পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও প্রাণ আছে কিনা তা খুঁজে বের করা বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হচ্ছে শনির উপগ্রহ টাইটান নিয়ে। রহস্যময় এই উপগ্রহে প্রাণের সন্ধান করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে জ্যোতির্জীববিজ্ঞানীদের। কারণ খুব সাধারণ- প্রাণের এমন কোন নির্দেশিকা নেই যা পৃথিবী বা পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা দুরবিনে ধরা পড়বে। অন্যান্য তারার আশেপাশে গ্রহ আছে কিনা তা আমরা এখন বের করতে পারি, কিন্তু আমাদের দৌঁড় কেবল গ্রহের ভর, ব্যাসার্ধ্য, মাতৃতারা থেকে তার দূরত্ব এবং এমন কিছু অতি মৌলিক রাশি পরিমাপ পর্যন্তই। এমনকি গ্রহগুলোর আদৌ বায়ুমণ্ডল আছে কিনা এবং থাকলে তা কি দিয়ে গঠিত সেটা জানাও বর্তমানে অসম্ভব।
সে তুলনায় প্রাযুক্তিক প্রাণীর সন্ধান কিন্তু অনেক সোজা। অন্য কথায় বলা যায়, বহির্জাগতিক কোন সভ্যতা যদি আমাদের মত রেডিও বা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ তৈরিতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে অনেক সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব। কারণ আমাদের তেমন তরঙ্গ চিহ্নিত করার উপায় যেমন জানা আছে তেমনি সেটা যে সৌরজগতের বাইরে বসবাসরত কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরি সেটা বোঝার ক্ষমতাও আছে। আমাদের রেডিও তথা বেতার প্রযুক্তি ততোটাই উন্নত। কিন্তু এই অনুসন্ধানকে সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (সেটি) না বলে সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল টেকনোলজি বলাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। কারণ প্রাণী বুদ্ধিমান হলেই যে আমাদের মত প্রযুক্তি তৈরিতে আগ্রহী বা পারঙ্গম হবে তার নিশ্চয়তা কী?
তো এই বহির্জাগতিক প্রযুক্তি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সম্প্রতি আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করলেন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। প্রথমত, এই মাইলফলক স্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে একবিংশ শতকের বহির্গ্রহ সন্ধানীরা। সূর্য ব্যতীত অন্যান্য তারার চারপাশে যেসব গ্রহ আছে তাদেরকে বলা হয় বহির্জাগতিক গ্রহ বা সংক্ষেপে বহির্গ্রহ। ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির (ইসো) বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দাবী করেছেন আকাশগঙ্গার প্রতিটি তারার চারপাশে গড়ে ১.৬ টি করে গ্রহ আছে। অর্থাৎ আমাদের ছায়াপথে যদি ১০০০ কোটি তারা থাকে তাহলে গ্রহ আছে ১৬০০ কোটি। যদি ধরে নেই ইসোর বিজ্ঞানীরা ঠিক এবং আসলেই এতোগুলো গ্রহ আছে, তাহলে একইসাথে আশা এবং হতাশা ভর করে বসে। আশার কথা হচ্ছে, বহির্গ্রহ গবেষণার ভবিষ্যৎ অতি উজ্জ্বল এবং বহির্জাগতিক প্রাণের সম্ভাবনাও প্রবল। আর নিরাশার কথা হচ্ছে এতগুলো গ্রহের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৭৭১টি (exoplanet.eu ওয়েবসাইটের আজকের তথ্য অনুসারে) আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।
তবে মানুষ হিসেবে আমি আশা নিয়েই লিখব। আর আশাবাদ প্রকাশে সংকোচেরও কোন কারণ নেই। কারণ প্রতিটি বহির্গ্রহ আবিষ্কার গ্রহবিজ্ঞানকে অনেক সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ‘সেটি’ গবেষকদের জন্য এনে দিচ্ছে সুনির্দিষ্ট বস্তু পর্যবেক্ষণের সুবর্ণ সুযোগ। আগে সেটির বেতার দুরবিনগুলো দিয়ে সমগ্র আকাশ অবিরত স্ক্যান করা হতো যাকে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক জরিপ বলা হয়। কিন্তু জরিপের কর্মদক্ষতা অবশ্যই কম। কারণ সংকেত যদি খুব ক্ষীণ হয় তাহলে অনেক সময় ধরে দুরবিন তাক করে না রাখলে তা ধরা পড়ে না, নয়েজের অথৈ সমুদ্রে হারিয়ে যায়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বস্তুর দিকে অনেকক্ষণ দুরবিন তাক করে রাখলে ধীরে ধীরে অনেক ক্ষীণ সংকেতও নিরূপকে (ডিটেক্টর) ধরা দিতে থাকে।
নিরূপকের এই প্রত্যানুকূল ব্যবহারের চেষ্টাই একালের সেটি গবেষক বা ইটি শিকারীরা করছেন। সহজ ভাষায় বললে, কোন তারার চারপাশে যে অঞ্চলটুকুতে কোন গ্রহ থাকলে তাতে তরল পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে সেই অঞ্চলকে বলা হয় তারাটির প্রাণমণ্ডল। প্রাণমণ্ডলের ভেতর অবস্থিত গ্রহগুলোকেই (যাদের অন্য নাম বাসযোগ্য গ্রহ) তাই আধুনিক সেটি গবেষণার প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা যায়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত বাসযোগ্য গ্রহের সংখ্যা খুব কম, মাত্র ৪৬টি। অন্যদিকে বর্তমানে বহির্গ্রহ গবেষণায় সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী কেপলার নভোমানমন্দির ২৩০০ গ্রহপ্রার্থী সনাক্ত করেছে, অর্থাৎ ২৩০০ টি পর্যবেক্ষণের গ্রহ প্রমাণিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ২০০৩ সালে টার্নবাল এবং টার্টার ১৭,১২৯টি তারার তালিকা প্রকাশ করেছিলেন যেখানে তাদের মতে জটিল বুদ্ধিমান প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এই বিপুল সংখ্যক তারার জগৎকে আলাদা আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করা এখনও সম্ভব নয়। কারণ অধিকাংশ দুরবিনই নীতি নির্ধারকদের মতে অপেক্ষাকৃত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অন্যান্য পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত থাকে। তাই হালের সবচেয়ে আধুনিক বা স্টেট-অফ-দি-আর্ট দুরবিন ও ইন্টারফেরোমিটার দিয়ে বিজ্ঞানীরা আপাতত নিশ্চিত বাসযোগ্য গ্রগুলোতেই তাদের পর্যবেক্ষণ সীমাবদ্ধ রাখছেন।
এবার তাহলে মাইলফলকের কথায় আসা যাক: প্রথমবারের মত নিশ্চিতভাবে বাসযোগ্য হিসেবে প্রমাণিত কোন গ্রহের বেতার পর্যবেক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রটি ইতিমধ্যেই অনলাইন আর্কাইভে আপলোড করে দিয়েছেন তারা যদিও ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ জার্নালে আনুষ্ঠানিকভাবে তা এখনও প্রকাশিত হয়নি। পেপারটিতে আছে ‘ভেরি লং বেইজলাইন ইন্টারফেরোমেট্রি’ বা ভিএলবিআই (VLBI) দিয়ে ‘গ্লিজে ৫৮১’ (Gliese 581) নামক তারা জগৎ পর্যবেক্ষণের বর্ণনা। ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়, বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরি কোন বেতার সংকেতের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমার মনে হয় না কেউ এত স্বল্প চেষ্টায় তেমন সংকেতের আশা করছিলেন, পরিসাংখ্যিক দৃষ্টিতে তেমনটি হওয়াও খুব অস্বাভাবিক। তবে ফলাফল যাই হোক, এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বেতার দুরবিনগুলোর একটি তথা ভিএলবিআই দিয়ে বহির্গ্রহ পর্যবেক্ষণের নিয়মকানুন ও কলাকৌশল অনেক পরিষ্কার হয়েছে যা ভবিষ্যৎ গবেষকদের অনেক কাজে লাগবে।
গ্লিজে ৫৮১ (এখন থেকে জি৫৮১ ডাকা হবে) আমাদের থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে তুলা (Libra) তারামণ্ডলে অবস্থিত। এর ভর ও ব্যাসার্ধ্য যথাক্রমে সূর্যের ভর ও ব্যাসার্ধ্যের তিন ভাগের এক ভাগ এবং যথারীতি উজ্জ্বলতাও অনেক কম। এত ছোট ও ক্ষীণ হওয়ার কারণে একে লোহিত বামন বলা হয়। ২০০৭ সালে এর প্রাণমণ্ডলের একপ্রান্তে একটি গ্রহ আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। গ্রহটির নাম জি৫৮১ডি। পরে এর চারদিকে আরও গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান হিসাব মতে, জি৫৮১-র জগতে গ্রহ আছে অন্তত ৬টি যার মধ্যে জি৫৮১ডি তারা থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে চতুর্থ। ২০১০ সালে অবশ্য জি৫৮১জি নামক একটি সম্পূর্ণ বাসযোগ্য গ্রহ আবিষ্কারের দাবী করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে এটি তৃতীয় অর্থাৎ জি৫৮১ডি-এর তুলনায় একটু ভেতরের দিকে অবস্থিত। পৃথিবীর তুলনায় ৩ গুণ ভারী এই গ্রহটি যদি আসলেই থেকে থাকে তাহলে তাতে প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনা অনেক। আর প্রাণ থাকলে বুদ্ধিমান প্রাণীর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এসব বিবেচনা করেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত কার্টিন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি বেছে নিয়েছিলেন।
কোন কম্পাঙ্কে বুদ্ধিমান প্রাণীর নিশানা সন্ধান করা হবে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতৈক্য রয়েছে। ১ থেকে ১০ গিগাহার্জ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গগুলোকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তবে বুদ্ধিমান প্রাণীর কাছ থেকে দুই ধরণের সংকেত আশা করা যেতে পারে- উদ্দেশ্যমূলক এবং উদ্দেশ্যবিহীন। উদ্দেশ্যমূলক হবে যদি কোন বহির্জাগতিক প্রাণী নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের তৈরি তরঙ্গ মহাশূন্যে সম্প্রচার করে। আর উদ্দেশ্যবিহীন হবে যদি তাদের গ্রহে স্থানীয় সম্প্রচারের কাজে ব্যবহৃত বেতার ও মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ফাঁকতালে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্দেশ্যমূলক সংকেত তুলনামূলক সরু বেতার ব্যান্ডে সীমাবদ্ধ থাকবে, কারণ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সরু ব্যান্ডের সংকেত ব্যবহারই শ্রেয়। বিজ্ঞানীদের অনুমান, উদ্দেশ্যমূলক সংকেতের ব্যান্ডের পুরুত্ব ১ হার্জ থেকে ১ কিলোহার্জের মধ্যে থাকার কথা। আর সংকেতটির প্রকৃত কম্পাঙ্ক উদ্দেশ্যমূলকের ক্ষেত্রে উচ্চ এবং উদ্দেশ্যবিহীনের ক্ষেত্রে নিম্ন হওয়ার কথা। সে হিসেবে উদ্দেশ্যবিহীন সংকেত পাওয়া যেতে পারে ১ গিগাহার্জের কাছাকাছি কম্পাঙ্কে। তবে ১ থেকে ১০ গিগাহার্জ বিশাল একটি ব্যান্ড, পুরোটা নিয়ে কাজ করা কষ্টসাধ্য। তাই এর মধ্যে কোন কম্পাঙ্কে সংকেত আদান-প্রদান সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ সেটাও ভেবে দেখা হয়েছে। ফলাফল হচ্ছে, ১৪২০ মেগাহার্জ এবং এর গুণাঙ্কগুলো। নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন এই কম্পাঙ্কের তরঙ্গ নিঃসরণ করে এবং মহাবিশ্বের এমন কোন স্থান নেই যেখানে এটা পাওয়া যায় না। সবচেয়ে পরিচিত সংকেত বিধায় প্রথম কন্টাক্ট স্থাপনের ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার বেশ বুদ্ধিমানের কাজ।
কার্টিনের গবেষণায় প্রমাণিত হল, ভিএলবিআই এ ধরণের কম্পাঙ্ক এবং ব্যান্ডে বহির্জাগতিক সংকেত পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ভিএলবিআই আসলে কোন নির্দিষ্ট দুরবিন নয় বরং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বেতার দুরবিন দিয়ে একসাথে একটিমাত্র বস্তু পর্যবেক্ষণের উপায়। ধরা যাক দুটি বেতার এন্টেনা দিয়ে একটিমাত্র বস্তু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে- এন্টেনা দুটির দূরত্বকে বলা হয় বেইজলাইন, এন্টেনাদ্বয় যত দূরে হবে বেইজলাইন তত বেশি হবে। নাম, ভেরি লং বেইজলাইন (ভিএলবি), থেকেই বোঝা যাচ্ছে এন্টেনাগুলো অনেক দূরে দূরে অবস্থিত, ক্ষেত্রবিশেষে হাজার হাজার কিলোমিটার বেইজলাইন অর্জন সম্ভব। আর বেইজলাইন যত বেশি দুরবিনের রিজল্যুশন তত বেশি। রিজল্যুশন হচ্ছে দুরবিন কত কাছাকাছি অবস্থিত বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে তার পরিমাপ। ভিএলবিআই-এর রিজল্যুশন বিশ্বের সকল বেতার দুরবিনের মধ্যে সবচেয়ে ভাল।
জি৫৮১ এবং ভিএলবাই নির্বাচনের গুরুত্ব নিশ্চিত করে অবশেষে ২০০৭ সালে কাজ শুরু দেন বিজ্ঞানীরা। সে বছরের ১৯শে জুন ৮ ঘণ্টা ধরে তারকা জগৎটি পর্যবেক্ষণ করা হয়। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করা হয় ২০ সেন্টিমিটারের আশেপাশে। এখানে বলে রাখা ভাল ১৪২০ মেগাহার্জ কম্পাঙ্কের তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২১ সেমি। ২০ এর আশেপাশের সকল তরঙ্গ পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করাই তাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। রিজল্যুশন অনেক বেশি হওয়ার কারণে ভিএলবিআই দিয়ে খুব সহজেই পৃথিবীর সংকেত এবং বহির্জাগতিক সংকেতের পার্থক্য করা যায়। গবেষকদের একজন মজা করে বিবিসিকে বলছিলেন, সংকেত ET নাকি AT&T থেকে আসছে তা বোঝার জন্য ভিএলবিআই-এর বিকল্প নেই। কারণ সেই রিজল্যুশন। রিজল্যুশন যত ভাল সে তত ছোট বস্তু সনাক্ত করতে পারে এবং তত ভালভাবে কাছাকাছি অবস্থিত দুটি বস্তুর পার্থক্য বুঝতে পারে। আকাশের এত ছোট লক্ষ্যবস্তু থেকে আসা সংকেত সে সনাক্ত করতে পারে যে তার সাথে খুব সহজেই পার্থিব সংকেতের পার্থক্য করা যায়।
যাহোক, পর্যবেক্ষণের ফলাফল হিসেবে পাওয়া গেছে অন্তিম শূন্যতা। আলোক দুরবিনের মাধ্যমে বস্তু দেখা হয় আর বেতার দুরবিনের মাধ্যমে বস্তুর শব্দ শোনা হয়। তেমন কোন শব্দ শুনতে পাননি হেইডেন রামপাদারাথ ও তার সহকর্মীরা। তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন ১২৩০ ও ১৫৪৪ মেগাহার্জের মধ্যে এবং তাদের সেনসিটিভিটি ছিল ১.৫৫ মিলিজানস্কি। অর্থাৎ ১.৫৫ মিলিজানস্কির চেয়ে বেশি তীব্রতাবিশিষ্ট সংকেত তাদের সনাক্ত করতে পারার কথা। উল্লেখ্য জানস্কি বেতার তরঙ্গের তীব্রতা পরিমাপের একটি একক। এর মান খুবই ক্ষুদ্র। ১-এর পর ২৬টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা দিয়ে ১ জানস্কিকে গুণ করলে পাওয়া যাবে ১ ওয়াট/বর্গমিটার/হার্জ। এই ব্যাপ্তীর মধ্যে জি৫৮১ সম্পূর্ণ নিরব।
তবে এই নিরবতা দেখে মনোক্ষুণ্ণ হওয়ার কিছু নেই। এই পর্যবেক্ষণের মত আরও হাজার বা লক্ষখানেক পর্যবেক্ষণের পর হয়তো বহির্জাগতিক প্রযুক্তির সাক্ষাৎ মিলবে, হয়তো মিলবে না। হয়তো আমাদের একাকিত্ব ঘুচবে হয়তো ঘুচবে না। ফলাফল যাই হোক যুগে যুগে আমরা গেয়ে যাব নিরবতার জয়গান। কারণ সেই নিরবতার আরেক নাম রহস্য, আর মানুষের যদি উপাস্য বলে কিছু থেকে থাকে তবে তা সেই রহস্য।
তথ্যসূত্র
– The First Very Long Baseline Interferometric SETI Experiment, arXiv
– ‘No signal’ from targeted ET hunt, BBC
:clap
“কোন কম্পাঙ্কে বুদ্ধিমান প্রাণীর নিশানা সন্ধান করা হবে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতৈক্য রয়েছে। ১ থেকে ১০ গিগাহার্জ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গগুলোকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়।”
কেন?
চমৎকার লেখা! লেখককে ধন্যবাদ!
স্বল্প চেষ্টা বলতে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে? এটা কি মহাবিশ্বের বিশাল ব্যাপ্তির নিরিখে বলা হচ্ছে? নাকি মানুষের এ পর্যন্ত অর্জিত জ্ঞান ও প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করছে? এমন কি বলা যেতে পারে যে, মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অমুক স্তরে পৌঁছালে, বিজ্ঞানীরা আরও অধিক চেষ্টা করতে পারতেন? তাছাড়া, নিশ্চিত বাসযোগ্য যে ৪৬ টি গ্রহকে গবেষণার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, সেগুলোর ব্যাপারে সেটির গবেষণা কি চূড়ান্ত? নতুন প্রযুক্তিগত গবেষণা সেটির সাম্প্রতিক গবেষণালব্ধ ফলকে ভুল প্রমাণ করতে পারে?
এর মধ্যে যদিও মাত্র ৭৭১ টি আবিষ্কৃত হয়েছে, তবু গাণিতিক হিসাব করে বলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে প্রায় ১৬০০ কোটি গ্রহের অস্তিত্বের কথা। এখন একই ধরণের গাণিতিক পদ্ধতির প্রয়োগে বিজ্ঞানীরা কি বলে দিতে পারেন, নিশ্চিত বাসযোগ্য গ্রহের অনুমিত সংখ্যা?
বহির্জাগতিক প্রযুক্তি নিয়ে চমৎকার এই লেখার জন্য অভিনন্দন। আশা করছি আরো লিখবেন ভবিষত্যে। (F)
SETI গবেষণা নিয়ে অনেকটা এরকমই উপসংহার লিখেছিলাম আমরাঃ
মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তা খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা বিজ্ঞানের জগতের সবচেয়ে বড় জুয়াখেলা। কেউই জানে না এই গবেষণার ফলাফল কী হবে। হয়তো এই মহাবিশ্ব প্রাণশূন্য, আমরা ছাড়া আর কোনো প্রাণীর অস্তিত্বই হয়তো নেই কোথাও। আমরা যদি ‘সেটি’ অনুসন্ধান চালিয়ে যাই এবং ক্রমান্বয়ে উন্নতি করতে থাকি, যেমন দিন দিন যদি চ্যানেল সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলে হয়তো একদিন আমরা বর্তমানের চেয়ে আরো দক্ষ অনুসন্ধান চালাতে পারবো। কয়েকশো বছর পরেও যদি দেখা যায় যে কোনো সংকেতই পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, এই মহাবিশ্বে আমরাই একমাত্র বুদ্ধিমান সত্তা। তবে সেই আবিষ্কারও মহাজাগতিক প্রাণি আবিষ্কারের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা তখন আমরা উপলব্ধি করতে পারবো যে, এই মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক আমাদের এই প্রিয় গ্রহটি অনন্যসাধারণ এবং সেই সাথেও জীবনও মহাবিশ্বে দুর্লভ। কাজেই, এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আমাদেরই কর্তব্য।
এখন পর্যন্ত অনন্ত মহাবিশ্বের মাত্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে পরিচালনা করা হয়েছে অনুসন্ধান। বিশাল মহাবিশ্বের প্রায় পুরোটাই রয়ে গেছে মানুষের বোধ ক্ষমতার বাইরে। সেখানে কী আছে আর কী নেই, সে সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুবই অপ্রতুল।
লেখাটা এক নিশ্বাসে শেষ করেছি। খুবই সহজ ভঙ্গিতে বোধগম্য করে লেখা। সত্যিই খুব ভাল লেগেছে। সব শেষের বক্তব্যটা ভাল লেগেছে- রহস্যই ঈশ্বর। সেই ঈশ্বরকে জানার অদম্য ইচ্ছা মানুষের থাকবে চিরকাল।
একই ধারনা আমার মাথাতেও কয়েক বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। সাবলীল ভাষার এই লেখাটির জন্যে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
মহাবিশ্বে “প্রাণের অস্তিত্ব” খুবই স্বাভাবিক কিন্তু “উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী প্রাণের” অস্তিত্ব বিরল হওয়ারই সম্ভাবনা। তাছাড়া আমরা খুঁজছি আমাদের প্রযুক্তির সমমানের/অনুরূপ প্রযুক্তির অধিকারী কোন প্রাণীর অস্তিত্ব – নি:সন্দেহে তা আরও দুর্লভ। এই বিশাল মহাবিশ্বে আলোর গতিবেগে ভ্রমণ করেও যেখানে শত/হাজার/মিলিয়ন/বিলিয়ন বছর পথ পাড়ি দিতে হবে সেখানে আমাদের বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমে কতটুকু স্থানই বা আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে পারবো? সব মিলিয়ে বর্তমান প্রযুক্তিতে আমাদের সমমানের বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
এ ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী নয় এমনতর খুবই সাধারণ প্রাণের অস্তিত্ব(যেমন: ব্যাকটেরিয়া জাতীয়), খোঁজার জন্য আদৌ কোন প্রযুক্তি আজকের বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পেরেছে কিনা জানতে আগ্রহী।
কৌতূহলোদ্দীপক চমৎকার এমন একটি লিখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। (Y) (F)
Dr. Neil DeGrasse এই ভিডিও ক্লিপটিতে খুব সুন্দরভাবে এ বিষয়টি বুঝিয়েছেন(৭ মিনিটের পর)।
httpv://www.youtube.com/watch?v=rDRXn96HrtY&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=rDRXn96HrtY&feature=related
আচ্ছা এমনও তো হতে পারে আমরা যে বেতার তরঙ্গ নিয়ে কাজ করি তারা সে ধরনের তরঙ্গ নিয়ে কাজ করে না। মানে যাদেরকে আমরা অতি উন্নত ইটি হিসেবে ধরছি। আমাদের বেতার তরঙ্গ আলোর গতির সমান গতি সম্পন্ন। এ হিসাবে উক্ত জি৫৮১ডি স্টার সিস্টেমে যদি কোন অতি উন্নত সভ্যতার জীব থেকে থাকে আর তারা আমাদের ব্যবহৃত বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে তাহলেও তো তা পৃথিবীতে আসতে ২০ বছর সময় লাগবে। এ ধরনের তরঙ্গ পাঠিয়ে যদি তারা আমাদের পৃথিবী বা সূর্যকে পর্যবেক্ষন করতে চায় তাহলে ফিরতি তরঙ্গ পেয়ে তা বিশ্লেষণ করতে সময় লাগবে ৪০ বছর। আমাদের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। সেসব উন্নত জীব ৫০০ বা হাজার বছরও যদি বাঁচে তাহলেও শুধু একটা ফিরতি তরঙ্গ পেতে তাদের কাছে ৪০ বছরও অনেক সময়। সুতরাং এ ধরনের অতি দীর্ঘ সময় ক্ষেপন কারী পদ্ধতিতে তারা কেন আমরাও আগ্রহী হবো না। সে ক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতি হতে হবে আলোর গতির চাইতে বেশী গতির কোন তরঙ্গ ব্যবহার। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মোতাবেক যা আবার অসম্ভব। অথচ কোয়ান্টাম লেভেলে এ তত্ত্ব অচল। অর্থাৎ কোয়ান্টাম তত্ত্ব কিন্তু আলোর গতির চেয়ে বেশী গতির ভবিষ্যদ্বানী করে। অতি উন্নত সভ্যতার জীব কোয়ান্টাম লেভেলের তত্ত্বকে বিশাল ক্ষেত্রে ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করে থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে যদি তারা এ ধরনের আলোর গতির বেশী গতির তরঙ্গ ব্যবহার করে তা আমাদের তরঙ্গ ধরার যন্ত্রে ধরা না পড়ারই কথা। তার অর্থ কি ? এর অর্থ আমাদের পৃথিবীতে প্রতি মুহুর্তে এ ধরনের তরঙ্গ বিপুলভাবে আছড়ে পড়ছে , অথচ আমরা অন্ধ বলে তা দেখতে পাচ্ছি না। এটা অনেকটা অন্ধ মানুষের নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সৌন্দর্য দেখার মত। জল প্রপাতের সামনে দাড়িয়েও সে দেখতে পায় না কিছুই। সুতরাং আমার কাছে মনে হয় এভাবে বাস্তবে পরীক্ষা পর্যবেক্ষনের পাশাপাশি তাত্ত্বিক পদার্থ বিদ্যার আরও উন্নতি দরকার। যা আমাদেরকে আলোর গতির বহুগুন গতিতে চলার উপায় দেখাবে।
এ সম্ভাবনার অন্য পিঠ এরকম। হয়ত কোথাও সেরকম উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠে নাই। বড়জোর আমাদের মত সভ্যতা গড়ে উঠতে পারে যাদের সম্বল ঐ আলোর গতির মত সম্বুক গতির (?) তরঙ্গ। এ ধরনের তরঙ্গ কোটি কোটি কিলোমিটার দুরে পাঠানোর মত যন্ত্র যেমন আমরা এখনও তৈরী করতে পারিনি , তারাও তেমনি পারেনি। ফলে আমরা যেমন পারছি না তাদের তরঙ্গ ধরতে , তারাও তেমনি আমাদেরটা ধরতে পারছে না, কারন তরঙ্গ কারো কাছে পাঠানোর মত সামর্থ্যই কারো নেই।
@ভবঘুরে, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার উন্নতির প্রয়োজনীয়তার সাথে আমিও একমত।
তবে আমাদের বর্তমান পর্যবেক্ষণও চালিয়ে যাওয়া উচিত। যোগাযোগ স্থাপন হয়ত সম্ভব না কিন্তু অস্তিত্ব অনুধাবন সম্ভব। ৪০ বছর হয়তো লাগল, কিন্তু প্রতিনিয়ত সংকেত পাঠাতে থাকলে টাইম ল্যাগ থাকলেও অস্তিত্বের জানান দেয়া সম্ভব। আমরা বেতার তরঙ্গ পাঠাতে শুরু করেছি ৮০ বছর আগে। তার মানে আমাদের প্রাচীনতম সংকেত কেবল ৮০ আলোকবর্ষ দূরে পৌঁছেছে। ৮০ আলোকবর্ষের মধ্যে যদি কোন বুদ্ধিমান সভ্যতা থাকে তবেই কেবল তারা জানতে পারবে আমরা আছি। এর চেয়ে দূরের অধিবাসীদের কাছে পৃথিবী এখনও বিরান গ্রহ। এটা যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা।
কিন্তু যদি আমরা ধরে নেই, অন্তত বেতার সবাই তৈরি করতে পারে তাহলে যত আগেরই হোক তা আমাদের সনাক্ত করতে পারার কথা। ধরলাম ২০ হাজার আলোকবর্ষ দূরের কোন বুদ্ধিমান বেতার সংখেত আমরা সনাক্ত করলাম। তার মানে ২০ হাজার বছর আগেই তারা এতোটা উন্নত ছিল। এরপরে কি হয়েছে তাদের সেটা জানার কোনই উপায় নেই, কিন্তু অন্তত ২০ হাজার বছর আগে এটা ছিল জানার মধ্যেও আছে বিশাল অর্জন।
চমৎকার! এরকম প্রাঞ্জল করে লিখলেই না পড়ার আগ্রহ জাগে! (F)
আচ্ছা, প্রাযুক্তিক প্রাণীর সন্ধানে রেডিও বা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ছাড়া অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় কি?
@প্রতিফলন, লেজার এবং গামা রশ্মির কথা বিবেচনা করেছেন অনেকে। কিন্তু লেজার খুব বেশি একদিকমুখী হওয়ায় সামান্য আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিতে ঢাকা পড়ে যেতে পারে। এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। বেতারের বিকল্প এখনও খুব একটা নেই।
চমৎকার লেখা। আচ্ছা প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে আপনার কি মত? অণু-পরমাণুর কনফিগারেশনের সংখ্যা যেহেতু সসীম তাই মহাবিশ্বের সংখ্যা অসীম হলে হলে অবশ্যই অন্য কোনো মহাবিশ্বে আমার মত আরেকটা পৃথিবী আছে যেখানে আমাদের ক্লোন আছে,কতদূরে গেলে এই পৃথিবীটা পাওয়া যাবে তাও হিসাব করা বলা যায়, এই ব্যাপারগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীদের সর্বশেষ মতামত কি?
অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে আপনার লেখাগুলোর তুলনা নেই, সামনে আরো লেখা আশা করছি (Y) ।
@রামগড়ুড়ের ছানা, আসলে প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে আমার দৌঁড় খুব সীমিত। আসলে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বইয়ে ব্যাপারটাকে যত আকর্ষণীয় মনে হয়, বিশ্বতত্ত্বের গণিতের পাল্লায় পড়ে তা অনেকটাই মিইয়ে যায়, মানে যদি গণিতের ব্যাকগ্রাউন্ড অনেক ভাল না থাকে। আমার অবস্থা তেমনই। এই বিষয়ে তাই কনক্রিট কোন মতামত দিতে পারছি না, বলতে পারেন আমিও আপনার মতোই পাঠক এবং ভাবুক, ভাবি কিন্তু কূল-কিনারা করে উঠতে পারি না। আর নিশ্চিত জানতেই হবে এমন কোন কথা তো নেই, সম্ভাব্যতা নিশ্চয়তার চেয়েও আকর্ষণীয়।
@শিক্ষানবিস,
আরেকটা প্রশ্ন ছিলো(হয়তো একটু বোকার মতো শোনাবে)। বহু দূরের নক্ষত্রের আলো,আলোর বিচ্যুতি ইত্যাদি মেপে বিজ্ঞানীরা সেই নক্ষত্রটি সম্পর্কে বলতে পারে,নক্ষত্রটি কত বড়,আশে-পাশে গ্রহ আছে নাকি এগুলোও জানা যায়,এখন কথা হলো চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এত সিগন্যাল,এত ধরণের আলোর মধ্যে একটি বিশেষ নক্ষত্রের আলো কিভাবে আলাদা করা হয়? ডাটাকমিউনিকেশন পড়ার সময় জেনেছি কিভাবে সিগন্যালের ইরোর ডিটেকশন করা হয়,কিন্তু তাতে রিসিভারের সাথে সেন্ডারেরও ভূমিকা থাকে, এক্ষেত্রে ব্যাপারগুলো কিরকম?
@রামগড়ুড়ের ছানা, ব্যাপারটা আসলে নির্দিষ্ট একটি বস্তুর দিকে তাকানো ছাড়া আর কিছু না। কোন বস্তু দেখা মানেই সেই বস্তু থেকে আমার কাছে আলো আসছে, ধরা যাক আমরা আকাশের একটি ছোট অংশে দুরবিন তাক করলাম, আমাদের ফিল্ড অফ ভিউ-এ যত তারা আছে সবগুলোর ছবিই উঠে যাবে, যত বেশি সময় দুরবিন ওদিকে রাখা হবে, তারাগুলো থেকে তত বেশি ফোটন সিসিডি-তে সংগৃহীত হবে। তারার আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু যে ফোটনগুলো সরাসরি দুরবিনের দিকে আসছে সেগুলোই সিসিডিতে ছাপ ফেলে। যথারীতি একেক তারার ফোটন সিসিডির একেক পিক্সেলে পড়ে। একই পিক্সেলের মধ্যে যদি একাধিক তারার আলো পড়ে তাহলে আলাদা করা কষ্টকর হবে, এ থেকেই দুরবিনের রিজল্যুশনের ধারণা এসেছে। রিজল্যুশনের মান যত কম তত কাছাকাছি অবস্থিত তারার মধ্যে দুরবিনটি পার্থক্য করতে পারে।
আর তারা থেকে আলো সরাসরি আমাদের কাছে আসার পথে বেশ কিছু বাঁধা অতিক্রম করে। প্রধান বাঁধা হচ্ছে আমাদের ছায়াপথের আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম। এই মাধ্যমের ঘনত্ব খুবই কম। তারপরও কোনদিকে তাকালে এই মাধ্যমের ঘনত্ব কত পাওয়া যায় তা হিসাব করে বের করা হয়েছে। ঘনত্ব এবং তারা থেকে দুরবিনের দূরত্ব জানা থাকলে তারা এবং দুরবিনের মধ্যে, অর্থাৎ আমাদের লাইন অফ সাইটে কি পরিমাণ আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস আছে তা জানা যাবে। এই পরিমাণ গ্যাস কতটুকু আলো শোষণ বা বিচ্ছুরণ করে সেটা বের করে ফেলা যাবে। সেটুকু বিয়োগ করে দিলেই তারার প্রকৃত উজ্জ্বলতা বের হয়ে আসে। আবার তারা যত দূরের তার আপাত উজ্জ্বলতা তত কম হবে। কিন্তু দূরত্ব জানা থাকলে আপাত উজ্জ্বলতা থেকে প্রকৃত উজ্জ্বলতা বের করা কোন ব্যাপার নয়।
তবে গ্রহ সনাক্ত করার সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি তথা ট্রানজিট এর জন্য প্রকৃত উজ্জ্বলতা জানার দরকার পড়ে না। আপাত উজ্জ্বলতা মাপা হতে থাকে, হঠাৎ যদি কিছু সময়ের জন্য তারার উজ্জ্বলতা কমে যায় তাহলেই ধরতে হবে সামনে দিয়ে কোন অনুজ্জ্বল বস্তু অতিক্রম করেছে। উজ্জ্বলতা কতটুকু কমেছে এবং কতটুকু সময়ের জন্য এই কমতি ঘটেছে তা জানা থাকলেই সামনে দিয়ে অতিক্রান্ত বস্তুর গতিবেগ, ভর, তারা থেকে দূরত্ব বের করা যায়। তারা থেকে বস্তুটির দূরত্ব যদি খুব কম হয় তাহলে নিশ্চিত ধরে নিতে হবে সেটি একটি গ্রহ। আরেকটি তারা হলে উজ্জ্বলতা কমার কথা নয় বরং আরও বেড়ে যাওয়ার কথা।
কিছুটা বললাম, তবে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ নিয়ে আরও অনেক অনেক লেখা যায়, ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে। প্রশ্ন থাকলে করতে ইতস্তত কইরেন না। উত্তর দিতে গিয়ে আমারও যেমন আরও ঝালাই করা হবে ব্যাপারগুলো, তেমনি বাংলায় এ নিয়ে কিছু লেখাও উঠে আসবে।
(Y)
একদম চমৎকার!
@সৈকত চৌধুরী, ধন্যবাদ
আপনার ব্লগ সুবর্ণরেখাকে ফলো করি অনেকদিন ধরেই। দারুন! অভিনন্দন, আপনার পড়াশোনার বিষয়ে লেখালেখি শুরু করার জন্য। আমার তো তারচেয়েও বেশী খুশি লাগে, একজন মানুষ মহাকাশকে জানার চেষ্টা করে দেখে, আর সে আমাদের চেনাশোনা একজন 🙂
কিছুই জানতাম না অ্যাস্ট্রোফিজিক্স সম্পর্কে, আশা করি আপনার লেখা থেকেই জানার পথটা মসৃণ হয়ে যাবে। 🙂
Search for Extra-Terrestrial Intelligence প্রকল্পটি কি এখনো চলছে? যদি চলে থাকে, এখন ফান্ডিং দিচ্ছে কারা?
(F)
@নীল রোদ্দুর, সুবর্ণরেখা পড়েন জেনে ভাল লাগল। থাম্বস আপের জন্য ধন্যবাদ।
আসলে সেটি এখন আর কোন নির্দিষ্ট প্রকল্প নেই বরং বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার যেকোন অনুসন্ধানকেই সেটি বলা হয়। সেটি ইনস্টিটিউট এবং অ্যামেরিকার অন্যান্য সেটি প্রকল্পে কাজ আগের চেয়ে না বাড়লেও অবস্থা বিশেষ খারাপ নয়। সম্প্রতি Allen Telescope Array -র অনেকগুলো অ্যান্টেনা সেটির কাজে লাগানোর জন্য নাসা নতুন করে ফান্ডিং দিয়েছে। এই ATA দিয়েও কেপলারের সনাক্তকৃত গ্রহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আর বিশ্বের অনেক স্থানেই টুকরো টুকরো গবেষণা চলছে। এই লেখায় যার কথা লিখলাম সেটা অস্ট্রেলিয়ার প্রজেক্ট।
চমৎকার একটা টপিক নিয়ে লেখা। আমি আর ফরিদ ভাই মিলে একসময় একটা বই লিখেছিলাম ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ নামে। সেই বইটার বহির্জগতে প্রাণের অনুসন্ধানের অংশটুকু ছিলো ফরিদ ভাইয়ের লেখা। তোমার এ লেখা দেখে ফরিদ ভাইয়ের সেই লেখাগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।
আচ্ছা, ফার্মির সেই বিখ্যাত ধাঁধা সম্পর্কে তোমার অভিমত কি? সেই যে ম্যানহাটন প্রজেক্টে ফার্মি আলোচনার গোলটেবিলে বলেছিলেন –
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/06/alien_colony_jpeg.jpg[/img]
আমরা অবশ্য আমাদের বইয়ে স্টিফেন ওয়েবের পঞ্চাশটা সমাধানের কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, তারপরেও তোমার অভিমত জানতে চাইছি এ ব্যাপারে। 🙂
নীরবতার জয়গান না গেয়ে অনুসন্ধানের জয়গান গেলে কেমন হয়? 🙂
@অভিজিৎ, ফার্মি প্যারাডক্স আসলেই খুব জটিল, হতাশ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। সমাধান জানা না থাকলেও অনুমান কিন্তু কিছু করা যায়। বেশ কিছু সম্ভাবনা লিখি, ১ থেকে ৫ নম্বর দিলাম। ১ মানে সবচেয়ে আশাবাদী হিসাব আর ৬ মানে চূড়ান্ত নৈরাশ্যবাদী:
১. ওরা সবার সাথে যোগাযোগ করে না, নির্দিষ্ট পরিমাণ উন্নত হতে পারলেই তবে মহাজাগতিক সম্রাজ্যে যোগ দেয়া যায়
২. ওরা যোগাযোগ করতে আগ্রহী নয়
৩. উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সভ্যতা নিজেদের সংকটে ধ্বংস তথা বিলুপ্ত হয়ে যায়
৪. আন্তঃনাক্ষত্রিক ভ্রমণ আমরা যত সহজ ভাবছি ততোটা সহজ নয়
৫. উন্নত প্রযুক্তি অর্জনকারী সভ্যতার সংখ্যা বেশি নয়
৬. আমাদের ছায়াপথে অন্য কোন প্রাযুক্তিক সভ্যতা নেই
আমি চূড়ান্ত আশাবাদী, মানে ১। 😀
নিরবতা বা রহস্যের একটা consequence হিসেবে যদি অনুসন্ধান কে ধরি তাহলে আসল রহস্যের জয়গান গাওয়াই বেশি ভাল মনে হয় 😀
আমার পড়া জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রথম সিরিয়াস বই ছিল “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী” এবং “মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে”। আপনাদেরকে সারা জীবন ধন্যবাদ দিলেও যথেষ্ট হবে না… 🙂
@শিক্ষানবিস,
সিরিয়াস বই, কিন্ত নন-সিরিয়াস সরস ভাষা! আমার অনেক দিনের জমানো প্রশ্নের উত্তর পেয়েছিলাম “মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে” বইতেও। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের কিশোরদের হাতে যদি এই বইগুলো তুলে দেয়া যেত, তাহলে তাদের স্বপ্নের পরিধিও মহাকাশ ছুঁত! গতানুগতিক পাঠ্যপুস্তকগুলো বিজ্ঞানের নিয়মগুলোকে শুধু মুখস্ত করতে শেখায়, বিজ্ঞানকে ভালবাসতে ও কল্পনার জগতকে বিস্তৃত করতে তাদের ভূমিকা সামান্যই!
শিক্ষানবিস
৭৭১টি আবিষ্কৃত গ্রহগুলির মধ্যে কী এই ৪৬টা গ্রহ বাসযোগ্য হিসেবে মনে করা হচ্ছে? গ্রহের চারপাশে তরল পানির অস্তিত্বই কী কোন গ্রহের বাসযোগ্য হওয়ার জন্য একমাত্র ক্রাইটেরিয়া?
জ্যোতির্বিজ্ঞানের লেখগুলো নিয়ে আমার একটাই অসুবিধা, এমন সব বড় বড় নম্বরের (১০০০ কোটি, ১৬০০ কোটি…) কথা বলে যে পড়ার আগেই মাথাটা জ্যামায় যায় 🙂 ।
আর একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ‘ফালতু’ সব বিবর্তনের লেখা ছেড়ে তুমি আরও বেশী করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর লেখা লেখ না কেন?
@বন্যা আহমেদ,
হ্যা, ৭৭১ টির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৬টিকে বাসযোগ্য মনে করা হচ্ছে। তবে তরল পানির অস্তিত্বই একমাত্র শর্ত নয়। তরল পানির অস্তিত্ব আবশ্যিক শর্ত, তবে আরও কিছু শর্ত লাগবে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে তরল পানি থাকতে গেলে আরও অনেকগুলো শর্ত পালন করতে হয়, যেমন নির্দিষ্ট ব্যপ্তির বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ইত্যাদি। কিন্তু পৃথিবীর মত তরল পানি না থাকলেই যে জীবন থাকতে পারবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অনেক বৈরী পরিবেশেও প্রাণের বিকাশ ঘটতে পারে। আপাতত, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর মত প্রাণের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছেন।
@বন্যা আহমেদ, হ্যা বন্যাপা সংখ্যা দেখে আমারও মাথা ঘুরে যায়।
বিবর্তনকে ফালতু বলেন কেন? আমার তো বিবর্তন নিয়ে লিখতে বেশি ভাল লাগে, কিন্তু সেটা বেশি কষ্ট। যেহেতু জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়ি সেহেতু এটা এক্সট্রা স্টাডি না করেও লিখে ফেলা যায়… 😀