রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে দুটি বিতর্কে (“রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দঃ” ও “রবীন্দ্রনাথ মানবই ছিলেন, তবে মহামানব !! “রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দ” – প্রবন্ধের পাঠ প্রতিক্রিয়া। “) অনেক ব্যান্ডউইড্থ্ ও সময় ব্যয় হল। তিক্ত Ad Hominem মন্তব্যও অনেক বিনিময় হল । এবার আসা যাক বিতর্ককে ব্যক্তি আক্রমণ থেকে ঘুরিয়ে আকাডেমিক দিকে নেয়া যায় কি না সেই চেষ্টায়। যুক্তিবাদী ফোরামে যুক্তিবাদের আলোকেই সব কিছু বিচার বিবেচনা করাটা বাঞ্ছনীয়। সেই চেষ্টাই করব। সেই সাথে আমার কিছু ভাবনা ও কিছু প্রশ্নও থাকবে। আগেই বলে নেই আমার আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে আমার দেয়া কোন তথ্য বা সূত্র থাকবে না। কারণ এটা রবীন্দ্র বিতর্ক নিয়ে আমার যুক্তিভিত্তিক এক সাধারণ বিশ্লেষণ, এটা অনেকটা মুক্তমনা গ্রুপে বেশ আগে বন্যার দেয়া রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এক পোস্ট নিয়ে কিছু উত্তপ্ত বিতর্ক সৃষ্টি হবার পর বিতর্ক নিয়ে আমার একটা যুক্তি ভিত্তিক বিশ্লেষণের চেষ্টার মত । একটা কথা আমি জোর দিয়ে বলতে চাই সেটা হল, যেসব কর্ম বা আচরণের ন্যায় অন্যায় বা দোষগুণ বিচারের জন্য আইনগত বা ঘোষিত কোন সার্বজনীন মানদণ্ড নেই সেই ব্যাপারে যে কোন ব্যক্তিগত মত বা অনুভূতি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকতে পারে না। হতে পারে ভিন্নমতের আদানপ্রদান । তবে বিতর্ক হতে পারে যে তথ্য বা উপাত্তের ভিত্তিতে সেই ব্যক্তিগত মত বা অনুভূতি প্রকাশ করা হচ্ছে তার সত্যতা নিয়ে। আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজের এক উল্লেখযোগ্য অনুকরণীয় দিক হল “You are entitled to your opinions, not to your facts” বা “We can agree to disagree” এই ধরণের আপ্তবাক্যের উপর ভিত্তি করে এক সহনশীল সংস্কৃতির গঠন। এটা আমরা এখনো পুরোপুরি রপ্ত করতে পারিনি। রবীন্দ্রবিতর্কে তথ্য উপাত্তে দ্বিমত না থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত অনুভূতি বা মতের পার্থক্যের কারণে পাল্টাপাল্টি যুক্তি দেয়া আর ব্যক্তিগত তিক্ততার সৃষ্টি হওয়াটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। ত্ত্থ্য বা উপাত্তের সত্যতার ব্যাপারে মতপার্থক্য থাকলে পালটা পালটি মত দেয়া নয় ,পালটাপাল্টি সূত্র উল্লেখ্ করে সত্যমিথ্যা যাচাই করাটা অর্থবহ। আর ব্যক্তিভিত্তিক বিশেষণ বিনিময় তো একেবারেই অবাঞ্ছনীয়। আসলে সমস্যার মূল হল এখানে যুক্তি বলতে দুই পক্ষই তাঁদের তথ্যভিত্তিক মত বা অনুভূতিকেই বোঝাচ্ছেন। তথ্যের ব্যাপারে দ্বিমত না হয়েও তারা দুরকম মত দেয়াতে তর্ক হচ্ছে। একই তথ্য আর মতকে বারেবারে দুপক্ষ দ্বিরুক্তি করে যাচ্ছেন। এতে সত্যিকার কোন যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনা বা নিষ্পত্তি হচ্ছে না, হচ্ছে ব্যক্তিগত মতপার্থক্য হেতু তিক্ততা প্রকাশ যার কোন যৌক্তিক নিষ্পত্তি হতে পারে না। যে তিনটি মূল বিষয় বা ইস্যু নিয়ে বিতর্ক সেটা নিয়ে কিছু আলোচনা করি।
(১) রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” আর গগন হরকরার ‘”কোথায় পাব তারে” ইস্যু
এটা দুপক্ষই স্বীকার করছেন যে “আমার সোনার বাংলা” এর সুর ‘”কোথায় পাব তারে” থেকে নেয়া। দুপক্ষই স্বীকার করছেন যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানের সুরকার যে গগন হরকরা সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি। দুপক্ষই স্বীকার করছেন যে “আমার সোনার বাংলা” এর সুর বাউল গানের সুর থেকে নেয়া। দুপক্ষই স্বীকার করছেন যে গগন হরকরার “কোথায় পাব তারে” তার সুরও বাউল গান ভিত্তিক। তাহলে তথ্য উপাত্তে দুপক্ষের মতপার্থক্য নেই। অভিজিৎ/ফরিদ এই স্বীকৃতি না দেয়াকে চৌর্য্যবৃত্তি বলছে যেটা অপরপক্ষ মানতে নারাজ। তার মানে চৌর্য্যবৃত্তির সংজ্ঞা দুপক্ষের কাছে আলাদা। সংজ্ঞা আলাদা হলে সিদ্ধান্ত আলাদা হতে বাধ্য। সেখানে বিতর্কের প্রশ্ন উঠেনা। এখন প্রশ্ন হল চৌর্য্যবৃত্তির সর্বস্বীকৃত বা সার্বজনীন সংজ্ঞা যদি থেকে থাকে তাহলে রবীন্দ্রনাথ/গগন হরকরার ব্যাপারটা সেই সর্বস্বীকৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী চৌর্য্যবৃত্তি কিনা সেটা যাচাই করা। সে বিচারে এক পক্ষ ঠিক আর অপরপক্ষ বেঠিক হবে অবশ্যই। আরেকটা বিবেচ্য ব্যাপার হল আইনের চোখে চৌর্য্যবৃত্তি বনাম সঙ্খ্যাগরিষ্ঠের বিচারে চৌর্য্যবৃত্তি। যেমন বিবাহিত হয়ে দ্বিচারিতা করা আইনের চো্খে (ধর্মনিরপক্ষে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়) অপরাধ না হলেও বেশিরভাগ লোকের বিচারে তা অনৈতিক। সঙ্খ্যাগরিষ্ঠের বিচারে চৌর্য্যবৃত্তি কিনা সেটাও বিবেচ্য। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ঘটনাটি আইন বা সঙ্খাগরিষ্ঠের বিবেক, যেটার বিচারেই যাই হোক না কেন তার পরও ব্যক্তিগতভাবে নিজের মানদন্ড অনুসরণ করে যে কেউ যে কোন রায় দিতে পারে, যেটা অভিজিৎ/ফরিদ/বিপ্লব করেছে। প্রত্যেকটা রায়কেই ব্যক্তিগত মত হিসেবে মেনে নিয়ে “Lets agree to disagree” বলে ইতি টানাটাই যৌক্তিক পথ হত। তাই বলে ব্যক্তিগত মতামত বিনিময় করাটা (ব্যক্তি আক্রমণ না করে) অপ্রাসঙ্গিক বা অবাঞ্ছনীয় নয়। তাতে ইস্যুর চেয়ে মানুষের চিন্তার বিভিন্নতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ হয়। আরেক পক্ষ আছেন যারা এটা টেকনিকালি চুরি বলে মেনে নিলেও রবীন্দ্রনাথের মত বিশাল ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে সেটা উল্লেখ করার বিরোধী। তাদের কারও যুক্তি যারা এখনো রবীন্দ্রনাথের বিশাল ও মহৎ সাহিত্যকর্ম সমাজহিতৈষী কর্মকান্ড নিয়ে পড়াশুনা করেনি বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের যারা, তারা এই নেতিবাচক ঘটনাটি পড়ে রবীন্দ্রনাথের প্রতি ইন্টারেস্ট ও শ্রদ্ধা হারিয়ে রবীন্দ্রনাথকে জানতে আর এগুতেই চাইবে না,তাদের কাছে রবীন্দ্রনাথের বিশাল ও মহৎ সাহিত্যকর্ম সমাজহিতৈষী কর্মকান্ড অজানাই থেকে যাবে, এটাই তাদের ভয়। হতেও পারে, বা নাও হতে পারে। এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব কি? অনেকটা টিভি তে সহিংস্রতা দেখালে সমাজেও সহিংস্রতা আসতে পারে এরকম ধারণার মত। যাই হোক এই ক্ষেত্রেও তিক্ত ব্যক্তিভিত্তিক বিতর্ক নয়, মতামত বিনিময়ই কাম্য। কারও কারো মত হল, রবীন্দ্রনাথের মত বিরাট ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে দু একটি নেতিবাচক কর্মকে উপেক্ষাই করা উচিত। বড় হবার মূল্য যেমন দিতে হয় আবার পুরস্কারও আছে। প্রথম পক্ষের পালটা মত হল যে যদু মদুর ক্ষেত্রে সেটা যদি উপেক্ষা করা না হয় তাহলে তো এটা double standard হয়ে গেল। কথাটা ঠিক। তবে উপেক্ষা করার সমর্থকেরা যদু মধুর ক্ষেত্রে এই কাজকে চুরি বলে উপেক্ষ না করা ও বিশাল ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে এটাকে উপেক্ষ করাকে একটা স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করেন তাহলে এটা আর double standard হবে না। এই স্বতঃসিদ্ধ মেনে নিলে তাদের অবস্থান consistent হবে। প্রাচীন গ্রীসে সাধারণ লোকদের জন্য একরকম মানদন্ড ও শিক্ষিত বা দার্শনিক শ্রেণীর জন্য আরেক মানদন্ডের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কোন এক দার্শনিক। শ্রেণী বিন্যাস/শ্রেনীপার্থক্য অনেক সমাজেই স্বীকৃত ছিল বা কিছু কিছু আছে অলিখিতভাবে। বর্ণাশ্রম যেমন । আরেক দৃষ্টিকোন থেকে বলা যায় বিশাল ব্যক্তিত্ব, যাদের অনেক ভক্ত আছে, যারা অনেককে প্রভাবিত করতে পারেন, তাদের জন্য তো মানদন্ড আরও উঁচুই হওয়া উচিত। এই মতও গ্রহণযোগ্য। ধর্মীয় সমালোচনায় ইশ্বর বা তার কথিত প্রেরিত পুরুষের বেলায় যেটা করা হয়। একটা তফাত হল, রবীন্দ্রনাথের অনেক ভক্ত থাকলেও রবীন্দ্রনাথকে কে কিন্তু নৈতিকতার আদর্শ বলে প্রচার করা হচ্ছে না বা সব ব্যাপারেই আদর্শ পুরুষ বলে দাবী করা হচ্ছে না ঘোষিতভাবে, সমষ্টিগতভাবে(ব্যক্তিপর্যায়ে অবশ্য কেউ তা ভাবতেই পারে, যাদের প্রতি মূল লেখাটা টার্গেট করা), যেটা ধর্মীয় প্রেরিত পুরুষদের বেলায় করা হয়। যে যেটার কথিত প্রচারক বা দাবীদার তার সাথে তাদের কোন কর্মের কোন অসঙ্গতি দেখা দিলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বেশি অর্থবহ। রবীন্দ্রনাথের বেলায় খুঁত ধরার একমাত্র কারণ হল তিনি যে সব ব্যাপারেই নিখুত না সেটা প্রমাণ করা (তাদের জন্য যারা সত্যই এরকমটি ভাবে। তাদের সংখ্যা কত তার বিচারে নাই বা গেলাম)।
কিন্তু যে কারণই এই পক্ষ দেখান না কেন, তবু শেষ কথা হল এটা যে চুরি সেটা উল্লেখ করার বাকস্বাধীনতা যে কারও থাকা উচিত সেটাও মেনে নেয়া। এই ব্যাপারে Evelyn Beatrice Hall এর সেই বিখ্যাত উক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই “আমি তোমার মতের সাথে একমত নই, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে দরকার হলে জীবন দেব”
অনেকে অভিজিৎ/ফরিদ এর চুরি উল্লেখ করায় যতটা না উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন যে ভাষায় সেটা বলা হয়েছে বা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য কি সেই ইস্যুতে। এটা ঠিকই যে লেকাটি একটু সেন্সেশানালিস্ট স্টাইলে লেখা। কিছুটা উত্তেজিত ভাব আছে লেখায়। তবে যুক্তিবাদী পাঠকের দৃষ্টিতে বক্তার প্রকাশভঙ্গী, ভাষার বা অনুমিত অঘোষিত উদ্দেশ্যের চেয়ে বক্তব্যের সত্যতাই মুখ্য হওয়া উচিত বলে মনে করি। বক্তার কন্ঠ,ভাষা বা অনুমান করা অঘোষিত উদ্দেশ্য বিচার করে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনার বিষয় নয়। অন্যদিকে মুদ্রার ওপিঠের মত এটাও ঠিক যে যুক্তিবাদী কোন লেখকের বেলায়ও বস্তুনিষ্ঠ আলোচনায় আবেগময় ভাষা, প্রকাশভঙ্গী বা ঢালাও সিদ্ধান্ত/মত অবাঞ্ছনীয়। তবে এগুলি সাধারণ পয়েন্ট, রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে বিশেষভাবে প্রযোজ্য কোন পয়েন্ট নয়। অভিজিৎ/ফরিদ এর ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল যারা রবীন্দ্রনাথকে ত্রুটিমুক্ত, নিখুঁত এক ব্যক্তি বলে মনে করে তাদের ভুল ভাঙ্গা। সেই লক্ষ্যে “আমার সোনার বাংলা” এর সুরের জন্য রবীন্দ্রনাথ গগন হরকরাকে কৃতিত্ব না দেয়ার ঘটনাকে উল্লেখ করলেই যথেষ্ঠ, চুরি শব্দটা না উক্ত করে। পেশাদার সমালোচক বা ইতিহাসবেত্তারা যা করেন। কিন্তু এখানে সেরকম পেশাদারিত্ব সব সময় আশা করাও বাস্তব হবে না।
২। রবীন্দ্রনাথের “বিশ্বপরিচয়” আর প্রমথনাথ ইস্যু: এখানেও আমার উপরের অধিকাংশ বিশ্লেষণই প্রযোজ্য। এখানে প্রমথনাথকে সহলেখক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কি কি বস্তুনিষ্ঠ মানদন্ড মেটাতে হবে সেটা দুপক্ষ লিখে তার ভিত্তিতে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হতে পারে। দুপক্ষের দেয়া তথ্যের মধ্যে পার্থক্য আছে। অভিজিৎ/ফরিদ বলছে যে বইএর বিষয়বস্তু পুরোটাই প্রমথনাথের, রবীন্দ্রনাথ শুধু সেটাকে সহজ ভাষায় লিখেছিলেন। বিপ্লব বলছেন যে না বিষয়বস্তুও রবীন্দ্রনাথ নিজেই দাঁড় করিয়েছিলেন, শুধু অধ্যায়গুলো বিজ্ঞানের দিক থেকে শুদ্ধ কিনা এক এক করে সেটা প্রমথনাথ কে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিতেন। কার তথ্য সঠিক সেটা সর্বসম্মতিক্রমে যাচাই না করে বিতর্ক করা যায় না এ ব্যাপারে। অভিজিৎ/ফরিদ বেশ কিছু তথ্যসূত্র দিয়েছে এ ব্যাপারে। কিন্তু বিপ্লব তার বক্তব্যের সপক্ষে এখনও কোন সূত্রের উল্লেখ করেনি। আর প্রমথনাথের মূল পান্ডুলিপি পেলে এ ব্যাপারে আরো ভ্রান্তহীন কোন মত দেয়া যেত সেটাও অনেকে বলেছেন। কেউ একজন বলেছেন বিশ্বপরিচয়ের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথের নাম উল্লেখ করেছেন। এটা যদি সত্যি হয় আর কে বলেছেন সেটা যদি কেউ উদ্ধৃত করেন তাহলেও সুবিধা হয় বিচার বিশ্লেষণে। তবে একটা কথা ঠিক যে প্রকশিত বই এ প্রমথনাথকে সহলেখক এর নাম উল্লেখ না করার ঘটনায় রবীন্দ্রনাথকে যারা মহানুভব মনে করেন তাদের ধারণা যে ভুল সেটাই প্রমাণ করে। আধুনিক বিশেষ করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আরেকটা ইতিবাচক দিক হল যথার্থ স্বীকৃতি দান, যত নগন্যই হোক। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অধ্যাপকের (তা তিনি যদি নোবেল বিজয়ীও হন)। প্রকাশিত পেপারে নগন্য অবদানকারী গ্রায়জুয়েট ছাত্রেরও নাম উল্লেখ করতে দেখেছি। এটা বিনয়ের একটা অংশ। আমরা বাংগালীরা এ ব্যাপারে কার্পণ্য করি। রবীন্দ্রনাথ এই ব্যাপারে গড়ের উর্ধে উঠতে পারেননি। বিপ্লবের বক্তব্য হল রবীন্দ্রনাথ নোবেল বিজয়ী হওয়াতে সহলেখক নির্বাচনের মানদন্ডও উঁচু হতে বাধ্য। কিন্তু সহলেখক নির্বাচনে হবু সহলেখকের অবদানের পরিমাণটাই কি একমাত্র বিচার্য্য হয়া উচিত নয়? নোবেল বিজয়ী হওয়াতে যদি সহলেখকের অবদান এর গুরুত্ব কমে যায় সেটা তো রবীন্দ্রনাথের আত্মনিষ্ঠ একটা মাপকাঠি হল (যদিও এটা বিপ্লবেরই ভাষ্য। আমরা জানিনা আসলেই সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথেক সহলেখক করেন নি কি না)। প্রমথনাথের অবদান নিয়ে অভিজিৎ/ফরিদ এর তথ্য যদি সঠিক হয় আর বিপ্লবের ভাষ্য ভুল হয় তাহলে প্রমথনাথকে সহলেখক হিসেবে না নেয়াটা রবীন্দ্রনাথের তরফে মহানুভবতার সুস্পষ্ট অভাব নির্দেশ করে। অন্য দিকে বিপ্লবের ভাষ্য সঠিক হলে আর যদি ভূমিকাতে রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থাকেন তাহলে অবশ্য প্রমথনাথকে সহলেখক হিসেবে না নেয়াটা অন্যায় কিছু নয়। কাজেই সঠিক তথ্য জানাটাই এখন জরুরী তর্কের অবসানের জন্য । যাহোক তিনি প্রমথনাথকে যথাযথ স্বীকৃতি দিলে তাতে তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার স্বীকৃতি বা উপলব্ধিতে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ত না। কিছু পাশ্চাত্যের মনীষীও এই অতীতে এই বিনয়ের অভাব দেখিয়েছেন। নিউটনের কথা মনে আসছে। কিন্তু শেষ কথা হল তিনি মূলত এক মহান সাহিত্যিক, সার্বিক আদর্শের প্রতীক নন। যারা তাঁকে সার্বিক আদর্শের প্রতীক ভাবেন তাদের ভুল প্রমাণ করার জন্য এটার উল্লেখ করাটা ঠিক আছে। এটা উল্লেখ করলেই যে সাহিত্যে রবীন্দ্রপ্রতিভার উপলব্ধি স্বীকৃতিতে ভাটা পড়বে তা তো নয়, বা অভিজিৎ/ফরিদ ও যে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যপ্রতিভাকে ছোট করছে তাও নয়। যেহেতু ব্যক্তিজীবনে রবীন্দ্রনাথের ভাল মন্দ দিক তার সাহিত্যপ্রতিভার ব্যাপারে অপ্রাসঙ্গিক তাই ব্যক্তিজীবনে রবীন্দ্রনাথের মন্দ দিক নিয়ে কেউ লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে সে সাহত্যিক রবীন্দ্রনাথকে ছোট করছে বলে দাবী করলে সেটা অযৌক্তিক হবে।
৩। রবীন্দ্রনাথ একজন প্রজাপীড়ক জমিদার ছিলেন ইস্যু।
এখানে কেউ কেউ (ফরিদ ছাড়াও) বলেছেন যে জমিদার মানেই প্রজা নিপীড়ক, শোষক। এই মত মেনে নিলে রবীন্দ্রনাথ একজন প্রজাপীড়ক না প্রজাহিতৈষী জমিদার ছিলেন সেই ব্যাপারে তাত্বিক তর্কের আর কোন অবকাশ নেই। কেউ যদি বলে যে মুসলমান হলেই হিন্দুবিদ্বেষী হতে হবে (কারণ কুরাণে পৌত্তলিকদের ঘৃণা করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে) তাহলে সব মুসলমানেরি তাত্বিকভাবে হিন্দুবিদ্বেষী হবার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেটা সত্যি নয়। অনেকে বলবেন যে মুসলমান হিন্দুবিদ্বেষী নয় সে প্রকৃত মুসলমান নয় কারণ সে কুরাণের বাণীকে আক্ষরিকভাবে অনুসরণ করছে না। সেভাবে এটাও বলা যায় কোন জমিদারও প্রকৃত জমিদার নাও হতে পারেন প্রজাপীড়ক না হবার কারণে। মালিক হলেই কি শোষক হতে হবে ? এটা নিয়েও বিতর্ক হতে পারে। সেরকম জমিদার হলেই যে শোষক হতে হবে সেটাও বিতর্কিত ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে তিনি শোষক ছিলেন কিনা সেটা নিয়ে অনেক তথ্য প্রমাণ দিয়ে একটা ধারণা হয়ত করা যাবে। তবুও প্রতিটি ঘটনার পেছনে কি কি প্রাসঙ্গিক বিবেচ্য বিষয় ছিল তা আমাদের পক্ষে জানা বা বিচার করা খুব সহজ নয়। তা ছাড়া এই ধরণের ঢালাও বিচার অভ্রান্তভাবে করতে হলে রবীন্দ্রনাথের মনের ভেতর প্রবেশ করতে হবে। কিছু উদাহরণ দেই। যেমন সারা বছর যে পরের সুখের জন্য সময় ও অর্থ ব্যয় করল, ঈদ বা বিশেষ কোন দিন উপলক্ষে কাউকে ব্যয়বহুল কোন উপহার না দেয়াতে কৃপণ বলে অনেকের কাছে আখ্যায়িত হওয়াটা সঠিক মূল্যায়ন হবে না। কোন মানুষের একটি কর্ম থেকে তাকে কৃপণ বলে রায় দেয়া যেতে পারে আবার অন্য আর এক কর্মে থেকে তাকে দরাজদিল বলে মনে করা যেতে পারে। একজন মিতব্যয়ী লোককে কৃপণ বলেও ভুল করা যেতে পারে। কাজেই ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ শোষক বা নিপীড়ক ছিলেন নাকি প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন সে ব্যাপারে ঢালাও রায় ব্যক্তিগত মতের পর্যায়ই থাকবে। হয়ত এটাই ঠিক যে তিনি কোন চরম প্রান্তেই ছিলেন না। মাঝামাঝি কোন এক বিন্দুতে। তাই তাকে এই দুই বিশেষণের (প্রজানিপীড়ক বা প্রজাহিতৈষী) কোনটাতেই ভূষিত করা সম্ভব না না বস্তূনিষ্ঠভাবে । ঢালাও মত দেয়া বা দিলেও সেটা নিয়ে ব্যক্তি আক্রমণভিত্তিক বিতর্ক করা সমীচীন নয়। শুধু ঢালাও বিচারের কারণ হিসেবে বিবৃত ঘটনাগুলি সত্য না মিথ্যা সেটা যাচাই করাটাই অর্থবহ।
আরেকটা ব্যাপার হল, নিজের স্বার্থ রক্ষা করা একটা বিবর্তনীয় তাগিদ বা প্রবৃত্তি। রবীন্দ্রনাথও তার উর্ধে নন। আবার জনহিতৈষী কাজ করাও এক বিবর্তনীয় প্রবৃত্তি। এ দুই প্রবৃত্তিই একই ব্যক্তির মধ্যে থাকতে পারে। রবীন্দ্রনাথ এক বিচিত্র মনের মানুষ ছিলেন। এ জন্যই তাঁকে “Myriad Minded Man” বলে উলেখ করেছেন কৃষ্ণ দত্ত আর আন্ড্র্যু রবিনসন তাঁদের ঐ নামের বই এ। এক বা গুটি কয়েক ঘটনা দিয়ে কাউকে সামগ্রিকভাবে বিচার করা যায় না। এটা অবশ্য অনেকের বেলায়ও সত্য। আমি এ নিয়ে মুক্তমনা গ্রুপে ২০০৫ এর মে তে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম (ইংরেজীতে অবশ্য)।
রবীন্দ্রনাথ পৈত্রিক উত্তরাধিকার সুত্রে জমিদারিত্ব পেয়েছিলেন, যতটুকু মনে পড়ে অন্য ভাইদের চেয়ে তাঁরই এই এই জমিদারিত্বের দায়িত্ব নেয়াটা বাস্তবসম্মত ছিল। এমন নয় যে তিনি জমিদারিত্বকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ।
কিন্তু এটা নিশ্চয় বলা যায় যে তিনি জমিদার হিসেবে মহানুভবতার পরাকাষ্ঠা দেখাননি। আবারও তাতে কিন্তু সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ছোট হয়ে যাচ্ছেন না। এবং রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক বিচারে সেটা অপ্রসঙ্গিকও। কিন্ত যে সকল রবীন্দ্রভক্তরা মনে করেন যে রবীন্দ্রনাথ সব ব্যাপারেই (কাজেই জমিদার হিসেবেও) সর্বশ্রেষ্ঠ, নিখুঁত তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে তার জমিদারকালীন এই ঘটনার উল্লেখ প্রাসঙ্গিক।
আরেকটা বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই কিছু মন্তব্যকারী বলছেন যে রবীন্দ্রনাথকে জানতে বুঝতে হলে অনেক পড়াশুনা করা দরকার, বিপ্লব বলছে প্রয়োজনে শান্তিনিকেতনে বেশ কিছুদিন কাটিয়েও আসা দরকার। এটা ঠিকই যে কোন একজন মানূষ, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের মত Myriad Minded Man এর মত মানুষকে সম্পূর্ণভাবে (বা ভাল ভাবে ) জানতে হলে অনেক কিছুই জানতে হবে। রবীন্দ্র সাহিত্যও যেহেতু বিশাল, তাই রবীন্দ্র সাহিত্যের সাথে সম্যক পরিচিতি লাভ করতেও অনেক পড়তে হবে। কিন্তু ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ “কি ছিলেন” সেটা জানতে যেটুকু পড়তে হবে, কি ছিলেন না সেটা প্রমাণ করেত অত বেশি পড়ার দরকার নেই। একটা উদাহরণই যথেষ্ঠ। এটা অনেকটা বিজ্ঞানের ভেরিফিচাতিওন/ফলসিফিকেশনের মত ব্যাপার। প্রথমটা অনেক কঠিন, দ্বিতীয়টা নয়। অভিজিত/ফরিদের লেখা ফলসিফিকেশনের মত, ভেরিফিকেশন নয়। একটা উদাহরণ দেয়া যাক সহজ ভাষায় বোঝানোর জন্য। কেঊ দাবী করল যে এই বাড়ীতে একটা সোনার তৈরী সূচ লুকান আছে কোথাও, কিন্তু জানেনা কোথায়। এটা যে আদৌ আছে সেটা তাকে প্রমাণ করতে বললে তাকে পুরো বাড়ী তন্ন তন্ন করে খুঁজে প্রতিটি কোণা খুপরী পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পাওয়া গেলে তার কথা প্রমাণিত হবে। কিন্তু এর জন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হল। কিন্তু কেউ(“ক”) যদি দাবী করে এই বাড়ীর কোথাও সোনার তৈরী কোন সূচ নেই আর অন্য কেউ (“খ”) ঘটনাক্রমে বাড়ীর কোন এক কোণায় একটা সোনার তৈরী সূচ খুঁজে পেল তাহলে “খ” বলতে পারবে যে “ক” এর দাবী ভুল। কিন্তু “খ” এর খুব কষ্ট করতে হল না। আরেকটা ব্যাপার এখানে বিবেচ্য। প্রশ্ন উঠতে পারে “খ” কি “ক” কে ভুল প্রমাণ করার জন্যই (ক এর প্রতি বিদ্বেষ হেতু) আসলে সারা বাড়ী কষ্ট করে খুজেছিল সোনার সূচ আছে কিনা ?। নাকি হঠাৎ করেই তার নজরে এসেছিল সূচটা টা আর তাই স্বভাবতই “ক” যে ভুল সেটা ধরিয়ে দিল (ক এর প্রতি বিদ্বেষ হেতু নয়) ? এটা “ক” এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে অভ্রান্তভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি অনেকে রবীন্দ্রনাথের খুতঁ ধরার ব্যাপারে মনে করেন যে রবীন্দ্র সমালোচকেরা অনেক খুজে খুজে ভুল বের করছেন, কারণ তারা রবীন্দ্রবিদ্বেষী। যাই হোক এটাও একটা আত্মনিষ্ঠ মত বলে বিতর্কের বিষয় হতে পারে না।
কিন্তু রবীন্দ্র সাহিত্য “বুঝতে” হলে… এই ধরণের বাক্যের কোন বস্তুনিষ্ঠ অর্থ নেই। সাহিত্য অনুভব, উপলব্ধি বা appreciate করার ব্যাপার। এখানে বোঝার (understand/comprehend) ব্যাপার কোথায়। যারা রবীন্দ্রনাথের লেখার স্টাইল বা বিষয় উপভোগ করেন তারা তার একটি বা কয়েকটি গান শুনে,ঙ্কবিতা/গল্প/উপন্যাস পড়েই আসক্ত হয়ে যেতে পারেন। এটা অন্তরের ব্যাপার,আত্মনিষ্ঠ। অনেক বেশী সংখ্যায় পড়ে জোর করে আসক্তি সৃষ্টি করা যায় না। করলেও সেটা একটা কৃত্রিম আসক্তি হবে, বাহ্যিক প্রভাবের কারণে। এ প্রসঙ্গে আরো কিছু বক্তব্যের এখানে দ্বিরুক্তি না করে আমার এক লেখা ““শিল্পানুরাগে আত্মনিষ্ঠতার বিষয়ে কিছু ভাবনা” ” পড়ার অনুরোধ করব।
এটা বলা ভুল হবে না যে রবীন্দ্রনাথের কালো দিক নিয়ে লেখার তেমন সনির্বন্ধ কারণ নেই যেমনটি আছে রাজনৈতিক/ধর্মীয় নেতার ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথ তো একজন শিল্পী মাত্র। এবং একজন উদার ও সার্বজনীন শিল্পী। তাঁর ভক্তরা যদি তাঁকে ত্রুটিমুক্ত কোন মহামানব মনেও করে তাতেও খুব বিরাট কোন ক্ষতি বা ঝুঁকি নেই সাধারণ মানুষের। তাঁর নামে তো সন্ত্রাস করতে পারবে না কেউ। তার ছবি দেয়ালে টাঙ্গান বাধ্যতামূলক করা, বা তাঁকে কবিগগুরু না বললে দন্ডণীয় অপরাধ বলে আইন জারী করা এগুলির কোনটাই হবে না, রবীন্দ্রভক্ত কেঊ ক্ষমতায় আসলেও। এটা রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতার ক্ষেত্রেই সম্ভব । কারণ রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতা ও তাদের অনুসারীদের উদ্দেশ্যই হল মানুষকে ডগমা ভিত্তিক আইনের আওয়াতায় এনে একত্রিত করে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের নিজেদের আর্থিক বা সামাজিক স্বার্থ হাসিল করা। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতার সমালোচনার জন্য তাদের অনুসারীদের যেরকম অসহনশীল সহিংস্র হুমকি প্রদর্শন দেখা যায় (এবং বাস্তবেও তা ঘটা) সেটা রবীন্দ্র ভক্তদের কাছ থেকে আশা বা ভয় করার নেই। কেবল রবীন্দ্র ভক্তদের মোহ ভাঙ্গানই যদি লেখার কারণ হয়ে থাকে তাহলে লেখাতে এতটা সনির্বন্ধ বা urgent সুর বা উত্তেজনার ভাব থাকাটা অনাবশ্যক। এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মত।
%
কমেন্টগুলো পড়ে বুঝতে পারলাম কবি গুরুকে চোর বলা যাবে না কিন্ত বাউল সাধকের সুর কপি করছে বলা যাবে ৷
যেহেতু তিনি বিশ্বকবি তাই ৷আমাদের জাতির অহংকার ৷
বাহঃ চমৎকার ৷
বাস্তবতা হচ্ছে কেউ সমালোচনার ঊর্ধে নয় ৷
ধন্যবাদ সবাই কবিগুরুর অনেক ইতিবাচক নেতিবাচক দিক জানতে পারলাম ৷
সব প্রশংসা মুক্তমনা সদস্যবৃন্দের। রবি ঠাকুরকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার ঝড় বয়ে গেল। বটবৃক্ষটি কিন্তু নুয়ে পড়নি। মুক্তমনা তাই অনন্য, একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান । এটা আবার প্রমানিত হল, এর সদস্যরা সহনশীল, ভদ্র, বিনয়ী, একে অপরের প্রতি আস্থা এবং শ্রদ্ধাশীল।
রাহাজানি শব্দ ব্যবহারটি না করলেও চলত। রবীন্দ্রপূজারী কথাটিও একেবারেই অনাবশ্যকীয় ছিল। আমার কাছে ভগবানের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আছে। এতে আমার দোষ কোথায়? আমি ত তাঁর মূর্তি বানিয়ে পূজো করিনা। কাউকে করতেও বলিনি। রবীন্দ্রনাথ আমাকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেননি। রবীন্দ্র অনুরাগীদের রবীন্দ্রপূজারী আখ্যা দেওয়া রবীন্দ্র বিদ্বেষেরই নামান্তর কেন ভাবব না?
মুক্তমনার মশাল যাদের হাতে, যারা এর ধারক এবং বাহক তাদের দ্বায়িত্ববোধ, ধৈর্য এবং সহনশীলতা হবে সাধারণ ব্লগারদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী। সেটাই কাম্য। এরা লিখলেই সব সময় ভাল বলতে হবে এমন তো কথা নয়। বিতর্কমূলক কিছু থাকলেও কি তাকে প্রসংশা করে যেতে হবে? তাহলে মুক্তমনে সমালোচনা করার সুস্থ পরিবেশ থাকল কোথায়? এটা আবার সেই ব্যক্তিপুজারই নামান্তর।
ব্লগারদের মন্তব্য করতে যেয়ে সাহস হারিয়ে ফেলা কোন ভাল কথা নয়। একজন সাধারণ ব্লগারের আশ্রয় হবে ব্লগ পরিচালকবৃন্দ। এরা উতসাহিত করবেন। হাস্যকর মন্তব্য হলেও অন্তত হাস্যকর বলা এদের সাজে না।
মূল লেখাকে ঘিরে অনেক নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এখানেই তো মুক্তমনা প্ল্যাটফরমের ব্যতিক্রমী অবস্থান। মোজাফফর হোসেন এবং অপার্থিব আলাদা পোষ্টি দিয়ে বাদানুবাদ নিরসনে প্রসংশনীয় ভূমিকা রেখেছেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
সম্পূর্ণ একমত।
এটা আপনার ব্যক্তিগত মতামত। এর প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু আমরা যে শব্দ দুটো ব্যবহার করেছি তা থেকে এখনো সরে আসার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আমাদের ধারণা এই স্ট্রং শব্দ দুটোর ব্যবহার আবশ্যক ছিল বিষয়টির গুরুত্ব বোঝানোর প্রয়োজনেই। মোলায়েম শব্দ ব্যবহারে সেই গুরুত্ব হ্রাস পেতে পারতো।
এই বিষয়টা নিয়ে আগেও আপনাকে আমি একটা ব্যাখ্যা দিয়েছি। তারপরেও আপনি কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বার বার আপনাকে পূজারী বলে অপমান করা হচ্ছে বলে নিজের গায়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন পুরো ব্যাপারটাকে। আবারও আপনাকে পরিষ্কার করে বলি, রবীন্দ্র অনুরাগীদের রবীন্দ্র পূজারী বলা হয় নি। পূজারী বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয়েছে, যারা রবীন্দ্রনাথকে দেবতা হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। এবং সে কারণে তাঁকে রাখতে চায় সকল সমালোচনার উর্ধ্বে। আশা করছি যে, আমার এই পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেবার পরে আপনার ভুল ভাঙবে। কাজেই, যেহেতু রবীন্দ্র অনুরাগীদের কোনো ক্রমেই রবীন্দ্র পূজারী বলা হয় নি, সে কারণে এখানে রবীন্দ্র বিদ্বেষকে অহেতুক টেনে না আনাটাই ভালো।
একমত। এখান থেকে আমরা যদি বিচ্যুত হয়ে থাকি, তবে ক্ষমাপ্রার্থী।
আমরা লিখলেই সে লেখার প্রশংসা করতে হবে এমন কোনো কথা বা ইঙ্গিত আমরা কখনোই দেই নি। বরং ভিন্নমতকে সবসময় স্বাগতই জানিয়েছি।
সাহস হারানোর কারণটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। ব্লগের পরিচালক হিসাবে আমরা কাউকে হুমকি দেই নি, কাউকে অসমতল ক্ষেত্রে বিতর্ক করতে বাধ্য করি নি। এখানে যাত্রী, কাজী মামুন, সপ্তক এরা আমাদের প্রচুর সমালোচনা করেছেন। এরা সহ আরো অনেকেই আছেন যাঁরা আমাদের সমালোচনা করে লিখেছেন। কারো মন্তব্যকে আমরা সম্পূর্ন আটকে দেই নি, পরিবর্তন করি নি, এমন কি দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায়ও রাখি নি, যেটা ইচ্ছা করলেই আমরা করতে পারতাম আমাদের সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে। তারপরেও যদি ব্লগাররা সাহস হারিয়ে ফেলেন, তাহলে সেটা আমাদের জন্য আশংকারই কথা। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে আমাদের অবশ্যই।
এই সমস্ত অতিথি লেখকদের সমালোচনার বাইরেও কেউ কেউ আছে যাঁদের মডারেশনকে পাশ কাটিয়েই মন্তব্য করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ অত্যন্ত বাজে ভাষায় আমাকে আক্রমণ করে লিখেছেন, কেউ কেউ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, উপহাসও করেছেন আমাদের, মিথ্যাবাদীও বলেছেন। যে নোংরা ভাষায় আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে তার অর্ধেকও যদি আমার কোনো সহব্লগারকে করা হতো, আমি মডারেটর হিসাবে নিশ্চিতভাবেই কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতাম। আমার নিজের ক্ষেত্রে বলেই সেটা হয় নি। এর চেয়ে আর বেশি কী সহনশীলতা আপনি আশা করেন আমি জানি না।
আবারো একমত আপনার সাথে।
রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে এটাই আমার শেষ মন্তব্য। আমার মতে, এই বিতর্ক আসলে শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই, অপার্থিবের চমৎকার লেখাটি পোস্ট করার সাথে সাথেই।
ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
@ফরিদ আহমেদ,
@ফরিদ আহমেদ,
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি আমার মন্তব্যগুলো পাবলিশ করার জন্য। মুক্তমনা যে ভিন্নমতকে প্রশ্রয় দেয় (যা কিনা সভ্যতা বিকাশের অন্যতম উপাদান), সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
তবে বিতর্ক আসলে শেষ হয়নি, ফরিদ ভাই। কেননা আপনি এখনো ‘রাহাজানি’ শব্দটি আঁকড়ে ধরে আছেন। রবীন্দ্রনাথের চিন্তা, কর্ম ও দর্শনের হাজারো সমালোচনা করা যেতেই পারে (যেমন, বিপ্লব-দার লেখার জবাবে আমি আমার শেষ পোস্টে শরৎচন্দ্র কিভাবে রবীন্দ্রনাথের কথায় দুঃখ পেয়েছিলেন, তা উল্লেখ করেছি); কিন্তু, রবীন্দ্রনাথ চুরি-রাহাজানি করেছেন, এ কেমন কথা! শেক্সপিয়ার কারো লেখা চুরি করে কোন নাটক লিখেছেন, এমন তথ্য কেউ আবিষ্কার করলে সারা বিশ্বে মাতামাতি লেগে যেত নিঃসন্দেহে। বছরের বা দশকের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলে গণ্য হতো নিশ্চিত। কিন্তু অভিজিৎ-দা ও আপনার তুলে ধরা প্রমননাথ ও গগন হরকরার ঘটনা অত আলোড়ন তুলতে পারেনি; কারণ এ-ব্যাপারগুলো অনেক আগে থেকেই ব্যাপকভাবে জ্ঞাত ও মীমাংসিত। বিশেষ করে গগন হরকরার ‘আমার মনের মানুষ যে রে, আমি কোথায় পাব তারে’ অবলম্বনে যে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত রচিত, এ তথ্য আমি ক্লাস সেভেনের রচনা বইতে প্রথম পাই। আর আপনারা তো রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক হিসাবে অন্তত মানেন; কিন্তু এমন অনেক রবীন্দ্র-বিদ্বেষী রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় এবং পরে বিরাজ করছিল, যারা ‘চোর রবীন্দ্রনাথকে’ প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলত, যদি আপনাদের দেওয়া তথ্য অভ্রান্ত ও অভেদ্য হতো, ; আপনাদের আর কষ্ট করে এ বিষয়ে পাঠকদের ঘুম নতুন করে ভাঙ্গাতে হতো না। আপনাদের লেখার মাধ্যমে অনেক পাঠক অনেক কিছু জানতে পেরেছে সত্যি, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ লেখা বা সুর চুরি করেছেন, এ বিষয়টা কোনভাবেই প্রমাণিত/প্রতিষ্ঠিত হয়নি (বিপ্লব-দার যুক্তিগুলোও এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য যা আপনারা খণ্ডন করেননি।) তবে বাংলাদেশের ধর্মান্ধ ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, যারা মুক্ত মন ও ধ্যান-ধারনা থেকে হাজার বছর পিছিয়ে, তারা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও রবীন্দ্রনাথে বিরুদ্ধে ব্যবহার করার মতো নতুন রসদ পেয়েছে এবং সযত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
“সব প্রশংসা মুক্তমনা সদস্যবৃন্দের। রবি ঠাকুরকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার ঝড় বয়ে গেল। বটবৃক্ষটি কিন্তু নুয়ে পড়নি। মুক্তমনা তাই অনন্য, একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান । এটা আবার প্রমানিত হল, এর সদস্যরা সহনশীল, ভদ্র, বিনয়ী, একে অপরের প্রতি আস্থা এবং শ্রদ্ধাশীল। ”
সম্পূর্ণ একমত । তবে কিছু আলচনা/সমালচনা বেক্তিগত আক্রমণ এর পর্যায়ে চলে গেছে যা কিনা কখনই লেখকবৃন্দ সূচনা করেন নাই । এটা দুঃখজনক ।
@সপ্তক,
তা ঠিক। প্রতিপক্ষ সংযত থাকতে পেরেছে বিধায় মুক্তমনার ঐতিয্য বজায় অটুট থেকেছে।
সমালোচনাগুলো নিয়ে নতুন অনেক কিছুই জানলাম, পক্ষে বিপক্ষে দুই দিকেই। তবে রবীন্দ্রনাথের প্রতি আমার বেশি ভক্তি না থাকার কারণ তার সমালোচনাগুলো নয় (কারণ এগুলো নিশ্চিত নয়) বরং তার দর্শন। তার কবিতা এবং সাহিত্যের প্রভাব কোনদিনই কমবে না, কিন্তু তার দর্শনের কোন প্রভাব এই এখনই নেই বলে আমার মনে হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবন বর্তমানের কোন তরুণের আদর্শ হতে পারে বলে আমি মনে করি না, আর যদি হয়ও তাহলে বলতে হবে সে তরুণ পশ্চাৎগামী, প্রগতিবাদী নয়।
রবীন্দ্রনাথের সমগ্র জীবনটাকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি সমালোচনা দিয়ে বিচার করি: রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের একজন ভাববাদী প্রেমিক কিশোর যে স্বর্গের বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আমাদের বড় দুঃখ যে বাগান থেকে শূন্য বাস্তবতায় বেরিয়ে নিজের বয়স বাড়ানোর কোন চেষ্টা রবীন্দ্রনাথ করলেন না। শেক্সপিয়ারের মত সাহিত্যিক ও দার্শনিক বা অন্তত কিয়ের্কেগরের মত দার্শনিক হওয়ার বদলে তিনি বহির্বিশ্বে নিজেকে সাধু হিসেবে পরিচয় দিয়েই তৃপ্তি পেলেন, পাশ্চাত্য ভারতের নোবেল বিজয়ীকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিল ঠিক সেভাবেই গিয়ে হাজির হলেন তাদের দোড়গোড়ায়।
রবীন্দ্র সাহিত্য পড়লে মুগ্ধ হতে হয়, কিন্তু শেক্সপিয়ারের মত কবিদের লেখায় যে পূর্ণবয়স্ক মানবের প্রজ্ঞা পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথে তা নেই। আমি মনে করি এযুগের তরুণ প্রজন্ম, তথা আমাদের প্রজন্ম রবীন্দ্রনাথ থেকে খুব বেশি শিক্ষা পায়নি, রবীন্দ্রনাথ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে খুবই কম, পুরো ভার্সিটি জীবনে নিজের চোখে দেখেছি এটা। তবে অবশ্যই তার গান-কবিতা-ছোটগল্প মুছে যাবে না কোনদিন, ভাষা ও ভাবের কারণেই।
রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় দু’টি “পুস্তক পরিচয” বেড়িয়েছে|আনন্দবাজারের লিঙ্কটা এখনো আমার ঠিকঠাক কাজ করে না বলেই লিঙ্কটা না দিয়ে পুরো লেখা দু’টি-ই তুলে দিলাম|রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এই আলোচনা-সমালোচনার আসরে লেখা দু’টো এবং উল্লেখিত গ্রন্থসমূহ (যদি সংগ্রহ করা যায়??)পাঠকের কাজে আসবে বলেই আমার ধারনা|ধন্যবাদ|
(১)
চিত্রজীবনী নয়, আসলে সচিত্র জীবনী
অভীককুমার দে
রবীন্দ্রনাথ টেগোর/ আ পিকটোরিয়াল বায়োগ্রাফি, নিত্যপ্রিয় ঘোষ। নিয়োগী বুকস, মূল্য অনুল্লেখিত
একবিংশ শতকের প্রথম দশক পেরিয়ে এসেছি। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিস্তর বই সংখ্যাতীত প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। রবীন্দ্রজীবনের বহু তথ্যই এখন সংগৃহীত, সংকলিত। তবু নতুন কোনও দিক থেকে রবীন্দ্রনাথকে দেখার সম্ভাবনা যে একেবারে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে এমন নয়। সম্প্রতি নিত্যপ্রিয় ঘোষ প্রণীত রবীন্দ্রনাথ টেগোর/ আ পিকটোরিয়াল বায়োগ্রাফি বইখানি প্রকাশিত হয়েছে। ‘পিকটোরিয়াল বায়োগ্রাফি’-র অর্থ চিত্রের মাধ্যমে রচিত জীবনী, সঙ্গে স্বল্প কথায় চিত্রপরিচয়, জীবনধারাটি বোঝার মতো তথ্যসূত্র। ইংরেজি বা বাংলায় এমন বইয়ের সংখ্যা, এই সার্ধশতবর্ষ পেরিয়েও, নিতান্ত নগণ্য। কিন্তু আলোচ্য গ্রন্থে আখ্যানভাগই আসল, ছবি বড় জোর এক-চতুর্থাংশ। এটি চিত্রজীবনী নয়, একে সচিত্র জীবনী বলাই সঙ্গত। আর রবীন্দ্রজীবনী হিসেবে এর বৈশিষ্ট্যের কথা লেখক ভূমিকায় বলেছেন- এটি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির আলোয় দেখা জীবন নয়, ‘ক্রনিক্ল অব হিজ টাইম’। এই গ্রন্থের আখ্যান, রবীন্দ্রনাথের সময়ের কালানুক্রমিক বিবরণ দেবে, স্বল্পজ্ঞাত তথ্য জানাবে এবং কিছু অপূর্ণতাও পূরণ করবে। কোনও সৃজনীপ্রতিভার জীবন তাঁর সৃষ্টিকে বাদ দিয়ে আদৌ দেখা যায় কি না, সে তর্ক না হয় তোলাই থাক। আমরা বরং দেখি এই জীবনী থেকে আমরা কী পেলাম।তথ্য যেখানে বিপুল, লেখার আয়তন নির্দিষ্ট, সেখানে ঠিক কী এবং কতটা তথ্য কাজে লাগিয়ে মানুষটিকে এবং তাঁর সময়কে তুলে ধরা সম্ভব, এই ধরনের বইয়ে সেই মুন্সিয়ানাই আসল। কেন একটি বিশেষ তথ্য নেওয়া হল, অন্যটি হল না, তার যুক্তি পাঠকের কাছে স্পষ্ট করতেই হবে। রবীন্দ্রজীবনের মোটা দাগের তথ্য সকলেরই জানা, তাই প্রথম থেকেই পাঠকের সন্ধান থাকে ‘অন্য রকম’ কিছুর দিকে, তথ্যে না হলেও দৃষ্টিভঙ্গিতে। এখানে কিন্তু শুরু সেই গতানুগতিক বিবরণ দিয়েই সেই পিরালি, সেই ঠাকুর অভিধাপ্রপ্তি, সেই নীলমণি-দর্পনারায়ণ, তাঁদের বিচ্ছেদ এবং জোড়াসাঁকো পরিবার। অত্যধিক দ্রুতলয়ে রবীন্দ্র-বাল্যকাল পেরিয়ে গেল। ভর্তি হলেন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে। এর পরই ‘দিল্লি দরবার’, ‘হিন্দুমেলা’ এবং ব্রজবুলিতে রচিত পদ। কোন মনোভাবের প্রতিক্রিয়ায় রচিত হল প্রথম পদ ‘গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে’, সে সব কিছু রইল না, কিন্তু বেশ একটু জায়গা নিল জীবনস্মৃতি-র জার্মানিতে বাঙালি গবেষকের ভানুসিংহ ঠাকুর অবলম্বনে ‘ডাক্তার উপাধি লাভ’ করার ভুল খবরটা।
তৃতীয় অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথের বিয়ের প্রসঙ্গ এসে গেল। এতক্ষণে তাঁর ভাইদের অনেকের নাম পেলাম, সঙ্গে বালিকাবধূদের বয়স। রবীন্দ্রনাথের ‘হিন্দু বিবাহ’ প্রবন্ধের কথা এল, আর তার পরই বলা হল কাউন্ট কাইজারলিঙের অনুরোধে তিনি লিখলেন ‘ইন্ডিয়ান আইডিয়াল অব ম্যারেজ’ (১৯২৫)। আসলে তিনি লিখলেন ‘ভারতবর্ষীয় বিবাহ’, অনুবাদক সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৮৩-তে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ থেকে ১৯২৫-এর প্রবন্ধ, চলনের এই ধরনটাই এ গ্রন্থের আগাগোড়া। একবার পিছিয়ে গিয়ে বহু দূর এগিয়ে চলা। ভারতে বাল্যবিবাহ নিয়ে মিস মেয়ো-র চিঠি, রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদপত্র, ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকায় তার প্রকাশ সবই আসে। কিন্তু কী ছিল সেই প্রতিবাদপত্রে, তা জানা যায় না। অথচ এই মন্তব্য থাকে, মিস মেয়োর অভিযোগ অস্বীকার করার উপায় ছিল না রবীন্দ্রনাথের। এরই সূত্র ধরে এসে গেল রবীন্দ্রনাথ তাঁর কন্যাদের কোন বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। তখনও কিন্তু রবীন্দ্রনাথের পরিবার সম্পর্কে এই জীবনী কিছুই জানায়নি। রথীন্দ্রনাথ যে আমেরিকায় কৃষিবিজ্ঞান পড়তে গিয়েছিলেন ইত্যাদি তথ্যের আগেই জানা গেল তাঁর বিধবাবিবাহের কথা (পৃ ১১৩)। সেখানেও প্রতিমা দেবীর একমাত্র পরিচয় তিনি বিধবা। আবার সেই জ্ঞাত তথ্যের পুনঃজ্ঞাপন বলেন্দ্রনাথের বিধবা পত্নীকে তাঁর মা আবার বিয়ে দিতে চাইলে দেবেন্দ্রনাথের আদেশে রবীন্দ্রনাথ সেই উদ্যোগ থেকে তাঁকে বিরত করেন। রথীন্দ্রনাথের বিয়ের বছর দুই আগেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিপত্নীক মধ্যম জামাতার বিধবাবিবাহ দিয়েছিলেন সে কথা না জানালেও, কবির কনিষ্ঠ জামাতা নগেন্দ্রনাথের সুবিস্তৃত পরিচয় দেওয়া হল। আন্না তড়খড় (পৃ ৬৯-৭২) এবং কাদম্বরী দেবী (পৃ ২৬-২৯) বেশ একটু জায়গা নিয়েছেন। কাদম্বরী দেবীকে ভারতী-র মজলিসে পাওয়া গেল। অবশ্য শুরুতে ছিলেন ন’বছরের নিরক্ষর কন্যা। একটি বাক্যও নেই যে তিনি ঘরে পড়ে ও স্বামীর সাহচর্যে রীতিমতো সাহিত্যরসবোধসম্পন্না হয়ে ওঠেন। কাদম্বরীকে রবীন্দ্রনাথের ‘মোস্টলি অ্যাজ আ সারোগেট মাদার’ বললেন লেখক। রবীন্দ্রসৃষ্টির প্রেরণাদাত্রী হিসাবে কোনও ভূমিকাই কি তাঁর ছিল না?
গীতাঞ্জলি সঙ অফারিংস (পৃ ১১৯) প্রসঙ্গে অনুবাদ নিয়ে অনেকটাই বলা হয়েছে। কে সাহায্য করেছিলেন, কতটুকু রবীন্দ্রনাথের, ইয়েটস সংশোধিত কাগজগুলি রক্ষিত হল না। চিরোল কী বললেন। কিন্তু রটেনস্টাইনের সঙ্গে বন্ধুত্বের যোগ, গীতাঞ্জলি-র কবিতা ইয়েটস কী আনন্দে আবেগে গ্রহণ করলেন এবং আরও আরও বহু ঘটনা, সবই যে উপেক্ষিত হয়, সে কি জানা বলে? স্টফোর্ড ব্রুক যে গীতাঞ্জলি পড়ে বলেছিলেন ‘আই উইশ আই ওয়্যার ওয়র্দি অব দেম’ উল্লেখ থেকে কারা কারা রবীন্দ্রনাথের প্রতি ‘সেন্টলি রেসপেক্ট’-এর সমালোচনা করেছিলেন, সে প্রসঙ্গ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, যেমন পেয়েছে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি বিষয়ে, রবীন্দ্রনাথ এ পুরস্কার পান যাঁরা চাননি, তাঁদের কথা।
তর্কবিতর্কের এই পরিবেশের মধ্যে রেণুকার অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রসঙ্গে পিতার ভূমিকা (পৃ ৯৩) অন্য সুর নিয়ে আসে। জমিদারি দেখাশোনার কাজে শিলাইদহ গিয়ে স্ত্রীকে লেখা (পৃ ৪৪) তাঁর চিঠির এক টুকরো তেমনই একটি স্নিগ্ধতার অনুভব আনে। পাশাপাশি ইন্দিরা দেবীকে লেখা আর একটি চিঠি (পৃ ৪৫) কবির আসল মনটির আভাস দিয়ে যায়। মৃণালিনী দেবী এবং ইন্দিরা দেবীকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠির সংখ্যার তুলনা কি খুব জরুরি ছিল? ঠিক তেমনই সিস্টার নিবেদিতার প্রসঙ্গ যে-ভাবে উপস্থাপিত হয় শুধু এডওয়ার্ড টমসনকে লেখা চিঠির মাধ্যমে, তাতে উভয়ের সম্পর্কের কোনও সূত্রই মেলে না।
এ বার ছবির প্রসঙ্গে আসা যাক। লেখক জানিয়েছেন, ‘আই হ্যাভ মেনশন্ড অল দ্য বুক্স, অন হুইচ আই ডিপেন্ড ফর দ্য টেক্সট অ্যান্ড ফটোগ্রাফ্স, ইন দ্য বিবলিয়োগ্রাফি।’ নানা বইপত্র থেকে কোনও সুনির্দিষ্ট স্বীকৃতি ছাড়া যথেচ্ছ ছবি ব্যবহার করে গ্রন্থের প্রথমেই সতর্কবাণী দেওয়া যায় কি, ‘অল দ্য রাইট্স আর রিজার্ভড। নো পার্ট অব দ্য পাবলিকেশন মে বি রিপ্রোডিউসড…’? গ্রন্থসূচি-র বইগুলি ঘেঁটে নির্দ্বিধায় বলা যায়, আলোচ্য বইয়ের বেশ কিছু ছবি তালিকা-বহির্ভূত গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে, অথচ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর সঙ্গে আছে ছবির পরিচয়ে ভুলের মিছিল। রথীন্দ্রনাথের পাঁচ বছরের ছবি হয়েছে রবীন্দ্রনাথের (পৃ ১৩)। ১৪ পাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ছবি কোন বই থেকে নেওয়া? আবার একই প্রশ্ন তোলা যায় ৩৫ পাতার ‘ব্রাহ্মসমাজের প্রার্থনা সভাঘর’, ৪০ পাতায় কড়ি ও কোমল-এর আখ্যাপত্র, ৫২ পাতার ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার বিজ্ঞাপন’, ৫৭ পাতার ‘রাজা ও রানী’, ১৩৮ পাতায় ‘কাসালটন লজ দার্জিলিঙ’ সম্পর্কে। ৭৩ পাতায় সুরেন্দ্রনাথ হয়েছেন বলেন্দ্রনাথ আর বলেন্দ্রনাথ হলেন সুরেন্দ্রনাথ। ৮৮ পাতার ছবি ১৯১৩-য় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে তোলা নয়, ১ ফেব্রুয়ারি ১৯১৪ রামমোহন লাইব্রেরিতে তোলা। রটেনস্টাইনের গৃহে তোলা গ্রুপ ছবিটির (ইমপারফেক্ট এনকাউন্টার: পৃ ৪৫) ফোটোগ্রাফার জন ট্রেভার। আলোচ্য গ্রন্থে এই ছবি আছে (পৃ ১১৮), ফোটোগ্রাফারের নাম নেই। গ্রন্থসূচিতে শুধু ইমপারফেক্ট এনকাউন্টার বইটির উল্লেখ আছে।
শেষাবধি এ বইয়ের তথ্য-বাছাইয়ের সূত্রটি পাঠকের অধরাই থেকে যায়, জানা হয়ে ওঠে না রবীন্দ্রজীবনের তেমন কোনও স্বল্পজ্ঞাত তথ্য। শুধু সুপরিচিত কিছু ‘চমকপ্রদ’ তথ্য সাজিয়ে কি রবীন্দ্রজীবনী হয়?
(২)
বিপুল সমাদরের পাশে তীব্র প্রতিরোধ
রাশিয়ায় যেমন রবীন্দ্রনাথকে জনপ্রিয় করেছিলেন বরিস পাস্তেরনাক, ফ্রান্সে আন্দ্রে জিদ, আর্জেন্তিনায় ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, তেমনই স্পেনে তাঁকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন হুয়ান রামোন হিমেনেথ। হিমেনেথ আধুনিক স্পেনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। কবি বলেই রবীন্দ্রনাথের নিজের করা ইংরেজি অনুবাদ থেকে তাঁর অনুবাদ ঠিক অনুবাদ নয়, রূপান্তর। কবিতা-গল্প-উপন্যাস-নাটক-প্রবন্ধ মিলিয়ে পঁচিশটি অনুবাদগ্রন্থের সবই প্রকাশিত হয় হিমেনেথের স্ত্রী সেনোবিয়া কাম্প্রুবির নামে, কিন্তু এ কথা আজ ইতিহাস যে প্রাথমিক অনুবাদ সেনোবিয়া করলেও হিমেনেথ তাকে দিয়েছিলেন আক্ষরিকের সীমা অতিক্রম করার শক্তি। সেনোবিয়া-হুয়ান রামোনের ভালবাসার কাহিনী এবং হুয়ান রামোনের কাব্যজীবনের রবীন্দ্র-প্রভাবিত রূপান্তরের কাহিনী লিখেছিলেন শিশিরকুমার দাশ ও শ্যামাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রায় পঁচিশ বছর আগে প্রকাশিত সেই বই শাশ্বত মৌচাক: রবীন্দ্রনাথ ও স্পেন এই সার্ধশতবর্ষে পাওয়া গেল নতুন করে (দে’জ, ১২৫.০০)।
১৯২৪-এ রবীন্দ্রনাথের ৪৯ দিনের চিন ভ্রমণ সে দেশে সর্বত্র সমাদৃত হয়নি। চিনে তখন পরিবর্তনের উত্তাল সময়। সেই সংকটকালে রবীন্দ্রনাথ বিপুল সমাদর যেমন পেয়েছেন তেমনই প্রবল প্রতিরোধ এমনকী সঙ্ঘবদ্ধ বিরোধিতারও মুখোমুখি হয়েছেন। সেই ঐতিহাসিক অভ্যর্থনা ও প্রত্যাখ্যানের তথ্য সংকলন করেন তান ওয়েন, তাকে আখ্যানে লেখেন শিশিরকুমার দাশ। সেই বিবরণ পুনঃপ্রকাশিত হল বিতর্কিত অতিথি: রবীন্দ্রনাথ ও চীন (দে’জ, ৬০.০০)। পরিশিষ্টে চিন-ভ্রমণের সবিস্তার সূচি এবং ১৯২৪ পর্যন্ত প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনার চীনা অনুবাদের তালিকা।
বিশ্বভারতী-র চিন্তা ও আদর্শ প্রচারে একটি ইংরেজি পত্রিকার প্রয়োজন অনেক দিন থেকেই অনুভব করছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৪ এপ্রিল ১৯২৩ প্রকাশিত হল ‘দ্য বিশ্ব-ভারতী কোয়ার্টার্লি’। সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘দ্য বিশ্ব-ভারতী নিউজ’ এবং কোয়ার্টার্লিতে রবীন্দ্রনাথের মূল ইংরেজি রচনা ছাড়াও, নিজের লেখার নিজের অনুবাদ, অন্যের লেখার অনুবাদ এবং নিজের লেখার অন্যের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। সে সব নিয়েই তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা সৃষ্টিধর দাসের দ্য বিশ্বভারতী কোয়ার্টারলি ও রবীন্দ্রনাথ (আশাদীপ, ৮০.০০)। সঙ্গে রচনার সবিস্তার পঞ্জি। একই প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে একই লেখক সংকলিত বিশ্বভারতী কোয়ার্টার্লির ২০০০ পর্যন্ত সূচি।
রবীন্দ্রনাথেরই চিঠিপত্র, তবে নির্বাচিত পত্রসংকলন নয় শ্রয়ণে রবীন্দ্রনাথ (শ্রয়ণ, ৩০০.০০)। ‘একই চিঠি একই অংশ… এখানে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে বিবৃত করছেন; অন্য দিকে, একই পরিসরে, একই অবকাশে, আমি-আমরা আমাদের সংশয় সংকট থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নিচ্ছি।’ ভূমিকা-য় জানিয়েছেন পথিক বসু, এ-বইয়ের সম্পাদক। প্রথম সংস্করণ বেরোনর আট বছর পর অনেকটাই অদলবদল করে দ্বিতীয় সংস্করণ হল বইটির।
রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে লিখলেও সমীর সেনগুপ্ত জানেন, পাঠকের সঙ্গে তাঁর মতের অমিল হবে, তবু কেউ যদি তাঁর মতো করে ভাবেন, তাই বেরিয়েছে তাঁর রবীন্দ্রনাথের গান/ দীপের মতো/ গানের স্রোতে (অনুষ্টুপ, ১০০.০০)। নানা স্বাদের নিবন্ধের একটিতে এ কালের এক কবিকে নিয়ে লিখছেন: ‘শক্তি রবীন্দ্রনাথের গানে আপ্লুত ছিল, ওর নিজের গানের গলাও ছিল অসম্ভব সুরেলা ও জোয়ারিদার।’
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যখন দেখা হয় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের, তখন একজন সুদক্ষ স্বরলিপিকারের জরুরি প্রয়োজন ঘটেছিল ঠাকুর পরিবারে। ‘কিশোর সুরেন্দ্রনাথকে দেখে কবি প্রথমে আশ্বস্ত হতে পারেননি, মৃদু হাস্যে বলেছিলেন তোমাকে পরীক্ষা দিতে হবে! রবীন্দ্রনাথ চেয়ারে বসে, কাগজ-কলম নিয়ে কিশোর সুরেন্দ্রনাথ তৈরি। গোটা তিনেক গান গাওয়া হল। একজন ওস্তাদ স্টেনোগ্রাফারের মতো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সুরেন্দ্রনাথ স্বরলিপিসুদ্ধ খাতা জমা দিলেন কবিগুরুর হাতে। রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত প্রীত হয়েছিলেন… ।’ ১৯০৮ থেকে আমৃত্যু কবির সঙ্গে সুরেন্দ্রনাথের এই সাংগীতিক সখ্যের ইতিবৃত্ত জানা যাবে তুষারকান্তি ঘোষের বিষ্ণুপুর: রবীন্দ্রনাথ/ সঙ্গীত রত্নাকর সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (এবং মুশায়েরা, ১৫০.০০) পড়লে। সুরেন্দ্রনাথের জন্ম বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ পরিবারে, অগ্রজ রামপ্রসন্ন ও গোপেশ্বর ছিলেন বিষ্ণুপুর ঘরানার দুই স্তম্ভ। সুরেন্দ্রনাথও ধ্রুপদ ধামার টপ্পা গাওয়া থেকে শুরু করে সেতার সুরবাহার এস্রাজে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
বিন্দুতে সিন্ধু। এমনই বলা যায় রবীন্দ্রনাথের ‘স্ট্রে বার্ডস’ ও ‘ফায়ারফ্লাইজ’-এর কবিতাগুলিকে। স্ফুলিঙ্গ আর লেখন-এর কবিতাগুলির কিছু কিছু অনুবাদ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ এই বইয়ের জন্য, কিছু বা আবার সরাসরি ইংরেজিতেই লেখা। ১৯২৮-এ ফায়ারফ্লাইজ প্রকাশিত হয় ম্যাকমিলান থেকে, অলংকরণে বরিস আর্টজাবাইশেফ। এ বার হাইকু ধরনের কবিতাগুলি নিয়ে সংকলন প্রকাশ করল বিশ্বভারতী, স্ট্রে বার্ডস ফায়ারফ্লাইজ অ্যান্ড আদার পোয়েমস (২৫০.০০)। ভূমিকা লিখেছেন ক্রিস মসডেল। এ বার অলংকরণে বিশ্বভারতী কলাবিভাগের দেওয়ালচিত্রে কে জি সুব্রহ্মণ্যমের করা নানা মোটিফ।
দুর্গাপুরের রবীন্দ্রসার্ধশতবর্ষ কমিটি ও চিলড্রেন্স আকাদেমির যৌথ উদ্যোগে বিপুল কলেবরে বেরল রবির আলোয় (শ্রীভারতী প্রেস, ৩৫০.০০)। ‘রবীন্দ্রপ্রতিভার অনালোচিত কিছু দিককে পাঠকের সামনে তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস’ পাঁচশো পৃষ্ঠার এ-বই। একই রবীন্দ্রনাথের ভিতর যে বিভিন্ন কর্মমুখী মানুষের বাস, সে-খোঁজই বইটির বিষয়-বৈচিত্রে, গীতাঞ্জলি-র রচয়িতা থেকে চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথের সব সত্তারই পরিচয় মিলবে এতে।
@ভজন সরকার, আরেকটি বই পড়ে দেখতে পারেন, রঙের রবীন্দ্রনাথ। রচনা : কেতকী কুশারী ডাইসন ও সুশোভন সরকার।
এই লেখাটি প্রথমে আমি ইংরেজিতে পড়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল–এটা একা পড়ে আরাম নেই–বন্ধুদের পড়াই। তখন আমি অনুবাদ করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু এক বন্ধু জানালেন বইটির বাংলা ভার্সনটি বেরিয়েছে। আরেকজন বন্ধু আমাকে পাঠালেন ৮০৪ পৃষ্ঠার এই ঢাউস আকৃতির বইটি। কেতকীর আরেকটি বই আছে–ভিক্টোরিয়া ওকাঙ্পোকে নিয়ে। অসাধারণ গবেষণা।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@কুলদা রায়,
ধন্যবাদ আপনাকে|বইটির কথা আগেও শুনেছিলাম কিন্ত সংগ্রহে নেই|দেখি এইবার কোলকাতা গেলে যদি আনতে পারি!ভালো থাকবেন|”আইরিন” নিয়ে আপনাদের ভয়টা কেটে গেছে বলেই তো মনে হচ্ছে|
চমৎকার বলেছেন।
“রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দঃ” পাঠ করে যে প্রশ্নটি আমার মাথায় এসেছিল, তা হলোঃ তাঁর গানের বিষয়কে অক্ষুন্ন রেখে আঙ্গিক ভেঙ্গে একটা নতুন কাঠামো, যা এযুগের সাথে খাঁপ খাবে, এরকম একটা প্রয়াস। মূল লেখাটা যদি রাহাজানি (!) আর চৌর্যবৃত্তির (!) মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো, তা হলে হয়তো এ প্রশ্নটির উদয় হতো না।
তাঁর গানগুলোকে একটুখানি অন্যভাবে গাওয়ার আবদার তাঁর জীবদ্দশাতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। দিলীপ কুমার রায়ের এই অন্যভাবে গাওয়া গান শুনে খুব বিনীতভাবে বলেছিলেন, গেয়েছো ভাল, তবুও গেয়ো না, (উৎসঃ স্মৃতি থেকে, কার লেখায় পড়েছিলাম কোনভাবেই মনে করতে পারছি না,) খুব সম্ভব এরকমও বলেছিলেন, তোমাকে গাইতে দিলে, অগায়কের পাল্লায় পড়ে গানের বাণী হারিয়ে যাবে। ( ভুল হলে ক্ষমার্হ)ভবিষ্যতের ছবিটা দেখতে পেয়েছিলেন বলেই হয়তো বলতে পেরেছিলেন, ‘গেয়ো না।’
তো ফরিদ আহমেদ এবং অভিজিৎ রায় এর লেখা পড়ে এরকম কি আমাদের মনে হ’তে পারে না, যে ব্যক্তি ‘কবিগুরু’ বা ‘গুরুদেব’, সে যদি রাহাজানি বা গানের সুর চুরি করতে পারেন, আমরা কেন তার গানকে যেমন খুশি তেমন করে গাইতে পারবো না?
এখন কেউ যদি তাঁর বিনীত অনুরোধের তোয়াক্কা না করে যেমন খুশি তেমন করে গেয়ে যায়, আর কেউ যদি প্রতিবাদ করে
সে-ও কি তবে পূজারীবৃন্দের দলভুক্ত হয়ে যায়?
মূল লেখাটাকে ঘিরে, কোন কোন মন্তব্যের প্রেক্ষিতেঃ পক্ষে বললে পূজারী, বিপক্ষে বললে বিদ্বেষী – তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যারা আলোচনায়, তাদের এভাবে বিভাজিত করলে পক্ষ বিপক্ষের সংখ্যা বাড়বে, বোঝার জায়গাটা তৈরি হবে না।
আমাকে ডুবিয়েছে তাঁর গান।
ঘরে কেউ নেই। বাইরে বৃষ্টি। কলিম শরাফী-র কন্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীতের স্রোতে আমি তখন ভেসে চলেছি। আমার রুম মেট কখন যে ঘরে এলো টের পাইনি। সে আমার গান শোনার ভঙ্গি ( আমি তখন মেঝেয়, নামাজির সেজদায় যাওয়া আসনের মত) দেখে বলে উঠলো, ‘আপনি কি গান শুনতে শুনতে নামাজ পড়তেছেন?’
@স্বপন মাঝি, রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর জীবদ্দশাতেই বাইজীরাও গেয়ে রেকর্ড করতেন। সেগুলোর সঙ্গে মুল সুরের অনেক তফাৎ আছে। আমি এই গানগুলো আপলোড করে শোনাবো।
রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে মুক্তবুদ্ধি নিয়ে লেখা দরকার। সুপ্ত ফণা নিয়ে লিখলে মানুষ ধরে ফেলে। তাতে রবীন্দ্রনাথের কিছুই হয়না। তিনি মহামানব নন। তিনি বহুমুখী কর্মী মানুষ। তিনি প্রতিদিনই নিজেকে বদলেছেন। পুরনো ভাবনা থেকে নতুন ভাবনায় চলে গেছেন। এটা মনে রাখা দরকার।
সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচ্ছি–আমার চণ্ডাল ভাষার জন্য। চণ্ডাল বংশের উত্তরাধিকার হিসেবে এই ভাষাটি আমার সঙ্গে এসেছে। অভিজিৎ রায় এবং ফরিদ আহমেদ, চণ্ডালের এই অপরাধ ক্ষমা করবেন। আপনারা বিজ্ঞানলেখক। আর কোনো তথ্য যাচাই না করেই হুটহাট করে গ্রপাগাণ্ডামূলক লেখা লিখবেন না আশা করছি। আর আমি ছাতামাতা লেখক। কেউকেটা লেখক বা ব্যক্তি হওয়ার ইচ্ছেও নাই।
ভবিষ্যতে আমি আর এই শিথিল মুক্তমনাতে লিখব না। তবে কখনো কোনো বিভেদমুলক প্রপাগাণ্ডাজাতীয় নোটের খবর পেলে এসে পড়ব। দরোজাটা খোলা রাখবেন।
যারা মুক্তমনা হিসাবে আছেন–তাদের কাছে অনুরোধ করছি–মুক্তমনাকে সত্যি সত্যি একটি মুক্তবুদ্ধির প্লাটফর্ম হিসাবে গড়ে তুলুন। সব ধরনের ব্যক্তিবাদমুক্ত করুন। ব্যক্তিবাদ মুক্তবুদ্ধিকে নাশ করে। আমাদের সত্যি সত্যি অনেক মুক্তবুদ্ধির প্লাটফর্ম দরকার। আমীন।
@কুলদা রায়,
জ্বী। প্রপাগান্ডা জাতীয় কিছু হলে আমাদের বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে আনতে হয়তো। মুক্তমনার লেখক-পাঠকরাতো লজেন্স খায়, তাদের কি আর প্রপাগান্ডার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আছে। আমাদের ত্রাণকর্তা হবার ভারটি স্বেচ্ছায় নেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না।
আপনি অনুরোধ করার পর এইমাত্র আমার হুঁশ হলো, আরে তাইতো। ইনি না বললেতো সারা জীবন আমাদের মুক্তবুদ্ধি চর্চার কথা মনেই থাকতো না।
@কুলদা রায়,
আপনার ভূমিকা বলিষ্ঠ। আপনার দেয়া যুক্তিটুকু কতটুকি যুক্তি আর কতটুকু কুযুক্তি-কটূক্তি সেটাতে যাচ্ছি না। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দেখছি আপনি হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটছেন, আর একে একে লেখার সব দোষগুলো (আপনার মতে) বের করে আনছেন। কিন্তু শেষ দিকে এসে এই ন্যাকামিটা না করলে হতো না?
খুব ভালো করেই জানেন এতে মুক্তমনার কিছু যাবে আসবে না। কিন্তু, আমরা পাঠকরা বঞ্চিত হবো। আপনার লেখা ভালো, আশা করি মুক্তমনায় নিয়মিতই
লিখবেন।
মাঝে মাঝে কিছু মুক্তচিন্তার মানুষদের যে কি হয় বুঝি না, একজনতো বলেই দিলো ‘অমুক আর তমুক এই লেখার আগে যেটা যেটা জানতো না সেটা সেটা হচ্ছে–
১
১.১
১.২
২
২.১
২.২
মনে হচ্ছে এই মাত্র এটার উপর পিএইচডি করে শেষ করেছেন। সীমা অতিক্রম করারতো একটা সীমা থাকা দরকার।
@মইনুল রাজু, ১. আমার মন্তব্য খেয়াল করে দেখুন। আমি বলেছি–আমি মুক্তমনায় লিখব না। কেন লিখব না তার কারণও বলেছি। বলেছি–যদি কখনো মুক্তমনার কোনো লেখা বিষয়ে আমার কাছে প্রপাগাণ্ডামূলক বিভেদমূলক মনে হয় তবে সেক্ষেত্রে আমার মতামত জানাতে দ্বিধা করব না। –অন্যরকম মানে করবেন না।
২. মুক্তবুদ্ধির চর্চার দাবী করলেই তো হয়না। সেটা সত্যি সত্যি চর্চা করতে হয়। আর চর্চা যে কেউ করতে পারেন। তার জন্য মুক্তমনার প্লাটফর্মেই আসতে হবে–সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। মুক্তমনাও একটি প্রশংসনীয় ব্লগ। এখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। নানাজনে নানামত প্রকাম করেন। মুশকিল হল–আমরা পীরতন্ত্রের বিরোধিতা করলেও আমরা পীর গড়তেই ভালবাসি। ফাঁকে পীর হয়ে ক্ষীর ক্ষেতে বাসনা করি। কী অদ্ভুদ স্ববিরোধিতা আমাদের!
৩. আপনারা নিজেরাই প্রপাগাণ্ডার যুক্তিগ্রাহ্য প্রতিবাদ করবেন। নিজের পায়ে হাঁটবেন। নিজের মনে ভাববেন। নিজের মুখে কথা বলবেন। সেটাই তো দরকার। নইলে মুক্তমনা বা মুক্তবুদ্ধি শব্দের অভিধা আসে কেন?
৪. কিছু কিছু খাটুনিতো করতেই হয়। না খাটলেতো আমারকেও বিশ্বাস করে বসে থাকত হত– রবীন্দ্রনাথ লোকটা খুব খারাপ। শুধু খারাপই নয়–বুড়ো সারা জীবন ধরে চুরি ছ্যাচড়ামি দামড়ানি রাহাজানি করেই দিন কাটিয়েছেন।
৫. আমার লেখা আপনার পছন্দ হয় বলেছেন। আমি কোনো লেখক পদের মধ্যেই পড়ি না। যা খুশি তাই লিখি। একে আমি ছাতামাতা লেখা বলি। এর কোনো মূল্য নেই। কোনোদিন মূল্য হবেও না। মূল্যবান করার ইচ্ছেও নেই। একে ভাল বলারও দরকার নেই।
আমি বিশ্বাস করি আপনারা অনেক অনেক ভাল লিখবেন। সে লেখার জন্য আমি অপেক্ষা করব। সংগ্রহ করে পড়ব। অন্যকে পড়াব। পড়ে বলব, বাহ, এইতো আমাদের নিজেদের লেখক এসে গেছেন। নিজেদের কথা নিজের করে বলছেন। এই বহুকে নিজের মত করে নেওয়া–আর নিজেকে বহু করে দেওয়ার মধ্যে কোনো বিষাদ নেই। আনন্দ আছে। আনন্দই প্রাণের উৎস। এই আনন্দ আপনাদের স্পর্শ্ব করুক।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@স্বপন মাঝি,কবি সুফিয়া কামাল এর একটা কথা মনে পড়ে…রবীন্দ্র সংগীত আমার কাছে ইবাদতের মত। আর এই নিয়ে তখন চারদিকে ধুন্ধুমার কাণ্ড ! বড় হয়ে বুঝেছিলাম কি অসাধারন কি উপলব্ধি।
অপার্থিব,
মুক্ত-মন নিয়ে লেখা। প্রথমেই কুলদা রায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় মন্তব্যের উত্তর না দিয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। অহেতুক বিতর্কে না জড়ানোর জন্য পাঠক হিসেবে স্বস্তি পাচ্ছি।
যাহোক, আজীবন রবীন্দ্র অনুরাগী, তবে তার সম্পর্কিত গবেষণা বই পড়লেও এ নিয়ে এত বিকল্প ভাবনা ছিল না। লেখাগুলো চিন্তা জাগানিয়া। অনেকের কাছ থেকে নিশ্চয়ই আরও লেখা পাব রবীন্দ্র নাথকে নিয়ে।
@গীতা দাস,
চমৎকার মন্তব্য গীতাদি। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিভিন্ন লেখায় এত দিক থেকে এতজন আলোচনা করছেন যে ট্র্যাক রাখা মশকিল। আপনি, লীনা, সাইফুল, স্বাধীন, ব্রাইটস্মাইল সহ অন্যান্যরা যে নির্মোহ এবং নিরপেক্ষতার ছাপ দেখেছেন প্রথম দুটি মন্তব্যকারীর মন্তব্যে তা দৃষ্টিকটুভাবে অনুপস্থিত। অপার্থিবের লেখাটিতে আমার এবং ফরিদ আহমেদের লেখারও যথেষ্ট সমালোচনা আছে। যে অংশগুলোর সমালোচনা অপার্থিব করেছেন, সেগুলোর সাথে অনেকাংশেই একমত হতে হবে। কিন্তু আমাদের সমালোচনার পাশাপাশি অন্যপক্ষেরও কিছু যৌক্তিক সমালোচনা হাজির করেছেন অপার্থিব। মুশকিলটা হয়েছে সেখানেই। তারা পন করেছেন যেভাবেই হোক রবীন্দ্রনাথকে নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের মহানাবব বানিয়ে রাখতে হবে, বিন্দুমাত্র সমালোচনা হবে অসহনীয়। তাই অপার্থিবের লেখাটা হয়ে গেছে তার চোখে ‘অভিজিৎ ফরিদ আহমেদের কার্বন কপি’। এটা তো ঠিক নয়। আমাদের এ লেখাগুলোর আগে যে এত বিকল্প ভাবনা ছিল না, এবং লেখাগুলো যে আসলে চিন্তা জাগানিয়া, এই বিষয়টি আপনি অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে ধন্যবাদ!
আগাগোড়া যৌক্তিক একটা লেখা। প্রিয়তে নিলাম
চমৎকার বিশ্লেষন। টিপিকাল অপার্থিব লেখা। (Y)
এখানে একটা লেখা আর এখানে একটা লেখা।
এই দুটো লেখা তুলনা করে পাঠকদের মতামত দিন। এখান থেকেই এই বিতর্কের কিছুটা পরিষ্কার হতে পারে।
@সাইফুল ইসলাম,
কিছুদিন আগে সচলায়তন এ একটা পোস্ট ছিল, একই বিষয়ে। আপনার লেখার সাথে অনেক (hhহুবহু) মিল। সুতরাং ওটার লিঙ্কটা দিলে ভাল করতেন।
@ওয়াহিদ আদনান,
আমার লেখাটার উদ্দেশ্য আপনি ধরতে পেরেছেন তো? নাহলে কিন্তু ঘটনা প্যাচ খাবে। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
হা হা হা। এই রকম একটা চরম জিনিস আমার চোখ এড়ায় গেছিলো ক্যামনে? বেচারা বিপ্লব! চুপচাপ হজম করতে হইছে এত্ত বড় একখান রাহাজানি। মডারেটরের কাছে নালিশ জানায় নাই। অবশ্য হজম না কইরা উপায়ও বা কী? নইলে যে আবার ঠাকুর দেবতা ফাইসা যায়।
আমিও ঠিক করছি কবিতা লিখবো এখন থেকে, দুর্ধর্ষ বুদ্ধিমান মহান কবি সাইফুল ইসলামের কবিতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে।
@ফরিদ ভাই,
শুধু বিপ্লব দার লেখাই তো মনে হয় কয়েক বছর লেখা যাইবো কী কন? অবশ্যই আমার নিজস্ব ভাষায়। :))
তারপরে আছে, কুলদা রায়ের অনেক লেখা, কবি আফরোজার কবিতা তো বেশ ভালো। ঐখান থিকাও আমি চিন্তা করছি এখন নিয়মিত অনুপ্রানিত হমু। (H)
সবই আল্লার ইচ্ছা। আমীন। :))
@সাইফুল ইসলাম, 😀
@সাইফুল ইসলাম,
খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। অনুপ্রাণিত সৃষ্টি মৌলিক সৃষ্টির চেয়েও অনেক বেশি মানসম্মত, হৃদয়গ্রাহী এবং স্থায়ী হয়ে থাকে। এর প্রমাণ আমাদের জাতীয় সংগীত। বিবিসির শ্রোতা জরিপে এটা সর্বকালের সেরা বাংলা গান হয়েছে। শুধু আমরা নই বিদেশিরাও এর স্বীকৃতি দিয়েছে। আলেক্স মার্শাল নামের এক সাংবাদিক অলিম্পিকে বাজানো সব দেশের জাতীয় সংগীতের একটা র্যাংকিং করেছিলেন। সেখানে আমার সোনার বাংলা পৃথিবীর তাবৎ জাতীয় সংগীতকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। আমাদের উপরে আছে শুধু উরুগুয়ে।
তবে একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন এই অনুপ্রেরণার সময়। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে ভুলবেন না যেন। না হলে চুরির দায়ে আটকে যেতে পারেন। আর এই কৃতজ্ঞতা স্বীকারের সময় স্পেসিফিক না হওয়াই বেশি ভালো। মনে করুন, আপনি জীবনানন্দ দাশের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কৃতজ্ঞতা স্বীকারের সময় বলবেন যে প্রেম ও প্রকৃতিবাদী কবিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এককভাবে জীবনানন্দের কাছে ঋণ স্বীকারের চেয়ে সমগ্র কবিকূলের কাছে ঋণ স্বীকারই উত্তম। এতে করে আপনার নিজের গভীরতাও বৃদ্ধি পাবে। আমার কথা নয়, বিপ্লবই এসব কথা বলে গেছে।
@ফরিদ ভাই,
টেকনিকটা ঠিক বুইঝ্যা উঠতে পারি নাই। তবে এই কাজের জইন্যে কিন্তু দোষটা আফনের আর অভিদার। আফনেরা এত দিন বইয়া থাইক্যা এহন দিছেন কবিন্দ্রনাথের অনুপ্রানিত হইবার ঘটনা। তো আমার লাহান সুবোধ বালকরা জানব কেমনে, কবি এত অনুপ্রানিত হইত? আর একজনের থিকা অনুপ্রানিত হইয়া স্বীকৃতি জানাইত তাবত কবিকূল বা বাউলগোরে?
তয় এহন তে আর মিস নাই। একজনের অর্থনৈতিক প্রবন্ধে অনুপ্রানিত হইবার ঘটনায় সমস্ত অর্থনীতিবীদগোরেই কৃতজ্ঞতা জানাইয়া দিমু। বাস, আর কেউ কোন অভিযোগ জানাইতে পারব না। আহা সাধু সাধু। আমি রবি কাকুরে ভালো পাই। হেরেই এহনতে ফলো করমু।
আর আফনেরে ধইন্যা এমন চমেৎকার পরমর্শের জইন্যে। আফনেরতেও কবে যে অনুপ্রানিত অইয়া যাই কে জানে!!!!! :)) :))
@সাইফুল ইসলাম,
অসুবিধা নাই। সেই অনুপ্রাণিত হওয়া দেইখা আমি আবার অনুপ্রাণিত হইয়া যামু। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
কবি আফরোজার কবিতা তো বেশ ভালো। 😛
ভাইজান, বড্ড শরম পাইলাম। আমি আবার কবে থেইকা কবি হইলাম :-O
ভালো বিশ্লেষন। (Y)
ভাল লাগল (Y)
কৃষ্ণা দত্ত কিন্তু।
রবীন্দ্রনাথ আমার এত প্রিয়, অনেক সময় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা হয়। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে, আমি জানি যাই লিখি না কেন– শিব গড়তে বাঁদর তৈরী হবে। কারন তার জীবন ও লেখা নিয়ে এত লোকে এত কিছু ভেবেছে ও গবেষণা করেছে-ওপর ওপর কিছু করা এখানে সম্ভব না। সেক্ষেত্রে লিখে নিজের সন্মানহানি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
অভিজিত এবং ফরিদ, এই লেখাটি লেখার আগে যা যা জানত না
১) রবীন্দ্রনাথ নিজেকে কখনোই আমার সোনার বাংলা গানের সুরকার বলে দাবী করেন নি
২) তিনি এই গানের সুর বাউল গান থেকে নেওয়া সেটাও স্পষ্ট জানিয়েছেন।
৩) বাউল পত্রিকাতে এই গানটি ছাপিয়েছেন
৪) গগন হরকরার সুর মৌলিক কিছু না-সবটাই বাউল টিউন
৫) সেকালে এর ওর গানের সুরে নিজের গান বাঁধতেন-এবং তাকে শোনাতেন ও-গান তখনও পণ্য হয় নি- মনের আনন্দে লোকে গান গাইত -কুলাদা রায় উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন
৬) গগন হরকরাকে রবীন্দ্রনাথ অন্য সূত্রে লিখিত স্বীকৃতি দিয়েছেন
৭) চরের মুসলমান প্রজারা কবির বাধ্যই ছিল -তারা মোটেও বিরোধিতা করে নি-কবির সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল হৃদয়ের।
৮) কাঙাল হরিনাথের ওপর আক্রোশ ছিল দেবেন্দ্রনাথের-ররীন্দ্রনাথ তাকে সন্মানই দিয়েছেন বরং।
৯) শিলাইদহ থেকে শান্তিনিকেতনে তার অজস্র কর্মকান্ডে, প্রজাপালক , প্রজাদরদি রবীন্দ্রনাথকেই পাওয়া যায়। উল্টো দিকে একটি ও নথি হাজির করতে পারেন নি কেও-যা হাজির করা হয়েছে সবটাই জালি মাল বা ওই কাঙাল হরিনাথের মতন উদোর পিন্ডী বুদোর ঘারে চাপানো।
১০) প্রমথনাথ প্রথম বারের মতন বাংলায় প্রবন্ধ লিখছিলেন
১১) রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য অনুযায়ী বিশ্বপরিচয়ের প্রতিটা শব্দ, ভাষা এবং থিম তার লেখা। প্রমথনাথ কিছু একটা লিখেছিলেন বটে-কিন্ত রবীন্দ্রনাথ যখন দেখলেন ভাষা খুব কাঁচা-তিনি আদ্যপান্ত নিজেই লিখলেন।
স্বীকার করে নেওয়া যাক-আমিও বিতর্কের মাধ্যমেই এর অনেক কিছু শিখলাম।কারন সত্যিই এর অনেক কিছু জানতাম না। ঠিক এই কারনেই রবীন্দ্রনাথের ওপর লিখতে সাহস হয় না। কারন সেটা করতে গেলে, আরো অনেক অনেক গবেষণা করতে হবে বা জানতে হবে।
কিন্ত যারা রবীন্দ্রবধ কাব্যের লেখক, তারা যদি এই ১-১১ গুরুত্বপূর্ন ব্যপারগুলি না জেনে, জালে রবীন্দ্রনাথ উঠিয়াছে এমন দাবী করে বেড়ান-খুব হাস্যকর লাগে না?
আর কিছু কিছু যুক্তিবাদি প্রশ্ন তুলেছেন, রবীন্দ্রনাথকে কেন সমালোচনা করা যাবে না?
আরে এখানে কি কেও লিখেছে, রবীন্দ্রবিরোধিতা চলবে না??/চলুক-কিন্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে চলুক। রটনা বা শোনা কথার ভিত্তি তে না। লেখক দ্বয় ভাবলেন, দুটো বই পড়লেই জালে রবীন্দ্রনাথ উঠবে 😛
পাঠকাঠির ছিপ দিয়ে কি আর মাঝ নদীতে রুই কাতলা ধরা যায়? বরং সেক্ষেত্রে ছিপটিই ভাঙে-এক্ষেত্রে ঠিক তাই হয়েছে।
আমি ১৯ বছর বয়সে গ্রীষ্মের ছুটীতে ঠিক করলাম শুধু রবীন্দ্রনাথ পড়ব। আই আই টির সাহিত্য লাইব্রেরীতে প্রচুর বই ছিল রবীন্দ্রনাথের ওপর-তারপর একমাস বাধে বুঝলাম, এটা বহুত চাপ-সারা জীবন পড়েও শেষ হবে না! তারপর থেকে আমি সাধারনত রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কোন গবেষণা ধর্মী লেখার চেষ্টা থেকে বিরত থাকি-কারন আমার সীমিত জ্ঞানে তা অসম্ভব। তার জন্যে আবার আরেকটা পি এইচ ডি করতে হবে :-X
@বিপ্লব পাল, (Y) (Y) (Y)
@কুলদা রায়, (Y) (F)
@আফরোজা আলম, অচিরেই নেটে এই রবীন্দ্রবিদ্বেষ নিয়ে নোট দেব।
@বিপ্লব পাল,
ধরেন প্রমথনাথ না, কালিদাস লিখছিল বইটা। তাহলে কি চুরি হত? আমি বুঝিনা বারবার রবীন্দ্রনাথের motivation বা প্রমথনাথের যোগ্যতার প্রসঙ্গ উঠছে কেন! চুরি যদি না হয়ে থাকে কালিদাস হলেও চুরি না, চুরি যদি হয় তাহলে বিবাহ পূর্ববর্তী কালিদাস হলেও চুরি।
@রৌরব,
প্রমথনাথের পান্ডুলিপিটি না পেলে, উনি কি ওখান থেকে নিয়েছিলেন, সেটা কি কেও জানে?
যেহেতু জানে না, সেহেতু এই সব প্রশ্ন করা রটনা ব্যতীত আর কি?
@বিপ্লব পাল,
কথা ত সেখানেই। গুতোগুতি হচ্ছে অন্যত্র। লেখাটার বিষয়বস্তুর চেয়ে লেখার ঢংটির উপর সমালোচনা করা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ গগন হরকরা এবং প্রমথনাথকে তাঁদের প্রাপ্য ক্রেডিট না দিয়ে থাকলে রবীন্দ্রনাথের হীনমন্যতার জন্য আমার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করি। কিন্তু তাঁকে চোর সাব্যস্ত করার মধ্যে আত্মপ্রসাদ অনুভব করি না।
পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রযন্ত্র মদদে বিশেষ গুষ্টি রবীন্দ্র বিরুধিতা করত। রবীন্দ্রনাথ কেন এত জনপ্রিয় থাকবেন? যারা রবীন্দ্রনাথের কবিতা-গানে জীবনকে উপলব্ধি করে, তাদেরকে এক ঘরে করার অপচেষ্টায় “রবীন্দ্র পূজারী” শব্দটি সৃষ্টি করা হয়েছে। রবীন্দ্রপূজারী শব্দটি ব্যবহারে আমি অনেক বি্দগদ্ধ(!) জনকে আত্মপ্রসাদ পেতে দেখেছি। রবীন্দ্র পূজারী শব্দটি পাকিস্তান আমলে প্রচলিত ছিল না। তখন শুধু রবীন্দ্রনাথই খারাপ লোক ছিলেন। এখন রবীন্দ্রনাথের কবিতা-গানকে যারা প্রশংসা করে, আত্মপ্রসাদীরা তাদেরকে খারাপ ভাবে।
প্রমানিত হল রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথকে তাঁর খাটা-খাটুনিকে মূল্য দেননি। তার জন্য তাঁর প্রতি আমার কুন্ঠা প্রকাশ করা ছাড়া আমার আর কোন খেদ নেই।
@নৃপেন্দ্র সরকার, প্রমথনাথকে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ পৃথ্বিপরিচয় নামে বইটি লিখিয়েছেন। সেটা প্রকাশও করেছেন। নাম দুটো দেখুন–বিশ্বপরিচয় এর পৃথ্বিপরিচয়। ভাবগতভাবে কি কোনো পার্থক্য আছে? বইদুটি মিলিয়ে পড়ে দেখতে পারেন। দেখবেন, প্রথমনাথ যে পাণ্ডুলিপি করেছিলেন–যেটাকে রবীন্দ্রনাথ তার পরিকল্পনার সঙ্গে ষোলাআনা মিল না খুজে পেয়ে নিজের দর্শন ও ভাষায় নতুন করে বিশ্বপরিচয় লিখেছেন, এই দুটি বইয়ের অমিল বিস্তর। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয় কোনো বিজ্ঞানীর লেখা নয়। একজন সাহিত্যিক-দার্শনিকের রচনা। আর প্রমথনাথের পাণ্ডুলিপিটি–পৃথ্বিপরিচয় গ্রন্থটি একজন বিজ্ঞানশিক্ষকের রচনা। বইটিতে বিজ্ঞানের তথ্য আছে। ব্যক্তিগত দার্শনিকতা বা সাহিত্যিক উৎকর্ষতা নাই। পার্থক্য এখানে।
@কুলদা রায়,
তোমার বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে শুধু শুধুই লংকাকান্ড। আর আমাকে আফরোজা আলমকেই কোট করতে হয়
@নৃপেন্দ্র সরকার, একটি শব্দ বাদ পড়েছিল। সেটা ঠিক করে দিলাম–
আর প্রমথনাথের পাণ্ডুলিপিটি–পৃথ্বিপরিচয় গ্রন্থটি একজন বিজ্ঞানশিক্ষকের রচনা। বইটিতে বিজ্ঞানের তথ্য আছে। ব্যক্তিগত দার্শনিকতা বা সাহিত্যিক উৎকর্ষতা নাই। পার্থক্য এখানে।
@বিপ্লব পাল,
অনেক ধন্যবাদ বিপ্লব-দা। আপনি এখানে সমস্ত যুক্তিগুলো একসাথে হাজির করেছেন, যা এড়িয়ে যাওয়া বা খন্ডন করা আমার মতে প্রায় অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সাময়িকভাবে হলেও ‘কনফিউজড’ হওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা আপনার তুলে ধরা ১১টা পয়েন্ট অনেকখানিই দূর করবে বলে আমার বিশ্বাস।
@বিপ্লব পাল,
একমত এবং সেলিনা হোসেনের পূর্ণ ছবির মগ্নতায় এ বিষয়ে তথ্য রয়েছে।
@গীতা দাস, কাঙাল হরিনাথ বিষয়ে দুটো বই পড়ে দেখতে পারেন–
১. কাঙাল হরিনাথ : গ্রামীণ মণীষার প্রতিকৃতি
২. হরিনাথ মজুমদার ও বাঙালি সমাজ
এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনের মানুষটি বইও পড়ে দেখতে পারেন। আরও বিস্তারিত আপডেটেড তথ্য পাবেন রবিজীবনী–প্রশান্তপাল (৯ খণ্ড) বইটিতে।
প্রশান্ত পালের বইটি একটি আকর গ্রন্থ। এখানে সন তারিখ ধরে ধরে রবীন্দ্রনাথের জীবনী দেওয়া আছে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের আত্মিয় স্বজন বইটিও গুরুত্বপূর্ণ।
@কুলদা রায়,
রেফারেন্স বইয়ের নাম দিয়ে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আর মুক্ত-মনাকে বর্জন না করে সঙ্গে থাকুন।
@গীতা দাস,
সেলিনা হোসেনের পূর্ণ ছবির মগ্নতা, সুনীলের মনের মানুষ এবং প্রথম আলো, কিংবা কালিদাসকে নিয়ে শরদিন্দুর লেখা কুমারসম্ভবের কবি, এগুলো সবই উপন্যাস। এগুলোকে তথ্য হিসাবে না ধরাটাই কাম্য দিদি। কারণ এগুলোতে ঐতিহাসিক তথ্যের সাথে সাথে লেখকের কল্পনাও জড়িয়ে রয়েছে। এরকম ভুল এই মুক্তমনাতেই একজন করেছিলেন। হুমায়ুন আহমেদের বাদশাহ নামদার পড়ে সেই তথ্যকেই হুমায়ুনের বিষয়ে সঠিক তথ্য হিসাবে ভেবে নিয়েছিলেন তিনি।
@বিপ্লব পাল,
তোমার বক্তব্য বরাবরই ভাল লাগে। যৌক্তিক আলোচনায় যাওয়ার অবকাশ থাকে। কিন্তু তুমি যদি শুরুই কর এই বলে –
তাহলে বিতর্ক অর্থহীন জায়গায় পৌছিয়ে যায়। আমরাও বলতে পারি আমাদের লেখাটি প্রকাশের আগে আমরা যে তথ্যগুলো দিয়েছি তা তুমি সহ অনেকের কাছেই অজানা ছিল। গগন হরকরা এবং প্রমথনাথ মোটামুটি অপরিচিতই ছিলো এখানে। প্রথম দিকে তোমাদের বিতর্ক দেখেই সেটা বোঝা গেছে- মূল অভিযোগগুলো বাদ দিয়ে সাইড টপিকেই আলোচনা চলছিলো, বিশেষতঃ প্রজাপীড়ন প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কিভাবে কৃষিব্যাঙ্ক করেছিলেন, কীভাবে নোবেলের টাকা প্রজাদের কল্যাণে ব্যয় করে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন, সেগুলো নিয়েই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আলোচনা চলছিল। পরে আরো অনেক তথ্য এসেছে, তুমি আমি সবাই উপকৃত হয়েছে। আর তুমি যে পয়েন্টগুলো বলেছ তার অনেকগুলোই আমরা জানতাম; যেমন – প্রমথনাথের যে ওটা প্রথম বই ছিলো থেকে শুরু করে অন্য অনেক কিছুই। তুমি হয়তো ধরেই নিয়েছ আমরা জানতাম না। আর কাঙাল হরিনাথের ওপর আক্রোশ ছিল দেবেন্দ্রনাথের-ররীন্দ্রনাথ তাকে সন্মানই দিয়েছেন বরং- এ ব্যাপারে অনেক পয়েন্টই আমরা হাজির করতে পারি যা বক্তব্যের বিপরীতে যেতে পারে। কাঙাল হরিনাথের প্রতি রবীন্দ্রনাথের এতই যদি দরদ থাকত তবে হরিনাথের সাথে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়র সম্পর্ক থাকার কারণে নাটোরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ রায়কে বলে অর্থ সাহায্য প্রত্যাহার করিয়ে নিতেন না। আর বাউল টিউনিং নিয়ে আমাদের অবস্থান যে আমরা বহুবার বলেছি – সেটা জানা না জানার প্রশ্ন নয়, সেটা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত স্ট্যাণ্ড। যাহোক কোনটা আমরা জানতাম আর কোনটা জানতাম না এ বিষয়ে অভিমত কোন সার্বজনীন মতৈক্যে পৌঁছুবে না, কারণ, আমরাও তোমাদের সম্বন্ধে একই ধরণের অভিযোগ করতে পারি। তুমিও মত দিয়েছ যে এই বিতর্ক থেকে তুমিও অনেক কিছু শিখেছ, যেমনি শিখেছি আমরাও। এই ধারাটিকেই বহমান রাখতে হবে গুতাগুতি এড়িয়ে।
তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে চলুক বলে তো খালাস। কিন্তু অতীতে বহুবার দেখা গেছে রটনা আর শোনা কথার ভিত্তিতে বহুক্ষেত্রেই তুমি ই অগ্রগামী ছিলে। হুমায়ুন আজাদের কোন বই না পড়েই তার সম্বন্ধে মত দিতে তোমার বাঁধে নি, অতীতেও। আগেও করেছ এটা, এখনো করেছ দেখলাম। এবারেও তুমি বলে দিয়েছি দেখেছি নেট থেকে হুমায়ুন আজাদের রবীন্দ্রনাথের নারীদৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যে লেখা পড়েছ, তা নাকি পুরোটাই ফালতু। অথচ ‘নারী’ বইটিই তুমি পড়নি। শুধু হুমায়ুন আজাদ নয়, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশী লেখকদের সাহিত্য নিয়েই যে তোমার পড়াশোনা নেই, সেটা বহুবারই আলোচনায় প্রকাশ পেয়েছে। অথচ হুমায়ুন আজাদ নিজ থেকে বানিয়ে কিছু লেখেননি, রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন প্রবন্ধ এবং রচনাসমগ্র থেকেই উদ্ধৃতি দিয়ে দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। তার বিশ্লেষণের সাথে দ্বিমত করা যেতে পারে, কিন্তু ‘পুরোটাই ফালতু’ বলে এক লাইনে উত্তর দেয়া কোন কাজের কথা নয়। হুমায়ুন আজাদের রবীন্দ্র সমালোচনার প্রেক্ষাপট কেবল বাংলাদেশেই নয়, এমনকি ভারতে তোমাদের আনন্দবাজার পত্রিকাতেও নারীদের কন্ঠে প্রতিফলিত হয়েছে একাধিকবার। যেমন, মল্লিকা সেনগুপ্তের ‘রেখেছ রমনী করে’ লেখাটির উল্লেখ করা যেতে পারে, যেটি আনন্দবাজার পত্রিকায় গুরুত্বের সাথেই বছর কয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছিলো। আমরা আমাদের বক্তব্য তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই দিয়েছি বলে মনে করি, উপযুক্ত রেফারেন্স উল্লেখ করেই। কেবল দুটো বই থেকে দেয়া হয়নি, রবীন্দ্র রচনার পাশাপাশি বহু গবেষকদের বইয়েরই উল্লেখ আছে লেখাটায়, সেটা তুমিও জান।
মুক্তমনায় কিন্তু এবারই প্রথম নয়, এর আগেও রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে প্রাণবন্ত তর্ক হয়েছিলো। এ থেকে তুমি আমি দুজনেই উপকৃত হয়েছিলাম, এবং তুমিও সেতা জান। এবারের লেখা এবং বিতর্ক থেকেও তুমি বলেছ যে তুমিও অনেক কিছু জানলে। তুমি কি বলতে পারবে, মুক্তমনা ছাড়া আর কোন ব্লগে এভাবে এত ডিটেইল লেভেলে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এভাবে আলোচনা হয়েছে, বা করা সম্ভব? তো যে প্ল্যাটফর্মটিতে তুমি দীর্ঘদিন ধরে আছ, এবং জান যে এই প্ল্যাটফর্মে আলোচনার কারণেই এবং তর্কবিতর্ক থেকেই আমাদের বৌদ্ধিক অগ্রগতি এসেছে, তো সেখানে তোমার মতের সাথে কোন কিছু না মিললেই ‘, দুটো বই পড়লেই জালে রবীন্দ্রনাথ উঠবে’, কিংবা ‘পাঠকাঠির ছিপ দিয়ে কি আর মাঝ নদীতে রুই কাতলা ধরা যায়? বরং সেক্ষেত্রে ছিপটিই ভাঙে’, গোয়েবলসিয় প্রচারণা’ এগুলো উপমা বড্ড খেলো। এগুলো দিয়ে হয়তো কিছু লোকের কাছে বাহবা কুড়াতে পার তুমি, কিন্তু সামগ্রিক দির্ষ্টিতে অর্জন শূন্যই থেকে যায়। আশা করব, তুমি এ ধরণের বিতর্কের গুরুত্বটুকু অন্ততঃ বুঝবে। আমাদের মধ্যে পারষ্পরিক মতাদর্শগত ভিন্নতা থাকলেও আশা করি বুঝবে যে, আমরা পারষ্পরিক বিতর্কের মাধ্যমে যে জায়গায় পৌঁছুতে চাচ্ছি, সেটি নিতান্ত মূল্যহীন নয়।
@অভিজিৎ,
ফেসবুকে কুলাদা রায়ের পোষ্টের জবাবে আমি ত লিখেই ছিলাম, সংশয় প্রকাশ করে এবং রবীন্দ্রবিরোধিতা করে ঠিক কাজই করেছে। আমার মনে হয় না সেখানে আমার আপত্তি আছে। আমার আপত্তি এই ধরনের কাজ করতে গেলে যে পরিমান পরিশ্রম করতে হয় সেটা তোমরা কর নি।
সুতরাং এই ব্যাপারে দ্বিমতের উৎপত্তিটা জানা উচিত।
আর লিখতে গেলে ভাষার বিস্তারের জন্যে উপমা সৃষ্টি করতেই হয়- এখন তোমরা ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বধ কাব্য লিখবে-সেখানে রবীন্দ্রনাথকে রাহাজানি চুরি ইত্যাদি গুরুতর শব্দে বিঁধবে, আর সেই ভাষাটা কেও যদি তোমাদের দিকে ঘুরিয়ে দেয়, তাহলে লাগিতেছে বলিয়া আওয়াজ করিবে-এটা কি ফেয়ার প্লে হইল :lotpot:
তোমরা রবীন্দ্রনাথের দিকে ডিউজ বলে বাউন্সার দিচ্ছ-এদিকে দাবী করছ তোমাদের ব্যাটিং এর সময় টেনিস বলে বল করতে হবে। এটা জাতীয় পৌরুষের লক্কণ? :rotfl:
@বিপ্লব পাল,
আমরাতো তবু লিখে নিজের সম্মানহানি করছি। তুমি যে কিছু না লিখে, শুধু মন্তব্য করেই নিজের সম্মানের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছো সে হুশ কি আছে?
সহব্লগারদের নির্লজ্জ্ব গোয়েবলিয় প্রচেষ্টা বলে বিদ্রুপ করা বা তাঁরা কী কী জানতো না তার তালিকা করে দেওয়াটা যে একটা অমার্জিত এবং অশ্লীল কাজ, সেই আসল জিনিসটাইতো তুমি জানো না দেখছি।
@ফরিদ আহমেদ,
ঠিক। আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন? বিপ্লব, পৃথিবীর সব কিছু নিয়ে এক লহমায় লিখে ফেলে, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, ক্রিকেট বেটিং এমন কিছু নেই যা নিয়ে সে লিখতে অক্ষম। স্টিফেন হকিং এর গ্র্যাণ্ড ডিজাইন বেরুবার পর তিনি হকিংকে রিফিউট করে লিখে ফেললেন ‘স্টিফেন হকিংস এর “মৃত” দর্শনের সন্ধানে’ (অথচ বিজ্ঞানীর নামের বানানটাই ঠিক করে তখন লিখতে পারেনি বিপ্লব, আমি বলার পর ঠিক করে দিয়েছিলো), তারপর কমিউনিজম নিয়ে যা যা লিখেছিল, তার অনেককিছুই যে ছিলো ভুল, তা মাসুদ রানা তার একটি পোস্টে (পড়তে-পারা বনাম বুঝতে-পারাঃ বিপ্লব পালের মার্ক্সবাদের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে) বিস্তৃত লিখেছিলেন। হ্যা লেখাটিতে ব্যক্তিগত আক্রমনের ছোঁয়া ছিল বটে কিন্তু বিপ্লবের লেখার দুর্বলতাগুলো কিন্তু অপ্রকাশিত থাকেনি। আরেকবার পাটের জিনোম নিয়ে লেখায় হাসিনার গলায় বিজয়মাল্য পরিয়েও লোক হাসিয়েছিলো বিপ্লব। অথচ আমরা কখনোই কিন্তু বিপ্লবের মত করে বলতে পারি না –
পাঠকাঠির ছিপ দিয়ে কি আর মাঝ নদীতে রুই কাতলা ধরা যায়? বরং সেক্ষেত্রে ছিপটিই ভাঙে-এক্ষেত্রে ঠিক তাই হয়েছে — তা বিপ্লব স্টিফেন হকিং এর মত প্রখ্যাত বিজ্ঞানীর মৃত দর্শন নিয়েই লিখুক আর মার্ক্সবাদের আসল নকল নিয়েই লিখুক! স্টিফেন হকিংকে পিটাতে গেলেও বিপ্লবের কোন সমস্যা নেই, বিপ্লবের নিবের ঠেলায় স্টিফেন হকিংও তখন পুঁটিমাছ বনে যায়, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বেলাতেই কেবল রুই কাতলার দোহাই দিয়ে ছিপ চালানো আমাদের বন্ধ রাখতে হবে! এই না হলে স্তাবকতা!
@অভিজিৎ,
স্টিফেন হকিংস দার্শনিক না-বিজ্ঞানী। এবং উনার দর্শনের ভুল নিয়ে প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন, প্রাকৃতিক দর্শনের খ্যাতনামা অধ্যাপক পল থ্যাগাড। সেই লেখা বোঝার ক্ষমতা ছিল-কিন্ত লেখার ক্ষমতা ছিল না। কারন পেশাতে আমিও দার্শনিক না।
আমি তার ভাবানুবাদ করেছিলাম।
সুতরাং দুটোর মধ্যে তুলনা টানাটা যুক্তিরহিত।
@বিপ্লব পাল,
আবারো সেই ‘হকিংস’। কতবার কমু, ব্যাডারে ডকিন্সের লগে গুলাইওনা। ভদ্রলোক না নয় লুলো মানুষ, হুইলচেয়ারে ঘুরেন, কিন্তু বিজ্ঞানী হিসেবে তার পরিচিতিটাতো কম নয়। নামটা ঠিক করে বলতে শিখতে হবে না?
হকিং যেমন দার্শনিক না বলে উড়ায় দিতেছ, ঠিক তেমনি, রবীন্দ্রনাথও যে বিশাল মাপের কোন দার্শনিক তার প্রমাণও আমরা পাইনি যে, তাকে একেবারে ‘রুই কাতলা’ বানিয়ে একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে হবে।
ভাল থাইকো।
@অভিজিৎ,
আরো একটা ব্যপার-মাসুদ রানার সাথে প্রথমে তিক্ত তর্ক হলেও, লেখার মূল বিষয় বস্তু নিয়ে আমাদের খুব বেশী দ্বিমত ছিল না-সেটা হচ্ছে লেনিনবাদিরা কিভাবে মার্কসবাদকে বিকৃত করেছে– মতানৈক্য ছিল বঙ্গানুবাদ নিয়ে।
তাছারা মাসুদ রানার পোষ্টটির উত্তরে আমি যে পোষ্ট টি দিয়েছিলাম, তাতেও তিনি উত্তর দেন নি-
আমার মনে হয় না মূল ব্যাপারে কোন মতানৈক্য ছিল-তাই এটি গুরুত্বপূর্ন না।
এখানে কিন্ত বিরুদ্ধ পক্ষ তোমার মূল দাবীর সাথে সহমত ত দূরের কথা – সম্পূর্ন বিরুদ্ধে। সুতরাং তুলনা টা ঠিক হল না।
@অভিজিৎ,
বিপ্লবের অসংলগ্ন আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। তাঁর রবীন্দ্র পূজো আমাদের অজ্ঞাত নয়। কবিগুরুকে নিয়ে সামান্যতম সমালোচনা শুনলেই তাঁকে দিয়ে ইয়র্কার করিয়ে লেখকদের বোল্ড করানোর চেষ্টা করে সে। তবে, ভুলে যায় যে, বেচারাতো বুড়ো হয়েছে। ঢিলাঢালা আলখেল্লা, সুবিশাল শ্মশ্রু আর নুজ্জ্ব দেহ নিয়ে ওয়াসিম আকরামের মত ইয়র্কার দেওয়া যায় না। অবশ্য ইয়র্কার রবীন্দ্রনাথ দেয় না। তাঁর আলখেল্লার আড়ালে লুকিয়ে বিপ্লবই দেই। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে সেগুলো তখন লোপ্পা ফুলটস হয়ে যায়। অনায়াসে আমাদের মতন পাড়ার ব্যাটসম্যানরাও মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়ে দিতে পারে সেগুলোকে।
এই বিপ্লব তাঁর নিজের লেখা অবাক অযোধ্যা, নির্বাক করলে তুমি যখন কালের কণ্ঠ অনুমতি ছাড়া অন্যের নামে ছেপেছিল তখন বজ্রকন্ঠে মন্তব্য করেছিল এই বলে যে,
অথচ বিপ্লবের লেখার তথ্যগুলো কোনোটাই তাঁর মৌলিক আবিষ্কার নয়। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু তাঁরপরেও সে ছাড় দিতে রাজি ছিল না। ওই অনুপ্রেরণার কাজকে চুরি বলে ফেসবুকে ক্যাম্পেইন চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল সে।
সেই বিপ্লবই এখন দেখো কেমন বদলে গেছে রবীন্দ্রনাথের স্পর্শে। তার দর্শনের কী আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কয়েকদিন আগে তাঁর একটা লেখার প্রায় হুবহু কপি করে সাইফুল মুক্তমনায় তুলে দিয়েছে নিজের নামে। দিন এবং রাতের বেশিরভাগ সময় মুক্তমনায় কাটানোর পরেও এ নিয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ নেই লেখাটিকে প্রথম পাতা থেকে তুলে নেবার। নেই সাইফুলকে চোর বলে ফেসবুকে ক্যাম্পেইন করারও কোনো প্রচেষ্টা।
রুই কাতলাকে পাটকাঠির ছিপ থেকে বাঁচানোর জন্য মানুষকে কত কিছুই না হজম করতে হয়। আহারে বেচারা!!
@ফরিদ আহমেদ,
তুমি সিউর অভিজিত রায় সেই ফুলটসে ছয় মারার বদলে লোফা ক্যাচতুলে আউট হয় নি?
তুমি তখনো মুক্তমনাতে আস নাই-তাই অভিজিতের ওই লেখার প্রত্যুত্তর দেখ নাই-এই লেখাটা তোমাকে ঐতিহাসিক উপহার দিলাম
ঘোলাজলের ছিপে নারীবাদ
এটা ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে জানিও-আমি আরেকটা লিংক দেব।
পুরো ইতিহাসটা জেনে লিখলে ভাল করতে :-X
@বিপ্লব পাল,
অভিকে আউট হতে দেখি নি। তবে, দুরন্ত গতির এক বুনো ফার্স্ট বোলারের দুর্দান্ত বাউন্সারে তোমাকে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে সাজঘরে ফিরতে দেখেছি। তোমার ভাগ্য ভাল যে সেই ফার্স্ট বোলার অকালে অবসর নিয়েছেন।
ওই একবারই অবশ্য তোমাকে সাজঘরে ফিরতে দেখেছি। এর মানে অবশ্য এই না যে তুমি আউট হও না। বরং, উল্টোটা। আশরাফুলের মতই ক্ষণস্থায়ী তোমার ইনিংস। কিন্তু আউট হবার পরেও তুমি সাজঘরে ফেরো না। যে কোনো ছুঁতোয় ক্রিজ আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকো। তোমার সাথে এ ব্যাপারে মিল আছে ডব্লিউ জি গ্রেস সাহেবের। তিনিও আউট হবার পর ক্রিজ ছেড়ে সাজঘরে ফিরে যেতেন না। আম্পায়ার আঙুল তুললে গ্রেস সাহেব নিজেই পাল্টা আঙ্গুল তুলে আম্পায়ারকে আউট করে দিয়ে সাজঘরের রাস্তা দেখিয়ে দিতেন। তাঁর যুক্তি ছিল যে দর্শকরা পয়সা দিয়ে তাঁর খেলাই দেখতে এসেছে, আম্পায়ারের আঙুল তোলা দেখতে নয়। মুক্তমনাতে তোমার দর্শনটাও মনে হয় ওই গ্রেস সাহেবের দর্শনের মতই। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
এটা একটু যুক্তি দিয়ে ব্যখ্যা কর। আমার কাছে কাজটি মোটেও অমার্জিত এবং অশ্লীল না-কারন ১-১১ টা প্রতিটা পয়েন্টের সাথে সবাই সহমত হবে-যেটা আমরা বিতর্ক থেকে দেখেছি।
আমাকে কেও যদি দেখিয়ে এই ভাবে, যে তুমি এই এই জিনিস গুলো জানতে না, আমি অপমানিত বোধ করি না-খুশী হই। কারন সেটা আমার কাছে একটা শিক্ষনীয় বিষয়। আমিত তোমাদের গালাগাল দিই নি-আমি শুধু দেখিয়ছি-বিতর্ক থেকে দেখা যাচ্ছে তোমরা কি কি জানতে না [ আমিও জানতাম না-এবং সেটাও লিখলাম ত ]।
আরে বাবা এই বিশ্ববহহ্মান্ডের স্থান এবং কালে আমি একটি বিন্দু মাত্র- যতই কেও জানুক না কেন, তার জ্ঞান , এই অসীম রহস্য মাঝে শুন্যই থাকে।
না জানাটা কোন গর্হিত কাজ না-কিন্ত না জেনে জানার ভান করাটা বোধ হয় ঠিক না।
@বিপ্লব পাল,
দাদা, আমার মতে, আপনার দেয়া ১১ টা পয়েন্ট কোন প্রকার অশ্লীলতার ইঙ্গিত বহন করে, বরং আপনি যেভাবে সমস্ত যুক্তিগুলো এক জায়গায় জড়ো করেছেন, তাতে আমার মনে হয়েছিল এইবার বুঝি এই বিতর্কের ‘সিল-গালা’ করার সময় হয়েছে, কারণ যুক্তিগুলো ছিল সত্যি অভেদ্য। অথচ দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, অভিজিৎ-দা, ফরিদ ভাই এবং অপার্থিব আপনার ১১ টা যুক্তির ধার দিয়ে গেলেন না; বরং Ad Hominem (মুক্তমনা থেকে নতুন করে শেখা, যা কলেজ জীবনে শুধু মুখস্ত করেছিলাম!) যুক্তির আশ্রয় নিলেন!
আমি মনে করি, রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করা যেতেই পারে, যেহেতু কেউই সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। যেমন, রবীন্দ্রনাথের পাশ্চাত্য প্রেম ও মোহভঙ্গ নিয়ে অনেক আলোচনা/সমালোচনা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সাথে গান্ধির মতপার্থক্য নিয়েও অনেক সমালোচনা রয়েছে। শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ বাজেয়াপ্ত হয়ে গেলে উনি রবীন্দ্রনাথকে একটা প্রতিবাদ করতে অনুরোধ করেন। রবীন্দ্রনাথ জবাবে লিখেন,
”…তোমার বই পড়লে পাঠকের মন ইংরাজ গভর্নমেন্টের প্রতি অপ্রসন্ন হয়ে উঠে। তোমার বই চাপা দিয়ে তোমাকে কিছু না বলা, তোমাকে প্রায় ক্ষমা করা। এ ক্ষমার উপর নির্ভর করে, গভর্নমেন্টকে ‘যা’ ‘তা’ নিন্দাবাদ করা সাহসের বিড়ম্বনা।”
পরে শরৎচন্দ্র এ নিয়ে একটি চিঠিতে লেখেন,
” ভাবতে পারো বিনা অপরাধে কেউ কাউকে এত বড় কটূক্তি করতে পারে?”
(তথ্যসুত্রঃ দুঃখী শরৎচন্দ্র, বারিদবরণ ঘোষ, আমার সময়, সেপ্টেম্বর ২০১০)
পরিশেষে, এ কথা বলা যায়, রবীন্দ্রনাথের চিন্তা, দর্শন বা ভাবধারার হাজারটা সমালোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু তাকে ‘লেখা-চোর’ বা ‘সুর- চোর’ বানানো মানে সাহিত্যের জগতে ‘আপেক্ষিক তত্ব’ আবিষ্কার করার মতো ঘটনা নয়কি? সত্যি বলতে কি, ‘রবীন্দ্রনাথ অন্যের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন’ বা ‘অন্যের সুর চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন’- এমনসব কথা এত অবিশ্বাস্য ও বালখিল্য যে, এগুলোর অসাড়তা বুঝতে কাউকে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।
লেখাটিতে এমন কিছু কথা রয়েছে যা মেনে নেয়া কঠিন। যেমনঃ
(১) বলা হয়েছে, ”আরেক পক্ষ আছেন যারা এটা টেকনিকালি চুরি বলে মেনে নিলেও রবীন্দ্রনাথের মত বিশাল ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে সেটা উল্লেখ করার বিরোধী।” আমি এমন কাউকে পাইনি। বরং দুটি পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ একে সরাসরি চুরি বলেছেন, অন্য পক্ষ চুরির কোন চিহ্নই দেখতে পাননি।
(২) বলা হয়েছে, “এটা ঠিকই যে লেকাটি একটু সেন্সেশানালিস্ট স্টাইলে লেখা। কিছুটা উত্তেজিত ভাব আছে লেখায়। তবে যুক্তিবাদী পাঠকের দৃষ্টিতে বক্তার প্রকাশভঙ্গী, ভাষার বা অনুমিত অঘোষিত উদ্দেশ্যের চেয়ে বক্তব্যের সত্যতাই মুখ্য হওয়া উচিত বলে মনে করি।” কিন্তু প্রকাশভঙ্গী বা অনুমিত অঘোষিত উদ্দেশ্য যে লেখার সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে বা লেখার গ্রহণযোগ্যতাকে অনেকখানি কমিয়ে দেয়, তা কি লেখক অস্বীকার করতে পারবেন?
(৩)বলা হয়েছে, “বিপ্লব বলছেন যে না বিষয়বস্তুও রবীন্দ্রনাথ নিজেই দাঁড় করিয়েছিলেন, শুধু অধ্যায়গুলো বিজ্ঞানের দিক থেকে শুদ্ধ কিনা এক এক করে সেটা প্রমথনাথ কে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিতেন। কার তথ্য সঠিক সেটা সর্বসম্মতিক্রমে যাচাই না করে বিতর্ক করা যায় না এ ব্যাপারে। অভিজিৎ/ফরিদ বেশ কিছু তথ্যসূত্র দিয়েছে এ ব্যাপারে। কিন্তু বিপ্লব তার বক্তব্যের সপক্ষে এখনও কোন সূত্রের উল্লেখ করেনি।” ভুল। বিপ্লব-দা এবং কুলদা রায় অনেক তথ্য প্রমাণ হাজির করেছেন। বিশেষ করে কুলদা রায় রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথনাথের লিখিত ‘বিশ্ব পরিচয়’ এর অংশবিশেষ পাশাপাশি উল্লেখ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কিভাবে রবীন্দ্রনাথ ‘কিছু অংশ’ নয়, বরং ‘খোলনলচে’ বদলে দিয়েছেন বিজ্ঞানের জানা তথ্যগুলোর ভাষা।
(৪) বলা হয়েছে, “তবে একটা কথা ঠিক যে প্রকাশিত বই এ প্রমথনাথকে সহলেখক এর নাম উল্লেখ না করার ঘটনায় রবীন্দ্রনাথকে যারা মহানুভব মনে করেন তাদের ধারণা যে ভুল সেটাই প্রমাণ করে। আধুনিক বিশেষ করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আরেকটা ইতিবাচক দিক হল যথার্থ স্বীকৃতি দান, যত নগণ্যই হোক।” স্বীকৃতি তো দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। যেখানে পুরোটাই রবীন্দ্রনাথের ভাষা হয়ে গেছে, সেখানে রবীন্দ্রনাথ তো অন্তত প্রমথনাথের উল্লেখ করেছেন ভূমিকায়।
(৫) বলা হয়েছে, “কিন্তু এটা নিশ্চয় বলা যায় যে তিনি জমিদার হিসেবে মহানুভবতার পরাকাষ্ঠা দেখাননি।” লেখক এত নিশ্চিত হলেন কি করে? লেখাটিতে যে নিরপেক্ষতার আবহ তৈরি করেছিলেন, তা কি এখানে ঝুলে পড়লো না? আমরা তো জানি, উনি অনেক মহানুভবতা দেখিয়েছেন, যা সেই সময়ে বিরল ছিল। এবং অভিজিত-দা তা স্বীকারও করেছেন। তার বিরুদ্ধে যে প্রজা বিদ্রোহ হয়েছিল, তা কি ব্যক্তি ‘রবীন্দ্রনাথের’ বিরুদ্ধে ছিল না চিরায়ত ‘জমিদারি ব্যবস্থার’ বিরুদ্ধে ছিল?
(৬) বলা হয়েছে, ”কিন্তু কেউ(“ক”) যদি দাবী করে এই বাড়ীর কোথাও সোনার তৈরী কোন সূচ নেই আর অন্য কেউ (“খ”) ঘটনাক্রমে বাড়ীর কোন এক কোণায় একটা সোনার তৈরী সূচ খুঁজে পেল তাহলে “খ” বলতে পারবে যে “ক” এর দাবী ভুল। কিন্তু “খ” এর খুব কষ্ট করতে হল না।” কথা হচ্ছে, ‘খ’ সোনার তৈরী সূচ খুঁজে পেয়েছে, তা লেখক নিশ্চিত হলেন কি করে? অনেকের কাছেই মনে হতে পারে, ‘খ’ সোনার তো দূরের কথা, এমনকি পিতলের তৈরি সূঁচও খুঁজে পাননি। ‘খ’ যা পেয়েছেন তা অনেকের কাছেই এক মুঠো ছাই বলে মনে হতে পারে।
আমি উপরের কথাগুলো লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছি লেখকেরই উদ্ধৃত “You are entitled to your opinions, not to your facts” বা “We can agree to disagree” বা “আমি তোমার মতের সাথে একমত নই, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে দরকার হলে জীবন দেব” থেকে। এই চমৎকার বানীগুলো শেয়ার করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
@কাজি মামুন,
একে বলে ad hominem যুক্তি (লেখক প্রথমেই সেটা উল্লেখ করেছেন)। সত্য প্রতিষ্ঠায় ad hominem যুক্তিকে সাধারণত অশ্রদ্ধেয় মনে করা হয়।
@রৌরব,
(Y) (Y)
আমি মাত্র সেদিন এই এড হোমিনেম নিয়ে ঘাটাঘাটি করলাম…কারন নিশ্চিতভাবেই বুঝছিলাম এইটা ফ্যালাসি (বিশেষ করে এমন বলাটা উনারা অমুক টাইপের লেখা লেখেন…তাই উনাদের বক্তব্যের খুব দাম নেই) কিন্তু অফিসিয়াল কী নাম তা জানতাম না। :))
@কাজি মামুন,
লেখার গ্রহণযোগ্যতা শুধু যুক্তি, তথ্য দিয়েই যাচাই হবার কথা। আর “অনুমিত অঘোষিত উদ্দেশ্য” মানে তো অনুমিত বা কথিত। অনুমান তো সত্যতা যাচাইয়ের মানদন্ড হতে পারে না। মনে সংশয় আসতে পারে। কিন্তু সত্যতা যাচাই শুধু সংশয় দিয়ে হতে পারে না।
“পরাকাষ্ঠা” মানে পার্ফেকশান। মহানুভবতা দেখাননি সেটাত বলিনি। অনেক দেখিয়েছেন। যেটা আগেই বলেছি কাউকে একটা ঢালাও বিচার (ইতিবাচক বা নেতিবাচক) করতে হলে তার প্রতিটি কর্ম, প্রতিটি প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি সবই যাচাই করে একটা কন্সিস্টেন্ট চিত্র পেয়ে তারপসই করা যাবে। জমিদারিত্বে রবীন্দ্রনাথকএ ১০০/১০০ দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ, বিশেষ করে অভিজিত, ফরিদ এর সূত্র পড়ে (খাজনা বাড়ান ইত্যাদি)। একটা নেতিবাচক উদাহরণই তো ১০০ থেকে নামিয়ে ৯৯ তে নিয়ে যেতে পারে। হয়ত রবীন্দ্রনাথ আদর্শ জমিদার হলে আমরা বিরাট সাহিত্যিক শিল্পী রবীন্দ্রনাথকে পেতাম না 🙂
ফরিদ/আভিজিত রবিন্দ্রনাথ কে ছোট করার উদ্দেশ্যৈ লিখাটি লিখেন নাই বুঝানোর জন্য তাদের লিখার শুরুই যেমন যথেষ্ট , আবার একপর্যায়ে চৌয্য’ বৃত্তির অভিযগে অভিযুক্ত করাটাও (রবিন্দ্রনাথ কে)… দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে অনেকের কাছে । যেহেতু সাহিত্য বিজ্ঞান নয় তাই এখন গগন এর কৃতিত্ব কেই বা দিবে আর কেই বা নিবে !… যা কিনা অনেক তর্ক সাপেক্ষ । তবে এ বিতর্কের সুত্রপাত করে ফরিদ/অভিজিত আমার একটা বড় উপকার করেছেন , কারন এক জামাতি ইসলাম এর কর্মী আমাকে বলেছিল আমাদের জাতীয় সংগীত নাকি নকল ( চুরি করা ) ,আমি বেটাকে গালি দিয়েছিলাম , এখন গালি না দিয়ে বলব ,” রবিন্দ্রনাথ গানটি নিজেই রছনা করেন , সুরটি বাউল সুর থেকে নেয়া যা গগন হরকরার গাওয়া ” আমি কথায় পাব তারে … ” গানের সাথে অনেক মিলে যায় ” । উল্লেখ্য গগন বাবুর গানটি কিন্তু খুব মনোযোগ দিয়ে না শুনলে চট করে বুঝা যায় না যে মিল আছে । একুশের গান ” আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো …” র সুর অ এবার একটি গান এর সুর এর সাথে মিল আছে ।এবা দলটি আশির দশকের । হয়ত দুটি গান এর সুর এর উৎসই এক , কে খোজ রাখে ! প্রমথ বাবুর রচনা বিজ্ঞান ত নয় ই এমন কি পপুলার বিজ্ঞান এর খেত্রেও তেমন কিছু নয় ,রবিন্দ্রনাথ এর নামে যা ছাপা হয়েছে তাও , এসব রচনা তার মুল সাহিত্য রচনার অংশও না । তবে আমরা এখন থেকে গগন বাবু এবং প্রমথ বাবুর নাম জানলাম এবং বিভিন্ন আলচনায় তাদের নামও আসবে এটাও কম কি ?… গগন বাবু /প্রমথ বাবু ফরিদ/অভিজিত এর জন্য আলচনায় ত প্রাসঙ্গিক হলেন ।
তবে সত্তিকার অর্থে অনেক বাঙ্গালীর প্রাপ্য কিন্তু মেরে দেয়া হয়েছে । কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক ভাবে সিদ্ধ্যান্ত নেয়া হয়েছে এখন থেকে বেতার আবিস্কার এর কৃতিত্ব জগদীশ চন্দ্র বসু কে ই দিতে হবে , মারকনি কে নয় । কিন্তু হিমালয় এর সবো’চ্চ চূড়ার নাম এভারেস্ট না সিকদার হওয়া উচিত , কারন এভারেস্ট এর উচ্চতা রাধানাথ সিকদার ই আবিস্কার করেছিলেন । সত্তেন বোস ও কি সঠিক প্রাপ্য পেয়েছিলেন ?… । এসব কারনে ফরিদ/অভিজিত এর লিখাটি প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে ।
@সপ্তক,
অনেকদিন আগে সঙ্গীত জগতের এক উজ্জল নক্ষত্র “মরিস রাভেল”
এর করা এক মিউজিকে- “আমার ভাই এর রক্তে রাঙ্গানোর সুর শুনে অবাক হয়েছিলাম!
রাভেল, মোজার্ট, বিটোফেন ধাঁচের মিউজিসিয়ান।
“আবা” সুইডেনের জনপ্রিয় পপ গ্রুপ “ইউরোভিশন” পুরস্কার ছাড়াও অনেক পুরস্কার জিতেছে এই গ্রুপ।
এই দুই গানের উৎস রাভেল হতে পারে।ইউটিউবে খুঁজে পেলে দিতাম এখানে!
@লাইজু নাহার,
হাঁ তাই । আমি গতকাল ই মান্না দে়র , “জীবনের জলসা ঘরে ” বইটা পরলাম । এই বইতে মান্না দে লিখেছেন তার অসংখ্য গান এর রচনার এবং সুর করার প্রেক্ষাপট । অনেক গান এর সুর ই কোন গজল শুনে , কোনটা বা ইংরেজি গানের সুর থেকে নেয়া …কিন্তু সব মুল গান এর ই সাস্রিও রাগ এর ভিত্তি রয়েছে । প্যারডি না হলে ই হয় । আর কোন গান সুনলে যদি সাথে সাথে অন্য গানের সুর কানে বাজে তাইলেও সমসসা আছে । গগন হরকরার গানটি শোনার সাথে সাথে কি আমদের জাতীয় সঙ্গিত সুনছি বলে মনে হয় নাকি মাঝে মাঝে বা হটাৎ ই মনে হয় । যদি গগন বাবুর গান সোনার সাথে সাথে এটা না মনে হয় যে এটা আমদের জাতীও সঙ্গিত বাজছে তাইলে এটা কে প্যারডি ও বলা যাবে না , নকল ও বলা যাবে না , অনর্থক ই এই বিতরক… অন্তত মান্না দে র বইটা পরে আমার তাই মনে হয়েছে , কারন গগন বাবুর গান শুনে আমার মনে হয়নি যে আমাদের জাতীও সঙ্গিত ওটার প্যারডি বা নকল , তবে যেহেতু বলে দেয়া হয়েছে আগে ই তাই কিছুক্ষণ শোনার পরে মনে হয়েছে মিল আছে এটুকুই ত যা
গানের জগত এ সাধারন একটা ব্যাপার তবে রবিন্দ্রনাথ এর জন্য যদি তা প্রযোজ্য হবে না বলে মনে করা হয় এবং এই মত পোষণ করা হয় যে রবিন্দ্রনাথ এর জন্য কিছু গ্রহন করা হারাম এবং কিছু করলেও তার স্বীকৃতি দিতে তিনি বাধ্য তাইলে ত সমস্যা । তবে যেহেতু রবিন্দ্রনাথ এর গান এর বেপারে বিশভারতীর একটা নজরদারি ছিল দীর্ঘদিন সে কারনেও রবিন্দ্রনাথ অনেক এর বিরাগভাজন হতে পারেন … কিন্তু আমার মনে হয় রবীন্দ্রসংগীত এর এই বাধাধরা এর যে স্বকীয়তার একটা শক্ত ভিত রচিত হয়েছে তা ত ঠিক , সে দিক থেকে নজরুল সংগীত বিভিন্ন শিল্পীর নিজের মত করে গাওয়ার কারনে স্বকীয়তা হারিএছে অনেকক্ষেত্রে … যা অনেকবার বলেছেন ও নজরুল গবেষক ডঃ রফিকুল ইসলাম ।
এখানে অন্যতম assumption ,
“দুপক্ষই স্বীকার করছেন যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানের সুরকার যে গগন হরকরা সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি।”
এত কথা হবার পর, এত সূত্র উল্লেখের পর কেউ যদি মনে করে যে রবীন্দ্রনাথ স্বীকার করেন নি, এমনকি কি বলা হয় যে রবীন্দ্রনাথের অস্বীকারের বিষয়টি আমরা স্বীকার করেছি — তাহলে বলার কিছু নেই. ——-পন্ডশ্রম!
@পথিক,
রবীন্দ্রনাথ নিজের মুখে তাঁর গানের সুর যে গগন হরকরার গানের সুর থেকে নেয়া সেটা স্বীকার করেছেন বলে কেউ দাবী বা সূত্র উল্লেখ করেন নি মন্তব্যে। রবীন্দ্রনাথ না হলেও অন্য কেউ কেউ (যেমন বলেন্দ্রনাথ) করেছেন এরকম মন্তব্য আছে। কিন্তু সেটা এক হল না। তবে এত মন্তব্য এসেছে যে আমি ভুলও হতে পারি। ভুল হলে কার মন্তব্যে রবীন্দ্রনাথ নিজের মুখে তাঁর গানের সুর যে গগন হরকরার গানের সুর থেকে নেয়া সেটা স্বীকার করেছেন এটা আছে জানালে ভাল হয়।
@অপার্থিব,
মুখে বলা আবার কি জিনিস. কার কাছে মুখে কি বলবেন? আমরা এখানে স্থায়ী কোন media তে (মানে বই , সাময়িক পত্রিকা ) acknowledge এর কথা বলছি . সেটা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য যুক্তি মোজাফফর হোসেন এর পোস্টের এর নিচে তর্ক বিতর্কে উঠে এসেছে. সেসব আবার এখানে লিখতে যাওয়ার আমার ইচ্ছা নেই. আপনি পরে নিতে পারেন. ….মজার কথা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ না জানালে এই সাধারণ তথ্যটি আমিও বারো বছর আগে জানতে পারতাম না ( সুনীলের প্রথম আলো পড়ে), ফরিদ হোসেন , অভিজিত ও এতদিনে জানতে পারতেন না. আপনারাও জানতে পারতেন না. ……. রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য জেনে, রবীন্দ্রনাথকেই তথ্য চুরির অভিযোগ আনা হচ্ছে — এমন হাস্যকর ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি.
@পথিক,
মুখে বলা মানে তাঁর নিজের কোন লেখায় যার নির্দেশ দেয়া যায়। অন্যের লেখায় যে আছে সেটা তো অনেকে বলেছেন। মোজাফফর হোসেন এর পোস্টের এর নিচে তর্ক বিতর্কে কোথাও কেউ স্পষ্ট করে দাবী করেন নি রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর সোনার বাংলা গানের সুর যে গগন হরকরার “কোথায় পাব তারে” গানের সুর থেকে নেয়া সেটা স্পষ্ট করে বলেছিলেন। আবারও বলছি আমার ভুল হলে সেই মন্তব্যটাই উদ্ধৃত করুন। আমার নিজের কৌতূহল মেটাতে। রবীন্দ্রনাথ এটা লুকাতে চাননি বা এটা যে বাউল গান থেকে নেয়া এ ধরণের দাবী ঠিক আছে। কিন্তু মূল তর্কটা যেহেতু “রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর সোনার বাংলা গানের সুর গগন হরকরার কোথায় পাব তারে গানের সুর থেকে যে নেয়া সেটা স্বীকার করেন নি” এই দাবীকে ঘিরে তাই তর্কের নিষ্পত্তির জন্য এই দাবীর সত্যমিথ্যা যাচাইয়ের জন্য উপযুক্ত তথ্যসূত্র সহ উল্লেখের প্রয়োজন যেটা এখনো দেখছিনা।
@অপার্থিব,
ধন্যবাদ, আপনার point টা বুঝতে পারছি…….
১. প্রাপ্ত সূত্র গুলো থেকে দেখতে পাচ্ছি, রবীন্দ্রনাথই প্রথম ব্যক্তি যিনি একটি সাময়িক পত্রিকায় গগন হরকরার সেই গানের বাণী প্রকাশ করেছিলেন. প্রাপ্ত তথ্যে একথা স্পষ্ট নয় সেই সংখ্যায় ঠিক কি লেখা ছিল. ওটা হাতে না থাকলে বলা যাচ্ছে না সুরের ব্যাপারটি সেখানে উল্লিখিত ছিল কিনা.
২. তখনকার দিনে রেকর্ডিং চালু ছিল না. তাই এলবামে কোনো সুরের উপর আজকের মত সুরকারের (সেটাও আরেকটা confusion , গানটি adopt করা হলে সুরকার রবীন্দ্রনাথ ই থাকবেন ) তকমা এঁটে দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল না. রবীন্দ্রনাথ নিজ উদ্যোগে সেগুলার notation সংরক্ষণ করতেন বা করাতেন. প্রতিটি গান রচনার ইতিহাসও লিপিবদ্ধ করিয়েছেন. শান্তিদেব ঘোষ তারই সময়কার তারই নিযুক্ত প্রখ্যাত অধ্যাপক ও রবীন্দ্র গবেষক. বাংলাদেশ এর এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে রবীন্দ্রনাথের সাথে অখ্যাত গগন হরকরার আদৌ আলাপ হয়েছিল কিনা ত়া উনার জানার কথা নয়. তাই যেহেতু তার রবীন্দ্র রচনার সংকলনে সুর গ্রহনের তথ্যটি উল্লিখিত আছে, তাই বলা যায়, তথ্যটি রবীন্দ্রনাথ থেকেই সংগৃহীত ও অনুমোদিত. একে রবীন্দ্রনাথ ও বিশ্ব ভারতী কর্তৃক অনুমোদিত authentic সংকলন হিসেবেই ধরা যায়. ওতে থাকা সমস্ত তথ্যই রবীন্দ্রনাথের অনুমোদিত বলে গন্য করা হয়.
৩. এই একটি গানকে তো তখন ভিন্ন ভাবে দেখার কোনো প্রয়োজন হয় নি. তাঁর দুই-তিন হাজার গানের ক্ষেত্রে যেরকম হয়েছে, সেভাবেই এই গানটির ইতিবৃত্তও সংরক্ষিত হয়েছে. যেমন পাশ্চাত্য সুর থেকে উনি যা নিয়েছিলেন , সেগুলোও ওভাবেই সংরক্ষিত হয়েছে —- তারই নিযুক্ত অধ্যাপকদের/গবেষকদের বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত বইগুলোর মাধ্যমে. সেগুলোর মাধ্যমেই আজ লোকে জানতে পারে সুর গ্রহনের ব্যাপারটি, গাইতে পারে গগন হরকরার গানটি. ….. ফরিদ হোসেন এবং অভিজিত আবিস্কার করতে পারেন সেই গানের কোনো লিঙ্ক হঠাত করে.
৪. এ ছাড়া আর যেভাবে উনি নিজে বলতে পারতেন – (ক) নিজে রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ইতিহাস এর বই লিখে (সে রকম লিখেছিলেন বলে জানি না, না লিখলে ই তাকে দোষ দেওয়া যায় ?), (খ) copyright অনুমতি নিয়ে (গগন হরকর গানটি copyrighted ছিল না, সম্ভবত হওয়া সম্ভবও ছিল না, কারণ সেটি একটি জনে জনে প্রবাহিত একটি বাউল tune ), (গ) পত্রিকায় স্বরলিপি তুলে দিয়ে (সেরকম কিছু আদৌ প্রচলিত ছিল কিনা আমার জানা নেই. )
এত details সংরক্ষণ করা ওই সময়ের এমনকি এই সময়ের standard এও বেশিই বলতে হবে. উপরে উল্লিখিত মাধ্যম ছাড়া যখন আর কোনো মাধ্যমেই সুর গ্রহনের acknowledgement এর ব্যাপারটি প্রচলিত ছিল না, তাই সে প্রশ্ন তোলা অবান্তর নয় কি?
এই irony টা আপনি appreciate করবেন কিনা জানি না ——– একশ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ থেকে প্রাপ্ত যে তথ্য বিভিন্ন ভাবে প্রবাহিত হয়ে হয়ে লেখকদ্বয় জানতে পারলেন , সেই তারই বিরুদ্ধে তারা তথ্য চুরির অভিযোগ আনলেন .
@অপার্থিব,
মুহম্মদ মনসুর উদ্দিনের বাউল গানের সংকলন হারামণি গ্রন্থের ভূমিকাতে রবীন্দ্রনাথে আমি কোথায় পাবো তারে এই গানটি নাম উল্লেখ না করে শিলাইদহের অঞ্চলের একজন বাউলের কণ্ঠে শুনেছিলেন বলে উল্লেখ করছেন। আমরা অনুমান করে নিতে পারি যে, নাম উল্লেখ না করা এই বাউলটিই হচ্ছেন গগন হরকরা। রবীন্দ্রনাথের লেখনি থেকেই তুলে দিচ্ছিঃ
রবীন্দ্রনাথ আমার ঠাকুরদাও নন। ঠাকুরদার বাবাও নন। তিনি অলরেডি ইন্তিকালে আছেন। তার জমিদারীতে আমি, অভিজিৎ বা ফরিদ বা আপনি কেউই প্রজা হিসাবে জীবিত ছিলাম না। সব কথাই প্রাপ্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে বলা হয়।
তথ্যকে যাচাই করার প্রয়োজন আছে। এবং তথ্যের উত্তরাধিকারও আছে। সুতরাং আমার ঠাকুরদার পরে আমার বাবা এসেছেন। আমার বাবার পরে আমি। আমার পরে আমার সন্তানরা। সুতরাং ঠাকুরদা পর্যন্ত দেখে থেমে গেলেতো হবে নারে ভাই। তার পরের প্রজন্মকেও হিসেবের মধ্যে আনতে হবে।
ডঃ আহমদ শরীফ পর্যন্ত থেমে গেলে তো কানাগলিতেই হাঁটলেন। নতুন বইপত্র, প্রাপ্তথ্যাদি দেখুন। তথ্য বলছে–প্রজানিপীড়নের অভিযোগ আছে রবীন্দ্রনাথের বাবা দেবেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে। কাঙ্গাল হরিনাথ ফিকিরচাঁদের গানের দল করেছিলেন। সে গায়কদল রবীন্দ্রনাথের বোটে এসে গান শুনিয়ে যেত। মৃণালিনী দেবী তাদের উপযুক্ত আদরযত্নাদিও করতেন। তার প্রমাণতো বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা থেকে দিয়েছি। সুতরাং রবীন্দ্রনাথের বাবার দোষ রবীন্দ্রনাথের ঘাড়ের দিলে কি ঠিক হয়রে ভাই?
বিশ্বপরিচয় প্রসঙ্গে–
১.
২. রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথের প্রথম পর্বটা পড়ে বুঝলেন–প্রথমনাথ লেখক হিসাবে দুর্বল। তখন তিনি কিভাবে লিখতে হবে সেটা বলে দিলেন। সেটা অনুসরণ করেও যখন লেখাটি রবীন্দ্রনাথের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পাণ্ডুলিপি হচ্ছে না তখন তাকে রবীন্দ্রনাথ লেখা বন্ধ করে দিতে বলতে পারতেন। সেটা করেননি। তিনি তাকে লিখে যেতে বললেন। ধীরে ধীরে প্রমথনাথ লেখায় উন্নতি করলেও তা রবীন্দ্রনাথের নিজের ফিলসফির মত হয়ে ওঠে নি। সেজন্য রবীন্দ্রনাথই নিজের মত করে বইটি আবার লেখেছেন।
তাহলে তিনি প্রমথনাথকে লেখা বন্ধ করতে বললেন কেন? তাকে দিয়ে লেখালেন কেন? এটা কোটি টাকার প্রশ্ন।
কোটি টাকার উত্তর–রবীন্দ্রনাথ চেয়েছেন প্রমথনাথ পুরোটা লিখতে লিখতে লেখা শিখুক। শিখে তার অধিত জ্ঞানকে ভাষায় প্রকাশের দক্ষতা অর্জন করুক। সেজন্যই তিনি তাকে দিয়ে লিখিয়েছেন। তার পাণ্ডুলিপি কেটেছেটে দেখিয়ে দিয়েছেন–লেখার সমস্যাটি কোথায়। কিভাবে লেখার সহজবোধ্য ভাষাটি হতে পারে।
এই হাতে কলমে ট্রেনিংটা কিন্তু প্রমথনাথের কাজে লেগেছিল। তিনি লেখায় উন্নতি করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাকে দিয়ে আরেক বই লিখিয়ে সেটা প্রমথনাথের নিজের নামেই প্রকাশ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণাতেই সেটা তিনি লিখেছেন। আনন্দরূপম বইটির ভাষাটি খেয়াল করলেই সেটা বুঝবেন।
দেখুন, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রনাথ কাঁচারিবাড়ি থেকে শান্তি নিকেতনে শিক্ষক হিসাবে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় অভিজ্ঞ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ হরিচরণকে দায়িত্ব দিলেন বঙ্গীয় শব্দকোষ সঙ্কলন করতে। হরিচরণ ৩০ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে দুখণ্ডে শব্দকোষটি লেখা শেষ করেন। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু বইটি নিজের নামে নেননি। কারণ হরিচরণের হাতে তথ্য এবং ভাষা–দুটোই ছিল। রবীন্দ্রনাথ বইটিতে তার পরিকল্পনারই স্বার্থক রূপায়ন দেখতে পেয়েছিলেন। তাকে নতুন করে লিখতে হয়নি। ঘটনাচক্রে এই অধম হরিচরণের বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ বার্যকাল থেকেই ব্যবহার করে আসছে।
@কুলদা রায়,
আপনি কি বলতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথের বিচারে হরিচরণের ভাষা মানসম্মত না হলে সেটা পরিবর্তন করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার অধিকার রবীন্দ্রনাথের আছে?
@রৌরব, সেটা বলতে চাইনি। হয়তো বয়স থাকলে রবীন্দ্রনাথ নিজের মতো করে আবার লিখতেন।
একটা বিষয় দেখেন, ভাষার মধ্যে লেখকের দর্শন থাকে। রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথের ভাষায় সেই দর্শনটি পাননি। পাননি বলেই তিনি তার মতো করে আবার লিখেছেন।
দেখেন, একটা উদাহরণ দেই। অভিজিৎ এবং ফরিদ অই নোটটি লিখেছেন, সেটা যখন আবুল হাসান চৌধুরী লিখতেন–তাহলে তা অন্যরকম হত। তার মধ্যে নিরপেক্ষতা থাকত। তথ্যকে যাচাই করার প্রচেষ্টা থাকত। সেটাতো করেননি ওনারা। ওনারা চেয়েছেন ব্যাটা রবি বুড়োকে চোর আর রাহাজানি প্রমাণ করতে। দীপঙ্কর বাবুর বইটির চারটি অধ্যায় পড়েই লেগে গেলেন–তাকে রাহাজানকারী প্রমাণ করতে।
আরেকটি বিষয়–এই দুইজনের বিজ্ঞান বিষয়ক পড়ালেখা আছে। ফরিদের হয়তো কম আছে। কিন্তু সঙ্গীত ও সাহিত্যবোধ একেবারেই নেই। এই একেবারে নেই যে বিষয়ে, সে বিষয়ে তাদের নেমে পড়াটা কাজের কথা নয়। সে করণে শিব গড়তে তারা বান্দর গড়ে ফেলেছেন। তাদের উচিৎ বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখিই করা। আর সাহিত্য ও সঙ্গীত বিষয়ে লেখাপড়া করার চেষ্টা করা। চেষ্টা করলেই তারা পারবেন। তারপর লিখবেন। তখন না হয় রবীন্দ্রনাথকে ধোলাই করতে নামবেন। এখনকার মত ম্যাও ম্যাও তখন আর করা লাগবে না। আরে ভাই, রবীন্দ্রনাথকে যদি প্রজানীপিড়ক, চোর রাহাজানকারী সত্যি সত্যি তথ্যসহযোগে প্রমাণ করা যায় তাহলে তো আমার অসুবিধে নেই। আমি তো তার প্রজা নই। তার নাতিও নই।
@কুলদা রায়,
কিন্তু এটা তো কোন মানদণ্ড না! হরিচরণের ক্ষেত্রেও আপনার বক্তব্যে প্রকাশ পায় যে ভাষা সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের subjective বিচার চুরি-কি-চুরি-না বিতর্কে প্রাসঙ্গিক। আমার মতে এবিষয়টা অবান্তর। আমার কাছে রবীন্দ্রনাথের আচরণ মার্জনাহীন মনে হয়েছে। কিন্তু যদি নাও হত, তাহলে তিনি চুরি করেননি, এর পক্ষের যুক্তি হিসেবে রবীন্দ্রনাথেরই ভাষা-নন্দন-তত্ব টেনে আনাটা অদ্ভুত ঠেকত।
@রৌরব,
আছে , কারণ তিনি রবীন্দ্রনাথ 🙂 , এটাই হল মোক্ষম পয়েন্ট
@কুলদা রায়,
একই মন্তব্য একাধিক লেখায় দিয়ে যাচ্ছেন, অথচ কেউ কোন প্রশ্ন করলে সেগুলো পাশ কাটিয়ে চলে যান। তারপর নিজেই নিজের বিজয় ঘোষণা করে তৃপ্তি লাভ করছেন। অবশ্য প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া এই প্রথম নয়। যে সব প্রশ্ন আপনার ভালো লাগে না সেগুলোর জবাব না দেওয়ায় আপনি সিদ্ধহস্ত।
আপনার নিজের প্রদত্ত স্ক্যান কপিতেই প্রমথনাথ বাবুর কথায় উল্লেখ আছে তিনি পুরোটা শেষ করে রবীবাবুকে দিয়েছিলেন। এখন আপনার ধারণা মোতাবেক সেটা হতে রবীন্দ্রনাথ পুরোপুরি পরিবর্তন করে ছাপিয়েছে। এই কথার পেছনে রেফারেন্স বা প্রমান আছে কি? নাকি প্রমান শুধু কবির নিজের কথা (বিপ্লব’দার মতে)? প্রমথনাথের কপি কি আছে কারো কাছে?
@কুলদা রায়,
মূল্যবান তথ্য। এই তথ্যটি রবিঠাকুর কর্তৃক প্রমথনাথের লেখা চুরির যুক্তিকে দুর্বল করে।
রবিঠাকুর যদি চাইতেন – হরিচরণ, এটি আমার নামে ছাপিয়ে দাও, তখন নিজের লেখা প্রভুবৎ রবিঠাকুরের নামে ছাপিয়ে ক্ষুদ্রপ্রাণীবৎ হরিচরণ “ধন্য” হতেন। প্রমথনাথের ব্যাপারে ত সে রকম যুক্তিই খাড়া করা হয়েছে।
১. গগন হরকরার সুরটির নেয়া প্রসঙ্গে অডিও সহযোগে বলা হয়েছে সেকালে গান রচনার এটা একটি রীতি ছিল। একই সুরে নানাজনে বানী বসিয়ে গান করতেন। রবীন্দ্রনাথও তাই করেছেন বাউলাঙ্গের গানের ক্ষেত্রে। কটি গান রবীন্দ্রনাথ সেরকম করেছেন তার তালিকাও দিয়েছি–সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ থেকে।
এবং রবীন্দ্রনাথতো কোথাও দাবী করেননি যে এটা তার নিজের সুর। গগন হরকরার সুরটিও যে মৌলিক তাও কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না। জ্ঞানদাসের পদাবলীগুলো–জ্ঞানদাস কয়দি নিজে রচনা করেছেন? ভনিতায় জ্ঞানদাসের নাম বলা হলেও তা কিন্তু বহু লোকে রচনা করেছেন।
দেখুন, কাজী নজরুল ইসলামও অনেক জায়গা থেকে নিয়েছেন। ধরা যাক মোমেরও পুতুল মমীর দেশের মেয়ে–এটা মধ্যপ্রাচ্যের একটি গানের সুর। নজরুলের সিংহভাগ গানের সুরই কিন্তু নজরুল দেন নি। সুর দিয়েছেন পেশাদারী সুরকাররা। যেমন ফিরোজা বেগমের স্বামী কমল দাশগুপ্তের করা সুরই বেশি। অথচ জনরুচিতে কমল দাশগুপ্তের নাম উচ্চারিত হয়না। নজরুলের গান হিসেবেই বিবেচিত হয়। আচার্য জ্ঞানপ্রসাদের রাগভিত্তিক গানগুলোও তাই বিভিন্ন রাগের উপরে বানী বসানো। তাহলে নজরুলকে বা জ্ঞানপ্রসাদকে চোর বলা হয় কখনো?
@কুলদা রায়,
নাহ , চোর বলা হয় না… বলা উচিৎ ও না । কারন এ যে সাহিত্য … দাদা , এখানে ” মিলাব , মিলিব …” খুবই গ্রহণীয় … । পরিক্ষা হলে অন্নের খাতা থেকে একটি শব্দ টোকা ও নকল আবার পকেট ভর্তি কাগজ নিয়ে গিয়েও টোকা নকল ।।এখন কথা হোল গিয়ে কোণটার জন্য পরিদশক খাতা কেড়ে নেবেন সেটা ।
@কুলদা রায়,
এটা ভাল যুক্তি নয়। উইকি থেকে কোট করছি,
আমি মনে করি জনরুচিতে কে কী তা বস্তুনিষ্ট আলোচনায় আনাটা ঠিক নয়। সুরকারের সংজ্ঞা কী, তার ভিত্তিতে যিনি সুরকার, তিনিই সুরকার হওয়া উচিত।
@টেকি সাফি,
সম্ভবত ঠিক বললেন না। কমল,দাশ সব গানের সূর দেননি। যে গুলো দেয়া হয়েছে তা ফিরোজা বেগম গেয়েছেন। এবং তাতে উল্ল্যেখ করা আছে।
রবীন্দ সঙ্গীত, নজরুল গীতি এই দুই গান নিয়েই আমার একাডেমিক ডিগ্রী আছে। তাই জানালাম। আশা করি ভুল বুঝবেন না।
অ;ট- নিজের ডিগ্রী আছে বলতে বাধ্য হয়েছি। কেউ একে নিয়ে কটুক্তি করবেন না আশা করি।
@আফরোজা আলম,
না, আমি সুরকার নিয়ে কিছুই বলিনি…এমনকি আপনি যাদের নাম বললেন তাদের নাম পর্যন্ত আগে শুনিনি। আমি শুধু আর্গুমেন্টটায় যে ফ্যালাসি আছে তা দেখালাম
এক প্যাঁচাল কতো শুনব।
১- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপরে যখন জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ত্ব পড়ে, তখন তাঁদের জমিদারির প্রায় ভরা ডুবি অবস্থা। সংসারের হাল ও খুব খারাপ ছিল। বেশ অভাব চলছিল। কষ্টে তাঁর স্ত্রী (মৃনালিনী) সংসার চালাতেন। অনেকটা বাধ্য হয়ে ছোট বেলাতেই কন্যার বিবাহ দিতে হয়েছিল।
২- বাউল সূর সর্বজন স্বীকৃ্ত। যে কেউ এই সব গান থেকে সূর নিয়ে থাকে।
রবীন্দ নাথ ঠাকুর এ ক্ষেত্রে কোনো চৌর্যবৃত্তি করেছেন, অনেকে মানবে না।
এখনকার অনেক ব্যান্ড গানেও বাউল সুর ব্যাবহার করে। তাদের কেউ কিছু বলে না।
এই মহান মানুষকে ঘিরে অনেক গবেষনা চলেছে, চলছে। তবে সরাসরি
চোর হিসেবে কেউ আক্ষ্যা দেয়নি।
কিন্তু, আমরা ( লেখকগন) দিচ্ছেন।
এবং সমস্ত বাঙালি জাতীর অহং বোধকে ধুলোয় মিটিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বড্ড দুঃখজনক।
এই মহান মানুষ কে নিয়ে এইটাই আমার শেষ মন্তব্য। অযথা তাঁকে টেনে
এতো নীচে নামানোর হীন প্রচারনায় কষ্ট পাচ্ছি। তিনি আমাদের তথা বাঙ্গালির অহংকার- (Y)
@আফরোজা আলম, অযথা তাঁকে টেনে
ভাল বলেছেন। (Y)
নীচে নামানোর চেষ্টা কেউ করলে করুক।
তিনি মানুষ তো। ত্রুটি তো থাকবেই। তাঁর ত্রুটিগুলোও আমাদের জানা দরকার।
@আফরোজা আলম,
না, এ ব্যপারটা আগেও পরিস্কার করা হয়েছে। লালন শাহ, দুদ্দু শাহ, পূর্নদাস বাউল, পবন দাস বাউল, শাহ আব্দুল করিম বয়াতী সবাই বাউল, কিন্তু সবার গানের সুর এক নয়। এমনকি লালনেরও সব গানের সুর এক নয়। লালনের ‘জাত গেল জাত গেল’ আর ‘পাপ-পুণ্যের কথা আমি কারে বা শুধাই’ গানের সুর এক নয়। এমন নয় যে, ‘জাত গেল জাত গেল’ গানটি বানিয়ে তার সুরই ব্যবহার করে ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ গানের সুর তৈরি করেছিলেন লালন। গানগুলোর সুর আলাদা আলাদা ভাবে তৈরি করেছিলেন বলেই সেগুলো শুনতে আলাদা লাগে। এর পেছনে আলাদাভাবে সৃষ্টিশীলতা, সৃজনশীলতা দেখাতে হয়েছে। আব্দুল করিম বয়াতীও বাউল। কিন্তু তা বলে কি তিনি লালন শাহ এর ‘খাঁচার ভিতর অচীন পাখি’ গান থেকে ‘বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে’ কিংবা ‘একখান চাবি মাইরা’ গানের সুর বানিয়েছিলেন? না তা নয়। বাউল টিউনের উপর হলেও তাকে আলাদাভাবে সুর করতে হয়েছিলো গানে। যাস্ট কপি করেননি।
পশ্চিমা বিশ্বের সংগীতের কথাই ধরুন। সেখানে রেগে, রক এণ্ড রোল, ব্লুজ, কান্ট্রি এগুলো কিছু জানা টিউন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, একজন সুরকারের করা ব্লুজের একটি সুর আরেকজন হুবহু ব্যবহার করে দেবেন আরেকটা গানে আরেকজন সুরকার; কিংবা একজনের কান্ট্রি গানের সুর নিয়ে আরেকজন কাট্রিসং বানিয়ে বাজারে ছেড়ে দেবেন। ব্যাপারটার পার্থক্য বুঝতে হবে। গগন হরকরার গানটির সুর তৈরিতে গগনকে সৃজনশীলতা দেখাতে হয়েছিল, কষ্ট করতে হয়েছিল। যাস্ট ‘বাউল সূর সর্বজন স্বীকৃ্ত’ বলে আরেক গানে কেউ কপি করে দিতে পারে না, ঠিক যেমনি আমি এখন রবীন্দ্রসংগীতের একটি গানের সুর আমার লেখা একটা গানে বসিয়ে বলতে পারি না যে, আমি একটা রবীন্দ্রসংগীত বানিয়েছি। এটা অন্যায় শুধু নয়, হাস্যকরও হবে।
সেটা আমরা কেউ অস্বীকার করছি না। কিন্তু তা বলে তার সমালোচনা বা কাজের দুর্বলতা নিয়ে কোন ধরণের আলোচনাই হতে পারবে না তা তো নয়। মুসলিমরা মুহম্মদকেও তাদের অহঙ্কার ভাবতে পারেন। কিন্তু মুহম্মদের সমালোচনা তো কম হচ্ছে না নেটে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ের পর ইউনুসকে নিয়ে লাফালাফি যেমন হয়েছে সমালোচনাও কম হয়নি। ‘বাঙালির অহঙ্কার’ বলে কোন ধরণের সমালোচনাই করা যাবে না, এটা তো সঠিক অবস্থান নয়। শেক্সপিয়র ইংরেজী ভাষায় রবীন্দ্রনাথের আসনের সমতুল্য। তিনিও ইংরেজী ভাষাভাষীদের কাছে অহঙ্কারই। কিন্তু তা বলে যে তার লেখার সমালোচনা হয়নি তা তো নয়। বহু সমালোচনাই হয়েছে এমনকি শেক্সপিয়েরের রচনা সব তারই রচনা কিনা তা নিয়েও সমালোচকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এখনো করছেন। শেক্সপিয়র বলে সেটা করা গেলে, রবীন্দ্রনাথ বলে তাকে ব্যতিক্রম হিসেবে রাখতে হবে – এ ধারণার সাথে সবাই হয়তো একমত হবেন না।
@অভিজিৎ,
অত্যন্ত বিশ্লেষণ মূলক বক্তব্য ভালোলাগলো। কেউ সমালোচনার উর্ধে নন কথাটা অবশ্যই ঠিক। তবে প্রথম লেখাটায় “শিরোনাম” আমার কাছে কষ্ট লেগেছে। এটা হয়তো একান্ত আমার ব্যক্তিগত অনূভূতি।
যাযাবর নাকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-
ভালোবাসা পক্ষপাতিত্ত্ব মূলক হয়ে থাকে
আমি ব্যক্তিগত ভাবে এনাকে খুব ভালোবাসি জীবনানদ দাশ ও আমার প্রিয় কবির তালিকায় -তাই বলেছি। আলোচনা চলুক-
আপনাকে এবং মুক্তমনার সবাইকে ঈদ-মুবারক (F)
“কাজেই সঠিক তথ্য জানাটাই এখন জরুরী তর্কের অবসানের জন্য ”
এ অধম এর মত অ তাই ।
এটাকে অযৌক্তিক ভক্তিবাদি বিশ্লেষণ বললেই ভাল হত।
ভাই–আপনার নোটটা পড়ার পরে মনে হল–অভিজিত ও ফরিদের নোটের কার্বন কপি করছেন। নতুন কিছুই কন নাই। আপনার এই কষ্টটা না করলেও হত। শুধু শুধু সময় নষ্ট। সেই তালগাছটা আমার। মাইনাস।