গত কয়েক মাস ধরে খুবই আবেগপ্রবণ সময় কাটাচ্ছি। প্রায় তিন বছর হয়ে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ থেকে দূরে আছি। ঢাকা শহরের মুরগীর খামারে বড় হওয়া এই আমি, বেশ অনেকবার এই কয়বছরে কম বেশী আবেগপ্রবণ হয়েছি। কিন্তু, ঠিক এভাবে নয়। দূর দেশ থেকে নিজের মাতৃভূমির দুর্দশা, সোশাল মিডিয়াতে ব্লগের গালিগালাজপূর্ণ মন্তব্য, রাজনৈতিক ভণ্ডামী ইত্যাদি দেখে অনেকবার মনে হয়েছে এসব মেনে নিয়ে নিজ দেশে আর ফেরত যেতে পারব না। কিন্তু “ভাগ্য”গুণে আমার এই দূরদেশে এমন কিছু দেশী মানুষের সাথেও পরিচয় হয়েছে যারা আমাকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, দেশে অনেক উদার মুক্ত মনের মানুষও আছে; এই বিদেশবিভূঁইয়ে আমার কাজ যখন শেষ হবে তখন আমি এদের সাথে বাস করবো, গড়ে তুলব নতুন পরিবার-সমাজ, যারা আমাকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে সাহায্য করবে, আমাকে ধর্ম বা সামাজিক রীতির নিচে চেপে রাখবে না। আমাকে দুষ্টু লোকের সাথে নিত্যদিন উঠতে বসতে হবেই, কিন্তু আশেপাশে সুশীল মানুষেরও অভাব হবে না। আমি মনে-মনে প্রস্তুত, আরো কয়বছর পর বাক্স-প্যাটরা সব কিছু গুছিয়ে নিজ দেশে ফেরত যাবার জন্য। কিন্তু, এর-ই মাঝে হঠাৎ করে যা হলো, আমি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে উপলব্ধি করলাম, আমি আর “ভাগ্য”-তে বিশ্বাস করি না।
উপলব্ধিটা হঠাৎ করে হলেও, চিন্তাগুলো হঠাৎ করে আসেনি। আমি শিক্ষার জন্য এমন এক দেশে পাড়ি জমিয়েছিলাম যেই দেশে প্রায় ৮০% মতো মানুষ কোন ধর্মের অনুসারী নয়। এমনটা আমি নিজে ইচ্ছা করে বেছে নেয়নি, ৮০% ধর্মান্ধদের দেশে গেলেও হয়তো আমার কোন সমস্যা ছিল না। যাই হোক, বিদেশের মাটিতে একজন দায়িত্ববান, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিসেবে পা রাখার ঘন্টা তিনেকের মধ্যে দেখলাম এক প্রেমিকযুগল ট্রেনস্টেশানে একে অপরকে চুম্বন দিয়ে বিদায় জানাচ্ছে, দুইজনই মেয়ে। আগেই বলেছি আমি ঢাকা শহরের মুরগীর খাঁচায় বড় হয়েছি, মাঠে সরিষা ক্ষেতের মাঝে দিয়ে এক দৌড়ে পার হয়ে কাঁদা মাখা ডোবায় গ্রীষ্মের শেষ বিকেলে ঝাঁপ দেইনি কখনো। ইস, লিখতে গিয়ে মনে হলো সরিষা এর মৌসুম কখন হয় তাও জানি না, অথচ সরিষা ক্ষেত আমার কত পছন্দের! ইন্টারনেট থেকে জানলাম শীতের শেষ হলো সরিষার মৌসুম। বইয়ের পাতার বাইরে এই ইন্টারনেটই আমাকে বিদেশের মাটিতে পা রাখার আগেই শিখিয়েছে যে, আমি ২০ বছরের উপর যেই সমাজ ব্যবস্থায় বড় হয়েছি তার বাইরেও আছে অন্য এক সমাজ; যেখানে আযানের ডাক বা চার্চের বেল বা সন্ধার উলু ধ্বণি কোনোটাই বাজে না, যেখানে যুগল শুধু বিবাহিত বা অবিবাহিত নারী–পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এক-ই লিংগের মধ্যেও বিরাজমান। মার্কিন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ‘অপেরা’ আর ‘এ্যালেন দি জেনেরেস’- এই দুই নারীর টক’শো দেখে দেখে তাই বাংলাদেশের মাটিতেই আমার এই ব্যাপারগুলোতে একটি নিজস্ব মত তৈরী হয়েছিল। আমি নাস্তিকতা, সমকামিতা, অবিবাহিত বুড়ো-বুড়ির অর্ধ-শতক পূর্তি ইত্যাদি বিষয়ে অবগত ছিলাম; তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা ছিল, কিন্তু এতটুকু বুঝতাম না এটা তারা কিভাবে করে, আর তাদের মনে এত আনন্দই বা থাকে কি করে। তাই হয়তো ট্রেনস্টেশানে দুই হাত দূরে দুই প্রেমিকাকে অন্তরঙ্গ দেখে অসম্মানে নয়, বরং অবাক চোখে তাকিয়ে চিন্তা করেছি ওরা কি করে পারে! সেই থেকে শুরু, নতুন কিছু চাক্ষুস দেখে আমার নিজের ছোট্ট গণ্ডির বাইরে চিন্তা করার।
আমার জন্ম একটি মুসলিম শিক্ষিত পরিবারে। এমন একটি পরিবারে যারা নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ সব পালন করেন, কিন্তু আমার বাবা অথবা মা এর পরিবারের কোনো মেয়ে বোরকা পরে না। কেউ যদি হিজাব করতে চায় তাহলে সেটা করতে তাকে কেউ অনুৎসাহিত করবে না, বরং খুশী হবে। কিন্তু নেকাব কে ভালো চোখে দেখবে না। রমজানের মাসে পরিবারের সবাই সুমধুর কণ্ঠে কোরান তেলায়াত করবে, কিন্তু বই মেলা থেকে তসলিমা নাসরিনের বই কিনে বাসায় নিয়ে গেলে বকা দিবে না, একটু হয়তো চোখের কোণ দিয়ে অসম্মতির ভাব ফুটিয়ে তাকাবে, এই যা। বিপরীত লিংগের বন্ধু থাকতে পারবে, কিন্তু তাদের সাথে হাত ধরে ঘোরা যাবে না। মাগরিবের আগে বাসায় ফিরতে হবে, কিন্তু তার আগে আমি যেখানেই যাই না কেন জানিয়ে যেতে হবে, কোথাও গেলে আমার বাবা-মা ফোন করে কখনোই জেরা করেনি, কোথায় আমি, কার সাথে। অনুমতি মিললে আমি সব কিছু করতে পারি। তাই আমার সমবয়সী অন্য সবার থেকে তুলনামূলকভাবে বাসায় কম মিথ্যা বলতে হতো। একটা উদার মুসলিম পরিবার, যেখানে নিত্যদিনের নামাজ প্রার্থনা আবশ্যিক, কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতাও আছে। তাই আমি যখন কোরান আরবিতে খতম করবো না বলে ঘোষণা দিলাম তখন আমার বাবা মা মনে অনেক কষ্ট পেলেও আমাকে জোর জবরদস্তি করেননি। যখন ২০০৭ এ ফেসবুকে প্রথম নাম লিখাই তখন ধর্মীয়দৃষ্টিকোণ ছিল এমন, “মুসলিম হিসেবে জন্মেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি,” কয়মাস পর ২০০৮ এর প্রথমে লিখি “মুসলিম,” ২০০৮ এর মাঝে লিখি-কিছুই লিখি না। ততদিনে মন মানসিকতা পাল্টেছে, আমি মর্মে মুসলিম, কর্মে নই। তাও চিন্তা করলাম আমি ধার্মিক হই আর না হই এটা অন্য কারো জানার কিছু নাই, এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার। এর এক বছর পর পাড়ি জমাই একটা সত্যিকারের সেক্যুলার দেশে, যা আমাকে- এক মনে মনে স্বঘোষিত উদার মুসলিমকে- আমূল পাল্টে দেয়।
প্রথমেই যেই জিনিসটি উপলব্ধি হলো এটা কোনো মুসলিম প্রধান দেশ না, এখানে কোনো মাগরিবের আজান নেই। ঘরে কখন ফিরবো বা না ফিরবো এটা আমার নিজের উপর নির্ভরশীল। আমি এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে আশে পাশে যা পারলাম সব ঘুরে ফেললাম। আমি বন্ধুসুলভ মানুষ আর নতুন দেশে, দেশ বিদেশের অনেক বন্ধুসুলভ মানুষ আছে। খুব তাড়াতাড়ি ক’জন নানান দেশের আড্ডাবাজরা বন্ধুত্ব করলাম। আমাদের আড্ডাতে ধর্ম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ, রীতি, মিথ্ আরো কতকিছু যে আসতো! একটা ব্যপার যেটা সবার মধ্যে কমন্ ছিল সেটা হলো একে অন্যকে দ্বিধায়-নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করা, অন্যের ধর্মীয় চিন্তা ভাবনা নিয়ে খোলামেলা আলাপ। আমাদের আড্ডায় ছিল মধ্যপ্রাচ্যের উদার কিন্তু রগচটা মুসলিম, মধ্যপ্রাচ্যের কট্টর অমুসলিম, ইরানের মুসলিম আইনের উপর বিরক্ত ইরানী মেয়ে, ধর্মীয় আলাপ আলোচনায় কেবলি শ্রোতা প্রোটেস্টাইন খ্রিস্টান, ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত সবার প্রিয় মৃদুভাষিনী, নাস্তিক পরিবারে জন্ম নেওয়া অসম্ভব বুদ্ধিমতি স্বল্পভাষী, হিন্দু ধর্মের পুজারী এক গাতক, দুই অসম্ভব রসিক এবং তার্কিক নাস্তিক যারা ১৫ বছর বয়সের দিকে নিজ নিজ ধর্ম থেকে সরে এসেছে, আর আমি আর আমার আরেক স্বদেশী বন্ধু। আমাদের সাথে আরও অনেকে ছিল, কিন্তু সবার সামনে আমরা গলা ফাটিয়ে তর্ক করতাম না। আমাদের ধর্মীয় তর্কগুলো মূলত হতো দুই রসিক নাস্তিক আর আমি আর আমার স্বদেশী বন্ধুর মাঝে। বাকিরা চুপচাপ দেখতো। বাংলাদেশ থেকে যাবার সময় আমার ইংরেজিতে অনুবাদ করা কোরান নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার আর দরকার হয়নি। আমি আমার লুকায়িত ব্যক্তিগত মুসলিম পরিচয় থেকে অনেক আগেই বের হয়ে এসেছি। প্রাণপণে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসকে আগলে রাখতে চাচ্ছি। কিন্তু তর্কগুলো শেষমেশ দাড়ালো নাস্তিকতা আর সকল আব্রাহামিক ধর্মগুলোর মাঝে। আমি, চর্চা না করা বিশ্বাসী মুসলিম, পরিণত হলাম সকল সেমেটিক ধর্মের প্রতিনিধিতে। আমার জ্ঞান কম, কিন্তু আমার মজার নাস্তিক বন্ধুরা ছিল খুবই সুচিন্তিত। ধর্মীয় তর্ক করতে করতে আমরা সবাই মুখে ফেণা তুলে ফেলতাম, কিন্তু কোনদিন আমাদের মনে বন্ধুরা কষ্ট দেয়নি। কখনো আমাদের মুখ কালো হয়ে গেলে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে তাড়াতাড়ি কথার মোড় ঘুড়িয়ে নেবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার কট্টর রূঢ় নাস্তিকের সাথেও দেখা হয়েছে, যে তখন আমার সম্মানিত মানুষ, ‘মোহাম্মদ’র সম্পর্কে কটূ কথা বলা শুরু করে, যা শুনে আমার চোখ দিয়ে কষ্টে ঝরতে থাকে পানি। যদিও অনেক পরে সে তার ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চায়। কিন্তু ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। তাদের সকল তথ্য যাচাইয়ের জন্য, জবাবের জন্য একটু একটু পড়া শুরু করি।
এর মধ্যেই, সেকুলার দেশে পড়া প্রায় শেষ করে পাড়ি জমাই আটলান্টিকের ওপারে প্যাসিফিকের দেশে। আবারো সেই ধর্মান্ধদের দেশে, কিন্তু এরা আবার এক-ই টাইপের ধর্মান্ধ না। বেশীরভাগ খ্রিস্টান, কোথাও কোথাও গোড়া খ্রিস্টান, কিন্তু মহাসাগর পাড়ি দিয়ে অন্য ধর্মান্ধরাও চলে এসেছে। বিচিত্র এ দেশ। আস্তিকের স্বর্গখানা, আবার বাক স্বাধীনতার জন্য নাস্তিকেরও স্বাধীনতা! বিশাল এক দেশ, অপরূপ তার সৌন্দর্য, কিন্তু একই সাথে আছে যুদ্ধের কদর্যও। আমার কি! আমি এখনো মাগরিবের আযান শুনতে পারি না, আর আমার আছে বাকস্বাধীনতা। আরেকটা ব্যাপার আছে আমার, আমার জীবনে এমন এক মানুষের আগমণ হয়েছে যে আমাকে নিভৃতে বলেছে সে স্রষ্টার ব্যাপারে ‘অ্যাগনস্টিক’, এই শব্দটা আমার কাছে এক্কেবারে নতুন নয়, কিন্তু এরকম মানসিকতার ব্যক্তিগত মানুষ আমার কাছে নতুন। আমি তখনো নিজের অবশিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। বহু বছরের জমে থাকা ক্ষোভ আরো পুঞ্জীভূত হচ্ছে; বইয়ে লেখা দয়াময় স্রস্টার স্যাডিস্টিক দোজখ, নারীকে সমঅধিকারের নামে শেকল পরানো আয়াত, শান্তির নামে যুদ্ধে মাতোয়ারা ধর্ম আমাকে তিলে তিলে খুবলে খাচ্ছে। আগে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতাম যারা আল কায়েদা, বা জে.এম.বি এর নামে নিরীহ মানুষ মারে বা মারার ঘোষণা দেয়, তারা অশিক্ষিত এবং সর্বোপরি মুসলিমই নয়। আমার শান্তিপ্রিয় বাবা-মা এর একনিষ্ঠভাবে পালন করা ইসলামই সঠিক ইসলাম। কিন্তু স্রষ্টার বাণী একি বলে! এতো ঐ খুনীদেরও সমর্থন করে, আর তথাকথিত উদারদেরও সমর্থন করে! স্রষ্টা কি অদ্ভুত নাকি! এরকম ভাবলে আবার বহুবছরের লালিত বিশ্বাসী আত্মা কেঁপে উঠে।
এই দো-টানায় ডুবে আছি গত কয়েক মাস। নাস্তিকদের কথা ইন্টারনেটে দেখি। আস্তিকদেরও দেখি। আমি কে? আমি কাদের দলে? আমি সারাজীবন বিজ্ঞানের ভক্ত। কই বিবর্তন তো আমার মনে স্রষ্টা নিয়ে প্রশ্ন জাগায়নি, আমি মুসলিমদের বিবর্তন আর বিগ ব্যাং নিয়ে তথ্য খণ্ডনের হাস্যকর চেষ্টা দেখে হেসেছি কেবল। কিন্তু তখনো মনে হয়েছে স্রষ্টা আছে, কারণ তাকে আমি অনুভব করেছি, যখন পাশে কেউ ছিল না তখন কেবল সেই ছিল। আমাকে সাহস যুগিয়েছে সে। মুসলিমদের তথাকথিত “দয়াময়, অহংকারী” স্রষ্টা সে নয়, আমার কাছে সে বন্ধুসুলভ, সে আমাকে চেনে, আমাকে কখনো নরকে নিয়ে ফেলবে না। কিন্তু, আমার বন্ধুদের? যারা তাকে চিনে না, জানে না তারা? তাদের ছাড়া আমি স্বর্গে চলে যাব! কিন্তু স্বর্গে আছে আমার প্রাণপ্রিয় নানাজান। ইস, কি মজা হবে তাদের সাথে। কিন্তু পিছনে আগুনে পড়ে থাকবে আমার কতো পরিচিত! ওদের কষ্ট হবে আর আমি মজা করবো! তাই সাথে করে পৃথিবীর সবাইকে, সব ধর্মের সবাইকে আমি স্বর্গে নিয়ে যাব! কিন্তু হিটলার!!! তাকে নিয়ে আমি কি করে স্বর্গে যাব। আমি নরক চাই আবার চাইও না! উফ্, আমি এগুলোর পিছনে কোন লজিক খুজে পাচ্ছি না! আর আমি এই অস্থির দোটানায় কয়দিন থাকব! এখন দরকার কিছু প্রশ্নের উত্তর! প্রথমত বন্ধু স্রষ্টা, তুমি ধর্মের নামে যে অন্যায় হয় তা থামাও না কেন? দুই হাজার বছর আগে তো খুব জাদু বিদ্যা দেখাচ্ছিলে। এখন কি হলো। তোমার নামে যে বোমাবাজী হয় তা থামাও না কেন? তোমাকে প্রশ্ন করলে আবার একদল লোক আমাকে মারতে আসে!! এই তোমার আমার বন্ধুত্ব! তোমার ডার্ক হিউমার এত বেশী কেন? তুমি মানুষ হলে তোমার সাথে আমি মিশতাম না! তুমি এক বিশাল এনার্জি সোর্স হলেও খুব অর্থহীণ তোমার আচরণ। আমার “ভাগ্যই” খারাপ তোমার সাথে আমার পরিচয়।
বুঝাই যায় গত কয়েক মাসের এই অহেতুক নিজের সাথে তর্ক, আমাকে অনেকবার বোধ করিয়েছে যে আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। এগুলো লজিকবিহীণ। আমি লজিকের পূজারী, পূজারী বিজ্ঞানের, শিল্পের; এর মাঝে এই অপদার্থ গড্ (এখানে অপদার্থ আকারহীণ, এনার্জি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে) এর কোনো জায়গা নেই। আমার ভাগ্যই খারাপ। কিন্তু হঠাৎ করেই শক্তভাবে নিজেকে বললাম, “ভাগ্য” বলে কিছু নাই। আছে পরিসংখ্যান। প্রবাবিলিটির সূত্র। আমার আসে-পাশের এত বছরের সঞ্চয় করা যতসামান্য জ্ঞানটুকু আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে, সামনেও নিয়ে যাবে। আমি ভালো মানুষ ছিলাম, সামনেও থাকবো। আমার মনের শান্তি এখনো পুরো আসেনি। এখনো কষ্ট লাগে চিন্তা করে যে নানাজান-এর সাথে দেখা হবে না। হিটলার অল্পেই পার পেয়ে গেলো, স্বর্গ-নরক না থাকলে তার আর শাস্তি হবে না। জীবনের কত সময় ধর্মের পিছনে নষ্ট হলো। বাবা-মা কে জীবনে তেমন মিথ্যা বলতে হয়নি, কিন্তু এখন থেকে আমার জীবনের বড় একটা মুল্যবোধ তাদের কাছে বলতে পারবো না। আমার পরবর্তী প্রজন্মকে কি করে ধর্মীয় আগ্রাসন থেকে শিশুকাল থেকেই রক্ষা করবো! কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, পারবো কি দেশে ফিরে যেতে একজন ‘নয়-আস্তিক’ হিসেবে? আমার স্যুটকেস যে গোছানো!
(একটা কথা না বললেই নয়, বিদেশী মাটিতে পা দেবার তিন ঘন্টার মধ্যই যেভাবে দুই প্রেমিকাকে চুম্বনরত দেখেছিলাম, তারপর তিন তিনটি বছর গেলো, তেমনটি আর একবারের জন্যও দেখিনি! ভাগ্যের কি খেলা!)
চমৎকার লেখা। খুব ভালো লাগলো। মনের সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে তার ফলাফলই হবে মুক্তি। আপনাকে অভিনন্দন।
কমন পড়ছে।আমি মস্কো দামেইদভা এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই এক কপোত কপোতীকে চুমু খেতে দেখি।এখন হর হামেশা দেখি কিন্তু প্রথম দৃশ্য এখনও মনে গেথে আছে।
ভাষার উপর আপনার দখল দেখে ঈর্ষা খাই। (Y)
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
আপনার বমি লেখাটা পড়াছি, আর আপনি কিনা আমাকে বললেন আমার ভাষার উপর দখল!! আপনার সাথে আমার আরেকটি মিল আছে, কিছুটা। ছোটবেলায় আমাকে যে হুজুর আরবি বর্ণমালা শেখাতো আর নবী -সাহাবীদের পুণ্যবান গল্প বলতো, সে একদিন দুপুর বেলা পড়ানোর মাঝে ঠাস করে তার লুঙ্গী খুলে লোমশ কিছু একটার তলে ছয় বছরের ছোট্ট আমাকে একটা বিকৃত ইদুর দেখায়! আমি জানি না বাবা মা কে কি বলে ঐ লোকের আসা বন্ধ করেছিলাম, কারণ মনে আছে আমি আমার বাবা মাকে এই ব্যাপারে কিছু বলি নি কোন এক অজানা ভয়ে। কিন্তু ঐ লোক তার লুঙ্গী খুলে আমার আরবি পড়ার ইচ্ছা চিরতরে ঢিলা করে দিয়েছিল!!
@নির্মিতব্য, আপনাকে সিডিউস করবার চেষ্টা করেছিল মনে হয়। :lotpot:
আপনার নিবন্ধ পড়ে আমার প্রতীতি হলো যে- আপনি এখনও দারুন রকম দোদুল্যমানতায় আছেন। এ ধরণের মানুষ যে কোন সময় যে কোন দিকে মোড় নিতে পারে- কঠিন মৌলবাদী বা কঠিন আস্তিক।
@ভবঘুরে,
আমিও সবসময় এটা ভাবি, যারা হঠাৎ করে তরুণ বয়সে কঠিন মৌলবাদী হয়ে যায় তারা মনে হয় একটা সময় নিজের ধর্মকে নিয়ে দ্বিধাবোধ করে, তারপর ঐ অপরাধ বোধ থেকে সবচেয়ে সহজ যে কাজটা শুরু করে তা হলো বিচ্ছিরি একটা চিকন দাড়ি রাখে আর তারপর ইসলাম থেকে ইসলামিসম এর দিকে যায়। আমি ব্যক্তি গত ইসলাম চর্চার বিরোধী কখনো ছিলাম না, এখনো নেই। কিন্তু ইসলামিসম বা শরীয়া এর সবসময় বিরোধকারী।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি আপনার সিদ্ধান্তে আসছেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। অথবা আমি হয়তো ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারি নি। যেটাই হোক না কেন, আমি নিজে একজন দোদুল্যমান মানুষ নই। আমার বিশ্বাসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নাওয়া শেষ, সেটা স্বীকার করে নাওয়ার এখনো টাইম হয় নাই কারন এতো বছরের লালিত পালিত ছোট ছোট ধর্মীয় প্রার্থণাগুলো এখনো মুখ থেকে বের হয়ে যায়। আমি নিজের কাছে ছোট হই ভেবে যে আমার কি এতটুকু সেলফ কন্ট্রোল নাই! আমি নিজেকে নাস্তিক হিসেবে মেনে নিয়ে কোনো দিনও ইমেজিনারি বন্ধুর কাছে প্রার্থণার দরকার নেই আমার। দোটানার অনেকটাই সামাজিক ভীতি, পিতা-মাতা-মাতৃস্থানীয় আত্বীয় তাদের কাছে এটা লুকানোর প্রচেষ্টাই আমাকে সারাজীবন কষ্ট দিবে। তাই বলে তাদের সামনে এটা বলে দিয়ে, তাদেরকে কষ্ট দিয়ে নিজের মনে শান্তি পাবার ইচ্ছা নাই আমার। যেহেতু আমি এখন জানি আমার সময় মূল্যবান, এটা আমি আমার পরিবারের সাথে বেশি কাটাতে চাই। ভীতির একটা অনেক বড় কারণ হলো আমাদের দেশ দিনকে দিন ইসলামিসম-এর দিকে যাচ্ছে। এখনি মানুষ বিতারিত হচ্ছে ইসলামিসম দাবীদারদের থেকে, খুন পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। আমার দোটানা এটা থেকেই। বিদেশে থাকার কারনে এমনিই কিছু মানুষের গালির প্রাপ্য, রুমানাকে দেখেন নি। কিন্তু আমার এই নিজের কল্লাটা আমার খুব পছন্দ।
@নির্মিতব্য,
আমি এতে কোন অসুবিধা দেখছিনা। আপনি এখন একটা ট্রানজিশনের মধ্যে জীবন-যাপন করছেন। নিজের অনুভুতিগুলোকে অন্যসব সামাজিক অনুভুতিগুলোর মধ্যে মিলিয়েই এখন আপনাকে বসবাস করতে হচ্ছে। শান্তিতে, নিরুপদ্রবে বসবাস করার আকাঙ্ক্ষার জন্য আপনাকে দোষ দেয়া যায়না। আসলে মানুষ মুখে অনেক কিছুই বলতে পারে, আসল সত্য নিহিত থাকে অন্তরে। অন্তরে যদি সত্য ধরে রাখা যায় তাহলে মুখে কি বলা হলো আর না হলো এতে কিছুই যায় আসেনা।
ধর্মীয় ব্যাপারগুলোকে আপাততঃ সামাজিক কালচার হিসাবে নিলে যদি ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হয় তাহলে ক্ষতি কি? বৃহত্তর কল্যানের জন্য এইসব ছোট খাট বিষয়ের প্রতি নজর দিয়ে কষ্ট বাড়াবার কোন দরকার আছে কি? যখন আপনি প্রতিপক্ষকে নির্ভয়ে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন তখন না হয় এসবের দিকে নজর দিবেন!
@ব্রাইট স্মাইল্,
ঠিক কথা। ধর্মীয় ব্যাপার এখন সামাজিকতা ছাড়া আর কি আমার কাছে। যতখানি পারি এড়িয়ে চলব। এটা নিয়ে আমার একটা পর্যালোচনা তুলে ধরতে চাই, আমি আস্তিকদের নাস্তিকদের বরাবর নানান প্রশ্ন দেখছিলাম। তাদের একটা প্রশ্ন ছিল “আপনি আপনার বাবা মা মারা গেলে জানাজায় শরিক হবেন কিনা?” আমার মনে হলো এটা কি ধরনের অপদার্থ প্রশ্ন!!! যারা ঘোষিত নাস্তিক তারা হয়তো করবেন না, কারন তাদের কাছে কেউ জানাজায় অংশগ্রহন আশা করে না হয়তো। কিন্তু যারা আপনি বা আমার মতো নাস্তিকতা ব্যক্ত করতে চান না(আমার বাবা মা, শাশুরি আমাকে নাস্তিক হিসেবে ত্যাগ না করলে, আর কাঠ মোল্লারা আমার কল্লা না কাটলে আমিও কাল ঘোষণা করতাম) তারা কি করবে। সমাজ তাদের নাস্তিক সন্দেহ করে, কিন্তু আপনি ঘোষণা করেন নাই, তাই কল্লা কাটতে পারতেসে না। বসে আসে কল্লা কাটার জন্য! কিন্তু আপনার বাবা/মা মারা গেছেন। আপনি শোকাহত। অনেক মানুষ এসেছে তাকে সম্মান জানাতে। তারা সবাই জানাজা পড়বে। “আপনি নামাজ পড়েন না, পড়বেন কেনো আপনি তো নাস্তিক, কিন্তু সেটা তো মানুষ শিওর হয়ে জানে না। এখন যদি জানাজায় অংশগ্রহন না করেন তাইলে সবাই জানবে-” এই চিন্তাটা তেল নাকওয়ালা আস্তিকের। আপনি এমনি শোকাহত, এখন আপনি আপনার বাবা/মা হারানোর সব শোক বাদ দিয়ে নিজের মতবাদ, জীবন আদর্শ তুলে ধরবেন!! আমি আস্তিকদের এই সামান্য সামাজিক প্রশ্নেরো কোনো যোক্তিকতা দেখলাম না!! আর এই প্রশ্ন শুনে আমার নাকি তওবা করে ২০ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করার কথা! :-Y
@ভবঘুরে, আমারও তাই মনে হচ্ছে :)) ।
মুক্তমনায় লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য অভিনন্দন।
আপনার আস্তিক- নয়-নাস্তিক দ্বন্দ্ব আর সমীকরণ ভাল লাগলো। এখনো কিছু বন্ধন আর টানাপোড়েন অনুভব করছেন মনে হয়। অচীরেই মুক্ত হবেন, চিন্তা কইরেন না। আর তাছাড়া ঈশ্বর নিজেও নাস্তিক। এনিয়ে আমি একটা স্ট্যাটাস দিইয়েছিলাম এরকমের –
ভেবে দেখলাম, আমাদের মহান ঈশ্বর হচ্ছেন নাস্তিকূলশিরোমনি, মানে সবচেয়ে বড় নাস্তিক (উনি বিশ্বাস করেন না যে কোন সৃষ্টিকর্তা তারে বানাইছে), তাই তার দর্শন হওয়া উচিৎ অবিশ্বাসের দর্শন!
কাজেই নাস্তিক হয়ে ঈশ্বররকে সঠিকভাবে অনুসরণ করুন। 🙂
কামনা করি ঈশ্বর আপনাকে সকল ধরণের বন্ধন থেকে মুক্ত হবার তৌফিক দান করুন!
আপনের জন্য একখান মার্কামারা ছবি –
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/01/sculpture_MM.jpg[/img]
@অভিজিৎ,
আমি আপনার মার্কামারা ছবিটা আগে দেখেছি। যেহেতু এখানে বন্ধনগুলো মনের বন্ধনকেই বেশি বোঝাচ্ছে, আমি তাই আমার নিজের জন্য অন্য একটা ছবি খুজে আনসি;
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/01/bakso1.jpg[/img]
ঐ বাক্সটা হলো সামাজিক, পারিবারিক বন্ধন(ঠিক নিচে ভবঘুরেকে এটা নিয়ে একটু বলেছি), পা টা হলো আমার, এই সামাজিক পারিবারিক টানাপোড়ন যখন আমার মনে তেমন আর দাগ ফেলবে না… তখন বাক্স থেকে বের হয়ে আমি বাক্সের উপর বসে থাকব। সবাই বলেন আমিন। :))
@নির্মিতব্য,
আপনার ছবিটা আগে দেখা যাচ্ছিলো না। ঠিক করে দিলাম। ছবির লিঙ্কে jpg আকারে সম্পূর্ণভাবে দিতে হবে। attachment id আকারে নয় ।
@অভিজিৎ,
:)) অনেক অনেক ধন্যবাদ।
@নির্মিতব্য,
আলোকিত মুক্তচিন্তার জগতে স্বাগতম। চমৎকার লিখেছেন। নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
@তামান্না ঝুমু,
অনেক ধন্যবাদ। আমারো এই জগতে নাম লেখাতে পেরে ভাল লাগছে। লিখতে খুব মজাই লাগছে। আরও লিখব আমিও আশা করি। (F)
কিসে ধর্ম হয়, আর কিসে অধর্ম হয়, তাই বুঝলাম না কোনদিন। এক অয়াক্ত নামাজ না পড়লে কত হাজার বছর যেনো দোজখে থাকা লাগে, এই কথা যেদিন ইসলামিয়াত টিচারের মুখ দিয়ে বের হল ততদিনে আমি বহু অয়াক্ত নামাজ বাদ দিয়ে ফেলেছি। ভয় পাবো কি? হিসেব করে দেখলাম, এখন বেহেস্ত পাওয়ার চেষ্টা করেও লাভ নেই। করতে হলে নাকি আমার বাদ দেয়া নামাজগুলো কাজা আদায় করতে হবে। পড়ি মাত্র ক্লাস সেভেনে, এই কথা বলে আমারে। সারাজীবন যায়নামাজে বসে থেকেও ৭ বছর বয়স থেকে কাজা হওয়া নামাজ আদায় সম্ভব? তারচেয়ে থাকগে! দোজখে তো এমনিই যাইতে হবে, যাওয়া যাবে। ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়ের চিন্তা ছিল এই। এইটে উঠে মনে হল, আল্লাহকে মানতে হবে কেন? সৃষ্টি করেছেন ভালো কথা, কুর্ণিশ চাই কেন তার! সৃষ্টিকর্তা এতো কুর্নিশ দিয়ে করবেন কি? আর কুর্নিশ না পেলে দোজখেই বা ফেলবেন কেন? এতো কুর্নিশের লোভ কেন! দয়াময় আবার নিষ্ঠুর হয় কেমনে? আসলেই কি সৃষ্টি করছেন? এমন অজস্র প্রশ্নের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থান। এখন কোনভাবেই এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা।
আমার খালি ট্রেন ছুটে যায়। অসুখ হলে নিজেকে সুস্থ হবার সময়টুকুও দিতে চাইনা আমি। আমি জানি, এখন ঐসব সৃষ্টিতত্ত্ব, ঈশ্বর, প্রথা, এগুলোর পিছে সময় ব্যয় করে লাভ নেই। কবে থেকে ঐ বইটা পড়ব বলে ঠিক করে রেখেছি, ওই লেখাটা লিখতে হবে। হাতের কাজটা শেষ করতে হবে, নইলে পরের লেভেলে যেতে পারবো না। অনেক কাজ পড়ে আছে, সময় তো থামবে না আমার জন্য ঈশ্বর নিয়ে প্রিতী বিতর্কে নামলে। তারুপর আবার আস্তিক নাস্তিক উভয়েই খুব ধর্মানুভুতি প্রবণ। মাফও চাই দোয়াও চাই।
এই বিশ্বাসটা, অনুভূতিটা কি মানুষের একান্ত নিজের নয়? মুসলিম পরিবারে জন্মালে গর্বের কিছু নেই, ধর্ম কোন জেনেটিক ট্রেইট না, আবার নাস্তিক, নয়া নাস্তিক হয়ে বা আস্তিক হয়ে ভিন্ন মতের কাউকে কুরুচিকরভাবে আঘাত করাও সুরুচির পরিচায়ক না। মনটা মুক্ত হওয়া, সুন্দর হওয়াই আসল কথা। আমার ধর্মবিশ্বাসে আরেক জনের কি এসে যায়?
নিজের উপর আত্মবিশ্বাস থাকলে মাথার উপর ঈশ্বর লাগে না। বাই দ্য ওয়ে, ভাগ্য বলে কিছু নেই, প্রবাবিলিটি আছে, এটা তো আমার ভাবনা, ঠিক এটাই আপনি লিখলেন দেখে অবাক হলাম। এর আগে কাউকে এই কথাটা লিখতে দেখিনি!
@নীল রোদ্দুর,
হ্যাঁ, ঠিকই আছে। হাদিছটা আমি পড়ি নাই। তবে আমি একটা ইসলামি পুস্তকে দেখেছিলাম,এক
অক্ত নামাজ সময় মত না পড়িলে তার শাস্তি ২ কোটি ৮৮ লক্ষ বৎসর দোজখে থাকা।
এএবার হিসাব টা করিয়া দেখতে পারেন
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
দোজখে কি দুনিয়ার মত দিন রাত আছে নাকি ? জানতাম না তো!
@ভবঘুরে,
ও হ্যাঁ.আমার বহু বৎসর পূর্বের দেখা পুস্তকের অনুসরনে বর্নণায় একটু ভূল হয়েছে। পুস্তকটিতে এরুপ ছিল,পৃথিবীর সময়ের মাপে ২ কোটি ৮৮ লক্ষ বৎসর হইবে।
@ভবঘুরে,
দোজখে যেই রকম অনন্তকালের bonfire, দিনই কি আর রাতই কি!!! কিন্তু খোদা যদি একটু ওনার এই never ending আগুনের উৎস বলে দিত, আমাদের এত কষ্ট করে অল্টারনেটিভ এনার্জি খুজতে হতো না! 😛 সকল পরিবেশ দূষণের পিছনে আছে এক হিংসুটে স্রষ্টা যে তার এই মহান আবিষ্কার মানুষের সাথে শেয়ার করে না!! মানুষকে তো দেখতে পারেই না, উনি মনে হচ্ছে গাছদেরও দেখতে পারে না!!
@আঃ হাকিম চাকলাদার, আর হিসেব করে কাজ নেই, মনের আনন্দে যে পথ বেছে নিয়েছি, সেই পথের পথিকদের ঐ হিসেবে আর কাজ নেই। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
যায় বটে, যখন ধর্মবিশ্বাসটি ব্যক্তিগত বিশ্বাসের পর্য্যায়ে না থেকে বংশ পরষ্পরায় চলতে থাকে। পরিবারের জন্ম নেয়া বাচ্চাগুলোর উপর পরিবারের ধর্মবিশ্বাসটি শিশু বয়স থেকে চাপিয়ে দেয়া হয় আর সেটা করা হয় তাদের বয়সটাকে পুঁজি করে যেহেতু ছোট বয়সে কিছু বুঝে উঠার সাধ্য তাদের থাকেনা। পরিবারে যদি এমন হতো যে বাবা-মা ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনাগুলোকে একান্ত নিজেদের ব্যক্তিগত মতাদর্ষ মনে করে সন্তানদেরকে এই ব্যাপারে ইনভলভ্ না করে তাদেরকে বড় করে তুলছে তা হলে আপনার যুক্তিটি সঠিক ছিল।
যাদের নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আছে তারা না হয় ঈশ্বর ছাড়াই পার পেয়ে যায়, কিন্তু এই পৃথিবীতে সবার আত্মবিশ্বাসের মাত্রাতো আর একই রকম থাকেনা, আর তাদের বেলায় কি ঈশ্বরের প্রয়োজন আছে বলে আপনার মনে হয়?
@ব্রাইট স্মাইল্,
আমার তো মনে হয় কেবল এই একটি কারণেই অধিকাংশ মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাসটা আকড়ে ধরে থাকে। খুব সম্ভবত এটা তারা ভাবেও না, কোথা থেকে এলো তারা, কিভাবে এলো। কিন্তু সারাটাজীবন বিপদে আপদে একটা ছদ্মনাম স্মরণ করে। তখন পাঁচ অয়াক্ত কেন? দশ অয়াক্ত নামাজ পড়তেও মসজিদের হুজুরে যদি বলে, তারা তাই করবে। তারা যে আল্লাহ, আল্লাহ যিকির করে দিন রাত কাটিয়ে দেয়, তার কারণ আর কিচ্ছু না, ভিতী। তারা আস্তিক, বিশ্বাস করে যাদুর চেরাগ হাতে নিয়ে একজন বসে আছে সাত আসমান দূরে একজন, সবকিছুর দায়িত্ব তার, এটা তার সীমাবদ্ধতা, যে সে এরচেয়ে বেশীকিছু ভাবতে পারেনা। আপনি তাকে গিয়ে বলতেই পারেন, ঈশ্বর নেই, সে মানবে না, ছাড়বে না ধর্মবিশ্বাস কিছুতেই, কারণ তাহলে সে মানসিক ভাবে খোড়া হয়ে যাবে, বিপদে পড়লে ডাকবে কাকে? সে এমনিতেই খোড়া, কিন্তু সেটা সে জানেনা। ঈশ্বরকে কেড়ে নিলে, সে যে খোঁড়া এটা সে জেনে যাবে। এটা মানা সম্ভব নয় বলেই ঈশ্বরকে সে ছাড়বে না।
@নীল রোদ্দুর,
এটা তো আমার কথা, আপনি জানলেন কিভাবে? 😉
@ব্রাইট স্মাইল্,
অন্যের কী মনে হয় জানিনা, তবে আমার মনে হয়, দরকার আছে প্রচলিত ধর্মগুলোর। যারা জুজুর ভয়ে হলেও অন্তত ভালো থাকে, ভালো কাজ করে। এই কাজটা বিকল্প অন্য কেউ করতে পারলে বলব ধর্মের দরকার নেই।
@নীল রোদ্দুর,
আমি এতদিন ভাল কিছু হলে নিজের ভাগ্য দেখে অনেক খুশি হইসি, খারাপ কিছু হলে আবার ভাগ্যকে দোষ দিতে যাই নাই। কিন্তু এখন খুব মজা লাগছে চিন্তা করে এটা ভাগ্যগুনে না, ভাল জিনিসগুলো খারাপ জিনিসগুলো সব হয়েছে আমার নিজের কারনে। হ্যা অনেক সময় কাকতালীয় ভাবে অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে, যারা আমার জীবন ভাল- খারাপ অনেক দিক দিয়েই বদলে দিয়েছে। কিন্তু সব কাকতালীয় ব্যাপারগুলো হয়েছে প্রোবাবিলিটি থেকে। ইস আগে জানলে স্কুল কলেজে আরেকটু শ্রদ্ধা নিয়ে স্ট্যাটিস্টিকস পড়তাম। :))
@নীল রোদ্দুর, দলভারী করলাম। আমারও সেই কথা, নাস্তিকতাও সেই তো ঘুরেফিরে ঈশ্বরকেই মূল্য দেয়া, তাকে মনে করে মনে না করা!
অসাধারণ লিখেছেন।তবে আস্তিকতা-নাস্তকিতায় না যেয়ে অন্যভাবে দেখি যেমন ধর্মহীন বিশ্ব কি সম্ভব উত্তর না।বর্তমানে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের জায়গা নিচ্ছে বিজ্ঞানবাদ ও দর্শনবাদ অনেকটা আইজাক আসিমভের “ফাউন্ডেশন অব আর্থ সিরিজের” মত।আর “নিহিলিজমের” মত উত্তর আধুনিক দর্শনতো একাধারে আস্তিকতা ও নাস্তিকতা দুটাকেই উড়িয়ে দিয়েছে।
@ডেথনাইট,
৮০% নাস্তিকদের দেশে শিশুরা ধর্মের সাথে পরিচিতই না যেভাবে আমাদের দেশের শিশুরা পরিচিত। সুদূর ভবিষ্যতে ধর্মহীন সমাজই মনে হচ্ছে বেশি সম্ভব। আমার একটা প্রিয় ভিডিও এড করছি আপনার জন্য, এরা তারা যারা ধর্মহীন সমাজ গড়ে তুলবে একদিন, যেখানে আস্তিক নাই, নাস্তিকও দরকার নাই তাই।
httpv://www.youtube.com/watch?v=uSEIAqHtEZE
@নির্মিতব্য,আপনি আপনি আমার কথাটা ধরতে পারেন নি।ধর্মের বিবর্তনের ইতিহাসে জ্ঞনের ছিদ্র বন্ধে ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল্যেমন বিদ্যুৎ কেন চমকায় এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আসার আগে দৈত্য-দানবের নাচানাচির মত ধর্মীয় ব্যাখ্যাই ছিল এর উদাহরণ।তাই ধর্ম থাকবেই এর সংজ্ঞা পালটে যাবে।এখন ধর্ম বলতে সানকাল্ট, মূর্তিপূজা,ঈশ্বর বিশ্বাস বোঝায় যার রুপান্তর হবে বিজ্ঞান ও দর্শনকে ধর্ম রুপে গ্রহনের মাধ্যমে কারণ প্রচলিত ধর্মের চেয়ে্যৌক্তিক ভাবে তা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম।রাজনীতি ও ক্ষমতা সুসংহত করার কাজেও তা বিপুলভাবে ব্যাবহৃত হবে।আজকে একটা এন্ড্রয়েড সেট (কিংবা বিজ্ঞানের মহা কোন আবিস্কার ) নিয়ে পৃথিবীর কোন অনগ্রসর জাতির কাছে গিয়ে নিজেকে নবী বা ঈশ্বর রুপে প্রতিষ্ঠা পাওয়া খুব সহজ।তাই আমি ধর্মহীন বিশ্ব নয় বরং স্বার্থপরতাহীন ও নৈতিকতায় বলীয়ান ও মানবিক বিশ্ব দেখতে চাই।ধর্ম সভ্যতার সাথে সাথে পরিবর্তশীল।আমি জানিনা আপনি ফাউন্ডেশন অব আর্থ সিরিজ পড়েছেন কিনা তাহলে হয়তো আমার কথা ধোয়াশা মনে হত না।
@ডেথনাইট,
শব্দ-এর অর্থ ব্যবহার সময়ের সাথে পালটে যায় অনেক সময় জানি। বিজ্ঞান-এর মতো একটা ব্যাপার সুদূর ভবিষ্যতে ধর্মকে রিপ্লেইস করবে এটা বুঝি, কিন্তু বিজ্ঞানকে ধর্ম রূপে গ্রহন করা হবে এটা বুঝলাম না। ধর্মের আভিধানিক অর্থের সাথে এখনকার বিজ্ঞান/বৈজ্ঞানিক মতবাদ তো যায় না। শব্দ সবসময় পরিবর্তন হয় তাও না, অনেক সময় বিলুপ্তই হয়। আমি ধর্ম শব্দ হিসেবে, এবং মতবাদ/আদর্শবাদ/সামাজিক রীতি হিসেবে নিপাত যাক।
আমি আসিমভ এর খুবই ভক্ত। ফাউন্ডেশন সিরিজ আমার তার লেখা প্রথম সায়েন্স ফিকশন বই গুলোর মধ্যে পড়া। হয়তো আমি তখন বেশ ছোট ছিলাম, অথবা বাংলা অনুবাদে বইগুলো পড়েছিলাম বলে ঠিক মনে করতে পারছি না আসলে আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন।
তবে আমি কদিন আগে তার রোবট ভিশন বইটা পড়ছিলাম, একটা প্রবন্ধ খুব ভালো লেগেছিল, সেটা থেকে একটা অংশ আপনাকে দিচ্ছি;
এখানে উনি মিথ মেকারের কথা উঠিয়েছিলেন কারন উনি তার আগে গ্রিক গড মিথলজি নিয়ে বলছিলেন। আসিমভ ধর্ম কাহিনী/ মিথ কাহিনী কে বিজ্ঞান দিয়ে না সরিয়ে বিজ্ঞান ভিক্তিক কল্পকাহিনী দিয়ে সরিয়েছেন। এখন আসিমভ তার জীবদ্দশায় ১৪০০ শুধু প্রবন্ধ লিখে গেছেন, ছোট বড় গল্প উপন্যাস বাদে। এই উপরের উক্তিটা The Machine And The Robot থেকে নেওয়া।
আমাদের আলোচনার বাইরে হলেও একই প্রবন্ধের আরেকটু অংশ যোগ করি;
আপনার দর্শন বিষয়ক কথাটা আমি এড়িয়ে গেছি কারন এই বিষয়ে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত। আমি খালি জানি দর্শন বিজ্ঞানেরই আরেক ধারা, অনেকটা লজিকাল কনক্লুশান ধরনের। আমার আইডিয়া নাই দেখে আর ধর্ম আর দর্শন তুললাম না, ধর্ম আর বিজ্ঞান নিয়ে শুধু বলে গেলাম। আমি যদি এখনো আপনার কথা না বুঝি, আবার বুঝিয়ে বলেন।
@নির্মিতব্য,আপনার বলা ধর্মহীন বিশ্ব সম্ভব যদি পৃথিবীতে একটাই জাতি থাকে যারা বিজ্ঞানবাদী।একই সাথে সংস্কৃতিকেও বাদ দিতে হবে বলতে পারেন কেন কারণ সংস্কৃতির ছদ্মবেশেই ধর্ম টিকে থাকবে।প্রাচীন প্যাগানিজম বা সূর্যবাদ আজ বিলুপ্ত আসলেই কি তাই।বর্তমানের বসন্ত উৎসব বা সূর্যোৎসবের ছদ্মবেশে তারা টিকে আছে।এই দুটি উৎসব আবার অনেক বিজ্ঞানবাদী ও ধর্মহীনদের আগ্রহ নিয়েই পালন করতে দেখি।
পৃথিবীতে একটাই জাতি না থাকলে অগ্রসর ও অনগ্রসর জাতি থাকবে।এবার অগ্রসর জাতি (বিজ্ঞানবাদী) তার নিজের স্বার্থের জন্যই অনগ্রসর জাতিকে দাবিয়ে রাখার জন্য বিজ্ঞানকে ব্যাবহার করবে।বলতে পারেন কেন করবে হ্যা নৈতিকতার অভাবে কারণ নৈতিকতা যেমন ধর্মহীন তেমনি বিজ্ঞানহীনও।এধরণের একটা পরিস্থিতির কথাই ফাউন্ডেশন অব আর্থের মূল বিষয়।হ্যা এটা ফ্যাক্ট নয় কিন্তু সম্ভাবনা তাই ধর্মহীন বিশ্ব ৫০-৫০ মনে হলেও আদতে সম্ভব নয় বলেই মনে করি।আর সবাই নীতিবান হলেই ধর্মহীন বিশ্ব সম্ভব ? 😕
@ডেথনাইট,
প্রকৃতি এত সুন্দর একটা জিনিস এটা কে তো উৎযাপন করাই যায়, প্রকৃতি পূজা না চিন্তা করে। তাহলে বাংলার মেয়েদের কখনোই বালা-নূপুর পরা উচিৎ না কারণ এক কালে এটা শৃংখল-এর প্রতীক ছিল। এখন এটা সৌন্দর্যের প্রতীক।
আমার মনে হয় মানুষ বিজ্ঞানবাদী ও ধর্মহীন আগে হবে, হয়তো তার অনেক পরে গিয়ে একক জাতিস্বত্তা হবে। আমি আশা করি বিজ্ঞানবাদী-ধর্মহীন মানুষ এই শতকেই হোক, আর বিভিন্ন জাতিস্বত্তা কালের সাথে হয়তো হাজার বছরে হারিয়ে যাবে, কিন্তু এটা ভবিষ্যতের বিজ্ঞানবাদী-ধর্মহীন মানুষ ঠিক করবে তারা জাতি নির্ভর সংস্কৃতি কই রাখবে, যাদুঘরে নাকি ব্যক্তিজীবনে।
আমার কাছে মনে হয় ভবিষ্যতের মানুষ আমার আপনার থেকে অনেক বেশি নৈতিক হবে। হ্যা শোষক-শোষিত সম্পর্ক থাকতে পারে, অগ্রসর-অনগ্রসর জাতি থাকতে পারে, কিন্তু তার কি প্রয়োজন? খাদ্যের অভাব, আবাস অভাব, সবাইকে সমান অধিকার-সুযোগ দেবার উপায় নেই? যদি বিসমতা থাকে, তা কোন কারনের জন্যই থাকবে, স্বার্থপরতা লুকায়িত কোন মানব স্বভাব হবে না মনে হয়। আবারো, এটা আমার চিন্তা, আপনি ভবিষ্যতকে একভাবে দেখছে, আমি আরেকভাবে।
নীতিবান কি জিনিস আমি বুঝি না। অনেকে আছে মানসিক কারনে চুরি করে, সে কি নীতিহীন? নীতি কে define করে? এখনকার সমাজ ব্যবস্থায় সমকামীতা নীতিহীন এটা কম বেশি মানা হয়। সময়ের সাথে নীতিও পালটে যায়। আগে ১০ বছরের মেয়ে কে বিয়ে করা নীতিহীনতা ধরা হত না, এখন এটা রীতিমত অসুস্থ চিন্তা। এখন মেয়ে-ছেলে লিংগ দেখে গর্ভপাত হয়। একসময় লিংগ দেখে গর্ভপাত অসুস্থ চিন্তা হবে আমি আশা করি। রীতির সাথে নীতিও পালটায়। আমি এখনকার সকলদেশের মুক্তমনা মানুষের স্টেন্ডার্ডে নীতিবান, এবং আমি ধর্মহীন। তাই আমি নীতির সাথে ধর্মের সম্পর্ক দেখছি, আবশ্যিকতা দেখছি না।
@নির্মিতব্য, বিজ্ঞান হয় ধর্ম হিসাবে ব্যাবহার হবে নতুবা ধর্মের মর্যাদায় আসীন হবে।
@ডেথনাইট,
আমি দুইটা কথার কোনটার সাথে একমত নই। যদি ভবিষ্যতের মানুষ এটা করে, আমি , ক্ষুদ্র এই আমি, তাদের উপর disappointed হবো। যদিও আমি তখন থাকবো না।
অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর বীজ,মিলনে। আর সে মৃত্যুকে মেনে নিতে না পারাও হয়ে ওঠে বিশ্বাস আকড়ে পড়ে থাকার কারণ।
@স্বপন মাঝি,
সহমত।
অবিশ্বাসের জগতে আপনাকে স্বাগতম।
১৮ বছর বয়সে ধর্মবিশ্বাস হারানোর পর আমি নিজেকে আহম্মক ভাবতাম এতদিন ধর্ম নামক আবর্জনাকে ধারণ করেছি বলে!
আপনার সাথে একটা বিষয় আমার মিলে গেছে। আমিও অনন্তকাল দোজখের বিষয়টি মেনে নিতে পারি নি। আমি মানুষের ধর্মবিশ্বাস ব্যাপারটি নিয়ে অনেক ভেবে দেখেছি তা স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবারের ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুরুপ হয়। এখন একজন করিম মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে মুসলিম হল, আবার একজন রাম হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়ে হিন্দু হল, দু’জনের কেউই তাদের ধর্ম যাচাই করল না (আসলে ধর্ম যারাই ঠিকমত যাচাই করে তারা নিধার্মিক হয়) কিন্তু মৃত্যুর পর একজন জান্নাতে গেল আর আরেকজন জাহান্নামে গেল আর তা অনন্তকালের জন্য!! ভিন ধর্মের মহাপুরুষদের কেউই ইসলামি জান্নাতের সন্ধান তো পাবেই না বরং তাদের জন্য নাকি অনন্তকাল জাহান্নাম। আমার প্রশ্ন ছিল, কেউ ধর্ম বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে তো ভুলও করতে পারে, আবার কেউ ভুল করে হলেও ধরে নিলাম সকল ধর্মে অবিশ্বাসী হয়ে গেল, এখন এ ভুলের জন্য তাকে কি অনন্তকাল দোজখে পাঠাতে হবে? এই চরম অশুভ আল্লাকে আবার পরম করুণাময় বলতে হবে আর স্তুতি দিয়ে ভরিয়ে রাখতে হবে কেন? এটাই সত্য যে তিনি তা নন এবং সকল ধরণের অশুভময়তা তার ভাবনা থেকেই এসেছে – তাই বিশ্বাসীরা যতই ধানাই-পানাই করুক না কেন, তাদের ঈশ্বর/ধর্ম সে দায় এড়াতে পারে না।
ইসলামের আল্লা মূলত ইসলাম পূর্ব যুগের প্যাগানদের গুরুতপূর্ণ দেবতা ছিল। এর তিন কন্যা লাত, মানাত ও উজ্জা তাদের পরম পূজনীয় ছিল। বিভিন্ন জায়গায় এদের মূর্তি স্থাপন করে পুজার প্রচলন ছিল। মুহাম্মদ সেই আল্লার ধারণায় পরিবর্তন আনেন হানিফদের অনুকরণ করে। কাবাকে সেই ইসলাম পূর্ব যুগেও বায়তুল্লাহ বা আল্লার ঘর বলা হত, পৌত্তলিকরা হজও করত যা ১০ দিন ব্যাপী হত। কাবার চারদিকে ঘোরা, কোরবানী করা, শয়তানকে ঢিল ছোড়া এসব প্রথা পৌত্তলিকদের সরাসরি অনুসরণ। যখন আল্লার নাম নিয়ে মুসলমানরা বিপদজনকভাবে ইমানী বলে বলীয়ান হয়ে উঠেন তখন একই সাথে বিষয়টি দুঃখজনক ও উপভোগ্য বলে মনে হয় আমার কাছে।
ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী,
আমি অল্প কদিন আগে ইসলাম আর ইসলামিসম(শারিয়া) এর উপর নজর দেওয়া আরম্ভ করলাম। ইসলামের অনুসারীদের উপর আমার কোনো অসম্মান নাই, কারন অনেক মুসলিম ইসলামকে নানা ভাবে বিশ্লেষণ করেন, যেমন সুফিসম, উদারপন্থী মুসলিম, মর্ডান মুসলিম, গোড়া মুসলিম ইত্যাদি। এই গোড়া মুসলিম যারা শারিয়া আইন চান, তাদের প্রতি আমার সম্মান কম। তারা জানে কোরানে কিভাবে মানবাধিকার ক্ষুণ্য হয়েছে, কিন্তু তারা এগুলো কিভাবে মেনে নিয়ে শারিয়া কে সামাজিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় আমি বুঝি না। এরা নিজেদের জন্য আর অন্যদের জন্য বিপদজনক।
ও হ্যাঁ, যে কথাটা বলা হয়নি… আপনি ভাল লিখেন… সহজ-সরল-সাবলীল (F)
@প্রতিফলন,
ধন্যবাদ প্রতিফলন। আপনিও যে আপনার অনুভূতি শেয়ার করলেন তার জন্য (F)
অভিনন্দন। চমৎকার লেখা।
এই রকম সহজ স্বীকোরক্তি দেখলে বাঙ্গালী হিসেবে গর্বে বুক ভরে যায়।
একটা কথাঃ
আপনার জায়গায় আমি হলে এই লেখাটা থেকে ‘ক্ষতি’ শব্দটা উড়িয়ে দিতাম, না’হয় ‘উপকার’ বসাতাম। কষ্ট পেয়েই তো সিরিয়াসলি এই ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করলেন। তাই না? ‘ক্ষতি’র বদলে উপকারই হোল, কি বলেন?
স্বাগতম এবং (F)
@কাজী রহমান,
আসলে ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে অনেক সময় ক্ষতিই মনে হয়েছে। ধর্মকে প্রশ্ন করতে কখনো খারাপ লাগে নি, কিন্তু জোর গলায় নিজেকে বলতে যে প্রশ্নের উত্তরগুলো কোনো সেন্স তৈরী করে না, এই কথাটা বলতে যে সত্যিকারের বুক ব্যথা হয়েছে তখন অনেক সময় মনে হয়েছে ইস্ এগুলো না শুনলে কি হতো না। উপকার তো এখন হল, আমি এখন জানি আমার প্রতিটা মিনিট কতো মূল্যবান। :guru: (O)
@নির্মিতব্য,
মুক্তমনায় আমরা আরো একজন ভাল লেখক পেলাম। দুদোল্যমান মনের অশান্তি দূরীকরণে আমি একটি ফ্রি ঔষধের পরামর্শ দিতে পারি। আপনি বেশীবেশী করে রোজ রোজ কোরান শরিফ পড়ুন, একদিন এই কথার উত্তর পেয়ে যাবেন-
@আকাশ মালিক,
আজকে সুরা বাকারা এর একটা অংশ নিয়ে পড়তে গিয়ে অনেক হাসি পেল। পুরা আস্ত একটা গরু নিয়ে আষারে রচনা! বিবর্তন, আল্লাহ, কোরান এগুলোর মধ্যে আগে সমস্যা হয় নি কারন, বিবর্তনের জবাব কোরানে পাব এটা চিন্তাই করি নি। ভাবতাম আরব্রা অনেক হাবা ছিল দেখে অত কঠিন নির্দেশনা নাই। ভাবতাম কোরান বুঝতে অনেক স্কলার হওয়া লাগে। আর নন মুসলিম স্কলারদের ব্যখ্যা পক্ষপাতদষ্টু মনে হতো। আর কোরানের এত হাজার ব্যাখ্যা, কোনটা ফেলে কোনটা পড়ি। আর এখন মুসলিম স্কলারদের উত্তর শুনলে হাসি পায়।
মনের অশান্তি হচ্ছে ভেবে যে, পৃথিবীতে আমার এত কম সময় তাই, কিছু মানুষ অনাহারে মরে যাবে, মরে একটু বেহেসতেও যাবে না তাই, ধর্মের নামে এত মানুষ সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে আছে তাই। আমারি আপনজনেরা একজন কাল্পনিক চরিত্রকে ভয় করছে ভালবাসছে তাই। কোরান পড়ে তো এখন একটু রাগই লাগছে, এত ভুল এত অসামাঞ্জশ্য এত গাজাখুড়ি তাও এত অহমিকা কেন!!
@নির্মিতব্য,
দরকার নেই। আপনি নিজেরটাই বিশ্বাস করুন। পড়ুন- ইন্না শা-নিয়া কাহুয়াল আবতার। যে আপনার শত্রু (হে মুহাম্মদ) সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।
লেজকাটা, নির্বংশ এটা আল্লাহর ভাষা? মুহাম্মদের পুত্র সন্তান হয়না, মানুষ তাকে নির্বংশের অপবাদ দিল। তারই জবাবে এই আয়াত। আয়েশাকে মানুষ অসতী বল্লো। একমাস পর (আয়েশার ঋতুস্রাব জেনে) আয়াত লিখা হলো- তোমরা কেন চার জন সাক্ষী আনলেনা, কেন তোমরা বললেনা আমরা বিশ্বাস করিনা।
নিঃসন্দেহে, কোরান মুহাম্মদের আত্মজীবনী ছাড়া আর কিছু নয়। লেখা যখন শুরু করেছেন আশা করি নিয়মিত লিখবেন।
মন্তব্যকারীর গন্ডি পেরিয়ে লেখকের
@রাজেশ তালুকদার,
আপনি যে আমাকে মন্তব্যকারী হিসেবে আগেই সম্মান দিয়েছেন আমি তাতেই মহাখুশী। আমি তো ভাবতাম আমি একা একা বকবক করি। এখন তো কাজ বাড়ায় দিলেন, ভাল ভাল লিখে আপনার আগামী বছরের লেখায় আমার একটা প্যারা দখল করতে হবে। :))
@রাজেশ তালুকদার,
মন্তব্যকারীর গন্ডি পেরিয়ে লেখকের ভূমিকায় অসাধারণ মনে হল। আস্তিকতা নাস্তিকতার দ্বন্দ্ব, বিশ্বাস অবিশ্বাসে দোলখাওয়া মনের সূক্ষ্ম অনুভুতি গুলো যে ভাবে ভাষায় রূপ দিয়েছেন তা এক কথায় তুলনাহীন। নদীর স্রোতের মত যেভাবে লেখাটাকে বয়ে নিয়ে গেছেন তা কেবল বলিষ্ট কোন লেখকের পক্ষেই সম্ভব।
লেখায় আপনার হাত অনেক শক্তিশালী সন্দেহ নেই মোটেই। লেখার চর্চা চলুক নিয়মিত।
নাস্তিকতার নিলয়ে স্বাগতম।
অসম্ভব সুন্দর একটা লেখা হয়েছে। এর আগেও অনেকেরই অবিশ্বাসের জবানবন্দী পড়েছি, কিন্তু এতো চমৎকারভাবে, এতো অসাধারণভাবে কাউকে দৃশ্যকল্পগুলো ফুটিয়ে তুলতে দেখি নি।
বাংলা ভাষার উপর আপনার দখল ঈর্ষণীয়। এরকম সাবলীল, ঝরঝরে গতিশীল ভাষা কীভাবে আয়ত্ত্ব করলেন সেটাই ভাবছি।
@ফরিদ আহমেদ,
অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি এমনি বানান পারি না দেখে স্কুল কলেজে বাংলায় খালি গোল্লা পেতাম। বাংলায় টাইপের ভয়ে বাংলিশ এ লিখতাম। এখন অযাচিত কিছু ধর্মীয় ভীতির সাথে কখন যে বাংলা ভীতিও গেল বুঝতে পারলাম না। আসলে ভীতিগুলো এখনো পুরো যায় নি, যাই যাই করছে, আর বাংলা শব্দগুলো আসি আসি করছে।
@নির্মিতব্য,
আপনার লেখায় বললেন,
আর ফরিদ ভাই বললেন,
‘নয়-আস্তিক’ আর ‘নাস্তিক’ – এ দুইয়ের মাঝে কোন পার্থক্য করেন কি না এটা জানতে ইচ্ছে করছে।
@প্রতিফলন,
এটা মনে হয় টাইপো। নয়া নাস্তিক বলতে চেয়েছেন খুব সম্ভবত। আমি অন্তত সেটাই ধরেছি।
@ফরিদ আহমেদ,
হাঃ হাঃ না টাইপো না। ঠিক ৫ সেকেন্ড আগে প্রতিফলনকে উত্তর দিলাম। :))
@নির্মিতব্য,
ধূর!! ধরা খেয়েছি পুরো। খামোখাই আপনাকে স্বাগত জানালাম। আপনার পেটে এই রকম জিলাপির প্যাচ যদি আগে জানতাম। এর থেকে ফুয়াদকে স্বাগত সংগীত বাজিয়ে শোনালেও ভালো ছিলো। 🙁 ডেথনাইটতো ভবিষ্যতবাণী করেই দিয়েছে যে ফুয়াদ খুব শীঘ্রই দীনহীন থেকে দ্বীনহীন হয়ে যাবে । 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
হা হা হা, আমি আর একটু প্যাঁচাই, এইটা পড়েনঃ শান্তি
@কাজী রহমান,
আস্তিকতার থেকে নাস্তিকতার যাত্রা পথের দোটানা দ্বন্দ্বমুখরতা, বিবর্তনের নানা স্তর, অনিশ্চয়তার দোলাচল, এগুলো আমি আসলে বুঝি না। আমার আস্তিকতা খসে পড়েছিলো অনায়াসে, নিজের অজান্তে, একেবারে কিশোর বয়সে। এর জন্য কোনো মানসিক টানা পোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় নি আমাকে, গভীর কোনো দার্শনিক চিন্তার মধ্য দিয়ে রাত কাটাতে হয় নি, কিংবা পড়তে হয় নি বিজ্ঞান, দর্শন বা যুক্তিবাদের জ্ঞানগর্ভ কোনো বই। সাপ যেমন শীত শেষে পুরোনো খোলস ঝেড়ে ফেলে পরে নেয় নতুন খোলস, সেরকমই একদিন এক মিষ্টি ভোরে নিজের অজান্তেই আস্তিকতার খোলসটা খসে গিয়েছিলো আমার। সেই খসাটা হয়েছিলো খুব নীরবে, নিরালা নিভৃতে, কিন্তু দারুণ দৃঢ়ভাবে। হাতছানি দিয়ে ডেকে আনা নয়, অনিবার্য কোনো পরিণতি ছিলো সেটি।
@ফরিদ আহমেদ,
এজন্য কৃতিত্ব দেওয়া যাক, আপনার মা বাবা কিংবা যাদের কাছে থেকে সেই কিশোর বয়সটা পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। অথবা ঋণ স্বীকার করা যাক আপনার শক্তিশালী মানসিকতাকে আর নাহয় সেসময় আপনার আশপাশের সবার কাছে। ওরা সম্ভবত আপনাকে প্রভাবিত করে চায়নি সেভাবে, কি বলেন?
আমারা তো জানিই, বেশীর ভাগ সময়েই মা বাবা অথবা যাদের কাছে একটি মানুষ শিশুকাল কাটায়, তারাই সবচে বড় ঝামেলাটা পাকায়। না জেনে আর না বুঝেই শিশুটির ওপর চাপিয়ে দেয় তাদের ধর্মবিশ্বাসের আঁটি। শিশুটি সহজে আর সেই ভারী বোঝাটাকে ছুঁড়ে ফেলতে পারেনা।
@কাজী রহমান,
ঈশ্বরের মত স্বয়ম্ভূ আমি। নিজেকে নিজে গড়ে নিয়েছি। কারো কোনো প্রভাব ছিলো না আমার উপরে কখনোই। সুদূর বাল্যকালেও নয়। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
হূমম্, আসাধারন, মানে আর দশটা মানুষের মত না। আশা করি এ বিষয়ে আবার আলাদা করে লিখবেন এক সময়। সাধারনের জন্য।
আপাতত আপনাকে ঘাঁটাচ্ছি না, কারন মনে পড়ে গেল আপনার একটা খুব মন খারাপ করা লেখাঃ শৈশবে আর ফেরা যায় না
@ফরিদ আহমেদ,
এটা আমি আমার বন্ধুদের মাঝেও দেখেছি। যারা নিজে ১৫ বছর হবার পর ক্যাথেলিক খৃষ্টানিটি থেকে বের হয়ে এসেছে তারা বরং ধর্মীয় বেশী তর্ক করে, তাদের থেকে যারা নাস্তিক হিসেবে জন্মেছে। আমার খৃষ্টান বন্ধুরা কোনো মন্তব্যই করে না, কারন তাদের ধর্ম বর্ত্মানে কোনোভাবে স্ক্রুটিনাইজ হয় নাই। মুসলিম, বিগত মুসলিম সবাই বেশ আলোচনায় অংশ নেয়।এটা আমার ব্যক্তিগত পর্যালোচনা।
এই মুহুর্তে আমি তাদের সাথে বেশী মিল পাব যারা নিজের সাথে রীতিমত এই বিষয়ে যুদ্ধ করেছে, প্রবাসী নয়- তাই সামাজিক ভীতি আছে। কিন্তু যখন মাথায় প্রশ্ন আসবে পরবর্তী প্রজন্মকে কিভাবে ধর্ম (ধর্মীয় শিক্ষা না) শিখাব, বাংলা মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের সাবজেক্ট পড়বে না পড়বে না, মৃত্যুকে কিভাবে ব্যাখ্যা করব- তখন নাস্তিক পরিবারে বড় হওয়া বা, কিশোরকালে নাস্তিক হওয়া মানুষের সাহায্য লাগবে।
@ফরিদ আহমেদ,
যদি কিছু মনে না করেন একটি প্রশ্ন করি। আপনার বিশ্বাস তিরোহিত হবার খবর কি আপনার পরিবার জানতে পেরেছিলেন? তাঁদের কি প্রতিক্রিয়া ছিল এ ব্যাপারে? জিজ্ঞেস করছি এই কারণে যে, ছোট বেলা থেকেই আমি ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন করতাম মাকে। তিনি খুব রাগ করতেন। আমি অবিশ্বাসী হবার পর তাঁর দুঃখের অন্ত নেই। ধর্মপ্রাণ পিতামাতার সন্তান হয়েও আমি কাফের হয়ে গিয়েছি। তাঁর এবাদত আর কোন কাজে আসবেনা! আমি মাকে কোরানের অনুবাদ পড়িয়েছি। তার পরেও কোন ভাবান্তর নেই। আমার এক ডাক্তার ফুপা তাবলিগী। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। সব সময় আমার সাথে পড়াশোনার আলোচনা করতেন, আমাকে পড়াশোনায় উৎসাহ দিতেন। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ি তখন ফুপাকে একবার প্রশ্ন করেছিলাম,আল্লাকে কে সৃষ্টি করেছে। তিনি খুব মর্মাহত হয়েছিলেন এবং আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
@তামান্না ঝুমু,
মনে করার কিছু নেই। না জানাতে চাইলে নিশ্চুপ থাকবো, অথবা আমি-ই বলবো যে জানাতে চাচ্ছি না।
আমার বিশ্বাস, অবিশ্বাস, ভালোলাগা, মন্দলাগা, পছন্দ, অপছন্দ এগুলোর ক্ষেত্রে আমি খুবই পষ্ট, দ্বিধাহীন এবং উচ্চকণ্ঠ। কোনো ধরনের লুকোছাপা আমার পছন্দের নয়। সে কারণে আমি যে ধর্মে বিশ্বাস করি না, এটা তারা শুরু থেকেই জানতো।
আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি তারা হচ্ছে বাংলাদেশের হাজারো হুইন্না মুসলমান পরিবারের মত। জন্মসূত্রে মুসলমান, তাই দুই একটা সুরাটুরা জানে, মাঝে মাঝে সেগুলো দিয়ে নামাজ-টামাজ পড়ে, ঈদের দিন জামাতে যায়, এই টাইপের। ধর্মটা অনেকটা সামাজিকতার অংশ। পরিবারের মধ্যে কে নামাজ পড়লো না, কে পড়লো না, এগুলো নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমরা মুসলমান, এই পরিচয়েই খুশি তারা। আমার আম্মা সারাজীবন নামাজের সময় হলে চুপচাপ গিয়ে নিজে নামাজ পড়ে নিয়েছেন। আমাদের কাউকে যে নামাজ পড়তে বলতে হবে বা নামাজের জন্য চাপ দিতে হবে, এটা কোনোদিনই দেখি নি।
এই পরিবারে আমিই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ঘোষিত নাস্তিক। আমার নাস্তিক্য কথাবার্তা শুনে সামান্য একটু অবাক হওয়া ছাড়া খুব বেশি প্রতিক্রিয়া কারো মধ্যেই দেখি নি কখনো। তবে, একটা জিনিস করেছি আমি। তারা যেমন আমার উপর ধর্ম চাপাতে চায় নি, আমিও আমার ধর্মহীনতাকে তাদের উপর চাপানোর কোনো চেষ্টা করি নি। যে যেভাবে খুশি থাকে, সে সেভাবেই থাকুক না।
আমার সমস্যা হয়েছে বরং বিয়ের পরে। আন্না বড় হয়েছে খুবই ধর্মকর্ম করা একটা পরিবারে। সে নিজেও প্রচণ্ড ধার্মিক ছিলো। নামাজ না পড়া লোক মানেই একটু কেমন কেমন এই রকম মনোভাব তাদের সামান্য হলেও আছে। কিন্তু এরাও ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী লোকজন। আজ পর্যন্ত আমার বিষয়ে আমার সামনে বা অজ্ঞাতে কোনো ধরনের কথাই কেউ বলে নি। কিন্তু তারা আমাকে খারাপ ভাবতে পারে এই ভয়ে আন্না বহু চেষ্টা করেছে আমাকে ধর্মের পথে নিতে। বিয়ের প্রথম পাঁচ ছয় বছর গেছে অনুনয়, বিনয়, হুমকি, ধামকি, কান্নাকাটি, ইমোশোনাল ব্লাকমেইলিং করার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে। এর থেকে রক্ষা পেতেই শেষে ওর সাথে ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করতে হয়েছে আমাকে। কোরান খুলে দেখাতে হয়েছে সবকিছু। কিন্তু এই কাজগুলো খুব একটা সহজ ছিলো না। শুরুর দিকে দুই কানে আঙুল দিয়ে রাখতো, নয়তো চিৎকার করে বলতো যে, আমার মতো কাফেরের কোনো কথাই সে শুনবে না। মাঝে মাঝে জেহাদি জোশে কিল চড় থাপ্পড়ও দিতো। 🙁 রবার্ট ব্রুসের অসীম ধৈর্য নিয়ে লেগে থেকেছি আমি। এখন বিশ্বাসের সুরক্ষিত জগত থেকে বের হয়ে এসেছে সে। পা রেখেছে অবিশ্বাসের অনিশ্চিত জগতে। কিন্তু আমার মতো উচ্চকণ্ঠ ও নয়। পরিবারের কাছে তার এই বিবর্তন এবং পরিবর্তন স্বীকার করতে সংকুচিত সে। এখানেও অন্য লোকের কাছে ধর্মীয় অবিশ্বাসটা বলতে দ্বিধাগ্রস্ত, কুণ্ঠিত। আমরা আসলে অতোটা ধার্মিক নই, এই ধরনের অস্পষ্ট কথাবার্তা বলতে শুনেছি তাকে আমি। আমার শ্বশুর যখন ফোন করে বলে যে, মা নামাজটা ঠিকমত পড়ো, তখন ওর বেদনাটা দেখলে আমারই কষ্ট লাগে। না পারে বাবাকে কঠিন সত্যিটা বলতে, না পারে সেই উপদেশ শুনে নামাজ পড়তে। জটিল এক ধরনের অপরাধবোধে ভোগে সে। তাকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য আমাকে দায়ী করে সে।
ধর্ম ত্যাগে অথবা সেই অবিশ্বাসকে প্রকাশ্যে বয়ে নিয়ে বেড়াতে বাংলাদেশে বা বাইরে আসার পরেও যেহেতু আমার কখনই কোনো সমস্যা হয় নি, সে কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মুসলমানদের প্রতি আমার প্রচণ্ড রকমের একটা সফট কর্ণার রয়েছে। এদেরকে যখন কেউ শুধুমাত্র মুসলমান হবার অপরাধে মৌলবাদী বলতে চায়, মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় আমার। আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে বেশিরই ভাগই বিশ্বাসী মুসলমান। আমি অবিশ্বাসী দেখে তাঁদের কারোরই কোনো অসুবিধা হয় না আমার সাথে চলতে। মজার বিষয় হচ্ছে যে, এদের মধ্যে অনেকেই আবার মুক্তমনাও পড়ে। আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন আস্তিক (খাঁটি আস্তিক, ভুঁয়া না) বন্ধুর সবচেয়ে পছন্দের লেখক হচ্ছে্ন ভবঘুরে (বুঝুন ঠ্যালা!)। সেদিন মহসিনার আল্লাহকে চড় লাগানোর ঘটনা পড়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো। মুহাম্মদকে নিয়ে আমার রসালো সব আদিরসাত্মক রসিকতাকে তৃপ্তির সাথেই উপভোগ করে সে। আমার কাছ থেকে লিংক নিয়ে ইদানিং ফেইথফ্রিডমও পড়ছে নিয়মিত। এই লোক কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, নির্মিতব্যের মত বিবর্তনের নির্মাণ পথে নেই।
আমার পারিবারিক জীবনে ছোট্ট একটা পরীক্ষা করেছি আমি। অর্কর সাথে ধর্ম নিয়ে কোনো কথা বলি নি আমরা। না ভালো কথা, না মন্দ কথা, কোনোটাই নয়। একদিন সে তার মাকে এসে ঘোষণা দিয়েছে যে সে এথেইস্ট। ওর মাও মজা করে বলে যে, তুমি নিশ্চয়ই তোমার আব্বুর কাছ থেকে এটা শিখেছো। সে গর্বের সাথে উত্তর দিয়েছে যে, না, আমি নিজের সিদ্ধান্তে এটা হয়েছি। আব্বু আমার সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই করে নি।
আমার ধারণা, মানুষ ইনবিল্ট ধর্মে অবিশ্বাস নিয়ে জন্মে। সমাজ তাকে জোর করে ধর্ম শেখায়। ধর্মের কারণে নানাবিধ সুযোগসুবিধা পায়। সে কারণেই মানুষ ধর্মকর্ম করে (বিপ্লব এই বিষয়টা বহুদিন ধরে বলে আসছে, কিন্তু আর কেই এটাতে কর্ণপাত করে না)। কিন্তু এর বাইরে, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই কোথাও না কোথাও খুব সংগোপনে একজন অবিশ্বাসী ঘুমিয়ে থাকে।
@ফরিদ আহমেদ,
[img]http://i1180.photobucket.com/albums/x418/Prithvi_Shams/Miscellaneous/shockedface.jpg[/img]
কিশোর কবি, আগে বড় হয়ে জীবনানন্দ হন, তখন দেখবেন কোনদিক দিয়ে ট্রাম এসে চাপা দিয়ে যাবে টেরও পাবেন না।
@ফরিদ আহমেদ,
আমার বরং এখানেই সমস্যা হয় নি। অনেকের আবার আপনার থেকে বেশী সমস্যা হয়। অনেকে আবার এখনো বিয়েই করেন নি, যেমন আমাদের মহসিনা আপু। তারা আবার আপনার কাছে আসবে, আপনি কিভাবে আপনার সমস্যা সমাধান করেছেন তা জানতে। ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
@প্রতিফলন,
আপনি ঠিক ধরেছেন। ফরিদ ভাই-এর জন্য শব্দটা বলা কোনো ব্যাপার না। আমিও পারি। নাস্তিক নাস্তিক নাস্তিক। কিন্তু নিজেকে আস্তিক থেকে সরিয়ে অন্য একটা শব্দ দিয়ে বলতে কেমন জানি লাগছে। নিজেকে আমি জোর করতে চাই না। আমি এখনো রেডি না নিজেকে নাস্তিক বলতে। যদিও নাস্তিকতার যে শ্রেনীবিভাগ আছে অ্যাগন্সটিক, স্কেপ্টিক ইত্যাদি এগুলো মাথায় রেখে নয়-আস্তিক বলি নি, আমি আসলেও নিজেকে নাস্তিক হিসেবে বলতে পারছি না। যখন দেখব পারছি, একটা খালি মাঠে গিয়ে চিৎকার করে বলব, আমি…
ধন্যবাদ আমার শাব্দিক দোটানাটাও দেখার জন্য।
@নির্মিতব্য,
সত্যি কথা বলতে, আমার নিজের মধ্যেও ঠিক একই ধরনের অনুভূতি কাজ করে (যদিও আমি আস্তিক ছিলামনা কোন কালেই)। আর এ কারণেই “নয়-আস্তিক” শব্দটা বিশেষভাবে চোখে পড়েছে। নিজেকে “আস্তিক নই” বলতে যতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করি, “নাস্তিক” বলতে ততটা করি না। তখন কেবলই মনে হয় – নাস্তিক বলে পরিচয় দিতে যতখানি জ্ঞান থাকা লাগে আমার ভান্ডারে ততখানি নেই।
আমার পারিবারিক ধর্মে গোমাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। তবে, কলেজে থাকাকালে আমি তা খাওয়া শুরু করি নিজের বিশ্বাসের সাথে কাজের মিল বজায় রাখতে। মজার কথা হল – তখন গোমাংস খাওয়ার সময় এক ধরনের “নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ” বোধ করতাম। আর সেই সাথে এই কথা বাবা-মা জানলে কষ্ট পাবে জেনে খারাপ লাগতো। এরপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখন আর গোমাংসকে সাধারণ খাবারের বাইরে নিষিদ্ধ জিনিস বলে মনে হয় না। বাবা-মা কষ্ট পাবে – এই ব্যাপারটা যদিও এখনো কিছুটা কাজ করে। এই সেদিনতো কুকুরও খেয়ে আসলুম। বেশ সুস্বাদু!
@প্রতিফলন,
লেখক যেটা বুঝাতে চেয়েছেন সেটা তিনি নিশ্চয় বলবেন। কিন্তু খুব ইন্টারেস্টিং একটা পয়েন্ট তুলে ধরেছেন আপনি। আমি ব্যক্তিগত একটা বিশ্লেষণ দিচ্ছি।
আমার মনে হয়, ‘নয়-আস্তিক’ আর ‘নাস্তিক’ শব্দ দুইটার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। ‘নন-নেগেটিভ’ মানেই যেরকম ‘পজিটিভ’ নয়, অর্থাৎ ‘শূণ্য’ বা ‘নিউট্রাল’ বলেও একটা ব্যাপার আছে। এখানেও জিনিসটাকে সেভাবে দেখা যেতে পারে।
লেখকের লেখা পড়ে বুঝা যাচ্ছে, তিনি একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ-সময় চেতন বা অবচেতন মনে তিনি নিউট্রাল অবস্থায় থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সেখান থেকে হয়তো তিনি ‘নয়-আস্তিক’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন। কিছুটা অ্যাগনস্টিসিজম্ বলা যেতে পারে। 🙂
@মইনুল রাজু,
এক্কেবারে ঠিক এই ভাবনাটাই ভাবি আমি নয়-আস্তিক আর নাস্তিকের মাঝে। তবে অনেকেই (কিংবা কেউ কেউ) সেটা করেন না বলে পরিষ্কার হতে চেয়েছিলাম। 🙂
@মইনুল রাজু,
অ্যাগনস্টিসিজম্, কিনা জানি না। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এটা খুব ঠিক। আমি এমনিতে খুব শুকরিয়া আদায় কারী মানুষ। ইনশাল্লাহ, মাশাল্লাহ বলতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ওটা আমি বরাবর সামাজিকতার জন্য বলে এসেছি। যেমন আমি হাঁচি দিলে ব্লেস ইউ বলি। কিন্তু সোবহান্নাল্লা, ইন্নানিল্লাহ বা ও খোদা রক্ষা কর এই টাইপ না বলার চেষ্টা করছি। নিজের আর খোদার মাঝে কনভার্সেশন বন্ধ। একটা ভীতি থেকে ফোনে কথা শেষে আল্লাহ হাফেজ বলছি, কারণ এটা আমি সবসময় বলি। ভাবি এটা না বললে মা বাবা বলবে কিরে বলিস নাই কেন, কিন্তু রিয়ালিটিতে হয়তো কিছুই হবে না। এই সবের মাঝে নাস্তিকতা শব্দটা হঠাৎ গুরূ হয়ে উঠেছে। যখন আরেকটু স্থির হবে সব, তখন দেখব কোন ইজমে আমি। এই মুহুর্তে আমি আস্তিক নই। হবার উপায়ও নেই।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। (D)