ওরা আমায় নিজেদের প্রয়োজনে
কখনো বানিয়েছে দেবী,
কখনো বানিয়েছে মূল্যে-কেনা ক্রীতদাসী।
ওরা কখনো তাদের বিকৃত পৌরুষ
চরিতার্থ করার জন্য আমায় বানিয়েছে শস্যক্ষেত্র,
বানিয়েছে উদ্ভট চিরকুমারী-হুরী, অপসরী।
তাদের মানসিকতা কী বিচিত্র!

ওরা নানান প্রসাধনীতে আমার দেহ সাজায়।
আবার যৌতুকের জন্য আমারই দেহে
কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

ওদের বংশবৃদ্ধি ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য
ব্যবহার করে আমার জঠর।
আবার নিজের হিংস্রবৃত্তি
চরিতার্থ করতে আমাকেই করে প্রহার।

ওরা আমায় একহাতে বাজারে বেচাকেনা করেছে
অন্যহাতে বন্দি করেছে গৃহকোণে।
আমায় কখনো বানিয়েছে বারাঙ্গনা
কখনো বা অর্ধাঙ্গিনী।
ওরা আমায় বন্দি করে খাঁচায়,
আবার ওরাই আমায় ওদের
বিকৃত বিনোদনের তরে বাজারে নাচায়।

ওরা শোষক, শাসক, নিপীড়ক
ওরা পুরুষ।
আমি শোষিত, শাসিত, নিপীড়িত নারী।
ওরা অধিকর্তা, ওরা জবরদখলকৃত-
অন্যায় ক্ষমতার মিথ্যা মোহে ক্রুদ্ধ।
আমি ওদের শোষণের কবলে
অসহায়, কম্পিত। আমি রুদ্ধ।

ওরা শিকারি ওরা পুরুষ
ওরা উদ্ধত-সিংহ।
আমি ওদের শিকার
প্রাণভয়ে ভীত, নিরীহ মৃগ।

ওরা কখনো কখনো আমার সাথে
ভালবাসার ভান করে।
পরক্ষণে নিজেরাই খুলে দেয়
নিজেদের কপট-মুখোশ।

ওরা আমায় নিজেদের স্বার্থেই
নারী ক’রে রেখেছে;
মানুষ হতে দেয়নি।
ওরাও কি হয়েছে মানুষ?
মানুষ তো ওরাও হতে পারেনি!
হয়েছে কেবল পুরুষ।