পৃথিবীকে বদলে দেবার প্রেরণায়
আজও যারা অদম্য উৎসাহে পথ হাঁটে
জানে না কতদূর যেতে হবে
এ যাত্রায়,
পাশ দিও তাকে।
পত্র-পত্রিকা এবং ইন্টারনেট মারফতে সবাই হয়তো ইতোমধ্যেই জেনে গেছেন, আদালত ৫টি ফেসবুক পেইজ ও একটি ওয়েবসাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর চুম্বক অংশে একবার নজর বুলিয়ে নেয়া যাকঃ
১। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ফেসবুকের পাঁচটি পেইজ ও একটি ওয়েবসাইট বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অর্ন্তবর্তীকালীন এ আদেশ দেন।
২। এসব ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে হজরত মুহাম্মদ (স.) ও ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছে। আবেদনে ছয়টি বিষয়ে বলা হয়েছে। এসব সাইটে যেসব বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তা ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংবিধান পরিপন্থী। আদালত এসব পেইজ ও সাইট বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রুলও জারি করেছেন।
৩। অশালীন বিষয়বস্তু আপলোড করায় এসব সাইট বা ওয়েব পেইজের প্রতিষ্ঠাতাদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা-ও রুলে জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে একই ধরনের অশালীন ও জঘন্য আধেয় প্রদর্শনকারী সাইট বা ওয়েব পেইজ বন্ধের ধারাবাহিকতা কেন নিশ্চিত করা হবে না, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিবসহ পাঁচ বিবাদীকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
৪। আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কটূক্তি, বিবৃতি বা অপব্যাখ্যা সংবিধানের ২(এ), ৩১, ৩৯ ও ৪১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা সংবিধানবিরোধী কাজ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বিশ্বাস সংরক্ষণে দেশের সংবিধানেই নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সাইট ধর্মীয় অনুভূতি সংরক্ষণে বাধ্য। অথচ এসব ওয়েবসাইট ও ওয়েব পেজে শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতেই আঘাত দেয়া হয়নি বরং কটাক্ষ করে মন্তব্য, অবসিন, পর্নোগ্রাফী প্রভৃতি দিয়ে গণমানুষের নৈতিক বিশ্বাসের ওপর আঘাত করা হয়েছে। এসব বন্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৫। বিটিআরসি চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেইসবুক কর্তৃপক্ষকে পেইজগুলো বন্ধ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওয়েবসাইটটিও বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এছাড়া ওই ফেইসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইট সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করতে তদন্তে নেমেছে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে গঠিত বিশেষ দল ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সিএসআইআরটি)’।
৬। “যে ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেটি বন্ধের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে সংশ্লিস্টদের চিহ্নিত করার পরই তা বন্ধ করা হবে।”
অভিজিৎ আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, মহান ঈশ্বর একটি নপুংসক সত্ত্বা, তাই নিজের মান-সম্মান তিনি নিজে রক্ষা করতে পারেন না। ঈশ্বরের মান-সম্মান সেই সুমহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তার কিছু পোষা বাহিনীর উপর। নিষ্ফল প্রার্থনা আর ব্যর্থ মোনাজাতে তেমন কাজ হচ্ছিলো না। তাই অদৃশ্য ঈশ্বরানুভূতি আর ধর্মানুভূতি আক্রান্ত হওয়ায় তার কিছু প্রিয় বান্দা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। রাষ্ট্র-যন্ত্রকে যুক্ত করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্র সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। মিডিয়া, টিভি, পত্রপত্রিকা, বইপত্র সবই। ইন্টারনেট আসার পর তাদের রাশ আলগা হয়ে যাচ্ছিলো ক্রমশ। যুৎ করতে পারছিলেন না তারা। এবার তারা ধর্মানুভূতি রক্ষায় একাট্টা হয়েছেন।
বন্যা আহমেদ বলেছেন, এখানে একটু আনন্দের ব্যাপারও আছে। এক্সেকিউটিভ বিভাগই হোক বা বিচার বিভাগই হোক, রাষ্ট্রযন্ত্র যখন এধরনের কোন নিষেধাজ্ঞার সাথে জড়িত হয়, তখন বুঝতে হবে যে সেটা তাদের জন্য এক বিশাল মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে। টেলিভিশন, পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে প্রিন্ট মিডিয়া, সবই তাদের কথা মেনে চলতে বাধ্য হয়। কারণ তাতে এরকম ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু ইন্টারনেট এই পুরো ব্যাপারটাকে ঘাড় ধরে উলটে দিয়েছে।
এখন পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশের জন্যই কিন্তু ইন্টারনেট এক ভায়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আমাদের মত দেশগুলোতে, যেখানে মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতাই নেই, সেখানে তো কোন কথাই নেই। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন আর ছোট্ট এক প্রতিক্রিয়াশীল অভিজাত শ্রেণীর হাতে আটকে নেই, বাঁধ ভেঙ্গে পড়ছে সবখানেই। যারই ইন্টারনেটে ঢোকার ক্ষমতা আছে সেই আজ মত প্রকাশ করতে পারে। এটা কিন্তু আমাদের ইতিহাসে আর কোনওদিনও ঘটেনি। এ ধরণের নিষধাজ্ঞাগুলোর তীব্র প্রতিবাদ করা প্রয়োজন, সাম্প্রতিক সময়ে টিউনিশিয়া বা ইজিপ্টের আন্দোলনগুলোর মত করেই।
ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগটা পুরনো নয়, এই নিয়ে বিতর্কও পুরনো নয়। অন্তর্জালে যারা বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক করেন, তারা দীর্ঘদিন ধরেই এই বিতর্ক করে আসছেন। এ পর্যন্ত ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের উত্তরে যে সকল লেখা এসেছে, তার মধ্যে সম্ভবত শ্রেষ্ঠটি লিখেছেন প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ, তার “ধর্মানুভূতির উপকথা” প্রবন্ধে। যারা ধর্মানুভুতিতে আঘাতের অভিযোগ তোলেন, তারা এই প্রবন্ধটি পড়লেই আশা করি তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ফেসবুক পেজগুলো আসলেই বন্ধ হবে কি ? উত্তর হচ্ছে, ফেসবুকের সার্ভার বাংলাদেশে না। ফেসবুক বাংলাদেশের আদালতের কথায় উঠবে বসবে না। এমনকি যদি কোনও ওয়েবসাইট বাংলাদেশ থেকে বন্ধ করে দেয়াও হয়, তখনও প্রক্সি দিয়ে সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে।
কিন্তু তারপরেও অনেকেই আতংকে আছেন হাইকোর্টের এই নির্দেশ নিয়ে। কারণ, যেখানে বলা হচ্ছে, জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে, সেখানে ধর্মের বিরুদ্ধবাদী ফেসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইটগুলোর স্বত্ত্বাধিকারী এবং অ্যাডমিনদের চিন্তিত হওয়ারই কথা।
মনে হতেই পারে, আজকেই যদি পুলিশ আমাকে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে ধরে নিয়ে যায় এবং টর্চার করে, তাহলে আমার কীই বা করার থাকতে পারে ? আজকেই যদি আমাকে আদালতের রায়ে দীর্ঘদিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়, তাহলে কি নষ্ট হবেনা আমার ভবিষ্যৎ ? যে কোনও সাধারণ মুক্তচিন্তকও এই দুশ্চিন্তার বাইরে নয়। এই মুহুর্তে নিরাপদ নয় কেউই। কোনও মুক্তমনা নিরাপদ নন, নিরাপদ নন “রাষ্ট্রধর্মের অবমাননাকারী” একজন আন্তর্জালিক লেখকও। কারণ, আইনের প্রয়োগের ইতিহাস এই দেশে যে কেমন হয়, তা তো আমাদের দেখা হয়েই গেছে।
আইন এবং এর প্রয়োগ নিয়ে যারা চিন্তিত আছেন, আসুন এবার দেখা যাক এই প্রক্রিয়ার আইনি দিকটি।
ধর্মের ব্যাপারে কী বলা আছে আমাদের সংবিধানে? সংবিধানের ৪১তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,
“আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যেকোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।”
এই অনুচ্ছেদের কোথাও বলা নেই যে, ধর্ম বা ধর্মীয় ব্যক্তিদের সমালোচনা করা যাবে না। আলোচ্য ওয়েবসাইটটি ও পেজগুলো ধর্মের অসারতা ও ধর্মের নানাবিধ অসঙ্গতি প্রকটভাবে তুলে ধরছিল। পেজগুলো বা পেজের অ্যাডমিনেরা কারো কোনো ধর্ম ‘অবলম্বনে’ বাধা দিচ্ছিল না, ধর্ম ‘পালনে’ বাধা দিচ্ছিল না, এবং ধর্ম ‘প্রচারে’ও বাধা দিচ্ছিল না।
আবার, ঐ অ্যাডমিনেরা কোনো ‘ধর্মীয় সম্প্রদায়’ বা ‘উপ-সম্প্রদায়ের’ কোনো স্থাপনাও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেননি বা দিতে যাননি। তারা কাউকে ধর্মপালন বা ধর্মপ্রচার থেকে বিরত থাকতে হুমকিও দেননি কিংবা কাউকে আহত বা নিহতও করেননি। তাহলে কেন ও কিসের ভিত্তিতে পেজগুলো বন্ধ হবে? কেন অ্যাডমিনদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেয়া হবে? তারা কীভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করছেন বা করেছেন?
সংবিধান ধর্ম ‘অবলম্বন’, ‘পালন’ ও ‘প্রচারের’ অধিকার দিয়েছে মাত্র; সংবিধান কারো ‘ধর্মানুভূতি’ পাহারার নিশ্চয়তা দেয়নি। ধর্মানুভূতি অত্যন্ত কাল্পনিক (hypothetical) ও আপেক্ষিক (relative) একটি বিষয়। কাল্পনিক ও অলীক বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশিত নয়। বিষয়টি ধর্মতর্কে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আদালত কারো ‘অনুভূতি’ রক্ষা বা মান-অভিমান ভাঙার প্রতিষ্ঠানও নয়।
কোনো ধর্মসমালোচক কখনোই কারো ধর্ম’পালন’ বা ‘প্রচারে’ বাধা দেয় না, বরং ধার্মিকেরাই ধর্মসমালোচকদেরকে যুগে যুগে হতাহত করে এসেছে। বিজ্ঞ আদালত এই ইতিহাসটা ঘেঁটে দেখলে ভালো হয়।
সংবিধান বা অন্য কোনো আইন যেহেতু ধর্মসমালোচনা নিষিদ্ধ করেনি, সেহেতু ঐ পেজগুলোও নিষিদ্ধ করার আইনি ভিত্তি জন্ম নেয় না।
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে শর্তসাপেক্ষে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করা হয়েছে। শর্তটি হচ্ছে, ঐ চিন্তা ও মত যেন ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতা’র সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।
এখন কথা হচ্ছে, ঐ পেজগুলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত করছে না, বিদেশের সাথেও সম্পর্কেও বিঘ্ন ঘটাচ্ছে না, জনশৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করছে না।
‘শালীনতা’ ও ‘নৈতিকতা’ অত্যন্ত তর্কসাপেক্ষ ও আপেক্ষিক দুটো বিষয়। শালীনতা ও নৈতিকতার ব্যাখ্যা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে ও তারতম্য ঘটে। একের কাছে যা অশালীন বা অনৈতিক, তা অন্যের কাছে নাও হতে পারে। আলোচ্য পেজগুলো কতটা শালীন বা অশালীন, সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে এবং আদালত চাইলে পেজগুলোকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সাবধান করতে পারে, কিন্তু পেজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিতে পারে বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে আদালত আদৌ হস্তক্ষেপ না করলে আরও ভালো হয়।
পেজগুলো বন্ধ হলে ৩৯তম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয় কি না, সেটাও ভেবে দেখার দাবি রাখে। হাই কোর্ট বিভাগ তার নির্দেশ দিয়েছে। বিবাদিপক্ষ আপিলেট বিভাগে আপিল করলে, আশা করা যায়, আপিলেট বিভাগ বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরে ভেবে দেখবে।
বাংলাদেশ কোনো ধর্মরাষ্ট্র নয়, ধর্মের ভিত্তিতে এদেশের জন্ম হয়নি, বরং এদেশের জন্ম হয়েছে একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রকে ভেঙে। এদেশে ব্লাসফেমি আইনও নেই। ফলে এদেশে ধর্মসমালোচনা অসাংবিধানিক হতে পারে না। মুক্তমনা নির্ঝর মজুমদার আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এই বিষয়ে তিনি কয়েকজন আইনজীবীর সাথেও কথা বলেছেন। দেখা যাক কদ্দূর কী হয়।
হে মহামান্য আদালত,
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মুখ বন্ধ করে, হেনস্থা করে কাউকে দাবিয়ে রাখা যায় না। সত্য প্রকাশিত হবেই। কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, ব্রুনোর উপর অত্যাচারের পরেও ঈশ্বরের পুত্ররা সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর ঘোরা থামাতে পারে নি। হুমায়ুন আজাদকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েও মুক্তবুদ্ধির অগ্রযাত্রা স্তিমিত করা যায়নি; বরং আমরা বেড়েছি। চারা গাছ হিসেবে জন্ম নিয়ে মহীরূহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছি এখানে ওখানে সর্বত্র।
ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ যদি আমি প্রকাশ করি, সেটা আমার বাকস্বাধীনতা, আমার অধিকার। এই অধিকার আপনি কেড়ে নিতে পারেন না হে মহামান্য আদালত। নির্দোষ কার্টুনিস্ট আরিফ দেশ ছেড়েই চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আমারব্লগে দিয়ে গেলেন তার এই পোস্ট, চাইনা হতে আমি হুমায়ুন আজাদ।
আপনার খড়্গ তার ওপরে প্রচণ্ডভাবেই নেমে এসেছিলো ৬ মাসের জেল হয়ে। মনে অনেক দুঃখ নিয়ে চলে গেছেন মানুষটি। এই ধর্মানুভূতির অভিযোগ তুলে “সত্যের সেনানীরা” দেশছাড়া করেছে তসলিমা নাসরিন ও কবি দাঊদ হায়দারকে, রক্তাক্ত করেছে হুমায়ুন আজাদ সহ নাম জানা আরও অনেককেই। সেই হিসাবটি কি আপনার কাছে আছে ? সেগুলোর বিচার কি হয়েছে মহামান্য আদালত ?
জানি না শেষ পর্যন্ত আইনজ্ঞরা আপনার সহায়তায় কী সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। জানি না আমাদের মধ্য থেকে কয়জন রক্তাক্ত হবেন, কয়জনের ভবিষ্যত নষ্ট হবে, কয়জন পচতে থাকবেন জেলখানায়। আপনার উপর সর্বোচ্চ সম্মান ও আস্থা রেখে বিষয়টি গভীরভাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখার আবেদন জানাই আমরা আপনার কাছে। শেষ পর্যন্ত রায় যাই হোক, জেনে রাখবেন হে মহামান্য আদালত,তারপরও পৃথিবী কিন্তু ঘুরবে। আমাদের রক্তবীজ জন্ম দেবে সহস্র মুক্তমনার।
আজকে ধর্ম আমাদের গলা বরাবর ছুরি চালিয়েছে। হয় আমাদের গলা কাটা যাবে, নয়তো ধর্মকে নিজের ছুরি সরিয়ে নিতে হবে।
কিন্তু গলা আমরা সরাবো না মহামান্য আদালত, সত্য সত্যের জায়গায় চিরকাল অটুট রয়ে যাবে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
১। অভিজিৎ রায় ও বন্যা আহমেদকে, ফেসবুকে অভিজিৎ রায়ের ওয়ালে আমার করা একটা পোস্টে তাদের প্রাসঙ্গিক দুটি মন্তব্য লেখার প্রয়োজনে নেয়া হয়েছে।
২। আখতারুজ্জামান আজাদকে, আইনি ব্যাপারগুলো পুরোটাই তার এই নোট থেকে নেয়া।
৩। খবরগুলোর তথ্যসূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ২২ মার্চ ২০১২।
বিতর্কটি বেশ জ্ঞানগর্ভ, সুচিন্তিত ও জমজমাট হল। তবে সবচে’ মজার ব্যাপার ঘটেছে: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা মুক্তচিন্তার মতো শ্রুতিমধূর অথচ শূন্যগর্ভ চিন্তাধারার পক্ষে যারা বললেন (এমনকি লেখাটির মূল লেখকসুদ্ধ), তাদের কেউ পুত্র কর্তৃক পিতাকে দুলা বলা অথবা অন্যের ঔরসজাত সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করাকে বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা/মুক্তচিন্তার সংজ্ঞা ফেলা যায় না কেন? এর জবাব দিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। ভণ্ডামীরও একটি সীমা থাকা দরকার। এসব হাভাতে নাস্তিক আসলে বিশ্বের সবদেশেই চিরকালই এতিম এবং মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন। আমরা তাদের জন্য আলো নিয়ে আসব।
সময় উপযুগি লেখাটির জন্য লেখককে ধন্যবাদ। প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের সংবিধান একটি বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। এটা ধর্ম নিরপেক্ষ নীতির বিরোধী। আমাদের এই পক্ষপাতের বিরুদ্ধে এবং অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্য ও মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। লেখক উল্লেখিত সংবিধানের ধারাগুলি ছাড়াও বাংলাদেশের প্যানেল কোডে দুটি ধারা রয়েছে যেখানে ধর্ম অনুভুতির কথা সুস্পস্ট ভাবে বলা হয়েছে এবং শাস্তির বিধানের কথাও বলা হয়েছে।
কোড দুটিতে যে “religious feelings” এর উল্লেখ রয়েছে তার কোন সংজ্ঞা বা ব্যাখা কোথাও নেই। সুতরাং আমাদের আইনের এই ফেলাসির উপরও আলোকপাত করতে হবে।
@বুনোগান,
সহমত।
@শুভজিৎ ভৌমিক,
আচ্ছা নীচে মুহাম্মদের কথাগুলো কি কারো ধর্মের প্রতি রেডলাইন ক্রস করে, পাবলিকলি নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ হলো?
তাদের ধর্মে তারা শিষ দিক তালি দিক, তাতে তোমার কী ক্ষতিটা করলো? তাদের ধর্মের সমালোচনা করে কি সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্মানুভুতিতে আঘাত করা হলোনা?
কেউ যদি বলে মুসলমানরা তো অপবিত্র, তখন ধর্মানুভুতিতে আঘাত হবে কোনটা?
এতোদিন কোথায় ছিলেন? অপবিত্র মুশরিকরাই তো ৩৬০ দেবতার ঘরের মালিক ও খাদিমদার ছিল সুদীর্ঘ বছর। তাদের পুজোর দেব দেবীদের ধ্বংস ও আবু জেহেল, আবুসুফিয়ান, আবু লাহাব সহ মক্কার সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মনে-অন্তরে, বিশ্বাসে-ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয়ার কারণে আগে মুহাম্মদকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হউক। আদালতে মুহাম্মদের বিচার দাবী করা হউক।
@শুভজিৎ ভৌমিক,
দেশের মালিক নাগরিক।
সরকার নিয়ন্ত্রিত সবকিছু, সংসদ আইন আদলত পুলিশ মিলিটারি সবার চাকুরী দিয়েছে জনতা।
জনতা চাকুরী দিতে পারে।
জনতা চাকুরী খেতে পারে।
সংবিধান তৈরী করেছে জনতা।
জনতার সবশেষ আশ্রয় আদালত। সেই আদালত টুপি পাগড়ী পৈতা চাবুক প্রভাবিত হতে পারে না। আদালত জনতার, দেশের, সংবিধানের।
যারা জনতার ন্যায়স্বার্থ রক্ষা করেনা, তারা জনতার নয়, তারা দেশের স্বার্থের নয়।
জনতার স্বার্থে আদালতে যেতে হবে। মামলা করতে হবে জনস্বার্থ বিরোধী সকল কাজের বিরুদ্ধে। দরকারে সর্বোচ্চ আদালতে। ন্যায় বিচার ব্যর্থ হলে, দেশের মালিক; জনতাই একাট্টা হয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কার চাকুরী থাকবে আর কারটা থাকবে না।
জনতার আলোচনা চলুক জোরেশোরে।
@কাজী রহমান,
(Y) (Y) (Y) (Y)
টেস্ট কমেন্ট
@মুক্তমনা এডমিন,
কমেন্টে সুপার ডুপার প্লাস। সুন্দর কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ :guli:
@ লেখক শুভজিৎ ভৌমিক,
রেডলাইন ফিক্স তো সরকার ও সংবিধান করেই দিয়েছে। এটা তাদেরই দায়িত্ব। আপনার আমার দায়িত্ব সেই রেডলাইনকে বুঝা এবং তার প্রতি রেসপনসিবল হওয়া। সংবিধান আমাদের “বাকস্বাধীনতা” দিয়েছে আবার ৪১ ধারায় বলেছে “ধর্মানুভূতিতে” আঘাত করা যাবে না। এই দুই এর মধ্যে আমাদের রেডলাইন ফিক্স করা আছে। আমাদের তা বুঝতে হবে। আমাদের “বাকস্বাধীনতা” অধিকার যেন এমন কোন কথা বলতে প্রেরনা না যোগায় যা অপর কোন গোষ্ঠী’র মৌলিক বিশ্বাসে হঠাৎ আঘাত করে এবং পরিনতিতে “জনশৃঙ্খলা” বিনষ্টের কারন হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের বাকস্বাধীনতা অধিকার আমরা আমাদের নির্দৃষ্ট সীমানার মধ্যে প্রাকটিস করতে পারবো কোন অসুবিধা নাই কিন্তু পাবলিকলি প্রাকটিস করতে গেলেই আমাদের কিছুটা হলেও রেসপনসিবল হতে হবে যাতে আমাদের বাকস্বাধীনতা এবং অপরের মৌলিক অধিকার কোনটাই ক্ষুন্ন না হয়। যেমন ধরুন আপনার পরিবারে আপনার সন্তানদের মধ্য থেকে যে কাউকে আপনি বেশী ভালবাসতে পারেন, এটা আপনার স্বাধীনতা। আপনার সেই ভালবাসা যদি প্রাইভেটলি সেই সন্তানকেই শুধু দেখান তাতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু যদি অপর সন্তানের সামনে পাবলিকলি সেটা প্রকাশ করেন তবেই আপনি সমানাধিকারের রেডলাইন ক্রস করলেন যা পারিবারিক বিশৃঙ্খলার কারন হতে পারে। কাজেই পাবলিকলি যখন আপনার অধিকার প্রয়োগ করতে যাবেন তখন কিছু রেসপনসিবিলিটি অনুসরন করতে হবে যাতে আপনার অধিকার চর্চা অপরের শারিরিক বা মানসিক ক্ষতির কারন না হয়।
হুমায়ুন আজাদের “নারী” বইটি সম্পর্কে আপনার মতের সাথে আমি একমত। কিন্তু বিষয় হচ্ছে প্রিভেন্টিভ মিজার বলে একটা কথা আছে যা আমরা সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকি। প্রিভেন্টিভ মিজার কাজ না করলে তখন কিউরেটিভ মিজারে যেতে হয়। পৃথিবী’র তাবদ দেশের সংবিধানে প্রথমে প্রিভেন্টিভ মিজারের বিষয় স্পষ্ট করা হয় তারপর তার সাথে কিউরেটিভ মিজার বলা থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ ধারাতে তাই করা আছে। যেহেতু আপনি সংবিধানের ৪১ ধারা কোট করে সমালোচনা শুরু করেছেন আমি তাই সেটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম। প্রথমত ফেসবুকের বিষয়বস্তু “সমালোচনা” নয় বরং একটি বিশেষ গোষ্ঠি’র ধর্ম সম্পর্কে পাবলিকলি মিথ্যাযুক্তি প্রচারনা। কোন বিষয়ে “সমালোচনা” করতে হলে সেখানে সেই বিষয়ের ভাল দিক এবং মন্দ দিক উভয়কেই সমান ভাবে আলোচনা করতে হয়। এটাই সমালোচনার মূল দিক। কিন্তু ফেসবুকে ঐ বিশেষ গোষ্ঠী’র ধর্মের কোন ভাল দিক তুলে ধরা হয়নি বরং ভাল দিকগুলোর মিথ্যা যুক্তি দিয়ে ধর্মকে মিথ্যা বানানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে যা ফেসবুকের টার্মস এন্ড কন্ডিশন পরিপন্থী। ফেসবুকের সোকলড সমালোচনা আর “নারী” বই এর বিষয় এক করে দেখার কোন অবকাশ নাই। নারী বই এর লেখায় যে ভাবে আলোচনা করা হয়েছে সে ভাবে ফেসবুকে যে করা হয়নি তা আপনি নারী বই এর সাথে ফেসবুকের লেখা মিলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন।
হুমায়ুন আজাদের নারী বই ১৯৯৫ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল যে আদলতে সেই আদালতেই আবার ২০০০ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে (আপনার তথ্য)। এতে কিভাবে মনে করেন নারী বই এর বিষয়বস্তু মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেনি? সময়ের তারতম্য লক্ষ্য করেছেন কি? যে সময় এই বইটি নিয়ে সমাজে “জনশৃঙ্খলা” বিনষ্ট হচ্ছিল সে সময়ই আদালত বইটির উপর ইনজাংশন বা সাময়িক স্থগিতাদেশ জারী করেছিল প্রিভেন্টিভ মিজার হিসেবে (আমি যতদূর জানি বইটি নিষিদ্ধ করে কোন রায় ১৯৯৫ সালে দেয়া হয়নি)। আদালত কেন সে সময় বলতে পারলো না যে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা সাংবিধানিক অধিকার তাই বইটি’র পক্ষে রায় দেবার সৎসাহস দেখালো না যা ৫ বছর পর নিরবে নির্জনে দিল? ৫ বছর পর যখন বইটির পক্ষে রায় হয় তখন কি “জনশৃঙ্খলা” বিনষ্ট হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল? নিশ্চয় নয়। ১৯৯৫ সালে বইটি প্রকাশিত হবার পরপরই “জনশৃঙ্খলা” বিনষ্ট হবার যে পরিবেশ আপনার আমার মতই অপর কিছু সুযোগ সন্ধানী নাগরিক সাংবিধানিক অধিকার বলে ধর্মের নামে তৈরী করেছিল তার তাৎক্ষানিক প্রতিকার করার জন্য বইটি’র উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ জারী করা জরুরী ছিল বলেই সরকার ৪১ ধারা প্রয়োগ করেছিল যা সম্প্রতি ফেসবুকের বেলাতেও হয়েছে। আবার দীর্ঘদিন অবকাশের পর ২০০০ সালে যখন আদালত দেখেছে “জনশৃঙ্খলা” বিনষ্টের কোন পরিবেশ আর বিরাজ করছে না, তাই আদালত বাকস্বাধীনতার পক্ষেই সঠিক রায় দিয়েছে। কারন আদলত যিনি পরিচালনা করেন তিনি আইনকে ব্যবহার করেছেন উভয় ক্ষেত্রে একই উদ্দেশ্যে “জনশৃঙ্খলা” এবং “বাকস্বাধীনতা” উভয়ই যাতে অক্ষুন্ন থাকে অর্থ্যাৎ সংবিধানকে আপহোল্ড রেখেছেন যেটা একজন যোগ্য বিচারকের দায়িত্ব। নাগরিকের “বাকস্বাধীনতা” অপব্যবহার কখনও কখনও “জনশৃঙ্খলা” বিনষ্টের কারন যে হয় তা তো আমরা হরহামেশাই দেখতে পাই। কাজেই আদালত উভয় ক্ষেত্রে ন্যায় বিচারই করেছে।
উচ্চবিচারালয়ের উদাহরন যে ধর্মানুভূতিকে পাত্তা না দেয়া বলে আপনি যা ভাবছেন তা একজন এক্সট্রিমিষ্টের ধারনা। কিন্তু একজন বিজ্ঞ বিচারক বা নাগরিকের মতে তা নয়। ২০০০ সালে আদালতের রায় আপনার বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে মাত্র, তার মনে এই নয় যে আদালত ধর্মানুভূতিকে পাত্তা দেয়নি এমনকি আদালতের রায়ে বিচারক বলেননি যে তিনি ধর্মানুভূতিকে পাত্তা না দিয়ে শুধু বাকস্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই রায় দিয়েছেন। ধর্মানুভূতিকেও আদালত পাত্তা দিয়েছিল বলেই ১৯৯৫ সালে বইটির উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ জারী করেছিল। একজন ফাঁসির আসামীকে রাষ্ট্রপতি যখন ক্ষমা করে মাল্যবরন করেন তার মানে এই নয় ফাঁসির আসামী যে খারাপ কাজ করেছে তাকে রাষ্ট্রপতি পাত্তা দেননি বা আদালত যে রায় দিয়েছে তাকে রাষ্ট্রপতি পাত্তা দেন নাই। মনে রাখবেন আইন তার নিজস্ব পথে চলে। আমরা মানুষই যার যার মত করে আইনকে ব্যবহার করি যে যেভাবে বুঝতে পারি। উচ্চাবিচারালয় ১৯৯৫ ও ২০০০ সালে যে রায় দিয়েছে তা প্রমান করে যে আইন নিজস্ব পথে চলেছে বলেই একসময় “জনশৃঙ্খলা” বিনষ্টের হাত থেকে দেশ ও তার নাগরিকদের রক্ষা করেছে আদালত আবার অন্য সময় নাগরিকদের বাকস্বাধীনতাকেও রক্ষা করেছে আদালত। দুটি কাজই আদালতের দায়িত্ব যা আদালত করেছে যথার্থই।
ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য হুমায়ুন আজাদকে আদালতের শাস্তি পেতে হয়নি কারন তাকে শাস্তি দেবার মত কোন ক্ষমতা আইন আদালতকে দেয়নি। কিন্তু দেশের ধর্মানুসারী নাগরিকের মন থেকে তিনি যে অভিশাপ নিয়েছেন সেটা কি তাঁর জীবনের জন্য বড় কোন শাস্তি নয়? আমি তো মনে করি একজন মানুষের মন থেকে অভিশাপ পাওয়া জেলে’র শাস্তির চেয়েও কঠিন শাস্তি। যারা মানুষের মন নিয়ে নাড়াচাড়া করেন তাদের জন্য মানুষের মন থেকে পাওয়া অভিশাপ খুবই বড় ধরনের শাস্তি বটে এটা যার জ্ঞান আছে সেই কেবল বোঝে আর যার নাই সে তো বোবা কালা লেখক মাত্র।
লালনের মূর্তি দেখে শিবিরের ছাত্ররা যদি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে সে জন্য লালনের মূর্তীকে দায় নিতে হবে না ঠিকই কিন্তু রাষ্ট্র সাময়িক ভাবে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে যদি লালনের মূর্তীটিকে জনসম্মুখ থেকে সড়িয়ে নেয় তাতে দোষ নাই এবং রাষ্ট্রের সে অধিকার আছে। সে কারনেই রাষ্ট্র নির্দৃষ্ট করে দিয়েছে কোথায় কি কাজ করা যাবে যাকে রেডলাইন বলা হয়। আপনি যদি কোন মসজিদের মূল ফটকের সামনে একটা মূর্তি রাখেন তবে সেটি রেডলাইন ক্রস করা হবে। আবার যদি কোন মন্দিরের মূল ফটকের সামনে মসজিদ বানান সেটিও রেডলাইন ক্রস করা হবে। মসজিদের পাশে অনেক মন্দির আছে সেখানে মূর্তীও আছে কৈ কেউ তো তা নিয়ে জনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে না? কারন শিবিরের ছাত্ররা যা করছে তারা আপনার মতই এক্সট্রিম কাজ করছে। তারাও জানে কোনটা রেডলাইন ক্রস আর কোনটা নয়, বরং আপনারাই বুঝতে পারেন না, তাই সমস্যা হচ্ছে। দেশের অনেক স্থানে অনেক মূর্তি আছে কৈ কেউ তো তা নিয়ে জনশৃঙ্খলা বিনষ্টের জন্য বেপরোয়া হচ্ছে না। শিবিরের কেউ যদি কোন একটি মূর্তি ভাঙ্গে তখন তো আমরা সকলেই হৈ হৈ করে উঠবো ঠিক না? তাহলে কারোর ধর্মের অনুভূতিতে যখন আমাদের কারোর কথা আঘাত করে তখন ধর্মানুসারীরা যদি হৈ হৈ করে উঠে তখন সেটা দোষ কোথায়? বরং সে ধরনের হৈ হৈ পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রিভেন্টিভ মিজার নেয়া রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব তেমনি নাগরিকেরও নিজের অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে নাগরিক রেসপনসিবিলিটি মেনে চলা উচিৎ। নাগরিক রেসপনসিবিলিট-ই হচ্ছে রেডলাইন যা আমাদের ক্রস করা সমীচীন নয়। আশা করি এই সত্যকে আপনি ভাল করেই বুঝেন এবং স্বীকার করবেন। কিন্তু বিতর্ক তখনই তিক্ততায় রুপ নেবে যদি আপনি এই সত্যকে প্রাইড ও এ্যারোগেন্টলি স্বীকার না করে শুধু লেবু চিপতেই থাকেন।
@করতোয়া,
এটা পরস্পরবিরোধী হয়ে গেলো। এমন তো নয় যে, নিয়ম-নীতি যা ফিক্সড আপ হয় সবই ঠিক এবং সবই মেনে নিতে হবে। মুসলমানের মৌলিক বিশ্বাস বা কথাবার্তা যদি হিন্দুকে আঘাত করে বা হিন্দুর মৌলিক বিশ্বাস বা কথাবার্তা যদি মুসলমানকে আঘাত করে, তাহলে কি সেই মৌলিক বিশ্বাসগুলোর ওপরেও নেমে আসবে নিষেধাজ্ঞা ? মুসলমানেরা কি তা মানবে ?
এভাবে কথাবার্তার মার্জিন ঠিক করে দিলে বাকস্বাধীনতা হলো কীভাবে তাহলে ?
মানসিক ক্ষতির সংজ্ঞায়ন কীভাবে করা যায় ? মাহফুজুর রহমানের গান দেখে যদি আমি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে সেটার জন্য কি তার গান গাওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া হবে ?
অভিশাপ আর প্রার্থনা একই মুদ্রার দুই পিঠ, দুটোর কোনওটাতেই কাজ হয়না।
লালনের মূর্তিটি জনসম্মুখ থেকে সরকার সরাবে ? কেন সরাবে ? মূর্তিটি কী দোষ করেছে ? যে চুরি করলো তার দোষ নেই, যা চুরি হলো তার দোষ ?
মসজিদের মূল ফটকের বাইরের জায়গাটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কি মূর্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ? এই অদ্ভুত রেডলাইনের কথা আপনি কোথায় পেলেন জানাবেন দয়া করে ?
কথাটার মধ্যে শিবিরপ্রীতি প্রকাশ পেলো কিঞ্চিত। আপনি কি শিবির সমর্থন করেন ?
ফিজিক্যাল লস আর মেন্টাল লসকে এক করে দেখছেন আপনি। কোনও কিছুর শারীরিক ক্ষতি পরিমাপ করার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু মানসিকভাবে যে কেউ যে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সবার ক্ষতি বিবেচনা করতে গেলে তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রটাই বন্ধ করে দিতে হবে।
@শুভজিৎ ভৌমিক,
আপনি আমার মন্তব্য থেকে শুধু লুপহোল খুজে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন কিন্তু আমার মন্তব্যে আপনার মতামত প্রকাশ করেননি যা আমার দাবী ছিল। অবশ্য আপনারা এটা করাই পছন্দ করেন তাতে নিজেকে শ্রেষ্ঠ্যত্ব দেখানো সহজ হয়। প্রশ্ন তো আর সবাই করতে পারে না। নারী বই সংক্রান্ত ১৯৯৫ ও ২০০০ সাল আদলতের দেয়া দুই ধরনের রায়ের উপর আমি যে যুক্তি দিয়েছি সে ব্যাপারে একেবারেই কোন মতামত আপনি দেন নাই। কারনটা কি জানতে পারি?
এবার আসি আপনার পাল্টা প্রশ্নের জবাবে।
“বাকস্বাধীনতা” আর “ধারা ৪১” আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী মনে হলেও মৌলিক ভাবার্থে পরস্পরবিরোধী না। কারন এটা অনেকটা একই রাস্তার দুই পাশে দুই বাড়ী মাত্র। রাস্তা বা সোকলড রেডলাইন হচ্ছে দুই বাড়ী’র জন্য একটি কমন প্লেস যা দেওয়ানী আইনের ভাষায় “ইজমাইলী সম্পদ” যেখানে উভয়েরই বিচরন করার সমান অধিকার আছে পরস্পরের প্রতি রেসপনসিবলি। এক বাড়ীর মানুষ অপর বাড়ীর আঙ্গিনায় গিয়ে মাসল দেখালেই বিপদ অনেক বেশী, কিন্তু কমন প্লেসে মাসল দেখালে বিপদ কম। আমাদেরকে এই রাস্তার মাঝখানে অবস্থান নিতে হবে কথাবর্তায় যখন পাবলিকলি আলোচনা করবো। “মৌলিক বিশ্বাস” এর সম্পূরক প্রতিশব্দ “কথাবর্তা” হয় না। দুটি দুই জিনিষ। একটি ধর্ম বা আদর্শের মৌলিক বিশ্বাস কখনও অপর ধর্ম বা আদর্শের মৌলিক বিশ্বাসে আঘাত করে না। যেমন মুসলিম ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস আল্লাহ এক, হিন্দুদের অনেক আবার নাস্তিকদের কাছে আল্লাহ বলে কিছুই নাই। এখানে পরস্পরে মৌলিক বিশ্বাসে পার্থক্য আছে কিন্তু কোন একটির মৌলিক বিশ্বাস অপর মৌলিক বিশ্বাসে আঘাত করে না। কিন্তু মুসলিম হিন্দু বা নাস্তিকরা যখন তাদের স্ব স্ব মৌলিক বিশ্বাসকে অপরের তুলনায় শ্রেষ্ট প্রমান কারার জন্য বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক কথাবার্তায় মকিং করে তখনই অনুসারীরা পরস্পরের বিশ্বাসে আঘাত করতে থাকে। কিন্তু যদি অনুসারীরা নিজের মৌলিক বিশ্বাসকে অপরের তুলনায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা না করে নিজেরটার প্রতি অনুশীলনে ব্রত থাকে তাহলে অপরের বিশ্বাসে আঘাত আসার কথা নয়। যেমন, নাস্তিকরা যখন যুক্তি দেয় যে কেন তারা মনে করে যে আল্লাহ নাই তা ঠিক আছে কিন্তু যখন তারা তাদের এই যুক্তিকে শ্রেষ্ঠ করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসুলদের নিয়ে মকিং করে বা আল্লাহ’র অনুসারীদেরকে নিয়ে মকিং করে তখনই আঘাতের প্রশ্ন আসে। তেমনি মুসলিমরা যখন নিজেদের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করার জন্য হিন্দুদের দেবতা নিয়ে মকিং করে হিন্দুদের পূজা করাকে নিয়ে মকিং করে তখনই সেখানে আঘাতের প্রশ্ন উঠে। মুসলমানের নামাজের ওয়াক্তে যেমন পূজার ঢোল বাজালে নামাজীদের কষ্ট হয় তেমনি পূজারীর লগ্নের সময় যদি মুসলমানরা ঢোল বাজাতে না দেয় তাতে পূজারীরও কষ্ট হয়। এ ধরনের কাজই সীমানা অতিক্রম করার কাজ যা সমীচীন নয়। কাজেই মৌলিক বিশ্বাসের উপর নিষেধাজ্ঞা নেমে আসা উচিৎ নয় বরং মকিং করার উপর নিষেধাজ্ঞা নেমে আসা উচিৎ। এটাই রেডলাইন যা ক্রস করা উচিৎ নয়।
আপনার সন্তান যদি আপনাকে বাবা না বলে ‘দুলাভাই” বলে সম্বোধন করে আপনি কি তা এ্যালাও করবেন? ধরুন আপনি কোন বাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। এখন আপনার ইচ্ছা হলো হাত পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। কিন্তু আপনার ছড়ানো হাত পা অপর যাত্রীর শরীর স্পর্শ করছে। অপর যাত্রী কি আপনার এই সুখ মেনে নেবে? তারা যাতে মেনে নেয় সেজন্য আপনি তাদেরকে কমপক্ষে sorry বলবেন ব্যালেন্স করার জন্য। ব্যাক্তির অধিকার স্থান কাল পাত্র ভেদে পরিবর্তন হবে এটাই স্বাধীন সমাজের স্বাভাবিক নিয়ম। আপনার জন্য নির্ধারিত সীমানার মধ্যে আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন কিন্তু পাবলিক সীমানায় করতে হলে আপনাকে সবার অধিকারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কাজেই কথাবার্তায় মার্জিন ঠিক করেও বাকস্বাধীনতা চর্চা করা যায় তার প্রমান উন্নত দেশগুলো। আপনি যদি আমেরিকার রাস্তায় গাড়ী চালান তখন শুধু ডান দিক দিয়ে কেন চালাতে হবে? আপনার ইচ্ছা হলো বাম দিকে চালাতে আপনি কি তা চালাবার অধিকার রাখেন? নিজেকেই প্রশ্ন করুন এই সব উদাহরন দিয়ে, তাহলেই বুঝতে পারবেন অধিকার চর্চায় রেসপনসিবিলিটি কি জিনিষ।
মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থকে আপনি এককভাবে দেখছেন বলে এই উদাহরন টেনেছেন। আমি বলছি গোষ্ঠিগত বিষয় পাবলিক বিষয়। প্রাইভেট পর্যায়ে ব্যাক্তির অধিকার আর পাবলিক প্লেসে ব্যাক্তির অধিকারের পার্থক্যের কথা। কোন “গান” যদি বিরাট জনগোষ্ঠীর মানসিক ক্ষতির কারন হয় তখন সে গান পাবলিকলি পরিবেশন করার উপর অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা আসবে তবে সেই গান প্রাইভেটলি পরিবেশন করা নিষিদ্ধ হবে না। তার প্রমান হুমায়ুন আজাদের “নারী” বই। আজাদ সাহেবের লেখার উপর রাষ্ট্র নিষেধাঙ্গা জারী করেনি বরং শুধু “নারী” বইটির প্রকাশনা বা বাজারকরনের উপর করেছিল। যেমন রুনা লায়লা বাংলা উর্দ্ধু হিন্দি সব ভাষাতেই গান গাইতে পারেন বিক্ষিপ্ত ভাবে কোন সমস্যা নাই, কিন্তু বাংলাদেশের রেডিও বা টেলিভিশনে বা রাষ্ট্রিয় কোন মঞ্চে তিনি বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষায় গাইতে পারবেন না যদি সেই অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান না হয়। ফ্রান্সে মুসলিম মেয়েদের পাবলিকলি হিজাব পড়াতে ব্যাপক সংখ্যক ফ্রান্স নাগরিক অসস্থিবোধ করেছে তাই পাবলিক প্লেসে হিজাব পড়া সেখানে নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই বলে মুসলিমদের সুনির্দৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করা যায়নি।
কাজ হয় কি হয় না সেটা মানুষ থেকে মানুষের বুঝার বিষয়। মানুষের ৫টি ইন্দ্রিয় ছাড়াও আরো একটি বিরাট জিনিষ আছে যা দেখা যায় না ছোঁয়া যায় না কিন্তু আস্তিক নাস্তিক সকলেই তার পূজা করে সমানে, জানেন সেটি কি? মানুষের “মন”। বড়ই বেতাল একটা জিনিষ। অভিশাপ বলুন আর প্রার্থনাই বলুন দুটোই এই “মন”কেই প্রভাবিত করে মানুষের বাহির থেকে হয়তো দেখা যায় না। প্রবাদ আছে “মন ভাল না থাকলে শরীরও ভাল থাকে না”। অভিশাপ বা প্রার্থনা আপনার কাছে কাজ হয় না মনে হলেও অনেকের কাছে কাজ হয় মনে হয়। যেমন ঢাকায় কোয়ান্টাম পদ্ধতি, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মনের উপর নিয়ন্ত্রন আনার প্রচলিত উপায় কারোর কাছে সুফল আনছে আবার অনেকের কাছে কিছুই না। সায়েদাবাদের পীরের ডিম পড়া খেয়ে কোন মহিলা গর্ভবতি হচ্ছে আবার কারোর হচ্ছে না। এটা যার যার বিশ্বাস। অন্যের বিশ্বাস নিয়ে আমাদের মকিং করা উচিৎ নয়। সায়েদাবাদের পীর বা কোয়ান্টামের লোকজন যখন সমাজ বিরোধী কাজ করবে বা তাদের কোন আচরনে ব্যাপক সংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবার প্রমান আসবে তখন এদের অধিকার নিয়ন্ত্রন করাই রাষ্ট্রের কাজ হবে।
লালনের মূর্তিটি সরকার সাময়িক সরাবে কারন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের আনার জন্য। তার মানে এই নয় চোরের শাস্তি হবে না। মূর্তির কারনে যদি কোন দল অপকৌশল করে জনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে তখন পরিবেশকে আগে নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে এটাই প্রধান কাজ তারপর চোর ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। মূর্তীটি কারোর দ্বারা ভেঙ্গে যাবার আগেই যদি কর্তৃপক্ষ সেটি সাময়িকভাবে সরিয়ে নেয় তবে সেটা রাষ্ট্রের সুকৌশলই বটে। যেমন নারী বই সংক্রান্ত দুই সময়ে ২ ধরনের রায় হয়েছে।
শুধু মসজিদের মূল ফটকের বাহিরের জায়গা কেন পুরা মসজিদটিই বাংলাদেশের অংশ। তাই বলে আপনি মসজিদের ভিতরে বা তার ফটকের সামনে মূর্তী রাখার অধিকার রাখেন কি? আপনি তো রেডলাইনের ত্বত্তই বুঝতে চাচ্ছেন না। আপনার বাড়ীর একটা সীমানা আছে, সেই সীমানার মধ্যে আমার বাড়ী বা মসজিদ বানাবার অধিকার কি আছে যদিও পুরাটাই বাংলাদেশ? এটাই ভেবে দেখুন না রেডলাইন কি বুঝতে পারবেন। আমি তো কোথাও দাবী করিনি যে বাংলাদেশে মূর্তী রাখা নিষিদ্ধ আছে। আপনি রাখুন না পুরা বাংলাদেশ জুড়ে কে আপনাকে নিষেধ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আপনার নিজস্ব সম্পদের পুরাটা আপনি মূর্তী দিয়ে ঢেকে দেন কোন অসুবিধা নাই কেউ আপনাকে বাধা দেবে না, কিন্তু আমার সম্পদের সীমানা অতিক্রম করতে পারবেন না আমার বিনা অনুমতিতে। এবং “ইজমাইলী” সম্পদ যখন মূর্তী দিয়ে ঢেকে দিতে যাবেন তখন আমার অধিকারের প্রতিও আপনাকে শ্রোদ্ধাশীল হতে হবে। এটাই রেডলাইন বোঝার বিষয়। উন্নত দেশে “নো ট্রেসপাসিং” আইন নামে একটা দুর্বোদ্ধ আইন আছে তা কি জানেন? অনেক বিজ্ঞ লোকরা প্রতিদিন এই আইনে অজান্তে ধরা খায় আর ১৬ ঘন্টার কমিউনিটি সার্ভিস করে মাফ পায়। এটা আবার সাধারন অপরাধ নয়। ২য় বার এই আইনে ধরা খাইলে ১ সপ্তাহের জেল হয়, ৩য় বারে ২ বছরের জেল। এই আইনটার সাথে সেই সব দেশের ব্যাক্তি অধিকারের বিষয়টি তুলনা করে দেখেন আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
টয়লেট ব্যবহার করার পর একজন ব্যবহারকারী কোলন পারফিউম ব্যবহার করে যাতে তার গায়ে টয়লেটের দুর্ঘন্ধ না থাকে। কিন্তু একজন সুইপার বা মেথর কিন্তু তারপরও ঐ ব্যাক্তির শরীর থেকে টয়লেটেরই গন্ধ পায় সে কোলন পারফিউমের সুবাস পায় না। কারন কি জানেন? আমি শিবির করি কি করি না তা আমার অনেক লেখায় ইতোমধ্যে সবাই জানে, আপনি হয়তো বুঝতে পারেননি।
আমি তো ব্যাক্তিগত কোন মানুষের মেনটাল বা শারিরীক লসের কথা বলছি না আমি বলছি গোষ্ঠি’র কথা যা জনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে। একজন ব্যাক্তির মেনটাল লস হলেতো তাকে পাগলা গারদে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। যখন ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মেনটাল লস হয় তখন কি সবাইকে পাগলা গারদে ঢুকাতে পারবেন? Responsively যখন বাংলাদেশের সবাই তাদের নাগরিক অধিকার চর্চা করবে তখন বাংলাদেশ ও তার নাগরিকদেরকে সবাই একটি মর্যাদাশীল দেশ ও নাগরিক হিসেবেই দেখবে তাতেই বরং বাংলাদেশ একটি সুস্থ্য রাষ্ট্র হিসেবে চালু থাকবে। কিন্তু যত্র তত্র আনরেসপনসিবলি নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে গেলে নাগরিকদের মধ্যে শক্তির মহড়া চলবে এবং বাংলাদেশ একটি ব্যার্থ রাষ্ট্র হিসেবে বন্ধ হয়ে যাবে।
পরিশেষে বলতে চাই আমার আলোচনার মূল বিষয় “নাগরিক রেসপনসিবলিটি” এবং “নাগরিক অধিকার (বাকস্বাধীনতা সহ)” এই দুই এর মঝে যা অনুভব করা যায় সেটাকেই আমি রেডলাইন বলছি। একজন সচেতন নাগরিকের কাছে এই রেডলাইন যতটা সহজবোধ্য একজন অসচেতন নাগরিকের কাছে ততটা সহজবোধ্য না। চয়েস আমাদের আমরা নিজেদের কোন শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে মনে করতে চাই।
@করতোয়া,
মানুষকে যুক্তিবাদি করতে হোলে কুসংস্কার-এর বিরুদ্ধে আঘাত হানতেই হবে । এই আঘাতকে যদি কেউ জনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারি বলে এবং ধর্মানুভুতির দোহাই দিয়ে থামাতে চায় তাহলে বুঝতে হবে তার জানার পরিধি ছোট বা তিনি শোষক শ্রেণীর পক্ষে মস্তিষ্ক যুদ্ধে নেমেছেন ।
বিঃদ্রঃ আমাদের সংবিধান স্ববিরোধি ।
@মাসুদ,
আপনি আমার যে মন্তব্যে এই মন্তব্য করেছেন তারপরও আবার নতুন একটা মন্তব্য আছে। সেটি দেখতে পারেন।
আপনার যুক্তি আছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে “কুসংস্কার” জিনিষটা কি তা আগে ব্যাখ্যা করার দরকার ছিল। “ধর্ম”কে কিভাবে “কুসংস্কার” বলছেন। ধর্ম একটি আদর্শ যেমন একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শ থাকে। কুসংস্কার কখনও আদর্শ নয়।
যাই হোক আমার নতুন মন্তব্যের নিচে একটা উপসংহার দিয়েছি সেখানে বলেছি এই পোষ্টে আমার আলোচনা “নাগরিক রেসপনসিবিলিটি” এবং “নাগরিক অধিকার” সম্পর্কে। এখানে কুসংস্কার নামক কোন পয়েন্ট আলোচ্য বিষয় নয়। জনশৃঙ্খলা বিনষ্ট সংক্রান্ত সংবিধানের “ধারা ৪১” এবং “বাকস্বাধীনতা” এর আলোকে সংবিধানকে আপহোল্ড করার খাতিরে যে যুক্তি আমি দিয়েছি তাতে আপনার মতামত সরাসরি প্রজ্ঞাপন করলে বুঝতাম আপনি কুসংস্কার বিরোধী। কিন্তু আপনি তা না করে নতুন পয়েন্ট “কুসংস্কার” জোড়া দিয়ে সংবিধানকে আপহোল্ড করার নাগরিক নৈতিকতার বিষয়কে এড়াবার চেষ্টা করছেন।
সংবিধান সম্ভবত স্ববিরোধী নয় বরং সংবিধানের আইনকে আমরা সামগ্রীকভাবে না দেখে নিজেদের আকাঙ্খা মত দেখতে চাই বলে স্ববিরোধী মনে হয়। সেজন্যই যে দলই সরকারে যায় সেই তার নিজের মত করে সংবিধান সংশোধন করে। আপনি সরকারে গেলে আপনিও সংশোধন করবেন কারন আপনার কাছে স্ববিরোধী মনে হয়। সংবিধানকে নিজের সাথে ট্যাগ না করে সংবিধানের সাথে নিজেকে ট্যাগ করে দেখুন তখন সংবিধান স্ববিরোধী মনে হবে না।
@করতোয়া,আপনি বলেছেন, ”বাক স্বাধীনতা আর ধারা ৪১ আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী মনে হলেও মৌলিক ভাবার্থে পরস্পরবিরোধী না ।” কথাটার উল্টোটাই সত্যি । আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী না , মৌলিক ভাবার্থেই পরস্পরবিরোধী । ‘বাক স্বাধীনতা’ সংবিধান যা আমাদের দিয়েছে তা যদি (আপনার মতে) নির্দৃষ্ট সীমানার মধ্যেই প্র্যাকটিস করতে হয় তাহলে তাকে কিভাবে বাক স্বাধীনতা বলা যায় ? আমি যদি মানুষকে তার সার্বিক বঞ্চনার কারন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কিছুটা রেসপনসিবল হয়ে পরি শোষক শ্রেনী পক্ষে , তাদের মুল অস্ত্র ধর্মের পক্ষে , সর্বপরি তদের সিস্টেমের পক্ষে – তাহলে সিস্টেম পাল্টাবে না – শোষন বঞ্চনা দূর হবেনা । আমরা রেসপনসিবল হব যুক্তির পক্ষে । বঞ্চিত মানুষের পক্ষে । যেখানে স্ববিরধিতা যেখানে শোষণবঞ্চনা সেখানেই ব্যবহার করব ঘৃণা আর যুক্তির অস্ত্র । মানুষের মঙ্গলের জন্য যে কথা আমি বলতে চাই তা যার বিরুদ্ধেই যাক না কেন তা বলতে পারাই বাক স্বাধীনতা । পাবলিকলি বলতে গেলে রেসপনসিবল হতে হবে নয়তো নির্দৃষ্ট সীমানায় প্র্যাকটিস করতে হবে । এটা কেমন স্বাধীনতা ? আপনি মনের মাধুরি মিশিয়ে বাকস্বাধিনতার সংজ্ঞা তৈরি করবেন একচিমটি নির্দিষ্ট সীমানা আর ২ টেবিল চামচ রেসপনসিবল মিশিয়ে তা যুক্তিবাদীরা খাবে না মাখবে ভেবে দেখেছেন কি ? যেহেতু বহু বিবাহ বন্ধে , মেয়েদের সুন্নতে খাৎনা বন্ধে , মেয়েদের পৈত্যিক সম্পত্তিতে সমান অধিকারের প্রশ্নে , জন্ম নিয়ন্ত্রনের বেলায় ইত্যাদিতেও অনেকের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগতে পারে – তাই বলে কি তা চলতে দিতে হবে ? তর্ক জেতার খাতিরে নয় ভাবুন মানুষ হিসেবে , যুক্তি দিয়ে , আপনার মাথায়েও এই রকম হাজার প্রশ্ন জন্মাবে । এইরকম হালকা আর সহজ ভাবেই আপনার শব্দের মারপ্যাঁচের জবাব দেওয়া যায় , যা মুক্তমনায় যুক্ত অনেকেই খুব কঠিণ ভাবে দিতে পারে কিন্তু আমার ধারনা তারা এখানে বেশি সময় নষ্ট করতে চাচ্ছেনা । আপনি আমার এক মন্তব্যের জবাবে কুসংস্কারের ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন । বলেছিলেন ধর্ম কুসংস্কার নয় আদর্শ । যাক এ বিষয়ে আপনার সাথে আর তর্কে যেতে চাইনা । শুধু এইটুকু বলে যাই যে শুধু ধর্ম নয় দেশপ্রেমও কুসংস্কার ।
@মাসুদ,
‘
আপনার এ প্রশ্ন মূল লেখকও করেছিলেন যার উত্তর ইতোপূর্বে দিয়েছি আপনি যদি অনুগ্রহ করে সেটি দেখেন তাহলে ভাল হয়। সত্যকে সত্য হিসেবে স্বীকার করাই হচ্ছে মানবতা। এখন সত্যকে আপনি মানতেও পারেন আবার নাও মানতে পারেন এটা আপনার স্বাধীনতা। কিন্তু সত্যকে অস্বীকার করতঃ মিথ্যার রঙ্গে রাঙ্গিয়ে উপস্থাপন করা সেচ্চাচারিতা। বাকস্বাধীনতা মানে সেচ্চাচারিতার লাইসেন্স নয়। আরো একটা উদাহরন দিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করি। আপনার সন্তান যার জন্ম দাতা পিতা আপনি। আমি যদি আমার বাকস্বাধীনতার অধিকার বলে তা অস্বীকার করতঃ পাড়ায় পাড়ায় মিথ্যা প্রচার করি যে সন্তানটি আপনার নয়। তাতে কি হবে এক আমি আপনার সততাকে অস্বীকার করছি আর দুই আপনার সতী সাধবী স্ত্রীর চরিত্রের উপর কালিমা লেপনের চেষ্টা করছি যাতে আপনার সুখের সংসারে একটা ঘুলু লেগে যায়। এটা কি আপনি আমার বাকস্বাধীনতা বলবেন নাকি সেচ্চাচারিতা বলবেন? কিন্তু আমি যদি প্রচার করি যে সন্তানটি আপনার কিন্তু আপনি তার পিতা হবার যোগ্য নন (সন্তানকে ঠিকমত মানুষ না করার কারনে) তখন কি হলো আমি সন্তানের পিতা হিসেবে আপনার সততাকে স্বীকার করছি কিন্তু আপনার যোগ্যতাকে গ্রহন করছি না, এটা আমার স্বাধীনতা কিন্তু সেচ্চাচারিতা না। কোন এক লেখকের গল্পে পড়েছিলাম (এখন মনে করতে পাচ্ছি না) সে বলেছিল “মেয়ে মানুষ হচ্ছে আলনায় সাজিয়ে রাখা জুতার মত। পুরানটা বাদ দিয়ে নতুন একটা আনলেই হয়”। আর যাবেন কৈ, তার অবস্থা অথৈজল। এখন বলুন এটাকি তার বাকস্বাধীনতার মধ্যে পড়ে নাকি সেচ্চাচারিতা।
ঐখানেই তো কবি নিরব। আপনি ধর্মকে শোষনের অস্ত্র হিসেবে দেখছেন কেন? লেলিন কার্ল মার্কসরা তো ধর্মকে নির্বাসিত করেই সিস্টেম বদল করেছিল, কৈ তারা তাদের সিস্টেমকে চালু রাখতে পারলো না কেন? কারন তারা শোষনের প্রকৃতি বদল করেছিল মাত্র শোষন ত্যাগ করেনি। কার সিস্টেম পাল্টাতে চান? ধর্ম তো কোন সিস্টেম নয় এটা মানুষের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জীবন চলার আদর্শ ও বিশ্বাস। আপনি পুঁজীবাদি সিস্টেমকে কমিউনিজম সিস্টেমে বদলাতে পারেন আবার কমিউনিজম থেকে পুঁজীবাদীতে। কিন্তু আদর্শ বা বিশ্বাসকে বদলাবেন কিভাবে। আপনি কি একজন ধর্ম বিশ্বাসীকে বোঝাতে পারবেন যে পরলৌকিক বলে কিছু নাই? আপনার হাতে সে ধরনের কোন বাস্তব উদাহরন আছে? এটা করতে হলে আদর্শ বা বিশ্বাস সম্পর্কে আপনাকে মিথ্যা প্রচার করতে হবে। মিথ্যা প্রচার করাটা কি সেচ্চাচারিতা হলো না? বাকস্বাধীনতায় রেসপনসিবল হতে হলে আপনি শোষকের পক্ষে যাবেন তখনই যখন আপনিও শোষকের ন্যায় মোটিভেশনে কাজ করবেন। যেমন ধরুন জামাতীরা, তারাও তো শোষিত শ্রেনীর মানুষের জন্য লড়াই করে (তাদের বক্তব্য অনুযায়ী) ধর্মের দোহাই দিয়ে। কৈ তারা কি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে যে তারা শোষিতদের পক্ষে? কিন্তু জামাতের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু রেসপনসিবলি ন্যায্য কাজ করে প্রমান করেছেন তিনি-ই শোষিতদের পক্ষে গোলাম আযম বা নিজামীরা নয়। আরো আসুন লেলিন বা কার্ল মার্কস এর অবস্থা তারা কি প্রমান করতে পেরেছে যে তারা প্রকৃতই শোষিতদের পক্ষে? লেলিন বা মার্কসের মত মানুষের তৈরী সিস্টেম মানুষই বদলাতে পারে কিন্তু ধর্মের আদর্শকে মানুষ বদলাতে পারে না কারন তা মানুষের মনে আদর্শ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়। কমিউনিষ্ট চীনে মুসলিমদের মন থেকে কি ইসলামকে বদানো গেছে? যে আদর্শ মানুষের বাস্তব ও কাল্পনিক উভয় অবস্থার নিশ্চয়তা দেয় সে আদর্শকে আপনি মানুষের মন থেকে বদলাতে পারবেন না কিন্তু যে আদর্শ (আপনার ভাষায় সিস্টেম) শুধু মানুষের বাস্তব জগতের নিশ্চয়তা দেয় তা হয়তো বদলাতে পারবেন। আপনি হয়তো প্রশ্ন করবেন ধর্ম মানুষকে বঞ্চনা করছে তাই এটা বদল দরকার আপনি তারই সেনানি। ধর্ম মানুষের অধিকারকে বঞ্চনা করছে না বরং মানুষ ধর্মকে সিস্টেম বদলাবার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যা সেচ্চাচারিতা। বরং ধর্ম মানুষের মধ্যে সমানাধিকারের পরিবর্তে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার শিক্ষা দেয়। কারন মানুষ মানুষের মধ্যে কখনও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না এটা মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার-ই চ্যালেন্জ। কিন্তু মানুষ যাতে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সেজন্যই সৃষ্টিকর্তা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষকে যাকে আমরা ধর্ম বলছি। আপনি যদি সৃষ্টিকর্তার এই সত্য চ্যালেন্জকে সত্য হিসেবে স্বীকার করে গ্রহন না করেন সেটা আপনার স্বাধীনতা কিন্তু যদি সেই সত্যকে মিথ্যার রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নানা যুক্তি দেখিয়ে মিথ্যা প্রচার করেন সেটা সেচ্চাচারিতার সামিল যার ফলাফল আপনাকেই উপভোগ করতে হবে যেমন সোভিয়েতের কমিউনিজম ভোগ করেছে।
বাতস্বাধীনতা সম্পর্কে আপনার সংজ্ঞাটা কি আপনার স্বরোচিত না? স্ববিরোধী বা বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঘৃণা আর যুক্তির অস্ত্র ব্যবহার করা আপনার স্বাধীনতা। কিন্তু মিথ্যা যুক্তির আশ্রয় নেয়া সেচ্চাচারিতা। সংবিধানকে যে আপনি স্ববিরোধী বলছেন এটাই তো আপনি সত্যকে মিথ্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করছেন। প্রমান দেখাতে পারবেন কোথায় সংবিধান স্ববিরোধী? বরং আপনি নিজেই সংবিধানকে নিজের ইচ্ছার সাথে মিলাতে পাচ্ছেন না। আপনি যাতে স্বাধীনতার নামে সেচ্চাচারিতার লাইসেন্স না পেয়ে যান সেজন্য সংবিধান লাগাম টেনে ধরছে তাই সংবিধান আপনার কাছে স্ববিরোধী মনে হচ্ছে। আপনার ইচ্ছা হলো আপনি আপনার প্রতিবেশীর বাড়ী কি দখল করার অধিকার রাখেন? নিশ্চই না। আপনার ইচ্ছা হলো আমার ধর্মের নামে যাতা মিথ্যা প্রচারনা করে আমার ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার অধিকার কি আপনি রাখেন? এজন্যই তো ব্লগে লেখা আর কাগুজে পত্রিকায় লেখার মধ্যে পার্থক্য আছে। কাগুজে পত্রিকায় আপনি সবকিছু লিখতে পারেন না যদিও আপনার অধিকার আছে। সম্পাদক সাহেব একটা কাঁচি হাতে নিয়ে বসে আছেন আপনার বাকস্বাধীনতা যাতে সেচ্চাচারিতায় পর্যভূষিত না হয় তা দেখার জন্য। এজন্যই ইন্টারনেটে এখন নানা ধরনের আইন হতে চলেছে এই কাট চাট করার জন্য। আপনার নিজের কথা যত পারেন সত্য মিথ্যা প্রচার করুন এটাই বাকস্বাধীনতা কিন্তু আপনি অন্য কারোর নামে মিথ্যা রটনা করতে গেলেই আপনার বাকস্বাধীনতার লাগাম টেনে ধরার কাজ সংবিধানের। সেজন্যই সংবিধানে “বাকস্বাধীনতা” এবং “ধারা ৪১” দুটোই আছে। আপনার ধর্ম নিয়ে আপনার যা খুশি প্রচার করুন আপনার পূর্ন স্বাধীনতা আছে কিন্তু অপরের ধর্ম নিয়ে মিথ্যাচার করতে গেলেই সেচ্চাচারিতার দায়ে দায়বদ্ধ হবেন এটাই নাগরিক রেসপনসিবিলিটি।
রেসপনসিবিলিট’র সাথে অধিকার ভোগ করার ক্ষমতা মানুষের আছে বলেই আমরা মানুষ না হলে আমাদের সাথে বনের পশুর কোন পার্থক্য থাকতো? এখন স্কুলের পাঠ্যসূচীতে পৌরনীতি নামে কোন বিষয় পড়ানো হয় না। আমাদের সময় ছিল। সেখানে স্পষ্ট পড়ানো হতো “ব্যাক্তি স্বাধীনতা” আর “ব্যাক্তি রেসপনসিবিলিটি” এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য কি এবং কিভাবে একজন নাগরিককে তা প্রাকটিস করতে হবে।
আমি তো আমার মনের মাধুরী দিয়ে বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞা তৈরী করি নাই। আপনি সমাজবিজ্ঞানের বই পুস্তক দেখুন আমি সত্য বলছি না মিথ্যা বলছি বুঝতে পারবেন। হয়তো উদাহরনগুলো আমার মনের মাধুরী বলতে পারেন কিন্তু মোদ্দাকথা তো আমার তৈরী করা কোন ত্বত্ত নয়। আমার হলে তো আমি নোবেল পাইতাম।
মনে হচ্ছে আপনি ইসলাম ধর্মের দিকে আলোচনার মোড় ঘোরাতে চান। বহু বিবাহ বন্ধে ইসলামে পরিস্কার ন্যায্য অধিকারের আইন করা আছে আপনি ভালকরে ইসলাম ষ্টাডি করলে পাবেন (মানবেন কি মানবেন সেটা আপনার অভিরুচি বা স্বাধীনতা) এর চেয়ে আর কি আইন ভাল আপনি দেবেন? অনেক মুসলিম মানেনা, সেটা তাদের স্বাধীনতা তাই বলে ইসলাম ধর্মের বিধানকে মিথ্যা বলা সমীচীন নয়। আমেরিকা বা উন্নত দেশে মানুষের বহু বিবাহ বন্ধ করে আইন করেছে খুব ভাল। কিন্তু সেখানে সমস্যা হয়েছে স্বামী স্ত্রী উভয়ই বিবাহ বহির্ভূত এক্ট্রামেরিটাল সেক্স করে বেড়াচ্ছে আড়ালে আবডালে। ধরা পরলে পরস্পরে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। উন্নত বিশ্বে ডিভোর্স হার বেড়ে যাওয়ার এটাই একমাত্র কারন। ক্যাথোলিক খৃষ্ঠান ধর্মে তারা নিজেরা আইন করে নিল যে চার্চের ফাদার বিয়ে করতে পারবে না। এটা কি ন্যায্য সিস্টেম হলো বলুন? যার কারনে প্রায়ই খবরে আসে চার্চের ফাদার শিশুদের সাথে অবৈধ যৌন কাজে লিপ্ত হবার। মানুষের পেটের যেমন ক্ষুধা আছে সেক্সেরও তেমনি ক্ষুধা আছে। এক ঢোল সবসময় বাজাতে কারোরই ভাল লাগে না। তাই ইসলামের আল্লাহ বল্লো ঠিক আছে তরা সর্বচ্চো ৪টা বিয়া করবি তার বেশী করতে পারবি না কিন্তু খেয়াল রাখিস ৪টারেই সমান মর্যাদা দিতে হবে যদিও তোদের সে ক্ষমতা আমি (আল্লাহ) দেই নাই। আর যদি সমান মর্যাদা দিতে না পারস তবে একটাতেই সন্তুষ্টি থাকবি। এখন বলুন বহু বিবাহ বন্ধের জন্য এর চেয়ে আপনি আর কত ভাল বিধান দিতে পারবেন। কেন ইসলামে এমন আইন করা হলো? কেন শুধু পুরুষের জন্য এই আইন মেয়েদের জন্য নয় কেন? তার আবার অন্য ব্যাখ্যা আছে। সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। মেয়েদের খৎনা ইসলামের কোন আদর্শ নয়। এটা আফ্রিকার সামাজিক কালচার। এটা মানুষের তৈরী সিস্টেম যার মাধ্যমে আফ্রিকার পুরুষরা মেয়েদের শোষন করে। এটার মূল কারন পুরুষদের ধারনা এটা করলে মেয়েদের সেক্স করার ক্ষমতা হ্রাস পাবে ফলে পুরুষরা সহজেই বহু বিবাহ করার অছিলা খুজে পাবে। এটা আমার মনের মাধুরী দিয়ে কথা নয় এটা আমি আমার এক মিশরীয় মুসলিম বন্ধুর কাছ থেকে নিজে শুনা। তাছাড়া আফ্রিকার সকল ধর্মেই পুরুষরা এটা অনুসরন করে। এটা আপনি বদলাতে পারেন। এটা বলদাতে যেয়ে আফ্রিকার মানুষের ইসলাম ধর্মে আঘাতের যে প্রশ্ন তুলেছেন সেটা সঠিক নয়। এটা সামাজিক কালচারাল আঘাতের পর্যায়ে আসতে পারে। কালচারকে আঘাত করতে গেলে সেই কালচারের মানুষের মনে প্রথমে আঘাত তো লাগবেই। কোরআনে যখন বহু বিবাহ বন্ধ করার আয়াত নাজিল হয় তখন বহু সাহাবা এর প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু যেহেতু তাদের সামনে পরলৌকিক সুখের মূলা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে সেহেতু তারা এটা মেনে নিয়েছে। এখানে ধর্মের আদর্শ আর আপনাদের মত মানুষের সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্য। আপনারা পরলৌকিক সুখের কোন মূলা ঝুলাতে পারেন না যেটা ধর্ম পারে। আমাদের ঢাকার বিবাহ অনুষ্ঠানগুলো দেখুন না। বিয়ের কালচারাল বিষয় যা সময়ে সময়ে কত পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু বিয়ের ধর্মীয় অংশটা এখনো সেই আগের মতই আছে। আমাদের দেশের বিয়ের কালচারাল সিস্টেম বদলের ফলে বিয়ের খরচ বহুগুনে বেড়েছে যা বহুসংখ্যক পরিবারের জন্য একটা মাথা ব্যাথার কারন। এখন বলুন এই সিস্টেম পরিবর্তন মানুষের উপকার করেছে নাকি মানুষকে অন্যভাবে শোষন করার পথ তৈরী করেছে। মানুষের দ্বারা সিস্টেম বদলের ফলে মানুষে মানুষের শোষনের ধারা বদল হয় শোষন বন্ধ হয় না। শোষনকে বন্ধ করতে প্রয়োজন রেসপনসিবলিটি যা একমাত্র আদর্শ বা ধর্মই দিতে পারে। মেয়েদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে সমানাধিকার নিয়ে আমি এখানে আলোচনা করতে চাই না। কারন এটা বিশাল ব্যাপার। আলাদা একটা পোষ্ট দিন আপনি কি বোঝেন আর কি চান সেখানে আলোচনা করবো। জন্মনিয়ন্ত্রনের বেলায় ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগার বিষয় ইসলামে আছে বলে আমার জানা নাই। তবে আপনার সঙ্গতির মধ্যে যদি জন্মনিয়ন্ত্রন করেন তাতে আমি অসুবিধা দেখি না। এখন মোল্লারা এটা নিয়ে হৈ চৈ করে বটে কিন্তু জনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মত কিছু করতে পারে না কারন ইসলামে এর উপর কোন সরাসরি বিধান নাই যতটা মেয়েদের পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে করার সুযোগ আছে। ধর্মের বিধি বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোন কিছু না করে ধর্মের বিপরিতে আপনার যে কোন ধরনের আদর্শের কথা বলার বাকস্বাধীনতা আছে কিন্তু ধর্মের বিধিবিধানের সত্যতার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলার ক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন বা রেসপনসিবল হতে হবে এটাই আমার আলোচনার মূল বিষয়।
আমি মানুষ হিসেবেই ভাবছি তর্কে জিতার জন্য নয়। আর আমি তো তর্ক করতেই চাই না। তর্ক করে বেকুবরা। আমি শুধু মানবতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেবার জন্য সংবিধান ও সত্যকে আপহোল্ড করতে স্বচেষ্ট। আপনার সাথে এতক্ষন আলোচনা করাটাই বৃথা। আপনি দেশপ্রমকেও বলছেন কুসংস্কার। দেশপ্রেম সম্পর্কে আপনার উপসংহারের বিচার কার দায় এই ব্লগের সচেতন পাঠকের হাতেই দিলাম। সত্যকে সত্য বলা শিখুন এটাই সবচেয়ে বড় মানবতা। সত্যকে মেনে নিব কিনা সেটা আমার নিজস্ব অধিকার কিন্তু সত্যকে সত্য হিসেবে স্বীকার করা নৈতিকতা।
@করতোয়া,
আপনার এ জবাবের প্রথম অংশে আপনি ব্যক্তিগত সর্ম্পর্কের উদাহরণ টেনে যা বলতে চেয়েছেন সেখানে বাকস্বাধীনতাকে গুলিয়ে দিয়ে মিথ্যাচার আর স্বোচ্ছাচারিতাকে হাস্যকর ভাবে সমার্থক করে তুলেছেন।
আপনি বলেছেন ,’’লেিেনন কার্লমার্কসরা তো ধর্মকে নির্বাসিত করেই সিস্টেম বদল করেছিল। ’’ কার্লমার্কস কোথায় কখন কোন সিস্টেমকে বদলেছেন তা বললে ভাল হতো। আপনি বলেছেন , ’’কার সিস্টেম পাল্টাতে চান ? ধর্মতো কোন সিস্টেম নয়। ’’ আমি কি একথা কোথাও বলেছি?
আপনি বলেছেন ,’’আপনি পুজিবাদী সিস্টেমকে কমিউনিজম সিস্টেমে বদলাতে পারেন আবার কমিউনিজম সিস্টেমকে পুজিবাদীতে । কিন্তু আদর্শ বা বিশ্বাসকে বদলাবেন কিভাবে ? ’’ সময়ের সাথে সাথে আদর্শ বা বিশ্বাস যে পাল্টায় এ তথ্যটুকু আপনার জানা উচিত ছিল। মিথ্যাচার করলেও পাল্টায় না করলেও পাল্টায় । আর পারলৌকিক বলে যে কিছু নেই এটা বুঝতে অনেক বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে না। যদি সত্য জানার ও মানার সাহস থাকে । আপনি যুক্তি না মেনে বাচালতা চালাতে পারেন ঠিক কিন্তু মিথ্যা কে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না । আপনি বলেছেন ,’’ধর্ম মানুষের মধ্যে সমান অধিকারের পরিবর্তে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয় ’’। আপনার এ কথা পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের জন্য নিমর্ম রসিকতা ছাড়া আর কি হতে পারে ? বলেছেন, ”মানুষ মানুষের মধ্যে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না এটা মানুষের প্রতি সৃষ্টি কর্তারই চ্যালেঞ্জ ।’’ আমরা জানি আপনার সৃষ্টিকর্তা তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জেই মানুষের কাছে হেরে গেছেন। সে সংবাদ কি আপনার কাছে আছে যে মানুষ ল্যাবরেটরিতে প্রাণ সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে বেশি ভাল লাগলো উপসংহারে আপনার বক্তব্যটুকু-’’ আমি শুধু মানবতাকে প্রাতিষ্ঠানক রূপ দেবার জন্য সংবিধান ও সত্যকে আপহোল্ড করতে সচেষ্ট ।’’ মানবতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চান আপনি । যে সেই সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী যে কিনা চ্যালেঞ্জ-দিয়ে রেখেছে ’’মানুষকে মানুষের মধ্যে কখনো সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হবে না। ’’’
@মাসুদ,
আপনার সাথে আলোচনা করা আর পাগলের সাথে সময় নষ্ট করা সমান। কারন আপনার কাছে “দেশপ্রেম কুসংস্কার”। “দেশপ্রেম কুসংস্কার” বিষয়ে আপনার অবস্থান পরিস্কার না করেই আপনি অন্য বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন যেগুলো আমাদের আলোচনার মূল বিষয় নয় উপমা মাত্র। আপনি “প্রান” এরই বা সংজ্ঞা বুঝবেন কেমনে আর সৃষ্টিকর্তার সংজ্ঞা বোঝা তো ঢেড় বাকী।
যদি পারেন দেশপ্রেম বিষয়ে আপনার অবস্থান আগে পরিস্কার করুন তারপর আলোচনা করবো।
@করতোয়া, ভাবুন !
ধন্যবাদ আপনাকে সময় উপযোগী এই লেখাটির জন্য।
আসলে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের সরকার চাইবে না ধর্ম নামক শোষণ যন্ত্রের উপর আঘাত আসুক।কারণ এমন শোষণ যন্ত্রের বিকল্প পৃথিবীতে পাওয়া দুষ্কর। মানুষের পেটে ভাত না দিয়েও সৃষ্টিকর্তা নামক ভ্রান্তধারণার বশ করে রাখা যায়।
ভারত সরকারও এমন একটা পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও আনতর্জাতিক মহল এবং দেশের বুদ্ধিজীবিরা সরকারের জনসাধারণের বাকস্বাধীনতার উপর আঘাতের তীব্র নিন্দা করছে।
আমরা যদি সত্যের পথে চলি তা হলে একদিন জয়ী হবই। কোন অপশক্তি আমাদের দমাতে পারবে না। সত্য কখনও মরে না, সাময়িক দমিয়ে রাখা যায় মাত্র। ধন্যবাদ।
@সুমিত দেবনাথ,
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
দাদা ধন্যবাদ আপনার এই লেখাটির জন্য। আমরা কম বেশী বাংলাদেশে বসবাসকারী সব মুক্তচিন্তক ফেসবুক বা সামাজিক নেটওয়ার্ক এর মন্তব্যকারী-ই নিরাপদ নই।
এক বার যদি এ ধরনের রিট আবদনের পেক্ষিত মুক্তমনাদের উপর আঘাত আসতে থাকে, সামনে এগুনো আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যাবে।
আশা করতেছি আমরা সকলেই এর বিরুদ্ধে কিছু একটা করতে পারবো। কিন্তু ওয়ে খুজে পাচ্ছি না।
@রঞ্জন বর্মন,
দেখা যাক কী হয়। কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে ফাইনাল ফলাফলের জন্য।
@রঞ্জন বর্মন,
যুক্তিবাদী মানুষদের এক হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই ।
দেশে বহু পর্নো সাইট রয়েছে যেখানে প্রতিদিন নারীদের আক্ষরিক অর্থেই গণধর্ষণ করা হয়। সেদিকে আইনের কোনো উদ্যোগ নেই আর ধর্মকে রক্ষা করতে রাষ্ট্রযন্ত্র যেন একটু বেশীই তৎপর হয়ে উঠেছেন। মানুষের সম্ভ্রম রক্ষা করা অপেক্ষা বিপ্লব বন্ধ করা বেশীই প্রয়োজন, নচেৎ গদি উল্টে যাবে বৈকি। বেডরুমে নিরাপত্তা দেওয়া তো আর সরকারের কাজ নয়, তাই বেডরুমের ধর্ষণচিত্র বৈধ আর মস্তিষ্কের অনুরণন অবৈধ।
যুক্তিকে হত্যা করতে গিয়ে আহত ধর্মানুভুতি।
@ইস্ক্রা রহমান,
নিহত হতেও খুব বেশি দেরি হবেনা আশা করি।
এবার বিজ্ঞানুভুতিরও একটা সুরাহা হবে বোধ হয়। মাননীয় আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যে সকল পত্রিকা বা লেখক সাহিত্যিক অপবিজ্ঞান ছড়াচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক।
@আকাশ মালিক,
এটা কী সম্ভব? বাঙলাদেশের বেশীর ভাগ বিচারকই যে আল্লা বিল্লা নিয়ে ব্যস্ত। অনেকেই জামাতি, জিহাদি, কুরানি, হাদিসি, মোকসুদুল্ মোমেনি,…এনারা কী কোন বিজ্ঞানে বিশ্বাস করেন? অনেকেই পীর, দরবেশ, আওলিয়ার মুরীদ।
আমার মনে হয় আদালতের এই সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হবে। যে ওয়েব সাইট সন্দেহ করা হচ্ছে নিষিদ্ধ করা তার পাঠক এখন হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। আমি এখন পাঞ্জেগানা নামায পড়ার মতই ঐ সাইট দৈনিক ওয়াজেব করে ফেলেছি।
মুক্তমনা নিষিদ্ধ হলেও তাই হবে। দেখবেন কী বিপুল পাঠক মুক্তমনায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আর আকাশ মালিক, ভবঘুরে, তামান্ন ঝুমু, গোলাপ, সৈকত চৌধুরী…এঁদের নামে ঘরে ঘরে আলোচিত হবে।
@আবুল কাশেম,
ফেমাস হয়ে যাবো দেখা যাচ্ছে। তাহলে তাড়াতাড়ি মুক্তমনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হউখ ! 🙂
মুক্তমনা ও ইন্ডিয়ার দালাল শ্রী অভিজিৎ রায় নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক :guli: :guli: :guli:
@আকাশ মালিক,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। এখানে দেখে আসতে পারেন আর কী কী অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য আমরা আদালতে আবেদন করতে পারি।
খুব মজার আমি হুমায়ুন আজাদের প্রথম কোন লেখা পড়েছিলাম সে চাপাতি ঘটনার পড়ে। সেটা ছিল পাক সার জমিন।
তারপরে পড়েছিল আমার অবিশ্বাস।
ধার্মিকের প্রতিটা আক্রমান মুক্তমনার সাহস বাড়িয়ে দেয়ায়।
@মুরশেদ,
খুব মজার ব্যাপার। আমি হুমায়ুন আজাদের প্রথম কোন লেখা পড়েছিলাম সেই চাপাতি ঘটনার পরে। সেটা ছিল পাক সার জমিন।
তারপরে পড়েছিলাম আমার অবিশ্বাস।
ধার্মিকের প্রতিটা আক্রমান মুক্তমনার সাহস বাড়িয়ে দেয়।
@মুরশেদ,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
এখনকার জন্য খুব দরকারি একটা বিষয় গুছিয়ে লিখে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
বাংলাদেশে মানুষ পুলিশের কাছে যেতে চায় না, ভয়ে। হরেক রকমের ভয়। উকিল আদালত তো মহা ভয়। এর মূলে হচ্ছে অজ্ঞতা। নাগরিক বা নিজ অধিকার সম্বন্ধে তার অজ্ঞতা। প্রাথমিক অধিকারের ব্যাপারে অজ্ঞতা না কাটলে ভয়ও কাটবে না। অথচ পুলিশ আইন আদালত নাগরিকের বন্ধু হবার কথা।
শেষ আশ্রয় আদালত যদি সংবিধানকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে নাগরিক, যারা দেশের মালিক, তাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে না পারে, তা হলে নাগরিককেই সংগঠিত হয়ে একে শুদ্ধ করতে হবে।
ব্যাপক পরিসরে আসুন আলোচনা করা যাক।
@কাজী রহমান,
খুব খুব খুব সত্যি কথা। ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য। (Y)
সেই উদ্দেশ্যেই মূলত পোস্টটা দেয়া। আলোচনার মধ্য দিয়ে অন্তত আমাদের ভয়টা দূর করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি কোনও দোষ না করছি, ততক্ষণ আমি নিজেকে নিরাপদই মনে করি, এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমি এই ইস্যুটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ দেখছি না।
“সমালোচনা করা যাবে না” এ ধরনের কোন শব্দ সংবিধানের এই ধারায় সংযোজিত নাই-আপনার এই ক্লেইম সত্য এবং এতে কোন দ্বিমত নাই।
কিন্তু এই ধারায় সর্বপ্রথমেই আইনের ২টি জটিল শব্দ জুড়িয়ে দেয়া আছে যা ” আইন” ও “জনশৃঙ্খলা”। যদি কোন ধর্মের সমালোচনা রেড লাইন ক্রস করে এবং তা সংশ্লিষ্ট ধর্মানুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত করে এবং তা যদি “জনশৃঙ্খলা’ বিনষ্টের কারন হয়ে দাঁড়ায় তখন সেই ধরনের “সমালোচনা”কে “আইন” প্রয়োগের দ্বারা রোহিত করা হবে। এজন্য “সাপেক্ষ” শব্দটি জোড়া দেয়া আছে।
এখন ফেসবুক বা অনুরুপ মাধ্যমের লেখার বিষয়বস্তু “জনশৃঙ্খলা” বিনষ্টের কারন হয়েছে কিনা বা হবার সম্ভাবনা আছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে যতক্ষন সংবিধানে এই ধারাটি জিবিত আছে। সাংবিধানিক ধারায় যে শব্দ নাই (সমালোচনা) সেই শব্দ দিয়ে আদলতের রায়ের বিরুদ্ধে বিতর্ক করার কোন অর্থ নাই।
@করতোয়া,
রেড লাইন ফিক্স-আপ করবে কে ?
ধর্মানুভূতির বিষয়ে হুমায়ুন আজাদ তো বলেই গেছেন তার লেখায়, জানিনা বিজ্ঞ আদালত সেই যুক্তি মানবেন কিনা। হুমায়ুন আজাদের “নারী” বইটিও নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। সেই সময়ের ঘটনা সম্পর্কে “ধর্মানুভূতির উপকথা ও অন্যান্য” বইটি থেকে উদ্ধৃতি দেয়া যাকঃ
উচ্চ বিচারালয়ে উদাহরণ রয়েছে ধর্মানুভূতিকে পাত্তা না দেয়ার। ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য হুমায়ুন আজাদকে কোনও শাস্তির মধ্য দিয়েও যেতে হয়নি। কোথায় যেন পড়েছিলাম, উচ্চ বিচারালয় বলেছিলেন, বইটি ঘরে ঘরে গিয়ে বিতরণ করে আসা হয়নি। যার সমস্যা, সে বইটি না পড়লেই হয়।
ওয়েবসাইটগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
“জন” মানে তো জনতা। এখন জনতার শৃঙ্খলা যে কোনও কারণেই বিনষ্ট হতে পারে। লালনের মূর্তি দেখে যদি শিবিরের ছাত্ররা শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে, তার দায় কি লালনের মূর্তি নিতে যাবে ?
@শুভজিৎ ভৌমিক,
:hahahee:
অতি সম্প্রীতি বহুল আলোচিত শীর্ষ ঘটনাবহলের মধ্যে আপনার প্রাসঙ্গিক গবেষণাধর্মী আলোচনা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলের নিরপেক্ষ চিন্তাভাবনাই আমাদের জন্য সুখকর। তবে আমাদের স্বাধীনতা প্রয়োগের মাপকাঠি বা মানদণ্ড ক্ষেত্রে আরো বিচার-বিবেচনা করা জরুরি। সেটা যেন আমাদের স্বেচ্ছাচারিতায় না পৌছায়।
@শামিম মিঠু,
কারও কোনও ক্ষতি না করে স্বেচ্ছাচার চালালে তাও কি আপত্তিকর ?
@শুভজিৎ ভৌমিক,
পরক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কারও ক্ষতি না করে স্বেচ্ছাচারিতা সম্ভব না ।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ, ভৌমিক। ফেসবুকেও দেখলাম ব্যাপারটি নিয়ে ভাল আলোচনা চলছে।
জোর করে অবদমনের প্রচেষ্টা সফল যে হবে না, তা বলাই বাহুল্য।
@অভিজিৎ দা,
ধন্যবাদ মুক্তমনায় আমার লেখায় প্রথম মন্তব্যের জন্য।
বিশ্বাস নেই। একেবারেই বিশ্বাস নেই। বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ।
@অভিজিৎ,
বাংলাদেশ না, পৃথিবী নামক গ্রহটাই এখন শোষকশ্রেণীর অভয়অরন্য । তাদের মূল অস্ত্রই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো । তারা যেকোনো উপায়েই এগুলাকে রক্ষা করতে চাইবে ।