অসহায় আদি মানবগণ তাদের অসহায়ত্বের ধারা হতে রক্ষা পেতে কল্পিত স্রষ্টার আর্বিভাব ঘটায়। এ প্রক্রিযায় তারা চন্দ্র-সূর্য,নদী, সমুদ্র, গাছ-পালা পাহাড় পর্বত ও অগ্নি হতে শুরু করে বৃহৎ কোন কিছু দেখলেই ভক্তি নিবেদন করতো। এ ভক্তি নিবেদন ছিল সুষ্ঠভাবে বাঁচার জন্য যা বর্তমান সময়েও আদিবাসী সম্প্রদায় সহ সনাতন পন্থিদের মধ্যে প্রচলিত আছে।

‌এভাবে আদি মানবের মধ্যে যখন স্রষ্ঠা ভক্তি জাগরিত হয় সেই সুবাদে তখনই ভাববাদী গুরুর আর্বিভাব ঘটে। হয়তো বা কোন সুযোগ সন্ধানী মানুষ নিজকে স্রষ্ঠা প্রেরিত বলে দাবী করে তার হিতোপদেশ গুলোকে স্রষ্ঠা প্রেরিত বলে চালিয়ে আদি সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে মনুষ্য সমাজে বনে যায় পূজনীয়। পূজনীয় ব্যক্তিকে ভক্তকুল সন্তষ্টি লাভের আশায় অর্থ প্রদান করতে থাকে আর সে মানুষটি বনে যায় আদি সমাজের একছত্র অধিপতি। তৎকালীন আদি সমাজের এই বুদ্ধিমান ব্যক্তিটি নিজেকে স্বরণীয়-বরনীয় রাখতে বিভিন্ন সময়ে কল্পিত স্রষ্ঠার সন্তষ্টি লাভের জন্য, ভক্তি নিবেদনের আয়োজন করে। গুরুর নির্দেশনা মোতাবেক ভক্তি নিবেদন করত। এজন্য বিভিন্ন ভাববাদী গুরুর ভক্তি নিবেদনের পদ্ধতি ভিন্নভিন্ন।

কালক্রমে ভাববাদী গুরুদের আস্তানা গুলো অনুসারী গনের নিকট পবিত্র স্থানের মর্যাদা লাভ করে। ঐ সকল স্থান এখন পর্যন্ত পবিত্র স্থান হিসাবে ভাববাদী সমাজে স্বীকৃত, যেমন- সনাতন পন্থিদের গয়াকাশী বৃন্দাবন। শিখদের অমৃতসবের স্বর্ন মন্দির। ঈহুদী খিৃষ্টানদের জেরু জালেম এবং মুসলমানদের মক্কা মদিনা ইত্যাদি।

মধ্য প্রাচ্য এবং ভারত বর্ষ ছাড়া পৃথিবীর আর কোন স্থানে নবী পয়গম্বর আর অবতার দেখা যায় না। প্রচারিত মতবাদগুলো দেখে অনুমান করা যায় যে এগুলো একমতবাদ থেকে আরেক মতবাদে অনুকরণকৃত। মধ্য প্রাচ্যে প্রচলিত ধারা একেশ্বর বাদী, রাষ্ট্রপতি শাষিত পদ্ধতির ন্যয় এবং ভারত বর্ষে প্রচলিত ধারাটি মন্ত্রিপরিষদের ন্যায়। এখানে বিভিন্ন দেব দেবীর ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতা দেখা যায়।

পৃথিবীতে এক শ্রেনীর মানুষ খেটে খায় এবং আর এক শ্রেনীর মানুষ বসে বসে আয়েশী জীবন যাপন করে। তারা খেটে খাওয়া মানুষের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য দেয় না বরং ঠকায়। “উদে মাছ মারে আর খাটাশে তিন ভাগ করে”র মত। এই ধারায় পরিশ্রমিরা কলুর বলদই থেকে যায় আর অর্থ সম্পদ এর পাহাড় গড়ে ঠগবাজ ধুরন্ধর মানুষেরা।

শিল্পপতিরা শ্রমিককে দেয় না ন্যায্য মুজুরী। চাষিরা পায় না তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য আর বুদ্ধিজীবি সহ সকলেই তাদের কৌশল কে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে নিজের ভাগ্য গড়ছে, সম্পদের পাহাড় গড়ছে।

ভাববাদে সম্পদশালীদের তীর্থ ভ্রমন অবশ্য করনীয়। এ সুযোগের সৎব্যবহার করছে সম্পদশালীগন। তারা তাদের অপকর্ম ঢাকার সনদ নিচ্ছেন। সমাজে বরনীয় হচ্ছেন। তীর্থ স্থান গুলোকে পাপীদের মিলন মেলায় পরিনত করছেন। কথিত পবিত্র স্থান গুলো ধুরন্ধর পাপীদের পদ ভারে ভরপুর। ভাল মানুষ নাই এটা বলছিনে, তবে তা হাতে গোনা ।

সম্পদশালী মানুষগুলো মহৎ ও ভাল মানুষ হলে সমাজের চিত্র পাল্টে যেত। তারা যদি সমাজের গরীব দুঃখী মানুষের চিন্তা করতো তাহলে সমাজের কল্যাণ হতো। মানুষের মানবীয় গুনে সমাজ পাল্টে যেত। পাল্টে যেত দুঃখী মানুষদের জীবন চিত্র। কুটিল মানষিকতার মানুষেরা মানষিক গুনাবলী বিসর্জন দিয়ে সম্পদ লুন্ঠন করে, লুন্ঠিত সম্পদের পাহাড় গড়ে, শেষে ভাল মানুষ সাজার চেষ্টা করছে। এটা ভাল মানুষ সাজার সামাজিক চিত্র। এক্ষেত্রে ছন্দ মিলিয়ে বলতে হয়ঃ-

“ভন্ডামীর নাই সীমা,
অসৎ টাকায় করে বেহেস্তের বীমা।
অসৎ পথে উপার্জন তাতে যত পাপ
তপযপে শোধ হলে সব থাকে লাভ”।

ভাববাদী গুরুরা তাঁদের অনুসারীদের কে উৎসাহীত করেছেন কথিত তীর্থ স্থান হিসেবে ভ্রমনের জন্য। পৃথিবীর সব ভাববাদে একইভাবে অনুসারীরা তীর্থ ভ্রমনে উৎসাহিত, কথিত পূণ্যের লোভে।

যেমন আল কোরানের সূরা আলহাজ্ব আয়াত- (২৭) (তাকে আরো আদেশ দিয়ে ছিলাম) তুমি মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষনা (প্রচার কর) দাও, যাতে তারা তোমার কাছে পায়ে হেটে ও সর্ব প্রকার দুর্বল উঠের পিটে আরোহন করে ছুটে আসে (ছুটে আসে) দুর দরন্তর পথ অতিক্রম করে।

সুরা আলহাজ আয়াত (২৯) অতপর তারা যেন এখানে এসে ওদের (যাবতীয়) ময়লা কালিমা দুর করে, নিজের মানত সমূহ পুরা করে (বিশেষ করে) এই প্রাচীন ঘরটি তাওয়াফ করে।

সুরা আলহাজ্ব আয়াত (৩০) এ হচ্ছে কাবা ঘর বানানোর উদ্দেশ্যে। যে কেউ আল্লাহর (নির্ধারিত) অনুষ্ঠান মালার সম্মান করে, এটা তার জন্য মালিকের কাছে উত্তম কাজ।

আয়াত তিনটিকে কি ভাবে অনুসারীগনকে তীর্থ ভ্রমনে উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে করে সম্পদ শালী অনুসারীরা, বিশেষ করে যারা মানুষকে ঠকিয়ে সম্পদ শালী হয়েছে তারাতো তাদের কালিমা দুর করার নিমিত্তে হুমরি খেয়ে ছুটে আসবে। গাড়ীর চাকায় গ্রীজ দিলে যা হয়।

ভাববাদী গুরুরা তাঁদের মতবাদ সচল ও স্মরণীয় রাখতে বিশেষ বিশেষ দিন কে মহা পূণ্য অর্জনের দিন ঘোষনা দিয়ে অপকর্ম হতে পরিত্রান পাওয়ার সুযোগ দেখিয়েছেন। বিষয়টি এরুপ যে, শত পুরুষের সজ্জা সংগীনি হয়েও সতীত্বের সনদ লাভ করা। এখানে বুঝা যায় ভাব বাদী চাকা সচল রাখতে এতো সব আয়োজন।

ভাববাদী সমাজে আর একটি বিষয় লক্ষনীয়। সমাজে সর্বক্ষেত্রে সাধু সন্যাসী ও পীর দরবেশের পদচারনা। সমাজে প্রচলিত যে, সাধু সন্যাসি পীর-দরবেশ এরা সমাজ সংস্কারক। এরা সমাজের গোড়ামী দুর করেছেন। অনুসারী গনের মধ্যে তার বদ্ধ মুল ধারনা দেখা যায়। সাধু সন্যাসী পীর দরবেশগনের অলৌকিক সব কর্মকান্ড লোক মুখে প্রচলিত।

সনাতন পন্থি সাধু সন্যাসীরা নাকি কথিত দেবতাকে তাবেদার রুপে আয়ত্বে রাখে। এরুপ প্রচারে এক প্রকার এজেন্ট কাজ করে। ধূরন্ধর ব্যক্তিটি বসে সাধু সন্যাসীর আসনে। ঐ ধূরন্ধর ব্যক্তিটির কৃপা লাভের আশায় আবাল বৃদ্ধ বনিতা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ঐ সকল সাধু সন্যাসীদের মনরঞ্জনের জন্য ভক্তকুল যথাসাধ্য চেষ্টা করে, অর্থ কড়ি দান করে। এ প্রক্রিযায় অর্থ কড়ি হাতিয়ে নেওয়া হয়।

হিন্দু মুসলিম সমাজে একই প্রক্রিয়ায় সাধু সন্যাসী ও পীর দরবেশের অবির্ভাব দেখা যায়। উদ্দেশ্য অভিন্ন। তাদের পোশাক আশাক চাল-চলন সমাজ জীবিদের থেকে আলাদা। তারা এভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। উদ্দেশ্য হলোঃ-

হাল তেরা চাল হায়,
কিসমত তেরা মাল হায়।

মুসলিম সমাজে আলি আওলিয়া তথা পীর দরবেশের অবস্থান শীর্ষে। এসকল পীর দরবেশের অলৌকিক কর্মকান্ড লোক সমাজে মুখে-মুখে শোনা যায় বা কোন কোন পীর দরবেশের জীবনী গল্পে পাওয়া যায়। তবে এখানে প্রশ্ন আসে যে, আল কোরানে স্পষ্ট আছে, শেষ নবী কে কোন প্রকার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে পাঠানো হয়নি, সেখানে পীর দরবেশের অলৌকিক ক্ষমত এলো কিভাবে? তাই এক্ষেত্রে আমার নিজের ধারণা হতে লেখা একটি ছোট্ট গল্প নিরূপ।

মুসলমানরা ভারত বিজয় করেন। ইসলামের মহিমা প্রচারে আরব হতে বিপুল সংখ্যক আলেম ওলামা ভারত উপমহদেশে আস্তানা গেড়ে বসেন। ওনাদের উপদেশ মালায় এ উপমহাদেশীয় মানুষ দলে দলে ধর্মান্তরিত হতে থাকে। প্রতিশ্রুতি, জোরালো লোভ আর অতি মাত্রার টোপ দওয়া হয়েছে, বড়শীতে ভাল টোপ দিলে অধিক মাছ শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অগনিত মানুষকে ধর্মান্তরিত করা হয়। বড়রা ধন সম্পদ ও জীবনের মায়ার নত হয়ে, আর দলিত সম্পদায়কে কথিত সাম্যের আশায় ধার্মান্তরিত করা হয়। কাল ক্রমে ভাব বাদ প্রচারকগণ আধ্যাত্বিক গুরু বা পীর দরবেশের পরিচিতি লাভ করেন। জীবন ধারনের রসদ পত্র আসে ধর্মান্তরিত দের নিকট হতে, তারা কথিত পীর মোর্শেদের কৃপা এবং পূণ্য অর্জনের আশায় অর্থ সামগ্রী পীর মোর্শেদের হাতে তুলে দেয়। এভাবে কথিত পীরগন সম্পদ শালীহতে থাকে, যাহা বর্তমান সময়েও বিদ্যামান।

পীর-দরবেশের তলপী বাহক মুরিদরা কাল ক্রমে বিভিন্ন স্থানে নিজেকে পীর ঘোষনা দিয়ে তাদের আস্থানা গড়ে তুলে ইসলামী রীতি নীতির কথা বলে সমজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

এই ধারায় একজন স্বঘোষিত পীর সমাজে সম্পদ শালী হয়ে তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলেকে ইসলামী শিক্ষা দেওয়ার মানসে দেশের বাহিরে পাঠায়। ছেলেটি কয়েক বছর ধরে ইসলামী শিক্ষা লাভ করে। ইতিমধ্যে কথিত পীর সাহেব অসুস্থ্য হয়ে যায় আর খবরটি ছোট ছেলে জানতে পেয়ে ছুটে আসে পিতার কাছে। ছেলের মুখ দর্শনে পীর সাহেব দেহ ত্যাগ করেন আর শুরু হয় পীরের খেলাফত নিয়ে মুরিদানের মধ্যে মতভেত। কেউ মতদেন বড় ছেলের পক্ষে আর আনেকে মতদেন ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ছোট ছেলের পক্ষে। ছোট ছেলে ইসলামী লেবাস আর কলা কৌশলে পার পেয়ে যায়, সে হয়ে যায় গদ্দিনশীন পীর।

বড় ছেলেটি ছোট ভাইয়ের কতৃত্ব তথা পীরত্ব মেনে নেয়নি, সে জ্বলত্বে থাকে প্রতিহিংসায়। হিংসা চরীতার্থ করার সময় দ্রুত এসে যায় বড় ভাইয়ের কৌশলে।

বড় ভাই ছোট ভাই তথা গদ্দি নশীন পীরের বাহন ঘোড়াটিকে চোর লাগিয়ে চুরি করায়। ঘোড়াটি যাতে খুজে নাপায় তার জন্য চোরকে সর্তক করা হয়, ফলে এটিকে দুর দেশে নিয়ে বিক্রি করা হয়।

পীর সাহেবের ঘোড়া বলে কথা, বড় ভাই সহ মুরিদানেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঘোড়া খোঁজার কাজে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। দিনটি ছিলো শুক্রবার জুমার নামাজের দিন। বড় ভাই মুরিদানের মধ্যে ঘোষনা দেন যে, এখন আর ঘোড়া খুজে কাজ নেই চল জুম্মার নামাজ পড়তে হবে। সেই কথা সেই কাজ। মুরিদানেরা ছুটে যায় নিজ নিজ বাড়ীতে। তারা যথা নিয়মে অজু গোসল সেরে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে জমায়েত হয়।

পীড়ের ঘোড়া চুরি হওয়ার সংবাদটি ইতি মধ্যে কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। অনুসারী-হিতাকাংখিরা খবরের সত্যতা যাছাইয়ের জন্য পীড়ের দরবারে তমা মসজিদ প্রাংগনে হাজির হয়। একারনে ঐ দিন ছিল মসজিদে উপচে পড়াভীড়।

যথা সময়ে জুম্মার নামাজ শুরু হয়। পীর সাহেবের বড় ভাই সুযোগটাকে কাজে লাগায়। সে জুম্মার দুরাকাত ফরজ নামাযের মধ্যে ভাগে নামায পড়া বাদ দিয়ে মসজিদের বাইরে এসে আলাদা ভাবে একাই নামাজ পড়া শুরু করে।অন্যান্য মুসলি¬বৃন্দ পীরের সহিত জামাতের নামায-সহ অন্যান্য সূন্নত ও নফল নামায আদায় করে মসজিদের বাইরে এসে দেখেন যে পীর সাহেবের বড় ভাই একাই আলাদাভাবে নামায আদায় করছে।

বিষয়টি নিয়ে মুসলিদের মধ্যে প্রশ্ন জাগে যে, কেন পীরসাহেবর বড় ভাই জামাতে নামায আদায় না করে একাই আলাদা ভাবে নামায আদায় করছেন। তারা অপেক্ষয় রইলো। পীর সাহেবের বড় ভাই নামায শেষে চলে যাওয়ার ভান করে কিন্তু উপস্থিত মুসল্লীবৃন্দ তাকে চলে যেতে বারন করেন। তিনি মুসল্লীবৃন্দ গনের মাঝে ফিরে আসেন। মুসল্লীবৃন্দ তাকে জিঞ্জাসা করেন যে, কেন তিনি জামাত হতে বাহির হয়ে একাই নামায আদায় করলেন।

সমবেত মুসল্লীগনের প্রশ্নের উত্তরে পীর সাহেবের বড় ভাই উত্তর দিলেন যে, এটা বলা যাবে না, বিষয়টি রহস্য অত্যন্ত গোপনীয়। আরো বেড়ে যায় উপস্থিত মানুষের কৌতুহল। তারা নাছোড়বান্দা, তাদের কে বিষয়টি জানতেই হবে, কাজেই তারা পীড়াপীড়ি করতেই থাকেন।

পীরের বড় ভাই কৌশল করতে থাকেন, মুসল্লীদের জানার আকাংখা বাড়ানোর জন্য।এক পর্যায়ে সমবেত মুসল্লীদের উদ্দেশে বলেন, যেহেতু আব্বা হুজুরের গদ্দি নাশিন পীর সাহেব এখানে উপাস্থিত আছেন,তিনি এ মসজিদের ইমাম, তার ইমামতিতে আপনারা আজ পবিত্র জুমার নামায আদায় করেছেন, কাজেই তার অনুমতি ছাড়া বিষয়টি প্রকাশ করা যাবেনা।

সমবেত মুসল্লীবৃন্দের অনুরোধে পীরসাহেবের অনুমতি হল। তখন পীরসাহেবের বড় ভাই মুসল্লীবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলা শুরু করেন এভাবে:-

উপস্থিত মুসল্লীবৃন্দ। আপনারা জানেন যে,আব্বা হুজুর একজন কামেল বুর্জগ পীর ছিলেন। যিনি অন্যের মনের কথা বুঝতে পারতেন। এলমে তাসাউফ সর্ম্পকে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সর্ব শ্রেষ্ট মোকাম বেলায়েতে ওজমার অধিকারী ছিলেন। তিনি আমাকে এলমে তাসাউফ ও বেলায়েতে ওজমার শিক্ষা দিয়ে গেছেন, যার ফলে আমি দেখলাম যে, আমার ছোট ভাই বর্তমান গদ্দি নশিন পীর সাহেব ফরজ নামাজ আদায় কালে সুরা কেরাত পাঠ অবস্থায় এবং সেজদায় যাওয়া কালীন সময়ে তার ঘোড়া হারানোর কথা চিন্তা করেছেন। তাঁর চিন্তা দর্শনে আমার নামাজ ভঙ্গ হলো। এমতাবস্থায় আমি বাহির হয়ে আলাদা ভাবে নামাজ আদায় শুরু করি। বিষয়টি আপনারা ইমান সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন।

উপস্থিত মুসল্লীবৃন্দ পীর সাহেবের নিকট বিষয়টি জানার আগ্রহ প্রকাশ করায় তিনি তা স্বীকার করেন এবং বলেন যে, ঘোড়া হারানোর বিষয়টি এখনো আমার মনে বার বার ঘুর পাক খাচ্ছে।

উপস্থিত মুসল্লীবৃন্দ উত্তরের সততা খুজে পেল। তারা খুজে পেল তাঁদের ইমামতি করার মত যোগ্য ইমাম আর খুজে পেলো এলমে তাসাউফ শিক্ষায় শিক্ষিত আধ্যাতিক পীর এ কামেল।

উপস্থিত মুসল্লীবৃন্দ উল্লাস প্রকাশে নতুন পীর সাহেবকে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম প্রদক্ষিন করলো আর পীর সাহেব আধ্যাত্মিকতা লোক মূখে প্রচারিত হতে লাগলো ।

আজব পৃথিবী আর আজব মানুষের চিন্তা চেতনা, যে চিন্তা চেতনায় মনের কথা ধরতে পারলো তাকিনা এলমে তাসাউফের শিক্ষা। ভাব বাদী মোল্লা-পুরহিতের দল এভাবে যুগ যুগ ধরে প্রতারণা করে আসছে। যে প্রতারণা সাধারণ মানুষের চিন্তা চেতনার বাহিরে। এরা এভাবে সমাজে ভাল মানুষের মুখোশে প্রতারণা করে চলছে।

মানুষের ভাল কিছু বস্তু খোয়া গেলে তা মনের মধ্যে দাগ কেটে বসে এবং বার বার চিন্তায় আসে। কথিত পীর সাহেব ঘোড়া চুরি হওয়ার বিষয়ও ছিল এরূপ,যাহা তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

আর পীর সাহেবের ধুরদ্ধর বড় ভাই এসুযোগের সৎব্যবহার করে এলমে তাসাউফ শিক্ষায় শিক্ষিত আধ্যাতিক পীর সাহেব বণে গেল বিষয় টি এই রূপ নয় কি? কিন্তু মানুষ চিন্তা করলনা যে, ইমাম সাহেব একাগ্র চিত্রে নামাজ না পড়ে, নামাজের মধ্যে ঘোড়া হারানোর চিন্তা করছিলো। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ইমামের পিছনে নামাজ পড়েনি তার বড় ভাই। এখানে প্রশ্ন আসে যে, বড় ভাই কি একাগ্র চিত্রে নামাজ আদায় করেছে। তিনি যদি তাহা করে থাকেন তবে ইমামের মনের কথা নামাজ পড়া অবস্থায় কি ভাবে জানলেন?

ভন্ডামীর মুখোশে তার আধ্যাত্মিকতা তার সুনাম স্বল্প সময়ের মদ্ধে বিপুল সংখক মানুষের সমাগম হতে শুরু করল এ ভন্ডপীরের নিকট। পদধুলি নিতে মানুষ মরিয়া হয়ে উঠলো। পীরের ব্যবসাও উঠলো তুংগে। এ হলো প্রতারণার ধরণ। (চলবে)