ভাদ্র মাসের শনি মঙ্গলবার তাল খাইলে কাল ছাড়ে। পূবাইল আডেত্তেনে তাল আনবি।
মেজো ছেলে আঁটি। অটল যার নাম মা তাকে উদ্দেশ্য করে বললেও গলাটা যদ্দুর সম্ভব উঁচিয়ে জোরেই বলে। অন্য ছেলেরাও যেন শুনে। মা প্রায় এগার বছর যাবৎ তাল খায় না। ছোট ছেলে পুঁটি। পটল তাল গাছের নীচে ঘর তোলার পর থেকে নিজের গাছের তাল খেতে পারেনি বলে তখন থেকেই মায়ের তাল খাওয়া বন্ধ। আজকাল মায়ের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খাওয়ার নেশা জাগছে। কত কিছু খাবারের যে বায়না ধরে।
উঠানের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বাড়ি থেকে আল পথে নেমেই ছিল তাল গাছ। এ ছাড়া বাড়ি থেকে নামার আর কোন পথ ছিল না। আর পুঁটি কিনা বাড়ির বাইরের অংশে তাল গাছের কাছে মাটি ভরেছিল বসত ভিটা বানাতে। বাপের একটুখানি ভিটায় তিন ভাই গাদাগাদি করে থাকার চেয়ে বসত ভিটা বাড়িয়ে নেওয়া যে বুদ্ধিমানের লক্ষ্মণ তা মাকে বুঝাতে পারেনি। তবে মায়ের বারণও শুনেনি।
তাল গাছের ভূতপেত্নির চৌদ্দগোষ্ঠি ছাড়িয়ে ছোট ছেলে তালগাছের নিচেই ঘর তুলেছে। ছোট ছেলের ইচ্ছে ছিল তাল গাছের কাঠ দিয়ে রোয়া বানানোর। পয়সা বাঁচতো। সার কাঠ পেত। তাল গাছের নীচে ঘর করে পাকা তাল চালে আর মাথায় পড়ার ঝুঁকিও থাকত না। মা তাল গাছ কাটতে দেয়নি, তবে ছেলে মাকে গাছের তাল খাওয়ারও সুযোগ দেয় না। জৈষ্ঠ্য মাসে কাঁচা অবস্থায় সব তালের শাষ বেচে দেয়। কাঁচা অবস্থায় তাল না বেচলে ভাদ্র মাসের গরমে পেকে পেকে পরবে। নতুন ঘরের চালের টিন তালের ভাড়ে বেঁকে যাবে এবং কোন সময় কার মাথায় পরবে এ ভয়েই কচি তাল বেচে দেয়। ঘরে খাওয়ার জন্য একটা বড় বাঁধি রেখে সবাইকে ভাগ করে দেয়। এবারও তাই দিয়েছে।
এর পর থেকে মা তাল খায় না। নিজের গাছের তাল খেতে পারে না বলে তাল খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। ভাদ্র মাসের শনি মঙ্গলবার তাল না খেলে কাল না ছাড়লেও মা তা তোয়াক্কা করে না। যাদের মঙ্গলের জন্য কাল ছাড়াবে তারাই যখন নিজেরা কাল হয় তখন আর বেহুদা তাল খেয়ে কি হবে!
সেই থেকে রাগ করে তালও খায় না, আষাঢ়িও খায় না।
গতবার মা থেকে নিজের জন্য পাঁচ সাতটা চৌকির নীচে রেখে দিয়েছিল। খাবে খাবে করেও খেতে পারেনি। একটু শক্ত হয়ে গেছে। দাঁতে কুলায়নি। কাউকে দেয়ওনি। চৌকির নীচে লেপতে গিয়ে মেজো বউ দেখে তালের আষাঢ়ি শুকিয়ে করন্ডি লেগে আছে। আষাঢ়ি শুকিয়ে গেলেও মায়ের এ বিষয় নিয়ে মেজো বউয়ের কথা বলা না শুকিয়ে বরং ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা।
খায় না পরাণ তুকতুক করে, বিলায় না দুরা কাউয়ার ডরে। আমরা একটা কইরা আষাঢ়ির চউখ খাইতাম পাইলাম না আর এতগুলি নষ্ট অইল।
ঐ তখন থেকেই মায়ের এমন আচরণ নজরে আসে। খাবার নিয়ে সঞ্চয় করার মনোবৃত্তি বেড়েই চলছে। যা খায় এর চেয়ে বেশি নষ্ট করে। উনার খাবার বুঝি পৃথিবী থেকে সব উধাও হয়ে যাবে এমন ভাব।
মা নাতি নাতনির হাতে আম দেখলেও চেয়ে খাচ্ছে। আর খেয়েই বিছানাপত্র ভরাচ্ছে। পেটে সয় না,অথচ খাওয়ার লোভ ছাড়তে তো পারছেনই না বরং তা দিন দিন বাড়ছে।
বছরখানেক আগেও খাওয়া নিয়ে মায়ের কোন লোভই ছিল না। নাতি নাতনির যা পছন্দ তাকে নিজের ভাগেরটাও খাওয়াত।
ছোট ছেলের মেয়েটা আমের বড়া চেটেপুটে খেতে পছন্দ। কাজেই মা নিজের আম দুদিক থেকে চওড়া করে কেটে খেয়ে আর দুই পাশের চিকনটুকুসহ আমের বড়া নাতনির হাতে তুলে দিতেন। আর আজ নিজেই কিনা বলছে, তর আমডা মিডা অইলে আমাড়ে কাইট্যা এট্টু দে। আমারডা বেশি মিডা আছিল না।
এত আদরের নাতনি তা আবার জেঠিমার কাছে বলে দিয়েছে। জেঠিমা মানে বড় ছেলে খুঁটির ওরফে খগেনের বউ আরেকটা আম কেটে শাশুড়িকে দিয়েছে।
শীত কালের রোদে বসে দুপুরের খাবার খেত। আর খেতে বসলেই আধঘন্টা খানেক সময় লাগত। সীমের খটখটি রাঁধলে সীম বিচি মুখে দিয়ে দাঁত দিয়ে একটু কেটে বুড়া ও চতুর্থ আঙুলে চাপ দিয়ে বিচির শাঁসটা মুখে নিয়ে ছোলাটুকু ফেলে ফেলে খেয়ে, পুটি মাছের তরকারীও খাওয়া শেষ সাথেই খেতে বসা ননদ মাটির। আর মা কাঁসার থালের কান্দায় বিচি কেটে শাঁসটা বুড়া ও চতুর্থ আঙুলে চাপ দিয়ে বের করে থালার কোনায় জমা করত আর মুখে বড় ছেলের মেয়েকে ডাকত খাওয়ার জন্য। মেয়েটা সীমের বিচি পছন্দ করে।
মায়ের এমন ডাকাডাকি বউদের পছন্দ ছিল না।
যদিও নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকেই খাওয়াত। কিন্তু মায়ের খাওয়া না হলে বউরা খেতে বসতে পারে না। পাশে বসা ননদ মাটি বলত, তোমার খাওয়া তুমি খাইয়া উড। রোজঐ খাইতে বইয়া এত কেডের কেডের বাল্লাগেনা।
মায়ের তাৎক্ষণিক উত্তর, তরে বালা লাগাইত কয় কেডা। তর খাওয়া তুই খাইয়া উড।
আমি খাইয়া উটলে অদ আর বদিরা খাইত বইত না।
মা এক নাতনিকে সীমের বিচি খাওয়াত তো অন্য নাতিকে বজরি মাছের মাথা মুখে পুরে দিত চিবানোর জন্য।
অন্য দিন অন্য জনকে তার আরেকটা কিছু। কোন নাতি নাতনির পছন্দের খাবার মা নিজে কখনও খেত না। যার যেটা পছন্দ তাকে দ্বিগুণ তিনগুণ করে খাওয়াত। আড়ে ঠাড়ে বলতে চাইত ঐ নাতি বা নাতনির মা যেন তারটাও ছেলে মেয়েকে দেয়।
এ ইঙ্গিত কোন বউ ই পছন্দ করত না। সবার আত্মাই আত্মা।
নিজের আত্মারে কষ্ট দিলে ভগবান বেরাজি হবে। এক আধদিন সম্ভব। খোদার তিরিশ দিন মায়ের এমন আচরণ চলতেই ছিল।
সে মা আজ নাতি নাতনিদের হাতের খাবার চেয়ে খায়।
মাটি আবারও তাগিদ দিত, তোমার খাওয়া না অইলে দ বউরা খাইতে পারে না। বেলা কই গ্যাছ্যা চহে দ্যাহ না?
আমি দ কেওই রে খাইত না করি নাই?
মা অবশ্য বলতে থাকত, তোমরা খাইয়া লও।
আবার দুয়েকদিন বউরা খেয়ে ফেললে মা বিরক্তও হতো।
সরাসরি বিরক্ত প্রকাশ করতে না চাইলেও কলার থোড়ের মত ফুটে যেত। পরত আটকাতে পারত না।
শাশুড়ির কথায় বউরা নিজেরা খেয়ে পরে আবার ডাকতে গেলে বলত, আমার লাইগ্যা কি কেঐর খাওয়া আইটকা রইছেনি। তবে এত ডাহাডাহি কিয়ের?
এ খোঁটায় বউদের পেটের ভাত হজম হয়ে যেত।এর চেয়ে শাশুড়ির পরে ভাত খেয়ে রাত পর্যন্ত পেটে রাখাই ভাল ঠেকত।
মায়ের আগে বউদের খেয়ে ফেলা ছেলেরাও পছন্দ করে না। যদিও মায়ের জন্য মাছের ভাল টুকরা আগে বাটিতে উঠিয়ে রেখেই বউরা খেত।
এখন অসুখে,বয়সে, সংসারে নিজের অনাবশ্যকতা – সব মিলিয়ে যেন খাওয়ার প্রতি লোভও বেড়েছে। কেমন যেন খাই খাই রোগ। ডাক্তারও কোন কিছু খেতে বারণ করছে না। কাজেই খেতে দিতেই হয়। আর খেয়ে খেয়ে সারতে না পেরে মাঝে মাঝে বিছানা পাটি হেগে ভরায়। কোনটা খেলে শরীর ভাল থাকবে তা খুঁজে পেতে সারাক্ষণ উদগ্রিব। শাক সবজি খাওয়া ভাল। শাক পেটে সয় না। তবুও শাক লাগবে। যদি সবুজ শাকে চোখটার দ্যুতি বাড়ে!নাতনিদের মাথায় উকুন কিলবিল করে। মা আঙ্গুলে তুকে তুকে উকন মারে। চোখে দেখে না। নাতনিদের মাথা বিলাতে বসলে সবই ঝাপসা। ঝাপসা আগের সব সুখ স্মৃতি। দুঃখ গীতি। সবই। শাক খেয়ে যদি একটু উন্নতি হয়!
এখন শরীর এলিয়ে গেলেও সংসারের বিভিন্ন দিকে ষোল আনা নজর। তিন ছেলের তিন সংসারেই চোখ। খাওয়ার দিকে চোখ আঠারও আনা। খাওয়ার লোভটা বেড়েছে। লোভ না বলে ছেলেরা বলে, ইচ্ছাডা বারচে।
এ ইচ্ছে যে কি বাড়ন্ত ছিল তা ছেলেরা জানে। বউরাও টের পেয়েছে। এখন মা শুয়ে শুয়ে শুধু খাওয়া চায়। যত্ন চায়। অধিকার চায়। অথচ মায়ের ইচ্ছার বলি ছিল সব ছেলেরা।
বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের দাপট একটু আধটু দমলেও কমেনি।
বাবাই গ্রামের পাঁচজন ডেকে বলে গেছে— তগো মা বাইচ্যা থাকতে পৃথক হতে পারবি না। যদি পৃথক খাইতে হয় তবে আমার জমিজমা তগো মায় থাকতে বাগবাটোয়ারা করতে পারবি না।
সুস্থ্য থাকতে মা আলাদা খানা কোনভাবেই মেনে নেয়নি। মায়ের ছিল এক কথা — ভিন্ন খাইলে খাইগ্যা। আমি বাইচ্যা থাকতে জমি জিরাত বাগাবাগি করুন যাইত না। তগো মরা বাপের দোহাই।
সব জমি জমা নিয়ে নিজেই আলাদা পাকে খাব।। কাউকেই জমি দিমু না। খা। নিজে কামাই কইরা খা। এত ঢিলকি দেহি কই যায়!
ছেলেরাও নড়ত না। আইনী শক্তি না। গলার জোর। ছেলেদের বশ্যতার জোর ছিল। ছিল স্বামীর শেষ ইচ্ছার কথা বলে অলৌকিক শক্তির আধিপত্য।পাঁচজন ডেকে বাবা বলে গেছে বলে ছিল সামাজিক সমর্থন।
ছোট বউ রামপ্রসাদ থেকে ধার করে খোঁটা দিয়েছিল—- মা হওয়া কি মুহের কতা যদি না বুঝে সন্তানের ব্যথা।
সংসারের নিয়মই আলাদা হওয়া। একসাথে রেখে মায়ের স্বার্থ কি?
মা পরের বেটির কথা শুনতে নারাজ। আমি আমার পোলাগো লইয়া কতা কই ত গো কী?
তখন মেজো বউ বৈচি শুধু বলেছিল — এমুন তুই তাই কইরা কন কেরে?
যার লাইগ্যা চুরি কর হ্যায় ওই কয় চোর! মাইজ্যা বউ, তুমি এমুন কইরা মুহের উপরে কথা কইলা?
অথচ উনি জীবিত থাকতেই হাড়িঁ ভিন্ন। মায়ের শরীর নিজ্জুরি হতেই ভাইদের পাতিল ভাগ হয়ে গেছে।
খানা শুধু আলাদা না, জমি জিরাত, ব্যবসা পাতি সব ভাগাভাগি করে ছিলছিলা। এখন মাকে সকলেই দেখে। মানে ঔষধ পত্রের টাকা সবাই দেয় আর খায় এক এক ছেলের সাথে এক এক মাস করে করে।
বড়ছেলে খুঁটি বরাবরই নিজের বোঝ বুঝে। আলাদা হওয়ার কলকাঠি সে ই নেড়েছে।
মায়ের এ সত্যি উপলব্ধি করতে সময় লাগেনি যে দোয়ানো দুধ আর গাভীর বাটে ঢুকানো যায় না, তেমনি ভাইয়ে ভাইয়ে একবার পৃথক হয়ে গেলে আর একসাথে হওয়া যায় না। মিলও দিনে দিনে উড়ে যায়।একে অপরকে সুখে ডাকলেও দুঃখে ডাকতে স্বস্থি বোধ করে না। তাইতো ভিন্ন হওয়ার কথা তুললেই মায়ের জমিজমা ছাড়াও আরেকটি অস্ত্র ছিল সুর ধরে কান্না। ভাইয়ে ভাইয়ে পৃথক হলে মায়ের এত কান্নার কী আছে যদিও তা ভেবে পায়নি ছেলের বউরা।
বড় বউ তো বলেই ফেলেছিল —— মরা কান্দুনের কী হইলো। আপনের কষ্ট না অইলে ঐত্তো অইলো।
কষ্ট কী শুধু পেট ভরে ভাত না খাওয়া! সুখ কী শুধু কাজ না করে সময় মতো নিজের জন্যে সব কিছু পাওয়া! শুধুই নিজেকে ঘিরে কী সুখ, স্বস্থি, শান্তি, শক্তি আবর্তিত? নিজের সব কয়টি ছেলেমেয়ে সমানভাবে নেই।
বড়টা ফেলে টেলে খেতে পারবে। ছোটটা ও পারবে, কিন্তু মেজোটা —- আঁটি টেনেটুনেও পারবে না। এ টানাপোড়েন কী দিয়ে ভরবে মেজোটা? তার তো রোজগার কম।
মেয়েরাওতো বাপের বাড়িতে আসতে আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। কোন ঘরে উঠবে?
মা যার সাথে যে সময় খাবে বোনেরা তার ঘরেই বেড়াবে বলে এক ধরনের অলিখিত নিয়ম রয়েছে এ গ্রামে। এ নিয়মই কী এ পরিবারেও চলবে? মা পালা করে এক মাস করে সব ছেলের সাথেই খাবে। ভিন্ন হওয়ার সময় অবশ্য প্রত্যেক ছেলেই বলছিল মা তার সাথে খাবে।
যাদের বেশ জমি জিরাত আছে তাদের মা এক বিঘা জমি নিয়ে কোন একজনের সাথে খায়। বাকি জমি ভাগ হয়। তাদের মাকে এত ভাগ বাটোয়ারা করে খাওয়ানোর ইচ্ছে নেই। মায়ের খাওয়া বা মাকে নিয়ে কোন আইন, নিয়ম বা ভাগ বাটোয়ারা নয়। মায়ের যার সাথে যখন যে বেলা ইচ্ছে খাবে। এতেও মা স্বস্থি পায়নি। এ তো কারো সাথেই না থাকার মত। পরে এক মাস করে খাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মা জানে তার নিজের বলে কিছু থাকল না।
মায়ের হাতের জোর, কনুয়ের জোর,গলার জোর, মাথার জোর , একে একে সব জোরইই শেষ। নির্লোভ মনটাও এখন খাই খাই।
একদিন তো ছোট বউ বলেই ফেলল, ক্ষেতের চাক্কা ক্ষেতঐ বাঙ্গে। এত তেজ গেল কই?
এ চাক্কা যে এমন মিহি করে ভেঙ্গে ছেলেরা অন্য ফসল ফলাবে তা খুঁটির বাপ জানত। মা এখন সব বুঝলেও কিছুই বলে না। বলতে গেলে আগুনের উত্তাপ বাড়বে। এখন শুধু খাওয়া আর সময় যাপন করা। শরীরের কষ্ট কমানো। শরীরের এদিকে ব্যথা আর ঐদিকে ফুলে যাওয়া নিয়ন্ত্রনে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা অব্যাহত রাখা। শরীরটাকে যৌবন কালের মত চাঙ্গা করার লোভে জিহ্বাটা লুলে টসটস করে। ভোজে ভীমরতি প্রকাশ পেলেও ক্ষেতের চাক্কা আস্ত রাখার আর কোন উপায় তো মায়ের জানা নেই!
অনেকদিন পরে মুক্তমনায় এসে গীতা দি’র লেখা মন কেড়ে নিল।
খুব অসাধারণ একটা পর্যবেক্ষণ। যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজে বা পরিবারে একজন মানুষের গুরুত্ব আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে স্বার্থত্যাগী। যেই মুহুর্তে সে টের পায় যে তার আর কোনো গুরুত্ব নেই, বাতিল হয়ে গিয়েছে বয়সের কারণে, তখনই সমস্ত স্বার্থপরতা এসে গ্রাস করে তাকে।
চমৎকার একটা গল্পের জন্য দিদির প্রতি রইলো স্বার্থহীন ভালবাসা। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
পরাণ ভরে গ্রহণ করলাম ফরিদের নিঃস্বার্থ ভালবাসা। :-O
আর খুবই ভাল লাগল আমার গল্পের চরিত্র নিয়ে তোমার ব্যাখ্যা —
কোন রকম ভনিতা না করে বলি, লেখাটা পড়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছি, বসে আছি। লেখাটা পড়তে পড়তে প্রশ্ন জাগলো, আমি কি একান্নবর্তী বা একক পরিবারের পথিক? স্মৃতি কি সব কিছুকে আড়াল করে দেয়? এমনকি যে পরিবার প্রথার মধ্যে পুঁজের গন্ধ, তাকেও? গল্পকার তো গল্প বলে যান, যাবেন, তিনিও কি গল্পের আড়ালে অকথিত আরো কিছু গল্প পাঠকের জন্য রেখে যান?
@স্বপন মাঝি,
কোন পরিবার প্রথায়? একক না একান্নবর্তী?
@গীতা দাস,
আসলে একক বা একান্নবর্তী না বলে, বলা উচিত পরিবার প্রথার মধ্যেই অর্থনীতির পুঁজের গন্ধ। আপনার লেখাটা পড়তে গিয়ে মাথায় কিছু ভাবনার আনাগোনা শুরু হয়ে গেল। নিজের দেখা একান্নবর্তী পরিবার, একক পরিবার, তারপর শুনলাম অনেকে আবার আলাদা বাড়ীতে থেকে সপ্তাহান্তে ( এটা বিদেশের অভিজ্ঞতা) একসাথে মিলিত হয়। এখন মন্দার কারণে সে ঢেঊ-য়ে ভাঙন ধরেছে। শুধু কি স্বামী (?) স্ত্রী (?) আত্মীয়-স্বজন সেই হারানো জমিতে ফিরে আসছে। কিন্তু কেউ সুখি নয়। আসলে কোন প্রথার মধ্যে কোন সুখ দেখিনি। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতাই চোখে পড়েছে।
ভালো হয়েছে লেখাটি
@বেয়াদপ পোলা,
পাঠকের ভাল লাগাই তো লেখার সার্থকতা।ভাল লাগাটুকু জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
প্রথমত, বর্ষাভোজন নামটি খুব শুন্দর।
দ্বিতীয়ত, যদিও গ্রাম বাংলার একটি রূপ ফুটে উঠেছে তবুও বলা যায়, সংলাপ গুলোর আঞ্চলিকতা বাদ দিয়ে “শহুরে” ভাষায় লিখলে কিন্তু দেখা যাবে শুধু গ্রাম বাংলায় নয়, এটা আমাদের দেশের গ্রাম এবং শহর দুটোরই একান্নবর্তী পরিবারের একটি প্রচলিত রুপ।
ভাল লেগেছে। 🙂
@ছিন্ন পাতা,
পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। শহরে তো একান্নবর্তী পরিবার অভিজ্ঞতায়ই পড়ে না।
বর্ষাভোজন ! বাহ্ চমতকার নাম। গল্পটিও তেমনি চমতকার। খুব ভালো লাগলো। এটা কি নতুন লেখা দিদি ?
@মোজাফফর হোসেন,
হ্যাঁ, নতুনভাবে সমাপ্তি টানা। প্লট আগেই খসড়া করা ছিল।
তাল নিয়ে এক পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের ভেতর যে ঘাত প্রতিঘাত টানা পড়েন সেটা সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে গল্পে। ধন্যবাদ।
@শাখা নির্ভানা,
তাল নয়, পরিবারে বৃদ্ধ মায়ের অবস্থান ও তার চরিত্রের রুপান্তর ছিল আমার উদ্দেশ্য। যাহোক, আপনার মত একজন গল্পকারের মন্তব্য পেয়ে ভাল লাগল।
গ্রাম=বাংলার একান্নবর্তী পরিবারের এক জ্বলন্ত ছবি আপনার লেখায় ফুটে উঠেছে। এ যেন আমাদের গ্রামের মাইল্লার(মালেক) মার কাহিনি।মাইল্লারাও তিন ভাই।মার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনো ছেলেই মায়ের জমি-জমা ভাগ-বাটায়োরা করতে পারেনি।মাইল্লার মার বিশেষ গুণ ছিল তার যুক্তিমূলক ও সাহসী কথাবার্তা।তাই তার সাথে তার ছেলে ও ছেলের বউরা কেউ পারতপক্ষে কথা বলতে সাহস করত না।
তাল গাছ নিয়ে ছোটকালে আমরাও শুনেছি ভূত-পেত্নির ভয়।ভয় থাকলেও কিন্তু পাঁকা তাল কুঁড়িয়ে আনতে কশুর করতাম না।আর তাল গাছ তো আমাদের দেশে একটি বিশেষ উপকারী গাছ। এর শরীরের বাহির ও ভিতরের সবকিছুই আমাদের গ্রামীন জীবনে বড়ই উপকারী বস্তু।তালের পাতা দিয়ে রশইঘরের ছানি দেওয়া,কাঠ দিয়ে ঘরের কাঠামো তৈরী করা যা কিনা অন্যান্য কাঠের চেয়ে মজবুত।আর তালের বিচি তো তিনভাবেই খাওয়া যায়।কাঁচা থাকতে বিচি কেটে শাঁস খাওয়া ,পাঁকলে ছিবে রস আগুনে জ্বাল দিয়ে ঘন হলে তালের পিঠা বানিয়ে খাওয়া,আর ছিবে রস নেওয়ার পর তালের বিছি ফেলা দেওয়ার নয়,বরং ঐগুলি একজায়গায় জমা করে রেখে দেওয়া হলে ৪,৫ মাস পর বিছি থেকে ফুল গজালে কেটে ভিতরে যে বড় বড় সু-স্বাদু সাদা/বাদামী ফল পাওয়া যায় তা খেতে যে কি মজা তা আর না বললেই নয়।এমন কি ঐফল গুলি দিয়ে একধরনের কোর্মাও বানানো যায়।আ-হা খেতে কি মজা,মন চায় যেন এখনি খাই………………………।।
গীতাদি, আমাদের গ্রামীন জীবনের এমন জটিলতাপূর্ন সরলকাহিনি আপনার লেখায় দারুনভাবে ফুঁটে উঠেছে।
ধন্যবাদ।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
তাল নিয়ে এমন বিশ্লেষণের জন্য ধন্যবাদ মামুনকে।