(১)
তিন বছর আগের ঘটনা। আমার একজন ড্যানিশ সহকর্মীর সাথে লাঞ্চ খাচ্ছি- বোধ হয় সেদিন কোন একটা কিছু ইসলামিক চরমপন্থী ঘটনা ঘটেছে। ফলত ইসলামিক চরমপন্থী এবং ইউরোপে মুসলিম অভিবাসন সমস্যার প্রসঙ্গ এসেই গেল। আমি খুব অবাক হলাম। ওর মতন একজন উচ্চশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ, ডেনমার্কে মুসলিম অভিবাসন নিয়ে এত ক্রদ্ধ-যে ও দরকার হলে বন্দুক নিয়ে গৃহযুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত। ক্রোধের কারন এন্ডলেস লিস্ট। এবং যার মূলে আছে মুসলিমদের ড্যানিশ সংস্কৃতিকে সম্পূর্ন অস্বীকার করে, ডেনমার্ককে ইসলামিকরনের চেষ্টা। ওর বক্তব্য ওরা কিছুতেই ড্যানিশ হবে না, ড্যানিশ সংস্কৃতিও মানবে না-দেশটাকে পাকিস্তান বানাবে।
ব্রেভিক
মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন মানসিকতা আমি ভারতে হিন্দুত্ববাদিদের মধ্যে দেখতে অভ্যস্ত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইসলামিকরনে প্রশয় দিচ্ছে সেই দেশের লিব্যারাল এবং বামপন্থী গোষ্ঠি। ফলে ইসলাম এবং কমিনিউজমের বিরুদ্ধে যুব সমাজের ক্রমবর্ধমান রাগ পৃথিবীর প্রায় সব অমুসলিম দেশেই ( যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা ৫-১০% বা তারও বেশী ) ক্রমঃবর্ধমান। দিল্লীতে একটা তরুণ ছেলের কথা শুনে প্রায় অজ্ঞান হবার জোগার। বিহারের এক দাঙ্গায় কিভাবে নিজের হাতে মুসলমানদের পুড়িয়ে মারাতে অংশ নিয়েছিল-সেই কথা গর্ব করে সে বলে বেড়ায়! শুধু তাই না। আমেরিকা এবং ইউরোপের অনেক উচ্চশিক্ষিত (যারা আমার সহকর্মীও বটে) আমার কাছে নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে গেছে। কারন তাদের নেতারা ইউরোপে যা পারে নি, বা আমেরিকাতও যা পারে না- মুসলমানদের গণনিধন- তা নরেন মোদি করে দেখিয়েছে বটে!

ইউরোপের প্রবল মুসলিম বিদ্বেশ-যা এতদিন শুধু কথাতে বুঝেছি, আজ গোটা বিশ্ব বুঝল এন্ড্রেস ভেরিং ব্রাভিকের গণহত্যার মাধ্যমে। কমিনিউস্ট তথা কালচারাল মার্ক্সিস্টদের প্রতি তার ঘৃণা এত গভীরে, বামপন্থী তরুণ তরুণীদের একটি পলিটিক্যাল ক্যাম্পের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালো।

আমি অবাক হইনি। আমার সেই ড্যানিশ বন্ধুটির কথা মনে পড়ছিল-ইসলামের বিরুদ্ধে তার এত রাগ, সে মনে করে বন্দুকের নলই একমাত্র সমাধান-কারন লেবার পার্টি ইউরোপে মুসলিমদের আরো বেশী প্রশয় দিচ্ছে এবং তারা ড্যানিশ সংস্কৃতি ধ্বংশ করছে। ব্রেভিকের ম্যানিফেস্টোও তাই- তার ধারনা মুসলিমরা আর দুদিন বাদে নরওয়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে এবং নরওয়ে বলে কিছু থাকবে না। ওটা ইউরোপের পাকিস্তান হবে। সুতরাং সে কুর্কীতি করে জনগণ ও মিডিয়া দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছে। আজকেও সে বলছে-কোর্টরুমকে তার আদর্শবাদি যুদ্ধের প্রচারের জন্যেই ব্যবহার করবে!

(২)

ব্রেভিকের দক্ষিন পন্থী আদর্শ নিয়ে কিছু লেখা দরকার। সে ইসলামের বিরুদ্ধে কোয়ালিশন গড়তে চেয়েছিল-এবং দেখা যাচ্ছে ভারতের হিন্দুত্ববাদি, ইস্ত্রায়েল, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের দক্ষিণপন্থী মুসলিম বিদ্বেশীদের সাথে ইমেলে তার যোগাযোগ ছিল। সে মোটেও অন্ধ ধার্মিক না- যদিও নিজেকে সে ক্রীষ্ঠান ইউরোপের রক্ষকর্ত্তা বলেই ঘোষনা দিয়েছে। এবং তার কাছে খ্রীষ্ঠান ইউরোপ একটা রাজনৈতিক ধারনা যেখানে খ্রীষ্ঠান ধর্মের ভিত্তিতে ইউরোপে ঐক্য আসবে। যা ক্রুসেডের সময় থেকে একটি প্রচলিত সাংস্কৃতিক রাজনীতি। এমন কি ধর্মীয় রাষ্ট্রও সে তার ম্যানিফেস্টোতে চাইছে না-খুব পরিস্কার ভাবেই “ইসলাম মুক্ত” ধর্মনিরেপেক্ষ লিব্যারাল স্টেটই চেয়েছে। তার রাজনৈতিক মতবাদ বিজেপির অন্যপিঠ- ধর্ম সেখানে জাতীয়তাবাদের প্রতীক। এবং অনেক ব্লগেই, ব্রেভিক বিজেপির কিছু বিশিষ্ঠ লেখকদের আকুন্ঠ প্রশংসা করেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থানের জন্যে– যে ইসলাম বিরোধি অবস্থান তার দেশের রাজনীতিবিদরা নিতে ব্যার্থ হচ্ছে বলে সে মনে করে। অর্থাৎ খুব স্পষ্ট ভাবেই ব্রেভিক এক রাজনৈতিক যোদ্ধা। একজন জেহাদি বা নক্সাল ( কমিনিউস্ট উগ্রপন্থী) যে কারনে হত্যাকান্ড চালিয়েও “সমাজ এবং দেশের জন্যে” বিরাট কিছু করছে বলে গর্ব বোধ করে-তার থেকে ব্রেভিকের হত্যাকান্ড আলাদা কিছু না। এটি খুবই পরিস্কার একটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এবং দক্ষিনপন্থী উগ্রপন্থাই এর জন্যে দায়ী।

(৩)
কিন্ত এই উগ্রপন্থা কেন? এই ক্ষেত্রে কমিনিউস্ট, হিন্দুইস্ট বা ইসলামিস্ট মৌলবাদি থেকে খ্রীষ্ঠান উগ্রপন্থী ব্রেভিক আলাদা কেও না। নক্সাল, জিহাদি, হিন্দুত্ববাদি বা খ্রীষ্ঠান উগ্রপন্থীদের মধ্যে কিছু প্যাটার্ন আমরা অবশ্যই দেখি

# পৃথিবীতে জাস্টিস নেই-বিচার নেই!
স্যোশাল মিডিয়ার দৌলতে কমিনিউস্ট, হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট এবং ক্রীষ্ঠান মৌলবাদিদের আদর্শ এবং মৌলবাদি হিসাবে তাদের বিশ্বাসকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য (!) থেকে মনে হয়েছে-এদের মনের গভীরে “ইনজাস্টিস” ব্যাপারটা ভীষন ভাবে উত্তেজিত করে।
জাস্টিসের প্রথম ধাপ আইডেন্টিটি বা নিজেকে একটি গ্রুপের বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করা। যেমন কমিনিউস্টদের ক্ষেত্রে এটি হয় শ্রেণীগত পরিচয়-তাদের ধারনা পৃথিবীতে শোষন আছে-এবং এই শোষন এবং অসাম্যটা একটা বিরাট বড় ইনজাস্টিস-এবং সেই ইনজাস্টিস টিকিয়ে রাখছে কিছু বড়লোক। সুতরাং এই জাস্টিসের দাবীতে সব কিছুই জায়েজ! মাই খুন পর্যন্ত।
ব্রেভিকের ব্যাপারটাও টাই। তার কাছে তার নরওয়েন পরিচিতিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেই পরিচিতি যারা ধ্বংশ করতে চাইছে-তারাই শত্রু। নরওয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে শত্রকে খুন করতে হবে! সে এক অলীক যুদ্ধক্ষেত্রের যোদ্ধা। যুদ্ধে খুন করে সে শহীদ হতে চাইছে! একদম জিহাদিদের মতন।

একজন মুসলিম জিহাদির কাছে তার মুসলিম পরিচয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন-এবং গোটা পৃথিবী বিশেষত আমেরিকা তাদের ওপর অত্যাচার করছে ইরাক আর আফগানিস্তানে-এটাই তাদের মনকে উত্তেজিত করে। যদিও বাস্তবে আমেরিকা বসনিয়া এবং আফগানিস্তানে মুসলমানদের মুক্তই করেছে!

# সে এক মহান কার্যে নিয়োজিত মহান যোদ্ধা
সে ইনজাস্টিসের বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছে! সুতরাং সে মহান! মানবিকতার মাপকাঠি সেখানে চলবে না! প্রতিটি হিন্দু, কমিনিউস্ট, ইসলামিস্ট, খ্রীষ্ঠান ভাবে, সে মহান পথের পথিক-কারন এই আদর্শগুলিই পৃথিবীকে “জাস্টিস” এনে দেবে! যদিও তারা একবার ও ভাবে না বা শিক্ষার অভাবে জানে না ( বা জানালেও বিশ্বাস করে না), তাদের এই সব মহান আদর্শগুলিই পৃথিবীতে সব থেকে বড় বড় ইনজাস্টিস এবং নরহত্যা ঘটিয়েছে।

# একদিন গোটা পৃথিবী তার আদর্শের পদতলে আসবে
আদর্শে বিশ্বাসীদের জন্যে এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তার আদর্শই একদিন জিতবে, পৃথিবীতে রাজত্ব করবে-এমন ভ্রান্ত বিশ্বাসের বলি না হলে কিছুতেই একজন তরুণ তার আদর্শের জন্যে প্রাণত্যাগ করতে পারে না। এই চরম আত্মবলিদানের পজিশনে সে তখনই পৌঁছায়, যখন এই ফাইনাল জাস্টিস বা সবকিছুর পরে জাস্টিস আসবেই-এবং আসবে তার আদর্শের মাধ্যমে-এই ধারণা, তার মাথার মধ্যে ভীষন ভাবে পোক্ত হয়। ব্রেভিকের ম্যানিফেস্টো থেকে কমিনিউস্ট ম্যানিফেস্টো বা কোরান বা বাইবেল-সবকিছুই মানুষের মাথা ন্যাড়া করে এই ফাইনাল জাস্টিসের গল্প দিয়ে। আমি দেখেছি কমিনিস্ট, হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট সবাই এই ব্যাপারে ভীষন রকমের এক। কার্বন কপি।

# একটা পিঁপড়ে মরলেও, সে সেটাকে তার আদর্শের সাদা কালো ফিল্টার দিয়ে দেখবে!

এদের সামাজিক বাস্তবতাতে পোস্ট মডার্নিজমের স্থান নেই সেখানে-সবই রাজনৈতিক বাস্তবতা। যেমন মুসলিম অভিবাসদের ক্ষেত্রে অসলোতে মোটে ৬০% লোক নিজেদের মুসলিম বলে রেজিস্টার করে-বাকি রা নিজেদের মুসলিম বলে না। অর্থাৎ মুসলিম সমাজেই এমন প্রচুর লোক অসলোতেই আছে, যারা তাদের ইসলামিক পরিচিতির চেয়ে নরওয়ের পরিচিতিই বেশী তুলে ধরতে ইচ্ছুক-এটা কিন্ত ব্রেভিকের ম্যানিফেস্টোতে নেই। দুনিয়া তার কাছে সাদা কালো। কোন মুসলিম অভিবাসী
নরওয়ের সংস্কৃতি গ্রহণ করে না তার মতে!

আমেরিকায় থাকা কোন বাঙালী কমিনিস্টদের বিরুদ্ধে লিখলেই বাঙালী কমিনিউস্টদের কাছে সে শিয়ার চর। মহম্মদের সমালোচনা করলেই সে ইসলামের শত্রু!

জাস্টিসের জন্যে খুন করা পবিত্রকাজ

১৯৭০ সালে বর্ধমানে সিপিএমের লোকেরা সাঁই ভাতৃদ্বয় বলে দুই কংগ্রেস সমর্থকে হত্যা করে তাদের মুন্ডু নিয়ে তাদের মায়ের সামনে নেচে ছিল। নেতৃত্বে ছিল, সিপিএমের কিছু প্রাত্তন মন্ত্রী। এই হত্যাকান্ড নিয়ে আমি যতবার সিপিএমের সমর্থকদের সাথে বিতর্কে গেছি-দেখেছি, তাদের কারুর কোন অনুতাপ নেই। বুক ভরে গর্ব করে। এমন কি ষষ্টি দলুই বলে এক প্রান্তিক কৃষকের চোখ খুবলে মেরেছিল বেশ কিছু সিপিএম হার্মাদ। আমি কোন সিপিএম সমর্থকের মধ্যে কোন অনুতাপ দেখি নি। নিন্দা করতেও দেখিনি। সাইরা বা দলুইরা কংগ্রেসের সমর্থক মানে তারা শ্রেণীশত্রু-সেটাই তাদের একমাত্র পরিচয়! ঠিক একই কারনে মুসলিম দুনিয়া ভারতে ঘটে যাওয়া ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মোটেও অনুতপ্ত না-তাদের অধিকাংশ গোপনে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ সমর্থনই করে। ঠিক একই কারনে মোদির আমলে ঘটা মুসলিম নিধন নিয়ে কোন হিন্দুত্ববাদি অনুতপ্ত না-বরং গর্বিত।

ব্রেভিকের অনুতাপহীন খুনী মানসিকতা বুঝতে-এগুলো বুঝতে হবে। সেন্স অব ইনজাস্টিস এবং শত্রুর ধারনা কি করে মানুষকে পশু বানাতে পারে। আজকে খুব পরিস্কার ভাবে বলার দিন এসেছে কমিনিউজম, ইসলামিজম, হিন্দুত্ববাদ, খ্রীষ্ঠান মৌলবাদ মানুষকে পশু বানায়-মানুষ করে না। মানুষ হওয়ার শিক্ষাটা আদর্শের পথে আসে না।

# তাদের শত্রুরা সব সময় শত্রুতা করছে-সবকিছুই তাদের বিরুদ্ধে চক্তান্ত
ব্রেভিকের মনে দৃঢ় বিশ্বাস মুসলিমরা নরওয়ে দখল করার চক্রান্ত করছে! কারন তারা ইঁদুর বিড়ালের হারে অসলোতে বংশ বৃদ্ধি করে! এবং তার কাছে এটা মুসলিম দুনিয়ার চক্রান্ত। যদিও বাস্তব এই যে ইউরোপের মুসলমান অভিবাসীদের মধ্যে বংশবৃদ্ধির হার বেশী কারন সোশ্যাল সিকিউরিটি। আমেরিকান মুসলিমদের বংশ বৃদ্ধির হার আমেরিকানদের সমানই। কারন এদেশে সবাইকে খেটে খেতে হয়। অর্থাৎ এই ধরনের কোন চক্রান্ত কোথাও নেই- মুসলিম অভিবাসীদের ফ্যামিলি সংস্কৃতির কারনে, তারা বেশী বংশ বৃদ্ধি করে-এটাকেই সে “পরিকল্পিত” চক্রান্ত বলে ভাবছে!

ঠিক একই জিনিস কমিনিউস্টদের মধ্যে দেখা যাবে। আমেরিকা যাই করুক তাই সাম্রাজ্যবাদি চক্রান্ত! মুক্ত বাণিজ্যের কারনে সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এবং চাকরী হারিয়েছে আমেরিকানরাই বেশী-সব থেকে বেশী লাভ করেছে ভারত। তবুও তা ভারতের বিরুদ্ধে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ! এই হচ্ছে চক্রান্ত তত্ত্বের মহিমা। আসলে এদের চিন্তার প্যাটার্নে শত্রু, ইনজাস্টিস এবং চক্রান্তের অস্তিত্ব জরুরী। নইলে এরা এদের “আত্মবলিদান” বা “ত্যাগের” পেছনে কোন কারন খুঁজে পাবে না।

# তারা কিছু সংস্কৃতির ব্যাপারে কিছু “বিশুদ্ধতার” ধারনাতে বিশ্বাসী-এবং সংস্কৃতির ধারাবাহিক বিবর্তন তারা মানতে পারে না।

সমস্যা হচ্ছে এদের কে বোঝাবে জীবনের পরম লক্ষ্য বলে কিছু থাকতে পারে না। তাই একটি সংস্কৃতি, অন্যটির চেয়ে বাজে বা অনুন্নত এই ধারনার বলি হওয়াটা বোকামো। প্রতিটা সংস্কৃতির ভালো খারাপ দিক আছে এবং সাংস্কৃতি বিবর্তনের উদ্দেশ্য দুটি সংস্কৃতির সংশ্লেষ -বিরোধ না।

আমেরিকাতে যেমন চৈনিক এবং ভারতীয় সংস্কৃতির সংশ্লেষণ হয়েছে-বিরোধ ঘটেনি। ভারতীয়, চিনা খাবার, মার্শাল আর্ট, যোগ ব্যায়াম অনেক কিছুই আমেরিকার মূল সংস্কৃতি প্রবাহে ঢুকেছে। ইসলাম এবং কমিনিউস্টদের ক্ষেত্রে সংশ্লেষণ বলে কোন বস্তু হতে পারে না-কারন তাদের মধ্যে “বিশুদ্ধ” ধারনাটির বিশাল প্রভাব। চোখের সামনে একজন লোক যতই দেখুক ১২০০ মিলিয়ান মুসলিমের ১২০০ মিলিয়ান ধর্ম-এবং বিশ্বের প্রতিটা লোকের ধর্ম কার্যত আলাদা হতে বাধ্য- সে নামেই যত মুসলমান বা হিন্দু হোক-তবুও ইসলামিক বিশুদ্ধতা, হিন্দু বিশুদ্ধতা নিয়ে এরা চিন্তা করে যাবেই। দুটো কমিনিউস্ট পাবেন না, যারা কমিনিউজম বলতে একই জিনিস মানে বা বোঝে-তবুও এদের মধ্যে ১০ বার স্নান করে বিশুদ্ধ থাকার প্রবণতা প্রবল। সবটাই মানসিক রোগ।

ব্রেভিকের ও ধারনা বিশুদ্ধ ইউরোপের উত্তরধিকার বিশুদ্ধ খ্রীষ্ঠান সংস্কৃতি! এটা মিথ। জিহাদিদের ধারনা বিশুদ্ধ ইসলামিক সমাজ, মহম্মদের রাজত্বে আরব! হিন্দুত্ববাদিদের বৈদিক সমাজ। কমিনিউস্টদের কাছে স্টালিনের রাশিয়া। এসবই মিথ। কিন্ত মিথের ওপর ভিত্তি করে, আত্মবলিদান ও হত্যাকান্ড ঘটানো, পৃথিবীর ইতিহাসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন দিক। হিটলার থেকে আজকের ব্রেভিক-সবাই সেই “মিথ” ভিত্তিক যোদ্ধা। যার পরিণতি ভয়ংকর।

আমি কমিনিউস্ট, হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট এবং ব্রেভিকের মতন সাংস্কৃতিক মৌলবাদিদের আলাদা করে দেখি না-কারন এদের সবাই মানুষ এবং মানুষ হিসাবে কেওই আলাদা হতে পারে না। শুধু ইনজাস্টিসের ধারনাটা এদের মধ্যে আলাদা। কিন্ত এদের মনের গঠন সম্পূর্ন এক-এটা আমার বহুদিনের নিজস্ব অভিজ্ঞতা।
বিশ্বাসের ভিত্তিতে এরা হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে এবং ঘটিয়ে যাবে। সুতরাং বিশ্বাস এবং মিথমুক্ত পৃথিবী চাই!