প্রিয় ব্লগ মুক্তমনার পাতায় সারাদিন তাকিয়ে থেকেছি। এই ব্লগটা সারাক্ষন বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ তরুণীর বিচক্ষন বিচরণে উদ্ভাসিত প্রাণচঞ্চল হয়ে থাকে। দু চারটা ঝুনো যারা এখানে ঘুরে বেড়ায়, মনে তারাও খুব সবুজ। বেশ একটা ঝকঝকে ভাব এখানে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস এখানে নিত্যদিন ঝলকায়। আলো আর ভালোর পাল্লা এখানে বেশ ভারী। এই কারনেই মনে হয় সমালোচনার ব্যাপারে অন্ধের মত হয়ে গেছি অনেকটা। এই অন্ধ আমিও আজ চোখ মেলে তাকিয়ে থেকেছি সারাদিন ব্লগ পাতায়। ২৫ থেকে ২৬ মার্চ হয়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে থেকেছি অভিমানে। অন্ধ আমি চোখ মেলে অপেক্ষা করেছি কখন কেউ লিখবে; কখন কেউ বলবে ওই ভয়ঙ্কর রাতটার কথা। পরদিনের কথা। কষ্টের কথা, সে রাতে হাজারো ঘুমন্ত মানুষ খুন হবার কথা। ওই রক্তপ্রবাহের কথা, রক্তস্রোতে জন্ম নেওয়া একটি দেশের অবর্ণনীয় প্রথম চিৎকারের কথা। ইতিহাস নয়, তাকিয়ে থেকেছি তারুন্যের আলোতে স্বাধীনতার চেতনার সত্যিকারের ঝলকানি দেখতে। দেখলাম বটে, সারাদিন অপেক্ষার পর নিলীমের একটা কবিতা। তারপর ইরতিশাদ আহমদের পুরোনো লেখা রিপোস্ট, স্টিকি করে দিয়ে অ্যাডমিনের দায়িত্ব পালন। যাক তাও তো কিছু হোল। হোল তো তবু কিছু আচার পালন। তা’ই বা কম কিসে? নাই মামার চেয়ে কানা মামা; এই বা কম কিসে? না কি? স্বাধীনতার চেতনাও কি একান্ত দায়সারা আচারিক হয়ে পড়লো?

মার্চের কালরাত আর ন মাসের কথা সবাই জানে কমবেশী। নতুন যারা, তারা জানে শুনে শুনে। পড়ে সত্যি জানবার সুযোগ তাদের হয়নি তেমন; বিকৃতি সত্যকে ছোবড়া বানিয়ে দিয়েছে। আর প্রত্যক্ষদর্শী যারা, সত্যি যারা মনে রাখতে পারার মত; তাদের কেউ আজ ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অভিমানী, অতি আবেগপ্রবণ আবার কেউ বা ছিঁচকাঁদুনে, অলস, দায়িত্বজ্ঞানহীন, ব্যর্থ অথবা ষড়যন্ত্রী মিথ্যুক।

একটি শিশুকে বড় করতে মা বাবা বড়দের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। যারা ত্যাগ করেন, শিশুকে সময় দেন, লেখান, পড়ান, হাঁটান, খেলান, প্রশিক্ষন দেন, তাদের শিশু শেখে। অন্তত জানে। বড় হয়ে ভালো মন্দ ঠিক বেঠিক কিছু একটা তুলে নেয় নিজের জন্য। আর যেসব বাপ মা বড়রা ওই সময় দেন না, কিছু ত্যাগ স্বীকার করেন না, বলাই বাহুল্য, তাদের শিশুরা তেমন কিছু শেখে না। শিখলেও তা হয় ছন্নছাড়া সুলভ কিছু।

অভিভাবক, মা বাবা, বড় যারা, একটি শিশুকে শেখানো তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব। শিশুকে অন্য সব শিক্ষা দেবার সাথে সাথে দেশচেতনা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি শিক্ষাগুলো তারা কতটা গুরুত্ব দিয়ে শেখান সেটা ভাববার বিষয়। ভালোবাসা যেমন অনুভবের ব্যাপার, স্বাধীনতার চেতনাও ঠিক তেমনি। ওটার অনুভব গুরুত্ব কতটুকু হবে তা কে নির্ধারণ করবে। শুধু অভিভাবক? আর কারো দায়িত্ব আছে কি? আমরা চোখ মেলে বুঝেসুঝে কি সবাই সে দায়িত্ব পালন করছি?

লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ খুন হয়ে ধর্ষিত হয়ে অপমানিত আর লাঞ্ছিত হয়ে যে দেশটার জন্ম দিলো সেই দেশের অর্জিত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব চেতনা কি ওই সব মিথ্যুক ষড়যন্ত্রী কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের লাত খেয়েই বাচবে? মোল্লাটুপিতে সত্যি ইতিহাস ঢাকা পড়ে যাবে? প্রশাসনিক অদক্ষতায়, অসাবধানতায়, দুর্বল কটা প্রসিকিউটরের হাত গলে আদালতকে কাঁচকলা দেখিয়ে, বীরাঙ্গনাদেরকে আবার লাঞ্ছিত করে, মুক্তিযোদ্ধাদের আবার পদদলিত করে যুদ্ধাপরাধীরা ছাড়া পাবে? আজকের নতুনদের দেশচেতনার ভালোবাসা অনুভবে উষ্ণতার অভাবের দায় বড়রা কি নেবে না? তারা কি শেখাবার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে বা করছে? সময় দিয়েছে কিংবা আজো দিচ্ছে? নাকি শুধুই করছে জাবর কাটা স্মৃতিচারণ? প্রত্যক্ষদর্শী যারা, প্রত্যক্ষদর্শী যারা, সত্যি যারা মুক্তিযুদ্ধ মনে রেখেছে, তাদের কি আজ ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অভিমানী, অতি আবেগপ্রবণ, কিংবা ছিঁচকাঁদুনে, আলসেমিতে দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে ব্যর্থ হয়ে যাওয়া ঠিক হবে? যারা নতুন, দেশ চেতনায় তারা কি হবে শুধুই আচারিক? নিদেনপক্ষে, অন্তত নিজেকে তো প্রশ্ন করতেই পারি, আমি কি আমার দায়িত্ব পালন করছি?