সোলোনের জন্ম খৃষ্টপূর্ব ৬২০ সালের কাছাকাছি কোন এক সময়ে আর মৃত্যু খৃষ্টপূর্ব ৫৬০ সালে। সেই সময়টাতে গ্রীকদের বুদ্ধিবৃত্তিক চমৎকারিত্বের শুরু হয়ে গেছে। আর সে কারণেই হয়ত তিনি ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পিছপা ছিলেন না এবং আবেগের চেয়ে যুক্তিকে বেশী গুরুত্ব দিতেন। তার নীতি ছিল Meden Agan বা “কোনকিছুরই অতিরিক্ত নয়”। সোলোন সম্ভবত: সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আইন প্রণেতা ছিলেন। [১] তার চিন্তা চেতনা এখনও আধুনিক গণতান্ত্রিক কাঠামোগুলোকে প্রভাবিত করে। আমেরিকান গণতন্ত্র এবং ব্রিটিশ সংসদীয় গণতন্ত্র তাঁরই বৌদ্ধিক চিন্তা-চেতনার ফসল। বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে একটা সফল গণতান্ত্রিক সংবিধান ২৬০০ বছর আগে করা তার সংবিধানের সাথে কতটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি সত্যিকার অর্থেই মানুষের প্রকৃতিকে বুঝতে পেরেছিলেন এবং সেই অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
ইতিমধ্যেই মহাকবি হোমার এবং হেসোয়েড দেবতাদের ভাঁওতাবাজি সম্পূর্ণরূপে উন্মোচন করে ফেলেছেন। এই দুই মহাকবি তৎকালীন দেবতাদেরকে কামুক, খুনি, চোর, মিথ্যাবাদী, বেইমান, পরশ্রীকাতর, হিংসুক এবং প্রতিশোধ পরায়ণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যা কিনা কোনভাবেই কোন ভালমানুষের গুণাবলী হিসাবে স্বীকৃত নয়। গ্রীক চিন্তাবিদরা তখন জিনোফেনের চিন্তাধারার সাথে একমত হতে শুরু করেছেন। জিনোফেন (খৃষ্টপূর্ব ৫৭০ – ৪৮৪ সাল) বলেছিলেন এ মহাবিশ্বের একজন মাত্র সৃষ্টিকর্তা আছে।
এথেন্সের সবচাইতে সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলির একটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তার বাবা পারিবারিক সম্পত্তির পুরোটাই নষ্ট করে ফেলেন। ফলে বিত্ত বৈভব আগের মত না থাকলেও তিনি ছোটখাটো একজন জাহাজ মালিক হতে পেরেছিলেন। তখনকার গ্রীসের সাতজন জ্ঞানী মানুষের একজন হিসাবে সোলোন পরিচিতি লাভ করেন। অন্য ছয়জন ছিলেন প্রিয়েনের বিয়াস, স্পার্টার শিলন, লিন্ডোসের ক্লিওবুলাস, করিন্থের পেরিয়ান্ডার, মিটিলেনের পিটাকাস, এবং মিলিটাসের থেলেস, যিনি বলেছিলেন এ পৃথিবীর সব কিছুরই উদ্ভব পানি থেকে এবং তাকে গ্রীসের প্রাচীনতম দার্শনিকদের একজন হিসাবে গণ্য করা হয়।
সোলোন তার নিজ বাড়ীতে মানুষের সাথে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করতেন। বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আহরণ করা তার বিচার বুদ্ধির উপর মানুষের আস্থাও ছিল অনেক। তিনি একজন সাহসী যোদ্ধাও ছিলেন; ছিলেন উদার এবং সহানুভূতিশীল। তার সমসাময়িক মানুষদের মত তিনি কখনই ঋণ শোধ না করার কারণে কাউকে দাস বানান নি এবং দাস হিসাবে বিক্রিও করেননি। এথেন্সের অন্যান্য সম্ভ্রান্ত মানুষেরা যারা এথেন্সের ভালো ভালো জমিগুলোর মালিক ছিল তারা ঋণ শোধ না করার কারণে যে কাউকে দাস বানাত। এরা (দাসেরা) মূলত: ছিল এথেন্সের ধনী ব্যক্তিদের জমি বর্গা নেয়া চাষি। এই দরিদ্র কৃষকেরা পরপর দুবছর খরা কিংবা কম ফসল উৎপাদনের কারণেই ঋণ শোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলত। দাসে পরিণত হওয়া চাষিদের এবং তাদের পরিবারকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা আলাদা ভাবে এথেন্সেই অথবা দূরবর্তী অন্য শহরে বিক্রি করে দিতে পারত।
সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে (৬০০ – ৭০০ খৃষ্টপূর্ব) এথেন্সে বিদ্রোহ দানা বেধে উঠতে শুরু করে। এই বিদ্রোহে শুধু দরিদ্র কৃষকেরা এবং শ্রমিকরাই শামিল ছিল না বরং অনেক ধনী এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ব্যক্তিরাও ছিলও। তখনকার সময়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া কাউকে Eupatridae বা Well born বলে ডাকা হত। প্রকৃত পক্ষে এই সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা অন্য সবাইকে এমনকি ধনী অথচ Eupatridae না এমন সবাইকে রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বিরত রাখত। তারা সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করত। এবং আইন প্রয়োগকারী বিচারকরাও ছিলও তাদের পছন্দের অন্য কোন Eupatridae.
৬২১ খৃষ্টাব্দের গণ অভ্যুত্থান যখন আসন্ন তখন সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা তাদেরই একজন ড্রাকোন (Dracon) কে নিয়োজিত করে একটি লিখিত আইন ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য। ড্রাকোন তার আইন ব্যবস্থায় ছোটখাটো অপরাধের জন্যও শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা রাখে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো কেন তার শাস্তি এত কঠোর? ড্রাকোন উত্তর দিয়েছিলো , “যে কোন ছোট অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড হল উপযুক্ত শাস্তি।” কিন্তু আরও বড় অপরাধের শাস্তি কি হতে পারে সেই প্রশ্নের উত্তরে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন শাস্তির কথা তার জানা ছিল না। আর এখান থেকেই ইংরেজী ভাষার Draconian শব্দটার উৎপত্তি । Draconian Law শব্দটা ব্যবহার করা হয় ছোট অপরাধের জন্য যখন অতিরিক্ত শাস্তির প্রয়োগ করা হয়। ড্রাকোনের আইন ব্যবস্থা খুব বেশীদিন পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পারেনি। ৫৯৪ খৃষ্টপূর্বে অ-সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। সম্ভ্রান্তদের ঘোড়া এবং দেহ-রক্ষাকারী বর্ম ছিল কিন্তু অসম্ভ্রান্তদের ছিলও তীর ধনুক এবং স্লিংশট। আর সংখ্যায়ও ছিল তারা অনেক বেশী। এরকম পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষ একটা দুর্লভ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়, যা কিনা ইতিহাসে বিরল। সোলোনকে তাদের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মনোনয়ন দেয়। সোলোনকে তাদের মতানৈক্যর অচলাবস্থা দূর করার জন্য দেয়া হয় পূর্ণ ক্ষমতা। এবং তারা তাকে Archor বা সরকার প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেয়।
সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা সোলোনকে তাদের আত্মীয় এবং নিজেদের শ্রেণীর একজন হিসাবে ভাবত। তারা ভেবেছিলো সোলোন তাদের পক্ষেই থাকবে। অসম্ভ্রান্ত উঠতি ধনীরাও সোলোনকে তাদের একজন মনে করত কারণ সে ছিল একজন ব্যবসায়ী। আর দরিদ্ররা তাকে বিশ্বাস করত কারণ সে কখনই তাদের প্রতি কোন বিরূপ আচরণ করেনি। সম্ভ্রান্তরা আশা করেছিলো সোলোন তাদের সুযোগ সুবিধা, ক্ষমতা এবং সম্পদ সবকিছুই বজায় রাখবে। দরিদ্ররা চেয়েছিল সে ধনীদের জমিগুলো বাজেয়াপ্ত করে তা দরিদ্র কৃষকদের মাঝে বণ্টন করে দেবে। তবে কোন পক্ষই যা চেয়েছিল তা পায়নি। সোলোনের যে সমস্ত কবিতা টিকে গেছে তাতে সোলোন স্মৃতিচারণ করেছেন এই বলে যে তার সংবিধান প্রণয়নের আগে তাকে সবাই ভালবাসত কিন্তু পরবর্তীতকালে সবাই তাকে অপছন্দ করতে শুরু করে কারণ কোন পক্ষকেই তারা যা চেয়েছিল তিনি তাদেরকে তা দেননি। তিনি এমন একটি মধ্যবর্তী সমাধান খুঁজে বের করেছিলেন যা একপক্ষকে অন্যপক্ষ থেকে রক্ষা করবে।
সোলোন প্রথমেই ড্রাকোনের সেইসব নির্মম আইন কানুন বাতিল করে দেন যা কিনা মূলত: সম্ভ্রান্ত বংশীয় বিচারকরা অ-সম্ভ্রান্তদের উপর প্রয়োগ করত। সকল প্রকার ধারদেনা বাতিল করে দেন। যে সমস্ত মানুষেরা ঋণ শোধ করতে না পারা জন্য দাসে পরিণত হয়েছিলো তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও মুক্ত করে দেন। দূরবর্তী দেশে কিংবা শহরে যাদের বিক্রি করা হয়েছিলো তাদেরকেও তিনি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন এবং পুনর্বাসিত করেন। তিনি কোন মানুষকে জিম্মা রেখে ধার দেয়ার ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেন এবং সেটাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এর পরে গ্রীসে ঋণ শোধ না করার অপরাধে আর কাউকে কখনও দাসে পরিণত হতে হয়নি।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় কম্যুনিস্টরা যে ভুল করেছিলো সোলোন সে ধরণের কোন ভুল করেননি। তিনি ধনীদের জমি বেদখল করেননি। তিনি তাদের ধন-সম্পদ রাখতে দেন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাদের প্রতিভাকে ব্যবহার করে অবদান রাখার সুযোগ রাখেন। কিন্তু তিনি যে কাজটি করেন তা হচ্ছে তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেন ফলে তারা নিজেদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হবে। যা কিনা আধুনিক গণতন্ত্রের একটি মূলমন্ত্র।
সরকারী উচ্চ পদগুলো শুধুমাত্র সম্ভ্রান্তদের জন্য আর রইল না। বস্তুত: পক্ষে সোলোনের রিফর্ম অনুযায়ী জনগণকে আর সম্ভ্রান্ত আর অ-সম্ভ্রান্ত এই ভাবে ভাগ করা বন্ধ হয়ে গেল। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া স্ট্যাটাসের বদলে আয়ের উপর ভর করে জনগণকে চারটি ভাগে ভাগ করলেন।
১) Pentakosiamedimnoi: যাদের আয় ছিলও বছরে ৭৫০ বুশেল শস্য বা তার বেশী। ১ Medimnos ছিলও দেড় বুশেলের সমান পরিমাপের একক আর Pentakosia হল ৫০০। Pentakosiamedimnois ছিল ৭৫০ বুশেলের সমান।
২) Hippies: যাদের আয় ছিলও বছরে ৪৫০ থেকে ৭৪৯ বুশেলের মধ্যে। Hippies শব্দের অর্থ ছিলও ঘোড়সওয়ার।
৩) Zeugitai: যাদের আয় ছিলও বছরে ৩০০ থেকে ৪৪৯ বুশেলের সমান। Zeugitai শব্দের অর্থ হল যাদের হাল টানার জন্য একজোড়া পশু আছে।
৪) Thetes: প্রথম তিনটি শ্রেণীর চয়ে যাদের আয় কম ছিলও। এদের সাধারণত দিনমজুর বলা হত যারা শ্রমের বিনিময়ে মূল্য পেত।
নতুন তৈরী করা এই ভিন্ন শ্রেণীর মানুষদের তাদের আয়ের উপর ভর করে কর দিতে হত। চতুর্থ দলের মানুষদের বা Thetes দের কোন করই দিতে হত না। তৃতীয় দলের মানুষ বা Zeugitai দেরকে বেসিক রেটে কর দিতে হত। দ্বিতীয় দলের মানুষ বা Hippies দেরকে Zeugitai দের বেসিক রেটের দুইগুণ কর দিতে হত। আর সবচাইতে ধনী শ্রেণীর মানুষ বা Pentakossiamedimnoi দের বেসিক রেটের চেয়ে ২.৪ গুণ বেশী কর দিতে হত। সোলোন সরল কর ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন না এবং পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আয়ের সাথে ক্রমান্বয়ে কর বৃদ্ধির ব্যবস্থা চালু করেন। সোলোন Pentakossiamedimnoi দের জন্য সর্বোচ্চ অফিস বরাদ্দ করেন। কিন্তু লক্ষণীয় যে এই দলে শুধু সম্ভ্রান্ত নয় বরং জন্মগত ভাবে অসম্ভ্রান্ত কিন্তু ধনী ব্যবসায়ী এবং শিল্পী মানুষেরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
চার নাম্বার শ্রেণী বা Thetes রা কোন দপ্তর পাবে না তবে তারা নতুন দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সদস্য ছিলও – The Ekklesia এবং Heliaea. Ekklesia ছিল সকল নাগরিকদের সমাবেশ। প্রায় ২৫০০০ ভোটাধিকার সক্ষম মানুষ এথেন্সে বাস করত। গুরুত্বপূর্ণ সরকারী সিদ্ধান্তগুলির জন্য সংবিধান অনুযায়ী কমপক্ষে ৬০০০ ভোটাধিকার সক্ষম নাগরিকের কোরাম উপস্থিতি আবশ্যিক ছিলও। The Heleaea ছিলও ৬০০০ লোক নিয়ে গঠিত জুরী যেখানে জনগণ যে কোন দপ্তর ধারীর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপীল করতে পারত। এখানে সর্বোচ্চ আদালত বা Areopagas এর যে কোন রায়ের বিরুদ্ধেও আপীল করা যেত। সর্বোচ্চ আদালত Areapagos এর সদস্যরা শুধু এক নাম্বার শ্রেণীর সদস্যরা হতে পারত। Haliaea’র সদস্যরা পার্মানেন্ট ছিলও না। ভোট এবং বিচারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান Areopagas এ উপস্থিত নাগরিকদের মধ্য থেকে সিলেক্ট করা হত। পুর ৬০০০ সদস্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একসাথে হত। সাধারণ বিচার কাজে সাধারনতঃ ৫০০ জুরীর প্রয়োজন হত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিলও Boule, এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য সংখ্যা ছিলও ৪০০ জন যাদেরকে নির্বাচিত করা হত। Ekklesia’র হাত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা ছিল।
এভাবে চলতে থাকায় কিছুদিন পর দেখা গেল যে মূল ক্ষমতা আসলে Ekklesia’র হাতে যেখানে ধনী গরীব নির্বিশেষে সবার একটি ভোট। সংখ্যার আধিক্যের কারণে দরিদ্ররা খুব সহজেই ধনীদের ভোটে পরাজিত করতে পারত। Heliaea অবধারিত ভাবেই দরিদ্রদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হত জনসম্মুখে। কি ঘটছে তা প্রতিটি নাগরিকই দেখতে এবং শুনতে পেত। Th Boule তাদের সিদ্ধান্ত গোপনে নিতে পারত তবে সেই সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ Ekklesia’ইয় উপস্থিত সবার সামনে প্রকাশ করতে হত। সোলোনের গণতন্ত্রের এটি একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য ছিল। সোলোনের আইন কানুন ড্রাকনের চেয়ে অনেক বেশী নমনীয় ছিল। সোলোন এই সমস্ত নিয়ম কানুন কাঠের কলামে লিখে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে সবাই সেগুলো পড়তে পারে। তিনি চেয়েছিলেন এথেন্সের নাগরিকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী নাগরিক দায়িত্ববোধ গড়ে উঠুক। যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাপারে মত বিভেদ দেখা দিত তখন কেউ যদি যে কোন একপক্ষে সিদ্ধান্ত না দিত তবে তার ভোটাধিকার হরণ (disfrancise) করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি কেউ অন্য কারও প্রতি অন্যায় হয়েছে এমনটি প্রত্যক্ষ করত তবে সে আইনত বাধ্য ছিলও যে অন্যায় করছে তার প্রতি অভিযোগ পেশ করার জন্য। তিনি বলেছিলেন, “সেই শহর হল বসবাসের জন্য শ্রেষ্ঠ যেখানে যাদের প্রতি অন্যায় করা হয়নি তারাও যাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে তাদের মত করে অন্যায় কারীকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার জন্য নিজেদের নিয়োজিত রাখে।”
সোলোনের আইন প্রণয়নের আগে কেউ যদি উত্তরাধিকার না রেখে মৃত্যুবরণ করত তবে তার গোত্রের কাছে তার সম্পদ চলে যেত। সোলোন প্রত্যেক ব্যক্তিকে এই অধিকার প্রদান করেন যে তার গোত্রের বাইরেও যে কাউকে সে তার সম্পত্তি উইল করে দিয়ে যেতে পারবে। তবে শর্ত হল তাকে কোনরকম চাপের বশ্যতা স্বীকার না করে এবং সুস্থ মনে তা করতে হবে। সোলোন তার আইন ব্যবস্থা পরিবার প্রথা, সন্তান সন্ততির জন্ম এবং তাদের শিক্ষা দানকে উৎসাহিত করা। তিনি নিয়ম করেছিলেন কোন পিতা যদি তার সন্তানকে যে কোন একটি কারিগরি শিক্ষায় বা ব্যবসায় শিক্ষা প্রদান না করে তবে সেই সন্তান বৃদ্ধ বয়সে বাবার দেখাশোনা করতে বাধ্য নয়। যুদ্ধে মৃত ব্যক্তিদের সন্তানদের ভরণ পোষণের শিক্ষার দায়িত্ব সরকার নেবে। সোলোন যৌতুক ব্যবস্থার নিষিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, “বিয়ে হতে হবে দুজন মানুষের ভালবাসার পরিণতি এবং তাদের ভালবাসার ফসল হিসাবে জন্ম নেবে তাদের সন্তান। টাকার জন্য বিয়ে হওয়া উচিৎ না।” তিনি আরও বলেন, “বিয়ের পর মেয়েরা শুধু তিন সেট জামা কাপড় এবং তার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়া স্বামীর বাসায় আর কিছু নেবার প্রয়োজন নেই।” সোলোন বৃদ্ধ পুরুষ আর অল্প বয়সী মেয়েদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করেন। কারণ তাদের মধ্যে নিবিড় ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি নাও হতে পারে। তিনি বয়স্কা মহিলা এবং তরুণ পুরুষদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করেন কারণ স্ত্রীর টাকার জন্য বিয়ে হতে পারে।
সোলোন যে শুধু ঋণ মাফ করে দিয়েছিলেন তাই না তিনি কৃষিকাজ ছাড়াও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন। যদি কেউ ব্যবসা শুরু করার উদ্দেশ্যে পুরো পরিবার সহ এথেন্সে অভিবাসন নিত তবে তাদের তিনি নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যবস্থা রেখেছিলেন। শুধুমাত্র জলপাই তেলের রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিলেন। অন্যান্য অঞ্চলে জলপাই তেলের প্রচুর চাহিদা ছিল। যেহেতু জলপাই গাছ থেকে রিটার্ন আসতে অনেক বেশী সময় লাগত তাই তিনি গণিকালয় রাষ্ট্রীয় কর ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসেন। এতে করে পর্যটন জনিত আয় বেড়ে গিয়েছিলো। সেই আয় থেকে সোলোন জলপাই ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কম খরচে পণ্য আমদানি সুবিধা দেয়ার জন্য তিনি রুপার মুদ্রার সাথে ৩০ ভাগ শীশা যোগ করে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেন। যারা স্বেচ্ছায় কোন কাজ করবে না বা অনৈতিক জীবন যাপন করবে তারা Ekklesia’র প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা হারাবে এবং পরবর্তীকালে তাদের নাগরিকত্ব হারাবে।
কিছু লোক প্রথম থেকেই সোলোনের প্রণীত আইনের ফাঁক ফোকর বের করে তা থেকে ফায়দা লুটতে সচেষ্ট ছিলও। তিনি যখন তার সংবিধান তৈরি করেছিলেন তখন তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কোনন, ক্লেইনিয়াস এবং হিপোনিকাসকে বলেছিলেন যে ধনীদের জমি অধিগ্রহণ করবেন না এবং সব ধরণের ঋণ মাফ করে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। তার এই তিন বিশ্বস্ত (!) বন্ধু সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণ টাকা ধার নেয়া শুরু করে। যখন ঋণ মাফ করে দেয়ার আইন জারী হয় তখন তারা তাদের ঋণ শোধ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় এথেন্সের সবচাইতে ধনী তিনটি পরিবারের ইতিহাস। চারিদিকে ভয়াবহ গুজব ছড়াতে থাকে যে সোলোন তার বন্ধুদের যোগসাজশে এমনটি করেছেন। কিন্তু খুব শীঘ্রই জানা যায় যে সোলোন নিজেই প্রচুর টাকা পয়সা ধার দিয়েছিলেন যা এই আইন প্রণয়নের ফলে আর সংগ্রহ করতে পারছেন না।
সোলোনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো তিনি কি এথেন্স বাসীদের জন্য সবচাইতে ভাল আইন ব্যবস্থা দিতে পেরেছেন কিনা? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “না – শুধুমাত্র সর্বোত্তম আইন যা তারা গ্রহণ করতে রাজী আছে।” এর সাথে তিনি আরও যোগ করেন এই বলে যে, “এমন কোন আইন সৃষ্টি করা উচিৎ না যা প্রয়োগ করা সম্ভব না।” যা এখনও আমাদের বর্তমান সময়ের গণতন্ত্রের মূল ভাব; আইন প্রণেতারা জানে যে একটা সময়ে এসে জনগণ তাদের বিপরীতে ভোট প্রদান করবে।
সোলোন পরিষ্কার ভাবেই গণতন্ত্রের আরেকটি মূল জিনিষ বুঝতে পেরেছিলেন আর সেটি হল যে কোন একটি বিষয় দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সঠিক হতে পারে। একদলের জন্য যেটা সঠিক অন্য দলের জন্যে সেটাই হয়ত অবিচার। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সমাধান তাই কম্প্রোমাইজ করার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। সম্ভ্রান্তরা চেয়েছিল গরীবদের যাতে সবসময় দমিয়ে রাখা যায় সেরকম আইন। গরীবরা চেয়েছিল ধনী নির্যাতনকারীদের বিচ্যুত করতে। কিন্তু তিনি কোন পক্ষকেই তারা যা চেয়েছিল তা দেননি। তিনি সংখ্যায় অল্প ধনীদের তাদের সম্পদ রাখতে দিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আর রাজনৈতিক ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন গরীবদের হাতে। ধনীদেরকে কর আরোপ এবং গরীবদের সুবিধার্থে বিভিন্ন সরকারী সেবার খরচ আদায় করার ক্ষমতা ছিলও গরিবদের হাতে। বর্তমান কালের ভাষায় বলা যে ধনীদের উপর কর আরোপ করে দরিদ্রদের বিনামূল্যে শিক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সোলোনের চিন্তা ভাবনা ছিলও আধুনিক যুগের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থার পূর্বসূরি।
সোলোন ছিলেন প্রথম আইন প্রণেতা যিনি বংশীয় এবং গোত্রীয় রাজনৈতিক ক্ষমতার মূলে আঘাত করেন। এটা করতে যেয়ে তিনি অসম্ভ্রান্তদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন, উত্তরাধিকার আইন বদল করে ব্যবসায়ী এবং দক্ষ কারিগরদের উন্নতির সুযোগ এবং ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তিনি প্রথমবারের মত একটি ধারণার জন্ম দিলেন যে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের গুরুত্ব রাষ্ট্রের কাছে কোন বিশেষ পরিবার বা গোত্রের চেয়ে বেশী। প্রতিটা নাগরিকেরই ক্ষমতা এবং অধিকার সমান আর তাদেরও আছে অন্যায়ের প্রতিকার করার দায়িত্ব। সকল পুরুষ নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক কাঠামোতে শাসন কার্য থেকে চরমপন্থিদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো।
সোলোনের আগেও বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের প্রাথমিক ধারণা দেখতে পাওয়া যায় যেমন, গোত্রীয় কাউন্সিল। কিন্তু সোলোন ছিলেন ব্যতিক্রম কারণ তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ক্ষমতা এবং স্বাধীনতা বজায় রাখার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। সোলোনের প্রণীত আইনের মাহাত্ব্য বোঝা যায় যখন আমরা তার সুদূর প্রসারী প্রভাব লক্ষ্য করি। তার তৈরি প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ম-নীতি পরিষ্কার ভাবেই আজকের দিনের আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় একজন নাগরিকের একটি ভোট বা আইন প্রয়োগের জন্য সরকার কোন ব্যক্তির সুবিধার জন্য নয়।
তার আইন ব্যবস্হার এই সূদুর প্রসারী প্রভাবের কারণ হয়ত এই যে তিনি নিজেও মনে প্রাণে একজন গণতান্ত্রিক মানুষ ছিলেন। তাকে তার খুব কাছের বন্ধুরা সারা জীবনের জন্য একনায়ক হবার পরামর্শ দিয়েছিলো কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সোলোন তাকে যে কাজের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল সেটি সম্পাদন করে আবার তার পারিবারিক জীবনে ফেরত গিয়েছিলেন। আর এরই সাথে সাথে ক্ষমতায় থাকা কালীন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেন। তার তৈরি গণতন্ত্রের মূল শক্তিটা ছিল ভোটের মাধ্যমে কাউকে ক্ষমতায় আনা নয় বরং ভোট প্রয়োগ করে সেই ক্ষমতা নিয়ে নেয়ার অধিকার এবং সুযোগ।
যদিও সোলোনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ম-নীতি আজও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর চিন্তা চেতনাকে প্রভাবিত এবং পরিচালিত করে তবে তার সেই সব চিন্তা চেতনাকে তার বিরোধীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দমিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছিল। আর এটা করতে যেয়ে তার বিরোধীরা যার দর্শন এবং চিন্তা ভাবনার সাহায্য নিয়েছিলো তিনিও ছিলেন এথেন্সের আরেক গর্ব… যার বেশির ভাগ অনুসারীর মতেই তিনি হলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক; যাকে আমরা সবাই চিনি প্লেটো নামে।
[১] লেখক Phillippe Gigantes এর মতে
সূত্রঃ The Secret History of the Rulers of the World By Phillippe Gigantes; Chapter 2: Solon
হোরাস, চমৎকার এই লেখাটি উফার দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। খুব তাড়ার মধ্যে আছি তাই খুব সংক্ষেপে দুই একটা পয়েন্ট উল্লেখ করছি।
আমি যতদূর জানি সোলনের কৃত-কর্মকান্ডের অনেক কিছুই কয়েক শতাব্দী পরে বিভিন্নভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, এবং তার ফলে তার করা রিফর্মগুলো নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বেশ কিছু বিতর্ক আছে যেটা এই লেখায় আসেনি। আর তাছাড়া তার রিফর্মগুলো কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য টিকে ছিল, তিনি জীবিত থাকা অবস্থায়ই এগুলোর সমাপ্তি ঘটে। এই ব্যাপারগুলো লেখাটার শেষের দিকে আসলে বোধ হয় ভালো হত।
@বন্যা আহমেদ, ওনার রিফর্মগুলি আসলে কতদিন টিকেছিলো সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে। এত সুন্দর কিছু নিয়ম এতঅল্পদিন টিকে ছিল ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যায়।
আপনার লেখাটা দারুণ হয়েছে। অভিনন্দন রইলো।
এই ধরণের লেখা বেশি বেশি দরকার মুক্তমনার জন্য।
গ্রীক সভ্যতার দার্শনিকদের নিয়ে একটা বই প্রকাশের পরিকল্পনা করলে কেমন হয়? আমি ডেমোক্রিটাসকে (পর্ব ১, পর্ব ২) নিয়ে লিখেছিলাম একসময়। আরো দুই একজনকে নিয়ে হয়তো লিখতেও পারবো। এরকম আরো কয়েকজন যদি এগিয়ে আসেন আরো কিছু দার্শনিকের উপর লেখা নিয়ে, অনায়াসেই একটা বই করা যায় পরের বই মেলায়।
@ফরিদ আহমেদ, খুবই ভালো আইডিয়া।
@ফরিদ আহমেদ, আপনার লেখা দুটি আগে পড়িনি। সময় করে পড়ে নেব। বইয়ের আইডিয়াটা আসলেই চমৎকার। উদ্যোগ নিয়ে ফেলুন।
ভাল লিখেছেন। আর গ্রিকদের সর্ম্পকে যতই জানছি ততই অবাক হতে হয়। এমন একটি লেখা লিখবার জন্য ধন্যবাদ রইল আপনার প্রতি। :guru:
@সুব্রত শুভ, আপনাকেও আওনেক ধন্যবাদ।
মুক্তমনার দর্শন বা বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাগুলো পড়তে অসম্ভব ভাল লাগে। এই লেখাটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
সাতজন মানুষের মধ্যে থেলেস সম্পর্কে আগেই পড়েছিলাম। আজ সোলোন সম্পর্কেও জানা হল। অন্যরাও কি এমন সৃষ্টিশীল ছিলেন?
বাংলাদেশের সাথে মিল আছে বটে, তবে এথেন্সের ঘটনাটা ২৭০০ বছর আগের আর বাংলাদেশেরটি এখনকার- এই যা পার্থক্য।
৬২১ খৃস্টপূর্ব হবে।
🙂
অবমূল্যায়িত মুদ্রা কি সমপরিমাণ পন্য আমদানী করতে পারত? কম খরচের সুবিধাটা কিভাবে নিশ্চিত হল?
গনতন্ত্রের একটি নতুন ধারনা পেলাম এখান থেকে।
অসাধারণ এই লেখাটির জন্য লেখককে আমার কৃতজ্ঞতা! The Secret History of the Rulers of the World – এর ইবুক পাওয়া যায়?
@কাজি মামুন, @কাজি মামুন, এখন যেমন মুদ্রার মান গ্লোবালী কন্ট্রোল্ড তখন সম্ভবতঃ এরকমটা ছিল না।
এথেন্সের মুদ্রার মান কমলেও স্পার্টার বা অন্যান্য শহরেরে সাথে তা হয়ত এডজাস্ট করা হয়নি। ফলে এথেন্সবাসীরা মনে হয় আগের তুলনায় কম খরচে পণ্য আমদানী করতে পারত।
ইন্টারনেটে বইটার কপি খুজেছিলাম, পেলাম না। পেলে জানাব। ধন্যবাদ।
তথ্যপূর্ন একটি চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ, হোরাস! (Y)
@অভিজিৎ, শরমিন্দা হইলাম। 🙂
হোরাসকে ধন্যবাদ লেখাটির জন্যে, এবং সোলন কে সবার কাছে তুলে ধরার জন্য। গণতন্ত্রের ইতিহাস নিয়ে পড়তে যেয়ে সোলন সম্পর্কে জানতে পারি।
তবে একটি অনুরোধ রইল “গণতন্ত্র” বানানটি ঠিক করে দেওয়ার জন্যে। বানান আমার নিজেরও অনেক ভুল হয়। কিন্তু গণতন্ত্রের মতো একটি বানান ভুল থাকলে লেখাটার একটি দোষ থেকে যায়, বিশেষ করে লেখাটি যখন গণতন্ত্রের জনককে নিয়ে লেখা।
@স্বাধীন, ধন্যবাদ। টাইটেলের ভুলটা ঠিক করে দিলাম। পোস্টে মনে হয় সব ঠিক আছে। চোখে পরলে অবশ্যই ঠিক করে দেব।
এটা subversive কিছু নয় বোধহয়। “pagan” ধর্মগুলিতে সবসময়ই দেবদেবীরা মানব-সুলভ দোষ-গুণ সম্বলিত।
@রৌরব,
আল্লাহ, জেহবা কি মানব-সুলভ দোষ-গুণ বিবর্জিত?
@আলমগীর হুসেন, একমত। আমার যদি ভুল না হয় তাহলে যতদূর জানি আল্লাহর ৯৯টা নামের সবগুলাই মানবীয়।
সোলোন সম্বন্ধে এই প্রথম জানলাম–খুব ভালো লাগলো।
মনে হচ্চে আল্লাহপাক সোলোনকে গ্রীসে নবী করে পাঠিয়ে ছিলেন। কিছুদিন পরেই হয়ত জানব সোলোনও ইসলামের একজন নবী।
@আবুল কাশেম, কিছুই অস্মভব না। থেলেস বলেছিলেন সব কিছুর সৃষ্টি পানি থেকে। উনিও যে কোনদিন নবী হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে যেতে পারেন। নাইলে কোরানে এই কথা আসল কিভাবে?
দেখেন তো কাহিনী, এমন একজন মানুষের নাম জানতামই না। এখন তো আরও অনেক জানতে ইচ্ছা করছে। অনেক ধন্যবাদ পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। এমন আরও লিখতে থাকুন।
@শিক্ষানবিস, সেটাই। আমরা সত্যিকারের গুণী এমন কত মানুষের নামই জানিনা অথচ প্রচারগুণে মিডিওকার কতজনের কথাই না হজম করতে হয়।
লেখাটি পড়ে চমত্কার লাগলো। লেখককে জানাই ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। (F)
যতদুর জানি রোমানরাও গ্রীক চিন্তাধারা এবং দর্শন দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। রোমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রীক ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেই গড়ে উঠেছিল। রোমানরা গ্রীকদের কাছে বহুলাংশে ঋণী। যেহেতু রোমান গণতন্ত্র এবং তারপর রোমান সাম্রাজ্যের ব্যাপ্তি এবং স্থায়িত্ব গ্রীকদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল, তার প্রভাব হয়েছিল আরো সুদূরপ্রসারী। কেটো,সিসেরো, সেনেকা প্রভৃতি রোমান দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদরা গ্রীকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
@অনামী,শুধু রোমানরা নয় আমার মতে পুরো পৃথিবীই গ্রীকদের কাছে ঋণী। ধন্যবাদ।
মহামানবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আরো লিখুন। (Y)
@বিপ্লব রহমান, আসলেই,দাবী করলে মনে হয় নিজেকে মহামানব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন খুব সহজেই। অথবা ইশ্বর যদি গ্রীসে নবী, রাসুল, কিংবা অবতার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতেন তবে তিনি নিশ্চয়ই শীর্ষস্হানীয় একজন হতেন।
@হোরাস,
এ ক ম ত। (F)
@হোরাস,
বলেন কী? গ্রিক দেশে, গ্রিক জাতির কাছে আল্লাহ কোন নবি রাসুল পাঠান নাই? তাহলে আল্লাহর বাণী কি মিথ্যে?
আল্লাহ দুনিয়ার প্রত্যেক দেশে প্রত্যেক জাতির কাছে, সেই জাতির মাতৃ ভাষায় নবি পাঠিয়েছেন। দেখুন আল্লাহ কোরানে বলছেন-
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
We certainly sent into every nation a messenger, [saying], “Worship Allah and avoid Taghut.” আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূত থেকে নিরাপদ থাক। [সূরা আন-নহল ১৬, আয়াত-৩৬]
@আকাশ মালিক,
কিছু একটা করতে হয়। সোলোন, থেলেস, ডেমোক্রিটাস এদেরকে নবী বানিয়ে দিলে কেমন হয়?
চমৎকার লেখা। সোলোনের আইনের মহিমা সম্পর্কে সামান্য ধারনা ছিল। এবার বিস্তারিত জানতে পারলাম।
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা, তার অবধান, আমাকে সদা বিস্মিত করেছে। যতই জানি বিস্ময় ততই বাড়ে।
@আলমগীর হুসেন,মানব সভ্যতার ইতিহাসে গ্রীকদের অবদান মনে হয় সবচেয়ে বেশী, বলে শেষ করা যাবে না। মধ্যযুগের আরব দার্শনিক, বিজ্ঞানী যাদের কারণে আধুনিক বিজ্ঞান এই অবস্হায় পৌছেছে তাদের সবারও মূল প্রেরণা ছিলো গ্রিকরা। গ্রীকরা আমাকেও সব সময় অভিভূত করে। ধন্যবাদ।
ইতিহাস বা গনতন্ত্র নামে কোন বিভাগ পেলাম না ট্যাগ করার জন্য। এ ব্যাপারে মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
@হোরাস,
ট্যাগ করে দেয়া হয়েছে।
ধন্যবাদ।