আমাদের অভিভাবকেরা নিজেদের সন্তানের শিক্ষা নিয়ে দারুণ উদ্বিগ্ন! হয়তো একটু বেশি মাত্রায়। কেননা সন্তানকে ভালো গ্রেডে পাস করতে হবে। কিন্তু ভালো রেজাল্টের এই প্রতিযোগিতায় শিশুরা কি পিছিয়ে পড়ছে বুদ্ধিতে, মানসিকতায়?
প্রতিটি অভিভাবকই চান তার সন্তান ২৪ ঘণ্টাই বই খুলে বসে থাকুক। আর পরীক্ষা চলাকালে তাদের এই উদ্বিগ্নতার মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যায়। যেমন পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাইরে ঘোরাঘুরি, পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়া, খেলাধুলা সকল কিছুর প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। শুধু বইয়ের মাঝে মুখ গুজে বসে থাকো! আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে কোনো শ্রেণীতে তিনটি সাময়িকী পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে। অর্থাৎ ছাত্রদের জীবনে প্রতি বছরে তিনটি মাস কাটে এইরকম নির্বাসনে! পরীক্ষা সম্পর্কে ভয় ভীতি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে কি আসলেই সহায়ক?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত ভয় আলসার, মাথাব্যথা, চামড়ায় এলার্জির মতো কিছু অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতি বছর S.S.C ও H.S.C এই দুই বড় পাবলিক পরীক্ষায় কৃতকার্য না হতে পেরে অনেক ছাত্রদের আত্মহত্যা করার কথাও শুনা যায়। পড়াশুনা নিয়ে ঠিক কতটুকু চাপ শিশুকে প্ররোচিত করে এইরকমভাবে নিজেকে ধ্বংস করে দেয়ার পথ বেঁছে নিতে!
আর অভিভাবকদের এই উদ্বিগ্নতাকে পুঁজি করে গড়ে উঠছে কোচিং সেন্টারগুলো। শিক্ষকেরাও ক্লাসে নিজেদের পুরোপুরি উজাড় করে না দিয়ে অনেকটাই বাঁচিয়ে রাখছেন তাদের নিজস্ব কোচিং ক্লাসের জন্য। যেমন- পরীক্ষার খাতায় অঙ্কের নিয়মটি কেটে দিয়ে বললেন- ‘এ নিয়মে করলে হবে না, আমার নিয়মে করতে হবে।’ শিক্ষকের নিয়মটি কি? তা তার কোচিং ক্লাসে গেলেই শুধু জানা যাবে। এভাবে অনেক শিক্ষককে দেখা যায় অভিভাবক ও ছাত্রদের তার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে বাধ্য করতে। গণিতের জন্য একজন শিক্ষক, বাংলা ও ইংরেজির জন্য একজন এবং বাকি বিষয়ের জন্য একজন করে শিক্ষক নিয়োগ করতে গেলে ছাত্রদের কমপক্ষে তিনটি কোচিং এ ভর্তি হতে হয়। স্কুল থেকে ফিরে এই তিন কোচিং এ ছুটতে ছুটতে তো পুরো দিন কাবার হয়ে যাবার কথা! কোচিং শেষে ঘরে ফিরে ক্লান্ত শ্রান্ত দেহটাকে আবার পড়ার টেবিলে বয়ে নিয়ে আবারো পড়তে বসা এবং বাড়ির কাজ শেষ করা! এভাবে শিশুর দেহ ও মনে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এবং শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত বৃদ্ধিকে ব্যাহত করার মাধ্যমে আমরা বৃথাই সুফল বয়ে আনার চেষ্টা করছি।
আমার ছোট ভাই, বয়স ৫ বছর, স্কুল বাদে তার দুটো কাজ -সারাদিন কম্পিউটারে বসে গেম খেলা নয়ত টিভিতে ‘ডোরেমন’ কার্টুন দেখা। ইদানীং দেখছি ‘ডোরেমন’ নামের এই কার্টুনটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে! আমি অনেকদিন চেষ্টা করেছি তাকে গেম ও টিভির কাছ থেকে সরাতে। কয়েকবার টিভির রিমোট লুকিয়ে ও পিসিতে পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আমার ভাইয়ের একটাই প্রশ্ন- আমি তাহলে কি করব? ঠিকই তো। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসা ছাড়া বাকিটা সময় তার আর কীইবা করার আছে!
আমাদের এখানে চারপাশে শুধু উঁচু উঁচু দালানকোঠা। খোলা মাঠ নেই। কোন পার্ক নেই শিশুদের খেলার। ছুটোছুটি করার, সবুজ সতেজ প্রকৃতি ঘেরা পরিবেশে প্রান ভরে শ্বাস নিবে এতোটুকু জায়গা পর্যন্ত নেই! তাহলে শিশুরা খেলবে কোথায়? তাই শহরের শিশুদের কাছে এখন বিনোদন মানে কম্পিউটার নয়ত টিভি। আর এতে তারা দিনদিন মুটিয়ে যাচ্ছে।
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার একটি পাবলিক স্কুলের ২৬৬ জন ছাত্র ও ২০২ জন ছাত্রীদের উপর করা গবেষণায় দেখা যায় স্থূলতার প্রাদুর্ভাব ১৭.৯%; যেখানে ছেলেরা শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে ১৯.৯% নিয়ে এবং মেয়েরা ১৫.৩% নিয়ে এবং স্থূলতা সবচেয়ে বেশী ১০-১৩ বছর বয়স্ক ছাত্র ছাত্রীদের ভিতর। [১]
খেলাধুলা শুধুই আমোদ প্রমোদের জন্য নয় বরং একটি সুস্থ দেহ গঠনেও এর প্রয়োজনীয়তা সবচেয় বেশী। আর একটি সুস্থ দেহ শক্ত মানসিক অবস্থানের ভিত্তি প্রস্থর করে। জন্মের পর থেকে খেলাধুলার মাধ্যমেই শিশুরা তাদের দৈহিক নাড়াচাড়া ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শেখে। অগ্রগতি স্নায়ুবিজ্ঞান ও আণবিক জীববিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা যায় প্রথম জীবনের শারীরিক অসুস্থতা পরবর্তী জীবনের দীর্ঘস্থায়ী অসুখের কারণ হিসেবে দাঁড়ায় যা মস্তিষ্কের উন্নয়নে, কার্ডিওভাস্কুলার ব্যবস্থায় ও মেটাবলিক নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণের উপর প্রভাব ফেলে।
Brigham Young University এর অধ্যাপক Dr. Steven Aldana জানান, বাল্যকালের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস হৃদরোগ ও দীর্ঘ মেয়াদী রোগের কারণ। সুগঠিত খেলাধুলোই পারে একটি সুস্থ জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং তাকে দীর্ঘস্থায়ী করে বাঁচিয়ে রাখতে। [২]
বৃহৎ পরিসরের গবেষণায় এও দেখা যায় মেয়েদের ক্ষেত্রে খেলাধুলা কিশোরী বয়সের গর্ভাবস্থার হার কমতে ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অস্টিওপরোসিস ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমাতেও তা কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
ছোটকালে আমরা পাড়ার সবাই মিলে যখন খেলতাম তখন প্রায়ই সময় ঝগড়া লেগে যেত কে চোর হবে! কেউই চোর হতে চাইত না। তখন আমরা ‘আম পাতা জোড়া জোড়া’ কবিতাটি গেয়ে গুনতাম আর সবার শেষে যাকে দিয়ে গোনা শেষ হত সেই চোর হত। এতেও কারো কারো মাঝে অসন্তুষ্টি রয়ে যেত কেনোনা মাঝে মাঝে একজনকেই বার বার চোর হতে হত। একদিন এ নিয়ে ঝগড়া লাগায় আমার মামা এসে ঠিক করে দিলেন সবাই একবার একবার করে চোর হবে। আমরা তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলাম। এইরকম সুষম বণ্টন শিশুদের মাঝে সহযোগিতা বোধ সৃষ্টি করে এবং শিশুরাও মেনে নেয় কেনোনা প্রতিবার চোর হওয়ার চেয়ে একবার বা সমান সংখ্যক-বার চোর হওয়া যে বেশী সুবিধার তা তারা বুঝে যায়।
এভাবেই খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের মাঝে সহযোগিতা, নির্মল বন্ধুত্বের ও মিলেমিশে কাজ করার সহনশীল পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে। শুধু সৌষ্ঠব ও সুস্থ দেহ গঠনেই নয় সামাজিকতা, শৃঙ্খলা, শেখার ক্ষেত্রেও খেলাধুলা একটি সুন্দর ও সহজ মাধ্যম।
আমার স্কুল শিক্ষকদের কাছে ও ছোটকালের টিউটোরিয়াল শিক্ষকদের কাছে আমার মায়ের সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত বাক্যটি ছিল- ‘মেয়েকে আপনার কাছে দিয়ে গেলাম, স্যার। পড়া না পারলে ইচ্ছেমতো মারবেন। এই নিন বেত।’ একটা সময় ছিল যখন আমাদের মা বাবারা বিশ্বাস করতেন ‘মাইরের মধ্যে ভিটামিন’ আছে। আজকাল এইরকম ধ্যান ধারনার চর্চা অনেকটা কম। যদিও ছোট বাচ্চাদের টিউশনি করতে গিয়ে আমাকেও একথা কয়েকবার শুনতে হয়েছে। শারীরিক শাস্তি কিংবা মানসিক শাস্তি আসলেই কি পারে ছোটদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে?
Christchurch Health and Development Study থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে Professor David Fergusson বলেন-
Evaluations of the relationship between reports of physical punishment or abuse during childhood and psychosocial outcomes in early adulthood clearly showed that young people reporting harsh or abusive treatment had increased rates of conduct problems, substance abuse, depression, anxiety and violent crime. There were, however, no clear differences between the adjustment of young people who reported that their parents never used physical punishment and those who reported that their parents infrequently used physical punishment.
[৩]
অর্থাৎ শারীরিক শাস্তি শিশুর উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন ভূমিকাই রাখতে পারে না।
আমার মামাতো ভাই শিহাব ছিল ‘দুষ্টুর শিরোমণি লঙ্কার রাজা’ আর আমার মামা ছিলেন সেই লঙ্কা বনের অধিপতি। পান থেকে চুন খসলেই রীতিমতো বাঘের হুঙ্কার ছাড়তেন তিনি। আমার এই ভাইটিকে তিনি নানাভাবে শাস্তি দিতেন পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে। পড়ার সময় তাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখতেন যাতে পালিয়ে যেতে না পারত, ঈদের দিন দুষ্টুমি করায় তাকে তিন ঘণ্টা শিকল দিয়েও বেধে রেখেছেন, এইরকম নানাবিধ শাস্তি। কতগুলো রীতিমত ভয়াবহ! লাভের লাভ কিছুই হয়নি। আমার ভাইটি আজও পড়ালেখায় অমনোযোগী!
আমার ছোটবোনকে যতবার কানে ধরে উঠবস করতে বলি কিংবা মার দিব বলে স্কেল নিয়ে আসতে বলি ততবার তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি আমার বিরুদ্ধে একটা ক্ষোভ তিরতির করে বেড়ে উঠছে তার ভিতর আর ফুটে উঠছে তার মুখে। শারীরিক শাস্তি শিশুদের মনে আপনার বিরুদ্ধে শুধু ক্ষোভই তৈরি করবে, পড়ালেখার ক্ষেত্রে তা কোন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না।
শারীরিক শাস্তির উপর গবেষণা পত্রে Elizabeth Gershoff উল্লেখ করেন-
Ten of the 11 meta-analyses indicate parental corporal punishment is associated with the following undesirable behaviours and experiences; decreased moral internalisation, increased child aggression, increased child delinquent and antisocial behaviour, decreased quality of relationship between parents and child, decreased child mental health, increased risk of being a victim of physical abuse, increased adult aggression, increased adult criminal and antisocial behaviour, decreased adult mental health, and increased risk of abusing own child or spouse. Corporal punishment was associated with only one desirable behaviour, namely increased immediate compliance .
[৪]
মানসিক ও দৈহিক অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ছাড়া শারীরিক শাস্তির আর কোন কার্যকারিতা নেই।
অবশ্য আমার হুজুর বলতেন ‘ওস্তাদ ছাত্রের শরীরের যেই যেই অংশে বেত মারবেন সেই অংশ বেহেশত লাভ করবে’! সেই হিসেবে আমার হাতের হিউমেরাস, আলনা-রেডিয়াস, পায়ের ফিমার, টিবিয়া-ফেবুলা, কারপাস, মধ্য দু আঙ্গুলের মেটা-কারপাস ও ফ্যালাঞ্জাস এবং এছাড়া আরও কিছু অস্থিসমুহ তাদের মাংসের প্রলেপ সহ বেহেশতে নাযিল হওয়ার কথা! বেহেশতে যাওয়ার এ সম্ভবত সবচেয়ে কম সময়ের প্রক্রিয়া!
আমাদের শিক্ষকেরা আমাদের কাছে এখন অগ্নিমুর্তিস্বরুপ। শিক্ষক মানেই হাতে জালি বেত নিয়ে পড়া মুখস্থ করিয়ে দেয়ার, পরীক্ষা নেয়ার আর শাস্তি দেয়ার যন্ত্র! কেনোনা একসময় মানা হত, এখনও তা মানা হয়, যে শিক্ষক হতে হলে আপনাকে হতে হবে রাগী। তাই আমরা শিক্ষকদের সামনে মিইয়ে থাকি, প্রশ্ন করতে ভয় পাই। অথচ শিক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন তৈরি করা আর শিক্ষকের কাজ সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে সাহায্য করা। দরকার শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে বন্ধুসুলভ পরিবেশ। শিক্ষক যতদিন পর্যন্ত ছাত্রদের প্রতি নমনীয় দৃষ্টি দিতে অক্ষম ততদিন পর্যন্ত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে বাধ্য।
প্রায় ৪ হাজার পরিবারের উপর গবেষণালব্ধ ২০০৯ সালে ইউনিসেফের প্রকাশিত Opinion Of Children Of Bangladesh On Corporal Punishment শীর্ষক গবেষণা পত্রে দেখানো হয় প্রায় ৯১% শিশু স্কুলে শারীরিক নির্যাতনের শিকার। এদের ভিতর এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ ২৩% শিশুরা জানিয়েছে তারা প্রতিদিন এইরকম শাস্তির সম্মুখীন হয় এবং ৭% শিশুরা শাস্তির ফলস্বরুপ আহত ও রক্তাক্ত হয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, ৯৯.৩% শিশুরা তাদের মাতা পিতা থেকে প্রতিনিয়ত শাব্দিক-ভাবে দেয়া শাস্তি ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে; ৭৪% শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে মাতা পিতা কিংবা অভিভাবকের হাতে। [৫]
ঢাকায় ২৫০০ এর বেশি গৃহ শিশু শ্রমিকের উপর Save The Children কর্তৃক একটি জরিপে জানা যায়- নিয়োগকর্তাদের ভিতর ৬০% এর বেশী বলেছেন তারা তাদের চাকরদের প্রহার করতে প্রস্তুত ছিল।[৬]
১৬ দলে বিভক্ত ১৫৩ জন শিশু ও ১৩ দলে বিভক্ত ১০৯ জন প্রাপ্তবয়স্কের উপর করা একটি গবেষণায় কয়েকটি আচরণের প্রতি শিশুদের পছন্দ ও অপছন্দ পরীক্ষা করা হয়। যেখানে মোট ১,০৪৩টি আচরণের ভিতর শারীরিক শৃঙ্খলা / শাস্তি, মৌখিক শৃঙ্খলা / শাস্তি এবং অন্যান্য প্রকারের শৃঙ্খলা / শাস্তি – এই তিনটি আচরণ শিশুদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত হয়েছে।[৭]
এই বছরের শুরুতে ১৩ই জানুয়ারি বিচারপতি ইমান আলী ও শেখ হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির নামে নির্যাতন সংবিধান পরিপন্থী বলে ঘোষণা করে রায় দেয়। শিক্ষার্থীদের অমানবিক শাস্তি দেওয়ার ১৩টি ঘটনা তুলে ধরে জনস্বার্থে আইন ও সালিশ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট এ রিটটি করে। [ব্লাস্ট] [৮]
কিন্তু তবুও বন্ধ নেই শিক্ষক দ্বারা ছাত্র নির্যাতন। যেমন এই বছরের ১৩ই এপ্রিল জগন্নাথপুরে কলকলিয়া ইউনিয়নের আটপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক ৯ম শ্রেণীর ২২ জন ছাত্রকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। [৯]
উপজেলার জিটি চিনামালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল কর্তৃক ছাত্র-ছাত্রীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে অভিভাবকেরা আন্দোলন করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। [১০]
শিক্ষার ক্ষেত্রে তা যে কোন শিক্ষাই হোক না কেন শিশুর পরিবেশ হওয়া চাই নির্মল ও সহযোগিতামূলক। জানার প্রতি কৌতূহল মানুষের জন্মগত। শিশুদের ক্ষেত্রে এর মাত্রা একটু বেশি। তাই শিক্ষাকে তার কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করতে হবে। মুখস্থ করিয়ে কিংবা পরীক্ষার ভয় দেখিয়ে শিশুদের শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা যাবে না।
এশিয়ার মাঝে দ্রুততম নগরায়ন হিসেবে বাংলাদেশকে উল্লেখ করে ইউনিসেফের এক রিপোর্টে দেখানো হয় ১৬০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী শিশু। শহরের বস্তিতে বাস করে ৭ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী, যার মাঝে ৩.৩ মিলিয়ন শিশু।
রিপোর্টে আরও বলা হয় প্রায় ২ মিলিয়ন শিশু স্থূলভাবে অপুষ্টিতে আক্রান্ত, বিদ্যালয় ত্যাগের হার বেশি এবং প্রায় ৭০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী উন্নত পয়ঃব্যবস্থাপনা পাচ্ছে না। [১১]
এমতাবস্থায় শিশু স্বাস্থ্য ও শিশু শিক্ষা উন্নয়ন কষ্ট-সাপেক্ষ কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়।
শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসামরিক সংস্থাগুলো এগিয়ে আসতে পারে এক্ষেত্রে। এশিয়ার মাঝে সবচেয়ে বড় শপিং মল আমাদের দরকার নেই, শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় খেলার মাঠ আমাদের এখন বেশী প্রয়োজন।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা গণিত ও বিজ্ঞানের টেবলেট বানিয়ে শিশুদের শুধু গিলিয়ে দিচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারও আমাদের দেশে অপ্রতুল। তা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও আমাদের কাজ করতে হবে। জাফর ইকবালের মতো কয়েকজন চেষ্টা চালাচ্ছে গণিত ও বিজ্ঞানকে শিশুদের মাঝে জনপ্রিয় করে তুলতে। যা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
রাস্তাঘাটে, বাসে প্রায়ই মসজিদ নির্মাণের চাঁদা তোলা হয়। এপর্যন্ত দেখলাম না কোন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ চাঁদা তুলছে। ঢাকা শহর মসজিদের শহর। প্রায় এক লাখের বেশী মসজিদ শুধুমাত্র এই একটি শহরেই। যতটি মসজিদ ততটি বিদ্যালয় নেই কেন? প্রতিবছর হাজারো ছাত্র ছাত্রী কেন ভালো মানের বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে হা হুতাশ করে?
শহর, গ্রাম প্রতিটি জেলায় প্রতিটি এলাকায় যদি একটি করে ছোট আকারে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা যেত, শিশুদের খেলার পার্ক থাকত তবে হয়ত ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারতাম। বিশ্ব যখন তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের পথে অধ্যয়নে ও নিত্যনতুন উদ্ভাবনে নিজেদের সবটুকু শ্রম ঢেলে দিচ্ছে আমরা তখন শিক্ষা ব্যবস্থার সনাতন ত্রুটিগুলো নিয়েই বসে আছি। শিক্ষা প্রদীপের সবটুকু আলো তাই বরাদ্দ করা চাই আমাদের শিশুদের জন্য। এবং তা এখনই।
ব্যবহৃত লিংকসমূহঃ
[১] http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20956898
[২]”The Culprit and the Cure”; Steven G. Aldana, Ph.D.; 2005
[৩]Fergusson, D. (1998). The Christchurch Health and Development Study – An Overview and Some Key Findings. Social Policy Journal of New Zealand. Issue 10.
[৪]Gershoff, E.T. (2002). Corporal punishment by parents and associated child behaviours and experiences: A meta-analytic and theoretical review. Psychological Bulletin. 128 (4), 439-579.
[৫]UNICEF (2009), Opinions of Children of Bangladesh on Corporal Punishment: Children’s Opinion Poll 2008, Dhaka: Ministry of Women and Children Affairs, Government of Bangladesh/UNICEF
[৬]Save the Children UK [undated], Half Way: Address and Basic Information on Shelter Homes for Children in Dhaka City, cited in Jabeen, F. & Karkara, R. (2006), Mapping Save the Children’s Response to Violence against Children in South Asia, Kathmandu: Save the Children Sweden Regional Programme for South & Central Asia
[৭]Government of Bangladesh/UNICEF/Save the Children Alliance (2005), Child Abuse Study: Study Report, Draft Version, 25 January 2005
[৮]http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-08-23/news/123256
[৯]http://www.uttorpurbo.com/index.php?id=103&cid=22329
[১০]http://khulnanews.com/index.php/district-news/paikgacha/4174-2011-04-12-05-33-41]
[১১]http://www.unicef.org/infobycountry/bangladesh_59052.html
আপনার সাথে সহমত জানাচ্ছি।
অসাধারণ এই পরিশ্রমলব্ধ লেখাটির জন্য রাখীর প্রতি অভিনন্দন রইলো।
এ লেখায় আপনি যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন তার চরম ভুক্তভোগী আমি। অনেক কিছু লিখতে গিয়েও লিখলাম না। অহেতুক বেদনা খুঁড়ে কী লাভ।
@ফরিদ আহমেদ,
লাভ-ক্ষতির ব্যাপারটা পাঠকদের উপর ছেড়ে দিন। বেদনা না খুঁড়ে কি তার শেকড় উপড়ানো যাবে?
@ফরিদ আহমেদ,
অনেক ধন্যবাদ দাদা।
আমরা সবাই কম বেশি এইরকম নির্যাতনের ভিতর দিয়ে গিয়েছি। লাভ ক্ষতির ব্যাপারটা আসলেই পাঠকদের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত যেটা স্বপন বললেন।
শুভকামনা।
@রাহনুমা রাখী,
আমি যার মধ্য দিয়ে শৈশব, কৈশোর অতিক্রম করেছি তা কাউকে বিস্তারিত কখনোই বলি নাই। বলা যেমন কঠিন আমার জন্য, ঠিক একইভাবে সেগুলোকে বিশ্বাস করাটাও অন্যদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। ফলে, সেগুলো আমার ভিতরেই রয়ে গিয়েছে। আমার এই লেখায় বিমূর্তভাবে তার একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা ছিল।
শুধু এইটুকু বলছি যে, আজকের এই আমি আমার বাবা-মা বা শিক্ষক কারো ফসল নই। সম্পূর্ণ নিজেকে নিজে তৈরি করা একজন মানুষ আমি। তাঁরা আমার বিকাশে সাহায্য সহযোগিতাতো করেই নি, বরং তাঁদের নির্বোধ অত্যাচার-নির্যাতনে আমার জীবনটাই ধ্বংস হয়ে যাবার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। স্কুল পালানো ঘর পালানো একজন মানুষ আমি। নিজেকে নিজে তিল তিল করে গড়ে নিতে হয়েছে আমাকে। সে কারণে অন্যেরা যখন দ্রুতগতির খরগোশের মত দৌড় শুরু করে মাঝ পথে চলে গিয়েছে, আমি তখন কচ্ছপ গতিতে শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছি নিজ গরজে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার লেখাটি পড়লাম। কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারছি। সম্পুর্নভাবে বোধগম্য হওয়া হয়ত সম্ভব নয় অন্য কারো পক্ষে।
আপনাকে সাধুবাদ জানাই আপনি আপনার শৈশবকে ফেলে এসে আজ এতোটা পথ সফলভাবেই পাড়ি দিতে পেরেছেন বলে।
প্রতিটা মানুষের জীবনে শৈশব অনেক বড় জিনিস। বড় হয়ে যাওয়ার পর আমরা প্রায়ই স্বপ্ন দেখি আবার শৈশবের সেই দুরন্ত ও নিষ্পাপ দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু আপনাদের মতো শৈশবহীন মানুষদের ফিরে যাওয়ার কোন স্থান নেই। শেকড়হীন মানুষ!
সমবেদনা ও শ্রদ্ধা রইল।
কবে এই কথাগুলো আমাদের দেশের বলদ অভিভাবক-শিক্ষকদের মাথায় ঢুকবে কে জানে। আসলে ওদেরই বা দোষ কতটুকু? ওরাও তো ছোটোবেলায় এই মেরে শিশু মানুষ করার কালচারের ভেতরেই বেড়ে উঠেছে। সেজন্য ওদেরও ধারণা হয়েছে বাচ্চাদের না মারলে তারা মানুষ হবে না। এই বঙ্গীয় গবেটগুলো ভাবে তারা যা হতে পেরেছে তার থেকে বেশি কেউ হতে পারে না, হতে পারলেও তারা যেভাবে ওর থেকে কম বা সমান হয়ে উঠেছে সেভাবেই হয়ে উঠতে হবে। এটা আসলে প্রত্যেক মানুষেরই হয়। কারণ, মানুষ হয়ে জন্ম নিলে- নেহাত যদি প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগেই গাড়ি চাপায় মৃত্যু না হয়, তাহলে প্রত্যেকটা মানুষকেই অনেক স্ট্রাগলের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। স্ট্রাগল করতে করতে মানুষ যখন থিতু হয় একটা ন্যুনতম অবস্থানে- তার ধারণাই জন্মে যায়, তাকে যেগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তার সন্তানকেও সেগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হবে।
আসলে মারধোর করা তো রীতিমত বাঙালি সংস্কৃতির অংশ! এবং একমাত্র পুরুষ ছাড়া অন্য সবাই এই ঐতিহ্যের শিকার- যদি না পুরুষটি চোর ডাকাত ছিনতাইকারী হয়। “মাইরের উপরে ওষুধ নাই”কে বাদ দিয়ে সম্ভবত আমাদের কালচারের পূর্ণ রুপ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের “খোয়াবনামা”য় বাপ যখন মা’কে ধরে পেটায়, রীতিমত সমর্থন জানায় ছেলে!
হুমায়ুন আজাদ যে তাঁর ছেলে অনন্য আজাদকে কি পরিমাণ পিটিয়েছেন, সে কাহিনী সর্বজনবিদিত। এমনকি পত্রিকাতেও হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ করবার সময় এই প্রসঙ্গটা বেশ কয়েকবার এসেছে।
এমনকি তসলিমা নাসরিন তাঁর “নির্বাচিত কলামে” লিখেছিলেন, “ডান হাতে একটি সন্ধিবেত আর বাম হাতে একটি ইংরেজি গ্রামার বই নিয়ে আমার বাবা আমাকে রোজ পড়াতে বসতেন। যত্ন করে টেন্স বোঝাতেন। বুঝতে সামান্য দেরি হলেই পিঠে পড়ত সপাং সপাং বেত। রাতে বিছানায় শুয়ে অর্ধেক রাত পর্যন্ত কাঁদতাম, বাবাকে কত রকম অভিশাপ দিতাম! এখন মাঝে মাঝেই আমার সেই পিঠে হাত বুলোতে ইচ্ছে করে, সেই সন্ধিবেতের মুছে যাওয়া দাগে স্পর্শ রেখে স্বাদ নিতে ইচ্ছে করে সেই আশীর্বাদের।” নিরপেক্ষতা দেখাতে বলছি না, প্রথম যখন পড়েছিলাম- আমার প্রচণ্ড আশ্চর্য লেগেছিল এই কথাগুলো। তসলিমা নাসরিনও অব্দি এই কালচার থেকে বেরুতে পারেননি জীবনের শুরুতে। নির্বাসিত জীবনে পৃথিবী দেখতে দেখতে অবশ্য তাঁর ধারণা বদলে গেছে।
প্রথাবিরোধী লেখকদেরই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আর সাধারণ মানুষকে দোষ দিয়ে কি লাভ!
তবু আশা রাখি, একদিন এ-দেশের মানুষেরও বোধগম্য হবে, শারিরীক নির্যাতন কিছুতেই কারুকে মানুষ করে তোলার চাবিকাঠি হতে পারে না।
বলাই বাহুল্য, লেখাটা তার সবক’টা ধারালো বাক্য এবং তথ্যপ্রাচুর্যের কারণেই অসাধারণ লেগেছে, আপনার অন্য সব লেখার মতই!
অজস্র ধন্যবাদ রইলো এই ইস্যুটাকে হাইলাইট করার জন্য।
@তমসো দীপ,
ধন্যবাদ তমো।
শারীরিক নির্যাতন একটি শিশুর ক্ষেত্রে ভয়ানক অমানবিক। এবোধ যত দ্রুত সম্ভব তত দ্রুত অনুধাবন করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
ভালো থাকবে।
@রাহনুমা রাখী,
খুব একমত।
দারুন লেখা।এভাবেই প্রতিবাদ করে এগিয়ে জান।আমাদের স্কুলেও একদিন রসায়ন স্যার আমাদের অনেক মারেন।৭ জনের হাত ফেটে রক্ত পরে।এই ব্যাপারে শিফছার চার্জ এর কাছে রিপোর্ট করতে গেলে দেখি সেই স্যার রসিয়ে রসিয়ে এই গল্প বলছেন তাকে।তিনিও খুব হাসছেন।নিজেকে খুব অসহায় লাগে।আমাদের স্কুল খুব বিখ্যাত।
আর কত দিন শিক্ষার্থীরা এমন অসহায় থাকবে?কে দেবে তাদের নিশ্ছয়তা?
রাহনুমা রাখি,লেখাটির জন্য ধন্নবাদ।এগিয়ে যান। :candle: :clap (Y) (F)
@ঈশ্বর বিমুখ আমি,
অনেক ধন্যবাদ ঈশ্বর।
এই নির্যাতনের দায় অবশ্যই আমাদের, সমাজের ও রাষ্ট্রের।
আমরা খুবই লজ্জিত!
(Y)
@হেলাল,
ধন্যবাদ। 🙂
আপনার লেখাটি অতীব মূল্যবান। আমার মনে হয় প্রত্যেকের পড়া উচিত, বিশেষতঃ বাঙ্গলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যাঁরা জড়িত।
হাদিস বলছে যে কেউ মসজিদ বানাবে অথবা বানাতে সাহায্য করবে আল্লাহপাক তার জন্য বেহেশতে এক বিশাল প্রাসাদ বানিয়ে দিবেন।
এই প্রলোভন থেকে মোমিন-মুসলিমদের কে ব্যাহত করবে? যে দেশে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম বানানো হয়, যেদেশের প্রধাণ মন্ত্রী কথায় কথায় কোরান, সুন্না, নামায, হজ্জ, যাকাত, দান খয়রাত, হিজাব, বোরখা, আলখাল্লা, রোজা, সেহেরি, ইফতার, মিলাদ, শবে বরাত….এই সব বলেন; আর সুযোগ পেলেই আরবদের দাসত্বের জন্য উমরাহ, হজ্জ, আর বাদশার পা ধরাধরি করেন—সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আশা করা নেহায়েতই আকাশ কুশুম রচনা করা।
আমাদের দেশের অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কূপমণ্ডুকতা, কুসংস্কার…সব কিছুর মূলেই রয়েছে ধর্মের নাগপাশ। এই ধর্মের বন্ধন থেকে না মূক্তি পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থার কোন উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। বিদেশে দেখেছি–একমাত্র ইসলামি দেশগুলি ছাড়া, বেশীর ভাগ দেশ কেমন করে তাদের বিদ্যালয় গুলিতে ধর্মের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তাদের ছাত্রদের দূরে রাখতে সচেষ্ট। ধর্মীয় বিদ্যালয় থাকলেও তা সরকারী নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভাবে শাসিত হয়।
@আবুল কাশেম,
একমত।
ধর্ম সমাজের একটি কুসংস্কার মাত্র। এছাড়াও আরো কিছু সমস্যা অবশ্যই আছে যা ধর্ম থেকে ভিন্ন। ধর্মের পাশাপাশি আমাদের সেইসব অজ্ঞতাকেও বিদায় জানাতে হবে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে লেখাটি সময়পযোগী এবং বেশ চিন্তা জাগানিয়া। শিশুরা দেশের ভবিষ্যত, তাদেরকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং সচেতনতা তৈরী করা এই মহুর্তে খুবই জরুরী, আর যত শীঘ্র সম্ভব তা শুরু করা যায় ততই দেশের জন্য মংগল।
শিশুদের তথা দেশের ভবিষ্যত গড়ার জন্য মসজিদ আর বিদ্যালয় কোনটির অবদান কতটুকু এ সম্পর্কে আমাদের দেশের জনগনের মনে হয় ধারনা কম, এই সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার।
@ব্রাইট স্মাইল্,
অবশ্যই এখনই নয়তো কখনই নয়।
(Y)
@অভিজিৎ,
অনেক ধন্যবাদ। :guru:
@রাহনুমা রাখী,
আর হ্যা, জন্মদিনের আরেকপ্রস্থ শুভেচ্ছা! 🙂
@অভিজিৎ,
আপনাকে আরো একবার অসংখ্য ধন্যবাদ। :))
ভালো পর্যবেক্ষণ। দেখবার এই স্বচ্ছতা সব সচেতন বাঙ্গালির মধ্যে সঞ্চারিত হোক। হোক প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে শুদ্ধি কার্য্যক্রম। (O)
@কাজী রহমান,
ধন্যবাদ।
যারা জেগে ঘুমায়, তার হয়তো একটুখানি হাই তুলবে। আর যারা ঘুমিয়েও জেগে থাকে, তারা একটুখানি আমোদিত হবে গণতন্ত্রের ছোঁয়া পেয়ে। আমরা যারা মানবিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলি, আমাদের কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান নেই। আর পণ্যের বাজারে সবারই কিন্তু প্রতিষ্ঠান আছে। বিচ্ছিন্ন ভিন্ন দ্বীপ-বাসীর কথা সংগঠিত শক্তিগুলো শুনতে যাবে কেন? আবার এ-ও ঠিক, কখনো কখনো অবিরাম হাতুড়ি মানুষগুলোকে বোধের একটা জায়গায় নিয়ে আসে, সংগঠিত করতে অনুপ্রাণিত করে।
কোন সন্দেহ নেই, এ ধরণের লেখা বোধ-বুদ্ধিতে একটুখানি নাড়া দিয়ে যায়।
@স্বপন মাঝি,
এই আশাতেই তো আমাদের অবিরাম বলে যাওয়া। ধন্যবাদ।
মাইরের মধ্যে ভিটামিন
তাই অভিভাবকরা শিক্ষকদেরকে উৎসাহিত করতেন তাদের সন্তানদের ভাল করে মারতে এবং তারা নিজেরাও এই বিনে পয়সার ভিটামিনটি সন্তানকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে কার্পন্য করতেননা।
@তামান্না ঝুমু,
এখনও কিন্তু একই অবস্থা। শহরের অবস্থা কিছুটা বদলালেও গ্রামে এখনও ভয়াবহ শাস্তির প্রচলন চলছে বিশেষ করে মাদ্রাসাগুলোতে।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক দুর্বলতা এবং পশ্চাদপদতা স ম্প র্কে জানতে পারলাম আপনার লেখা পড়ে। আরো ভাল লাগলো মসজিদ ও বিদ্যালয়ের ভেতরে একটা তুলনা মূলক আলোচনা পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।
@শাখা নির্ভানা,
আমাদের পশ্চাদপদতা আরো অনেক। এখানে খুব সংক্ষিপ্ত আকারে বলা হয়েছে অনেক বিষয় বাদ দিয়ে।
আপনাকে সাথে পেয়ে ভালো লাগল।ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
সময় উপযোগী লিখনি। অনেক ধন্যবাদ, এ বিষয়ে চমৎকার একটা প্রবন্ধ প্রকাশ করার জন্য।
আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা ক্রমেই ফলাফল সর্বস্ব হয়ে পরছে। ভাল ফলাফল করাতে পারলেই যেন দায় সাঁরা। ততাকথিত ভাল ছাত্র রা বই এর বাছাই করা কিছু অংশ মুখস্ত করে দেশের ও বাবা মা এর মুখ উজ্জ্বল করার যে পণ্ডশ্রম করে যাচ্ছে, আপাত দৃষ্টি তে টা সঠিক বলে মনে হলেও কর্মক্ষেত্রে তারা কিন্তু সঠিক মেধার পরিচয় দিতে পারছে না।
শিক্ষিত হওয়ার পরিবর্তে সনদপত্র ধারী হওয়াটাকে আমি মেধার অপচয় বলেই মনে করি। এবং তা অপরাধ ও বটে। আমি জানি তাদেরকে এ দোষে দোষী করা যায় না, এ দোষ আমাদের, আমাদের শিক্ষানীতির।
আমরা দিনে দিনে নিজেকে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে প্রতিবন্ধী করে তুলছি। এর থেকে পরিত্রাণ চাই, এবং টা এখনি।
@অরণ্য,
অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিটি বাচ্চা অপার সম্ভাবনা নিয়ে জন্ম নেয়। একে পরিপুর্ন ও সুস্থ রুপে বেড়ে উঠানোর দায়িত্ব আমাদের ও দায়ও আমাদের।
ভালো থাকবেন।