শিরোনাম দেখে আপনাদের অনেকেই ভাবছেন আমি হয়তো পশ্চিমা চার্চগুলোর যাজকদের দ্বারা শিশু নির্যাতনের কথা বলছি। আসলে তা নয়। আমি এখানে বোঝাচ্ছি শিশুকে মানসিকভাবে পরিণত হওয়ার আগেই একটি ধর্মীয় বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়াও এক প্রকারের শিশু নির্যাতন। আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন চার্চে শিশুদের উপর যাজকদের চালানো যৌন নির্যাতনের ভয়াল কাহিনী আমরা প্রায় সবাই শুনেছি। পাশের দেশ ভারতেও ফাঁস হয়ে গেছে প্রভাবশালী ধর্মগুরু নিত্যানন্দের যৌন কেলেঙ্কারির কথা। আমাদের দেশেও মাদ্রাসায় হুজুর কর্তৃক ছাত্র-ছাত্রীদের যৌন নির্যাতিত হওয়ার ঘটনার খবর কদিন পরপরই পত্রপত্রিকায় আসে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় পাপের ও শাস্তির ভয় দেখিয়ে এসব শিশুদের ঘটনা চেপে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কখনো আবার হুজুর নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেন এভাবে, “আমার উপর শয়তান ভর করেছিল। এতে আমার কি দোষ”। আমরা পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টকেও দেখেছি ভ্যাটিকানের যাজক, কার্ডিনালদের কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে। তারা এমমও দাবি করেছে যে শিশুরাই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পছন্দ করে। নির্যাতনকারী নরপশুরা ভালভাবেই জানে, শিশুদের মনে এই ভয় কতটা প্রবলভাবে কাজ করে। এমন ঘটনা ওই শিশুদেরকে মানসিকভাবে যে আঘাত হানে, সে আঘাত অনেক ক্ষেত্রে তারা সারা জীবনেও কাটিয়ে উঠতে পারে না। একইভাবে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল কোন শিশুর মস্তিষ্কে, কোন কিছু বোঝার মত বয়স হওয়ার আগেই কোন ধারণা বা বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়াটাও কিন্তু শিশুদের জন্য কম ক্ষতিকর নয়।
মেটাল ব্যান্ড ‘ল্যাম্ব অব গড’ এর ‘রেডনেক’ নামের এই মিউজিক ভিডিওটি আমি আপনাদের একবার দেখে নিতে বলছি। শিশুদের জন্য নয় এমন কোন কিছু শিশুর উপর চাপিয়ে দেয়ার পরিনতি কেমন হতে পারে তা এই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে।
কারও ধ্যান-ধারণাকে নিজের সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়ার কোন অধিকার যে কারও নেই সেটা লেবাননের বিখ্যাত কবি কাহলিল জিবরান তার ‘On Children’ কবিতায়ও উল্লেখ করেছেন,
Your children are not your children.
They are the sons and daughters of Lives’
Longing for itself.
They come through you but not for you,
And though they are with you yet they belong not to you.
You may give them your love but not your thoughts,
For they have their own thoughts.
You may house their bodies but not their souls,
For their souls dwell in the house of tomorrow, which
You cannot visit, not even in your dreams.
You may strive to be like them, but seek not
To make them like you.
For life goes not backward not tarries with yesterday.
ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা যেখানে তাদের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিশুদের অধিকার রক্ষায়, সেখানে আমরা দেখতে পাই, ধর্মীয় প্রভাবের কারণে বিভিন্নভাবে সারা বিশ্বেই শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। যখন ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার ধর্মাচারণে বাধ্য করানোর মাধ্যমেই এই ধরণের নির্যাতন শুরু হইয়ে যায়। ধর্মানুষ্ঠান, ধর্ম প্রচার, ধর্মীয় পুস্তকাদির মাধ্যমে সব ধর্মেই চেষ্টা চালানো হয়, কিভাবে ছোট থাকতেই শিশুদের দিয়ে নিয়মিত ধর্মচর্চা চালানো যায়। মস্তিস্কে শুরুতেই এমন বেড়ি পড়িয়ে দেয়ার পরিনতি এতটাই ভয়ানক হতে পারে যে, মানুষ বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুক্তিপূর্ণ নিয়মনীতি দেখলেও অনেক সময় নিজের পূর্ববর্তী ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। ধর্মীয় বিশ্বাস ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণা এভাবেই তাদের মাথায় তখন জাঁকিয়ে বসে। শিশুরা তাদের পিতামাতা, আপনজনদের কাছ থেকে যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। ঈশ্বর ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, যীশু ঈশ্বরের পুত্র, যীশু পানির উপর হাঁটতে পারতেন, যীশু মৃত্যুর তিন দিন পর আবার বেঁচে উঠেছিলেন, রামায়ন-মহাভারত হল প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, গীতা হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাক্য, দশাবতারচরিত, জন্মান্তরবাদ (মৃত্যুর পর কর্মফল অনুযায়ী আবার জন্ম হওয়া), কোরান আল্লাহর বাণী, নবী মুহাম্মদের উপর কোরান নাজেল হয়েছিল, নবীর আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি; বলা যায় বড়রা নিজেরা যেটাই বিশ্বাস করে সেটাকেই শিশুদের মনে ঢুকিয়ে দিতে না পারলে শান্তি পায় না। প্রাপ্তবয়স্করা তখন নিজেদের জাতি, বর্ণ, গোত্র বা ধর্ম রক্ষার নামে শিশুদেরকে যুদ্ধের ময়দানে সহজেই টেনে আনতে পারে। আল কায়েদা তাদের বাহিনীতে শিশুদের আকৃষ্ট করানোর জন্য এখন জিহাদি কার্টুন পর্যন্ত প্রচার শুরু করেছে। শুধু ২০০৪ সালেই সারা বিশ্বে প্রায় ৩ লক্ষ শিশু বিভিন্ন বাহিনীতে যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু দেখা গেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে শিশুদের ব্যবহার যখন ধর্মের নামে করা হয় তখন জাতিসংঘ, এর অঙ্গ সংগঠন ও প্রায় সকল দেশের সরকারই নিশ্চুপ হয়ে থাকে।
ধর্মীয় শিক্ষা যে আরেকটি ক্ষেত্রে শিশু নির্যাতন নিয়ে আসে সেটা হল লিঙ্গ বৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে যা, ছেলে ও মেয়েদের অধিকারের মধ্যে অসমতা তৈরি করে। জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো কিভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারী শিক্ষার প্রসারের কথা ভাবতে পারে যেখানে মেয়েশিশুদের ঘরের বাইরেই যেতে দেয়া হয় না। পাকিস্তান, আফগানিস্তানের তালিবান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মেয়েদের স্কুলে নিয়মিতই বোমা হামলা চালানো হয়। কখনো বা ছড়িয়ে দেয়া হয় বিষাক্ত গ্যাস, যাতে পিতামাতারাও মেয়ে সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে আগ্রহ হারায়। একথা মানতে অনেকেই নারাজ যে ধর্মগুলো তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের প্রচার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। হোক সেটা পশ্চিমের সানডে স্কুল বা আমাদের দেশের মক্তব, মাদ্রাসা। আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায় মাদ্রাসায় পুলিশ রেড করলেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকম দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। জেএমবির মত জঙ্গি সংগঠনগুলো মাদ্রাসাগুলোকেই বেছে নিয়েছিল তাদের ট্রেনিং ক্যাম্প হিসেবে। তাই মাদ্রাসার প্রতিশব্দই হয়ে গিয়েছিল ‘জঙ্গি তৈরির কারখানা’। এখন কোন শিশুকে যদি শিশুকালেই পাঠিয়ে দেয়া হয় কোন মাদ্রাসায় তবে মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার মানসিকতা কেমন হতে পারে তা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়।
কোন কাজটি ভাল আর কোন কাজটি মন্দ, একটা শিশুকে এমনটা শেখানো খুব কঠিন কোন কাজ নয়। আর মন্দ কাজটি কেন মন্দ এটাও বুঝিয়ে বললে একটা শিশুর মন খুব সহজেই তা গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ অন্যের কোন জিনিস তার অজান্তেই নিয়ে আসা বা চুরি করা কেন খারাপ কাজ এবং এমনটা করা কেন উচিত না তা খুব সহজেই একটি শিশুকে বুঝিয়ে বলা যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার পরিবর্তে শিশুকে যদি শুধু এমন শিক্ষা দেয়া হয়, “খবরদার, চুরি করবি না। তাইলে আল্লাহপাক গুনাহ দিবে” বা “চুরি করলে মৃত্যুর পর দোযখে গিয়ে আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হতে হবে” তাহলে ওই শিশুর মানসিক অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে। সেই সাথে চুরি করাটা কেন একটি খারাপ কাজ বা কেন এ ধরণের কাজ করা উচিত নয় তা সম্পর্কেও কিন্তু শিশুটি অজ্ঞই থেকে যাচ্ছে। একটা শিশুর মনের বিকাশ হওয়ার আগেই নরক বা দোযখের মত ভয়ঙ্কর একটি বিষয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কি প্রয়োজন থাকতে পারে? তাছাড়া নরক, জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে কারও নৈতিকতার উন্নতি সাধন করা সম্ভব নয়। “এরকম কাজ কোরো না, কেউ একজন তোমাকে দেখছে। তোমাকে পরে শাস্তি পেতে হবে”, এটা নৈতিকতা শেখানোর কোন গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হতে পারে না। একবার ভেবে দেখেছেন কি? বুদ্ধধর্মে তো স্বর্গ-নরক, বেহেশত-দোযখ বলে কিছু নেই। তাহলে তারা তাদের শিশুদের কিসের ভয় দিখিয়ে খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে? শিশুকাল থেকেই যখন ভয়ের মধ্য দিয়ে কোন শিশু বড় হতে থাকে, সে আর দশজন সাধারণ শিশুর মত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। আমরা কয়েক বছর আগে পাঁচ কি ছয় বছরের শিশু ফাহাদের ঘটনা দেখেছিলাম। এক মাদ্রাসা শিক্ষক ‘কবরের আযাব’ শীর্ষক একটি ভিডিও ফাহাদকে দেখিয়েছিল। যেখানে দেখানো হয় মৃত্যুর পর আত্মাকে কতটা ভয়ঙ্কর উপায়ে শাস্তি দেয়া হয়। ওই ভিডিওটি দেখার পর ফাহাদ তার মানসিক ভারসাম্য পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিল। ভিডিওটিতে ভয়ঙ্করভাবে চিত্রায়িত অত্যন্ত ভায়োলেন্ট দৃশ্যগুলি তাকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়াতে থাকে। তার সমবয়সী খেলার সাথীরা যখন মাঠে খেলত, তখন সে নিজের বাসাতেই বসে থাকত। অসহায় বাবা-মারও তখন আর কিছুই করার ছিল না। তারা নিজেরাই যে নিজেদের সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠানোর মাধ্যমে এমন বিভীষিকাময় পরিনতির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। যখন নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রিচার্ড ডকিন্সের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠির মাধ্যমে আমরা আরও একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলার কাহিনী জানতে পারি। যিনি বড় হয়েছিলেন একটি রোমান ক্যাথলিক পরিবারে, আর সাত বছর বয়সেই এক যাজকের লালসার শিকার হয়েছিলেন। তার কাছ থেকে জানা যায় ওই তিক্ত অভিজ্ঞতা যেমন তার জীবনে বিভিন্ন সময়ই তাড়িয়ে বেড়িয়েছে তেমনি আরও একটি ঘটনা তাকে শিশুকালে আরও বেশি আঘাত করেছিল। ছোটবেলাতেই তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি মারা যায়। বন্ধু হারানোর বেদনা তাকে যতটা ব্যাথিত করেছিল তার চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক ছিল তখন, যখন সে জানল তার বন্ধুটিকে যেতে হয়েছে নরকের অগ্নিকুন্ডে। কারণ সে ক্যাথলিক ছিল না। তার ভাষায়, “প্রায়ই রাতে দুঃস্বপ্ন হয়ে এটা আমার কাছে আসত, ভাবতে খুব কষ্ট হত যে আমার অত্যন্ত কাছের মানুষদের নরকে যেতে হচ্ছে”। একবার ভাবুন তো, কোন মা তার সন্তানকে বলছে, “বাবা, তোমার সেলিম চাচা খুব ধার্মিক ছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, নিয়মিত রোজা রাখতেন। বেশ কয়েকবার হজ্ব করে এসেছেন। উনি মারা যাওয়ার পর আল্লাহ উনাকে সোজা বেহেশতে নিয়ে গেছেন। কিন্তু তোমার হালিম চাচা বেনামাজি ছিলেন। তিনি রোজাও ঠিকমত রাখতেন না। তাই উনি মারা যাওয়ার পর তাকে দোযখে যেতে হয়েছে”। এমন কথা শোনার পর শিশুটির মনের অবস্থা কিরূপ হতে পারে তা আপনিই অনুমান করুন। বিশেষ করে শিশুটি সেলিম চাচা অপেক্ষা তার হালিম চাচাকেই যদি বেশি পছন্দ করে তখন?
শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রদান নিয়ে যত অনাকাঙ্খিত সব ঘটনা ঘটে থাকে সেগুলো বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। যেহেতু ধর্ম এগুলোর সাথে লেগে আছে তাই এই ধরণের অনাচার নিয়ে কেউই নিজের মুখ খুলতে চায় না। শিশুদের শৈশবের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো কেড়ে নেয়ার মাধ্যমে ধর্ম তাদের কতটা ক্ষতিসাধন করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কেটি পেরি ছোটবেলার কথা স্মৃতিচারণ করে একবার বলেছিলেন,
“ধার্মিক ও রক্ষণশীল ক্যাথলিক পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে যে বয়সে আমার ডিজনি বা হ্যান্স অ্যান্ডারসনের ফেইরি টেল পড়ার কথা ছিল, সেই সময়টার পুরোটাই আমার পরিবার নষ্ট করিয়েছে আমাকে দিয়ে বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মীয় পুস্তক পড়ানোর মাধ্যমে”।
এমন অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি জীবনের পরবর্তী সময়ে অনেকেরই হয়েছে। শারীরিক শিক্ষাবিদ টিনা ব্রুস এ প্রসঙ্গে বলেন,
“আপনি যদি আপনার শিশুর মাথায় ধর্মীয় কুসংস্কার প্রবেশ না করান তবে প্রকৃত জ্ঞান রাখার জন্য অনেকখানি জায়গা পাওয়া যায়”।
মানসিক নির্যাতনের সাথে ধর্ম শিশুদের শারীরিক নির্যাতনকেও উৎসাহ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে উদাহরণটি আসে সেটি হল ইসলাম ও ইহুদি ধর্মের Genital Mutilation বা Circumcision বা খৎনা প্রথা। ধর্মগুলো চায় শুধু মানসিকভাবে নয়, বরং শারীরিকভাবেও নিজের অনুসারীদেরকে ধর্মীয় চিহ্ন বহন করতে হবে। কোন শিশুর শরীরের সংবেদনশীলতম অঙ্গে ছুরি চালানোকে একটি সভ্য সমাজ কিভাবে গ্রহন করে তা বুঝতে পারা আসলেই কষ্টসাপেক্ষ। কিন্তু ধর্মীয় নির্দেশ বলে কথা। এই বীভৎস প্রথাটির শিকার কিন্তু শুধু ছেলে শিশুরাই হয় না। সোমালিয়া, সুদান, গিনি, চাদসহ আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম দেশে আজও মেয়েশিশুদের উপর ধর্মের নামে এমন নারকীয় নির্যাতন চালানো হয়। ধর্মীয় নির্দেশ যত বর্বরই হোক না কেন, এটাকে গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য, এটাকে শরীরের জন্য উপকারী দাবি করে ধর্মবাদীরা এই বীভৎস প্রথাটির পিছনেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অপব্যাখ্যা নিয়ে আসে। এখানে একটি প্রশ্ন তোলা যায়। শরীর-স্বাস্থ্যের উন্নতির উদ্দেশ্যে জন্মের পর যদি এই ধরণের অঙ্গহানি ঘটাতেই হয়, ঈশ্বর তবে কি মানুষের শরীরকে যথেষ্ট নিখুঁত করে ডিজাইন করেন নি? নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষ ধর্মের অনুসারীদের যাতে আলাদা করতে সুবিধা হয় সেরকম দূরদর্শী চিন্তা মাথায় রেখেই এই ধরণের অঙ্গহানির নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন?
ধর্মগুলো মানুষকে শিশুকালেই এমন শিক্ষা দিয়ে দেয় যে তার ধর্মই একমাত্র সত্য। একমাত্র তার ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারীরাই মৃত্যুর পর স্বর্গে বা বেহেশতে পৌঁছতে পারবে। বাকি সবার স্থান হবে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডে। সে এবং তার ধর্মের জাতভাইরা প্রকৃষ্ট, বাকিরা সবাই নিকৃষ্ট। শুরু থেকেই অন্যদের প্রতি এমন ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়াই ধর্মের বৈশিষ্ট্য। আমরা কি পারি না শিশুদের অন্যদেরকে ভালবাসতে শেখাতে বা মানুষ-মানুষের মধ্যে বৈষম্য না করতে?
আমরা শিশুবিবাহের (বাল্যবিবাহ) বিরুদ্ধে অবস্থান নেই, কারণ বিবাহের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক হতে হয়। আবার আমরা শিশুদের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডেও (যেমন নির্বাচন) অংশ নিতে দিই না, কারণ ভোট দেয়া বা নির্বাচনে অংশ নেয়ার মত পরিপক্বতা তাদের মধ্যে আসে নি। আমাদের এখন সময় এসেছে শিশুদের বলপূর্বক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রদান বিষয়ে বিতর্কে দাঁড়ানোর। অনেকেই হয়তো বলবেন যে, এটা পিতামাতার উপর ছেড়ে দেয়া উচিত। কিন্তু, ধর্মীয় শিক্ষার কারণে উদ্ভুত শিশু নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের চিন্তার উদ্রেক করে, সমাজে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেয়ার জন্য ধর্ম নামক প্রতিষ্ঠানটির আদৌ কোন প্রয়োজন বা উপযোগিতা আছে কি? এর ফলে যে একটি বিতর্কিত পরিস্থিতির উদ্ভব হবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। স্রেফ ‘স্পর্শকাতর’ বলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এবং সাধারণ মানুষের এক্ষেত্রে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলে বা এই বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে চলবে না। সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিশুদের অধিকার রক্ষায় অবশ্যই রক্ষণশীলতার খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে হবে। কিন্তু বাস্তবমুখী হলে আমরা দেখতে পারি আশা করা যত কঠিন আশার বাস্তবায়ন করাটা আরও অনেক বেশি কঠিন। তবে আমি স্বপ্ন দেখি যে একদিন সমাজের মানুষ জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হবে। আরও বেশি চিন্তা করার ক্ষমতা তাদের মধ্যে আসবে।
ততদিনে হয়তো সারা বিশ্বের কোটি শিশুকে ধর্মের নামে নির্মম নির্যাতন নীরবে, নিভৃতে সহ্য করে যেতে হবে।
সহায়ক গ্রন্থপুঞ্জিঃ
Religion’s Real Child Abuse – Richard Dawkins
Religion and Child Abuse -Innaiah Narisetti (Council for Secular Humanism)
Religious Indoctrination is Child Abuse (http://mwillett.org/atheism/.htm )
অভীক,
লেখাটা অসম্ভব ভালো হয়েছে এবং অত্যন্ত সময়োপযোগী লেখা।
সামাজিকীকরণের নামে ধর্মকে ছোট্ট একটা শিশুর মস্তিষ্কে ঠেসে দেয়া কবে যে বন্ধ হবে… কে জানে!
@অনন্ত বিজয় দাশ,
ধন্যবাদ।
এই জন্মে মনে হয় না আমরা কেউ দেখে যেতে পারব।
দারুন হয়েছে লেখাটা এক কথায় বলা যায়।
মাঝে মাঝে মনে হয় অনেকেই হয়তো এই সমস্যা গুলোকে সামনে আনতেছে এবং মিডিয়াও আসতেছে। কিন্তু এই সমস্যা গুলো বন্ধ হচ্ছে না কেন?
@রঞ্জন বর্মন,
সমস্যাগুলো গা সওয়া হয়ে গেছে মনে হয়। আর তা ছাড়া ধর্মীয় ভাবে বিষয়টিতে কোন দোষ তো নেই। যে কারনে মানুষ বিশ্বাসী বান্দারা এটাকে তেমন গুরুত্বও দেয় না।
@রঞ্জন বর্মন,
:thanks:
:clap এক্কেবারে বুলস আই। দারুণ দারুণ দারুণ। আসল সমস্যায় হাত দিয়েছেন।
মা বাবারা কিংবা বড়রা প্রায়ই বলে যে তারা তাদের ঘরের ছোটদেরকে সঠিক সুশিক্ষা দিয়ে বড় করছে। ওদের সারাক্ষন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে ওগুলো যে ঠিক তা ওরা জানে কি করে?
বড় হয়ে ছোটবেলার ভালো মন্দ ভাবনা নিয়ে ভেবে দেখলামঃ
পুরোটা এখানে
অন্য আর একটা
মরে গেলে শাস্তি, ভয় ভয় আর ভয়, একটি শিশুর জীবন যদি এমনি করে শুরু হয় বেচারার আর থাকলো কি?
শিশু নির্যাতনের এই দিকটা নিয়ে অনেক অনেক লেখা আর আলোচনা হওয়া খুব দরকার।
@কাজী রহমান,
বাংলাদেশের মা-বাবাদের প্রায় ৯৯% ই মনে করে ধর্মীয় শিক্ষা হলো শ্রেষ্ট সুশিক্ষা। যারা তাদের সন্তানদেরকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ায়, তার পরেও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার জন্য আলাদা মৌলভীও রেখে দেয় যাতে সন্তান বিপথে না যায়। তারা মনে করে- ধর্ম নিরপেক্ষ মনোভাব পোষণ বা অন্ধ বিশ্বাস না থাকাটাই হলো বিপথ।
@ভবঘুরে,
এই ভাবনাকে কিভাবে বদলানো যায় সেই পদ্ধতি নিয়ে মনে হয় জোরেসোরে কথা বলা দরকার। কি বলেন?
@কাজী রহমান,
ধন্যবাদ।
জিজ্ঞেস করার দরকার কি, যেখানে আমরা জানিই তারা কি উত্তর দিবে। তারা বলবে আমাদের বাবা মা আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন। তাদের বাবা-মা তাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন। তাদের বাবা-মাও তাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন। এত দিন ধরে চলে আসা শিক্ষার রীতি ভুল হওয়ার প্রশ্নই আসে না??!
@অভীক,
জিজ্ঞেস করতে হবে। ধরতে হবে ওদের। না ধরলে এমনি করেই চলবে। এই জন্যই জিজ্ঞেস করতে হবে। আপনার আমার মত মানুষ অবশ্যই প্রশ্ন করবে।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ও চমতকার একটি লেখা।
দামার নিজের ধারনা ধর্মীয় কড়াকড়ি যেসব দেশে বাল্যকাল থেকেই চরম ভাবে বলপূর্বক চাপানো হয় সেসব দেশে ক্রিয়েটিভিটি কমে যায়। আমাদের দেশও মনে হয় তেমন উদাহরন। ফোরামে বিতর্কের অভিজ্ঞতা থেকেই মনে হয়েছে যে লজিক্যাল আর্গুমেন্ট এর ক্ষমতা আমাদের জাতীয়ভাবেই কম।
আমি বুঝি না জোর করে অবোধ শিশুদের ওপর ধর্ম চাপাবার কি দরকার যেখানে দাবী করা হয় যে ধর্মে কোন জোরাজুরি নাই। অবোধ শিশুকে বুদ্ধি হবার আগ থেকে আকাশে ব্রক্ষ্মদৈত্য থাকে শেখালে সে তাইই শিখবে। বড় হয়েও এর আছর থেকে অনেকেই বেরুতে পারবে না। ধর্মওয়ালাদের নিজেদের ধর্মে আত্মবিশ্বাস এতই বেশী হলে উচিত শিশুদের ১৮ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা, এরপর তাদের হাতে সব ধর্মের বই দেওয়া, তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিক। বলাই বাহুল্য মুখে মুখে রাজা উজির মারলেও এতে ওনারা রাজী হবেন না। নানান চটকদার ধর্মীয় কল্পকাহিনী, ঈশ্বরের নাম আজগুবি/অমানবিক তত্ত্ব যে প্রাপ্ত বয়ষ্ক লোকে হঠাত করে গণ বর্জন করবে এটা ওনারাও ভালই জানেন।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ।
একমত। আমার নিজের উপলব্ধিও পুরোপুরি আপনার মতই।
উনারা জাতে মাতে তালে ঠিক। নিজেদের ধর্মকে যতই শ্রেষ্ঠ, ১০০ পারসেন্ট বিজ্ঞানসম্মত বলে চিল্লায় যায়, কোন রকমের চ্যালেঞ্জ নেয়ার রিস্ক উনারা কখনোই নেন না
@অভীক,
রিস্ক নেবেন কেন? যে পরীক্ষার ফলাফল জানা সে পরীক্ষায় সেধে সেধে ফেল মারতে যাবে কোন পাগলে?
@আদিল মাহমুদ,
এটা ধারণা হয় কিভাবে ? এটাই তো সত্য। অনেকটা বিজ্ঞানের তত্ত্বের মত।
@ভবঘুরে,
আমি তো বৈজ্ঞানিক নই, নিতান্তই সাধারন মানুষ। নিজের অবজার্ভেশনের কথাই বলেছি। তবে এই ধারনা তত্ত্বের মতই সত্য প্রমান হওয়াই স্বাভাবিক।
খুবই জোশ একটা লেখা।
সাম্প্রদায়িকতার একটা বড় উৎস বাচ্চাদের ছোটো বেলা থিকাই ধর্মশিক্ষা দেওয়া। যেইখানে ছোটবেলা থিকা ধর্মের শিক্ষা দেওয়া হইব, ঐখানে সাম্প্রদায়িকতার উপস্থিতি থাকবই। বিশ্বের অনেক দেশেই পাঠ্যপুস্তকে ধর্মশিক্ষা নাই। ধার্মিকগুলারে ঘারে ধইরা জিগানো উচিত, এই জন্য কি হেরা চুরি চামারি কইরা দেশ ভইরা ফেলাইছে??
@সাইফুল ইসলাম,
ধন্যবাদ
রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশুদের সাম্প্রদায়িকীকরণের এই অসভ্য প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে একটি সভ্য সমাজ দেখতে পাওয়ার আশা কোনভাবেই করা যায় না।
(Y)খুব ভালো লিখেছেন। (C)
@নিলীম,
:thanks:
অভীক, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রসংগ। অনেকদিন আগে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত একটি আলোচনাতেও আমি ধর্মীয় শিক্ষা শিশু অবস্থায় বাতিলের পক্ষে মত দিয়ে ছিলাম। আমাদের দেশে একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে ধর্মীয় শিক্ষার জোয়াল বাচ্চাদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি কেউ যদি সেটা বদলে অন্যটা গ্রহণ করতে চায়, সে সুযোগও নেই! এই ধরনের বাধ্যবাধকতা অবশ্যই শিশু নির্যাতনের নামান্তর। আজ সত্যিই সময় এসেছে আমাদের এসব ব্যপারে আরো সোচ্চার হবার। ধন্যবাদ সময়োপযোগী প্রবন্ধটার জন্যে।
@কেশব অধিকারী,
@কেশব অধিকারী,
(Y) । রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশুদের সাম্প্রদায়িকীকরণের এই অসভ্য প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে একটি সভ্য সমাজ দেখতে পাওয়ার আশা কোনভাবেই করা যায় না।
চমৎকার লেখা। (Y) (Y) শিশুকে পিতামাতার ধর্মীয় পরিচয়ে বড় করা নিঃসন্দেহে এক ধরণের শিশু নির্যাতন। আমাদের সমাজে অভিভাবকদের এটা বোঝানোই কঠিন যে তাদের সন্তান কোন বিষয়ে তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করতে পারে। তাদের ছেলেমেয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের মতই ভাববে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে এটাই তারা আশা করেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা আরও বেশি। তথাকথিত “পুরুষ অভিভাবক” যেমন বাবা,ভাই,স্বামী,পুত্রের মতামত অনুসারেই তাকে চলতে হয়। এই নির্যাতনকে আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র। স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি,কর্মক্ষেত্র প্রতিটি জায়গায় ধর্মের ঘর পূরণ করতে হয়। ঘরটি খালি রাখলে ফর্ম অসম্পূর্ণ ধরা হয়। আবার মজার ব্যাপার হল পিতামাতার ধর্ম না দিয়ে অন্য কোন ধর্ম লিখলে ফর্ম ত্রুটিপূর্ণ বলা হয় এবং আবেদনকারীকে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। ধর্ম যেখানে শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত বিশ্বাস সেখানে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে এই তুচ্ছ জিনিসটিকে অপরিহার্য করে তোলা হয়েছে। এটা মানুষের ও মানবতার অপমান।
@আলোকের অভিযাত্রী,
বিষয়টা যে কি রকম যন্ত্রণাদায়ক তা প্রকাশ করা যায় না। আপনার সাথে একমত পোষন করে আমিও বলছি, এটা মানুষের ও মানবতার অপমান। :-Y :-Y
ধর্মীয়ভাবে কিছু আচার অনুষ্ঠান জোর করে চাপিয়ে তা পালন করতে বাধ্য করা হয় শিশুদের। অধিকাংশ সময়ই দোযখের শাস্তির বর্ণনা দিয়ে ভয় দেখানো হয়। পরবর্তীতে সেই ভয়াবহ দৃশ্য মস্তিষ্কে গেথে যায়। নামাজ না পড়ার ভয়, রোজা না রাখার ভয়, খতনা না করার ভয়। এগুলো শারিরীক এবং মানসিক উভয় দিকেরই নির্যাতন। শিশুকালে জোর করে সকাল বেলায় মসজিদে আরবি শেখার জন্য পাঠানোটাও নির্যাতন। আমার মনে আছে- আমিও না বুঝে আরবি শিখতাম মসজিদে গিয়ে। হুজুরের হাতে থাকতো ছড়ি; একটু ভুল উচ্চারণ করলেই পিঠ অথবা হাতের উপর বেত পড়তো। ভুল উচ্চারণ করলে এ জগতে শাস্তি তো পেতামই; উপরন্তু পরজগতে যে শাস্তি পাবো তারও ভয়াবহ চিত্র মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।
অভিক, আপনার এই লেখাটি আমার ভালো লেগেছে।
@মাহফুজ,
আর এই ভয়টাই পরবর্তীতে তাকে তাড়িয়ে বেড়াতে থাকে, যা তাকে বিভিন্ন রকম অকাজে প্ররোচিত করে।
ধন্যবাদ
আমাদের দেশের পাঠয় পুস্তকগুলো শিশু নির্যাতনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ১ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণীর বাংলা বইতে অন্তত একটি অধ্যায় আছে ইসলামের গুণগানে মুখরিত। হযরত এরশাদ(সঃ) কর্তৃক ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার পর থেকে প্রতিটি আলাদা ধর্মের অনুসারী পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদেরকে আলাদা আলাদাভাবে ধর্মশিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে স্কুলে। ওরা সমাজ-বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানে পড়ছে এক ধরণের কথা আবার সে ব্যাপারটি ধর্ম বইতে পড়ছে সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে। এতে বাচ্চারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বাস ও বিজ্ঞানে গুলিয়ে ফেলছে। তারপরও বাংলা বইতে ইসলাম ধর্ম প্রচারের ঘৃণ্য ব্যবসা কেন? বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্য ধর্মের গুণগান সেখানে নেই কেন? স্কুল কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাকি ধর্মশালা?
@তামান্না ঝুমু, শিক্ষা ব্যবস্থ থেকে কি ধর্মীয় শিক্ষা নামক জিনিস টা কে উঠানো যায় না ?
@dhaka dhaka,
ধর্মশিক্ষা পুরোপুরি বাদ দেয়া এখন মনে হয় সম্ভব না। কিন্তু ধর্মের নামে যাতে বিদ্বেষ না ছড়ায় সেই ব্যবস্থা করতে বেশী কিছু না একটু চেষ্টা থাকলেই সম্ভব। যদিও মাদ্রাসার ওপর নিয়ন্ত্রন না আনলে সেটাও পুরোপুরি বৃথা চেষ্টা হবে।
@dhaka dhaka,
কে উঠাবে? সরকার? আপনিই বলুন Who has the balls to do so?
@তামান্না ঝুমু,
সমস্ত স্কুল লাইফটাই এই পেইন বহন করে নিয়ে চলতে হয়েছে আমাকে। হযরত কত দয়ালু ছিলেন, কত মহানুভব ছিলেন তার সবকিছু জানা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ উলটা কথা লিখতে হয়েছে পরীক্ষার খাতায়। বার বার ইচ্ছা করত বাংলা বই থেকে ওই অধ্যায়গুলো ছিঁড়ে ফেলে দিতে।
অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ এবং যৌক্তিক একটি লেখা, অভীক (Y) ।
রিচার্ড ডকিন্স তার ‘গড ডিলুশন’ বইয়ে বলেছেন কোন শিশুর উপর জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়াটাও এক ধরনের ‘এবিউস’। আমরা কথায় কথায় শিশুর পরিচয় উদ্ধৃত করে বলি মুসলিম শিশু, খ্রীস্টান শিশু, হিন্দু শিশু ইত্যাদি। অথচ, যে শিশুটিকে মুসলিম, খ্রীস্টান বা হিন্দু পরিচয়ে বড় করা হচ্ছে তার পুরোটুকুই আসলে ছোটবেলা থেকে অভিভাবকের জোর করে চাপানো। স্বাধীনভাবে বুঝে শুনে শিশুকে ধর্ম গ্রহনের অধিকার দেয়া হয়নি, বরং ছোটবেলা থেকে বুদ্ধি শুদ্ধি হবার আগেই ধর্মীয় সবক শুনিয়ে করা হয়েছে ব্রেন ওয়াশ! প্রাত্যহিক জীবনে অন্য অনেক কিছুই আমরা শিশুদের থেকে দূরে রাখি – তার পর্যাপ্ত বয়স হয়নি বলে, অথচ ধর্মের বেলায় নিয়ম কানুন একদম উল্টো। আসলে মুসলিম শিশু বলে কিছু নেই, হওয়া উচিৎ মুসলিম অভিভাবকের শিশু। ঠিক তেমনি খ্রীস্টান শিশু না হয়ে হওয়া উচিৎ খ্রীস্টান পিতামাতার শিশু। কিন্তু কে বুঝবে সেটা!
@অভিজিৎ, দা, একমত। (Y) একদমি সত্যি কথা। কিন্তু এই ধর্মীয় ধুম্রজাল থেকে মনে হয় আর অর্ধযুগেও মিলবে না মুক্তি এই সভ্য মানবের।
লেখাটা সুন্দর, বাস্তববাদী, ও ইনফিডেলিস্টিক হয়েছে, লেখককে অনেক ধন্যবাদ। (F) (F)
দুঃখিত, ছোট্ট সম্পাদনাঃ অর্ধযুগের স্থলে “অর্ধশতাব্দী”ই স্থলাভিষিক্ত হবে।
যেতে যেতে একটা গানের কলি মনে পড়ে গেলঃ
@সবুজ বডুয়া,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
অনেক ধন্যবাদ, দাদা।
আমিও এটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। ব্রেন ওয়াশিংকে অভিভাবকেরা শিশুকে শিক্ষা দেয়ার বা উচিত শিক্ষা দেয়ার একমাত্র পদ্ধতি বলে মনে করে। কিন্তু এটাও যে ‘চাইল্ড এবিউস’ এটা বোঝার মত মস্তিস্ক হয়তো কখনোই তাদের হবে না।
@অভিজিৎ,
ছোটবেলা থেকেই মগজের কোষে কোষে , ধমনীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে যা গেঁথে দেয়া হয়েছে তা উপড়ে ফেলতে হয়ত ম্যালা সময় লাগবে তারপরও বলি অনেক কিছুই হয়ত সচেতন ভাবে আমরা দেখি না , যা আমরা এ বয়সেও পরিবর্তন করতে পারি।
ধরুন আপনার ধর্মীয় চিন্তা ভাবনা বা ধর্মীয় সম্পৃক্ততার কথা মুক্ত মনার লেখক পাঠক সবারি জানা , তদুপরি ক’জন আপনাকে অভিজিৎ ভাই বলে সম্বোধন করেন? দাদা না বলে?
আপনি চান বা নাই চান, মানুন বা নাই মানুন আপনাকে দাদা সম্বোধন করছেন ধর্মীয় সচেতন মানুষেরা ই , যাদের নিত্যি আসা যাওয়া মুক্তমনায়। এটি যে শুধু মাত্র বাংলা নাম বলেই তা’ কিন্তু নয় আর তাই’ বা কেনো হবে ? বাংলা নাম এ দাদা আর আরবী নাম এ ভাই?
তাই বলছিলাম ছোট ছোট কত নূড়ী পাথর পায়ে পায়ে ঠেকে , আমাদের সময় হয় না ও গুলোকে সরানোর।
@কেয়া রোজারিও,
অভিজিৎ রায়, অভিজিৎ দা হিসেবেই সবার নিকটে একটা পরিচিতি পেয়ে গেছেন। একারণেই তাকে অভিজিৎ ভা
@কেয়া রোজারিও,
অভিজিৎ রায়, অভিজিৎ দা হিসেবেই সবার নিকটে একটা পরিচিতি পেয়ে গেছেন। একারণেই তাকে অভিজিৎ ভাই না বলে সবাই অভিজিৎ দা বলে সম্বোধন করে। আবার আমার নিজের ক্ষেত্রে দেখুন জুনিয়ররা আমাকে অভীকদা, অভীক ভাই দুই ভাবেই সম্বোধন করে। আমি আবার তাদের জানিয়ে দেই যে দাদা অপেক্ষা ভাই শুনতেই আমি বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করি।
(Y)
@সৈকত চৌধুরী,
:thanks: