লেবু বেশী কচলালে তেতো হয় কিন্তু বিজ্ঞানের লেবু মুহূর্তে মুহূর্তে না কচলালে বাসী হয়ে যায়। বিবর্তন শব্দটা শিরোনামে দেখে অনেকে হয়ত এখন বলছেন ” ……..এই আবার …”। ব্লগ পড়তে এসে ‘বালিশ ছিদ্র করা আঁতলামী’ ( কপিরাইট : রেজা শাহ ফাহামী ) দেখতে কারও ভালো লাগার কথা নয়। ব্লগে সেক্স , ড্রাগ আর রক এন রোল না থাকুক, সমানে চাপা মারার জায়গা করে না দিলে পাবলিকের গালি খাওয়ারই কথা। বহু বাঙালীর প্রান প্রিয় রসদ রাজনীতি , পরবস্ত্রনীতি আর (গুপ্ত) সাহিত্য ছাড়া কিছু লেখাটা একইসাথে আঁতলামি এবং দিওয়ানী দন্ডবিধির ৪২০ নম্বর ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সর্বোচচ সাজা ‘প্রকাশ্যে’ ১০০ দিস্তা চটিবই ক্রয় , অনাদায়ে পাঁচদিনের পুরোনো পোড়া ভাত ভক্ষণ । কিন্তু উপায় নেই গুলাম হুসেন ! বিজ্ঞানের বস্ত্র হরণ করে কানামাছি খেলতে দেখলে লেবুটা আবার কচলাতে হবে বৈকি ! কয়েকদিন আগে এই মুক্তমনায় ‘কৃত্রিম ডিএনএতে বিবর্তন পর্যবেক্ষণ: বিবর্তন প্রতিষ্ঠায় আরো একধাপ’ নামে একটা লেখা প্রকাশিত হয় যা আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছেন কিংবা আপনাদের কারও কারও মাথার উপর দিয়ে ‘সৌভাগ্যক্রমে’ চলে গেছে। সেই লেখাটা লেখা হয়েছিল যে সূত্র ধরে সেটা ছিল জীবের বংশগতি এবং বিবর্তনের উপর পরীক্ষাগারে সংশ্লেষিত জেনেটিক পলিমারের কিছু সক্ষমতা নিয়ে একটা গবেষণা Synthetic Genetic Polymers Capable of Heredity and Evolution। যারা এইমাত্র আবার ভিনদেশী ভাষার অযাচিত সূত্রপাত দেখছেন , তাদের কাছে হাতজোর করে ক্ষমা চাইছি । উপায় নেই গুলাম হুসেন ! টাইম মেশিনে চড়ে বরং এই ফাঁকে বরফ যুগে মঙ্গল গ্রহে গিয়ে মামা হালিম খেয়ে আসুন ! আমি সেই সুযোগে লেবুটা আরেকটু কচলিয়ে নিই।

ভিক্টর পিনেরো (খাঁটি পর্তুগীজ নাম ) এবং ফিলিপ হলিগারের নেতৃত্বে একদল গবেষক তাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে (Synthetic Genetic Polymers Capable of Heredity and Evolution) গত ২০ শে এপ্রিল ঘোষণা দেন যে :

Thus, heredity and evolution, two hallmarks of life, are not limited
to DNA and RNA but are likely to be emergent properties of polymers capable of information storage.

অর্থ্যাৎ, জীবের বংশগতি এবং বিবর্তন শুধুমাত্র দুই স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট ডি এন এ এবং আর এন এ – তে সীমিত নয় বরং এসব পলিমারের সম্ভাব্য কিছু বৈশিষ্ট তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম। এখানে তারা প্রাকৃতিকভাবে লভ্য কোন অনুর কথা বলছেন না। আমরা জানি যে, জীবের বিবর্তনে সরাসরি অংশগ্রহন করে এমন অনু আছে মাত্র দুইটি – ডি এন এ এবং আর এন এ , যেগুলো জেনেটিক অনু বলে পরিচিত। ভিক্টর পিনেরোর দল এই ধারনা বদলে দিয়ে , পরীক্ষাগারে সংশ্লেষিত আরও ছয়টি বিকল্প পলিমার উপস্থাপন করেছেন যেগুলো ব্যবহার করে জীবতথ্য সংরক্ষণ ও বিস্তার করা যায়। এই অনু গুলিকে নাম দেয়া হয়েছে এক্স এন এ। এনএ বলতে বোঝায় নিউক্লিয়িক এসিড এবং এক্স বলতে বোঝায় প্রতিস্থাপিত চিনি বা তার বিকল্প। এই সব চিনি বা চিনি জাত যৌগ উপদান জৈব নিউক্লিয়িক এসিডের সমতূল্য হলেও, এগুলো আর এন এ এবং ডি এন এ তে যে রাইবোজ ও ডিঅক্সিরাইবোজ পাওয়া যায় সেগুল নয়। রাইবোজ এবং ডিঅক্সিরাইবোজ কে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে পাঁচ কার্বনের চিনি আরাবিনোজ (এএনএ ) ; ২’- ফ্লরোআরাবিনোজ (এফএএনএ) , চার কার্বনের চিনি থ্রিওজ (টিএনএ) , ‘লকড রাইবোজ (এলএনএ) , ছয় রিংয়ের কাঠামোর সাইক্লোহেক্সিন (সিএএনএ) এবং আনহাইড্রোহেক্সিটোল (এইচএনএ) দিয়ে।

এক্স এন এ নিয়ে গবেষণাটি শুরু হয় একটি প্রশ্ন সামনে রেখে – পৃথিবীর প্রথম জৈব পলিমার কি ছিল ? হতে পারে আরএনএ কিংবা আরও সরল কাঠামো যাতে করে জৈবপূর্ব পরিবেশে সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া আরো সহজে সংঘটিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত করছিল। এ প্রসঙ্গে টিএনএ এবং গ্লাইসল নিউক্লিয়িক এসিড(জিএনএ) – এই দুই সম্ভাব্য অনুর কথা উল্লেখ করা যায়। এছাড়া এক্স এন এ কে দিয়ে আরএনএ কার্যক্রম চালানো যায় কিনা সেটা যাচাই করা এই গবেষণাকে যথেষ্ট উদ্দীপনা যুগিয়েছে। ছয়টি এক্স এন এ-র সবকটিতে জৈব নিউক্লিসঘটিত ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা লক্ষ্য করা গেছে।
গবেষণার চুড়ান্ত লক্ষ্য বলে যা ধারণা করা হয় , তা হচ্ছে সংশ্লেষিত রসায়ণ নির্ভর জেনেটিক ব্যবস্থা তৈরী করা যাতে নতুন ধরনের জীবের সংশ্লেষণ সম্ভব হয়। এ উদ্দেশ্য সফল হওয়ার অন্যতম শর্ত হল , এক্স এন এ কে অন্য কোন প্রাকৃতিক জৈব অনুর সাহায্য ছাড়াই নিজ গুনে তার নিজের প্রতিলিপির অনুঘটনার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে যাকে পুরোদস্তুর বিবর্তন প্রক্রিয়া বলা যায়।

এই গবেষণায় দেখা যায় যে, এক্স এন এ সংশ্লেষিত জেনেটিক পলিমারের ভূমিকায় কাজ করছে কিন্তু গবেষকদল এখনও একটা সংশ্লেষিত জেনেটিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি। গবেষকদের তৈরী ব্যবস্হায় এক্স এন এর প্রতিলিপি তৈরী করা হয় ডি এন এ তে রিভার্স ট্রান্সক্রাইব করে ডিএনএ কে এ্যাম্প্লিফাই করা হয় পিসিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করে । এরপরে সেই ডি এন এ কে আবার এক্স এন এ তে ফরওয়ার্ড ট্রান্সক্রাইব করা হয়। প্রতিটি স্তরে পলিমার ব্যবহৃত হয় এবং এ্যামপ্লিফিকেশনে ব্যবহার করা হয় ডি এন এ। এক্স এন এ সংশ্লেষণে সক্ষম পলিমারিস নির্বাচনে উদ্ভাবন করা হয়েছে সিএসটি ( compartmentalized self-tagging) নির্বাচন কৌশল।

উল্লেখ্য , এক্ষেত্রে TgoT লাইব্রেরীতে সিএসটি নির্বাচন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। সংশ্লেষন এবং এবং রিভার্স ট্টান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া বংশগতি প্রতিষ্টা করে এবং ছয়টি এক্স এন এ-র সব কটিই এ উদ্দেশ্যে সফল। এর পরেই আসে বিবর্তনের প্রশ্ন।‌ এক্ষেত্রে এইচ এন এ পলিমার পরীক্ষাগারে বিবর্তিত হয়ে কার্যক্ষম অনু এ্যাপ্টামারে পরিনত হয় যা নির্দিষ্ট প্রোটিন টার্গেটের সাথে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অর্থাৎ ছয়টির মধ্যে অন্তত একটি এক্স এন এ – বিবর্তন প্রক্রিয়া সংশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে ‘এক্সএনএজাইম’ তৈরীর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে যা সাধারণ প্রোটিন কিংবা নিউক্লিয়িক এসিডের পরিবর্তে এক্সএনএ ভিত্তিক হবে। এই গবেষণা আমাদের জন্য অনেক সম্ভাবনাময় সংশ্লেষিত জেনেটিক বিজ্ঞানের এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে, সংশ্লেষিত জেনেটিক অনু সমূহ যেন আমাদের প্রাকৃতিক জেনেটিক পরিমণ্ডলকে দুষিত কিংবা পরিবর্তিত করে নতুন বিপদের সূচনা না করতে পারে।

বিঃদ্রঃ অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে কি লিখবেন সেটা বুঝে উঠতে পারেন না। সেক্ষেত্রে একটা সূত্র হয়তো কিছুটা সাহায্য করবে। ধরুন , লেখা হচ্ছে ব্যসদেবকে নিয়ে এবং আপনি জানেন না ব্যসদেব কে ছিলেন। সেক্ষেত্রে কি লিখবেন মন্তব্যে ? আপনি লিখবেন :

” আরে ব্যসদেব তো একজন মানুষ ছিলেন ! মানুষ হয়েও কিন্তু তিনি মানুষ নন ! যেহেতু ব্যসদেব আজ আমাদের মাঝে নেই , কিন্তু ব্যসদেব যে ব্যসদেবই সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ! ”

তথ্যসূত্র : “Synthetic Genetic Polymers Capable of Heredity and Evolution”
Vitor B. Pinheiro et al . April, 2012