এই গল্পটি আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ও প্রিয় দুজন ব্যক্তি; ফরিদ দাদা এবং অভিজিৎ দাদাকে উৎসর্গ করলাম।
১৯৭১ সন। হানাদারদের উৎপীড়ন চলছে তামাম বাংলাজুড়ে। কামান, গোলাবারুদের দামামা বাজছে, বিষাক্ত ধোঁয়া উড়ছে বাংলার আকাশে-বাতাসে। গ্রাম বাংলার সবুজ শাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে পিশাচীরা। শহরের পিচঢালা কালোরাস্তা মানবরক্তে রাঙাচ্ছে ওরা বিষম উল্লাসে। গ্রামে,শহরে বাড়িঘর সবকিছু ধ্বংস করে চলেছে খেলা ভেবে। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট তো চলছেই নিত্যনৈমিত্তিক। এখানে সেখানে বাঙালির গণনাহীন লাশ ও বধ্যভূমি। বাংলার মাটি তারই সন্তানদের মরণকূপ। বর্বরতার এই চরম বীভৎসতা দেখে, মাতৃভূমির, মায়ের, বোনের অপমান দেখে প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। এমনই একটি দামাল ছেলে দীপু। ১৬-১৭ বছর বয়স। বাবা ইশকুল মাস্টার। দুটি ভাইবোন ওরা, দীপু আর নীলা। নীলার বয়স ১৪। কিছুদিন থেকে দীপুর পরিচিত অনেকেই যুদ্ধে যাচ্ছে। কেউ কেউ বাবা-মায়ের অনুমতিতে আর কেউ কেউ অনুমতি না পেয়ে পালিয়ে। দীপুর কিশোরমনেও উঠেছিল প্রতিবাদের তীব্র ঝড়। দীপু বাবা-মাকে একদিন এসে বলল, আমি যুদ্ধে যেতে চাই। বাবা-মা তো দিশেহারা, ব্যাকুল। কী বলছিস খোকা! কেঁদে কেটে চিৎকার চেঁচামেচি করে একাকার। কোথায় যাবি, কী খাবি, কোথায় ঘুমাবি, আমাদের কী হবে, তুই কি অস্ত্র চালাতে জানিস, ওরা তো তোকে মেরে ফেলবে; আমরা কী নিয়ে বাঁচবো। প্রশ্ন ও কান্নাকাটির ঝড়-তুফান বেহাল কাণ্ড।
দীপু বলল, যুদ্ধে না গেলেও তো মেরে ফেলবে। দেখছনা আমাদের আশেপাশের কতজনকে ওরা ধরে নিয়ে গেল, তারা তো আর ফিরে এলোনা। কতজনের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিল,কতগুলো মেয়েকে ধরে নিয়ে গেল। পাশের বাড়ির মিনু আপাকেও তো ধরে নিয়ে গেল। এভাবে কাপুরুষের মত না মরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মরা অনেক ভাল না! মা কান্নায় ভেঙে গিয়ে বললেন,খোকা তোর সতের বছর এখনো মাঝে মাঝে তোকে আমি মুখে তুলে খাওয়াই, তোর পরনের কাপড় আমি নিজের হাতে ধুই, তোর সব জিনিসপত্র আমার হাতে গুছিয়ে রাখি। যুদ্ধে গিয়ে তুই না খেয়ে,না নেয়ে,ময়লা কাপড়ে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াবি। কখন যে শত্রুরা তোকে মেরে ফেলে দেবে। তোর লাশটাও হয়ত দেখতে পাবোনা। তুই যুদ্ধে গেলে আমার মুখে খাবার রুচবে কীকরে। আমি বাঁচবো কেমন করে। ওরা যদি আমাদের সবাইকে মেরে ফেলে,ফেলুক। সবাই একসাথে মরবো।তুই যাসনে বাবা। দীপু বলল, মা তুমি আমার জন্মদাত্রী মা। তাই আমাকে আটকে রাখতে চাইছ। আমাদের জন্মভূমিও তো আমাদের সবার মা। দেশমাতার এতবড় দুর্দিনে তুমি তোমার ছেলেকে স্বার্থপরের মত ঘরে বেঁধে রাখবে!এতটা আত্মকেন্দ্রিক আমরা কী করে হই বল? মা-বাবা ছলছল নয়নে বললেন, তোকে আর বাধা দেবনা। যা, যুদ্ধে যা। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত কর। একবিন্দু রক্ত,একবিন্দু নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ করবি। সেই রাতেই দীপু সবার বুকভাঙা কান্নায় বিদায় নিল যুদ্ধের উদ্দেশ্যে। যাবার বেলায় বাবা-মা জিজ্ঞেস করলেন,কোথায় থাকবি বাবা; কি করে তোর খবরা-খবর পাবো। দীপু বলল, এখন কিছুই বলা যাবেনা। পরে যদি পারি খবর পাঠাবো। সেই দুরন্ত কিশোর মা-বাবা ও বোনের কলিজা ছিঁড়ে গভীর রাতের অন্ধকারে মূর্ছিত মায়ের বুক থেকে এক ঝটকায় বেরিয়ে গেল। রাতের আঁধারে মিশে গেল। উৎকণ্ঠায়, দুশ্চিন্তায় দিনরাত কাটছে বাবা মা ও বোনের। দীপুর জন্য চিন্তা তো আছেই, সাথে নিজেদের জন্যও। কখন হানাদারেরা এসে হানা দেয়! এক মাস পরে দীপুর এক বন্ধু এসে খবর দিলো দীপু ইন্ডিয়ায় আছে, যুদ্ধের ট্রেনিং নিচ্ছে। যাক কিছুটা স্বস্তি অন্তত পাওয়া গেল।
গ্রামে হায়েনাদের অত্যাচার দিনদিন বেড়ে চলেছে। প্রতিদিনই কারো না কারো বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। পুরুষদেরকে হত্যা করছে, যুবতী কিশোরী মেয়েদেরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সব মানুষের অবস্থা যেন গুলিবিদ্ধ পাখির মত। ছটফট ছটফট করছে সবাই দিনেরাতে। কখন কার উপর হামলা হবে কেউ জানেনা।দিকেদিকে মৃত্যু, রক্ত, লাশের স্তূপ, ধ্বংস আর ধ্বংস, সর্বনাশের কালো হাতছানি। দেশমাতৃকার এই মহাদুর্দিনেও কিছু মানুষের উল্লাস ধরেনা।ওরা হানাদারদের খাতির-যত্ন করে,বাড়িতে এনে খাওয়ায়। তরুণী মেয়েদের সন্ধান দেয়। প্রাণভয়ে অনেকেই নিজ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এই সামগ্রিক বিপদের দিনে সবারই তো মহাবিপদ। কারো উপর গিয়ে তাদের বিপদের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়া ঠিক হবেনা ভেবে দীপুর বাবা-মা আর কোথাও গেলেন না। একরাতে হানাদারের গাড়ি এসে থামলো দীপুদের বাড়ির সামনে। ভয়ে যেন প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিল। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলো। নীলা বাবা মা তিনজনে জড়াজড়ি করে সেঁটিয়ে ছিল ঘরের কোণে। বাবা-মা দুজনেই প্রাণ দিয়ে ঢেকে রাখতে চাইলেন নীলাকে। কিন্তু হায়েনাদের শিকারী চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেন না। বাবা-মা ওদের পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। বললেন, মেরে ফেল আমাদের সবাইকে। হায়েনাগুলো ওদের কাউকেই মারধোর করল না। বেশ মাজি, বাবাজি করে কথা বলল। আর নীলাকে নিয়ে চলে গেল। যারার সময় বলে গেল, তোমাদের মেয়ে আমাদের কাছে অতি আদর-সোহাগেই থাকবে। মা-বাবা আর্তনাদ করে বললেন,বাবারা আমাদের সবাইকে মেরে ফেল;ওকেও মেরে ফেল, তবুও ওকে নিয়ে যেওনা। নীলা আকুল হয়ে বলল; বাবাগো, মাগো আমায় বাঁচাও। নীলার আকুতি শুনে হায়েনাগুলো তাদের বিষ-দাঁত কেলিয়ে অট্টহাসি হাসতে লাগলো। বাবা-মা যগপৎ ভূমিসাৎ হলেন। গগনবিদারী আহাজারিতে বলতে লাগলেন; মানিকরে, বাছারে তোকে রক্ষা করতে পারলাম না। হায়েনার দল এসব কথায় কর্ণপাত না করে আনন্দিত চিত্তে চলে গেল শিকার নিয়ে। মা-বাবা পড়ে রইলেন অজ্ঞান হয়ে। কৃষ্ণপক্ষীয় সময় যেন থেমে রইল। কেমন করে যে কাটলো কয়েকটি মাস ব্যক্ত করার কোনো উপায় নেই।
একদিন যুদ্ধের দামামা থেমে গেল। দেশ স্বাধীন হলো। দীপু ফিরে এলো। ওর পায়ে গুলি লেগেছিল।একটি পা খোঁড়া হয়ে গেছে। তবুও দুঃখ নেই। দেশ তো স্বাধীন হলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা ছেলেও ফিরে এলো বুকে। অনেক লোকজন দেখতে আসে দীপুকে, সবাই গর্ব করে এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে। এলোনা শুধু নীলা। কিছুদিন পরে নীলার ১টা চিঠি এলো। সে ঢাকায় নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে আছে। বাবা, মা, ভাই কেউ যদি বেঁচে থাকে তাকে যেন বাড়ি আনতে যায়। সে খুবই অসুস্থ,শরীর খুবই দুর্বল তাই একা আসতে পারবেনা। যেন জন্মান্তর পেরিয়ে গেছে পরিবারের কারো সাথে দেখা নেই,খবরাখবর নেই। চিঠি পেয়ে বাবা গেলেন নীলাকে দেখতে। বাবা তো নীলাকে প্রথমে দেখে চিনতেই পারেননি। সেই ফুলের মত ফুটফুটে মেয়ের এ-কী হাল!চেনার কোনো উপায় নেই। কোথায় তার দিঘলকালো আজানুলম্বিত চুল? কোথায় সে ফুলের হাসি? কোথায় সে জোছনার মত গায়ের রঙ? কোথায় সেই টানা টানা ছলছলে চোখ?ন্যাড়া মাথা। সারা গায়ে ফোসকার মত কালো কালো দাগ। চোখের চারপাশে কালো। আপাদমস্তক বিধ্বস্ত, এ যেন বেদনার ভাণ্ডার!বাবা-মেয়েতে জড়াজড়ি করে সে-কি কান্নার ঢল! যেন পৃথিবীর সমস্ত কান্না ভেঙে পড়েছে ওদের মাঝে। অনেকক্ষণ কান্নাকাটির পর নীলা জিজ্ঞেস করলো মা ও ভাইয়ের কথা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাই দেশ স্বাধীন করে ফিরে এসেছে জেনে নিজের অনেক দুঃখ যেন নিমেষে ভুলে গেল। বাবাকে বলল নিজের অন্ধকার কয়েকটি মাসের কথা।
নীলাকে হায়েনাগুলো কোথায় নিয়ে রেখেছিল সেটা নীলা জানেনা। একটা চির-অন্ধকার বাঙ্কারে বন্দি ছিল ওরা ২৫-৩০ জন মেয়ে। ১০ বছর থেকে ৪০ বছর বয়েসের নারীরে ভর্তি ছিল কুঠুরিটি। দিনেরাতে হায়েনারা ওদের ওপর হামলা করতো। নীলা তার লম্বা চুল গলায় বেঁধে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। সেজন্য পেয়েছিল কঠোর শাস্তি,১০০ বুটের আঘাত। এরপর অনেকেরই মাথা ন্যাড়া করে দেয় নেকড়েগুলো। যাতে ফাঁস দিতে না পারে সেজন্য ওদের শাড়ি পরতে দেয়া হতনা। ছোট একটা লুঙ্গি আর একটা গেঞ্জিই ছিল ওদের বসন। অনেক মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। হায়েনারা জানতে পেরে ওদের মেরে ফেলেছিল। সেই মেয়েদের জায়গায় এনেছিল নতুন মেয়ে। এভাবে নরকের কীটের মত কাটছিল কৃষ্ণপক্ষীয় সময়। সেখান থেকে বের হবার আশা কারুরই ছিলনা। কী বীভৎস ছিল সেইসব দিনগুলি!মনে হচ্ছিল জন্ম-জন্মান্তর কেটে যাবে পিশাচখানায়। কেউ কেউ বলত ওরা বোধ হয় মৃত্যুর পরে দোযখে এসেছে। ওরা মনেপ্রাণে মৃত্যু কামনা করত। মৃত্যুও পালিয়ে গিয়েছিল পিশাচীদের ভয়ে।
একদিন নেকড়েগুলো আর এলোনা। বাইরে থেকে আলো দেখা গেল। কোমলকণ্ঠে মাতৃ-সম্বোধন ভেসে এলো,” মায়েরা তোমরা বেরিয়ে এসো। তোমাদের আর কোনো ভয় নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তোমরাও স্বাধীন।“ বন্দি মেয়েদের কারো কারো গায়ে স্বল্প বস্ত্র ছিল। কারো গায়ে তাও ছিলনা। দুই একজন ভীরুপায়ে আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে গেল। দেখলো ইন্ডিয়ান সৈন্যবাহিনীর কয়েকজন সেনা হাতে কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। কয়েকজন শিক সেনা নিজেদের মাথার পাগড়ি খুলে বিবস্ত্রাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজের গায়ের আড়াল করে দাঁড়ালো। ওদেরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ঢাকায় নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে পৌঁছে দিল। সেখান থেকে সবাই যার যার আপনজনদের সাথে যোগাযোগ করে বাড়ি ফিরতে পারবে। সেদিন মেয়েরা মুক্তি পেয়েও কেঁদেছিল। সে কান্না ছিল আনন্দের এবং অজানা ভবিষ্যতের চিন্তায়। পরিবার ওদেরকে গ্রহণ করবে তো? সমাজ ওদের ঘৃণা করবে না তো?কী-ই বা হবে ওদের ভবিষ্যৎ? নিজেদের নানান প্রশ্নে বিদ্ধ হচ্ছিলো নিজেরা। নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসার পরে সবার চিকিৎসা হচ্ছে। সকলের শরীর ভীষণ দুর্বল। গায়ে ঘা, পাঁচরা। সারা গায়ে উকুন। কেউ কেউ মানসিক বিকারগ্রস্ত। কেউ কেউ অন্তঃসত্ত্বা। বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তার ও সাহায্যকারী টিম এসেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ও মানুষকে সাহায্য করতে। অন্তঃসত্ত্বাদের অনুমতিক্রমে তাদের গর্ভপাত করানো হচ্ছে। নীলাও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। ওর গর্ভপাত করানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ ওর গর্ভাবস্থা ৭মাস পেরিয়ে গিয়েছিল আর ওর শারীরও বেশ দুর্বল ছিল। তাই প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওকে শত্রুর বীজটি জন্ম দিতে হয়েছিল। একটি কন্যা হয়েছিল তার। এক ড্যানিস দম্পতি নবজাত কন্যাটিকে দত্তক নেয়। ওদের কাছে শিশুকন্যাকে হস্তান্তরের সময় নীলার সে কী কান্না! নীলা চিৎকার করে কেঁদে বলেছিল, তোর কলঙ্কিনী, অভাগিনী মাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস? কী আশ্চর্য! যে শত্রুর ভ্রূণের প্রতি তার তীব্র ঘৃণা ছিল, জঘন্যতম উৎসবের মধ্য দিয়ে যার জন্ম তার উপর নীলার মাতৃত্বের মায়া জন্মালো কী ভাবে?
সব কথা বলা হলো নীলার। নীলা বললো,বাবা দুঃখ দুর্দশা তো অনেক গেল এবার বাড়ি যাবো। মায়ের হাতে পেট পুরে ভাত খাবো। কতকাল যেন শান্তিতে ঘুমাই না। বাড়ি গিয়ে শান্তিতে একটু ঘুমবো। বাবা বললেন, তা কী করে হয়, তুই এখানেই থাক। আমরা তোকে চিঠি দেব, মাঝেমাঝে এসে তোকে দেখে যাবো। নীলা আকুল হয়ে বললো, কেন বাবা, কেন আমি এখানে থেকে যাবো? আমায় তুমি বাড়ি নেবেনা? বাবা বললেন, সমাজ তোকে মন্দ বলবে; সবাই ঘৃণা করবে। আমাদেরকে ঘৃণা করবে,একঘরে করবে। কেন বাবা আমার কী অপরাধ? আমি কি স্বেচ্ছায় গিয়েছিলাম? ভাইও তো যুদ্ধে গিয়েছিল, সে তো ফিরে এসেছে ঘরে। ওকে তো কেউ মন্দ বলেনা, আমায় কেন বলবে! ভাই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, নিজের পা দিয়েছে। আমিও তো নিজের সম্ভ্রম দিয়েছি। ভাইয়ের জন্য তো আমারও গর্ব হয় তোমাদের মত। বীর ছেলে তোমাদের গর্ব আর বীরাঙ্গনা মেয়ে কেন তোমাদের লজ্জা?বাবা নীলার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হাউ মাউ ক’রে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলেন। নীলা আর্তনাদ করে বলল, আমাকে তোমরা ভুলে যেও বাবা। মনে ক’রো আমি ম’রে গেছি অথবা নীলা নামের তোমাদের কোনো সন্তান ছিলনা কোনদিন। কখনো আমার খোঁজখবর নিওনা।
সহায়িকা;
১। আমি বীরাঙ্গনা বলছি—নীলিমা ইব্রাহিম
২। পূর্ব পশ্চিম—সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩। আমাদের বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুরা ঃ পাপমোচনের সময় এখনই—ফরিদ আহমেদ
আপনার লেখা মন ছুঁয়ে গেল।
@সপ্ন, ধন্যবাদ মতামতের জন্যে।
লেখাটিতে গত কয়েকদিন ধরে কমেন্ট করা যাচ্ছিলো না। তাই উত্তর দিতে দেরী হল।
আমাকে কেউ লেখা টেখা খুব বেশি উৎসর্গ করে না। আর আপনার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন মর্মস্পর্শী লেখাটা আমাকে উৎসর্গ করাইয় গর্বিত বোধ করছি, যদিও এর যোগ্য আমি নই।
মুক্তমনায় লিখে যান এভাবে সবসময়।
@অভিজিৎ,
এটা আপনার বিনয়। আপনার যোগ্যতার কাছে এই লেখা উৎসর্গের ব্যাপার কিছুই নয়।
মুক্তমনার সাথে যেদিন আমার পরিচয় ঘটেছে সেদিন থেকেই মুক্তমনা আমার মৌলিক চাহিদার মত। এর কাছ থেকে দূরে থাকা মোটেই সম্ভব না।
আপনার গল্প জুড়ে কাব্যের ছোঁয়া; হৃদয়ে মোচড় দেয়া আবেগময় ভাষা!
নারীদের কৃষ্ণপক্ষ এখনো থেমে আছে; আপনার গল্পেও সেই ইংগিত রয়েছে; মুক্তিযুদ্ধোত্বর বাংলাদেশে বীরাঙ্গনা নারীদের অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণভাবে।
এখানে মনে হয়, বাবাও সমাজের কাছে বন্দী। নারীরা যেমন। নইলে যে বাবার বুক ফেটে যায় মেয়ের জন্য, তাকে না নিয়েই ফিরতে হয় কেন তাকে? আমরা শুধু নারীর বন্দিত্বের কথা বলি; কিন্তু পুরুষেরাও যে সমাজের কাছে বন্দী, সে কথা বেমালুম ভুলে যাই।
উপমাটি দারুণ হয়েছে। কিন্তু পিশাচী কেন? শয়তানের উপর এই নারীত্ব আরোপ কেন?
মুক্তির মাসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ আরও আসুক মুক্তমনায়! আমাদের মুক্তির যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি; মুক্তমনাও অন্য এক মুক্তির যুদ্ধ করে যাচ্ছে, কুসংস্কার ও অজ্ঞানতা থেকে আলোর পথে মুক্তি।
@কাজি মামুন,
সামাজিক আচারগুলো মানুষেরই তৈরি। আবার মানুষই সে আচারে আছাড় খায়। আচার কাউকে আছাড় দেয়ার সময় নারী পুরুষ বিচার করেনা।
নারী পুরুষ যে কেউই দুষ্ট হতে পারে। আর ইদানিং কালে সবক্ষেত্রে লিঙ্গ নিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। যেমন; এখন আর মহিলা কবি, মহিলা ডাক্তার ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়না। ইংরেজী ভাষাতে যেমন আগে বলা হত camara-man,mailman,landlord; এখন বলা হয় photographer, mailcarrier, home woner ইত্যাদি।
জীবন যতদিন থাকে যুদ্ধও ততদিন থাকে। ভিন দেশীদের সাথে যুদ্ধ এক রকমের,অন্যায়, কুসংস্কার, অজ্ঞানতা এসবের বিরুদ্ধে আভ্যন্তরীন যুদ্ধ আরো কঠিন। অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
দারুন লাগল!!!
৭১ এর যুদ্ধ বলুন, ভিয়েতনামের যুদ্ধ বলুন প্রতিটা যুদ্ধেই নারীরা এভাবেই নির্যাতিত হচ্ছে… একই হায়েনারা শুধু পোশাক পালটিয়ে ফিরে আসছে…
কে বেশি দায়ী বলুন তো! পাকিস্তানি হায়েনারা যারা ধর্ষন করে রেখে গেল নাকি আমরা যারা নিজেদের কন্যাকে বরন করার সাহসটুকু দেখাতে পারলাম না!!!
@রাহনুমা রাখী,
সভ্যতার(যদি থাকে)সবচেয়ে বড় ক্ষত যুদ্ধ,আর তার চেয়েও বড় লজ্জা এই যুদ্ধের জন্য মানুষকে তৈরী করতে হয় সেনাবাহিনী। প্রশিক্ষণ দিতে হয় ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করবার । যেকোন যুদ্ধে এখনো টার্গেট হয় সাধারন মানুষ। আমরা ৭১ এ এত নির্যাতন ভোগ করার পরেও আমাদের সেনাবাহিণিকে লেলিয়ে দেই আমাদের পাহাড়ি ভাইদের উপরে। আমাদের সেনাবাহিনী ধর্ষণ করে আমাদের পাহাড়ি বোন দের। এটাই নাকি সভ্যতা!!!
@সপ্তক,বিদেশী শকূনের চেয়ে দেশের সরকারের লেলিয়ে দেয়া দেশী শকূনগুলো কম কীসে?
@রাহনুমা রাখী,
শুধু যুদ্ধ কেন, যুদ্ধ ছাড়াও ত নারীরা পৃথিবীর সব দেশেই ধর্ষিত হচ্ছে কম-বেশি। কোন পুরুষ ধর্ষিত হয়না। ধর্ষণের মনোবৃত্তি শুধু পুরুষের।
পাকি হায়েনারা যতটা নির্যাতন করেছে আমাদের নারীদের উপর তার চেয়ে অনেক বেশি অপমান আমরাই তাঁদের করেছি।ওঁদের দুঃখকে নিজের দুঃখ না ভেবে কেবল কাটা ঘায়ে নুন-মরিচের ছিটা দিয়েছি।
@তামান্না ঝুমু,
দ্বিমত পোষন করি।নারীদের মতন অত সংখ্যায় না হলেও পুরুষরাও যৌননির্যাতনের শিকার হয়।জেলখানা থেকে শুরু করে বয়েজ হস্টেল থেকে সর্বত্র-ই হচ্ছে এমন প্রতিদিন।পাদ্রী-পুরুত-মোল্লারা নাবালক শিশুদের সাথে অনেক সময় যে আচরন করে তা ধর্ষণের নামান্তর।ধর্মগুরুদের আলখাল্লার তলা থেকে দমিয়ে রাখা কাম বিকৃত হয়ে বেরিয়ে আসে। আসলে ধর্ষনকে শুধুমাত্র কামচরিতার্থ করা হিসেবে দেখলে চলবেনা। এটা আসলে দুর্বলের উপর সবলের সদর্প প্রকাশ।শক্তিমত্তা জাহির করার অন্যতম কার্যকরি উপায়।তাই শিকার পুরুষ না নারী, ধর্ষক পুরুষ না নারী এই চুলচেরা বিচার চলে না।
প্রসঙ্গত কিছুদিন আগে কলকাতার পার্ক স্ট্রীটে একজন ভদ্রমহিলাকে ধর্ষন করে কিছু যুবক।ভদ্রমহিলার “দোষ” তিনি রাত্রে বারে বসে মদ্যপান করছিলেন।সেখানে কিছু যুবকের সাথে আলাপ হয়।তারা ফেরার পথে ভদ্রমহিলাকে লিফট দেবার প্রস্তাব দেয় ও তিনি তা গ্রহন করেন।সেই সুযোগে তারা তাকে গাড়ির ভেতর ধর্ষন করে।পুলিশকে জানাতে গেলে থানার এক কর্তব্যরত অফিসার শুনিয়ে শুনিয়ে আরেকজন অফিসারকে ঈঙ্গিতপূর্ণভাবে বলে, “চল আমরাও বারে গিয়ে মদ খেয়ে আসি!” দ্বিতীয় অফিসার তাতে রাজি না হলে প্রথমজন মন্তব্য করে “এই জন্য তোমার আজও কোন গার্লফ্রেন্ড হল না”। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজ্যের মন্ত্রীরা টি ভিতে বিবৃতি দেন যে ভদ্রমহিলা চরিত্রহিন (কারন তিনি বারে বসে রাত্রিবেলা মদ খাচ্ছিলেন) এবং মধুচক্রে জড়িত(কারন বিবাহবিচ্ছিন্না।অপরিচিত যুবকদের থেকে লিফট নেন ইত্যাদি!)। ‘মাননীয়া’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানান যে ওই ধর্ষনের অভিযোগ মিথ্যা এবং তা বিরোধি পক্ষের চক্রান্ত কারন তা করা হয়েছে তাঁর সরকারকে হেয় করতে(তদন্ত তখনো শেষ হয়নি।পরে প্রমাণিত হয় ধর্ষনের অভিযোগ সত্যি)।
এই ঘটনায় কি দেখা গেলনা যে শুধু যারা জবরদস্তি মৈথুনে বাধ্য করে শুধু তারাই ধর্ষক নয়।পুলিশ মন্ত্রী আমলারাও মৈথুন না করেও ধর্ষন করতে সক্ষম।পশ্চিমবংগে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তো একজন নারী। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভের এই বিভৎস প্রকাশ তাঁকে ধর্ষকের ভুমিকাতেই নিয়ে গেছে।
@অনামী, পুরুষ ধর্ষিত হলেও সেটা হয় পুরুষের মাধ্যমে, নারীর মাধ্যমে নয়।
@তামান্না ঝুমু,
এটাও অতিসরলিকরন। আবু ঘ্রাইবের সকল আমেরিকান সৈনিক পুরুষ ছিলনা।বেশীরভাগ বন্দিও নারী ছিলনা।
প্রচলিত ধারনায় ধর্ষন বলতে যা বুঝি, প্রাকৃতিক নিয়মে একজন নারীর পক্ষে তা পুরুষের উপর করা সম্ভব নয়। কিন্ত ধর্ষনের নির্ণায়ক মাপকাঠি অত সরু নয়।
@তামান্না ঝুমু,
ধারণা ঠিক নয় ঝুমু। নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণের বিষয়টা ধীরে ধীরে উঠে আসছে বিভিন্ন গবেষণায়, পত্র-পত্রিকায়। যদিও পুরুষ কর্তৃক নারী ধর্ষণের তুলনায় তা অনেক কম, কিন্তু গুরুত্ব না দেবার পর্যায়ে তা নেই। পত্র-পত্রিকায় এগুলো ইদানিং আসা শুরু হয়েছে। নারীদের যতখানি পুত-পবিত্র মনে করা হয়, তারা আসলে ততখানি নয়। এখানে একটা রিপোর্টের লিংক দিচ্ছি, পড়ে দেখুন। আপনারা ধারণাটা হয়তো পাল্টে যেতে পারে এই বিষয়ে।
@ফরিদ আহমেদ,
খবরটা পুরুষদের জন্য সুসংবাদ নাকি দুঃসংবাদ তাই বুঝতে পারছি না :-s ।
@সপ্তক,
ধর্ষণ শব্দের সাথে উৎপীড়নের যোগ আছে; তাই নারী-পুরুষ কারো কাছেই এটা সুখকর হতে পারে না।
@ফরিদ আহমেদ,
নারীরা শুধুমাত্র নির্যাতিত নয়, নির্যাতনকারীও। একজন বধূ, শ্বশুর বা দেবরের চেয়ে শ্বাশুড়ি বা ননদের মাধ্যমেই বেশি নির্যাতিত হয়। নিম্নমধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের একজন মা, পুত্র ও কন্যাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেন।
নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণের ঘটনাও শোনা যায়। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে যেহেতু পুরুষের শারীরিক শক্তি নারীর চেয়ে বেশি। তাই আক্রান্ত পুরুষ ইচ্ছা থাকলেই নিজেকে আক্রমণকারীর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তাছড়া শারীরিক গঠনের কারণেও নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণ সম্ভব নয় যদি পুরুষের শারীরিক সম্মতি না থাকে।
@তামান্না ঝুমু,
আপনি আমার দেওয়া লিঙ্কটাতে গিয়ে লেখাটা পড়েন নি বোঝা যাচ্ছে। শারীরিকভাবে শক্তিশালী হলেই যে কাবু করা যাবে না এমন কোনো কথা নেই। এলকোহল, ড্রাগ এগুলো দিয়েও সবল পুরুষকে দুর্বল করা সম্ভব, কিংবা দলবদ্ধভাবেও মেয়েরা একাকি কোনো পুরুষকে কাবু করতে পারে। ঘুমন্ত পুরুষও আক্রান্ত হতে পারে। অনেক জায়গাতেই বয়ষ্ক নারীরা অল্পবয়েসী কিশোরদের উপর সুযোগ নিতে পারে। পশ্চিমে নারী টিচারের মাধ্যমেও স্কুল ছাত্রদের রেপ হওয়ার ঘটনা পত্রিকাতে আসছে।
এটাও একটা মারাত্মক ভুল ধারণা। পুরুষের উত্থান শুধুমাত্র যৌনচিন্তা থেকেই ঘটে না। অনেক কিছুর কারণেই হতে পারে। তাছাড়া অনিচ্ছুকভাবে শরীর সাড়া দিলেও ধর্ষণের মূল সমস্যাটা মানসিক। মানসিক যে ট্রমাতে ধর্ষিত ব্যক্তি ভোগে সেটিকে ধর্ষণের সময় তার শরীর অজান্তে সাড়া দিয়েছে বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এই বিষয়টা না্রীদের জন্যও প্রযোজ্য। ধর্ষণের সময় তার অজান্তে শরীর সাড়া দিতে পারে, তার মানে এই নয় যে ধর্ষণে তার সায় ছিল।
অটঃ আমার বাসা থেকে মুক্তমনায় ঢুকতে পারি না। অফিস থেকে এই কমেন্ট করছি। কিন্তু এখানে অভ্র নেই। কমেন্টের অভ্র ব্যবহার করে মন্তব্য লিখছি। অনেক যুক্ত লেটার এটা দিয়ে আসে না। ফলে, অনেক সময় ভাষা পরিবর্তন করতে হচ্ছে, বা ইংরেজি শব্দ লিখে প্রকাশ করতে হচ্ছে। ফলে, বিচিত্র হয়ে যাচ্ছে এর ভাষা এবং বক্তব্য। এই মন্তব্যে অনেক কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পারছি না বলে নিজেরই হতাশ লাগছে।
@ফরিদ আহমেদ,
লিঙ্কটি আমি পড়েছি। ঘুমন্ত পুরুষ বা শিশুশ-কিশোর ছেলের উপর বয়ষ্ক নারী আক্রমণ করে সফল হতে পারে। তবে দলবদ্ধভাবে যদি একদল নারী একজন পুরুষকে আক্রমণ করে তাহলে কেবল একজনের পক্ষেই পুরুষটিক ধর্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু বহু পুরুষে মিলেও একজন নারীকে ধর্ষণ করতে পারে।
@তামান্না ঝুমু,
শারীরিক কারণে নারীর পক্ষে পুরুষকে ধর্ষণ করা সম্ভব নয়, এই অবস্থান থেকে সরে আসার জন্য সাধুবাদ রইলো।
দলবদ্ধভাবে নারীরা যখন পুরুষকে আক্রমণ করে, তখন কেবল একজন নারীর পক্ষেই পুরুষটিকে ধর্ষণ করা সম্ভব, এই ধারণাটিও সঠিক নয়। আপনার এই বক্তব্যটি যৌনতা সম্পর্কে আপনার সীমিত এবং সীমাবদ্ধ জ্ঞানের বহির্প্রকাশ মাত্র। তবে, এতে লজ্জিত হবার কিছু নেই। আমার ধারণা বেশিরভাগ বাঙালি নারীরই যৌনতা বিষয়ে জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত ধরণের। সামাজিক কারণে বাঙালি নারীদের মধ্যে যৌনতার বিষয়ে অহেতুক এক ধরণের নেতিবাচক মানসিকতা কাজ করে। ফলে, এই বিষয়টিকে নিজেদের অজান্তেই তারা ট্যাবু বানিয়ে ফেলে। কখনোই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে না।
স্খলনের আগেই একাধিক না্রী ধর্ষণ করতে পারে একজন পুরুষকে। এছাড়া পুরুষদের বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত তরুণদের স্খলনের পর দ্বিতীয়বার প্রস্তুতের সময় যতখানি বেশি মনে করা হয় ততখানি নয়, বরং বিস্ময়কর রকমের কম। একজন নারীর পক্ষে একজন তরুণকে খুব সহজেই পরেরবারের জন্য সক্রিয় করে তোলা সম্ভব দ্রুতগতিতে।
একাধিক নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণের কিছু ঘটনা নীচে তুলে দিলাম।
এখানে একটা রিপোর্ট আছে দেখতে পারেন। জিম্বাবুয়েতে চারজন নারী লিফট দেবার নাম করে তুলে নেয় এক ছেলেকে। তারপর নিয়ে যায় পনেরো কিলোমিটার দূরের এক নির্জন জায়গায়। সেখানে অস্ত্রের মুখে ড্রাগ খাইয়ে চারজনই ধর্ষণ করে ওই ছেলেকে। পরে ওখানে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ফেলে রেখে যায় তাকে। আট ঘন্টা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিল সে সেখানে।
এই একই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ,তিনজন নারী অষ্টাদশ বর্ষীয় এক তরুণকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হারারে সিটি সেন্টারের ক্যাথেড্রালে। সেখানে পালাক্রমে তারা ধর্ষণ করে তাকে।
এখানেও আছে আরেক ধর্ষিতের কাহিনি। জোহান্সবার্গে তিরিশ বছরের এক তরুণকে অস্ত্রের মুখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তিন নারী।
সুইডেনের সতেরো বছরের এক কিশোর তার মাকে জানায় যে, সে একদল টিন এজার মেয়ের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। এ কথা শোনার পরে মা পুলিশকে ঘটনা রিপোর্ট করে।
@তামান্না ঝুমু,
ও হ্যাঁ। যে কথাটা আসলে বলা হয়নি। লেখাটা খুব ভালো লেগেছে। (F)
@অনামী,অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্যেও গোলাপের শুভেচ্ছা (F) (F)
“বীর ছেলে তোমাদের গর্ব আর বীরাঙ্গনা মেয়ে কেন তোমাদের লজ্জা?”
এ প্রশ্নের উত্তরে বলব, “সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর।”
(নারীঃ কাজী নজরুল ইসলাম)
আপা,গল্পটি পড়েঃ”ভাবাবেগে চোখের কোণে অশ্রুর জল-
ছিঃ এ বড়ই কাপুরুষতা!
যাদের প্রাণের বা সম্ভ্রমের বিনিময়ে
পেয়েছি এই স্বাধীন বাংলাদেশ
কি দিয়েছি তাদের?
কি দিয়ে ঢাকি এ লজ্জা?”
গল্পটি আমার অদেখা মুক্তিযোদ্ধকে চোখের সামনে প্রদর্শিত করলো।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@শামিম মিঠু,সবাই যদি আপনার মত করে ভাবতো তাহলে বীরাঙ্গনারা আজ জাতির মাথার উপরে থাকতেন। এবং সবার মাথার উপরেই ওঁদের প্রকৃত মর্যাদা। ধন্যবাদ আপনাকেও।
মনটা খারাপ হয়ে গেল লেখাটা পড়ে। আজও এ বহু ক্ষেত্রেই নির্যাতিত নারীদের সাথে এ ধরনের আচরন করা হচ্ছে। কবে যে এসব থেকে মুক্ত হবে নারীগণ!!!
@অ বিষ শ্বাসী,
কোন নারী ধর্ষিত হলে সে দোষটাও সেই নারীর উপর বর্তায়। তারপরে সামগ্রিক ঘৃণা, লাঞ্ছনা,ধিক্কার ত আছেই। অত্যাচারিতের উপর ভালভাবে সমবেত অত্যাচার।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং মার্চ মাসের জন্য উপযুক্ত প্রবন্ধ হয়েছে ঝুমু। অভিনন্দন রইলো।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগকারী অংশটাকে নির্বোধ এবং নিষ্ঠুরের মত সবচেয়ে বেশি অবহেলা করেছি আমরা, সবচেয়ে বেশি অপমান করেছি, বুঝে অথবা না বুঝে।
মুক্তমনায় প্রথম স্বীকৃতি পেলাম। 🙂
কিন্তু ওই শ্রদ্ধেয় বলাতে কেমন যেন বুড়ো বুড়ো বলে মনে হচ্ছে নিজেকে। শ্রদ্ধার সাথে শ্রাদ্ধের একটা নিবিড় সহসম্পর্ক রয়েছে। মানুষ যত শ্রদ্ধেয় হতে থাকে, ততই তাঁর শ্রাদ্ধের দিন এগিয়ে আসে তরতর করে। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
যে কোন মানুষ কারো শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারে তাঁর কর্মকাণ্ড ও আচরণের মাধ্যমে। সকল বয়োজ্যেষ্ঠই সম্মানিত নন। আমাদের তো শ্রাদ্ধ ট্রাদ্ধ হবেনা। কাজেই শ্রদ্ধেয় হতে ভয় নেই।
আপনার লেখা দেখলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সেটাই তো স্বীকৃতি।
আমাদের স্বাধীনতার মাসের শুভেচ্ছা আপনাকে এবং সবাইকে।
@ফরিদ আহমেদ,
দ্বিমত পোষণ করছি, কারণ মুক্ত মনার ইতিহাস তা বলে না।
@গীতা দাস,
মুক্তমনায় আমার ইতিহাস এক নিদারুণ পরিহাস ছাড়া কিছু নয় দিদি। আমার মত একজন ছাপোষা নীরিহ মানুষের বিরুদ্ধে লোকজন যে পরিমাণ জ্বালাময়ী পোষ্ট দিয়েছে, তা মুক্তমনার অনাগত দিনের ইতিহাসে সিরাজউদ্দৌলার কাহিনির মতই করুণুরসে রসসিক্ত হয়ে পরিবেশিত হবে। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
মন্দ কি? শেষ পর্যন্ত কিন্তু সিরাজউদ্দৌলাই ইতিহাসে নায়ক।
@গীতা দাস,
ঠিকই বলেছেন। সিরাজকে দেখেই শোকতপ্ত বুকে স্বান্তনা আর স্বস্তি পাই। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
সিরাজউদ্দৌলা হচ্ছেন ইতিহাসের পরাজিত পলায়নোদ্দত নায়ক। আর আপনাকে আমরা সব সময় বীরত্বের সাথে সকল পরিস্থিতির মকাবেলা করতে দেখি। এই বীর-মুক্তমনার বীরত্বগাথা অনাগত দিনে পরিবেশিত হবে গৌরবান্বিত বীরত্বরসে সিক্ত হয়ে।
🙁 @তামান্না ঝুমু,
বলে কি এই মেয়ে!!! বাইরেই এমন শার্দুল সেনাপতি আমি। ঘরে ফিরলেই এক নখদন্তময় নারীর কাছে নতজানু, মিউমিউ করা বাঘের মাসি। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
সেটাই ত প্রকৃত বীরপুরুষের লক্ষণ 😛
নীলার এই পরিণতি আমাকে লজ্জায় কুঁকড়ে দিচ্ছে। আমরা আমাদের বীরাঙ্গনাদের যথাযত সম্মান দিতে পারিনি।
অনেক অনেক ভালো লিখেছেন।
@নিঃসঙ্গ আগুন্তক,বীরাঙ্গনারা নিজের সম্ভ্রমের বিনিময়ে দেশবাসীর কাছ থেকে চরম লাঞ্ছনা ও ধিক্কার নিয়ে ওঁদের জীবন যাপন করে ফেলেছেন। এখন আমাদের লজ্জা বা কান্না কোনকিছুই তাঁদেরকে তাঁদের বিগত জীবন ফিরিয়ে দেবেনা। ধন্যবাদ।
বাস্তব গল্প।
সামাজিক অনুশাসনের কাছে অসহায় বাবা-মায়ের কষ্ট হার মেনেছে সেদিন।
@প্রদীপ দেব,
সামাজিক অনুশাসন সবসময় ছেলেদের পক্ষে আর মেয়েদের বিপক্ষে। মা-বাবাও এর ব্যতিক্রম নন।
চোখের পানি আটকাতে পারলামনা,কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, দেখেছি গ্রাম থেকে আসা কিছু সহজ সরল ছেলে কিভাবে ক্ষমতার প্রলভোনে শিবিরের মতো একটি জঘন্য রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে।তখন খুব ইচ্ছা করত ওদের সামনে আমাদের ৭১ এর সঠিক গল্পগুলো তুলে ধরতে।আমি নিজে দেখেছি ওদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে কিভাবে ওরা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলো বিকৃত করেছে।খুব ইচ্ছা হয় এই ধরনের শক্তিশালী লেখাগুলো যেন ওদের দৃষ্টিগোচর হয়।অবশ্য ওদের ব্রেইন আগেই ওয়াশ করে রাখা হয় পৃথিবীর কোন লেখাই ওদের বিবেককে নাড়া দিতে পারবেনা । যাই হোক জননীর অথর্ব সন্তান হিসাবে হৃদয়ের গভীরতম ভালোবাসাটুকু নিংড়ে দিলাম সেই সব বীরঙ্গনার চরনে যাদের নাম জানি অথবা জানি না……।
@ছন্নছাড়া,ধর্ম হচ্ছে গণহিস্টিরিয়া। এর নেশা হচ্ছে আফিমের মত। আফিমগ্রস্তদের মস্তিস্কে আর কিছু প্রবেশ করতে পারেনা। আফিমের নেশায় এরা যে কোন অপকর্ম করতে পারে।
নারীদের কথা এভাবে নারীদেরকেই লিখতে হবে। নারীদের পক্ষে যতদিন পুরুষ লিখবে ততদিন নারী “মহিলা” ই থেকে যাবে।
@সপ্তক,নারী পুরুষ সবাইকেই এগিয়ে আসতে হয় কোন পরিবর্তনের জন্য। সকল পুরুষই নির্যাতক নয়।
@তামান্না ঝুমু,
পুরুষ নারীবাদি হয় এটা আমি কখনো বিশ্বাস করি নাই,করিও নাই। নারী যদি তার মুক্তি চায় তা তাকেই আদায় করে নিতে হবে। কোনটা নারীর মুক্তি তার সংজ্ঞাও নারীকেই নির্ধারণ করতে হবে।
আপু , লেখাটি পড়ে চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।অসাধারন এই লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
@তাসনুভা,আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ পড়া ও মতামত ব্যক্ত করার জন্যে।
শিরোনাম দেখে আন্দায করেছিলাম,এমন কিছু একটা ঘটবে। কিন্তু পড়লাম,বুক ফেটে আসতে চাইছে। তর তর করে পড়বার অভ্যাস আমার। আপনার লেখার শেষ দিকে এসে প্রতি শব্দে চোখ আটকে ছিল অনেকক্ষন ধরে।
আজ বিশ্ব নারী দিবস। জগতের সকল নারী সুখি হোক। সকল নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
সকল মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। ভেদাভেদ ঘুচে যাক লিঙ্গের, বর্ণের, বিত্তের এবং আরো যত আছে। ধন্যবাদ।
আমার জানামতে তো বাঙ্গালী নারীদের অন্তঃসত্ত্বা করার জন্যই একটা পরিকল্পনা ছিল পাকিদের। তাই অন্তঃসত্ত্বা হলে তো মেরে ফেলার কথা না।
@রনবীর সরকার,
এই তথ্যটি আমি নীলিমা ইব্রাহিমের।”আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইতে পেয়েছি। মেয়ের অন্তঃসত্ত্বা হলে পাকিদের পাশবিকতার ব্যঘাতও ত ঘটছিল।
@রনবীর সরকার,
এই ধরণের সরকারী বা কেন্দ্রীয় কোনো পরিকল্পনা আসলে ছিল না। এটা একটা ভুল ধারণা। অনেক বাঙালি বিদ্বেষী পাকিস্তানি সেনা এই ধরণের মন্তব্য করেছে তীব্র আক্রোশ এবং ঘৃণা থেকে, সে কারণেই হয়তো এই ভুল ধারণাটা গড়ে উঠেছে আমাদের মধ্যে। তারা ধর্ষণ করেছে ধর্ষণের বিকৃত আনন্দে, বাচ্চা-কাচ্চা জন্ম দেবার দায়িত্ব থেকে নয়। তবে, বাঙালি নারী ধর্ষণের অনুকুলে পাকিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনের নীরব কিংবা সরব সায় ছিলো, এটা স্বীকার করতেই হবে। এটাকে তারা দেখেছিল বাঙালিদের উপর অত্যাচার করে তাদের প্রতিরোধ এবং নৈতিক সাহসকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা এবং প্রতিশোধের অংশ হিসাবে। সে কারণেই কোনো অভিযোগকেই তাঁরা ধর্তব্যের মধ্যে নেয় নি। বরং সায় দিয়েছে এই বলে যে, পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ করছে এমন সব বীর্যবান পুরুষেরা নিশ্চয় ঝিলমে এসে তাদের বীর্যস্খলন ঘটাবে না।
@ফরিদ আহমেদ,
পাকিস্তানের অনেক উচ্চ পর্যায়ের লোকদের কারো কারো নাকি নিত্যনতুন বাঙালি শয্যাসংগিনী প্রয়োজন হতো।
@ফরিদ আহমেদ,
সহমত।
ভালো লিখেছেন।
@সৈকত, ধন্যবাদ।
@তামান্না ঝুমু,
সুন্দর সাজিয়েছেন, এ তো গল্প নয় সত্য। এমন গাঁথুনি জানলে আমিও গল্প লিখতাম। (Y)
ই-বার্তা চেক করুন, অথবা ই-মেইল করুন নীচের ঠিকানায়।
[email protected]
@আকাশ মালিক,
আপনি তো অসাধারণ লিখেনই। অনেক ধন্যবাদ পাঠ-প্রতিক্রিয়ার জন্যে।