(১ম পর্বের পর…)
.
মনুসংহিতার উন্মেষ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ
বেদ (Veda) ও উপনিষদের পরে ভারতবর্ষে ছয়টি আস্তিক দর্শনের আবির্ভাব ও পর্যায়ক্রমে স্তরে স্তরে এগুলোর ক্রমবিকাশ ঘটে। অর্থাৎ বেদের সংহিতাকে আশ্রয় করে পরবর্তীতে পর্যাক্রমে রচিত অন্য সাহিত্য বা স্মৃতিগ্রন্থগুলো যেমন ব্রাহ্মণ, আরণ্যক হয়ে উপনিষদের যুগে এসে পুরোপুরি ভাববাদে প্রবেশ করেছে। ততদিনে ভারতীয় সমাজে হিন্দুইজম (Hinduism) বা বৈদিক দর্শন রীতিমতো শেকড় গেড়ে বসেছে। এবং সেগুলোকে আশ্রয় করে পরবর্তীকালে রচিত বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থের মাধ্যমে ধর্মীয় শাসনতন্ত্র তার শেকড়-বাকড় ছড়িয়ে সমাজদেহে পূর্ণ থাবা বিস্তার করে ফেলেছে। তারই ঐতিহাসিক উৎকৃষ্ট নিদর্শন হচ্ছে মনুস্মৃতি (Manu smriti) বা মনুসংহিতা (Manu samhita), যাকে বৈদিক সংস্কৃতি বা ব্রাহ্মণ শাসনের সংবিধান বললেও বাহুল্য হবে না। সামাজিক বিশ্বাস এমন যে- এর মধ্যেই নিহিত আছে সমস্ত বেদার্থ। অথচ এই মনুসংহিতাই হলো পৃথিবীর অন্যতম বর্বর, নীতিহীন, শঠতা আর অমানবিক প্রতারণায় পরিপূণ বর্ণবাদী ব্রাহ্মণ্যবাদের আকর গ্রন্থ। ভারতীয় শ্রুতি ও স্মৃতির পরম্পরায় বৈদিক পরিমণ্ডলের ধর্মীয় দুরুহতা অতিক্রমের জন্যেই উপনিষদগুলোর পরবর্তী ধাপে মনুসংহিতার মতো ধর্মশাস্ত্র সৃষ্ট হয় বলে দাবী করা হয়। এটিকে বেদের নির্যাস স্মৃতিগ্রন্থ হিসেবে দাবি করা হলেও মূলতঃ তা উপরিউক্ত সবগুলো গ্রন্থেরই নির্যাস নিয়ে রচিত ব্রাহ্মণ্য শাসনতন্ত্রের নীতিসূত্রগ্রন্থ বলে মনে করা হয়। তার আলোকেই হিন্দু ধর্মের যাবতীয় রীতিনীতি জীবনযাপন পূজাশাসন আচারবিচার সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এবং এখনো তার ভিত্তিতেই ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে যাবতীয় ক্রিয়াকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। এমন কি বর্তমানেও হিন্দু ধর্মানুসারীদের জন্য প্রয়োগযোগ্য রাষ্ট্রীয় যে বিশেষ আইন যেখানে ‘হিন্দু আইন অনুযায়ী’ শব্দ-সমষ্টি দ্বারা ট্যাগ করা হয়ে থাকে তার অন্যতম উৎস হিসেবেও মনুসংহিতাই প্রধান। অর্থাৎ এটি সমাজ-উদ্ভূত বিশেষ আইনশাস্ত্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অথচ মজার ব্যাপার হলো, চা থেকে যেমন পেয়ালা গরম হয়ে থাকে তেমনি বেদের সহনীয় নিরপেক্ষতার চাইতেও কথিত বেদাশ্রিত মনুসংহিতার আরোপিত অনুশাসনগুলো শতগুণ কট্টর বর্ণবাদী, বৈষম্যমূলক ও তীব্র অমানবিকই শুধু নয়, অদ্ভুত বর্ণাশ্রম প্রচলনকারী এই শাস্ত্রগ্রন্থে বস্তুত মানবিক সত্তাময় মানুষের উপস্থিতি নাই বললেই চলে। আর নারী তো সেখানে মানুষই নয়, হয়তো অন্যকিছু।
.
প্রায় দুহাজার সাতশত শ্লোক সংবলিত দ্বাদশ অধ্যায়ে বিভক্ত বর্তমানে প্রচলিত ‘মনুসংহিতা’ ভারতীয় সমাজ ও সাহিত্যের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহুল আলোচিত গ্রন্থ নিঃসন্দেহে। এটিকে একাধারে স্মৃতিশাস্ত্র ও ধর্মশাস্ত্র হিসেবে অত্যন্ত মান্য করা হয়। এটাকে তৎকালীন বৈদিক আর্য সমাজ ও প্রচলিত হিন্দু সমাজের অবশ্য পালনীয় পবিত্র সংবিধান বা সামগ্রিক ও সম্পূর্ণ জীবনাচরণবিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। মনুসংহিতাকে পরিপূর্ণ একটি ধর্ম ও শাস্ত্র গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এজন্যে যে, এই গ্রন্থে বিশ্বজগৎ বা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় বস্তুনিচয়, গোটা প্রাণীকূল, উদ্ভিদ, গ্রহ-নক্ষত্র-পৃথিবী, আলো-জল-হাওয়া, দিন-রাত্রি-সময়-কাল-যুগ, জীব-জগতের উৎস, স্বভাব-চরিত্র-জীবনযাপন, গুণ ও দোষবাচক সমস্ত অনুভব-অনুভূতি, স্বর্গ-মর্ত্য-নরক, জীবলোক-মৃতলোক, সাক্ষি-বিচার-শাসন, আচার-অনুষ্ঠান, জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ, খাবার-খাদ্য, ভক্ষ্য-অভক্ষ্য, শূচি-অশূচি ইত্যাদি যাবতীয় বস্তুগত ও ভাবগত বিষয়ের সৃষ্টিরহস্য ব্যবহার-বিবেচনা বর্ণিত হয়েছে কল্পনার সমৃদ্ধ শিখরে অবস্থান করে অত্যন্ত আকর্ষণীয় নিজস্ব ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে। মোটকথা মনুসংহিতা হচ্ছে বিশ্বাসীদের কাছে একটি ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সমগ্র জীবন বিধান। কারণ এগুলো স্বয়ং মনুর বচন। যদিও শাস্ত্রগ্রন্থটির নাম থেকেই বুঝা যায় এটি মনুর রচিত সুক্ত বা শ্লোক বা স্মৃতিশান্ত্র, তবু এই মনুর পরিচয় নিয়েও যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়ে গেছে স্মৃতিশাস্ত্রেই। তাহলে এই মনু কে ?
.
কে এই মনু ?
সুপ্রাচীন বৈদিকযুগ থেকেই বিভিন্নভাবে এই মনু’র উল্লেখ পাওয়া যায় এবং তা থেকে মনুর প্রাচীনত্বই প্রমাণিত হয়। ঋগ্বেদের ২ মণ্ডল ৩৩ সুক্ত ১৩ ঋক-এ ঋষিগণ মরুদগণের উদ্দেশ্যে স্তুতি নিবেদনের সময় পিতা মনুর সুখপ্রদ ঔষধ মনোনীত করার কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে-

“যা বো ভেষজা মরুতঃ শুচীনি যা শন্তমা বৃষণো যা ময়োভু।
যানি মনুরবৃণীতা পিতা নস্তা শঞ্চ যোশ্চ রুদ্রস্য রশ্মি।।”
হে মরুৎগণ ! তোমাদের যে নির্মল ঔষধ আছে, হে অভীষ্টবর্ষিগণ, তোমাদের যে ঔষধ অত্যন্ত সুখকর ও সুখপ্রদ, যে ঔষধ আমাদের পিতা মনু মনোনীত করেছিলেন, রুদ্রের সে সুখকর ভয়হারী ঔষধ আমরা কামনা করছি। (২.৩৩.১৩)।

আবার অষ্টম মণ্ডলের ৩০ সুক্তের ৩ ঋকে দেবতাদের কাছে ঋষিরা প্রার্থনা জানাচ্ছেন, তাঁরা যেন পিতা মনু থেকে আগত পথ হতে ভ্রষ্ট না হন। দেবতাদের উদ্দেশ্যে মনুর যজ্ঞনিবেদনের কথাও ঋগ্বেদে বহুবার (৮.৩০.২, ১০.৩৬.১০ ও ১০.৬৫.১৪ প্রভৃতি) পাওয়া যায়। ঋগ্বেদে মনু’র এরকম বহু উল্লেখ থেকে তাকে একজন প্রভাবশালী স্বতন্ত্র মানুষ বলে মনে হয় এবং প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে নানা প্রসঙ্গে মনুকে মনুষ্যজাতির জনক আদিপিতা, পুরাতন ঋষি, অগ্নিদেবের সংস্থাপক, অর্থশাস্ত্রের প্রণেতা, কৃতযুগের রাজা প্রভৃতিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ঋগ্বেদের সর্বানুক্রমণীতে মনুকে পাঁচটি সুক্তের ঋষি বলা হয়েছে এবং বেদের নিরুক্ত ভাষ্যকার সায়ণ এইসব সুক্তের ভাষ্যে মনু-অর্থে বৈবস্বত মনুর উল্লেখ করেছেন।
.
তৈত্তিরীয় সংহিতায় মনু’র নির্দেশকে ‘ভেষজ’ বলা হয়েছে- “যদ্বৈ কিং চ মনুরবদৎ তদ্ ভেষজম্।” ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণে “সর্বজ্ঞানময়ো বেদঃ সর্ববেদময়ো মনুঃ” উক্তিটির মাধ্যমে মনুর মধ্যে সমস্ত বেদের জ্ঞান নিহিত আছে বলে প্রশংসা করা হয়েছে। ছান্দোগ্য উপনিষদে ঋষি বলছেন- “প্রজাপতি (ব্রহ্মা) মনুকে উপদেশ দিয়েছিলেন এবং মনুই প্রজাদের মধ্যে তা প্রচার করেন।”- “প্রজাপতি র্মনবে মনুঃ প্রজাভ্যঃ” (৩.১১.৪)। তৈত্তিরিয় সংহিতায় মনু থেকেই প্রজা সৃষ্টি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। মহাভারতেও অসংখ্যবার মনু’র উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে কখনো ‘স্বায়ংভুব মনু’ এবং কখনো বা ‘প্রাচেতস মনু’র উক্তি উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৩৬.৩৮-৪৬) বর্ণিত হয়েছে-

পুরুষোত্তম ভগবান ধর্মবিষয়ক লক্ষ শ্লোক রচনা করেছিলেন, যার দ্বারা সমগ্র লোকসমাজের পালনীয় ধর্মের প্রবর্তন হয়েছিলো (লোকতন্ত্রস্য কৃৎস্নস্য যস্মাদ্ ধর্মঃ প্রবর্ততে)। স্বায়ংভুব মনু নিজে ঐ ধর্মগুলি প্রচার করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে উশনাঃ ও বৃহস্পতি মনু-স্বায়ংভুবের গ্রন্থ আশ্রয় করে নিজ নিজ শাস্ত্র রচনা করেছিলেন।–
“স্বায়ংভুবেষু ধর্মেষু শাস্ত্রে চৌশনসে কৃতে।
বৃহস্পতিমতে চৈব লোকেষু প্রতিচারিতে।।”

আবার মহাভারতের অন্তর্গত ভগবদ্গীতায় বৈবস্বত মনুরও উল্লেখ দেখা যায়। ভগবদ্গীতায় ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ নিজের উপদিষ্ট যোগের প্রাচীনত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অর্জুনকে বলছেন-

“ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবান্ অহমব্যয়ম্।
বিবস্বান্ মনবে প্রাহ মনুরিক্ষাকবেহব্রবীৎ।।” (৪.১)
ভগবান ঐ যোগ পুরাকালে বিবস্বানকে বলেছিলেন এবং বিবস্বান নিজপুত্র বৈবস্বত মনুকে বলেছিলেন। পরে বৈবস্বত মনু ঐ যোগ ইক্ষাকুকে উপদেশ দিয়েছিলেন।

তবে খোদ মনুসংহিতার মধ্যেই মনুস্মৃতির উদ্ভব কাহিনী বর্ণিত রয়েছে ভিন্নভাবে। স্বয়ম্ভু ভগবান কর্তৃক পূর্বে অপ্রকাশিত এই বিশ্বসংসার সৃষ্টি ও সংহারের পর্যায়ক্রমিক বিশদ বর্ণনার এক পর্যায়ে এসে মনুসংহিতায় বলা হচ্ছে-

এবং স জাগ্রৎস্বপ্নাভ্যামিদং সর্বং চরাচরম্।
সঞ্জীবয়তি চাজস্রং প্রমাপয়তি চাব্যয়ঃ।। (১/৫৭)
এইরূপে সেই অব্যয় পুরুষ ব্রহ্মা স্বীয় জাগ্রৎ ও স্বপ্ন অবস্থার দ্বারা এই চরাচর বিশ্বের সতত সৃষ্টি ও সংহার করছেন।

এরপরই আমরা পেয়ে যাই এই শাস্ত্র প্রস্তুতির উল্লেখ-

ইদং শাস্ত্রং তু কৃত্বাসৌ মামেব স্বয়মাদিতঃ।
বিধিবদ্ গ্রাহয়ামাস মরীচ্যাদীংস্ত¡হং মুনীন্।। (১/৫৮)
ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রথমে এই শাস্ত্র প্রস্তুত করে আমাকে যথাবিধি অধ্যয়ন করিয়েছিলেন এবং আমি (মনু) মরীচি প্রভৃতি মুনিগণকে অধ্যয়ন করিয়েছি।

প্রখ্যাত শাস্ত্রভাষ্যকার মেধাতিথি মনুসংহিতার প্রথম অধ্যায়ের এই ৫৮ সংখ্যক শ্লোকের ভাষ্যে বলেন-

“নারদশ্চ স্মরতি। শতসাহস্রো গ্রন্থঃ প্রজাপতিনা কৃতঃ স মন্বাদিভিঃ ক্রমেণ সংক্ষিপ্ত ইতি।” অর্থাৎ এখানে নারদ বলছেন- “এই গ্রন্থ শতসাহস্র বা লক্ষ সন্দর্ভাত্মক; প্রজাপতি (ব্রহ্মা) এটি রচনা করেছেন। তারপর ঐ লক্ষ সন্দর্ভটিকে ক্রমে ক্রমে মনু প্রভৃতি মহর্ষিগণ সংক্ষিপ্ত করেছেন।”

এই একই শ্লোকের টিকায় কুল্লুকভট্ট নারদের উক্তি উল্লেখ করে বলেন-

ব্রহ্মা প্রথমে স্মৃতিগ্রন্থটি প্রণয়ন করেন; তারপর মনু নিজ ভাষায় তার সারসংক্ষেপ করেন এবং সেই সংক্ষিপ্ত গ্রন্থটিই তাঁর শিষ্যদের মধ্যে প্রচার করেন।

.
পুরাণে পৃথিবীকে সপ্তদ্বীপা কল্পনা করে সেই সেই দ্বীপে সাতটি জাতির পর্যায়ক্রমে বসতি স্থাপনের উল্লেখ দেখা যায়। এই সাতটি ছিল মূল জাতি। প্রত্যেক মূল জাতির আদি পিতা মনু; ফলে মোট সাতজন মনুর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এঁরা হলেন- স্বায়ংভুব, স্বারোচিষ, ঔত্তমি, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ ও বৈবস্বত। এঁদের মধ্যে বৈবস্বত মনুকে আর্যজাতির আদি পিতারূপে কল্পনা করা হয়েছে। মনুসংহিতায় এই মনুর কথাই বলা হয়েছে ১/৬১-৬৩ শ্লোকে। শ্রী হীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতে- “এইসব মনু ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়। প্রত্যেক মূল জাতির আদি পিতা এক এক জন মনু এবং তাঁদের নামানুসারেই সেই জাতির জীবিতকালকে ‘মন্বন্তর’ বলা হয়।” মনুসংহিতার প্রথম অধ্যায়ে (শ্লোক ৩২-৩৫) দেখা যায়, প্রজাপতি ব্রহ্মা থেকে বিরাট্ পুরুষের উৎপত্তি হয়েছিল এবং সেই বিরাট্ পুরুষ তপস্যার দ্বারা মনু-কে সৃষ্টি করেছিলেন। মনু আবার প্রজাসৃষ্টির অভিলাষে ক্লেশকর তপস্যা করে যে দশজন প্রজাপতি (এঁরা সকলেই মহর্ষি) সৃষ্টি করলেন তাঁরা হলেন- মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, প্রচেতা, বশিষ্ঠ, ভৃগু এবং নারদ। প্রথম অধ্যায়ের শ্লোক ৫৮-৫৯ অনুযায়ী বলা হচ্ছে, ব্রহ্মা মনুসংহিতায় আলোচনীয় শাস্ত্র অর্থাৎ বিধিনিষেধসমূহ প্রস্তুত করে প্রথমে মনু-কে অধ্যয়ন করিয়েছিলেন এবং তারপর মনু তা মরীচি প্রভৃতি মুনিগণকে পড়িয়েছিলেন। ভৃগুমুনি এই সম্পূর্ণশাস্ত্র মনুর কাছে অধ্যয়ন করলেন। চারটি বর্ণের ও সঙ্কর জাতিগণের ধর্মসমূহ জানার উদ্দেশ্যে মনু-সমীপে আগত মহর্ষিদের মনু জানালেন যে, তিনি এইসব শাস্ত্র ভৃগুকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং এই ভৃগুই ঐ শাস্ত্র আদ্যোপান্ত সকলকে শোনাবেন। মনুকর্তৃক এইভাবে আদিষ্ট হয়ে মহর্ষি ভৃগু খুশি হয়ে সকল ঋষিকে তাঁদের জিজ্ঞাস্যের উত্তর দিতে লাগলেন- এভাবেই মনুসংহিতা ভৃগু কর্তৃক সংস্কার ও সংকলিত হয়ে প্রচারিত হলো। এ প্রসঙ্গে মনুসংহিতার সর্বশেষ অর্থাৎ দ্বাদশ অধ্যায়ের অন্তিম শ্লোকটি লক্ষ্যণীয়-

ইত্যেতন্মানবং শাস্ত্রং ভৃগুপ্রোক্তং পঠন্ দ্বিজঃ।
ভবত্যাচারবান্ নিত্যং যথেষ্টাং প্রাপ্লুয়াদ্ গতিম্।। (১২/১২৬)
ভৃগুর দ্বারা কথিত এই মনু-সৃষ্ট-শাস্ত্র নিয়মিত পাঠ করতে থাকলে দ্বিজগণ সতত আচারনিষ্ঠ হন এবং যথাভিলষিত উৎকৃষ্ট গতি অর্থাৎ স্বর্গ লাভ করেন।

এইসব শাস্ত্রীয় বিভ্রম বা অহেতুক বিভ্রান্তিকর তথ্য উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ধর্ম ও সামাজিক ব্যাপ্তিতে এই মনু ও মনুসংহিতার অসাধারণ শাস্ত্রীয় গুরুত্ব এবং তার সমকালীন প্রভাব ও প্রাধান্যটুকু সম্যক ধারণা নেয়ার জন্যে। ভারতীয় সমাজ শাস্ত্র ও সংস্কৃতিতে নারীদেরকে মানুষ থেকে এক ঝটকায় ভোগ্যপণ্য সামাজিক সত্তা বানিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে পুরুষতান্ত্রিক ভোগের মহোৎসবে পরিণত করার মূল হোতা এই মনু গং যে এতোটা সর্বগ্রাসী প্রভাব বিস্তার করেছিলো, মনু-শাসনের নারী-নিবর্তনমূলক অঙ্গনে প্রবেশের আগে তার ব্যাপক আয়োজনের প্রেক্ষিতটাও জানা জরুরি বৈ কি। এ ব্যাপারে ভারতীয় শাস্ত্রগুলোতে একটু সতর্ক মনোনিবেশ করলেই এর গূঢ় অভিসন্ধিটুকু আঁচ করা যায়।
.
মনুর কাল ও আধিপত্য
প্রাচীনকাল থেকেই যে এই মনুসংহিতাকে স্মৃতিশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে, বহু প্রাচীন শাস্ত্রগ্রন্থেই এর উল্লেখ রয়েছে।
যেমন রামায়ণের কিস্কিন্ধ্যাকাণ্ডে দেখা যায়, রামচন্দ্রকর্তৃক আহত বানররাজ বালি রামচন্দ্রকে ভর্ৎসনা করলে রামচন্দ্র মনুসংহিতা থেকে দুটো শ্লোক উদ্ধৃত করে নিজ দোষ ক্ষালনে উদ্যোগী হয়েছিলেন-

“রাজভিঃ ধৃতদণ্ডাশ্চ কৃত্বা পাপানি মানবাঃ।
নির্মলাঃ স্বর্গমায়ান্তি সন্তঃ সুকৃতিনো যথা।।
শাননাদ্ বাপি মোক্ষাদ্ বা স্তেনঃ পাপাৎ প্রমুচ্যতে।
রাজা ত্বশাসন্ পাপস্য তদবাপ্নোতি কিল্বিষম্ ।।”
মানুষ পাপ করলে যদি রাজা তাকে দণ্ড দেন, তবে সে পাপমুক্ত হয়ে পুণ্যবান ব্যক্তির ন্যায় স্বর্গে যায়; রাজার দ্বারা শাসিত হলে, অথবা বিচারের পর বিমুক্ত হলে, চোর চৌর্যপাপ থেকে মুক্তি লাভ করে। কিন্তু রাজা চোরকে শাসন না করলে তিনি নিজেই ঐ চৌর্যপাপের দ্বারা লিপ্ত হন।

রামায়ণে উদ্ধৃত এই শ্লোক দুটি মনুসংহিতার অষ্টম অধ্যায়ের ৩১৬ ও ৩১৮ সংখ্যক শ্লোকে প্রায় একইভাবে পাওয়া যায়। এ থেকে মনে করা যায়, রামায়ণের সময়েও শ্লোকাকারে মনুসংহিতা আংশিকভাবে হলেও প্রচলিত ছিলো।
.
৮০০ থেকে ৮২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আবির্ভূত টীকাকার বিশ্বরূপ তাঁর যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতার টীকায় মনুসংহিতা থেকে দুশটিরও বেশি শ্লোকের পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক উদ্ধৃতি দিয়েছেন বলে P.V. Kane দেখিয়েছেন। সপ্তম শতকে আবির্ভূত বিখ্যাত অদ্বৈতবাদী বা মায়াবাদের জনক শঙ্করাচার্য তাঁর বেদান্তসূত্রভাষ্যে প্রায়ই মনুসংহিতা থেকে শ্লোক উদ্ধৃতি দিয়েছেন (উল্লেখ্য, বর্তমানকালের প্রচলিত হিন্দু দর্শন শঙ্কারাচার্যের এই মায়াবাদের উপরই আশ্রিত বলা যায়)। মোটামুটিভাবে চতুর্থ-পঞ্চম শতকের লোক মহাকবি কালিদাস তাঁর রচিত রঘুবংশের প্রথম সর্গে ১৭ সংখ্যক শ্লোকে দিলীপের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন-

এই রাজার শাসনপ্রভাবে মনুর সময় থেকে প্রচলিত চিরাচরিত আচার-পদ্ধতি থেকে তাঁর প্রজারা বিচলিত হননি-
“রেখামাত্রমপি ক্ষুণ্নাদা মনো র্বত্মনঃ পরম্।
ন ব্যতীয়ুঃ প্রজাস্তস্য নিয়ন্তু র্নেমিবৃত্তয়ঃ।।”

আবার চতুর্দশ সর্গে ৬৭ সংখ্যক শ্লোকে কালিদাস বলেছেন-

রাজা যাতে বর্ণ ও আশ্রম সুরক্ষিত করতে পারেন, তার জন্য মনু কিছু ধর্ম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন-
“নৃপস্য বর্ণাশ্রমপালনং যৎস এব ধর্মো মনুনা প্রণীতঃ।”

২০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত শূদ্রকের মৃচ্ছকটিক নাটকের নবম অঙ্কে মনুর একটি অনুশাসনের উল্লেখ রয়েছে এভাবে-

“অয়ং হি পাতকী বিপ্রো ন বধ্যো মনুরব্রবীৎ।
রাষ্ট্রাদস্মাত্তু নির্বাস্যো বিভবৈরক্ষতৈঃ সহ।।”
মনুর মতানুসারে পাপাচারী ব্রাহ্মণ বধ্য হবেন না, বরং এঁকে এঁর সমস্ত ধন-সম্পদের সাথে রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত করাই বিধি।

৫০০ খ্রিস্টাব্দের বেশ কিছুকাল আগেই আবির্ভূত জৈমিনি-সূত্রের ভাষ্যকার শবরস্বামী তাঁর ভাষ্যে মনু ও অন্য কয়েকজনকে উপদেশদাতা রূপে চিহ্নিত করেছেন এবং মনুসংহিতার অষ্টম অধ্যায় থেকে একটি স্মৃতিবিষয়ক শ্লোক (৪১৬ সংখ্যক) স্মরণ করেছেন এভাবে-

“এবং চ স্মরতি। ভার্যা দাসশ্চ পুত্রশ্চ নির্ধনা সর্ব এব তে।
যত্তে সমধিগচ্ছন্তি যস্য তে তস্য তদ্ধনম্।।”
স্মৃতিকারগণের মতে, ভার্যা, পুত্র ও দাস- এরা তিনজনই অধম; এরা তিনজনেই যা কিছু অর্থ উপার্জন করবে, তাতে এদের কোনও স্বাতন্ত্র্য থাকবে না, পরন্তু এরা যার অধীন ঐ ধন তারই হবে।

এসব উদাহরণ থেকে অনুমান করা ভুল হবে না যে আনুমানিক দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দ থেকেই এই মনুসংহিতাকে স্মৃতিশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে। ফলে এটাও স্পষ্ট যে এই সময়কালের আগেই অর্থাৎ দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই মনুসংহিতা রচনা সম্পন্ন হয়েছে। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন, খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে খ্রিস্টাব্দ ২য় শতকের মধ্যে মনুসংহিতা রচিত হয়েছিলো।
.
আবার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও কয়েকবার মনুর উল্লেখ পাওয়া যায়। কৌটিল্য বা চাণক্য মৌর্য চন্দ্রগুপ্তের সময় (৩২০-৩১৫ খ্রিঃ পূর্বাব্দ) আবির্ভুত হয়েছিলেন। অতএব এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মনুর নামে প্রচলিত কিছু শ্লোক ৩২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগেই প্রচলিত ছিলো। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের কয়েকটি উক্তির সাথে মনুসংহিতার বর্ণনার সামঞ্জস্য দেখা যায়। যেমন, “কন্যাদানং কন্যামলংকৃত্য ব্রাহ্মো বিবাহঃ। সধর্মচর্যা প্রাজাপত্যঃ। গোমিথুনাদানাদার্ষঃ। অন্তর্বেদ্যামৃত্বিজে দানাৎ দৈবঃ।” ইত্যাদির সাথে মনুসংহিতার তৃতীয় অধ্যায়ের বিভিন্ন ধরনের বিবাহের প্রকৃতি ও স্বরূপ বর্ণনা সংবলিত ২৪, ২৭-৩৪ শ্লোকগুলোর সাদৃশ্য লক্ষ্যণীয়। আবার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এবং কামন্দকীয় নীতিসারে ‘ইতি মানবাঃ’ বলে যে অভিব্যক্তি আছে, টীকাকারেরা ‘মানবাঃ’ শব্দটির ব্যাখ্যা করেছেন ‘মানবাঃ মনোঃ শিষ্যাঃ’ এভাবে। এ থেকে ধারণা করা হয় ‘মানবাঃ’ শব্দটি মনুর দ্বারা প্রচারিত শ্লোকগুলোকে আশ্রয় করে পরবর্তীকালে রচিত ধর্মশাস্ত্রগুলোর রচয়িতাদের বোঝানো হয়েছে; এদের মধ্যে অবশ্য ভৃগুই ছিলেন প্রধান। অতএব ‘ইতি মানবাঃ’ নামে কৌটিল্য সম্ভবত ভৃগুরচিত বর্তমানে প্রাপ্ত মনুসংহিতার কথাই বলতে চেয়েছেন।
.
আরেক স্মৃতিশাস্ত্রকার বৃহষ্পতির আবির্ভাবকাল ৫০০ খ্রিস্টাব্দের আগে। তিনিও প্রয়োজনবোধে বহুস্থানে মনুবচন উদ্ধৃত করেছেন। আবার অপরার্ক, কুল্লুক ভট্ট প্রভৃতি ভাষ্যকারগণও নিজ নিজ মন্তব্যের সমর্থনে বৃহষ্পতির ঐ উদ্ধৃতিগুলো উল্লেখ করেছেন। যেমন, কুল্লুক ভট্ট মনুসংহিতার প্রথম শ্লোকের টীকায় মনুবচনের প্রশংসাসূচক বৃহষ্পতির দুটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে-

“বেদার্থোপনিবন্ধৃত্বাৎ প্রাধান্যং তু মনুস্মৃতৌ।
মন্বর্থবিপরীতা যা স্মৃতিঃ সা ন প্রশস্যতে।।”
বেদের অর্থ ঠিক ঠিক ভাবে উপস্থাপিত করার জন্যই মনুস্মৃতির প্রাধান্য। যে স্মৃতি মনুবচনের বিরুদ্ধ তা নিন্দনীয়।

আবার-

“তাবচ্ছাস্ত্রাণি শোভন্তে তর্কব্যাকরণানি চ।
ধর্মার্থমোক্ষোপদেষ্টা মনুর্যাবন্ন দৃশ্যতে।।”
তর্ক, ব্যাকরণ প্রভৃতি শাস্ত্র ততক্ষণ পর্যন্তই শোভা পায়, যতক্ষণ মনুস্মৃতি আমাদের দৃষ্টির অগোচরে থাকে। মনু হলেন ধর্ম, অর্থ ও মোক্ষের উপদেষ্টা।

বোঝা যাচ্ছে, মনুবচনই বেদবাক্য হিসেবে শিরোধার্য্য হয়ে আছে। এমনকি এই মনুসংহিতায় আলোচনীয় বিষয়বস্তু সম্বন্ধে প্রথম অধ্যায়ের একটি শ্লোকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এভাবে-

“অস্মিন্ ধর্মোহখিলেনোক্তো গুণদোষৌ চ কর্মণাম্।
চতুর্ণামপি বর্ণানামাচারশ্চৈব শাশ্বতঃ।।
এই শাস্ত্রের প্রতিপাদ্য বিষয় হল- ধর্ম বা স্মার্তধর্ম; এখানে এই বিষয়টি বিস্তৃতভাবে বলা হয়েছে; যা কিছু ধর্ম নামে অভিহিত হতে পারে তা-ই এই শাস্ত্রে সমগ্রভাবে বলা আছে। বিহিত ও নিষিদ্ধ কর্মের গুণ ও দোষ বর্ণিত হয়েছে, এবং চার বর্ণেরই শ্বাশ্বত আচার-ব্যবহারও কথিত হয়েছে। অতএব ধর্ম-বিষয়ক জ্ঞানলাভের জন্য এই শাস্ত্রই যথেষ্ট, অন্য কোন শাস্ত্রের উপর নির্ভরশীল হতে হয় না,- এ-ই হলো এই শ্লোকের অভিপ্রেতার্থ। (১/১০৭)।

অর্থাৎ পরবর্তীকালের বৈদিক ধর্মে মানবসমাজের সর্বক্ষেত্রে মনুসংহিতার অনুশাসনই চূড়ান্ত, এর অন্যথা হবার উপায় ছিলো না। বস্তুত সভ্যতার নানান চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে এই বর্তমান যুগে এসেও সেই প্রাচীন মনুযুগের অনুশাসন থেকে এখনো যে মুক্ত হতে পারছি না আমরা, এটাই তিক্ত সত্য ও পরিতাপের বিষয়। এবং মানবতার কলঙ্কও।
.
মনুসংহিতার বিষয়বস্তু নানা ধারায় বিস্তারিত। বৈদিক ভাবপরম্পরাকে আশ্রয় করে মনুসংহিতা রচিত হয়েছে বলে প্রচার করা হলেও যে সময়ে এই গ্রন্থের জন্ম, সে সময়ের সমাজের দিকে দৃষ্টি রেখেও অনেক নতুন কথা এখানে বলা হয়েছে। ফলে মনুসংহিতায় বর্ণিত ব্রাহ্মণ প্রাধান্য, বর্ণভেদপ্রথা, বিবাহসম্পর্কীয় আলোচনা, নারীর স্বাতন্ত্র্য অননুমোদন, বর্ণ ও আশ্রম ব্যবস্থা প্রভৃতি প্রসঙ্গগুলো বেদসংহিতার কোথাও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকার কারণে বর্তমানযুগে এগুলোর নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। নইলে সুদীর্ঘকাল যাবৎ মনুবচনকেই বেদবাক্য শিরোধার্য্য করে ব্রাহ্মণ্যবাদ নামের যে অনৈতিক শাসন ব্যবস্থা এখনো নানারূপে চালু রয়েছে তা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হবে না এবং সেক্ষেত্রে নারীকেও পুরুষের ভোগ্যবস্তুর অপমানকর অবস্থান থেকে মানব সত্তায় উন্নীত করা যাবে না আদৌ। তাই বর্তমান বিজ্ঞান-চেতনা ও জ্ঞানস্তরের সাপেক্ষে মনুশাস্ত্রের অমানবিক আবহে ভাগ্যহত নারীর মানবেতর অবস্থান চিহ্নিত করার লক্ষ্যে মনুসংহিতার প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর উপর মুক্তদৃষ্টি নিক্ষেপ জরুরি। কেননা, এর মাধ্যমেই পরবর্তীতে সৃষ্ট ও প্রচলিত ধর্মতত্ত্বগুলোরও প্রকৃত গন্তব্য ও মৌলিক প্রবণতাটা কী এবং নারী কেন্দ্রিক চিন্তা-চেতনাটা কী তারও ধারণা পেতে সহায়ক হবে।

(চলবে…)
[১ম পর্ব ] [*] [৩য় পর্ব ]