লিখেছেন – মেহেদী তুহিন

জানি না মুক্তমনা আমার এই লেখা ছাপাবে কিনা। কারন যাদের লেখা মুক্তমনায় ছাপানো হয়, আমার লেখার হাত তাদের ধাঁরে কাছেও নাই। তবু ও একটু চেষ্টা করলাম লিখবার।

আমি এখানে লিখব আমার ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা। কারন আসলে মনের সব ভাব সব জায়গায় প্রকাশ করা যায় না। আর ধর্ম আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এতো সেন্সেটিভ একটা বিষয় এ নিয়ে কথা বার্তা বলতে হয় খুব সাবধানে। চাইলেও সব কিছু বলা যায় না সে যত আপনজনই হোক। সে দিক থেকে মনে হয় মুক্তমনা একটি ভালো প্লাটফর্ম। মনের কিছু অব্যক্ত ভাব এখানে অকপটে প্রকাশ করা যায়।

সেই ছোটবেলা থেকেই শুরু করি। আমি যখন ছোট ছিলাম আমাকে আরবি পড়ানোর জন্য এক হুজুর ঠিক করা হয়েছিল আমাদের বাসায়। ওই হুজুরটা খুব ভালো ছিল। কারণ হচ্ছে হুজুরটা আমাকে প্রায় বিভিন্ন মুখরোচক খাবার এনে খাওয়াত। কখনো চকলেট কখনো বা মিলাদের মিষ্টি। ওই বয়সে এই বিষয় গুলো খুব ভালো লাগতো। এভাবে ওই হুজুরের কাছে আমার আরবি শিক্ষার হাতেখড়ি হয়।
এরপর আমার অনেক হুজুর বদল হয়েছে। দেখতে দেখতে আমি কোরআন আরবিতে পড়া শিখে গেলাম। এখানে একটু বলি আমার এই আরবি পড়াটা মোটেও ভালো লাগতো না। আমার মনে হয় না আসলে ওই বয়সের কারোই এই গৎবাঁধা অহেতুক জিনিস পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু পড়তে হত। বাসা থেকে খুব চাপ কোরআন খতম(!!!) করতে হবে। আমি ও লেগে পড়লাম খতম করায়। আহারে কি বোরিং!! দু চোখ ভেঙ্গে ঘুম আসত। আমি যার কাছে কোরআন খতম করি উনি একজন মহিলা হুজুর। আমাকে বাসায় এসে পড়াতেন। বয়স্কা হওয়ায় পড়ানোর সময় উনি প্রায়ই ঝিমুতেন। আর আমি এই সুযোগে সুর করে করে কয়েক লাইন বাদ দিয়ে নিচের দিকের লাইনে চলে যেতাম। কারণ আমার জন্য পেজ সংখ্যা বাধা ছিল। যত তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারব তত তাড়াতাড়ি ছুটি। এভাবে করে মোটামুটি অল্প বয়সেই আমি কোরআন খতম করে ফেলি। সে দিন এক দেখার মতো অবস্থা হয়েছিল। সাজ সাজ রব পরে গেলো আমাদের বাসায়। আমি যেন বিশ্ব জয় করে ফেলেছি। মসজিদে আব্বু মিলাদ দিল। আর আম্মু বাসায় ভালো খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করল।

কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন কপালে সইল না। যখন হঠাৎ করে উপলব্ধি করলাম আমি আরবি পড়া ভুলে গেছি। এই কথা বাসায় জানতেই খুব চিন্তায় পড়ে গেলো সবাই। এটা নাকি মহাপাপ। আরবি পড়তে না পারা এক কথা আর পড়তে শিখে ভুলে যাওয়া। না না কল্পনা করা যায় না। তাই আমাকে ধরে বেধে এলাকার মসজিদে পাঠানো হল ছোট বাচ্চাদের সাথে কোরআন পড়বার জন্য। কেমন লাগে বলেন। আমি তখন একটু একটু বড় হয়েছি। ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে পড়ব, প্রেস্টিজ বলে তো একটা বেপার থাকে। যাই হোক। কয়েক দিন গেলাম। সেখানে আরেক মহা ফাফর। এলাকার এক ছোট ভাই মানে আমার এক ব্যাচ ছোট সে সবাইকে আরবি পড়ায়। আর হুজুর বসে বসে শুনে। ওই ছেলে আমার উপর খুব ওস্তাদি করতে লাগলো। এমন মেজাজ খারাপ হল যে যাওয়াই বাদ দিলাম। এরপর থেকে ওই ছেলেকে আমি দু চোখে দেখতে পারতাম না। কখনো দেখা হলে কথাও বলতাম না। পরে অবশ্য আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো হয়ে গিয়েছিলো। আমি নটরডেমে ভর্তি হয়ার পরের বছর ও ভর্তি হয়।

আরেকটা মজার কাহিনী বলি। বিষয়টা একটু অশালীন। তবে আমি যতদূর সম্ভব মার্জিত ভাবে লেখার চেষ্টা করবো। তখন আমরা ছোট। মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। আসলে নামাজের নামে কিছুই না। সমবয়সী আমরা মসজিদে গিয়ে রাজ্যের দুষ্টামি গুলো করতাম। আপনারা জানেন প্রত্যেক মসজিদেই অজু করার ব্যবস্থা থাকে। তো মানুষ যে খানে বসে অজু করে আমরা আগে গিয়ে সে জায়গাটা একটু ভিজিয়ে রাখতাম। অজু করার সময় স্বভাবতই বসার অংশটুকু ভেজা থাকায় লুঙ্গী ভিজে যেত। আমরা ছোট হওয়ায় মসজিদে প্রথম দিকের কাতারে জায়গা পেতাম না। আমাদের জায়গা হতো একদম শেষ কাতারে। প্রথম প্রথম এ বিষয়টা নিয়ে খুব মন খারাপ করতাম। পরে অবশ্য চিন্তা করে দেখলাম। এটাই ভালো স্বাধীন ভাবে কাজ( কাজ তো নয় অকাজ) করার সুযোগ থাকে শেষ কাতারে থাকলে। তো সবাই যখন নামাজে সিজদায় যেত আমরা কয়েক জন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম কার অণ্ড কোষ কোন সাইজের আর কারটা কত ঝোলা। কারণ পশ্চাতদেশের ভেজা লুঙ্গী দিয়ে স্পষ্টই তা বোঝা যেত সিজদায় গেলে। পাঠক বোধ হয় এখন বুঝতে পেরেছেন কেন আমরা অজু করার স্থানটা ভিজিয়ে রাখতাম।

এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। আমাদের এলাকায় একটা ছেলে গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করতো। একদিন কি হল খবর ছড়িয়ে পরল এলাকায় যে এক মাংসের টুকরায় নাকি আল্লাহু লেখা দেখা গেছে। আমি ততদিনে একটু একটু আরবি লিখতে পারি। কারণ স্কুলে ইসলাম শিক্ষায় আবার আরবিতে আয়াত না লিখলে মার্ক দিত না টিচার। তো অনেক কৌতূহল নিয়ে আমি ছুটে গেলাম ওই মহান মোজেজা দেখতে। সবাই দেখি সোবহান আল্লাহ বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলছে। এতো মানুষের ভিড় আমার আর দেখার দেখার সুযোগ মিলে না। তো ঠেলে ঠুলে ভেতরে ঢোকার যখন সুযোগ এল, দেখলাম কই আল্লাহু এটা তো নিউক্লিওলাসে যেমন পেঁচানো গোচানো ক্রোমসোম থাকে মাংসের গায়ে ওই রকম চর্বির পেঁচানো গোচানো একটা কিছু। ওখানে আমি সরল মনে বলে বসলাম ধুর এইটা কিসের আল্লাহু। বলেই বুঝলাম আমি কি ভুল করেছি। চতুর্দিক থেকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে সবাই তাকাতে লাগলো। যাই হোক শেষ পর্যন্ত সে যাত্রায় ছোট বলে কেউ তেমন একটা ভ্রূক্ষেপ করে নি আমার কথায়।

এবার আসি মহান(??) পীর মুরিদদের আলোচনায়। ফরিদপুরে এক পীর ছিল মনে হয় কম বেশি সবাই জানেন। আট রশির পীর। আমাদের এরশাদ সাহেব ও নাকি ওনার মুরিদ ছিলেন। তো এই পীরের বেপক ভক্ত ছিলেন আমার বড় মামা মামি। আমার মামীর মুখে ছোট বেলায় ওই পীরের বিভিন্ন কাহিনী শুনতাম। আর অবাক হতাম। ওনার মুরিদরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওনার ওখানে বছরের একটা সময় জড় হতো। তো একবার নাকি নদী পথে রাতের বেলা এক লঞ্চ ভর্তি মানুষ আট রশির উদ্দেশে রওনা হয়। গহীন অন্ধকার চারিদিকে। এমন সময় নদীতে উঠে ঝড়। ভয়াবহ ধরনের ঝড়। লঞ্চ ডুবে ডুবে দশা বাঁচার কোন সম্ভাবনা নেই। এমন সময় ওই পীরের ভক্তরা পীরের কাছে একযোগে প্রার্থনা করতে থাকে। আর অলৌকিক ভাবে ওই পীর সব দেখতে পান আট রশি থেকে। তিনি নাকি তৎক্ষণাৎ হাতের ইশারায় ওই ঝড় থামিয়ে ফেলেন। আর সাথে সাথে চারিদিক আলোতে ফক ফকা হয়ে যায়। আসলে এই গল্পের থেকেও যে বিষয়টা আমার ভালো লাগতো তা হল খাওয়া দাওয়ার গল্প। ওখানে নাকি মাঝে মাঝে উটের মাংস খাওয়ানো হতো আর বিশাল বিশাল পেল্লাই সাইজের রসগোল্লা পাওয়া যেত খাওয়ার জন্য। এগুলোর লোভে তখন আমার খুব ইচ্ছে ছিল আট রশি যাওয়ার। কিন্তু কখনো সুযোগ হয়ে উঠে নি যাওয়ার।

অনেক তো দেশের গল্প করলাম। আসুন এবার একটু বিদেশের গল্প করি। গত সামারের ঘটনা। আমরা বাংলাদেশী আট জন মিলে ইউনিভার্সিটির মাঠে মিনি ফুটবল খেলছি। পাশেই আরেক গ্রুপ ফুটবল খেলছে। তার পাশেই মেয়েরা ভলিবল খেলছে। বিভিন্ন দেশের মেয়ে। দুই দল হয়ে খেলছে। এর মধ্যে চেচেন এবং দাগিস্তানি কিছু মেয়েও ছিল। চেচেন এবং দাগিস্তানিরা সব মুসলমান হয়। তো খেলার এক পর্যায়ে প্রচন্ড গরম বিধায় আমরা টি শার্ট খুলে ফেলছি এমন সময় পাশ থেকে চার পাঁচটা ছেলে মারমুখী ভঙ্গিতে এসেছে আমাদের শাসাতে কেন আমরা টি শার্ট খুলছি পাশে তাদের বোনেরা খেলছে। ছেলেগুলাও চেচেন আর দাগিস্তানি। আমরা ভেবেছিলাম একবার ঝগড়া করবো কারণ ওরা এসেছে ধর্মের দোহাই নিয়ে। আমরা নাকি পর্দা নষ্ট করছি। অথচ তাদের ওই মুখে পাতানো বোনেরা মিনিস্কার্ট আর বেবী টি শার্ট (আসলে এর থেকে ভালো ভাষা খুঁজে পেলাম না, অনুমান করি পাঠক মাত্র বুঝতে পেরেছেন) পরে অঙ্গ প্রতঙ্গ ফ্রিকুয়েন্টলী বাউন্সিং করাচ্ছে সেটার কোন দোষ নেই। এখানে একটু বলি বিয়ার খেয়ে বমি করে করিডর ভাসাতে আর মুখে পাতানো বোনদের নিয়ে বিছানায় যেতে ওদের কিন্তু জুড়ি মেলা ভার।

আরেকটা ছোট গল্প বলে শেষ করি। যারা কাজাখাস্তান, তাজিকিস্তান, তুরকিমিনিস্তান, আজারবাইজান এই দেশ গুলো সম্পর্কে জানেন তারা জেনে থাকবেন এই সব দেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ হওয়ায় এইসব দেশের প্রচুর ছাত্র ছাত্রীর সাথে আমার ভালো জানা শুনা। তাদের কাছে আল্লাহ হল আল্লাখ কারণ রুশ ভাষায় হ বা এইচ নেই শুধু খ আছে তাই তারা বলে আল্লাখ। এদের কাজকর্ম খুব অদ্ভুত ধরনের। জগতের এহেন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করে না। অথচ মুখে মুখে খুব আল্লাখ!!!!!!!! যদি জানে আপনি মুসলমান আর দেখে আপনার হাতে একটা বিয়ারের বোতল তাহলে ধর্মের উপদেশ ঝাড়তে এরা পিছ পা হবে না। আল্লাখের শত দোহাই দিয়ে মুমিন বান্দার হক কড়ায় গণ্ডায় উসুল করে নেবে।

আসলেই দুনিয়া বড়ই বিচিত্র জায়গা; ধর্ম অনুসারীরা তার থেকেও বিচিত্র