এক দুর্ঘটনার পর কিংবদন্তীর মহান প্রেমিকদের অন্যতম দন খুয়ান (Don Juan ) সাগর তীরে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন। সেসময় তিসবেয়া নামের এক তরুণী তাকে সেখানে আবিস্কার করে। তাদের মধ্যকার সংলাপের কিছু অংশ তিরসো দে মলিনা (১৫৭১-১৬৪৮) রচিত কালজয়ী বিয়োগান্তক নাটক ‘এল বুরলাদোর দে সেবিয়া’ (সেভিলের কামচোর ) থেকে নিচে তুলে দিলাম :
তিসবেয়া : জাগো , হে সকল সুপুরুষদের মধ্যে সুন্দরতম ! আবার নিজের মত হও।
দন খুয়ান : যদি সাগর আমাকে দেয় মৃত্যু , তাহলে তুমি দাও জীবন । তবে সাগর আমাকে বাঁচিয়েছে শুধু তোমার হাতে মৃত্যুবরণ করার জন্য। সাগর আমায় এক যন্ত্রনা থেকে আরেক যন্ত্রনায় প্রতিনিয়ত ছুঁড়ে দিচ্ছে । জল থেকে উঠতে না উঠতেই এই মোহিনী জলকন্যা – তোমার সাথে দেখা । আমার কানে গলা মোম কেন ঢালছ যখন তোমার ঐ দু নয়ন দিয়েই আমাকে হত্যা করেছ ? আমি সাগরেই ডুবে মরতাম কিন্তু আজ আমার মৃত্যু হবে ভালোবাসায়।
তিসবেয়া: জলে ডুবেও তোমার শ্বাস ঠিকমতো চলছে , অনেক কষ্ট নিশ্চয় হয়েছে , কিন্তু কে জানে আর কোন কষ্ট তুমি আমার জন্য তুলে রেখেছো ?…….. আমি তোমাকে খুঁজে পেয়েছি হাঁটু জলে । আর এখন তুমি পুরোদস্তুর জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ! ভেজা শরীরেই যদি এত জ্বলতে পারো , গা শুকালে তখন কি হবে ? । কথা দাও , আমাকে তোমার ঝলসানো শিখা দেবে । ঈশ্বরের কাছে কামনা করি যে তুমি মিথ্যে বলছ না !
দন খুয়ান : হে তরুণী , তোমার আগুনে পুড়ে কয়লা হবার আগেই ঈশ্বরের উচিৎ ছিলো আমাকে সাগর জলে ডুবিয়ে মারা। হয়তো , তোমার গরম বাষ্পের ছোঁয়া পাওয়ার আগ মূহুর্তে আমাকে ভালোবাসায় সিক্ত করে প্রেমদেব যথেষ্ট জ্ঞানীর পরিচয় দিয়েছেন। তবে , তোমার আগুন এমনই তীব্র যে পানিতে থাকলেও আমি জ্বলে যাই !
তিসবেয়া : এত ঠান্ডা তারপরও জ্বলছ ?
দন খুয়ান : তোমার আগুন এমনি তীব্র !
তিসবেয়া : কি সুন্দর কথা বলতে পারো !
দন খুয়ান : কি সুন্দর বুঝতে পারো !
তিসবেয়া : ঈশ্বরের কাছে কামনা করি যে তুমি মিথ্যে বলছ না !!
একি প্রেম নাকি ভালবাসা
নাকি আমার মনের এক সুপ্ত বাসনা … 🙂
@অভিজিৎ,
What is the end of Fame? ’tis but to fill
A certain portion of uncertain paper:
Some liken it to climbing up a hill,
Whose summit, like all hills, is lost in vapour:
For this men write, speak, preach, and heroes kill,
And bards burn what they call their “midnight taper,”
To have, when the original is dust,
A name, a wretched picture, and worse bust.
– LORD BYRON, Don Juan
আমার বরাবরই মনে হয় তথ্য না হারালেও সাহিত্যটা বুঝি অনেকখানিই হারিয়ে যায় অনুবাদে। মূল সাহিত্যকর্মে যা কিনা শ্রুতিমধুর হতে পারতো অনুবাদে তা অনেক সময়ই হাস্যকর শোনায়। তবে pride and prejudice এর মত বাঘ-যখন-বিড়াল কিসিমের classic romance ও যখন গিলতে পারি (এবং বেশ ঢকঢক করে!), এটাও চলবে ভালভাবেই। চলুক। (D)
তবে আমিও বলি কি পোস্টটায় আরেকটু ঢালতে পারলে বোধহয় ভাল হতো। বিশেষ করে নির্বাচিত এই সংলাপ কেন নির্বাচন করলেন এ ব্যাপারে কিছু নিজের কথা প্রকাশ পেলে বোঝা যেত ঠিক কী ধরনের সাহিত্য আলোচনা আশা করছেন।
@ভাস্বতী,
দন খুয়ান দে মার্কো একজন খুবই উঁচুমার্গের নারী সন্ভোগী কামচোর কিন্তু সাধারণ প্রজা ছিলেন বলে কিংবদন্তী আছে। তার আসল চরিত্র জেনেও সহস্র নারী তার সঙ্গ এক মুহূর্ত পাওয়ার জন্য আগুনে ঝাঁপ দিতেও তৈরী থাকত সে যুগে। এর পেছনের রহস্যটা আমাকে ভাবায়। এসব নিয়ে লেখার কথা অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম। এবার শুরু করলাম। (O)
@সংশপ্তক,
কেন? কেন ভাবায়? এমন সম্ভোগী কল্পচরিত্রের ভাঁড়ারে তো কোন অভাব নেই। ঠিক অতটুকুই যে তুলে ধরলেন; ঘটনা কি? বৈজ্ঞানিক ব্যস্ততায় ইনভেন্টরী লস নাকি :))
@কাজী রহমান,
কি সেটা ?
@সংশপ্তক,
পটানো
ইয়ে, একটু বেশিই সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল না পোস্টটা? আরেকটু বিস্তারিত লিখলে হয়তো বুঝতে পারতাম শুধু এই অংশটুকু অনুবাদ করার কারণটা কী 🙂
অবশ্য, এক হিসেবে সংক্ষেপিত হয়েও কোন অসুবিধা হয় নি – ‘প্রেম’ নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। বলা যায় না, “বিবর্তন ও হরমোনের আলোকে প্রেম” নাম দিয়ে জনৈক বিবর্তনবাদী একটা পোস্টও কিন্তু দিয়ে দিতে পারে!!
@স্নিগ্ধা,
নির্বাচিত সংলাপ হলেও এ যাত্রাই শেষ যাত্রা নয় । একবারে সব বুঝে গেলে তো তাবিজ ঠিক মত কাজ করবে না।
প্রেম মনে হয় বিবর্তন প্রুফ । গত লক্ষ বছরে সে যা ছিল তাই আছে । মিউটেশন যে একেবারে ঘটেনি তা নয় , তবে প্রাকৃতিক নির্বাচনে ঐসব মিউটান্ট প্রেম টিকতে পারেনি। 🙂
@সংশপ্তক, এই হচ্ছে ‘বে-বিজ্ঞান’মনষ্ক লোকজনের সাথে কথা বলার সমেস্যা :)) । কতগুলো অচেনা নাম শুনলো তো ধরে নিল আমি বিবর্তন নিয়ে কথা বলছি :-X
@বন্যা আহমেদ,
দোষ দেয়া যায় না। রোমান্সের বেলায় মানুষ বিবর্তনের চেয়ে থার্মোডাইনামিক্সই বেশী আগ্রহী হয় এই ভেবে যে , পাছে এন্ট্রপি বেড়ে যায় !
প্রেমের মড়া জলে ডোবেনা। জলে না ডুবলেও প্রেমে ডুবে মরে।
@তামান্না ঝুমু,
তবে, ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সাথে সব সময় একটা লাইফ জ্যাকেট রাখা যায় যাতে অসময়ে ডুবে মরতে না হয় !
ভাল
হাহাহাহাহাহ, এ প্রেম না হ্যালুসিনেশন 🙂 ।
সাহিত্যে কে যে কখন ‘মহান’ হয়ে যায় সেটাই এক রহস্য। সাহিত্যে জোড়ালো সাস্পেন্স তৈরির জন্য ঠিক আছে কিন্তু এই দন খুয়ানের মত চরম খেয়ালী ক্লাসিক লিবারটেনদের ‘প্রেমিক’ (সিডিউসার বললে ঠিক আছে অবশ্য) বলা ঠিক কীনা সেটা নিয়ে প্রায়ই সন্দেহ হয় আমার।
@বন্যা আহমেদ,
তাহলে প্রেম হবে কোনটা?? ব্রাত্য রাইসুর এক খান উত্তরাধুনিক কবিতা আছে, আকাশ দেখছি, সেক্স করছি টাইপ একদম নন-খেয়ালী ও বাস্তব সত্যর সাথে এক্কেরে ১০০% খাপ মিলানো লাইন আছে। সেটাও পন্ডিত মহল প্রেম বলতে স্বীকার করেনা। :))
@বন্যা আহমেদ,
গনিতবিদ জন ন্যাশের জীবন নিয়ে বানানো অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড নামে একটা মুভি আছে, দেখতে পারেন। অইখানে তার প্রোপোজ করার দৃশ্যটা দেখার মত…দুইবার প্রোপোজের দুইটা কোট দিলাম…
এইটা আপনি কী বলেন? 🙂
@টেকি সাফি,
কঠিন আলোচনা :-X । প্রেমের সংজ্ঞা খুঁজতেসো (অবশ্য এই বয়সে এইটা হওয়ারই কথা!)? এইখানে তুমি এক্কেরে একা, কেউ সাহায্য করতে পারবে বলে তো মনে হয় না! কত মহামনীষীই হার মানলো সেখানে আমি তো এক্কেবারেই তুচ্ছু! দন খুয়ানের বলা কথাগুলো শুনে অনেকের মধ্যেই হয়তো টেস্টোসটেরন, এস্ট্রোজেন, ডোপামিন বা সেরোটোনিনের বন্যা বয়ে যায় কিন্তু আমার যায়না, কী করুম কও? এর পিছনে জটিল এক বায়োকেমিস্ট্রি কাজ করে সেটা বুঝি, তবে ব্যাপারটা যে শুধুই জেনেটিক মিল বা কম্প্যটিবিলিটির উপর নির্ভর করে সেটা মেনে নিতেও আবার আমার কষ্ট হয়।
আর নাশুর কথা আর কী কমু, ওর মত গুরু যেইটা বলে সেইডাই ‘প্রেম’। তয় এরকম ‘পাগলে’র লগে এক সাথে থাকা সম্ভব কীনা সেইটা জানি না। হ্যটস অফ টু এলিসা।
@টেকি সাফি,
প্রেম হইল মরাচিকা। থাকলে রেশমী, পশমী আর না থাকলে দুর্গন্ধ।
@সংশপ্তক,
কেন জানি ন্যাকামী লাগে এইরকম ডায়ালগগুলা। তবে এইটা হইতে পারে ভাষাগত বা সংস্কৃতিগত পার্থক্যের কারনে। কী বলেন?
আর Jর উচ্চারনটা সাধারনত কি একটু উ বা হ এর মতন হয় না? অনেক মুভিতে মনে হয় এমন উচ্চারন করতে দেখছিলাম।
সংশপ্তকের নাম দেখলেই কেন জানি বিজ্ঞান বিজ্ঞান গন্ধ পাই। :))
@সাইফুল ইসলাম,
এত্ত কতা বাদ!! পিরেম হইলো গিয়া কদু আবার প্যারাসিটামলও হইতে পারে!! স্বীকার যান নাইলে অফ যান!! কোনটা যে পিরেম আর কোনটা যে হ্যালুয়া সেইটা ডিফাইন করা কষ্টকর…সেইটাই বুঝাইতে চাইসিলাম 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
স্পেনিশ বর্ণমালায় J বর্ণের নাম ‘খোতা’ । হ – এর উচ্চারণ সবসময় স্পেনিশ ভাষায় উচ্ছ থাকে। বিদেশীরা ( বিশেষ করে ইঙ্গ-মার্কিন) যারা ‘খ’ উচ্চারণ করতে পারে না , তারা ‘খ’ এর জায়গায় ‘হ’ পড়ে।
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পর কি এবার বৈজ্ঞানিক প্রেম ? :))
@বন্যা আহমেদ,
নাটকের নাম ‘সেভিলের কামচোর(playboy)’ তো সব কিছু বলে দেয় । 🙂