শেষ চিঠি

আকাশ মালিক

শ্রদ্ধেয় অভিজিৎ দা,

মুক্তমনা আপনার নিজ হাতে বহু কষ্টের গড়া এক পরিবার। এর উপর দিয়ে কোন ঝড় তুফান বয়ে গেলে আর কেউ না জানলেও আপনি যে টের পাবেন সেটা জানা কথা। এই পরিবারের সাথে তার সদস্যদের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। আমি জানি আপনি ব্যস্ত মানুষ, আপনার সময়ের মূল্য আছে। আমার কিছু কথা বলার ছিল, যতদূর সম্ভব সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করবো। প্রথমেই নীচের মন্তব্যগুলোর প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আগন্তুক এর জবাব (প্রায় আড়াই বছর আগের ঘটনা)
@ ফরিদ আহমেদ
আমরা যারা হলে রাতের পর রাত আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে লাঠিসোটা নিয়ে জেগে,লোডশেডিং এর মধ্যে ,রুমমেটকে লুকিয়ে ল্যাপটপ অন করে লিখি – তাদের জন্য এ উক্তি অপমানকর। আমি জানি না, বাংলাদেশের হলগুলোর বর্তমান অবস্থা না জেনে এরকম একটা অবিবেচক মন্তব্য কোন ধরণের মুক্তমন এবং মানবতার নিদর্শন? যুদ্ধে আত্মহননের চেয়ে আত্মরক্ষার কৌশলটাই শ্রেয় নয় কি? পথিকের রুমমেটরাই যে ওর রগ কেটে রেখে যায় নি এতেই আমি খুশি। বিদেশের আরাম ভুলে দেশের ২০ঘণ্টা লোডশেডিং এ বসে, শিবিরের অস্ত্রের মুখে প্রকাশ্যে বসে স্বনামে লিখে সাহস প্রমাণ করে যান। ফারুকের অপরাধ কি ছিল জানেন? সে একটা রাজাকারবিরোধী ব্যানার টানিয়েছিল রুমে। ছেলেটা আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বন্ধু ছিল।
(সেই থেকে পথিক আর আগুন্তুককে মুক্তমনায় দেখছিনা)

ফরিদ আহমেদ এর জবাব:
@আগুন্তুক,
ছদ্মনামের নিরাপদ আশ্রয়ে বসে থেকে এরকম অশালীন, অবিবেচক এবং রূঢ় মন্তব্য করে ফেলাটা খুবই সোজা। আমি নিশ্চিত, আসল পরিচয়ে হলে আপনি ঠিকই করতেন না এধরণের মন্তব্য। পরিচয় গোপন রেখে টয়লেটে যা ইচ্ছা লেখা যায়, জানা থাকলে করা যায় না সেটা।

ফরিদ আহমেদ এর জবাব: (চেঙ্গিস খান: হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ- প্রবন্ধে)
@ হোরাস,
এই লেখাটা পড়তে গিয়ে কেন যেন মনে হচ্ছে যে, চেঙ্গিস খান মূল নয়, এর আড়ালে লুকিয়ে আছে মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ। মুহাম্মদের প্রতি ঘৃণার প্রাবল্যেই খুব সম্ভবত চেঙ্গিসকে শ্রেষ্ঠ মানব বলা হচ্ছে।

হোরাস এর জবাব:
@ফরিদ আহমেদ,
প্রাচীন কোনো দেবতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়েও কখনও হিপোক্রেসী করেছি এটা কেউ বলতে পারবে বলে মনে হয় না। সে আত্মবিশ্বাস আমার আছে।

ফরিদ আহমেদ এর জবাব:
@ হোরাস
কেউ বলতে পারবে না, এই আত্মবিশ্বাস থাকাটা খুব কাজের কিছু নয়। মুখোশের আড়ালে যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় হিপোক্রেসি।

ফরিদ আহমেদ এর জবাব: (কিছু ছবি কিছু জিজ্ঞাসা- প্রবন্ধে)
@আকাশ মালিক,
মুরগির কলিজার মতই দুর্বল মেরুদণ্ডতো। ভয়ে আসলেই গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে গিয়েছে সেগুলো। সে কারণেই ছদ্ম পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে হয় সবসময়। সোজা হয়ে দাঁড়াবে কী করে?

ফরিদ আহমেদ এর জবাব:
@আকাশ মালিক,
ছদ্ম জিনিসটা খুব সংক্রামক। এই লেখাটাও সে কারণে একটা ছদ্ম লেখা হয়ে গিয়েছে। আসল টার্গেট পিছনে, কিন্তু বন্দুক তাক করে ধরেছেন সামনের দিকে। আশা করেছেন যে, ব্যাকফায়ার করে পিছনের টার্গেটকে আঘাত করতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ভুলে গিয়েছেন যে বন্দুক আর পিছনের টার্গেটের মাঝখানে আপনার অবস্থান রয়েছে।

যাযাবর এর জবাব,
এই ব্লগ লেখার জন্য কেউ কেউ নাখোশ যে কেন শুধু এভাবে লেখা হল, কেন ওভাবে লেখা হল না। ইসলাম আর নবী কে সমালোচনা বা দায়ী করলে অনেকে হাঁ হাঁ করে ইসলাম ব্যাশিং এর ধুয়া তুলেন।

ফরিদ আহমেদ এর জবাব:
@যাযাবর,
এই লেখার সততা এবং আসল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এ লেখার মূখ্য বিষয়ও সাতক্ষীরা নয়, অন্য কিছু। সাতক্ষীরার মত একটা মানবিকতা দলনের ঘটনাকে ব্যবহার করা হয়েছে আইওয়াশ হিসাবে। কাজেই ও নিয়ে আনন্দিত হবার কোনো কারণ নেই।আমি নিজেও এটাকে ছদ্ম পোস্ট হিসাবে অভিহিত করেছি। সেই অভিযোগকে অস্বীকার করেও কোনো মন্তব্য তাঁর কাছ থেকে এখন পর্যন্ত আমি পাই নি (ধারণা করছি এখন পাবো) । কাজেই, এটা যে সাতক্ষীরার ঘটনার বিষয়ে একটা নিরীহ মানবিক পোস্ট, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গিয়েছে আমার ভাবনায়।

(শত চেষ্টা করেও ফরিদ আহমেদ কোন পাঠকদেরকে তার টোপ গিলাতে পারেন নি)

প্রদীপ দেব এর জবাব: (অবিশ্বাসের দর্শনঃ নবযুগের যুক্তিবাদীর দৃপ্ত পদক্ষেপ- প্রবন্ধে)
@অভিজিৎ,
ছদ্মনামের ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ পরিচয় আড়াল করার প্রাথমিক ধাপটাই হলো এক ধরণের জালিয়াতি – আমি যা নই তাই বলে আমার পরিচয় দেয়া। অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখক ছদ্মনামে লিখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন – কিন্তু তাঁদের মূল পরিচয় কিন্তু গোপন থাকেনি। এ ব্যাপারে মুক্তমনা এডমিনের মনে হয় কিছু করা দরকার।

আকাশ মালিক এর জবাব:
@প্রদীপ দেব,
যিনি ছদ্মনামে লিখেন তার কাছে ব্যাপারটা শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, বরং এক ধরনের নাইটমেয়ার। নিজের আসল নামে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারার বা কোন কিছুর সাথে দ্বিমত পোষণ করতে না পারার কী যাতনা তা শুধু তারাই বোধ হয় টের পান যারা ছদ্মনামে লিখেন। এর পেছনে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য কারণ আছে, আর তা হলো সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক নিরাপত্তার অভাব। সে কারণেই হয়তো দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ The Indigo Planting Mirror নাটকের অনুবাদে মাইকেল মধুসূদনের নাম নেই। এটাকে কি জালিয়াতি বলা যাবে? ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরান ও এর লেখক মুহাম্মদের, যুক্তি ও প্রমাণ নির্ভর শ্রেষ্ট সমালোচকদের মধ্যে ‘Why I Am Not a Muslim’ বইয়ের লেখক ইবনে ওয়ারাক ( ছদ্মনাম) অন্যতম। স্বনামে হয়তো তিনি এতোকিছু লিখতে পারতেন না যা লিখে গেছেন। নিজের নামটাই যেখানে নেই সেখানে প্রতিষ্ঠিত হবেন কে? স্বীকৃতি প্রাপ্তির বাসনা যেখানে নেই সেখানে সার্টিফিকেট গ্রহণ করবে কে? রাজমুকুট গ্রহণ করার তো কেউ নেই।
(এর উত্তরে প্রদীপ দেব কিছু বলেন নি, বলতে আসলেন ফরিদ আহমেদ)

ফরিদ আহমেদ এর জবাব:
@আকাশ মালিক,
অনেক পুরোনো একটা পদ্যের কথা মনে পড়ে গেলো। অংশ বিশেষ তুলে দিলাম এখানে।
নন্দ একদা হঠা‍ৎ একটা কাগজ করিল বাহির-
গালি দিয়া সব গদ্যে-পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির।
পড়িল ধন্য , দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন-
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশগুণ।
খাইতে ধরিল লুচি আর ছোঁকা, সন্দেশ থাল-থাল –
তখন সকলে কহিল, “বাহবা, বাহবা, নন্দলাল।
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, ‘আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি’ বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।’
তখন সকলে বলিল – ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!’
নন্দ বাড়ীর হত না বাহির , কোথা কী ঘটে কি জানি,
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি।
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে কলিশন হয়,
হাঁটিলে সর্প, কুক্কুর আর গাড়ি চাপা পড়া ভয়।
তাই শুয়ে শুয়ে কষ্টে বাঁচিয়া রহিল নন্দলাল-
সকলে বলিল, “ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক চির কাল

আকাশ মালিক এর জবাব:
@ফরিদ আহমেদ,
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘নন্দলাল’ পদ্যটি ছোটবেলায় পড়েছিলাম। পদ্যের প্রথম অংশটুকু এখানে-
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ –
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।’
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, ‘যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা’
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।’

তবে এখানে উল্লেখের প্রাসঙ্গীকতা ধরতে পারিনি, কারণ বোঝতে পারিনি ‘নন্দলাল’ কে বা কারা?

ফরিদ আহমেদ এর জবাব:
@আকাশ মালিক,
ছদ্মনামে লেখার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে, এই কথাগুলো যিনি লিখছেন, বাস্তবজীবনে আদৌ তিনি এগুলোকে নিজের মধ্যে ধারণ করেন কিনা সেটা নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হবার একটা সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। ইসলামকে ধুয়ে দেওয়া ব্যক্তি হয়তো বাস্তব জীবনে কোন মসজিদের ইমাম, বালক-বালিকাদের কোরান পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিংবা সমাজে ধার্মিক ব্যক্তি হিসাবে থেকে সম্মানজনক এবং গ্রহণযোগ্য দিন কাটাচ্ছেন। নিয়মিত মসজিদে যান, নামাজ-রোজা করেন, বউ, বাচ্চা-কাচ্চাদের ইসলামের ফজিলত বর্ণনা করেন। আর রাতের বেলা সবাই ঘুমোলে কম্পিউটারের সামনে আসল পরিচয়ের জামা খুলে ক্যাবার্ডে লুকিয়ে রাখা ছদ্ম পরিচয়ের পোশাকটা গায়ে চাপান। সারাদিন ধার্মিক সেজে থাকার রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণা উগরে দেন অন্তর্জালে।
আপনারা যাঁরা অনেকদিন ধরে ছদ্মনামে লিখছেন, তাঁরা আমাদের কাছে শুধু একটা বায়বীয় নাম ছাড়া আর কিছুই নন। নন্দ হয়ে নব্বই বছর বাঁচার চেয়ে, বীর হয়ে বাইশ বছর বাঁচাটাও অনেক বেশি বরণীয় এবং স্মরণীয়।

ফরিদ আহমেদ এর জবাব: ( চিন্তা করার আনন্দ- প্রবন্ধে) )
ধর্ম ব্যাশিং এর মত একটা স্থূলরুচির বিষয় মুক্তমনার সাথে আর যায় না। সামনে অবারিত সবুজের হাতছানি রেখে চৌদ্দশ বছর পিছিয়ে গিয়ে ধূসর মরুভুমিতে কারো মলমূত্র খোঁজাটা মেনে নেওয়া আমাদের অনেকের জন্যও কষ্টকর। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, আমার আপনার ইচ্ছে অনিচ্ছের সাথে ব্যাশারদের ইচ্ছে অনিচ্ছে মিলবে না। তারা তাদের কাজ করে যাবে। এখন এর থেকে পরিত্রাণ পেতে গেলে আপনাকে আমাকেই এগিয়ে আসতে হবে। বেশি বেশি করে অন্য বিষয়গুলোর উপর লেখা আসতে হবে। এক বা দুজনের উপর ভরসা না রেখে সবাইকেই এই দায়িত্বটা নিতে হবে। মুক্তমনার মুল পাতা ভরে দিতে হবে আনন্দদায়ী সব বৈচিত্র্যময় লেখা দিয়ে। এটা করতে পারলে ব্যাশিং এর লেখাগুলোসহ তাদের বাবা-মা ব্যাশাররাও কোণঠাসা হয়ে যাবে আপনাতেই। সেই সাথে উপেক্ষার নীতি নিলে নিজেরাই তারা সরে যাবে উপেক্ষার অপমান সইতে না পেরে।

(এই মন্তব্যটা আমার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল কারণ শাফায়াতের লেখাটা ছিল কমপিউটারের নাড়ি-ভুরি নিয়ে, ডিজাইন ও প্রোগ্রামিং নিয়ে যার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝিনা তাই লেখাটি মোটেই পড়ি নাই আর ফরিদ সাহেবের মন্তব্যও দেখি নাই।)

অভিজিৎ দা, আমার লেখা কিছু ছবি কিছু জিজ্ঞাসা এবং সাতক্ষীরায় আগুন কেন লেখা দুটো পড়ে একবার দেখুন পাঠকদের প্রতিক্রীয়াটা কেমন ছিল। আমি যদি শাফায়াতের লেখাটা পড়তাম, যদি সেখানে ফরিদ আহমেদের মন্তব্য দেখতাম, যেখানে তিনি পাঠকদের পরামর্শ দিচ্ছেন আমাদের লেখা উপেক্ষা করে অপমান করার জন্যে, কসম প্রকৃতির, লেখা দুটো আমি মুক্তমনায় দিতাম না। এই চিঠিটা আপনার কাছে লিখেছিলাম বেশ কয়েকমাস আগে। চিঠিটার কথা আমি ভুলে যেতে চেয়েছি, মুক্তমনার পরিবেশ ক্যাচালমুক্ত রাখার জন্যে। সম্প্রতি সাইফুল ভাইয়ের একটি লেখায় তিনি আমাকে কপট মুসলিম বিদ্বেষী বলেছেন। আমি তার কাছে কথা দিয়েছিলাম, তার কোন লেখায় মন্তব্য করবোনা, তার কোন মন্তব্যের কাউন্টার দিবোনা। আমি কিছু বলিনি তিনি আগ বাড়িয়ে এসে আমার পায়ে পাড়া দিলেন কেন? নন্দলাল বললেন, মুসলিম বিদ্বেষী বললেন, মানুষের মা-বাবা তুলে কথা বললেন, কেউ তো কোনদিন এ সবের কারণ-প্রমাণ দেখানোর দাবী করলেন না। মানুষকে অপমান করার ফ্রি লাইসেন্স তাকে কে দিল? কে দিয়েছে তাকে মানুষের মা-বাবা তুলে কথা বলার অধিকার?

দশটি বৎসর মুক্তমনায় লেখালেখির পর আমার সকল কষ্ট, লেখা, সাধনা আমার সপ্নকে তিরষ্কার, তাচ্ছিল্য, ইউপহাস করেছেন, আমাকে তিনি নন্দলাল নামে আখ্যায়ীত করেছেন। এই ১০ বছরে যেখানে যাকে পেয়েছি, যে ভাবে পেরেছি, ই-মেইলের মাধ্যমে লেখালেখিতে সাহায্য করেছি, উৎসাহ প্রেরণা দিয়েছি মুক্তমনায় আসার জন্যে লেখার জন্যে। আজ আমার কপালে জুটলো নন্দলাল তিলক। আমি জানি উন্মুক্ত ফোরামে এই আলোচনা নিয়ে আসলে অনেকেই জড়িয়ে যাবে, শত্রুরা হাসবে। আজ মুক্তমনার বেশ কিছু সদস্য চরম বিভ্রান্ত কনফিউজড কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আমি জানিনা মন্তব্য অপশন বন্ধ করে দেয়া উচিৎ কি না। আপনি যেটা ভাল মনে করেন করবেন।
আমি তো ধর্মীয় লেখা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই, ভবঘুরেও লিখছেন না বহুদিন। একবার দেখুন তো গত কয়েক মাসের মধ্যে কয়টা লেখা এসেছে, কে লিখেছে যাকে ইসলাম ব্যাশিং বলা যাবে? একবার পেছন ফিরে মুক্তমনার লেখক লিষ্টের দিকে তাকিয়ে দেখুন পুরাতন সেই সদস্যবৃন্দ কোথায়? আর একবার বিবেচনা করুন মুক্তমনার কতো পার্সেন্ট লেখক ছদ্মনামে লেখেন। আমি তো অনুমান করি ৯০% লেখক হবেন ছদ্মনামের। অথচ ছদ্মনামের লেখকদের মধ্যে শুধুমাত্র ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরান-হাদিসের সমালোচকদের গলা টিপে হত্যা করা কেন? তাদের লেখা উপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে অপমান করা কেন? কেন সম্পূর্ণ ফ্রন্ট পেইজ দখল করে নেয়া? কেন লেখকদের মা-বাবা তুলে কথা বলা। কেন মানুষের দূর্বলতা, অপারগতা, সীমাবদ্ধতা নিয়ে উপহাস করা? মুক্তমনা থেকে মানুষকে তাড়ানোর কেন এই অভিনব পন্থাবলম্বন? তাহলে আমি কি মনে করবো, আমার সাতক্ষীরায় আগুন কেন লেখায় যারা কোন মন্তব্য করেন নি তারা ফরিদ আহমেদের নির্দেশেই মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন?

দাদা, আমার মতো এক ছা-পোষা লেখক, নন্দলাল মার্কা এক দেশ সেবক, ব্লগে না থাকলে ব্লগ হয়তো কিছু হারাবেনা। মুক্তমনার বিরাট বটবৃক্ষের এক ক্ষুদ্র পাতা অকালে ঝরে গেলে বৃক্ষের কিচ্ছুই হয়তো হবেনা, কিন্তু একসাথে যদি অনেকগুলি পল্লব হঠাৎ করে ঝরে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে নিশ্চয়ই গাছটি রোগাক্রান্ত হয়ে গেছে।
হোরাস ভাইকে কথা দিয়েছিলাম, ঈদে মোবাহিলা নামে একটি প্রবন্ধ লিখবো, বেশ কিছু সরঞ্জাম সংগ্রহ করে রেখেছিলাম, তা আর এখানে দেয়া গেলনা বলে কিছুটা দুঃখ রয়ে যাবে। আর যে সকল পাঠক বহুদিন যাবত আমার অসমাপ্ত আল্লাহ হাফিজের দেশে সিরিজটি চালিয়ে যাওয়ার জন্যে অনুরোধ করেছিলেন, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে কথা দিলাম, কিছুটা দিন রেষ্ট নেয়ার পর লেখা দুটো লিখবো, যদিও প্রকাশ হবে অন্য কোথাও।
মুক্তমনার আঙ্গিনায় আমার পদচিহ্নের স্বারক স্বরুপ পুরাতন লেখাগুলো রেখে দিবেন। চিরদিনের সেই আমাকে পাঠক খুঁজে পাবে আমার লেখায়। নতুন রূপে নতুন সাজে নবীণেরা আসবে, আগের মতোই খেয়াতরী বইবে। আমি দূর থেকে কান পেতে শুনবো মুক্তমনার কোলাহল ধ্বনি।

সুদীর্ঘ এক যুগ সময় ধরে যারা আমার সাথে ছিলেন, যে সকল সুহৃদ গুনীজন তাদের মন্তব্য, পরামর্শ দিয়ে, আমার লেখা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করে লেখার প্রেরণা যুগিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। এ ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবোনা, তাদের কাছে চির ঋণী হয়ে রইলাম। মুক্তমনার সকল পাঠক লেখক সদস্যবৃন্দের প্রতি রইলো আন্তরিক ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। জগতের সকল মানুষ সুখী হউক।

ইতি-
আপনার স্নেহধন্য
আকাশ।

বন্ধু মুক্তমনাকে-

httpv://www.youtube.com/watch?v=5gwVUBi1WzM&feature=related