ঐ রাজাদের আমল নেই;আর্যরাও কবে গেছে মিশে
ধূলো দিয়ে গড়া বলে কিছুই থাকে নি চিরকাল
হে বাংলার মাটি এখনও চলছে দেখ কৃত্রিম আকাল
আমাদেরও কী তবে স্থান হবে জ্বলজ্যান্ত ভাগারে অবশেষে?
ঘুম পাড়ানি গান শুনেছি কত যে অর্বুদ কাল
আমাদের পিতামহেরাও হাড় হয়ে পড়ে আছে
সোনার চামচ চায়নি তারা কেউ ক্লান্ত দিনশেষে
তাকিয়ে দেখ শুকনো নদীতে পড়ে আছে নৌকোর হাল।
তুমিতো ভয় পেতে ঐ অলীক রূপকথায়
রাজকণ্যাকে তো চায়নি কেউ কোনদিন
মাটির শরীর চিরে যেদিন বেড়িয়েছে ফসল বেদ্বীন
আজন্ম পাপের ফসল উঠত শুধু ক্ষত্রিয়ের গোলায়।
আমি তো মানিনা তোমার ঐ ঘুণে ধরা ইতিহাস
দ্বাসত্বে থেকে যারা পায় আফিমের সুখ
রাজশালার পাণিনীর ছড়ানো বিষাক্ত অসুখ
তারা কখনো কাঁপেনি দেখে মৃত চার্বাকের লাশ।
জলপাই রঙ তো তোমার প্রিয় হতে পারে না
সাঁই সাঁই করে কী করে তবে ছুটে যায় নিষ্ঠুর যন্ত্রণা?
ময়ূরের পূচ্ছ লাগিয়ে নেচে যায় কাক
অনার্যের সন্তানের কবে লেগেছে বলো নকল পাখ?
যদি না চাও তবে কেন আজো তুমি হে স্বদেশ
চারিদিকে শত্রু সমেত হয়ে আছো রক্তাক্ত বাংলাদেশ?
দুই
পান্ডব রাজ্যে সায় নেই;কোথায় ছিল প্রাকৃত জন
অসুর বলে যাদের ক্ষমা করে নি আজ তাদেরই প্রয়োজন
অসংখ্য বৈদিক আগুন পুড়েছে এ প্রান্তর
বার বার মরু ঝরে বেঁকেছে এ ভূমির সব ঘর
অলৌকিক বেহেশতের শ্লোক বেজে উঠে বারবার
স্বর্গও দেখেছে এ জনপদ কত সহস্রবার
আবারো বুকে ধরেছো স্বদেশ ব্যর্থ ইতিহাস
তোমারই চোখের সামনে হচ্ছে কপট লোভের চাষ।
মহাকাব্য রচবে না এ জনপদ তোমাকে নিয়ে
দ্রৌপদীর আঁচল কখনো তোমার আঁচল নয়
বার বার শস্যের সন্তানেরা পেয়ে গেছে তাই ভয়
তোমার আঁচল খুলেছে অসংখ্যবার
পিশাচেরা নগ্ন হয়ে করেছে উল্লাস
কোথাও ছিল না বলে ভগবান সব
শক্তিহীন না হয়েও লুটিয়েছো গরব।
বারবার প্রসব করেছো একই সন্তান
টুকরো টুকরো হয়ে আছে তাদের মাথা বুক পা
রক্ত ঝরেছে কী প্রচুর;তুমি এখন অশ্রুও দেখতে পাও না।
তোমার দেহে কখন বাসা বেঁধেছে উৎকট হায়েনা।
তক্ষশীলা নেই বলে স্বাদের পাঠস্থান
মকরেরা চড়িয়েছে তাদের নিরাপদ যান
মোড়লের হস্তক্ষেপ মেনে নিয়ে আজো
তুমি কীভাবে অবুঝ ক্লান্তিকর বধূ সেজে থাকো?
ঐ নতুন বেশে যে ক্ষত্রিয়েরা আজো আছে বেঁচে
জেনে রেখো তাদের মহান ঐশ্বর্যের দিন শেষ হয়ে গেছে
এখানে দাঁড়িয়ে আমরা তোমার দূর্বল মাটির সন্তান
প্রতিবারের মতো এবার আর নিলামে উঠাচ্ছি না প্রাণ।
বারবার প্রসব করেছো একই সন্তান
টুকরো টুকরো হয়ে আছে তাদের মাথা বুক পা
রক্ত ঝরেছে কী প্রচুর;তুমি এখন অশ্রুও দেখতে পাও না।
তোমার দেহে কখন বাসা বেঁধেছে উৎকট হায়েনা।
অসাধারণ।
@তামান্না ঝুমু, Thanks a lot
:clap দারুণ
জ্ঞানের দরজা বন্ধ করাটাই তো ওই সব বদমাশ সুবিধাবাদী শাসক আর শোষকদের প্রধান লক্ষ্য যাতে শোষিতদের জ্ঞানচক্ষু কখনো খুলতে না পারে।
@কাজী রহমান, ঠিক।আমাদেরকে এই অন্ধত্ব আর তার ফলে সৃষ্ট শোষণের বিরূদ্ধে লড়াই করে যেতে হবে ক্রমাগত।
প্রতিটি লাইনই দারুণ (F)
কবিতাটা ভালো লাগল যদিও ভাষাভঙ্গিতে কঠিনতা বহমান। (F)
@ডেথনাইট, ধন্যবাদ। কঠিন হয়ে গেছে নাকি।হায় হায়।যাই হোক ভাল লেগেছে বলে আমারো ভালো লাগছে।
ভাল লেগেছে চরণগুলো ! (F)
@কাজি মামুন, ধন্যবাদ মামুন ভাই।
আমার খুব দুঃখ লাগে যে আমি কবিতা বুঝি না, তাই অতো উপভোগ করি না। ভাবছি যেহেতু এখানে কবিরা আছেন আমার উত্তর দেবার জন্য তাই জিজ্ঞেস করতে করতে একদিন কবিতা বুঝা রপ্ত করে ফেলব! আমাকে যদি নিচের লাইনটা একটু বলতেন, কি মানে? আমার ছন্দ ভাল লাগে। আপনার লেখায় সুন্দর একটা ছন্দ পাচ্ছি।
ফসল বেদ্বীন কেন?
ক্ষত্রিয়রা আমি ধরেছি আপনি যোদ্ধাদের বোঝাচ্ছেন, এখানে হয়তো যুদ্ধ পাগল খুনি অর্থে, তাই তাদের খুন/ পাপ ফসল রূপে গোলায় ভর্তি হয়েছে, তাহলে কবিতায় আর্য/অনার্য বললেন কেন। আর্য, অনার্য আর ক্ষত্রিয় এর সম্পর্ক কি?
আমি আসলে বুঝি নি অসুর কারা।
এখন যদি মুক্তমনা এর কবিতা প্রেমিরা আমার কবিতা ধংস দেখে আমাকে মারতে না চান তাহলে আমি ছোট একটু মন্তব্যও করতে চাই। হিঃ হিঃ…
@নির্মিতব্য,
আমিও কবিতা বুঝি না ঠিকমতো।তাই আপনার দুঃখ পাওয়ার কোন কারণ নেই।
ফসল এই অর্থে বেদ্বীন যে আমরা যেটাকে ধর্ম মনে করি তা ফসলের জন্য প্রযোজ্য নয়।আপনি ধর্মে আস্থা রাখুন বা না রাখুন পরিশ্রম করলে ঠিকই ফসল ফলবে।তাই বলেছি ফসল বেদ্বীন।
ক্ষত্রিয়দের শুধু যোদ্ধা হিসেবেই দেখাই নি।আমরা সবাই জানি যে এরা মোটামুটি সবাই আর্য। আমাদের অস্ট্রালয়েড, দ্রাবিড় কিংবা অন্যান্য লোকায়ত ও আদিম জনগোষ্ঠির সাথে এদের সম্পর্ক ছিল না।এরা ভারতবর্ষের লোকও নয়।এরা ছিল যাযাবর ও শিকারী।কিন্তু এরা যখন এদের বৈদিক ধর্ম নিয়ে এখানে এসে ক্ষমতা দখল করে জেঁকে বসল ধীরে ধীরে জাতিভেদ প্রথার প্রচলন শুরু হল।আমাদেরকে (এখানকার লোকায়ত শ্রেণী) এরা সবসময় খারাপ চোখে দেখেছে।ওদের কাছে আমরা ছিলাম অনার্য, দস্যু,রাক্ষস ইত্যাদি ইত্যাদি। পরবর্তীতে আমরা এদের প্রজায় পরিণত হয়েছি।ফসলের একটা বিরাট অংশ তো ওদেরই দিতে হতো।
উপরে যে রকম বললাম, অনেক নৃতাত্ত্বিকের ধারণা অসুর আসলে আমাদেরকেই বলা হোত।
কবিতাটির অনেকখানি জুড়েই হিন্দু মিথের ব্যাপার স্যাপার জড়িয়ে আছে।কিন্তু এ লাইনগুলো আবার দেখুন-
অলৌকিক বেহেশতের শ্লোক বেজে উঠে বারবার
স্বর্গও দেখেছে এ জনপদ কত সহস্রবার
আবারো বুকে ধরেছো স্বদেশ ব্যর্থ ইতিহাস
তোমারই চোখের সামনে হচ্ছে কপট লোভের চাষ।
এখানে বর্তমান কাল ব্যবহার করা হয়েছে।অর্থ্যাৎ এখন বেহেশতের লোভ দেখিয়ে শাসক শ্রেণী আমাদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বাসত্বে আটকে রেখেছে,সেই সাথে অর্থনৈতিক দ্বাসত্বেও।
কবিতাটা ভাল লেগেছে। তাই এতগুলো প্রশ্ন ও মন্তব্য করলাম।
ধন্যবাদ। আমারও ভালো লাগছে আপনার ভালো লেগেছে বলে।উৎসাহ পেলাম। 🙂
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
ব্যাখ্যা দেবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। এখন পড়তে আরও ভাল লাগছে। :))
“জলপাই রঙ তো তোমার প্রিয় হতে পারে না”
হানাদারের জলপাই রঙের পোশাক দেখে যেমন কুঁকড়ে যেত বাঙ্গালী
স্বদেশের জেনারেলদের পোশাক দেখেও কুঁকড়ে যায় বাঙ্গালী
*** কবিয়তাটি ভালো লেগেছে*****
@সপ্তক, ধন্যবাদ।আরো একটি অংশ যোগ করেছি।সার্ভারের ঝামেলার কারণে প্রথমে দ্বিতীয় অংশটি দিতে পারিনি।