বিজয়কেতন চাকমাই সম্ভবত এদেশের একমাত্র গজদন্ত-কারুশিল্পী। হাতির দাঁতের ওপর সুক্ষ নকশা আর কারুকাজে শৌখিন অলংকার বা ঘর সাজানোর শো-পিস তৈরির কাজ তাদের তিন পুরুষের পেশা।
প্রচণ্ড পড়ুয়া ও গভীর প্রজ্ঞার অধিকারী বর্ষিয়ান মানুষটির সঙ্গে পরিচয় সেই নয়ের দশকের শুরুতে অশান্ত পার্বত্য পরিস্থিতে, লোগাং গণহত্যার (১০ এপ্রিল, ১৯৯৬) কালে, খাগড়াছড়িতে।
পরে পেশাগত কাজে গত প্রায় দেড় দশকে একাধিকার বার রাঙামাটি গেলে প্রতিবারই তার জেলা সদরের বাসস্থান ‘কল্পতরু’তে একবার ঢুঁ মারা হয়েছে। চমৎকার গাছ-গাছালিতে ছাওয়া একতলা বাসাটির একাংশে তার কারুশিল্পের শো-রুম, অন্য অংশে কারখানা ও বাসস্থান। নিবিড় আলাপ-চারিতায় জেনে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে পাহাড়ের হাল-হকিকত। তার অমায়িক ব্যবহার, পাহাড় ও প্রকৃতির প্রতি তার অকপট ভালবাসা বা পার্বত্য রাজনীতি বিশ্লেষণ করার দুর্দান্ত ক্ষমতা — খুব সহজেই মুগ্ধ করে। এটি পার্বত্য বিষয়ক এই তথ্য সাংবাদিকের জন্য অতিব জরুরি বটে।
কল্পনা চাকমা অপহরণের (১২ জুন ১৯৯৬) কালে বিজয়কেতন দা রাঙামাটি আসন থেকে ‘প্রজাপতি’ মার্কায় স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করেছিলেন। সে সময় সেনা বাহিনীর ২৪ ডিভিশন পদাতিক কল্পনা চাকমা অপহরণটিকে সাবেক গেরিলা গ্রুপ ‘শান্তিবাহিনীর পরিকল্পিত প্রচার’ বলে দাবি করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতিতে সরাসরি বিজয়কেতন দার নাম উল্লেখ করা না হলেও সামরিক জান্তা ‘প্রজাপতি’ মার্কাটিকে শান্তিবাহিনীর মনোনীতি প্রার্থীর বলেই প্রচার করে। …
চরম সামরিক নিষ্পেষনের ভেতর দল-গোত্রহীন ভাবে নির্বাচনের বিপদ বিজয় দা হয়তো আগেই জানতেন। এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে, সে সময় তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করায় তিনি সামান্য হেসে বলেছিলেন, ওরা খুব বেশী হলে আর কী করতে পারবে? বড়োজোর ধরে নিয়ে চরম নির্যাতন করে মেরে ফেলবে; এর চেয়ে বেশী কিছু তো করতে পারবে না, তাই না?…
এরপর বিজয় দা’র সঙ্গে নিবিড় আলাপের সুযোগ কমে আসে। উনি পাহাড়ের বাইরে খুব প্রয়োজন ছাড়া যান না। পাহাড়েরই বিভিন্ন সামাজিক অনুস্ঠানে তার সঙ্গে কখনো কখনো দেখা হয়। চাকমাদের বিঝু উৎসবের হই হট্টোগোলের ভেতর প্রতিবার তার বাড়িতে একবার বেড়াতে যাওয়া হয়…কিন্তু অনেকদিন প্রাণ খুলে তার সঙ্গে আলাপচারিতা আর হয়ে উঠে না।
বেশকিছু দিন আগে তার সঙ্গে আবারো এক সন্ধ্যেয় আড্ডা জমেছিলো। অশান্ত রাজনীতির বাইরে কথা হয় তার গজদন্ত-কারুশিল্প নিয়ে। বিজয়কেতন দা’র কথা শিশুর মতো অবাক বিস্ময়ে শোনা হতে থাকে।
এখনো তিনি এই শেষ বয়সে ঘুমঘোরে ফিরে যান দূর অতীতে। স্পষ্ট যেনো সব স্লাইডের স্থির চিত্র হয়ে একের পর এক চোখের সামনে ভেসে আসে।…
উঁচু পাহাড় থেকে বন -জঙ্গল ভেঙে নামছে ম্যামথের মতো প্রমাণ আকৃতির বুনো হাতির পাল। তাদের তাণ্ডেব তটস্থ হয় পুরো পাহাড়। উজাড় হয় জুম চাষে সাজানো ফসলের বাগান। অথচ আদিবাসী মানুষ একে মেনে নেয় পাহাড়ি জীবনের স্বাভাবিকতা হিসেবে।
প্রজনন মৌসুমে হাতির পাল ভারী করার সুযোগ দেন তারা। বাকি সময় অরণ্যের গহিন পথে শিকারের খোঁজে ছোটেন দুর্ধর্ষ ম্রো কি বম আদিবাসী তরুণ। তার গাদা বন্দুকের নিশানায় কখনো বা ধরাশায়ী হয় দু – একটি দাঁতাল হাতি। তারপর পাহাড় জুড়ে কয়েকদিন ধরে চলে খাওয়া-দাওয়া, উৎসব। এ ভাবেই বয়ে চলে পাহাড়ি জীবন। পরম মমতায় প্রতিটি প্রাণ সত্বাকে টিকিয়ে রেখে পাহাড়ি মানুষ আবার সেগুলোকে আশ্রয় করেই বাঁচিয়ে রাখেন নিজেদের।
বিজয়কেতন দা’র স্বপ্নে আরো ধরা দেয়– শিকারী নামমাত্র দামে হাত দেড়েক লম্বা হাতির দাঁত বিক্রি করলেন ব্রিটিশ সাহেব কি ফরেস্টের বড় কর্তার কাছে। সেখান থেকে আদেশ পেয়ে লংগদুতে মাচাং ঘরের ইজরে বসে কাজে ডুব দেন তার দাদু কল্পতরু চাকমা। ক্ষুদে হাতুড়ি – বাটাল দিয়ে হাতির দাঁতের উপর আশ্চর্য – সুন্দর নকশা বোনেন তিনি।
কিন্তু এ সবই এখন ধূসর অতীত, শুধুই স্বপ্ন মাত্র। সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। সংঘাত বিক্ষুব্ধ পাহাড়ি বন এখন সবুজ মরুভূমি। দিন দিন সেখানে বাড়ছে চিরচেনা গাছ উজাড়ের সংখ্যা। বিপন্ন বনে এখন বিপন্ন বুনো হাতিও। এই নিদানকালে এখন বড়ই দুর্লভ বিশালাকায় সেই হাতির দাঁত। বিজয়কেতন দা’র তিন পুরুষের এই পেশা এখন তাই খাদের কিনারে।
বন উজাড়ের সঙ্গে হাতির অস্তিত্ব হারিয়ে যাক, কোনোমতেই এটি তার কাম্য নয়। তবু আছে চোরাই হাতি শিকারীর উৎপাত। প্রবীন এই গজদন্ত শিল্পী বলেন, বন থাকলে থাকবে বুনো হাতির প্রাচুর্য; আর নিজেদের পরিবেশে মাথা উঁচু করে বাঁচবেন অরণ্যচারী পাহাড়ি মানুষ। তাই কোনোভাবেই বিপন্ন হাতি শিকারের পক্ষে নন তিনি।
বিজয়কেতন দা বললেন, বাবা মোহনবাঁশি চাকমার কাছে আমি কাজ শিখি সেই ১৯৬২ সালে, ছাত্র অবস্থায়। তারপর কখনো বন্ধ করিনি কাজ। আর এখন হাতির দাঁত তো পাওয়াই যায় না। তারপরেও খবর দেওয়া আছে বন বিভাগকে। অপঘাতে বা দুর্ঘটনায় কোনো হাতি মারা গেলে তাদের কাছ থেকে নিলামে দাঁত কিনে নেই। অনেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া হাতির দাঁতও মাঝে-মধ্যে বিক্রি করেন। চোরাই শিকারীদের জব্দকৃত মালামালের ভেতর অনেক সময় হাতির দাঁতও পাওয়া যায়। বন বিভাগের কাছে থেকে সে সব গজদন্ত দরদাম করে কিনে নিতে হয়।
তিনি বলেন, হাতির আবাসের তথা খাদ্যের এখন বড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তার ওপর আছে, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন। সব মিলিয়ে বুদ্ধিমান এই প্রাণীটি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় পাড়ি জমাচ্ছে ভারত ও মায়নমারের গহিন অরণ্যে।
হাতির দাঁত দিয়ে মেয়েদের প্রায় সব ধরনের সৌখিন অলঙ্কার বানান তিনি। তার সংগ্রহে আছে কয়েক ধরনের চুলের কাঁটা, চিরুনী, আঙটি, গলার হার, কানের দুল। ছেলেদের জন্য আছে টাই পিন, কোট পিন, কাফলিঙ্ক, টোবাকো পাইপ, সিগারেট হোল্ডার–ইত্যাদি। এছাড়া আছে ছোটবড় নানান ধরনের শোপিস। পাওয়া যাবে হাত পাখা, বুদ্ধ মূর্তি, হাতির প্রতিকৃতি, পেপার নাইফ, ছোটো-বড় স্টিক, ফুল-লতা-পাতার নকশা।…গভীর ধৈর্য ও মমতা দিয়ে সৃষ্টি আশ্চর্য সুন্দর এইসব মূল্যবান কারুকর্ম। হাতির হাড় দিয়ে বানানো বেশ কিছু শৌখিন জিনিষ-পত্রও বানিয়েছেন তিনি।
তার শিল্পকর্মের দাম জানতে চাইলে বিজয়কেতন দা হেসে বলেন, দেখুন, এই সবের তো কোনো নির্দিষ্ট দাম হয় না; পুরোটাই সখের বিষয়। কোনো জিনিষের কতো দাম হবে, তা নির্ভর করছে কাজটির আকৃতি ও নকশার মাত্রার ওপর। ২০০ টাকা থেকে শুরু করে এক-দেড় লাখ টাকার জিনিষও পাবেন আমার কাছে।
এক থেকে দেড় লাখ টাকা! বিজয়কেতন দা আবারো অমায়িক হাসেন, ঠিক তাই, এর চেয়েও বেশী দাম হতে পারে। একটি আস্ত দাঁত খোদাই করে যদি সুক্ষ নকশা করি, তবে দাম হতে পারে দেড় লাখ টাকারও বেশী। এ কাজে লাগবে এক মাসেরও বেশী সময়।…
আপনিই তো এই শিল্পের শেষ কারিগর। এরপর? এমন প্রশ্নের জবাবে হতাশা ছড়ায় বিজয়কেতন দা’র কন্ঠে। ‘এর পর কি হবে জানি না। হাতির দাঁত না পেলে এই শিল্প টিকবে না।’ বলেন ৭০ বছর বয়স পেরুনো এই শিল্পী।
—
ছবি : বিজয়কেতন চাকমা, লেখক।
—
সংযুক্ত: ০১। লাইফ ইজ নট আওয়ার্স, সিএইচটি কমিশন রিপোর্ট।
০২। ফেবু গ্রুপ- পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice
বিপ্লব দা, পাহাড় ও আদিবাসিদের নিয়ে আপনার লেখা সত্যি প্রশ্নংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখ লাগে তাদের জন্য যারা আদিবাসিদের মানুষ হিসেবে গণ্য করেনা।
@ধুদুহাং চাঙমা,
আগামীতেও সঙ্গে থাকার বিনীত অনুরোধ। চলুক। (Y)
হাড়ের শিল্প নিয়ে বেশি জানা নেই, তবে হাতির বদলে অন্যান্য প্রাণী চলতে পারেনা? না হয় একটু অন্যরকম জোড়াতালি দিতে হলো…
রাজস্থানে গিয়ে দেখলাম, ওখানে উটের হাড়ের অনেক কিছু পাওয়া যায়… সে সব কিছু বেশি দামও নয়… উটের তো হাড় বেশ বড়ো… চলতে পারে?
লেখককে অনুরোধ, শিল্পী ব্যাপারটা ভেবে দেখেছেন কিনা জানাবেন… কারণ সুযোগ থাকলে কোন ধরণের শিল্প বা প্রাণীই একে অন্যের জন্য বিলুপ্ত হোক এটা কাম্য নয়…
@সুনন্দ পাত্র,
আমার মনে হয়, হাতি সব সময়ই খুব মূল্যবান প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, আভিজাত্যের প্রতীক তো বটেই, যেমন বাংলা প্রবচনে বলা হচ্ছে, হাতি মরলেও লাখ টাকা। এই বিচারে হাতির দাঁতের শিল্পটি সারা বিশ্বেই আলাদা দকর পেয়েছে; এই কদর বোধহয় অন্যপ্রাণীর হাড়ের ওপর করা কারুকর্য পাবে না। মূল শিল্পটি হাতির দাঁতেরই; হাড়ের নয় কিন্তু। তবে একথা স্বীকার্য এ জন্য বন ও বন্যপ্রাণীকে দিতে হয়েছে অশেষ মূল্য। …
এছাড়া বাংলাদেশে তো উটের চলই নেই; এরপরেও শুধু শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে অন্যপ্রাণীর হাড়ের ওপর কারুকার্যের ধারণাটি বেশ।
আপনার আগ্রহকে স্বাগত জানাই। ফেবুর সূত্রে লেখাটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
বাংলাদেশে, হাতির দাঁতের তৈরি নানারকম জিনিস পাওয়া যায়, সেই বাংলা ভাগের অনেক আগে থেকেই ।
এপার বাংলার মুর্শিদাবাদে কিছু হাতির দাঁতের তৈরি নানারকম জিনিসের করিগর ছিলেন/ আছেন, যাঁদের পদবী হল:- ভাস্কর ।
ভারতের ওডিশাতেও পাওয়া যেত এই রকম কারিগর ( মহারণা) । এঁরা এখন মোষের সিঙের নানা জিনিস তৈরি করেন । সেগুলোও দৃষ্টিনন্দন এবং সংগ্রহ করার মত ।
আমি যতদূর জানি, আগে, এইসব হাতির দাঁত আসত, মূলত মরা হাতি থেকে ( কোনো প্রমাণ দিতে অপারগ)।
ওডিশার গজপতি জেলাতে এক জনজাতি আছেন, তাঁদের বলা হয় – সৌরা । এঁরাও খুব দক্ষ , এইসব কাজের জন্য। ভারতের এককালের মন্ত্রী গিরিধারী গোমাঙ্গো, এই সৌরা জনজাতির এবং রাজার বংশ। ইনি আমার সহপাঠী ছিলেন।
হাতি মারা এখন ভারতে বেআইনি ! তাই ভাস্কররা রূপোতে তৈরি নানারকম জিনিস বানান এখন ।
সুনন্দ, যেটা বলেছে, সেটাকে আমি সমর্থন করি। তবে মোষের শিঙও খুব ভালো কাঁচামাল ।
যাই হোক, বিপ্লবের একটা ঐকান্তিক চেষ্টা থাকে জনজাতিদের বিভিন্ন পেশার কথা তুলে ধরার ।
এই সুন্দর লেখাটি তার প্রমাণ । (Y)
http://en.wikipedia.org/wiki/Sora_people
@ঘনাদা,
গুরুচণ্ডালি এবং অপার বাংলা নামক ফেবু গ্রুপের সূত্র ধরে মুক্তমনার ব্লগ পোস্টে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনারা গজদন্ত শিল্পের বাইরে যে বিকল্প কারুশিল্পের কথা বলছেন, তা সত্যিই ভেবে দেখার মতো। বিজয়কেতন দা’র সঙ্গে অবশ্যই এ নিয়ে আলাপচারিতার আশা রাখি। (Y)
[img]http://asianwindow.files.wordpress.com/2008/06/sora_tribe.jpg[/img]
পুনশ্চ: ইউকি’র সূত্রে প্রায় অজানা জনজাতি ‘ সৌরা’র কথা জানতে পেরেও ভালো লাগছে। গুগল করে কয়েকটা ছবিও পেলাম। শাবাশ ঘনাদা। 🙂
আপনার লেখায় খুব করে পরিবেশের বিপর্যয় চলে আসে, চলে আসে বাঁচাবার কথা। কারো চোখে পড়ে, কারো না। কী আর করা? আমরা অন্ধ বলেই, খুব সহজ হয়ে যাচ্ছে বিনাশের সব আয়জন।
ধৃতরাষ্ট্রের জমানায় আমাদের বাস, দেখুন হস্তিনাপুর রক্ষার ব্রতে ব্রতী ভীষ্মের দেখা মেলে কি-না?
@স্বপন মাঝি,
খুব ভালো বলেছেন। আবারো সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। (Y)
হাতিকে বাঁচাতে কত প্রচেষ্টা, যেন সামান্য দাঁতের জন্য তাকে হত্যা করা না হয়। হাতি এবং অন্যান্য প্রাণীদের থাকার জায়গা বাঁচানোর প্রচেষ্টা কতটুকু? বেশ লাগে ক্ষমতাসীন দের দাপট। প্রাণী উজাড়, বন উজাড়, মানুষ (পাহাড়বাসী) উজাড়। (আদিবাসী বলিনি খারিজ হবার ভয়ে)।
হাতি প্রেমীদের প্রেম যেন শুধু হাতির অস্তিত্বে সিমীত না হয়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতি আর মানুষের মাঝে। আমরা ভুলে যেন না যাই পৃথিবীর সব কিছুই একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত।
@ছিন্ন পাতা,
চমৎকার বলেছেন। তবে আদিবাসী নিয়ে বিতর্ক থাকলেও খারিজ হওয়ার কিছু নেই; উগ্র জাত্যাভিমানের অংহবোধের বাইরে বিষয়টি মানবিক বটে। (খুব খেয়াল করে)
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
বিপ্লব রহমানের লেখা কখনও মিস করিনা। এ লেখাটি কিভাবে চোখ এড়িয়ে গেল বুঝতে পারিনি। তার হাত দিয়ে বেরুনো যেকোনো লেখাই আমার প্রিয়। ছাত্রাবস্থায় রাঙামাটি যদিও গিয়েছিলাম কিন্তু পাহাড়ের অত কথা কিছুই জানতাম না। এমনকি পাহাড়িদেরকেও দেখতাম স্যাটেলারদের চোখ দিয়ে, তার লেখার মাধ্যমেই জানলাম পাহাড়ের আসল চিত্র।
ধন্যবাদ বিপ্লব রহমান, পাহাড়িদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
@হেলাল,
[img]https://fbcdn-sphotos-a.akamaihd.net/hphotos-ak-ash2/76614_460617923164_6345984_n.jpg[/img]
এ জন্য আসলে পর্যটন-মনকে দোষ দেওয়া যায় না; বহু বছর ধরে পাঠ্য পুস্তক, টেলিভিশন-রেডিও-সিনেমা-নাটকসহ পত্র-পত্রিকায় পাহাড় ও পাহাড়ি মানুষদের সম্পর্কে বৈরি ধারণা প্রচার করে আসছে– এই প্রচারণাটির মাত্রাটি খুবই শক্তিশালী। এমনকি খোদ সরকার বাহাদুর গং এর তরফ থেকেই তো কিছুদিন আগে বলা হয়েছে, “এদেশে কোনো আদিবাসী নেই বা বাঙালিরাই এদেশের আদিবাসী বা উপজাতিরা সকলেই বহিরাগত”– ইত্যাদি।…
কিছুদিন আগে আমাদের একজন বাঙালি বন্ধুরও রাঙামাটির কাপ্তাই লেক দেখে ভুল ধারণা ভেঙেছে পাহাড় সম্পর্কে। আর পরে তিনি আমাদের ছোট্ট ব্লগ সাইট আদিবাসী বাংলা ব্লগে লিখেছিলেন এই লেখাটি : পাহাড়ের কান্না এবং একজন সমতলের মানুষের আত্মকথন
আপনার আগ্রহকে স্বাগত জানাই। আগামী দিনেও সঙ্গে থাকার বিনীত অনুরোধ। (Y)
চমৎকার লেখা বিপ্লব দা। পাহাড়ের কান্না আর পাহাড়িদের সুখ-দুঃখের কাহিনি জানতে হলে আপনিই একমাত্র ভরসা। কেউ মন্তব্য না করলেও লিখে যান। মন্তব্যের পরিমান দিয়ে লেখার ওজন মাপা যায় না।
শব্দটা কি নব্বই হবে?
@আকাশ মালিক,
এভাবে কেনো লজ্জা দিচ্ছেন ভ্রাতা? পাহাড় বা আদিবাসী বিষয়ক লেখালেখি আসলে দেখা থেকে লেখায় জনমত তৈরির ছোট্ট প্রয়াস মাত্র। এর পেছনে মানবিক তাড়না নেই, তাইই বা বলি কী করে? কারণ, আমরা বরাবরই বিশ্বাস করি:
প্রথমত: এই যে আমরা অনলাইনে আদিবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় লেখালেখি করছি, এটি হচ্ছে চেতনার সংগ্রাম। এটি খুব সামান্য বিষয় নয়; কারণ আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তমনার সেই শ্লোগানে– যুক্তি আনে চেতনা, চেতনা আনে সমাজ পরিবর্তন।…এই চেতনার সংগ্রামটি দীর্ঘতর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চালানোর প্রয়োজন পড়ে; আদিবাসীর মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রামটি অব্যহত রাখতে হয়। …
দ্বিতীয়ত: তবে আদিবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মূল সংগ্রামটি অফলাইনের। রাজপথের এই সংগ্রামটিও দীর্ঘতর…দশকের পর দশক, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সংগ্রামটি অব্যহত রাখার প্রয়োজন পড়ে; একেকটি বিজয় অর্জনের পর আরো বিজয় সংগ্রামটিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রেরণা যোগায়…ব্যর্থতাও এখানে সাফল্যের চাবিকাঠি।
তৃতীয়ত: সিধু-কানহু, বিরসা মুন্ডা, এমএন লারমা, আলফ্রেড সরেন, পিরেন স্নাল, চলেশ রিছিলের রক্তে রাঙা পথই আদিবাসীর মুক্তির পথ। সংগ্রামী এ পথেই আদিবাসীর মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সংগ্রামটি মূলত আদিবাসীরই, সংগ্রামের নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রক থাকবেন তারাই। …তবে ইতিহাস সাক্ষী, আদিবাসীর একক সংগ্রামে তার মুক্তি নেই। এ জন্য প্রগতিমনা অ-আদিবাসীদেরও তার পাশে থাকা চাই।…
আগামীদের সেই অনলাইন/অফলাইনের সংগ্রামে আপনাকেও আমরা সঙ্গে চাই। (Y)
—
যতদূর জানি, নব্বইয়ের দশক বা নয়ের দশক দুটিই সঠিক। তবে শেষোক্তটি আধুনিক রীতি, প্রথমটি প্রাচীণরীতি হলেও বহুল প্রচলিত।
হাতির দাঁত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিপুল সংখ্যক হাতীদের হত্যা করা হয় এবং একারনে হাতীদের নিশ্চিত বিলুপ্তি থেকে রক্ষার জন্য হাতীর দাঁতের বানিজ্যের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা (Convention on International Trade in Endangered Species ) বলবৎ আছে। শিল্পীর উপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, হাতির দাঁতের আর নতুন কারিগরের কোন প্রয়োজন নেই।
@সংশপ্তক,
এ ক ম ত। গজদন্ত কারুশিল্পের প্রায় বিলুপ্তিই বলে দিচ্ছে, পাহাড়ে এক সময় বন ও বন্যপ্রাণীর প্রাচুর্যতা। তবে সবই এখন ধূসর অতীত; পাহাড়গুলো এখন ন্যাড়া বললেই চলে…সবুজ মরুভূমি। (U)
এত চমৎকার একতা লেখা, কিন্তু কোন মন্তব্য নেই?
অনেক ধন্যবাদ বিপ্লব, এ ধরণের ইস্যু নিয়ে ক্রমাগতভাবে লিখে যাবার জন্য।
@অভি দা,
আপনার ছোট ছোট মন্তব্য বরাবরই আমার জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা। অনেক শুভেচ্ছা। (F)