[মডারেটরের নোট – অধ্যাপক অজয় রায়ের এ লেখাটি মা দিবসের জন্য লিখিত হয়েছিলো। কিন্তু আমাদের কাছে একটু বিলম্বে এসে পৌঁছায়। প্রকাশিত হতে আরো কয়েকদিন বিলম্ব হল। অনিচ্ছাকৃত এ বিলম্বের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি]
:line:
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বর্ষান্তের চৈত্র মাসের শেষ দিনকে অভিহিত করা হয় চৈত্র সংক্রান্তি নামে। সাধারনভাবে শেষ দিনটি হয়ে থাকে ৩০শে চৈত্র। বাংলা একাডেমী সংস্কারায়িত বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরের প্রথম পাঁচ মাস (বৈশাখ – ভাদ্র) গণনা করা হয় ৩১ দিনে, বাকী ৭ মাস ৩০ দিনে। সে হিসেবে ৩০শে চৈত্রকে ধরা হবে চৈত্র সংক্রান্তি। অন্যদিকে ভারতীয় বাংলা পঞ্জিকাকারগণের পুরানো হিসেব মতে দিনটির তারতম্য হতে পারে, আবার মিলেও যেতে পারে কাকতালীয়ভাবে। যেমন ১৪১৪ সালের লোকনাথ ডাইরেক্টরী মতে চৈত্র মাস ত্রিশ দিনের বাংলা একাডেমীর সাথে একই দিনে পড়েছে (১৩ই এপ্রিল ২০০৮ রবিবার)। এবার অর্থাৎ ১৪১৮ সালের ৩০শে চৈত্র পড়েছে ১৩ই এপ্রিলে তবে বারটি হচ্ছে শুক্রবার। আমাদের সংস্কারায়িত বর্ষপঞ্জির বিশেষত্ব হচ্ছে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলির সাথে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের সাথে প্রাষঙ্গিকতা বজায় থাকে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত অনেক বাংলা ক্যালেন্ডারের সাথে আমাদের দিনের কোন কোন সময় ব্যতয় ঘটে। তবে সংস্কারায়িত শকাব্দের সাথে খুব একটা বিরোধ ঘটে না, কারণ এটি সংস্কারায়িত হয়েছে ড. মেঘনাদ সাহার বৈজ্ঞানিক সুপারিশ ক্রমে যা বাংলা একাডেমীও গ্রহণ করেছিল আমাদের বর্ষপঞ্জি সংস্কার কালে। আমাদের সাথে পশ্চিম বঙ্গীয় বাংলা পঞ্জিকার বড় অনৈক্য ঘটেছে ১লা বৈশাখের প্রাতিষঙ্গিকতাকে কেন্দ্র করে – ওরা ১লা বৈশাখ করে অধিকাংশ সময় ১৫ই এপ্রিলে আবার কখনও পালন করে ১৪ই এপ্রিলেও, আর আমরা সব সময় করে থাকি ১৪ই এপ্রিলে প্রতি বছর। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের সাধারন নাগরিকেরা বিভ্রান্ত হয়। তবে বৃহত্তর স্বার্থে এটুকু অসামঞ্জস্য আমাদের মেনে নিতে হয়েছে। তারতম্যের আরও কয়েকটি নমুনা দিই –
হিন্দুরা এ দিনটিকে অত্যন্ত একটি পুন্যদিন বলে মনে করে। এছাড়া সাধারনত এই বসন্তকালে বাসন্তী দেবী ও অন্নপূর্ণাদেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে দিনটিকে গণ্য করা হয় মহবিষুব সংক্রান্তি নামে। হিন্দুরা পিতৃপরুষের তর্পন করে থাকে, নদীতে বা দিঘীতে পুন্যস্নান করে থাকে।
ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের পরিবারে মহা ধুমধামের সাথে চৈত্র সংক্রান্তি পালিত হত। ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে পিতৃদেব নদীতে পুন্য স্নান সেরে সূর্য উপাসনা করতেন, পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে স্মৃতি তর্পন করতেন অনেক্ষণ ধরে। অনেক হিন্দুকে দেখেছি পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পিন্ডিদান করতেও। মা সকাল থেকেই স্নান সেরে সুন্দর শাড়ী পড়ে নানা ধরনের সুন্দর সুন্দর রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। সংক্রান্তির আগের দিন রাতভর নানা মিষ্টি, বিশেষ ধরনের পিঠা, খৈ, মুড়ি আর তিলের ও চিড়ের লাড়– তৈরী করতেন। সকালে চমৎকার লাল-শাড়ী পড়া মাকে অপূর্ব সুন্দরী মনে হত। আমরা মার আশে পাশে ঘুরঘুর করতাম মিষ্টি আর মিষ্টান্নের লোভে। প্রসন্নময়ী মা আমাদের নিরাশ করতেন না। বিতরণ করতেন দরাজ হাতে।
আমার দাদা বলে উঠতেন ‘মা প্রতিদিন তুমি এত সুন্দর হতে পার না, হতে পার না এরতম দয়াময়ী।’ মা কৃত্রিম রাগে দাদাকে বকতেন, আর পরক্ষণেই চুমুতে ভরে দিত দাদার মুখ। আমরাও বঞ্চিত হতাম না মায়ের সুখস্পর্শ থেকে। বাবার পিতৃব্য সংক্রান্তির দিন সকালে স্নান সেরে মাকে প্রথমেই কাছে ডেকে এনে মাথায় হাত রেখে অনেকক্ষণ ধরে কী সব মন্ত্র আউড়িয়ে মাকে আশীর্বাদ করতেন। প্রতি বছরই এই ছবির পুনরাবৃত্তি ঘটত। মা তাঁকে ভক্তি ভরে প্রণাম সারলে ঠাকুর্দা বলতেন ‘মা তোমাকে আজ দেবী অন্নপূর্ণার মত সুন্দরী লাগছে। তারপর চিবুক ছুয়ে বলতেন, ’চিরআয়ুস্মতী ভব’। গৌড়বর্ণা মা লাজে আরও রক্তিম হতেন। মা’ই ছিলেন আমাদের কাছে সকল আনন্দের, সকল সুখের কেন্দ্রবিন্দু। বাবা অনেকটাই দূরের মানুষ ছিলেন, স্নেহ পরায়ণ হলেও।
মা সেদিন অনেক ধরনের ব্যঞ্জনাদির সাথে অনেক পদের শাক রান্না করতেন। অনেকগুলি শাকই থাকত ওষুধি গুণযুক্ত। মা এসব কোত্থেকে শিখেছিলেন জানি না, অথচ তাঁর শ্বাশুড়ী, মা এই পরিবারে পুত্রবধূ হয়ে আসার ২-৩ বছরের মধ্যে মারা যান, প্রশিক্ষণ পাওয়ার খুব সুযোগ পেয়েছিলেন বলে মনে হয় না। মার মুখেই শুনেছি, মা যখন এ সংসারে এলেন তখন ছিলেন অষ্টাদশী। মা একদিন গল্পচ্ছলে আমাদের ভাইবোনদের বলেছিলেন, ‘জানিস, আমি যখন এ সংসারে এলাম কালাজ্বর থেকে সদ্য সেরে ওঠা, আমার গাত্রবর্ণ দেখে শ্বাশুরী-ননদদের মুখ আমার আপাত কালো বর্ণের চেয়েও কালো হয়ে উঠেছিল।’ এই বলে মা হাসিতে লুটিয়ে পড়তেন। তারপর প্রসাধন চর্চায় কালাজ্বরের প্রভাবে ‘কালাভাব’ ২-১ মাসের মধ্যে সরে গিয়ে মা তাঁর আদি গৌড়বর্ণ ফিরে পেলে, তখন পরিবারের মেয়ে-সদস্যদের হাসি দেখে কে, এই বলে মা আবার হাসিতে গড়িয়ে পড়তেন। আমরা আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠতাম।
চৈত্র সংক্রান্তির দিনে আমাদের বাসায় একটি রীতি ছিল সেদিন সকালে আমরা সবাই প্রাতঃরাশ শুরু করতাম নানা ধরনের ছাতু খেয়ে। ছাতুর গোল্লা তৈরী হত গুড়, দৈ বা দুধের মিশ্রণে, অনেক সময় কলাও মেশানো হতো। দাদা ও আমার ঠাকুরদার চাহিদা ছিল এর সাথে অতি অবশ্য গুড়ের সন্দেশ থাকতে হবে। আমরা তৃপ্তির সাথে খেতাম। ছাতুর প্রকার ছিল – ছোলা বা বুট, পয়রা বা যব, মাকই বা ভুট্টা এবং সুগন্ধী চালের গুড়ো দিয়ে তৈরী ছাতু। মা এতো সব কখন বানাতেন আমরা বুঝতে পারতাম না। মার অবশ্য একজন সার্বক্ষণিক বালবিধবা সহায়িকা ছিলেন, যাকে আমরা ডাকতাম ‘তনু দি’, আর এক জন পরুষ সহায়ক ছিলেন- মার সাথে পিত্রালয় থেকে আসা নেপালী সহচর ‘বুনিয়াদ সিং‘। আমরা সিং কাকু ডাকতাম। তার কাছে আমাদের সবচাইতে আকর্ষণীয় একটি দ্রব্য ছিল তীক্ষ্ণধার ‘ভোজালী’।
এ দিন আর একটি রীতি পালন করা হতো বেশ নিষ্ঠার সাথে। তা’হলো, নান প্রকারের ওষুধি গাছের পাতা ও শিকড় একত্রে বেধে সুতো দিয়ে প্রতিটি ঘরের দরজার মাথায় ঝুলিয়ে দেয়া হতো এক বছরের জন্য। এ সব সংগ্রহে মাকে সহায়তা করতো সিং কাকু, নানা বনজঙ্গল ঘেটে তিনি সংগ্রহ করতেন। অবশ্য বাবারও এ ব্যাপারে খুব উৎসাহ ছিল। আমরাও প্রবল উৎসাহে গাছ গাছালি সংগ্রহে লেগে যেতাম। এক ধরনের ছোট গাছের কথা আমার এখনও মনে আছে – তাকে আমাদের অঞ্চলে বলা হতো ‘বিষ কুটুলি’। তা ছাড়া থাকত নিমের পাতা, হলুদ গাছের চাড়া, রসুনের গাছু বা পাতা। যত্নের সাথে ঝোলানোর পর, মা দরজার ওপরের আনুভূমিক কাঠটির মাঝখানে, পাঁচটি করে সিন্দুর আর চন্দনের ফোটা লাগিয়ে দিতেন সুন্দর করে। আর থাকতো স্বস্তিকা চিহ্ণ হিন্দুর সব অনুষ্ঠানে মঙ্গলের প্রতীক রূপে। তাছাড়া বাড়ির মেঝেতে আঁকা হতো জল মিশ্রিত চালের গুড়ো দিয়ে শ্বেত শুভ্র ‘আলপনা’। সেদিন দুপুরে নানা পদের নিরামিষ দিয়ে আমাদের চমৎকার দ্প্রিাহরিক ভোজন সমাপ্ত হতো। কিছু অতিথি সব সময় থাকতেন। এ সবের পেছনেই থাকতো মার ভূমিকা। মাকে কেন জানি আমার মনে হতো দশভূজা দুর্গা। সবদিক থেকেই আমাদের পরিবারটিকে মনে হতো যেন একাই রক্ষা করে চলেছেন। মা যেদিন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, শয্যাপার্শে আমি ছাড়া কেউ ছিলেন না, পিতৃদেব কয়েক বছর আগেই চলে গেছেন, – যখন বললাম ‘মা আমাদের কে দেখবে ?‘ বাকরুদ্ধ মা কেবল মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন। সেই জগজ্জননী মাকে আমার বারবার মনে পড়ে চৈত্র সংক্রান্তি এলে। পরিবর্তিত পরিবেশে, নাগরিকতার চাপে আমরা আর কেউ সেদিনের মত চৈত্রের শেষ দিনে মহাবিষুব সংক্রান্তি উৎসব পালন করতে পারি না।
চৈত্রের শেষ দিনে আমাদের আর একটি আকর্ষনীয় দর্শনী ছিল একটি খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত চড়ক পূজো। একটি সুউচ্চ বাঁশের পোলের উপরে স্থাাপিত আর একটি আনুভূমিক বাশের লিভারের এক প্রান্তে একটি জলজ্যান্ত মানুষের পিঠে বড়শির হুক দিয়ে আটকিয়ে তাকে ঝুলিয়ে দেয়া হত- আনুভূমিক বাশটির অন্য প্রান্তটি দিয়ে ঝুলন্ত মানুষটিকে বন বন করে ঘোরানো হত। আমরা বিস্ফারিত লোচনে অবাক হয়ে দেখতাম আর ভয়ে শিহরিত হতাম। সে এক ভয়ানক রোমঞ্চকর অনুভূতি।
চৈত্র সংক্রান্তির একটি জ্যোতির্বৈদ্যিক দিক আছে। তবে আজকের আলোচনায় সে প্রসঙ্গ টানব না। অন্য একদিন আলোচনা করব। আজকের এ লেখাটি এবারের ’মাতৃ দিবসে’ আমার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ভীষণ উপভোগ করলাম লিখাটি।
পড়তে পড়তে হারিয়ে গিয়েছিলাম শৈশবে।
মায়ের হাতের রান্না, মায়ের শরীরের সুবাস, মায়ের ভেজা চুল, মায়ের শাসন, মায়ের স্নেহ, সারাক্ষণ মায়ের গা ঘেষে থাকার সেই শৈশবের দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন আর কী হতে পারে!
খুব জানতে ইচ্ছে করছে বাকিটুকু 🙂
অনেক অনেক শ্রদ্ধা রইল (F)
কি চমৎকার একটি শৈশবই না আপনি কাটিয়েছেন ! অনেক ধন্যবাদ স্যার। (Y)
স্যার,
শ্রদ্ধা জানবেন। খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আপনার দেখা, অনুভব আর তার পরিবর্তিত রূপ আমার সাথে কেমন যেনো মিলে গেলো! আমার কল্যাণময়ী মা আজও অছেন আমাদের পাশে। কিন্তু আপনার মতো করে মাকে কখনো বলতে পারিনি কিছু। তাই ছকটা ছাড়া বাকি অংশ পড়ে শুনালাম। বললেন এতো আমার বাড়ির কথা! কি অবাক কান্ড তাই না? আসলে হয়তো বাঙ্গালীর শাশ্বত রূপই এই। খুবই তথ্যবহুল আর ভাললাগা, মা’কে প্রনামী দেবার মতোই, ভালোবাসার আবেদনময় একটি লেখা। প্রনাম।
চৈত্র সংক্রান্তি বা নববর্ষ পালন এগুলো আমাদের নিজস্ব বাঙালি লোকজ সংস্কৃতি। এর সাথে সরাসরি সম্পর্ক ফসলের। চট্টগ্রাম-কুমিল্লার দিকে সম্ভবত পৌষ সংক্রান্তি পালন করা হয় আড়ম্বরের সাথে। যার সাথে নতুন শস্যের গন্ধ মিশে থাকে। এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে হিন্দুধর্মের সম্পর্ক নেই। তবে প্রাচীন লোকায়ত সংস্কৃতির ধারা অনুযায়ী গোত্রদেবতা বা গ্রামদেবতা বা গৃহদেবতা বা ফসল ও সৌভাগ্যের দেবী অন্নপূন্নার সংশ্লিষ্টতায় একধরনের রিচ্যুয়াল বা বিশ্বাসের উপস্থিতি অন্যরকম এক গাম্ভীর্যের আবহ তৈরির পাশাপাশি সহজ সরল মানুষগুলির জন্য চমৎকার এক পারস্পরিক বন্ধন ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিলো। ওটাই লোক-সংস্কৃতির প্রাণ। মাটির গন্ধ পুষে রাখা প্রতিটি বাঙালির নাড়ির টানও ওখানেই। তবে নাগরিক সভ্যতা সেগুলোকে ভেঙেচুরে খান খান করে দিচ্ছে। আমরা যতই নাগরিক হয়ে উঠছি ততই দূরে সরে যাচ্ছি সেই মাটিগন্ধী লোকজ ঐতিহ্য থেকে।
অজয় স্যারের এই লেখাটা তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে- আমরা একদিন বাঙালি ছিলাম। যেদিন মাটির সাথে আর কোন সম্পর্ক থাকবে না আমাদের, সেদিন হয়তো আমরা আর বাঙালিও থাকবো না। লেখাটা পড়ে বুকটা কেমন চিনচিন করে উঠলো ! নিজেকে কেমন শেকড়হীন শেকড়হীন মনে হচ্ছে !!
@রণদীপম বসু,
বসু সাহেব ‘পৌষ সংক্রান্তি’ ও ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ কে গুলিয়ে ফেলেছেন. একটি আরেকটির পরিপূরক নয়, দুটিই স্বতন্ত্র, ঋতুভিত্তিক, এবং হিন্দু ধর্মালম্বীদের উত্সব. ‘এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে হিন্দুধর্মের সম্পর্ক নেই’ এই মন্তব্য টি ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত.হিন্দুধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে বাংলার হিন্দুরা (প্রগতিশীল অজয় রায় সহ)ঘরে ঘরে এই উত্সব পালন করত না. ঋতু ও প্রকৃতি ভিত্তিক অনুষ্ঠান হিন্দু ধর্মে (যদি তাকে ‘রিলিজিওন’ নামক সংকীর্ণ গন্ডিতে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়)আরো অনেক রয়েছে.
@মিয়া সাহেব, আপনার মন্তব্যকে সম্মান জানিয়েই বলি, চৈত্র সংক্রান্তি ও পৌষ সংক্রান্তিকে সত্যি কি আমি গুলিয়ে ফেলেছি ? কোথাও কি আমি এ দুটোকে এক বলেছি ? অনুষ্ঠান আয়োজনের আড়ম্বরের কথাই বলেছিলাম। যে অঞ্চলের প্রধান ফসল যে ঋতুর সাথে সম্পর্কিত, সে অঞ্চলের অনুষ্ঠানে সেই ঋতুর আড়ম্বরই বেশি, আমি এটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। হয়তো বোঝাতে পারি নি।
আর আমি এখনো বলি যে, এ অনুষ্ঠানটির সাথে বাঙালির লোকায়ত সংস্কৃতির সম্পর্ক। সরাসরি ধর্মের সম্পর্ক নয়। ধর্মীয় চেতনাটা এর সাথে মিশেছে কেবল। যদি কেবলই হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়, তাহলে গোটা বাঙালি জনগোষ্ঠির সম্পর্ক এর সাথে থাকার কথা নয়। আর হিন্দু ধর্ম বলতে যদি আপনি বৈদিক ধর্মকে বোঝাতে চেয়ে থাকেন, তাহলে এসব অনুষ্ঠানের লোকাচারগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন যে এর সাথে বৈদিক দেব-দেবীর সংশ্লিষ্ট খুবই কম। যেটুকু আছে তাও পরবর্তীকালে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু লোকাচারগুলোয় অঞ্চলভিত্তিক যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে। আপনিই হয়তো হিন্দু ধর্মের সাথে লোকায়ত সংস্কৃতিকে গুলিয়ে ফেলছেন এই বলে যে, প্রকৃতি ভিত্তিক অনুষ্ঠান হিন্দু ধর্মে অনেক রয়েছে। প্রকৃতিভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলি লোকায়ত সংস্কৃতি থেকেই উদ্ভূত। এর সাথে যে যেভাবে পেরেছে ধর্মীয় বিষয়-আশয়কে মিশিয়ে নিয়েছে নিজের মতো করে।
আপনার কথা মানতে হলে বাঙালির বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে আখ্যয়িত করতে হবে, যেটা অলরেডি আমাদের দেশের ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী দলগুলো প্রচারণা করে থাকে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
বড্ড মনোরম আর মন কাড়া লেখা। লেখা তো নয় যেনো সব কিছু জীবন্ত দেখা যাচ্ছে স্পস্ট।
অসাধারণ মন ছোঁয়া একটা লেখা পড়লাম!
আমরা মেনে চলি শকাব্দ, পশ্চিমবঙ্গ মানে বঙ্গাব্দ! অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের অনেক গুণীজন মেঘনাদ সাহার সুপারিশকেই গ্রহণের পক্ষপাতী, তবে আমার ব্যক্তিগত মত হল, আনন্দের দিন দুদিন হলে ক্ষতি কি! অন্তত একজন পর্যটক হিসেবে আমার তো অন্তত দু’দেশের আনন্দ উৎসবেই যোগ দেয়ার সুযোগ থাকে, হোক তা চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী!
এ লেখায় মাকে নিয়ে এমন কিছু কথা রয়েছে, যা সার্বজনীন এবং আমার মার ক্ষেত্রেও বোধহয় প্রযোজ্য! যেমন:
বাংলাদেশের হিন্দুরাও ধর্মীয় কারণে যে চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষ পালন করে তা পশ্চিমবঙ্গের তারিখের সাথে মিলিয়েই করে। তাই গ্রামের দিকে এ অনুষ্ঠানগুলো কেন যেন সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারছে না।
@প্রদীপ দেব,
বাঙালি হিন্দুর (উভয় বাংলায়) ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান (পূজা,শ্রাদ্ধ,বিবাহ,অন্নপ্রাশন,সাধ ভক্ষণ, যাত্রা, জমি বাড়ি ক্রয় বিক্রয়,ইত্যাদি)আজও হয়ে থাকে প্রচলিত বাংলা ক্যালেন্ডার মেনে. বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে বাংলা ক্যালেন্ডারের কোন যোগ নেই. তাদের ওসব হয়ে থাকে আরব দেশের সাথে তাল মিলিয়ে. পহেলা বৈশাখ একটি সাম্প্রতিক সংযোজন, এটি একটি ধর্মহীন সুন্দর অনুষ্ঠান তবে এর সাথে বাংলা ক্যালেন্ডারের ভালোমন্দের কোন যোগ নেই. চৈত্র সংক্রান্তি নতুন বছরকে আহ্বান জানানোর একটি প্রাচীন আধা ধর্মীয় অনুষ্ঠান যা বিভিন্ন নামে প্রায় একই সময়ে সারা ভারতীয় উপমহাদেশ, ব্রহ্মদেশ (ম্যায়ান্মার), শ্যামদেশ (থাইল্যান্ড), কম্বোজে (কম্বোডিয়া)অনুষ্টিত হয়ে থাকে. সুতরাং, বাংলাদেশের হিন্দুদের মতামত না নিয়ে বাংলা ক্যালেন্ডার, যে ক্যালেন্ডারের সাথে তার জীবন ও সংস্কৃতি জড়িত, সংস্কার করে চাপিয়ে দেয়াটা বোধ হয় অন্যায়. তাই শ্রী দেব জানাতে বাধ্য হোন, “বাংলাদেশের হিন্দুরাও ধর্মীয় কারণে যে চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষ পালন করে তা পশ্চিমবঙ্গের তারিখের সাথে মিলিয়েই করে। তাই গ্রামের দিকে এ অনুষ্ঠানগুলো কেন যেন সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারছে না।” এটা সাধারণ বাংলাদেশী হিন্দুর প্রতিবাদ সরকারী বাংলা ক্যালেন্ডারের বিরুদ্ধে. আর, পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুদের বাংলা দেশের হিন্দুদের নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই, তারা বাংলা দেশের পরিবর্তিত বাংলা ক্যালেন্ডারের কথা জানেনা এবং জানতেও আগ্রহী নয়. বাংলাদেশের হিন্দুরা কিভাবে বেঁচে আছে তা নিয়ে কোন চর্চা নেই পশ্চিমবঙ্গে, ক্যালেন্ডার নিয়ে ভাবনা
চিন্তা তো দুরের কথা.
@মিয়া সাহেব,
শ্রদ্ধেয় অজয় রায় স্যারের লেখায় কোন প্রকার বিতর্কমূলক কথার অবতারণা করতে চাইনি, কেবল ধর্ম উল্লেখ করে মিয়া সাহেব কিভাবে বাঙ্গালী জাতির মাঝে বিভাজন রেখা টানছেন, সেটা দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।
অজয় স্যারের লেখাটা চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্রে রেখে স্যারের মমতাময়ী মায়ের স্মৃতিচারণ, কোন ধর্মকেন্দ্রিক আলোচনা নয়। এখানে বাঙালি হিন্দু এবং বাঙালি মুসলিমদের বিভাজনটা টানার কোন প্রয়োজন ছিল কি?
এটা সাধারণ বাংলাদেশী হিন্দুদের প্রতিবাদ সরকারী বাংলা ক্যালেন্ডারের বিরুদ্ধে, আপনাকে কে এই তথ্য জানান দিল জানতে পারি কি? চৈত্র সংক্রান্তি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকলে (আপনার দাবী মোতাবেক), আদি বাংলা ক্যালেন্ডার বা হিন্দুদের ধর্মীয় পঞ্জিকা অনুসারে তা পালন করায় স্বাভাবিক ঘটনা, এইখানে আলাদা করে আপনি প্রতিবাদ আমদানী করলেন কোথা থেকে? আপনার মন্তব্য পড়ে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে আপনি পশ্চিমবঙ্গের এবং হিন্দুত্ব নিয়ে উন্নাসিকতায় আক্রান্ত একজন মানুষ। আপনি যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ নন, বাংলাদেশের হিন্দুদের সামাজিক এবং ধর্মীয় আচরণ নিয়ে এমন একটা ঢালাও মন্তব্য করলেন কি করে? কেবল হিন্দু হবার কারণে? প্রদীপ দেব যে মন্তব্যটি করেছেন, তা সামাজিক সার্বজনীনতার প্রেক্ষাপট থেকে, সেটাকে আপনি টেনে ধর্মীয় প্রেক্ষাপট, ধর্মীয় বিরোধে নিয়ে গেলেন কেন?
আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ভারত এবং পাকিস্তানের বিভাজন ধর্ম-এর কারনে হলেও বাংলাদেশের জন্ম একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম রাজনৈতিক কারণে ইসলাম হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলেও বাংলাদেশের সেক্যুলার মানসিকতার মানুষেরা ধর্মীয় সম্প্রিতীতেই বিশ্বাস করে এবং আশা করে বাংলাদেশের সংবিধান তার অতীত রূপ ফিরে পাবে, এদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতিও বজায় থাকবে। ভারতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বিজেপি ক্ষমতায় গেলেও বাংলাদেশে কখনই যায় নি এবং এইদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে এখনো ঘৃণার চোখেই দেখে। সুতরাং, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের সম্পর্কে আপনি ঢালাও মন্তব্য দিলে আমি কোন আপত্তি না জানালেও বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে আগ বাড়িয়ে কোন ঢালাও মন্তব্য দিলে আমি আপত্তি জানাবো। কারণ আমার দৃষ্টিতে তারা হিন্দু হবার আগে বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের দেশের মানুষ।
মুক্তমনা বাংলাভাষী সেক্যুলার ঘরাণার লেখক এবং পাঠকদের একটা সাধারণ প্লাটফর্ম। এইখানে সেক্যুলারিজমকে প্রাধাণ্য দেয়া হয়, কোন ধর্মকে নয়। অতএব এখানে কোন ধর্মীয় বিভাজন মূলক বক্তব্য না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাবো। এর আগেও সীমান্তে বি এস এফ এর গুলি চালানোর ঘটনাকে উল্লেখ করে আপনি উস্কানীমূলক মন্তব্য দিয়েছিলেন। আপনার এটা অনুধাবণ করা উচিত, আপনি আরেকটি দেশের সার্বভৌমত্ব বা সেদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত আসতে পারে এমন কোন দ্বায়িত্বহীন মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না। অন্ততপক্ষে মুক্তমনার মত সেক্যুলার প্লাটফর্মে না।
@নীল রোদ্দুর,
আপনার লেখা পড়ে জানলাম: ১)বাংলাদেশের মানুষের বা রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার শুধু বাংলাদেশের মানুষের আছে, ২) বিএসএফ-এর গুলি চালনা নিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করা মানে বাংলাদেশী হওয়ার যোগ্যতা হারানো এবং উস্কানী দেওয়া.৩) পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুদের নিয়ে বাংলাদেশীদের মন্তব্য করা অনুচিত, ৪) যেহেতু অজয় বাবু শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি তাই তার লেখায় বিতর্ক মূলক কিছু বলা যাবেনা, ৫)রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়া সত্তেও বাংলাদেশীরা সেকুলার, অন্য দিকে ৬০ বছর ধরে সেকুলার সংবিধান অনুসারে এবং বতমানে শিখ প্রধান মন্রী ও একদা ইতালীয় ও ক্যাথলিক ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত ভারতের মানুষ সাম্প্রদায়িক.
এমন ভাবনার মানুষরা মুক্তমনায় ভীড় জমালে মুক্তমনায় মুক্ত চিন্তার পরিসর কতদিন অক্ষুন্ন থাকবে বলা মুস্কিল.
@মিয়া সাহেব,
১)বাংলাদেশের মানুষের বা রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার শুধু বাংলাদেশের মানুষের আছে,
বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষ কোন কোন কর্মকান্ডের মাধ্যমে সম্প্রীতি দেখায়, আর কোন কর্মকান্ডে প্রতিবাদ প্রকাশ করে, তা নিশ্চিত ভাবে না জেনে একটা মুক্তমঞ্চে আন্দাজে আপত্তিকর মন্তব্য করায় আপত্তি জানিয়েছি। পারবেন আপনার বক্তব্যের সমর্থনে কোন যৌক্তিক তথ্যসূত্র দেখাতে? যদি পারেন এইখানে “এটা সাধারণ বাংলাদেশী হিন্দুদের প্রতিবাদ সরকারী বাংলা ক্যালেন্ডারের বিরুদ্ধে” এই বক্তব্যের সমর্থনে তথ্যসূত্র দিয়ে যান। আপনার রেফারেন্স যৌক্তিক হলে আমি আমার আপত্তি প্রত্যাহার করে নেব। 🙂
২) বিএসএফ-এর গুলি চালনা নিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করা মানে বাংলাদেশী হওয়ার যোগ্যতা হারানো এবং উস্কানী দেওয়া.
তাহলে আপনার ভাষায় ভিন্নমত মানে হল একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে ভারতের অঙ্গরাজ্য হওয়া। তাই না? আপনার প্রস্তাবের উত্তরে যদি বলি, ভারতের অধীনতা ছেড়ে পারলে পশ্চিমবঙ্গ একই সংস্কৃতির, একই ভাষার, একই সাহিত্যের বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ হোক, সেই প্রস্তাবটা কি গ্রহনযোগ্য মনে হয়? যৌক্তিক মনে হয়?
আমরা কিন্তু কেউ তা বলিনি, বলিনি এমন কোন কথা যা ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। আপনার কথার মত অযৌক্তিক কথা বলে নির্লজের মত বি এস এফের গুলি করে মানুষ মারার সাফাই গায় নি।
৩) পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুদের নিয়ে বাংলাদেশীদের মন্তব্য করা অনুচিত,
বাংলাদেশে বসে সত্যিকারের অবস্থা না জেনে কোন দ্বায়িত্বহীন মন্তব্য করা আসলেই অনুচিত। যে মন্তব্যের সত্যতা, যৌক্তিকতা নেই বা বক্তা যে মন্তব্যের দায় নিতে সক্ষম নয়, সেই মন্তব্য করার অধিকার কারোর নেই। এই সহজ সাধারণ বোধটুকু অনুধাবণ আপনি করতে পারলে আসলেই খুশি হব।
৪) যেহেতু অজয় বাবু শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি তাই তার লেখায় বিতর্ক মূলক কিছু বলা যাবেনা,
কেউ বলেনি অজয় স্যারের লেখায় বিতর্ক করা যাবে না। বরং স্পষ্ট করেই বলেছি, অজয় স্যারের লেখাটা কোনভাবেই ধর্মঘেষা বিতর্কিত লেখা ছিল না। বিতর্কিত মন্তব্যটি আপনি দিয়েছেন।
৫)রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়া সত্তেও বাংলাদেশীরা সেকুলার, অন্য দিকে ৬০ বছর ধরে সেকুলার সংবিধান অনুসারে এবং বতমানে শিখ প্রধান মন্রী ও একদা ইতালীয় ও ক্যাথলিক ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত ভারতের মানুষ সাম্প্রদায়িক.
কোথাও কিন্তু বলিনি, ভারতের মানুষ সাম্প্রদায়িক, মন্তব্যটি আবার পড়ুন। কেবল মনে করিয়ে দিয়েছি ভারতের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা, গুজরাট এর দাংগা, দেশবিভাগের সময়কালে সারা ভারত জুড়ে হিন্দু-মুসলিম-শিখেদের রক্তগঙ্গা… এইসব বারবার ভুলে যান কেন? অন্য কোন দেশের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের রিতী নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য দিয়ে কথা বলার আগে কেবল গত ৭০ বছরে ধর্মের কারনে যত রক্ত ভারতে ঝরেছে সেই সত্যটা ভুলে যেয়েন না। একজন মনমোহন সিং বা আবুল কালাম আজাদ বা সোনিয়া গান্ধী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকলেই পিছনের রক্তপাতের ইতিহাস মুছে যায় না। তার পরেও স্পষ্ট ভাবেই বলছি, আমি কোন ভারতীয় নাগরিককে সাম্প্রদায়িক বলিনি। কেবল বলছি, ভারতের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ভারতের আবহাওয়া অসাম্প্রদায়িক নয়।
এমন ভাবনার মানুষরা মুক্তমনায় ভীড় জমালে মুক্তমনায় মুক্ত চিন্তার পরিসর কতদিন অক্ষুন্ন থাকবে বলা মুস্কিল.
ভাই আপনি মুক্তমনায় মুক্ত চিন্তার প্রকাশ করেন? তাহলে আপনার বক্তব্যে ভারত নিয়ে দাম্ভিক কন্ঠস্বর, বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে হেয় করার প্রবণতা প্রকাশ পায় কেন? কেউ পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আপত্তিকর বক্তব্যগুলো দেখিয়ে দিলে তাকে মুক্তমনার অযোগ্য মনে হয়? নিজে কি বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা বোঝার চেষ্টাটা আগে করুন, তারপর মুক্তমনার পরিবেশ নিয়ে মাথা ঘামিয়েন। মুক্তমনার পরিবেশ নিয়ে মাথা ঘামানোর মানুষ অনেক আছে এখানে।
আপনি যে দেশীই হন না কেন, কোন দেশের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে আরেক দেশের অংশ হওয়ার কথা বলে সেই দেশের মানুষকে আঘাত দেয়ার অধিকার রাখেন কি?
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে না জেনে কথা বলার অধিকার রাখেন কি?
@মিয়া সাহেব,
আপনি অজয় রায়ের লেখা পড়ে আর প্রদীপ দেবের মন্তব্য বুঝে, না না বুঝেই ফাল দিলেন। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা উগড়ে দেয়ার আর জায়গা পেলেন না বুঝি? একটি সুন্দর পবিত্র লেখায় সাম্প্রদায়ীকতার বিষ ছড়ায়ে লেখাটিকে অপবিত্র করা থেকে বিরত থাকুন। পরে পাঠকের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করে কোন লাভ হবেনা। সুতরাং সাধু সাবধান!
আমার মা যাকে কতটা যে ভালবাসি, তা নিজে ও জানিনা, আর মাকে কখনও বলতে ও পারিনা।
সেদিন হঠাত মনে হলো কতদিন ধরে মার পায়ের উপর মাথা রেখে শুইনি। সেদিন মা আর আমি পাশাপাশি বসে ছিলাম, হঠাত মনে হতেই মাকে বললাম, কতদিন ধরে তোমার পায়ে মাথা রেখে শুইনা। সাথে সাথে মা পা লম্বা করে দিলো। মার পায়ে শুয়ে চোখ টা কেমন যেন ভিজে উঠেছিল। একদিন আমার মা আর আমার পাশে থাকবেনা। সেই জীবন টা কতটা দুঃসহ হবে। সত্যি মা কে অনেক অনেক ভালবাসি।
ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল।বিশেষ করে একদম ভোরে উঠে স্নান করার কথা।লেখায় মায়ের মমতার ছোয়া পাওয়া যায়।অত্যন্ত মর্মস্পর্শী।
কলির যুগ (কলের যুগ ) বা যান্ত্রিক যুগের প্রজন্ম হয়তো এ লেখা পড়ে একাত্ম হ’তে পারবে না।
আমাদের সমাজ বলে এখন কিছু নেই, আমরা রাষ্ট্রের অধীনে মানুষ নই, মানব সম্পদ। আর সম্পদ বলা হলে সেখানে আবেগ-অনুভূতি মূল্যহীন। খুব করে ছুঁয়ে যাওয়া এ লেখা পড়ে – গালে হাত দিয়ে বসে আছি।
মা’কে নিয়ে এমন যত্ন করে লেখা কবে পড়েছি মনে করতে পারছি না। মনছোঁয়া অসম্ভব সুন্দর একটা লেখা। উপরি পাওনা; বাংলা বর্ষপঞ্জির ব্যাপার আর অদূর অতীতের একটি স্নিগ্ধ জীবনচিত্র।