কাল ফেসবুক পাবলিক হচ্ছে। মানে স্টকমার্কেটে আসিতেছে। দাম ধার্য্য হয়েছে ১০৪ বিলিয়ান ডলার। শুধু মার্ক জুকারবার্গই না, সাথে সাথে ফেসবুকের প্রথম ৩০০ কর্মীও মিলিয়ানার হতে চলেছে। আপেলের আই পি ওর পরে, এই প্রথম একদিনে একসাথে এতজন কর্মী কোটিপতি হওয়ার পথে।
এতগুলো কোটিপতি তৈরী করেছে, এটা নিশ্চয় ফেসবুকের একমাত্র কৃতিত্ব না। ফেসবুক যে সামাজিক বিপ্লবের ভগীরথ, সেটাই তার ঐতিহাসিক কৃতিত্ব। ইতিহাসের নিক্তিতে মানব জনসংযোগের প্রথম বিপ্লব যদি হয় ভাষার জন্ম, দ্বিতীয় হবে ছাপাখানার আবিস্কার। সমাজ পরিবর্তনের মাপকাঠিতে ফেসবুকের আবিস্কার ভাষার জন্মের কাছাকাছিই থাকবে। পৃথিবীর মানব সমাজ এই ভাবে এত কাছে আর কখনো আসে নি। দেশের সীমানা এত দুর্বল আর কোনদিন ও ছিল না। এখন ত আমি বুঝতেই পারি না আমেরিকাতে থাকি, না পশ্চিম বাংলাতে আছি। নেটের দ্বিতীয় জীবনই আজ আমার প্রথম জীবন ।
ফেসবুকের এই সাফল্যের বিপরীতেই আমি দেখছি দুই বাংলার সাম্প্রতিক রাজনীতি। একদিকে মমতা কুনাট্য –অন্যদিকে হাসিনা-খালেদা রঙ্গের নেভার এন্ডিং পলিটিক্যাল কোরিওগ্রাফি। রাজনৈতিক নৃত্যনাট্য বা কুনাট্য। এরা মাঝে মাঝেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়। “ফেসবুক” বন্ধ করার জন্যে আবেদন জানায়। নেহাত আমেরিকা বলে দেশে ফেসবুকের জন্ম-নইলে এই উপমহাদেশে জন্মালে ফাল্গুনের অকাল শীলাবৃষ্টিতে এই চারা অচিরেই ঝড়ে যেত।
আমেরিকাতে বুদ্ধিমান প্রজন্মর অধিকাংশই সিলিকান ভ্যালির স্টার্টাপ বা নতুন কিছু না কিছু করে। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, এডিসন থেকে জুকারবার্গ। পৃথিবীকে বদলে দেওয়া “প্রায়” সব প্রযুক্তির আঁতুরঘর আমেরিকা। ইদানিং সেই প্রযুক্তি বিপ্লবের ঢেও ভারতের ব্যাঙ্গালোর, পুনে, হায়দ্রাবাদেও লেগেছে। বেশ কিছু তরুন, স্টার্টআপ করেছে। অধিকাংশই যদিও আন্তর্জাতিক মানের না-স্থানীয় বিজনেসকে কেন্দ্রকরেই এগুলি তৈরী হচ্ছে-তাও খারাপ কি? চীনেও তরুন প্রতিভাধর আবিস্কারকরা উঠে আসছে বেশ দ্রুত গতিতে।
এখান থেকেই আমি প্রশ্ন করা শুরু করব। আমাদের দুই বাংলার তরুণেরা কি করছে? সিলিকান ভ্যালি সহ গোটা আমেরিকাতে বাঙালী উদ্যোগপতি অনেক। কারন বাঙালী প্রতিভাধর, তার শিক্ষা এবং উদ্যোম সবই আছে। সুতরাং বাংলার বাইরে বাঙালী উদ্যোগপতির উপস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্ত পশ্চিম বাংলা এবং বাংলাদেশ থেকে উদ্যোগপতি প্রায় নেই কেন?
বাংলাদেশের দিকে তাও বেশ কিছু আই টি উদ্যোগ চোখে পড়ে। এর বড় কারন বাংলাদেশে টিসিএস বা ইনফোসিসের মতন বড় কোম্পানী গুলির অনুপস্থিতি। ওডেক্স, ইল্যান্সের দৌলতে আজকের দুনিয়াতে কাজ জানলে, আই টি বা সার্ভিস কোম্পানী করা আগের থেকে অনেক বেশী সহজ। ফলে ইনফি বা টিসিএসের অবর্তমানে বাংলাদেশের তরুণদের একটা অংশ নিজেরাই নিজেদের ব্যবসা ভাল দাঁড় করিয়েছে ওডেক্স বা ইল্যান্সের সাহায্যে। এটা পশ্চিম বঙ্গের দিকে একদম হয় নি-এর কারন এখানে লোকজন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করলেই আই বি এম, টিসিএসে চাকরী নিয়ে হারিয়ে যায়। কিছু কিছু যেসব উদ্যোগ কোলকাতায় হয়েছে-তাদের সবার বড় সমস্যা হচ্ছে লোকজন ধরে রাখা। লোকে কাজ শিখেই কর্মীরা ইনফি বা টিসিএসে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশে এই সমস্যাটা না থাকায়, ছোট ছোট কোম্পানীগুলি বাংলাদেশে ভাল কিছু করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্ত সেখানেও বিধি বাম। বাংলাদেশে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে ভাল ইন্টারনেট। পরিকাঠামোহীন প্রতিভা খুব বেশী দূর যেতে পারে না।
যাইহোক কোলকাতা বা ঢাকাতে যেটুকু ইনোভেশন হচ্ছে সবটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এদের জন্যে কোন কাঠামো, বা সহযোগিতা বা কমিউনিটি নেই। কমিউনিটি, পরিকাঠামো এবং মানসিকতা-এই তিনের ত্রাহ্যস্পর্ষে আবিস্কার এবং নতুন ব্যবসার সূত্রপাত হয়। এর মধ্যে সরকারের দ্বায়িত্ব হচ্ছে পরিকাঠামোর। কোলকাতার পরিকাঠামো পুনে বা ব্যাঙ্গালোরের ধারে কাছে নেই। নতুন সরকার কিছু করবে এমন দেখতেও পাচ্ছি না। শুধু শ্যাম পিত্রোদাকে জগন্নাথের মতন রথে বসিয়ে হবে টা কি? বাংলাদেশেও দেখি ডিজিটাল বাংলাদেশের মিডিয়াচমক। এদিকে ইন্টারনেট কানেকশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে।
এর থেকেও ব্যবসার ক্ষেত্রে দুই বাংলার বৃহত্তম সমস্যা বামপন্থী বুদ্ধিজীবিদের উৎপাত। কিশোর বয়েস হচ্ছে সব থেকে বেশী ফর্মেটিভ-মাথায় ঐ সময় যা ঢোকে তা পরবর্তীকালে উৎখাত করা মুশকিল। পুঁজি হচ্ছে চুরি করা ধণ-এটা ছোট বেলা থেকে মাথায় ঢোকানো হয়। পশ্চিম বঙ্গ বা বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে, সেটা যে খুব ভুল ধারণা তাও না। কিন্ত সেটা ধরে বসে থাকলে উন্নতি হবে কি করে? সরকারি মডেলে দেশের উন্নতি হয়েছে ইতিহাসে এমন কোন সফল মডেল নেই। যা কিছু হয়েছে, ব্যক্তিগত উদ্যোগেই হয়েছে। সরকার শুধু পরিকাঠামো দিতে পারে। আসল কাজটা মানুষকেই করতে হবে। আদর্শগত কারনে এটা শুনতে অনেকের ভাল নাও লাগতে পারে-কিন্ত বাস্তবতাকে অস্বীকার করার এই বামাশাতে ( বামপন্থী আমাশা) ভুগেই বাঙালী আজ মৃত্যুপথ যাত্রী। ব্যাক্তিগত উদ্যোগ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই কোয়াপরেটিভ উদ্যোগে দেশের উন্নতি হতে পারে । ভেণেজুয়েলা, ব্রাজিল সহ ল্যাটিন আমেরিকাতে এই নতুন সমবায় মডেলের আধা-ধণতান্ত্রিক-আধাসমাজতান্ত্রিক মডেলেও উন্নতি সম্ভব। কিন্ত সব কিছুর মূলেই মানুষের সেই উদ্যোগ। আর মানুষের উদ্যোগের প্রষ্ফুটন সরকারি উৎপাদন ব্যাবস্থায় হয় না। আমি ইচ্ছা করেই সমাজতন্ত্র কথাটা ব্যবহার করলাম না। কারন সোভিয়েতে যা ছিল-সেটা স্টেট ক্যাপিটালিজম । পাবলিক কোম্পানী ও স্টেট ক্যাপিটালিজমের উদাহরণ। যা নিদারুণ ব্যার্থতা এবং তামাসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে। সোভীয়েত ইউনিয়ান উন্নত শিক্ষা এবং গবেষণাতে আমেরিকার দ্বিগুনের বেশী লোক লাগিয়েও কার্যকরী আবিস্কার কিছুই করতে পারে নি। যাবতীয় ওষুধ, সিলিকন চিপস আর ইন্টারনেটের আবিস্কার আমেরিকাতেই হয়েছে। নতুন প্রোডাক্ট বা আবিস্কার বিবর্তনের মিউটেশনের মতন। বাজার হচ্ছে নির্বাচক। সেই ঠিক করে দেয়, কে টিকে থাকবে। এইভাবেই প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত সমাজের জন্ম হয়। বাজারের নির্বাচন না থাকলে এটা সম্ভবই না। তাই বাজার বিহীন উন্নত প্রযুক্তি বা প্রযুক্তি বিপ্লবের স্বপ্ন অলীক জগতের বাসিন্দাদের জন্যে।
এর ওপর আছে রাজনৈতিক অধিকার এবং সাম্যের কুসুম কল্পনা। জীবনের যেহেতু পরম উদ্দেশ্য বলতে কিছু নেই- একজন মানুষ সাম্যের আফিঙেই বুঁদ থাকুক বা আধ্যাত্মিকতার অলীক জগতেই পাড়ি দিক আমার কিছু যায় আসে না। সমস্যা সেখানেই যখন গোটা সমাজে এগুলো কুপ্রভাব ফেলে। সাম্যের ধারনা বা আধ্যাত্মিক শান্তির বাণী সব কিছুই ভাল –মেনে নিতে আমার আপত্তি নেই। কিন্ত এডিশন থেকে জুকারবার্গের সাফল্যের পেছনে আছে পুঁজি-যা সাম্য ও মানে না – ত্যাগেও বিশ্বাস করে না। তা বিশ্বাস করে অসাম্য এবং লোভে। হ্যাঁ এই অসাম্য এবং লোভকে সিস্টেম বশে না আনতে পারলে-লোভ এবং অসাম্যই ধ্বংশ করবে তার স্রষ্টাকে। কিন্ত বাস্তবত এটাই যে লোভ এবং অসাম্যের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া ছুটেই চলেছে। এবং যা কিছু “কার্যকরী” আবিস্কার, সেই লোভ আর অসাম্যের পিলারের পুঁজি থেকেই আসছে! লোভ আর অসাম্যের এই যুগল বন্দিকে প্রশ্ন করা ভাল-কিন্ত অস্বীকার করা ততটাই মুর্খামী। কারন আজকের এই ইন্টারনেট, ব্লগ, ফেসবুক –সব কিছু সেই পাপেরই ফসল। যাইহোক বাঙালী এটাকে পাপের চোখেই দেখে। ফলে, অধিকাংশ বাঙালী পক্ষে নতুন কিছু ব্যবসা করা মুশকিল।
আমার জীবনের উপলদ্ধিগুলো জেন মাস্টারের মতন । লোভ এবং ত্যাগ, সাম্য এবং অসাম্য-এর মিশ্রন, এদের দ্বন্দ, ক্রিয়া বিক্রিয়াই জীবন । লোভহীন সাম্যবাদি একটা সমাজ হবে-এসব রোম্যান্টিসিজম নিয়ে বাঙালী পড়ে থাকলে- আরো পিছিয়ে পড়বে। বরং এটা ভাবাই ভাল যে বাস্তব সমাজ এবং জীবনে সাম্য ও অসাম্যে, লোভ এবং ত্যাগের দ্বন্দ ও সহাবস্থান থাকবে।
পৃথিবীতে যত জাতি দেখেছি, তার মধ্যে বাঙালী সব থেকে বেশী হুজুগে, বাস্তব বিমুখ। তারা বসে থাকবে নদীর এপার, নইলে ওপারে। নৌকা চালাবে না। এই জন্যে বাঙালীর রাজনীতিতে পোলারাইজেশন সাংঘাতিক বেশী। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-বি এন পি সাপোর্টারদের মধ্যে মারপিট, পশ্চিম বঙ্গে তৃণমূল সিপিএমে খুনোখুনী- এটা ভারতের অন্যকোন রাজ্যে দেখি নি। এই মাত্রাতে না। ২০০৫-২০১১ সালের মধ্যে পশ্চিম বঙ্গে রাজনৈতিক কারনে যত খুন হয়েছে কাষ্মীরে সন্ত্রাসবাদে তার অর্ধেক লোক ও মরে নি। এর মূল কারন আবেগপ্রবণ বাস্তববিমুখ বাঙ্গালী। ঘটে সামান্য বুদ্ধি থাকলেও লোকে বোঝে এই সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে , তাদের নেতা নেত্রীদের মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। বাঙালী জাতির মধ্যে আদর্শবাদের ভাইরাস যত প্রবল, অন্যত্র তেমন দেখি না। এর সব কিছুর মূলে আছে বাস্তব বুদ্ধির অভাব-আর সেটা এসেছে জীবনটাকে একমাত্রিক ভেবে।
অবশ্য শেষে সেই ফেসবুকই ভরসা। আশাকরি সেই অনলাইনেই ভেঙে পড়বে বাঙালীর মনোজগতের অচলায়াতন ।
বাঙালি সংস্কৃতিতে ব্যবসায়ীদের হেয় করে দেখাটা কবেকার জানি না। তবে এটা একেবারে শক্তভাবে শিকড় গেড়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গের কথা জানিনা, তবে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের বাড়ি ভাড়া পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। বাড়িওয়ালারা চাকুরিজীবী লোক খুজে। তেমনি, বিয়ের বাজারেও ব্যবসায়ী পাত্রের ভাত কম (যদিনা বড় ব্যবসায়ী হয়)। মেয়ের পরিবার উপরি-আছে এরকম চাকুরিজীবী পাত্রকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিবে মাত্র শুরু করা কোনো উদ্যোক্তা পাত্রের চাইতে।
@রাগিব হাসান,
এই ব্যপারটা খুব দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সত্য। এটা আমাদের শুনতে খুব মজা লাগছে, কিন্ত আমি আমার অনেক ব্যবসায়ী বন্ধুর বিবাহ দুর্ভোগের সাথী।
এই প্রসঙ্গে একটা মজার গল্প বলি। আমার একবন্ধু বেশ কামাচ্ছে মোবাইলের ব্যবসাতে। কামাচ্ছে মানে একদম কোটি কোটি টাকা। তাতেও কোন পিতা কন্যা দিতে রাজী না। এমন দুর্দিনে ব্যচারা ব্যাঙ্কের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে একটা ক্লার্কের চাকরি নেয়, যাতে তার বেতন ব্যবসার ২% ও না। চাকরি সহ, বিয়ের বিজ্ঞাপন দিতে, এবার শয়ে শয়ে মেয়ের বাবারা আসতে থাকে।
আমার সেই বন্ধুটি অবশ্য বিবাহের পরে, আর আর কোনদিন চাকরী করে নি। শুধু বিয়ে করার জন্যে বেচারাকে অনেক খেটে পরীক্ষা দিয়ে ব্যাঙ্কের চাকরি নিতে হয়েছিল।
অসাধারণ কথা গুলি। (Y)
একেবারে ঠিক কথাটাই বলেছেন। বিজ্ঞানের অবদানে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার বদৌলতে আমার কাছেও ঠিক ঐরুপ মনে হয়, যে আমি বুঝতে পারিনা আমি কি বংলাদেশে আছি নাকি নিউইয়র্ক আছি।
সহমত
ধন্যবাদ।
এ ক ম ত। বাঙালি উগ্র জাত্যাভিমান নামক বিষফোঁড়ার জরুরি অস্ত্রপচার অত্যাবশক। এর অভাবে শুধু অহেতুক রাজনৈতিক কোন্দল ও খুনোখুনি যে বাড়ছে তাই-ই নয়, বিষফোঁড়ার বিষাক্ত রক্ত ও পুঁজ দুষিত করে চলেছে ভাষাগত সংখ্যালঘু জনজাতি তথা আদিবাসীদের। এমনকি তা দূষণ ঘটাচ্ছে মূল বাঙালি সংস্কৃতিতেও। …
অচলায়তন ভাঙার পথপরিক্রমা দীর্ঘতর হলেও এটি হতেই হবে। ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
//বাংলাদেশে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে ভাল ইন্টারনেট।//
বিদ্যুত সমস্যা মনে হয় খুব বড় সমস্যা না যদি ল্যাপটপ থাকে। আর বর্তমানে সিটিসেল, বাংলালায়ন, কিউবি এর ইন্টারনেট সার্ভিস দিয়ে কাজ ভালই চালানো যায়।
সুতরাং বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সমস্যা ফ্রীল্যান্সিং এর জন্য বড় বাধা নয়। বাধা বলতে গেলে বলতে হবে পেপ্যাল নেই যার জন্য ফ্রীল্যান্সিং সাইটগুলোকে উপার্জনের একটা ভাল অংশই দিতে হয়।
আর অনেকে পেপ্যাল না থাকলে কাজও দিতে চায় না।
@রনবীর সরকার,
ফ্রি ল্যান্সের ছোট খাট কাজ করে ব্যবসা শুরু করা যায়, কিন্ত পরবর্তী কালে ভাল বড় কিছু করতে গেলে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত এবং সংযোগ লাগবেই।
পেপ্যাল না থাকাটা বাংলাদেশের জন্যে সমস্যা। কিন্ত এলার্টপে আছে বাংলাদেশে। কিন্ত এটা বড় সমস্যা না। পেপ্যাল কাটে ৪%, ইল্যান্স ৫%। ১% এর জন্যে কিছু যায় আসে না।
বাংলাদেশের মূল সমস্যা ভাষার। অধিকাংশ বাংলাদেশের তরুণ ইংরেজি কথা বলাতে স্বাচ্ছন্দ না। এটার জন্যে ইন্টারভিউতে তারা আটকে যায়। আমি অনেক বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার বা আমেরিকানদের মধ্যে যারা কাজ দেয়, তাদের সাথে কথা বলে জেনেছি এটাই মুখ্য সমস্যা বাংলাদেশীদেরকে কাজ দেওয়ার জন্যে।
@বিপ্লব পাল,
ঠিক, বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এটা একটা সমস্যা বটে, তবে আমার মনে হয় তার থেকেও বড় সমস্যা হলো বাঙ্গালীদের কর্ম বিমুখতা, উচ্চ আকাঙ্খা আর উদ্যমের অভাব। বড় অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায় বাঙ্গালীরা, আর তাই বোধ হয় কোথায় যেন পড়েছিলাম বাঙ্গালীরা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী জাতি।
@ব্রাইট স্মাইল্,
লোকে ব্যাবসা শুধু টাকার জন্যে করে না-আইডেন্টির জন্যেও করে। একজন চাকুরিজীবির আইডেন্টি নেই-কিন্ত যে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন চালাচ্ছে-তার ও একটা আইডেন্টি আছে। আইডেন্টি ক্রাইসিস বাঙালীর মধ্যেও ভালোই আছে। সে ব্লগ লিখে, লোককে গালি দিয়ে সেটা অনলাইনে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্ঠা করে। এগুলোতে যখন সফল হবে, ব্যাবসার পথটা ভেবে দেখবে হয়ত।
বাংলাদেশীদের উদ্যোম নেই-এটা খুব ভুল। বাঙালীদের উদ্যোম আছে-সুপ্ত। আসলে পরিবেশের অভাবে ট্রিগার করে না। এই প্রবাসে এখন কমিউনিটির পাল্লায় পরে আমি নাটকের ভিডিও এডিট করছি। বাঙালীদের সামাজিকতার মধ্যে ব্যাবসা ব্যাপারটাই নেই-আছে শুধু নাটক, আড্ডা আর ঘোরা। সেখানে গুজরাতি বা পাঞ্জাবি দুজন বা তিনজন একসাথে বসলে শুধু ধান্দার গল্প করে।
@বিপ্লব পাল,
বাঙালীর মধ্যে আইডেন্টি ক্রাইসিস আছে এটা ঠিক, আর সেই ক্রাইসিসের পাল্লায় পরে উপযুক্ত মেধা আর পরিশ্রম ছাড়া রাতারাতি ধনী হওয়ার একটা তীব্র ইচ্ছা বাঙালীদের মনের মধ্যে কাজ করে বলে আমার মনে হয়। প্রবাসে দেখা যায় একই ব্যাবসায় বড় জোর কয়েক বৎসর বাঙ্গালীরা টিঁকে থাকে, আবার যে ব্যাবসায় অধিক মুনাফা অর্জনের আশা আছে সেটাতে কোন যোগ্যতা ছাড়াই ঝাঁপিয়ে পরে। বাংগালীদের বিশেষ করে বাংলাদেশের বাংগালীদের মধ্যে এক ব্যাবসা থেকে অন্য ব্যাবসায় পরিবর্তন করার প্রবনতা খুব লক্ষ্যনীয়, কম সময়ে ধনী হওয়ার আকাংক্ষা পোষনকারী বাংগালীদের বেশিরভাগ ব্যাবসাই লং রানে টিঁকে থাকেনা আর সফলতার মুখও দেখতে পায়না। লাভ লোকসান বিবেচনায় রেখেই সফল ব্যাবসা বংশ পরষ্পরায় টিঁকে থেকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে, যেটা গুজরাতি বা পাঞ্জাবিদের মধ্যে দেখা যায়। সাধারনতঃ একজন লোকের এতো বহুমাত্রিক প্রতিভা থাকেনা যে কোন ব্যাবসা চালিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা তার থাকবে।
সুপ্ত উদ্যোম কম বেশী সকলেরই থাকে, আর পরিবেশের অভাবের ব্যাপারটা সবার বেলায় একই রকম ভাবে প্রযোজ্য। প্রতিকুল পরিবেশে অন্য জাতির উদ্যোম যদি ট্রিগার করে তো বাংগালীদের মধ্যে অভাবটা কিসের? মানুষের মধ্যে যেমন জিন থাকে যেটা তার গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রন করে তেমনি কোন জাতীরও বোধ হয় কিছু কমন বৈশিষ্ট্য থাকে যেগুলোর থেকে পরিত্রান পাওয়ার ইচ্ছা থাকলে মনে হয় কয়েক প্রজন্ম অপেক্ষা করার দরকার আছে।
অনেক দিন বাদে আপনার লেখা পড়তে পেরে আনন্দিত।
(Y) (Y)
(Y)
(Y)
চীন ও কি
?
@ডারউইনের ভুত,
না। চীন এখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এটা স্টেট রেগুলেটেড ক্যাপিটালিজম। চিনের নতুন প্রজন্মের উদ্যোগপতি হওয়ার দৌড় আমি নিজে দেখছি। আমাকে অনেক দেশের নতুন ব্যবসায়ীদের সাথেই যোগাযোগ রাখতে হয়। এই সব দেশের মধ্যে চীনের নতুন প্রজন্মকে আমি সব থেকে বেশী মার্কস দেব। এরা খুবই উচ্চ শিক্ষিত, ভদ্র, কর্মঠ এবং এথিক্যাল।