আনন্দ। খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল আমার। এমন করে আর কাউকে অনুভব করিনি আগে। দুজনের বন্ধুত্ব ছিল অন্য রকম কিছু। কি? আমি তা বলতে পারব না। দেখতে ও খুবই সুন্দর ছিল। মুখের দিকে তাকালেই মায়া লাগে- এমন চেহারা। আমার সঙ্গে ওর কখনো ঝগড়া হয়নি। শুধু মাঝে মাঝে খিটিমিটি লাগত। কে বেশি লম্বা- এই নিয়ে। ওর দাবি ছিল ও বেশি লম্বা। আমি তা মানতে চাইতাম না। আমাদের দুজনের পার্থক্য ছিল এখানেই। আমি কখনো ছোট হতে চাইতাম না। আর ও চাইতো বড় হতে। ওর এই বড় হতে চাওয়ার ইতিহাসটা অনেক লম্বা। ওর মার মুখে এ নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। ওর যখন ১০ বছর বয়স তখন একবার দোকানে গিয়েছিল লকেট বানাতে। সঙ্গে ওর মাও ছিল। দোকানদার যখন ওর বয়স জিজ্ঞেস করল, ও বলল ১৬ বছর। ওর মা অবাক হয়ে গেল। ওকে জিজ্ঞেস করল, তুমি বয়স বাড়িয়ে বললে কেন? ও বলল, ১০ বছর বললে আমাকে অনেক ছোট ভাববে না?
একটু বয়স হওয়ার পর মাকে প্রায়ই বলত, মা আমাকে দাড়ি রাখলে বেশি ভালো লাগে নাকি শেভ করলে বেশি ভালো লাগে? ওর মা বলত, বাবা তোমাকে সব রকমই ভালো লাগে। ও বলত, আমি দাড়ি রাখব, দাড়িতে একটু Aged (বয়স্ক) লাগে। এবার ৫ সেপ্টেম্বর আনন্দর জন্মদিন নীরবে পার হয়েছে আবারও আসবে। কিন্তু ও আর বড় হতে পারবে না। শুধু ২৩ এপ্রিল এলে বাড়বে ওর না থাকার সময়।
ছোটবেলা থেকেই আনন্দ অনেক বেশি স্পর্শকাতর (Sensitive) ছিল। ওর যখন দুই বছর বয়স তখন বাসায় ভিসিআরে মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত … সিনেমা দেখেছিল। এরপর থেকে সারাদিন বসে বসে ওই সিনেমাটি দেখত আর কাঁদতো। সে কি কান্না তার…। ও যখন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ে তখন মিথিলা নামে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতো। মিথিলার বাবা ছিল পুলিশের ওসি। সে আনন্দকে মিথিলার সঙ্গে মেলামেশায় বাধা দেয়। আনন্দর কান্না দেখে কে। সারাদিন কাঁদতো, হাত পা কামড়াতো। দেয়ালে মাথা ঠুকতো। একেবারে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল তখন। শেষমেশ ওকে বাঁচানোটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল। বাধ্য হয়ে ওকে পাঠানো হলো মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে। এরকম স্পর্শকাতর ছিল আনন্দ।
মা বাবার সঙ্গে আনন্দর সম্পর্ক ছিল একেবারে আলাদা। আমাদের সময়ে এরকম কোনো উদাহরণ পাওয়া দুষ্কর। বাবা মা দুজনে ছিল ওর বন্ধুর চেয়েও বেশি। মাকে ডাকতো নাম ধরে, তুমি করে খুব আদুরে স্বরে কথা বলতো মায়ের সাথে। ঘরে ফিরে মাকে দেখলেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে চুমু খেতো। আনন্দর মা কখনো ওর ঘুম ভাঙাতো না। উনি বলেন, আমার ছেলেরা ঘুমিয়ে থাকলে আমার কি যে শান্তি লাগে, কাউকে আমি তা বোঝাতে পারব না। ঘুম ভাঙলে আনন্দ অন্তত এক ঘন্টা ধরে আড়মোড়া ভাঙতো। আমি মাঝে মাঝে মারতাম। তবু ও উঠতে চাইতো না। মা ওকে কখনো বাসা থেকে গাড়ি নিতে দিতো না। ওর মা ভয় পেত। পত্র পত্রিকায় বন্ধুবেশি শয়তানদের নানা গল্প থেকে তার এ ভয়ের জন্ম। উনি বলতেন, গাড়ি নিয়ে গেলে যদি কোনো বন্ধু বান্ধব গাড়ির লোভে ওকে মেরে ফেলে।
আনন্দ গাড়ি নিয়ে বের হয়নি। ২৩ এপ্রিল সকাল থেকে মা ওর জন্য রান্না করছিল। আগের দিন বিরিয়ানি খেতে চেয়েছিল আনন্দ। মা তাই নিয়ে ব্যস্ত ছিল সকাল থেকে। সকাল সাড়ে দশটার দিকে আমাদের আরেক বন্ধু ইরফানকে ও একটা বার্তা (sms) পাঠায়। তারপর ওর গাড়ি নিয়ে বের হবার সম্ভাবনা চিরদিনের মতো শেষ হয়ে গেছে। শেষ হয়েছে ঘুম ভাঙার সম্ভাবনাও। শত মারলেও আনন্দ আর আড়মোড়া ভেঙে উঠবে না।
আনন্দ আমাকে বলত, ‘তোর লেখার হাত অসাধারণ। এই ক্ষমতা পেলে আমি আর দুনিয়ার অন্য কোনো কাজ করতাম না।’ অথচ আজ এই লেখাটার এতটুকু লিখে আমি অবাক হয়ে দেখছি, যে বন্ধুর সঙ্গে আমার প্রেমের চেয়েও গভীর সম্পর্ক, যার জন্য আমি অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত, সেই প্রাণপ্রিয় বন্ধুর জন্য এ আমি কী লিখলাম। এ তো অতীব দায়সারা গোছের অতি আনুষ্ঠানিক একটি লেখা। হায়! দুর্ভাগ্য আমার…
আনন্দ ছিল আমাদের সময়ের নায়কদের একজন। দেশে যুদ্ধ থাকলে যে হতো মহাবীর, দেশে জ্ঞানচর্চ্চার যুগ চললে যে হতো মহাপণ্ডিত। আজ এই অস্থিরতার যুগে, অনুৎপাদনশীলতার কালে সে হয়েছে ছন্নছাড়া এক যাযাবর। যে কারো দিকে ফিরে তাকায়নি। সব মায়া পাশ কাটিয়ে পা বাড়িয়েছে অজানার দিকে। আমি বুঝেছি বন্ধু, তোর জন্য নৈবেদ্য সাজানোর যোগ্যতা এখনো আমার হয়নি। আমি অপেক্ষা করছি। ‘আমাদের সময়ের নায়ক’ একদিন আমি ঠিকই লিখব। এখনো বেশি কিছু করতে পারিনি। তবে শুরুটা লিখে ফেলেছি।
‘‘তোর কাছে আমার একটা নালিশ আছে। তুই মারা যাবার পর শুনেছি তোর বাবা তোর নামে মিলাদ দিয়েছে। এটা আমি সহ্য করতে পারিনি। নিজে বাধাও দিতে পারিনি। তাই তোর কাছে আমার এই নালিশ…’’
[আনন্দ মুক্তমনায় ঈশ্বরহীন নামে লিখত।]
ছেলেটার জন্য খুব মন খারাপ হচ্ছে আবার।
লেখাটা পড়েই ঈশ্বরহীন এর পোস্টগুলোতে চোখ বুলালাম! একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এল; এই অসম্ভব যুক্তিপূর্ণ ও প্রথাবিরোধী লেখাগুলোর জন্মদাতা আর নেই, এ কথা মানা সত্যি কঠিন!
সম্পূর্ণ একমত! তবে সেই পুরনো প্রশ্ন আবারও ফিরে আসে: কেন ভাল আর মেধাবী লোকগুলোই আগে ঝরে যায়?
@কাজি মামুন, আমিও খুঁজছি এই প্রশ্নের উত্তর।
আনন্দের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলী।
:candle:
আনন্দের সর্বশেষ পোস্টটির লেখক কি আপনি?
@সৈকত চৌধুরী, হ্যাঁ
@আনিস রায়হান,
আমি সৈকতের প্রশ্ন এবং আপনার জবাব শুনে রীতিমত বিস্মিত এবং কিছুটা কনফিউজড।
আপনি কি আনন্দকে নিয়ে সর্বশেষ পোস্টের কথা বলছেন, নাকি আনন্দের ব্লগের সর্বশেষ পোস্ট – “কৃত্রিম সুনামি ভূমিকম্প- স্রষ্টা আমেরিকা!”-র কথা বলছেন? দ্বিতীয়টি হলে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। কেন আপনি আনন্দের একাউন্ট থেকে নিজের লেখা পোস্ট করবেন? ঈশ্বরহীন নামে ঐ পোস্টে মন্তব্যগুলো-ও কি আপনার? এ বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। ঈশ্বর হীনের ঐ লেখাটা তার পূর্ববর্তী লেখাগুলোর সাথে কন্ট্রাডিক্ট করে খুব ভালভাবেই – এমনকি লেখাটিকে ঘিরে কন্সপিরেসি থিওরী প্রচার করারও অভিযোগ আছে। আপনি কেন নিজের নামে লেখাটা মুক্তমনায় পাঠাননি, কেন আপনি আনন্দের ব্লগ থেকে পোস্টটি দিয়েছিলেন- অনুগ্রহ করে জানাবেন।
লেখাটির সবকিছুই যদি আপনার হয় তাহলে খুবই বিপজ্জনক। একজন মৃত মানুষের সর্বশেষ লেখাটির সাথে এমন কিছু ব্যাপার ট্যাগ হয়য়ে আছে, যা হয়তো নিজেও সমর্থন করতেন না। আপনি তার বন্ধু হতে পারেন, কিন্তু আপনার কন্সপিরেসি তত্ত্বের দায়িত্ব উনার ঘারে তো যেতে পারে না, তাই না?
@অভিজিৎ,
শিট!! লেখাটায় লেখকের নাম রয়েছে আনিস রায়হানের। মন্তব্য এসেছে, ডিফেন্ড করা হয়েছে ঈশ্বরহীনের নামে। আনিস রায়হানের লেখা ঈশ্বরহীনের নামে পোস্ট করা হলো কেনো? তিনিতো মডারেটরদের কাছেই তাঁর লেখা পাঠাতে পারতেন? ঈশ্বরহীনকে ব্যবহার করে আনিস রায়হান লিখেছেনঃ
আনিস রায়হানের তখনো কোনো একাউন্ট তৈরি করা হয় নি। মুক্তমনা ওনার ঘর ছিলো না সে সময়ে। তিনি পরিষ্কারভাবে ইশ্বরহীনের রোল প্লে করেছেন। এটা ভয়ংকর রকমের একটা প্রতারণা। ঈশ্বরহীন কি জানতেন এই ঘটনা?
@ফরিদ আহমেদ,
আমি এখনই প্রতারণাকেন্দ্রিক কোন উপসংহারে পৌঁছুতে চাই না। দেখা যাক আনিস সাহেব কি বলেন।
এমন হতেই পারে হয়তো ঈশ্বরহীন নিজেই বন্ধুর লেখাটা ব্লগে পোস্ট করেছিলেন আলোচনার জন্য। কিন্তু আমি যতদূর মনে পড়ছে – লেখার লেখক হিসেবে ‘আনিস রায়হান’ নামটা ঈশ্বরহীনের পোস্ট করা লেখার সময় দেখিনি। আমার স্মৃতি বরাবরই দুর্বল। আপনি দেখেছিলেন কী? সৈকত তুমি?
যদি তিনি নিজেই বন্ধুর লেখা তার ব্লগে পোস্ট করে থাকেন, এবং এ নিয়ে আলোচনা করেন, তবে এ বিষয়ে তাকে ছাড় দেয়া যায়। কিন্তু আমার খুবই অবাক লাগছে এই ভেবে যে, বন্ধুর যে লেখাটির আগাপাশতলা অন্য লেখাগুলোর সাথে কন্ট্রাডিক্ট করে, এরকম লেখা তিনি কেন ব্লগে পোস্ট করবেন?
লেখাটির মন্তব্যগুলো ঈশ্বরহীনের নাকি আনিস সাহেবের সেটা জানাটা জরুরী।
@অভিজিৎ,
আমারও মনে হচ্ছে ‘আনিস রায়হান’ নামটা ঐ লেখাটা পড়ার সময় ছিল না বা আমি খেয়াল করি নি। এটা সম্ভব হলে চেক করে দেখেন।
আমার একটা অভিমান ছিল ‘ঈশ্বরহীন’ এর উপর এ লেখাটা পোস্ট করায় এবং এজন্য আমি পরে দুঃখও পেয়েছি। ‘আনিস রায়হান’ কাজটি ভাল করেন নি। তিনি যেহেতু লেখালেখির সাথে জড়িত আছেন তাই ফালতু কন্সপিরেসি থিওরি আর গ্রহণযোগ্য লেখার মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে পারার কথা ছিল।
@ফরিদ আহমেদ, এত দ্রুত আপনার এই সিদ্ধান্তে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। স্ক্রীনশটটা ভালো করে দেখেন।
@আনিস রায়হান,
দ্রুত গেলেও সঠিক সিদ্ধান্তে গিয়েছি বলেই আমার ধারণা। আপনার স্ক্রিনশট দেখলাম। ওর থেকে কি কিছু প্রমাণিত হয় আপনার স্বপক্ষে? এ বিষয়ে একটু পরে আসছি।
লেখাটা ঈশ্বরহীনের একাউন্ট থেকে পোস্ট হয়েছে। তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি এটাকে ডিফেন্ড করার দুর্বল চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু একবারও বলে্ন নি যে, লেখাটা আমার নয়, আমার বন্ধুর। কিংবা আমি এই লেখার সহলেখক। আরেকজন আছেন মূল লেখক তিনি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন, একটু সবুর করুন। কাজেই, আমার সিদ্ধান্ত হচ্ছে হয় আপনি, না হয় ঈশ্বরহীন, যে কোনো একজন পাঠকদের সাথে এই প্রতারণাটা করেছেন। এখন আপনার বিবেচ্য। দায়িত্বটা একজন মৃত মানুষের ঘাড়ে চাপাবেন, নাকি নিজের ঘাড়ে নেবেন?
আপনি অভিকে লিখেছেনঃ
আপনার দেওয়া স্ক্রিনশটে এ বিষয়ে আসলে কিছুই নেই। ওখানে মাত্র তিনটা লাইন আছে। সুবিধার জন্য আমি তুলে দিচ্ছি এখানে।
মার্চের সতেরো তারিখে আপনি লিখেছেনঃ
kire amar lekhata koi? onubad korchis? na dile kintu ami morchi.
ওই একই তারিখে ঈশ্বরহীন লিখেছেনঃ
videota dekhechis ? ota translate kore dibo?
এরপর মার্চের ১৯ তারিখে আপনি লিখেছেনঃ
kire val, tuito ekhono kichu pathali na
ঈশ্বরহীন লেখাটা মুক্তমনায় প্রকাশ করে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে, যেগুলোর উত্তর আপনিও জানেন না, এই প্রসঙ্গগুলো কোথায়? আমি কি চোখে কম দেখছি?
@ফরিদ আহমেদ, আসলে অভিজিৎ দা’কে আমি যে কথাগুলো বলেছি তার হুবহু প্রমাণ দেয়ার মত আমার কাছে কিছু নেই। আমি স্ক্রীণশটে দেখিয়েছি, আনন্দ হার্পের বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত ছিল। আপনি যে তিন লাইন দেখেছেন, তার ওপরে আরেক লাইন আছে যাতে ও আমাকে হার্প সম্পর্কিত তথ্য দিচ্ছে। আমি শুধু এটুকুই দেখাতে চেয়েছি।
আপনার এই সিদ্ধান্তটাই আমার জন্য চূড়ান্ত নয়। আপনার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার একটা সিদ্ধান্ত আছে, ”এটা একটা বাজে সিদ্ধান্ত।”
@আনিস রায়হান,
অবশ্যই নয়। আমি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নই।
যে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আপনি সংরক্ষণ করেন। আমি কোনো আপত্তি দেখি না।
এটাই হচ্ছে আসল কথা। আপনার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। অথচ এই অপ্রমাণের উপর ভিত্তি করেই আগের মন্তব্যে আপনি আমার দ্রুত সিদ্ধান্তে যাওয়াটা ঠিক হয় নি বলেছেন। আপনার দেওয়া স্ক্রিনশটটা আমাকে ভালো করে দেখতে বলেছেন।
@ফরিদ আহমেদ,
হার্প নিয়ে আর কিছু বলতে চাইলে আনন্দর হার্প পোস্টে দিন। অথবা আপনি একটি পোস্ট দিন। এই স্মৃতিচারণামূলক পোস্টটির পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
আপনি যে আমাকে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করছেন, তা কোন প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে? আপনি নিছক অনুমান আর আপনার মনোজাগতিক সঙ্কট দ্বারা চালিত হচ্ছেন। আনন্দ অন্যের একটা লেখা শেয়ার করেছে, তাতে লেখকের নামও দেয়া আছে। আপনি তা খেয়াল করেন নাই। আপনকে কেন খেয়াল করানো হয় নাই তাকে আপনি বানিয়ে দিলেন প্রতারণা। এরকম একটা ডিজিসের কথা শুনেছিলাম, অনেকে নিজের জীবনের করা অপরাধগুলোর দংশন থেকে নিজের বিবেককে মুক্ত করতে অন্য সবাইকে অপরাধী প্রমাণের চেষ্টা করেন। সেই লেজ হারানো শিয়ালের মতো।
যাই হোক, এমন একজনের বিষয়ে আলাপ করছেন যে, আমি এ নিয়ে বেশিক্ষণ ভাবতে পারি না। তাই আপনার অনুমান প্রতিষ্ঠা তত্ত্ব নিয়ে মুখটা খোলাসা করতে পারছি না।
মডুপ্যানেলের কাছে অনুরোধ, হার্প পোস্ট করার সময় আনন্দ খুব সম্ভবত দিল্লিতে ছিল। পোস্টকালীন আইপি চেক করে লেজ কাটা শেয়ালের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করুন।
@আনিস রায়হান,
উপদেশ অন্য জায়গায় খয়রাত করুন ভ্রাতঃ। এখানে আমার আগেই সৈকত এই প্রসঙ্গ তুলেছে, অভি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। তাঁদের দিয়েই পরিবেশ নষ্ট করার সেন্টিলেন্টাল নাকি কান্না শুরু করুন না আগে।
আমি নিছক অনুমানের উপর দিয়ে যাই নি। ব্লগে কীভাবে লেখা প্রকাশ করা হয়, সেটা আনন্দ জানতো আর তার জিগেরি দোস্ত হয়েও আপনি জানেন না এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হয়? আপনার লেখা আপনি কেনো মডারেটরদের কাছে পাঠান নি? আনন্দ কেনো পোস্ট করলো আপনার লেখা? আপনার নাম আছে দেখেছি আমি। কিন্তু এই নাম আগে ছিলো কী ছিলো না, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে অভি এবং সৈকত দুজনেই। আনন্দ পুরো পোস্টের কোথাও কিংবা মন্তব্যেও আপনার প্রসঙ্গ তোলে নি। একবারও বলে নি যে এই লেখাটা শেয়ার করা। সে এমনভাবে লেখাটাকে ডিফেন্ড করেছেন যেনো ওটা তাঁর নিজেরই লেখা। নিজের হলে সহলেখক হিসাবে তাঁর নাম নেই কেনো? কেনো শুধু আপনার নাম?
আমি মনোজাগতিক সংকট দিয়ে চালিত হচ্ছি কি না, এই কষ্টকল্পনা না করে, আমার উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েন। আগের মত স্কান করে আলতু ফালতু কিছু দিয়েন না বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে। চাপ খেয়ে শেষে আবার স্বীকার করতে হবে যে, আসলে আপনার কাছে কোনো প্রমাণই নেই।
লেজ যে কোন শিয়ালের খোয়া গেছে, সেতো আপনার অতি আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার দেখেই বুঝতে পারছি ভাইজান। নীলের পাত্রেও চুব টুব খেয়েছেন কি না কে জানে?
@ফরিদ আহমেদ,
একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এটা আবার কেমন ক্যচাল শুরু হলো।
দুঃখিত। থেমে যাচ্ছি আমি। আশা করবো যে আনিস রায়হানও থামবেন।
@অভিজিৎ, হার্প নিয়ে আমি যা বুঝেছি, তাই আনন্দর সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। আনন্দ আমার সঙ্গে একমত হয়েছিল। হার্পের বিষয়টা নিয়ে আমি পত্রিকায় লিখেছিলাম। আরো কয়েকজনের সাথে সাথে আনন্দও তখন ওই লেখাটা তৈরিতে সাহায্য করেছিল। ও অনেকগুলো ইংরেজি লেখা অনুবাদ করে দিয়েছিল। লেখাটা পত্রিকায় ছাপা হলে সেখানে ক্রেডিটও দেয়া হয়েছিল। আমরা হার্প নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যাইনি। সম্ভাবনার কথাগুলো বলেছি। আমার তখন মুক্তমনায় কোনো আইডি ছিল না। আনন্দ নিজেই স্বেচ্ছায় লেখাটি এখানে শেয়ার করেছিল। মুক্তমনায় আমি আইডি করি আনন্দ মারা যাবার পর। আনন্দ আমাকে বলেছিল লেখাটি মুক্তমনায় প্রকাশ করে সে অনেকগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। আমি তখন তাকে বলেছিলাম, অনেক প্রশ্নের উত্তর আমিও জানি না। এই স্ক্রীন শটটা দেখুন
[img]http://a8.sphotos.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-ash4/409452_332804803405724_100000286217318_1302625_909180947_n.jpg[/img]
@আনিস রায়হান,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ভাল থাকুন। আপনার বন্ধুর স্মৃতি আমাদের জন্যও অনেক আবেগের উৎস। কিছু মনে করবেন না, উপরের অযাচিত প্রশ্নের জন্য। আমরা সবাই বিভিন্নভাবে নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। এই প্রক্রিয়া বহমান থাকুক।
ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও আমরা ঋণী। সৌদি আরবে শ্রমিকদের শিরোচ্ছেদের ঘটনার পর আপনি যেভাবে সবাইকে নিয়ে সমাবেশ করছিলেন, প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন, এ নিয়ে মুক্তমনায় লেখা দিয়েছেন, সেজন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ আপনাকেও। আসলে আমি নিজেও লজ্জিত অনেক কিছু করতে পারি না বলে। আমি খুব তাড়না অনুভব করি, আনন্দকে নিয় লেখার। কিন্তু পারি না, লিখতে গেলেই কলম থেমে যায়। আমি আর আনন্দ, দুজনেই স্কুল বয়স থেকে নাস্তিক। আমরা কোন জায়গায় গণেশ দুধ খাচ্ছে তার প্রতারণা ধরতে দৌড়ে চলে গেছি। কোথায় দুর্গা রাতে হাঁটে সেই মন্দিরের আশে পাশে একসাথে অনেক ঘুরেছি। কোন বালক শিকড় দিয়ে রোগ সারায় তার ইন্টারভিউ নিতে গেছি। অনেক কিছু করেছি। একসাথ অনেক জায়গায় কানমলাও খেয়েছি। আমার ঝোঁক ছিল প্রধাণত মার্কসীয় রাজনীতির দিকে, পরে নাস্তিকতা। আনন্দর ছিল উলটো। ওর ছিলো আগে নাস্তিকতা, পরে মার্কসবাদ। আমি পড়ালেখা ছেড়ে বিপ্লব করত গ্রামে গেছি। আনন্দ ছুটেছে ভারতে প্রবীর ঘোষের কাছে। আবার এক জায়গায় এসেছি। একসাথে দুজনে অনেক কিছু করেছি। দল বানিয়েছি, দলে যোগ দিয়েছি, দল ছেড়েছি। কেন যে এসব লিখতে পারি না, জানি না।
শুধু এই লিখতে না পারা নয়, যে স্বপ্ন আমরা দেখতাম তারও তো কিছু করতে পারছি না। এর চেয়ে কষ্ট আর কিছুত নেই। কিভাবে যে বেঁচে আছি…
@আনিস রায়হান,
আপনারা এত কিছু করেছেন এখন আপনার কাজের ভার আরো বেশি। দ্বিতীয় কোন আনিস রায়হানকে যেন দ্বিতীয় কোন আনন্দকে নিয়ে এমন হ্রদয়ভারাক্রান্ত কথা সমস্ত শক্তি দিয়ে লিখার চেষ্টা করতে না হয়। আপনি কিছু একটা করুন, কোনপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা লাগলে তা দেবার মানুষরা দেখবেন আশেপাশেই আছে।
আনন্দ আমাদের এবং পৃথিবীকে সে হতে বঞ্ছিত করে গেল। ভীষণ ভীষণ হতাশাজনক। আমি আবারো বলছি আমাদের দেশের হতাশাগ্রস্ত তরুন তরুণীদের আত্মহত্যা হতে সরিয়ে আনার জন্য কোন প্রকার সংস্থা অত বেশি নেই। এমন অনেক আনন্দ আছে যাকে ওই পথ হতে ফিরিয়ে আনা আপনার দায়িত্বের মাঝে পড়ে।
যা বলতে চেয়েছি তা আদৌ বলতে পেরেছি কিনা জানিনা। আশা করি বুঝে নেবেন।
শেষ পর্যন্ত আনন্দকে নিয়ে যে পোস্ট দিলেন, সেজন্য অনেক ধন্যবাদ। ঈশ্বরহীন আনন্দ বেঁচে রইবেন আমাদের মধ্যে প্রেরণার উৎস হয়ে।
প্রতিটি মৃত্যুই আমাদেরকে বেদনা দেয় যদিও মৃত্যুটা জন্মের মতই অতি সাধারন একটা ঘটনা। মুক্তমনা এমন একজনকে হারাল যিনি সত্যিই মুক্ত মনা ছিলেন। এটা আমাদের জন্য এক বড় আঘাত।
কিন্তু কিভাবে তিনি মারা গেলেন তা কিন্তু পরিস্কার হলো না। একটু পরিস্কার করা যাবে কি ? আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম এটা গল্প, পরে দেখি তা নয়।
@ভবঘুরে,
এখানে দেখতে পারেন।
@ভবঘুরে, আমাদের (আমার ও আনন্দর) আরেক বড় ভাই মুঈদ সুমন, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন এপ্রিলের এক তারিখ। আনন্দর ওপর এই ঘটনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। আনন্দ মারা যায় শুক্রবার। মঙ্গলবার ওর সঙ্গে শাহবাগে আমার দেখা হয়। সেদিন ও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, মরে গেলে লাশ কিভাবে দান করা যায়। এই নিয়ে ওর সাথে সেদিন সিরিয়াস আলাপ হয়েছিল। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি। ও আর আমি সেদিন বাংলাদশে একটা ছোট পরিসরের নাস্তিক্যবাদী পাঠশালার ব্যাপারে আলাপও করেছিলাম। কাজের অনেক পরিকল্পনাও হয়েছিল। ঘুণাক্ষরেও ও আমাকে কিছু টের পেতে দেয়নি।
অবশ্য এর অনেকদিন আগে ওর ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেখেছিলাম, মৃত্যু সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। আমি তখন এই নিয়ে ওকে জেরা করেছিলাম। ও কতক্ষণ যুক্তি দিল। তারপর এই আলাপ অন্য কোনো দিকে মোড় নিয়েছিল। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি ও এরকম সিদ্ধান্ত নিবে। ওর মতো প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর একটা ছেলে এভাবে চলে যাবে এটা অকে যারা দেখেছে কোনোদিন বিশ্বাস করতে পারবে না।
এই রকম অনাকাংখিত মৃত্যু সবার জন্য বড় বেদনা দায়ক।