২০০৯ সালের মার্চ মাস। সকালবেলা।
লাহোরের পার্ক কন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে রাখা টিম বাসে জড়ো হয়েছে শ্রীলংকান ক্রিকেটারটা। গন্তব্য গাদ্দাফি স্টেডিয়াম। দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা হবে সেখানে। হোটেলের সামনে শুধু শ্রীলংকা দলের বাসই নয়, একটা মিনিভ্যানও রয়েছে। এতে উঠে বসেছেন খেলার সাথে সংশ্লিষ্ট আইসিসির কর্মকর্তাবৃন্দ। শ্রীলংকান ক্রিকেটার এবং আইসিসির কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহর। মটরসাইকেলে সওয়ার হয়েছে পুলিশবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া জরুরী প্রয়োজনের জন্য রয়েছে দমকল বাহিনীর একটা গাড়ি এবং একটি এম্বুলেন্স।
বাসে জড়ো হওয়া সহখেলোয়াড়দের সাথে মিলিত হবার জন্য হোটেল থেকে বেরিয়ে আসছেন অধিনায়ক জয়বর্ধনে। কানের কাছে সেলফোন ধরা। চোখমুখ কুচকে আছে বিরক্তিতে। খেলার আগে স্ত্রী ক্রিস্টিনার সাথে কথা বলাটা তাঁর দীর্ঘদিনের রীতি। আজকে কিছুতেই ক্রিস্টিনাকে পাচ্ছেন না তিনি। বারবার ভয়েস মেইলে চলে যাচ্ছে। এমন কখনো হয় না। তাঁর অভ্যাসের কথা ক্রিস্টিনা জানে। স্বামীর ফোনের প্রতীক্ষাতেই থাকে সে। আজকে কী হয়েছে কে জানে। সকালে আরো দুবার ফোন করেছিলেন। প্রতিবারই দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে ভয়েস মেইলে। অস্বাভাবিক একটা ঘটনা।
বিরক্তি নিয়ে বাসে উঠে পড়েন তিনি। বাসের মধ্যে অবশ্য স্বাভাবিক পরিস্থিতিই রয়েছে। অন্য সব খেলার আগে যেরকম হয়, সেরকমই খেলোয়াড়দের কেউ কেউ জানার পর্দা টেনে দিয়েছে। কেউ আবার পর্দা সম্পূর্ণ সরিয়ে দিয়েছে বাইরের দৃশ্য দেখবে বলে। বিরক্তি কিছুটা কমে স্বাভাবিক হয়ে আসেন মাহেলা। সবাইকে সম্ভাষণ জানিয়ে বাসের পিছনের দিকে চলে যান তিনি। বা পাশের একটা সিট নিয়ে বসেন। বসেই আবারো সেলফোনে ক্রিস্টিনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি।
বাদিকে টার্ন নিয়ে হটেল থেকে বেরিয়ে আসে গাড়িবহর। একটা ইউ টার্ন নিয়ে আবাসিক এলাকা গুলবার্গের মধ্য দিয়ে ছুটে যেতে থাকে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের দিকে। নিরাপত্তার খাতিরে যদিও বিভিন্ন দিকের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তারপরেও রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা নয়। ফাঁকফোকর দিয়ে কিছু মটরসাইকেল আরোহীরা ঠিকই ঢুকে পড়েছে রাস্তায়।
শ্রীলংকা দলের সহকারী কোচ ফারব্রেস বসে আছেন নতুন আবিষ্কার স্পিন বোলার অজন্তা মেন্ডিসের পাশে। মাথার মধ্যে খেলা করছে আগামি তিন দিনে পাকিস্তানকে কীভাবে দুইবার অল আউট করা যায়। আরেকটু পিছনেই বসে আছে কুমার সাঙ্গাকারা এবং থিলান সামারাভিরা। এই ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান। দুজনেই খুচ খুচ করে আলাপ করছে ম্যাচটা কীভাবে জেতা যায় তাই নিয়ে। এই ম্যাচটাই মাহেলার টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসাবে শেষ ম্যাচ। জয় দিয়ে তাঁকে অধিনায়কত্ব থেকে বিদায় দিতে বদ্ধ পরিকর দুজনে।
গাড়ি বহর এগিয়ে যায় লিবার্টি চত্বরের দিকে। ঠিক সেই সময়ই মাহেলার কান তালা লেগে যায় বুলেটের তীব্র শব্দে। ধাতম কিছুতে আঘাত করার ঝনঝনাৎ শব্দ শোনা যায়। তিলকরত্নে দিলশান চিৎকার করে উঠেন সিংহলী ভাষায়। সবাইকে সিটের নীচে ঢুকে পড়ার নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। কী ঘটছে শুরুতে ঠিক বুঝতে পারেন নি মাহেলা। তারপরই টের পেলেন যে, কেউ বা কারা তাঁদের দিকে গুলি ছুড়ছে। ভয়ে হিম হয়ে যান তিনি। হাত থেকে আপনা আপনি ফোন পড়ে যায় বাসের মেঝেতে। এই আক্রমণের সময়ের তিরিশ সেকেন্ডের ঝাঁঝালো শব্দসমূহ রেকর্ড হয়ে যায় ক্রিস্টিনার ভয়েস মেইলে।
শুরুতে ফারব্রেস কিছুই বুঝতে পারেন নি। ভেবেছেন রাস্তায় কিছু একটা ঘটছে। বাসের পিছন থকে জয়বর্ধনের আর্তনাদ শুনতে পান তিনি। বোমার স্পিলিন্টার এসে লেগেছে তাঁর গোড়ালিতে। একটা বুলেটও গা ছুঁয়ে গিয়েছে তাঁর। তখনও দিলশান চিৎকার করে চলেছে সবাই নীচু হও নীচু হও বলে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য সামনের সিটকে সজোরে আঁকড়ে ধরেন তিনি। আর ঠিক তখনই মেন্ডিস তাঁর সামনে লুটিয়ে পড়ে বাসের মেঝেতে। মাথা এবং পিঠ ঝাঁঝড়া হয়ে গিয়েছে স্পিলিন্টারে। ফারব্রেস নিজেও ততক্ষণে আর অনাঘাত নন। এক টুকরো ধাতবখণ্ড কোথা থেকে এসে ঢুকে গিয়েছে তাঁর বাহুতে।
সাঙ্গাকারা ঘাড় ঘুরিয়ে বাইরে কী হচ্ছে সেটা দেখতে গিয়েছিলেন। একটা বুলেট তাঁর কানের পাশ দিয়ে তীব্র শীষ বাজিয়ে ঢুকে যায় সিটের মধ্যে। একটু আগেই সেখানে মাথা ছিল তাঁর। পারানাভিটানার বুকে এসে গুলি লাগে। দড়াম করে পড়ে যান তিনি। শরীরের শার্টে রক্ত মাখামাখি। সামারাভিরা ধরে নিয়েছিলেন যে, পারানাভিটানা আর বেঁচে নেই। তবে, খুব বেশিক্ষণ পারানাভিটানাকে ভাবার সময় তিনি পান না। নিজের বা পায়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন তিনি। একটা বুলেট ঢুকে গিয়েছে তাঁর বা উরুতে।
আক্রমণ শাণিয়েছিল বারো জনের একটা সন্ত্রাসী দল। একে ফর্টি সেভেন, গ্রেনেড আর রকেট লঞ্চারের মত অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে শ্রীলংকা দলের ক্রিকেটারদের জন্য লিবার্টি চত্ত্বরে ওত পেতেছিল তারা। ক্রিকেট দলের বাস চত্বরের কাছাকাছি আসার সাথে সাথেই বাস লক্ষ্য করে হামলা চালায় তারা। বাসকে এসকোর্ট করা পাকিস্তানি পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই ছয়জন পুলিশ এবং দুজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা প্রথমেই বাসে চাকা বরাবর গুলি চালায়। বাসের এক পাশের চাকা দেবে গিয়ে অচল হয়ে যায় বাস। সেই সময়ই বাস লক্ষ্য করে রকেট লঞ্চার দিয়ে রকেট ফায়ার করে তারা। ভাগ্যক্রমে বাসকে আঘাত না করে পাশের ইলেক্ট্রিক পোলে গিয়ে আঘাত হানে সেটি।
আইসিসির কর্মকর্তাদের বহনকারী মিনিভ্যানও আক্রমণের হাত থেকে বাঁচে নি। এর ড্রাইভার আক্রমণের শুরুতে মারা যায়। চতুর্থ রেফারি আহসান রাজা বুকে গুলি খেয়ে আহত হন। ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড আহত স্থানে শক্ত করে হাতচাপা দিয়ে রাখেন রক্তক্ষরণ বন্ধ রাখার জন্য। ব্রডের গালাগালি খেয়ে এক পুলিশ অফিসার, যিনি নিজে বাঁচার জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন ভ্যানের মধ্যে, চালিয়ে নিয়ে সরে যান নিরাপদ দূরত্বে।
শ্রীলংকা দলের নিরাপত্তার দায়িত্ব ঘাড়ে পেতে নেন দিলশান। ড্রাইভারের ঠিক পিছনের সিটেই বসে ছিলেন তিনি। ওখান থেকেই তিনি নির্দেশনা দিতে থাকেন ড্রাইভার মোহাম্মেদ খলিলকে। খলিল ড্যাশবোর্ডের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ড্রাইভ করতে থাকেন দিলশানের নির্দেশ অনুযায়ী। বাসকে পালাতে দেখে সন্ত্রাসীরা বাসের নীচে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। কিন্তু ভাগ্য ভালো ওটি বিস্ফোরিত হবার আগেই বাস সরে যায় নিরাপদ দূরত্বে। খলিল তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে আধা কিলোমিটার দূরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের লোহার দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েন মাঠের ভিতরে।
অনেকের হয়তো কৌতুহল হচ্ছে যে, পাকিস্তানি টিম তখন কোথায় ছিল? পাকিস্তানি টিম শ্রীলংকান টিমের সাথে একই হোটেলে ছিল। কিন্তু শ্রীলংকান টিমের সাথে একই সাথে স্টেডিয়ামে যায় নি সেদিন। এর আগের দুদিনই পাকিস্তান টিম শ্রীলংকান টিমের সাথে একই সাথে মাঠে গিয়েছে। এটাই রীতি। ওইদিনই তাঁরা একসাথে না যাবার কাকতালীয় অজুহাত নিয়ে হাজির হয়েছিল। নাস্তার সময় পাকিস্তানের অধিনায়ক ইউনুস খান চতুর্থ রেফারি আহসান রাজাকে জানায় যে, করাচিতে টেস্ট খেলে এবং লাহোরের এই গরমে গত দুই দিন পুড়ে তার ছেলেরা ক্লান্ত। কাজেই, পনেরো মিনিট পরে তারা হোটেল ছেড়ে বের হবে। ইউনুস খান পরে এটাকে আল্লাহর রহমত হিসাবে বর্ণনা করে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই বলে যে, ভাগ্যিস আমরা একসাথে বের হই নি। হলে ভয়াবহ বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটে যেতো।
লাহোর টেস্ট সাথে সাথেই বাতিল করা হয়। শ্রীলংকান খেলোয়াড়দের নিয়ে যাওয়া হয় পাশের একটা এয়ারবেইজে। চার্টার্ড প্লেনে করে আহত খেলোয়াড়দের নিয়ে যাওয়া হয় কলম্বোতে।
এই ভয়াবহ ঘটনার ট্রমা থেকে বাঁচার জন্য শ্রীলংকার খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের পোস্ট ট্রমাটিক কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শুধু ক্রিকেটার এবং কর্মকর্তারাই নয়, এই কাউন্সিল থেকে বাদ পড়ে নি খেলোয়াড়দের পরিবারের অন্তরঙ্গ সদস্যরাও।
পাকিস্তান একটা বিশৃঙ্খল, জঙ্গী এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে অনেকদিন ধরেই। অনেকদিন ধরেই প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট দলগুলো সেখানে খেলতে যেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ইলেভেনের পরে নিউজিল্যান্ড পাকিস্তান সফর না করার সিদ্ধান্ত নেয়। অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজও তাদের খেলাগুলোকে নিরপেক্ষে ভেন্যু কলম্বো এবং সারজাহতে সরিয়ে নেয়। দুই হাজার দুই সালে নিউজিল্যান্ড যায় পাকিস্তানে। কিন্তু তাঁরা যেখানে ছিল সেই হোটেল শেরাটনের সামনেই বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
দুই হাজার সাত সালে বেনজীর ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের পরে ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া তার পাকিস্তান সফর বাতিল করে দেয় নিরাপত্তার অজুহাতে। একই বছরে নিরাপত্তাকে ইস্যু করে আটটার মধ্যে পাঁচটা আইসিসি সদস্যি চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে দল পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে, পরের বছর অক্টোবর পর্যন্ত এই টুর্নামেন্ট স্থগিত হয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজও তাদের প্রস্তাবিত ভ্রমণসূচী বাতিল করে দেয় একই কারণ দেখিয়ে।
এই বছরের ডিসেম্বর মাসে মুম্বাই সন্ত্রাসী আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী নির্দেশনায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তান সফর স্থগিত করে।
দুই হাজার নয় সালে আইসিসি পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সংগঠনের অনেক সদস্যেরই পাকিস্তান যাবার বিষয়ে উদ্বেগ ছিল।
দুই হাজার আট সালে ভারত তার পাকিস্তান সফর স্থগিত করলে পাকিস্তান বাইরের কোনো একটা দেশকে নিয়ে এসে খেলানোর ব্যাপারে মরিয়া হয়ে উঠে। তারা হাত বাড়ায় শ্রীলংকার দিকে। জয়বর্ধনে ভাষ্য অনুযায়ী ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার পাকিস্তান না যাবার কারণে তাঁরা দুশ্চিন্ত অবস্থায় ছিল। ফলে, নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলে ক্রিকেট বোর্ডকে। শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ড জানায় যে, শ্রীলংকান ক্রিকেটারদের প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এই আশ্বাস পেয়েই শ্রীলংকান খেলোয়াড়েরা অনীচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়েছিল এই ভ্রমণে।
শ্রীলংকান খেলোয়াড়দের উপর হামলার দায় দায়িত্ব সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর এ তাইবার ঘাড়ে চাপিয়ে ছিল পাকিস্তান সরকার। মুম্বাইয়ে আক্রমণ এরাই করেছিল। সেই আক্রমণের সাথে এই আক্রমণের মিল থাকাটাই এদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর পিছনে অন্যতম দায়ী। এই সংগঠন ভারত পাকিস্তান দুই দেশেই নিষিদ্ধ। মজার একটা তথ্য হচ্ছে যে, এরা ক্রিকেট খেলাকে অনৈসলামিক মনে করে। দুই হাজার চার সালে এ বিষয়ে একটা ফতোয়াও জারি করেছিল তারা।
তবে কথা হচ্ছে যে, এই জাতটার নাম পাকিস্তান। যে কোনো বিষয়ে দোষ এড়ানোতে এদের জুড়ি মেলা ভার। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইউসুফ রাজা জিলানি এই আক্রমণের দায়দায়িত্ব শ্রীলংকান সন্ত্রাসীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন যে, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট তাঁকে জানিয়েছে যে, আমাদের কাছে তথ্য প্রমাণ আছে যে, শ্রীলংকার সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে পাকিস্তানে টাকা গিয়েছে আক্রমণ পরিচালনার জন্য।
অনেক নাটকের পরে এই ব্যর্থ রাষ্ট্রের মৃত্যুপুরীতেই ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছে বঙ্গশার্দুলেরা। না, তাঁরা নিজের ইচ্ছায় যাচ্ছে না। তাঁদেরকে বাধ্য করছে লোটাস কামাল নামের এক লোভী ব্যবসায়ী। টাকার জোরে বিসিবির প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেছে এই লোক। শুধু বিসিবির প্রেসিডেন্ট হয়েই তার সাধ মেটেনি। আইসিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট হবারও শখ চাগিয়েছে তার। আর এর জন্য তার দরকার পাকিস্তানের সাহায্য। অন্যদিকে পাকিস্তানেরও প্রয়োজন কোনো একটা ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে নিয়ে খেলিয়ে প্রমাণ করা যে, তাদের সবকিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। পাকিস্তানের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে এসেছে লোটাস কামাল। সেই নিরাপত্তায় সন্তুষ্ট সে। কাজেই দল পাঠানোতে তার কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে। কিন্তু আইসিসি আবার পাকিস্তানের এই নিরাপত্তায় সন্তুষ্ট নয়। সেখানে তার কর্মকর্তাদের পাঠাতে প্রবলভাবে অনিচ্ছুক আইসিসি। কিন্তু বিসিবির লোটাস কামাল এবং পিসিবির জাকা আশরাফের গভীর প্রেম দেখে তারা বলে দিয়েছিল যে, খেলতে চাইলে অনিরপেক্ষ কর্মকর্তা দিয়েই খেলাতে হবে। আইসিসির পক্ষ থেকে কাউকে পাঠানো হবে না ।
আইসিসি জড়িত না হলে, এটা ক্রিকেট না হয়ে যে পিকনিক হবে, সেটা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি লোটাস কামালের। এ ছাড়া ঘরের মধ্যেও প্রবল বিরোধিতায় রয়েছে পাকিস্তানে টিম পাঠানোর বিষয়ে। সে কারণেই লোটাসের সুর ভিন্নতর হয়েছিল। জিগরি দোস্তের সুরের এই ভিন্নতা দেখে ক্ষোভে দুঃখে জাকা আশরাফ হুমকি পর্যন্ত দিয়ে ছেড়েছিল এই বলে যে, বাংলাদেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদের থেকে সমর্থন প্রত্যহার করে নিতে পারে পাকিস্তান। এই ধমকের কারণেই কি না, কে জানে হঠাৎ করে পাকিস্তান যাবার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ফেলেছে লোটাস কামাল। ২৯ শে এপ্রিল গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে একটা একদিনের ম্যাচ এবং পরের দিন একটা বিশ ওভারের ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এই সফর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট কী উপকৃত হবে কেউ জানে না। রকিবুল হাসান এত সংক্ষিপ্ত ট্যুরের কোনো মূল্যমান খুঁজে পান নি। একটা মাত্র ওয়ান ডে এবং টি টোয়েন্টি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কীভাবে সাহায্য করবে আমি জানি না। তাঁর মতে, আমাদের ক্রিকেটাররা এখন সবাই ছুটিতে। সবচেয়ে বড় দুজন তারকা আইপিএল এ ব্যস্ত। এ অবস্থায় পাকিস্তানে দল পাঠালে সেটি হবে খর্ব ব্যাটিং শক্তির দল।
ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পালও বিসিবি-র এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ক্রিকেটার এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এই ভ্রমণের বিষয়ে উদবিগ্ন। ওই দেশে যেখানে কেউ-ই যেতে চায় না, সেখানে আমরা কেন যাচ্ছি। এর পিছনের ব্যক্তিগত স্বার্থটা আমরা জানতে চাই।
রকিবুল হাসান বা দেবব্রত পাল তাঁদের অবস্থানগত কারণে কূটনৈতিকভাবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। আমাদের সেই দায়বদ্ধতা নেই। আমরা জানি একজন লোভী মানুষের লোভের শিকার হচ্ছে আমাদের ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের জনগণ ক্রিকেট থেকে বঞ্চিত না অবঞ্চিত সেটা দেখার আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু আমাদের ছেলেদের নিরাপত্তাটুকু দেখতে চাই। যে দেশে আইসিসি-র একটা দেশও যায় না, সেখানে আমাদের যেতে হবে কোন দুঃখে? কিসের ঠেকা পড়েছে আমাদের? আজকে যদি ওখানে কোনো অঘটন ঘটে তাঁর দায়দায়িত্ব কে নেবে? যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের তা কি পূরণ করা সম্ভব হবে?
আমাদের দেশটা একটা দ্বিধা কিংবা ত্রিধা বিভক্ত একটা দেশ। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের আত্মসম্মানের প্রবল ঘাটতি রয়েছে। আমি বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশের মানুষকে অন্য দেশের জাতীয় দল নিয়ে মাতামাতি করতে দেখি নি, দেখি নি অন্য দেশের জাতীয় পতাকা কপালে, কপোলে মাখতে। এই দেশে একসময় কেউ ভারতীয় ক্রিকেট দলের সমর্থক ছিল, কেউ বা পাকিস্তানের। এখনো প্রচুর আছে। বাংলাদেশেই বাংলাদেশের সমর্থক ছিল না। ছিল না বললে ভুল হবে। ক্ষুদ্র একটা অংশ ছিল যারা মাটি কামড়ে ছিল। বুকের মধ্যে গভীর আশা পুষে রাখতো এই ভেবে যে, একদিন ঠিকই নিজেদের একটা শক্তিশালী দল হবে, সেই দলের সমর্থনে আমরাও পাকিস্তানি আর ভারতীয় সমর্থকদের চেয়ে আরো বেশি জোরে চিৎকার করবো, চেচামেচি করবো, ওদের চেয়েও বড় বড় পতাকা নিয়ে সবুজের প্রান্তর বানিয়ে দেবো স্টেডিয়ামকে, দল জিতলে প্রবল উল্লাসে ফেটে পড়বো, সেই উল্লাসধ্বণি হবে সমুদ্র গর্জনের মত, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে দল হারলে গলা জড়িজড়ি করে আকুল হয়ে কাঁদবো। সেই কান্নাও হবে সুখের কান্না।
আজকে যখন একদল ছিপছিপে ক্ষিপ্র তরুণকে দেখি লাল-সবুজের রঙ গায়ে মেখে কাউকে তোয়াক্কা না করে বাঘের বাচ্চার মত জয়ের জন্য মাঠে তীব্র লড়াই করে, তখন বুকের ভিতরটা কেমন যেন আনচান করে উঠে। সদ্য কৈশোর পেরোনো কোনো তরুণ যখন দেশের জন্য, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের পাহাড়সম ওজন নিয়ে, শেষ ওভারের শেষ বলে চার মারার জন্য চোখে গভীর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে চোয়াল শক্ত করে ব্যাট উচিয়ে ধরে, তখন সেই তরুণ আর একা থাকে না, কোটি কোটি অদৃশ্য ভালবাসার হাত নিমেষেই ঘিরে ধরে তাকে। তার পিছনে শক্ত পাথরের দেয়ালের মত সারি বেধে দাঁড়িয়ে যায় অগণন মানুষ। আমরা যারা একদা একা ছিলাম, তারাও টের পাই, শুধুমাত্র এই ছেলেগুলোর জন্যই আমাদের কাঁধের পাশে এসে ঠেকছে অচেনা কাঁধ, হাতের সাথে মিলিত হচ্ছে অন্য কারো হাত। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছি আমরা।
আমাদেরকে যারা একতাবদ্ধ করছে, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে, ভুলে যাওয়া পরিচয়ের গর্ব এনে দিচ্ছে, সেই সব সোনার ছেলেদের পচে গলে যাওয়া পাকিস্তান নামের এক মৃত্যুপুরীতে যেতে দিতে পারি না আমরা। কিছুতেই নয়।
সবটুকু শক্তি দিয়ে এটাকে প্রতিহত করতে হবে আমাদের।
অনেকদিন পর, অনেক বাঙ্গালীকে একসঙ্গে, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে; উচ্চকিত হ’তে দেখলাম। দেখলাম – অধিকার আদায়ে অনমনীয়, ঝাঁকমানুষের জোর চিৎকারে রাষ্ট্রকেও কিছুটা নত হ’তে হয়।
আপাত বিজয় ইংগিত করে, ভবিষ্যতে জন-জীবনের স্বার্থের বিপরীত যে কোন তৎপরতা – রুখে দিতে পারে এই ঝাঁকমানুষ।
@স্বপন মাঝি,
ঠিক বলছেন স্বপন ভাই। এই একটা ঝাঁককেই ঝাঁক ঝাঁক বানানোর স্বপ্ন দেখি মনে মনে।
@সাইফুল ইসলাম,
(Y)
@সাইফুল ইসলাম,
আঃ এরকম স্বপ্নের বীজ ছড়িয়ে যাক, সবখানে।
@স্বপন মাঝি,
খুব ভালো বলেছেন। (Y)
[img]http://www.amarblog.com/sites/default/files/propics/picture-8657.jpg[/img]
বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠানোর সিদ্ধান্তের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য রিট আবেদন করা হয়েছে আজ। প্রথম আলোর অনলাইন নিউজে দেখলাম একটু আগে।
@প্রদীপ দেব,
বাঙালির ঐক্যবদ্ধতার শক্তি সীমাহীন, এটাই প্রমাণিত হলো।
পাকিস্তানের ডন পত্রিকা বলছে যে, সফর বাতিল হয়ে গিয়েছে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
মাত্র কিছুক্ষণ আগে খবরটা পড়ে খবর দিতে আসছিলাম… খুশিতে … আনন্দে… 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
🙂
@ইরতিশাদ,
:))
আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষে ছিলেন এম কে রহমান।
আজিম আদালতে বলেন, বিদেশি দলের জন্য পাকিস্তান নিরাপদ নয়। দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের গণমাধ্যমও তাই বলছে।
“পাকিস্তান ইতোপূর্বে শ্রীলঙ্কা দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। শ্রীলঙ্কা দল আগে একবার ওই দেশে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ায় তারা আর আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। ইংল্যান্ডও কিছুদিন আগে পাকিস্তান সফরে না গিয়ে নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাইয়ে খেলেছে। অন্য দেশগুলো নিরাপত্তাহীনতার কারণে পাকিস্তানে যাচ্ছে না।”
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জাতীয় দলকে পাকিস্তানে পাঠালে তাদের ‘নিশ্চিত বিপদের মুখে’ ঠেলে দেওয়া হবে বলে যুক্তি দেন এই আইনজীবী।
আজিম বলেন, “জাতীয় দল দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। এ কারণে তাদের নিরাপত্তার সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ বা জনস্বার্থ জড়িত।”
বিসিবির পক্ষে এম কে রহমান বলেন, বাংলাদেশ নিঃশর্তভাবে ওই দেশে যাচ্ছে না। যাওয়ার জন্য যথাযথ পরিবেশ আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) একটি দল আগে পাকিস্তান যাচ্ছে। তারা নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলেই বাংলাদেশ যাবে।
কোন মাঠে খেলা হবে আইসিসিই তা নির্ধারণ করবে বলে আদালতকে জানান তিনি।
এ পর্যায়ে বিচারক বলেন, “বিসিবি সিদ্ধান্ত নিলেই কি জাতীয় দলকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পাঠাব? আমরা দরিদ্র দেশ বলেই কি ঝুঁকি নিয়ে ওখানে খেলতে যেতে হবে? আজ ১৯ এপ্রিল। খেলা হবে ২৯ এপ্রিল। ভেন্যু ঠিক করার সিদ্ধান্ত হবে কখন? আমরা এভাবে জাতীয় দলকে অনিরাপদ অবস্থায় পাঠাতে পারি না।”
বিচারকের এই দুর্দান্ত সংবেদনশীল মানবিক সহমর্মিতায় আমাদের দেশের বিচারকদের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো আমার।
@ফরিদ আহমেদ,
:clap :clap :clap বিচারক মহোদয়দের (F) (F) (F) ।
@ফরিদ আহমেদ,
লোটা কামালরে সাংবাদিকরা চাইপ্যা ধরার পরে কইছিল আইসিসি যা কইব তাই সই। লোটা ছাড়াও একই কথা কইছে সিরাজ না কী নামের আরেকজন। এখন দেখতেছি আদালতেই একই কথা শুনাইছে। এই কথা শোনার পরে চিন্তা করছিলাম ইন্ডিয়া এইখানেও চাল খেলব। কারন হইল, বর্তমান চেয়ারম্যান শারদ পাওয়ার, নিজের টিম না পাঠাইয়া কেন বাঙলাদেশের উপ্রে দিয়া মজাটা লুটব? পরে চিন্তা করলাম, আগে আসল খবর নেই, কারন লোটা কামাল শত হইলেও বাঙালি পাবলিক। পরে আমি আইসিসির কাছে কয়েকটা প্রশ্ন কইরা একটা মেইল পাঠাইছিলাম। প্রশ্নগুলা ছিলঃ
ধরেন, আইসিসি আর বিসিবি চাইতেছে বাঙলাদেশ খেলুক পাইক্কাগুলার সাথে কিন্তু বাঙলাদেশের খেলোয়াররা চাইতেছে না, তখন কী হইব?
আবার দেখা গেল প্লেয়ার, বিসিবি চাইতেছে কিন্তু আইসিসি চাইতেছে না, তখন কী হইব।
আবার এমনও হইতে পারে আইসিসি চায়, প্লেয়াররা চায় কিন্তু বিসিবি চায় না, তখন কী হইব।
মানে আসলে মেইন প্রায়োরিটিটা কার?
পরে আইসিসি মেইল ব্যাক কইরা কয়,
Thanks for your comments.
ICC has no role to play since it is a bilateral tour decided upon by the two member boards.
Please write to the two boards for more comments.
Regards
গত দুই দিন নেটের লাইন না থাকায় আগুন পোষ্টে কমেন্ট মারতে পাই নাই।
এইখানে একটা ব্যাপার সবার মনে হয় খেয়াল করা উচিত। মানুষ একসাথে জাগলে তারে বসানো কঠিন।
জয়তু বাঙলাদেশ!
@সাইফুল ইসলাম,
আইসিসি আসলে বড় রকমের বেকায়দায় পড়েছে দুটো উল্লুক লোকের কারণে। লোটাস কামাল এবং জাকা আসরাফ খেলার জন্য এতই উতলা যে এরা আইসিসিকে জ্বালিয়ে মেরেছে এই বলে যে আমরা খেলতে চাচ্ছি, তোমরা কেন অনুমতি দিচ্ছো না। ফলে, শেষ পর্যন্ত আইসিসি নিজের গা বাঁচানো আর এই ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ করার জন্য বিশেষ আইন করেছে। বলেছে যে, দুটো বোর্ড যদি ইচ্ছে করে এবং আইসিসির তরফ থেকে নিরাপত্তার জন্যে যদি কাউকে পাঠানো সম্ভব না হয়, তবে নন-নিউট্রাল কর্মকর্তা দিয়ে খেলা চালানো যাবে। এই আইন আইসিসি করেছে তার কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আর দায় থেকে বাঁচার জন্য। কিন্তু, আইসিসি জানে যে, কিছু ঘটলে আইনগতভাবে কেউ তাদের ছুঁতে না পারলেও, নৈতিক দায়িত্ব অস্বীকারের সুযোগ থাকবে না। হাজার হলে ক্রিকেটের বাপ-মা তারাই। সে কারণে, তারা উল্লেখ করে দিয়েছে যে, এই আইনকে ব্যবহার করা যাবে শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে, সবসময় নয় এবং অতি অবশ্য সবশেষ উপায় হিসাবে নিতে হবে।
বাংলাদেশের আদালতের সিদ্ধান্তে শুধু বাংলাদেশের মানুষই আনন্দিত হয় নি, আইসিসিও হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, খুব গোপনে তারা বিশাল এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে উল্লুকা পাঠঠা দুটোর উল্টোপাল্টা আচরণের হাত থেকে বাঁচতে পেরে।
দুর্দান্ত একটা ব্যানার সৃষ্টির জন্য নিলীমকে নীল শুভেচ্ছা।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/themes/neobox/headers_backup/cricket/mukto-mona_cricket0.png[/img]
@ফরিদ আহমেদ, দুর্দান্ত? 🙂 ধন্যবাদ (C)
@নিলীম আহসান,
যন্ত্রণা!!! :-Y
পাকিস্তান সফর: বিসিবির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
টাইগারদের লাশ দেখতে চাইনা-
সেভ বাংলাদেশি ক্রিকেটার’র মানববন্ধন
লেখাটির সাথে সমন্বিত করে আমাদের জন্য চমৎকার একটি ব্যানার করেছেন নিলীম –
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/themes/neobox/headers_backup/cricket/mukto-mona_cricket0.png[/img]
ধন্যবাদ নিলীম!
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ 🙂 (D)
@নিলীম আহসান,
বিশাল অভিনন্দন! (F) (Y)
সমকালীন ঘটনা নিয়ে সময়োপযোগী লেখা।
পাকিস্তানে ক্রিকেট টিম পাঠানোর সিদ্ধান্তটা আপাতঃ দৃষ্টিতে ক্রীড়াবিষয়ক মনে হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের পাকিস্তানে পাঠানোটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। ফরিদ আহমেদের বিশ্লেষণে এই ঝুঁকিটা যে কতটা বাস্তব এবং খেলোয়াড়দের ওপরে যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটা যে খুবই সম্ভব তা ভালোভাবেই উঠে এসেছে। আশা করি, এই লেখাটা পড়ে কর্তাব্যক্তিদের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে।
আপনার লেখা ফেসবুক এ শেয়ারে করলাম ধন্যবাদ
কম্পিউটারের খুটিনাটি জানতে ভিজিট করুন একলাপথিক সাইটএ
আমরা আছি ফেসবুকেএ
লোটাস কামালরে লোটাকম্বল সহযোগে পাকিস্তানী বট গাছের আগায় তুলে চাবকানো হোক। এই লোকগুলার জন্যই আজ দেশের এই অবস্থা।
লেখাটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফরিদ ভাই,
সেই ১৯৯৩ সাল থেকে এই দলটাকে সমর্থন দিয়ে আসছি। কত গঞ্জনা, অপমান সইতে হয়েছে বন্ধু, পরিজনদের কাছে। ধুর! বাংলাদেশ কোন দল হইল? নিরবে কত চোখের জল ফেলেছি বাংলাদেশের পরাজয়ে। হ্যা, আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্ধ সমর্থক। কয়েকদিন আগে সংবাদটা পড়ার পর থেকে মন ভাল নেই। সোজা বাংলায় বলতে গেলে বিষন্নতায় ভুগছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ফরিদ ভাইর লেখাটা পড়ে মন খারাপ বেড়ে গেলেও সান্ত্বনা পাচ্ছি এই ভেবে যে অনেকেই আমার মত ভাবছে। ফরিদ ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। শেয়ার দিলাম।
@সুমন,
আমিও অন্ধ ভক্ত। না হয়েই বা কী উপায়? দেশতো, নিজের দেশ।
@ফরিদ আহমেদ,
তেনাদেরই বা পাকিস্তানের অন্ধভক্ত না হয়ে উপায় আছে, ফরিদ ভাই? তেনারা যে পাকিরেই নিজের দেশ ভাইবা মনের পবিত্র কোনায় ঠাই দেয়!
বাক্য শেষে একটা ‘না’ বাদ পড়ে গেছে, ফরিদ ভাই।
অসাধারণ এই শব্দগুচ্ছ মনকে ভিজিয়ে দিয়ে গেল! এশিয়া কাপে দেখেছি ‘দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর’ মানুষের সারিবদ্ধ হাত; রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, বাড়িওয়ালা, গাড়িওয়ালা সবার মুখ হয়ে উঠেছিল স্কোরবোর্ড; বিনপি-আমলিগ, ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সবাই এক মিছিলে।
পাকিস্তান এখনো ক্ষমা চায়নি আমাদের কাছে, বরং সব ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে, করে যাচ্ছে ধর্মকেন্দ্রিক ফ্যাসিবাদের ব্যাপক চাষ দেশীয় ডাল কুকুরদের ব্যবহার করে। সেই পাকিস্তানের হাতে গিনিপিগ হতে দেয়া যায় না আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় বীরদের, আমাদের ক্রিকেট যোদ্ধাদের।
@কাজি মামুন,
ধন্যবাদ মামুন। ঠিক করে দিয়েছি।
যে কোন ভাবে পাকিস্তানে যাওয়া থেকে আমাদের দলকে রুখতে হবে। এই ধরনের সন্ত্রাসি রাষ্ট্রে দল পাঠানোর পেছনে কোন কুমতলব বা কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকতে পারে।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন।
আমাদের কথার কোন দাম নাই, যাদের কথার দাম আছে তারা কিছু বলছেনা কেন?
লোটা রে জুতানো হোক ।তারে এখন কে বেইল দেয় ? ??
@সাকিন উল আলম ইভান,
শুনলাম ঢাকায় নাকি পোলাপান পুরোনো পাদুকার প্রদর্শনী করবে বিসিবির সামনে। ওই সময় কারো কারো মনে এই ইচ্ছা জাগলেও খুব একটা অবাক হবো না আমি। 🙂
আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা যে বাংলাদেশ দলকে আসলেই পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে! আমাদের কথার কোন দাম নাই, যাদের কথার দাম আছে তারা কিছু বলছেনা কেন? :-Y
@লীনা রহমান,
আমাদের কথার অনেক দাম আছে লীনা। এককভাবে হয়তো নেই, কিন্তু আমাদের সম্মিলিত কন্ঠের আওয়াজ অনেক মূল্যবান। বহু গদিনশীনকে গদি থেকে উপড়ে ফেলার জন্য তা যথেষ্ট। হতাশ হবেন না। যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই কণ্ঠ ছাড়ুন জোরে।
এরা ত আমাদের চিরশত্রু। কারুরই যেখানে নিরাপত্তা নেই সেই মৃত্যুপুরী, শত্রুপুরীতে আমাদের ক্রিকেট টিম কোনো অবস্থাতেই যেতে পারেনা। রুখতেই হবে এই চক্রান্তের মরণযাত্রা।
@তামান্না ঝুমু,
লোটা কম্বলের অবশ্য ধারণা উল্টো। চিরবন্ধু মনে করে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের জনগণ ক্রিকেট খেলা দেখা থেকে বঞ্ছিত বলে রাতে ঘুম আসে না তার। আমাদের ক্রিকেটে পাকিস্তানের অবদান কত এই কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বলতে বলতে মুখে ফেলা তুলে ফেলে ভদ্রলোক।
উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই সুসময়কে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলবার এই অপচেষ্টা অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। এখন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারবার সময় নয়।
সময় উপযোগী লেখনির জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটা স্টিকি করে দেওয়া যায় না?
বাংলাদেশের ক্রিকেট দল পাকিস্তানে যাবে কি যাবে না তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা কার নেওয়ার কথা? আমাদের ক্রিকেট দল সারাসরি না করে দিতে পারেনা? এই ব্যাটা কামাল কি জামাতি নাকি?
@বন্যা আহমেদ,
স্টিকি করে দেওয়াটাই খুব ভালো হবে মনে হয়।
ফেসবুক শেয়ার, টুইট ইত্যাদিও সবাই মিলে করতে পারি ।
@বন্যা আহমেদ,
নাহ, তা নয়। তবে, পাকিপ্রেমী আওয়ামী লিগার নিঃসন্দেহে। পাকিস্তানের জনগণ ক্রিকেট থেকে বঞ্ছিত বলে বেচারার মনে বড় খেদ। 🙂
বাংলাদেশ টিমের পাকিস্তান যাওয়া ইস্যুতে লোটা কামালের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল নাকি তার পাকি-নাড়ীর টান টনটন করে উঠেছে সেটা নিয়ে রঙ্গমসকরা হতে পারে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ টিমের জন্য কোনো উপকারী হয়েছে কি? যেদেশে দিন কয়েক আগেই প্রকাশ্যে বোমা মেরে কারগার থেকে কয়েদী ভাগিয়ে নিয়ে যায় তালেবানরা। প্রতি মুহূর্তই হুঁঙ্কার দিচ্ছে তালেবানরা, জঙ্গিরা সে দেশে আমার দেশের খেলোয়াররা কতখানি নিরাপদ থাকবে এ প্রশ্ন তো অবশ্যই উঠবে। এমন না যে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা শুধু সরকার বা বিদেশি সেনার উপর হয়েছে। পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট টিমের উপর যে নৃশংস হামলা হয়েছে তার ক্ষত কি এতো তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন থেকে?
@অনন্ত বিজয় দাশ,
ব্যক্তিস্বার্থ আর লোভ বড় খারাপ জিনিস। নিজের মাকেও বেঁচে দেওয়া যায় এর জন্য। লোটাস সাহেব আইসিসির হর্তাকর্তা হবার নেশায় বুদ হয়ে আছেন। তাঁকে এখন এগুলো কিছুই বোঝানো যাবে না। এই লোভের বলি হয়ে যখন বিসিবি থেকে বিতাড়িত হবেন তিনি, তখনই ঘোর কাটবে তাঁর। তার আগে নয়।
সারা দেশে এত প্রতিবাদের পরেও সরকারী কোন আমলা কিংবা মন্ত্রীর কোন মন্তব্য পাচ্ছি না কেন? লোটাসের সাথে কি অন্য কোন মন্ত্রীর কিংবা আমলার আরো কিছু ফায়দা লুটার সম্ভাবনা আছে নাকি??
লেখাটা ফেবুতে শেয়ার করে দিলাম।
@আসরাফ,
বাতাস কোনদিকে যায় সেই আশায় বসে আছেন তাঁরা। আশার কথা হচ্ছে যে, আমরা বাতাসকে আমাদের অনুকুলেই নিয়ে এসেছি। এর বিপরীতে যাবার সাহস সরকারী লোকজনের হবার কথা নয়।
@ফরিদ আহমেদ,
আমিও আশাবাদী, লোটা শেষ পর্যন্ত তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে।
সরকারের কি এইটুকু বুদ্ধিও নাই যে বুঝেনা সাকিব, তামিম, মুশফিকদের কিছু হলে এদেশের মানুষ একেবারে টেনে হিঁচড়ে লোটাস কামালের সাথে পুরো সরকার ই উৎখাত করে ফেলবে? আর জামাতে ইসলামির তো পাকিস্তানে বেশ ভালই যোগশাজশ আছে, আমার তো মনে হয় এরাই কিছু একটা করে বসতে পারে পাকিস্তানে, কোন অঘটন ঘটাইতে পারলে এক ধাক্কায় সরকার রসাতলে যাবে আর সব যুদ্ধাপরাধির বিচারও বন্ধ হয়ে যাবে।
@রিজওয়ান,
সরকারের ভূমিকাটা এখনও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। খেলা এবং সফরের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয়ই এখন পর্যন্ত মুখ খোলে নি। সরকারী দায়িত্বশীল কারোও কোনো মতামতও চোখে পড়ে নি আমার। আজকের পত্রিকা থেকে লোটাস কামালের কথা-বার্তা এবং কাজকর্মের যে বিবরণ পেলাম, তাতে মনে হচ্ছে না যে সরকার এর সাথে কোনোভাবে যুক্ত আছে। লোটাস কামাল একক সিদ্ধান্তেই সবকিছু করে এসেছে। সফরের অনুমতির জন্য যখন এনওসি চাওয়া হবে, তখনই সরকারের মনোভাবটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। তবে, জনমত যেদিকে যাচ্ছে, পাকিস্তান সফরের সরকারী অনুমতি পেতে হলে লোটাস কামালকে অনেক মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে বলেই ধারণা করছি আমি।
@ফরিদ আহমেদ, কি রকম নিরাপত্তা পাবে বাংলাদেশ, তার নমুনা দেখেনঃ
http://www.espncricinfo.com/pakistan-v-bangladesh-2012/content/current/story/561710.html
@রিজওয়ান,
ভারত পাকিস্তানে যেতে অস্বীকার করার পরে শ্রীলংকাকে প্রসিডেনশিয়াল নিরাপত্তা দেবার নাম করে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানে। সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করার পরে বোঝা গিয়েছিল যে, নিয়মমাফিক সামান্য একটু পুলিশি নিরাপত্তার বাইরে বেশি কিছু তাঁরা পায় নি। শ্রীলংকা দলের কেউ যে মারা যায় নি, সেটা শুধুমাত্র ভাগ্য আর দিলশান বা মোহাম্মদ খলিলদের মরিয়া সাহসিকতার কারণেই ঘটেছিল।
বাংলাদেশকে এমনিতেই নীচু চোখে দেখে পাকিস্তানিরা (ওরা যখন আমাদের ছোট ভাই বলে,সেটা স্নহের কারণে বলে না, তুচ্ছতার কারণে বলে)। কয়েক বছর আগে একবার বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছিল, তখন এক শহর থেকে অন্য শহরে যাবার সময়ে একই প্লেনে পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা গিয়েছিল বিজিনেস ক্লাসে, আর বাংলাদেশ দলকে তারা বসিয়েছিল ইকোনোমি ক্লাসে। এই হীন সংকীর্ণ মানসিকতা যাদের আমাদের প্রতি, তারা কী ধরণের নিরাপত্তা দেবে, সেটা বলাই বাহুল্য।