আবুল কাশেম
নানা কারণে এই ধারাবাহিক রচনাটি কিছুদিনের জন্য স্থগিত ছিল। বাকী অংশ এখন নিয়মিত প্রকাশের আশা রাখছি।
[রচনাটি এম, এ, খানের ইংরেজি বই থেকে অনুবাদিত “জিহাদঃ জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও ক্রীতদাসত্বের উত্তরাধিকার” গ্রন্থের ‘ইসলামি ক্রীতদাসত্ব’ অধ্যায়ের অংশ এবং লেখক ও ব-দ্বীপ প্রকাশনের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত হলো।]
ইসলামি ক্রীতদাসত্ব, খণ্ড ২৯
লেখক: এম, এ, খান
মুসলিম দেশে দাসপ্রথার অব্যাহত চর্চা ও পুনর্জাগরণ
আজ পর্যন্ত দাসপ্রথা সৌদি আরব, সুদান ও মৌরিতানিয়ায় নানা আকারে অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি রয়টার ‘শ্লেইভারি স্টিল এক্জিস্ট ইন মৌরিতানিয়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে:
তারা শৃঙ্খল পরে না, প্রভুদের কোনো চিহ্ন দ্বারা তারা চিহ্নিত নয়, কিন্তু মৌরিতানিয়ায় এখনো ক্রীতদাস রয়েছে। সাহারার রৌদ্র-তপ্ত বালিয়াড়ির মধ্যে তারা উট-ছাগলের পাল চড়িয়ে বেড়ায়, কিংবা নোয়াকোচটের ধনাঢ্যদের কার্পেট বিছানো ভিলায় তারা গরম পুদিনার চা পরিবেশন করে অতিথিদেরকে। মৌরিতানিয়ার ক্রীতদাসরা তাদের মালিকদের জন্য কাজ করে; প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা মালিক-পরিবারের অস্থাবর সম্পত্তির মতো কাটিয়ে দিচ্ছে… তাদের সংখ্যা হাজার হাজার হতে পারে বলে দাবি করে দাসপ্রথা-বিরোধীরা। ক্রীতদাস হিসেবে জন্ম-গ্রহণকারী বুবাকার মেসোদ, যে বর্তমানে দাসপ্রথা-বিরোধী আন্দোলনের কর্মী, সে রয়টারকে বলে: ‘এটা যেন ভেড়া-ছাগল রাখার মত। কোনো নারী ক্রীতদাসী হলে তার সন্তানরাও ক্রীতদাস।’২৬৪
দাস-চর্চা সৌদি আরবেও অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু এ পবিত্র ইসলামি রাজ্যটি চরম গোপনীয় প্রকৃতির হওয়ায় ভিতরে সংঘটিত খুব কম তথ্যই বাইরে প্রকাশ পায়। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন ও শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি গরিব দেশগুলো থেকে লাখ লাখ যুবতী নারী, যারা সৌদি আরবে শেখদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে যায়, তারা মূলত গৃহের চৌহদ্দির মধ্যে ক্রীতদাসত্বের জীবন কাটায়। তাদের অধিকাংশই কোরান-অনুমোদিত উপপত্নীরূপে মালিকের যৌন-সম্ভোগের পণ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। সৌদি থেকে আসা কলোরেডো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পি.এইচ.ডি.’র ছাত্র হামাইদান আল-তুর্কি ২০০৬ সালে যাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তার ইন্দোনেশীয় গৃহ-পরিচারিকাকে যৌন-নির্যাতনের অপরাধে, (তিনি) যৌন-নির্যাতনের অভিযোগটি প্রত্যাখান করে বলেন: ‘এটা ঐতিহ্যগত একটা মুসলিম আচরণ’, যৌন নির্যাতন নয়।২৬৫ সৌদিতে বিদেশী গৃহ-পরিচারিকাদের অপব্যবহার সম্পর্কে ‘হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ’ রিপোর্ট করেছে যে:
আমাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া কিছু নারী-শ্রমিক সৌদি পুরুষ মালিকের হাতে ধর্ষণ ও যৌন-হয়রানির কারণে তখনো যন্ত্রণাকাতর ছিল, যারা ক্রুদ্ধ না হয়ে ও কান্নায় ভেঙ্গে না পড়ে নিজেদের দুর্ভাগ্যের কাহিনী বর্ণনা করতে পারেনি। নিজ দেশে অবাধ চলাফেরায় অভ্যস্ত এসব নারী ও অন্যান্যরা আমাদের কাছে বর্ণনা করে কীভাবে রিয়াদ, জেদ্দা, মদীনা ও দাম্মাম-এ তালা লাগানো দরজার মধ্যেকার কারখানা, বাড়ি ও গণ-আবাসের মতো জায়গায় তাদেরকে কারারুদ্ধ জীবনযাপন করতে হয়। জোরপূর্বক চার-দেয়ালের ভিতর আবদ্ধ এবং নিঃসঙ্গ বসবাসকারী এসব মহিলার জন্য কোনোরূপ সাহায্য চাওয়া, পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া, হয়রানি ও অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি, এবং আইনগত সাহায্য ও ক্ষতিপূরণ চাওয়া একেবারেই দুস্কর।২৬৬
নারগিস বেগম নামের ২৬ বছরের এক বাংলাদেশী যুবতী বৈরুতে গৃহ-পরিচারিকা হিসেবে কাজ করার সময় তার মালিকের দ্বারা বৈদ্যুতিক শক, শেকল ও চামরার বেল্ট দিয়ে পিটানি, গরম লৌহদণ্ড দিয়ে শরীরে ছেকা ও সে সাথে ধর্ষণের শিকার হয়। ‘আমি সেখানে যেসব গৃহকর্মী বাংলাদেশী মেয়েদের সাথে কথা বলেছি তাদের ৯৫ শতাংশই ধর্ষিত হয়েছে, কিন্তু ভয়ের কারণে তারা তাদের পরিবারের কাউকে তা বলে না,’ বলেছে নারগিস।[২৬৭] সৌদিতে বিদেশী গৃহ-চারিকাদের উৎপীড়ণ-নির্যাতন আরো খারাপ।
১৯৯৩ সালের ১০ই ডিসেম্বর টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখে: “কোনো সন্দেহ নেই যে, আরবের ধনাঢ্য প্রাসাদগুলোতে হাজার হাজার ক্রীতদাস আজও কাজ করে যাচ্ছে।” বৃদ্ধ-বয়সী ধনী সৌদি শেখরা প্রায়শঃই মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিশর ও অন্যান্য দরিদ্র দেশে ভ্রমণে যায় অল্প-বয়সী সুন্দরী বালিকাদেরকে বিয়ে করার জন্য। তারা গরিব পিতামাতাকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে যুবতী কন্যাদেরকে সৌদিতে নিয়ে আসে, যেখানে তারা ক্রীতদাসীসুলভ জীবনযাপন করে।
সুদানে দাসপ্রথার পুনরুজ্জীবন: সুদান (নুবিয়া) ইসলামি দাসপ্রথার সবচেয়ে জঘন্যতম শিকার। মুসলিম দাসপ্রথা সুদানে আঘাত হানে ইসলামের একবোরে প্রাথমিককাল থেকে। খলিফা উসমান আরোপিত চুক্তি অনুযায়ী ৬৫২ থেকে ১২৭৬ সাল পর্যন্ত সুদান বার্ষিক আনুগত্য-কর হিসেবে ৪০০ করে ক্রীতদাস পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। দশম শতাব্দীর প্রামাণিক দলিল ‘হুদুদ আল-আলম’ অনুযায়ী, ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলো থেকেই সুদান মুসলিম দাস-শিকারিদের উর্বর-ক্ষেত্রে পরিণত হয়, যা আজও সে রকমই রয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে সুদানে ক্রীতদাস মুক্তকরণ কর্মসূচিতে নিযুক্ত জন ইবনার আরব মিলিশিয়া ও সরকারের-সমর্থনপুষ্ট পপুলার ডিফেন্স ফোর্স (পি.ডি.এফ.) কর্তৃক খ্রিষ্টান, সর্বেশ্বরবাদি, এমনকি মুসলিম কৃষ্ণাঙ্গ সুদানি নারী ও শিশুদেরকে ক্রীতদাসকরণের এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়েছে: ক্রীতদাসকৃত নারীদেরকে জবরদস্তিমূলকভাবে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয় এবং তাদেরকে সাধারণত যৌনদাসীরূপে ব্যবহার করা হয়। আর ছোট শিশুদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে জিহাদীরূপে গড়ে তোলা হয় তাদের পূর্বতন স্বধর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। ইবনার ১,৭৮৩ জন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসকে মুক্ত করেন ১৯৯৯ সালে; অপরদিকে তার সংগঠন ‘ক্রিশ্চিয়ান সলিডারিটি ইন্টারন্যাশনাল’ ১৯৪৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মুক্ত করে ১৫,৪৪৭ জন ক্রিতদাসকে।২৬৮ সুদানে ক্রীতদাসকরণ ও দাস-বাণিজ্য কার্যকরভাবে বন্ধে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারও (১৮৯৯-১৯৫৬) ব্যর্থ ছিল। ব্রিটিশ সিভিল সার্ভেন্টদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত ১৯৪৭ সালের এক স্মারকে উল্লেখ করা হয়: ‘১৯২০-এর দশকের শেষদিকে চলমান ইথিওপিয়ার ক্রীতদাসদের একটা বিস্তৃত ব্যবসার কথা উন্মোচিত হয়ে পড়ে; এখনো সেখানে মাঝে মাঝেই অপহরণ করে হতভাগ্যদেরকে দ্রুত দূরবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় যাযাবরদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’২৬৯
আরো জঘন্য ঘটনা হলো: ১৯৮০’র দশক থেকে সরকার সমর্থিত ইসলামি পুনর্জাগরণ সাথে সুদানে সহিংস ক্রীতদাসকরণ পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে প্রেসিডেন্ট জাফর নিমেরী’র নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থি সুদানি সরকার ইসলামবাদি নেতা ড. হাসান আল-তুরাবির প্ররোচনায় কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিষ্টান ও সর্বেশ্বরবাদী (অ্যানিমিস্ট) অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে আরব-প্রধান উত্তরের একত্রীকরণ ঘোষণা দেয়, যার ফলে দক্ষিণের দীর্ঘকালের স্বায়ত্তশাসন বাতিল হয়ে যায়। সরকার সারা সুদানব্যাপী ঢালাওভাবে শরীয়তী আইন চালু করে। সরকারের লক্ষ্য ছিল জিহাদের মাধ্যমে বহুধর্মী ও বহুজাতিক পুরো সুদানকে একটি আরব-প্রভাবাধীন ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করা।
প্রতিবাদে অমুসলিম-প্রধান দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহীরা ‘সুদান পিপলস লিবারেশন আর্মি (এস.পি.এল.)’ নামে একটি প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলে কর্নেল জন গারাঙ-এর নেতৃত্বে। এর প্রতিউত্তরে ইসলামপন্থী সরকার আরব গোত্রীয় বেসামরিক বাহিনীকে (মিলিশিয়া) সশস্ত্র করতে থাকে। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র-সজ্জিত বাকারা নামে পরিচিত এ সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনী বিদ্রোহী ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের বিরুদ্ধে সরকারের যুদ্ধ-প্রয়াসে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সরকার-সমর্থিত এ রাহাজান দলগুলো গ্রামে গ্রামে হানা দিয়ে বয়স্কদেরকে হত্যা করে, নারী ও শিশুদেরকে অপহরণ করে, গরু-ছাগল ও শস্য লুটপাট করে এবং অবশিষ্ট সবকিছু পুড়িয়ে দেয়। ১৯৮৫ সালে ইসলামপন্থী সরকার উৎখাত হওয়ার পর কিছুদিনের জন্য এসব জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিরতি ছিল। কিন্তু ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তুরাবির শ্যালক ও আরেক ইসলামবাদী সাদিক আল-মাহদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর পুনরায় জিহাদ জাগরিত হয়। আরব মিলিশিয়াদের আক্রমণ এবার ঠাণ্ডা মাথায় সুচিন্তিতভাবে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক হত্যার মিশনে পরিণত হয়; সে সাথে একই গতিতে চলে নারী ও শিশুদেরকে অপহরণ করে ক্রীতদাসকরণের পালা।২৭০
১৯৮৯ সালে আল-তুরাবি ও ‘ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট (এন.আই.এফ.)’-এর জেনারেল উমর আল বশিরের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান (কু)-এর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর আরব মিলিশিয়াদের ক্রীতদাস-শিকার তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। প্রেসিডেন্ট আল বশিরের স্বেচ্চাচারী ইসলামবাদী সরকার বিদ্রোহী ও তাদের শুভাকামীদের বিরুদ্ধে জিহাদ-অভিযানের কার্যকারক হিসেবে ‘পি.ডি.এফ.’ নামে একটি সশস্ত্র-বাহিনী গঠন করে। পি.ডি.এফ. হানাদারদের হামলার সবচেয়ে শোচনীয় শিকার হয় দক্ষিণ-পশ্চিমের বাহর আল-গাজাল প্রদেশগুলোর ‘দিনকা’ জনগণ ও দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্ডোফান অঞ্চলের ‘নুবা’ উপজাতির লোকেরা। মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণের নুবা পার্বত্য অঞ্চলের কৃষ্ণাঙ্গদেরকে এক ইসলামি ফতোয়া জারি করে ইসলামত্যাগী বলে ঘোষণা করা হয় বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার কারণে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত গ্যাস্পার বিরো জানান, ফতোয়াটির ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ:২৭১
কোনো বিদ্রোহী, যে আগে মুসলিম ছিল, সে এখন ধর্মত্যাগী (মুর্তাদ) হয়ে গেছে; এবং অমুসলিমরা হলো অবিশ্বাসী, যারা ইসলামের প্রসারে প্রাচীরের মতো বাঁধা; ইসলাম এদের উভয়কেই হত্যার স্বাধীনতা প্রদান করেছে।
১৯৯৮ সালে নিয়মিত সেনাবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট পি.ডি.এফ. বাহর আল-গাজালের দিনকা জনগণের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর ও নির্মম ক্রীতদাস শিকার হামলার অভিযানে লিপ্ত হয়। হামলায় ৩০০,০০০ মানুষ গৃহহীন হয় এবং অজ্ঞাত সংখ্যক লোককে হত্যা ও ক্রীতদাস করা হয়। সান্তিনো দেং নামক প্রাদেশিক সরকারের এক উপদেষ্টা দাবি করেন: এসব হামলায় ইসলামি মিলিশিয়ারা বাবানুসায় (পশ্চিম কর্ডোফান) ৫০,০০০ দিনকা শিশুকে বন্দি করে। ইউনিসেফ-এর এক রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, পি.ডি.এফ. ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০৬৪ জনকে ক্রীতদাস বানায় ও ১৮১ জনকে হত্যা করে।২৭২ সুদানের চলতি ক্রীতদাসত্ব চর্চার উপর জন ইবনার হিসাব দেন যে, ১৯৯৯ সালে সেখানে প্রায় ১০০,০০০ গৃহস্থালি-ক্রীতদাস ছিল।২৭৩ ক্রীতদাসত্ব-বিরোধী এ্যান্টি-শ্লেইভারি সংগঠনটি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে: ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সুদানে প্রায় ১৪,০০০ লোক অপহরণপূর্বক ক্রীতদাসত্বের শিকার হয়।২৭৪
এর চেয়েও শোচনীয় অবস্থা আসছিল, এবারে দারফুরে। ২০০৪ সালে সুদান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আরব ‘জানজাবিদ’ মিলিশিয়া বিদ্রোহী ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের বিরুদ্ধে চরম নিষ্ঠুরতাপূর্ণ এক জিহাদ-অভিযান শুরু করে। সুদানে সরকারি মদদপুষ্ট জিহাদে ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে প্রায় ২০ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। ২০০৪ সালে দারফুরে শুরু হওয়া নতুন জিহাদ অভিযানে জাতিসংঘ নিহতের সংখ্যা নিরূপণ করে আনুমানিক ৩০০,০০০; কিন্তু জাতিসংঘের সাবেক আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেলের মতে এ সংখ্যা ৪০০,০০০ লাখের কম নয়।২৭৫ দারফুরে প্রায় ২৫ লাখ লোক গৃহহীন এবং অজ্ঞাত সংখ্যককে সম্ভবত ক্রীতদাস করা হয়েছে। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন আদালত প্রেসিডেন্ট আল বশিরকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে মদদ দানের অপরাধে অভিযুক্ত করে।২৭৬
১৯৪৯ সালে ইতিহাসবিদ ত্রিমিংঘাম লক্ষ্য করেন: জীবনযাপনে যুগ যুগ ধরে ক্রীতদাস-শিকারের উপর নির্ভরশীল বাকারা আরবরা উপনিবেশিক ব্রিটিশ প্রশাসন কর্তৃক দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হওয়ায় যাদের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছিল তারা ‘এখনও সে চর্চায় লিপ্ত হতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে।’২৭৭ ১৯৫৬ সালে বিধর্মী ব্রিটিশ শাসকরা সুদান থেকে চলে যাওয়ার পর আরবরা ধীরে ধীরে ফিরে আসে তাদের হারানো সে প্রাচীন পেশায়, যার জন্য তারা হন্যে হয়ে ফিরছিল: তাদের আল্লাহ-অনুমোদিত ক্রীতদাস শিকার ও কেনাবেচার পেশায়।
[আগামী পর্বে আলোচিত হবেঃ ১) পাশ্চাত্যে মুসলিমদের দাসপ্রথা চর্চার আনয়ন; ২) উপসংহার]
সূত্রঃ
264. Fletcher P, Slavery still exists in Mauritania, Reuters, 21 March 2007
265. US Urged to Review Saudi Student’s Case, Arab News, Riyadh, 28 March 2008
266. Human Rights Watch, Exploitation and Abuse of Migrant Workers in Saudi Arabia, http://hrw.org/mideast/saudi/labor/
267. Nail torture case shines light on Asia’s migrant maids, Dawn.com, 24 Sept. 2010
268. Eibner J (1999) My Career Redeeming Slaves, Middle East Quarterly, December Issue
269. Henderson KDD (1965) Sudan Republic, Ernest Benn, London, p. 197
270. Metz HC ed. (1992) Sudan: A Country Study, Library of Congress, Washington DC, 4th ed., p. 257
271. David Littman (1996) The U.N. Finds Slavery in the Sudan, Middle East Quarterly, September Issue.
272. Inter Press Service (Khartoum), July 24, 1998.
273. Eibner, op cit
274. Anti-Slavery, Mende Nazer: From Slavery to Freedom, October 2003
275. Lederer EM, UN Says Darfur Conflict Worsening, with Perhaps 300,000 Dead, Associated Press, 22 April 2008
276. Walker P and Sturcke J, Darfur genocide charges for Sudanes president Omar al-Bashir, Guardian, 14 July 2008
277. Trimingham JS (1949) Islam in the Sudan, Oxford University Press, London, p. 29
————–
ইসলামি ক্রীতদাসত্ব, খণ্ড ৩০
লেখক: এম, এ, খান
পাশ্চাত্যে মুসলিমদের দাসপ্রথা চর্চার আনয়ন
এটা একটা আশংকাজনক সত্য যে, মুসলিমরা, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা মুসলিমরা, পাশ্চাত্যে দাসপ্রথা চর্চার ছাপ আমদানি করছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কয়েকটি সৌদি ও সুদানি পরিবারের উপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যারা তাদের গৃহকর্মীনিদেরকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছিল, যা আইনি ব্যবস্থা পর্যন্ত গড়ায়। উপরে উল্লেখিত ‘ক্রীতদাসত্ব-বিরোধী প্রামাণ্য দলিল’ অনুযায়ী, মেনদি নাজের নাম্নী জনৈক সাবেক ক্রীতদাসী, যে সম্প্রতি ‘শ্লেইভ: মাই ট্রু স্টোরি’ শিরোনামে তার আত্মজীবনী প্রকাশ করেছে, ১৯৯২ তাকে সালে সুদানের নুবা পর্বত থেকে আটক করা হয়েছিল। প্রথম সে খার্তুমে এক ধনাঢ্য আরব পরিবারে ক্রীতদাসরূপে কাজ করে, তারপর লন্ডনে এক সুদানি কূটনীতিকের গৃহে। সেখান থেকে সে ২০০২ সালে পলায়ন করে ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চায়। অন্যদিকে ২০০৩ সালে ‘ন্যাশনাল রিভিউ’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জানায়:২৭৮
পাঁচ বছর আগে তিন ফিলিপিনো গৃহপরিচারিকার প্রতি দুরাচারের কারণে বাদশাহ ফাহদের ভগ্নিসহ সৌদি রাজপরিবারের তিন সদস্য লন্ডনে জড়িয়ে পড়ে এক কলঙ্কজনক ঘটনায়। উক্ত ফিলিপিনো মহিলারা সৌদি রাজপরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে এ অভিযোগে যে, তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়, ক্ষুধার্ত রাখা হয় ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা হয় লন্ডনে সৌদিদের বাড়িতে। ফিলিপিনোরা বলে: মাঝে মাঝে তাদেরকে চিলেকোঠায় তালাবদ্ধ করে রাখা হয়, উচ্ছিষ্ট খাবার দেওয়া হয় এবং মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করা হয় না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌদিদের বাসায় গৃহপরিচারিকাদের প্রতি আচরণ সম্পর্কে প্রতিবেদনটি লিখেছে:
সৌদিদের জন্য কাজ করা অধিকাংশ গৃহকর্মীর পরিস্থিতির সাতটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে: পাসপোর্ট আটককরণ, এককভাবে চুক্তির শর্ত পরিবর্তন, অতি দীর্ঘ শ্রমসময়, চিকিৎসা প্রদানে অস্বীকৃতি, মৌখিক ও মাঝে মাঝে শারীরিক নির্যাতন, এবং কারাতুল্য পরিবেশ। আমরা যাদের সাথে কথা বলেছি তাদের সবাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেছে, যদিও তাদের কেউ কেউ প্রথমে সৌদি আরবে কাজ করেছিল। যারা উভয় দেশে কাজ করেছে, তারা জানায়: আমেরিকাতে আনার পর তাদের অবস্থার কোনোই উন্নতি হয়নি।
উপসংহার
আজ মুসলিম বিশ্বে চলমান দাসপ্রথা চর্চার অবশিষ্টাংশ গোটা ইসলামের ইতিহাসব্যাপী সংঘটিত চর্চার তুলনায় নিতান্তই তুচ্ছ, যা ঘটে নবি মুহাম্মদের জীবনকাল থেকেই এবং চলমান থাকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত। আর মুসলিম দেশগুলোতে দাসপ্রথা সীমিতকরণে নিঃসন্দেহে চূড়ান্ত ভূমিকা রাখে বহির্বিশ্বের চাপ, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতিসংঘ ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী গোঁড়া ও ধর্মান্ধ ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থানের চলমান জোয়ার, যা ইসলামি শাসন কায়েম ও মধ্যযুগীয় ইসলামি খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্ব দখল করতে চায়, তা একটা বড় উদ্বেগের বিষয়। ২০০৬ সালে এক ডেনিশ পত্রিকায় নবি মুহাম্মদের কার্টুন ছাপার প্রতিবাদে লন্ডনে মুসলিমদের বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে এক প্রতিবাদকারী চিৎকার করে বলে: চল ডেনমার্ক আক্রমণ করি এবং ‘তাদের নারীদেরকে যুদ্ধের লুণ্ঠনদ্রব্য (মালে গণিমত) বানাই।’ আরেকজন চিৎকার করে উঠে: ‘খাইবারের ইহুদিদের মতো শিক্ষা দাও।’ ২৭৯ দাসপ্রথা ও ইসলামে সংঘটিত ক্রীতদাসকরণের ওসব ঐতিহাসিক ঘটনা যতই লজ্জাজনক হোক না কেন, আজও সেসব ঘটনা অনুপ্রাণিত ও গর্বিত করে ধার্মিক মুসলিমদেরকে, যাদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও পাশ্চাত্যে বসবাসকারী।
১৯৯৯ সালে সুদান সরকার সে দেশে চলমান দাসপ্রথাকে সমর্থন এবং ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করণে যুক্তি উপস্থাপন করে জাতিসংঘে। ১৯৯৯ সালের ২৩শে মার্চ সুদানের বিদ্রোহী নেতা জন গারাঙ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাই কমিশনার মেরী রবিনসনের কাছে সরকারি মদদে সহিংস জিহাদ ও ক্রীতদাসকরণ সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপন করেন। এর উত্তরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদিক আল-মাহদি (১৯৮৬-৮৯) রবিনসনের নিকট সুদান সরকারের সে ভয়ঙ্কর দুষ্কর্মে সহায়তার একটা ধর্মীয় ভিত্তি তুলে ধরে এক চিঠিতে লেখেন:২৮০
জিহাদের ঐতিহ্যগত ধারণা বিশ্বের দু’টো অঞ্চলে বিভক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: একটি শান্তির অঞ্চল, অপরটি যুদ্ধের। জিহাদ ধর্মীয় কারণে যুদ্ধ সূচনার দাবি করে… এটা সত্য যে, সরকার (এন.আই.এফ) সুদানে দাসপ্রথা প্রবর্তনে কোনো আইন জারি করেনি। কিন্তু জিহাদের ঐতিহ্যগত ধারণা দাসকরণের অনুমোদন দেয় জিহাদের একটা আনুষঙ্গিক দ্রব্য (বাই-প্রোডাক্ট) হিসেবে।
সুতরাং বিশ্বব্যাপী উদয়নশীল বিপ্লবী ইসলামপন্থি আন্দোলন যদি তার লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়, ইসলামি দাসপ্রথার পবিত্র প্রতিষ্ঠানটি আবারো বিশ্বমঞ্চে তার অতীত গৌরব নিয়ে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রঃ
278. Mowbray J, Maids, Slaves and Prisoners: To be employed in a Saudi home-forced servitude of women in Saudi Arabia and in homes of Saudis in US, National Review, 24 Feb. 2003
279. Chilling Islamic Demonstration of Cartoons, London, http://video. google, com/ videoplay? docid=574545628662575243, accessed on 20 July 2008
280. Letter from Sadiq Al-Mahdi to Mary Robinson, U.N. High Commissioner for Human Rights (Section III: War Crimes), Mar. 24, 1999.
সমাপ্ত।।
মনে হচ্ছে ইতিহাসের চোরাবালীতে হারিয়ে যায় জিহাদি দাসত্বকরণের সমস্ত গল্প। এ চোরাবলীতে হানা দিয়েছেন জনাব খান। আর আপনি আবুল কাশেম না থাকলে সেই হানা দেয়ার ঘটনাটাই অজানা থেকে যেতো আমাদদের অনেকের কাছে। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। যদি পারেন তো পুরো বইটাই অনুবাদ করেন। ভাল থাকুন। সত্য জিতেছে চিরকাল এ বিশ্বাস করি না, সত্যকে জেতাতে হয় শক্তি দিয়ে জ্ঞান দিয়ে মেধা দিয়ে।
মহানবী [সাঃ] নিজেই যেখানে আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে মেয়েদেরকে দিয়েছেন এক অন্যন্য সম্মান বাতিল করেছিলেন দাস প্রথা সে জায়গায় আজ কোন মুসলিম আল্লাহ্র নির্দেশে মহানবী [সাঃ] সহ আরও অনেক নবীকূলের এর মাধ্যমে যে সত্যিকারের ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই ইসলামের নিয়ম না মেনে যদি কোন খারাপ কাজ করে তাহলে তার জন্য আপনি ইসলামকে দোষ দিতে পারেন না।
হ্যাঁ আপনি আমার মত মুসলিমদেরকে দোষ দিতে পারেন এর জন্য দায়ী করতে হয়ত পারেন কারণ আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি না, করছি না।
আশা করি সঠিকভাবে মুক্তমন নিয়ে চিন্তা করবেন, মুক্তমনের নামে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। ঠিক যেমনটা ধর্মের নামে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।
আমি এখানে না মন্তব্য করার কথা বলেছিলাম। তবে আজকে অনেক দিন পরে এসে এই সিরিজ টা পড়লাম। হুম খারাপ না তবে অনেক তথ্য একটু একপেশে মনে হয়েছে। আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিবেন আবুল কাশেম ভাই এটা কি একেবারে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে লেখা হয়েছে? নাকি এখানে এম,এ,খান আর আপনার সোর্স সমুহের দৃষ্টিভঙ্গি দেখান হয়েছে?
এছাড়াও এটার মধ্যে সামান্য হলেও প্রোপ্যাগান্ডা জাতীয় একটা ভাব আছে (এটা আমার ধারণা) আমি যত জার্নাল পড়েছি এতে কিন্তু আপনার বিপরীত কথা লেখা আছে(বর্তমান পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সৌদি আরব ব্যতিত) এখন এই ব্যাপার নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি। 🙁
এটাই হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম মুছে ফেলে অতীত–সভ্যতা, সংস্কৃতি, আচার বিচার–অতীত মরে যাবে, শুধু জীবিত থাকবে ইসলামি–তথা আরব বেদুইনদের সংস্কৃতি, ভাষা, বিচার পদ্ধতি।
এই লেখা পড়ে আপনি যে অতীতকে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ফিরে পেলেন, সেজন্য সত্যি আপনাকে অভিনন্দন। বাঙলাদেশের বেশির ভাগ মুসলিম তাদের অতীত বলতে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি থেকে মনে করে। এই বর্বর তুর্কী হানাদারের বাঙলা আক্রমনের আগে যে বাঙালীদের অতীত ছিল–তা বাঙলাদেশের বেশিরভাগ জনগণই জানেনা বা স্বীকার করে না।
@আবুল কাশেম,
সাতক্ষীরার ঘটনার কারণে আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার সময়টাও পাইনি। নতুন প্রজন্ম আপনাকে, এম এ খানকে স্ম্বরণ রাখবে। এই লেখা তাদের আগামীদিনের দিশারী হয়ে থাকবে। আশায় বুক বাঁধি একদিন তারা এই দেশটাকে শিশুর বাসযোগ্য করে তুলবে। আপনাকে, এম এ খানকে আকাশের তারাসম লক্ষ কোটিবার শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। (Y) (F)
:clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap :clap
আপেক্ষিকতা তত্ব আজকে আবার বুঝলাম।আপনার লেখা গুলো আমার কাছে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো লাগে। পোস্ট হলেই নিমিষে পড়ে ফেলি। 😛 তবে আপনি যে ধৈর্য্য আর পরিশ্রম করে অনুবাদ করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। শুধু বলব এই ইতিহাস জানার পর আজকাল যখনি রাস্তায় বের হই আর অগুনিতি মানুষ দেখি, ভাবি এই রাস্তায়ই হয়ত এর পূর্ব পুরুষকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেছে বর্বরের দল। অথচ আজকে এই বংশধরেরা এই বর্বদের সাথে সম্পর্ক নিয়ে, ইতিহাস নিয়ে যখন গর্ববোধ করে তখন মনে মনে না হেসে পারি না।মনের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস কেন জানি বেরিয়ে আসে।
চোরা বালিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়া ইতিহাসের অধ্যায়টি কঠোর পরিশ্রম করে যে ভাবে এই খান সাহেব তুলে এনেছেন তাতে বাংলায় তাঁকে ধন্যবাদ দিলে তিনি হয়তো পড়তে পারবেন না। তাই আমাদের পক্ষ থেকে আপনি তাঁকে ধন্যবাদ গুলো পৌঁছে দেবেন আশা করছি। আর আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ এহেন কঠিন কর্ম টিকে স্বার্থক রূপে বাংলা ভাষায় উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাবাসিদের ইতিহাসের অন্ধগলির উন্মোচনে প্রয়াসে সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
@রাজেশ তালুকদার,
আসলে বাঙলা আনুবাদ আমার নয়, অন্য একজনের। আমি শুধু অনুবাদটা প্রকাশকের অনুমতিক্রমে মুক্তমনায় প্রকাশ করেছি। এত ধৈর্য নিয়ে সবগুলি পর্ব পড়েছেন সেজন্য আপনাকে প্রচুর ধন্যবাদ।
অনেক কষ্ট করে অনুবাদ কর্মটি সম্পন্ন করেছেন, ধন্যবাদ। ইংরেজি না-জানা আমার মত অনেক বাঙ্গালী পাঠক, অনেককিছু জানতে পারবে। এ জানাটাও সমাজের জন্য খুব দরকার। সমাজকে, রাষ্ট্র সহ্য করতে নারাজ। তাই সমাজকে যতভাবে ভাঙ্গা যায় বা বিভক্ত করা যায়, রাষ্ট্রের জন্য তা কল্যাণকর। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বঙ্গীয় সমাজের ভেতরে যতটুকু জাগতিক চেতনা জাগরুক ছিল, তাকে নানাভাবে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। আর এ কাজটা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের গায়ে ধর্মীয় পোশাক পরিয়ে দেয়া হলো। তো আইন এগিয়ে আসবে, তার বিরুদ্ধ কোন কিছুকে সহ্য করা হবে না।
তার কিছু কিছু নমুনা আমরা দেখেছি, দেখতে পাচ্ছি, দেখবো।
আমরা দেখে যাবো আর অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে রাতকে দিন, দিনকে রাত বানাবো।
ভাল থাকবেন, আবারো ধন্যবাদ।
@স্বপন মাঝি,
যে সমাজে ইসলাম প্রবেশ করে, সে সমাজের অতীত মুছে যায়। তারই প্রতিফলন আমরা দেখি প্রতিটি ইসলামি দেশে–বাঙাদেশ সহ। অতীত সংস্কৃত, সভ্যতা, ভাষা, আচার বিচার…ইত্যাদিকে ইসলাম জাহিলিয়া বলে। আর মুসলিমদের কর্তব্য হচ্ছে জাহিলিয়ার মূলোৎপাটন করা।
অভিনন্দন।
কষ্ট করে অনুবাদ পুরো করলেন শেষ পর্যন্ত।
আশা করছি পরের বিষয় নির্বাচনটি চমৎকার হবে।
শুভেচ্ছা (C)
@কাজী রহমান,
দেখা যাক। কিছু বিশ্রাম দরকার।
কষ্ট করে সবগুলো পর্ব পড়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ।
আপনার অত্যন্ত পরিশ্রম ও ধর্য্যের ফসল এই দারুণ সিরিজটি। অসংখ্য ধন্যবাদ (Y) (Y) (F) (F)
@তামান্না ঝুমু,
সমস্ত প্রশংসা এম এ খানের প্রাপ্য।
কাশেম ভাই,
অনেক পরিশ্রম করে অনেক অজানা তথ্য জানানোর জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আরো লিখবেন। আমরা তো আপনাদের প্রবন্ধ হতে জ্ঞান পাওয়ার অপেক্ষায় থাকি।
ধন্যবাদ।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
প্রচুর ধন্যবাদ। আপনি ধৈর্য নিয়ে প্রতিটি পর্ব পড়েছেন।
একদম একমত! ধর্মীয় জাতীয়তা সকল সভ্যতাবিরোধী ও নৃশংস কাজকেই ছাড়পত্র প্রদান করতে সক্ষম।
পরিশেষে, মুক্তা-মানিক্য লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ!
আপনার ইসলামানুভুতিতে আঘাত লেগেছে নাকি? তা হলে লিখুন না একটা প্রবন্ধ—এই রচনাতে যা সব তথ্য দেওয়া হয়েছে তা ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করে।
এছাড়াও আপনি আমার ভণ্ডানুভুতিতে আঘাত দিয়েছেন।
@আবুল কাশেম,
:lotpot:
@আবুল কাশেম, দয়া করে ভাল করে জেনে আল-কুরান এর ব্যাখ্যা দিবেন।
নারীকে কুরআন অনুমোদিত পন্য বলে কুরআনের তথা ইসলামের অপমান করেছেন।আপনি (কাশেম) কি মুসলমান নাকি ভণ্ড?
@নাইম,
আপনি কি বাংলায় কোরান পড়েছেন ? না পড়লে পড়েন তারপর নিজেই বুঝতে পারবেন যদি বুঝতে চান ।
@নাইম,খাঁটি মুমিন নাইম, আপনি কি কুরান পড়েছেন? না পড়েই, না জেনেই মন্তব্য করছেন! কুরান না পড়েই মুমিন! ধিক।
এক মহান অধ্যায় শেষ হলো মনে হচ্ছে আজকে। সত্যি ভাই অভিভুত যতটা হয়েছি আপনার অনুবাদকৃত লেখা দেখে, তার থেকে বেশী হয়েছি সেই মহান লেখকের অনুসন্ধানকৃত তথ্য দেখে তার চেয়ে ও বেশী অবাক হয়েছি, বাস্তবিক তথ্যপ্রমান সহ প্রমানপত্র দেখে সত্যিকার দাশপ্রথা কী এবং এর ভয়াবহতা। এই বিশাল সিরিজ টা ভালোমতো শেষ করেছেন এজন্য আপনাকে অভিনন্দন।
মুক্তমনা কতৃপক্ষের নিকট আবেদন থাকবে, এই সিরিজটা যেন ইবুক হিসেবে তৈরী করে প্রথম পেইজে বাটন করে রাখা হয়। যেমনটা অবিশ্বাসীর জবানবন্দীর মতো। এর পাশাপাশি প্রতিটি পোষ্টের মন্তব্যগুলোও যেন রাখা হয়। আশা করি বিবেচনা করবেন কতৃপক্ষ। ধন্যবাদ।
@ছেঁড়াপাতা,
বাস্তবিকই, এম আ খানের এই লেখাটা এক মাইল ফলক হিসেবে থাকবে।
ধন্যবাদ ভাই আবুল কাশেম আমাদের সামনে একটি অজানা অধ্যায় বিস্তারতভাবে তুলে ধরার জন্য। এই সুবিশাল অনুবাদটির জন্য নিশ্চয়ই আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তার ফসল হিসাবে আন্তরিক অভিনন্দন। ভবিষ্যতে এরকম আর বিশ্লেষন ধর্মী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম
@ছন্নছাড়া,
প্রচুর ধন্যবাদ, আপনার আসীম ধৈর্যের জন্য।
সমস্ত প্রশংসা এম এ খানের প্রাপ্য।