১. মাঝে মাঝে এমন মূর্তির মত স্থিরতায় কেটে যায় আমার দিন… মনে হয়, আমি বুঝি এই পৃথিবীর হিসেবের খাতায় আর নেই। একদিন এক প্রচন্ড ব্যস্ত সময়ে মনের কোণে কবিতার একটি লাইন গুনগুনিয়ে উঠল…
“জীবনের সাথে সম্পর্কহীন
একটি জীবন করে যাচ্ছে জীবনযাপন!”
চমকে উঠলাম… একি! মনটা তেতো হয়ে গেলো। কবিতার পরের লাইনগুলো আর বের হয়নি। দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে নিঃশ্বাস নেবার যে যন্ত্রণা, যে একাকীত্ব – তা বলে বোঝাবার নয়। একটা যান্ত্রিক মানুষের বেঁচে থাকা- বুকভরা নিঃসঙ্গতা।
২. বেঁচে ছিলাম কি আমি আমার দেশের মাটিতেও? পালিয়েই তো এসেছি আমি জীবন বাঁচাতে… বাংলাদেশের সমাজ এখনও আমার মত স্বাধীনচেতা, স্বপ্নবাজ তরুণ হৃদয়কে ধারণ করার যোগ্য হয়নি। সেখানে মেয়েরা জন্মে হাঁটতে শুরু করে যখন, তখনই মেয়েদের মায়েরা লাল টুকুটুকে শাড়ি পড়িয়ে দেখে মেয়েটা বড় হয়ে বৌ সাজলে কেমন দেখাবে? কন্যাশিশুটিও তার পুতুলের গায়ে লাল কাপড় জড়িয়ে পুতুলের বিয়ে দিয়ে দেয়। পুতুল খেলার বয়স পেরুলে সত্যি সত্যি মেয়েটিকে পুতুলের মত করে লাল শাড়িতে পেঁচিয়ে গা ভর্তি সোনাদানায় জড়িয়ে পাঠিয়ে দেয় আরেক ঘরে… নারীপাঁচার।
৩. বাংলার সমাজে আজকাল শারিরীক নিযার্তনটা বোধ করি কমেছে। কিন্তু কমেনি মানসিক নির্যাতনটা। কিশোরী বা তরুণী যাই বলিনা কেন, বিবাহিত অবিবাহিত নির্বিশেষে মানসিক নির্যাতনের শিকার। সমাজের চোখে সেটা মোটেও কোন অপরাধ নয়, আইনের চোখে তো প্রশ্নই ওঠে না। মানসিক যন্ত্রণাটা যে চোখে দেখা যায় না।
৪. আমার মা বলেছিল, বিএসসির পরে আর কি পড়ালেখা বাকি থাকে? আস্ত একটা অশিক্ষিত সমাজের চিন্তার দৌড়, মানসিক দৈন্যতা পরিষ্কার হয়ে যায় এই একটি কথায়। ছেলেকে বিএসসি অব্দি পড়ানোর উদ্দেশ্য চাকরী করার যোগ্য করে তোলা, আর মেয়েকে বিয়ের বাজারে মূল্যবান করে তোলা। অশিক্ষিত সমাজটার কাছে শিক্ষা মানে বিক্রয় হবার সার্টিফিকেট অর্জন। হয় পূঁজিপতির কাছে নয় পু্রুষের কাছে।
৫. কোরিয়ার মানুষগুলো জীবন যাপন করে, জীবন নামের বোঝা বহন করে না। খালি চোখে প্রত্যেকটা মানুষকে দেখলে এটাই মনে হয়। তবুও কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদে এইখানে নারীদের দেখিনি আমি। কেন? গোটা মানব সমাজই কি একটি নষ্ট এক্স ক্রোমোজম বহন করছে?
৬. আমার বাবার মত মানুষেরা তবে এলো কি করে? যারা স্বপ্ন দেখেতে শেখায়, যারা ভালোবেসে ভালোবাসতে শেখায়, যারা কন্যাকে বিপ্লবী হতে শেখায়, এরা এলো কি করে নষ্ট সমাজে? আমার বাবার মত মানুষেরা কি তবে মানবসমাজের ঘুনে ধরা এক্স ক্রোমজোমে রেয়ার মিউটেশনের ফলাফল?
৭. এখন আমি স্বাধীন। এখন আমি মামদো ভূতের মত কাঁধে চেপে বসে থাকা সমাজটাকে ছুড়ে ফেলতে শিখেছি। এখন আমি মানুষের জীবন যাপন করি।
৮. এখানে আসার পর কদিনের জন্য জীবনের স্বাদ পেয়েছিলাম। কোরিয়াতে তখন আমার অনেকবন্ধু ছিল। একটি সেমিস্টার শেষ হতে না হতেই… মানুষগুলো হারিয়ে গেলো, চলে গেলো অন্য ভূ-খন্ডে, থেমে গেলো আমার জীবনের উৎসবটাও। এ ভূ-খন্ড আমার নয়।
৯. এখন আমি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।
ছোট্র লেখাটি অসম্ভব সুন্দর কিছু বিষয় তুলে ধরেছে, সমাজের কিছু দগদগে ঘা যা পোশাকের আড়ালে লুকানো রয়েছে, তাকে উন্মোচিত করেছে দারুণ সার্থকতার সাথে!
আসলেই খুব করে ভেবে দেখলে বোঝা যায়, উদ্দেশ্যে তফাত থাকলেও অন্তত প্রক্রিয়াটিতে সাদৃশ্য রয়েছে!
খুব ভাল জিনিস ধরেছেন! নারী উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে এ বিষয়টি অনেকেই বিস্মৃত হয়! সত্যি বলতে কি, মন-মানসিকতার দিক থেকে আমাদের খুব বেশী অগ্রগতি হয়নি!
শেষের লাইনটি আপনার এই লেখার সেরা লাইন আমার কাছে! ভেবে দেখলে উপলব্ধি করা যায়, আপনার কথায় বিন্দুমাত্র ভুল নেই! চাকরিতে ঢোকার পর আমার টেবিলে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের একটি বই দেখে এক পরিচিতজন বলেছিল, এখন আর এইসব পইড়া কি হইব?
প্রশ্নটা আমারও! মনে হয়, অভিজিৎদা আর বন্যাপাই সবচেয়ে ভাল উত্তর দিতে পারবে?
@কাজি মামুন, ধন্যবাদ আপনাকে। আমি সেদিন শান্তি পাবো যেদিন এই চিত্রটা বদলাবে। 🙂
নীল রোদ্দুর,
বাংলাদেশের মেয়েরা এখন কিন্তু নৈবাহিনী, আর্মি, পাইলটের মত চ্যালেঞ্জিং পেশাতেও দক্ষতা রাখছে ।দূর থেকে হয়ত আপাতঃ অসম্ভব মনে হয়। সাহস নিয়ে শুরু করলে তা আর অসম্ভব থাকেনা।
সেদিন গিয়েছিলাম এভারেষ্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদারের বাসায়, তার মায়ের ভাষায় ও ছিল খুব লাজুক, ঘরকুনো মেয়ে, মাত্র কয়েক বছরের সাধনায় একেবারে এভারেষ্টের চূড়ায়!
ড্রইং রুমটা ফুলে, ক্রেষ্টে, আর্টে ভরে গেছে, দেখে গর্ব হল, আমিও একজন মেয়ে।
দেশে ফিরলাম পঁচিশ বছর পর, ব্যালকনে বসে চোখভরে, মনভরে তুমুল বৃষ্টি দেখলাম, বৃষ্টিতে হাত ভেজালাম। হল্যান্ডের বৃষ্টিরও সৌন্দর্্য আছে, কিন্তু তাতে এই বাঙালি মনটা ভরেনা!
পৃথিবীর যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন, চিনে নিন সঠিক পথ!
@লাইজু নাহার, আপু, কোনদিন আবারো নিশাত আপুর সাথে দেখা হলে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে দেবেন প্লিজ। বলবেন শহীদ আনোয়ার স্কুলের একজন ছোট বোন তার অভিনন্দন জানিয়েছে উনাকে। নিশাত আপু হচ্ছে সেই ধরণের মানুষ, যাদের কষ্ট সাধণায় পাহাড় ডিঙ্গানো উন্মোচন করে ভবিষ্যতের মেয়েদের সহজ সাবলীল ভাবে চলার পথ। (F)
একজন স্বাধীনচেতা মানুষের মনের প্রতিফলন পেলাম। আর স্বাধীন হলে তো নিজের নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে কিছুটা বিচ্ছিন্ন থাকতেই হয়!!
@গীতা দাস, 🙂
এরা ছিলো আছে থাকবে; হাইপেশিয়া,
দুজনাই পোড়ে নক্ষত্রপানে চেয়ে চেয়ে;
পুড়ে পুড়ে আরো খাঁটি হয়,
সোনা নয়; অদ্ভূত হীরের বাজারে।
কিছুই হারায় না
রুপান্ত্ররের কুয়াশা মাত্র,
এখনই সময় ভাবনার;
অপ্রত্যাশিত হঠাৎ বিরতিতে।
(F)
@কাজী রহমান,
কি সুন্দর মন্তব্য! 🙂 (F)
নীল রদ্দুর, লেখাটা পড়ার পর থেকেই মন্তব্যটা করবো কীনা বুঝতে পারছিলাম না। যে কথাগুলো বলেছো তার বেশীরভাগই ঠিক, কিন্তু তারপরও তোমাদের এতটা হতাশার কারণ আছে কিনা সেটাই বুঝতে পারছি না। তোমার লেখার বিষয়বস্তুর সাথে একমত হলেও মূল সুরের সাথে একমত হতে পারছি না। মনে হচ্ছে তুমি রাগ, হতাশা, একাকীত্ব সব মিলিয়ে একটা দম বন্ধ করা অবস্থায় এসে পৌঁছেছ। উপদেশ দিতে চাই না তোমাকে, তবে ব্যাপারগুলো উলটো আরেক এ্যঙ্গেল থেকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করতে চাই। অনেক সময় চরম হতাশার ফলশ্রুতিতে একটা পরিস্থিতির ভালো দিকগুলো খুঁটিয়ে দেখতে ভুলে যাই আমরা, ‘খারাপগুলো’ই আমাদের ক্রমাগতভাবে গ্রাস করতে থাকে। মানছি যে, দেশে তোমার মায়ের মত মানুষই বেশী, কিন্তু তোমার বাবার মত মানুষেরাও কিন্তু দুর্লভ নয়। আমিও তো দেশেই বড় হয়েছি, আমার বাবা মা কোনদিনও আমাদের (আমরা তিন বোন) বিয়ের কথা বলে বড় করেন নি, স্বাধীন একজন মানুষ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার কথাই শুনেছি সব সময়, এমনকি নিজের থেকে বিয়ে করতে না চাওয়া পর্যন্ত বিয়ের কথাও তোলেননি কখনও। সংখ্যাটা হয়তো অনেক কম কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় যে দেশে কেউ এভাবে ভাবতে পারে না।
তুমি তো এখন স্বাধীন, শিক্ষিত, শক্ত একজন মানুষ, এটা কি কখনও ভেবে দেখেছো যে তুমি যে সুযোগগুলো পেয়েছো সেগুলো এখনো দেশের বেশীরভাগ ছেলেও কল্পনা করতে পারেনা। এই মুক্তমনাতেই বেশ কয়েকজন ছেলেকে আমি চিনি যারা দেশে দমবন্ধ করা এক অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে, অনেক চেষ্টা করেও দেশের বাইরে গিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগটা তৈরি করে নিতে পারছে না। আর দেশের বাইরে থাকার একাকীত্বের ব্যাপারটা বুঝি, দেশকে মিস করার বিষয়টাও বুঝি, কিন্তু এভাবে কি কখনো ভেবে দেখেছো, এই যে তুমি একটা নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি দেখার সুযোগ পাচ্ছও সেটাই বা কম কিসে। এখানে তো আর সারা জীবন থাকবে না, জীবনের প্রতিটা অভিজ্ঞতাই তো ইন্টেরস্টিং হতে পারে, অমূল্য হতে পারে, বিশেষ করে সেটার পিছনে যদি নিজের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে থাকে । নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশে নতুন নতুন চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারার আনন্দটুকু থেকেই বা বঞ্চিত করবে কেন নিজেকে? বন্ধু মানেইতো আর বাংলাদেশী নয়। আর পড়ালেখা শেষ করে দেশে গিয়ে স্বাধীনভাবে যদি চাকরি কর তখন কতটুকু জোড়ই বা করতে পারবে বাবা মা বা সমাজ তোমার উপর? হ্যা, একটা মেয়ের জন্য বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে চলাটা হয়তো উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশী কঠিন, কিন্তু অসম্ভব তো নয়। আর কোন কিছু অর্জন করতে যখন যুদ্ধ করতে হয় এবং সেই যুদ্ধে জিতে ফিরে আসা যায় সেটার সন্তুষ্টিও তো কম নয়। দেশে ফিরে গিয়ে কত কিছুই তো করাও সম্ভব তোমার পক্ষে আর দেশে না গিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার অপশনটাও তো খোলা আছে তোমার হাতে। অন্যান্য অনেকের মত এমন তো হতে পারতো যে তোমার হাত পা এক্কেবারেই বাঁধা কোন অপশনই খোলা নেই, তার থেকে এখন কতখানি ভালো অবস্থায় আছো সেটা কি ভেবে দেখেছো কখনো? এটাও কি ভেবে দেখেছো মেয়েরা এই পৃথিবীতে মাত্র কয়েক দশকে কোথা থেকে কোথায় এসে পৌঁছেছে? বিংশ শতাব্দীর প্রথমে বা এমনকি মাঝামাঝি সময়ে জন্মালেই আমাদের অবস্থাটা কীরকম হতে পারতো? এখনো অনেকটা পথ বাকি কিন্তু পিছন ফিরে পেরিয়ে আসা পথগুলোর কথা ভাববো না কেন আমরা, আর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণাটুকুই বা তৈরি করে নিব না কেন নিজেরাই।
@বন্যা আহমেদ,
আপু, আমি হয়তো একজন ব্যক্তি হিসেবে উৎরে গেছি, আমি বাংলাদেশের ভেতরের দম বন্ধ করা পরিবেশ থেকে বের হয়ে এসেছি, কিন্তু আমার অস্তিত্বের সাথে যে সংস্কৃতি, যে রাষ্ট্র, যে সমাজ, তাতো ঠিক আগেকার অবস্থানেই থমকে দাঁড়িয়ে আছে। আমার মত অজস্র ছেলে মেয়ে আছে, যারা ঐ দম বন্ধ করা অবস্থাতেই ডানা ঝাপটাতে চেষ্টা করছে, আর সেই অজস্র ছেলেমেয়েদের মধ্যে একজন আমার অতি আদরের ছোট বোনটিও। এসব চিন্তা তো আমাকে ছেড়ে যায় না।
আমি জানি, আমি যেখানে নিজেকে নিয়ে আসতে পেরেছি, সেখান থেকে আমার জন্য সব দুয়ারই খোলা, যেদিকে ইচ্ছা, সেইদিকেই আমি যেতে পারি, আমি এখন যতটা ভালো আছি, এইতুকু ভালো থাকা একটা সময় আমার স্বপ্ন ছিল, এখন আর সেটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব। কিন্তু আমার জীবন কেবলই আমার হলেও মনের আর সব বন্ধন থেকে তো মুক্তি আমার মেলেনি, ফিজিক্যালি দূরে আছি, মন তো পরে আছে আমার এতোদিনের বেড়ে ওঠার জায়গাতেই, সেই মানুষগুলোর মাঝেই।
হ্যা আপু, আমার প্রচন্ড রাগ আমাদের সমাজটার উপর, যেখানে একজন মানুষকে মানুষের মত বাঁচার জন্য লড়তে হয়। আমি সেই অবস্থাগুলো পার করে এসেছি বলেই জানি, যারা পার করবে, তাদের কিভাবে পার করতে হবে, অথবা আমি ফিরে গেলেও কোন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। যেই বয়সটাই আমাদের কর্মে, সৃষ্টিতে পৃথিবীটা রিঙ্গিন করে তোলার কথা ছিল, সেই সময়টা আমরা পার করি পথের বাধ ঠেলতে ঠেলতেই। এই হতাশা থেকে উত্তোরণের পথটা কোথায়…? নিজের দেশ ছেড়ে বাইরে এলে অনুভব করি, আমি এখানে ভিনদেশী, এইখানকার সমাজ, সংস্কৃতি কোন কিছুতেই আমি আপন বোধটা পাইনা।
হুম, ভিন্নদেশের বন্ধুদের সাথে মিশি, কথা বলি, তাদের কথা জানি, অভিজ্ঞতার আনন্দটুকু আছে। বুকের ভিতরে ব্যথাও আছে, আমি যদি আমার শিকড়, আমার আমার স্বজন সবাইকে ভুলে যেতে পারতাম তাহলে হয়ত আমি পারতাম বর্তমানের সুখে সুখী হতে। আমি জানি আপু, একটু বেশীই আবেগী আমি।
আমার বান্ধবীর বান্ধবী- শিকার হয়েছিল অনার কিলিং এর। আমি কোনদিন দেখিনি তাকে। কিন্তু তারপরও তার মৃত্যুর খবর শুনে একটা মানসিক আঘাত পেয়েছিলাম। সেইদিন বুঝেছিলাম… কতটা ভয়াবহ হতে পারে জীবন। একজন জুঁই এর কাটা হাতের কথা, তার সংরামের কথা পত্রিকায় আসে, হাজার জুঁই এর কথা ধামাচাপা পড়ে যায়।
আমরা বাঙ্গালীরা অনুপ্রাণিত হই, অর্ধেক জীবনকে ভুলে গিয়ে।
চমৎকার একটা গদ্য কবিতার মত ছন্দময় লাগলো। সহজসরল ভাবনাগুলোও ভাণ-ভণিতাবিহীন স্ফটিকস্বচ্ছ।
আপনাকে চুপিচুপি একটা কথা বলে যাই। নারীবাদীরা শুনলে তেড়ে মারতে আসবে। আমার পুরুষবাদী ভাবনার সাথে আপনার ভাবনার অনেক মিল। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
ধর ধর (@) …মার মার… :guli: :guli: :guli: :ban: (&) 😀
@টেকি সাফি,
নাচন-কুদন করা নাখোশ এবং নাবুঝ নষ্টমতি নারীবাদী নারী দেখেছি, নারীর দুঃখে মেকি কাতর হয়ে নাকিকান্না করা নারীবাদী নাতোয়ান নোকও দেখেছি, কিন্তু নারীস্বভাসুলভা নারীবাদী নাশী নাবালক এই প্রথম নজরে এলো। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
;-(
@ফরিদ আহমেদ,
এইজন্যই বুঝি… নারীবাদী পুরুষবাদী সবাই আমার কথা শুনলে ক্ষেপে যায় … 😀
সমাজ, পরিবার, ব্যক্তি, মূল্যবোধ– সব, সবকিছু রাতারাতি ভেঙে পড়ে, ভেঙে পড়ছে… এমনই ভাঙনের মহামারির কালে একাকীত্ব নামক পাষাণ দানব একদম নিঃস্ব করে আমাদের অচীন দ্বীপে নির্বাসিত করবে… সেখানে আমরা আমৃত্যূ যেনো হাতড়ে ফিরবো ঘোর অন্ধকার– এইই যেনো শেষ অনিবার্যতা।…
লেখার মানবিক দিকগুলো খুব হৃদয়স্পর্শী। নীল রোদ্দুরকে ধন্যবাদ এমন চমৎকার লেখার জন্য।
তবে বিনীত অনুরোধ, উদ্ধৃত অংশটুকু সংশোধন করে দেওয়ার। মানসিক/বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের অসয়াত্বর নিয়ে তুলনা একদম উচিৎ নয়। তবে সমাজ জীবনে চিন্তার প্রতিবন্ধকতা আছে বৈকি।
চলুক। (Y)
@বিপ্লব রহমান, ঠিক করে দিয়েছি। যদিও আমি মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব বলতে তাদেরকে বুঝিয়েছিলাম, যাদের সমস্ত রকম সামর্থ্য থাকা সত্বেও বিকশিত হতে পারে না, আমার কাছে গোটা সমাজটারই এই দশা মনে হয়েছে, একটা বৃত্তে আটকে পড়ে আছে, কুয়োর বাইরে যে একটা পৃথিবী আছে, জানেই না।
যাদের শারিরীক বা মানসিক সীমাবদ্ধতা আছে, তারা তো অবিকশিত নয়। তাদের যেটুকু সামর্থ্য আছে, সেটুকু নিয়েই তারা বিকশিত।
ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
আপনার বক্তব্য নিয়ে আপত্তি নেই; আপত্তি শুধু শব্দ চয়নে।
সংশোধনীর জন্য ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
এক চরম শূণ্যতার করুণ চিত্র ভেসে উঠেছে আপনার লেখা জুড়ে। স্বদেশ মৃত্তিকার টান, এতো নাড়ীর টান। একে ছিন্ন করা সম্ভব নয়। উচ্চ শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, কাঠ মোল্লা, এমন কি বোরকা পরিহিতা মানুষও একবার পশ্চিমা দেশে পা ফেললে বাধ্য না হলে ফিরতে চায় না নিজ দেশে। অর্থনৈতিক ছাড়াও এর অন্যতম কারণ যে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা! দেশে টিকতে না পেরে যে হারে দেশের মুক্তচিন্তার ধারকরা, মানবতাবাদীরা আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া সহ ইত্যাদি দেশে বাধ্য হয়ে পাড়ি জমাচ্ছে তা রীতিমত এক রাষ্ট্রিয় সমস্যা। দেশে তৈরী হচ্ছে সামাজিক ক্ষত, সুচিন্তাধারার অগ্রগতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষে সাম্যের চেতনা হারিয়ে গিয়ে লালন ও প্রচার করা হচ্ছে উগ্র চিন্তা চেতনা। এতে দেশের সামাজিক বন্ধন ও উন্নতি বিলুপ্ত হচ্ছে। সামাজিক উন্নতি ছাড়া রাষ্ট্রীয় উন্নতির চিন্তা- গুলি ছাড়া বন্দুকের মত।
লেখা ভালো লাগল। (F)
@রাজেশ তালুকদার,
গত চল্লিশ বছরে আমাদের সামাজিক চিত্র দেখলে মনে হয় আমাদের আসলে কোন সমাজ নেই, আছে জেলখানা। আমাদের দেশে দূর্নীতি আছে, দারিদ্র আছে, দূর্যোগ আছে, কিন্তু এগুলোর চেয়ে বড় সমস্যা আমাদের মানসিক দৈন্য। আমরা রক্ষণশীলতা কে ভেবে নিয়েছি ভালো আর স্বাধীনতার ধারণা আমাদের সমাজে তিরস্কৃত। শিকলে বেধে রাখা যায় বটে, কিন্তু মানবিক সম্পর্ক টিকে থাকে না।
এই সব মেয়েদের দেখা তো দূরের কথা, এদের কথা মনে উঠলেই আমার গায়ে আগুন ধরে। আবার এদের মতন মেয়েরাই নারী অধিকারের রব তুলে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে। দুনিয়া বড়ই আজব জায়গা!
অভিদা’র এই কথার সাথে আমিও একমত।
আপনার ব্লগে মনে হয় আমি কবিতা দেখেছিলাম। দু একটা ছাড়ুন না এখানে। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
এইটা হচ্ছে সুবিধাবাদী অবস্থান। নিজের জীবনের দ্বায়িত্ব নিজে নিলে খেটে খেতে হয়, পরিশম করতে হয়। না নিলে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। সেটাই করে অধিকাংশ বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষিত গৃহিনীরা। পরিশ্রম যেহেতু করে না, তাই আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করার অবকাশটুকু ঠিকই পায়। যে নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজে নেয় না, সেই নারীর মুখে নারী অধিকারের রব শোভা পায় না।
আর কবিতা। আমি কেন কবিতা লিখি সেটা নিজেই এখনো ঠিক মত বুঝিনা। অনেকটা জোৎস্না দেখার মত, কেন জোৎস্না ভালো লাগে, আমার যে জোৎস্না ভালো লাগে, তা জেনে পাঠকের কি উপকার হবে বুঝে পাই না দেখেই ঐগুলো ঐখানেই রেখে দিই। যেদিন বুঝে উঠব, সেদিন দেব। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
সংশপ্তক আসার আগেই কই এইগুলা সবই তেনার(!) লীলা খেলা। এইটাই আসল কারন। মাথায় কেমিকেল রিএকশন টিএকশন সবই ভুয়া।
@সাইফুল ইসলাম,
এই তাইলে মনের কথা। বাকিটা হুদাই ভাব 😛
ভালই লাগল,নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল অত্যন্ত পরিস্কার ভাসায় বর্নণা করার জন্য।
তবে দিনটা থেকে আমরা ক্রমন্বয়ে বিপরীত দিকে ধাবমান কিনা এটাই তো সন্দেহের বিষয়।
ধন্যবাদ
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
দিন বদলাবে, এই আশাটুকু থাকুক মনে।
ধরা যাক কাল থেকে নারীরা পুরুষের মত জীবন-যাপনের সুযোগ পেয়ে গেলে।নারীকে আর লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বউ সাজতে হলো না।পুরুষ আর তার উপর শাসন করতে পারলো না।তখন কি হবে?নিজেকে আপনার মুক্ত বলে মনে হবে? বেঁচে থাকাটা স্বার্থক বলে মনে হবে? সে কথা মানলে পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ মস্ত সুখে আছে।জীবনে কোন খেদ নেই।সে মুক্ত।স্বাধীন।…ব্যাপার আসলে তা নয়।আপনি যা চান তা পৃথিবীর কাছে হাজার মাথা ঠুকেও কোনদিন পাবেন না।আপনার ধারণা পুরুষের মত মুক্ত জীবন পেলে আপনার এই দীর্ঘশ্বাস বের হবে না? আপনি হয়ত জানেন না, সব মানুষই নিজের মনে দুঃখি একা নিঃসঙ্গ।জীবনে অন্তত হাজার বার সে জীবন নিয়ে আক্ষেপ করে।এমন মানুষ দেখান (কোন একজন পুরুষকেই জিজ্ঞস করে দেখুন) যে একবারও মরতে চায়নি একা একা চুপি চুপি…।হ্যাঁ, স্রেফ নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললে আপনার সব কথাই ঠিক আছে।সহমত প্রশসন করি।কিন্তু জীবন নিয়ে যে আক্ষেপ আপনি শুরু করেছেন এটার সঙ্গে পুরুষতেন্ত্রর কোন সম্পর্ক নেই।
আপনি এক জায়গায লিখেছেন, আপনি স্বাধীন।সত্যিই কি তাই?
হয়ত আপনার কথা বুঝে উঠতে পারিনি।ধন্যবাদ।
@সুষুপ্ত পাঠক,
ভাই, পুরুষের মত স্বাধীনতা তো কখনো আমি চাই নি, চেয়েছি মানুষের মত জীবনের অধিকার।
জীবনের প্রয়োজনে সংগী খুঁজে নেয়া আমার চোখে স্বাভাবিকতা, কিন্তু আমাদের সমাজে যেভাবে প্রত্যেকটি মেয়েকে মানসিক চাপের মধ্যে প্রত্যেকটি দিন যাপন করতে হয়… তা কতটা কষ্টকর, বাংলাদেশের মেয়ে মাত্রই তা বোঝে।
পুরুষকে হটিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের কথা আমি ভাবিনা, ভাবি নারী-পুরুষ, সকল মানুষ নিজের মনের মত করে জীবন যাপন করবে, কেউ কারোর উপর কতৃত্ব ফলাবে না প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের নাটাই তার হাতেই থাকুক না, কেন অন্যতে অর্পিত হতে হবে আর কেনই বা অন্যের জীবনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
আমার বর্তমান আক্ষেপের সাথে পুরুষতন্ত্রের সম্পর্ক এটুকুই, আমাকে স্বাধীন জীবন যাপনের জন্য নিজের দেশ, নিজের পরিবার ভাই বোন, বন্ধু সবাইকে ছেড়ে একা হতে হয়েছে… আর কোন সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন করেছেন, আসলেই আমি স্বাধীন কিনা… হ্যাঁ ভাই, আসলেই আমি স্বাধীন। অর্থনৈতিক, ব্যক্তিক বা সামাজিক সব দিক থেকে আমি স্বাধীনতা অর্জন করে নিয়েছি, আমার জীবন আমিই যাপন করি, এখন আর আমার জীবন কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। 🙂
বিচ্ছিন্ন হলেও স্বাধীন তো! 🙂
সাদাসিধে ভাষায় লেখা মনের ভাবনাগুলো বেশ লাগল। (Y)
@অভিজিৎ, তা ঠিক।
তবুও স্বাধীনতা আর উচ্চশিক্ষার বিনিময়ে দেশ ছেড়ে যাওয়াটা কষ্টকর। সেই দিনটা কবে আসবে জানিনা, যেদিন জীবনের অধিকারগুলো পেতে কাউকে নিজ দেশে ছেড়ে যেতে হবে না।
@নীল রোদ্দুর,
পুরো বিশ্বকেই নিজের দেশ কোন দিন ভাবা যায় আমি সেই দিনের স্বপ্ন দেখি।
@আদিল মাহমুদ, ‘দাদা কার্ল মার্কস’ থাইকা পরামর্শ লাইয়া, বিশ্ব বিপ্লবে নাইমা পড়েন, জয় লাভ করলেই সারা বিশ্ব আপনার দেশ অইয়া যাইব। 🙂