দাদা আকাশ মালিকের অনুপ্রেরণায় এই কবিতাখানি লেখা। জানিনা কেমন লিখেছি। সাতক্ষীরার ঘৃণ্য বর্বরতায় আমি যারপর নেই মর্মপীড়িত। এই কবিতাটি ধর্ম দ্বারা উৎপীড়িত সকল মানুষ এবং শ্রদ্ধেয় আকাশ মালিককে উৎসর্গীকৃত।

কোথায় যাচ্ছ ভাই অময়,
নিজের শেকড় উপড়ে
জন্মভূমি ছেড়ে
লোটাকম্বল তুলে নিয়ে মাথায়?
কেন যাচ্ছ ভাই
এ দেশ কি তোমার নয়?

তুমি কি বেড়ে উঠনি
এ দেশের আলো-বাতাসে!
তুমি কি উড়াও নি ঘুড়ি
এ দেশের আকাশে!
এ দেশের প্রতিটি ধূলিতে মাটিতে
তোমার অন্তরাত্মা নেই কি মিশে?
তবে কেন সব ছেড়ে ছুঁড়ে
চলেছ আজ নিরুদ্দেশে?
নিজভিটিতে নিজভূমিতে তোমার ভয় কিসে?

কোথায় যাচ্ছ সুদীপ্তা, আমার লক্ষ্মী বোন?
ধর্মের লেলিয়ে দেয়া কিছু মারাত্মক জীব
কেড়ে নিয়েছে তোমার স্বামীর জীবন,
তোমার গৃহে দিয়েছে আগুন,
ঝরিয়েছে তোমার হৃৎপিণ্ডের খুন।
তাই কি মাতৃভূমির উপর
অভিমান করেছ এমন?

রামেশ কাকা, কোথায় যাচ্ছেন?
আপনি ত আমায় আদর ক’রে
“মা” ব’লে ডাকতেন
“কন্যা” ব’লে ডাকতেন।
আপনার কন্যা দীপালীর মতন
আমায় ভালোবাসতেন।
আপনাদের প্রাঙ্গণের কোণে
শিউলি গাছের ছায়ায়, যেথায়
আমি আর দীপালী খেলা করতাম
সেথায় এখন ধ্বংসের স্তূপ।
আপনি সেই ধ্বংসস্তূপের উপরে
নীরবে অশ্রু ফেলছেন।
চিরতরে চ’লে যাচ্ছেন কাকা!
আর কভু কি হবেনা-কো দেখা!

এই দীপালী, আমার প্রাণের সখী;
একি!
তুইও কি পাষাণের মতন
ছিঁড়ে যাবি আমাদের আজন্মের
সখীত্বের বন্ধন!
শুনবি না-কি আমার আহাজারি
দেখবি না-কি আমার রোদন!

চন্দ্রা কাকিমা, আপনি কাঁদছেন!
ওরা আপনার সামনে আপনার
দশ বছরের কন্যাকে করেছে ধর্ষণ,
আপনার সর্বস্বে দিয়েছে আগুন।
তাই বুঝি চোখের জলে ধুয়ে চলেছেন
ঘৃণ্য অপমান!
নেভাতে চাইছেন বুঝি বুকের দাউদাউ আগুন!

যাচ্ছিস কোথায়, মাধবী সই?
তোকে দেখে আজ আমার ফেটে যায় হৃদয়।
সাত শকুনে মিলে তোর
সম্ভ্রম ফেলিল খেয়ে,
আর আমি দূর হতে দেখলাম তা চেয়ে।
আমি আজ কী ক’রে দেই তোরে সান্ত্বনা!
সব কষ্টের যে সান্ত্বনা হয়না!
আমি তোরে কী ক’রে ফেরাই সই!
তোরে আমি কোথায় দেবো ঠাঁই?

ওগো আমার বন্ধু, আমার বোন
আমার প্রতিবেশী, আমার ভাই
তোমরা সবাই যাচ্ছ কোথায়
বাস্তুভিটা ছেড়ে
আর্তনাদ করতে করতে গলা ছেড়ে?
যারা হা-রে-রে ক’রে
তোমাদের দিকে এসেছে তেড়ে,
তোমাদের সর্বস্ব নিয়েছে কেড়ে
তাদের এমনি কি দেবে ছেড়ে?
তোমরা কি ঘৃণ্যতার কাছে যাবে হেরে?
কোথা যাচ্ছ ছিঁড়ে সকল বাঁধন!
এ দেশে কি নেই কোনো আইন?
তোমরাও তো আমার মতন
এই মাটিরই সন্তান।

শকুনের তাড়া খেয়ে
তোমরা নাড়ীর বাঁধন ছেড়ে ছিঁড়ে
চলেছ শুধু ধেয়ে চিরতরে!
ওগো বাংলার মেয়ে, বাংলার ছেলে
সবাই যে যাচ্ছ চ’লে
ভিটে-মাটি-জন্মস্থান ফেলে;
তোমরা সবাই চ’লে গেলে
সোনার বাংলার শকুন তাড়াবে কে?