আবুল কাশেম
নানা কারণে এই ধারাবাহিক রচনাটি কিছুদিনের জন্য স্থগিত ছিল। বাকী অংশ এখন নিয়মিত প্রকাশের আশা রাখছি।
[রচনাটি এম, এ, খানের ইংরেজি বই থেকে অনুবাদিত “জিহাদঃ জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও ক্রীতদাসত্বের উত্তরাধিকার” গ্রন্থের ‘ইসলামি ক্রীতদাসত্ব’ অধ্যায়ের অংশ এবং লেখক ও ব-দ্বীপ প্রকাশনের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত হলো।]
ইসলামি ক্রীতদাসত্ব, খণ্ড ১৪
লেখক: এম, এ, খান
খোজা ও গেলেমান
ইসলামি ক্রীতদাসত্বের আরেকটি নিষ্ঠুরতম, অমানবিক ও চরম অমর্যাদাকর বিষয় ছিল পুরুষ বন্দিদেরকে ব্যাপকহারে খোজাকরণ, যে বিষয়ে ইতিহাসবিদ ও সমালোচকদের নজর পড়েছে খুবই কম। ঐতিহাসিকভাবে মুসলিম সমাজে খোজাকরণ আধুনিক যুগ পর্যন্ত সামান্যই বিরোধিতার মুখে পড়েছে। মানব শরীরের অঙ্গহানি ইসলামে নিষিদ্ধ এ যুক্তিতে মুসলিমরা সাধারণত ইহুদি কিংবা অন্য অমুসলিমদেরক দিয়ে খোজাকরণের কাজ করিয়ে নিতো (এটা একেবারেই ভণ্ডামি, কেননা নবি মোহাম্মদের আমল থেকেই মুসলিম সমাজে বিপুল সংখ্যায় নিরীহ মানুষের শিরোচ্ছেদ সাধারণ ব্যাপার হিসেবে চালু থাকে এবং কোনো কোনো অপরাধে হাত-পা কেটে ফেলা ইসলামে স্বর্গীয় দণ্ড)। অধিকন্তু খোজাদেরকে ব্যবহার করা আল্লাহ-কর্তৃক সুস্পষ্টরূপে অনুমোদিত, কেননা কোরান মুসলিম নারীদেরকে তাদের শরীর নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের সম্মুখে ছাড়া অন্য সবার সামনে আলখিল্লা দ্বারা ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছে; সেসব ব্যক্তিরা হলো: ‘তাদের স্বামী বা পিতা, তাদের স্বামীর পিতা বা তাদের পুত্র, তাদের স্বামীর পুত্র বা তাদের ভ্রাতা, বা তাদের ভাইয়ের বা ভগ্নির পুত্র, বা তাদের নারী বা দক্ষিণ হস্তের মালিকানাধীন নারী, অথবা পুরুষ চাকর যাদের কোনো চাহিদা নেই (যৌন-প্রয়োজনে নারীদের)…’ (কোরান ২৪:৩১)। একটা হাদিসেও বলা হয়েছে যে, নবি মোহাম্মদ নিজেও উপহার হিসেবে এক খোজা ক্রীতদাস গ্রহণ করেছিলেন, যদিও আনুশাসনিক সুন্নত তালিকা থেকে সেটাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।[১৭৪]
সাধারণত খোজাকৃত সুন্দর স্বাস্থ্যবান ক্রীতদাস-বালকদের খুব চাহিদা ছিল মুসলিম শাসক ও সম্ভ্রান্তদের মাঝে প্রধানত তিনটি কারণে। প্রথম কারণ: মুসলিম হেরেম ও গৃহে থাকতো কয়েকজন থেকে হাজার হাজার স্ত্রী ও উপপত্নী, যারা স্বামী বা মালিকের সাথে যৌন-সঙ্গমের সুযোগ পেতো খুবই কম। ফলে সেসব নারীর অধিকাংশের যৌনাকাক্সক্ষা অতৃপ্ত থেকে যেতো। সে সাথে তাদের স্বামী বা মালিকের বহু নারীর সাথে যৌন-সংসর্গে লিপ্ততা মেনে নিতে বাধ্য হওয়ায় তাদের মাঝে থাকতো ঈর্ষা ও আক্রোশ। এরূপ অবস্থায় হেরেমে বা গৃহে পুরুষ ক্রীতদাস রাখা স্বামী বা মালিকের জন্য ছিল উদ্বেগের বিষয়, কেননা যৌন অতৃপ্ত ও ঈর্ষাপূর্ণ ওসব নারীরা পুরুষ ক্রীতদাসদের সঙ্গে সহজেই যৌবনসঙ্গমে প্রলুব্ধ হতে পারতো। অন্য পুরুষের প্রতি হেরেমের নারীদের আকর্ষণ ছিল অত্যাধিক ও সাধারণ ঘটনা। দৃষ্টান্তস্বরূপ, তার এক প্রিয় স্ত্রীর অনুরোধে সুলতান মৌলে ইসমাইল খোজা-না-করা পেলোকে আশ্চর্যজনকভাবে কিছু সময়ের জন্য তার হেরেমের রক্ষী নিয়োগ করলে তার স্ত্রীরা পেলোর প্রতি প্রেমাকাক্সক্ষা প্রদর্শন করতে থাকে। কিন্তু সুলতান জানতে পারলে যে ভয়ানক পরিণাম হবে, সে ব্যাপারে সজাগ পেলো লিখেছে: ‘আমি ভাবলাম আমার সকল কাজে আমাকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সতর্ক থাকতে হবে।’[১৭৫]
সুতরাং মালিকদের − বিশেষত শাসক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যারা বড় বড় হেরেম রাখতো − তাদের জন্য পুরুষত্বধারী ক্রীতদাসের পরিবর্তে খোজাকৃত ক্রীতদাস রাখা নিরাপদ ছিল। কাজেই আশ্চর্যের কিছু নেই যে, ‘হেরেম’ শব্দটি এসেছে ‘হারাম’ থেকে, যার অর্থ ‘নিষিদ্ধ’, আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে ‘নাগাল-বহির্ভূত’ (পর-পুরুষদের)।
কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদেরকে সাধারণভাবে খোজা করা হতো ‘এ ধারণার ভিত্তিতে যে কৃষ্ণাঙ্গদের যৌনক্ষুধা ছিল অত্যাধিক ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য’, জানান জন লাফিন।[১৭৬] ভারত থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত সর্বত্রই খোজাদেরকে বিশেষত নিয়োজিত করা হতো হেরেমের পাহারায়। তারা অন্তঃপুরে নারী ও পুরুষদের চলাচলের উপর নজর রাখতো এবং হেরেমের নারীদের আচার-আচরণ সম্বন্ধে, বিশেষত মালিকের প্রতি (যৌন-বিষয়ে) বিশ্বাসঘাতকতা সম্বন্ধে, গুপ্তচরবৃত্তি করতো। বিশাল বিশাল হেরেম, যা সম্ভবত ছিল মধ্যযুগীয় ইসলামি সাম্রাজ্যে সর্ববৃহৎ রাজকীয় বিভাগ, তা দেখাশোনার জন্য হাজার হাজার খোজাকৃত লোকের প্রয়োজন হতো।
দ্বিতীয় কারণ: পরিবার বা সন্তান-সন্ততির প্রত্যাশাহীন এসব খোজা মানুষগুলো অসহায় বৃদ্ধবয়সে দেখাশোনার জন্য একটুখানি আনুকুল্য লাভের আশায় মালিকের প্রতি পরম বিশ্বস্ততা ও উৎসর্গ প্রদর্শন করতো। পরন্তু যৌন-তাড়নাবিহীন খোজাকৃত ক্রীতদাসরা সাধারণত যৌন-উন্মাদনাযুক্ত ইসলামি সংস্কৃতিতে সহজেই একাগ্রভাবে কাজে মনোযোগ দিতে পারতো।
খোজা ক্রীতদাসদের অত্যাধিক চাহিদার তৃতীয় কারণটি ছিল শাসক, সেনাধ্যক্ষ ও সম্ভ্রান্তদের সমকামীতার প্রতি মোহাচ্ছন্নতা। ইন্দ্রিয়গত আকাক্সক্ষা চরিতার্থ করার জন্য রাখা খোজাদেরকে বলা হতো ‘গেলেমান’ (বা ‘গিলমান’), যারা সাধারণত ছিল সুদর্শন বালক। তারা ‘উৎকৃষ্ট ও আকর্ষণীয় পোশাকে সজ্জিত থাকতো এবং নারীদের মতো করে তাদের দেহকে সুন্দর করে রাখতো ও সুগন্ধী মাখতো।’ গেলেমানের ধারণা পাওয়া যায় কোরানের নিম্নোক্ত আয়াতে, যাতে বেহেস্তে পুরুষ-সঙ্গদানকারী বা গেলেমান সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে:
‘যেমন করে মুক্তা সুরক্ষিত, তেমনি সর্বদা তাদের (বেহেস্তবাসীদের) পাশে থাকবে উৎসর্গীকৃত পুরুষ যুবা-চাকর (সুদর্শন)।’ (কোরান ৫২:২
‘সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করবে অমর যুবারা গামলা ও জগ সহ, এবং স্বর্গীয় ঝর্ণার সুধাপূর্ণ পেয়ালা হাতে।’ (কোরান ৫৬:১৭-১৮)
আনোয়ার শেখ তার নিবন্ধ ‘ইসলামিক মোরালিটি’তে গেলেমানের বর্ণনা প্রদান করেছেন এভাবে: ‘স্বর্গের বর্ণনা বিলাসপূর্ণ জীবন, যেখানে বাস করে ‘হুরী’ ও ‘গিলমান’। হুরী হলো প্রশস্ত বাঁকা-চোখ ও স্ফীতস্তন বিশিষ্ট অনিন্দ্য-সুন্দরী চিরকুমারী তরুণী। আর গেলেমান হলো মুক্তার মতো সুন্দর, বুটিদার সবুজ সিল্কের পোশাক পরিহিত ও রূপার হার দ্বারা অলঙ্কৃত চিরতরুণ অমর বালক।’[১৭৭]
গেলেমান চর্চা আজো কট্টর ইসলামি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অংশবিশেষে ব্যাপক চর্চিত হচ্ছে। মুসলিম সমাজে গেলেমান চর্চার ধারণাটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত নবি মুহাম্মদের সময়ে আরব সমাজে চলমান ব্যাপক সমকামিতার চর্চা থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকতে পারে। পারস্যেও সমকামিতার প্রচলন ছিল। হিট্টি জানান:
‘আমরা আল-রশিদের শাসনামলে গেলেমানের কথা শুনি, কিন্তু এটা স্পষ্টতই খলিফা আল-আমিনের শাসনামল, যিনি পারস্যের দৃষ্টান্ত অনুসরণে যৌন সম্পর্কে আরব-বিশ্বে গেলেমান প্রথা প্রতিষ্ঠিত করেন। তার এক বিচারক সম্পর্কিত দলিল জানায় তিনি এরূপ চারশ’ তরুণকে ব্যবহার করতেন। কবিরাও তাদের এরূপ বিকৃত যৌনাবেগ প্রকাশ্যে প্রদর্শন এবং তাদের লেখায় দাড়িহীন তরুণ বালকদের প্রতি প্রণয়গাঁথা রচনা করতেও কুণ্ঠিত হননি।’[১৭৮]
কেবলমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদেরকেই খোজা করা হয়নি, বরং তা প্রয়োগ করা হয়েছে সকল জাতি বা বর্ণের উপর, হোক সে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ, ভারতের বাদামি বা পিঙ্গল, মধ্য-এশিয়ার হরিদ্রাভ অথবা ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ। সিগল উল্লেখ করেছেন, মধ্যযুগে প্রাগ ও ভার্দুন শ্বেতাঙ্গদের খোজাকরণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। অপরদিকে কাস্পিয়ান সাগরের নিকটবর্তী খারাজন পরিণত হয় মধ্য-এশীয়দের খোজাকরণ কেন্দ্রে। শ্বেতাঙ্গ ক্রীতদাসদের আরেকটি খোজাকরণ কেন্দ্র ছিল ইসলামি শাসনাধীন স্পেন। দশম শতাব্দীর শুরুতে খলিফা আল-মুক্তাদির (৯০৮-৯৩৭) তার বাগদাদ রাজপ্রাসাদে প্রায় ১১,০০০ খোজার সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল ৭,০০০ কৃষ্ণাঙ্গ ও ৪,০০০ শ্বেতাঙ্গ (গ্রিক)।[১৭৯]
ইতিমধ্যে বলা হয়েছে যে, মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে বাংলায় ক্রীতদাসদেরকে ব্যাপকহারে খোজা করা হতো, যা গোটা ভারতের সর্বত্র প্রচলিত ছিল। মনে হয় যে, ১২০৫ সালে বখতিয়ার খিলজি কর্তৃক বিজয়ের পর থেকেই বাংলা হয়ে উঠে খোজা সরবরাহের জন্য ক্রীতদাসকরণের এক প্রধান উৎস। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে কুবলাই খানের দরবার থেকে ভেনিসে ফেরার পথে মার্কোপোলা ভারত সফর করেন। এসময় তিনি বাংলাকে খোজা সরবরাহের একটা বড় উৎসরূপে দেখতে পান। সুলতানাত যুগের শেষ দিকে (১২০৬-১৫২৬) দুয়ার্ত বার্বোসা ও মুঘল যুগে (১৫২৬-১৮৫৭) ফ্রাঁসোয়া পিরার্দ ও বাংলাকে খোজাকৃত ক্রীতদাস সরবরাহের অন্যতম কেন্দ্ররূপে দেখতে পান। আইন-ই-আকবরী (সংকলন ১৫৯০-এর দশকে) গ্রন্থও এর সত্যতা প্রতিপন্ন করে।[১৮০] আওরঙ্গজেবের সময়ে ১৬৫৯ সালেই গোলকুণ্ডাতে প্রায় ২২,০০০ বালককে পুরুষত্বহীন করা হয়। জাহাঙ্গীরের শাসনকালে তার উচ্চ-কর্মকর্তা সাইদ খান চাকতাই ১,২০০ খোজার মালিক ছিলেন; এমনকি দয়াবান আকবরও বিপুল সংখ্যক খোজা নিয়োগ করেছিলেন। আকবরের হেরেমে, লিখেছে আইন-ই-আকবরী: ‘৫,০০০ মহিলা ছিল, যাদের প্রত্যেকের পৃথক পৃথক কক্ষ ছিল… তাদেরকে পর্যায়ক্রমে নারীরক্ষী, খোজারক্ষী, রাজপুত ও দারোয়ান পাহারা দিতো।’[১৮১]
সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য ৫০,০০০ তরুণ বালককে নিয়োজিত করেছিলেন; আর মোহাম্মদ তুঘলকের ছিল ২০,০০০ এবং ফিরোজ শাহ তুঘলকের ছিল ৪০,০০০ এরূপ বালক। সব বা অধিকাংশ সেসব বালকই ছিল খোজাকৃত। আলাউদ্দিনের বিখ্যাত সেনাপতি মালিক কাফুরও ছিলেন খোজা। সুলতান কুতুবুদ্দিন মুবারক খিলজির একান্ত প্রিয় সেনাপতি খসরু খান, যিনি ১৩২০ খ্রিষ্টাব্দে সুলতানকে হত্যা করে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সিংহাসন দখল করেছিলেন, তিনিও ছিলেন খোজা। মধ্যযুগের ইতিহাসবেত্তাগণ, যেমন মুহাম্মদ ফেরিশতা, খোন্দামির, মিনহাজ সিরাজ ও জিয়াউদ্দিন বারানী প্রমুখরা অন্যান্য বিশিষ্ট সুলতান যেমন মাহমুদ গজনী, কুতুবুদ্দিন আইবেক ও সিকান্দর লোদীদের সুদর্শন তরুণ বালকদের প্রতি কামাচ্ছন্নতার কাহিনী লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সিকান্দর লোদী একদা গর্ব করে বলেছিলেন: ‘আমি আমার কোনো ক্রীতদাসকে পালকিতে১৮২ চড়ে বসিয়েআদেশ করলে আমার সমস্ত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিও তাকে কাঁধে তুলে বয়ে নিয়ে যাবে।’[১৮৩] সুলতান মাহমুদ তার প্রিয় সুদর্শন সেনাপতি হিন্দু তিলকের প্রতি মোহাচ্ছন্ন ছিলেন।[১৮৪]
মুসলিম বিশ্বে খোজাদের চাহিদা পূরণের জন্য নজিরবিহীনভাবে পুরুষ বন্দিদেরকে খোজা করা হতো। মুসলিমরাই সর্বপ্রথম এমন ব্যাপকহারে পুরুষ বন্দিকে পুরুষত্বহীন বা খোজা করার প্রক্রিয়া শুরু করে। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ পুরুষ বন্দি, বিশেষত যারা আফ্রিকায় ধৃত হয়েছিল, তাদেরকে খোজা করা হয়েছিল। ৩৫০ বছরের ‘ট্রান্স-আটলান্টিক শ্লেইভ ট্রেড’-এ নতুন বিশ্বে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আমরিকা) এক কোটি ১০ লাখ আফ্রিকান ক্রীতদাস পাচার করা হয়েছিল; পক্ষান্তরে তেরশ’ বছরের ইসলামের কর্তৃত্বকালে তার চেয়েও বেশী সংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গকে ক্রীতদাসের শিকল পড়িয়ে পাঠানো হয়েছিল মুসলিম বিশ্বের মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া, ভারত, ইসলামি স্পেন ও অটোম্যান ইউরোপে। স্পষ্টত মুসলিম বিশ্বে প্রেরিত কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের সব বা অতি উচ্চ অংশকে খোজা করা হয়েছিল, যার কারণে এসব অঞ্চলে তারা উল্লেখযোগ্য বংশধর (‘ডায়াসপোরা’) রেখে যেতে ব্যর্থ হয়।
ইসলামি ক্রীতদাসত্বের নিদারুণ লৌহশৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়া ইউরোপীয়, ভারতীয়, মধ্য-এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের লক্ষ লক্ষ বিধর্মীর ভাগ্যও অনেকটা একইরকম ছিল। ১২৮০-র দশকে মার্কোপোলো ও ১৫০০-র দশকে দুয়ার্ত বার্বোসা স্বচক্ষে ভারতে বিপুল সংখ্যায় খোজাকরণ প্রত্যক্ষ করেছেন। একই প্রক্রিয়া চলে সম্রাট আকবর (মৃত্যু ১৬০৫), জাহাঙ্গীর (মৃত্যু ১৬২৮) ও আওরঙ্গজেবের (মৃত্যু ১৭০৭) শাসনামলে। সুতরাং ভারতে গোটা মুসলিম শাসনামলে খোজাকরণ ছিল একটা প্রচলিত নিয়ম। সম্ভবত এটা ইতিপূর্বে উল্লেখিত ভারতের জনসংখ্যা ১০০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ২০ কোটি থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ কোটিতে হ্রাসকরণে একটা বড় অবদান রেখেছিল।
[আগামী পর্বে আলোচিত হবেঃ ইসলামি দাস-ব্যবসা]
সূত্রঃ
174. Pellar Ch, Lambton AKS and Orhonlu C (1978) Khasi, In The Encyclopaedia of Islam, E J Brill ed., Leiden Vol. IV, p. 1089
175. Milton, p. 126
176. Segal, p. 52
177. Shaikh A, Islamic Morality, http://iranpoliticsclub.net/islam/islamic-morality/index.htm
178 Hitti PK (1948) The Arabs: A Short History, Macmillan, London, p. 99
179. Segal, p. 40-41; Hitti (1961), p. 276
180. Moreland, p. 93, note 1
181. Ibid, p. 87-88
182. Palanquins were used for carrying the women, especially the newly-married brides, in medieval India.
183. Lal (1994), p. 106-09
184. Elliont & Dawson, Vol. II, p. 127-29
চলবে—
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৯)
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৮)
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৭)
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৬)
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৫)
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৪)
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৩)
মুক্তমনা আমাকেও পেয়েছে অগ্নি দেয়ালে আটকা পড়েছি মনে হয়- গত কয়েকদিনের অক্লান্ত চেষ্টায় আজ এলাম। এমন করে আসতে না পারলে অচিরেই হারিয়ে যাব-
আর এমন সুন্দর লেখা থেকে বঞ্চিত হব- 🙁
@ আবুল কাশেম,
না কাশেম ভাই, মুক্তমনায় ঢোকার সমশ্যার সমাধান হয়নাই। কোন কোন পোষ্টের যেমন গত কাল থেকে “মোহাম্মদ ও ইসলাম”এর শেষ পোষ্টটির প্রথম পৃষ্ঠায় ঢুকা গেলেও দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ মন্তব্যের পৃষ্ঠায় কোনও ভাবেই ঢুকতে পারলামনা।
অথচ অন্যান্য যেকোনও ব্লগের যেকোন পৃষ্ঠায় ঢুকতে কোনই সমস্যা হয়না।
এব্যাপারে আমি জোরালো ভাবে মুক্তমনার মহামান্য পরিচালক জনাব অভিজিৎ রায়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
এধরনের ঘটনা চলতে থাকলে মুক্তমনার পাঠক বর্গ মুক্তমনা হতে সঠিক জ্ঞান আহরন করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।মুক্তমনার পাঠক সংখ্যা দিন দিন কমে যেতে থাকবে। আমি লক্ষ করেছি আগে অনেক আগ্রহী পাঠকদের উপস্থিতি ছিল,তাদের এখন আর পাওয়া যায়না। সম্ভবতঃ তারা ঢুকার সমস্যার কারনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।
আমার কম্পিউটার, মইক্রোসফটের expert ছফট ware দ্বারা আমার কম্পিউটারের গভীরে সর্বত্র ঢুকে তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান চালিয়ে শেষে বলেছেন,”আপনার কম্পিটারে কোনই সমস্যা নাই,এ সমস্যাটা মুক্তমনা ছাইটের কিছু ত্রুটি থাকার জন্য হচ্ছে। যে কথা আপনিও বলেছেন মুক্তমনার fire wall এর কারনে হচ্ছে।
এর পর আমি আমার ব্রৌজার time warner দ্বারা পরীক্ষা করালেও ঠিক একই উত্তর দেয়।তারাও আমার কম্পিউটারে কোন ত্রুটি পায় নাই।
আর হ্যাঁ কাশেম ভাই,লক্ষ করিয়াছেন কিনা জানিনা,আমাদের দেশে গ্রামে চাষীরা যে গরুটাকে হালী (যার দ্বারা হাল চাষ করানো হয়}বানাতে চায় সেই এঁড়ে গরুটাকে মূচীদের(যারা গরুর চামড়ার ব্যবসা করে}সময় মত ছাট (castratioin বা অন্ডোকোষের বীচি কেটে দেওয়া)হয়।
এটা না করলে ষাঁড়টি বেশী sexy ও রাগী থাকে এবং তাদের দ্বারা হাল চাষের মত পরিশ্রম ও ধৈর্যের কাজ করানো সম্ভব হয়না।
তা হলে তো দেখা যাচ্ছে দাসদের খোজা করিয়া ব্যবহার করা এবং এড়ে গরুদের castration করিয়া হালের ব্যবহারোপগী করার মধ্যে কোনই পার্থক্য নাই।
মানুষ আর পশুকে একই পর্যায়ে ফেলা হল?
কী বলেন?
আর এরই নাম আমাদের মুছলিম সভ্যতা? এগুলী পড়তেও মনটা ঘিন ঘিন করতে থাকে।
ধন্যবাদ
ভাল থাকুন।
বর্বরতার কি ভয়ানক চিত্র।
খোজাকরন পদ্ধতি নিয়ে কোথাও একটু লিখে দিলে ভালো হত মনে হয়।
@কাজী রহমান,
আমি যতটুকু জানি–এই পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ পুরুষাঙ্গ, টেস্টিকল (বাংলা জানিনা) সহ কেটে ফেলা হত। এই অবর্ণনীয় ব্যথার জন্য কোন অজ্ঞানের (অ্যানাস্থেসিয়া) ঔষধ ব্যবহার করা হত না। ইনফেকশন হত যার ফল্র অধিকাংশ ভূক্তভগীই মারা যেত। যারা বেঁচে থাকত তাদের প্রস্রাব করার জন্য এক ছিদ্র ছাড়া আর কিছুই রইত না।
বুঝতেই পারছেন যৌন ক্ষমতার সম্পূর্ন অবসান হত।
আমি খোজাকরণ নিয়ে অনেকদিন আগে কোথায় যেন বিশদ পড়েছিলাম। এই মূহূর্তে সূত্র দিতে পারছি না।
এখনও অফিসের কম্পুটারে মুক্তমনা ঠিক মত দেখা যাচ্ছেন। তাই বেশী মন্তব্য করতে পারব না। একমাত্র সপ্তাহান্তে, শুক্র, শনি ও রবিবার সময় পেলে আরও মন্তব্য করা যাবে।
আপনার সমস্যার (মুক্তমনায় ঢোকার) সমস্যার সমাধান হয়েছে কি?
@আবুল কাশেম,
কোথায় যেন পড়েছি এ্যান্টিসেপ্টিক পদ্ধতি ব্যবহৃত না হওয়ায় অপারেশনের পর প্রায় ৭৫% মারা যেত। কি সাঙ্ঘাতিক মানব জীবন বিনষ্ট করার এক ইতিহাস লুকিয়ে আছে ইসলামের এ চর্চার মাঝে।
@আবুল কাশেম,
হ্যাঁ, খোজাকরন পদ্ধতি ঐ রকমই ছিল বলে জানি। এটাকে মৃত্যুদণ্ড সমপর্যায়েই ধরা হত। কি নিষ্ঠুর।
এখনও হয়নি। জেনেছি সার্ভার বদলানো হচ্ছে। ওটা না হওয়া পর্যন্ত ধয়রয্য ধৈর্য্য ধ্তরে হবে। ধৈর্য্য ধরছি। সবুরে মেওয়া ফলে (এই মেওয়া জিনিশটা কি জানেন নাকি?)।
@কাজী রহমান,
হাঁ, জানি—হুরি, পরি, স্ফীত স্তন, পুরু মসৃণ ললাট, সাদা শারাবান তহুরা, আদা মখানো নেয়ামত পানি…যৌন উন্মাদনা…যা চিন্তা করবেন তাই-ই…
ভাগ্য ভাল, কয়েক মিনিটের জন্য সবুরের মেওয়া পেলাম্, অফিসের কম্পুটারে।
@আবুল কাশেম,
আমার মনে হয় সম্পূর্ণ পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হলে যে কেউই মারা যাবে। কোজাকরণে হয়ত অণ্ডকোষ হতে অণ্ডগুলো বের করে ফেলে দেয়া হতো; গরু, ছাগল, মোরগ ইত্যাদি পশুপাখি খাসি করাতে যেমনটি করা হয়ে থাকে।
@তামান্না ঝুমু,
আপনার ধারণা সত্যি হতে পারে–তবে অণ্ডকোষ থেকে বিচি বের করাকে মনে হয় খাসিকরণ বলা হয়।
স্মৃতি থেকে বলছি–খোজাকরণের কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ক্রীতদাসই মারা যেত। যারা বেঁচে থাকত তদেরকেই হারেমের প্রহরী নিযুক্ত করা হত।
কি সাংঘাতিক তথ্য! অথচ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ইসলামের এই বীভৎসতা সম্বন্ধে একেবারেই অজ্ঞ। ভারতে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন ও আধিপত্য বাদের বিরুদ্ধে সবাই উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু ৯৫০ বছরের মুসলিম আগ্রাসন ও শাসনের পক্ষে শুধু মুসলমানরাই নয়, বহু অমুসলিম “আঁতেল” প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ইসলামের সবচেয়ে বড় সার্থকতা সে মানুষকে ভ্রান্ত বেড়াজালে আটকে ফেলে।
@গোলাপ,
একেবারে সত্যি কথা। ইসলামের সবচাইতে বেশী প্রশংসা আসছে বিশ্বের সর্বশক্তিমান নেতার কাছ থেকে–মানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছ থেকে।
দেখা যাচ্ছে যখনই কোথাও ইসলামী সন্ত্রাসী হচ্ছে—ওবামা সহ পাশ্চাত্তের বেশিরভাগ নেতারাই ইসলামী তথা আরব সভ্যতার আরও বেশী প্রশংসা করছেন। ইসলাম যতই বর্বরতা দেখাচ্ছে এই সব নেতারা ততই বলছেন–ইসলাম শান্তির ধর্ম।
কী অপুর্ব খেলা চলছে–ইসলামকে নিয়ে।
অসাধারণ এই লেখাটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ , এই লেখাগুলো না পড়লে ইসলামের মহা শান্তি সম্পর্কে সব অজানাই থেকে যেত ।