সখি, ভালবাসা কারে কয়? <আগের পর্ব : পর্ব-১পর্ব -২পর্ব-৩| পর্ব-৪ | পর্ব -৫ >

ভালবাসা নিয়ে ক্যাচাকেচি আর কত, বলুনতো!  গাছ থেকে পারা সবুজ লেবুটিকে মনে হয় বেশি কচলে মনে হয় তিতা করে ফেলেছি এর মধ্যেই। তাই পাঠকদের বিরক্তি আর না বাড়িয়ে সিরিজটি গুটিয়ে নেয়া যাক এই পর্বেই। হঠাৎ করেই গুটানোর ব্যাপারে মনস্থ করায়, এই শেষ পর্বটি অতিকায় হাতীর মতোই দীর্ঘ হয়ে গেল। পাঠকর ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।  অন্য পর্বগুলোতে প্রেম ভালবাসা এমনকি ঈর্ষা কিংবা ঘৃণা নিয়ে কথা বলা হলেও যৌনতার ব্যাপারে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। ভালবাসার কথা বলা হবে অথচ যৌনতা থাকবে না, এ হয় নাকি! আমরা তো রবীন্দ্র যুগে পড়ে নেই, যে শুধু ‘যে ছিলো আমার স্বপনচারিনী’ বলে আনমনে গাইবো, কিন্তু কখনো সেক্সের ধারের কাছ দিয়ে কিছু বলব না।  তাই নিজেদের আধুনিক প্রমাণ করতে এই পর্বে যৌনতা নিয়ে কিছু কথা বলতেই হল। তবে লেখায় যৌনতার গন্ধ পেয়েই তা নিয়ে অতিমাত্রায় উচ্ছ্বসিত না হয়ে বরং ব্যাপারগুলোকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে এবং বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলেই সীমাবদ্ধ রাখতে বিনীত অনুরোধ করছি।

জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখার আদলে লেখার প্রচেষ্টা নিলেও যথারীতি এই পর্বেও চেষ্টা করেছি বিজ্ঞানীদের সর্বাধুনিক গবেষণার আলোকে লেখাটিকে সাজাতে।  সে জন্যই প্রতিষ্ঠিত জার্নাল এবং গবেষকদের লেখা বইপত্র থেকেই রেফারেন্স হাজির করা হয়েছে।  তারপরেও কিছু জায়গায় বিতর্ক থাকবেই, থাকবে দ্বিমত। লেখায় বিতর্কের সুযোগ থাকাটাকেও আমি এই মুহূর্তে মূল্যবান মনে করছি।  একে তো বিবর্তন মনোবিজ্ঞান – শাখাটি নতুন, আর প্রেম ভালবাসা নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রটি বিজ্ঞানে আরো নতুন। তাই বিতর্ক হবেই। কিন্তু এই বিতর্ক থেকেও মূল্যবান কিছু বেরিয়ে আসবে বলে আমার ধারণা।  প্রান্তিক গবেষণালব্ধ জিনিস সাধারণ পাঠকদের কথা ভেবে হাজির করলে একটা ভয় সবসময়ই থাকে যে, পরবর্তীতে অনেক কিছুই মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। তারপরও এই প্রান্তিক জ্ঞানগুলো আমাদের জন্য জরুরী। অধ্যাপক স্টিভেন পিঙ্কার তার ‘হাও মাইন্ড ওয়ার্ক্স’ বইয়ের ভুমিকায় যেমনিভাবে বলেছিলেন – ‘Every idea in the book may turn out to be wrong, but that would be progress, because our old ideas were too vapid to be wrong!’ –  আমিও সেকথাই বলার চেষ্টা করব। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন শাখা। নতুন জিনিস নিয়ে গবেষনার ক্ষেত্রে – এর কিছু প্রান্তিক অনুমান যদি ভুলও হয়, সেটাই হবে পরবর্তী বিজ্ঞানীদের জন্য ‘প্রগ্রেস’।  আর সেই সঙ্ঘাত সংঘর্ষ থেকেই ঘটবে হবে নতুন অজানা জ্ঞানের উত্তোরণ।

এর আগের দুটি পর্বে আল্লাচালাইনা তার বেশ কিছু জোরালো মন্তব্যের মাধ্যমে প্রাণবন্ত  বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন, যা থেকে আমরা সবাই ঋদ্ধ হয়েছি। পুরো সিরিজটি তাই তাকেই উৎসর্গ করতে মনস্থ করেছি। 🙂

:line:

সেক্স বম্ব

নীচের ছবি দুটো লক্ষ্য করুন।

কোন্‌ ছবিটিকে আপনার কাছে অধিকতর ‘প্রিয়দর্শিনী’ বলে মনে হয়? জরিপে অংশ নেয়া অধিকাংশ পুরুষ এবং নারীই অভিমত দিয়েছেন ডান পাশেরটি – অর্থাৎ ২য় ছবিটিকে।

এবারে আরেকটু ভাল করে ছবি দুটো লক্ষ্য করুন।  দেখবেন যে ছবি দুটো আসলে একই নারীর। আসলে আরো স্পষ্ট করে বললে একটি ছবি থেকেই পরের ছবিটি তৈরি করা হয়ছে, কম্পিউটারে একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে। আর এটি প্রোগ্রাম করেছেন আইরিশ বংশদ্ভুত বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী ড. ভিক্টর জনস্টন[1]।  গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, ১ম ছবির সাথে  ২য় ছবির পার্থক্য আসলে সামান্যই।  প্রথম ছবিটির নারীর চিকন ঠোঁটকে একটু পুরু করা হয়েছে ২য় ছবিতে, চিবুকের আকার সামান্য কমিয়ে দেয়া হয়েছে, চোখের গভীরতা একটু বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর তাতেই অধিকাংশ পুরুষের কাছে ছবিটি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন?

বিজ্ঞানী ভিক্টর জনস্টন সহ অন্যান্য গবেষকদের  মতে, পুরু ঠোঁট  আসলে অধিক এস্ট্রোজেন  জমা হয়ে মুখমণ্ডল নমনীয় থাকার লক্ষণ,  আর অন্য দিকে সরু এবং চিকোন চিবুক ‘লো টেস্টোস্টেরন’ মার্কার।  এ ব্যাপারটা পুরুষদের কাছে পছন্দনীয় কারণ এ বৈশিষ্টগুলো  মোটা দাগে নারীর উর্বরাশক্তির বহিঃপ্রকাশ[2]।  আমার এ সিরিজের প্রথম পর্বে উল্লেখ করেছিলাম –  সৌন্দর্য্যের উপলব্ধি কোন বিমূর্ত ব্যাপার নয়।  এর সাথে যৌন আকর্ষণ এবং সর্বোপরি গর্ভধারণক্ষমতার একটা গভীর সম্পর্ক আছে, আর আছে আমাদের দীর্ঘদিনের বিবর্তনীয় পথপরিক্রমার সুস্পষ্ট ছাপ। আমরা যখন কাউকে প্রিয়দর্শিনী বলে ভাবি, আমাদের অজানতে আসলে  সেই চিরন্তন উপলব্ধিটাই কাজ করে।  আমাদের আদিম পূর্বপূরুষেরা  যৌনসঙ্গি নির্বাচনের সময়  এস্ট্রোজেনের মাত্রা নির্ণয়ের কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি খুঁজে পায় নি, তাদের কাছে সঙ্গির পরিস্কার চামড়া, ঘন চুল,  কমনীয় মুখশ্রী, প্রতিসাম্যময় দেহ, পিনোন্নত স্তন, সুডোল নিতম্ব আর ক্ষীন কটিদেশ  ছিলো গর্ভধারণ ক্ষমতা তথা উর্বরতার প্রতীক।  তাদের কাছে এই বৈশিষ্টগুলোই ছিলো আদরণীয়। তারা যৌনসঙ্গি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছে বিপরীত লিঙ্গের এ সমস্ত দেহজ বৈশিষ্টেরই। যাদের এ বৈশিষ্টগুলো ছিল তারাই সঙ্গি হিসেবে অধিকহারে নির্বাচিত হয়েছে,  আর তারা প্রকারন্তরে অর্জন করেছে  প্রজননগত সফলতা, আমরা তাদেরই বংশধর। তাই সঙ্গি নির্বাচনের সময়  আমাদের মনেও খেলা করে যায় সেই একই ধরণের অভিব্যক্তিগুলো, যেগুলোর প্রকাশ ঘটেছিল আসলে অনেক অনেক আগে  প্লেইস্টোসিন যুগে – আমাদের পূর্বপুরুষদের সঠিক সঙ্গি নির্বাচনের তাগিদে।

ঠিক একইভাবে মেয়েরাও লম্বা চওড়া সুদর্শন পুরষ পছন্দ করে,  যাদের রয়েছে সুগঠিত চোয়াল, চওড়া কাঁধ আর প্রতিসম সুগঠিত দেহ।   যেমন অভিনেতা ব্র্যাড পিট তার সুগঠিত দেহ, চওড়া এবং সুদৃঢ় চোয়ালের জন্য সারা পৃথিবী জুড়েই নারীদের কাছে আকর্ষনীয় এবং সুদর্শন পুরুষ হিসেবে  খ্যাত।  কারণ, পুরুষের এ পুরুষালি বৈশিষ্টগুলোই দীর্ঘদিন ধরে নারীদের কাছে নির্বাচিত হয়েছে  এক ধরণের ‘ফিটনেস মার্কার’ হিসেবে, শিকারী সংগ্রাহক সমাজে এ ধরনের পুরুষেরা  ছিলো নারীদের হার্টথ্রব, তারা ছিলো স্বাস্থ্যবান, উদ্যমী, সাহসী, ক্ষিপ্র এবং গোত্রের নিরাপত্তা প্রদানে  সফল। তারা অর্জন করতে পেরেছিল বহু নারীর সান্নিধ্য এবং পেয়েছিলো প্রজননগত সফলতা।  খুব সুচারুভাবে  সেই অভিব্যক্তিগুলো নির্বাচিত হয়েছিল বলেই সেগুলো নারীদের মানসপটে রাজত্ব করে এখনো, তারা সুদর্শন পুরুষ দেখে আমোদিত হয়।

চিত্র: অভিনেতা ব্র্যাড পিট তার সুগঠিত দেহ, চওড়া এবং সুদৃঢ় চোয়ালের জন্য সারা পৃথিবী জুড়েই নারীদের কাছে আরাধ্য।

অন্যদিকে প্লেবয়,  ভোগ কিংবা কসমোপলিটনের কভার গার্ল (বাংলা করলে বলা যায়  ‘মলাট সুন্দরী’) দের দিকে  কিংবা ছবির জগতের নায়িকাদের তাকালে বোঝা যায় কেন পুরুষেরা তাদের দেখলে লালায়িত হয়ে উঠে। তাদের থাকে ক্ষুদ্র নাসিকা, চিকোন চিবুক, বড় চোখ,  পুরুষ্ঠ ঠোঁট। তাদের সবার বয়সই থাকে মোটামুটি ১৭ থেকে ২৫ এর মধ্যে – যেটি মেয়েদের জীবনকালের সবচেয়ে উর্বর সময় বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়।  তাদের দেহ সৌষ্ঠব থাকে প্রতিসম। তাদের কোমোর এবং নিতম্বের অনুপাত থাকে ০.৭ এর কাছাকাছি।  শুধু প্লেবয়ের মলাট সুন্দরী নয়, বড় বড় অভিনেত্রী এবং সুপার মডেলদের জন্যও ব্যাপারটা একইভাবে দৃশ্যমান।  হলিউড অভিনেত্রী এবং একসময়ের বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের দেহের মাপ ৩২-২৫-৩৪ অর্থাৎ প্রায় ০.৭৩ । এঞ্জেলিনা জোলির  ০.৭২। জেনিফার লোপেজের  ০.৬৭। বিপাশা বসুর  ০.৭৬।  আর মেরোলিন মনেরোর দেহের মাপ ছিল ৩৬-২৪-৩৪, মানে একদম খাপে খাপ ০.৭।   নারীদেহের এই অনুপাতের একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে পুরুষের কাছে। দেখা গেছে, সাড়া দুনিয়া জুড়ে শোবিজের সাথে যুক্ত এই কাংক্ষিত নারীদের কোমর আর নিতম্বের অনুপাত সবসময়েই ০.৬ থেকে ০.৮ এর মধ্যে, বা আরো স্পষ্ট করে বললে  ০.৭ এর কাছাকাছি ঘোরাফিরা করে।  আমরা আগে অধ্যাপক দেবেন্দ্র সিংহের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করেছিলাম (প্রথম পর্ব দ্রঃ), যে গবেষণা থেকে  জানা গেছে  যে,  নারীর কোমর এবং নিতম্বের অনুপাত ০.৬ থেকে ০.৮ মধ্যে থাকলে  তা তৈরি করে সেই ‘ক্লাসিক hourglass figure’ যা সার্বজনীনভাবে পুরুষদের কাছে আকর্ষণীয় বলে প্রতীয়মান! অধ্যাপক সিংহ ১৯২০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ‘মিস আমেরিকা’দের মধ্যে এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্লে বয়ের  নায়িকাদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখেছেন মিস আমেরিকাদের ক্ষেত্রে কোমর-নিতম্বের অনুপাত ছিল ০.৬ ৯ থেকে  ০.৭২ এর মধ্যে, আর প্লেবয়ের নায়িকাদের ক্ষেত্রে  ০.৬ ৮ থেকে  ০.৭১ এর মধ্যে । এ সমস্ত আদর্শদেহবল্লরীর অধিকারী নায়িকারা এক একজন সেক্সবম্ব, যাদের যৌনাবেদন পুরুষদের কাছে আক্ষরিক অর্থেই আকাশ ছোঁয়া।  আর, বলা বাহুল্য পুরুষদের মানসপটে এই উদগ্র আগ্রহ তৈরি হয়েছে ডারউইন বর্নিত যৌনতার নির্বাচনের পথ ধরে।

কিন্তু সত্যই সেক্সুয়ালের সিলেকশনের মাধ্যমে  সত্যিই সেক্সবম্ব তৈরি হয় নাকি? ব্যাপারটা হাতে কলমে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স।  তবে মানুষের ক্ষেত্রে নয়, স্টিকেলব্যাক মাছের ক্ষেত্রে[3]।  তার পরীক্ষাটি একধরণের অধিপ্রাকৃতিক উদ্দীপনার (supernormal stimuli) পরীক্ষা বলা যায়।  অধ্যাপক ডকিন্স সহ অন্যান্য জীববিজ্ঞানীরা জানতেন যে, স্টিকেলব্যাক মাছের ক্ষেত্রে স্ত্রী মাছেরা যখন উর্বর সময় অতিক্রম করে তখন তাদের পেট  হয়ে উঠে ডিমে ভর্তি গোলাকার, লালাভ টসটসে। পুরুষ মাছেরা তাদের দেখে লালায়িত হয়।  ডকিন্স তার ল্যাবের একুরিয়ামে সাধারণ রূপালি মাছের পেট কৃত্রিমভাবে বড়, গোলাকার আর লালাভ করে দিয়ে  কিছু ‘ডামি মাছ’ পানিতে ছেড়ে দিলেন। ব্যাস দেখা গেলো পুরুষ  স্টিকেলব্যাক মাছেরা পারলে হামলে পড়ছে সে সব মাছের উপর।  যত বেশি নিখুঁত, গোলাকার আর  লালাভ পেট বানানো হচ্ছে, তত বাড়ছে পুরুষ মাছদের যৌনোদ্দীপনা।  ডকিন্সের ভাষায় সেই ডামি মাছ গুলো ছিলো স্টিকেলব্যাক মাছের রাজত্বে এক একটি ‘সেক্স বম্ব’।

যে ব্যাপারটা স্টিকেলব্যাক মাছের ক্ষেত্রে  সত্য বলে মনে হচ্ছে, মানুষের ক্ষেত্রেও কি সেটার সত্যতা বিভিন্নভাবে পাওয়া যাচ্ছে না?  নারীদের সাম্প্রতিক  ‘ব্রেস্ট ইম্পল্যান্ট’ সার্জারির হুজুগের কথাই ধরা যাক। এটা এমন এক ধরনের সার্জারি, যার মাধ্যমে নারীরা স্তনের আকার পরিবর্তন করে থাকেন।  এ সার্জারিগুলো এক সময় কেবল পর্নোস্টাররাই করতেন, এখন হলিউড বলিউডের  অভিনেত্রীদের কাছেও ব্যাপারটা খুবই সাধারণ, এমনকি বাসার গৃহিনীরাও তা করতে শুরু করেছে।  আমেরিকান সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জন (ASPS) এর তথ্য অনুযায়ী কেবল ২০০৩ সালেই আট মিলিয়ন মহিলা ‘ব্রেস্ট ইম্পল্যান্ট’ সার্জারি করেছে, যেটা আবার ২০০২ সালের চেয়ে শতকরা ৩২ ভাগ বেশি ।  খোদ আমেরিকাতে প্রতি বছর এক লক্ষ বিশ হাজার থেকে দেড় লক্ষ নারী ব্রেস্ট ইম্পল্যান্ট করে থাকে[4]। এমন নয় যে ক্ষুদ্র স্তন তাদের কোন দৈহিক সমস্যা করে। সার্জারির পুরো ব্যাপারটাই কেবল নান্দনিক (aesthetic), পুরুষদের যৌনোদ্দীপনাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের দেহকে সুন্দর করে উপস্থাপন, আর সর্বোপরি আত্মবিশ্বাস বাড়ানো।  স্টিকেলব্যাক পুরুষ মাছেরা যেমন বড়, গোলাকার আর  লালাভ পেট ওয়ালা স্ত্রী মাছদের জন্য লালায়িত হয়,  ঠিক তেমনি মানব সমাজে দেখা গেছে পুরুষেরা সুদৃঢ়, গোলাকার আর পিনোন্নত স্তন দেখে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে! পুরুষদের এই পছন্দ অপছন্দের প্রভাব পড়ছে আবার নারীদের আচরণে। এগুলো তারই প্রতিফলন।  শুধু  ব্রেস্ট ইম্পল্যান্টই নয়, সেই সাথে বোটক্স, ফেসলিফট, ঠোঁটের প্রস্থ বাড়ানো, চোখের ভুরু উঁচু করা, বাঁকা দাঁত সোজা করা, নাক খাড়া করা সহ সকল ধরণের প্লাস্টিক সার্জারির ক্রমবদ্ধমান জনপ্রিয়তা তৈরি করছে মানব সমাজে সেক্স বম্বের স্বপ্নীল চাহিদা!

প্লাস্টিক সার্জারির কথা বাদ দেই, সাড়া পৃথিবী জুড়ে স্নো, পাউডার লিপস্টিকের কী রমরমা ব্যাবসা। এই সব প্রসাধনসামগ্রীর মূল ক্রেতা কিন্তু মেয়েরাই। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি মিনিটে ১৪৮৪টি লিপস্টিকের টিউব এবং ২০৫৫ জার ‘স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট’ বিক্রি হয়। আমরা এগুলোর যত সামাজিক ব্যাখ্যা প্রতিব্যখ্যা করি না কেন, কিংবা যতইচ্ছে মিডিয়াকে দোষারোপ করি না কেন, এইধরণের ইণ্ডাস্ট্রি টিকে থাকার হিসেব খুব সহজ সরল – পুরুষেরা মেয়েদের কাছ থেকে যথাসম্ভব তারুণ্য এবং সৌন্দর্য আদায় করে নিতে চায়।  আবার মেয়েরাও বিপরীতলিঙ্গের সেই সঙ্গমী মননকে প্রাধান্য দিয়ে অব্যাহতভাবে  সৌন্দর্যচর্চা করে যায়, তারা ত্বককে রাখতে চায় যথাসম্ভব মাখনের মতোন পেলব, ঠোঁটকে গোলাপের মতো প্রস্ফুটিত; কারণ তারা দেখেছে এর মাধ্যমে স্টিকেলব্যাকের ডামি মাছগুলোর মতই অনেক ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটিজিগত ভাবে সঙ্গী নির্বাচন আর ধরে রাখায় সফল হওয়া যাচ্ছে।

চিত্র: পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি মিনিটে ১৪৮৪টি লিপস্টিকের টিউব এবং ২০৫৫ জার ‘স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট’ বিক্রি হয়।

এ তো গেলো মেয়েদের সঙ্গমী মননের স্ট্র্যাটিজি। অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রায় আট বিলিয়ন ডলারের গড়ে উঠা পর্নোগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রি পুরুষদের ‘সেক্স বম্ব’ চাহিদার চরমতম রূপ বললে অত্যুক্তি হবে না। সাড়া দুনিয়া জুড়ে আট বিলিয়ন ডলারের পর্নোগ্রাফি ব্যাবসা টিকে আছে পুরুষের লালসা আর জৈবিক চাহিদাকে মূল্য দিয়ে। মেয়েরা কিন্তু কখনোই পর্ণগ্রাফির মুল ক্রেতা নয়, ছিলোও না কখনো।  ব্রেস্ট ইম্পল্যান্ট করা সিলিকোন গার্লদের  নিখুঁত দেহবল্লরী আর যৌনাবেদনময়ী মায়াবী নারীদের আকর্ষণে পুরুষেরা নিশিরাত জেগে থাকে  কম্পিউটারের সামনে। পর্নোগ্রাফি দেখা কোন সত্যিকার যৌনসঙ্গম নয়, তারপরেও পর্নোভিডিও পুরুষদের নিয়ত উত্তেজিত করে তুলে অনেকটা  স্টিকেলব্যাক মাছের মতোই যেন। স্টিকেলব্যাক মাছের পুরুষ মাছেরা যেমনিভাবে লালাভ পেটওয়ালা ডামি মাছ থেকে কামার্ত হয়ে পড়েছিলো ডকিন্সের ল্যাবে একুরিয়ামের ভেতর,  ঠিক তেমনি মানব সমাজের  ‘পুরুষ মাছেরা’ একইভাবে কামার্ত হয়ে পড়ে কম্পিউটারের ভেতর ডামি মডেলদের নগ্নদৃশ্য দেখে!  তার মানে, নিজেদের আমরা ‘আশারাফুল মাখলুকাৎ’ বা সৃষ্টির সেরা জীব ভেবে  যতই আত্মপ্রসাদ লাভের চেষ্টা করি না কেন, আমরা প্রানীজগতের বইরে নই, আমাদের মানস জগৎও তৈরি হয়েছে অন্য প্রানীদের মতোই যৌনতার নির্বাচনের পথ ধরে, পর্নোগ্রাফি এবং সেক্সবম্বদের প্রতি পুরুষদের উদগ্র আগ্রহ  সেই আদিম সত্যকে স্পষ্ট করে তুলে।

ছেলেদের পুরুষাঙ্গের আকার এবং প্রকৃতি কি তবে মেয়েদের যৌনতার নির্বাচনের ফল?

প্রেম ভালবাসা এবং যৌনতায় পুরুষের পুরুষাঙ্গ যে একটা আলাদা জায়গা দখল করে আছে, তা আর  নতুন করে বলে দেবার বোধ হয় দরকার নেই। কিন্তু যেটা অনেকের কাছেই অজানা তা হল, বহু নারী গবেষকই তাদের অভিজ্ঞতা এবং গবেষণা থেকে ইঙ্গিত করেছেন ভাল যৌনসম্ভোগের জন্য পুরুষাঙ্গের আকার সম্ভবতঃ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়[5]। কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে  পৃথিবীতে অধিকাংশ পুরুষই তার পুরুষাঙ্গের আকার ‘ছোট’ ভেবে হীনমন্যতায় ভুগে থাকে।যেমন, গবেষক জ়ে লিভার ২০০৬ সালে ৫২৩১ জন পুরুষের উপর গবেষনা চালিয়ে দেখেন[6], প্রায় সকল পুরুষই প্রত্যাশা করে যে, তার পুরুষাঙ্গ আরেকটু বড় হলেই ভাল হত। প্রতি এক হাজার জনে মাত্র দু’জন অভিমত দিয়েছে পুরুষাঙ্গ ছোট হবার পক্ষে। আরেক গবেষক বি.ই. ডিলন এবং তার দলবল ২০০৮ সালে গবেষণায় দেখান যে, কৈশোর থেকে শুরু করে প্রৌঢ়ত্ব পর্যন্ত সবসময়ই পুরুষদের জন্য পুরুষাঙ্গের ক্ষুদ্র আকার একটি বিশাল উদ্বেগের কারণ[7]। অনেক পুরুষই আছেন যারা সঙ্গির সাথে প্রথম যৌন সম্পর্কের আগে এই ভেবে উদ্বিগ্ন থাকে যে, নগ্ন অবস্থায় তার ক্ষুদ্র পুরুষাঙ্গ দেখতে পেয়ে তার সঙ্গি নিশ্চয় যার পর নাই মনঃক্ষুন্ন হবে। কিন্তু পুরুষেরা তার নিজের যন্ত্রটি নিয়ে যাই ভাবুন না কেন,  মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রায় ৮৫ ভাগ নারী মনে করে তার সঙ্গির পুরুষাঙ্গের আকার  তার প্রত্যাশা এবং মাপমতোই আছে[8]!

সত্যি কথা হল – পুরুষদের পুরুষাঙ্গের ‘ক্ষুদ্র’ আকার নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার আসলে কোন কারণ নেই। মানব সমাজে পুরুষদের পুরুষাঙ্গের গড়পরতা  আকার অন্যান্য প্রাইমেটদের চেয়ে ঢের বড়- সুপার সাইজ বলা যায়। আর এই ব্যাপারটা তৈরি হয়েছে নারীর যৌন অভিরুচিকে প্রাধান্য দিয়ে। জিওফ্রি মিলার তার ‘সঙ্গমী মনন’ গ্রন্থের size mattered অংশে পুরুষাঙ্গের আকার নিয়ে নারী বিজ্ঞানীদের সনাতন কিছু ধারণা খণ্ডন করে অভিমত দিয়েছেন, তারা যেভাবে পুরুষাঙ্গের আকারকে হিসেবের বাইরে রাখতে চেয়েছেন, ব্যাপারটা আসলে এতোটা তুচ্ছ করার মতো নয়।   যৌনতার নির্বাচনের মূল জায়গাটিতে আবারো ফেরৎ যাই।  আমরা আগের একটি অংশে দেখেছিলাম নারীর পিনোন্নত স্তন, সুডোল নিতম্ব আর ক্ষীণ ক’টিদেশের প্রতি পুরুষদের সার্বজনীন আকর্ষণের কথা, আমরা দেখেছি কীভাবে যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে পুরুষেরা মেয়েদের দেহের বিভিন্ন বৈশিষ্টকে নির্বাচিত করেছিল, কারণ সে বৈশিষ্টগুলোই হয়ে উঠেছিলো তাদের চোখে প্রজনন ক্ষমতা এবং সুস্বাস্থ্যের প্রতীক।  এই যৌনতার নির্বাচন কিন্তু একতরফা ভাবে হয়নি। আমরা আগেই বলেছি,  যৌনতার নির্বাচনকে পুঁজি করে  পুরুষ যেমন গড়েছে নারীকে, তেমনি নারীও গড়েছে পুরুষের মানসপটকে এবং তার দেহজ বিভিন্ন বৈশিষ্টকে।  এক লৈঙ্গিক বৈশিষ্টগুলোর আবেদন তৈরি করেছে আরেক লিঙ্গের চাহিদা।

অনেক বিজ্ঞানীই আজ মনে করেন মানব সমাজে পুরুষদের পুরুষাঙ্গের আকার এবং প্রকৃতি অনেকটাই নির্ধারিত হয়েছে নারীর যৌন চাহিদাকে  মূল্য দিয়ে। ব্যাপারটা নিয়ে একটু খোলামেলা আলোচনায় যাওয়া যাক। মানুষের কাছাকাছি প্রজাতির প্রাইমেট সদস্যদের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ম্যান্ড্রিলদের গাঢ় গোলাপী রঙের  অণ্ডকোষ আর লাল রঙের পুরুষাংগ আছে। ভার্ভেট বানরদের নীল রঙের অণ্ডকোষের সাথে রক্তিম লাল বর্ণের পুরুষাঙ্গ আছে, ইত্যাদি। মানুষের মধ্যে অবশ্য সেসব কিছুই নেই।  সাদা চোখে মনে হতে পারে মানুষদের পুরুষাঙ্গ বোধ হয় সাদা মাঠা ম্যারম্যারে একটি অঙ্গ।  কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন, আসলে তা নয়।  প্রাইমেটদের অন্য প্রজাতির তুলনায় মানব পুরুষাঙ্গ আকারে বড়, মোটা এবং অধিকতর নমনীয়। একটা তুলনামূলক হিসেব দেই। গরিলাদের বিপুল দেহের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এতবড় দেহ থাকলে কি হবে, তাদের পুরুষাঙ্গের আকার পূর্ণ উত্থিত অবস্থাতেও মাত্র দুই ইঞ্চির বেশি হয় না। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে সেটি মাত্র তিন ইঞ্চি। আর মানুষের ক্ষেত্রে উত্থিত পুরুষাঙ্গের আকার গড় পরতা পাঁচ ইঞ্চি । সবচেয়ে বড় পুরুষাঙ্গের আকার বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে প্রায় তের ইঞ্চি, যা গড়পরতা দৈর্ঘ্যের দ্বিগুনেরও বেশি।  আর তারচেয়েও বড় কথা হল, মানব পুরুষাঙ্গের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট তৈরি হয়েছে, যা অন্য প্রাইমেট বর্গদের থেকে একদমই আলাদা।  অন্য প্রাইমেট প্রজাতিতে যেখানে পুরুষাঙ্গে একটি হাড় আছে যেটিকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ব্যাকালাম (baculum)  বলে অভিহিত করা হয় সেটি মানব লিঙ্গে একেবারেই অনুপস্থিত। সেজন্য বিশেষ এই মানব প্রত্যঙ্গটি হয়েছে অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় অনেক বেশি নমনীয়।  বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী জিওফ্রি মিলার তার গবেষণায় দাবী করেছেন অন্য প্রাইমেটদের পেন্সিল সদৃশ রোগা পুরুষাঙ্গের তুলনায় মানব পুরুষদের দীর্ঘ, চওড়া এবং হাড়বিহীন নমনীয় পুরুষাঙ্গ তৈরি হয়েছে মুলতঃ নারীর সার্বিক চাহিদাকে মূল্য দিয়ে[9]।  মিলার তার ‘সঙ্গমী মনন’ (The Mating Mind) বইয়ে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন এ ধরণের পুরুষাঙ্গ নারীরা পছন্দ করেছে কারণ এটি মেয়েদের চরম পুলক (অর্গাজম) আনয়নে  সহায়তা করেছে, এটি হয়েছে তাদের জন্য প্রচণ্ড রকমের আনন্দের উৎস, এবং তাদের ক্রমিক চাহিদা তৈরি করেছে উন্নত পুরুষাঙ্গ গঠনের নির্বাচনী চাপ[10]।  অন্য কিছু গবেষকদের সাম্প্রতিক গবেষণাতেও এই দাবীর স্বপক্ষে কিছুটা সত্যতা মিলেছে বলে দাবী করা হয়[11]

কান টানলে নাকি মাথা আসে। তাই পুরুষাঙ্গের আকারের কথা বলার সাথে সাথে অণ্ডকোষের আকার নিয়েও কিছু কথা এখানে চলে আসবে।  পাঠকদের কি মনে হবে জানিনা, পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে কিন্তু খুবই আকর্ষণীয়। বিবর্তনী মনোবিজ্ঞানীরা দেখেছেন শুক্রাশয় বা অণ্ডকোষের আকারের সাথে বহুগামিতা কিংবা অবিশ্বস্ততার একটা সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে। সে ব্যাপারটিতে যাবার আগে আমাদের কাছাকাছি প্রজাতিগুলো থেকে কিছু মজার উদাহরণ হাজির করা যাক।  আমরা সবাই চোখে না দেখলেও বই পত্র কিংবা ‘কিং কং’ জাতীয় মুভির মাধ্যমে বিশালকায় গরিলার আকার আয়তনের সাথে পরিচিত। এককেকটি ব্রহ্মদৈত্য গরিলা আকারে ওজনে প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ পাউণ্ড ছাড়িয়ে যায়। কেউ হয়তো ভাবতে পারেন যে, দেহের আয়তনের সাথে তাল মিলিয়ে তার শুক্রাশয়ের আকারও হবে মাশাল্লা – ফুটবল না হোক, নিদেনপক্ষে হওইয়া উচিৎ টেনিস বলের সাইজ। আসলে কিন্তু তা হয় না। এমন চারশ পাউণ্ড ওজনের বৃহতাকার গরিলাদের শুক্রাশয়ের ওজন হয় মাত্র দেড় আউন্স।  আর অন্য দিকে শিম্পাঞ্জিদের দৈহিক আকার কিন্তু অনেক ছোটখাট। কিন্তু সেতুলনায় তাদের শুক্রাশয়ের আকার অনেক বড়। মাত্র ১০০ পাউণ্ড  ওজনের একটি শিম্পাজির শুক্রাশয়ের ওজন প্রায় চার আউন্স!  এ যেন বার হাত কাঁকুড়ের তের হাত বীচি! কিন্তু কেন এমন হল?

এর কারণ লুকিয়ে আছে শিম্পাঞ্জি আর গরিলাদের সামাজিক সম্পর্কের পার্থক্যের মাঝে। দেখা গেছে শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে নারীরা হয় বহুগামী। তারা একই দিনে একাধিক পুরুষ শিম্পাঞ্জির সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয়।  অধিক সংখ্যক পুরুষের সাথে যথেচ্চার সম্ভোগের মাধ্যমে নারী শিম্পাঞ্জিরা প্রকারন্তরে নিশ্চিত করতে চায় যে, উৎকৃষ্ট জেনেটিক মালমশলাসম্পন্ন পুরুষের দ্বারাই যেন তার ডিম্বানুর নিষেক ঘটে। কিন্তু নারী শিম্পাঞ্জির এই ধরণের অভিরুচির কারণে পুরুষ শিম্পাঞ্জির জন্য ‘বংশ রক্ষা’ হয়ে যায় মাত্রাতিরিক্ত কঠিন।   তাদেরকে এক অসম বীর্য প্রতিযোগিতার (sperm competition) মধ্যে নামতে হয়।  নারী শিম্পাঞ্জির যোনিতে গর্ভধারণ নিয়ে বিভিন্ন পুরুষ শিম্পাঞ্জির শুক্রের মধ্যে নিরন্তর প্রতিযোগিতা চলে, সেই কারণে একটি পুরুষ শিম্পাঞ্জির পক্ষে কখনোই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না যে, যৌনসম্পর্ক হলেই তার নির্দিষ্ট বীর্য থেকেই নারী শিম্পাঞ্জিটি গর্ভধারণ করবে বা করছে। কিন্তু  সেই সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায় যদি তার শুক্রাশয়ের আকার অপেক্ষাকৃত বড় হয়, আর  তার শুক্রাশয় যদি সঙ্গমের সময় অঢেল  শুক্রের যোগান দিতে সমর্থ হয়।   শিম্পাঞ্জির এই বীর্য প্রতিযোগিতার লড়াইকে অনেকটা লটারি টিকেটের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।  যত বেশি সংখ্যক লটারি টিকেট আপনার দখলে থাকবে তত বেশি সম্ভাবনা তৈরি হবে আপনার বিজয়ী হবার। আপনার যদি সামর্থ থাকে প্রায় সব লটারি টিকেট কোনভাবে করায়ত্ত করার, আপনার বিজয়ী হবার সম্ভাবনা পাল্লা দিয়ে বাড়বে।  আদিতে হয়ত শিম্পাঞ্জিকূলে বড়, ছোট কিংবা মাঝারি – সব ধরনের শুক্রাশয়ওয়ালা পুরুষ শিম্পাঞ্জির অস্তিত্ব ছিলো। কিন্তু শিম্পাঞ্জি নারীদের বহুগামিতার সাথে পাল্লা দিতে দিয়ে  বড় শুক্রাশয়ওয়ালা শিম্পাঞ্জিরাই বাড়তি সুবিধা পেয়েছিলো, তারাই প্রতিযোগিতায় সফল গর্ভসঞ্চারের মাধ্যমে অধিক হারে সন্তান সন্ততি রেখে গেছে।  এই নির্বাচনী চাপই শিম্পাঞ্জিকূলে ত্বরান্বিত করেছে বৃহৎ শুক্রাশয় গঠনের দিকে (গড়পরতা শিম্পাঞ্জির শুক্রাশয়ের ওজন তার দেহের ওজনের ০.৩ ভাগ, এবং  শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ৬০ x ১০)।

ঠিক উলটো ব্যাপারটি ঘটে গরিলাদের ক্ষেত্রে।  নারী গরিলারা বহুগামী নয়।  কেবল পুরুষ গরিলারা বহুগামী। শক্তিশালী পুরুষ গরিলারা বড় সড় হারেম তৈরির মাধ্যমে নিশ্চিত করে বহু নারীর দখল। এভাবে পুরুষ গরিলারা নিশ্চিত করে তাদের অধিনস্ত নারীর দেহে নিরাপদ গর্ভসঞ্চার। কাজেই পুরুষ গরিলাদের জন্য ব্যাপারটা কখনোই পুরুষে পুরুষে বীর্য প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকে না,  বরঞ্চ হয়ে উঠে শক্তিমত্তার প্রতিযোগিতা।  শক্তিশালী পুরুষ গরিলারা  স্বীয় শক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ নারীর দখল নিয়ে নেয়, অধিকাংশ শক্তিহীনদের জন্য পড়ে থাকে দুর্ভাগ্য। সামাজিক অবস্থানের কারণেই  গরিলাদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী চাপ তৈরি করেছে  বড় সড় দেহ সমৃদ্ধ শক্তিশালী দেহগঠনের, বৃহৎ শুক্রাশয় তৈরির দিকে নয়।  গরিলাদের ক্ষেত্রে বৃহৎ শুক্রাশয় গঠনের কোন উপযোগিতা নেই।  নারী পুরুষের মধ্যকার সামাজিক সম্পর্কের কারণেই গরিলাদের ক্ষেত্রে দেহ অনুপাতে শুক্রাশয়ের আকার অনেক ছোট (শুক্রাশয়ের ওজন দেহের ওজনের ০.০২ ভাগ, এবং  শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ৫ x ১০)।

আপনার মাথায় নিশ্চয় এখন ঘুরতে শুরু করেছে – গরিলা আর শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে না হয় বোঝা গেল, কিন্তু  মানব সমাজের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটা কি রকম? এক্ষেত্রে মানুষের অবস্থান হল গরিলা আর শিম্পাঞ্জির মাঝামাঝি (শুক্রাশয়ের ওজন দেহের ওজনের ০.০৪- ০.০৮ ভাগ, এবং  শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ২৫ x ১০), যদিও গবেষকদের অনেকেই  রায় দিয়েছেন শুক্রাশয়ের গতি প্রকৃতি কিছুটা শিম্পাঞ্জির দিকে একটু বেশি করে ঝুঁকে রয়েছে। মানব সমাজে পুরুষ মানুষদের শুক্রাশয়ের আকার গরিলাদের মতো এত ছোট নয়, ফলে ধরে নেয়া যায় যে, মানব সমাজে নারীরা শতভাগ একগামী মনোভাবাপন্ন নয়। আবার শুক্রাশয়ের আকার পুরুষ শিম্পাঞ্জিদের শুক্রাশয়ের মতো এত বড় সড়ও  নয় – ফলে আমরা এটাও বুঝতে পারি যে, মানব সমাজে নারীরা আবার শতভাগ নির্বিচারী বহুগামীও হবে না।  মানুষের মধ্যে একগামিতা যেমন আছে তেমনি বহুগামিতার চর্চাও। মানুষ নামের এই প্রাইমেটের এই স্পিশিজটির অধিকাংশ সদস্যই ‘বিবাহ নামক ইন্সটিটিউশনের’ মাধ্যমে মনোগামিতার চর্চাকে বৈশিষ্ট হিসেবে জ্ঞাপন করলেও এর মধ্যে আবার অনেকেই সময় এবং সুযোগমত বহুগামী হয়, কাকোল্ড্রির চর্চা করে। অনেক ক্ষমতাবান পুরুষেরা (যেমন মহামতি আকবর, চেঙ্গিসখান প্রমুখ) আবার অধিক নারীর দখল নিতে অনেকটা গরিলাদের মতোই ‘হারেম তৈরি’ করে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই ‘সিরিয়াল মনোগামি’ অর্থাৎ, একই সময়ে কেবল একজন সঙ্গির সাথেই জীবন অতিবাহিত করে। নারীদের ক্ষেত্রেও বহুগামিতা ঠিক একই কারণে দৃশ্যমান এবং সেটা সকল সমাজেই। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অধিকাংশ নারীরাই নাকি বিয়ের আগে দু চারটি প্রেম টেম করে শেষ মেষ  একটি স্বামী খুঁজে নিয়ে ঘর সংসার করে, কদাচিৎ স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে পরকীয়া করে লুকিয়ে ছাপিয়ে, কখনো বা একেবারেই নয়। পশ্চিমেও মেয়েরা বয়ঃসন্ধির পর থেকেই স্বাধীনভাবেই একাধিক ‘ডেট’ করে, তাদের মধ্য থেকেই যোগ্য সঙ্গিকে বেঁছে নেয়। কখনো বা সঙ্গি বাছার প্রক্রিয়া চলতেই থাকে আজীবন, অনেকটা অধুনা পরলোকগত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলরের মতো।  সেজন্যই জোয়ান এলিসন  রজার্স তার “যৌনতাঃ প্রাকৃতিক ইতিহাস”  (Sex: A Natural History) বইএ  উল্লেখ করেছেন[12]

“পুরুষের অপেক্ষাকৃত বড় শুক্রাশয় এটাই ইঙ্গিত করে যে, নারীরা বিবর্তনের ইতিহাস পরিক্রমায় একগামী নয়,  বরং বহুগামীই ছিল”।

মানবেতিহাসের পথপরিক্রমায় নারীরা যে আসলে একগামী ছিলো না, তা পুরুষদের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের আকৃতি এবং সেই সাথে সঙ্গমের প্রকৃতি থেকেও তা কিছুটা আঁচ করা যায়।  এ নিয়ে জৈব শরীরবৃত্তবিদ গর্ডন জি গ্যালপ এবং তার দলবলের একটি চমৎকার গবেষণা আছে[13]।  ‘মানব লিঙ্গ একটি বীর্য প্রতিস্থাপন যন্ত্র’ (The human penis as a semen displacement device)  – শিরোনামের এই গবেষণাপত্রে গবেষকদল দেখিয়েছেন, অন্য প্রাইমেটদের থেকে মানুষের পুরুষাঙ্গের গঠন কিছুটা আলাদা।  ব্যাকালাম নামের হাড়টি যে আমাদের পুরুষাঙ্গে অনুপস্থিত, তা আমরা আগেই জেনেছি। এর বাইরে,  এর বাইরে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (glans) সূঁচালো কীলকাকৃতির (wedge shaped)। লিঙ্গের অগ্রভাগের ব্যাস পুরুষাঙ্গের স্তম্ভের ব্যাসের চেয়ে খানিকটা বড় হয়। পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ এবং স্তম্ভের সাধারণ তলে উদ্ভুত হওয়া ‘করোনাল রিজ’ -এর অবস্থান থাকে স্তুম্ভের সাথে উলম্বভাবে।  এ ছাড়া, সঙ্গম শুরুর পর থেকে বীর্যস্খলনের আগ পর্যন্ত  যোনির অভ্যন্তরে পুরুষকে উপর্যপুরি লিঙ্গ সঞ্চালনের (repeated thrusting) প্রয়োজন হয়।  কাজেই সূঁচালো কীলকসদৃশ লিঙ্গের অগ্রভাগের আকৃতি এবং সেই সাথে উপর্যপুরি লিঙ্গাঘাতের প্রক্রিয়া এটাই ইঙ্গিত করে যে,  নারীর যোনির ভিতরে স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোন পুরুষের শুক্রানুর  আগমন ঘটে থাকলে সেটাকে বিতারিত করার জন্য যথেষ্ট।  গ্যালোপের গবেষণাপত্রের ২৭৮ পৃষ্ঠায় সেটারই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে[14]

‘If a female copulated with more than one male within a short period of time, this would allow subsequent males to ‘‘scoop out’’ semen left by others before ejaculating’.

আরো একটি ব্যাপারেও নারীদের পরকীয়ার ভালোই আলামত পাওয়া গেছে। দম্পতিদের দীর্ঘদিন আলাদা করে রেখে এবং বহুদিন পরে সঙ্গমের সুযোগ করে দিয়ে দেখা গেছে এতে পুরুষের বীর্যপাতের হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। যত বেশি দিন যুগলকে পরষ্পর থেকে আলাদা করে রাখা হয়, পুনর্বার মিলনের সময় তত বেশি পাওয়া যায় শুক্রাণু প্রক্ষেপণের হার।  দেখা গেছে যদি কোন দম্পতির মধ্যে স্বামী স্ত্রী শতভাগ সময় জুড়ে একসাথে থাকে, তবে প্রতিবার সঙ্গমে গড়পরতা ৩৮৯ মিলিয়ন শুক্রাণু প্রক্ষিপ্ত হয়।  কিন্তু যদি শতকরা ৫ ভাগ সময় জুড়ে দম্পতিরা একসাথে থাকে, তবে প্রতি প্রক্ষেপণে শুক্রাণুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায়  ৭১২ মিলিয়নে – অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুন!  আসলে দীর্ঘদিন বিচ্ছেদের পর মিলনের সময় স্পার্মের যোগান  বেড়ে যায় কারণ, পুরুষেরা ভেবে নেয় যে বিচ্ছেদকালীন সময়টুকুতে স্ত্রীর পরকীয়া ঘটার কিছুটা হলেও সম্ভাবনা থাকে।  অন্য কোন পুরুষের শুক্রাণু স্ত্রী ধারণ করতে পারে এই সম্ভবনা থেকেই বীর্য প্রতিযোগিতা  বা স্পার্ম ওয়ার এ লিপ্ত হয় পুরুষটি তার অজানতেই। প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে সে নিক্ষিপ্ত করে তার অঢেল শুক্রাণুর যোগান, এবং দাবী করে তার শুক্রের মাধ্যমে নারীর গর্ভধারণের কাংক্ষিত নিশ্চয়তা।   ইতিহাসের পথপরিক্রমায় নারীদের পরকীয়া এবং বহুগামিতার আলামত প্রচ্ছন্নভাবে আছে বলেই দীর্ঘদিন বিচ্ছেদের পর মিলনের সময় খুব প্রত্যাশিতভাবেই শুক্রাণুর সংখ্যা বেড়ে যায়।

যদি মানব সমাজে নারীরা অনাদিকাল থেকে বহুগামিতায় অভ্যস্থ না হত, যদি একগামী সম্পর্কের বাইরেও অতিরিক্ত যুগল মৈথুনে (extra-pair copulations) কখনোই নিজেদের নিয়োজিত না করতো, তাহলে পুরুষের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ কীলকাকৃতি হওয়ারও দরকার পড়তো না, প্রয়োজন হত না  সঙ্গমকালীন সময়ে উপর্যুপরী লিঙ্গাঘাতেরও[15]। দরকার ছিলো না দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর মিলনের সময় শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিরও। আসলে মানব সমাজে নারীর একগামিতার পাশাপাশি বহুগামিতার প্যাটার্ণের একটি উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্য এগুলো।   শুধু পুরুষের বিশেষ অঙ্গেই নয়, বহুগামিতার নিদর্শন রয়েছে নারীদের নিজেদের শরীরেও। সেটা জানতে হলে আমাদের নারীর চরম পুলক বা অর্গাজম সম্বন্ধে জানতে হবে।

পুলকিত মনন (অর্গাজমিক মাইণ্ড)

বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ এবং বিবর্তন বিজ্ঞানী স্টিফেন জ়ে গুল্ড মনে করতেন নারীর চরম পুলকের কোন বিবর্তনীয় উপযোগিতা নেই[16]। এটা অনেকটা বিবর্তনের সাইড-ইফেক্ট – যাকে তিনি ডাকতেন স্প্যাণ্ড্রেল নামে।  বড় বড় ইমারত তৈরি করার সময় দেখা যায় যে, দুটি খিলানের মাঝে স্প্যাণ্ড্রেল বাড়তি উপাদান হিসেবে এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়, ইমারতের কারিগরী নকশার প্রয়োজনে নয়, বরং উপজাত হিসেবে।  এই স্প্যান্ড্রেলগুলো ইমারতকে মজবুত করতেও সাহায্য করে না, আরোপ করেনা কোন বাড়তি গুণাগুন।  কোন প্ল্যান প্রোগ্রাম ছাড়াই এগুলো কাঠামোতে উড়ে এসে জুড়ে বসে । যৌনসঙ্গমের সময় নারীর পুলকের ব্যাপারটাও গুল্ড মনে করতেন অনেকটা সেরকমেরই, যার স্বকীয় কোন ‘সার্ভাইভাল ভ্যালু’ নেই; এটা স্রেফ বিবর্তনের উপজাত।

এভাবে ভাবার অবশ্য কারণ আছে।  পুরুষদের জন্য পুলক বা অর্গাজম সরাসরি বীর্যপাতের সাথে যুক্ত। অর্থাৎ বীর্যপাতের সময়টাতেই পুরুষেরা চরম পুলক অনুভাব করে।  পুরুষদের ক্ষেত্রে পুলকের ব্যাপারটা সরাসরি প্রজননের সাথে যুক্ত থাকায় এ থেকে ‘পুরুষালি অর্গাজমের’ বিবর্তনগত উপযোগিতা সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।  কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা নয়। নারীর চরম পুলকের সাথে গর্ভধারণের কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই।  সত্যি বলতে কি – চরম পুলক ছাড়াও নারীর পক্ষে গর্ভ ধারণ সম্ভব, এবং সেটা অহরহই ঘটছে।  সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ নারী সঙ্গমের সময় সবসময়ই চরম পুলক লাভ করে, ৪৮ ভাগ নারী অধিকাংশ সময়, ১৯ ভাগ নারী জীবনের কখনো সখনো, ১১ ভাগ নারী কাদাচিৎ, আর ৭ ভাগ নারী জীবনের কখনোই অর্গাজম অনুভব করে না[17]।  অর্থাৎ, পুরুষদের অর্গাজমের ব্যাপারটা প্রচ্ছন্ন হলেও মেয়েদেরটা রহস্যময়, জটিল এবং অনেকসময় সাগরতীরে মৎসকুমারীর দেখা পাওয়ার মতোই যেন অলভ্য।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই সনাতন স্প্যাণ্ড্রেল আর উপজাত তত্ত্বের বাইরে গিয়ে নারীর পুলকের বেশ কিছু বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা হাজির করেছেন বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা। জীববিজ্ঞানীরা আবার এর মধ্যে খেয়াল করেছেন যে, মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাইমেটদের নারীদের মধ্যেও চরম পুলকের অস্তিত্ব রয়েছে[18], [19]।  ব্যাপারটা সত্যি হয়ে থাকলে নারী অর্গাজমের বিবর্তনগত উপযোগিতা থাকা অসম্ভব কিছু নয়।

বহু বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানী অভিমত দিয়েছেন যে, এই প্রক্রিয়ায় আসলে নারীরা তাদের অজানতেই পুরুষদের বীর্য প্রতিযোগিতায়  অংশগ্রহণ করে থাকে, এবং অর্গাজমের জটিল অথচ মায়াবী প্রক্রিয়ায় যোগ্য কিংবা সঠিক পুরুষটিকে বাছাইয়ের কাজ করে ফেলে।  অর্গাজমের সময় একটি নারীর শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠে,  হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়, মুখ দিয়ে গোঙানির মতো শব্দ বের হতে থাকে, মাংশপেশীর সংকোচন বা খিঁচুনির মত  অবস্থা ঘটে, কারো কারো ক্ষেত্রে হয় হ্যালুসিনেশন বা অলীক দর্শন[20]।  নারীর ভেতরে চলা এই জটিল এবং রহস্যময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারী সনাক্ত করে নেয় তার কাংক্ষিত ‘মিস্টার রাইট’কে।  সে হিসেবে চিন্তা করলে অর্গাজম আসলে নারীর এক ধরণের ‘মেট সিলেকশন ডিভাইস’ বা  সঙ্গি নির্ণায়ক যন্ত্র।   নিউইয়র্ক টাইমসের খ্যাতনামা বিজ্ঞান লেখিকা ন্যাটালি এঞ্জিয়ার  সেজন্যই তার একটি বইয়ে লিখেছেন[21]

নারীর পুলক হচ্ছে নারী অভিরুচি বাস্তবায়নের এক চূড়ান্ত অভিব্যক্তি।  … এটা নারীর মতো করে গোপন বিতর্কের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে তুলে নেওয়ার একটি সচেতন প্রক্রিয়া।

নারীর পুলকের সময় জরায়ু সহ বিভিন্ন মাংশপেশীর অবিরত সংকোচন ঘটে চলে। বিজ্ঞানীরা বলেন এই সংকোচন ঘটার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে।  এই জরায়ুর মাংশপেশী সংকোচনের মাধ্যমে একটি নারী নিশ্চিত করে যে, জরায়ুর গ্রীবাদেশীয় শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি (cervical mucus barrier)  অতিক্রম করে সে যেন শুক্রাণুকে নিজের দেহভ্যন্তরে পুরোপুরি টেনে নিতে পারে।  আমি একটি প্রকাশিত কেস স্টাডি থেকে এমন ঘটনার সন্ধানও পায়েছি  যে, অর্গাজমের চাপে একটি পুরুষের কণ্ডম পর্যন্ত ভিতরে শুষে নিয়েছিলো একটি নারীর দেহ, পরবর্তী অনুসন্ধানে কণ্ডমটি পাওয়া গিয়েছিলো নারীটির সার্ভিকাল ক্যানালের সরু পথে আটকে যাওয়া অবস্থায়[22]। এ থেকে অনুমান করা যায় যে,  অর্গাজম বা নারী পুলকের মূল লক্ষ্য থাকে শুক্রাণুকে যতদূর সম্ভব ডিম্বানুর কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া, এর ফলে বৃদ্ধি পায় গর্ভধারণের সম্ভাবনা।

বিজ্ঞানীরা এও দেখেছেন যে, নারীর অর্গাজম হলে  সে  যে পরিমাণ শুক্রাণু নিজের অভ্যন্তরে ধারণ করে, অর্গাজম না হলে তার চেয়ে অনেক কম শুক্রাণু সে তার মধ্যে ধারণ করতে পারে।  অর্থাৎ অর্গাজম হলে নারীর নিজের অভ্যন্তরে শুক্রাণুর ধারণ ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়[23]।  যেমন, দেখা গিয়েছে – স্বাভাবিক অবস্থায় একটি নারী সাধারণতঃ  সঙ্গমের পর মোটামুটি ৩৫ ভাগ শুক্রাণু নিজ দেহ থেকে বের করে দেয়।  কিন্তু নারীর অর্গাজম হলে সে প্রায় সত্তুর  ভাগ স্পার্ম নিজের মধ্যে ধারণ করে, আর বের করে দেয় ৩০ ভাগ।  তার মানে  চরম পুলক না হবার অর্থ হল,  অধিকতর বেশি শুক্রাণুর বর্জন।  এই সাক্ষ্যগুলো সেই ‘স্পার্ম রিটেনশন’ তত্ত্বকেই সমর্থন করে যার মাধ্যমে নারী অধিক সংখ্যক শুক্রাণুকে যোনি থেকে জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের দিকে টেনে নিয়ে  প্রকারান্তরে নিশ্চিত করতে চায় সঠিক পুরুষকে দিয়ে নিজের গর্ভধারণের সম্ভাবনা।

এখন কথা হচ্ছে – সঠিক পুরুষটি কেমন হতে পারে যে কিনা নারীকে নিয়মিত অর্গাজম উপহার দেবে? কোন কিছু চিন্তা না করেই বলা যায় যে পুরুষটির একটি গুণ হতে পারে – সে দেখতে শুনতে হবে সুদর্শন। জীববিজ্ঞানের ভাষায় সুদর্শন পুরুষের মানে হচ্ছে প্রতিসম (symmetrical) চেহারা আর দেহের অধিকারী পুরুষ। কারণ বিবর্তনীয় পথপরিক্রমায় নারীরা বুঝে নিয়েছে যে, প্রতিসম চেহারা এবং দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী পুরুষেরা স্বাস্থ্যবান, তাদের দেহ রোগ জীবাণুর আবাসস্থল নয়, অর্থাৎ মোটা দাগে তারা ‘সুপেরিয়র জেনেটিক কোয়ালিটি’র অধিকারী।  রান্ডি থর্নহিল স্টিভেন গেংস্টাডের গবেষণা থেকে দেখা গেছে,  নারীদের পুলকের পৌনুপুনিকতা এবং চরম পুলকানুভূতি আনয়নের ক্ষেত্রে সুদর্শন পুরুষেরাই অধিকতর বেশি সফল হয়ে থাকে[24]

সুদর্শন পুরুষেরাও আবার সে ব্যাপারটি ভাল করেই জানে এবং বুঝে।  সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুদর্শন পুরুষেরা খুব কম সময়ের মধ্যেই (shortest courtship) যে কোন ভালবাসার সম্পর্ককে যৌনসম্পর্কের দিকে নিয়ে যেতে পারে।  এও দেখা গেছে,  পশ্চিমা দেশে সুদর্শন পুরুষেরা ডেট করার সময় গড়পরতা  প্রতি নারীর পেছনে কম সময় এবং  অর্থ ব্যয় করে। শুধু তাই নয় সুদর্শন স্বামীরা অনেক বেশি হারে স্ত্রীদের প্রতারণা করে অন্য সম্পর্কে জড়ায়[25]

তবে নারী পুলক নিয়ে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ব্যাপারটি বেরিয়ে এসেছে বিজ্ঞানী রবিন বেকার এবং  মার্ক বেলিসের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে।  তাদের গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে সমস্ত নারীরা পরকীয়ায় মত্ত, তাদের অর্গাজম অনেক বেশি হয়। মানে, নিয়মিত সঙ্গির চেয়ে গোপন প্রেমিকের সাথে সঙ্গমে নারীর চরম পুলকের হার অনেক বেশি থাকে তাদের ক্ষেত্রে।  ব্রিটেনের ৩৬৭৯ জন নারীর উপর জরিপ চালিয়ে তারা দেখেছেন যে, তাদের ঋতুচক্রের সবচেয়ে উর্বর সময়গুলোতেই তারা পরকীয়ায় জরিয়ে পড়ে, যে সময়টাতে তাদের গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি[26]।  এও দেখা গেছে যে, পরকীয়ারত নারীরা স্বামীর সাথে অনেক বেশি পুলক জালিয়াতি (fake orgasm)  করে স্বামীদের আশ্বস্ত রাখতে চেষ্টা করে – সম্ভবতঃ এই ধারণা দিতে যে, সে কেবল তার স্বামীর প্রতিই রয়েছে বিশ্বস্ত[27]

নিঃসন্দেহে  স্বামীদের জন্য কোন সুসংবাদ নয় এটি।  কিন্তু এ ব্যাপারগুলো থেকে বোঝা যায় যে,  মেয়েদের মেটিং স্ট্র্যাটিজি সব সময় স্বামীকে তুষ্ট করে ‘যৌন বিশ্বস্ত’ হয়ে চলার জন্য বিবর্তিত হয়নি, বরং বিস্তৃত হয়েছে কখনো সখনো  উৎকৃষ্ট জিনের সন্ধানে  নিজের প্রজনন সফলতাকে বাস্তিবায়িত করার জন্যও।  মাথা নেড়ে যতোই এটাকে অস্বীকারের চেষ্টা করা হোক না কেন, বিবর্তনের অমসৃন যাত্রাপথে রয়েছে এর সুস্পষ্ট পদচিহ্ন।

চোখের  আলোয় দেখেছিলেম  মনের গভীরে

ভালবাসার কথা বললেই আমাদের সামনে সবার আগে হৃদয়ের কথা চলে আসে।  বিদগ্ধ প্রেমিক প্রেমিকেরা অহরহ  ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’ হয়ে উঠে, সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আসল সত্যটা হল- বিজ্ঞানীরা বলেন,  ভালবাসার উৎস হৃদয় নয়, বরং মস্তিস্ক।  শুধু তাই নয়, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী জিওফ্রি মিলারের মতে, মানুষের মস্তিস্ক বা ব্রেন হচ্ছে এক ‘Magnificent Sexual Ornament’, যা যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েছে আমাদের পছন্দ আপছন্দ অভিরুচিকে মূল্য দিয়ে।  মিলারের মতে মস্তিস্ককের প্রকৃতিও অনেকটা  পুরুষাঙ্গের মতোই  যৌননির্বাচনের ফসল। আমরা সে সমস্ত সঙ্গির সাথেই থাকতে পছন্দ করি যাদের সাথে থেকে আমরা সুখী বোধ করি[28]।  আর কার সাথে সুখি বোধ করব, তা নির্ধারণ করে আমাদের মস্তিস্ক, হৃদয় নয়।  আমরা যেমন স্বাস্থ্যবান, সুদর্শন সঙ্গি পছন্দ করি, তেমনি পছন্দ করি এমন কাউকে যে রসিকতা বুঝে,  প্রেম ভালবাসার ব্যাপারে রোমান্টিক এবং বিশ্বস্ত,  শিল্প সাহিত্য সঙ্গিতের ব্যাপারে  সমঝদার। আমরা এ ধরণের গুণাবলীগুলো পছন্দ করি কারণ  বিপরীতলিঙ্গের চাহিদাকে মূল্য দিয়ে আমাদের মস্তিস্ক অভিযোজিত হয়েছে আর আমাদের পছন্দ অপছন্দ আর ভাললাগাগুলো বিবর্তিত হয়েছে যৌনতার নির্বাচনের পথ ধরে।  যৌনতার নির্বাচনই আমাদের মস্তিস্কে তৈরি করেছে  গান বাজনা, নৃত্য গীত, কাব্য, শিল্প সাহিত্য, স্থাপত্যকর্ম, খেলাধূলা, বাগ্মীতা প্রভৃতির প্রতি অনুরাগ।  যাদের মধ্যে এ গুণাবলীগুলো আমরা খুঁজে পাই, তারা অনেক সময়ই হয়ে উঠে আমাদের পছন্দের মানুষজন।

বিজ্ঞানীরা এও লক্ষ্য করেছেন যে, মস্তিস্কের প্রকৃতি বদলে গেলে ভালবাসার প্রকৃতিও বদলে যায়।  এরকম একটি কেস্‌ স্টাডির কথা আমি  সম্প্রতি পড়েছি  পল ব্লুমের ‘হাও প্লেসার ওয়ার্ক্স’ বইয়ে। ১৯৩১ সালে নিথিবদ্ধ এ ঘটনা থেকে জানা যায় এক মহিলা তার স্বামীকে নিয়ে অহরহ অভিযোগ করতেন – তার সঙ্গি মোটেই পরিশীলিত নয়, কেমন যেন অদক্ষ চাষাভূষা টাইপের। বরদাস্তই করতে পারতেন না তিনি স্বামীকে একেবারে।   কিন্তু কিছুদিন পরে কোন এক রোগে কিংবা দুর্ঘটনায় মহিলাটির মস্তিস্কের বড় একটা অংশ আহত হয়।  দুর্ঘটনার পর স্মৃতিশক্তি ফিরে পাবার পর তার সঙ্গি সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গিয়েছিলো। যে লোকটাকে কিছুদিন আগেও অপিরিশিলীত চাষাড়ে বলে মহিলার মনে হচ্ছিল, সেই সঙ্গি তার কাছে রাতারাতি আবির্ভূত হলেন  “ধনবান, বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন এবং বর্নাঢ্য” ব্যক্তি হিসেবে।  সত্যি বলতে কি – যৌনাকর্ষণ এবং রোমান্টিক প্রেমের ব্যাপারগুলো রয়ে যায় মস্তিস্কের খুব গভীরে, মনের গহীন কোনে। মস্তিস্কের আঘাত সেই মহিলাটিকে সুযোগ করে দিয়েছিলো একেবারে নতুন ভাবে শুরু করতে, ফলে তার চিরচেনা সঙ্গি তার কাছে আবির্ভূত হয়েছিলো একেবারে নতুন মানুষ হিসেবে, অনেক পছন্দীয়  হিসেবে।  অর্থাৎ, মস্তিস্কের প্রকৃতি বদলে যাওয়ায় মহিলাটির ভালবাসার প্রকৃতিও বদলে গিয়েছিলো।

‘A Midsummer Night’s Dream’ নাটিকায় শেক্সপিয়র উচ্চারণ করেছিলেন, ‘Love looks not with the eyes but with the mind’। শেক্সপিয়র  মিথ্যে বলেননি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও তার একটি গানে যে কথাটি বলেছিলেন, ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’; সেই কথাটিকেই সামান্য বদলে দিয়ে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে বললে বলা যায় –

চোখের আলোয় দেখেছিলেম মনের গভীরে।

অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহি রে।।

আশা করছি রবীন্দ্রনাথের গানে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের কাঁচি চালানোয়  রবীন্দ্রভক্তরা মনঃক্ষুন্ন হয়ে যাবেন না।  ভালবাসার দাবী বলে কথা!

প্রথম পর্বে মহীনের ঘোড়াগুলি/পরশপাথরের ‘ভালবাসা মানে’ গানটির উল্লেখ করেছিলাম। শেষ পর্বে এসে সেটি আরেকবার শোনা যাক, নইলে আমার মতে ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ ঘটবে না –

ভালোবাসা মানে ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতি
ভালোবাসা মানে এলোচুল মাতোয়ারা
ভালোবাসা মানে সময় থামার আগে
ভালোবাসা মানে তোমার শুরু আমার সারা

ভালোবাসা মানে আর্চিস গ্যালারি
ভালোবাসা মানে গোপন গোপন খেলা
ভালোবাসা মানে কান্নাভেজা চোখে
ভালোবাসা মানে নীল খামেদের মেলা

ভালোবাসা মানে দূরভাষ নিশ্চুপে
শুনে ফেলে অনুভূতির হাসি
ভালোবাসা নান্দনিক যাতায়াতে
ভালোবাসা মানে চৌরাসিয়ার বাঁশি

ভালোবাসা মানে আগাম চলার সুর
ভালোবাসা মানে অবিরাম চলাবসা
ভালোবাসা মানে আঁখিপল্লব ছুঁয়ে
চিনতে শেখা শেষ কাব্যের ভাষা …

httpv://www.youtube.com/watch?v=wHRSB7hHexQ

এতোদিন ধরে যারা সিরিজটির সাথে ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ।

:line:

তথ্যসূত্র :

[1] VS Johnston, M Franklin. Is beauty in the eye of the beholder? Ethol. Sociobiol. 14: 183–99, 1993

[2] V S.Johnston,  Female facial beauty: the fertility hypothesis. Pragmatics Cogn. 8: 107–22, 2000.

[3] Richard Dawkins, River Out Of Eden: A Darwinian View Of Life, Basic Books , 1996

[4] Nancy Etcoff, Survival of the Prettiest: The Science of Beauty, Anchor; 2000.

[5] উদাহরণ হিসেবে, স্নায়ুবিজ্ঞানী Louann Brizendine তার The Male Brain গ্রন্থে লিখেছেন, “When it comes to sex, size is less important than men think… 85% women say that they are happy with their partner’s [penis] size”

আরেক নারী জীববিজ্ঞানী Lynn Margulis তার Mystery of Dance গ্রন্থে লিখেছেন, “Penis dimension is neither the major determinant of female sexual pleasure, nor is a big penis a guarantee for female pleasure”

[6] J. Lever, D.A. Frederick & L.A. Peplau, Does size matter? Men’s and women’s views on penis size across the lifespan. Psychology of Men & Masculinity, 7, 129-143, 2006

[7] BE  Dillon, NB Chama, SC Honig. Penile size and penile enlargement surgery: A review. Int J Impot Res,20:519–29, 2008

[8] Louann Brizendine M.D., The Male Brain, Broadway;  March 23, 2010

[9] G. F. Miller, (1998). How mate choice shaped human nature: A review of sexual selection and human evolution. In C. B. Crawford, & D. Krebs (Eds.), Handbook of evolutionary psychology: Ideas, issues,

and applications (pp. 87−130). Mahwah, NJ: Lawrence Erlbaum Associates

[10] Geoffrey Miller, The Mating Mind: How Sexual Choice Shaped the Evolution of Human Nature, Anchor, 2001.

[11] Paul Bloom, How Pleasure Works: The New Science of Why We Like What We Like, W. W. Norton & Company; 1st edition , 2010

[12] Joann Ellison Rodgers, Sex: A Natural History, W. H. Freeman, January 15, 2002

[13] G.G. Gallup Jr. et al., The human penis as a semen displacement device, Evolution and Human Behavior 24, 2003, pp 277–289

[14] পূর্বোক্ত।

[15] Baker, R. R., & Bellis, M. A. (1995). Human sperm competition: copulation, masturbation, and infidelity. London: Chapman & Hall.

[16] E.A. Lloyd, The Case of The Female Orgasm: Bias in the science of evolution. Cambridge MA: Harvard University Press, 2005
Also see, S.J. Gould, (1992). Male Nipples and Clitoral Ripples. In Bully for Brontosaurus: Further Reflections in Natural History. New York: W. W. Norton. pp. 124-138, 1992.

[17] Carol  Tavris  & Susan  Sadd,  The Redbook Report on Female Sexuality, New York: Delacorte, 1977

[18] AK Slob, and JJ van der Werff ten Bosch. Orgasm in non-human species. In Proceedings of the First International Conference on Orgasm, pp. 135-149, 1991.

[19] Alan F. Dixon, Primate Sexuality. Comparative Studies of the Prosimians, Monkeys, Apes, and Human Beings, Oxford University Press, Oxford, 1998

[20] Louann Brizendine M.D., The Female Brain, Broadway;  March 23, 2006

[21] Natalie Angier, Woman: An Intimate Geography, Anchor; Reprint edition, 2000

[22] I. Singer, “Fertility and the female orgasm.” In Goals of Human Sexuality, London: Wildwood House., p 159–97, 1973

[23] K Dawood, KM Kirk, JM Bailey, PW Andrews,  NG Martin. Genetic and environmental influences on the frequency of orgasm in women, Twin Research and Human Genetics, 8(1) : p 27-33, 2005.

[24] R. Thornhill, S. W. Gangestad, & R Comer Human female orgasm and mate fluctuating asymmetry. Animal Behaviour, 50, 1601-1615, 1995.

[25] Louann Brizendine, The Female Brain, Three Rivers Press, August 7, 2007

[26] R.R. Baker & M.A. Bellis, Human Sperm Competition: Copulation, Masturbation and Infidelity, Springer, 1999

[27] Louann Brizendine, The Female Brain, Three Rivers Press, August 7, 2007

[28] Paul Bloom, How Pleasure Works: The New Science of Why We Like What We Like, W. W. Norton & Company; 2010)

সখি, ভালবাসা কারে কয়? <আগের পর্ব : পর্ব-১পর্ব -২পর্ব-৩| পর্ব-৪ | পর্ব -৫ >

সমাপ্ত