প্রানের উৎপত্তির সাথে আসে ক্ষুদা। ক্ষুদায় আসে স্বার্থ আর এই স্বার্থ হতে শুরু হয় আমিত্ব। আমিত্বে জয়লাভ করে কৌশলী ও বলবান মানুষ। যারা কৌশল করে প্রতারণার মাধ্যমে, তাহাদেরকে বলতে হয় ঠকবাজ। তারা মানুষকে প্রতারণা মাধ্যমে ঠকায়। ঠকবাজদের ঠগামিটা নেশায় পরিনত হয়। এই ভাবে চলে প্রতারণা মহা প্রতারণা।

খুন-খারাবি অন্যায় অবিচার চলে স্বার্থের জন্য। স্বার্থের কাছে দুর্বল ও শান্তিপ্রিয় প্রান হয় অসহায়। প্রানী কুলের মধ্যে মানুষের যেহেতু বিবেক বুদ্ধি আছে,তাই বিবেকবান মানুষের কাছে ন্যায় অন্যায় তথা ভাল মন্দের চিন্তার উদ্ভব ঘটে আর চিন্তাশীল মানুষ শুরু করে ভাল-মন্দের হিতোপদেশ, যা সমাজকে অনেকটা নিয়ন্ত্রনে রাখে । হিতোপদেশ দাতাদের সমাজে অনেকটা অবস্থান তৈরী হয় । এই হিতাপদেশ হতে ভাববাদের উদ্ভব। এই ভাবে চলতে চলতে কিছু কিছু মানুষ এই ধারাকে পুজি হিসাবে ব্যবহার করে, নিজের ফায়দা হাসিল করার জন্য। এই ধারার একটি প্রসংশনীয় দিক হচ্ছে যে, ইহাতে সমাজকে সুশংঙ্খল করার চেষ্টা করা হয়েছে। নীতিকথা ও ভালমন্দের মাধ্যমে। ভাববাদী গুরুদের উপদেশমালা কোন কোন ভাববাদে বেশি কম আছে। এই ক্ষেত্রে হয়তো বা কেউ বিশদ বর্ননা করেছেন, কেউ বা সংক্ষিপ্ত বর্ননা করেছেন, কিন্তু বিষয়বস্তু একইরুপ যা ন্যায় অন্যায়ের মধ্যে শোভিত। ভাববাদী গুরুরা সকলেই ঐ সকল উপদেশমালা ঈশ্বর প্রেরিত বলে জোরালো ভাবে দাবী করেছেন। কারন হচ্ছে নিজকে ঈশ্বর প্রেরিত বলে পুজনীয় হওয়া। যে ব্যক্তিটি প্রথম তার নিজস্ব কথাগুলি ঐশ্বরিক বানী হিসেবে দাবী করে মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে নিজের অলস ও বিলাসী জীবন যাপনের ব্যবস্থা করেছেন, তিনিই হচ্ছেন ভাববাদের প্রথম প্রতারক। তিনি ভাববাদে প্রতারণার দ্বার খুলে দিয়েছেন। গুরুদের দাবীকৃত ঐশ্বরিক বানীগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আর ঐ গ্রন্থগুলির মর্মানুসারে ভাববাদ পরিচালিত হচ্ছে। হিতোপদেশ গুলির কাছে মানব সমাজ ঋণী।

ভাববাদের নীতিগত কথা মালার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আস্তিক ও নাস্তিক একমত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাববাদ ও বস্তুবাদের মধ্যে দ্বন্দ লক্ষ্যণীয়। ভাববাদে একে অপরের ক্ষতি সাধনে ভালমন্দের বিবেচনা না করে তারা আবেগে হত্যা খুন ধর্ষন ও লুন্ঠনে লিপ্ত হন, ঈশ্বরের নির্দেশ রুপে চালিয়ে যান ঐ সকল কর্মকান্ড। ভাববাদী গ্রন্থের ভাষা নিজ নিজ অনুসারীগনকে উৎসাহিত করেছে বলে প্রতিয়মান হয়,যা কোরান সহ বিভিন্ন ভাববাদী গ্রন্থে প্রমাণিত।

ভাববাদী গ্রন্থের উপদেশমালার সাথে তথা ভাল-মন্দের সাথে বিজ্ঞান বা দর্শনের প্রধান বিরোধ ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে। ভাববাদ অনুযায়ী মহাবিশ্ব সহ সব কিছু ঈশ্বরের সৃষ্টি। আর বিজ্ঞান প্রমান সহ তথ্য দিচ্ছে, মহাবিশ্বের সব কিছুই উদ্ভব হয়েছে প্রকৃতিগতভাবে। এখানে ঈশ্বরের কোন ভূমিকা নেই। ঈশ্বর হল একটি কাল্পনিক সত্ত্বা। ভাববাদের ভাষা সমূহ এই ক্ষেত্রে কল্পনাপ্রসূত ও বিভ্রান্তি কর যার বাস্তবতার প্রমান পাওয়া যায়না।

এখানে অলোচ্য বিষয় এই যে, ভাববাদী গ্রন্থগুলি যদি ঈশ্বর তথা স্রষ্টা প্রেরীত হয়ে থাকে এবং মহা বিশ্বের যদি স্রষ্টা থাকে তবে সৃষ্টিতত্ত্বে কেন বিজ্ঞান ইহার বাস্তবতা খুজে পায় না। বিজ্ঞান কেন সে সকল তত্ত্বকে নিছক কল্প কাহিনী হিসাবে দেখতে পাচ্ছে। ভাববাদীতত্ত্বে বাস্তবতার অভাব কেন?

এই অধ্যায়ে আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মহাবিশ্বের কিছু তথ্য, ভাববাদী গ্রন্থ ও বিজ্ঞান কি বলে তাহা নিয়ে আলোচনা করবো। তথ্যগুলির বাস্তবতা অনুসন্ধান করব।

এই আলোচনায় ইতি পূর্বের কিছু আলোচ্য বিষয়ের পূনরাবৃত্তি হবে মর্মে আমি পাঠক সমাজের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

প্রথমতঃ আলোচনা করি সূর্য ও পৃথিবীর বিবর্তন নিয়ে। পৃথিবী হতে সূর্যের দুরুত্ব নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল। আর তেরলক্ষ পূথিবী একত্র করলে সূর্যের সমান হবে অথাৎ পৃথিবীর চেয়ে সূর্য তের লক্ষ গুণ বড়। ভাববাদীরা মনে করতো যে, গ্রহ নক্ষত্র গুলো পূথিবী হতে ছোট। তারা দুর থেকে দেখে দেখে ঐ সকল গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে অলৌকিক কল্প কাহিনী রচনা করেছেন।

যেমন পূথিবী থেকে দেখলে মনে হয়, সূর্য প্রতিনিয়ত পূথিবীকে প্রদক্ষিন করছে আর ভাববাদীরা দুর থেকে দেখে দেখে উহা ভাববাদী গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। ঐ সকল তথ্য সৃষ্টার বানী রুপে চালিয়েছেন, আর অনুসারীগন এই অন্ধ বিশ্বাসে বিশ্বাসী। ভাববাদী যাজকরা এখনো বিভিন্ন ভাববাদী প্রচার অনুষ্ঠানে সূর্যকে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে বলছেন ও তার সাটির্ফিকেট দিচ্ছেন।

ভাববাদী অনুসারীরা অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন। এই অন্ধ বিশ্বাসী কুসংস্কারাছন্ন অনুসারীগন বিজ্ঞানের বাস্তবতা কে স্বীকার করে না কিন্তু বিজ্ঞানের দানগুলি ভোগ করে।

ভাববাদীদের ভ্রান্ত ধারনা কে সর্ব প্রথম আঘাত করেন পিথা গোরাস (গনিতবিদ) এবং রোম বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কোপার নিকাস। তাঁরা সূর্য নয় বরং পৃথিবী সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে তা প্রমান করেছেন। ইহা ছাড়া গ্যালোলিও দুরবীনযন্ত্র আবিষ্কার করে ভাববাদীদের কল্পকাহীনি গুলোর অসারত্ব প্রমান করেছেন।

ভাববাদী গ্রন্থে যা আছে তা তার অনুসারীগন একবাক্যে সত্য হিসাবে মেনে নেন । এক্ষেত্রে সুষ্ঠ বা বাস্তব চিন্তার অবকাশ নাই, যুক্তি ও প্রমানের দরকার নাই। ইহা হরণ করা হয়েছে। ভাববাদী ধারনাকে অবাস্তব বা অস্বীকার করলে রক্ষা নেই। ফলে বিজ্ঞানের মহা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে পৃথিবী অনেক মহামুল্যবান প্রান ঝরে গেছৈ। যেমন, জ্যেতির বিজ্ঞানী ব্রনো, ব্যাথোলোসি, স্যার ওয়াল্টার,প্রমূখ বিজ্ঞানীগন। তাদেরকে ফাসির কাষ্টে/ আগুনে পুড়ে এবং বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে । তাঁদের অপরাধ ছিলো ভাববাদী তথ্যকে মিথ্যা প্রমানিত করে বিজ্ঞানের বাস্তব সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা।

পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রে আজ বিজ্ঞানীদের দেয়া তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত। মিথ্যা প্রামানিত হয়েছে ভাববাদের তথা ঈশ্বরের বানী । এতে ঈশ্বর পরিনত হয়েছে এক কাল্পনিক সত্ত্বায়। আর ঈশ্বর কাল্পনিক হলে তার বানীর অস্তিত্বও থাকেনা।

দ্বিতীয়তঃ ভাববাদে পাওয়া যায়, ঈশ্বর সৃষ্ট মানব/মানাবি হতে মানুষের বংশ বিস্তার আর পৃথিবী জুড়ে মানুষের বসবাস। ইসলামী মতে প্রথম সৃষ্ট মানুষ হলো আদম। সনাতন পন্থীদের মতে প্রথম মানুষ হলো মনু। অন্যান্য মতবাদে কল্পিত প্রথম মানুষের ভিন্নভিন্ন নাম আছে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অঞ্চলে ঐ প্রথম মানুষের আবির্ভাব বলে জোরালো দাবী করেছেন। আর তাদের দাবীর স্বপক্ষে বলেছেন যে, ঈশ্বর প্রথম মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে ভাষা সহ প্রয়োজনীয় সবকিছু শিক্ষা দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরন করেছেন। ইসলামী মতে আদমের ভাষা আরবী আর সনাতন পন্থিদের মতে মনুকে সাংস্কৃতিক ভাষা শিক্ষা দিয়ে ঈশ্বর তাকে প্রেরন করেছেন। অন্যান্যদের মতেও অনুরুপ দাবী করা হয়েছে। ঐসকল মতালম্বীদের দাবীর ভিত্তিতে নিন্মে একটি বাস্তব ভিত্তিক আলোচনা সম্মানীত পাঠক সমাজের নিকট পেশ করবো যা কয়েক বৎসর পূর্ব হতে আমার চিন্তা শক্তিকে নাড়া দিচ্ছে।

বিষয়টি এরুপঃ ধরে নেই আল্লাহ তায়ালা আদম সৃষ্টি করে তাকে আরবী শিক্ষা দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরন করেছেন। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা আদমকে আরবি শিক্ষা দিয়েছেন কাজেই আদমের বংশধর আরবী শিক্ষা লাভ করবেন এবং তা বংশানুক্রমিক ভাবে চলবে। আদমের বংশ ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধির ফলে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানে গিয়ে কি তারা আরবী ভাষা বাদ দিয়ে নতুন ভাষা আবিস্কারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন? আর ছেলেমেয়েদেরকে পুরাতন ভাষার(আল্লার ভাষা) বদলে তাদের আবিস্কৃত ভাষা শিক্ষা দিয়েছিলেন? একটু ভেবে দেখুন এখানে যদি মানুষ সৃষ্ট হয়ে থাকে আর ভাববাদের মতে ঈশ্বর যদি ভাষা শিক্ষা দিয়ে থাকে তবে বিশেষ করে ভিন্নভিন্ন ভাষা হওয়ার কারন কি? বিশেষ করে ভাষার মুল প্রয়োজনীয় শব্দ গুলির পরিবর্তন অকল্পনীয়। ধরুন বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় শব্দ সমুহের কিভাবে পরিবর্তন হয়। তবে কি তারা ঈশ্বরের উপর গোস্বা করে, ঈশ্বরের ভাষা বাদ দিয়ে নিজেরাই নতুন ভাষা আবিস্কার করে পরবর্তী প্রজন্ম কে শিক্ষা দিয়ে গেছেন ?

আমার এই ক্ষুদ্র চিন্তাটি পরবর্তীতে আকাশ মালিক সাহেবের বোকার সর্গ নামক গ্রন্থে পড়ে আমার চিন্তার বাস্তবতা খুজে পেয়েছি। তাই আমি আকাশ মালিক সাহেবের নিকট কৃতজ্ঞ।

উপরোক্ত বিষয়টিতে পরিস্কার ভাবে বুঝা যায় যে, আদমের সৃষ্টি এবং ভাষা শিক্ষা দেওয়াটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বিজ্ঞানে প্রমানিত প্রান সৃষ্ট নহে, প্রানের উৎপত্তি হয়েছে। আর যেহেতু প্রানের উৎপত্তি হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে, তাই অঞ্চল ভিত্তিক প্রয়োজনে মানুষ বিভিন্ন ভাষা আয়ত্ব করেছে বাঁচার তাগিদে। এই হলো বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষার কারন। একজোড়া মানুষ হতে যদি মানুষের বংশ বিস্তার হত তাহলে মানুষের ভাষা একটিই হত, নয় কি ?

তৃতীয়তঃ– আল-কোরআনের সুরা ইউনুস আয়াত (৫) এর মর্ম বানীতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, আমি সুর্যকে তেজ ময় আর চন্দ্রকে জ্যের্তিময় করে সৃষ্টি করেছি।

সুর্যের তাপ আছে একটি শিশু ও তা বলে, কিন্তু চন্দ্রের কি আলো আছে ? বিজ্ঞান প্রমান করেছে যে চন্দ্রের কোন আলো নেই। আমরা যে আলো পৃথিবী থেকে দেখি তাহা সুর্যের আলোর প্রতিফলন। চন্দ্রের যে আলো নেই ইহা বিশ্ব স্বীকৃত এবং বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত। চন্দ্র পৃথিবীর উপগ্রহ। চন্দ্রে বায়ু ও পানি নেই ফলে এখানে প্রানের উৎপত্তি হয় নি।

চতুর্থতঃ কোরআনে নবী মোহ্ম্মাদের আকাশ ভ্রমনের কথা বলা হয়েছে। তিনি ৭ম আকাশ ভ্রমন করে দোজখ বেহেস্ত স্বচক্ষে অবলকন করেন। পৃথিবীতে একমাত্র বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ছাড়া প্রত্যেক ভাববাদী গ্রন্থে স্বর্গ নরকের অবস্থান লক্ষ্যনীয় স্বর্গ নরকের গঠন প্রনালী প্রায় একই রকম দেখা যায় সকল ভাববাদী গ্রন্থের বর্ননাতে। তবে এখানে প্রশ্ন আসে যে, ভাববাদী গুরু মোহাম্মদের দোজখ বেহেস্ত স্বচোখে দেখে এলেন সপ্তম আসমান ভ্রমন করে কিন্তু পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের মধ্যে শুধু তিনটির খবর পেলেন আর চারটি মহাদেশের কোন খবর পেলেন না কেন? এই চারটির মধ্যে তিনটিতেই মানুষের বসবাস ছিল। সেই সকল মহাদেশ তথা সেই সমস্ত মানুষের তিনি খোজ পাইলেন না কেন? তাদের অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে পারলেন না কেন? ৩টি মহাদেশের মানুষের জন্য কি কোন নবী পয়গম্বর/অবতারের দরকার ছিল না? নবী পয়গম্বর সব আরবে আর অবতার সব ভারতে কেন? পৃথিবীর অন্য স্থানে ওনাদের মত নবী পয়গম্বর/অবতারদের দরকার কি ছিল না?

এই বিষয়টিতেই নিদির্ধায় বলা যায় যে, যেহেতু স্বর্গ নরক ভাববাদীদের কাল্পনিক সৃষ্টি যা মহা অস্ত্র রুপে ব্যবহার করে মানুষকে সর্বাত্মকরনে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়েছে। যার কোন বাস্তবতা নাই, আর এই কল্পিত নরকের ভয় না দেখালে কি মানুষ কল্পিত ঈশ্বরকে ভয় করতো? এই নরকের ভয়ে কল্পিত ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি আদায় করা হয়েছে। মানুষ ঐ অস্ত্রের ভয়ে বাস্তব সত্যকে প্রকাশ করার সাহস পায় না ।

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় মহাবিশ্বের নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত তথ্য সমুহ বিশ্বে বরনীয়। ভাববাদী পুরোহিত,মোল্লা ও পাদরীর দল বিজ্ঞানের বাস্তবতাকে এড়িয়ে ভাববাদের কল্প কাহিনী জোরালো ভাবে উপস্থাপন করে বিশ্বমাঝে অনুসারী গঠন করে চলেছেন। এই উজবুক শ্রেনীর অনুসারীরা বাস্তবতার খোজ খবর রাখে না, তারা অন্ধ বিশ্বাসে বিশ্বাসী।

ভাববাদী গ্রন্থের তথ্য উপাত্তে বুঝা যায় পৃথিবীটা অনেক বড় আর গ্রহ নক্ষত্ররাজি ছোট ছোট বস্ত বিশেষ যা শুধু মাত্র আলোক পিন্ড। এই নক্ষত্ররাজীর একটা হতে আরেকটার দুরুত্ব,আয়তন ও বিশালতা সম্পর্কে কোথাও বাস্তব ভিত্তিক তথ্য ভাববাদী গ্রন্থে উল্লেখ্য নাই। তথ্য গুলি স্রষ্টার বলে চালানো হয়েছে। যা পৃথিবী হতে বসে বসে রচিত বাস্তবতা বর্জিত কল্প কাহিনী মাত্র। নক্ষেত্ররাজির সংখ্যার ক্ষেত্রেও ভাববাদে ভাওতাবাজি করা হয়েছে।

পঞ্চমতঃ মেঘ মুক্ত আকাশে কোন কোন সময়ে দেখা যায় উল্কা পাতের দৃশ্যঃ- উল্কাপাত সম্পর্কে আল কোরানের শুরা আছ সাফ্ফাত আয়াত (৭,৮)।

আয়াত (৭) তাকে আমি হিফাজত করেছি প্রত্যেক নাফরমান শয়তান থেকে। (৮) ফলে তারা উর্ধ জগতের (কথা বার্তার) কিছু শুনতে পায় না। (কিছু শুনতে চাইলেই) প্রত্যেক দিন উল্কা নিক্ষেপিত হয়।

আল কোরানের ভাষ্য মতে বুঝা যায়, উল্কাপাত হচ্ছে শয়তানকে প্রস্তর নিক্ষেপের অংশ। আল্লাহ শয়তানকে তাড়াবার জন্য উল্কা-খন্ড নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকে। এই উল্কা কি কোন দিন শয়তানকে আঘাত করতে পেরেছে? আল্লাহর উল্কা নিক্ষেপ লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয় কেন ? শয়তান যাতে উর্ধে উঠতে না পারে তার কি কোন ব্যবস্থা নাই? বিষয়টি হাস্যকর নয় কি?

বিজ্ঞান মতে পৃথিবীর উৎপত্তি হয় সুর্য হতে। প্রথমে পৃথিবী ছিল জলন্ত বাস্প। ক্রমে শীলত হলে ইহার উপরিভাগ কঠিন আকার ধারন করতে থাকে। বহিভাগ শীতল হওয়ার ফলে শক্ত হতে থাকে। ফলে ভু গর্ভের উপর চাপ পড়ে এবং ভুগর্ভের উপ্তত্ত তরল পদার্থ বহিরাবারন ভেদ করিয়া উর্ধে উঠে। ঐ সকল পদার্থ বায়ু মন্ডল ভেদ করিয়া ছিন্ন/ভিন্ন আকার প্রাপ্ত হয়ে শীতল হয় আর কঠিন আকার ধারন করে এবং মহা আকাশে ঘুড়তে থাকে। এই গুলি হচ্ছে উল্কা এবং এই গুলি বিভিন্ন আকারের,ছোট-বড়। যেহেতু উল্কাগুলি ভাসমান এবং ঘুর্ণায়মান তাই ঘুরতে ঘুরতে কোন সময় পৃথিবীর বায়ু মন্ডলের দিকে এলে বাতাসের সার্থে ঘর্ষনের ফলে উপ্তপ্ত হয়ে জ্বলে উঠে। ইহার কোন কোনটি বাতাসের সাথে ঘর্ষনে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বায়ু মন্ডলে নিঃশেষ হয়ে যায়, আর কোন কোনোটির অংশ বিশেষ ভূ-মন্ডল পতিত হয় ।

এই হলো উল্কাপাত নিয়ে আল-কোরান এবং বিজ্ঞানের তথ্য। বর্তমান পৃথিবীতে বিজ্ঞানের তথ্যটি প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচালিত। আর কোরানের তথ্যটি অচল,ভাওতা বাজি।

ষষ্ঠতঃ পানি দানঃ- আল কোরানের সূরা আল নাহল আয়াত (১০) এ বলা হয়েছে, তিনিই আসমান থেকে তোমাদের জন্য পানি বর্ষন করেন তার কিছু অংশ হচ্ছে পান করা আর কিছু অংশ দ্বারা গাছপালা (জন্মায়) যাতে তোমরা (জন্তু জনোয়াদের) প্রতিপালন কর। আয়াতটির ভাষ্যকার আল্লাহ নয় অন্যকোন তৃতীয় পক্ষ। কারন হল আল্লাহ নিজকে “তিনি” বলেন কিভাবে?

সূরাক্বাফ আয়াত (৯) আকাশ থেকে আমি বরকত পূর্ন পানি অবর্তীন করেছি। তা দিয়ে উদ্যানমালা ও শস্য রাজী পয়দা করেছি। যা (কেটে কেটে) আহরন করা হয়।

আলোচ্য আয়াত দুইটিতে দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহ আসমান থেকে জমিনে বৃষ্টি দান করেন। বিজ্ঞানে আসমান বলে, কোন বস্তু নাই, আসমান মহা-শূন্যের রুপ মাত্র। যার কোন বাস্তবতা নাই ।

আর আসমান থেকে বৃষ্টিপাত হয় না। বৃষ্টিপাত হয় মেঘমালা থেকে, তবে আসমান থেকে বৃষ্টি দান কথাটি কি অপরিপক্ক নয়? বাক্যটি গেঁয়ো অশিক্ষিত মানুষের কথার মত মনে হয়না কি?

ইহা ছাড়া ইসলামি মতে অন্যত্র পাওয়া যায় মিকাইল ফেরেস্তা জল বন্টন করে আর সনাতনী মতে জলদেবী জল দান করে।

জল দেবী আর মিকাইল ফেরেস্তা যদি পৃথিবীতে জল দান করে তবে মরু ভূমিতে বৃষ্টি পাত হয় না কেন? মিকাইল ফেরেস্তা বা জল দেবীর বৃষ্টি দানের কার্পন্যতা কেন মরুভূমিতে ? কেন তারা সেখানে বৃষ্টি দান করেন না।

বিজ্ঞান প্রমান করেছে যে, বৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ দরকার। যেখানে বৃষ্টিপাতের জন্য পরিবেশ আছে সেখানে বৃষ্টি পাত হয় আর যেখানে প্রকৃতিক পরিবেশ নাই সেখানে বৃষ্টি পাত হয় না। মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের প্রকৃতিক পরিবেশ নাই তাই বৃষ্টিপাত হয় না। ইহাই চিরন্তন সত্য। মিকাইল ফেরেস্তা/ জল দেবীর জল দান ভাব বাদী গুরুদের বনানো গল্প।

সপ্তমতঃ চন্দ্র ও সূর্য গ্রহন সর্ম্পকে সনাতনী পৌরানিক মতে জানা যায় যে, রাহু ও কেতু নামক দেবতাদ্বয় রাগান্বিত হয়ে সূর্য্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করে, ফলে সূর্য গ্রহন ও চন্দ্র গ্রহন হয়। এই মতে সনাতন মতালস্বীরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করেন, সূর্য ও চন্দ্রের বিপদ মুক্তির জন্য আর মুসলমানগন দু’রাকাত নকল নামাজ আদায় করেন বলে জানা যায়, উদ্দেশ্য চন্দ্র সূর্যের বিপদমুক্তি। হিন্দু মুসলমানগনের চন্দ্র-সূর্য গ্রহন সর্ম্পকিত চিন্তা চেতনার তেমন কোন পার্থক্য নেই।

চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের বৈজ্ঞানিক তথ্যে পাওয়া যায় যে, সূর্য হতে পৃথিবীর দুরুত্ব ৯ কোটি ৩০ লক্ষ্ মাইল আর পৃথিবী ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টায় একবার সূর্যকে প্রদক্ষিন করে যা পৃথিবীর বার্ষিকগতি। আবার পৃথিবী হতে চন্দ্রের দুরুত্ব ২ লক্ষ ২৯ হাজার মাইল আর চন্দ্র পৃথিবীকে সাড়ে ২৯ দিনে একবার প্রদক্ষিন করে। পৃথিবী ও চন্দ্রের এই ঘুর্নিয়মান গতির ফলে কোন কোন সময়ে সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সরল রেখায় আসে । এরুপ আবর্তনের ফলে যে সময় পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চন্দ্র আসে তখন দিন হলে সূর্য গ্রহন দৃষ্ট হয়। আবার একই ভাবে চন্দ্র সূর্যের মাঝে পৃথিবী এলে সময়টি পূর্নিমার রাত্রী হলে চন্দ্র গ্রহন দৃষ্টি হয়। গ্রহনের ইহাই বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা।

অষ্টমতঃ পাহাড় সমূহ জমীনের গায়ে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছেন। সূরা আন নাযেয়াত আয়াত (৩২) এবং আমি এজন্য পৃথিবীতে পর্বত মালা স্থাপন করেছি। যেন তা সহ এটি না নড়ে।
আয়াত দুটোর বানীতে বুঝা যাচ্ছে যে, পাহাড় পর্বত পৃথিবীকে সুদৃঢ় যেন তা না নড়ে।

বিজ্ঞানে প্রমানিত, পৃথিবীর উৎপত্তি হয় সূর্য থেকে, যা ছিল একটি জলন্ত বাষ্পীয় পিন্ড এই পিন্ডটি ক্রমে ক্রমে তাপ ত্যাগ করে অপরিভাগ শিতল হয়ে সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং উচু নিচু হয় যার ফলে পৃথিবীর উপরিভাগে বহুবিধ ভাজ পড়ে উচু নিচু হয়ে যায়। ভাজের সর্ব নিন্ম অঞ্চল সমুদ্র, সমতল অঞ্চল হয়। সমভূমি ও সর্বচ্চ উচু স্থান হয় পাহাড় পর্বত।

বিজ্ঞান মনে করে পৃথিবীটা এমন কোন হালকা বস্তু নয় যে, কোন কারনেই ইহা নড়চড় করবে। একে নড়চড়ের কবল থেকে রক্ষা করতে পেরেক দিয়ে আটকাতে হবে? পৃথিবীর ভর সম্পর্কেএতটুকু জ্ঞান থাকলে ঐ রুপ অবাস্তব গল্পের অবতারনা হত না । ধর্মান্ধরা ইহাতেই বিশ্বাসী।

যা হউক ভাববাদী সমাজে অনেক কল্প কাহিনী প্রচালিত। ভাববাদীরা ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। তারা মনে করেন যে, ঈশ্বর ভাগ্য নির্ধারন করেন আর এই ভাগ্যের উপর কারো হাত নাই।

ভাববাদী সমাজ তাহা মেনে চলে অন্ধ বিশ্বাসে। ধন সম্পদ ঈশ্বরীক দান। ঈশ্বর যাকে ইচ্ছা তাকে ধন সম্পদ দান করেন (আল কোরান দেখুন) সনাতন পন্থিদের মধ্যেও এর প্রচলন রয়েছে । ভাববাদীরা ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞানীগন মনে করেন যে, যারা পরিশ্রমী সংযমী আর জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত তারা ততো উন্নত। এখানে ধন সম্পদ কারো দান নয় । ধন সম্পদ পরিশ্রম ও জ্ঞান দ্বারা অর্জিত ।

বজ্রপাত সম্পর্কে মুসলমান সমাজে প্রচলিত যে, মিকাইল ফেরেস্তা বৃষ্টি প্রদানের জন্য মেঘকে ডোররা মারে ফলে বজ্রপাত হয় । কথাটি লোখ মুখে জানা যায় উহা ধর্মীয় মতবাদ কি না তাহা জানা নাই। এখনো পল্লী অঞ্চলের অশিক্ষিত মানুষেরা এই ভিত্তিহীন তথ্যে বিশ্বাস করে।

বজ্রপাত সম্পর্কে বিজ্ঞান তথ্য সুধী সমাজে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আলোচনা করা মুর্খতার পরিচয় বহন করে বলে আমি মনে করি। বজ্রপাতের কারন সুধি সমাজের সকলেরই জানা, তাই বিজ্ঞান মতে বজ্রপাতের বিষয় আলোচনা না করে অন্য আর একটি বিষয়ে আলোচনা করে ৭ম অধ্যয়ের সমাপ্তি করবো।

বিজ্ঞানের বাস্তবতায় এই আধুনিকতা। বিশ্বের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বিজ্ঞানের অবদান নেই বিজ্ঞানের সব কিছুই বাস্তব ভিক্তিক। বিজ্ঞানের দান আর বাস্তবতা অস্বীকার করলে আদিম যুগে ফিরে যেতে হয় ।

ভাববাদীরা ভাবান্ধ। বাস্তবতা দেখেও মেনে নেয় না। ভাববাদে যা বলা হয়েছে তাহাতে তারা অন্ধ ভাবে বিশ্বাসী। বিজ্ঞান বাস্তবতা নির্ভর আর ভাববাদ কল্পনা প্রসূত। ভাববাদে মহাবিশ্বে তথ্যে গুলো অবাস্তব। বিজ্ঞানের কাছে তথা বাস্তবতার কাছে ভাববাদের তথ্যে গুলি ভিত্তিহীন যা ঐশ্বরিক বানী রুপে জোরালো ভাবে দাবী করা হয়েছে। বানী গুলো ভিত্তিহীন হলে ঈশ্বর শব্দটি ভিত্তিহীন হয়ে যায় ( চলবে)

( বাংলার নির্ভিক দাশর্নিক আরজ আলী মাতুব্বর ও বোকার স্বর্গ কলামের লেখক আকাশ মালিকের নিকট কৃতজ্ঞ)