মোহাম্মদের নবুয়ত্ব দাবীর মূল ভিত্তি ইহুদি ও খৃষ্টাণ ধর্ম। তাঁর বক্তব্য- মূসা নবীর তোরাতের পর ঈসা নবীর আগমন ঘটে ও তিনি তাঁর ইঞ্জিল কিতাবের মাধ্যমে তোরাতের শিক্ষাকে পরিপূর্ন করেন। পরিশেষে ইঞ্জিল কিতাবের অসম্পূর্ণ শিক্ষা সম্পূর্ণ করার জন্য মোহাম্মদ এর আগমন ঘটে নাট্য মঞ্চে ও আল্লাহর কাছ থেকে কোরান আমদানী করেন এবং বলে দেন- অত:পর আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না, তার প্রবর্তিত ইসলাম ধর্মই শেষ ধর্ম। যেহেতু ইহুদি ও খৃষ্টান ধর্মের ধারাবাহিকতায় ইসলাম ধর্ম এসেছে তাই কোরানের মধ্যে তৌরাত ও ইঞ্জিল শরিফের অনেক উল্লেখ দেখা যায়। বলা বাহুল্য এসব উল্লেখের একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো প্রমান করা যে কোরান হলো পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সর্বশেষ সংস্করণ। ফলত: অত:পর সকল ইহুদি ও খৃষ্টানদেরকে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত হওয়াই হলো একমাত্র কাজ আর তাতেই তারা বেহেস্তে যাওয়ার নিশ্চয়তা পাবে। কোরান যে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সর্বশেষ সংস্করণ তা কিন্তু কোরানেই খুব পরিস্কার ভাবে বলা হয়েছে, যেমন-

আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে। কোরান, ০৫: ৪৮

উপরোক্ত আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে- কোরান শুধুমাত্র সর্বশেষ সংস্করণই নয়, বরং তা পূর্বোক্ত কিতাব সমূহ তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব কেও সত্যায়ন করে ও সংরক্ষণ করে। এর অর্থ ব্যপক। বর্তমানে ইসলামী পন্ডিতরা ব্যপকভাবে দাবি করে তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব বিকৃত, অথচ উক্ত কিতাবসমূহ সংরক্ষণের দায়ি দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহই গ্রহণ করেছে যা দেখা যায় উক্ত আয়াতে।যা আল্লাহ স্বয়ং আল্লাহ নিজে সংরক্ষণ করে তা কিভাবে সামান্য মানুষ বিকৃত করতে পারে তা ঠিক বোধ গম্য নয়। এখানে একটা মৌলিক সমস্যা আছে যুক্তি বিস্তারে, বিশেষ করে তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতদের।তারা যে যুক্তি প্রয়োগ করে কোরানকে অবিকৃত ও বিশুদ্ধ গ্রন্থ হিসাবে প্রমান করে, ঠিক একই যুক্তি তারা বাইবেলের ( তৌরাত ও ইঞ্জিল) ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে না।উদাহরণ স্বরূপ- মুসলিম পন্ডিতরা খুব জোরে সোরে প্রচার করে, আল্লাহই কোরান সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে, সেকারনে গত ১৪০০ বছর ধরে কোরান অবিকৃত ও বিশুদ্ধ থেকেছে। অথচ কোরানের বর্ণনা মোতাবেক, সেই একই আল্লাহ পূর্ববর্তী কিতাব সমূহ সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার পরেও কিভাবে বাইবেল বিকৃত হয়?
যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেই, কোরান নাজিলের পর কোরানের মাধ্যমেই বাইবেলের বিষয়বস্তু সংরক্ষনের কথা উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে তাহলে একটা বিষয় নিশ্চিত মোহাম্মদের সময় পর্যন্ত বাইবেল ছিল বিশুদ্ধ ও অবিকৃত, কারন আল্লাহই সেটার ব্যবস্থা করেছিলেন।যার প্রমান কোরানেই আছে, যেমন-

ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী। কোরান, ০৫:৪৭

আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। অনন্তর যদি তার মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান।কোরান, ০৫: ৪৯

মোহাম্মদের কাছে খৃষ্টানরা তাদের যেসব সমস্যা নিয়ে আসত, উপরোক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে তাদের সমস্যাসমূহ তাদের কিতাব তথা ইঞ্জিল দ্বারাই সমাধান করতেন।যদি তখন ইঞ্জিল বিকৃত হতো তাহলে বিকৃত কিতাবের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হতো না। যদি বিকৃত হতো- মোহাম্মদ বলতেন যে যেহেতু উক্ত কিতাব বিকৃত আর তিনি হলেন শেষ নবী, তার কাছে সর্বশেষ কিতাব এসেছে তাই তাদের যে কোন বিষয়ের সমাধান একমাত্র কোরান দিয়েই হবে। কিন্তু কোরানে দেখা যাচ্ছে মোহাম্মদ বা আল্লাহ সেরকম কিছু বলছে না। এখন যে ইঞ্জিল কিতাব পাওয়া যায় তা আনুমানিক ৩০০ খৃষ্টাব্দেই অর্থাৎ মোহাম্মদের জন্মেরও প্রায় ৩৫০ বছর আগে পূর্ণাঙ্গ আকার পায় বাইজান্টাইন সম্রাট কন্সটানটাইনের খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণের পর।সকল রকম উৎস সন্ধান করেই এ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।সেসময়কার বহু পান্ডুলিপি বিভিন্ন যাদুঘরে সংরক্ষিতও আছে। ইঞ্জিল কিতাব কখন কিভাবে সংকলিত হয় তা এখানে গবেষণার বিষয় নয়। বিষয় হলো যেভাবেই সংকলিত হোক, যারাই সংকলিত করুক, মোহাম্মদের সময়ে যে সংকলণ ছিল তাকে মোহাম্মদ বিশুদ্ধ হিসাবেই গ্রহণ করেছেন। আর সে কিতাবই হুবহু এখন কোটি কোটি কপি পাওয়া যায়।ঠিক যেমন পাওয়া যায় তৃতীয় খলিফা ওসমানের সংকলিত কোরানের কপি। এমতাবস্থায় কোরান যদি অবিকৃত ও বিশুদ্ধ হয়, ঠিক একই যুক্তিতে ইঞ্জিল কিতাব কেন অবিকৃত ও বিশুদ্ধ হবে না ? বলা বাহুল্য যে কায়দায় কোরান সংকলিত হয় অনেকটা সে কায়দাতেই কিন্তু ইঞ্জিল শরিফ সংকলিত হয়।

ইঞ্জিল কিতাব যে আসলেই অবিকৃত ছিল মোহাম্মদের আমলে তার আরও প্রমান নিম্নে-

হে আহলে-কিতাবগণ, কেন তোমরা আল্লাহর কালামকে অস্বীকার কর, অথচ তোমরাই তাঁর প্রবক্তা?কোরান, ০৩:৭০
হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান।কোরান, ০৩:৭১

উপরের আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে যে -খৃষ্টাণরা মোহাম্মদের তথাকথিত আল্লাহর কালামকে অবিশ্বাস করছে কিন্তু তারা পুর্বোক্ত আল্লাহর কালাম সমূহ জানে। কিভাবে জানে ? কারন তাদের কিতাব ইঞ্জিল তাদের কাছে আছে আর তা থেকেই তারা জানে। সেটা বিকৃত হলে তারা তা জানত না। তবে মোহাম্মদ তাদেরকে অভিযুক্ত করছে এই বলে যে তারা তাদের জানার সাথে মিথ্যাকে মিশ্রণ করছে। অর্থাৎ তারা যা জানে তা তারা প্রকাশ করছে না।সেটা হলো- বাইবেলে নাকি মোহাম্মদের আবির্ভাবের কথা লেখা আছে তা তারা মানছে না, এছাড়াও তারা যীশুকে শুধুমাত্র একজন নবী না মেনে তাঁকে ঈশ্বরের পূত্র বা ঈশ্বর এভাবে মনে করছে। যাহোক, কোরানের কোথাও লেখা নাই যে মোহাম্মদের আমলে খৃষ্টান দের কাছে যে ইঞ্জিল শরিফ ছিল তা ছিল বিকৃত ও মনগড়া। আর বলা বাহুল্য সেই ইঞ্জিল কিতাবই বর্তমানে পাওয়া যায়।
এখন আমরা দেখি কেন মুসলিম পন্ডিতরা ইঞ্জিল কিতাবকে বিকৃত দাবী করে? ইঞ্জিল কিতাবের মুল শিক্ষাটা বিবেচনা করা যাক। খৃষ্টান পন্ডিতদের মতে, এর মূল শিক্ষা হলো- যীশু আসলে স্বয়ং ঈশ্বর যিনি কুমারী মাতা মরিয়মের গর্ভে জন্মগ্রহণ করে মানবজাতিকে উদ্ধার করতে এসেছিলেন। দুনিয়ায় আসার স্বাভাবিক পদ্ধতি যেমন কোন নারীর গর্ভ হতে আবির্ভুত হতে হবে, তাই তাঁকে কুমারী মরিয়মের গর্ভে আশ্রয় নিতে হয় কোন পুরুষের ঔরস ছাড়াই। পুরুষের ঔরসের মাধ্যমে আসলে তখন যীশু যে স্বয়ং ঈশ্বর এটা প্রমান করাতে সমস্যা হতো।প্রকৃতির ধারা অনুসরণ করে অথচ একই সাথে অলৌকিক ভাবে কারো ঔরস ছাড়াই স্বয়ং ঈশ্বর দুনিয়াতে যীশুর রূপ ধরে আসলেন । এসেই তিনি যখন বড় হলেন তখন তাঁর বানী প্রচার শুরু করলেন। তিনি যে বানী প্রচার করতেন তা তাঁকে কোন ফেরেস্তা এসে বলে যেত না। তিনি স্বয়ং যা বলতেন সেটাই ছিল ঈশ্বরের বানী। খেয়াল করতে হবে এখানেই মোহাম্মদের সাথে তাঁর একটা মৌলিক পার্থক্য অর্থাৎ মোহাম্মদের কাছে জিব্রাইল নামক এক ৬০০ ডানা ওয়ালা ফেরেস্তা আল্লার বানী পৌছে দিত। যীশু বলেছেন-

শোন আমি শিঘ্রী আসছি, আমি দেবার জন্য পুরস্কার নিয়ে আসছি, যার যেমন কাজ সেই অনুসারে পুরস্কার পাবে, আমি আলফা ও ওমেগা, প্রথম ও শেষ, আদি ও অন্ত। নূতন নিয়ম, প্রকাশিত কালাম, ২২: ১২-১৩
তাকে দেখে আমি মরার মত তার চরণে লুটিয়ে পড়লাম।তখন তিনি আমার গায়ে ডান হাত দিয়ে বললেন- ভয় করো না।আমিই প্রথম ও আমিই শেষ, আমিই সেই চিরজীবন্ত, আর দেখ আমি মরেছিলাম আর আমি চিরকাল বেচে আছি। মৃত্যূ ও পাতালের চাবিগুলি আমি ধরে আছি। নূতন নিয়ম, প্রকাশিত কালাম, ২২: ১৭-১৮

এক জায়গায় যোহন যীশু সম্পর্কে সরাসরি বলছেন-

প্রভু ঈশ্বর বললেন, আমিই আলফা ও ওমেগা, আমিই সেই সর্ব শক্তিমান, যিনি আছেন, যিনি ছিলেন ও যিনি আসছেন। নূতন নিয়ম, প্রকাশিত কালাম, ২২: ০৮

লক্ষ্য করতে হবে এ কথাগুলোর মধ্যেই কিন্তু আভাস পাওয়া যাচ্ছে যীশু পরোক্ষভাবে নিজেকে স্বয়ং ঈশ্বর হিসাবে তুলে ধরছেন।তাহলে তিনি আবার ইঞ্জিল শরিফে ঈশ্বরকে তাঁর পিতা বলেছেন কেন? কোন ব্যক্তি একই সাথে পিতা ও ঈশ্বর হয় কিভাবে? এটার ব্যখ্যা খৃষ্টাণ পন্ডিতরা দিয়ে থাকে এভাবে-ঈশ্বর তার সন্তান মানব জাতিকে অপরিসীম ভালবাসে, কিন্তু মানব জাতি শয়তানের প্ররোচণায় প্রায়ই ভ্রান্ত পথে চলে। এমতাবস্থায় মানব জাতিকে উদ্ধার করতে স্বয়ং ঈশ্বরকে যখন আসতেই হচ্ছে-তিনি নিজে দুনিয়াতে এসে নিজেকে ঈশ্বর বলে প্রচার করলে তা হতো প্রকৃতি বিরুদ্ধ। কারন ঈশ্বর যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে তিনি স্বর্গে বসেই দুনিয়ার সকল মানুষকে সঠিক পথে চালিত করতে পারতেন, তাকে আর কষ্ট করে দুনিয়ায় আসতে হতো না। মানুষকে সত্য পথ শিখাতে মানুষ রূপেই দুনিয়াতে আসতে হবে।মানুষ রূপে আসার জন্যেই তাকে স্ত্রী গর্ভে জন্ম নিতে হচ্ছে।যেহেতু তার জন্ম আবার হচ্ছে কোন পুরুষের ঔরস ছাড়াই একটা অলৌকিক ভাবে, তাই তিনি নিজেকে ঈশ্বরের পূত্র বলেই পরিচয় দিচ্ছেন। কারন স্বয়ং ঈশ্বর হিসাবে পরিচয় দেয়ার পর নিজেকে ক্রুশে বিদ্ধ করে আত্মোৎসর্গ করলে তাতে ঈশ্বরের সর্বময় ক্ষমতার বরখেলাপ হতো- ঈশ্বরকে তো কেউ ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করতে পারে না।স্বয়ং ঈশ্বর এখানে ঈশ্বরের পূত্র রূপ একজন মানুষ হিসাবে জগতের মানুষের পাপ নিজ স্কন্ধে গ্রহণ করে ক্রুশে আত্মোৎসর্গ করছেন মানুষকে তিনি সীমাহীন ভালবাসেন একারনে। আবার এ যীশুই যে স্বয়ং ঈশ্বর তার প্রমান হিসাবে তিনি মৃত্যুর তিন দিন পর মৃত্যূ থেকে পূনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠেন শুধু এটা বুঝাতে যে তাঁর মৃত্যু নেই, তিনি অমর।অত:পর যে মানুষ যীশুকে( প্রকারান্তরে ঈশ্বরকে) তার ত্রাণকর্তা রূপে স্বীকার করবে সে যীশুর এ আত্ম ত্যাগের মহিমার কারনে মৃত্যুর পর ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করবে। আর সেটাই হওয়ার কথা- যীশু যদি স্বয়ং ঈশ্বর হন, তাকে ত্রাণকর্তা হিসাবে গ্রহণ করলে অত:পর ত্রাণ/উদ্ধার করার দায়িত্ব ঈশ্বরের ওপরেই বর্তায়। সুতরাং খৃষ্টানদের মতে-যীশুর নিজেকে ঈশ্বরের পূত্র বা মনুষ্য পূত্র(কারন মানুষের গর্ভজাতও বটে) বলাতে তার ঈশ্বরত্বে কোনরূপ সমস্যা হয় না। একই সাথে তার আত্মত্যাগ হলো মানুষের প্রতি তার অপরিসীম প্রেম ভালবাসা ও করুণার বহি:প্রকাশ, আর এটাই খৃষ্টান ধর্মের মৌলিক ভিত্তি ও শক্তি। পুরো ইঞ্জিল শরিফে সেটাই বলা হয়েছে বিভিন্ন কায়দায়, ভাষায় ও কাহিনীতে। আর এ ইঞ্জিল শরিফ পুরো সংকলিত হয় মোহাম্মদ জন্মেরও প্রায় ৩৫০ বছর আগে যাকে মোহাম্মদ ও তার আল্লাহ বিশুদ্ধ ও অবিকৃত হিসাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন। এভাবে স্বীকার করে নেয়ার অর্থই হচ্ছে- যীশুকে স্বয়ং ঈশ্বর বা ইসলামের ভাষায় আল্লাহ হিসাবে স্বীকার করে নেয়া। কিন্তু এর পর পরই কোরানে দেখা যাচ্ছে-

আল্লাহ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, তিনি যখন কোন কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই বলেনঃ হও এবং তা হয়ে যায়। কোরান, সূরা মারিয়াম, ১৯: ৩৫
তারা বলেঃ দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।নিশ্চয় তোমরা তো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ। হয় তো এর কারণেই এখনই নভোমন্ডল ফেটে পড়বে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচুর্ণ হবে। এ কারণে যে, তারা দয়াময় আল্লাহর জন্যে সন্তান আহবান করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়। কোরান, ১৯:৮৮-৯২

এখানে বোঝাই যাচ্ছে- যীশুকে ঈশ্বরের পূত্র বিষয়টির নিহিতার্থ মোহাম্মদ তথা আল্লাহ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। মোহাম্মদ নিতান্তই স্থূল অর্থে জৈবিক পূত্র হিসাবে ধারণা করে নিয়েছেন। অর্থাৎ ইতোপূর্বে যে ইঞ্জিল শরিফকে কোরানে বিশুদ্ধ হিসাবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছিল তা আবার এখানে অস্বীকার করা হচ্ছে প্রকারান্তরে, কারন গোটা ইঞ্জিল শরিফে যীশুকে সব সময়ই ঈশ্বরের পূত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর বলা বাহুল্য, ইঞ্জিল শরিফের কোথাও বলা নাই যে ঈশ্বর মারিয়ামের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যীশুকে জন্ম দিয়েছে। কেন খৃষ্টানরা যীশুকে ঈশ্বরের পূত্র হিসাবে বর্ণনা করে তা ইতোপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যার মধ্যে সত্যিকার অর্থে একটা গুঢ় নিহিতার্থ আছে অথচ দু:খজনকভাবে মোহাম্মদ তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটা কি ধরণের যুক্তি যে- মোহাম্মদ বলছেন ইঞ্জিল কিতাব যা যীশু বলে গেছেন, যা তার আশে পাশের খৃষ্টানদের কাছে রক্ষিত ছিল তা সত্য ও অবিকৃত অথচ তার ভিতরকার বক্তব্য অসত্য ও বিকৃত? এটা কি নিজের সাথেই নিজের স্ববিরোধীতা নয়? শুধু তাই নয়, যীশুর জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনায়ও যুক্তিহীন কথা বার্তা দেখা যাচ্ছে, যেমন-

অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল। কোরান, সূরা মারিয়াম, ১৯: ১৭
মারইয়াম বললঃ আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও। কোরান, সূরা মারিয়াম, ১৯: ১৮
সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব। কোরান, সূরা মারিয়াম, ১৯: ১৯

১৯:১৭ আয়াতে পরিষ্কার ভাবে লেখা-অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল- এখানে আমি অর্থাৎ আল্লাহ, তাই আমার রূহ অর্থ হবে আল্লাহর রূহ।সহজ সরল ব্যকারণে সেটাই বোঝায়। সুতরাং এখানে বলা হচ্ছে আল্লাহ তার নিজের রূহ বা আত্মা মারিয়ামের কাছে প্রেরণ করল যে সেখানে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। যার সোজা অর্থ স্বয়ং আল্লাহই মানবাকৃতিতে মারিয়ামের নিকট উপস্থিত হল। অথচ এর ঠিক পরেই ১৯:১৯ আয়াতে বলা হচ্ছে- আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, অর্থাৎ সে আল্লাহ নয় বরং আল্লাহ প্রেরিত কোন ফেরেস্তা। এখন কোনটা সত্য- কে মারিয়ামের কাছে এসেছিল- আল্লাহ নাকি ফেরেস্তা? কোরান পাঠ করে তো স্পষ্ট ভাবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না, এটা এমন কোন দার্শনিক/রহস্যময় টাইপের কথা বার্তাও নয় যে বুঝতে কষ্ট হবে।এটা স্রেফ একটা ঘটনা আর তা বুঝতেই এত কষ্ট। অথচ কোরানে বলা হয়েছে- কোরান স্পষ্ট ভাষায় সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয়েছে সাধারণ মানুষের বোঝার সুবিধার জন্য।এভাবে কোরান বুঝতে যদি এত কঠিন হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ এটা পড়ে উল্টা পাল্টা সিদ্ধান্ত নিলে তার দায়ভার কে নেবে? আল্লাহ নাকি মোহাম্মদ? অধিকন্তু, প্রথম বক্তব্য (আয়াত, ১৯:১৭)সত্য ধরে নিলে- আল্লাহ যীশু রূপে আবির্ভুত হলে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? আল্লাহ তো সব পারে, মারিয়ামের সামনে মানুষ হিসাবে হাজির হতে পারলে তার গর্ভে মানুষ হয়ে জন্মাতে পারবে না কেন? এছাড়াও আরও সমস্যা আছে, যেমন-

অতঃপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ। হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী। অতঃপর তিনি হাতে সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তারা বললঃ যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব? সন্তান বললঃ আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে। এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব। কোরান, সূরা মারিয়াম, ১৯:২৭-৩৩

এখানে বলা হচ্ছে- আল্লাহ যীশুকে একজন নবী করে তাকে একটা কিতাব দিয়েছে। আর বলা বাহুল্য, ইঞ্জিলের কোথাও বলা নাই যে যীশু কখনও কোন ফিরিস্তার মাধ্যমে আল্লাহর বানী প্রাপ্ত হয়েছেন।যীশু নিজ থেকে যা যা বলেছেন, উপদেশ দিয়েছেন, অলৌকিক কান্ড করেছেন সব কিছু তার সাহাবীরা লিখে রেখেছে যার সংকলণকেই বাইবেলের নুতন নিয়ম বা ইঞ্জিল শরিফ বলা হয়। ঠিক একারনে ইঞ্জিল শরিফকে ইসলামের হাদিস শরিফের মত লাগে। এ বানী বলতে গিয়ে যীশু কখনো বলেন নি এটা তার ঈশ্বরের বানী। তিনি সর্বদাই উত্তম পুরুষে নিজের বানীই প্রচার করেছেন। দেখা গেছে ইঞ্জিল শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী, যীশু পরোক্ষভাবে নিজেকে ঈশ্বর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করছেন।অর্থাৎ যীশু কোনমতেই একজন নবী নন। কোরানে আল্লাহ সেই ইঞ্জিল শরিফকে তার কিতাব হিসাবে স্বীকার করে নিচ্ছে তথা যীশুর নিজের মুখের বানীকে আল্লাহর নিজের বানী রূপে স্বীকার করে নিচ্ছে তথা যীশুই যে আল্লাহর মানবরূপ তা পরোক্ষে আল্লাহ স্বীকার করে নিচ্ছে।অথচ এর পরেই আবার কোরান বলছে যীশু অন্য দশজন নবীর মতই একজন নবী ছাড়া আর কিছু নয়। শুধু তাই নয়, খৃষ্টীয় ধর্মের মূল ভিত্তি ও অনুপ্রেরণা যীশুর ক্রুশে মৃত্যুবরণের মাধ্যমে আত্মত্যাগের মহিমাকেই কোরান এক ফুৎকারে নস্যাৎ করে দেয়, যেমন-

আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি। বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। কোরান, সূরা নিসা,০৪:১৫৭-১৫৮

এক ফুৎকারে কোরান যীশু খৃষ্টের ক্রুশে আত্মত্যাগকে নস্যাৎ করে দিয়ে বস্তুত কোরান বা ইসলাম নিজেই নিজেকে নস্যাৎ করে দেয়।এটা অনেকটা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের পরম শূন্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করার মত যাতে বলা হয়- এ ধরনের ভবিষ্যদ্বানী করার অর্থ আপেক্ষিকতাবাদের অপমৃত্যু। উপরোক্ত আয়াতের ব্যখ্যা দিতে গিয়ে ইসলাম বলে যে- বাস্তবে যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়নি। যখন তাকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয় তখন আল্লাহর তাঁর স্থানে যীশুর মত চেহারার অন্য একজনকে সেখানে প্রতিস্থাপন করে যীশুকে স্বশরীরে বেহেস্তে নিয়ে যান যা দেখা যাচ্ছে আয়াতের এ কথায়- বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। তার অর্থ যীশু মারা যান নি, জীবিত অবস্থায় তাকে বেহেস্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর সেখানে এখনও জীবিত আছেন। তাকে কেয়ামতের আগে পূনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করা হবে দুনিয়ার মানুষকে উদ্ধারের জন্য। এ বিষয়টি কিন্তু যীশু খৃষ্টের মূল শিক্ষা বা অনুপ্রেরণাকে বাতিল করে দেয়।খৃষ্টান ধর্মের মূল অনুপ্রেরণা হলো- মানবজাতির পাপের জন্য যীশু খৃষ্টের আত্মত্যাগ যা পরিশেষে মানবজাতির জন্য তার অপরিসীম ভালবাসা ও প্রেমের নিদর্শণও। খৃষ্টান ধর্মের মূল বিষয়ও এটাই। এ আত্মত্যাগের কারনেই পরবর্তীতে মানুষ দলে দলে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে।আত্মত্যাগের এ মহান নিদর্শণ না থাকলে মানুষ যীশুর বানী গ্রহণ করে খৃষ্টান হতো না। এখন কোরানের বানী অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে- খৃষ্টান ধর্মের এ মুল ভিত্তি বা অনুপ্রেরণা ছিল ভুল কারন যীশু তো ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে আত্মত্যাগ করেন নি।যা ইসলাম ধর্মের মতে আল্লাহর একটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। ইসলাম ধর্ম মতে- যীশু যদি শুধুমাত্র একজন নবীও হন, তাহলে আল্লাহ যীশু খৃষ্টকে ক্রুশ থেকে তুলে নিয়ে যীশুর অনুসারীদের সামনে যে একটা মহা প্রতারণা করলেন এর কারন কি ? পরবর্তীতে এ মহাপ্রতারণার অনুপ্রেরণার মাধ্যমেই কিন্তু খৃষ্টান ধর্ম মানুষের মাঝে প্রচারিত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো- আল্লাহ কেন এরকম মহা প্রতারণা করে মানুষকে মোহাম্মদের আবির্ভাবের আগে শত শত বছর ধরে ভুল পথে চালিত করলেন? আর প্রতারণার শুরুই খোদ যীশু খৃষ্টের তিরোধানের পর থেকেই। তার অর্থ খৃষ্টানরা একেবারে শুরু থেকেই ভুল পথে চালিত হয়ে আসছে। আল্লাহ কেন মানুষকে যীশু খৃষ্টের মত একজন নবী পাঠিয়ে একেবারে শুরু থেকেই মানুষকে বিপথে চালিত করে আসছিল?
তার চাইতে গুরুতর প্রশ্ন- আসলে মোহাম্মদ বা তাঁর আল্লাহ কোরানের মাধ্যমে মানুষের সাথে মহা প্রতারণা করছে না তো ?
কোন টা সত্য? ইঞ্জিল শরিফে দেখা যায়- মৃত যীশু কবরে তিন দিন থাকার পর আবার পূন:র্জীবন পেয়ে তার সাহাবীদের সামনে সাক্ষাত দিয়ে উপদেশ দিচ্ছেন, তখনও তো তিনি বলেন নি যে তিনি তখন মারা যান নি ও তার স্থলে অন্য একজনকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়েছিল। যাকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয় সে তো কোন মহান পুরুষ ছিল না, সে তো আর কবর থেকে তিন দিন পর আবার পূনর্জীবিত হতে পারত না। অথচ ইঞ্জিল শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে যে- তিন দিন পর যখন তাঁর সাহাবীরা তাঁকে কবরে দেখতে গেলে সেখানে তাকে দেখতে পাওয়া যায়নি।যীশুর শব সেখানে ছিল না, বরং যীশু জীবিতাবস্থায় সকলের সাথে সাক্ষাত করেন ও কথা বলেন। এ বিষয়ে জানতে ইঞ্জিল শরিফ দেখা যেতে পারে এখানে- http://www.asram.org/texts/bengalibible.html অথচ মোহাম্মদের সময়কালে ঠিক এসব বর্ণনাই কিন্তু ইঞ্জিল শরিফে ছিল আর তার আল্লাহ কখনও বলে নি যে উক্ত কিতাব বিকৃত, বরং প্রকারান্তরে বলেছে তা সঠিক আছে। কোরান নিজেই নিজের সাথে স্ববিরোধীতা করছে তার নিদর্শন নিম্নে-

আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব। এই মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক করে। কোরান,১৯:৩৩

এখানে বলা হচ্ছে- মারিয়ামের পূত্র ঈসা জন্মগ্রহণ করে একদিন মৃত্যূ বরণ করবেন এবং পরিশেষে আবার পূন:র্জীবন লাভ করবেন।বলা বাহুল্য ঘটনাটা যখন প্রায় ২০০০ বছর আগের, তার অর্থ ঈসা তখন জন্ম গ্রহণ করে মারাও গেছেন। অথচ পূর্বোক্ত ০৪:১৫৭-১৫৮ আয়াত মোতাবেক দেখা যাচ্ছে আল্লাহ স্বয়ং ঈসাকে জীবিত অবস্থায় নিজের কাছে নিয়ে গেছেন।জীবিত অবস্থায়ই যে আল্লাহর ঈসাকে তার নিকট নিয়ে গেছে তা পরিস্কার করতে বলা হচ্ছে-আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি। বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। বেহেস্তে তো মৃত্যু নেই। সুতরাং তিনি আবার যখন কেয়ামতের আগে দুনিয়াতে আবির্ভূত হবেন তা হবে শুধুমাত্র তাঁর পূনরাগমন, পূন:রুজ্জীবন নয়। তার অর্থ কোরানে যে পূনরুজ্জীবিত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা স্ববিরোধী ও অযৌক্তিক। অথচ ইঞ্জিলে কিন্তু পরিস্কার ভাবে এ পূনরুজ্জীবনের বিষয়টি বর্ণিত আছে, তা হলো ঈসা মৃত্যুর তিন দিন পর পূনর্জীবিত হয়ে তার সাহাবীদের সাথে দেখা দেন, অত:পর তিনি বেহেস্তে চলে যান, আবার একদিন দুনিয়াতে আসবেন পূণ্যবান মানুষকে উদ্ধার করতে, বলা বাহুল্য সেটা হবে তার পূনরাগমন, পূনর্জীবন নয়। ইঞ্জিল শরিফ মৃত্যু, পূনর্জীবন ও পূনরাগমন এসব ঘটনার বর্ণনা করে ধারাবাহিকতা ও যৌক্তিকতা বজায় রেখেছে পক্ষান্তরে কোরান এ ব্যপারে অযৌক্তিক ও স্ববিরোধী বক্তব্য প্রদাণ করেছে। যীশুকে জীবিত অবস্থায় স্বশরীরে আল্লাহ বেহেস্তে নিয়ে যাওয়ায় আল্লাহ নিজেই নিজের ও নিজ সৃষ্ট প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গ করেছে। কোরানে আল্লাহ বলেছে-সে নিজে ছাড়া কেউ অমর নয়।যীশুকে জীবিত অবস্থায় বেহেস্তে নিয়ে যাওয়াতে যীশুকে অমর প্রমান করা হয়েছে,কারন বেহেস্তে কেউ মারা যায় না। এভাবে যীশুকে অমর প্রমান করে ফলত: যীশুই যে প্রকারান্তরে আল্লাহ স্বয়ং সেটা প্রমান করছে অথচ আবার সেই কোরানে বলছে যীশু একজন সাধারন মরণশীল নবী ছাড়া কেউ নয়, যা বলাবাহুল্য কোরানের মস্ত আর এক স্ববিরোধীতা। এভাবেই বাইবেলকে প্রথমে বিশুদ্ধ হিসাবে গ্রহণ করে , পরে তার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে কোরান তথা ইসলাম কি নিজেই নিজের পতন ঘটায় নি ?

কেন যীশু নিয়ে এত স্ববিরোধীতার ছড়াছড়ি কোরানে ? মোহাম্মদ নিজেকে মুসা ও ঈসা নবীর ধারাবাহিকতায় শেষ নবী দাবী করছেন। তার ফলে তাঁকে তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব থেকে কিছু কিছু বক্তব্য প্রদাণ করতে হয়।তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছ থেকে বাইবেলের কাহিনি গুলো শুনেছেন কিন্তু নিজে পড়তে না পারার কারনে কাহিনীগুলের নিহিতার্থ ঠিক মতো অনুধাবণ করতে পারেন নি।যেমন তিনি বুঝতে পারেন নি যীশুর ঈশ্বর বা মানুষের পূত্র পরিচয়ের মাহাত্ম, যীশুর ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে আত্মত্যাগের মাহাত্ম এসব। ফলে যখন তিনি তাঁর কোরানে বাইবেলের কাহিনী গুলো মাঝে মাঝে বলেছেন তখন তিনি অত্যন্ত স্থূল ভাবে ও অর্থে তা বর্ণনা করেছেন, এছাড়াও তিনি যা বলেছেন তার মধ্যে ধারাবাহিকতা ও যুক্তির অভাব ছিল।অথচ ততদিনে সেসব কথামালা কোরানের বানী রূপে সংরক্ষন ও মুখস্থ করা হয়ে গেছে, পাল্টানোর উপায় ছিল না।পরবর্তীতে যখন তাঁর শিক্ষিত সাহাবীরা বিষয়টি সঠিকভাবে অনুধাবণ করতে পারে, তখন তারা বুঝতে পারল, বাইবেল সঠিক হলে কোরান অবশ্যই ভূয়া হবে।আর তখন থেকেই তারা সবাই মিলে তারস্বরে প্রচার করা শুরু করল- বাইবেল বিকৃত, বাইবেল বিকৃত। আর সেটাই হয়েছে বর্তমানে কোরান যে বিশুদ্ধ ও সঠিক তা প্রমানের মাপকাঠি। তাহলে কি বলা যায় না যে একটা প্রকান্ড মিথ্যা প্রচারণার ওপর ভিত্তি করে কোরান ও ইসলাম দাড়িয়ে আছে?

মোহাম্মদ ও ইসলাম, পর্ব-7
মোহাম্মদ ও ইসলাম, পর্ব-6
মোহাম্মদ ও ইসলাম, পর্ব-5
মোহাম্মদ ও ইসলাম, পর্ব-4
মোহাম্মদ ও ইসলাম, পর্ব-3
মোহাম্মদ ও ইসলাম, পর্ব-2
মোহাম্মদ ও ইসলাম, পর্ব-1