আবুল কাশেম
[রচনাটি এম, এ, খানের ইংরেজি বই থেকে অনুবাদিত “জিহাদঃ জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও ক্রীতদাসত্বের উত্তরাধিকার” গ্রন্থের ‘ইসলামি ক্রীতদাসত্ব’ অধ্যায়ের অংশ এবং লেখক ও ব-দ্বীপ প্রকাশনের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত হলো। এ পর্বে আলোচিত হয়েছেঃ ভারতে মুসলিমদের দ্বারা ক্রীতদাসকরণ]
ইসলামি ক্রীতদাসত্ব, খণ্ড ৩
লেখক: এম, এ, খান
প্রাচীন বিশ্বে দাসপ্রথা
ভারতে মুসলিমদের দ্বারা ক্রীতদাসকরণ
ভারতে মুসলিমদের দ্বারা ক্রীতদাসকরণ
মুসলিম দখলদার ও শাসকরা ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার যেখানেই গেছে, সেখানেই বিধর্মীদেরকে ব্যাপক হারে ক্রীতদাস বানিয়েছে। এ আলোচনায় মধ্যযুগীয় ভারতে তৎকালীন মুসলিম ঐতিহাসিক কর্তৃক লিপিবদ্ধ করে যাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুসলিমদের দ্বারা ক্রীতদাসত্ব চর্চার কিছুটা বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরা হবে। আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার অন্যান্য স্থানে ইসলামিক দাসপ্রথা চর্চা সম্বন্ধেও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উপস্থাপন করা হবে।
মোহাম্মদ বিন কাসিম কর্তৃক: নবি মুহাম্মদের মৃত্যুর চার বছর পর খলিফা ওমরের শাসনামলে ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় সীমান্তীয় থানা অঞ্চলটি আক্রমণ ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে ভারতে ইসলামি হামলার সূচনা হয়। পরবর্তীতে খলিফা ওসমান, আলী ও মুয়াবিয়ার সময়ে এরূপ আরো আটবার লুণ্ঠন অভিযান চালানো হয়। এসব প্রাথমিক আক্রমণে কখনো কখনো লুটতরাজ ও হত্যাকাণ্ড ছাড়াও লুণ্ঠনদ্রব্য ও ক্রীতদাস সংগ্রহ করা হয়, কিন্তু ভারতে ইসলামের স্থায়ী পদাঙ্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়। খলিফা আল-ওয়ালিদের আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধুতে উবায়দুল্লাহ ও বুদাইলের নেতৃত্বে দু’টো অভিযান প্রেরণ করেন। উভয় অভিযানই চরমভাবে ব্যর্থ হয় অনেক মৃত্যুর মাশুল দিয়ে, নিহত হয় উভয় সেনাপতি। অন্তরে ক্ষতবিক্ষত হাজ্জাজ এরপর ৬,০০০ সৈন্যের নেতৃত্বে ১৭-বছর-বয়স্ক তারই ভাতিজা ও জামাতা কাসিমকে প্রেরণ করেন। মোহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে সিন্ধুর দেবাল বন্দর জয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে ইসলামের শক্ত ও স্থায়ী ভিত্তি রচনা করে। বিখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবিদ আল-বিরাদুরী লিখেছেন: ‘দেবাল আক্রমণ করে সেখানে তিনদিন ধরে লুণ্ঠন ও হত্যাকাণ্ড চালানো হয়; মন্দিরের যাজকদের সবাইকে হত্যা করা হয়।’[১৩] কাসিম ১৭ বছরের অধিক বয়সী পুরুষদেরকে তলোয়ারের ডগায় হত্যা করে এবং নারী ও শিশুদেরকে ক্রীতদাস বানায়। দেবালে কত লোককে বন্দি করা হয়েছিল সে সংখ্যা লিখা হয়নি, তবে তাদের মধ্যে ছিল মন্দিরে আশ্রয়গ্রহণকারী ৭০০ রমণী, জানায় ‘চাচনামা’। লুণ্ঠিত মালামাল ও ক্রীতদাসদের মধ্যে খলিফার এক-পঞ্চমাংশের হিস্যায় ছিল পঁচাত্তর জন কুমারী, যাদেরকে হাজ্জাজের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অবশিষ্টদেরকে কাসিম তার সেনাদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়।[১৪]
রাওয়ার আক্রমণে, লিখিত হয়েছে চাচনামায়, ‘বন্দিদের গণনা করলে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০,০০০, যাদের মধ্যে ছিল সেনাধ্যক্ষদের কন্যারা ও একজন ছিল রাজা দাহিরের বোনের মেয়ে।’ বন্দি ও লুণ্ঠিত মালামালের এক-পঞ্চমাংশ হাজ্জাজের নিকট প্রেরণ করা হয়।১৫. ব্রাহ্মণাবাদ যখন মুসলিম আক্রমণে পতিত হয়, জানায় ‘চাচনামা’: ৮,০০০ থেকে ২৬,০০০ লোককে নিধন করা হয়; ‘এক-পঞ্চমাংশ বন্দিকে আলাদা করে গণনা করা হলে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ হাজার; অবশিষ্টদেরকে যোদ্ধাদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয়।’[১৬] তার অর্থ দাঁড়ায়: এ আক্রমণে প্রায় ১০০,০০০ নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস করা হয়েছিল।
খলিফার হিস্যা হিসেবে একবার প্রেরিত লুণ্ঠনদ্রব্য ও ক্রীতদাসদের মধ্যে ছিল ৩০,০০০ নারী ও শিশু এবং নিহত দাহিরের ছিন্ন মস্তক। সেসব বন্দির মধ্যে ছিল সিন্ধুর বিশিষ্ট মর্যাদাবান পরিবারের কিছু তরুণী কন্যা। হাজ্জাজ লুণ্ঠনদ্রব্য ও ক্রীতদাস বহনকারী বহর দামেস্কে খলিফা আল-ওয়ালিদের নিকট পাঠিয়ে দেন। ‘সে সময়ের খলিফা যখন চিঠিটি পড়েন’, লিখেছে চাচনামা: ‘তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রশংসা করেন। তিনি সেনাধ্যক্ষদের কন্যাদের কিছুকে বিক্রি করে দেন এবং কিছু উপহার হিসেবে প্রদান করেন। তিনি রাজা দাহিরের ভগ্নির কন্যাদেরকে যখন দেখেন, তাদের সৌন্দর্য ও মনোহর রূপে এতই অভিভূত হন যে, হতবাক হয়ে আঙ্গুল কামড়াতে থাকেন।’[১৭]
আল-বিলাদুরী লিখেছেন, মুলতান আক্রমণে বন্দি হওয়া লোকদের মধ্যে ‘মন্দিরের পুরোহিতদের সংখ্যাই ছিল ৬ হাজার’।১৮ এ সংখ্যাটি আমাদেরকে ধারণা দিতে পারে মুলতান আক্রমণে মোট কত সংখ্যক নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস করা হয়েছিল। কাসিম একই রকমের অভিযান চালিয়েছিল সেহওয়ান ও ধালিলায়। সংক্ষিপ্ত তিন বছরের (৭১২-১৫) নেহাৎই ছোট কৃতিত্বে কাসিম সম্ভবত সর্বমোট তিন লাখের মতো লোককে ক্রীতদাস বানিয়েছিল।
৭১৫ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে: ৭১৫ সালে কাসিমকে দামেস্কে ডেকে পাঠানোর পর ভারত সীমান্তে মুসলিমদের হত্যাযজ্ঞ ও ক্রীতদাসকরণ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে স্বল্পমাত্রার অভিযান অব্যাহত থাকে। একমাত্র গোঁড়া মুসলিম উমাইয়া শাসক খলিফা ওমরের শাসনামলে (৭১৭-২০) তার সেনাপতি আমরু বিন মুসলিম হিন্দু ভূখণ্ডগুলোর বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে পরাজিত করেন। এসব অভিযানে নিঃসন্দেহে বিপুল সংখ্যক ক্রীতদাস কব্জা করা হয়েছিল। খলিফা হাসাম বিন আব্দুল মালিকের শাসনামলে (৭২৪-৪৩) সিন্ধুর সেনাপ্রধান জুনাইদ বিন আব্দুর রহমান কয়েকটি বিজয় অভিযানে লিপ্ত হন। কিরাজ আক্রমণে তিনি ‘আকস্মিকভাবে হানা দিয়ে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ছাড়াও লুটতরাজ ও লোকজনকে বন্দি করেন।’ উজ্জ্বেন ও বাহারিমাদ আক্রমণে তিনি শহরতলীর বাড়িঘর ভস্মীভূত করেন ও বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ লুণ্ঠন করেন।[১৯] লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে অনিবার্যরূপে থাকতো বন্দিকৃত ক্রীতদাসরা।
৭৫০ খৃষ্টাব্দে গোঁড়ামির ভিত্তিতে আব্বাসীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পর খলিফা আল-মনসুর (শাসনকাল ৭৫৫-৭৪) হিন্দু ভূখণ্ডগুলোর বিরুদ্ধে পবিত্র ধর্মযুদ্ধের জন্য হাসাম বিন আমরু’কে প্রেরণ করেন। আমরু ‘কাশ্মীরকে পদানত করে বহু বন্দি ও ক্রীতদাস সংগ্রহ করেন’।[২০] তিনি কান্দাহার ও কাশ্মীরের মধ্যবর্তী অনেক স্থানে আক্রমণ চালান এবং প্রতিটি বিজয়ে অবশ্যই বহু লোককে বন্দি করে নিয়ে যান, যা লিখিত হয়নি।
বিখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনে আসির (আথির) ‘কামিল উৎ-তাওয়ারিখ’ গ্রন্থে লিখেছেন: খলিফা আল-মাহদির শাসনামলে ৭৭৫ সালে সেনাধ্যক্ষ আব্দুল মালেক ভারতের বিরুদ্ধে একটা বিশাল নৌ-জিহাদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তারা বারাদায় জাহাজ থেকে নেমে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকদের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত মুসলিম বাহিনী জয়ী হয়। আসির জানান: ‘কিছু সংখ্যক মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়, বাকিদেরকে হত্যা করা হয়। কুড়ি জন মুসলিম এ ধর্মযুদ্ধে প্রাণ হারায়।’[২১] কতজন বন্দিকে তারা তুলে নিয়ে যায়, তা লিখিত হয়নি।
খলিফা আল-মামুনের রাজত্বকালে (৮১৩-৩৩) সেনাপতি আফিক বিন ঈসা বিদ্রোহী হিন্দুদের বিরুদ্ধে এক অভিযান পরিচালনা করেন। তাদেরকে বন্দি ও হত্যা করার পর জীবিত ২৭,০০০ পুরুষ, নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস করা হয়।[২২] পরবর্তী খলিফা আল-মুতাসিমের আমলে সিন্ধুর গভর্নর আমরান বিন মুসা মুলতান ও কান্দাবিল আক্রমণ ও জয় করেন এবং ‘অধিবাসীদেরকে বন্দি করে নিয়ে যান’।[২৩] ৮৭০ সালের দিকে ইয়াকুব লেইস আর-রুখাজ (আরাকোশিয়া) আক্রমণ করেন এবং ক্রীতদাসকৃত বাসিন্দাদেরকে জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেন।[২৪]
গজনীর হানাদারদের দ্বারা: মোহাম্মদ বিন কাসিমের লুণ্ঠনকার্যের প্রায় তিন শতাব্দী পর সুলতান মাহমুদ উত্তর ভারতে ১৭ বার চরম ধ্বংসাত্মক আক্রমণ চালান (১০০০-২৭)। এসব হামলায় তিনি ব্যাপক গণহত্যা, লুণ্ঠন, বহু মন্দির ধ্বংস ও অগণিত মানুষকে ক্রীতদাস বানান। আল-উতবি লিখেছেন: ১০০১-০২ সালে রাজা জয়পালকে আক্রমণ করলে ‘আল্লাহ তাঁর বন্ধুদেরকে এমন বিপুল পরিমাণ লুণ্ঠনদ্রব্য প্রদান করেন যা সীমাহীন ও বর্ণনার অতীত, এবং সে সঙ্গে পাঁচ লক্ষ ক্রীতদাস নারী ও পুরুষ।’ বন্দিদের মধ্যে ছিলেন রাজা জয়পাল নিজে, তার সন্তানরা, নাতিরা ও ভাতিজারা, তার গোষ্ঠির প্রধানবর্গ এবং তার আত্মীয়-স্বজন।[২৫] মাহমুদ তাদেরকে বিক্রির জন্য গজনিতে নিয়ে যান।
আল-উতবি জানান: ‘১০১৪ সালে নিন্দুনা (পাঞ্জাবে) আক্রমণের ফলে ক্রীতদাসের এতই প্রাচুর্য হয় যে, তাদের দাম একেবারে সস্তা হয়ে পড়ে। স্বদেশের বিশিষ্ট ও সম্মানিত লোকেরা (গজনীর) সাধারণ দোকানদারের ক্রীতদাস হয়ে অবমানিত হয়।’ পরের বছর থানেসার (হরিয়ানায়) আক্রমণে, জানান ফেরিশতা: মুসলিম বাহিনী ‘২০০,০০০ বন্দিকে গজনীতে নিয়ে আসে; এর ফলে রাজধানী গজনীকে ভারতের একটা নগরীর মতো দেখায়। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিকের কয়েকজন করে ক্রীতদাস পুরুষ ও বালিকা ছিল।’ ১০১৯ সালের ভারত অভিযান থেকে তিনি ৫৩,০০০ বন্দিকে নিয়ে ফিরেন। মাহমুদের ১৭ বার ভারত আক্রমণের মধ্যে কেবলমাত্র কাশ্মীর অভিযানটি ব্যর্থ হয়েছিল। বিজয়ী অভিযানগুলোতে তিনি লুণ্ঠনের মাধ্যমে প্রচুর মালামাল হস্তগত করেন, যার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ক্রীতদাস অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু পদ্ধতিগতভাবে তাদের সংখ্যা লিপিবদ্ধ হয়নি। ‘তারিখই আলফি’ গ্রন্থটি উল্লেখ করেছে যে, তিনি খলিফার জন্য এক-পঞ্চমাংশ লুণ্ঠনদ্রব্য পৃথক করে রাখতেন, যার মধ্যে ছিল ১৫০,০০০ ক্রীতদাস।[২৬] তার অর্থ দাঁড়ায়, সুলতান মাহমুদ নিদেন পক্ষে ৭৫০,০০০ ক্রীতদাস ধরে এনেছিলেন ভারত থেকে।
সুলতান মাহমুদ (মৃত্যু ১০৩০) পাঞ্জাবে একটা ইসলামি সুলতানাতের প্রাথমিক ভিত্তি রচনা করেন, যেখানে গজনবি রাজবংশ ১১৮৬ সাল পর্যন্ত শাসন চালায়। ১০৩৩ সালে সুলতান মাহমুদের অখ্যাত পুত্র সুলতান মাসুদ-১ ‘কাশ্মীরের সুরসুতি দুর্গটি আক্রমণ করেন। সেখানে নারী ও শিশু ব্যতীত দুর্গের সমস্ত সেনাকে হত্যা করা হয়। বন্দি নারী ও শিশুদের ক্রীতদাসরূপে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়’।[২৭] ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান মাসুদ গুরুতর অসুস্থ হলে অঙ্গীকার করেন যে, তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে আল্লাহকে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হান্সির বিরুদ্ধে পবিত্র ধর্মযুদ্ধ চালনা করবেন। সুস্থ হয়ে উঠে তিনি হানসি আক্রমণ ও দখল করেন। এ আক্রমণে, জানান আবুল ফজল বাইহাকি, ‘ব্রাহ্মণ ও অন্যান্য বিশিষ্ট লোকদেরকে হত্যা করা হয় এবং নারী ও শিশুদেরকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়।’[২৮]
১০৭৯ খ্রিষ্টাব্দে দুর্বল গজনবি সুলতান ইব্রাহিম পাঞ্জাবের জেলাগুলো আক্রমণ করেন। সপ্তাহের পর সপ্তাহব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধে উভয়পক্ষেই ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। ‘তারিখ-ই আলফি’ ও ‘তাবাকাত-ই-আকবরী’ গ্রন্থদ্বয় জানায়, পরিশেষে তার বাহিনী জয়লাভ করে এবং বিপুল ধনসম্পদ ও ১০০,০০০ ক্রীতদাস কব্জা করে, যাদেরকে গজনীতে প্রেরণ করা হয়।[২৯]
গোরী দখলদারদের দ্বারা: মোহাম্মদ গোরী, যিনি ছিলেন একজন আফগান, তিনি দ্বাদশ শতাব্দীতে ভারতে ইসলামি আক্রমণের তৃতীয় তরঙ্গ পরিচালনা করে দিল্লিতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন (১২০৬)। তার ১১৯৪ সালের বেনারস আক্রমণে, ইবনে আসির লিখেছেন: ‘হিন্দু হত্যাকাণ্ড ছিল অগণন; নারী ও শিশু ব্যতীত কাউকে জীবিত রাখা হয়নি। ধরিত্রী আতঙ্কে শিউরে না উঠা পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ও লুণ্ঠন থামেনি।’[৩০] নারী ও শিশুদেরকে যথারীতি ক্রীতদাসরূপে কব্জা করা হয়। তার সেনাধ্যক্ষ কুতুবদ্দিন আইবেক ১১৯৫ সালে গুজরাটের রাজা ভীমকে আক্রমণ করে ২০,০০০ ক্রীতদাস আটক করেন।[৩১] হাসান নিজামী লিখেছেন: ১২০২ সালে তার কালিঞ্জর আক্রমণে ‘পঞ্চাশ হাজার মানুষ ক্রীতদাস হয় এবং হিন্দুদের রক্তে সমতলভূমি কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে।’[৩২] ১২০৬ সালে মোহাম্মদ গোরী অবাধ্য খোখার বিদ্রোহীদের দমনে অগ্রসর হন; এরা মুলতান অঞ্চলে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। বিদ্রোহীদেরকে নিধন এতই ব্যাপক ছিল যে, তাদেরকে পোড়ানোর জন্য আগুন জ্বালাবার লোকও ছিল না। নিজামী আরো লিখেছেন: ‘অগণিত ক্রীতদাস ও অস্ত্রশস্ত্র বিজয়ীদের হস্তগত হয়।’[৩৩] সুলতান গোরী ও আইবেকের ক্রীতদাস বানানোর কৃতিত্বের বর্ণনায় ‘ফখর-ই-মুদাব্বির’ গ্রন্থটি লিখেছে: ‘এমনকি গরিব (মুসলিম) বাসিন্দারাও বহু ক্রীতদাসের মালিক বনে যায়।’[৩৪] ফেরিস্তা জানান: ‘মোহাম্মদ গোরী কর্তৃক তিন থেকে চার লক্ষ খোখার ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়।’[৩৫] এসব ধর্মান্তরকরণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে ক্রীতদাসকরণের মাধ্যমে সাধিত হয়েছিল।
১২০৬ সালে নিজেকে ভারতের প্রথম সুলতান ঘোষণা করে আইবেক হান্সি, মীরাট, দিল্লি, রাঁথাম্বর ও কল (আলিগড়) জয় করেন। তার শাসনকালে (১২০৬-১০) আইবেক অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করে দিল্লি থেকে গুজরাট, লক্ষ্ণৌতি থেকে লাহোর, পর্যন্ত অনেক এলাকা কব্জা করেন। প্রত্যেক বিজয়ে প্রচুর ক্রীতদাস কব্জা করা হয়, যদিও তাদের সংখ্যা লিখিত হয়নি। তবে আইবেকের যুদ্ধে ক্রীতদাস শিকারের বিষয়টি অনুধাবন করা যাবে ইবনে আসিরের এ দাবিতে যে: ‘(তিনি) হিন্দু প্রদেশগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন… তিনি বহু লোককে হত্যা করেন এবং যুদ্ধবন্দি ও লুণ্ঠন দ্রব্যসহ ফিরে আসেন।’[৩৬]
একই সময়ে বখতিয়ার খিলজি পূর্ব-ভারতের বিহার ও বাংলায় হত্যাযজ্ঞ ও ক্রীতদাসকরণেপূর্ণ ব্যাপক দখলাভিযান চালান। তিনি কত সংখ্যক লোককে ক্রীতদাস করেছিলেন তারও কোনো তথ্য-দলিল রাখা হয়নি। বখতিয়ার সম্পর্কে ইবনে আসির বলেছেন, অত্যন্ত সাহসী ও উদ্দীপনাপূর্ণ বখতিয়ার মুঙ্গির (বাংলা) ও বিহারে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক লুটতরাজ করে বিপুল লুণ্ঠিত মালামাল কব্জা করেন এবং অসংখ্য ঘোড়া, অস্ত্রশস্ত্র ও ‘মানুষ’ (ক্রীতদাস) হস্তগত করেন।[৩৭] ১২০৫ সালে বখতিয়ারের বাংলার লক্ষণসেনকে আক্রমণে, লিখেছেন ইবনে আসির: ‘তার সমস্ত কোষাগার, স্ত্রী, পরিচারিকা, সঙ্গী-সাথী ও নারীরা সবাই হানাদারের হস্তগত হয়।’[৩৮]
কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লিতে স্থায়ী হওয়ার পর ভারতে আটককৃত ক্রীতদাসদেরকে আর দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হতো না গজনী থেকে আসা সুলতান মাহমুদ ও মোহাম্মদ গোরীর সময়ের মতো। এরপর থেকে বন্দিদেরকে রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন কাজে এবং সেনাধ্যক্ষ, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ও সৈনিকদের কাজে লাগানো হতো। বাকি ক্রীতদাসদেরকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারগুলোতে বিক্রিত করা হতো, যা ছিল ভারতবর্ষের ইতিহাসে এ প্রথম।
সুলতান ইলতুতমিস থেকে বলবনের সময়কালে (১২১০-১২৮৫): পরবর্তী সুলতান ইলতুতমিস (শাসনকাল ১২১০-৩৬) তার শাসনকালের প্রথম কয়েক বছর ক্ষমতা থেকে বহিষ্কৃত মুসলিম তুর্ক প্রতিপক্ষকে দমনে কাটিয়ে দেন। তিনি চেঙ্গিস খানের আক্রমণের ভয়েও ভীত ছিলেন। ক্ষমতা পোক্ত করার পর তিনি ১২২৬ সালে রাঁথাম্বর আক্রমণ করেন। সে আক্রমণে, লিখেছেন মিনহাজ সিরাজ: ‘তার অনুসারীদের হাতে বিপুল পরিমাণ লুণ্ঠনদ্রব্য চলে আসে’;[৩৯] স্পষ্টতই লুণ্ঠনদ্রব্যের মধ্যে ছিল ক্রীতদাস। সিরাজ ও ফেরিশতা জানান, ১২৩৪-৩৫ সালের উজ্জ্বেন আক্রমণে তিনি ‘অবাধ্য লোকদের নারী ও শিশুদেরকে’ বন্দি করেন।[৪০]
ইলতুতমিসের মৃত্যুর পর সুলতানের ক্ষমতার দুর্বলতার কারণে ক্রীতদাসকরণ কার্যক্রমে কিছুদিনের জন্য ভাটা পড়ে। ফেরিশতা লিখেছেন: ১২৪৪ সালে উলুগ খান বলবনের নেতৃত্বে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ মুলতানের জুদ পর্বতের গুক্কার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান এবং ‘সকল বয়সী ও উভয় লিঙ্গের কয়েক হাজার গুক্কারকে বন্দি করে আনেন।’ [৪১]
১২৪৮ সালে উলুগ খান বলবন কারা আক্রমণ করেন। সিরাজ লিখেছেন: সেখানে তার ‘বিধর্মীদেরকে বন্দিকরণ ও আটককৃত মহান রানাদের (হিন্দু যুবরাজ) পোষ্যদের সংখ্যা ছিল অগণন।’ রানা ‘দালাকি ওয়া মালাকি’কে আক্রমণে ‘তিনি বন্দি ও সে হতভাগার স্ত্রী-পুত্র ও পোষ্যদেরকে নিয়ে আসেন এবং বিপুল পরিমাণ লুণ্ঠিত মালামাল কব্জা করেন।’[৪২] ১২৫২ সালে বলবন মালোয়া’র মহান রানা জাহির দেবকে আক্রমণ করে পরাজিত করেন। সিরাজ লিখেছেন, ‘বহু বন্দি বিজয়ীদের হাতে পড়ে।’[৪৩]
১২৫৩ সালে রাঁথাম্বর আক্রমণ করে বলবন বহু ক্রীতদাস কব্জা করেন এবং ১২৫৯ সালে হরিয়ানা আক্রমণে বহুসংখ্যক নারী-শিশুকে ক্রীতদাস বানান। বলবন কাম্পিল, পাতিয়ালি ও ভোজপুরে দু’বার করে আক্রমণ করেন এবং প্রতিবার বিপুল সংখ্যক নারী-শিশুকে ক্রীতদাস বানান। কাটিহারে আট বছরের উর্ধ্ব-বয়সী বিধর্মীদেরকে পাইকারি হারে হত্যার পর তাদের নারী ও শিশুদের তিনি আটক করে নিয়ে আসেন, লিখেছেন ফেরিশতা। ১২৬০ সালে বলবন রাঁথাম্বর, মেওয়াত ও সিউয়ালিক আক্রমণ করে তার যোদ্ধাদেরকে লক্ষ্য করে ঘোষণা দেন: যারা একজন জীবিত বন্দিকে আনবে, তারা পাবে দুই তাঙ্খা (রৌপ্য মুদ্রা), আর বিধর্মীদের ছিন্নমস্তক আনলে পাবে এক তাঙ্খা। ফেরিশতা লিখেছেন: অচিরেই তার সমীপে তিন থেকে চারশ’ জীবিত বন্দি ও ছিন্ন-মস্তক এনে হাজির করা হয়। সুলতান নাসিরুদ্দিনের (মৃত্যু ১২৬৬) অধীনে সেনানায়ক হিসেবে কাজ করার সময় বলবন বিধর্মীদের বিরুদ্ধে বহু হামলা পরিচালনা করেন। কিন্তু কী পরিমাণ বন্দি তিনি কব্জা করেছিলেন তা লিখিত হয়নি। তবে তিনি যে কী বিপুল পরিমাণ ক্রীতদাস সংগ্রহ করেছিলেন তা অনুমান করা যাবে এ ঘটনা থেকে যে, সুলতান নাসিরুদ্দিন লেখক মিনহাজ সিরাজকে তার খোরাসানবাসী ভগ্নির জন্য চল্লিশ জন ক্রীতদাসকে উপহার দিয়েছিলেন।[৪৪]
বলবন ১২৬৫ সালে ক্ষমতা দখল করে সুলতান হন ও গিয়াসউদ্দিন বলবন নাম ধারণ করেন। পূর্ববর্তী সুলতানের সেনাপতি থাকাকালীন বলবন বিধর্মীদের বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধ পরিচালনায় অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দেন। ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তার প্রথম কর্তব্য হয়ে পড়ে হাজার হাজার অবাধ্য হিন্দু বিদ্রোহী বা মুয়াত্তিকে নির্মূল করা। সে অভিযানে তিনি ‘বিদ্রোহীদের গ্রামগুলো ধ্বংস, পুরুষদেরকে হত্যা এবং নারী ও শিশুদেরকে বন্দি করার নির্দেশ দেন।’[৪৫]
খিলজি শাসনকালে: খিলজি (১২৯০-১৩২০) ও তুঘলক (১৩২০-১৪১৩) শাসনামলে ভারতে মুসলিম শাসন বিশাল সেনাবাহিনী ও বিস্তৃত ভূখণ্ড নিয়ে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। আফিফ উল্লেখ করেছেন, সুলতানের ক্ষমতা এ সময় এতই ব্যাপক ছিল যে, ‘কারো সাহস ছিল না উচ্চ-বাচ্য করার’। বহু হিন্দু বিদ্রোহ দমনের জন্য অভিযান চালানোর পাশাপাশি তিনি বিধর্মী অঞ্চলগুলোকে মুসলিম নিয়ন্ত্রণে আনার উদগ্র আকাক্সক্ষায়ও বহু অভিযান চালান সেসব অঞ্চলে। এসব অভিযানে তিনি বিপুল পরিমাণ লুণ্ঠিত দ্রব্য কব্জা করেন, যার মধ্যে ছিল ক্রীতদাস; কিন্তু সে সম্পর্কে লিখিত দলিল খুব কম। সম্ভবত এর কারণ হলো: ক্রীতদাসকরণ ও লুণ্ঠন এসময় একেবারে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে সমসাময়িক কালের লেখকদের রেখে যাওয়া সামান্য কিছু প্রামাণ্য দলিল বিবেচনা করলে সে সময়ে ক্রীতদাসকরণের পরিসর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পাওয়া যাবে। খিলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন খিলজির শাসনকালে (১২৯০-৯৬) হিন্দু বিদ্রোহীদের দমন ও সুলতানাতের সীমানা সম্প্রসারণের নিমিত্তে নির্মম ও নিষ্ঠুর অভিযান শুরু করা হয়। তিনি কাটিহার, রাঁথাম্বর, জেইন, মালোয়া ও গোয়ালিয়রে অভিযান চালান। রাঁথাম্বর ও জেইন অভিযানে তিনি মন্দিরসমূহ বিধ্বস্ত এবং বিপুল লুণ্ঠন ও বন্দি সংগ্রহের মাধ্যমে একটা “স্বর্গের নরক” সৃষ্টি করেন, লিখেছেন আমির খসরু। আমির খসরু আরো লিখেছেন: মালোয়া অভিযান থেকে বিপুল পরিমাণ লুণ্ঠন দ্রব্য (যার মধ্যে সর্বদা থাকতো ক্রীতদাস) দিল্লিতে আনা হয়।[৪৬]
পরবর্তী সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি (শাসনকাল ১২৯৬-১৩১৬) ক্রীতদাসকরণের ক্ষেত্রে আগের সব সুলতানকে ছাড়িয়ে যান। তিনি ১২৯৯ সালে গুজরাটে এক বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে সবগুলো বড় বড় শহর ও নগর, যেমন নাহারওয়ালা, আসাভাল, ভানমানথালি, সুরাট, ক্যামবে ও সোমনাথ তছনছ করেন। মুসলিম ইতিহাসবিদ ইসামি ও বারানী জানান: তিনি এ অভিযানে বিপুল পরিমাণে লুণ্ঠিত মালামাল ও উভয় লিঙ্গের ব্যাপক সংখ্যক বন্দি সংগ্রহ করেন। ওয়াসাফের তথ্য অনুযায়ী, মুসলিম বাহিনী বিপুলসংখ্যক সুন্দরী তরুণীকে বন্দি করে, যার সংখ্যা ছিল প্রায় ২০,০০০ এবং সে সঙ্গে উভয় লিঙ্গের শিশুদেরকেও বন্দি করে নিয়ে যায়। ১৩০১ সালে রাঁথাম্বর ও ১৩০৩ সালে চিতোর আক্রমণ করা হয়। চিতোর আক্রমণে ৩০,০০০ লোককে হত্যা করা হয়েছিল এবং প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মুসলিমরা পরাজিতদের নারী-শিশুকে ক্রীতদাস করে। এ সময় কিছু রাজপুত নারী জওহর বরণ করে আত্মহত্যা করে। ১৩০৫ থেকে ১৩১১ সালের মধ্যে মালোয়া, সেভানা ও জালোর অভিযান করে বিপুল সংখ্যক লোককে বন্দি করা হয়। সুলতান আলাউদ্দিন তার রাজস্থান অভিযানেও বহু ক্রীতদাস আটক করেন। আলাউদ্দিনের রাজত্বকালে ক্রীতদাস ধরা যেন শিশু-খেলার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমির খসরু লিখেছেন: ‘তুর্কিরা তাদের খেয়াল-খুশিমতো যে কোনো হিন্দুকে ধরতে, কিনতে বা বিক্রি করতে পারতো।’ ক্রীতদাসকরণ এতটাই ব্যাপক ছিল যে, সুলতান ‘তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য ৫০,০০০ হাজার দাস-বালক নিয়োজিত ছিল এবং তার প্রাসাদে ৭০,০০০ ক্রীতদাস কাজ করতো’, জানান আফিফ ও বারানী। বারানী সাক্ষ্য দেন: ‘সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির রাজত্বকালে দিল্লির দাস-বাজারে নতুন নতুন দলে অবিরাম বন্দিদের আনা হতো।’[৪৭]
তুঘলক শাসনামলে: ১৩২০ সালে তুঘলকরা ক্ষমতা দখল করে। ভারতে সবচেয়ে শিক্ষিত ও জ্ঞানী মুসলিম শাসকদের মধ্যে একজন ছিলেন মোহাম্মদ শাহ তুঘলক (১৩২৫-৫১) এবং সুলতানাত আমলের (১২০৬-১৫২৬) সবচেয়ে শক্তিধর শাসক। তার ক্রীতদাস ধরার কুখ্যাত উদ্দীপনা আলাউদ্দিন খিলজির কৃতিত্বকেও ম্লান করে দিয়েছিল। তার ক্রীতদাস আটক করা সম্বন্ধে শিহাবুদ্দিন আহমদ আব্বাস লিখেছেন: ‘সুলতান বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধ করার ব্যাপারে তার অন্তরের উদগ্র বাসনা পূরণে কখনো পিছপা হননি… প্রতিদিন অত্যন্ত সস্তা দরে হাজার হাজার ক্রীতদাস বিক্রি হয়, বন্দিদের সংখ্যা এমনই বিপুল।’ তার কুখ্যাত শাসনামলে ভারতের দূর-দূরান্তে ইসলামি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সুদূর বাংলা ও দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত বহু অভিযান পরিচালনা করেন। এছাড়াও তিনি চরম নিষ্ঠুরতার সাথে ১৬টি প্রধান প্রধান বিদ্রোহ নিস্তব্ধ করেন। এসব বিজয় ও দমন অভিযানের অনেকগুলোতে বিপুল পরিমান লুণ্ঠিতদ্রব্য কব্জা করেন, যার মধ্যে অনিবার্যরূপেই থাকতো প্রচুর সংখ্যক ক্রীতদাস। ক্রীতদাসের প্রাচুর্য এমন ছিল যে, পরিব্রাজক ইবনে বতুতা যখন দিল্লিতে পৌঁছেন, সুলতান তাকে ১০ জন ক্রীতদাসী উপহার দেন।[৪৮] ইবনে বতুতার নেতৃত্বে সুলতান চীন সম্রাটের নিকট উপঢৌকনসহ এক কূটনৈতিক বহর পাঠান। সে বহরের সঙ্গে ছিল একশ’ ফর্সা ক্রীতদাস এবং একশ’ হিন্দু নৃত্যশিল্পী ও গায়িকা।[৪৯] সুলতান ইলতুতমিস ও ফিরোজ শাহ তুঘলকের (মৃত্যু ১৩৮৮) শাসনকালে খলিফা ও শাসকদের নিকট উপহারস্বরূপ ক্রীতদাস প্রেরণ করা ছিল সাধারণ ঘটনা। ইবনে বতুতা লিখেছেন: সুলতান সারা বছর ধরে ক্রীতদাস সংগ্রহ করতেন এবং ইসলামের প্রধান দুই ঈদ-উৎসবের দিন তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দিতেন।[৫০] স্পষ্টতই এটা ছিল ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিমিত্তে।
পরবর্তী সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক (শাসনকাল ১৩৫১-৮৮) ভারতীয়দের প্রতি ছিলেন যথেষ্ট দয়ালু, কারণ তিনিই প্রথম মুসলিমদের বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতীয়দেরকে (ধর্মান্তরিত মুসলিম) সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেন। তার শাসনাধীনেও বিধর্মীদেরকে ক্রীতদাসকরণ অত্যন্ত জোরের সাথেই চলতে থাকে। আফিফ সাক্ষ্য দেন: তার প্রাসাদে তিনি ১৮০,০০০ তরুণ ক্রীতদাস বালককে সংগ্রহ করেছিলেন।[৫১] পূর্বসূরী মোহাম্মদ তুঘলকের মতোই তিনি সারা বছর হাজার হাজার নারী ও পুরুষ ক্রীতদাস আটক করতেন এবং ঈদ-উৎসবের দিন তাদের বিয়ে দিতেন। আফিফ জানান: ফিরোজ শাহ তুঘলকের অধীনে ‘ক্রীতদাসের সংখ্যা অগণিত হয়ে উঠে’ এবং ‘দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে এ প্রথার (দাসপ্রথার) ভিত্তি মজবুত হয়ে উঠে।’ এর পরপরই সুলতানাতটি ভেঙ্গে কয়েকটি পৃথক রাজ্যে পরিণত হয়, কিন্তু দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে বিধর্মীদেরকে দাসকরণের প্রক্রিয়া স্বাভাবিকরূপে চলতে থাকে, লিখেছেন আফিফ।[৫২]
আমির তিমুরের আক্রমণে: মধ্য এশিয়া থেকে আগত আমির তিমুর একজন ‘গাজী’ কিংবা ‘শহীদ’ হওয়ার ইসলামি গৌরব অর্জনের খায়েশে ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত হন (১৩৯৮-৯৯)। দিল্লি পৌঁছাবার প্রাক্কালে তিনি ইতিমধ্যে ১০০,০০০ বন্দিকে কব্জা করেছিলেন। দিল্লি আক্রমণের পূর্বে তিনি সেসব বন্দিকে নির্বিচারে হত্যা করেন। দিল্লি আক্রমণ থেকে শুরু করে তার রাজধানীতে ফেরা পর্যন্ত পথিমধ্যে তিনি রেখে যান বর্বরতার লোমহর্ষক ও মর্মান্তিক ইতিহাস: হত্যা, ধ্বংসলীলা, লুটতরাজ ও ক্রীতদাসকরণ, যা তিনি তার নিজস্ব স্মৃতিকথা ‘মালফুজাত-ই তিমুরী’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে গেছেন।[৫৩]
১৩৯৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তার দিল্লি আক্রমণে, লিখেছেন তিমুর: ‘১৫,০০০ তুর্ক সেনা হত্যা, লুটতরাজ ও ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হয়। লুণ্ঠনের মালামাল এতই বিপুল ছিল যে, প্রত্যেকে পঞ্চাশ থেকে একশ জন করে পুরুষ, নারী ও শিশুকে ভাগে পেয়েছিল। কারো ভাগেই কুড়ি জনের কম ক্রীতদাস পড়েনি।’ যদি প্রতিটি যোদ্ধা গড়ে ৬০ জন বন্দিকেও পেয়ে থাকে, সেদিন কমপক্ষে ১,০০০,০০০ (১০ লাখ) ক্রীতদাস কব্জা করা হয়েছিল (হিসাবের ভুলক্রমে ২০০৯ ইংরেজী সংস্করণে লিখা হয়েছে ১ লাখ)।
তিমুর বর্ণনা করেছেন, মধ্য এশিয়ায় তার রাজধানীতে ফেরার পথে তিনি সেনানায়কদেরকে নির্দেশ দেন যে, পথিমধ্যে প্রত্যেক দুর্গ, শহর ও গ্রামে হানা দিয়ে সমস্ত বিধর্মীকে তরবারির খাদ্যে পরিণত করতে। তার বর্ণনা মতে: ‘আমার সাহসী সঙ্গীরা তাদেরকে পিছু ধাওয়া করে অনেককে হত্যা করে এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে বন্দি করে।’
কুতিলায় পৌঁছানোর পর তিনি সেখানকার বিধর্মীদেরকে আক্রমণ করেন। তিমুর লিখেছেন: ‘সামান্য প্রতিরোধের পর শত্রুরা পলায়ন করে, কিন্তু তাদের অনেকেই আমার সৈনিকদের তলোয়ারের নিচে পড়ে। বিধর্মীদের সকল স্ত্রী ও সন্তানকে বন্দি করা হয়।’
সামনে অগ্রসর হয়ে গঙ্গা-স্নান উৎসবের সময় গঙ্গাতীরে পৌঁছানোর পর তার যোদ্ধারা ‘বহু অবিশ্বাসীকে হত্যা করে এবং যারা পাহাড়ে পালিয়ে যায় তাদেরকে পিছু ধাওয়া করে।’ ‘লুণ্ঠনের মালামালের পরিমাণ ও সংখ্যা, যা আমার যোদ্ধাদের হস্তগত হয়, তা সকল গণনা ছাড়িয়ে যায়,’ লিখেছেন তিমুর। লুণ্ঠন দ্রব্যের মধ্যে অবশ্যই ছিল ক্রীতদাস।
তিনি সিউওয়ালিক পৌঁছালে, লিখেছেন তিমুর, ‘তাদেরকে দেখেই বিধর্মী ‘গাবর’রা পলায়ন করে। ধর্মযোদ্ধারা তাদেরকে পিছু ধাওয়া করে নিহতদের স্তূপ বানায়।’ অগণিত লুন্ঠন-দ্রব্য তার বাহিনীর হাতে আসে এবং ‘উপত্যকার সমস্ত হিন্দু নারী ও শিশুদেরকে বন্দি করা হয়।’
নদীর অপর তীরে রাজা রতন সেন তিমুরের অগ্রসর হওয়ার খবর শুনে তার যোদ্ধাদের নিয়ে ত্রিসর্তর (কাংড়ার) দুর্গের ভিতরে আশ্রয় নেন। তিমুর লিখেছেন: দুর্গটি আক্রমণ করা হলে ‘হিন্দুরা ছত্র ভঙ্গ হয়ে পলায়ন করে এবং আমার বিজয়ী যোদ্ধারা তাদেরকে ধাওয়া করলে মাত্র কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তারা বিপুল পরিমাণ লুণ্ঠন দ্রব্য কব্জা করে, যা ছিল গণনার অতীত। প্রত্যেকে ১০ থেকে ২০ জন করে ক্রীতদাস পায়।’ এর অর্থ দাঁড়ায়: এ আক্রমণে প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার লোককে ক্রীতদাস বানানো হয় (ভুলক্রমে ২০০৯ ইংরেজী সংস্করণ-এ লিখা হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার)।
সিউওয়ালিক উপত্যকার অপর অংশে ছিল নগরকোট নামক হিন্দুস্তানের একটি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। তিমুর উপসংহার টেনেছেন: এ আক্রমণে ‘পবিত্র ধর্মযোদ্ধারা মৃতদেহের বিশাল স্তূপ সৃষ্টি করে এবং বিপুল সংখ্যক বন্দিসহ ব্যাপক পরিমাণ লুণ্ঠিত মালামাল ও ক্রীতদাস নিয়ে বিজয়ী বীরেরা অতি উল্লসিত চিত্তে ফিরে যায়।’
দিল্লি থেকে ফেরার পথে তিমুর হিন্দু দুর্গ, নগরী ও গ্রামে প্রধান পাঁচটি আক্রমণ করেন। এছাড়াও অন্যান্য ছোট ছোট আক্রমণ করা হয়েছিল এবং প্রতিটিতে ক্রীতদাস শিকার করা হয়েছিল। কব্জাকৃত ক্রীতদাসদের আনুমানিক সংখ্যা একমাত্র কাংড়া আক্রমণের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়, যা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজারের মতো। অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনুরূপ সংখ্যায় ক্রীতদাস ধরা হলে তিনি তার ফেরার পথে ১০ থেকে ১৫ লাখ ক্রীতদাস সংগ্রহ করেছিলেন। এর সঙ্গে যদি দিল্লিতে কব্জাকৃত ক্রীতদাসদের যুক্ত করা হয়, তাহলে তিনি অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ ভারতীয় নাগরিককে ক্রীতদাস বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তার রাজধানীতে। তিনি দিল্লিতে কয়েক হাজার শিল্পী ও কারিগরও বাছাই করেছিলেন তার রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।[৫৪]
সৈয়দ ও লোদী শাসনালে (১৪০০-১৫২৫): তিমুরের অভিযানের পরবর্তী সময়ে যুদ্ধে কত সংখ্যক লোককে ক্রীতদাস বানানো হয়, তা লেখা হয়নি; তবে বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিল থেকে ভাসাভাসা আভাস পাওয়া যায় মাত্র।[৫৫] দিল্লির ক্ষমতা বিধ্বস্ত করে তিমুরের প্রত্যাবর্তনের পর স্বল্প সময়ের জন্য তুঘলকরা ও পরে সৈয়দরা তাদের ক্ষমতা সংহত করতে অনেক অভিযান পরিচালনা করেন। ফেরিশতা লিখেছেন: সুলতান সৈয়দ মুবারকের শাসনামলে (১৪১৩-৩৫) মুসলিম বাহিনী কাটিহার লুন্ঠন করে ও বহু রাথোর রাজপুতকে ক্রীতদাস বানায় (১৪২২)। ১৪২৩ সালে আলয়ারে বহু মুয়াত্তি বিদ্রোহীকে ও ১৪৩০ সালে হুলকান্তের (গোয়ালিয়রে) রাজার প্রজাদেরকে বন্দি ও ক্রীতদাসরূপে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।[৫৬]
১৪৩০ সালে কাবুলের আমির শেখ আলী পাঞ্জাবের শিরহিন্দ ও লাহোর আক্রমণ করেন। ফেরিশতা লিখেছেন: লাহোরে ‘গুণে গুণে ৪০,০০০ হিন্দুকে হত্যা করা হয় ও বিপুল সংখ্যক হিন্দুকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়’; টুলুম্বায় (মুলতানে) তার বাহিনী ‘স্থানটি লুটপাট করে, অস্ত্রবহনে সক্ষম সব পুরুষকে হত্যা করে এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরকে বন্দি করে নিয়ে যায়।’[৫৭]
সৈয়দদের অনুসরণে লোদী বংশ (১৪৫১-১৫২৬) সুলতানাতের কর্তৃত্ব পুনরায় সুপ্রতিষ্ঠিত করে এবং ক্রীতদাসকরণ প্রক্রিয়া যথারীতি অব্যাহত রাখে। লোদী রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান বাহলুল ‘ছিলেন এক স্বেচ্ছাচারী লুণ্ঠনকারী এবং বন্দিদেরকে দিয়ে তিনি এক শক্তিশালী বাহিনী গঠন করেন।’ নিমসারের (হারদয় জেলায়) বিরুদ্ধে আক্রমণে তিনি ‘সেখানকার বাসিন্দাদের হত্যা ও ক্রীতদাসকরণের মাধ্যমে স্থানটিকে একেবারে জনশূন্য করে ফেলেন।’ তার উত্তরসূরী সিকান্দার লোদী রেওয়া ও গোয়ালিয়র অঞ্চলে একই দৃশ্যের অবতারণা করেন।[৫৮]
মুঘল শাসনামলে (১৫২৬…): ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে ইব্রাহিম লোদীকে পরাভূত করার মাধ্যমে আমির তিমুরের গর্বিত উত্তরসূরী জহিরুদ্দিন শাহ বাবর ভারতে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তার আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা ‘বাবরনামা’য় কোরান থেকে তুলে ধরা আয়াত ও সূত্রের অনুপ্রেরণায় তিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে জিহাদ অভিযান চালান বলে বর্ণনা করেছেন। বাবরের শাসনামলে তার ক্রীতদাসকরণের কথা পদ্ধতিগতভাবে লিখিত হয়নি।
বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে অবস্থিত তৎকালীন ক্ষুদ্র হিন্দু রাজ্য বাজাউর আক্রমণ সম্বন্ধে বাবর লিখেছেন: ‘তাদের উপর সাধারণ হত্যাকাণ্ড চালানো হয় এবং তাদের স্ত্রী-কন্যাদেরকে বন্দি করা হয়। আনুমানিক ৩,০০০ লোকের মৃত্যু ঘটে। (আমি) আদেশ দিলাম যে, উচ্চস্থানে ছিন্ন-মস্তক দ্বারা একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মাণ করা হোক।’[৫৯] একইভাবে তিনি আগ্রায় হিন্দুদের ছিন্ন-মস্তক দিয়ে স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন। ১৫২৮ সালে তিনি কনৌজের শত্রুদেরকে আক্রমণ ও পরাজিত করেন এবং ‘তাদের পরিবার-পরিজন ও অনুসারীদেরকে বন্দি করা হয়’।[৬০] এসব দৃষ্টান্ত ইঙ্গিত করে যে, বাবরের ‘জিহাদ’ অভিযানগুলোতে নারী-শিশুদেরকে বন্দি ও ক্রীতদাসকরণ ছিল একটা সাধারণ নীতি বা অংশ। ‘বাবরনামা’য় উল্লেখ রয়েছে যে, হিন্দুস্তান ও খোরাসানের মধ্যে দু’টো প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল কাবুল ও কান্দাহারে, যেখানে উচ্চ মুনাফায় বিক্রির জন্য ভারত থেকে ক্রীতদাস (বার্দা) ও অন্যান্য পণ্যবোঝাই গাড়ির-বহর আসতো।
বাবরের মৃত্যুর পর (১৫৩০) তার পুত্র হুমায়ুন ও শেরশাহ সূরীর (একজন আফগান) মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে একটা বিক্ষুব্ধ সময় অতিবাহিত হয়। ১৫৬২ সালে বাবরের নাতি ইসলাম-ত্যাগী ‘আকবর দ্য গ্রেট’ যুদ্ধে পাইকারিহারে নারী-শিশুদের ক্রীতদাসকরণ নিষিদ্ধ করেন।[৬১] তবুও, লিখেছেন মোরল্যাণ্ড, ‘আকবরের শাসনকালে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই একটা গ্রাম বা গ্রামগুচ্ছে হানা দিয়ে বাসিন্দাদেরকে ক্রীতদাসরূপে তুলে নিয়ে আসা একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’ এ কারণে সম্রাট আকবর শেষ পর্যন্ত ক্রীতদাসকরণ নিষিদ্ধ করেন।[৬২] তবে গভীরভাবে প্রোথিত এ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। নিষেধ সত্ত্বেও আকবরের সেনাধ্যক্ষ ও প্রাদেশিক শাসকরা নিজেদের ইচ্ছামতো অমুসলিমদের বাড়িঘর ও ধনসম্পদ লুণ্ঠন এবং তাদেরকে ক্রীতদাসকরণ অব্যাহত রাখে। ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আকবরের স্বল্পকালীন এক প্রাদেশিক সেনাপতি আব্দুল্লাহ খান উজ্বেক ৫০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) নারী ও পুরুষকে ক্রীতদাস বানিয়ে বিক্রয় করার কৃতিত্বে গর্ব প্রকাশ করেন। এমনকি আকবরও নিজস্ব আইনের অমর্যাদা করে ১৫৬৮ সালে চিতোরের যুদ্ধে নিহত রাজপুত সেনাদের স্ত্রী-কন্যাদেরকে ক্রীতদাসকরণের নির্দেশ দেন, যারা বিষপানে বা অগ্নিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিয়ে তাদের সম্ভ্রম রক্ষা করেছিল। নিষিদ্ধ ঘোষণা সত্ত্বেও প্রদেশগুলোতে ক্রীতদাসকরণ অব্যাহত থাকে আকবরের আমলে। মোরল্যাণ্ড লিখেছেন: আকবরের শাসনকালে স্বাভাবিক সময়ে শিশুদেরকে চুরি বা অপহরণ ও বেচা-কেনা করা হতো; বাংলা ছিল এসব অপকর্মে কুখ্যাত, যেখানে তা সবচেয়ে বীভৎসরূপে (ক্রীতদাসদের খোজাকরণ ইত্যাদি) চর্চা করা হতো।[৬৩] এ কারণে আকবর ১৫৭৬ সালে ক্রীতদাসকরণ নিষিদ্ধ আইন পুনরায় জারি করতে বাধ্য হন। তার শাসনকালে ডেলা ভ্যাল তার প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যে জানান: চাকর ও ক্রীতদাসের সংখ্যা এত অগণন ও সস্তা যে, ‘প্রত্যেকেই, এমনকি দুর্ভাগা গরিবরাও, বড় বড় পরিবার রাখতো এবং চমৎকার সেবা-সহায়তা পেতো।’[৬৪] এসব দৃষ্টান্ত মহান আকবরের শাসনামলেও কী মাত্রায় ক্রীতদাসকরণ চলছিল তার একটা স্বচ্ছ ধারণা দেয়।
ক্রীতদাসকরণ পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি ঘটে আকবরের উত্তরসূরী জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭) ও শাহজাহানের (১৬২৮-৫৮) শাসনামলে। এ দুই সম্রাটের শাসনকালে গোঁড়ামি ও ইসলামিকরণ ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হয়। জাহাঙ্গীর তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন: বাংলায় রাজস্ব পরিশোধে অপারগ পিতা-মাতারা আপন সন্তানদেরকে খোজা করে গভর্নরকে দিতো রাজস্বের পরিবর্তে। ‘এ চর্চা একেবারে সর্বজনীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে’, লিখেছেন জাহাঙ্গীর। বেশ কয়েকটি তথ্য-দলিল জানায় যে, জাহাঙ্গীরের পরিষদের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা সৈয়দ খান চাগতাই একাই ১,২০০ খোজাকৃত ক্রীতদাসের মালিক ছিলেন।[৬৫] জাহাঙ্গীর শুধুমাত্র ১৬১৯-২০ সালেই ২০০,০০০ বন্দিকৃত ভারতীয় ক্রীতদাসকে বিক্রির জন্য ইরানে পাঠিয়েছিলেন।[৬৬]
পরবর্তী সম্রাট শাহজাহানের অধীনে হিন্দু কৃষকদের অবস্থা ক্রমান্বয়ে অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছে। মুঘল আমলে ভারত সফরকারী পর্যটক মানরিকে দেখেন: কর আদায়কারী কর্মকর্তারা বিপন্ন ও দরিদ্র কৃষক ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরকে ধরে নিয়ে যেতো, কর আদায়ের জন্য তাদেরকে বিভিন্ন বাজার ও মেলায় বিক্রি করতে। ফরাসি চিকিৎসক ও পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ার, যিনি ভারতে ১২ বছর বসবাস করেন ও সম্রাট আওরঙ্গজেবের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন, তিনিও এরূপ ঘটনার সত্যতা জ্ঞাপন করেছেন। তিনি কর প্রদানে অপারগ দুর্ভাগা কৃষকদের সম্পর্কে লিখেছেন: তাদের শিশুদেরকে ক্রীতদাসরূপে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। মানরিকেও একই ঘটনার সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেছেন।[৬৭] আওরঙ্গজেবের শাসনকাল (১৬৫৮-১৭০৭) হিন্দুদের জন্য ভয়ঙ্কর বিবেচিত। তার শাসনামলে কেবলমাত্র ১৬৫৯ সালেই গোলকুণ্ডা (হায়দরাবাদ) শহরে ২২,০০০ তরুণ বালককে খোজা করা হয়, শাসক ও গভর্নরদেরকে প্রদান কিংবা ক্রীতদাস-বাজারে বিক্রির জন্য।[৬৮]
ইরানের নাদির শাহ ১৭৩৮-৩৯ সালে ভারত আক্রমণ করেন। ব্যাপক নির্মম হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের পর তিনি বিপুল সংখ্যক ক্রীতদাস সংগ্রহ করেন এবং বিপুল পরিমাণ লুণ্ঠিত মালামালসহ তাদেরকে নিয়ে চলে যান। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে আফগানিস্তান থেকে আহমাদ শাহ আবদালী তিন-তিন বার ভারত আক্রমণ করেন। ‘পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ’ (১৭৬১) বিজয়ী হয়ে তিনি নিহত মারাঠা সেনাদের ২২,০০০ স্ত্রী-সন্তানকে ক্রীতদাসরূপে বন্দি করে নিয়ে যান।[৬৯] ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম শাসক টিপু সুলতান ত্রিবাঙ্কুরে ৭,০০০ লোককে ক্রীতদাস করেছিলেন। তাদেরকে অন্যত্র উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়।[৭০] যতদিন মুসলিমরা ভারতে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব খাটিয়েছে, ততদিন বিধমীর্দেরকে ক্রীতদাসকরণ পুরোদমে চলেছে। উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা সংহত হওয়ার সাথে ক্রীতদাসকরণ কর্মকাণ্ড রুদ্ধ হতে থাকে। ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে যে, এমনকি ১৯৪৭ সালে ভারত-ভাগের সময়ও মুসলিমরা হাজার হাজার হিন্দু ও শিখ নারীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক মুসলিম বানিয়ে মুসলিমদের সঙ্গে বিয়ে দেয়; এটা দীর্ঘকালব্যাপী ইসলামি ক্রীতদাসকরণের কিছুটা নমনীয় রূপ মাত্র। এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে হামলাকারী পাঠান মুসলিমরা কাশ্মীর থেকে হিন্দু ও শিখ মেয়েদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানের ঝেলুম জেলার বাজারে বিক্রি করেছে।[৭১]
উপরোক্ত আলোচনা প্রধানত উত্তর ভারতে মুসলিম আক্রমণকারী ও শাসকদের ক্রীতদাসকরণের খতিয়ান মাত্র। গুজরাট, মালোয়া, জৈনপুর, খান্দেশ, বাংলা ও দক্ষিণাত্যসহ ভারতের দূর-দূরান্তের প্রদেশসমূহ − যেগুলো ছিল কখনো দিল্লির নিয়ন্ত্রণাধীন কখনো স্বাধীন মুসলিম সুলতানাত − সেসব অঞ্চলের সর্বত্রও ক্রীতদাসকরণ উদ্দীপনার সাথে চলতে থাকে। কিন্তু ওসব অঞ্চলে ক্রীতদাসকরণের তথ্য পদ্ধতিগতভাবে লিখিত হয়নি।
[আগামী পর্বে আলোচিত হবেঃ অন্যত্র মুসলিমদের দ্বারা দাসকরণ]
সূত্রঃ
13. Eliot HM & Dawson J, The History of India As Told By Its Own Historians, Low Price Publications, New Delhi Vol. I, p. 119-20; Sharma SS (2004) Caliphs and Sultans: Religious Ideology and Political Praxis, Rupa & Co, New Delhi, p. 95
14. Lal (1994), p. 17
15. Elliot & Dawson, Vol. I, p. 173
16. Ibid, p. 181
17. Sharma, p. 95-96
18. Elliot & Dawson, Vol. I, p. 122-23, 203
19. Ibid, p. 125-26
20. Ibid, p. 127
21. Ibid, Vol. II, p. 246
22. Ibid, p. 247-48
23. Ibid, Vol. I, p. 128
24. Ibid, Vol. II, p. 419
25. Ibid, p. 25-26
26. Lal (1994), p. 19-20
27. History of Punjab: Ghanznivide Dynasty, http://www.punjabonline. com/servlet/library.history?Action=Page&Param=13
28. Elliot & Dawson, Vol. II, p. 135, 139-40
29. Ibid, Vol. V, p. 559-60; Lal (1994), p. 23
30. Elliot & Dawson, Vol. II, p. 251
31. Ferishtah MK (1997 print) History of the Rise of the Mahomedan Power in India, translated by John Briggs, Low Price Publication, New Delhi , Vol. I, p. 111
32. Elliot & Dawson, Vol. II, p. 232; also Lal (1994), p. 42
33. Elliot & Dawson, Vol. II, p. 234-35
34. Lal (1994), p. 44
35. Ibid, p. 43
36. Elliot & Dawson, Vol. II, p. 251
37. Ibid, p. 306
38. Ibid, p. 308-09
39. Ibid, p. 325
40. Lal (1994), p. 44-45
41. Ferishtah, Vol. I, p. 130
42. Elliot & Dawson, Vol. II, p. 348; also Ferishtah, Vol. I, p. 131
43. Elliot & Dawson, Vol. II, p. 351
44. Lal (1994), p. 46-48
45. Elliot & Dawson, Vol. III, p. 105
46. Lal (1994), p. 48
47. Ibid, p. 49-51
48. Ibid, p. 51
49. Gibb, HAR (2004) Ibn Battutah: Travels in Asia and Africa, D K Publishers, New Delhi, p. 214
50. Lal (1994), p. 51-52
51. Elliot & Dawson, III, p. 297
52. Lal (1994), p. 53
53. Elliot & Dawson, Vol. III, p. 435-71; Bostom AG (2005) The Legacy of Jihad, Prometheus Books, New York, p. 648-50
54. Lal (1994), p. 86
55. Ibid, p. 70-71
56. Ferishtah, Vol. I, p. 299-303
57. Ibid, p. 303, 306
58. Lal (1994), p. 86
59. Babur JS (1975 print) Baburnama, trs. AS Beveridge, Sange-Meel Publications, Lahore, p. 370-71
60. Ferishtah, Vol. II, p. 38-39
61. Nazami KA (1989) Akbar and Religion, Idarah-i-Adabiyat-i-Delhi, New Delhi, p. 106
62. Moreland WH (1995) India at the Death of Akbar, Low Price Publications, New Delhi, p. 92
63. Ibid, p. 92-93
64. Ibid, p. 88-89
65. Lal (1994), p. 116-117
66. Levi SC (2002), (2002) Hindus Beyond the Hindu Kush: Indian in the Central Asian Slave Trades, Journal of the Royal Asiatic Society, 12(3), p. 283-84
67. Lal (1994), p. 58-59
68. Ibid, p. 117
69. Ibid, p. 155
70. Hasan M (1971) The History of Tipu Sultan, Akbar Books, Delhi, p. 361-63
71. Talib, SGS (1991) Muslim League Attack on Sikhs and Hindus in the Punjab 1947, Vice of India, Delhi, p. 201
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ১)
ইসলামে বর্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় 2)
———–
আমি জনাব আবুল কাশেম সাহেব এর কাছে একটি প্রশ্ন জানতে চাচ্ছি। এতকিছুর পরে এই যে ভারতে এখন ১০০ কোটির উপর হিন্দু এরা আসল কোথা থেকে?
হাজী সরিয়তুল্লাহ , তিতুমির , খান জাহান আলি , শাহ জালাল (রহঃ) উনাদের সম্পর্কেও জানতে চাই ।
সেগুলো একটা দিক । বর্ণবাদ থেকেমুক্তি পেতেও অনেকে ইসলামে গেছিলেন,এটা অনেকে মানেন । কিন্তু ‘ত্রাণকর্তা’ হিসেবে এসছিল, এগুলো আপনার অধ্যয়ন হতে পারে। বা ইসলাম এসছিল আক্রমণকারী হিসেবে এর প্রতিমন্তব্য হিসেবেও অনেকে আজো করে থাকেন। কিন্তু এটা একটা দিক। এগুলোই একমাত্র দিক বলেতো আজ এতোদিন পরে আর বলা যাবে না। ইসলাম কি কেবল ঐ অসি হাতে যোদ্ধার বেশে এসছিল? সবার আগে সিন্ধু প্রদেশে এসছিল ব্যবসায়ীদের মধ্য দিয়ে। ইসলাম ছড়িয়েছিলেন সুফি পীরেরা মূলত। এবং এদের এক বড় অংশই মুসলমান শাসকদের থেকে বাধাও পেয়েছেন। অনেকে অনাবাদী জমিতে গিয়ে স্থায়ী চাষাবাদ শুরু করতে গিয়ে স্থানীয় বহু আদিবাসিদের মধ্যে রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন। যেমন করেছিলেন এক সময় ব্রাহ্মণেরা। এটাই শুধু ব্যাখ্যা করতে পারে পূব বাংলাতে কেন এতো মুসলমান বেশি! ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বিনা হিংসেতে শ্রেণি শাসন করবার যে কৌশল তৈরি করেছিলেন, শুধু কিছু মুর্খই পারে তাকে বাদ দিয়ে অসি আর চাবুকের সাহায্য নিতে।এতো মুর্খ মুসলমান শাসকেরা ছিলেন না। ব্রাহ্মণ ক্ষত্রীয়দের হাতে করেই এরা শাসন করেছিলেন। ইতিহাসের একমুখী গতি থাকে এটাই বা কে বললে? মুর্খই শুধু ভাবতে পারে যে জোরে কৌশলে ধর্মান্তরিত করে যাদের মুসলমান করা গেল তারা চিরদিনের বাধ্য প্রজা থেকে যাবে। দীর্ঘদিন ভারতীয়েরা আডৌ সরিয়ন মেনে ইসলাম পালন করছিলেন কিনা, তাই নিয়েইতো উদাসীন ছিলেন শাসকেরা। ওয়ালিউল্লাহ, বেহ্রেলভিদের তাই ইসলামে সংস্কার আন্দোলন শুরু করতে হয়েছিল এই দেশে। তা করতে গিয়েও তারা যে ইসলামের রূপ দিলেন এও একরকম ভারতীয় ইসলামই থেকে গেল।
সব মুসলমানেরা যে মামার বাড়ির আদরে ছিলেন না এদেশে,বরং শাসকের ইসলাম যে মুহম্মদের ইসলাম থেকে নেমে এসছিল আর ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল তার কিছু উল্লেখ পাবেন, এই উদ্ধৃতিতেঃStratification
In some parts of South Asia, the Muslims are divided as Ashrafs and Ajlafs.[125] Ashrafs claim a superior status derived from their foreign ancestry.[30][126] The non-Ashrafs are assumed to be converts from Hinduism, and are therefore drawn from the indigenous population. They, in turn, are divided into a number of occupational castes.[126]
Sections of the ulema (scholars of Islamic jurisprudence) provide religious legitimacy to caste with the help of the concept of kafa’a. A classical example of scholarly declaration of the Muslim caste system is the Fatawa-i Jahandari, written by the fourteenth century Turkish scholar, Ziauddin Barani, a member of the court of Muhammad bin Tughlaq, of the Tughlaq dynasty of the Delhi Sultanate. Barani was known for his intensely casteist views, and regarded the Ashraf Muslims as racially superior to the Ajlaf Muslims. He divided the Muslims into grades and sub-grades. In his scheme, all high positions and privileges were to be a monopoly of the high born Turks, not the Indian Muslims. Even in his interpretation of the Koranic verse “Indeed, the pious amongst you are most honored by Allah”, he considered piety to be associated with noble birth. Barrani was specific in his recommendation that the “sons of Mohamed” [i.e. Ashrafs] “be given a higher social status than the low-born [i.e. Ajlaf].[127] His most significant contribution in the fatwa was his analysis of the castes with respect to Islam.[127] His assertion was that castes would be mandated through state laws or “Zawabi” and would carry precedence over Sharia law whenever they were in conflict.[127] In the Fatwa-i-Jahandari (advice XXI), he wrote about the “qualities of the high-born” as being “virtuous” and the “low-born” being the “custodian of vices”. Every act which is “contaminated with meanness and based on ignominity, comes elegantly [from the Ajlaf]”.[127] Barani had a clear disdain for the Ajlaf and strongly recommended that they be denied education, lest they usurp the Ashraf masters. He sought appropriate religious sanction to that effect.[29] Barrani also developed an elaborate system of promotion and demotion of Imperial officers (“Wazirs”) that was primarily on the basis of their caste.[127]
In addition to the Ashraf/Ajlaf divide, there is also the Arzal caste among Muslims, who were regarded by anti-Caste activists like Babasaheb Ambedkar as the equivalent of untouchables.[128][129] The term “Arzal” stands for “degraded” and the Arzal castes are further subdivided into Bhanar, Halalkhor, Hijra, Kasbi, Lalbegi, Maugta, Mehtar etc.[128][129][130] The Arzal group was recorded in the 1901 census of India and are also called Dalit Muslims “with whom no other Muhammadan would associate, and who are forbidden to enter the mosque or to use the public burial ground”.They are relegated to “menial” professions such as scavenging and carrying night soil.[131]
Some South Asian Muslims have been known to stratify their society according to Quoms.[132] These Muslims practise a ritual-based system of social stratification. The Quoms who deal with human emissions are ranked the lowest. Studies of Bengali Muslims in India indicate that the concepts of purity and impurity exist among them and are applicable in inter-group relationships, as the notions of hygiene and cleanliness in a person are related to the person’s social position and not to his/her economic status.[126] Muslim Rajput is another caste distinction among Indian Muslims.
Some of the backward or lower-caste Muslim communities include Ansari, Kunjra, Churihara, Dhobi and Halalkhor. The upper and middle caste Muslim communities include Syed, Shaikh, Shaikhzada, Khanzada, Pathan, Mughal, and Malik .[133] Genetic data has also supported this stratification.[134] It should be noted that most of the claims for Arabic ancestry in India is flawed and points to Arabic preferences in local Shariah. Interestingly, in three genetic studies representing the whole of South Asian Muslims, it was found that the Muslim population was overwhelmingly similar to the local non-Muslims associated with minor but still detectable levels of gene flow from outside, primarily from Iran and Central Asia, rather than directly from the Arabian Peninsula.[12]
The Sachar Committee’s report commissioned by the government of India and released in 2006, documents the continued stratification in Muslim society.
“আলাউদ্দিনের নীতি ছিলঃ কর আদায় এমন হবে যাতে একদিকে অমুসলিমরা সম্পদের জোরে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে না পারে; অন্য দিকে তারা চাষ-বাস ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় না নেয়।’ যদি এই সত্য্ হয় , তবে তিনি ব্রিটিশের থেকে বুদ্ধিমান এবং ভালো শাসক ছিলেন। ব্রিটিশ এদেশে পা দিতেই ফকির বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছিল। মনে আছে?
“রমিলা থাপার, ইরফান হাবিব প্রমুখ ঐতিহাসিকদের ইতিহাস লেখা তৎকালে মুসলিমদের লিখা ঐতিহাসিক তথ্য থেকে ভিন্ন। যারা ইতিহাসের সর্বাধিক বর্বরদের অন্যতম মুহাম্মদকে মানবতার জন্য রক্ষাকারী হিসেবে দেখে, তাদের ইতিহাস লেখা যে এরূপ হবে তাতে সন্দেহ নেই।” বুঝলামনা। কারা , রমিলা থাপার, ইরফান হাবিবরা, “মুহাম্মদকে মানবতার জন্য রক্ষাকারী হিসেবে দেখে”ন? আমি তাদের নাস্তিক বলেই জানি। আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হলে, ইতিহাস দর্শন নিয়ে আরো বহু সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয় মশাই। বিশ্বাসীরা মনে করে যা কিছু হয়, সবই আল্লার ইচ্ছেয়। এবারে কি নাস্তিকের কথা মেনে নিয়ে এও মেনে নিতে হবে , যা কিছু হয় বিশ্বাসীর কথাতে? এও কি আরেকধরণের অন্ধবিশ্বাস নয়? একটা ছোট লেখা আছে এখানে কলকাতার প্রাচীন জমিদার সাবর্ণরায়চৌধুরীদের পরিবার নিয়ে। হিন্দুমুসলমান শাসকের সম্পর্ক কেমন ছিল ত্যার একটা আভাস পাওয়া যাবেঃhttp://coffeehouseradda.in/ghanada/7627/#comment-6067
মুহম্মদ আর ভারতের মুসলমান শাসকদের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ ছিল, এও কি ভুলে যেতে হবে? মুহম্মদের ঐতিহাসিক প্রগতিশীল ভূমিকাকে যারা হেয় করে, তাঁরা পৃথিবীর সব ভালোকেই কালো করতে পারেন।
@সুশান্ত কর,
আপনি এম, এন, রায়ের লেখা পড়েননি মনে হয়। পড়তে পারেন যতীন সরকারের লেখা। এসব মার্ক্সিষ্টদের কাছে ভারতে ইসলাম এসেছিল ত্রানকর্তা হিসেবে।
আরেকটা কথা আছে, পৃথিবীত এসব বই পড়বার সময় সুযগ লোকের হয় না। কিছু বই আছে, চোখ বুলালে আগ্রহ হয়, অথবা হয় না। সমালোচনা পড়েও আগ্রহ হয় অথবা হয় না। এই বই নিয়ে আমার অনাগ্রহের কথাটাইতো জানাতে এতো কিছু লেখা! বিশ্লেষণ পদ্ধতি একেবারেই এক পেশে।
আমার এই নিয়ে রমিলা থাপার , ইরফান হাবিব, রামশরণ শর্মাদের বই পড়া আছে। এই মূহুর্তে উদ্ধৃতি দেবার ধর্য্য নেই মাত্র। কথা হলো আমরা তথ্যগুলোকে স্থান কালের প্রেক্ষিতে দেখছিতো? যদি হিন্দুদের বেশি কর চাপিয়ে ধর্মান্তরিত করাই উদ্দেশ্য ছিল, এই তর্ক আগেও বহুবার উঠেছে যে পশ্চিম বাংলাতো মোঘলদের খুব কাছাকাছি ছিল। বরং পূব বাংলাতেই ওদের দখল ছিল দুর্বল । তো পূবে এতো ধর্মান্তরণ কেন? উত্তর ভারত বা বিহারেই এতো কম কেন? মুসলমান বেশি হলে তাদের লাভ কী হতো, একি এখনকার মতো ভোট বেঙ্ক বাড়ত? মুসলমানদের উপর তবে শাসকেরা কখনৈ শ্রেণি শাসন চালায় নি বলেন? তবে এই যে আসরফ ,আতরাফ, মজুমদার, তালুকদার, মাইমাল, কিরান, এতো ভেদ দেখি জাতে এবং শ্রেণিতে এগুলো এলো কোত্থেকে? এই যে আপনি লিখলেন,”সুলতান আলাউদ্দিন এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক পণ্য আদায় করতেন। ” এর আক্ষরিক হিসেব দাঁড়ায় এক ষষ্ঠমাংশ মাত্র। আর মীর কাশিমের কথাটা একটু অত্যুৎসাহে আরোপিত হয়ে গেল, বৃটিশের দাস মীরকাশিমের কর চাপানোর ব্যাপারে স্বাধীনতা কতটা ছিল, হিসেবে আনতে হবে না?
@সুশান্ত কর, রমিলা থাপার, ইরফান হাবিব প্রমুখ ঐতিহাসিকদের ইতিহাস লেখা তৎকালে মুসলিমদের লিখা ঐতিহাসিক তথ্য থেকে ভিন্ন। যারা ইতিহাসের সর্বাধিক বর্বরদের অন্যতম মুহাম্মদকে মানবতার জন্য রক্ষাকারী হিসেবে দেখে, তাদের ইতিহাস লেখা যে এরূপ হবে তাতে সন্দেহ নেই।
এম, এ, খানের লেখা সমকালীন ঐতিহাসিকদের রেখে যাওয়া উদ্ধৃতির ভিত্তিতে লিখিত। আপনি খানের বইটি পড়তে না চাইলে আল-উৎবি, হাসান নিজামী, আমির খসরু, জিয়াউদ্দিন বারানী, মুহাম্মদ ফেরিস্তা, সুলতান ফিরোজ শাহ, আমির তিমুর, সম্রাট বাবর প্রমুখদের মূল লেখাগুলো পড়ে দেখতে পারেন। আজকাল সেসব অনেক লেখা ইন্টারনেটে আর্কাইব করা হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত পড়াশুনার ভিত্তিতে বলিঃ খান তার বইটিতে ভারতে ইসলামি বর্বরতা পুরোটা তুলে ধরতে পারেন নি।
যাহোক, আমার আগের মন্তব্যে বিন কাসিম-এর জায়গায় মীর কাসিম হয়ে গেছে। আমি ভারতবর্ষে প্রথম সফল মুসলিম আগ্রাসকের কথা বলতে চেয়েছিলাম। আলাউদ্দিনের কর আদায়ের ব্যাপারটাও একটু গোলমেলে হয়ে গেছে আমার ভাষার দুর্বলতায়। আমি বলতে চেয়েছিলামঃ যদিও আলাউদ্দিন কর ধার্য করেছিলেন এক-তৃতীয়াংশ, বাস্তবে আদায় করতেন আরও বেশি (অর্থাৎ উৎপাদনের ৫০%)। আলাউদ্দিনের নীতি ছিলঃ কর আদায় এমন হবে যাতে একদিকে অমুসলিমরা সম্পদের জোরে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে না পারে; অন্য দিকে তারা চাষ-বাস ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় না নেয়।
ইতিহাস ব্যাপারে আমিও খুব বিজ্ঞ নই। কিন্তু আপনি যখন বুশের প্রশঙ্গ টানলেনই বুশ ইরাক আফগানিস্তান রক্ষা করতে আক্রমণ করেছেন এটা খুব কম লোকে বিশ্বাস করে আমেরিকার ভক্তরা ছাড়া। তেল ছাড়া ওদের বিশ্ব ব্যবসা চলেনা, সেই তেলের উপর দখলদারিরাটাই যে মুখ্য, সেতো আজকাল বীপরীত পক্ষ বারে বারেই বলছে। যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবসাটাও একটা বড় কারণ, সবচে বর কথা হলো বিশ্ববাজার দখলে রাখতে গেলে তেলের উপর দখল চাই, আর যুদ্ধাস্ত্রের বাজারেও। কেউ কাউকে প্রতিহিংসাতে আক্রমণ করেছে এতা বিশ্বাস করা মুস্কিল। হিন্দু বলে আপনি যাদের বলছেন, এরাও আর চিরদিন ছিলেন, কই। ছিল এক ব্রাহ্মণ্যবাদী শ্রেণি ব্যবস্থা। সেটি যখনই যার দ্বারা প্রত্যাহ্বানের মুখে পড়েছে তারাই আক্রান্ত হয়েছে ভারতে। পরে আবার ব্রাহ্মণ্য ব্যবস্থা যারা মেনে নিয়েছে তাদের সঙ্গে আপোষও করেছে। ভারতে মুসলমানেরা বারে বারে আক্রমণ করেছে , কথাটাও ত্রুটি পূর্ণ। মুসলমান এক জাতি ছিলনা কোন কালে না আজ আছে। তুর্ক পাঠান মোঘল, আফগান নানা জাতি এসছে, আর এরা নিজেদের মধ্যেও প্রচুর লরাই করেছে। আপনি বললেন,”হিন্দুরা কি কখনো সম্পদ, নারী, দাসের লোভে বারে বারে আরব জাহান আক্রমণ করেছিল?” কেন করতে যাবে? ওখানে ছিলতা কী? ভারতের উর্বর প্রকৃতি চিরদিন শক হুন দল মোঘল পাঠানদের এদিকে টেনেছে, আর্যদেরও। এখানে এসে কেউ উলটে ওই আফগানিস্তান অব্দি যাওয়া ছাড়া আর কোনো দেশে যুদ্ধাভিযানের দরকারই বোঢ করে নি। যদি করত তবে বাবরের সাম্রায্যও উজবেকিস্তান অব্দি ছড়ানো হতে পারত। তা ছিল কি? কিন্তু যেদিকে ভারতীয়রা দরকার বোধ করেছিল সেদিকে যে সাম্রায্য বিস্তার করছিল তার প্রমাণ হলো ইন্দোনেশিয়া অব্দি চল সাম্রায্যের বিস্তার। আর দেশের ভেতরেও হিন্দু মুসলমান কোনো শাসকেরাই বাউল ফকির হইয়ে শাসন করে নি। চণ্ডাশোক যেমন সত্য , তেমনি বর্গীর দল নেতা শিবাজীও সত্য। আজকাল বাঙালি হিন্দু বর্গীর হামলার ইতিহাস ভুলে গেলে কী হবে, সে বড়ো বৈষ্ণবীয় ব্যাপার ছিল না। ধর্ম কোনো কালেই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করেনা, মানুষ ধর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই ন্যুনতম কথা বা বুঝলে আর ‘মুক্তমনা’তে আড্ডা দেয়া কেন? (N) (N)
লেখাটাতে চোখ বুলালাম। আমার এমন সরল মত দেবার ইচ্ছে নেই যে সব ধর্মেই ভালো মন্দ দুই আছে। অথবা এমনও নয় যে ইসলামে সবই মন্দ, অন্য ধর্মে অতোটা নয়। তার পরেও মনে হয়েছে লেখাটা একপেশে। এমন লেখাতে কুসংস্কার কতটা দূরে যায় আমার সন্দেহ আছে। লেখাটা পড়লে মনে হয় যেন মুসলমানেদের শাসনামলে মুসলমান ছিলেন শাসক আর হিন্দুরা শাসিত। যখন সত্য হল, মুসলমানদের আগেই এদেশে ইউরোপীয়রা এসছিলেন, বিশেষ করে পোর্তুগীজদের সহায় না নিয়ে সমূদ্রে কেউ ব্যবসাই করতে পারতেন না। আর হিন্দু বর্ণ ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন মুসলমান শাসকেরা। একে কেউ উপড়ে ফেলবার চেষ্টা করেন নি। করে তাদের লাভও ছিল না। তা যদি কেবল হিন্দুদের উপরেই এতো অত্যাচার হতো তবে ঐ হিন্দু উচ্চবর্ণরা কী করছিলেন ঘাস কাটছিলেন বসে বসে? আমরা যে মুসলমান শাসকদের এত হিন্দু সহযোগীর কথা পাইতাদের কী হবে? আর এই ইতিহাস চর্চাটা কেবলই রাজারাজড়ার ইতিহাস। এখানে সাধারণ মানুষ কৈ? দাসপ্রথা ছিল যদি এর অর্থনৈতিক ভিত্তিটি কী? দাস প্রথা যেখানেই ছিল সেখানে বিদ্রোহও ছিল। এই লেখাতে তেমন বিদ্রোহের কোনো সংবাদ চোখে পড়েনি। এক জায়গাতে আছে,”পরবর্তী সম্রাট শাহজাহানের অধীনে হিন্দু কৃষকদের অবস্থা ক্রমান্বয়ে অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছে।” আর মুসলমান কৃষক ছিল না বুঝি! থাকলে তাদের উপর কোনো শ্রেণি শাসন ছিল না বুঝি! তবে বাংলা বা ভারতে যে এত মুসলমান ভুমি দাস এখন দেখি ওরা কি সব বৃটিশ ভারতের তৈরি! লেখাটাতে ফাক আর ফাঁকি আছে। এমন সংস্কার বিরোধী লেখাতে ধর্মান্ধদের হাত শক্ত করে মাত্র! এও সেই শাসকশ্রেণির চোখে ইতিহাসকে দেখা! (N) (N) (N) (N)
@সুশান্ত কর,
হিন্দুরা মোটেই ধোয়া তুলসি পাতা নয় তারা বৌদ্ধদের ঝেটিয়ে বিদেয় করেছে ভারত বর্ষ থেকে তারাও ক্ষমতা হাতে পেয়ে হত্যা করেছে নিরীহ বৌদ্ধদের। তবে যদ্দুর মনে হয় এটা করেছে নিছক প্রতিহিংসা বশবর্তী হয়ে, বৌদ্ধদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে সম্পদ বা দাস-দাসী লুঠ এখানে মুখ্য ছিল না।
তবে মুসলমানেরা কিসের লোভে আরব জাহান ত্যাগ করে বারে বারে হিন্দু রাজ্য ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিল তা একটু ব্যাখ্যা করবেন কি? যুদ্ধ জয়ের পর শান্তির ধর্ম পালনকারিদের সম্পদ লুণ্ঠন বা দাস-দাসী দখলের প্রয়োজনীয়তা বা কেন হঠাৎ দেখা দিয়েছেল নাকি তারা ঐতিহ্য রক্ষায় তা চর্চা করেছিল?
হিন্দুরা কি কখনো সম্পদ, নারী, দাসের লোভে বারে বারে আরব জাহান আক্রমণ করেছিল? যা মুসলমানদের একান্ত বাধ্য হয়ে হিন্দু রাজ্য দখলে নিতে উৎসাহিত করেছিল? নাকি মুসলমানেরা বৌদ্ধদের রক্ষার তাগিদে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিল? বুশ যেভাবে করেছিল আফগানিস্তান ও ইরাক রক্ষায়!
ভাই ইতিহাসে আমি খুব অজ্ঞ আপনি কি একটু ব্যাখ্যা করবেন?
@সুশান্ত কর,
মুসলমান ও অমুসলমানদের মাঝে কর আরোপে ভিন্নতা ছিল। প্রকৃত ইসলামী আইনে মুসলমানরা কেবল যাকাত দিবে, যেটা ছিল স্বেচ্ছামূলক এবং লভ্যাংশের বা উচ্ছিষ্ট পণ্যের ২.৫%। হিন্দুদেরকে দিতে হত জিজিয়া এবং খারাজ বা ভূমিকর। ভূমিকর খুবই উচ্চমাত্রার হতো। সুলতান আলাউদ্দিন এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক পণ্য আদায় করতেন। মীর কাসিম আরোপ করেছিলেন ২০-৪০% উৎপাদিত পন্য। এর উপরও ইচ্ছে বা প্রয়োজন হলেই মুসলিম শাসকরা অন্যান্য কর চাপিয়ে দিতে অমুসলিমদের উপর। মুসলিমদের কর থেকে মুক্তি হিন্দুদেরকে ইসলামে ধর্মান্তরিতের একটা বড় কারণ ছিল। আমি সুঃ কর সাহেবকে অনুরোধ করব এম, এ, খানের পুরো বইটি পড়তে।
উফ গা শিউরে উঠা ব্যাপার । ভূত-পেত্নি ভয় পাই না । কিন্তু এই বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে কাঁথার তলায় লুকাই !! ইসলাম আসলে কি মানুষকে একদম জানোয়ার বানিয়ে দেয় !! পূর্বপুরুষের রক্তের ডাকও কানে বাজে না । :guli:
তথ্য বহুল লেখা পড়ে ভালো লাগলো। তবে আরো কয়েকবার পড়তে হবে।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/themes/neobox/headers/steve_banner.jpg[/img]
অসাধারন কথা। সকলেই ভাবুন।
সাধারন মুসলমানদের এক বদ্ধমুল ধারনা এই যে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ (যাকে সৃ্ষ্টি না করলে আল্লাহ বিশ্ব-ব্রম্মান্ডের কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না) আখেরী নবী মুহাম্মাদের শান্তির বানীতে। তারা মনে প্রানে বিশ্বাস করে অমুসলীম (কাফের/বিধর্মী) শাসকদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ দেশীয় আদিবাসী জনগুষ্ঠী বহিরাগত মুসলীম সুফী-সাধক ও শাসকদের আগমনে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল, ঐসব মুসলীম শাসকরা অত্যাচারী দেশী শাসকদের পরাস্থ করে ‘জনগনের শান্তি’ নিশ্চিত করেছিল। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে মুসলীম সুফী-সাধকদের প্রচারিত ইসলামের শান্তির বানীতে আকৃষ্ট হয়ে তাদের পূর্ব পুরুষরা দলে দলে মুসলামানীত্ব বরন করেছিল। কিন্তু সত্য হচ্ছে এইসব তথাকথিত সুফী-সাধকরাও এই প্রবন্ধে উল্লেখিত ‘মুসলীম হানাদার সন্ত্রাসী দস্যুদের’ সাথে একযোগে কাজ করেছিল। উৎসাহী পাঠকরা এই প্রবন্ধটিতে একটু চোখ বুলাতে পারেনঃ
Demystifying the Sufis
http://folks.co.in/2009/12/demystifying-the-sufis/
শিশুদের ক্রীতদাস করে শুধুমাত্র খোজা ও গেলমানে হিসাবে ব্যবহারই নয়, ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে তাদের চিরস্থায়ী মগজ ধোলাইয়ের সুব্যাবস্থা করা হয়। আর চিরস্থায়ী মগজ ধোলাইয়ের জন্য শিশুরাই হলো শ্রেষ্ঠ সাবজেক্ট। ইসলাম হচ্ছে সর্বকালের “সর্বশ্রেষ্ঠ” প্রপাগান্ডা মেশিন যা সত্যকে সম্পূর্নরুপে নির্মুলই করে “মিথ্যাকে সত্য হিসাবে” স্থলাভিষিক্ত করে।
@গোলাপ,
হাঁ, সঠিক কথা। আর দেবশ্রাইম হচ্ছে সেই ব্যবস্থা–এই হচ্ছে ইসলামী মগজ ধোলায়ের নাম–শব্দটা মনে হয় তুর্কি অথবা গ্রীক—আমি সঠিক বলতে পারলাম না।
@আবুল কাশেম,
দারুণ। একটা বই বের করে ফেলুন সবগুলো সিরিজ একত্র করে। কোন লেখায় তার পূর্ববর্তী পর্বের লিংক কিভাবে দিতে হয়?
@তামান্না ঝুমু,
এখান থেকে আপনি সাহায্য পেতে পারেন।
@মাহবুব সাঈদ মামুন, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ধারাবাহিকভাবে কোন লেখা লিখলে পূর্ববর্তী লেখাগুলোর লিঙ্কও কি একই নিয়মে দেয়া যাবে?
@তামান্না ঝুমু,
আশা করি আপনার লিংকের সমাধান হয়ে গেছে মাহবুব সাঈদের জবাবে।
আমার মত কম্পুটারে নিরক্ষর যদি লিঙ্ক দিতে পারে–তবে——
পড়ছি। মোট সিরিজটা কয় পর্বের হবে বলে আপনার পরিকল্পনা?
@কৌস্তুভ,
ধন্যবাদ।
এই সিরিজটি বেশ লম্বা হবে। ঠিক কত পর্ব হবে এখনও বলা যাচ্ছে না। মনে হয় দশের উর্দ্ধে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ, মুক্তমনার লেখকদের লেখা আসলেই অতি উচুমানের এবং জ্ঞানগর্ভ। আর বইগুলো অসাধারন যা পরতে পরতে রাত পার হয়ে যায়।আমি নতুন পাঠক হলেও আমার কম্পিউটারে মুক্তমনার হিউজ কালেকশন আছে। (Y)
@মাছরাঙা,
এ রকম করবেন না। ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। বই পড়ে রাত্রি কাটানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আমার একটি সাধারন প্রশ্ন আছে দাস ব্যাবস্থা সম্পর্কে।
ইসলামের ইতিহাসেও বহু যায়গায় আছে যুদ্ধবন্দী নারী শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রয় করা ব্যাবহার করা সম্পর্কে।
নারীদের ব্যাবহার বুঝি। শিশুদের দাস হিসেবে ব্যাবহার কি ছিল? তাদের তো প্রাপ্ত বয়ষ্ক দাসের মত নিশ্চয়ই কায়িক পরিশ্রমে লাগানো যেত না।
@আদিল মাহমুদ,
নারীদের ব্যাবহার যখন বুঝেছেন তো শিশুদের টাও বুঝে নেন। এটা আপনার ঈমান মজবুত করবে! ইসলাম নারী ও শিশুদের সম অধিকার দিয়েছে। নারীদের যেমন ব্যাবহার শিশুদের ও তেমনি। আর ইসলামে এর পবিত্র একটা নাম ও আছে “গেলমান”।
জান্নাতুল ফেরদাউস এ যেমন ৭০ জন হুর দেয়া হবে, তেমনি রুচি পরিবর্তনের (অতি নারী ব্যাবহারে যখন একঘেয়েমি ধরে যাবে) জন্যে মহান আল্লাহ গেলমান এর বেবস্থা ও করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ্র পেয়ারা বান্দারা বেহেশতের বেবস্থা এই মর্ত্যলোকে নামিয়ে আনতে কম যান না!!
@অরণ্য,
ব্যাপারটা নিশ্চিত হতে চাইছি। মানে ডকুমেন্ট আকারে আছে কিনা।
ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
শিশু দাসদের সাধারণতঃ অকুতোভয়, নির্ভীক সৈনিক অথবা লুটেরা, পেশাদার হত্যাকারী তৈরী করা হত।
একে দেভশ্রাইম প্রথা বলা হত। বলকানে, তথা আজকের বোসনিয়া, কসোভো এই সব স্থান তুর্কি লুটেরা ও জিহাদীদের কারায়ত্ব হলে তারা এই দেভশ্রাইম ব্যবস্থার প্রচলন করে। এই ব্যবস্থার মত নিষ্ঠুর ব্যবস্থা বিশ্বে কখনও হয় নাই—হবেও না।
আবার অনেককে হারেমের রক্ষার জন্য খোজা বানিয়ে রাখা হত।
আর অনেককে গেলমান হিসাবে ব্যবহার করা হত।
এই ধরণের অনেক দাস ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিল এবং পরে শাসনকর্তাও হয়েছিল।
পরের অধ্যায়গুলিতে এ ব্যাপারে দীর্ঘ জানবেন।
অধিক আগ্রহ থাকলে পড়ে নিতে পারেন। এন্ড্রু বোস্টমের লেখা The Legacy of Jihad.
@আবুল কাশেম,
সর্বনাশ, এতোটুকু তো জানতাম না। কাশেম ভাই, দেভশ্রাইম প্রথা ইংরেজিতে কী হবে, কীভাবে লিখা হয়?
এই বইটাও লাইব্রেরিতে খোঁজতে হবে-
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/legacyofanitisem.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
কাশেম ভাই, দেভশ্রাইম প্রথা ইংরেজিতে কী হবে, কীভাবে লিখা হয়?
লিখে রাখুন–
DEVSHRIME
এই শব্দটা কোথা থেকে এসেছে আমি ঠিক জানিনা। হয়ত গ্রীক, তুর্কি, আর্মেনিয়া–এই ধরণের। শব্দটা আরবি কিম্বা ফার্সি বলে মনে হয় না। এই ব্যাপারে কেউ আলোকপাত করলে বাধিত থাকব।
@আবুল কাশেম,
ধন্যবাদ কাশেম ভাই, ইংরেজিতে দেয়ায় অনেক কিছু পেয়ে গেলাম। উইকি থেকে এখানে একটু উল্লেখ করলাম-
দেভশ্রাইম প্রথা Devshirme is from Turkish, meaning “gathering”. Devshirme was a system that took place under the Ottoman Empire. The system of devshirme was introduced under Sultan Murad 2 in the 1420’s. The sultan would collect Christian boys from the Balkans and turn them into his slaves. Usually the boys were around the ages of 8 or 10 but sometimes even as old as 20. The purpose of this was to ensure that the sultan would have loyal troops and civil servants. The devshirme collection was performed by a higher Janissary officer (who often would themselves be of devshirme origin.) Normally around the age of 20, when they were finished training, the boys would be placed in the army or civil service and could become landowners. A few would become governors or viziers after receiving an education in the palace school. The devshirme never were granted total freedom.
@আবুল কাশেম,
ধন্যবাদ, অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য। দেশভ্রাইম না কি এই পদ্ধুতির কথা একেবারেই শুনিনি। আজব তো।
ভারতবর্ষে দাস বংশের শাসন সম্পর্কে কিছুটা জানি।
খোজা নফরদের সম্পর্কেও জানতাম, তবে তারা যে শিশু ক্রীতদাস এভাবে চিন্তা করিনি।
আজব ব্যাপার হল অনেক ধর্মওয়ালা ভাই সভ্যতার বর্তমানে মানে তেমন সন্তুষ্ট নন। ওনাদের কারো কারো মতে দাসপ্রথা নামেই বিলীন হয়েছে, কার্যত এখনো আছে, করোপরেট ওয়ার্ল্ডের কাছে আমরা সবাইই দাস। এমন এনালাইসিসের কারন কি টা মনে হয় বলতে হবে না। পেট ফাটা হাসি পেলেও মায়াও লাগে কিছুটা :hahahee: ।
@আদিল মাহমুদ, http://en.wikipedia.org/wiki/Dev%C5%9Firme.
“এই ব্যবস্থার মত নিষ্ঠুর ব্যবস্থা বিশ্বে কখনও হয় নাই—হবেও না”.
http://www.gci.org/bible/africans
The pre-Adamite view argues that blacks, particularly so-called “Negroes,” are not descended from Adam. This view appears to have its origin in the works of such authors as Paracelsus in 1520, Bruno in 1591, Vanini in 1619 and one of the most prolific writers, Peyrère, in 1655. It reached a high level of development with the 19th-century scholar Alexander Winchell in his book, Preadamites; or a Demonstration of the Existence of Men Before Adam, published in 1880.
These writers (all of them white), argued that blacks belong to a race created before Adam and from among whom the biblical villain Cain found his wife. Cain, by marrying one of these pre-Adamic peoples, the reasoning goes, became the progenitor of all black people. Therefore, it was rationalized, black people, especially “Negroes,” are not actually human, because they did not descend from Adam but from some pre-Adamic creation, having entered the human race only by intermarriage, and that with a notorious sinner. As non-humans, therefore, they did not have souls, but were merely beasts like any other beast of the field. And since the Bible says God gave humans dominion over the beasts, it was concluded that these soulless creatures exist to do work for the humans.
This preposterous theological premise was preached in churches across the United States, particularly in the Southeast, to reassure people that slavery was not only acceptable, but the very will of God, rooted firmly in a “proper” understanding of the Bible.
@সফিক,
ভাগ্য ভাল যে ব্যাটারা এখন আর এইসব শিক্ষা দেয় না।
@সফিক,
তাবারির লেখাতে পড়েছিলাম খলীফা ওমর কৃষ্ণকায় লোকদের অতিশয় ঘৃণা করতেন। মুহাম্মদের অন্যান্য সাথীরাও। হাতের কাছে তাবারির বই নাই, তাই পৃঃ দিতে পারলাম না।
তা ছাড়া অনেক হাদিসেই দেখা যায়, মুহাম্মদ ছিলেন ফর্সা রঙ্গের–শেতাঙ্গই বলা যায়। উনি কোন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা বিবাহ করেন নাই।
আরবরা কৃষ্ণাজ্ঞদের ভীষণ ঘৃণা করে। আমাদেরকে (অর্থাৎ ভারতবর্ষের) তারা কৃষ্ণাজ্ঞই ধরে।
শরিয়া আইনে লিখা আছে কোন অনারব পুরুষ, সে মুসলিম হলেও কোন আরব মহিলাকে কোনক্রমেই বিবাহ করতে পারবে না। এই আইন অমান্য করলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। তাই আমরা মুসলিম ভাই ভাই বলে যতই চীৎকারই দেই না কেন—আরবরা শুধু আমাদের বোকামী দেখে মুচকি হাসে আর আমাদেরকে আবদ্ (দাস) বলে।
এই হল ইসলামী ভ্রাতৃত্ব।
@আবুল কাশেম,
আপনার কাছে এরকম একটা জবাবই আশা করছিলাম।
আরবদের ঘৃন্য দাসপ্রথা নিয়ে আরেকটি ভালো বই এর নাম দিচ্ছি. .।
Islam’s Black Slaves: The Other Black Diaspora [Paperback]
Ronald Segal (Author)
http://www.amazon.com/Islams-Black-Slaves-Other-Diaspora/dp/0374527970
লেখকের পেডিগ্রীটাও একটু দেখে নিয়েন।
দেখুন না ইকনোমিস্ট তাদের রিভিউতে কি বলেছিলো — কি রকম গা শিউরানো ব্যপার স্যাপার
http://www.economist.com/node/1056865
Islam and slavery
Shades of grey
Mar 28th 2002
——————
Islamic law treated slaves as people, not chattel. They often owned property including, at times, their very own slaves. Manumission of slaves, considered an act of great piety, was common. Slaves seldom worked plantations, but rather were employed as household servants, concubines or soldiers. In numerous instances black slaves, and particularly eunuchs—whose value was up to seven times that of ordinary slaves—rose to positions of great wealth and even kingship.
Whatever mild racism existed was never, as in America, underlain by peculiar taboos against miscegenation. The slave population of pre-modern Muslim cities, which included Turks, Slavs, Javanese and others in addition to Africans, tended to dissolve within a generation into society as a whole. The result is that, despite this book’s subtitle, there is no “Black Diaspora” in Islam.
ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর লোমহর্ষক রিভিউ
http://www.independent.co.uk/arts-entertainment/books/reviews/islams-black-slaves-by-ronald-segal-751100.html?service=Print
This is not to say that Arab suprematism has not been a feature of Islamic history. But Arab slave-owners, who were the chief beneficiaries of the African slave trade, made no distinction between children born to their Arab wives and those born to slave women.
Indeed, children whose mothers were slaves but whose fathers were masters could expect to grow up as free Muslims who might themselves become slave-holders. Over several generations, their African provenance was diffused within the larger population.
This fits in with a wider view of Islamic slavery adumbrated by Segal. Because of the clan-ism which endured not just among Arabs, but also other Middle Eastern peoples, slaves were of particular value since – paradoxically – their loyalty could be counted upon. So it was that slaves often rose to high civil and military positions, whether in the early Umayyad and Abbasid caliphates, or in the much later Ottoman empire.
@সফিক,
অনেক ধন্যবাদ বইটির উল্লেখের জন্য।
বইটি কিন পড়তে হবে।
আমার বন্ধুদের কাছে শুনেছি সৌদি আরবে শ্বেতাঙ্গদের অনেক উঁচু ভাবে দেখা হয়–অমুসলিম হলেও। একই যোগ্যতার অধিকারী হওয়া সত্বেও কালা আদমি, তথা ভারতবর্ষের কর্মচারিদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনেক কম শ্বেতাঙ্গদের চাইতে।
আমি সৌদি আরবে কোনদিন চাকুরী করি নাই–তাই এই তথ্বের সত্যতা জানিনা।
@আবুল কাশেম, ভাই অনেক দেরিতে হলেও জানতে চাচ্ছি
তথ্যটির কোন রেফারেন্স দিতে পারবেন ?
@ধ্রুবণীল,
দেখুন শফি শারিয়া আইন–
Arab women cannot marry non Arab men (because Allah has chosen the Arabs above others)…m4.2(1); p.523
al-Misri, Ahmed ibn Naqib. Reliance of the Traveller (‘Umdat al-Salik), revised edition. Translated by Nuh Ha Mim Keller. Amana Publications, Bettsville, Maryland, 1999.
বইটা হয়ত গ্রন্থাগারে পেতে পারেন–অথবা কিনতে হবে–আমাজনে পাবেন। বিশাল শরিয়ার বই।
@আবুল কাশেম, অনেক ধন্যবাদ। 🙂
@আবুল কাশেম,
মুহম্মদ বা ওমর কালো ব্যক্তিতে ঘৃণা করতেন তা আজই প্রথম শুনলাম, অবশ্য উৎসহীন। তবে মুহম্মদের অনেক সাহাবী ছিলেন কাফ্রী যেমন বেলাল, যিনি প্রথম কাবাতে আযান দিয়েছিলেন, যাকে কুরাইশরা প্রথম দেখাতেই কালো কাক বলে সম্বোধন করেছিল।
@আদিল মাহমুদ,
The Legacy of Jihad বই-এর দুই অধ্যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
THE IMPACT OF DEVSHRIME ON GREEK SOCIETY
THE ROLE OF SLAVES IN FIFTEENTH-CENTURY TURKISH ROMANIA
এখানে একটা উদ্ধৃতি দিলাম
. As the scholar Majid Khadduri explains, the Shari’a (sacred law of Islam) had quite precise rules for non Muslims captured in jihad.
[T]he Imam (ruler) may condemn the population of the conquered countries, in case they do not accept Islam and the Imam does not demand that they shall work and pay the tribute, to be slaves and be divided among the Jihadists as ghanimah (the spoils of war). The owner of a slave had the liberty to treat him any way he liked. If the slave were a woman, he was allowed to have sexual connection with her without marriage.
পৃঃ ৫৭৬-৫৭৭
@আদিল মাহমুদ,
আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বই থেকে পড়েছি। এছাড়া কিছু প্রবন্ধ আর কোরান এবং হাদিস থেকেও। এই মুহূর্তে সব বলতে মনে করতে পারছিনা। 🙁
কয়েকটি উৎস দিচ্ছি সময় পেলে পড়ে দেখবেন।
আল কুরআন_ সূরা আত্ব তূর;_ ৫২:২৪
আল কুরআন_ সূরা আদ-দাহর ;_৭৬:১৯
http://faithfreedom.org/oped/skm51109.htm
http://voi.org/books/mssmi/ch9.htm
http://en.wikipedia.org/wiki/Ghilman
@অরণ্য,
ধন্যবাদ।
মির্জা সাহেবের ঐ লেখার বাংলা কোথায় যেন পড়েছিলাম।
বাকি লেখাটা পড়ে দেখবো।
সুলতান ‘তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য ৫০,০০০ হাজার দাস-বালক নিয়োজিত ছিল এবং তার প্রাসাদে ৭০,০০০ ক্রীতদাস কাজ করতো’???????????????৫০০০০ সংখ্যা টা কম নয়।এদের কে দেখাশোনা করার জন্য কমপক্ষে ১০০০০ সৈন্য দরকার।এতগুলো মানুষ
কিভাবে এক প্রাসাদে কাজ করত??????এত বিশাল প্রাসাদ কি আদৌ ছিল তখন??? কেন জানি মনে হয় সংখ্যা টা অনেক বেশি ।।তবে এতে কোন দ্বিমত নেই হারামি গুলো ধর্মের নামে অনেক কুকর্ম করেছে…।
সহমত।
অন্য ধর্মের বর্বরতা নিয়ে লিখতে পারেন—তাতে পাঠকেরা উপকৃত হবেন।
@আবুল কাশেম,
অন্য ধর্মে এমন বর্বরতা থাকলে না হয় লিখবেন। এমন বর্বরতা তো সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বপ্রধান ধর্মেই রয়েছে, অন্য ধর্মে থাকলেও ছিটেফোঁটা, যা তথাকথিত শান্তির ধর্মের কাছে অত্যন্ত ম্রিয়মান। আমার বিশ্বাস, আমেরিকার নিগ্রো দাসপ্রথা বা অন্যান্য দেশের দাসত্ববাদ কিন্তুধর্মান্তরিত করা, লুটতরাজ, পরনারী ভোগের নামে নয়, কিন্তু ইসলামের দাসত্ববাদ পরনারী ভোগ, লুটতরাজ এবং ধর্মান্তরিত করার জন্যই ঘটেছে, যা সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোরানে তথাকথিত আল্লা এবং তথাকথিত সর্বশ্রেষ্ঠ নবীজির হুকুমও বটে। যে নবীর চরিত্রও ফুলের মতোই পবিত্র…।
@কফিল কাঙ্গাল,
হাঁ, আপনি সঠিক লিখেছেন।
ইসলামে বর্বরতা বা ধর্মে বর্বরতা না বলে আমি বরং বলব Homo sapiens এর বর্বরতা।
কেননা যে সকল বর্বর অমানবিক কাজ গুল আমরা ধর্মের নামে করে থাকি তা কি আমাদের ই বিকৃত বিবেকের পরিচায়ক নয়? যেখানে ধর্মের স্রষ্টা মানুষ নিজেই! নিজের কৃত অপকর্ম কে কাল্পনিক স্রষ্টার নামে চালিয়ে দেয়ার মতো মহাপাপ (?) অন্য কোন প্রাণী করেছে কিনা আমার জানা নেই। স্রষ্টা যদি থেকেও থাকেন তো তিনি অবশ্যই এই ধর্মবাজ দের কখন ক্ষমা করবেন না।