আমি ধর্মে অবিশ্বাসী হলেও এই লেখাটি আমার বিশ্বাসী বন্ধু দের জন্য। বিভিন্ন সময়ে ধর্ম নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাদের ব্যাপারে আমার কিছু বাক্তিগত মতামত বলতে পারেন এই লেখাটিকে।
আমার প্রায় সকল বিশ্বাসী বন্ধুই তাদের ধর্মের গড এর অস্তিত্তের ব্যাপারে শত ভাগ নিশ্চিত। গড এর অস্তিত্ত নিয়ে তাদের সন্দেহের লেশ না থাকলেও আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে তারা আসলেই মনে প্রানে গড এর অস্তিত্ব বিশ্বাস করে। যেমন ধরুন, আমি একজন নাস্তিক। আমি আমার জীবনযাত্রার সাথে আমার অধিকাংশ মুসলমান বা হিন্দু বন্ধুদের জীবনযাত্রার কোনই পার্থক্য দেখিনা। তারাও আমার মতই বিরি-সিগারেট খায়, ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে মাতামাতি করে, ভার্সিটি গিয়ে প্রেম করে, তারপর ফেসবুক এ বসে সময় নষ্ট করে আর কম্পিউটার এ ভালো-মন্দ জিনিস দেখে। মোটকথা তারাও আমার মতই জীবন টা উপভোগ করছে। কিন্তু আমি যদি বিশ্বাসী হতাম, আমার মনে হয় না আমি এভাবে আমার জীবন টা উপভোগ করে সময় নষ্ট করতাম। শুনেছি, জায়নামাযে দাঁড়ানো আর নাকি আল্লাহ এর সামনে দাঁড়ানো এক ই কথা। মানুষ যেমনে নামাজ পড়ে, আমার মনে হয়না কেউ ই ঠিক ঠাক বিশ্বাস করে যে সে আল্লাহ এর সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পরছে। দেখে মনে হয় কোন মতে নামাজ শেষ হলেই বাঁচে। আমি যদি তাদের মত নিশ্চিত হতাম, কোন মতে তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ করে উঠে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। এইটা আমার সত্যি অবাক লাগে যে এত নিশ্চিত হওয়া শত্তেও তারা কিভাবে এত দায়সারা ভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, কিভাবে নির্দ্বিধায় তারা এত পাপ(ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে) কাজ করে? আমি মোটামুটি ২ টা ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছি। এক-অধিকাংশ বিশ্বাসীই অকাট মূর্খ আর ভণ্ড। দুই- তাদের অবস্থাও কিছুটা আমার মতই। গড এর অস্তিত্ব নিয়ে নিশ্চিত এর ধারে কাছেও নেই তারা। শুধু মাত্র সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পাবার আশায় ধর্ম বিশ্বাস করে। মোটকথা, তাদের এত মাথা ব্যাথাও নাই যে আসলেই গড আছে কিনা, বিশ্বাস করলে যেহেতু কোন ক্ষতি নেই, উলটো সত্তর হুর পরি পাবার একটা সম্ভাবনা আছে, তাই তাদের ধর্মে বিশ্বাস। বাক্তিগত ভাবে আমি দ্বিতীয় ব্যাখ্যাই বিশ্বাস করি।
ধর্ম নিয়ে আলোচনায় সবচাইতে সমস্যা হয় যা নিয়ে তা হল আমার বিশ্বাসী বন্ধু দের ধর্ম নিয়ে অজ্ঞতা। আমি একবার একটা জরিপ এর মত করেছিলাম। ৫০ জন ছেলে মেয়ে কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, মুহাম্মাদ এর পত্নি সংখ্যা কত? ৫০ জন এর মধ্যে শুধু মাত্র একজন হুজুর গোছের ছেলে ছাড়া আর কেউ ই পারেনাই। সব চাইতে কমন উত্তর ছিল- চার। যাই হোক, আলোচনায় কখনই বিতর্কিত কোন জিনিস টেনে আনলেই আমার মুসলমান বন্ধু দের প্রথম প্রতিক্রিয়া হয়ঃ ইহা ইসলাম এ নেই। যেমন ধরুন, বলা হল, ইসলাম এ নারী নেতৃত্ব হারাম বা ইসলাম এ দাসী এর সাথে শারীরিক সম্পর্ক জায়েজ।আমার বিশ্বাসী বন্ধুরা ইতিমদ্ধেই মাথা নাড়ানো শুরু করেছেন। এরপর তারা চায় রেফেরেন্স। কষ্ট করে সেইটা দেওয়া হলে তারা শুরু করে গুগল এবং এর পর পুরো ১৮০ ডিগ্রি উলটে তারা বয়ান শুরু করে নারী নেতৃত্ব কেন মানব জাতির জন্য খারাপ। আর আপনি যদি জাকির নায়েক হন, তাইলে ইউ এন চারটার আর ইসলাম এর তুলনা করে দেখাবেন যুদ্ধবন্দী দের সাথে ইসলাম কত সওয়াবের আচরণ করেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে ধর্ম নিয়ে আপনি এতই নিশ্চিত, যা বিশ্বাস করলে আপনি বেহেস্ত পেতে পারেন, তা নিয়ে আপনার এত কম জ্ঞান কেন? এত কম আগ্রহ কেন? নাস্তিক দের প্রশ্ন শুনে আপনার এত গুগল করতে হয় কেন? এই সব বিতর্কিত প্রশ্নের উত্তর আপনার কি আরও আগেই জানা উচিত ছিলনা?
দুই দিন পর পর পেপার খুললেই দেখা যায় হিজবুত তাহ্রির এর সদস্য ধরা পরেছে। এই সদস্য রা মাঝেমাঝেই বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর হয় আর আমার বন্ধুরা মাথা নাড়াইতে থাকে, এরা কি গাধা, এত ভাল ভাল জায়গায় পড়েও কিভাবে হিজবুত তাহ্রির এ যোগ দেয় এরা? আমি শেষ মেষ ৪-৫ জন কে জিজ্ঞাসা করেই বসলাম, হিজবুত তাহ্রির কেন খারাপ? অনেইইস্লামিক কি কাজ তারা করছে? ঠিক ঠাক কেউ ই তেমন উত্তর দিতে পারলনা, ২-১ জনের কথা থেকে যা বুঝলাম তা হল, হিজবুত তাহ্রির জোর করে ইসলামি শাসন কায়েম করতে চায়, কিন্তু ইসলাম জোরাজুরি সমর্থন করেনা। ইসলামি শাসন কায়েম করতে যদি একটা মুসলিম দেশেই জোরাজুরি করতে হয়, তাহলে বুঝতেই পারছেন মানুষের কত টুকু আস্থা আছে ইসলামি শাসন বেবস্থার উপর।
সবশেষে বলি, মহান রাষ্ট্র সৌদি আরবের কথা। গত বছর যখন এক দল বাঙালি দের শিরশ্ছেদ করা হল, আমার মুসলিম বন্ধুদের কথা- অপরাধী দের জন্য মায়াকান্না কেন? তারা সৌদি আরব এর বিচার বেবস্থার সুস্থতা নিয়ে কিভাবে এত নিশ্চিত হল আমি জানিনা, কিনবা কিভাবে নয় জন বাক্তিই সমান ভাবে খুনের জন্য অপরাধী, তাও আমার বোধগম্য নহে।এক দল যথারীতি বলল, ইহা সহিহ ইসলাম নহে। আর এক দল বলে বসল, মাথা কেটে ফেললে আসলে অপরাধীর ই কষ্ট কম হয়, তাই ইসলাম এর এই বিধান ঠিক ই আছে।দুঃখজনক হল, এই কয়দিন আগে বি এস এফ এর বাংলাদেশি মানুষ পেটানোর ভিডিও দেখে তাদের দেশপ্রেম উথলে উঠল। আমার কথা হছছে- সেও তো অপরাধী ছিল, গরু পাচার করছিল। ঠিক যেমন ঘুষ না দিতে পারার কারনে সে বি এস এফ এর হাতে মার খেল, ব্লাড মানি না দিতে পারার কারনে সৌদি আরব ও আমার দেশের মানুষ কে পাবলিকলি বিহেড করল। শুধু মাত্র ভারত মালাউনের দেশ আর সৌদি আরব নবির দেশ ছাড়া আমি ঠিক পার্থক্য টা ধরতে পারিনাই।
হুম ভাই আমার মনে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ছিল এর আগে। যেমন দাসি সম্ভগ, বহুবিবাহ, যুদ্ধ ইত্যাদি তো আমি কিছু বই যেমন সিরাতে হিশাম,নইম সিদ্দিকির লেখা মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ(স:)(আবার নাম শুনে মাইন্ড খাইয়েন না যেন)পড়ে ছিলাম আর বেশ কিছু পত্র পত্রিকা পড়ে আমার ভুল ধারনা দূর করি (সে সময়ের জন্য ) তবে মুক্তমনা,ফেথফ্রিডম, এরপরে আন্সারিং ইসলামএর মত সাইট গুলো পড়ে আরও পড়াশোনা করার জন্য তাগিদ অনুভব করি যে এসব ব্যাখা সম্পূর্ণ না, এদের সম্পূর্ণ ব্যাখা দরকার। তবে ধন্যবাদ আপনাকে আমার এই জ্ঞানস্পৃহা(ধর্ম বিষয়ে) জাগানর জন্য।াআশা করি কয়েক বছরের মধ্যে আমি এই প্রশ্ন সমুহেরও উত্তর পেয়ে যাব।(জানি না কতখানি সঠিক হবে) (C)
@ইমরান হাসান, জবাবগুলো পেলে একটু শেয়ার করেন ভাই আমাদের সাথে। 🙂
চরম হইছে ভাই। :rotfl:
আমি ক্রমেই আপনার লেখার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি…সিম্পল কথাগুলো গুছিয়ে উচিত জবাব দিয়েছেন!!! এরকম আরো লেখা চাই……
@আমি কোন অভ্যাগত নই, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ধর্ম নিয়ে আসলে কম লিখতে চাই, ধর্ম নিয়ে লিখতে বসি আসলে বিরক্তির কারণে। অন্য কিছু নিয়ে লিখব ভাবছি, তবে এই সিরিজটা চালু রাখব।