকর্ডেই তার জয় পাকিস্তান বলার উল্লেখ পাওয়া যায় না। আমি এ পর্যন্ত সাতই মার্চের উপর যত ভিডিও কিংবা অডিও শুনেছি কোথাওই জিয়ে পাকিস্তান কিংবা জয় পাকিস্তানএর ইঙ্গিত পাইনি। নট এ সিঙ্গেল ওয়ান। যারা ‘জিয়ে পাকিস্তান’ শুনেছেন, তারা এর স্বপক্ষে এখন পর্যন্ত একটি ভিডিও ফুটেজ কিংবা অডিও প্রমাণ হিসেবে আনতে পারলেন না, ব্যাপারটা বিস্ময়কর।
শুধু তাই নয়, আমি পকিস্তানী টিভিতে কিভাবে ব্যাপারটাকে তুলে ধরা হয়েছে কিংবা হয়েছিল তার একটা প্রমাণ হাজির করছি। পাকিস্তানীরা শেখমুজিব ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদের’ বদলে ‘জয় বাংলা’ বলে বক্তৃতা শেষ করায় ভীষণ রুষ্ট হয়েছিল, তারা এটাকে নিয়েছিল রাষ্ট্রদ্রোহীতা হিসেবে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=Pd8sJMy4_4I
কথা হচ্ছে পাকিস্তানের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে বক্তৃতা শেষ করলে পাকিস্তানীদের এত রুষ্ট হবার কথা ছিলো না। হিসেবটা মিলতে হবে তো!
@কালযাত্রী,
আমার কথা আসলে অনেকটা অভিজিতের মতই। সেদিন ৭ই মার্চের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন এমন অনেকের স্মৃতি চারনাতেই জিয়ে পাকিস্তান বা জয় পাকিস্তানের উল্লেখ নেই, তারা সকলে কট্টর আওয়ামী এমন মনে করার কোন কারন নেই। এরা সকলে ভুলে গেলেন এমন হওয়া খুব অস্বাভাবিক।
এডিটেড ভার্ষন বের হবার থিয়োরী যুক্তি সংগত, তবে সেটা তাতক্ষনিকভাবে চিন্তা করে কেন্দ্রিয়ভাবে সম্মিলিতভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং করে পরদিন প্রকাশিত সব খবরের কাগজ থেকে সফল ভাবে নেই করে দেওয়া হয়েছিল এমন হওয়া মনে হয় অতি কল্পনা। বংগবন্ধুর ভাষন সরাসরি রিলে করা না হলেও রেকর্ডকৃত ভাষন পরদিন বেতারে প্রচার করা হয়, ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়ে থাকলে বেতারের কেউ না কেউ এত বছর এ নিয়ে মুখ খুললেন না সেটাও খুব অস্বাভাবিক।
আমাদের বাসায় ৭২ সালে বের হওয়া পাখির ছাপ মারা ছোট রেকর্ডে সেই ভাষনের মূল কপি ছিল যা ছোটবেলায় শুনতাম, সেখানেও জয়/জিয়ে পাকিস্তানের কোন ব্যাপার ছিল না। সে রেকর্ড সেদিন সশরীরে উপস্থিত বহু জনেই শুনেছেন, কেউ কোন অসামঞ্জস্যতা আছে কোনদিন বলেননি। এই দলের একজন ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার মমতাজউদ্দিন।
পত্রিকায় পড়েছিলাম যে ‘৯১ সালের বিএনপি সরকারের তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা প্রায়ই সশরীরে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজে বার বার ৭ই মার্চের মূল ভাষন শুনতেন কোনভাবে যদি জিয়ে পাকিস্তান আবিষ্কার করা যায়, পারেননি বলাই বাহুল্য।
নির্মল সেনের কথা আমিও বিশ্বাস করি, তার সততায় আমার সংশয় নেই। প্রথম আলো ব্লগে আপনার দেওয়া লিঙ্ক পড়লাম। একটু খটকা লাগল। ৭১ সালে রাসেলের বয়স ছিল ৬ কি ৭। কামাল জামাল বা হাসিনা রেহানা না হয়ে সেই ৬/৭ বছরের শিশু রাসেল বংগবন্ধুকে জয় পাকিস্তান বলার গুরুগম্ভীর ব্যাখ্যা দাবী করল?
যারা জয় পাকিস্তান/জিয়ে পাকিস্তান শুনেছেন বলে দাবী করছেন তারা সকলে জেনে শুনে মিথ্যা বলছেন আমি অবশ্যই মনে করি না, তবে আমার মনে হয় ব্যাপারটা অনেকটা শোনা কথা রীলে করার মত। আগেই বলেছি যে জয় পাকিস্তান/জিয়ে পাকিস্তান নিয়ে আমার কোন কমপ্লেক্স নেই, যা সত্য তাই প্রকাশ করা উচিত, তবে সেটা হতে হবে আরো জোরালো কোন সূত্রে।
@আদিল মাহমুদ,
বটমলাইন হল যে আমরা কখনই জানব না কোনটা সত্য। কারণ প্রমাণ ছাড়া শুধু সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কোন সত্য সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সাক্ষ্য তো দুই দিকেই আছে। তাতে তো বিতর্কের নিষ্পত্তি হতে পারে না। কারণ কোন প্রমাণ নেই। প্রমাণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকত যদি যদি ভাষণ লাইভ ব্রডকাস্ট হত, তাহলে কিছু রেকর্ড পাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। যদিও সেটাও দুর্লভ হত, কারণ তখন ক্যাসেট রেকর্ডার ছিল , । টেপ রেকর্ডার ঘরে ঘরে ছিল না, আর পোর্টেব্ল ও ছিল না। এগুলো বড়,ভারী আর বৈদ্যুতিক লাইনে চালিত ছিল। আর পাওয়াও যেত না সহজে। ভাষণের সব ভার্শনের সুত্রই একটা, পরের দিন রেডিওতে যেটা প্রচারিত হয়েছিল, সেটা। আপনার পাখির ছাপ মারা ছোট রেকর্ডে ওই রেডিও সম্প্রচার থেকেই প্রাপ্ত। ইউটিউবের ভিডিওর সূত্রই সেটাই, সেটা পাকিস্তানী হোক বা যে দেশেরই হোক। রেস কোর্সের ভাষণ রেকর্ড করা পাকিস্তানী মিলিটারীর নিয়ন্ত্রণে ছিল না। পরের দিনের সেই রেডিওতে প্রচারিত ভাষণই এডিটেড হয়েছিল বলে দাবী করছেন, যারা জয় পাকিস্তান শোনার পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। কাগজেও এই এডিটেড ভার্শনটাই ছাপা হয়েছিল, বলাই বাহুল্য। সাংবাদিকেরা তো নিজের শোনা কথা লিখবেন না খবরে, যেটা সরকারী ভার্শন সেটাই। তখন গনমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতার পক্ষেই চলে গিয়েছিল আর তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত ছিল। ছাত্ররা মুজিবের উপর প্রচন্ড চাপ দিচ্ছিল স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার জন্য। মুজিবই বরং বলা যায় “Behind the curve” ছিলেন এ ব্যাপারে। সবাই আশা করছিল স্বাধীনতার সুস্পষ্ট ঘোষণা আসবে সেই ভাষণে। জয় পাকিস্তান শোনাটা (যদি মুজিব বলে থাকেন) একটা প্রচন্ড ধাক্কাই হত সবার জন্য। কাজেই এটা এডিটিং করাটা (যদি মুজিব বলে থাকেন) সময়োপযুগী ছিল । এডিটিং করাটা তাই অসম্ভব নয়। কাজেই কাগজে ছিল না বলে প্রমাণ হচ্ছে না যে আসলেই জয় পাকিস্তান ছিল না ভাষণে। হলে তো এই বিতর্ক হত না। বিতর্কের মূলেই আছে এই এডিটিং করার দাবী নিয়ে বিতর্ক।
এটাও জয় পাকিস্তান না থাকাটা প্রমাণ করে না। কারণ দুটো। (১) যে টেপ বেতারের আর্কাইভে রয়ে যায় ৮ই মার্চে সেটাই এডিটেড হতে পারে (সম্ভাবনা খুবই বেশী)। আর সেটা এডিটেড না হলেও ১৯৭১-৭৫ সময়টা ঢাকা বেতার আওয়ামী সরকারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। সেই ন্সময়ের মধ্যে ‘জয় পাকিস্তান’ থাকলে তাদের সেটা মুছে দেয়ার সম্ভাবনা নিশ্চয় শূন্য নয়।
দুটো সম্ভাবনার কথা বলা যায়। (১) নির্মল সেন ভুল করে শেখ কামাল বা শেখ জামাল কে শেখ রাসেল এর সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন স্মৃতিভ্রমের জন্য অথবা (২) শেখ রাসেল সাত বছরের বালক হয়েও এই প্রশ্ন করেছিল। ৭ বছরের অনেক পাকা ছেলে আছে যারা ভাল প্রশ্ন করে। এটাও অসম্ভব না।
এডিটিংটা যদি রেস কোর্সেই হয়ে থাকে, তাহলে বেতারের কর্মীরা মূলটা পাবেন না । আর যদি ঢাকা বেতারেই এডিটিং করা হয় হয় (৭ই মার্চ সন্ধ্যায়/রাত্রে বা ৮ই মার্চ সকালে) তাহলে কেউ না কেউ জানবেন খুব সম্ভবত। কিন্তু সেটা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি কারণ কোন বিতর্ক কেই তোলেননি এটা নিয়ে । এই বিতর্ক কয়েকজনের স্মৃতিচারণের কারণেই সৃষ্ট অনেক দিন পরে। অকারণে কেউ নৌকা দোলায় না। আর ১৯৭১-৭৫ এর মধ্যে সেটা মোছা হয়ে গেলে সেটা বলেও কোন লাভ নেই কারণ তারা আর প্রমাণ করতে পারবেন না। তাছাড়া এরকম রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর কথা বলা ঝুকিপূর্ণ। আগ বাড়িয়ে এই ঝুকি না নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে কার সাক্ষ্য সত্য হবার সম্ভাবনা বেশী সাক্ষ্যদানকারী আর সাক্ষ্যের বিবরণের ভিত্তিতে। এর জন্য দুই পক্ষের সব গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকা ও সাক্ষ্যের বিবরণ জানা দরকার। উপরে আপনার উল্লেখিত “অনেকের” একটা তালিকা না দিলে কারা জয় পাকিস্তানের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছেন জানা গেল না। কট্টর আওয়ামী হতে হবে না, সামান্যতম আওয়ামী সমর্থন করেন এরকম যে কেউই বলবেন যে জিয়ে পাকিস্তান বা জয় পাকিস্তানের উল্লেখ নেই । কারণ সেটাই আওয়ামী অবস্থান। অন্যদিকে আওয়ামী ভাবধারারও অনেকে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে জয় পাকিস্তান শুনেছিলেন, যে কথা হুমায়ুন আহমেদ লিখেছেন। কাজেই জয় পাকিস্তান বলার বিপক্ষে সাক্ষ্যদানকারীর কট্টর আওয়ামী না হয়াটা বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তাৎপর্য্যপূর্ণ নয়।
সম্ভাব্যতা বিচারে কয়েকটি পয়েন্ট বিবেচনায় আনা যায়। (১) কানে শোনা বা চোখে দেখা ঘটনার পুরোটাই মনে না রাখাটা স্বাভাবিক এক মানবিক সীমাবদ্ধতা বলে স্বীকৃত। কিন্তু যেটা ঘটেনি সেটা ঘটেছে বলাটা সাভাবিক স্মৃতিবিভ্রমের পর্যায়ে পড়ে না। এটা খুবই বিরল এক মানসিক বিকার (যেমন Hallucination) হিসেবে ঘটতে পারে, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে, বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বানানো হতে পারে । যদি ধরে নেয়া হয় কোন পক্ষই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা বলছেন না তাহলে জয় পাকিস্তান শোনেননি বলে যারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাদের স্মৃতিবিভ্রম ঘটার সম্ভাবনা যারা জয় পাকিস্তান শুনেছেন বলে সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাদের মানসিক বিকার হবার সম্ভাবনার চেয়ে বেশি, কারণ মানসিক বিকারের সম্ভাবনা স্মৃতিবিভ্রমের চেয়ে কম।
আরেকটি পয়েন্ট হল, যদি ধরাই হয় যে কোন পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলছেন, তাহলে মিথ্যা বলার কারণ কার বেশি । যারা আওয়ামী লীগের প্রতি সামান্যতমও সহানূভূতিশীল (সমালোচনা করেও), তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগের অবস্থানকে সমর্থন করে জয় পাকিস্তান শোনেননি এই দাবী করাটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে যারা জয় পাকিস্তান শুনেছেন বলে সাক্ষ্য দিচ্ছেন তারা মিথ্যা বলে কোন রাজনৈতিক সুবিধা তো পাচ্ছেনই না, বরং বিতর্কিত হয়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন। তারা বিএনপি বা অন্য কোন দলের কোন অবস্থানের পক্ষ নিয়ে কিছু বলছেন না । কারণ জয় পাকিস্তান বলাতে কোন দলেরই কোন লাভ নেই রাজনৈতিকভাবে, কোন দলেরই কোন বিশেষ কোন অবস্থানকে সাহায্য করে না এটা। আর জয় পাকিস্তান বল্লেও স্বাধীনতা সংগ্রাম বা মুজিব খাটো হয়ে যাননা,যেটা সবাই এখানে বলছেন। কারণ ঐ সময় পর্যন্ত মুজিব আপোষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, আর এর আগের সব ভাষণেই (যেমন ৪টা জানুয়ারী, ১৯৭১ এ আওয়ামী সাংসদদের শপথ অনুষ্ঠানে) জয় পাকিস্তান বলতেন, এরকম দাবীও আছে, আবুল মনসুর আহমেদের আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইতে এর উল্লেখ আছে।
তবে সব কথার শেষ কথা হল কোনটাই জোর দিয়ে সত্য বা মিথ্যা দাবী করার মত প্রমাণ নেই। ভাষণে জয় পাকিস্তান ছিল কি ছিল না এর উত্তরে নীচের তিনটি সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে,
১। হ্যাঁ, ছিল (১০০% নিশ্চয়তা)
২। না, ছিল না (১০০% নিশ্চয়তা)
৩। প্রমাণ ব্যতীত কোন কিছুই বলা যায় না। (Suspension of Belief)
যারা নিজে ভাষণে উপস্থিত ছিলেন না তাঁদের (১) বা (২) বলাটা তাদের যুক্তির উপরে রাজনৈতিক বিশ্বাসকে স্থান দেয়াই প্রমাণ করে। একজন যুক্তিবাদীর জন্য (৩) বলাই যুক্তিসঙ্গত। অবশ্য অন্যান্য সব তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে হ্যাঁ বা নায়ের সম্ভাব্যতার একটা এস্টিমেট দেয়া যায়।
@কালযাত্রী,
৭ই মার্চের ভাষণের সম্পুর্ণ ট্টান্সক্রিপ্ট পাকিস্তানের অন্তত দুইটি মহাফেজখানায় এখনও আছে বলে শোনা যায়। এর একটি তদানীন্তন পি , এস , পি ই ( বর্তমান এফ,আই,এ ) যা বর্তমানে স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীন এবং অন্যটি ডাইরেক্টরেট আই,এস,আই বা আন্তঃ বাহিনী গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর । এখন কেউ যদি প্রকৃত সত্য একান্তই জানতে ইচ্ছুক হন , তিনি যে কোন পাকিস্তানী নাগরিকের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার বরাবর ‘ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অর্ডিন্যান্স ২০০২’ এর অধীনে ঐ ৭ই মার্চের ভাষনের ট্রান্সক্রিপ্টের কপির জন্য আবেদন করতে পারেন। একই কপি ভারত সরকারের কাছেও আছে যা একইভাবে সংশ্লিষ্ট তথ্য অবমুক্তকরন আইনের সাহায্যে ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব। দুই দেশের ট্টান্সক্রিপ্ট নিশ্চয়ই একই জিনিষ একই জায়গায় লুকোছাপা করবে না।
তবে, আমার মনে হয় না যে , এটা কেই করতে চাইবেন। পানি ঘোলা থাকাটাই অনেক সময় মাছ শিকারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ। বাংলাদেশের এই অল্প ক বছরের ইতিহাসে ষত শাক দিয়ে মাছ ঢাকা হয়েছে তা অন্য কেন দেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে কি না সন্দেহ।
এটা খুবই দুঃখজনক ব্যপার হবে যদি ভবিষ্যত প্রজন্ম নিরপেক্ষতার খাতিরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার দায়িত্ব অন্য কোন মহাদেশের ইতিহাসবিদদের কাছে আউটসোর্স করে।
@কালযাত্রী,
আপনার মূল কথায় মোটামুটি একমত। আমার মূলমন্ত্র মূলত আপনার বলা
– এরই আলোকে বলতে হয় যে যে কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্বই শুধু পেশ করলে চলে না, কিছু বিশ্বাস্য স্বাক্ষ্য প্রমান লাগে। সেটা ছাড়া প্রচলিত ভার্ষনই বিশ্বাস করতে হয়। আপনি কিছু বিশ্বাস্য স্বাক্ষ্য পেশ করেছেন মেনে নিয়েছি তবে সেগুলিরও ফাঁক আছে, যেমন জিয়ে নাকি জয় এটাও এই স্বাক্ষ্যরা একমত হতে পারছেন না।
সবচেয়ে বড় কথা, এডিটিং করা হয়েই থাকলে সেটা মোটে ২/৪জন লোকে নিশ্চয়ই করেনি। সেদিন লাখো জনতার সাথে দেশের সব পত্রপত্রিকার রিপোর্টার ময়দানে উপস্থিত ছিলেন, এদের কেউ না কেউ এত বছরে এ নিয়ে মুখ খোলেননি এটা খুবই অস্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে যে এডিটিং এর ব্যাপারটা হতে হবে এক যোগে কোন সম্মিলিত সিদ্ধান্ত থেকে। নইলে অন্তত কোন না কোন পত্রিকায় অবশ্যই জিয়ে/জয় পাকিস্তান আসত। এই সিদ্ধান্ত মাঠে উপস্থিত সাংবাদিকরা কখন কিভাবে নিলেন এর কোনই স্বাক্ষী থাকবে না?
আআযে কথা নির্মল সেন, নুরুজ্জামানরা বলতে পারেন সেটা এনারা কেউ বলতে পারেন না কিসের ভয়ে বা লোভে? নুরুজ্জামান নির্মল সেনদের কেউ মেরে ফেলেনি। আমি অন্তত যতদিন না এডিটিং এর সাথে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন এমন কারো বক্তব্য না শুনি ততদিন এই তত্ত্ব তেমন গুরুত্ব দেব না।
– এখানে কড়া দ্বি-মত আছে। আপনি যা বললেন তা সাধারন যুক্তির কথা, কিন্তু আমাদের দেশে ৭৫ এর পর থেকেই সৃষ্ট আবহে মানুষের চিন্তাধারা আর সরল পথে চলার উপায় নেই। বিএনপি যথাসাধ্য চেষ্টা করে স্বাধীনতা যুদ্ধে বংগবন্ধু ও আওয়ামী লীগের কোন কৃতিত্ব নেই তা প্রমানের, এরই অংশ হিসেবে তাদের ধামাধরা লোকজনে এসব ফাউ বিতর্ক তোলে। দূঃখজনক সত্য হল যে দেশের বড় সংখ্যক লোকের সহজেই এ ধরনের কূটতর্কের ফাঁদে পড়ে বিভ্রান্ত হয়। আমি নিশ্চিয় নির্মল সেন, কাজী নুরুজ্জামান, শামসুর রহমানদের বংগবন্ধুকে হেয় করার কোন অভিপ্রায় ছিল না, তবে তাদের সরল কথনে বন্দুক রেখে সে অভিপ্রায় চরিতার্থ করার লোকের অভাব নেই। নাজমুল হুদার প্রচেষ্টার কথা আগেই বলেছি। এডিটিং এর সাথে জড়িত কোন লোকের সন্ধান পেলে সে কি ছেড়ে দিত বলে মনে করেন? চেষ্টার তো কোন ত্রুটি রাখেনি।
@আদিল মাহমুদ,
সংশয়বাদী হলে প্রমাণ ছাড়া তো কোন ভার্শানই বিশ্বাস করা যায় না, প্রচলিতই হোক বা অপ্রচলিতই হোক। একসময় প্রচলিত বিশ্বাস ছিল পৃথিবী সমতল বা সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।
সাক্ষ্য চারটি। (১) জয়/জিয়ে/জিন্দাবাদ পাকিস্তান বলেননি (২) জয় পাকিস্তান বলেছিলেন। (৩) পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেছিলেন। (৪) জিয়ে পাকিস্তান বলেছিলেন। এর কোন একটা মিথ্যা হলে অন্য কোনটা অটোম্যাটিকালি সত্য বা মিথ্যা হয়ে যায় না। আর একাধিক ভার্শন থাকলেই যে কোন বিশেষ এক সাক্ষ্য (যেমন ১) সত্য হয়ে যায়, সেটাও বলা যায় না। প্রমাণ ছাড়া কোন ভার্শনঅই মিথ্যা(বা সত্য) বলা যায় না নিশ্চিতভাবে। জিয়ে পাকিস্তান শুধু আতাউস সামাদ বলছেন উদ্ধৃত পাঁচ সাক্ষ্যীর মধ্যে। জয় পাকিস্তানের সাক্ষ্যই বেশী। যাই হোক আমার উক্ত বটমলাইন বদলাচ্ছে না।
এটা তো দুদিকেই হয়। আওয়ামী লীগ যথাসাধ্য চেষ্টা করে জিয়াউর রহমানের কৃতিত্ব অস্বীকার করতে। বিএনপি বলতে চায় জিয়াই প্রকৃত ঘোষক, মুজিব নন। কিন্তু বিএনপি মুজিবের অবদান বা ভূমিকা অস্বীকার করে না বা করতে পারে না। কারণ মুজিবের অবদান/কৃতিত্ব ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, প্রতিষ্ঠিত। জিয়া নিজেই তাঁর ১৯৭৪ এর বিচিত্রা আর্টিকেলে সেটা লিখেছিলেন। সেই অবদান ৭ই মার্চের ভাষণে জয় পাকিস্তান থাকলেও, না থাকলেও সত্য। আওয়ামী লীগ শুধু জিয়ার অবদানি অস্বীকারই করে না, জিয়াকে পাকিস্তানের এজেন্ট, জাল মুক্তিযোদ্ধা (মানে আসলে পাকিস্তানের পক্ষেই মুক্তিযুদ্ধ করছিলেন!) ইত্যাদি বলতে চেষ্টা করে (বিশেষত এই মেয়াদে)। যাই হোক জয় পাকিস্তান আছে প্রমাণিত হলে বিএনপির কোন সরকারী রাজনৈতিক অবস্থান প্রমাণিত হবে না, বা গুরুত্বপূর্ণ কোন রাজনৈতিক লাভ হবে না। জিয়াই যে প্রকৃত ঘোষক সেটাও প্রমাণিত হবে না, কারণ “প্রকৃত” টা একটা বিচার, তথ্য নয়। যে যার নিজের বিচারে দুজনকেই “প্রকৃত” বলতে পারে। আর ১৯৯১ তে মাজমুল হুদা রেডিওতে জয় পাকিস্তান পেলে কি সুবিধা হত তাঁর বা বিএনপির? বারবারই তো বলা হচ্ছে (আপনিও বলেছেন) যে জয় পাকিস্তান থাকলেও সেটা ঐ সময়ের আলোকে অস্বাভাবিক বা অসঙ্গত হত না। আমি তো এখনো তাৎপর্য্যপূর্ণ কোন রাজনৈতিক ফায়দা দেখতে পাচ্ছি না। তবে এখন একটা তাৎপর্য্য এখন সৃষ্টি হয়েছে, মুজিব যে স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক নন সেটা প্রমাণ করার জন্য (তাতেও জিয়াই যে প্রকৃত ঘোষ্ক, সেটা প্রমাণিত হয় না আগেই বলেছি), কারণ জয় পাকিস্তান থাকলে সেটা স্বাধীনতার ঘোষণা হতে পারে না। এখন সরকারী অবস্থান হল যে মুজিব ৭ই মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন সেটার পক্ষে। কিন্তু ১৯৯১ এই তাৎপর্য্য ছিল না।
স্মরণ করিয়ে দেই নির্মল সেন, নুরুজ্জামানরা স্মৃতিচারণে একথা বলেছেন, কোন বিতর্কের জবাবে বা কোন কিছু দাবী করার জন্য নয়। এই কথা পুরো বইএর এক অতি ক্ষুদ্র অংশ। স্মৃতিচারণ তো সবাই লেখেন না বা। বেতারের কোন কর্মীর আসল সত্য জানা থাকলেও তিনি স্মৃতিচারন না করলে বা করতে গিয়ে সেটা উল্লেখ না করলে এটা বলা যায় না সেই কর্মী কোন কিছুর ভয়ে বা লোভে সেটা বলছেন না। বেতার কর্মীরা তো স্মাজিক বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না যে তাঁদের স্মৃতিচারণ অনেক লোকে পড়বে।
এর কোনটাই নিশ্চিত করে বলা যায় না। এডিটিং রেস কোর্স ময়াদানে ছাত্র লীগের নেতারা করেনি এটাও বলা যায় না। তারাই সব নিয়ন্ত্রণ করছিল। আর সাংবাদিকেরা তো রেডিওর সরকারী ভার্শনই (এডিটেড হোক বা না হোক ) ভার্শনই ছাপাবে, তাদের সম্পাদকের বা উর্ধ্বতন কারো নির্দেশে, ব্যক্তিগতভাবে যে যাই শুনে থাকুক না কেন। সিদ্ধান্তটা মাঠেই নিতে হবে কেন সাংবাদিকদের। যদি জয় পাকিস্তান বলেও থাকেন, এটা এডীটেড ভার্শনে না থাকার পর উচ্চ বাচ্চ্য না করার একটা ব্যখ্যা হতে পারে, তখনকার ঢেউ বা মোমেন্টাম স্বাধীনতার (বা ঘোষণার পক্ষে) ছিল। সাংবাদিক, সরকারী কর্মচারী আপামর জনতা এক আবেগপূর্ণ অবস্থায় ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। তথ্য প্রযুক্তিও এখনকার চেয়ে অনেক নীচে ছিল। কাজেই জয় পাকিস্তান এডিট আউট করলেও সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা করার কথা নয় বা লক্ষ্য নাও করতে পারে বেশিরভাগ লোক। বরং যদি এর উল্টোটা হত, জয় পাকিস্তান ছিল না ভাষণে, অথচ টেপে “জয় পাকিস্তান” শুনত লোকে, তখনই হৈচৈ পড়ে যেত। আর ব্যক্তিগতভাবে অনেকে জয় পাকিস্তান বাদ দেয়াতে বিস্ময় প্রকাশ করেঞ্ছিলেন তখন, এরকম সাক্ষ্য আছে কিছু কিছু ব্লগে, যারা সে ভাষণ শুনেছিলেন বলে দাবী করেন। কিন্তু এরা ব্লগার, নামকরা ব্যক্তিত্ব নয়। আবুল মনসুর আহমেদ তাঁর “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” বইতে লিখেছেন যে তাঁকে অনেকেই বলেছেন যে তারা ভাষণে যা শুনেছিলেন, পরের দিনের টেপ প্রচারে তার সাথে গরমিল ছিল (জয় পাকিস্তান বাদ দেয়াটা)। কাজেই কেউ এ নিয়ে কোন কথা তুলেননি এটা বলাও সঠিক নয়।
আবারো বটমলাইন দিয়ে শেষ করে বলতে হয় যে কোন বিশ্বাসের পক্ষেই সন্দেহাতীত প্রমাণ নেই। সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ও অন্যান্য Circumstantial Evidence দিয়ে একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করা যায়, কিন্তু সেটা একটা ব্যক্তিগত বিচারই হবে, কোন অকাট্য প্রমাণ নয়।
@কালযাত্রী,
অনেক তথ্য-রেফারেন্স, সাক্ষী দেখালেন কিন্তু একটাও অরিজিনেল লেখা বা বক্তব্য নয়। দ্রোহ নামের এক ব্লগ থেকে বদরুদ্দীন উমরের একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়কেরা—শিরোনামের লেখা থেকে কিছু উক্তি তোলে এনেছেন। মূল লেখাটা কোথায়? এ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যতো বই লেখা হয়েছে তার একটাও বদরুদ্দীন উমরের পছন্দ হয় নাই। তার মতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুকে অবিসংবাদী নায়ক বলা হলে সেটা কোন ইতিহাসই হতে পারেনা। আপনি এখানে যা বলেছেন তা প্রায় সবটুকুই বদরুদ্দীন উমরের কথা। বদরুদ্দীন উমর বলছেন-
টেপ রের্কডারের প্রচলন হয়নি এর অর্থটা কী?
তিনি জানলেন কী ভাবে লক্ষ জনতার মাঝে কেউ সেই ভাষণ টেইপ করেনি? তিনি বললেন-
বাহ, কেমন চাক্ষুষ সাক্ষী। ওডিও রেকর্ড, ভিডিও রেকর্ড, দেশী বিদেশী সকল সাংবাদিক, সকল পত্র-পত্রিকা সবকিছু ঐ দিন থেকে আওয়ামী লীগের কন্ট্রোলে চলে গিয়েছিল? যারা বলেন, শেখ মুজিব জিয়ে পাকিস্তান বলায় কিছু যায় আসেনা, তারা ভুল করেন। এই শব্দটার উপর ভিত্তি করে বদরুদ্দীন উমরের মতো মানুষেরা বলতে চান যে, বঙ্গবন্ধু কোন সময়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চান নি। উমর বলেন-
তারপর তিনি হুমায়ুন আহমেদের জোছনা ও জননী বইটির কথাও উল্লেখ করেছেন।
সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই বিভ্রান্তির একটা মিমাংসা হওয়া দরকার। লাভ ক্ষতি কার হলো না হলো সেটা কোন ভাল যুক্তি নয়। দেখুন অধ্যাপক অজয় রায় সাক্ষী দিচ্ছেন-
হুমায়ুন আহমেদ তার জোছনা ও জননী বইয়ের ভুমিকায় বলেছেন যে, তিনি সেই সময়ের বহু পত্রিকা ঘেঁটে কোথাও জিয়ে পাকিস্তান শব্দ পান নি। এখন পর্যন্ত আপনি আপনার বক্তব্যের সমর্থনে একটা বইয়ের স্কান কপি, কোন ওডিও-ভিডিও রেকর্ড উপস্থাপন করতে পারেন নি। কিন্তু বারবারই বলছেন-
আপনি যে ভাবে তর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে আপনাকে কনভিন্স করার কোন পথই আর খোলা নাই। নাহ, একটা পথ খোলা আছে আর তা হলো, একটা টাইম মেশিনে করে আপনাকে ৭১ এর ৭মার্চ সেই রেইসকোর্স ময়দানে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু সেখানে গিয়ে অন্য কেউ না শুনলেও আপনি যে শুনতে পাবেন শেখ মুজিব বলছেন- পাকিস্তান জিন্দাবাদ, বা জিয়ে পাকিস্তান বা জয় পাকিস্তান, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
একুশটি বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল। এই সুদীর্ঘ সময় ধরে বদরুদ্দিন উমরেরা চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম চিরতরে মুছে দিতে, কিন্তু পারেন নি। কারণ বঙ্গবন্ধুর নাম ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা যায় না। কম্যুনিজমের আফিম খেয়ে মানুষ কেমন মাতাল হয় বদরুদ্দিন উমরের দিকে তাকালে তা বুঝা যায়। তিনি তার একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়কেরা প্রবন্ধে লিখেছেন-
এই চীনেবাদাম ফেরীওয়ালাদের আসল জ্বালাটা কোথায় জানেন? সশস্ত্র বিপ্লবের তত্ত্ব থেকে ‘৭১-এর গেরিলা কায়দার বিপ্লবটি হস্তচ্যুত হয়ে তা শেখ মুজিবের হস্তগত হয়ে গেল, এ তারা সহ্য করতে পারেন না। আমার মন চায় তাকে জিজ্ঞাসা করি- আপনি বদরুদ্দিন ওমর, সেই নয় মাস বসে বসে কার মাথার পাকনা চুল বা বালটা ছিড়ছিলেন?
‘দেয়াল’ নিয়ে অভিযোগটির / বিতর্কটির বুঝি আর সুরাহা হল না!
@গীতা দাস,
এটায় আসলে সমাধানের কোন ব্যাপার নেই।
প্রথমত এটি ইতিহাস ভিত্তিক উপন্যাস, ইতিহাসের দলিল নয়, তবে তাই বলে ঐতিহাসিকভাবে প্রমানিত সত্য ভিন্ন ভাবে দেখানো বিনা প্রতিবাদে মেনে নেওয়া যায় না। হুমায়ুন খুবই দূর্বলতার কাজ করেছেন অন্তত সেই ২ অধ্যায় রচনায়। তার রচনা ইতিহাস ভিত্তিক রচনা না হয়ে অনেকটা ফ্যান্টাসি ভিত্তিক রচনা হয়ে যাচ্ছিল।
দুটো বিতর্কে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে এখানে। এক হল হুমায়ুন আহমেদ কি বলেছিলেন যে শেখ মুজিব জিয়ে পাকিস্তান বলে ৭ই মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন, আর দ্বিতীয়টি হল শেখ মুজিব কি আসলেই জিয়ে পাকিস্তান বলে ৭ই মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন? প্রথমটি নো ব্রেইনার। এটা সহজেই নিষ্পত্তি করা যায় রেফেরেন্স ঘেঁটে। এটা ট্রিভিয়াল বিতর্ক। ব্লগ লেখক উদ্ধৃতি দিয়েছেন ‘জোছনা ওঁ জননীর গল্প’ বই থেকে, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হুমায়ুন আহমেদ নিজে নয়, বরং হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন যে শামসুর রহমান বা হাবিবুর রহমান এই কথা বলেছেন তাঁদের বইএ, আর হুমায়ুন আহমেদ শামসুর রহমান বা হাবিবুর রহমানের কথায় বিশ্বাস আনতে পারছেন না। দ্বিতীয় বিতর্ক অত ট্রিভিয়াল না। এটা সত্য না মিথ্যা প্রমাণ করা অসম্ভব এখন। কারণ ৭ই মার্চের ভাষণ সরাসরি সস্প্রচার করা হয় নি ঐ দিন। এখন আমরা যে ভাষণ পড়ি বা শুনি তা এডিটেড। যারা ঐ ভাষণে উপস্থিত ছিলেন তাঁরাই জানেন আসল সত্যটি। যেহেতু আওয়ামী লীগের এখনকার ঘোষিত অবস্থান হল যে মুজিব আসলে গোড়ার থেকেই স্বাধীনতা চেয়েছিলেন তাই মুজিব যে ৭ই মার্চএর ভাষণ শেষে “জিয়ে/জয় পাকিস্তান” বা “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” বলচেহেন এটা অনেকেই শুনে থাকলেও এখন ভয়ে বলবেননা। হাবিবুর রহমানের বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে এটা বাদ দেয়ার কারণ সেটাই হতে পারে। শামসুর রহমান বা হাবিবুর রহমান দুজন দায়িত্বশীল বুদ্ধিজীবী, জামাতি বা বিএনপি পন্থী নন তারা। তাদের কথা মিথ্যা বলে সহজে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে চূড়ান্ত কথা, মুজিব আসলেই তা বলেছিলেন কি বলেননি, কোনটাই ১০০% নিশ্চিত করে জানা আমদের পক্ষে সম্ভব না। তবে এটা বলা যায় যে বলাটাও সম্ভিব, কারণ তখনো তিনি আপোষের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যাহোক আরও কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি এটা শুনেছেন বলে উল্লেখ করেছেন, যাদের লিস্ট নীচে দিচ্ছিঃ
১।A sector commander
remembers Bangladesh Liberation War 1971 বইএ কর্নেল নূরুজ্জামান লিখেছেন যে মুজিব পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেই ভাষণ শেষ করেছিলেন, কিন্তু কয়েক মূহূর্ত পর ছাত্র নেতাদের সাথে কথা বলার পর বলেন “জয় বাংলা” (দ্রঃ
http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=163764)
(Daily Star 2010-11-27, A freedom fighter’s testament, Shahid Alam এর রিভিউ)
২। সাংবাদিক নির্মল সেন তাঁর বই আমার জীবনে একাত্তর,প্রকাশকঃ বর্তমান সময়, পৃ ১১ এ বলছেন একই কথা, তিনি বলেন যে মুজিব “জয় পাকিস্তান” বলেছিলেন। নির্মল সেনের নিজের কথার উদ্ধৃতি আছে এখানেঃ
http://oporajita-oporajita.blogspot.com/2010/03/blog-post_4361.html
৩। অলি আহাদের জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫ বইয়ের ৩৮৬ পৃষ্ঠা, ৪র্থ সংস্করণ- ফেব্রুয়ারী ২০০৪ তেও “জয় পাকিস্তান” এর উল্লেখ আছে। (http://www.sonarbangladesh.com/blog/classicpost/53793)
৪। সাংবাদিক (আতাউস সামাদ ‘যেভাবে আমরা পেলাম দিনটি’ কলামে (সূত্রঃ যুগান্তর, ০৭/০৩/১১) ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলেছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
(দ্রঃ http://www.sonarbangladesh.com/article.php?ID=5024)
@কালযাত্রী,
আপনার মূল্যবান ইনপুটের জন্য ধন্যবাদ।
আমি আসলে মূল বিষয় নিয়ে নয় (মানে আসলেই জিয়ে পাকিস্তান বলা হয়েছিল কি হয়নি), হুমায়ুন আসলেই এ নিয়ে কি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন সেটাই আলোচনা করতে চেয়েছি। আসলেই দুটো ভিন্ন বিতর্ক, আমি লেখায় আলোচনা হুমায়ুন কি বলতে চেয়েছেন সেটাই মূখ্য উল্লেখ করেছিলাম।
আপাতত ব্যাস্ত আছি, পরে আশা করি কথা হবে।
ধন্যবাদ।
এখানে http://www.amarblog.com/niyamot/posts/150554 মন্তব্যে অমি পিয়াল বলতেছেন যে, প্রথম সংস্করণে হুমায়ুন আহমেদ ব্যাখ্যা ছাড়াই ‘ জিয়ে পাকিস্তান ‘ বলেছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণে আপনি যেটা উদ্বৃত করেছেন সেটা বলেছেন (ভুমিকাতে)
@রাব্বানী,
পিয়াল ভাই এর সাথে সময় সুযোগ হলে হয়ত এ নিয়ে কথা বলতাম। সংস্করনের ব্যাপারটা অবশ্যই আমার মাথায় ছিল।
আমার বোঝায় ভুল না থাকলে আমি মনে হয় প্রথম সংস্করন থেকেই কিন্তু উদ্ধৃতি করেছি।
আমার কপিটি তৃতীয় মুদ্রন – একুশে বইমেলা ২০০৪। তৃতীয় মুদ্রন হলেও কিন্তু সংস্করন দ্বিতীয় এমন বা তৃতীয় এমন সম্ভাবনা অতি ক্ষীন, কারন প্রথম মুদ্রনও দেখাচ্ছে সেই একুশে বই ২০০৪। একই বইমেলা সিজনের একই সংস্করনের এটা তৃতীয় মুদ্রন। মুদ্রন আর সংস্করন এক নয়। একই বইমেলায় হুমায়ুন আহমেদের একই বই এভাবে পূনঃ মুদ্রিত হয়ে বেশ কবারই বের হয়, তাতে পরিবর্তন বা সংস্করনের ব্যাপার নেই। সোজা কথায় আমার কপিটি একই এডিশনের তৃতীয় কপি। একই বইমেলায় ভিন্ন এডিশন এসেছিল এমন হবার সম্ভাবনা বাস্তবতার চোখেও খুবই দূর্বল। বইমেলা চলে এক মাস, এর মাঝে বিতর্ক হল, হুমায়ুন বিতর্কের চাপে পরিবর্তন করে আরেক সংস্করন বের করে ফেললেন এই এক মাসেই? কে জানে, হাইলি আন লাইকলি হলেও হতে পারে।
ব্যাপারটার সুরাহা ১০০% নিশ্চিত ভাবে হয় যারা সংস্করনের কথা বলছেন তারা যদি কেউ সেই কথিত পূর্ব সংস্করনের কপি দেখাতে পারেন যেখানে হুমায়ুন কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই বলেছেন। এটা মোটেও কঠিন কোন কাজ না।
যদি আদতেই তেমন হয় তাহলে বলতে হয় যে পরের সংস্করনে হুমায়ুন নিজের প্রথম সংস্করনের ভুল নিজেই শুধরে দিয়ে এই বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়েছেন। তবে সেক্ষেত্রে তার আগের সংস্করনে ভুল ছিল এটা পরিষ্কার করে অবশ্যই বলা উচিত ছিল। তাহলে আমার বা অভিযোগকারী কারোই এ নিয়ে ক্যাঁচালের অবকাশ থাকত না। যে কোন বই এরই সংস্করন বদলালে কি এবং কেন বদল হল তার ব্যাখ্যা থাকে।
ছাগুরা হুমায়ুন কোট করে ‘জিয়ে পাকিস্তান’ দাবী করলে হুমায়ুনকে গাল না পেড়ে উলটো তাদেরই কি মুখের ওপর বলা উচিত নয় যে এই হুমায়ুনই ‘জিয়ে পাকিস্তান’ দাবী যে ভুল সেটা প্রমান করে দিয়েছেন? তিনি এই ভুল নিজেই শুধরে গেছেন এটা জেনেও তাকে গাল দিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তি সংগ্রহ? গাল খাবার প্রশ্ন এলে কই শামসুর রহমান কিংবা বিচারপতি হাবিবেরই গালি খাওয়া উচিত ছিল না?
@আদিল মাহমুদ,
এ নিয়ে পিয়াল ভাই এর বক্তব্য-
@আকাশ মালিক,
দেখেহি রাব্বানীর কমেন্টে।
আমি আমার কথা এ প্রসংগে বলেছি। খুব সহজেই সুরাহা হয়ে যায়। সেই ভিন্ন সংস্করন দেখালেই হয়ে যায়। যদিও আমার জানা মতে পরের সংস্করন আগের সংস্করনকে বাতিল করে দেয়, আগের সংস্করনের আর গুরুত্ব থাকে না। ছাগু ঠ্যাংগাতে গেলে সেভাবেই যাওয়া উচিত, হুমায়ুনকে গাল দেওয়া অনেকটা ধর্ম সংক্রান্ত সমালোচনায় ধার্মিকরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান সেরকমই হচ্ছে। কোন অপ্রীতিকর হাদীস কিংবা ঘটনা সহি ইসলামী সূত্র থেকে কোট করলে সেসব ঐতিহাসিক ধর্মীয় চরিত্র কিংবা স্বীকৃত বর্ননাকারীদের কারোই অপরাধ হয় না, অপরাধ হয় যে কোট করল তার।
@আদিল মাহমুদ
অনেক ধন্যবাদ,এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উপর আলোকপাত করার জন্য ।
ধন্যবাদ, এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য, এবং অযাচিত বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য।
বিবিসিতে হুমায়ূন আহমেদের শেষ সাক্ষাৎকারটা শুনলাম আবার। তিনি সব প্রশ্নের উত্তর সরাসরি সহজভাবেই দিতেন। ‘জিয়ে পাকিস্তান’ সম্পর্কিত প্রশ্ন কি তাঁকে কখনো করা হয়নি? তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন নিশ্চয়ই।
@প্রদীপ দা,
‘জিয়ে পাকিস্তান’ বিষয়ে তিনি আলোচ্য বই এর বাইরে অন্য কোথাও আর কোন বক্তব্য দিয়েছিলেন কিনা আমারো জানা নাই।
তবে এ বিষয়ে সমালোচনাকারীরা ‘জোছনা ওঁ জননীর গল্প’ বইটাই রেফার করেন। তাদের দাবী এই বইতেই তিনি ‘জিয়ে পাকিস্তান’ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। অন্য আর কোন সূত্রের কথা তাদেরও বলতে শুনিনি, আমিও জানি না। আমার আলোচনার গন্ডি তাই স্বাভাবিক ভাবেই ‘জোছনা ওঁ জননীর গল্প’ বইটিই।
@আদিল মাহমুদ,
আসিফের কথা বাদ দিয়ে অন্য কথা বলি। আসিফ ভুল তথ্য দিয়েছেন, সেদিন গুরুত্বসহকারে খেয়াল করিনি, যদিও বইটি অনেক আগেই পড়া ছিল। আর ঐ কথা তো তিনি বলেছিলেন পূর্ব কথায় বা ভুমিকায়। ভুমিকাটা খুবই আবেগপূর্ণ ছিল মনে হয়, আর তিনি নিজেই বোধ হয় সন্দেহ করেছিলেন, বইয়ের বক্তব্য নিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে।
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/Humayun1.jpg[/img]
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/unHumayun2.jpg[/img]
এর পর বলেছেন তিনি পাকিস্তানিদের (স্বাভাবিকভাবেই রাজাকার আলবদর অন্তরভুর্ক্ত) দ্বারা নারী অত্যাচার তার বইয়ে তোলে আনেন নি এবং অনেকটা তার বিশ্বাসও হয়নি কারণ জাতিগতভাবে আমরা অতিকথন পছন্দ করি। কিন্তু আমি তো চাইবো তার লেখা পড়ে আমার মনের ভেতরে দ্রোহ, ঘৃণার বিষ্ফোরণ ঘটুক।
যাক, এবার আমার নিজস্ব অভিমত বলি, আমি হুমায়ুন আহমেদের লেখা গল্প কোন সময়েই ভাল পাই নি। এর সাথে তার শেষ সময়ের বিতর্কিত বিষয়াদির কোন সম্পর্ক নেই। এক কথায় গল্পে আমি যা চাই তার লেখায় তা পাইনা বা তার গল্পে আমার চাহিদা মেটেনা। তার জনপ্রীয়তার কারণ জানার লক্ষ্যে প্রায় কুড়িটা বই সংগ্রহ করলাম, বড়জোর অর্ধেক পড়া হয়, শুধু বহুব্রীহি ছাড়া একটাও শেষ করতে পারলাম না। এখনও আর কিছু হাতের কাছে না পেলে মাঝে মাঝে হুমায়ুন আহমেদের হাতে পাঁচটি নীলপদ্ম (একজন মায়াবতি, কৃষ্ণপক্ষ, পেন্সিলে আঁকা পরী, আমার আছে জল, মেঘ বলেছে যাব যাব) পড়ি। কিন্তু আল্লায়ই জানে কেন আমি স্বাদ পাইনা।
হুমায়ুন আহমেদের জোছনা ও জননীর গল্প পড়েছেন, এবার সময় করে নিচের বইগুলো পড়েন, তারপর বলেন তাকে এ যুগের শ্রেষ্ট লেখক বা সাহিত্যিক উপাধী দেয়া যায় কি না? অনেকে সেটাই বলার চেষ্টা করেন।
শওকত ওসমানঃ জাহান্নাম হইতে বিদায়, রশীদ করিমঃ আমার যত গ্লানি, সৈয়দ শামসুল হকঃ দ্বিতীয় দিনের কাহিনী, মাহমুদুল হকঃ জীবন আমার বোন, ও আহমদ ছফার লেখা ওংকার।
প্রশ্ন করতে পারেন, আমি কী চাই বা আমার চাহিদা কী? আমি চাই সেই সব কবি-
সেই সব কবিরা কোথায়, যাঁরা একদিন কবিতা পেতেন পথেঘাটে,
আকাশে জমলে মেঘ যাদের খাতার আদিগন্ত ঢেকে
বৃষ্টি নামতো থইথই মাত্রাবৃত্ত স্বরবৃত্তে,
থরেথরে ফুটত কদম পাতায় পাতায়,
ভাসতো পথ হিজলের রঙিন বন্যায়?
কোথায় এখন তাঁরা, সেই সব সহৃদয় কবি,
শিশুর মৃত্যুতে যাঁরা হাহাকার করতেন ছন্দে ছন্দে,
অশ্রুভারাতুর করে তুলতেন বাঁশবাগানের মাথার ওপর একাকী চাঁদকে,
জলে ভরে তুলতেন বুলবুলিটার চোখ?
কোথায় এখন তাঁরা, সেই সব গৃহধর্মী কবি,
ধবলী ফিরেছে কিনা তার জন্যে যাঁরা উদ্বিগ্ন থাকতেন,
আর শুনতে পেতেন কারা যেন খেয়াঘাটে ডাকছে মাঝিরে?
সেই সব কবিরা কোথায়, পল্লীজননীর সাথে যাঁরা সারারাত
জেগে থাকতেন মুমূর্ষু শিশুর পাশে,
কোথায় কবিরা যাঁরা পায়ের তলায় ঝরা বকুলের স্পর্শে উঠতেন কেঁপে
আর একাকি বিষন্ন তরুচ্ছায়ে সারাদিন বাজাতেন বাঁশি?
আজকে আমার দেখতে ইচ্ছে করে সেই সব কবিদের মানবিক মুখ
এবং তাঁদের পদ্যে শূন্য বুক ভরে নিতে।
-হুমায়ুন আজাদ
@আকাশ মালিক,
আমি আসিফ বা অন্য কোন বিশেষ ব্যাক্তির প্রতি দৃষ্টি দেবার কোন দরকার দেখি না। ব্যাক্তি অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে এই রোগ তরুন প্রজন্মের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে।
– আপনি মনে হয় ভুল পড়েছেন বা বুঝেছেন। তিনি কেন নির্যাতিত নারীদের কথা বর্ননা করেননি তার কারন কিন্তু জাতি হিসেবে অতি কথনের পয়েন্ট কারন হিসেবে বলেননি। তবে অতি কথনের উদাহরন হিসেবে ‘৭১ সালে বই খাতা ওয়ালা তরুনীর কথা বলেছেন। যেটা সে সময়কার সব বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারনে সম্ভব বলে তিনি মনে করেন না। এর মানে এই নয়া যে নারী নির্যাতনের অংশটিই পুরো অতি কথন। অতি কথন হল বই খাতা সহকারে ধরে আনার অংশটুকু যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দলিল বইতে স্থায়ী ভাবে অংশ নিয়েছে। ওনার মতে এসব তথ্য ভালভাবে যাচাই করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে ঢাকা শহরের একই দিনের বর্ননা তিনি এক এক লোকের জবানীতে ভিন্ন রকম পেয়েছেন যা তাকে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে যে এসব রচনার বেশ কিছু আসলে পরে লেখা হয়েছে। যুক্তির আলোয় ওনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমি নিজেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঘাটাঘাটির সময় অনেক অসামঞ্জস্যতা পেয়েছি। জাতিগত ভাবে অতি কথনের অভ্যাস আমাদের খুবই ভাল আছে, সাথে আছে দায়িত্বজ্ঞানের চরম অভাব। ‘জিয়ে পাকিস্তান’ কিন্তু শুধু রাজাকার জাতীয় লোকে নয়, আওয়ামী ভাবধারার লোকেও ছড়িয়েছে। এনারা কিভাবে এই কথা আন্দাজি অবলীলায় লিখে যেতে পারলেন? কারন তারা ভূত থেকে ভূতে পদ্ধুতি অন্য কোন সূত্র থেকে শুনে নিজে শুনেছেন বলে রিলে করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অত্যন্ত দূঃখজনক হল যে বস্তুনিষ্ট সংঘবদ্ধ গবেষনা বলতে গেলে হয়ইনি। এর সুযোগ নিয়েছে পুরোপুরি স্বাধীনতা বিরোধী পক্ষ। আমরা এমনই করিতকর্মা যে কেউ ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যায় সংশয় প্রকাশ করলে আমরা তাকে নানান ভাষায় গাল দিতে পারি, কিন্তু নিজেরা কোনদিন এই ৩০ লাখ না হোক অন্তত ১০ লাখের হিসেব লিপিবদ্ধ করার মতও উদ্যোগ নিতে পারিনি। এর ফল হয়েছে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত এই গনহত্যা গনহত্যার ইতিহাসেও সেভাবে ঠাঁই পায় না।
নারী নির্যাতন কেন বর্ননা করেননি তা তার কথাতেই পড়ূন, “আমার এই বইটির অসম্পুর্নতার মধ্যে একটি হল আমি পাকিস্তানী সৈন্যদের স্বারা অত্যাচারিত নারীদের বিষয়টি আনতে পারি নি। বিষয়টি এতই স্পর্ষকাতর এবং এতই কষ্টকর যে কিছুতেই লিখতে পারলাম না। আশা করছি অন্যরা লিখবেন। তাদের কলমে এইসব হতভাগ্য তরুনীর অশ্রুজল উঠে আসবে।” তার কথা বিশ্বাস করা না করা আপনার মর্জি। তবে তিনি কারন হিসেবে অতি কথন বলেননি, বলেছেন তার ব্যাক্তিগত স্পর্ষকাতরতা এবং কষ্টের কথাই।
হুমায়ুন সাহিত্য সমগ্র আলোচনা আমার উদ্দেশ্য নয় আগেই বলেছি। এটি অপ্রসাংগিক। তবে আপনাকেও বলি; আপনি শওকত ওসমানঃ জাহান্নাম হইতে বিদায়, রশীদ করিমঃ আমার যত গ্লানি, সৈয়দ শামসুল হকঃ দ্বিতীয় দিনের কাহিনী, মাহমুদুল হকঃ জীবন আমার বোন, ও আহমদ ছফার লেখা ওংকার পড়েছেন। এবার সময় করে নীচের বইগুলি পড়ুনঃ
সত্যজিত রায়ঃ এক ডজন গপ্পো
শীর্ষেন্দুঃ হেতমগড়ের গুপ্তধন।
রকিব হাসানঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ (আমি এখনো পড়ছি, এক সপ্তাহের ছুটিতে যাচ্ছি এক বিরান বনের মাঝে, সেখানেও গাদা খানেক এই সিরিজ নিয়ে যাচ্ছি গোগ্রাসে গিলতে)।
………
আমার আপনার মত কাব্য প্রতিভা নেই, তবে কি বলতে চাচ্ছি তা আশা করি বুঝতে পারছেন। গল্প সাহিত্য আর্ট কালচার কার কি ভাল লাগে তার কোন স্কেল নেই, এ কারনেই আর্ট কালচার বিজ্ঞান নয়। এই কারনেই হুমায়ুনের লেখার কোন সাহিত্য মান নেই এ জাতীয় কেতাবী কথা আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ন মনে হয় না। আমার কাছে অস্কার পাওয়া খুব কম ছবিই উপভোগ্য মনে হয়েছে। আমি এখন জোর করে দাবী করতে পারি না যে আমার আসলে খুবই ভাল লেগেছে। সোজা সরল ভাষায় সব শ্রেনীর পাঠক ধরে রাখা খুব একটা সহজ কাজ নয়।
@আদিল মাহমুদ,
এটাই বোধ হয় মানব জীবনের বৈশিষ্ট। দোষ-গুণ, ভাল, মন্দ, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, আবেগ-ক্ষোভ, ভুল-ভ্রান্তি এ সবগুলো নিয়েই আমরা মানুষ। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত উঠতি সমাজের যুব-যুবতি পাঠকদের ধরে রাখার যে অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা হুমায়ুন আহমেদের ছিল, তা বোধ হয় তার শত্রুরাও অস্বীকার করবেনা। পছন্দ-অপছন্দ মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার যেটা পছন্দ আপনার তা নাও হতে পারে, ঠিক তেমনি আপনার যা পছন্দ আমার তা নাও হতে পারে। তাই বলে সেই বস্তু অর্থহীন বা মূল্যহীন হয়ে যায় না। হুমায়ুন তার নিজের সৃষ্টিতেই বেঁচে থাকবেন পাঠকের মাঝে অনাদিকাল।
আচ্ছা আপনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বুয়েটের কথা। একটা লেখা দিলেন না কেন? এ ব্যাপারে আপনাকে কিছু জিনিষ জিজ্ঞাসার ছিল। বুয়েট আর হুমায়ুন ইস্যুতে আপনার অবস্থান আমার কাছে মনে হয়েছে একসাথে বহুদিন চলার পথে হঠাৎ করে- আজ দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেছে বেঁকে-
(সমঝদার কে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়)
উভয় ইস্যুতে সেখানে আপনার অনুপস্থিতি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাই বললাম। কানে কানে আরেকটা কথা বলে দেই, আমি বুয়েটের শিক্ষক সমিতির ভিসি হঠাও আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান সমর্থন করিনা।
@আকাশ মালিক,
আপনি মনে হয় কিছুতেই বুঝতে পারছেন না যে আমি এই লেখায় হুমায়ুন সমগ্র সমালোচনা বা বন্দনায় বসিনি। বসেছি তার সম্পর্কে প্রচলিত একটি ভুল রেফারেন্স বিষয়ে আলোকপাতে। এই ‘জিয়ে পাকিস্তান’ ইস্যু গানিতিক বিচারে সমগ্র হুমায়ুন সাহিত্যের শতকরা কতভাগ বলে মনে হয়?
বিপুল পাঠক প্রিয়তা অবশ্যই সাহিত্য মান যাচাই এর একটি উপায় ধরা হলেও মানতে হবে সে এই পদ্ধুতিরও দূর্বলতা আছে। যেমন অনেক হিন্দী সিনেম সিরিয়াল, এমনকি অশ্লীল গান বিপুল ভাবে জনপ্রিয় হয়ে যায়, এখন সেগুলিকেও উচ্চমান ভাবার কারন নেই।
হুমায়ুন সম্পর্কে মনে হয় আমি বিভিন্ন ব্লগে যা বলেছি তাতে তার সাহিত্য সমালোচনারই পরিমান অনেক অনেক বেশী, প্রসংশার পরিমান অতি কম। তবে সততার খাতিরে এটাও বারে বারে স্বীকার করেছি যে হাজার নিন্দা করলেও এখনো তার লেখা পেলে ছাড়ি না। এটা খুবই ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে এ নিয়ে বহু বছর খুনসুটি হয়। সেও হুমায়ুন বড় লেখক শুনলে খেপে ওঠে, কিন্তু প্রায়ই হুমায়ুনের নুতন বই কিংবা নাটকের সন্ধান করে, পেলে আমাকেও খবর দেয়। আমরা একে অপরকে তোর প্রিয় লেখক হনু আহমেদ বলে খেপাই। ভদ্রলোকের সময় যে প্রায় শেষ তা সেইই আমাকে সোমবার দুপুরে অফিসে ফোন করে কান্না কান্না গলায় দেয়, চরম সংবাদটিও সেই দেয়। আমার মনে হয় হুমায়ুন আহমেদ নামের লেখক এই ধরনের দ্বিচারিতাও আরো অনেকের মাঝেই সফল ভাবে তৈরী করতে পেরেছেন।
বুয়েট সম্পর্কে লেখা দেবার ইচ্ছে ছিল। তবে ইরতিশাদ ভাই কাজটি অনেকটাই সফল ভাবে করে দিয়েছেন। এখনো ইচ্ছে আছে, তবে আমি একটি ভিন্ন দিক দিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। বুয়েট বিষয়ে একটি সত্য কথা মনে থেকে বলেন তো। ধরেন আজ ক্ষমতায় থাকত খালেদা, তার ধামাধরা আনোয়ারুল্লাহ চৌ কিংবা এরশাদুল বারী গোছের কোন ভিসি যিনি ছাত্রদলের গুন্ডা পান্ডাদের মদদ দেন, প্রোভিসির পদে ৫০ জন টপকে জিয়া সমিতি খুলে বসা কাউকে নিয়োগ দেন, তার পদত্যাগের দাবীতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এক হয় আন্দোলনে নামলে এই আন্দোলনকে যারা মানতে পারছেন না তারা কয়জনে কোন সুরে গাইতেন? তখন দলীয় ভিসি অতীতেও হয়েছে এটা এমন কোন ব্যাপার নয়, কিংবা আন্দোলনের কোন শিক্ষক টিকি পরিহিত হিন্দু কাজেই এই আন্দোলন বাকশালি ভারতীয় ষড়যন্ত্র এভাবে কয়জনে ব্যাপারটা দেখতেন? আন্দোলন জাতির ক্ষতি করে গোছের মহা পুরুষিয় ওয়াজ নসিহত কতজনে করতেন? ‘৯৬ সালের আন্দোলনে দেশের কয় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল? এর প্রতিবাদ কে কোথায় করেছেন?
আপাতত পদ্মা সেতু দূর্নীতি সংক্রান্ত একটি লেখায় হাত দিয়েছিলাম, ছুটির পর নামিয়ে দেব। তবে দুই ইস্যুতেই অন্তর্নিহিত বক্তব্য অনেকটা এক ধাঁচের।
@আকাশ মালিক,
বলতে ভুলে গেছিলাম, বুয়েট বিষয়ে আপনার মত কেমন হবে তা কানে কানা জানানোর দরকার ছিল না, জানাই ছিল বাই ডিফল্ট।
আমার পদ্মা সেতু সংক্রান্ত বক্তব্য পড়লে আপনি চরম হতাশ হবেন এটাও লিখে দিতে পারি 🙂 ।
@আদিল মাহমুদ,
বাই ডিফল্ট!!:-?
হে ভাই, মনটা খুশীতে ভরে গেল। বহুদিন হয় ব্লগে আলোচনা করে হাসি নাই।
আওয়ামী লীগ সমর্থন করি বলে? এবারও কানে কানে বলি- আওয়ামী লীগ সমর্থন করি, বিকল্প নাই বলে।
আপনার ‘ছাগু ছাগু ডাক পাড়ি’ লেখাটা এখানে দিবেন না? ইশ, সোনা, সামু, ও ইসলামী ফেইস বুকে ছাগুরা হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে কী জঘন্য- কুৎসিত মন্তব্য করছে। হায় আল্লায়, মানুষ এতো অমানুষ হতে পারে? এদেরকে গালি দেয়ার ভাষাও আমার জানা নাই।
@আকাশ মালিক,
– আমিও তাই। অগতির গতি আওয়ামী লীগ। তাই বলে জেনে শুনে সত্য এড়িয়ে অন্যায় সমর্থন করা কোন ছূতোতেই মানা যায় না।
হুমায়ুন বেচারা দেখি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিপক্ষের দুই পক্ষের কাছেই মার খাচ্ছেন। ওনার তূলনায় আমি নস্যি হলেও অন্তত এ ক্ষেত্রে মনে হয় মিল আছে :)) ।
সব ছোট- বড় সাহিত্যিকের্ই তো কোথায় না কোথায় কিছু না কিছু ভুল ভ্রান্তি থাকে বা থাকতেই পারে! কিংবা সেই সাহিত্যিককে নিয়েও বিভ্রান্তি অস্বাভাবিক কিছু না! সময়ের বিচার বিশ্লষণ্ই বলে দিবে হূমায়ুন আহমেদের অবস্থান কোথায়।
আর তাঁকে উপেক্ষা করলে অনেকেই করতে পারবে কিন্ত্ত স্বাধিনতা উত্তর বাংলা সাহিত্য থেকে তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। সাহিত্য বোদ্ধামহল যাই বলুক না কেন!
.
আদিল ভাই, “আমার ব্লোগে” দেখা যায় না কেন?
@আহমেদ সায়েম,
ব্যাক্তি বা লেখক হুমায়ুনের ভুল ভ্রান্তি অবশ্যই আছে। জগতে কেউই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। আমার এই লেখা কিন্তু সমগ্র হুমায়ুন সাহিত্য সমালোচনা না, খুবই নির্দিষ্ট একটি বিষয়।
তবে কেউ যা বলেনি তার নামে তা প্রচার করা মোটেও সমর্থনীয় নয়। মিথ্যাচার থেকে এটা ভিন্ন কিছু নয়।
ব্লগে বেশী সময় দেওয়া এখন অনেকটাই অর্থহীন মনে হয়, তাই আর বেশী দেখেন না।
@আদিল মাহমুদ,
কিছু একটা যে ঘটেছে তা অনুমান করা বোধ হয় মিথ্যে হবেনা। তা কি লেনিন রহমানকে নিয়ে তর্ক থেকে? তবে যে কোন কারণেই হউক, ব্লগে সময় দেয়া অর্থহীন বলাটা সমর্থন করিনা।
এখানে জিয়ে পাকিস্তান না পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলা নিয়ে তর্ক? দেয়াল নিয়ে তর্ক অনেক পড়েছি, বিভিন্ন পত্রিকায় ও ব্লগে। আপনি নিজেও জড়িত ছিলেন এক তর্কে, সেটা আমি দেখেছি কোন মন্তব্য করিনি।
এই অভিযোগ যারা এনেছেন তার কোন তথ্য-রেফারেন্স দেয়া যায়?
তিন ভিন্ন আইডিওলজির বা মতাদর্শের কমপক্ষে তিনটা ব্লগে যথেষ্ট সময় বিচরণ করেছেন, এরা বেশিরভাগ বাঙ্গালি, বাংলাদেশী এবং মুসলমান। তর্কের তথ্য-রেফারেন্স সংগ্রহের কারণে বিদেশী, অমুসলিম, অবাঙ্গালী ফোরামও নিশ্চয়ই কিছুটা দেখেছেন। আপনি কি মৌলবাদ আর পক্ষপাতদুষ্টতাকে এক করে ফেলেছেন?
@আকাশ মালিক,
রেফারেন্সঃ
বেশীদূর যাবার দরকার নেই। আমাদের মুক্তমনাতেও এসেছিল এটা, আমি দেখেছিলাম বেশ কিছুদিন পরে, তাই কিছু বলতে পারিনি। ব্লগ জগতে পুরনো লেখায় মন্তব্য করে বেশী লাভ হয় না বলেই কিছু বলিনি। এমন বহু যায়গাতেই পাওয়া যাবে।
http://blog.mukto-mona.com/?p=22491
মুশকিলে ফেললেন দেখি। পক্ষপাত আর মৌলবাদের পার্থক্য ঠিক কিভাবে করা যায় সেভাবে ভাবিনি।
তবে মনে হয় উদাহরন দিয়ে ব্যাখ্যার চেষ্টা করতে পারি।
বর্তমানের হট ইস্যু বুয়েট আন্দোলনের কথাই ধরি।
এ আন্দোলন খুবই দূর্বল যুক্তির ভিত্তিতে জামাতি ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। আওয়ামী সরকার, ছাত্রলীগ বা তাদের হালুয়া রুটির ভাগ পাওয়া কেউ এ কাজটি করলে মনে হয় সেটাকে পক্ষপাত বলা যেতে পারে। পক্ষপাত এদের ব্যাক্তিগত স্বার্থেই প্রয়োযন।
আর যাদের এসব রাজনীতি করায় কোন বস্তুগত লাভ ক্ষতির ব্যাপার নেই, স্রেফ দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য থেকে কিংবা আওয়ামী সরকার যুদ্ধপরাধীদের বিচার করছে বলে আওয়ামী সরকারের ও তাদের ঘরানার লোকজনের যাবতীয় কলংক মুছে দেওয়া কিংবা লঘু করা নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে নিয়ে ইচ্ছেকৃত ভাবে বেছে বেছে কেবল এক তরফা তথ্য প্রমানের চেষ্টা করেছেন তাদের মনে হয় মৌলবাদী বলাটা খুব ভুল হবে না। যারা জেনে শুনে নিজের ক্ষতি করে কোন আদর্শের নামে তাদের শুধু পক্ষপাতে দুষ্ট বলাটা মনে হয় যথেষ্ট না।
ব্লগে সময় দেওয়া সম্পর্কে যা বলেছি তা নিতান্তই ব্যাক্তিগত মতামত। একান্তই নিজের অনুভূতি। এক সময় মনে হত যে ব্লগে অন্তত দেশের সিকিভাগ মানুষকেও আনা গেলে খুব ভাল হত, এখন ধারনা অনেকটা উলটো। বেশী লোকে ব্লগে আসলে মনে হয় উলটো হানাহানি, ঘৃণা বিদ্বেষই ছড়াবে বেশী। আমার কথা ধরে কিছু বলে বসবেন না, আগেই বলেছি যে একান্তই নিজের অনুভূতি।
লেখা পড়লাম, ম্যাসেজ পেলাম। এইবার অপ্রাসঙ্গীক একটা মন্তব্য করি- আমি মুসল্মান হলে সম্ভবত আপনাকে আলামিন উপাধী দেওয়ার চেষ্টা করতাম। বিশ্লেষণে বসে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সেই সাথে নিরপেক্ষতা যে বজায় রাখা হচ্ছে এই ম্যাসেজও শ্রোতাদের সফলভাবে পাস করা-টা বেশ কঠিন একটি কাজ। এই কাজটি আপনি খুব ভালো পারেন। আপনার আরও বেশী বেশী লেখালেখি করা উচিত।
@আল্লাচালাইনা,
🙂
ভাগ্য ভাল আপনি মুসলমান না, তাহলে আলামিন উপাধি পাবার অপরাধে জানি আমার মাথার দাম কত উঠে যেত।
আমিও মানুষ, পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকা আমার পক্ষেও সম্ভব হয় না অনেক সময়ই। তবে দৃষ্টিকটূ রকমের পক্ষপাত এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করি। আর একেবারে ১৮০ ডিগ্রী বাঁক দেখলে কিছু বলতেই হয়। শ্রোতাদের মাঝে সফল ভাবে সেই ম্যাসেজ পাসের ফলাফল মনে হয় না অন্তত বাংলা ব্লগ জগতে তেমন শুভ ফল আনে। এর অনিবার্য পরিনতি হল সর্ব মহলেই নিন্দিত হওয়া।
এই অভিযোগগুলা আসলেই ছ্যাচড়ামী। আমি পড়ছি এই বইটা। কোথাও দেখি নাই এই অভিযোগের সত্যতা। বইটা ভালো লাগে নাই, কিন্তু এই অভিযোগের সত্যতাও পাই নাই। মুক্তিযুদ্ধরে একটা চোর পুলিশ খেলার মতন দেখানো হইছে, বেশ একটা মধ্যবিত্তসুলভ উত্তেজনার মতন। কিন্তু যেইটা না ঐটা বলা আসলে ব্যক্তিবিদ্বেষের মধ্যে পড়ে।
আমি সাইফুলের সাথে একমত।
এই মুহূর্তে তাঁর পিঠ পিছে কথা, তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা নাই বা আলোচনা হল। এমন করাটা কা-পুরুষের মত আচরণ হবে।আর যে যত জনপ্রিয় তাকে নিয়ে সমালচনা তত বেশী হবে। আমরা বাংলালিরা ইর্ষা পরায়ন জাতি।
হুমায়ুন আহমেদ এর উদ্যেশে- :candle:
@আফরোজা আলম,
হুমায়ুনকে জড়িয়ে জিয়ে পাকিস্তান’ বিভ্রান্তির মূল কারন আসলে ব্যাক্তিগত ইর্ষার সাধারন কারন নয়।
এসব হল এক মৌলবাদ ঠেকাতে আরেক ধরনের মৌলবাদী প্রতিক্রিয়া।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার সুন্দর প্রতিউত্তরের জন্য ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম,
আসলেই তাই। এক সময় আমার ধারনা ছিল যে মৌলবাদ কেবল উগ্র ধর্মীয় আদর্শ থেকেই জন্ম নেয়, বাংলা ব্লগের অভিজ্ঞতায় আমার সেই ধারনায় যে বিরাট ভুল ছিল তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।