আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো লেখাকে খণ্ড-বিখণ্ড করে পোস্ট দেওয়া বা সিক্যুয়েল লেখার ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা দ্বিধায় ভুগি। এর কারণ নানাবিধ। দুই একটা এখানে বলা যেতে পারে। প্রথম হচ্ছে যে, একটা অখণ্ড লেখা পাঠককে যে আবেগের জারকরসে চোয়াতে পারে, সেই একই লেখা খণ্ডিত হবার পরে এবং সময়ের ব্যবধানের কারণে পাঠকের পুরোনো আবেগকে হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। দ্বিতীয় হচ্ছে যে, ব্লগে খুব প্রচলিত একটা কথা রয়েছে। যদি কোনো লেখার শেষে লেখা থাকে যে চলবে, তবে বুঝে নিতে হবে যে ওই লেখার ওখানেই ইতি। আমি নিজেই এই ঘটনা ঘটিয়েছি। অনেকদিন আগে ঈশ্বর কি আছে? ক্রেইগ ফ্লু বিতর্ক নামে একটা অনুবাদ শুরু করেছিলাম। কয়েক পর্ব পরেই সেটির অকাল মৃত্যু ঘটেছিল ঈশ্বরের মতই। :-Y
তারপরেও কথা হচ্ছে যে, এই লেখাটি পর্ব আকারে দিলাম কেন? লিখতে গিয়ে খেয়াল করলাম যে, লেখাটি একটি বেঢপ আকার নিয়েছে। এমনই একটি আকার যে, এটাকে পাঠক পুরোটা একবারে পড়তে গেলে ক্লান্ত হয়ে যাবে। আজকের এই ব্যস্ত সময়ে প্রায় বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই দীর্ঘ একটা প্রবন্ধ পড়ার জন্য অবসর সময় বের করা খুবই কষ্টকর। এই ভাবনাকে মাথায় রেখেই দ্বিখণ্ডের এক খণ্ড হিসাবে এই প্রবন্ধটি মুক্তমনায় এসেছে। কথা দিচ্ছি যে, সপ্তাহখানের মধ্যেই দ্বিতীয় এবং শেষ পর্বটি পোস্ট করবো। না করলে, তার কারণ হিসাবে আমার এই লেখার ভূমিকা এবং প্রবন্ধের শেষের চলবে শব্দটির দিকে দৃষ্টি দেবার জন্য অনুরোধ রইলো। 🙂
আরেকটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই। এই লেখাটির জন্ম হয়েছে মুক্তমনার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রণবীর সরকারের কারণে। মুক্তমনার যাঁরা নিয়মিত পাঠক তাঁরা জানেন ঘটনাটা। যাঁরা জানেন না, তাঁদের না জানলেও চলবে। অতটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় সেটি। শুধু এইটুকু জেনে রাখুন যে, এই প্রবন্ধটির জন্মকে উশকে দেবার জন্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁর নামে উৎসর্গ করা হলো এটি।
১. প্রবর্তন
১৬০৩ সাল। ফতেহপুর সিক্রি। মধ্য যুগের ভারত। শহরের ভিতর দিয়ে বিশাল এক রাজকীয় শবযাত্রা এগিয়ে চলেছে। শোকের ছায়া সকলের চোখে মুখে দৃশ্যমান। যিনি মারা গিয়েছেন, তিনি রাজকীয় পরিবারের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ধীরে ধিরে এগিয়ে যেতে থাকে শবযাত্রা। রাস্তার দুপাশে জমা হতে থাকে উৎস্যুক জনতা। লাশ বহনকারী খাটিয়ার একপাশ নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সামান্য এক দিনমজুরের মত মলিন বেশে এগিয়ে চলেছেন অশ্রুসজল চোখে শোকাতুর এক ষাটোর্ধ্ব লোক। এই লোককে ভালো করে দেখে দেখে চমকে উঠে জনতা। এতো আর কেউ নয়, স্বয়ং ভূ-ভারতের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ব্যক্তি, যার নামে বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায়, সেই আকবর বাদশাহ।
যাঁর শবযাত্রা হচ্ছে, যাঁর সম্মানে স্বয়ং বাদশাহ আকবর নেমে এসেছেন রাজপথে, তুলে নিয়েছেন শবাধার নিজের কাঁধে, তিনি আর কেউ নন, ভারতে মুগল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ বাবুরের কন্যা, দ্বিতীয় বাদশাহ হুমায়ুনের ভগিনী এবং বর্তমান বাদশাহ আকবরের ফুফু, গুলবদন বেগম। গোলাপ রাজকুমারী।
২. অক্লান্ত এক ব্যাঘ্রসেনানী
মধ্য এশিয়ার ফরগনা অঞ্চলের শাসক ছিলেন বাবুর। পিতা উমর শেখ মির্জার মৃত্যুর পর মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি রাজ্যভার গ্রহণ করেন। বাবুরের বংশকে যদিও ইতিহাসে মুগল বংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তাঁরা নিজেরা মুগল নামে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন না। মুগল শব্দটি মঙ্গোল থেকে আসার কারণেও এই অনীহা হতে পারে। তাঁরা নিজেদের চাঘতাইয়া বংশ বলে বারলাস তুর্কি অর্থাৎ তৈমুর বংশের সঙ্গে যোগসূত্রের পরিচয় দিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। দিল্লি শহরে নরহত্যার জন্য অনন্য নজীর সৃষ্টিকারী তৈমুর লঙকে গুলবদন মহান আখ্যা দিয়েছিলেন।
মধ্য এশিয়ার বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্য মোঙ্গল অধিপতি চেঙ্গিস খানের হাতে ধ্বংস হয়েছিল। চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তাঁর বিজিত সাম্রাজ্য তাঁর পুত্র পৌত্রদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। চেঙ্গিস খানের দ্বিতীয় পুত্র চাঘতাই এর ভাগে আসে বোখারা সমরখন্দ ইত্যাদি এলাকা। পৌত্র হুলাগু অভিযান করেন ইরানে। মোঙ্গলদের নিজস্ব ধর্মমত খুব একটা শক্ত ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত ছিল না, সেজন্য চেঙ্গিস পরবর্তী মধ্য এশিয়ার মোঙ্গল শাসকেরা বিজিত প্রজার ধর্ম ইসলামের অনুগামী হয়।
বাবুরের জীবন ছিল ঘটনাবহুল। কৈশোরকাল থেকেই যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়তে হয় তাঁকে। তাঁর প্রথম বিয়ে হয়েছিল আয়েশা বেগম নামের এক মেয়ের সাথে। এই আয়েশা বেগম আটকা পড়েছিলেন সমরখন্দে বিপক্ষ শক্তির হাতে। হিন্দি সিনেমার নায়কের মত সমরখন্দ আক্রমণ করেন বাবুর। সেখানকার শাসকদের পরাজিত করে উদ্ধার করেন আয়েশা বেগমকে। এই মানসিকতা তিনি মনে হয় পেয়েছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষ চেঙ্গিস খানের কাছ থেকে। ইতিহাসে আমরা দেখি চেঙ্গিস খানও পাল্টা আক্রমণ শাণিয়ে উদ্ধার করেছিলেন তাঁর অপহৃতা স্ত্রীকে।
এত কষ্ট করে উদ্ধার করা বউয়ের সাথে বেশি দিন অবশ্য সংসার করা হয় নি বাবুরের। পরবর্তীতে ক্রমাগত যুদ্ধ বিগ্রহে বিপর্যস্ত বাবুর যখন পলাতক জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছেন, তখনই আয়েশা বেগম তাঁর এই উদ্ধারকারী নায়ককে পরিত্যাগ করে চলে গিয়েছেন। সমরখন্দ বিজয়ের পরই তিনি খবর পান যে, উচ্চপদস্থ লোকদের বিদ্রোহের কারণে ফরগনা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে তাঁর। সমরখন্দ থেকে ফরগনা উদ্ধারের জন্য যাত্রা করেন তিনি। কিন্তু, পথিমধ্যে তাঁর সৈন্যবাহিনী তাঁকে পরিত্যাগ করে চলে যায়। সমরখন্দ এবং ফরগনা দু’টোই হাতছাড়া হয়ে যায় বাবুরের।
যে সমরখন্দ থেকে একদিন বীর বিক্রমে বাবুর উদ্ধার করেছিলেন তাঁর মহিয়ষীকে, সেই সমরখন্দেই তৃতীয় আক্রমণে উল্টো অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাবুর। ছয় মাস সমরখন্দে অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজনই তখন তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন নি। কোনো দিক থেকে কোনো সাহায্য না পেয়ে মুহ্যমান হয়ে পড়েন বাবুর। শেষ পর্যন্ত তাঁকে অবরুদ্ধকারী শয়বানি বেগের কাছে নিজের বোন খানজাদা বেগমকে বিয়ে দিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন তিনি।
নিঃস্ব, রিক্ত বাবুর মাত্র দুশো জন সৈনিক নিয়ে সমরখন্দ ত্যাগ করেন। এই সৈনিকদের অবস্থাও অত্যন্ত সঙ্গিন ছিল। অস্ত্র বলতে তাঁদের হাতে ছিল শুধু লাঠি। বেশভূষা ছিল জীর্ণ। পায়ে জুতার পরিবর্তে ছিল পাহাড়ি মেষ পালকদের চপ্পল-চাড়ুক।
পরের তিনবছর এদিক সেদিক বিশেষ করে কুন্দুজ এবং বদখসান থেকে আরো কিছু সৈন্য জোগাড় করেন তিনি। আর সেগুলোকে নিয়েই হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে কাবুল অভিমুখে যাত্রা করেন। কাবুলে পৌঁছে সেখানকার দুর্গ অবরোধ করেন তিনি। এই অবরোধ মাত্র দুই-তিন দিন স্থায়ী হয়। কাবুল অধিপতি মুহাম্মদ মুকিম হালকা-পাতলা কিছু প্রতিরোধ করেই হাল ছেড়ে দেন এবং বাবুরের সাথে সন্ধি করেন। সন্ধির শর্ত অনুসারে কাবুল দুর্গ এবং নগর বাবুরের অধিকারে আসে এবং মুহাম্মদ মুকিম নিজের ধনদৌলত নিয়ে কান্দাহার চলে যান।
কাবুল থেকেই বাবুরের সৌভাগ্যের সূচনা হয়। তবে সমরখন্দের প্রতি মোহ তাঁর তখনও কাটে নি। শয়বানি বেগের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বাবুর সমরখন্দ যাত্রা করেন এবং শাহ ইসমাইলের সহযোগিতায় তা দখল করে নেন। কিন্তু, পরবর্তীতে তাঁর নিজের ভাই এবং কিছু মুগল সর্দারদের বিরোধিতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ওবায়েদুল্লাহ খানের কাছে পরাজিত হন। এই যুদ্ধে বাবুরের শক্তি এতটাই কমে যায় যে, তিনি তাড়াতাড়ি সমরখন্দ ত্যাগ করে কাবুলে ফিরে আসেন।
এই সময়ই তিনি মধ্য এশিয়া দখলের ইচ্ছা ত্যাগ করে দৃষ্টি ফেরান পূবের দিকে। সুবিশাল হিন্দুস্থান পড়ে আছে বিজিত হবার অপেক্ষায়। হিন্দুস্থান অভিযানের সুপ্ত একটা ইচ্ছা বাবুরের মনে অনেকদিন ধরেই ছিল, কিন্তু তাঁর পরামর্শদাতারা এবং উজির-নাজিরেরা এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে সহমত হন নি। তবে, এখন পরিস্থিতির বিবেচনায় ধীরে ধীরে তাঁর আমির উমরাহরা তাঁদের বিরোধিতার সুর নামিয়ে আনতে শুরু করেন। বাবুরের ধারণা ছিল যে, দিল্লির মসনদের ন্যায্য উত্তরাধিকারী তিনিই। কারণ তাঁর পূর্বপুরুষ তৈমুর লঙ-ই মুহাম্মদ বিন তুঘলঘকে পরাজিত করে খিজির খানকে দিল্লির মসনদে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। খিজির খান সায়ীদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এই বংশের শেষ পুরুষ আলাউদ্দিন আলম শাহ বাহভুল খান লোদির কাছে স্বেচ্ছায়(!) রাজবংশ হস্তান্তর করেন। বাবুরের সময়ে দিল্লিতে বাহভুল খান লোদির ছেলে ইব্রাহিম লোদি সিংহাসনে আসীন ছিল।
বাবুর তৈমুর লঙ কর্তৃক অধিকৃত অংশ দাবী করে ইব্রাহিম লোদির কাছে চিঠি পাঠান। কিন্তু সেই দাবী যথারীতি উপেক্ষিত হয় লোদির কাছ থেকে। সেয়ানা বাবুরের তখনই হিন্দুস্থান আক্রমণের কোনো ইচ্ছাই ছিল না। বরং ভবিষ্যতে আক্রমণের পরিকল্পনা হিসাবে প্রাথমিক কিছু ছোট ছোট আক্রমণ চালান সীমান্তবর্তী এলাকাসমুহে। অগ্রবর্তী ঘাটি তৈরি করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। এরকমই এক আক্রমণে কান্দাহার দখল করে নেন। ভারতবর্ষে আক্রমণ পরিচালনার ক্ষেত্রে কান্দাহার দখল করাটা স্ট্রাটেজিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে, এই সাফল্য সহজে আসে নি। প্রায় দেড় বছর অবরোধের পর কান্দাহার দখলে আসে বাবুরের।
কান্দাহার দখলের তিনবছর পরে হিন্দুস্থানে এক নাগাড়ে বেশ কিছু আক্রমণ করেন তিনি। এইসব আক্রমণে ভেরা, ওয়াজুর, শিয়ালকোট, দেবলপুর, লাহোর জয় করে নেন তিনি। অবশেষে ১৫২৬ সালে ইব্রাহিম লোদির সাথে চুড়ান্ত যুদ্ধের উদ্দেশ্যে পানিপথে (বর্তমানে হরিয়ানায়) সৈন্য সমাবেশ শুরু করেন বাবুর।
বারো হাজার সৈন্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন বাবুর। যাত্রা পথে ইব্রাহিম লোদিকে অপছন্দকারী হিন্দুস্থানের বিদ্রোহী রাজন্যবর্গের কারণে স্থানীয় লোকেরাও বাবুরের যুদ্ধযাট্রে অংশ নেয়। বারো হাজার থেকে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় পঁচিশ হাজারে। এই বাহিনী ইব্রাহিম লোদির মুখোমুখি হবার জন্য পানিপথে (বর্তমানে হরিয়ানায়) গিয়ে হাজির হয়। তবে এই সৈন্যবাহিনী ইব্রাহিম লোদির সৈন্য সংখ্যার তুলনায় কিছুই ছিল না। ইব্রাহিম লোদি এক লাখ লোক (এদের মধ্যে যোদ্ধা ছিল তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার, বাকিরা নানা প্রয়োজনে যুদ্ধশিবিরের সাথে থাকতো) আর এক হাজার হাতির বহর নিয়ে বাবুরকে জন্মের মত শিক্ষা দেবার জন্য পানিপথের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই যুদ্ধ হয়েছিল ১৫২৬ সালের ২১শে এপ্রিল।
এত বড় সৈন্যবহর নিয়েও বাবুরের মুগল বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে যায় ইব্রাহিম লোদি। তিনি নিজেও যুদ্ধে নিহত হন। এই যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণে মূল ভূমিকার রেখেছিল কামান। (এই যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাবুরের নিজের বর্ণনায় অবশ্য কামানের চেয়ে তীরন্দাজবাহিনীকে বেশি কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। এরা বিভিন্ন দিক থেকে লোদি বাহিনীকে আক্রমণ করে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল।) বাবুরের বাহিনীতে প্রায় বিশ পঁচিশটা কামান ছিল। এই বস্তু হিন্দুস্থানের জন্য একেবারেই নতুন। আগের কোনো যুদ্ধেই কামান ব্যবহৃত হয় নি। কামানের বিকট শব্দে লোদির হাতিগুলো ভয় পেয়ে দিকবেদিক ছুটোছুটি শুরু করে। হাতির পায়ের নিচে চাপা পড়ে লোদির নিজের লোকেরাই অকাতরে প্রাণ দিতে থাকে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণায় বেরিয়ে আসছে যে, শুধু কামানই নয়, বাবুরের যুদ্ধকৌশলও ইব্রাহিম লোদির চেয়ে অনেকগুণে উন্নত ছিল। এমন চতুরভাবে সৈন্যবিন্যাস বাবুর করেছিলেন যে, ছোটো সেনাবাহিনী হবার পরেও বাবুরের সৈন্যরা ঘিরে ফেলেছিল লোদীর বিশাল সৈন্যবাহিনীকে।
তারপরেও হয়তো শুধুমাত্র সংখ্যায় বেশি হবার কারণেই লোদি জয়ী হতেন। কেননা, বাবুরের রিজার্ভ সৈন্য বলে কিছু ছিল না। যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে যাচ্ছিল তারা। এর মধ্যেই হুট করে ইব্রাহিম লোদি মারা যান। তাঁর অন্যান্য রাজন্যবর্গ এবং সেনাধিপতিরা তাঁকে ত্যাগ করে চলে যায়। কেউ কেউ পক্ষও পরিবর্তন করতে থাকে। এতে করে মনোবল ভেঙে যায় তাঁর সৈন্যবাহিনীর। ইব্রাহিম লোদি যদি আর মাত্র ঘন্টাখানেক টিকতে পারতেন, ভারতবর্ষের ইতিহাস হয়তো ভিন্নভাবে লেখা হতো।
ইব্রাহিম লোদিকে পরাস্ত করে বাবুর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মাত্র তিনিদিনের মাথাতেই দিল্লি এবং আগ্রা দখল করে নেন। একই দিনে তিনি পুত্র হুমায়ুনকে আগ্রা পাঠান রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুট হওয়া ঠেকানোর জন্য। সেখানে গোয়ালিওরের রাজার পরিবারকে নিরাপত্তা দানের বিনিময়মূল্য হিসাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরকখণ্ড কোহিনূর দখলে আসে হুমায়ূনের। বাবুর তাঁর জীবনীগ্রন্থ বাবুরনামাতে উল্লেখ করেছেন যে, এই হীরকখণ্ডটির মূল্য এতই যে, একে বিক্রি করলে সারা পৃথিবীর মানুষের আড়াই দিনের আহারের সংস্থান করা সম্ভব।
দিল্লি অধিকার করে যে বিপুল সম্পদ হস্তগত হয়, আনন্দিত বাবুর তার প্রায় পুরোটাই নিজের লোক লস্করদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। হিন্দুস্থানের আমির ওমরাহরা এই বিলিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিল যে, হিন্দুস্থানের বাদশাহের ধনভাণ্ডার এভাবে নিঃশেষ হতে দেওয়া চলে না। যখন যিনি এই মসনদের অধিকারী হয়েছেন, তখনই তিনি পুরোনো ধনভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন। এটাই নিয়ম। কিন্তু, হিন্দুস্থানি আমির ওমরাহদের কথা শুনতে বয়েই গিয়েছে বাবুরের। তিনি অকাতরে ধনসম্পদ বিলিয়েছেন তার নিজের লোকজনকে খুশি করার জন্য।
বাবুরের অন্যতম সঙ্গী ছিল খাজা কালাবেগ। এই কালাবেগের কাছেই দিল্লি বিজয়ের খবর এবং দখলীকৃত ধনসম্পদের একটা অংশ কাবুলে তাঁর আত্মীয় স্বজন, ইয়ার দোস্ত এবং হারেমবাসিনীদের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। বাবুরের প্রত্যেক বেগমের জন্য জওহর, ইয়াকুত, আলমাস, দমর্দারিদ, জমরুদ, ফিরোজা, জবরজন্দ, আইনুত্তমর ইত্যাদি মূল্যবান প্রস্তরে সজ্জিত একটি সোনার থালা, সদফি আশারাফি ভরা একটি খাঞ্চা এবং ইব্রাহিম লোদির একজন করে নৃত্যবালা পাঠানো হয়। সুবর্ণ রঙের আশারাফি, সোনার শারুখি ইত্যাদির স্মন্বয়ে সাজানো উপহার সামগ্রী সাজিয়ে অন্যান্য আত্মীয় কুটুম্বদের নজরানা দেওয়া হয়। সেই সাথে একজন করে দাসীও দেওয়া হয়।
এর মধ্যে একটু হালকা-পাতলা মশকরাও করা হয়, সবাইকে বিনোদনের জন্য। বাবুরের এক মামা ছিলেন। নাম আপস। তাঁর জন্য বাবুর পাঠিয়েছিলেন বিশাল ওজনদার এক আশারাফি। বাদশাহি ওজনে তার ওজন ছিল তিনসের। আর হিন্দুস্থানের ওজন অনুযায়ী ওজন ছিল পনের সের। বাবুর মামার সাথে রসিকতা করার জন্য কালাবেগকে শিখিয়ে দিয়ছিলেন যে, আপস যখন জিজ্ঞেস করবে যে, বাদশাহ বাবুর তাঁর জন্য কী পাঠিয়েছে, তখন যেন বলা হয় যে, একটি মাত্র আশারাফি পাঠিয়েছেন। এবং সেই আশারাফিতে যেন ছিদ্র করে আপসের গলায় পরিয়ে সমগ্র হারেমে ঘোরানো হয়।
আশরাফিটা যখন আপসের গলায় পরানো হয়েছিল, তখন তিনি যতটা না বিস্মিত হয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি কষ্টই হয়েছিল তাঁর। আশরাফির ভারে বেচারার গর্দানই ভেঙে যাবার দশা হয়েছিল। ফলে, বাধ্য হয়ে গলা থেকে খুলে হাতে ঝুলিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এটাকে হাতে ঝুলিয়ে গর্বভরে ঘুরে বেড়াতেন তিনি আর সকলকে বলে বেড়াতেন যে, খবরদার এই আশরাফিতে কেউ হাত দিও না। বাদশাহ বাবুর এটি আমাকে উপহার দিয়েছেন।
এই কালাবেগের মাধ্যমেই বাবুর তাঁর সাথে সামান্যতম আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে এমন সব লোকদের কাছেই পত্র পাঠিয়ে জানান যে, তাঁরা যদি বাদশাহের দরবারে এসে চাকরি করতে চায়, তবে যেন অতিসত্বর ভারতে চলে আসে। বাবুরের এই আহবানে সাড়া দিয়ে তাঁর অনেক আত্মীয় স্বজনই হিন্দুস্থানে এসে হাজির হয়।
পানিপথের যুদ্ধের এক বছরের মধ্যেই সংঘটিত হয় খানুয়ার যুদ্ধ। প্রতিপক্ষ রাজপুর রাণা সঙ্গ। যে রাণা সঙ্গ একদিন ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবুরকে সহায়তা দিয়েছিলেন, সেই তিনিই বাবুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ রচণা করেন। অনেক নবাব, আমির, ওমরাহ, রাজা ও রাণা, যারা এর আগে এসে বাবুরের দরবারে তাঁদের আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই রাণা সঙ্গের সাথে যোগ দেন। বিশাল এক বাহিনী প্রস্তুত হয় হিন্দুস্থানের বুক থেকে মুগল সাম্রাজ্যকে কচি চারাগাছ থাকা অবস্থাতেই উপড়ে ফেলতে।
এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া বাবুরের অন্য কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু বাগড়া দিয়ে বসে শাহি জ্যোতিষী। গ্রহ নক্ষত্র বিরূপ বলে এই যুদ্ধ বাবুরের অনুকূল হবে না বলে ভবিষ্যতবাণী করেন তিনি। শুধু ভবিষ্যতবাণি করেই ক্ষান্ত দিলেন না, বরং সর্বত্র রটিয়ে দিলেন যে, গ্রহ, নক্ষত্রের বিরূপতায় বাদশাহের এই যুদ্ধে না যাওয়াই ভালো। জ্যোতিষীর এই ভবিষ্যতবাণী শাহি ফৌজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। তারা হতাশ এবং অধৈর্য হয়ে পড়ে। এই সমস্ত ঘটনায় বিচলিত এবং চিন্তিতি হয়ে পড়েন বাবুরও। মরিয়া তিনি তাঁর পক্ষের সমস্ত আমির-ওমরাহ, সুবেদার এবং অন্যান্য সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের একত্রিত করে তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, “হিন্দুস্থানের এই আগ্রা শহর থেকে আমাদের পৈত্রিক ভূমিতে যেতে এক মাসেরও বেশি সময় লাগে। আমরা যদি যুদ্ধে পরাজিত হই কিন্তু আল্লাহতালার রহমতে প্রাণে বেঁচে যাই তাহলেই বা কী? কোথায় থাকব আমরা, আর কোথায় আমাদের পিতৃপুরুষের দেশ। বিদেশে শত্রুপক্ষের লোকদের হাতে আমাদের প্রতি পদে পদে লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত হতে হবে। অতএব এই দুর্যোগের সময় আমাদের সামনে দুটি মাত্র পথ খোলা আছে – আমাদের দুটি প্রতিজ্ঞা করতে হবে, খোদার পথে আমরা অবিচল লড়াই করে যাব। যদি বেঁচে থাকি তাহলে গাজি (বিজয়ী) হব, অন্যথায় শহিদ। এই পথই আমাদের নৈতিক অবলম্বন এবং নিজেদের নিরাপত্তার একমাত্র প্রতিশ্রুতি।“
সিক্রির উপকণ্ঠে খানুয়া নামের এক জায়গায় বাবুরের সাথে রাণা সঙ্গের ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিতে মনে হচ্ছিল যে, বাবুরের দিন বোধহয় শেষ হয়ে এলো। কিন্তু, বিস্ময়করভাবে যুদ্ধে তাঁর বিজয় ঘটে।
৩. একজন গোলাপ রাজকুমারী
গুলবদনের জন্ম ১৫২৩ সালে কাবুলে। বাবুরের দিল্লির সিংহাসন দখলের দু বছর আগে। কাবুল বিজয় বাবুরের জন্য সৌভাগ্য হিসাবে দেখা দিয়েছিল। এখানে থাকার সময়েই তাঁর আঠারো সন্তান জন্মেছিল চার স্ত্রীর গর্ভে। চতুর্থ স্ত্রী দিলদার বেগমের গর্ভে জন্মেছিলেন গুলবদন বেগম। কিন্তু তাঁকে পালিত কন্যা হিসাবে নিয়ে নেন বাবুরের জ্যেষ্ঠা বেগম মহম বেগম। শুধু গুলবদনই নন, তাঁর আরেক ভাই হিন্দালকেও দত্তক নেন তিনি। নিজের সন্তানের মতই প্রতিপালন করেন তিনি তাঁদের। মহম বেগম ছিলেন হুমায়ুনের মাতা। হুমায়ুনের পর তাঁর আরো চারটি সন্তান জন্মেছিল। তিন কন্যা এবং এক পুত্র। এরা সকলেই শৈশবে মারা গিয়েছেল। হয়তো সে কারণেই এই দত্তক গ্রহণ। তবে, এই দত্তক গ্রহণের কারণেই গুলবদন বেগমের সাথে বৈমাত্রেয় ভ্রাতা হুমায়ুনের যথেষ্ট নৈকট্য গড়ে উঠে। হয়তো এজন্যই গুলবদন বেগম আজীবন বিশ্বস্ত থেকেছেন হুমায়ুনের প্রতি, দেখিয়েছেন নিঃস্বার্থ ভগ্নিপ্রেম ভ্রাতার প্রতি।
শিক্ষিত, ধার্মিক, রুচিশীল এবং মার্জিত রমণী ছিলেন তিনি। রাজপরিবারের একজন সদস্য হবার জন্য যে ধরণের গুণাবলী থাকা দরকার, তার সবই ছিল তাঁর মধ্যে। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তাঁর। তুর্কি এবং ফারসিতে ছিল অসামান্য দক্ষতা। ছিলেন তাঁর সময়ের একজন নামকরা কবি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাঁর কবিতার প্রায় পুরোটাই হারিয়ে গিয়েছে। ছিটেফোঁটা দুই এক লাইন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে সেখানে। তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। রাজনীতির হালচাল এবং যুদ্ধের ময়দানের জটিলতা এবং কৌশল সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল। বাবা বাবুর এবং ভাই হুমায়ুনের নানাবিধ যুদ্ধের কারণে ভারতের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করতে হয়েছে, যেতে হয়েছে জীবনের নানাবিধ জটিল অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। এগুলোই তাঁকে ঋদ্ধ করেছে রাজনীতি, সমাজনীতি এবং সমরনীতি বিষয়ে।
সতের বছর বয়েসে তাঁর বিয়ে হয়েছিল চাচাতো ভাই খিজির খাজা খানের সাথে। একটা ছেলেও জন্মেছিল তাঁদের (একাধিকও হতে পারে, সঠিক তথ্য নেই এই বিষয়ে)। খিজির খাঁ একবার হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেই কাজ করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন গুলবদন বেগম।
খানুয়ার যুদ্ধের পরেই বাবুর বুঝে যান যে, মধ্যে এশিয়ায় ফেরার স্বপ্ন আর তাঁর পূরণ হবে না। এই যুদ্ধের এক বছর পর ১৫২৮ সালে কাবুলে অবস্থিত তাঁর হেরেমের লোকজনদের হিন্দুস্থানে আসার নির্দেশ পাঠান। এই নির্দেশ মোতাবেক মহম বেগমের সাথে গুলবদন দীর্ঘ যাত্রা শেষে হিন্দুস্থানে এসে পৌঁছেন।
১৫৪০ সাল পর্যন্ত আগ্রাতেই ছিলেন গুলবদন বেগম। চুসা এবং কনৌজের যুদ্ধে শেরশাহ সুরির কাছে পরাজিত হয়ে হুমায়ুনের চরম ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। দিল্লির সিংহাসন চ্যুত হন তিনি। আশ্রয়ের সন্ধানে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকেন তিনি। আফগান অঞ্চল তখন হুমায়ুনের ভাই কামরান মির্জার দখলে। তবে, হুমায়ুনের সাথে তাঁর সম্পর্ক সাপে নেউলের মত। হুমায়ুনের অনুগত গুলবদন তখন ফিরে যান কাবুলে। আশ্রয় নেন কামরান মির্জার কাছে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, কামরান মির্জাও তাঁর এই ভগিনীটিকে স্নেহ করতেন। তিনি হুমায়ুনের অনুগত অন্য সব মহিলাদের ধনরত্ন কেড়ে আত্মসাৎ করলেও গুলবদনের সাথে সেরকম কোনো অনুচিত কাজ করেন নি। হতে পারে তিনি হয়তো গুলবদনের স্বামী খিজির খাঁকে শত্রু করে তুলতে চান নি।
১৫৫৫ সালে হুমায়ুন পূণরায় দিল্লির মসনদ অধিকার করেন। কিন্তু, পরের বছরই সিঁড়ি থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে। হুমায়ুনের মৃত্যুতে আকবর সিংহাসনে বসেন। দুই বছর পরে তিনি কাবুলে অবস্থানকারী হুমায়ুনের অনুগত হেরেমবাসিনীদের হিন্দুস্থানে ফিরে আসতে বলেন। তাঁরা সানন্দে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আবারও চলে আসেন ভারতে। আকবরের মাতা হামিদা বানুর সাথে গুলবদনের আমৃত্যু সখ্যতা ছিল।
এর পরে ১৫৭৫ সাল পর্যন্ত গুলবদনের বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়। এই বছর রাজপরিবারে আরো কিছু মহিলাকে সাথে নিয়ে হজ্জে যান তিনি। সম্রাট আকবর এই হজ্জযাত্রা নির্বিঘ্ন করার যাবতীয় ব্যবস্থা নেন। মক্কায় তাঁর আগমণ বিরাট আলোড়ন তুলেছিল। সেখানে তিনি চার বছর অবস্থান করেন। সিরিয়া, এশিয়া মাইনরশ দূরদূরান্তের লোকজন রাজকীয় রমণীদের দেখার জন্য এবং কৃপা ভিক্ষা করার জন্য ভিড় জমাতো তাঁদের কাফেলার সামনে।
ফেরাটা অবশ্য খুব একটা সুখকর হয় নি। এডেনে জাহাজডুবির কারণে সেখানে সাত মাস অবস্থান করতে হয় তাঁদের। সাত বছর পর ১৫৮২ সালে হজ্জযাত্রীদের সাথে আগ্রায় ফিরে আসেন গুলবদন বেগম।
১৬০৩ সালে আশি বছর বয়সে মারা যান গুলবদন বেগম। সামান্য কয়েকদিনের জ্বরই তাঁর মৃত্যুকে ডেকে নিয়ে এসেছিল। মৃত্যু শয্যায় হামিদা বানু এবং হিন্দালের মেয়ে রুকাইয়া উপস্থিত ছিল। গুলবদনকে চোখ মুদতে দেখে ব্যাকুল হয়ে তাঁকে ডাকতে থাকেন হামিদা বানু। চোখ না খুলেই অস্ফুট স্বরে শেষ কথা বলে যান গুলবদন, “আমি যাচ্ছি, কিন্তু তোমরা বেঁচে থাকো।“
চলবে (কিংবা নাও চলতে পারে, কিছুই বলা যায় না।) 🙂
অনেক কিছু জানলাম। টানা ইতিহাসের বদলে ছোট ছোট গল্প আকারে ধারাবাহিকটি পড়তে চাই। ধন্যবাদ। 🙂
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। সম্পূর্ণ ছায়াছবি সম!!! দারুন।
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
ধন্যবাদ ভাইয়া পরীক্ষা ফেলে ছায়াছবি দেখার জন্য। 🙂
ফরিদ ভাই – এরকম দ্বৈত-অর্থবোধক অনর্থকারী বাক্যতো ধর্মগ্রন্থগুলোরই একচেটিয়া অধিকারভুক্ত ছিল। মেরে দিলেই হলো নাকি? পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল স্কুলে পড়ার সময় এরকম লেখা পড়ার সুযোগ পেলে ইতিহাসের পরীক্ষায় গোল্লা পেতে হতো না আর মৌলভী মাহবুবউল্লার পিটুনি খেতে হতো না। আরো একাধিক পর্বের অপেক্ষায়।
@প্রদীপ দেব,
:hahahee:
পাবেন। আলস্যের ওম থেকে বের হয়ে নেই। 🙂
দারুণ লাগলো!
কিন্তু শিরোনাম শুনে যা মনে হলো, সেই গল্পতো এখনও শুরুই হয়নি। নেক্স্ট পর্বে শেষ করবেন কি করে?
@তানভীরুল ইসলাম,
থ্যাংক ইউ তানভীর। বিজ্ঞানীরা যখন ইতিহাস পড়ে এবং দারুণ বলে তখন আপ্লুত হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। 🙂
আসল গল্প আসলেই শুরু হয় নি। আমি নিজেও সন্দিহান আছি পরের পর্বে শেষ করতে পারবো কিনা। নাহলে তিন পর্ব হবে, কী আর করা।
ভালো লাগলো (Y) ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ধন্যবাদ রামগড়ুড়ের ছানা। তুমি ভালো বলা মানে সত্যিই ভালো হয়েছে, নিশ্চিত হলাম। গোলাপ শুভেচ্ছা। (F)
সুসাহিত্যিক ফরিদ ভাই এর ইতিহাস জ্ঞান যে মারাত্মক টনটনে তার প্রমান আগে একাধিকবার পেয়েছিলাম। এখন পূর্ন ইতিহাসবিদের ভূমিকায় তাকে পেয়ে বেশ ভাল লাগল। ইতিহাস বর্ননা করার জন্য আসলে সুসাহিত্যের বড় ভূমিকা আছে।
বাবরের নাম আমিও অনেক যায়গায় বাবুর দেখেছি, তবে মাজেজা জানতাম না।
বাবর যে তৈমুর লং এর বংশধর এও জানতাম না, শুধু ভাসা ভাসা ধারনা ছিল সমরখন্দ বা মধ্য এশিয়া এমন কোথাকার, তুর্কি ছাপ আছে। একই সাথে দেখি ওনারা চেংগিসেরও বংশধর। তার মানে তৈমুর লংও মোংগল ছিল? তৈমুর লং এর শাসনকাল নিয়ে নাকি বিতর্ক আছে শুনেছি।
@আদিল মাহমুদ,
:hahahee: হে ধমাধম ধর্মের একমাত্র সত্য নবী, আপনার মাথাডা ঠিক আছেতো। নাকি মৃগী রোগের প্রকোপে এই সব আয়াত নাজিল করিতেছেন?
না, তৈমুর লং মোঙ্গোল ছিলেন না। ছিলেন বারলাস তুর্কি। বাবুর তাঁর মায়ের দিক থেকে মোঙ্গোলদের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। মোগল শব্দটি মোঙ্গোল থেকে এসেছে বলে তারা নিজেরাও মোগল নামে পরিচিত হতে অনিচ্ছুক ছিলেন।
ধমাধম ধর্মের খবর কী? খুব বেশি সুবিধা করতে পারতেছেন না মনে হয়। বেশি সাফল্য না পাওয়ার পিছনের কারণটা অবশ্য বের করেছি আমি আপনার জন্য। মুহাম্মদের মত কোনো খাদিজা নাই আপনার। একটা জোগাড় করা দরকার, ধর্ম এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রয়োজনে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
ধমাধম ধর্ম সম্পর্কে চিন্তিত হবেন না। প্রথম দিকে সব ধর্মই অনেক বাধার মুখে পড়ে, আপনাদের মতন বিদ্বেষীরা নবী রসূলদের পাগল ছাগল প্রতারক অনেক কিছুই বলে, হত্যাও করে। এরপর এক সময় দলে দলে ধর্ম গ্রহন করে। ধমাধমের ছায়া সুশীতল আরশের নীচে বহু ভাই বোন ইতোমধ্যেই জড়ো হয়েছেন, আরো হবেন ইনশাধমা। আমারো বিবির সংখ্যা সেই সাথে বাড়তে থাকবে, ইতিহাস স্বাক্ষী।
এনারা মোংগল হোক আর তুর্কি হোক, মোগলাই খানা তো অন্তত শিখিয়ে গেছে।
@আদিল মাহমুদ,
আমি করবো না। আমি আবু লাহাব। ভাঙি, কিন্তু মচকাই না। আমার দু’ হাত ধ্বংস হোক (যাতে কিবোর্ড ধরতে না পারি) আর আমি শিখাযুক্ত আগুনে শিঘ্রই প্রবেশ করবো এই অভিশাপ বাণী সম্বলিত সুরা আল ফরিদ কবে নাজিল করবেন? 🙁
বালিকা বধুর সাথে আপনার বিবাহের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়েন। বিবিকে একটা বার্বি ডল উপহার দেওয়ার ইচ্ছা আছে আমার।
হক কথা। মোগলাই খানার উপরে কোনো খানা নাই। আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারেরও প্রিয় খাবার এইটা। 🙂
ইতিহাসের অলি গলিতে ঘুরিয়ে আনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রাঞ্জল ভাষায় ইতিহাস নিয়ে খুব ঝকঝকে লেখা উপহার দেয়ায় বেশ ভালো লাগল।
@রাজেশ তালুকদার,
ইতিহাসের গলি এখন ঘুরতে এখনও বাকি আছে অনেক। আপনি নিজেও আমাদের অনেক গলি ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। দেখা যাক আমি কী বা কতটুকু করতে পারি।
কাহিনি সোজা। মুগলদের পরেই মুক্তমনা সেলিব্রিটিগোরে ধরুম। পয়লা চয়েস তুমি। 😉
বাবুরের নামের তুর্কি উচ্চারণ কি আমি জানি না। তবে ফারসিতে এই উচ্চারণ খুব সম্ভবত বাবুর। আমি মূলত নামের ক্ষেত্রে ইংরেজিকেই স্টান্ডার্ড হিসাবে ধরেছি। যদিও বাংলাদেশে আমরা তাঁকে বাবর বলে ডাকতে অভ্যস্ত। বই-খাতাপত্র সব জায়গাতেই বাবর লেখা হয়। কাজেই এতে আমাদের চোখ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। উইকিতে তাঁর নাম লেখা হয়েছে বাবুর বলে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি যেটার কারণে আমি এখানে বাবুর লিখেছি সেটা হচ্ছে যে, বাবুরের নিজের লেখা একটা আত্মজীবনী রয়েছে বাবুরনামা নামে। এই বাবুরনামার যত ইংরেজি সংস্করণ আমি দেখেছি তার কোথাও বাবরনামা লেখা নেই, বরং লেখা রয়েছে বাবুরনামা।
[img]http://photo.goodreads.com/books/1320451456l/139673.jpg[/img]
@ফরিদ আহমেদ,
“বাবর” কেন “বাবুর” এই প্রশ্নটা কালকে মাথায় এসেছে। কিন্তু আমি ফরিদ ভাই এর প্রতি অস্থাশীল, আমি নিশ্চতি ছিলাম আপনি নিশ্চিত না হলে লিখেন নাই। (Y)
@আকাশ মালিক,
বাবরের নিষ্ঠুরতার যে সব বর্ননা দিলেন সেগুলির সূত্র কি?
আমার জানা মতে প্রথম তিন মোঘল সম্রাট তেমন নিষ্ঠুর ছিলেন না।
@আদিল মাহমুদ,
রেফারেন্স দেবো কোত্থেকে, সেই কবে শাহনামা পড়েছিলাম। এক ইরানী ছাত্রের কাছ থেকে প্রায় ৪৩ বছর পূর্বে ফার্সিতে লেখা কিছু গল্প কিছু ইতিহাসের বই পড়েছিলাম।
—- His passions could be equally strong. In his first marriage he was “bashful” towards Āisha Ṣultān Begum, later losing his affection for her.[22] Babur also had a great passion to kill people, cut heads of people and create pillars out of cut head. He claimed to have created several such pillars in his autobiography.[23]
বাংলা উইকি থেকে-
বাবর একজন গোঁড়া সুন্নি মুসলিম ছিল। সে তার শিয়া মুসলিমদের অপছন্দ করাকে কখনও কখনও ব্যক্ত করেছিল ” তাদের বিচ্যুতি ” বলে । যদিও ধর্ম বাবরের জীবনের এক প্রধান স্থান ছিল এবং তার সহযোগী রাজারা ইসলামকে হালকা ভাবে গ্রহণ করেছিল। বাবর তার সমকালীন এক কবির কবিতার একটি লাইন প্রায় উদ্ধৃত করতেন:” আমি মাতাল, আধিকারিক। আমাকে শাস্তি দিন যখন আমি সংযমি। ” বাবরের সহযোগী রাজারা মদ পান করতেন এবং প্রাচুর্য্য পূর্ণ ভাবে জীবন যাপন করতেন, তারা বাজারের ছেলের সঙ্গে প্রেমে পড়েছিল এবং তারা হিংস্র এবং নির্মম ছিলেন। বাবরের এক কাকার মতে “অধর্ম এবং পাপকার্জে সে আসক্ত হয়েছিল। সে সমকামিতেও আসক্ত হয়ে পড়েছিল। তার এলাকাতে, যখনই শান্ত কোনো যুবক তার সামনে এসেছে, তাকে পাবার জন্য সে সবকিছু সে করেছিল। তার সময় এই ধরনের সমকামিতা প্রচলিত ছিল এবং সেটা একটি গুণহিসাবে বিবেচনা করা হোতো। মৃত্যূর দুই বছর আগে সুরাপান ত্যাগ করেছিলেন এবং তিনি তার রাজসভায় সকলকে একই কাজ করার দাবী করেছিলেন। কিন্তু সে নিজে আফিং এর নেশা ছাড়তে পারেননি।”
কথিত আছে স্ত্রী আয়েশার চেয়ে একটি বালকের প্রতি বাবরের আসক্তি ছিল বেশী। এটা বোধ হয় তার আত্মজীবনীতেও লেখা আছে।
ইনটারনেট থেকে সেই বালক-
The Memoirs of Babur
@ফরিদ আহমেদ, ( (D) (C)
@ফরিদ আহমেদ,
লেখায় শিরোনামের হুমায়ুনের চেয়ে তো বাবরের কথাই বেশি।
তাহলে গুলবদনের কথা কি এসেছে মুক্ত মনার সেলিব্রেটিদের ধরার জন্য ভূমিকা হিসেবে? চিন্তার বিষয়!!!
যাহোক, আগে সম্রাট শাহজাহানের কন্যা জাহানারা, আকবরের আমলের নারী সকল শেষ করে পরে বর্তমানে ।
তবে আমি অলিভিয়ার চেয়ে গুলবদন কাহিনী অনেক অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। আশা করি আমাদের মত পাঠকদের আগ্রহ অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট হবে।
@গীতা দাস,
চিন্তারই বিষয়। আপনিওতো বেশ বড়সড় একজন সেলিব্রিটি। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই নাম দেখি আপনার। 🙂
শর্বরীকে নিয়ে একটা লেখা লিখবো বলে অনেকদিন ধরেই মাথায় ঘুরছে। :)) অলিভিয়াই যদি না টানে আপনাকে, ওটার তবে কী হবে? 🙁
@গীতা দাস,
দুঃখিত এই অংশটা চোখে পড়ে নি আগে।
হুমায়ুন এখনও নাবালক দিদি। সময় হলেই স্বমহিমায় আসবে। এই লেখা হুমায়ুনকে নিয়েই, বাবুরকে নিয়ে নয়। চিন্তার কিছু নেই। 🙂
কাহিনি বুঝতারসি, আপনি আমাদের সময়ের জাফর ইকবাল, অলিভিয়াদের মত দিশী সিলিব্রিটিদের ত্যাগ করে এখন মুঘল হেরেমাব্রিটিদের নিয়ে গবেষণা করতেসেন। কিন্তু বাবরের ‘বাবুর’ হয়ে যাওয়ার কাহিনিটা কী সেটা কিন্তু বুঝতারিনাই।
@বন্যা আহমেদ, 🙂 (Y)
খুবই ভাল লাগলো। সময়ের ধুলোজমা সব ইতিহাসকে সাবলীলভাবে তুলে আনার জন্য। পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় আছি।
@নাজমুল,
আপনাকেও ধন্যবাদ নাজমুল।
ফরিদ ভাই ,হুমায়ুন আহমদের “বাদশা নামদার” বইটা কি পড়েছেন?
@আসরাফ,
হ্যাঁ পড়েছি।
ইতিহাসের রোমাঞ্চকর জগত ঘুরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি লেখাটিতে, বদ্ধ কপাট খুলে দেখানোর হাতছানি; তাই এ লেখাটি চলতেই হবে ফরিদ ভাই!
@কাজি মামুন,
সহ-লেখক হিসাবে জয়েন করেন ভাই। এক পর্ব আমি লিখছি, পরের পর্ব আপনি লেখেন। :))
সহজবোধ্য ও গোছানো লেখা, এক কথায় সুখোপাঠ্য। ভালো লেগেছে । ধন্যবাদ।
@আরিফ,
ধন্যবাদ আরিফ। 🙂 চা খান এক কাপ। (C)
হাহ্ হা ফরিদ ভাই, বাতিলের খাতায় আমরা উঠতে দিলে তো! ঠিকই সময়ে টেনে বের করে আনবো অসমাপ্ত লেখা! দারুন লিখেছেন। আমারো অছে অসমাপ্ত, একটু ব্যস্ত, অচীরেই মাঠে নামবো আসা করছি। তবে আপনার অসমাপ্তর সমাপ্তি চাই, এইটা হলো দাবী।
@কেশব অধিকারী,
🙂 । ক্রেইগ-ফ্লু আর হবে না। তবে এইটা শেষ করবো, কথা দিচ্ছি। 😛 আপনার অসমাপ্ত লেখাও শুরু করে দিন।
খুব চমৎকার লিখেছেন ফরিদ আহমেদ ভাই। তবে তথ্যসুত্র উল্লেখ করতে পারতেন এতে করে আমরাও আরও কিছু ভাল বইয়ের সন্ধান পেতে পারতাম(এই বদঅভ্যাস টা জন্মগত) তবে আপনার বিশ্লেষণটা খুব ভালো লেগেছে। আর গুলবদন বেগম এর ব্যাপারে আমি জানতাম না প্রায় কিছুই আপনাকে আমাকে বলবার জন্য ধন্যবাদ :clap :clap :clap
@ইমরান হাসান,
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য। যথাসময়েই তথ্যসূত্র দেবো। ভালো থাকুন।
ফরিদ আহমেদের হাতে পড়ে এই কাহিনি ছায়াছবির মত হয়ে গেছে। যথারীতি অপূর্ব ঝরঝরে বর্ণনা। ভাবতেই অবাক লাগে যে এইসব কাহিনিগুলো আমাদের খুব কাছের। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
@কাজী রহমান,
লেখাটা ফ্রি বড় ভাই, ছায়াছবি না। এক ফ্রিতে দুইটা চলবো না। ছায়াছবির জন্য পয়সা ফেলেন এইবার। নইলে কিন্তু আবারো বুলবুলি ডাকবো। (H)
@ফরিদ আহমেদ,
ক্যান ক্যান? একটা কিনলে একটা ফ্রি এই এইগুলা কি হুদা কথার কথা?
হা হা হা হা; কাম হউবো না, হেব্বি ধান খিলাইছি :-[
@কাজী রহমান,
হুদাই লাফান ক্যান? একটা ফ্রি আর একটা কেনার কথাইতো কইছি আমি। 🙂
হুদা ধান খিলাইলেই হইবো? পান ভি তো খিলান নাই বুলবুলিরে। :-[
@ফরিদ আহমেদ,
উফ্ এই মডুর জ্বালায় জইল্লা গেলাম। কতা মাটিতে পড়তেই দ্যায়না। ছায়াছবি দ্যাহাই তো, তয় এট্টু একান্তে; এই আর কি :)) খর্চা কম, মজা বেশী (^) কি আরো কেক লাগবো?
অতীত খুঁড়ে উধাও হয়ে গেলে, বর্তমান-কে এত কষ্ট দে’য়া কেন? ভবিষ্যৎ, সে না-হয় থাকুক বাতিলের খাতায়।
@স্বপন মাঝি,
কবিতার ভাষায় কথা বললেতো সমস্যা দাদা। কী বোঝাতে চাইছেন, সেটা বুঝতেই জান বেরিয়ে যাচ্ছে আমার। :-s
@ফরিদ আহমেদ,
প্রাককথনঃ ‘জিম্মি’ গল্পটি পড়তে পড়তে মনে হয়নি লেখক কোন বার্তা পাঠাচ্ছেন, কিন্তু পাঠিয়েছিলেন। আরোপিত মনে হয়নি। খুব স্বাভাবিক গতিতেই এগিয়ে চলা। এই এগিয়ে চলার মধ্য দিয়ে লেখক আমাদেরকে এমন এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন, আসলে ‘জিম্মি’ কে? সাধারণতঃ গল্প, কবিতা বা হলিউড>বলিউড>ঢালিউড>ছেঁচড়াউড এ আমরা দেখে অভ্যস্ত – নারী। এর বিপরীত চিত্র অঙ্কন যদি আরোপিত না হয়ে স্বাভাবিক গতিতে পাঠকের সামনে উপস্থিত হয়,বলতে দ্বিধা নেই; সাধুবাদ জানাতে হয় লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং দক্ষতাকে।
কথনঃ তো ইতিহাস খুঁড়ে এগিয়ে যেতে যেতে সেই লেখক কি আমাদের মূলা দেখাবেন? মনে হয় না।
ভয়ের উদয় হলো –
পড়ে।
এমনিতে ইতিহাসে আগ্রহ কম, আগ্রহ যা হলো, তাকে মাঝখানে থামিয়ে দিলে কি বলা যায়?
ইতিহাস পাঠেরও একটা ইতিহাস থাকে; বর্তমানকে, ভবিষ্যতের আপাত নির্ভুল পথে নিয়ে যাওয়া।
সার কথাঃ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
@স্বপন মাঝি,
হাহাহা।
আশার কথাঃ ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওই লাইনটা লেখা হয়েছে নিছক মজা করে। ভয় বরং আমার। আড়ালে একজন গাছমানবী আছেন গাছের ডাল হাতে ধরে। তাঁর ঠেঙানির ভয়েই আমি লিখে ফেলবো বাকি অংশটুকু। 🙂
বার্তাবিহীন অনেক কিছুই লিখেছি আমি। এই গল্পটা দেখুন, কোনো বার্তা নেই, কিছুই নেই, শুধু সময়কে ধরে রাখা।
@ফরিদ আহমেদ,
কিছু না-থাকার মাঝেও কিছু থাকে। আবার থাকার মাঝে না-থাকাটাও একধরণের থাকা।
@স্বপন মাঝি,
স্বপন মাঝির বচনামৃত। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
হা হা হা হা কথাটা এমন হলে কেমন হয়?
স্বপন মাঝির বচনামৃত
যাহা সর্বদাই রহস্যাবৃত