বর্তমান লেখাটি আমার ২০০৭ সালের ডারুইন দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তমনায় আমার লেখা “বিবর্তনের দৃষ্টিতে জীবন” ও ২০০৯ সালের ডারুইন দিবস উপলক্ষ্যে লেখা “বিবর্তনের শিক্ষা” এর ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখলে ভাল হয়। কারণ বিবর্তন সম্পর্কিত কিছু প্রাসঙ্গিক সাধারণ কথা উক্ত দুই প্রবন্ধে আলোচিত হওয়ায় এখানে তার পুনরুক্তি করলাম না কলেবর সংক্ষিপ্ত রাখতে। আগেই অবশ্য বলে রাখি এই লেখা খুব জ্ঞানগর্ভ, গবেষণাভিত্তিক বা বিশদ নয়। তবে আশা করছি এই লেখা অন্যদের বিশেষ করে অভিজতকে এ ব্যাপারে আরো গভীর ও বিশদ কোন সিরিজ লিখতে উদ্বুদ্ধ করবে। যেমন আমার ২০১০ সালের ডারুইন/ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে লেখা “ভালবাসা ও বিবর্তন” ব্লগের পর অভিজিত পরবর্তীতে তার সাড়া জাগান “সখী ভালবাসা কারে কয়” নামে চমৎকার এক সিরিজ আমাদের উপহার দেয়। সেরকম কিছু আশা করা যায়। তবে জাতীয়তাবাদ ভালবাসার মত গরম টপিক নয় বলে সেরকম আশা করাটা কতটা বাস্তবসম্মত সেটাও প্রশ্ন।
গত মাসে মুক্তমনা ব্লগে ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক এক বাংলাদেশীর হত্যাকান্ডকে নিয়ে একটা ব্লগ লেখা হয়েছিল যা নিয়ে বেশ বিতর্কের সূত্রপাতও হয়েছিল যেখানে জাতীয়তাবাদ উঠে আসে পার্শ্বিক আলোচ্য বিষয় হিসেবে। কেউ কেউ জাতীয়তাবাদ এর (বা দেশ প্রেম) প্রতি তাদের আবেগ নিয়ে লজ্জিত নন বা গর্বিত বলে মত দিয়েছেন আবার কেউ নিরাসক্তভাবে জাতীয়তাবাদের সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর ঊর্ধে উঠে মানবিকতার দৃষ্টিতে সব কিছু দেখার উপর জোর দেন, কোন বিশেষ দেশ বা গোষ্ঠির মধ্যে সীমিত না থেকে, যাকে আন্তর্জাতিকতাবাদ বলা হয়। একটা প্রশ্ন তখন কেউ কেউ করেছিলেন যে বাংলাদেশের পুলিশ তো তার নিজেদের জনগনের উপরই এর চেয়ে ঢের বেশী অত্যাচার নিপীড়ন চালায়, তাহলে এটা নিয়ে আলাদা করে ঘটা করে এত হৈ চৈ করার কি আছে, এটাকে তো সীমান্ত পাহারাদার কর্তৃক সীমান্তে অবৈধ প্রবেশকারী এক চোরাকারবারীকে শায়েস্তা করার একটা ঘটনা হিসেবে দেখলেই তো হয়, যদিও শাস্তিটা বর্বরোচিত ছিল যেমনটা পুলিশেরাও করে নিজেদের জনগনের ওপর। এখানেই জাতীয়তাবাদের ইস্যু চলে আসে। এখানে একজন বা গোটা কয়েক ভারতীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যের দ্বারা একজন বাংলাদেশী নিগৃহীত হলেও এটাকে জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে পরোক্ষভাবে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশ নিগৃহীত হওয়া হিসেবে । এখান থেকেই জাতীয়তাবাদের কিছুটা ধারণা করা যায়। এবার আসা যাক জাতীয়তাবাদের স্বরূপ ও তার বিবর্তনীয় শিকড়ের আলোচনায়।
জাতীয়তাবাদ হল জাতিভিত্তিক স্বজনপ্রীতি (Ethnic Nepotism)। মানুষ যেমন তার চারপাশের জনগনের মধ্যে তার নিকট আত্মীয়দের প্রতি অধিকতর আনুকুল্য দেখায়, তেমনি তার চার পাশের জাতিসমূহের মধ্যে নিজের জাতির প্রতিও অধিকতর আনুকুল্য দেখায়। সাধারণ অর্থে জাতি(Nation) বলতে কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গঠিত এক জনগোষ্ঠীকে বোঝান হয়।
জাতীয়তবাদের অনুভূতির উৎস হল মানুষের সংঘবদ্ধ হবার প্রবণতা। উদ্বর্তনের এক বিবর্তনীয় কৌশল হল সংঘবদ্ধ হওয়া বা গোষ্ঠী সংহতি (Group Cohesion). এই সংহতি বা সংঘবদ্ধতার উদাহরণ নীচু স্তরে কোষ বা বংশাণুতে দেখা যায়। স্বার্থপর বংশাণুর মূল অন্তর্জ্ঞান হল বংশাণুসমষ্টি নিজেদের উদ্বর্তনের জন্যই সংঘবদ্ধ হয়ে মানুষ বা সাধারণভাবে প্রাণী (Organism) নামক বংশাণু যন্ত্র তৈরী করে। প্রাণিকুলের মধ্যে যারা বেশি সংঘবদ্ধ তারা তত বেশি উদ্বর্তনের যোগ্য। যারা সংঘবদ্ধ নয় তাদের বিপন্ন প্রজাতি হয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশী। বাঘ তাই বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে পরিগণিত। মানুষ স্বভাবতই সংঘবদ্ধ জীব। তবে মানুষের এই সংঘবদ্ধ হবার প্রবণতাটা অনেক স্তরে দেখা যায় জাতীয়তাবাদ ছাড়াও। যেমন শ্রমিকের শ্রমিক ইউনিয়ন বা ফেডারেশন গঠন করে শ্রমিক হিসেবে নিজেদের উদ্বর্তন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। এরকম আরো উদাহরণ দেয়া যায়।
জাতি হল কতগুলি সাধারণ বৈশি্ষ্ট্যের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ এক জনগোষ্ঠী। কি সেই বৈশিষ্ট্যসমূহ? বিশিষ্ট্য সমাজবিজ্ঞানী ও লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের জাতীয়তাবাদ বিষয়ক অধ্যাপক অ্যান্টনি দ্য স্মিথ (Anthony D. Smith) জাতিকে এক নামকরণ করা মানবগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যা এক সাধারণ ঐতিহাসিক ভূখন্ড, ঐতিহাসিক স্মৃতি, অতিকথা(Myth), গণ সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও অধিকার ও দায়িত্বের ধারণার ভিত্তিতে গঠিত । তাঁর এ ধারণাকে এক কথায় জাত-প্রতীকবাদ (Ethnosymbolism) বলা হয়। এখানে জাতি ও দেশ সব সময় সমার্থক নাও হতে পারে। যেমন ইহুদীরা এই সংজ্ঞা অনুযায়ী এক জাতি (তাদের সাধারণ এক ঐতিহাসিক ভূখন্ড, ও সাধারণ অতীতের স্মৃতি আছে) হলেও তারা বিভিন্ন দেশের নাগরিক হিসেবে বিস্তৃত আছে, যেমন ইরাক। লিবিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানী ইত্যদি। আরেক উদাহরণ হিসেবে বাংগালী জাতির উল্লেখ করা যায়। বাংগালী জাতি বর্তমান বাংলাদেশ (প্রাক্তন পূর্ব বাংলা) ও পশ্চিম বাংলায় বিস্তৃত। ১৯৭১ এর স্বাধীনতার পর শুধু বাংলাদেশীয়দের বাঙ্গালীদের নিয়ে নতুন এক জাতীয়তাবাদ বা জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়েছে যাকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বলা হচ্ছে। এর দ্বারা বাংলাদেশের বর্তমান ভূপরিসীমার বাইরে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের সাথে পার্থক্য টানা হয়েছে। স্মিথের ধারণাটা অনেকটা বাস্তবসম্মত হলেও এটার সাথে বিবর্তনের কোন যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা নেই। সেই চেষ্টা করেছেন কানাডার লন্ডন শহরের ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক J. PHILIPPE RUSHTON। অধ্যাপক রাশটন তাঁর ধারণা বা তত্বকে বংশাণুগত সাদৃশ্যতত্ব (Genetic Similarity Theory) বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি অধ্যাপক অ্যান্টনি স্মিথ এর জাত-প্রতীকবাদ এর ধারণাকে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের পরার্থতার (altruism) ধারণার সাথে যোগসূত্র ঘটিয়ে বিস্তৃত করার চেষ্টা করেছেন। এই ধারণা অনুযায়ী মানুষ বংশাণুগতভাবে তার সদৃশ অন্য মানুষের প্রতি পক্ষপাত বা আনুকুল্য দেখায় বিবর্তনীয় প্রবৃত্তির তাড়নায়। বিবর্তনের মূল প্রতিপাদ্য হল নিজের বংশাণু সংরক্ষণ ও সঞ্চালন। নিজ সদৃশ মানুষের বংশাণুও নিজের বংশাণুর সাথে মিল থাকার সম্ভাবনা বেশী। তাই নিজ সদৃশ মানুষের প্রতি আনুকুল্য দেখান নিজের বংশাণুর সংরক্ষণেরই এক চেষ্টা বই কিছু নয়। এই ধারণার প্রবর্তক হলেন বিখ্যাত বিবর্তন বিজ্ঞানী উইলিয়াম হ্যামিল্টন। তিনি এই ধারণাকে গোষ্ঠীয় যোগ্যতা (Inclusive fitness) আখ্যায়িত করেছেন। পরার্থতার কারণ হিসেবে তিনি গোষ্ঠীয় যোগ্যতা বৃদ্ধির কৌশল বলে দেখিয়েছেন। বংশাণু উদ্বর্তনের এক কৌশল হল গোষ্ঠীয় যোগ্যতার বর্ধন। পরার্থতার দ্বারা গোষ্ঠীর অন্য সদস্যের উদ্বর্তনে সহায়তা করলে নিজের সদৃশ বংশাণুরই সংরক্ষণ হয়। চরম আত্মত্যাগের দ্বারাও এই লক্ষ্য অর্জন হয়। গোষ্ঠীয় যোগ্যতা বর্ধনের কৌশল এর পূর্বে প্রস্তাবিত আত্মীয় নির্বাচন (Kin Selection) তত্বের এক ব্যাপকতর রূপ। হ্যামিল্টন তাঁর তত্বের দ্বারা প্রস্তাব করেন যে পরার্থতা শুধু যে আত্মীয়দের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে তাই নয়, যে কোন মাত্রায় বংশাণুগত সাদৃশ্যই (genetic relatedness) এর নিয়ামক, সেটা আত্মীয়ের বাইরেও হতে পারে। তিনি গাণিতিক ভাবে এটা ব্যক্ত করেন সমীকরণ দ্বারা, যেখানে এই বংশাণুগত সাদৃশ্য একটি গাণিতিক সূচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিভাবে প্রাণীরা এই বংশাণুগত সাদৃশ্য প্রবৃত্তিগতভাবে নির্ধারণ করে তাঁর তত্বে এটাও তিনি আলোচনা করেছেন। অধ্যাপক রাশটন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উপর জরীপ চালিয়ে দেখিয়েছেন যে বংশাণুগত সাদৃশ্যই জাত-কেন্দ্রিকতার (Ethnocentricity) ভিত্তি। উদাহরন হিসেবে রাশটন ইহুদী জাতির উল্লেখ করেন যে ইহুদীরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও তাদের নিজেদের মধ্যে বংশাণুগত সাদৃশ্য তাদের সাথে অ-ইহুদীদের বংশাণুগত সাদৃশ্যের চেয়ে ঢের বেশী, যদি অ-ইহুদীরা তাদের নিকটে বসবাসকারীও হয়। তিনি আরো একটা উদাহরণ হিসেবে হিন্দু জাতিভেদ প্রথার উল্লেখ করে বলেছেন যে এটা নিশ্চিত করা গেছে যে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের মধ্যকার বংশাণুগত সাদৃশ্য তাদের সাথে নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের বংশাণুগত সাদৃশ্যের চেয়ে বেশী। আরো গবেষণার উল্লেখ করে বলেন যে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের বংশাণু ইউরোপীয়দের সদৃশ আর নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের বংশাণু দক্ষিন ভারতের প্রাচীন দ্রাবিঢ় বংশোদ্ভুত জাতির বংশাণুর সদৃশ। বলাই বাহুল্য গবেষণার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টিও হয়েছে। এরকম আরো অনেক জাত-কেন্দ্রিকতার উদাহরন দিয়েছেন রাশটন তাঁর গবেষণা পত্রে।
গবেষণাকর্মের জটিলতায় নিয়ে না লিখে এবার আসা যাক কিছু সাধারণ আলোচনায়। এটা পরিস্কার যে যেহেতু মানব স্বভাবের সকল দিকই বিবর্তনের দ্বারা উদ্ভূত ও নিয়ন্ত্রিত, তাই জাতীয়তাবাদী চেতনা বা দেশপ্রেমও বিবর্তন জনিত এক প্রবৃত্ত বা অনুভূতি। দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদকে অনেকে এক মহান আদর্শ হিসেবে স্থান দেয়। আসলেই কি তাই? অন্য সব আদর্শের মত দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদ কোন স্বতন্ত্র বস্তুনিষ্ঠ ভিত্তিতে বা যুক্তিবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আদর্শ নয়। তবে কোন কোন আদর্শ বা মূল্যবোধকে মানুষ সার্বজনীনভাবে স্বীকৃতি দেয়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, যেমন সার্বজনীন মানবাধিকার, নারী পুরুষের সমানাধিকার, বিশ্বাসের স্বাধীনতা,বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি। দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদ এরকম সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত কোন আদর্শ নয়। বাংলাদেশ ছাড়া খুব কম দেশের গঠনতন্ত্রে জাতীয়তাবাদকে এক স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভিয়েতনাম দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন আগ্রাসন ও আধিপত্যের অধীনে থেকে রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করলেও তাদের সংবিধানে জাতীয়তবাদের উল্লেখ নেই। সংবিধানে বিভিন্ন উপজাতির স্বকীয়তাকে সংরক্ষিত করার উপর জোর দেয়া হয়েছে, সবাইকে ভিয়েতনামী হয়ে যেতে হবে বলা হয় নি।
দেশপ্রেমের দুটো অর্থ করা যায়। এক হল ব্যক্তি বা সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থের উপরে উঠে দেশের সামগ্রিক স্বার্থকে স্থান দেয়া। সেই অর্থে দেশপ্রেম অবশ্যই এক সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত মহান গুণ বা আদর্শ। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে যা বেদনাদায়কভাবে অনুপস্থিত। প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডী তাই বলেছিলেন দেশ তোমার জন্য কি করতে পারে জিজ্ঞেস না করে তুমি দেশের জন্য কি করতে পার সেই প্রশ্নই কর। আর এক অর্থে (যেটা অধিকাংশ সময় বোঝান হয় এবং লেখার প্রারম্ভে উল্লেখিত বিতর্কের ইস্যু ছিল) দেশপ্রেম হল নিজ দেশকে অন্য দেশ থেকে আলাদা করে এক বিশেষ স্থান দেয়া বা আনুকুল্য দেয়া, গুণাগুণ বিচার না করে। এটা কোন সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত মহান আদর্শ নয়। আন্তর্জাতিকতায় বা বিশ্বনাগরিকতায় বিশ্বাসীরা জাতীয়তাবাদের ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী। এই অর্থে জাতীয়তাবাদ আর রেসিজম (জাতিবাদ?) এর মধ্যে খুব স্পষ্ট পার্থক্যরেখা টানা যায় না। কারণ মানুষের সংঘবদ্ধ হওয়ার বৈবর্তনিক কারণের মূলে আছে প্রতিপক্ষতা বা প্রতিযোগিতার মোকাবিলা। প্রতিপক্ষতা বা প্রতিযোগিতা না থাকলে সংঘবদ্ধ হওয়ার বৈবর্তনিক প্রয়োজনীয়তাটাও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। আর সংঘবদ্ধ হওয়ার মূল চেতনাই হল নিজ গোষ্ঠীকে অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে উপরে স্থান দেয়া, যা এক পর্যায়ে রেসিজমের রূপ নেয়। এই দ্বিতীয় অর্থের দেশপ্রেমই লেখার বাকী অংশের আলোচ্য বিষয় থাকবে।
জাতীয়তাবাদী চেতনার বা দেশপ্রেম নিয়ে লজ্জিত হবার যেমন কিছু নেই তেমনি এতে গর্বিত বোধ করা বা এটাকে মহান আদর্শ বলে প্রচার করারও কোন যৌক্তিক কারণ নেই। এটা কোন কোন সময়ে ঐতিহাসিক কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায় যখন এর উদ্বর্তনী মূল্য থাকে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এমন এক ঐতিহাসিক কারণ। তখন পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণকে পাকিস্তানী জাতি কর্তৃক বাঙ্গালী জাতিকে আক্রমণ হিসেবে দেখে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়াটা আক্রমন প্রতিহত করার ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এক শক্তিশালী প্রেরণার উৎস বা উদ্বর্তনী কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু যদি কল্পনা করা যায় যে নির্বাচনের রায় মেনে নেয়া হয়েছিল, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সরকার গঠিত হল। ধীরে ধীরে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙ্গালীরা সমগ্র পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও আর্থনীতিক আধিপত্য বিস্তার করতে থাকল। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী চেতনা ধীরে ধীরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল। এক সময় হয়ত বাঙ্গালী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের জনগণকে নিয়ে এক নতুন নাম নিয়ে নতুন এক জাতীয়তাবাদ মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠ্ত। সবই কাল্পনিক এবং বাস্তবে ঘটার সম্ভাবনা কম ছিল তখনকার বাস্তবতায়। কিন্তু চিন্তা করা যায়, তাত্বিক বা যৌক্তিক ভাবে অসম্ভব কোন ব্যাপার নয়। এই কল্প পরীক্ষার (Thought Experiment) উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়তাবাদের প্রাসঙ্গিকতাকে বোঝান।
আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশের চাকমা উপজাতির জনগণ তাদের জাতিসত্ত্বা কে বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বা থেকে পৃথক বিবেচনা করে। এখানে তারা নির্যাতিতের ভূমিকায়, বাঙ্গালীরা নির্যাতনকারীর ভূমিকায়। তাই চাকমাদের জন্য চাকমা জাতীয়তাবাদ তাদের আত্মরক্ষার্থে এক প্রাসঙ্গিক চেতনা। এখানে বাঙ্গালীদের জন্য বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই। অবশ্য উগ্র জাতীয়তাবাদে অনেক সময় অপেক্ষাকৃত দুর্বল জাতির জাতিসত্ত্বাকে বিলুপ্ত করে তাদেরকে আত্মীকরণ করার জন্য অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী জাতি জাতীয়তাবাদী শ্লোগানের আশ্রয় নেয়।
জাতীয়তাবাদ নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদ কোনটা সত্যিকার আদর্শ হওয়া উচিত? বিবর্তনের আলোকে উত্তর হবে এটা বস্তুনিষ্ঠভাবে উচিত অনুচিতের প্রশ্ন নয়, তবে বিবর্তন মানুষের মনে এই দুই বাদেরই ঔচিত্য বা অনৌচিত্যের বোধ সৃষ্টি করে। কারণ দুটোরই সহাবস্থান প্রয়োজন উদ্বর্তনের সহায়তার জন্য। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝান যাক। সমাজে সবাই সত্যবাদী হয়ে যাওয়াটা বিবর্তন এর সহায়ক নয়। এটে এক চরম সামাজিক অস্থিতিশীলতা বা ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে। আবার সবাই মিথ্যাবাদী হলেও সমাজ অচল হয়ে পড়ে। এটা বোঝা সহজ। তাই বিবর্তন সমাজে কিছু মিথ্যাবাদী আর বেশী সত্যবাদী হবার পক্ষে। তাই বিবর্তন সত্যবাদী হবার বোধকে এক মহান আদর্শ হিসেবে মানুষের মনে প্রবৃত্তিগতভাবে প্রবিষ্ট করায়, যাতে সবাই মিথ্যাবাদী না হতে পারে। একইভাবে যে সমাজের সব সদস্যই পরার্থপর বা সসব সদস্যই স্বার্থপর সেই সমাজ উদ্বর্তনের জন্য আদর্শ নয়। কিছু স্বার্থপর আর বেশি সংখ্যক পরার্থপর সদস্যই উদ্বর্তনের সহায়ক। ক্রীড়াতত্ব দিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। যুক্তিবাদ ও ভাববাদো একই কাতারে পড়ে। ভাবাবেগের বিবর্তনী প্রয়োজন (বা উদ্বর্তনী মূল্য) আছে। কিন্তু লাগামছাড়া আবেগ বা ভাববাদ সামাজিক স্থিতিশীলতা ও ঊন্নয়নের (প্রকারান্তরে উদ্বর্তনের) বিপক্ষে। তাই যুক্তিবাদের চেতনা বা বোধও মানুষের মনে তৈরী হয় বিবর্তনীয়ভাবে। কিন্তু বিবর্তন ১০০% যুক্তিবাদী বা দার্শনিকদের দ্বারা গঠিত মানবগোষ্ঠী সমর্থন করে না। এটা বেদনাদায়ক হলেও বিবর্তনের অমোঘ সত্য। একইভাবে আমরা বলতে পারি মানুষের সংঘবদ্ধ হওয়াটা উদ্বর্তনের সহায়ক ঠিকই, কিন্তু তাই বলে অত্যাধিক সংখ্যায় বিভক্ত মানব গোষ্ঠী মানব কল্যানের জন্য সহায়ক নয়। সোজা কথায়, বেশী জাতি বা দেশ যেমন বাঞ্ছণীয় নয়, তেমনি দেশ বা জাতিহীন মানব গোষ্ঠীও স্থিতিশীল নয়। মানুষ বা যে কোন প্রজাতিরই এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান হল প্রতিযোগিতা বা প্রতিপক্ষতা। তারই বাস্তব পরিণতি হল সংঘবদ্ধ হবার প্রবণতা, নিরাপত্তার ও আত্মরক্ষার জন্য। বিপরীত প্রবৃত্তির টানা পোড়েনে দ্বারা সাম্য বজায় রাখাটাই প্রকৃতির এক ক্রীড়ানকশা বলা যায়। সম্পূর্ণ সমসত্ত্বতা প্রকৃতি পরিহার করে। কাজেই দেশ বা রাষ্ট্রহীন এক পৃথিবী এক অলীক বস্তু, যদিও অতি জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে একটা শক্তিশালী আদর্শ হিসেবে এর গুরুত্ব আছে। ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ বা জাতিকে প্রাধান্য দেয়াটা যদি মহান আদর্শ বলে সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত হয় তাহলে জাতিকেন্দ্রিকতার ঊর্ধ্বে উঠে সকল মানুষের কল্যান বা বিশ্বভ্রাতৃকে অগ্রাধিকার দেয়াটাও মহান আদর্শ বলে বিবেচিত না হওয়ার কোন কারণ নেই।
অন লাইনের কল্যাণে এখন সবাই সব কিছু জানে। এই জানাটা না শেষে কাল হয়ে দাঁড়ায়!! যখন কমিউনিজম এর বানী আসল তখন কমিউনিস্ট রা বুঝার আগেই পুঁজিবাদীরা তা বুঝল , Ford গাড়ীর মালিক ঘোষণা দিল,সব কর্মচারী গারী পাবে,বেতন থেকে মুল্য এডজাস্ট করা হবে, কমিউনিজমের বানীতে তাই বলে, শ্রমিক পন্যের মালিকানার ভাগ না পেলে পন্যের উপর দরদ জন্মায় না। এখন আমরা যে জাতিয়তাবাদ,সিমান্ত,দেশ প্রেম, ধর্ম সবই খারাপ বুঝে বসে আছি এর ফলটা কি পাচ্ছি?। আল্লাহ পৃথিবী বানাইছে আমরা দেশ বানাইছি দেশ বানানো হারাম ঘোষণা দিয়া ধার্মিকরা ঠিকই একদিন বর্ডার তুইলা দিব আর আমরা আঁতেলরা বইসা বইসা আঙ্গুলই চুষব… 😛
প্রথমেই প্রিয় পোস্টের তালিকায় নিয়েছি। তারপরও কিছু প্রশ্ন জেগেছে মনে।
গঠনতন্ত্রে স্তম্ভ বিবেচনা করাই কি বড় কথা? আপনি আমেরিকার উদাহরণ টেনেছেন। এই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যখন শপথ নেন, তখন তার কথা ছিল, ইউএসএ উইল লিড দি ওয়ার্ল্ড। এখন আপনি একে কি জাতীয়তাবাদ বলবেন না? আমার তো মনে হচ্ছে, এটি একটি উগ্র জাতীয়তাবাদের নমুনা!
দেশের সামগ্রিক স্বার্থ বলতে আসলে কি বোঝায়? দেশের সামগ্রিক স্বার্থ যদি হয় আমেরিকার ইরাক আক্রমণ সমর্থন করা, কারণ এর ফলে আমেরিকার আনুকূল্য পাওয়া যাবে আইএমএফ বা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে নেগোশিয়নে, একে কি সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত মহান গুণ বলতে পারবেন? আবার, পার্বত্য চট্টগ্রামে মিলিটারি দিয়ে ওখানকার সব ইনসারজেন্সী ধূলিসাৎ করে দেয়া যদি দেশের সামগ্রিক স্বার্থ বিবেচিত হয় ( অনেক বাংলাদেশীর কাছেই হয়েছে ৭০ এর দশকে যার ফলে দলে দলে বাঙালি সেটেলমেন্ট হয়েছে), তাহলেও কি তা সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত মহান গুণ বা আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে?
আপনার কল্পিত পরীক্ষায় আমার তো মনে হয়, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী চেতনা অপ্রাসঙ্গিক না হয়ে বরং আরো ধারালো হবে এবং এক সময় তা উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনার রূপ পরিগ্রহ করবে, যেমনটা পাকিস্তান বা ভারতের ক্ষেত্রে দেখা যায়!
একমত। আর এইজন্যেই দেশপ্রেমকে সব নষ্টের গোঁড়া মনে হয় আমার (যদিও জিনগত কারণেই বাংলাদেশের সাথে অন্য দেশের ক্রিকেট খেলা হলে, কায়মনোবাক্যে বাংলাদেশের জয় চাইতে থাকি, এমনকি আমার কোন ব্যক্তিগত লাভ-যোগ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার পরও); মনে হয় বিশ্বের অধিকাংশ যুদ্ধ-বিগ্রহ-অশান্তির মূল হচ্ছে দেশপ্রেম-জাতিপ্রেম-গোত্রপ্রেম-ধর্মপ্রেম ইত্যাদি।
দারুণ বলেছেন। অসম্ভব ভাল লাগল। অনেক দিনের প্রশ্নের উত্তর মিলেছে এখানে।
এখানে আপনার লেখার পুরো সারাংশ পাওয়া গেছে। জাতীয়তাবাদ নিয়ে বহুদিনের দ্বন্দ্বের আপাত অবসান হয়েছে। জানি না নতুন কোন দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেবে কিনা!
অসাধারণ পোস্টের জন্য (F) আর ফাল্গুনের জন্যও (F)
@কাজি মামুন,
এটাকে ব্যক্তি বিল ক্লিন্টনের এক ব্যক্তিগত ব্যহরণ (Soundbite) হিসেবে দেখাই সমীচীন হবে। তিনি জাতীয়তাবাদী কিনা সেটা তাঁর কাজের বা অন্যান্য সব উক্তির মাধ্যমেই বিচার করতে হবে। যাইহোক তিনি যদি জাতীয়তাবাদী হয়েও থাকেন সেটাকে মার্কিন জাতীয়তাবাদ বলা ঠিক হবে না। আমেরিকান আদর্শ একজন মার্কিনীর (তা তিনি প্রেসিডেন্টই হন না কেন) দ্বারা নির্ধারিত নয়। জাতীয়তাবাদ আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোন আদর্শ হলে তার উল্লেখ সংবিধানে বা নিত্য কোথাও না কোথাও ব্যক্ত হত।
অন্য জাতিকে ক্ষতি করে নিজের জাতিকে উন্নত করাতো দেশ প্রেমের দ্বিতীয় সংজ্ঞায় পড়ে। আমেরিকার ইরাক আক্রমণ সেই সংজ্ঞায় পড়ে। যদিও বাস্তবে ইরাক আক্রমণের উদ্দেশ্য সমগ্র মার্কিন জাতির লাভের জন্য নয়, কিছু তেল রাজাদের (Oil Barron) লাভের থলি ভারী করার জন্য। ইরাক আক্রমণের ফলে মার্কিন জনগনের আর্থিক দুর্ভোগ বহুগুণে বৃদ্ধিই পেয়েছে। যাইহোক সেটা কখনই সার্বজনীনভাবে মহান দেশপ্রেম বলে বিবেচিত নয়। আমেরিকার নিন্দা তো বিশ্ব জুড়ে হয়েছে ইরাক নিয়ে। এখন প্রশ্ন হল আমেরিকার সাহায্য নেয়ার জন্য আমেরিকার ইরাক নীতিকে সমর্থন করা কোন সংজ্ঞায় পড়ে। কোনোটাতেই নয়। এটা একটা সুবিধাবাদী অবস্থান। জাতীয়তাবাদীদের কেউ কেউ এটাকেও দেশপ্রেম বলবে (কারণ দেশের স্বার্থ তো দেখা হচ্ছে)। কিন্তু অনেক দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদীরাও এটাকে খারাপ চোখে দেখবে। কারণ প্রথম অর্থের দেশপ্রেমে তো বলা নেই যে প্রয়োজনে অন্য দেশের আ জাতির ক্ষতি করে নিজের কল্যান সাধন করতে হবে। প্রথম অর্থের দেশপ্রেমের সংজ্ঞায় শুধু এটাই বলা হচ্ছে যে ব্যক্তি বা দলের চেয়ে গোটা দেশের কল্যানকে উপরে স্থান দিতে হবে। কাজেই আমি কোন বিরোধ দেখছি না।
চমৎকার প্রবন্ধ বরাবরের মতই।
বিতর্কের সুত্রপাত যেহেতু আমার লেখাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল তাই আমার কিছু বলা বাঞ্ছনীয়। বিপ্লব দা আর কাজী মামুনেরর সাথে আমার সমস্যাটা ছিল এটাই যে, আমি বাঙালিদের পক্ষে মানে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় বাঙালি জাতিয়তাবাদের পক্ষে বলেছিলাম আর অন্য দুজন আন্তর্জাতিকতার নামে ঘটনাটাকে স্বাভাবিক(বিতর্ক এড়ানোর জন্য বলা যায়, বাস্তব বলেছিল মানে যা ঘটছেই) এবং সংস্কারকেই সমস্যার সমাধান বলে মনে করছিলেন। আমি নিজে মোটেই সেরকম জাতিয়তাবাদী নই যেমনটা হলে শুধু বাঙালিকেই শ্রেষ্ট বলে মেনে নেব। তেমনটা হলে আমি আদীবাসিদের স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে থাকতাম না। আমি জাতিয়তাবাদী সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যেখান থেকে প্রত্যকটি আলাদা জাতিস্বত্বার স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করা যায়।
ভারতের সাথে বাঙলাদেশের সীমান্তে সমস্যাটার আলোচনায় বিতর্কের সময় উক্ত দুজনের যেই ব্যাপারে আমি বিরক্ত হচ্ছিলাম সেটা হল তারা নিজেরা আন্তর্জাতিকতার কথা বলছিলেন, সাথে সাথে বর্ডার গার্ডের অস্তিত্বের পক্ষে ছিলেন। ওনারা যেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমার স্ট্যন্ডপয়েন্টের বিরোধিতা করছিলেন সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু কোন অস্ত্রের পক্ষে শ্লোগান দিবে না, সেই দৃষ্টিভঙ্গি বর্ডার গার্ডের কথা বলবে না, সেই দৃষ্টিভঙ্গি আর্মির কথা বলবে না। কিন্তু অত্যন্ত হাস্যকরভাবে তারা আন্তর্জাতিকতার কথা বললেন এবং একই সাথে দেশ কালের সীমানার সাফাইও গেয়ে গেলেন, যেটা সম্পূর্ণই স্ববিরোধী।
ভারত আজকের বাঙালদেশ বর্ডারে যে কসাইগিরী করছে সেটার প্রতিবাদ করতে কিন্তু জাতিয়তাবাদী হতে হয় না। সেটার জন্য মানবতাবাদই যথেষ্ট। ভারতের দাদাগিরীর বিপক্ষে বলতে একজন বাঙালি জাতিয়তাবাদীর কোন দরকার নেই যেমনটা দরকার নেই আমেরিকার আফগানিস্তানে, ইরাকে, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিতে হামলার প্রতিবাদ করতে। দরকার শুধু সাধারন যুক্তিবোধ। যেটার সাংঘাতিক অভাব তাদের দুজনের ভেতরে ছিল।
দ্বীমত পোষন করলাম। জাতিয়তাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতাবাদ দুট জিনিসই সমগ্র মানব জাতির ভালো মন্দের সাথে জড়িত, সেক্ষেত্রে এখানে কেন উচিত অনুচিতের প্রশ্ন আসবে না সেটা আমি বুঝতে পারিনি। উচিত অনুচিতের প্রশ্ন আসবে একজন মানুষ কি নগ্নভাবে রাস্তায় হেঁটে যাবে নাকি যাবে না সেই প্রসঙ্গে। কারন এটা সম্পূর্ণভাবেই ব্যাক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা। কিন্তু জাতিয়তাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতাবাদ মোটেই ব্যক্তিগত কোন ব্যাপার নয়। এখানে জড়িয়ে আছে সমগ্র একটি প্রজাতির টিকে থাকার প্রশ্ন।
আপনার কি মনে হয় না “জাতি” সংজ্ঞাটার মধ্যেই গন্ডগোল আছে? জাতির সংজ্ঞা কী? যখন পাকিস্তান হল তখন দেখলাম ধর্মে এক হলে একই জাতি হয়। যখন বাঙলাদেশ হল তখন দেখলাম জাতীয়তা জন্মসূত্রে পাওয়া যায়, আবার একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ আমরা লক্ষ করি। যেমন, নোয়াখালির মানুষ বরিশালের মানুষের কাছে খারাপ আবার বরিশালের মানুষ বিয়ের সময় অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাছে একাধিক বিবাহকারী। তাহলে আসলে জাতির সংজ্ঞা কি আমরা আমাদের সুবিধামতন তৈরী করে নিচ্ছি না? এই প্রেক্ষাপটে দেখলে আসলে জাতি থাকতে পারে দুটো। শোষক আর শোষিত। ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাহীন। সুতরাং কেউ যদি জাতীয়তাবাদী হতেই চায় তাহলে যৌক্তিকভাবে তার সামনে পথ খোলা আছে একটিই। সেটা হল শোষিত জাতির প্রতিনিধিত্ব করা। এই সংজ্ঞায় আমার জাতিয়তাবাদী হতে কোনই আপত্তি নেই এবং একে আদর্শ হিসেবে মেনে নিতেও আমার কোন আপত্তি নেই।
@সাইফুল ইসলাম,
এটা আমার প্রবন্ধ এবং আমার পজিশনের ভুল ব্যখ্যা। আমি কোন দেশ এবং বর্ডারে পক্ষে নেই-কারন ভবিষয়তে এসব থাকবে না। বাজারের সামনে ধ্বসে পড়বে। এটা মার্কসের লেখাতে ১৬০ বছর আগে এসেছে এবং আমি সেই দিকে বিশ্ব এগোচ্ছে বলে মনে করি। ভারত০বাংলাদেশ মুক্ত বর্ডার এবং মুক্তবাণিজ্যের সপক্ষে আমি আগে অনেক লিখেছি।
সুতরাং আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে এধরনের বিবৃতি না দিলেই ভাল হয়। বি এস এফ কে শিক্ষিত করতে বলা হয়েছিল বাস্তবকে মেনে-তার মানে এই না- যে বর্ডারে অস্তিত্ব সমর্থন করি।
এটা ত আমি বা কাজি দুজনেই বলেছি-আমরা এটার ওপরেই জোর দিচ্ছিলাম, এবং অন্য যেকেও আমার লেখা থেকে এটাই বুঝত। সইফুলের বোধ হয় মাথা বেশী গরম থাকাই আমরা কি লিখেছিলাম, সেটা মাথা থেকে বাস্পীভূত হয়েছে।
আর এই মন্তব্যে যা বক্তব্য রাখা হয়েছে, সেটা আমার পজিশনের বিরোধি।
@বিপ্লব পাল,
আপনি যেই বাস্তবতা থিকা বর্ডার গার্ডরে শিক্ষিত করতে কইছিলেন আমিও ঠিক ঐ বাস্তবতা থিকাই কইছিলাম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রতিবাদ করতে। ফরিদ ভাই বেশ কয়েকটা লিঙ্ক দিয়া কইছিল বাঙলাদেশ ভারতের সীমান্ত ছাড়াও অন্যান্য পাকিস্তান, চীন সীমান্তে চোরাচালানী অইতাছে কিন্তু বিএসএফ ঐহানে গুল্লি মারে না।
আপনি বাস্তবতা মাইন্যা শিক্ষিত করতে কইছেন তারমানে বাস্তবতা বুঝেন, কিন্তু এই বাস্তবতা বুঝেন না যে ক্ষমতা থাকলে দূর্বলের উপ্রে ক্ষমতাবানরা ছড়ি ঘুড়াইবই। এইডা করব হেগোর অস্তিত্ব বাঁচাইয়া রাখতেই।
আমি বুঝি না আপনার কাছে আন্তর্জাতিকতা নামের বড় সমাধান থাকতে কেন সীমান্ত রক্ষীগুলারে শিক্ষিত করতে চান?
@সাইফুল ইসলাম,
বিপ্লব ভাই বলতে চাচ্ছেন বিএসএফকে শিক্ষিত করতে হবে বাস্তবতাকে মেনে, কিন্তু এই মুহূর্তে সীমান্তে দুর্বলের উপর ক্ষমতাবানের ঘটমান অত্যাচার বন্ধের জন্যে বসে থাকতে হবে আরো ১৬০ বছর পর সীমান্ত মুক্ত হয়ে যাওয়ার কাল্পনিক তত্ত্বকে মেনে নিয়ে। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
এই কতা কইলাম দেইখ্যাই তো আওয়াজ আসল আমি হের কতা টুইষ্ট করছি। আজিব দুনিয়া!
@সাইফুল ইসলাম,
ভাই, আমার ফেইসবুকে ‘পলিটিকাল ভিউ’তে লিখেছি, Birds can fly, যার অর্থ হল, আমি সীমান্ত-বিহীন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি; কিন্তু এটা তো স্বপ্নই, বিবর্তন কখনোই এটা পুরোপুরি হতে দেবে এবং এ ধরনের স্বপ্ন তবু প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক বন্ধনের চেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য, যেটা অপার্থিব ভাই খুব ভাল করে ব্যাখ্যা করেছেন এই লেখায়। যেহেতু বর্ডার পুরোপুরি বাদ দিতে পারব না, তাই বর্ডার বাহিনীর নৃশংসতা দূর করার জন্য তাদের মনস্তাত্ত্বিক সংস্কারের কথা বলেছিলাম, যেটা আমাদের পুলিশ-র্যাবের জন্যও খুব দরকার। আজকাল কিন্তু অপরাধীদের জন্যও এই দাওয়াইয়ের কথা বলা হয় এবং এটা একটা আধুনিক কনসেপ্ট।
কথাটা হুমায়ুন আহমেদের হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে করা মন্তব্যের মত শোনাল, যেখানে উনি বলেছিলেন যে, হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জামিন’ বইটা পাঠ করে বিক্ষুব্ধ হতে কাউকে মৌলবাদী হতে হয় না।
একমত। এবং এজন্যই ফেইসবুকে প্রতিবাদ করেছিলাম, শেইম অন ইন্ডিয়া বলে। বিপ্লবদাও সর্বপ্রথম ব্লগ লিখেছিলেন নিন্দা জানিয়ে। কিন্তু এটা আপনার জন্য যথেষ্ট ছিল না। আপনি যুদ্ধংদেহী প্রতিবাদ প্রত্যাশা করছিলেন!
ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা হলেই সেখানে উচিত-অনুচিত প্রশ্ন থাকবে,আর রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা থাকবে না? ব্যক্তি নাগরিক নিয়েই তো নগর রাষ্ট্র; তাই ব্যক্তির নগ্নতা আর রাষ্ট্রের নগ্নতাকে আলাদা করে দেখছেন কেন?
আসলে জাতির ফর্মেশনেই তো সুবিধাবাদিতা লুকিয়ে আছে, অপার্থিব ভাই তো তাই দেখিয়ে দিলেন!
আপনি নিশ্চিত? শোষিত জাতির ভিতরে যে শোষকের ভুত অনেক সময় লুকিয়ে থাকে না, তার গ্যারান্টি দিতে পারবেন?
পুনশ্চঃ মাথায় যা এসেছিল, বলে ফেললাম। কোন বিদ্বেষ থেকে নয়। সুস্থ বিতর্ক তো হতেই পারে। আপনাকে ফাল্গুনের শুভেচ্ছা। (F)
@কাজি মামুন,
আগে ঠিক করেন আফনের পলিটিকাল আইডিওলজি কী। বর্ডার চান নাকি চান না। আর নইলে আলোচনা করা সম্ভব না। একার কইবেন বর্ডার চাননা আবার কইবেন চাই, এমনে আলোচনা অয় না।
করুনার হাসি ছাড়া আর কিছুই আইতাছে না আপনারে দেইখ্যা।
একমত এহন অইছেন হয়ত ঐ লেহার পরে যেই কয়ডা দিন গেছে তাতে বয়স বাড়ছে এই জন্যে, কারন ঐসময় তো একমত অইতাছিলেন না। আমার ঐলেহায় কি ভাই জাতীয়তাবাদের কোন কতা আছিল? আমি কি বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে কোন কতা কইছিলাম? তাইলে আমার মুখে কোন অদৃশ্য জাতীয়তাবাদের দেহা পাইয়া বিপ্লব দা আর আফনে দাপাদাপি করতাছিলেন কন তো?
“শেইম অন ইন্ডিয়া” কইছিলেন কেন? ঐডাতো ইন্ডিয়া করে নাই। করছিল তো কিছু অশিক্ষিত মূর্খ বিএসএফ জওয়ান। তাইলে পুরা ইন্ডিয়ারে লজ্জায় ভাসাইয়া কী লাভ অইছিল?
এহনও করি। কারন বিপ্লব দা উপ্রে দেখছেন তো মনে হয় এহন বাস্তবতা কইয়া চালাইয়া দিল। আমিও আফনেগোর ঐ বাস্তবতার খাতিরেই যুদ্ধংদেহী প্রতিবাদ আশা করি। খালি শেইম অন ইন্ডিয়া কইয়া জওয়ান শিক্ষিত্ করনের কার্যক্রমে আমার বিশ্বাস নাই।
ভাই, ঘারের উপ্রের বস্তুডারে একটু খেলাইতে শিখেন। নাইলে যতই কইবেন “কোন বিদ্বেষ থেকে নয়” ততই লেঞ্জা ইস আ টাফ থিং টু হাইড থিউরীর লাহান আমি বুইঝ্যা লমু আফনের বিদ্বেষ আছে না নাই।
ব্যক্তিগত জিনিসে যেহেতু কারো কোন ক্ষতি অয় না, আমি ন্যংটা অইয়া হাইট্টা গেলেও আফনের কিছুই অইব না। সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে কারো কি ন্যংটা অইয়া হাইট্যা যাওয়া উচিত নাকি উচিত এই প্রশ্ন অবান্তর। ইচ্ছা অইলে যাই, ইচ্ছা না অইলে যাইব না।
কিন্তু একজন মানুষ নাৎসি, ফ্যাসিস্ট কি অইব না অইব না, এইটা একটা ভ্যালিড প্রশ্ন। কারন নাৎসি অইলে হেয় অ-নাৎসিগুলারে পাইলেই পিডাইব। আর পিডাইলে একজনে দুক্কু পাইব। দুক্কু পাইলে হেয় চিৎকার কইরা উটব। সুতরাং বুঝতেই পারতাছেন, জাতীয়তাবাদ আর আন্তর্জাতীয়তাবাদে উচিত অনুচিতের প্রশ্ন আইয়াই পরে।
জি না ব্রাদার আমি নিশ্চিত না, ঘাড় ঝুলাইয়া কইতেও যামু না যে শোষিত একদিন শোষক অইব না। কারন এই ব্যাপারে আমি কিছুই কই নাই। কইলে নিশ্চয়তা দিয়াই কইতাম। আমি কইছি শোষিত মানুষের পক্ষে থাকাডাই হইতে পারে একমাত্র যৌক্তিক জাতীয়তাবাদ। এহন শোষিত যদি একদিন চামে দিয়া বামে শোষক অইয়া যায়, তাইলে আমার কতার কোন পরিবর্তন অইব না। কারন আমি চিরকাল শোষিতের পক্ষে। বুঝা গেলো?
@সাইফুল ইসলাম,
আপনি আমার যে অংশটুকু কোট করছেন, তাতে তো পরিস্কার বাংলা ভাষায় লেখা আছে যে, আমি বর্ডার চাই না।
আপনে তাইলে অপার্থিব ভাইয়ের লেখাডা ভাল কইরা পড়নের মত সময় পান নাই? ঐহানে কিন্তু উনি লিখছেন যে, বর্ডারবিহীন পৃথিবীও চাইতে হইব; কিন্তু ঐডা পুরা বাস্তবায়ন সম্ভব হইব না; তাইলে বিবর্তনের নিয়ম-কানুন ভাইঙ্গা পড়তে পড়ে। আপনে আমার কোট করা অংশে একটু চক্ষু মোবারক বুলান; তাইলে দেখবেন যে, কথাডা আমি পরিস্কার বাংলা ভাষায় লিখছি। যাইহোক, আপনের মনে হয় খুব তাড়া; তাই আপনার লাইগা, আমি অপার্থিব ভাইয়ের কথাডা কোট করতাছি, যাতে আফনের পুরাডা পড়নের কস্ট সহ্য করন না লাগেঃ
ভাইজান, দয়া কইরা একটু জানাইয়েন কস্ট কইরা যে, এখানে অপার্থিবদা কি বুঝাইতে চাইছেন!
প্রতিবাদের প্রশ্নে তখনো একমত আছিলাম।। আফনের ই লেখা। এট্রুখানি চক্ষু মোবারক বুলাইবেন? ভারতের বিএসএফ সীমান্তের এই বর্বর অমানবিক কামের প্রতিবাদ যদি না করবার পারি, তাইলে আমি তো মানুষের পর্যায়েই পড়ি না! আর বিপ্লবদার প্রতিবাদী পোস্টটা মনে হয় আফনেরডার আগেই আইছিল মুক্তমনায়!
ভাই আফনেরে কে কইছে, কোন লেহায় জাতীয়তাবাদ পাইতে হইলে ঐ শব্দডা ঐ লেহায় টিকা-টিপ্পনিসহ থাহন লাগব? হিটলাররে উগ্র জাতীয়তাবাদী কন ক্যান? হিটলার কি কোথাও কইছিল, উনি উগ্র জাতীয়তাবাদী?
এইডা আবার ক্যামন কতা কইলেন? আমি অন্যায় করলে, আমার পরিবাররে লজ্জায় ভাসতে হইব না? ইন্ডিয়ার নাগরিকরা কোন অন্যায় করলে, ইন্ডিয়ারে লজ্জায় ভাসতে হইব না? পত্রিকা পড়লে দেখবেন যে, হেই ঘটনার লাইগা ইন্ডিয়া কিন্তু হাছা হাছাই লজ্জায় ভাসছিল! খবরডা প্রথম প্রকাশ করে ইন্ডিয়ান পত্রিকা এবং সরকাররে এক হাত নেয়। পরে ইন্ডিয়ার সরকারও নইড়া-চইড়া বসছিল!
খালি শব্দডা যেই হেতু যুক্ত করছেন, তাতে ধইরা নিতে পারি, আফনে জওয়ান শিক্ষিতকরনরে বাদ দিতেছেন না; এর লগে প্রতিবাদও চলে। এইডু পর্যন্ত আমাগো মিল আছে। পার্থক্য হইল, খালি প্রতিবাদ করলেই হইব না; আফনে যুদ্ধংদেহি প্রতিবাদ চান, যেইডা আপনার কাছে কঠিন বাস্তবতা বইলা মনে হইছে। কিন্তু আমার বিনীত প্রশ্ন আফনের নিকট, এই যুদ্ধংদেহী প্রতিবাদ কইরা কি হইব? আফনে দেহি বিপ্লবদার মন্তব্যের জবাবে লেখছেনঃ
এহন আমার কথা হইল, আফনেইতো কইয়া দিলেন যে, ক্ষমতা থাকলে চিরদিনই ছড়ি ঘুরাইবো; তাইলে আফনে যুদ্ধংদেহি প্রতিবাদ কইরা কি বাস্তবসম্মত সমাধান আশা করবেন? বরং বিপ্লবদার কথাডা (মানে তার বাস্তবতার ধারনা বিএসএফ সম্পর্কে) মানলেই তো এখানে লাভ; ওগোরে শিক্ষিত কইরা যদি ছড়ি ঘুরানো রোগডা দূর করবার কিঞ্চিত চেষ্টা করা হয়, তাইলে তারে ক্যান দোষের চোখে দেখবেন?
আফনে ন্যাংটা প্রসঙ্গ আনছিলেন জাতি ও ব্যক্তিগত বিষয়ের গুরুত্বের তুলনামুলক বিচার করতে গিয়া। আমি তাই কইছিলাম, আফনে জাতির বিষয়রে গুরুত্ব দিবেন আর ব্যক্তির বিষয়ডারে অবহেলা কইরা, সেইডা কি খাডে? যাই হোক, খুশ লাগল দিলে যে, আফনে এহন মানছেন ব্যক্তির গুরুত্ব; কারন ব্যক্তি থেকেই জন্ম হয় নাৎসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, রেসিজম, উৎকট দেশপ্রেম ইত্যাদি। আর একটা কথা, আফনে ন্যাংটা হাইট্রা গেলে আমার কিছু অবশ্যই আইব-যাইব। আমি যদি রাষ্ট্র হই বা রাষ্ট্রের নাগরিক হই, উভয়ের জন্যই ন্যাংটা পাবলিক অসুস্থকর, তা মংগল রাষ্ট্রের ধারনাকে লজ্জায় ফালাইয়া দেয় কিনা! তাই রাষ্ট্রের উচিত হইব এমন ব্যবস্থা নেয়া যে, যাতে দ্যাশে কোন ন্যাংটা পাবলিক না থাকে; প্রত্যেকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়।
না, বুঝা গেল না (ঘাড়ের উপরের বস্তুডারে এট্রু কম খেলাই তো)। আমি তো শোষিত থেকে চামে বনে যাওয়া শোষকের কতা কই নাই এইহানে। আমার কথাডা হইল, আফনে সবসময় সুনির্দিষ্ট শোষক বা শোসিত খুঁইজা পাইবেন না, আফনের প্রানপন সমর্থন দিয়া ঝাপাইয়া পড়ার লাইগা! হয়ত দ্যাখ্যা গেল, আফনে যে শোষিতের পক্ষে কলম ধরতেছেন, সেই শোষিত আসলে শোষক; খালি আফনেরে ব্যবহার কইরা স্বার্থসিদ্ধির লাইগা শোষকের ভেক ধরছে!
@কাজি মামুন,
সংশোধনঃ ”খালি আফনেরে ব্যবহার কইরা স্বার্থসিদ্ধির লাইগা শোষকের ভেক ধরছে!” এর পরিবর্তে
হবে ”খালি আফনেরে ব্যবহার কইরা স্বার্থসিদ্ধির লাইগা শোষিতের ভেক ধরছে!”
@সাইফুল ইসলাম,
একটি ভুল সংশোধনঃ ”ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা হলেই সেখানে উচিত-অনুচিত প্রশ্ন থাকবে,আর রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা থাকবে না?” এর পরিবর্তে হবে, ”ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা হলেই সেখানে উচিত-অনুচিত প্রশ্ন থাকবে না,আর রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা থাকবে?”
ভুলের জন্য দুঃখিত!
সংশধনঃ
এর জায়গায় হবেঃ
উচিত অনুচিতের প্রশ্ন আসবে না একজন মানুষ কি নগ্নভাবে রাস্তায় হেঁটে যাবে নাকি যাবে না সেই প্রসঙ্গে। কারন এটা সম্পূর্ণভাবেই ব্যাক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা।
@সাইফুল ইসলাম,
সঠিক। সমগ্র মানব জাতির ভালো মন্দের সাথে জড়িত বলেই তো দুটোই বিশেষ বিষেশ ক্ষেত্রে প্রাসংগিক হয়ে দাঁড়ায়। সেটা আমার আলোচনাতেই বলেছি । যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হল এর দুটোর কোনটারই বস্তুনিষ্ঠ (যুক্তিভিত্তিক বা সার্বজনীন) ঔচিত্য বা অনৌচিত্য নেই। বিশেষ প্রয়োজনে বিবর্তন এই দুটোর কোনটাকে আদর্শ চেতনা বা বোধ হিসেবে সৃষ্টি বা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। তখনই উচিত অনুচিতের প্রশ্ন উঠে আসে বিবর্তনীয়ভাবেই বিশেষ মানব গোষ্ঠীর মধ্যে। উচিত অনুচিতের প্রশ্ন আসবেই না বা আসা উচিত না সেটা বলিনি।
জাতির সংজ্ঞায় যে সব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ হবার কথা বলা হয়েছে সেই বৈষিষ্ট্যগুলি পরিবর্তনশীল। স্পষ্ট করে না বল্লেও উহ্য ছিল অন্তত। কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তীত থাকতে পারে আর বাকী কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হতে পারে। বটম লাইন হল কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে ভিত্তি করে এক গোষ্ঠী হিসেবে সংঘবদ্ধ হওয়া।
মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ করা সার্বজনীন ভাবে স্বীকৃত এক মন্দ কাজ। এটাকে ঘৃণা করা মানবিকতার একটি অংশ। এটা জাতীয়তাবাদ বা আন্তর্জাতিকতাবাদ এর প্রশ্ন নয়, মানবিকতার বা মানবাধিকারের প্রশ্ন। তবে বাস্তবে যে সবাই সেই আদর্শ মেনে চলে তা তো নয়। কিন্তু এটা অন্তত একটা স্বীকৃত মানবিক আদর্শ (শোষণ না করা)।