সখি, ভালবাসা কারে কয়? <আগের পর্ব : পর্ব-১ । পর্ব -২ । পর্ব-৩| পর্ব-৪ | পর্ব -৫ >
ভালবাসা নিয়ে ক্যাচাকেচি আর কত, বলুনতো! গাছ থেকে পারা সবুজ লেবুটিকে মনে হয় বেশি কচলে মনে হয় তিতা করে ফেলেছি এর মধ্যেই। তাই পাঠকদের বিরক্তি আর না বাড়িয়ে সিরিজটি গুটিয়ে নেয়া যাক এই পর্বেই। হঠাৎ করেই গুটানোর ব্যাপারে মনস্থ করায়, এই শেষ পর্বটি অতিকায় হাতীর মতোই দীর্ঘ হয়ে গেল। পাঠকর ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অন্য পর্বগুলোতে প্রেম ভালবাসা এমনকি ঈর্ষা কিংবা ঘৃণা নিয়ে কথা বলা হলেও যৌনতার ব্যাপারে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। ভালবাসার কথা বলা হবে অথচ যৌনতা থাকবে না, এ হয় নাকি! আমরা তো রবীন্দ্র যুগে পড়ে নেই, যে শুধু ‘যে ছিলো আমার স্বপনচারিনী’ বলে আনমনে গাইবো, কিন্তু কখনো সেক্সের ধারের কাছ দিয়ে কিছু বলব না। তাই নিজেদের আধুনিক প্রমাণ করতে এই পর্বে যৌনতা নিয়ে কিছু কথা বলতেই হল। তবে লেখায় যৌনতার গন্ধ পেয়েই তা নিয়ে অতিমাত্রায় উচ্ছ্বসিত না হয়ে বরং ব্যাপারগুলোকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে এবং বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলেই সীমাবদ্ধ রাখতে বিনীত অনুরোধ করছি।
জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখার আদলে লেখার প্রচেষ্টা নিলেও যথারীতি এই পর্বেও চেষ্টা করেছি বিজ্ঞানীদের সর্বাধুনিক গবেষণার আলোকে লেখাটিকে সাজাতে। সে জন্যই প্রতিষ্ঠিত জার্নাল এবং গবেষকদের লেখা বইপত্র থেকেই রেফারেন্স হাজির করা হয়েছে। তারপরেও কিছু জায়গায় বিতর্ক থাকবেই, থাকবে দ্বিমত। লেখায় বিতর্কের সুযোগ থাকাটাকেও আমি এই মুহূর্তে মূল্যবান মনে করছি। একে তো বিবর্তন মনোবিজ্ঞান – শাখাটি নতুন, আর প্রেম ভালবাসা নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রটি বিজ্ঞানে আরো নতুন। তাই বিতর্ক হবেই। কিন্তু এই বিতর্ক থেকেও মূল্যবান কিছু বেরিয়ে আসবে বলে আমার ধারণা। প্রান্তিক গবেষণালব্ধ জিনিস সাধারণ পাঠকদের কথা ভেবে হাজির করলে একটা ভয় সবসময়ই থাকে যে, পরবর্তীতে অনেক কিছুই মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। তারপরও এই প্রান্তিক জ্ঞানগুলো আমাদের জন্য জরুরী। অধ্যাপক স্টিভেন পিঙ্কার তার ‘হাও মাইন্ড ওয়ার্ক্স’ বইয়ের ভুমিকায় যেমনিভাবে বলেছিলেন – ‘Every idea in the book may turn out to be wrong, but that would be progress, because our old ideas were too vapid to be wrong!’ – আমিও সেকথাই বলার চেষ্টা করব। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন শাখা। নতুন জিনিস নিয়ে গবেষনার ক্ষেত্রে – এর কিছু প্রান্তিক অনুমান যদি ভুলও হয়, সেটাই হবে পরবর্তী বিজ্ঞানীদের জন্য ‘প্রগ্রেস’। আর সেই সঙ্ঘাত সংঘর্ষ থেকেই ঘটবে হবে নতুন অজানা জ্ঞানের উত্তোরণ।
এর আগের দুটি পর্বে আল্লাচালাইনা তার বেশ কিছু জোরালো মন্তব্যের মাধ্যমে প্রাণবন্ত বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন, যা থেকে আমরা সবাই ঋদ্ধ হয়েছি। পুরো সিরিজটি তাই তাকেই উৎসর্গ করতে মনস্থ করেছি। 🙂
:line:
সেক্স বম্ব
নীচের ছবি দুটো লক্ষ্য করুন।
কোন্ ছবিটিকে আপনার কাছে অধিকতর ‘প্রিয়দর্শিনী’ বলে মনে হয়? জরিপে অংশ নেয়া অধিকাংশ পুরুষ এবং নারীই অভিমত দিয়েছেন ডান পাশেরটি – অর্থাৎ ২য় ছবিটিকে।
এবারে আরেকটু ভাল করে ছবি দুটো লক্ষ্য করুন। দেখবেন যে ছবি দুটো আসলে একই নারীর। আসলে আরো স্পষ্ট করে বললে একটি ছবি থেকেই পরের ছবিটি তৈরি করা হয়ছে, কম্পিউটারে একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে। আর এটি প্রোগ্রাম করেছেন আইরিশ বংশদ্ভুত বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী ড. ভিক্টর জনস্টন[1]। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, ১ম ছবির সাথে ২য় ছবির পার্থক্য আসলে সামান্যই। প্রথম ছবিটির নারীর চিকন ঠোঁটকে একটু পুরু করা হয়েছে ২য় ছবিতে, চিবুকের আকার সামান্য কমিয়ে দেয়া হয়েছে, চোখের গভীরতা একটু বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর তাতেই অধিকাংশ পুরুষের কাছে ছবিটি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন?
বিজ্ঞানী ভিক্টর জনস্টন সহ অন্যান্য গবেষকদের মতে, পুরু ঠোঁট আসলে অধিক এস্ট্রোজেন জমা হয়ে মুখমণ্ডল নমনীয় থাকার লক্ষণ, আর অন্য দিকে সরু এবং চিকোন চিবুক ‘লো টেস্টোস্টেরন’ মার্কার। এ ব্যাপারটা পুরুষদের কাছে পছন্দনীয় কারণ এ বৈশিষ্টগুলো মোটা দাগে নারীর উর্বরাশক্তির বহিঃপ্রকাশ[2]। আমার এ সিরিজের প্রথম পর্বে উল্লেখ করেছিলাম – সৌন্দর্য্যের উপলব্ধি কোন বিমূর্ত ব্যাপার নয়। এর সাথে যৌন আকর্ষণ এবং সর্বোপরি গর্ভধারণক্ষমতার একটা গভীর সম্পর্ক আছে, আর আছে আমাদের দীর্ঘদিনের বিবর্তনীয় পথপরিক্রমার সুস্পষ্ট ছাপ। আমরা যখন কাউকে প্রিয়দর্শিনী বলে ভাবি, আমাদের অজানতে আসলে সেই চিরন্তন উপলব্ধিটাই কাজ করে। আমাদের আদিম পূর্বপূরুষেরা যৌনসঙ্গি নির্বাচনের সময় এস্ট্রোজেনের মাত্রা নির্ণয়ের কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি খুঁজে পায় নি, তাদের কাছে সঙ্গির পরিস্কার চামড়া, ঘন চুল, কমনীয় মুখশ্রী, প্রতিসাম্যময় দেহ, পিনোন্নত স্তন, সুডোল নিতম্ব আর ক্ষীন কটিদেশ ছিলো গর্ভধারণ ক্ষমতা তথা উর্বরতার প্রতীক। তাদের কাছে এই বৈশিষ্টগুলোই ছিলো আদরণীয়। তারা যৌনসঙ্গি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছে বিপরীত লিঙ্গের এ সমস্ত দেহজ বৈশিষ্টেরই। যাদের এ বৈশিষ্টগুলো ছিল তারাই সঙ্গি হিসেবে অধিকহারে নির্বাচিত হয়েছে, আর তারা প্রকারন্তরে অর্জন করেছে প্রজননগত সফলতা, আমরা তাদেরই বংশধর। তাই সঙ্গি নির্বাচনের সময় আমাদের মনেও খেলা করে যায় সেই একই ধরণের অভিব্যক্তিগুলো, যেগুলোর প্রকাশ ঘটেছিল আসলে অনেক অনেক আগে প্লেইস্টোসিন যুগে – আমাদের পূর্বপুরুষদের সঠিক সঙ্গি নির্বাচনের তাগিদে।
ঠিক একইভাবে মেয়েরাও লম্বা চওড়া সুদর্শন পুরষ পছন্দ করে, যাদের রয়েছে সুগঠিত চোয়াল, চওড়া কাঁধ আর প্রতিসম সুগঠিত দেহ। যেমন অভিনেতা ব্র্যাড পিট তার সুগঠিত দেহ, চওড়া এবং সুদৃঢ় চোয়ালের জন্য সারা পৃথিবী জুড়েই নারীদের কাছে আকর্ষনীয় এবং সুদর্শন পুরুষ হিসেবে খ্যাত। কারণ, পুরুষের এ পুরুষালি বৈশিষ্টগুলোই দীর্ঘদিন ধরে নারীদের কাছে নির্বাচিত হয়েছে এক ধরণের ‘ফিটনেস মার্কার’ হিসেবে, শিকারী সংগ্রাহক সমাজে এ ধরনের পুরুষেরা ছিলো নারীদের হার্টথ্রব, তারা ছিলো স্বাস্থ্যবান, উদ্যমী, সাহসী, ক্ষিপ্র এবং গোত্রের নিরাপত্তা প্রদানে সফল। তারা অর্জন করতে পেরেছিল বহু নারীর সান্নিধ্য এবং পেয়েছিলো প্রজননগত সফলতা। খুব সুচারুভাবে সেই অভিব্যক্তিগুলো নির্বাচিত হয়েছিল বলেই সেগুলো নারীদের মানসপটে রাজত্ব করে এখনো, তারা সুদর্শন পুরুষ দেখে আমোদিত হয়।
চিত্র: অভিনেতা ব্র্যাড পিট তার সুগঠিত দেহ, চওড়া এবং সুদৃঢ় চোয়ালের জন্য সারা পৃথিবী জুড়েই নারীদের কাছে আরাধ্য।
অন্যদিকে প্লেবয়, ভোগ কিংবা কসমোপলিটনের কভার গার্ল (বাংলা করলে বলা যায় ‘মলাট সুন্দরী’) দের দিকে কিংবা ছবির জগতের নায়িকাদের তাকালে বোঝা যায় কেন পুরুষেরা তাদের দেখলে লালায়িত হয়ে উঠে। তাদের থাকে ক্ষুদ্র নাসিকা, চিকোন চিবুক, বড় চোখ, পুরুষ্ঠ ঠোঁট। তাদের সবার বয়সই থাকে মোটামুটি ১৭ থেকে ২৫ এর মধ্যে – যেটি মেয়েদের জীবনকালের সবচেয়ে উর্বর সময় বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়। তাদের দেহ সৌষ্ঠব থাকে প্রতিসম। তাদের কোমোর এবং নিতম্বের অনুপাত থাকে ০.৭ এর কাছাকাছি। শুধু প্লেবয়ের মলাট সুন্দরী নয়, বড় বড় অভিনেত্রী এবং সুপার মডেলদের জন্যও ব্যাপারটা একইভাবে দৃশ্যমান। হলিউড অভিনেত্রী এবং একসময়ের বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের দেহের মাপ ৩২-২৫-৩৪ অর্থাৎ প্রায় ০.৭৩ । এঞ্জেলিনা জোলির ০.৭২। জেনিফার লোপেজের ০.৬৭। বিপাশা বসুর ০.৭৬। আর মেরোলিন মনেরোর দেহের মাপ ছিল ৩৬-২৪-৩৪, মানে একদম খাপে খাপ ০.৭। নারীদেহের এই অনুপাতের একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে পুরুষের কাছে। দেখা গেছে, সাড়া দুনিয়া জুড়ে শোবিজের সাথে যুক্ত এই কাংক্ষিত নারীদের কোমর আর নিতম্বের অনুপাত সবসময়েই ০.৬ থেকে ০.৮ এর মধ্যে, বা আরো স্পষ্ট করে বললে ০.৭ এর কাছাকাছি ঘোরাফিরা করে। আমরা আগে অধ্যাপক দেবেন্দ্র সিংহের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করেছিলাম (প্রথম পর্ব দ্রঃ), যে গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, নারীর কোমর এবং নিতম্বের অনুপাত ০.৬ থেকে ০.৮ মধ্যে থাকলে তা তৈরি করে সেই ‘ক্লাসিক hourglass figure’ যা সার্বজনীনভাবে পুরুষদের কাছে আকর্ষণীয় বলে প্রতীয়মান! অধ্যাপক সিংহ ১৯২০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ‘মিস আমেরিকা’দের মধ্যে এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্লে বয়ের নায়িকাদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখেছেন মিস আমেরিকাদের ক্ষেত্রে কোমর-নিতম্বের অনুপাত ছিল ০.৬ ৯ থেকে ০.৭২ এর মধ্যে, আর প্লেবয়ের নায়িকাদের ক্ষেত্রে ০.৬ ৮ থেকে ০.৭১ এর মধ্যে । এ সমস্ত আদর্শদেহবল্লরীর অধিকারী নায়িকারা এক একজন সেক্সবম্ব, যাদের যৌনাবেদন পুরুষদের কাছে আক্ষরিক অর্থেই আকাশ ছোঁয়া। আর, বলা বাহুল্য পুরুষদের মানসপটে এই উদগ্র আগ্রহ তৈরি হয়েছে ডারউইন বর্নিত যৌনতার নির্বাচনের পথ ধরে।
কিন্তু সত্যই সেক্সুয়ালের সিলেকশনের মাধ্যমে সত্যিই সেক্সবম্ব তৈরি হয় নাকি? ব্যাপারটা হাতে কলমে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স। তবে মানুষের ক্ষেত্রে নয়, স্টিকেলব্যাক মাছের ক্ষেত্রে[3]। তার পরীক্ষাটি একধরণের অধিপ্রাকৃতিক উদ্দীপনার (supernormal stimuli) পরীক্ষা বলা যায়। অধ্যাপক ডকিন্স সহ অন্যান্য জীববিজ্ঞানীরা জানতেন যে, স্টিকেলব্যাক মাছের ক্ষেত্রে স্ত্রী মাছেরা যখন উর্বর সময় অতিক্রম করে তখন তাদের পেট হয়ে উঠে ডিমে ভর্তি গোলাকার, লালাভ টসটসে। পুরুষ মাছেরা তাদের দেখে লালায়িত হয়। ডকিন্স তার ল্যাবের একুরিয়ামে সাধারণ রূপালি মাছের পেট কৃত্রিমভাবে বড়, গোলাকার আর লালাভ করে দিয়ে কিছু ‘ডামি মাছ’ পানিতে ছেড়ে দিলেন। ব্যাস দেখা গেলো পুরুষ স্টিকেলব্যাক মাছেরা পারলে হামলে পড়ছে সে সব মাছের উপর। যত বেশি নিখুঁত, গোলাকার আর লালাভ পেট বানানো হচ্ছে, তত বাড়ছে পুরুষ মাছদের যৌনোদ্দীপনা। ডকিন্সের ভাষায় সেই ডামি মাছ গুলো ছিলো স্টিকেলব্যাক মাছের রাজত্বে এক একটি ‘সেক্স বম্ব’।
যে ব্যাপারটা স্টিকেলব্যাক মাছের ক্ষেত্রে সত্য বলে মনে হচ্ছে, মানুষের ক্ষেত্রেও কি সেটার সত্যতা বিভিন্নভাবে পাওয়া যাচ্ছে না? নারীদের সাম্প্রতিক ‘ব্রেস্ট ইম্পল্যান্ট’ সার্জারির হুজুগের কথাই ধরা যাক। এটা এমন এক ধরনের সার্জারি, যার মাধ্যমে নারীরা স্তনের আকার পরিবর্তন করে থাকেন। এ সার্জারিগুলো এক সময় কেবল পর্নোস্টাররাই করতেন, এখন হলিউড বলিউডের অভিনেত্রীদের কাছেও ব্যাপারটা খুবই সাধারণ, এমনকি বাসার গৃহিনীরাও তা করতে শুরু করেছে। আমেরিকান সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জন (ASPS) এর তথ্য অনুযায়ী কেবল ২০০৩ সালেই আট মিলিয়ন মহিলা ‘ব্রেস্ট ইম্পল্যান্ট’ সার্জারি করেছে, যেটা আবার ২০০২ সালের চেয়ে শতকরা ৩২ ভাগ বেশি । খোদ আমেরিকাতে প্রতি বছর এক লক্ষ বিশ হাজার থেকে দেড় লক্ষ নারী ব্রেস্ট ইম্পল্যান্ট করে থাকে[4]। এমন নয় যে ক্ষুদ্র স্তন তাদের কোন দৈহিক সমস্যা করে। সার্জারির পুরো ব্যাপারটাই কেবল নান্দনিক (aesthetic), পুরুষদের যৌনোদ্দীপনাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের দেহকে সুন্দর করে উপস্থাপন, আর সর্বোপরি আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। স্টিকেলব্যাক পুরুষ মাছেরা যেমন বড়, গোলাকার আর লালাভ পেট ওয়ালা স্ত্রী মাছদের জন্য লালায়িত হয়, ঠিক তেমনি মানব সমাজে দেখা গেছে পুরুষেরা সুদৃঢ়, গোলাকার আর পিনোন্নত স্তন দেখে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে! পুরুষদের এই পছন্দ অপছন্দের প্রভাব পড়ছে আবার নারীদের আচরণে। এগুলো তারই প্রতিফলন। শুধু ব্রেস্ট ইম্পল্যান্টই নয়, সেই সাথে বোটক্স, ফেসলিফট, ঠোঁটের প্রস্থ বাড়ানো, চোখের ভুরু উঁচু করা, বাঁকা দাঁত সোজা করা, নাক খাড়া করা সহ সকল ধরণের প্লাস্টিক সার্জারির ক্রমবদ্ধমান জনপ্রিয়তা তৈরি করছে মানব সমাজে সেক্স বম্বের স্বপ্নীল চাহিদা!
প্লাস্টিক সার্জারির কথা বাদ দেই, সাড়া পৃথিবী জুড়ে স্নো, পাউডার লিপস্টিকের কী রমরমা ব্যাবসা। এই সব প্রসাধনসামগ্রীর মূল ক্রেতা কিন্তু মেয়েরাই। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি মিনিটে ১৪৮৪টি লিপস্টিকের টিউব এবং ২০৫৫ জার ‘স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট’ বিক্রি হয়। আমরা এগুলোর যত সামাজিক ব্যাখ্যা প্রতিব্যখ্যা করি না কেন, কিংবা যতইচ্ছে মিডিয়াকে দোষারোপ করি না কেন, এইধরণের ইণ্ডাস্ট্রি টিকে থাকার হিসেব খুব সহজ সরল – পুরুষেরা মেয়েদের কাছ থেকে যথাসম্ভব তারুণ্য এবং সৌন্দর্য আদায় করে নিতে চায়। আবার মেয়েরাও বিপরীতলিঙ্গের সেই সঙ্গমী মননকে প্রাধান্য দিয়ে অব্যাহতভাবে সৌন্দর্যচর্চা করে যায়, তারা ত্বককে রাখতে চায় যথাসম্ভব মাখনের মতোন পেলব, ঠোঁটকে গোলাপের মতো প্রস্ফুটিত; কারণ তারা দেখেছে এর মাধ্যমে স্টিকেলব্যাকের ডামি মাছগুলোর মতই অনেক ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটিজিগত ভাবে সঙ্গী নির্বাচন আর ধরে রাখায় সফল হওয়া যাচ্ছে।
চিত্র: পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি মিনিটে ১৪৮৪টি লিপস্টিকের টিউব এবং ২০৫৫ জার ‘স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট’ বিক্রি হয়।
এ তো গেলো মেয়েদের সঙ্গমী মননের স্ট্র্যাটিজি। অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রায় আট বিলিয়ন ডলারের গড়ে উঠা পর্নোগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রি পুরুষদের ‘সেক্স বম্ব’ চাহিদার চরমতম রূপ বললে অত্যুক্তি হবে না। সাড়া দুনিয়া জুড়ে আট বিলিয়ন ডলারের পর্নোগ্রাফি ব্যাবসা টিকে আছে পুরুষের লালসা আর জৈবিক চাহিদাকে মূল্য দিয়ে। মেয়েরা কিন্তু কখনোই পর্ণগ্রাফির মুল ক্রেতা নয়, ছিলোও না কখনো। ব্রেস্ট ইম্পল্যান্ট করা সিলিকোন গার্লদের নিখুঁত দেহবল্লরী আর যৌনাবেদনময়ী মায়াবী নারীদের আকর্ষণে পুরুষেরা নিশিরাত জেগে থাকে কম্পিউটারের সামনে। পর্নোগ্রাফি দেখা কোন সত্যিকার যৌনসঙ্গম নয়, তারপরেও পর্নোভিডিও পুরুষদের নিয়ত উত্তেজিত করে তুলে অনেকটা স্টিকেলব্যাক মাছের মতোই যেন। স্টিকেলব্যাক মাছের পুরুষ মাছেরা যেমনিভাবে লালাভ পেটওয়ালা ডামি মাছ থেকে কামার্ত হয়ে পড়েছিলো ডকিন্সের ল্যাবে একুরিয়ামের ভেতর, ঠিক তেমনি মানব সমাজের ‘পুরুষ মাছেরা’ একইভাবে কামার্ত হয়ে পড়ে কম্পিউটারের ভেতর ডামি মডেলদের নগ্নদৃশ্য দেখে! তার মানে, নিজেদের আমরা ‘আশারাফুল মাখলুকাৎ’ বা সৃষ্টির সেরা জীব ভেবে যতই আত্মপ্রসাদ লাভের চেষ্টা করি না কেন, আমরা প্রানীজগতের বইরে নই, আমাদের মানস জগৎও তৈরি হয়েছে অন্য প্রানীদের মতোই যৌনতার নির্বাচনের পথ ধরে, পর্নোগ্রাফি এবং সেক্সবম্বদের প্রতি পুরুষদের উদগ্র আগ্রহ সেই আদিম সত্যকে স্পষ্ট করে তুলে।
ছেলেদের পুরুষাঙ্গের আকার এবং প্রকৃতি কি তবে মেয়েদের যৌনতার নির্বাচনের ফল?
প্রেম ভালবাসা এবং যৌনতায় পুরুষের পুরুষাঙ্গ যে একটা আলাদা জায়গা দখল করে আছে, তা আর নতুন করে বলে দেবার বোধ হয় দরকার নেই। কিন্তু যেটা অনেকের কাছেই অজানা তা হল, বহু নারী গবেষকই তাদের অভিজ্ঞতা এবং গবেষণা থেকে ইঙ্গিত করেছেন ভাল যৌনসম্ভোগের জন্য পুরুষাঙ্গের আকার সম্ভবতঃ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়[5]। কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে পৃথিবীতে অধিকাংশ পুরুষই তার পুরুষাঙ্গের আকার ‘ছোট’ ভেবে হীনমন্যতায় ভুগে থাকে।যেমন, গবেষক জ়ে লিভার ২০০৬ সালে ৫২৩১ জন পুরুষের উপর গবেষনা চালিয়ে দেখেন[6], প্রায় সকল পুরুষই প্রত্যাশা করে যে, তার পুরুষাঙ্গ আরেকটু বড় হলেই ভাল হত। প্রতি এক হাজার জনে মাত্র দু’জন অভিমত দিয়েছে পুরুষাঙ্গ ছোট হবার পক্ষে। আরেক গবেষক বি.ই. ডিলন এবং তার দলবল ২০০৮ সালে গবেষণায় দেখান যে, কৈশোর থেকে শুরু করে প্রৌঢ়ত্ব পর্যন্ত সবসময়ই পুরুষদের জন্য পুরুষাঙ্গের ক্ষুদ্র আকার একটি বিশাল উদ্বেগের কারণ[7]। অনেক পুরুষই আছেন যারা সঙ্গির সাথে প্রথম যৌন সম্পর্কের আগে এই ভেবে উদ্বিগ্ন থাকে যে, নগ্ন অবস্থায় তার ক্ষুদ্র পুরুষাঙ্গ দেখতে পেয়ে তার সঙ্গি নিশ্চয় যার পর নাই মনঃক্ষুন্ন হবে। কিন্তু পুরুষেরা তার নিজের যন্ত্রটি নিয়ে যাই ভাবুন না কেন, মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রায় ৮৫ ভাগ নারী মনে করে তার সঙ্গির পুরুষাঙ্গের আকার তার প্রত্যাশা এবং মাপমতোই আছে[8]!
সত্যি কথা হল – পুরুষদের পুরুষাঙ্গের ‘ক্ষুদ্র’ আকার নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার আসলে কোন কারণ নেই। মানব সমাজে পুরুষদের পুরুষাঙ্গের গড়পরতা আকার অন্যান্য প্রাইমেটদের চেয়ে ঢের বড়- সুপার সাইজ বলা যায়। আর এই ব্যাপারটা তৈরি হয়েছে নারীর যৌন অভিরুচিকে প্রাধান্য দিয়ে। জিওফ্রি মিলার তার ‘সঙ্গমী মনন’ গ্রন্থের size mattered অংশে পুরুষাঙ্গের আকার নিয়ে নারী বিজ্ঞানীদের সনাতন কিছু ধারণা খণ্ডন করে অভিমত দিয়েছেন, তারা যেভাবে পুরুষাঙ্গের আকারকে হিসেবের বাইরে রাখতে চেয়েছেন, ব্যাপারটা আসলে এতোটা তুচ্ছ করার মতো নয়। যৌনতার নির্বাচনের মূল জায়গাটিতে আবারো ফেরৎ যাই। আমরা আগের একটি অংশে দেখেছিলাম নারীর পিনোন্নত স্তন, সুডোল নিতম্ব আর ক্ষীণ ক’টিদেশের প্রতি পুরুষদের সার্বজনীন আকর্ষণের কথা, আমরা দেখেছি কীভাবে যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে পুরুষেরা মেয়েদের দেহের বিভিন্ন বৈশিষ্টকে নির্বাচিত করেছিল, কারণ সে বৈশিষ্টগুলোই হয়ে উঠেছিলো তাদের চোখে প্রজনন ক্ষমতা এবং সুস্বাস্থ্যের প্রতীক। এই যৌনতার নির্বাচন কিন্তু একতরফা ভাবে হয়নি। আমরা আগেই বলেছি, যৌনতার নির্বাচনকে পুঁজি করে পুরুষ যেমন গড়েছে নারীকে, তেমনি নারীও গড়েছে পুরুষের মানসপটকে এবং তার দেহজ বিভিন্ন বৈশিষ্টকে। এক লৈঙ্গিক বৈশিষ্টগুলোর আবেদন তৈরি করেছে আরেক লিঙ্গের চাহিদা।
অনেক বিজ্ঞানীই আজ মনে করেন মানব সমাজে পুরুষদের পুরুষাঙ্গের আকার এবং প্রকৃতি অনেকটাই নির্ধারিত হয়েছে নারীর যৌন চাহিদাকে মূল্য দিয়ে। ব্যাপারটা নিয়ে একটু খোলামেলা আলোচনায় যাওয়া যাক। মানুষের কাছাকাছি প্রজাতির প্রাইমেট সদস্যদের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ম্যান্ড্রিলদের গাঢ় গোলাপী রঙের অণ্ডকোষ আর লাল রঙের পুরুষাংগ আছে। ভার্ভেট বানরদের নীল রঙের অণ্ডকোষের সাথে রক্তিম লাল বর্ণের পুরুষাঙ্গ আছে, ইত্যাদি। মানুষের মধ্যে অবশ্য সেসব কিছুই নেই। সাদা চোখে মনে হতে পারে মানুষদের পুরুষাঙ্গ বোধ হয় সাদা মাঠা ম্যারম্যারে একটি অঙ্গ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন, আসলে তা নয়। প্রাইমেটদের অন্য প্রজাতির তুলনায় মানব পুরুষাঙ্গ আকারে বড়, মোটা এবং অধিকতর নমনীয়। একটা তুলনামূলক হিসেব দেই। গরিলাদের বিপুল দেহের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এতবড় দেহ থাকলে কি হবে, তাদের পুরুষাঙ্গের আকার পূর্ণ উত্থিত অবস্থাতেও মাত্র দুই ইঞ্চির বেশি হয় না। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে সেটি মাত্র তিন ইঞ্চি। আর মানুষের ক্ষেত্রে উত্থিত পুরুষাঙ্গের আকার গড় পরতা পাঁচ ইঞ্চি । সবচেয়ে বড় পুরুষাঙ্গের আকার বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে প্রায় তের ইঞ্চি, যা গড়পরতা দৈর্ঘ্যের দ্বিগুনেরও বেশি। আর তারচেয়েও বড় কথা হল, মানব পুরুষাঙ্গের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট তৈরি হয়েছে, যা অন্য প্রাইমেট বর্গদের থেকে একদমই আলাদা। অন্য প্রাইমেট প্রজাতিতে যেখানে পুরুষাঙ্গে একটি হাড় আছে যেটিকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ব্যাকালাম (baculum) বলে অভিহিত করা হয় সেটি মানব লিঙ্গে একেবারেই অনুপস্থিত। সেজন্য বিশেষ এই মানব প্রত্যঙ্গটি হয়েছে অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় অনেক বেশি নমনীয়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী জিওফ্রি মিলার তার গবেষণায় দাবী করেছেন অন্য প্রাইমেটদের পেন্সিল সদৃশ রোগা পুরুষাঙ্গের তুলনায় মানব পুরুষদের দীর্ঘ, চওড়া এবং হাড়বিহীন নমনীয় পুরুষাঙ্গ তৈরি হয়েছে মুলতঃ নারীর সার্বিক চাহিদাকে মূল্য দিয়ে[9]। মিলার তার ‘সঙ্গমী মনন’ (The Mating Mind) বইয়ে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন এ ধরণের পুরুষাঙ্গ নারীরা পছন্দ করেছে কারণ এটি মেয়েদের চরম পুলক (অর্গাজম) আনয়নে সহায়তা করেছে, এটি হয়েছে তাদের জন্য প্রচণ্ড রকমের আনন্দের উৎস, এবং তাদের ক্রমিক চাহিদা তৈরি করেছে উন্নত পুরুষাঙ্গ গঠনের নির্বাচনী চাপ[10]। অন্য কিছু গবেষকদের সাম্প্রতিক গবেষণাতেও এই দাবীর স্বপক্ষে কিছুটা সত্যতা মিলেছে বলে দাবী করা হয়[11]।
কান টানলে নাকি মাথা আসে। তাই পুরুষাঙ্গের আকারের কথা বলার সাথে সাথে অণ্ডকোষের আকার নিয়েও কিছু কথা এখানে চলে আসবে। পাঠকদের কি মনে হবে জানিনা, পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে কিন্তু খুবই আকর্ষণীয়। বিবর্তনী মনোবিজ্ঞানীরা দেখেছেন শুক্রাশয় বা অণ্ডকোষের আকারের সাথে বহুগামিতা কিংবা অবিশ্বস্ততার একটা সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে। সে ব্যাপারটিতে যাবার আগে আমাদের কাছাকাছি প্রজাতিগুলো থেকে কিছু মজার উদাহরণ হাজির করা যাক। আমরা সবাই চোখে না দেখলেও বই পত্র কিংবা ‘কিং কং’ জাতীয় মুভির মাধ্যমে বিশালকায় গরিলার আকার আয়তনের সাথে পরিচিত। এককেকটি ব্রহ্মদৈত্য গরিলা আকারে ওজনে প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ পাউণ্ড ছাড়িয়ে যায়। কেউ হয়তো ভাবতে পারেন যে, দেহের আয়তনের সাথে তাল মিলিয়ে তার শুক্রাশয়ের আকারও হবে মাশাল্লা – ফুটবল না হোক, নিদেনপক্ষে হওইয়া উচিৎ টেনিস বলের সাইজ। আসলে কিন্তু তা হয় না। এমন চারশ পাউণ্ড ওজনের বৃহতাকার গরিলাদের শুক্রাশয়ের ওজন হয় মাত্র দেড় আউন্স। আর অন্য দিকে শিম্পাঞ্জিদের দৈহিক আকার কিন্তু অনেক ছোটখাট। কিন্তু সেতুলনায় তাদের শুক্রাশয়ের আকার অনেক বড়। মাত্র ১০০ পাউণ্ড ওজনের একটি শিম্পাজির শুক্রাশয়ের ওজন প্রায় চার আউন্স! এ যেন বার হাত কাঁকুড়ের তের হাত বীচি! কিন্তু কেন এমন হল?
এর কারণ লুকিয়ে আছে শিম্পাঞ্জি আর গরিলাদের সামাজিক সম্পর্কের পার্থক্যের মাঝে। দেখা গেছে শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে নারীরা হয় বহুগামী। তারা একই দিনে একাধিক পুরুষ শিম্পাঞ্জির সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয়। অধিক সংখ্যক পুরুষের সাথে যথেচ্চার সম্ভোগের মাধ্যমে নারী শিম্পাঞ্জিরা প্রকারন্তরে নিশ্চিত করতে চায় যে, উৎকৃষ্ট জেনেটিক মালমশলাসম্পন্ন পুরুষের দ্বারাই যেন তার ডিম্বানুর নিষেক ঘটে। কিন্তু নারী শিম্পাঞ্জির এই ধরণের অভিরুচির কারণে পুরুষ শিম্পাঞ্জির জন্য ‘বংশ রক্ষা’ হয়ে যায় মাত্রাতিরিক্ত কঠিন। তাদেরকে এক অসম বীর্য প্রতিযোগিতার (sperm competition) মধ্যে নামতে হয়। নারী শিম্পাঞ্জির যোনিতে গর্ভধারণ নিয়ে বিভিন্ন পুরুষ শিম্পাঞ্জির শুক্রের মধ্যে নিরন্তর প্রতিযোগিতা চলে, সেই কারণে একটি পুরুষ শিম্পাঞ্জির পক্ষে কখনোই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না যে, যৌনসম্পর্ক হলেই তার নির্দিষ্ট বীর্য থেকেই নারী শিম্পাঞ্জিটি গর্ভধারণ করবে বা করছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায় যদি তার শুক্রাশয়ের আকার অপেক্ষাকৃত বড় হয়, আর তার শুক্রাশয় যদি সঙ্গমের সময় অঢেল শুক্রের যোগান দিতে সমর্থ হয়। শিম্পাঞ্জির এই বীর্য প্রতিযোগিতার লড়াইকে অনেকটা লটারি টিকেটের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যত বেশি সংখ্যক লটারি টিকেট আপনার দখলে থাকবে তত বেশি সম্ভাবনা তৈরি হবে আপনার বিজয়ী হবার। আপনার যদি সামর্থ থাকে প্রায় সব লটারি টিকেট কোনভাবে করায়ত্ত করার, আপনার বিজয়ী হবার সম্ভাবনা পাল্লা দিয়ে বাড়বে। আদিতে হয়ত শিম্পাঞ্জিকূলে বড়, ছোট কিংবা মাঝারি – সব ধরনের শুক্রাশয়ওয়ালা পুরুষ শিম্পাঞ্জির অস্তিত্ব ছিলো। কিন্তু শিম্পাঞ্জি নারীদের বহুগামিতার সাথে পাল্লা দিতে দিয়ে বড় শুক্রাশয়ওয়ালা শিম্পাঞ্জিরাই বাড়তি সুবিধা পেয়েছিলো, তারাই প্রতিযোগিতায় সফল গর্ভসঞ্চারের মাধ্যমে অধিক হারে সন্তান সন্ততি রেখে গেছে। এই নির্বাচনী চাপই শিম্পাঞ্জিকূলে ত্বরান্বিত করেছে বৃহৎ শুক্রাশয় গঠনের দিকে (গড়পরতা শিম্পাঞ্জির শুক্রাশয়ের ওজন তার দেহের ওজনের ০.৩ ভাগ, এবং শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ৬০ x ১০৭)।
ঠিক উলটো ব্যাপারটি ঘটে গরিলাদের ক্ষেত্রে। নারী গরিলারা বহুগামী নয়। কেবল পুরুষ গরিলারা বহুগামী। শক্তিশালী পুরুষ গরিলারা বড় সড় হারেম তৈরির মাধ্যমে নিশ্চিত করে বহু নারীর দখল। এভাবে পুরুষ গরিলারা নিশ্চিত করে তাদের অধিনস্ত নারীর দেহে নিরাপদ গর্ভসঞ্চার। কাজেই পুরুষ গরিলাদের জন্য ব্যাপারটা কখনোই পুরুষে পুরুষে বীর্য প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বরঞ্চ হয়ে উঠে শক্তিমত্তার প্রতিযোগিতা। শক্তিশালী পুরুষ গরিলারা স্বীয় শক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ নারীর দখল নিয়ে নেয়, অধিকাংশ শক্তিহীনদের জন্য পড়ে থাকে দুর্ভাগ্য। সামাজিক অবস্থানের কারণেই গরিলাদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী চাপ তৈরি করেছে বড় সড় দেহ সমৃদ্ধ শক্তিশালী দেহগঠনের, বৃহৎ শুক্রাশয় তৈরির দিকে নয়। গরিলাদের ক্ষেত্রে বৃহৎ শুক্রাশয় গঠনের কোন উপযোগিতা নেই। নারী পুরুষের মধ্যকার সামাজিক সম্পর্কের কারণেই গরিলাদের ক্ষেত্রে দেহ অনুপাতে শুক্রাশয়ের আকার অনেক ছোট (শুক্রাশয়ের ওজন দেহের ওজনের ০.০২ ভাগ, এবং শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ৫ x ১০৭)।
আপনার মাথায় নিশ্চয় এখন ঘুরতে শুরু করেছে – গরিলা আর শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে না হয় বোঝা গেল, কিন্তু মানব সমাজের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটা কি রকম? এক্ষেত্রে মানুষের অবস্থান হল গরিলা আর শিম্পাঞ্জির মাঝামাঝি (শুক্রাশয়ের ওজন দেহের ওজনের ০.০৪- ০.০৮ ভাগ, এবং শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ২৫ x ১০৭), যদিও গবেষকদের অনেকেই রায় দিয়েছেন শুক্রাশয়ের গতি প্রকৃতি কিছুটা শিম্পাঞ্জির দিকে একটু বেশি করে ঝুঁকে রয়েছে। মানব সমাজে পুরুষ মানুষদের শুক্রাশয়ের আকার গরিলাদের মতো এত ছোট নয়, ফলে ধরে নেয়া যায় যে, মানব সমাজে নারীরা শতভাগ একগামী মনোভাবাপন্ন নয়। আবার শুক্রাশয়ের আকার পুরুষ শিম্পাঞ্জিদের শুক্রাশয়ের মতো এত বড় সড়ও নয় – ফলে আমরা এটাও বুঝতে পারি যে, মানব সমাজে নারীরা আবার শতভাগ নির্বিচারী বহুগামীও হবে না। মানুষের মধ্যে একগামিতা যেমন আছে তেমনি বহুগামিতার চর্চাও। মানুষ নামের এই প্রাইমেটের এই স্পিশিজটির অধিকাংশ সদস্যই ‘বিবাহ নামক ইন্সটিটিউশনের’ মাধ্যমে মনোগামিতার চর্চাকে বৈশিষ্ট হিসেবে জ্ঞাপন করলেও এর মধ্যে আবার অনেকেই সময় এবং সুযোগমত বহুগামী হয়, কাকোল্ড্রির চর্চা করে। অনেক ক্ষমতাবান পুরুষেরা (যেমন মহামতি আকবর, চেঙ্গিসখান প্রমুখ) আবার অধিক নারীর দখল নিতে অনেকটা গরিলাদের মতোই ‘হারেম তৈরি’ করে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই ‘সিরিয়াল মনোগামি’ অর্থাৎ, একই সময়ে কেবল একজন সঙ্গির সাথেই জীবন অতিবাহিত করে। নারীদের ক্ষেত্রেও বহুগামিতা ঠিক একই কারণে দৃশ্যমান এবং সেটা সকল সমাজেই। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অধিকাংশ নারীরাই নাকি বিয়ের আগে দু চারটি প্রেম টেম করে শেষ মেষ একটি স্বামী খুঁজে নিয়ে ঘর সংসার করে, কদাচিৎ স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে পরকীয়া করে লুকিয়ে ছাপিয়ে, কখনো বা একেবারেই নয়। পশ্চিমেও মেয়েরা বয়ঃসন্ধির পর থেকেই স্বাধীনভাবেই একাধিক ‘ডেট’ করে, তাদের মধ্য থেকেই যোগ্য সঙ্গিকে বেঁছে নেয়। কখনো বা সঙ্গি বাছার প্রক্রিয়া চলতেই থাকে আজীবন, অনেকটা অধুনা পরলোকগত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলরের মতো। সেজন্যই জোয়ান এলিসন রজার্স তার “যৌনতাঃ প্রাকৃতিক ইতিহাস” (Sex: A Natural History) বইএ উল্লেখ করেছেন[12] –
“পুরুষের অপেক্ষাকৃত বড় শুক্রাশয় এটাই ইঙ্গিত করে যে, নারীরা বিবর্তনের ইতিহাস পরিক্রমায় একগামী নয়, বরং বহুগামীই ছিল”।
মানবেতিহাসের পথপরিক্রমায় নারীরা যে আসলে একগামী ছিলো না, তা পুরুষদের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের আকৃতি এবং সেই সাথে সঙ্গমের প্রকৃতি থেকেও তা কিছুটা আঁচ করা যায়। এ নিয়ে জৈব শরীরবৃত্তবিদ গর্ডন জি গ্যালপ এবং তার দলবলের একটি চমৎকার গবেষণা আছে[13]। ‘মানব লিঙ্গ একটি বীর্য প্রতিস্থাপন যন্ত্র’ (The human penis as a semen displacement device) – শিরোনামের এই গবেষণাপত্রে গবেষকদল দেখিয়েছেন, অন্য প্রাইমেটদের থেকে মানুষের পুরুষাঙ্গের গঠন কিছুটা আলাদা। ব্যাকালাম নামের হাড়টি যে আমাদের পুরুষাঙ্গে অনুপস্থিত, তা আমরা আগেই জেনেছি। এর বাইরে, এর বাইরে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (glans) সূঁচালো কীলকাকৃতির (wedge shaped)। লিঙ্গের অগ্রভাগের ব্যাস পুরুষাঙ্গের স্তম্ভের ব্যাসের চেয়ে খানিকটা বড় হয়। পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ এবং স্তম্ভের সাধারণ তলে উদ্ভুত হওয়া ‘করোনাল রিজ’ -এর অবস্থান থাকে স্তুম্ভের সাথে উলম্বভাবে। এ ছাড়া, সঙ্গম শুরুর পর থেকে বীর্যস্খলনের আগ পর্যন্ত যোনির অভ্যন্তরে পুরুষকে উপর্যপুরি লিঙ্গ সঞ্চালনের (repeated thrusting) প্রয়োজন হয়। কাজেই সূঁচালো কীলকসদৃশ লিঙ্গের অগ্রভাগের আকৃতি এবং সেই সাথে উপর্যপুরি লিঙ্গাঘাতের প্রক্রিয়া এটাই ইঙ্গিত করে যে, নারীর যোনির ভিতরে স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোন পুরুষের শুক্রানুর আগমন ঘটে থাকলে সেটাকে বিতারিত করার জন্য যথেষ্ট। গ্যালোপের গবেষণাপত্রের ২৭৮ পৃষ্ঠায় সেটারই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে[14] –
‘If a female copulated with more than one male within a short period of time, this would allow subsequent males to ‘‘scoop out’’ semen left by others before ejaculating’.
আরো একটি ব্যাপারেও নারীদের পরকীয়ার ভালোই আলামত পাওয়া গেছে। দম্পতিদের দীর্ঘদিন আলাদা করে রেখে এবং বহুদিন পরে সঙ্গমের সুযোগ করে দিয়ে দেখা গেছে এতে পুরুষের বীর্যপাতের হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। যত বেশি দিন যুগলকে পরষ্পর থেকে আলাদা করে রাখা হয়, পুনর্বার মিলনের সময় তত বেশি পাওয়া যায় শুক্রাণু প্রক্ষেপণের হার। দেখা গেছে যদি কোন দম্পতির মধ্যে স্বামী স্ত্রী শতভাগ সময় জুড়ে একসাথে থাকে, তবে প্রতিবার সঙ্গমে গড়পরতা ৩৮৯ মিলিয়ন শুক্রাণু প্রক্ষিপ্ত হয়। কিন্তু যদি শতকরা ৫ ভাগ সময় জুড়ে দম্পতিরা একসাথে থাকে, তবে প্রতি প্রক্ষেপণে শুক্রাণুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১২ মিলিয়নে – অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুন! আসলে দীর্ঘদিন বিচ্ছেদের পর মিলনের সময় স্পার্মের যোগান বেড়ে যায় কারণ, পুরুষেরা ভেবে নেয় যে বিচ্ছেদকালীন সময়টুকুতে স্ত্রীর পরকীয়া ঘটার কিছুটা হলেও সম্ভাবনা থাকে। অন্য কোন পুরুষের শুক্রাণু স্ত্রী ধারণ করতে পারে এই সম্ভবনা থেকেই বীর্য প্রতিযোগিতা বা স্পার্ম ওয়ার এ লিপ্ত হয় পুরুষটি তার অজানতেই। প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে সে নিক্ষিপ্ত করে তার অঢেল শুক্রাণুর যোগান, এবং দাবী করে তার শুক্রের মাধ্যমে নারীর গর্ভধারণের কাংক্ষিত নিশ্চয়তা। ইতিহাসের পথপরিক্রমায় নারীদের পরকীয়া এবং বহুগামিতার আলামত প্রচ্ছন্নভাবে আছে বলেই দীর্ঘদিন বিচ্ছেদের পর মিলনের সময় খুব প্রত্যাশিতভাবেই শুক্রাণুর সংখ্যা বেড়ে যায়।
যদি মানব সমাজে নারীরা অনাদিকাল থেকে বহুগামিতায় অভ্যস্থ না হত, যদি একগামী সম্পর্কের বাইরেও অতিরিক্ত যুগল মৈথুনে (extra-pair copulations) কখনোই নিজেদের নিয়োজিত না করতো, তাহলে পুরুষের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ কীলকাকৃতি হওয়ারও দরকার পড়তো না, প্রয়োজন হত না সঙ্গমকালীন সময়ে উপর্যুপরী লিঙ্গাঘাতেরও[15]। দরকার ছিলো না দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর মিলনের সময় শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিরও। আসলে মানব সমাজে নারীর একগামিতার পাশাপাশি বহুগামিতার প্যাটার্ণের একটি উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্য এগুলো। শুধু পুরুষের বিশেষ অঙ্গেই নয়, বহুগামিতার নিদর্শন রয়েছে নারীদের নিজেদের শরীরেও। সেটা জানতে হলে আমাদের নারীর চরম পুলক বা অর্গাজম সম্বন্ধে জানতে হবে।
পুলকিত মনন (অর্গাজমিক মাইণ্ড)
বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ এবং বিবর্তন বিজ্ঞানী স্টিফেন জ়ে গুল্ড মনে করতেন নারীর চরম পুলকের কোন বিবর্তনীয় উপযোগিতা নেই[16]। এটা অনেকটা বিবর্তনের সাইড-ইফেক্ট – যাকে তিনি ডাকতেন স্প্যাণ্ড্রেল নামে। বড় বড় ইমারত তৈরি করার সময় দেখা যায় যে, দুটি খিলানের মাঝে স্প্যাণ্ড্রেল বাড়তি উপাদান হিসেবে এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়, ইমারতের কারিগরী নকশার প্রয়োজনে নয়, বরং উপজাত হিসেবে। এই স্প্যান্ড্রেলগুলো ইমারতকে মজবুত করতেও সাহায্য করে না, আরোপ করেনা কোন বাড়তি গুণাগুন। কোন প্ল্যান প্রোগ্রাম ছাড়াই এগুলো কাঠামোতে উড়ে এসে জুড়ে বসে । যৌনসঙ্গমের সময় নারীর পুলকের ব্যাপারটাও গুল্ড মনে করতেন অনেকটা সেরকমেরই, যার স্বকীয় কোন ‘সার্ভাইভাল ভ্যালু’ নেই; এটা স্রেফ বিবর্তনের উপজাত।
এভাবে ভাবার অবশ্য কারণ আছে। পুরুষদের জন্য পুলক বা অর্গাজম সরাসরি বীর্যপাতের সাথে যুক্ত। অর্থাৎ বীর্যপাতের সময়টাতেই পুরুষেরা চরম পুলক অনুভাব করে। পুরুষদের ক্ষেত্রে পুলকের ব্যাপারটা সরাসরি প্রজননের সাথে যুক্ত থাকায় এ থেকে ‘পুরুষালি অর্গাজমের’ বিবর্তনগত উপযোগিতা সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা নয়। নারীর চরম পুলকের সাথে গর্ভধারণের কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই। সত্যি বলতে কি – চরম পুলক ছাড়াও নারীর পক্ষে গর্ভ ধারণ সম্ভব, এবং সেটা অহরহই ঘটছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ নারী সঙ্গমের সময় সবসময়ই চরম পুলক লাভ করে, ৪৮ ভাগ নারী অধিকাংশ সময়, ১৯ ভাগ নারী জীবনের কখনো সখনো, ১১ ভাগ নারী কাদাচিৎ, আর ৭ ভাগ নারী জীবনের কখনোই অর্গাজম অনুভব করে না[17]। অর্থাৎ, পুরুষদের অর্গাজমের ব্যাপারটা প্রচ্ছন্ন হলেও মেয়েদেরটা রহস্যময়, জটিল এবং অনেকসময় সাগরতীরে মৎসকুমারীর দেখা পাওয়ার মতোই যেন অলভ্য।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই সনাতন স্প্যাণ্ড্রেল আর উপজাত তত্ত্বের বাইরে গিয়ে নারীর পুলকের বেশ কিছু বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা হাজির করেছেন বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা। জীববিজ্ঞানীরা আবার এর মধ্যে খেয়াল করেছেন যে, মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাইমেটদের নারীদের মধ্যেও চরম পুলকের অস্তিত্ব রয়েছে[18], [19]। ব্যাপারটা সত্যি হয়ে থাকলে নারী অর্গাজমের বিবর্তনগত উপযোগিতা থাকা অসম্ভব কিছু নয়।
বহু বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানী অভিমত দিয়েছেন যে, এই প্রক্রিয়ায় আসলে নারীরা তাদের অজানতেই পুরুষদের বীর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে, এবং অর্গাজমের জটিল অথচ মায়াবী প্রক্রিয়ায় যোগ্য কিংবা সঠিক পুরুষটিকে বাছাইয়ের কাজ করে ফেলে। অর্গাজমের সময় একটি নারীর শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠে, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়, মুখ দিয়ে গোঙানির মতো শব্দ বের হতে থাকে, মাংশপেশীর সংকোচন বা খিঁচুনির মত অবস্থা ঘটে, কারো কারো ক্ষেত্রে হয় হ্যালুসিনেশন বা অলীক দর্শন[20]। নারীর ভেতরে চলা এই জটিল এবং রহস্যময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারী সনাক্ত করে নেয় তার কাংক্ষিত ‘মিস্টার রাইট’কে। সে হিসেবে চিন্তা করলে অর্গাজম আসলে নারীর এক ধরণের ‘মেট সিলেকশন ডিভাইস’ বা সঙ্গি নির্ণায়ক যন্ত্র। নিউইয়র্ক টাইমসের খ্যাতনামা বিজ্ঞান লেখিকা ন্যাটালি এঞ্জিয়ার সেজন্যই তার একটি বইয়ে লিখেছেন[21] –
নারীর পুলক হচ্ছে নারী অভিরুচি বাস্তবায়নের এক চূড়ান্ত অভিব্যক্তি। … এটা নারীর মতো করে গোপন বিতর্কের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে তুলে নেওয়ার একটি সচেতন প্রক্রিয়া।
নারীর পুলকের সময় জরায়ু সহ বিভিন্ন মাংশপেশীর অবিরত সংকোচন ঘটে চলে। বিজ্ঞানীরা বলেন এই সংকোচন ঘটার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে। এই জরায়ুর মাংশপেশী সংকোচনের মাধ্যমে একটি নারী নিশ্চিত করে যে, জরায়ুর গ্রীবাদেশীয় শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি (cervical mucus barrier) অতিক্রম করে সে যেন শুক্রাণুকে নিজের দেহভ্যন্তরে পুরোপুরি টেনে নিতে পারে। আমি একটি প্রকাশিত কেস স্টাডি থেকে এমন ঘটনার সন্ধানও পায়েছি যে, অর্গাজমের চাপে একটি পুরুষের কণ্ডম পর্যন্ত ভিতরে শুষে নিয়েছিলো একটি নারীর দেহ, পরবর্তী অনুসন্ধানে কণ্ডমটি পাওয়া গিয়েছিলো নারীটির সার্ভিকাল ক্যানালের সরু পথে আটকে যাওয়া অবস্থায়[22]। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, অর্গাজম বা নারী পুলকের মূল লক্ষ্য থাকে শুক্রাণুকে যতদূর সম্ভব ডিম্বানুর কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া, এর ফলে বৃদ্ধি পায় গর্ভধারণের সম্ভাবনা।
বিজ্ঞানীরা এও দেখেছেন যে, নারীর অর্গাজম হলে সে যে পরিমাণ শুক্রাণু নিজের অভ্যন্তরে ধারণ করে, অর্গাজম না হলে তার চেয়ে অনেক কম শুক্রাণু সে তার মধ্যে ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ অর্গাজম হলে নারীর নিজের অভ্যন্তরে শুক্রাণুর ধারণ ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়[23]। যেমন, দেখা গিয়েছে – স্বাভাবিক অবস্থায় একটি নারী সাধারণতঃ সঙ্গমের পর মোটামুটি ৩৫ ভাগ শুক্রাণু নিজ দেহ থেকে বের করে দেয়। কিন্তু নারীর অর্গাজম হলে সে প্রায় সত্তুর ভাগ স্পার্ম নিজের মধ্যে ধারণ করে, আর বের করে দেয় ৩০ ভাগ। তার মানে চরম পুলক না হবার অর্থ হল, অধিকতর বেশি শুক্রাণুর বর্জন। এই সাক্ষ্যগুলো সেই ‘স্পার্ম রিটেনশন’ তত্ত্বকেই সমর্থন করে যার মাধ্যমে নারী অধিক সংখ্যক শুক্রাণুকে যোনি থেকে জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের দিকে টেনে নিয়ে প্রকারান্তরে নিশ্চিত করতে চায় সঠিক পুরুষকে দিয়ে নিজের গর্ভধারণের সম্ভাবনা।
এখন কথা হচ্ছে – সঠিক পুরুষটি কেমন হতে পারে যে কিনা নারীকে নিয়মিত অর্গাজম উপহার দেবে? কোন কিছু চিন্তা না করেই বলা যায় যে পুরুষটির একটি গুণ হতে পারে – সে দেখতে শুনতে হবে সুদর্শন। জীববিজ্ঞানের ভাষায় সুদর্শন পুরুষের মানে হচ্ছে প্রতিসম (symmetrical) চেহারা আর দেহের অধিকারী পুরুষ। কারণ বিবর্তনীয় পথপরিক্রমায় নারীরা বুঝে নিয়েছে যে, প্রতিসম চেহারা এবং দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী পুরুষেরা স্বাস্থ্যবান, তাদের দেহ রোগ জীবাণুর আবাসস্থল নয়, অর্থাৎ মোটা দাগে তারা ‘সুপেরিয়র জেনেটিক কোয়ালিটি’র অধিকারী। রান্ডি থর্নহিল স্টিভেন গেংস্টাডের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, নারীদের পুলকের পৌনুপুনিকতা এবং চরম পুলকানুভূতি আনয়নের ক্ষেত্রে সুদর্শন পুরুষেরাই অধিকতর বেশি সফল হয়ে থাকে[24]।
সুদর্শন পুরুষেরাও আবার সে ব্যাপারটি ভাল করেই জানে এবং বুঝে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুদর্শন পুরুষেরা খুব কম সময়ের মধ্যেই (shortest courtship) যে কোন ভালবাসার সম্পর্ককে যৌনসম্পর্কের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এও দেখা গেছে, পশ্চিমা দেশে সুদর্শন পুরুষেরা ডেট করার সময় গড়পরতা প্রতি নারীর পেছনে কম সময় এবং অর্থ ব্যয় করে। শুধু তাই নয় সুদর্শন স্বামীরা অনেক বেশি হারে স্ত্রীদের প্রতারণা করে অন্য সম্পর্কে জড়ায়[25]।
তবে নারী পুলক নিয়ে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ব্যাপারটি বেরিয়ে এসেছে বিজ্ঞানী রবিন বেকার এবং মার্ক বেলিসের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে। তাদের গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে সমস্ত নারীরা পরকীয়ায় মত্ত, তাদের অর্গাজম অনেক বেশি হয়। মানে, নিয়মিত সঙ্গির চেয়ে গোপন প্রেমিকের সাথে সঙ্গমে নারীর চরম পুলকের হার অনেক বেশি থাকে তাদের ক্ষেত্রে। ব্রিটেনের ৩৬৭৯ জন নারীর উপর জরিপ চালিয়ে তারা দেখেছেন যে, তাদের ঋতুচক্রের সবচেয়ে উর্বর সময়গুলোতেই তারা পরকীয়ায় জরিয়ে পড়ে, যে সময়টাতে তাদের গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি[26]। এও দেখা গেছে যে, পরকীয়ারত নারীরা স্বামীর সাথে অনেক বেশি পুলক জালিয়াতি (fake orgasm) করে স্বামীদের আশ্বস্ত রাখতে চেষ্টা করে – সম্ভবতঃ এই ধারণা দিতে যে, সে কেবল তার স্বামীর প্রতিই রয়েছে বিশ্বস্ত[27]।
নিঃসন্দেহে স্বামীদের জন্য কোন সুসংবাদ নয় এটি। কিন্তু এ ব্যাপারগুলো থেকে বোঝা যায় যে, মেয়েদের মেটিং স্ট্র্যাটিজি সব সময় স্বামীকে তুষ্ট করে ‘যৌন বিশ্বস্ত’ হয়ে চলার জন্য বিবর্তিত হয়নি, বরং বিস্তৃত হয়েছে কখনো সখনো উৎকৃষ্ট জিনের সন্ধানে নিজের প্রজনন সফলতাকে বাস্তিবায়িত করার জন্যও। মাথা নেড়ে যতোই এটাকে অস্বীকারের চেষ্টা করা হোক না কেন, বিবর্তনের অমসৃন যাত্রাপথে রয়েছে এর সুস্পষ্ট পদচিহ্ন।
চোখের আলোয় দেখেছিলেম মনের গভীরে
ভালবাসার কথা বললেই আমাদের সামনে সবার আগে হৃদয়ের কথা চলে আসে। বিদগ্ধ প্রেমিক প্রেমিকেরা অহরহ ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’ হয়ে উঠে, সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আসল সত্যটা হল- বিজ্ঞানীরা বলেন, ভালবাসার উৎস হৃদয় নয়, বরং মস্তিস্ক। শুধু তাই নয়, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী জিওফ্রি মিলারের মতে, মানুষের মস্তিস্ক বা ব্রেন হচ্ছে এক ‘Magnificent Sexual Ornament’, যা যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েছে আমাদের পছন্দ আপছন্দ অভিরুচিকে মূল্য দিয়ে। মিলারের মতে মস্তিস্ককের প্রকৃতিও অনেকটা পুরুষাঙ্গের মতোই যৌননির্বাচনের ফসল। আমরা সে সমস্ত সঙ্গির সাথেই থাকতে পছন্দ করি যাদের সাথে থেকে আমরা সুখী বোধ করি[28]। আর কার সাথে সুখি বোধ করব, তা নির্ধারণ করে আমাদের মস্তিস্ক, হৃদয় নয়। আমরা যেমন স্বাস্থ্যবান, সুদর্শন সঙ্গি পছন্দ করি, তেমনি পছন্দ করি এমন কাউকে যে রসিকতা বুঝে, প্রেম ভালবাসার ব্যাপারে রোমান্টিক এবং বিশ্বস্ত, শিল্প সাহিত্য সঙ্গিতের ব্যাপারে সমঝদার। আমরা এ ধরণের গুণাবলীগুলো পছন্দ করি কারণ বিপরীতলিঙ্গের চাহিদাকে মূল্য দিয়ে আমাদের মস্তিস্ক অভিযোজিত হয়েছে আর আমাদের পছন্দ অপছন্দ আর ভাললাগাগুলো বিবর্তিত হয়েছে যৌনতার নির্বাচনের পথ ধরে। যৌনতার নির্বাচনই আমাদের মস্তিস্কে তৈরি করেছে গান বাজনা, নৃত্য গীত, কাব্য, শিল্প সাহিত্য, স্থাপত্যকর্ম, খেলাধূলা, বাগ্মীতা প্রভৃতির প্রতি অনুরাগ। যাদের মধ্যে এ গুণাবলীগুলো আমরা খুঁজে পাই, তারা অনেক সময়ই হয়ে উঠে আমাদের পছন্দের মানুষজন।
বিজ্ঞানীরা এও লক্ষ্য করেছেন যে, মস্তিস্কের প্রকৃতি বদলে গেলে ভালবাসার প্রকৃতিও বদলে যায়। এরকম একটি কেস্ স্টাডির কথা আমি সম্প্রতি পড়েছি পল ব্লুমের ‘হাও প্লেসার ওয়ার্ক্স’ বইয়ে। ১৯৩১ সালে নিথিবদ্ধ এ ঘটনা থেকে জানা যায় এক মহিলা তার স্বামীকে নিয়ে অহরহ অভিযোগ করতেন – তার সঙ্গি মোটেই পরিশীলিত নয়, কেমন যেন অদক্ষ চাষাভূষা টাইপের। বরদাস্তই করতে পারতেন না তিনি স্বামীকে একেবারে। কিন্তু কিছুদিন পরে কোন এক রোগে কিংবা দুর্ঘটনায় মহিলাটির মস্তিস্কের বড় একটা অংশ আহত হয়। দুর্ঘটনার পর স্মৃতিশক্তি ফিরে পাবার পর তার সঙ্গি সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গিয়েছিলো। যে লোকটাকে কিছুদিন আগেও অপিরিশিলীত চাষাড়ে বলে মহিলার মনে হচ্ছিল, সেই সঙ্গি তার কাছে রাতারাতি আবির্ভূত হলেন “ধনবান, বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন এবং বর্নাঢ্য” ব্যক্তি হিসেবে। সত্যি বলতে কি – যৌনাকর্ষণ এবং রোমান্টিক প্রেমের ব্যাপারগুলো রয়ে যায় মস্তিস্কের খুব গভীরে, মনের গহীন কোনে। মস্তিস্কের আঘাত সেই মহিলাটিকে সুযোগ করে দিয়েছিলো একেবারে নতুন ভাবে শুরু করতে, ফলে তার চিরচেনা সঙ্গি তার কাছে আবির্ভূত হয়েছিলো একেবারে নতুন মানুষ হিসেবে, অনেক পছন্দীয় হিসেবে। অর্থাৎ, মস্তিস্কের প্রকৃতি বদলে যাওয়ায় মহিলাটির ভালবাসার প্রকৃতিও বদলে গিয়েছিলো।
‘A Midsummer Night’s Dream’ নাটিকায় শেক্সপিয়র উচ্চারণ করেছিলেন, ‘Love looks not with the eyes but with the mind’। শেক্সপিয়র মিথ্যে বলেননি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও তার একটি গানে যে কথাটি বলেছিলেন, ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’; সেই কথাটিকেই সামান্য বদলে দিয়ে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে বললে বলা যায় –
চোখের আলোয় দেখেছিলেম মনের গভীরে।
অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহি রে।।
আশা করছি রবীন্দ্রনাথের গানে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের কাঁচি চালানোয় রবীন্দ্রভক্তরা মনঃক্ষুন্ন হয়ে যাবেন না। ভালবাসার দাবী বলে কথা!
প্রথম পর্বে মহীনের ঘোড়াগুলি/পরশপাথরের ‘ভালবাসা মানে’ গানটির উল্লেখ করেছিলাম। শেষ পর্বে এসে সেটি আরেকবার শোনা যাক, নইলে আমার মতে ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ ঘটবে না –
ভালোবাসা মানে ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতি
ভালোবাসা মানে এলোচুল মাতোয়ারা
ভালোবাসা মানে সময় থামার আগে
ভালোবাসা মানে তোমার শুরু আমার সারাভালোবাসা মানে আর্চিস গ্যালারি
ভালোবাসা মানে গোপন গোপন খেলা
ভালোবাসা মানে কান্নাভেজা চোখে
ভালোবাসা মানে নীল খামেদের মেলাভালোবাসা মানে দূরভাষ নিশ্চুপে
শুনে ফেলে অনুভূতির হাসি
ভালোবাসা নান্দনিক যাতায়াতে
ভালোবাসা মানে চৌরাসিয়ার বাঁশিভালোবাসা মানে আগাম চলার সুর
ভালোবাসা মানে অবিরাম চলাবসা
ভালোবাসা মানে আঁখিপল্লব ছুঁয়ে
চিনতে শেখা শেষ কাব্যের ভাষা …
httpv://www.youtube.com/watch?v=wHRSB7hHexQ
এতোদিন ধরে যারা সিরিজটির সাথে ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ।
:line:
তথ্যসূত্র :
[1] VS Johnston, M Franklin. Is beauty in the eye of the beholder? Ethol. Sociobiol. 14: 183–99, 1993
[2] V S.Johnston, Female facial beauty: the fertility hypothesis. Pragmatics Cogn. 8: 107–22, 2000.
[3] Richard Dawkins, River Out Of Eden: A Darwinian View Of Life, Basic Books , 1996
[4] Nancy Etcoff, Survival of the Prettiest: The Science of Beauty, Anchor; 2000.
[5] উদাহরণ হিসেবে, স্নায়ুবিজ্ঞানী Louann Brizendine তার The Male Brain গ্রন্থে লিখেছেন, “When it comes to sex, size is less important than men think… 85% women say that they are happy with their partner’s [penis] size”
আরেক নারী জীববিজ্ঞানী Lynn Margulis তার Mystery of Dance গ্রন্থে লিখেছেন, “Penis dimension is neither the major determinant of female sexual pleasure, nor is a big penis a guarantee for female pleasure”
[6] J. Lever, D.A. Frederick & L.A. Peplau, Does size matter? Men’s and women’s views on penis size across the lifespan. Psychology of Men & Masculinity, 7, 129-143, 2006
[7] BE Dillon, NB Chama, SC Honig. Penile size and penile enlargement surgery: A review. Int J Impot Res,20:519–29, 2008
[8] Louann Brizendine M.D., The Male Brain, Broadway; March 23, 2010
[9] G. F. Miller, (1998). How mate choice shaped human nature: A review of sexual selection and human evolution. In C. B. Crawford, & D. Krebs (Eds.), Handbook of evolutionary psychology: Ideas, issues,
and applications (pp. 87−130). Mahwah, NJ: Lawrence Erlbaum Associates
[10] Geoffrey Miller, The Mating Mind: How Sexual Choice Shaped the Evolution of Human Nature, Anchor, 2001.
[11] Paul Bloom, How Pleasure Works: The New Science of Why We Like What We Like, W. W. Norton & Company; 1st edition , 2010
[12] Joann Ellison Rodgers, Sex: A Natural History, W. H. Freeman, January 15, 2002
[13] G.G. Gallup Jr. et al., The human penis as a semen displacement device, Evolution and Human Behavior 24, 2003, pp 277–289
[14] পূর্বোক্ত।
[15] Baker, R. R., & Bellis, M. A. (1995). Human sperm competition: copulation, masturbation, and infidelity. London: Chapman & Hall.
[16] E.A. Lloyd, The Case of The Female Orgasm: Bias in the science of evolution. Cambridge MA: Harvard University Press, 2005
Also see, S.J. Gould, (1992). Male Nipples and Clitoral Ripples. In Bully for Brontosaurus: Further Reflections in Natural History. New York: W. W. Norton. pp. 124-138, 1992.
[17] Carol Tavris & Susan Sadd, The Redbook Report on Female Sexuality, New York: Delacorte, 1977
[18] AK Slob, and JJ van der Werff ten Bosch. Orgasm in non-human species. In Proceedings of the First International Conference on Orgasm, pp. 135-149, 1991.
[19] Alan F. Dixon, Primate Sexuality. Comparative Studies of the Prosimians, Monkeys, Apes, and Human Beings, Oxford University Press, Oxford, 1998
[20] Louann Brizendine M.D., The Female Brain, Broadway; March 23, 2006
[21] Natalie Angier, Woman: An Intimate Geography, Anchor; Reprint edition, 2000
[22] I. Singer, “Fertility and the female orgasm.” In Goals of Human Sexuality, London: Wildwood House., p 159–97, 1973
[23] K Dawood, KM Kirk, JM Bailey, PW Andrews, NG Martin. Genetic and environmental influences on the frequency of orgasm in women, Twin Research and Human Genetics, 8(1) : p 27-33, 2005.
[24] R. Thornhill, S. W. Gangestad, & R Comer Human female orgasm and mate fluctuating asymmetry. Animal Behaviour, 50, 1601-1615, 1995.
[25] Louann Brizendine, The Female Brain, Three Rivers Press, August 7, 2007
[26] R.R. Baker & M.A. Bellis, Human Sperm Competition: Copulation, Masturbation and Infidelity, Springer, 1999
[27] Louann Brizendine, The Female Brain, Three Rivers Press, August 7, 2007
[28] Paul Bloom, How Pleasure Works: The New Science of Why We Like What We Like, W. W. Norton & Company; 2010)
সখি, ভালবাসা কারে কয়? <আগের পর্ব : পর্ব-১ । পর্ব -২ । পর্ব-৩| পর্ব-৪ | পর্ব -৫ >
সমাপ্ত
আজ অভিজিৎ দাদা আমাদের মাঝে নাই। কিন্তু তার লেখা গুলা রয়ে গেছে। আমরা আপনাকে সবসময় মনে রাখব দাদা।
অসাধারন পোস্ট গুরু।
একবার ডিস্কভারি চ্যানেলে দেখেছিলাম যে, মাত্রাতিরিক্ত দৈহিক আকর্ষনের এই অনুপাতটি আসলে মেরোলিন মনেরোর নিজের (তাই তার আরেক নাম যৌনদেবী)। এটাকেই মানদন্ড হিসাবে ধরে অন্যদের তুলনা করা হয়। ব্যাপারটা আসলে কোরান এবং আরবি
ব্যাকারন এর মতো আর কি
অসাধারন!!!!!
সিরিজের সব গুলো লেখা মন্তব্য সহকারে পড়ে বুজলাম কিছুই জানি না। ধন্যবাদ আপনাকে ।
চমৎকার একটা সিরিজ শেষ করার জন্য আপনাকে অনেক অভিনন্দন। এক কথায় আপনার প্রত্যের পর্বের লেখাগুলো ছিল জ্ঞানের অপূর্ব খনি। আপনার সিরিজ গুলো নীরব পাঠক হয়ে পড়ে গেলেও প্রচন্ড আলসেমি, কিছুটা সময় স্বল্পতা ও একি সাথে গুছিয়ে লেখার অজ্ঞতার কারনে মন্তব্য করছি করব করতে করতে জানতে পারলাম সিরিজি শেষ! অথচ মন্তব্য আর করা হয়ে উঠল না আমার।
শেষ মেষ আলসেমি ভেঙ্গে অনুরোধ রইল আবার নতুন কিছুর শুরু করার। (Y)
গভীর নিশিতে শোয়ার ঘরে বাবাকে ফাকিঁ দিয়ে রুদ্ধ শ্বাসে লেখাখানি পড়ে নিলাম। আজকাল তো মুক্তমনাতে প্রবেশই দায়। তাই গভীর নিশিতে চোরের মতো আসতে হয়।
মনের মধ্যে জমে থাকা অনেক প্রশ্নের উত্তর পেলাম আপনার এই লেখায়। কারণ আমি একটা রক্ষণশীল সমাজে বাস করি। এখানে যৌনতা নিয়ে ইতরামী করা পাপ নয় বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা মহাপাপ।
পার্টনারের মনে আঘাত না দিতেই নাকি মেয়েরা ফেক অর্গাজম করে এই ব্যাখ্যাই আমি পড়েছি। কিন্তু আপনার লেখা থেকে নতুন ব্যাখ্যা পেয়ে খুশি হলাম।
আচ্ছা পুরুষাঙ্গ এবং ভগ্নাঙ্গুর (Clitoris) এ প্রায় সমানভাবে নার্ভ এন্ডিং হয়েছে। এবং এই অংগ নারী-পুরুষ উভয়েরই যৌন পুলকের প্রধান মাধ্যম। এই ভগ্নাঙ্গুরই কি পুরুষাঙ্গে রূপান্তর হয়েছে বা পুরুষাঙ্গ ভগ্নাঙ্গুরে এই রকম কোন বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা আছে কি? ভগ্নাঙ্গুর কি জিন রক্ষার দায়িত্বে কোন ভূমিকা পালন করে পরোক্ষ্য ভাবে? জানি না বোকার মত প্রশ্ন হল কিনা।
আর আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েই রূপ গুন বাচাই করার চেয়ে টাকাকেই বাচাই করে বেশী। এইক্ষেত্রে বিবর্তনীয় মনো বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা একটু ধোয়াশার মতো লাগে।
যেমন নচিকেতার গানে দুটি লাইন উল্লেখ করি- না না চাই না কোন রূপসী। সাদামাটা কেউ হলে আমি তাতেই খুশী। এক মেয়ে হতে হবে বিয়ে করবই তাকে তবে, শুধু মেয়ের বাবার ব্যাঙ্ক ব্যালান্সটা হতে হবে বেশী………
সবশেষে একটা কথাই বলবো। আপনি এতো কষ্ট করে অনেক খাটাখাটি ঘাটাঘাটি করে যে আমাদের লেখাগুলি উপহার দেন তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
সময় নিয়ে পড়ে ভাল কাজ করেছি, জমিয়ে পড়লাম লেখা আর মন্তব্যগুলো, কিন্তু দুঃখ হইল এইখানে উপযুক্ত সঙ্গীর যেইসব বিবরণ দেয়া হইল সেইগুলা চিন্তা করলে আমি পুরাই নন সিলেক্টেবল পাবলিক। ভাগ্যিস আমার মত আরেক লেতুর ছিল এই দুনিয়ায়, ইন ফ্যাক্ট এই ঢাকা শহরেই, এইজন্যই মনিকাঞ্চন যোগ হয়ে গেল 😛
শেষ হইল কেন? :-[
সব কিছু আজকাল শেষ হইয়ে যায়, হ্যারি পটার শেষ হয়ে যাওয়ায় এমনিতেই দুঃখে আছি(অবশ্য দুঃখটা বেশি লাগতেছে কারণ ডেথলি হলোস ১ পর্যন্ত দেখে বসে আছি পার্ট ২ এর মাস্টার প্রিন্টের অপেক্ষায় 🙁 )
শেয়ার মারলাম আর পরবর্তী আরেক জম্পেশ সিরিজের অপেক্ষায় রইলাম
অভিনন্দন অভিজিৎ। রবীন্দ্রনাথ ধার করে বলতে হচ্ছে – অন্তরে অতৃপ্তি র’লো, সাঙ্গ হলেও মনে হলো – শেষ হয়েও হইল না শেষ।
@প্রদীপ দেব,
আপনাকেও ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ দা,
একটু দেরীতে বলছি: এই ধাবাবাহিক থেকে অনেক কিছু শিখলাম। ধারাবাহিক শেষ করে দেওয়ায় খুব মন খারাপ হয়েছে। এটি আবার শুরু করার বিনীত অনুরোধ রইলো। (Y)
খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। সিরিজটা শেষ হয়ে গেছে ভাবতে ভালো লাগছে না।
@অনার্য সঙ্গীত,
যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায় … 🙂
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এতো বড় পোষ্টে এতো মজা নিয়ে আজ পর্যন্ত পড়েছি বলে মনে হয় না। :rotfl: :rotfl: :rotfl:
এক কথায় চমৎকারের উপরে চমৎকার। (Y) (Y) (Y)
অরগাজমের ব্যাপারটাই আমাদের সমাজের মেয়েরা হয়ত পিছিয়ে আছে।প্রথমত যৌনতা সম্পর্কে অজ্ঞ দ্বিতীয়ত সামাজিক রক্ষনশীলতা।যেমন পুলকের উপর নির্ভর করে পার্টনার নির্বাচনের সুবিধাটা বেশির ভাগ মেয়েই পায় না।এমনকি বিয়ের পাত্র নির্বাচনের অধিকারটুকুও সে হারায়।সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অরগাজম অনুভব না করার হার হয়ত একটু বেশি।এর ফলে এদের জীবনে কি হতাশা কাজ করে?
এখানে বলা হয়েছে ভালোবাসা হৃদয় দিয়ে নয় মস্তিস্ক দিয়ে ঘটে।যৌনতার মনোভাব প্রভাব ফেলে ভালোবাসার সঙ্গী খুঁজতে।
আমি অনেক সুদর্শন পুরুষকে দেখেছি এমন মেয়েদের সাথে প্রেম সম্পর্কে জড়াতে যেইসব মেয়েরা সেক্স বম্ব এর কোনো বোইশিষ্ট্যই বহন করে না।এক্ষেত্রে ব্যাপারটির ব্যাখ্যা কি?
@রাহনুমা রাখী,
অনেক ধন্যবাদ।
আমার কাছে এ বিষয়ে কোন ডেটা নেই, তাই মতামত দিতে পারছি না। তবে পরিস্থিতি এবং প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় আপনার অনুমান বা আশঙ্কা সঠিক হবার যথেষ্ট কারণ আছে।
সবই আসলে মনোবিশ্লেষণের জটিল খেলা। হয়তো এমন হতেই পারে, আপনার কাছে না মনে হলেও সে সব পুরুষের কাছে কোন না কোনভাবে সুন্দর মনে হয়। আমি যেটা বলেছি সেটা গড়পরতা ট্রেন্ড, এর বাইরে অনেক ব্যতিক্রমই চোখে পড়ে এবং পড়বে। এমন বহু মেয়েই আছে যাদের কাছে সঙ্গির স্ট্যাটাস বা টাকা পয়সার চেয়ে অনেক কিছুই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আবার অনেক ছেলেই আছে যারা বার্বি ডলের মতো মেয়ের চেয়ে স্বাধীনচেতা স্বনির্ভরশীল মেয়ে পছন্দ করে। আমি লেখায় যেটা বলেছি সেটা গড়পরতা প্যাটার্ন। এ সংক্রান্ত কিছু বিশ্লেষণ আগের কিছু অধ্যায়ে আর উপরে অগ্নির মন্তব্যের উত্তরে দিয়েছি দেখতে পারেন।
মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
মেয়েদের অর্গাজম সম্মন্ধে, আমেরিকাতে বেশ কিছু কাজ হয়েছে-তার থেকে যেটা সহজে বোঝা যায় মেয়েদের অর্গাজম পুরুষের থেকে অনেক বেশী জটিল এবং প্রায় গড়ে ২০ মিনিট স্টিমুলেশন লাগে-এবং স্টিমুলেশন শারীরিক ও মানসিক হওয়া চাই। মেয়েদের ৮০% অর্গাজম হয় clitoral stimulation থেকে।
ফলে খুব সহজেই অনুমেয় রক্ষণশীল সমাজে বড় হওয়া মেয়েদের পক্ষে দুটি কারনে অর্গাজমে সমস্যা হয়-
প্রথমত তাদের পুরুষ সঙ্গীরা এই ব্যাপারে সচেতন না যে তার নারী সঙ্গীটির প্রায় ২০ মিনিট ফোর প্লে দরকার যৌন সঙ্গম বা পেনিট্রেশন শুরু হওয়ার আগে । এই ব্যাপারেও পুরুষ সঙ্গীটির সচেতনতা দরকার যে পুরুষ অর্গাজম খুব দ্রুত হয়-ফলে নারীটি অর্গাজমে না পৌঁছানোর আগে, তার অর্গাজম ফেজে যাওয়া উচিত না।
দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে মেয়েদের অর্গাজম যেগেতু বেশ জটিল এবং অনেকটা অংশ জুরে আছে মানসিক স্টিমুলেশন- রক্ষণশীল সমাজের মেয়েদের পক্ষে “সেক্স” নিয়ে যে অপরাধবোধ কাজ করে, তা সেই স্টিমুলেশনে বাধা দেয়। সেক্স “পাপহীন” ভাবে উপভোগ করার জিনিস -এটা মানসিকভাবে মেয়েদের মনে না এলে অর্গাজম হওয়া কঠিন।
উইকিতে মেয়েদের অর্গাজমের ওপর দারুন একটা আর্টিকল আছে। ওটাতে আরো গভীরে গিয়ে এই ব্যপারে জানা যায়।
http://en.wikipedia.org/wiki/Orgasm#Female_orgasm
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ বিপ্লব। মেয়েদের অর্গাজম সম্বন্ধে, আমেরিকাতে যে কাজ হয়েছে, সেগুলো কমবেশি জানা থাকলেও সেটা গুছিয়ে উল্লেখ করেছ সেজন্য ধন্যবাদ। রাহনুমা রাখী মূলতঃ জানতে চাইছিলেন যে, বাংলাদেশে অরগাজম অনুভব না করার হার কত কম বা বেশি – এ ব্যাপারে আমার কোন ডেটা নেই সে কথাই বলেছিলাম। তুমি যেটা বলেছ সার্বজনীনভাবে রক্ষণশীল সমাজের মেয়েদের পক্ষে “সেক্স” নিয়ে যে অপরাধবোধ কাজ করে তার প্রেক্ষিতে অর্গাজম হওয়া কঠিন – এ ব্যাপারটা সত্য হবার ভাল সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যদিও আমি নিশ্চিত নই।
দৌড়ের উপর আছি ;-( , তাই খালি ইটা রাইখ্যা গেলাম (একটা ইটার ইমো দরকার 🙂 )
@স্বাধীন,
দৌড় শেষে কথা হবে । 🙂
বরাবরের মতই অত্যন্ত ভালো লেখা হয়েছে। আপনার লেখা পড়ে ডিস্কভারীতে দেখা একটা ডকুমেন্টারীর কথা মনে পড়ে গেল। সেখানেও মুখের প্রতিসাম্যতা, কোমরের মোটা হওয়া নিয়ে আলোচনা করেছিল । লেখায় আরো বিস্তৃত ভাবে সে সম্পর্কে জানতে পারলাম। আপনার লেখায় এই মজার তথ্য বাদ গেছে যে আমাদের মুখ যদি সম্পুর্ন প্রতিসাম্য হয় তবে আমদের বিপরীত লিঙ্গের মানুষেরা অত্যন্ত কুৎসিত মনে করবে।
@বিনায়ক হালদার,
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। তবে আমাদের মুখ যদি সম্পুর্ন প্রতিসাম্য হয় তবে আমদের বিপরীত লিঙ্গের মানুষেরা অত্যন্ত কুৎসিত মনে করবে কিনা এ বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই। তবে এটা বিজ্ঞানীরা বলেন যে, কারো পার্ফেকট সিমেট্রিকাল হওয়া কারো সম্ভব নয়, কিছু না কিছু অসাদৃশ্য থাকবেই। এমনি সুপার মডেল যারা তাদের সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, তাদেরও দৈহিক কিছু না কিছু খুঁত আছে। যেমন cindy crawford এর দুই হাতের কব্জির পুরুত্ব নাকি দু রকম, আর মুখের ‘মোল’ এর কথা না হয় বাদই দিলাম! এরকম সব মডেলদেরই আছে।
অসাধারণ ! অনেক প্রশ্নের উত্তর পেলাম । পুরো সিরিজটাই নানা তথ্যে ঠাসা । তবে কথা হলো মেয়েরা যে ছেলেদের আবেগ বোঝেনা সেটা আগেই জানতাম , খালি ক্রেডিট কার্ডের ব্যালান্স বোঝে । এখানে পরিস্কার লেখা দেখে কিঞ্চিত কষ্ট পাইলাম । (U) :rotfl:
@অগ্নি,
কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই। মানুষ এক আজীব চিজ, বিবর্তনের প্যাটার্নের বাইরে গিয়েও হাজার জিনিস করে, অনেক পয়সা করি থাকার পরেও নিঃসন্তান থাকে, কেউ বা সমকামিতায় জড়ায়, কেউ বা আবার দেশের জন্য, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করে। এমন বহু মেয়েই আছে যাদের কাছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যালান্স-এর চেয়ে অনেক কিছুই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আবার অনেক ছেলেই আছে যারা বার্বি ডলের মতো পুতু পুতু সুন্দর মেয়ের চেয়ে স্বাধীনচেতা স্বনির্ভরশীল মেয়ে পছন্দ করে। আমি লেখায় যেটা বলেছি সেটা গড়পরতা প্যাটার্ন। সেটা নিয়ে স্টেরিওটিপিকাল হওয়াটা বোকামি হবে। এই ট্রেন্ডের অনেক ব্যতিক্রম আপনি সমাজে খুঁজলেই পাবেন।
আমি একটা লেখা পড়লাম এক বিজ্ঞান লেখিকার – Sex and the Evolution of Love নামে, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানকে ডিফেন্ড করে লেখা, কিন্তু নিজেদের পারিবারিক জীবনই তা থেকে ব্যতিক্রম, লেখার শুরু টা এরকমের –
লেখাটা পড়ে আমার কেন যেন নিজের জীবনের কথাই মনে হল ! কাজেই হতাশ হবার কিছু নেই। আপনার আমার মত ভ্যাবন্ডদের, যাদের কিনা ক্রেডিট কার্ডের ভাল ব্যালেন্স নেই – তাদের কেও ভাল লাগবে এমন মেয়েও দুনিয়ায় আছে নিশ্চয়! 🙂
আমার পরেও যেন পাঠকেরা আরও মন্তব্য করেন।
লেখক যখন বলছেন এটাই লাস্ট সিরিজ তখন হয়ত এইটাই তাই হবে। কিন্তু আরও সিরিজ হলে আরও ভাল হত।
সেক্স বম্ব-এর ছবি দুটোর ডান দিকের ছবিটাই বেশী পছন্দের তা নীচের লেখা না দেখেই মনে হয়েছিল।
কী অবাক করা জটীল রসায়ন যা আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবারই এক এই ক্ষেত্রে।বিজ্ঞানীরা হয়ত এর পেছনেও জটিল বা সরল বিজ্ঞান খুঁজে পাবেন আরও বেশী ব্যখ্যা দিয়ে।
অর্থাৎ, মস্তিস্কের প্রকৃতি বদলে যাওয়ায় মহিলাটির ভালবাসার প্রকৃতিও বদলে গিয়েছিলো।
এটাতো আমারা সিনেমাতে প্রায়ই দেখি যা দীর্ঘ আসুক বিসুক বা অনেক সময় একসিডেন্টের মাধ্যমে হয়।
হয়তো বিজ্ঞানীরা এক সময় এটাকে করতে সক্ষম হবেন।
(কিন্তু তা যেন না হয় কোন দিন।)
অভিজিৎ তোমাকে রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
@সেন্টু টিকাদার,
সেন্টুদা – আপনার প্রশংসাবাক্য সবসময়েই আমার ভাল লাগে :)) । মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
হ্যারি পটারের সপ্তম বই বেরোবার পরে পাঠক-পাঠিকাদের যেমন মনোদুঃখ হয়েছিল, তেমনই আফসোস হল একটুখানি।
আগে অর্ধেকটা পড়ে বেরোতে হয়েছিল, ফিরে এসে পুরোটা পড়লাম। কিন্তু মন্তব্য করতে আরো দেরি হয়ে গেল।
আমি একটা লেখায় পড়েছিলাম, যে বিচ্ছেদকালীন কয়েকদিনে যদি ওই পুরুষের বীর্যত্যাগ না হয়, তাহলে স্পার্ম জমতে থাকে বলে কয়েকদিন পরের মিলনে স্পার্মের যোগান বেড়ে যায়। তবে সেটা একটা প্রবন্ধ ছিল, গবেষণাপত্র ছিল না, তাই জানি না ঠিক কি ভুল। এটা কি একটা ব্যাখ্যা হতে পারে?
শেষ পয়েন্টটা, মস্তিষ্কের সাথে যৌননির্বাচনের সম্পর্ক, এটা নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখলে পারতেন, এটা বড়ই জোর করে সংক্ষিপ্ত করা হয়ে গেল।
@কৌস্তুভ,
ধন্য হয়ে গেলাম। 🙂
আর হ্যারি পটারের ডেথলি হ্যালোস পার্ট টু টা দেখসেন নাকি? জম্পেশ করসে। আমার মেয়ে যে কিনা প্রথমেই ধরে নিয়েছিল বইয়ের মতো ‘এত ভাল’ হবে না সিনেমা করলে, সে পর্যন্ত মুগ্ধ, অলরেডি ২ বার দেখে ফেলসে।
এটা একটা ভাল পয়েন্ট। আপনার কথা ঠিক হবার সম্ভাবনা আছে। তবে পরকীয়ার আলামত শুধু এই একটি ক্ষেত্রেই নয় আর অনেকগুলোতে পাওয়া গেছে। পুরুষাঙ্গের আর শুক্রাশয়ের আকার, সঙ্গমের প্রকৃতি এবং নারির অর্গাজম সহ অনেক কিছুই সেদিকে ইঙ্গিত করছে, যেগুলো নিয়ে আমি আলাদা আলাদা ভাবে এই পর্বে লিখেছি।
আপনার নতুন লেখা দেবার সময় হয়ে গেল!
বাংলাদেশের শোবিজের জন্য এই গবেষণা যে খুব একটা কাজের না তা মৌসুমী, শাবনূর, অঞ্জু ঘোষ সহ সব বাঙালী নায়িকাদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। 😛 😛 😛
আশা করি আগামী বইমেইলায় সিরজটা পূর্নাঙ্গ বইয়ে রুপান্তরিত হবে। (Y) (F) (F)
@হোরাস,
হেঃ হেঃ, ব্যাপারটা নিয়ে আমিও ভেবেছি। আমার হাইপোথিসিস হল – খাদ্যস্বল্পতার সাথে নায়িকাদের ফিগারের একটা সম্পর্ক আছে। আর, আমার কাছে হুমায়ুন আজাদের একটি দুর্দান্ত প্রবচনই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা মনে হয়েছে –
“ক্ষুধা ও সৌন্দর্য্যবোধের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে সব দেশে অধিকাংশ মানুষ অনাহারী, সেখানে মাংসল হওয়া রূপসীর লক্ষণ। এজন্যেই বাংলা ফিল্মের নায়িকাদের দেহ থেকে মাংস ও চর্বি উপচে পড়ে। ক্ষুধার্ত দর্শকেরা সিনেমা দেখে না, মাংস ও চর্বি খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে” ( — হুমায়ুন আজাদ, প্রবচনগুচ্ছ)
না ব্যাপারটা মোটেও ফাজলামো নয়। দেখুন চিন্তা করে – বাংলা সিনেমার দর্শক এখনো নিম্নমধ্যবিত্তই, যাদের প্রতিনিয়ত খাদ্যস্বল্পতার বিরুদ্ধে লড়তে হয়। তাদের স্বপ্নের নায়িকারা একটু কোলবালিশ আকৃতির হলে ক্ষতি কি? 🙂 উচ্চমধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তরা খুব বেশি সিনেমা হলে যায় না। তাদের নাটকের নায়িকারা – সুবর্ণা, বিপাশা, শমি, আফসানা মিমি, প্রভা – এরা কিন্তু ঠিক অঞ্জু ঘোষের আদলের নন, কিংবা ছিলেনও না, কি বলেন?
আরো দেখুন, পশ্চিমা বিশ্বে খাদ্যস্বল্পতা নেই। বরং সেখানে ম্যাকডোনাল্ডস, বার্গার কিং এর ফাস্ট ফুড সবচেয়ে সহজলভ্য আর কমদামী। সে সমস্ত খাবার নিয়মিত খেলে ওবিস হয়ে মুটিয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক। সেখানে একটি মেয়েকে খুব কষ্ট করে ব্যায়াম টেয়্যাম করে, ফাস্ট ফুডের তেল চর্বি এড়িয়ে, লেটুস সালাদ খেয়ে নিজের ফিগার মেইন্টেইন করতে হয়। সেখানে তাই চিকোন চাকোন ০.৭ মেয়েরাই সুন্দরী হিসেবে নির্বাচিত হবেন, কারণ তেল চর্বির অঢেল রাজত্বে চিকন থাকাটাই একটা বড় ফিটনেস মার্কার। কিন্তু বাংলাদেশে অধিকাংশ লোকের যেখানে আহার জুটে না, সেখানে ফিটনেস মার্কার হাড়গিলগিলে হওয়াটা যে হবে না তা বলাই বাহুল্য।
এমনকি আমেরিকাতেও নাকি যখন অর্থনৈতিক মন্দার সময়গুলোতে একটু মোটাতাজা প্লেমেটদের আধিক্য চোখে পড়ে প্লে বয়ের ম্যাগাজিনগুলোতে। দেখুন এখানে –
According to Terry Pettijohn and Brian Jungeberg, of Mercyhurst College in Pennsylvania, the curves of the magazine’s famous Playmates change in line with prosperity. Their study of centrefolds from 1960-2000 found that during booms models tended to be young, short and wasp-waisted, with wide hips and ample breasts. When times were hard, models were older and taller, with bigger waist-to-hip ratios, shallower curves and less body fat. Busts, if you like, are bad for busts.
এলায় কি বুঝলেন? 😉
(কমেন্টটা সিরিয়াসলি না নেওয়ার অনুরোধ করছি, যদিও সিরিয়াসলি নেওয়ার মত উপাদান আছে প্রচুর)
@অভিজিৎ,
আমি অবশ্য আপনার কমেন্টটা সিরিয়াসলি নিচ্ছি। মানে কমেন্টের যুক্তিগুলো চমৎকার লাগলো। তবে এই কমেন্টটার সাথে যেহেতু কিছু উপাত্তনির্ভর কাজের সম্পর্ক রয়েছে কাজেই আরো প্রশ্ন এসে যায় এখানে। প্রেম ভালবাসার ক্ষেত্রে মেয়েদের বা ছেলেদের বাহ্যিক অবয়বের ব্যপারে প্রেফারেন্স যেভাবে গড়ে উঠেছে সেটা যুগ, সমাজ ইত্যাদি ভেদে পার্থক্য হচ্ছে। এমনটি অর্থনৈতিক বুম এবং বাস্টের মধ্যেই মানুষের প্রেফারেন্স বদলাতে পারে। তার মানে হচ্ছে — এখানে বিবর্তনীয় ব্যাখ্যাগুলোকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া যায়। ধরা যাক কোমড় এবং নিতম্বের অনুপাতের ক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন যায়গায় গবেষনা চালিয়ে যদি দেখা যায় যে সেখানকার সামাজিক অবস্থায় টিকে থাকার জন্য কাংখিত বৈশিষ্ট্য — যেমন বেশি খেয়ে মোটাতাজা হওয়া, অথবা সুষম খেয়ে স্লিম ফিগার রাখা (মাসলোর হায়ারার্কির সম্পর্কও দেখছি কিছুটা) যেহেতু মানুষের প্রেফারেন্স বদলে দিতে পারছে — তার মানে হচ্ছে প্রেফারেন্স ম্যাপিং এর ক্ষেত্রে বিবর্তনিয় নির্বাচন হয়ত যতটুকু আপনার লেখাগুলোতে এসেছে তার চেয়েও ফ্লেক্সিবল। আর্থাৎ নিতম্ব আর কোমড়ের অনুপাত ছেলেদের মাথায় হার্ড ওয়ার্ড নয় — বরং চাহিদা যোগান আর ডিসায়ারিবিলিটির ভিত্তিতে একটা ছোট সময়কালের মধ্যেই প্রেফারেন্স ম্যাপ বিল্ড আপ করতে পারে। সেই বিচারে ব্ল্যাংক স্লেট বনাম সামাজিক প্রভাব নিয়ে যেই দ্বন্দ্ব তার কিছুটা সুরাহা হতে পারে এখানে। (আমি বিষয়টি সম্পর্কে অনেক স্পেকুলেটিভ মন্তব্য করে ফেললাম — হয়ত একটু স্টুপিডের মত শোনাতে পারে– ফর দ্যা সেক অব আর্গুমেন্ট ধরে নিয়েন আরকি!!)
@অভিজিৎ,
এইবারে আমি অবশ্য একটু কনফিউজড। কারন আপনি যেই ব্যখ্যাটা দিলেন বাংলাদেশ আর আমেরিকায় (অথবা নিম্নবিত্ত উচ্চবিত্তের) সৌন্দর্যের প্রেফারেন্সের পার্থক্যে — সেটার সাথে টাইমসের উদ্ধৃতিটা কিন্তু মিলছে না — সেটা অনেকটাই উলটো কথা বলছে। কিন্তু আলাদাভাবে দু’টোই ভাল ব্যখ্যা। এই পার্থক্যটা রিকনসাইল করার কোন উপায় আছে?
@রিয়াজ উদ্দীন,
ঠিক উলটো বলছে না মনে হয়। ওখানে যেভাবে লিখেছে উলটো মনে হচ্ছে। এখানে Terry Pettijohn and Brian Jungeberg এর গবেষণার মূল কথাটাই ছিলো ‘men prefer heavier playmates in a recession’। এটা আমার হাপোথিসিসসের সাথে যায়। দেখুন এখানে, কিংবা এখানে।
তবে আগেই কিন্তু বলেছিলাম ব্যাপারগুলোকে সিরিয়াসলি না নিতে! 🙂
@অভিজিৎ,
ভাল সমস্যায় পরা গেল। যতই বলছেন ব্যপারগুলোকে সিরিয়াসলি না নিতে তত মাথা থেকে বের করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আপনি একটু ফাকি দিলেন বুঝতে পারছি। আমি কৌতুহল নিবৃত করার জন্য Terry Pettijohn and Brian Jungeberg — এর পেপারটা নিয়েই একটু নাড়াচাড়া করালাম। যতটুকু বুঝলাম, প্রেফারেন্সের ব্যপারগুলো অনেকগুলো ফ্যক্টরের ওপর নির্ভর করে। আর জেনারালাইজেশানের ক্ষেত্রে মেটাএনালিটিক এক্সারসাইজ জরুরী। আর এব্যপারে ঐকমত্যে এখণো পৌছায়নি মনোবিজ্ঞানীরা।
বিশেষ করে Terry Pettijohn and Brian Jungeberg এর Personality and Social Psychology Journal এ প্রকাশিত পেপার থেকে নিচের উদ্ধৃতিটা আমার আগের মন্তব্যের সাথে কিছুটা সম্পর্কিত।
…, recent research has found that underweight female figures were rated as more attractive than normal weight or overweight figures, and figures with a high waist-to-hip ratio (.86) were considered more attractive than the figures with a low waist-to-hip ratio across all weight conditions (Puhl & Boland, 2001).
These findings run counter to Singh’s (1993) original results and a follow-up (Singh & Young, 1995) showing that larger body size, waist-to-hip ratio, and hips also made women appear older and less desirable. Tassinary and Hansen (1998) also show that waist size, hip size, and weight can be varied to produce differences in waist-tohip ratio judgments of attractiveness. These recent findings suggest that preferences may have stronger sociocultural influences that depend less on evolution and that these ideals may change. Perhaps the samples, which were tested at different times and in different locations, experienced differences in environmental security that could partially explain this discrepancy. Within an average range of body shapes and weights, larger waist-to-hip ratios may be preferred to a relatively greater extent when environmental security is high compared to uncertain conditions. This possibility warrants future investigation.
দেখা যাচ্ছে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী আর সামাজিক মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে এই বিষয়টা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। আর আপনার উপরের মন্তব্যের মধ্যে (হোরাসের মন্তব্যের উত্তরে) যেটা দেখা যাচ্ছে সেটাকেও একটু সিরিয়াসলি নিলে দেখা যাবে আপনার হাইপোথিসিসটা মূলত সামাজিক মনোবিজ্ঞানিদের পক্ষে যাচ্ছে। অর্থাৎ সৌন্দর্যবোধের ওপর সামাজিক পরিবেশের একটা শক্তিশালী প্রভার রয়েছে। আমার মনে হচ্ছে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গীতে আরেকটু ফ্লেস্কিবিলিটি আনা গেলে ব্যখ্যা গুলো আরো পরিমার্জিত হতে পারে। চমস্কির ভাষাতত্ত্ব নিয়ে গবেষনাতে ভাষা শিক্ষার ব্যপারে যে ধরনের ফাইন্ডিংস এসেছে এখানে সামাজিক মনোবিজ্ঞানী এবং বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীদের গবেষনার পার্থক্যে একই রকমের ইনপুট হয়ত দরকারি (অনুমান করতে পারি এরমধ্যে হয়ত আলোচনা গুলো শুরুও হয়েছে)।
চমস্কির কথা যেহেতু এসেই গেলো আগ্রহি পাঠকদের বোঝার সুবিধার জন্যে এই বিষয়ে কিছু ভিডিও ক্লিপ যোগ করছি।
চমস্কির সাক্ষাতকারঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=qu3XxSDRuKM
পিঙ্কারের মন্তব্যঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=piGbuSTckr8
ভাষাতত্ত্বের ছাত্রদের জন্য গোছানো বক্তব্যঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=w7K0vZ3PfbA
@রিয়াজ উদ্দীন,
চমৎকার এই ভিডিওগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। ‘ইউনিভার্সাল গ্রামারের’ ব্যাপারটা জানা ছিলো, কিন্তু ইউটিউবে এরকম দুর্দান্ত ভিডিও যে ছিলো, তা একেবারেই জানতাম না।
ধন্যবাদ আবারো।
অভিজিৎদাকে একটা প্রস্ন বিবরতনে মানুষের লজ্জা বোধ কিভাবে আসল?
হ্যা এই পর্বটা চমতকার হয়েছে, ক্লিয়ার, কনসাইস এবং স্ট্রাকচার্ড, পাঠকদের কাছে বক্তব্যও এটা পৌছুতে পেরেছে ইফেক্টিভলি। মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সেক্সুয়াল সিলেক্সন বলাই বাহুল্য ব্যাপক ভুমিকাই রেখেছে। খুব সম্ভবত মানুষই একমাত্র প্রাণী প্রজাতি যার স্ত্রীরা কিনা ওর্গাজম লাভ করতে পারে, আপনার আগের কোন পোস্টে বোধহয় আমি বলেছিলামও যে- আমি মনে করি মানুষ স্ত্রীদের এই ওর্গাজম লাভ করতে শেখাটা মানুষের সেক্সুয়াল সিলেকশনে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছে। ফুটুইমা চাপ্টার ১৪ যেটা কিনা বিহেভিওরাল জিববিজ্ঞান নিয়ে বিনিয়োগ করা তার বিশাল বইয়ের একমাত্র চাপ্টার, সেটাতেও এই প্রাইমেট প্রজাতিতে অন্ডকোষের আকারের কম্পারিজনের স্টাডিটা সাইট করা রয়েছে। হ্যা এই এভিডেন্স, এই দাবীর সপক্ষে জড়ালো সমর্থনই যে- আমাদের পুর্বপুরুষরা খুব একটা একগামি ছিলো না এখনও ১০০% একগামী নয়। কসমেটিক্সের পেছনে পুরুষ-মহিলা সকলেই বেশ ভাল খরচ করে, বিশেষ করে মহিলারা করে অনেক বেশী, বলাই বাহুল্য খুব সম্ভবত নিজের কনফিডেন্স বুষ্ট করতে এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যদের কাছে নিজেকে ইম্প্রেসিভ প্রমান করতে।
পুরুষরা পর্ণগ্রাফিতেও প্রচুর সময় বিনিয়োগ করে, কি করবে ভালো লাগে, যেখানে সেখানে সুযোগ পাওয়া মাত্রই পুলক লাভ করার জন্যইতো পুরুষ বিবর্তিত হয়েছে!! তবে ন্যাচারাল সিলেক্সনের যদি সচেতনতা থাকতো, তার নির্বাচনী ক্ষমতাকে এতোটা করুণভাবে অন্যদিকে বাইপাস হইয়ে যেতে দেখে সে বোধহয় দুঃখই পেতো। অনেকটা নিকটিয়ানা বর্গ-অন্তর্ভুক্ত গুল্মের মতো, তৃণভোজীদের উতপাত থেকে বাঁচার লক্ষ্যে তিতকুটে নিকোটিন সংস্লেষ গমনপথ বিবর্তিত করে তারা পরে গেল আরও মানুষ নামক আরও খারাপ একদল তৃনভোজী জন্তুর কবলে, এদের নিকোতিন খুবই ভালো লাগে! আমি ভাবি ন্যাচারাল সিলেক্সনের যদি সচেতনতা থাকতো তাহলে পাইক্যা, আরব ও অন্যান্য তওহিদী মুছল্মান জনতাকে গুগলে ডাঙ্কি সেক্স, হর্স সেক্স, হিপ্পোপটোমাস সেক্স ইত্যাদি সার্চ করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে দেখে তার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনটা কিরকম হতো!! 😛
আবারও চমতকার পোস্ট খুব ভালো লাগলো, তবে একটা কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই এই পর্বটা হয়েছে স্লা-ইটলি এ লিটল বিট গ্রাফিক!!! :))
😀
@আল্লাচালাইনা,
যাক একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম, আপনার কাছ থেকে এবারে কী গালিটা খাই। উল্টোটা দেখে মনটাই ভরে গেল। 🙂
তবে আমার হাইপোথিসিস হল – এবারের পর্বে আপনে বায়াসড। আপনের নামে উৎসর্গ করায় সমালোচনা না করে প্রশংসা শুরু করছেন।
:)) দারুন বলসেন। আপ্নের মন্তব্যের একেকটি লাইন যেন কবিতা!
আলোকিত হয়ে গেলাম।
@আতিকুর রাহমান সুমন,
আলোকিত করতে পারায় আমি নিজেও আলোকিত!
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
নারীরা যে পুরুষের দীর্ঘ অঙ্গ পছন্দ করে একথাটি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম বলেছিলেন অমিতাভ বচ্চন।তিনি সে সময়ের সবচে বিখ্যাত অভিনেত্রী রেখা সম্পর্কে এক মন্তব্যে বলেছিলেন, রেখার জন্য দরকার কুতুব মিনার। আবার সাড়া জাগানো কলামিস্ট তসলিমা নাসরিন তার চার স্বামীর কারুরই জনন অংগের দৈর্ঘ্য নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং সখেদে লিখেছেন এরা কেউই তার মাথায় বৃষ্টি নামাতে পারেন নি। আরব্য রজনীর কিসসায় আছে, বাদশাহ প্রাসাদ ছেড়ে বের হলেই তার পত্নী এবং উপপত্নীরা হাবসী- কাফ্রী ক্রীতদাসদের সাথে যৌন সম্ভোগের উৎসবে মেতে উঠতেন। কারণ, হাবসী-কাফ্রী পুরুষেরা তাদের দীর্ঘ যৌন অংগের জন্য নারীদের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন।
অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং দারুণ জমজমাট একটা সিরিজিরের সফল পরিসমাপ্তি হলো। এই সিরিজটি যে পরিমাণ পাঠকপ্রিয়তা এবং আলোচনায় পাঠকের সক্রিয় অংশগ্রহণ পেয়েছে তা রীতিমত ঈর্ষণীয়।
আপাতত ই-বুক করে রেখে দাও এটাকে মুক্তমনায়। আগামী বইমেলায় বই হিসাবেও দেখতে চাই এটাকে।
@ফরিদ আহমেদ,
শতভাগ সহমত ।
(Y)
চমৎকার সিরিজটা শেষ করে দিলেন!
এরকম আরেকটা সিরিজের অপেক্ষায়।
@আলিম আল রাজি,
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়বার আর মন্তব্য করার জন্য।
এই সিরিজটা পাঠক হিসাবে কিছুটা উলটো দিক থেকে শুরু করতে হোল। প্রশ্নগুলোও শেষ থেকে করি।
(১)
এখানে ঠিক কি প্রকৃতি পরিবর্তনের কারনে মহিলার উপলব্ধি পাল্টালো সেটা বোঝা যায়নি। বিজ্ঞানীরাকি এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর জানেন? নাকি কেবল বুঝতে পারছেন কেবল একটা সম্পর্ক রয়েছে — কিন্তু মস্তিষ্কের প্রকৃতির সাথে ভাল লাগার। এই খান থেকে আরেকটু বড় প্রশ্নও চলে আসে সামনে — মানে কার কাকে ভাল লাগবে সেটাও একটা ব্যপার। অর্থাৎ সিলেকশানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের গুনের সমন্বয় প্রয়োজন সমাজকে টিকিয়ে রাখতে। ফলে মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের গুনের কদর করবে। কোন মেয়ের কাছে আদর্শ পাত্র হয়ত শাহরুখ খান, কারুর জন্য রবীন্দ্রনাথ আবার কারুর জন্য আইন্সটাইন। কিন্তু আপনি যেই ধরনের দুর্ঘটনার কথা বললেন তার ফলে দেখা যাচ্ছে আগে যার শাহরুখ খানকে ভাল লাগত হঠাৎ করেই তার রবীন্দ্রনাথকে ভাল লাগতে শুরু করেছে — আর এই ভাল লাগাটা মস্তিষ্কের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে – যা কিনা মাথায় একটা আঘাতের দ্বারা পালটে যাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ কোন মেয়ে কি ধরনের ছেলেকে পছন্দ করবে সেটা জন্মের সময় নির্ধারিত হয়ে যায়না!! ব্যপারটা বেশ কৌতুহল জাগানো।
(২)
fake orgasm এর প্রসঙ্গে আচরনগত অর্থনীতির একটা পেপারের কথা মনে পড়ল।
THE ECONOMICS OF FAKING ECSTASY
নিচে এবস্ট্রাক্টের অংশ বিশেষঃ
…a signaling model of rational lovemaking. In the act of lovemaking, a man and a woman send each other possibly deceptive signals about their true state of ecstasy. For example, if one of the partners is not in ecstasy, then he or she may decide to fake it. The model predicts that (1) a higher cost of faking lowers the probability of faking; (2) middle-aged and old men are more likely to fake than young men; (3) young and old women are more likely to fake than middle-aged women; and (4) love, formally defined as a mixture of altruism and demand for togetherness, increases the likelihood of faking…..the data also reveal an interesting positive relationship between education and the tendency to fake in both men and women.
(৩) অর্গাজমিক হবার বৈশিষ্ট্য যেহেতু অনেক মেয়েদের ভেতরে দেখা যায়না — সেটা ব্যখ্যা কি হতে পারে? যেহেতু বিবর্তনীয় ব্যখ্যাগুলো মূলত ex-post কাজেই সেগুলোর অনেকগুলোই হয়ত গাজাখুরি। তারপরও। অর্গাজমিক হবার একটা প্রজননগুত সুবিধা থাকলে সব মেয়েদের মধ্যে অর্গাজমিক হবার ঘটনা ঘটছে না কেন? আর যে ক্ষেত্রে অর্গাজমিক না হয়েও কোন মেয়ের পক্ষে সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব কাজেই এটার দরকারই বা কি ছিল? তবে এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা হয়ত দুটি প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী হবেন। এক যদি অর্গাজমিক হওয়াটা কোন মেয়ের বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে — মানে একই ছেলের সাথে মিলনে একজন মেয়ে অর্গাজমে পৌছালনা অন্যজন পৌছালো — তাহলে সে ক্ষেত্রে মেয়েটির জীন পরবর্তি প্রজন্মে বাহিত হবার সম্ভাবনা বাড়াতেই কি এই ব্যবস্থা? হয়ত যেসব গুনের মেয়েদের টিকে থাকা জরুরী তারা বেশি অর্গাজমিক হতে পারে। আবার যেসব ছেলের দরুন অর্গাজম হচ্ছে তাদের বেলাতে ব্যপারটা হয়ত কিছুটা সহজে ব্যখ্যা করা যাবে। মানে ছেলেটার মধ্যে এমন সব বৈশিষ্ট্য আছে (সাস্থ্যবান, সুদর্শন ইত্যাদি) যেটাকে টিকিয়ে রাখা দরকার বলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাঠির ছোয়ায় তাদের সাথে মিলিত হলে মেয়েদের হয়ত অরগাজম সহজ হচ্ছে।
(৪) পুরুষাঙ্গের আকারের প্রসঙ্গে একটা প্রশ্ন মাথায় আসছে। বিজ্ঞানীরা কি গবেষনা করে দেখতে পারেন যে পুরুষাঙ্গের আকারের সাথে ছেলেদের অন্যসব গুনাবলির (মেধা, সাস্থ্য ইত্যাদি) কোন সম্পর্ক আছে কিনা? প্রশ্নটা আসল এই জন্য যে কেবল অর্গাজমের খাতিরে (মানে শূধুই আনন্দ উৎপাদনের জন্য) অর্গাজম হবে সেটা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সাথে “কিছুটা” সাংঘর্ষিক বা দুর্বল। কিন্তু যদি দেখা যায় এর সাথে অন্যসব গুনেরো একটা কোরিলেশান আছে সেটা একটা বাড়তি শক্তি দিতে পারে বিবর্তনীয় ব্যখ্যাকে। তবে অবশ্য অন্ডকোষের আকারের প্রশ্নে একটা দরকারী ব্যখ্যা এসেছে — কিন্তু পুরুষাঙ্গের আকারের প্রশ্নটা লেখার ব্যখ্যায় মূলত মেয়েদের আনন্দ পাবার সম্ভাবনার সাথেই মেলানো হয়েছে। একটু খটকা থেকে যাচ্ছে কোথাও।
চমৎকার পোস্ট/সিরিজ। বাকি লেখাগুলোও সময় করে পড়ার চেষ্টা করব।
@রিয়াজ উদ্দীন,
ধন্যবাদ আপনার দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য। আপনার পয়েন্টগুলো নিয়ে দির্ঘ আলোচনায় যেতে হবে। সময় করে বসে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো শিগগিরই।
@রিয়াজ উদ্দীন,
দেখি আপনার প্রশ্নগুলোর কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয়া যায় কিনা । সব প্রশ্নের উত্তর আমি হয়তো দিতে পারব না, তবে আলোচনার সূচনা করা যেতে পারে।
আমি এখানে যেটা বলতে চেয়েছি তা হল – আমাদের ভালবাসা, পছন্দ অপছন্দের নিয়ামকগুলো আসলে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিস্ক, হৃদয় নয়। কাজেই মস্তিস্কের প্রকৃতি বদলে গেলে ভালবাসার প্রকৃতিও বদলে যেতে পারে, অন্ততঃ মহিলাটির ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল। তবে হ্যা, ভালবসা আসলে খুব জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে উঠা এক ধরনের অনুভূতি। এর সবকিছুর সরাসরি কোরিলেশন বের করা যায়নি। ভবিষ্যতে যাবে কিনা সেটা সম্বন্ধেও আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই। তারপরেও বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে যে গবেষনাগুলো করছেন, সেটা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরাটাই এই সিরিজের একটি উদ্দেশ্য ছিলো।
এটাই মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। সেজন্যই স্টিফেন জ়ে গুল্ড ভাবতেন নারীর অর্গাজম বিবর্তনের উপজাত, সাইড ইফেক্ট। বিবর্তনীয় এন্থ্রোপলজিস্ট ডোনাল্ড সিমণ্ডসও সেরকম ভাবতেন। তিনি ভাবতেন নারীর অর্গাজম পুরুষদের নিপলের মতোন, যার কোন বিবর্তনীয় উপযোগিতা নেই, কারণ পুরুষকে তার শিশুকে স্তন্য পান করাতে হয় না। নিপলের উপযোগিতা আছে কেবল নারীর। তারপরেও বিবর্তনের অবশেষ হিসেবে পুরুষদের দেহে নিপল দেখা যায়। ঠিক একই রকম ভাবে পুরুষদের অর্গাজম যেহেতু বীর্যপাতের সাথে যুক্ত তার একটি বিবর্তনীয় উপযোগিতা আছে, কিন্ত নারীরটা হয়তো অবশেষ হিসেবে রয়ে গেছে। এ ব্যাপারটা সঠিক হবার ভালই সম্ভাবনা আছে।
তারপরেও নারী অর্গাজমের বিবর্তনীয় উপযোগিতা থাকতে পারে বলে কিছু কিছু বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন ইদানিং। যেমন, প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ সারা বাফার হার্ডি মনে করেন নারীদের বহুগামিতা আর পরকীয়ার সাথে অর্গাজমের সম্পর্ক আছে। অন্য প্রানীর ক্ষেত্রে যেমন, শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে আমরা জানি সেখানে নারীরা বহুগামী। হার্ডি তার গবেষণাপত্রে শিম্পাঞ্জিদের উদাহরণ হাজির করে দেখিয়েছেন যে, বহুগামিতার মাধ্যমে নারী শিম্পাজিরা ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করে -এক, অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করে সদ্যজাত সন্তানকে কেউ ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে হত্যা করবে না, আর দুই – সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে গোত্রে এক ধরণের ‘ধোঁয়াশা’ তৈরি করা; যার ফলে সকল পুরুষ শিম্পাঞ্জিই নিজেকে তার অনাগত সন্তানের পিতা ভেবে নারী এবং শিশুটিকে রক্ষা করে চলতে চেষ্টা করবে।
হার্ডি মনে করেন শিম্পাঞ্জির জন্য যে ব্যাপারটি সত্য, মানুষের বিবর্তনীয় পথ পরিক্রমাতেও সে ব্যাপারটা কিছুটা হলেও প্রায় একই রকমভাবে সত্য হতে পারে। আমরা পুরুষের অণ্ডকোষ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি, পুরুষের অপেক্ষাকৃত বড় শুক্রাশয় এটাই ইঙ্গিত করে যে, বিবর্তনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নারীরা একগামী নয়, বরং বহুগামীই ছিল। নারী বহুগামিতার আরো একটিও বড় সাক্ষ্য আমরা পেয়েছি পুরুষের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ কীলকাকৃতি হওয়ার এবং সঙ্গমকালীন সময়ে উপর্যুপরী লিঙ্গাঘাতের মধ্যেও। সঙ্গির যদি একই সময়ে আর কারো সাথে সঙ্গমের সম্ভাবনা না থাকতো তবে এগুলো একটি পুরুষের পুরুষাঙ্গের বৈশিষ্ট্য হিসেবে শরীরে জায়গা করে নিতো না। বহু মানুষের শুক্রানুর প্রতিযোগিতায় সঙ্গির গর্ভে নিজের সন্তানের পিতৃত্ব নিশ্চিত করতেই এই শারীরিক বৈশিষ্ট্য আর প্রক্রিয়াগুলো পুরুষের দেহে তৈরি হয়েছে। আমরা আরো দেখেছি যে, দম্পতিদের দীর্ঘদিন আলাদা করে রেখে তারপর সঙ্গমের সুযোগ করে দিলে পুরুষের বীর্য প্রক্ষেপণের হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন পৃথক থাকাকালীন সময়ে স্ত্রীর পরকীয়ার সম্ভাবনার থেকে যাবার কারণেই এ ব্যাপারটা ঘটে বলে মনে করা হয়। শুধু পুরুষের দেহে নয়, পরকীয়ার এবং বহুগামিতার বহু আলামত লুকিয়ে আছে নারীর নিজের দেহেও। অর্গাজম বা চরম পুলক এমনি একটি বৈশিষ্ট্য সেটা আমি আমার লেখায় ইঙ্গিত করেছি। রবিন বেকার এবং মার্ক বেলিসের যুগান্তকারী একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে সমস্ত নারীরা পরকীয়ায় জড়িত থাকে তারা চরম পুলক লাভ করে বেশি এবং তারা পরকীয়ার সময় তাদের স্বামী বা নিয়মিত সঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি শুক্রাণু যোনিতে ধারণ করে রাখে। এটা যদি ঠিক হয়ে থাকে তবে ‘বেস্ট জিন’ সংগ্রহের লক্ষ্যে অর্গাজম নারীর এক ধরনের হিডেন স্ট্র্যাটিজি।
হার্ডির এই পরকীয়া তত্ত্ব ছাড়াও যাহোক পাঁচটি হাইপোথিসিস প্রস্তাব করা হয়েছে অর্গাজমের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য –
1. hedonic hypothesis
2. Mr. Right Hypothesis
3. paternity confidence hypothesis
4. paternity confusion hypothesis
5. and sperm retention hypothesis
প্রতিটি পয়েন্ট আলাদা করে ব্যাখ্যা করা সময় সাপেক্ষ, তবে কিছুটা ধারণা পেতে এই প্রবন্ধটি দেখতে পারেন। ডেভিড বাসের ‘Evolution of Desire’ বইয়েও এ নিয়ে খুব ভাল আলোচনা আছে।
এটা আমি চিন্তা করিনি। এ সংক্রান্ত কোন কিছু পেলে জানাবো নিশ্চয়।
@রিয়াজ উদ্দীন,
যদিও বলেছিলাম পুরুষাঙ্গের প্রকৃতির সাথে অন্য কন গুনাবলির সম্পর্ক আছে কিনা খুঁজে দেখব, কিন্তু মনে হল সেক্সুয়াল সিলেকশন সম্বন্ধে একটা জিনিস বোধ হয় আগে পরিস্কার করে নেয়া দরকার ।
নট নেসেসারিলি। সেক্সুয়াল সিলেকশন অনেক সময়ই প্রজাতিতেতে কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয় না, বরং অনেক সময়ই তা হয়ে দাঁড়ায় ক্ষতিকর। ময়ুরের পেখমের কথাটাই ধরুন। দীর্ঘ পেখম ময়ূরদের জন্য চরম অসুবিধাজনক। দীর্ঘ পেখম থাকলে দৌঁড়াতে অসুবিধা হয়, শিকারীদের চোখয়ে পড়ার সম্ভাবনাও থাকে বেশিমাত্রায়। কাজেই টিকে থাকার কথা বিবেচনা করলে দীর্ঘ পেখম ময়ূরের জন্য কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয়নি বিবর্তনের পথ পরিক্রমায়। দীর্ঘ পেখম টিকে গেছে মূলতঃ নারী ময়ূর বা ময়ূরীর পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে। পুরুষ ময়ূরের লম্বা পেখমকে ভাল বংশাণুর নির্দেশক হিসেবে দেখত ময়ূরীরা । কাজেই দীর্ঘ পেখমের ঢেউ তোলা সুশ্রী ময়ূরেরা যৌনসঙ্গি হিসেবে নির্বাচিত হতে পেরেছিলো, কারণ বিপরীত লিঙ্গের যৌনসঙ্গিদের কাছে তারা ছিলো একেকজন ‘ব্রাড পিট’ কিংবা টম ক্রুজ, তা যতই অসুবিধার সৃষ্টি করুক না কেন!
মোটা দাগে, যৌনতার নির্বাচন কোন বাড়তি সুবিধা দেয়া না প্রজাতির বেঁচে থাকায়। এগুলো কেবলই গয়নাগাটির মতো ‘অর্নামেন্টাল প্রোডাক্ট’। ময়ূরের পেখমের মত মানব সমাজেও অনেক বৈশিষ্ট আছে যেগুলো অর্নামেন্টাল বা অলঙ্কারিক। কবিতা লেখা, গান করা থেকে শুরু করে গল্প বলা, আড্ডা মারা, গসিপ করা, ভাস্কর্য বানানো – প্রভৃতি হাজারো বৈশিষ্ট মানব সমাজে দেখা যায় যেগুলো স্রেফ অলঙ্কারিক – এগুলো বেঁচে থাকায় কোন বাড়তি উপাদান যোগ করেনি, কিন্তু এগুলো টিকে গেছে যৌন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে।
কাজেই পুরুষাঙ্গের আকার আর প্রকৃতি সেক্সুয়াল সিলেকশনের ফল হলে, সেতা কেবল বিপরীত লিঙ্গের আনন্দ এবং পছন্দ দিয়েই টিকে থাকতে পারে, মেধা, সাস্থ্য ইত্যাদির সাথে কোন সম্পর্ক থাকতেই হবে এমন নয়।
@অভিজিৎ,
মন্তব্যের উত্তরগুলো বেশ যুতসই মনে হোল।
আপনি যেমন কৌতুহলি তাতে মনে মনে ভাবছি — চমস্কিয়ান ইউনিভার্সাল গ্রামারের আদলে যৌন নির্বাচনের ব্যখ্যায় ফ্লেক্সিবিলিটি আনলে ব্যখ্যা গুলো আর স্মুথ হবার যে সম্ভাবনা এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন ইম্পিরিকাল গবেষনাগুলোকে আপনার ব্যখ্যা দিয়ে একটা মালা যদি গেথেই ফেলেন সেই পোস্টখানা কেমন হবে?
সযত্ন উত্তরের জন্য ধন্যবাদ।
@রিয়াজ উদ্দীন,
ডারউইনিয়ান পদ্ধতিতে কিভাবে আমাদের পছন্দ অপছন্দ এবং সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রহগুলো বিবর্তিত হয়েছে সে নিয়ে একটা চমৎকার ভিডিও পেলাম, দেখতে পারেন, ডেনিস ডাটনের বক্তৃতা –
httpv://www.youtube.com/watch?v=PktUzdnBqWI
আপনি যে ব্যাখ্যাগুলো চাচ্ছেন তার অনেক কিছুই এই ভিডিওতে খুঁজে পাবেন বলে আমার মনে হয়।
@অভিজিৎ,
চমৎকার এবং প্রাসঙ্গিক। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবার পর কিছু কিছু স্পেকুলেশান করেছিলাম — কেন মানুষের প্রকৃতির কাছে যেতে ভাল লাগে, মানুষের আবাসে চিড়িয়াখানা কেন তৈরি হয়, মানুষের ভয় ক্ষুধা এই সব অনুভুতি কেন জাগে এইগুলোর একটা তাৎপর্য বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের আলোকে পাওয়া সম্ভব মনে হয়েছিল। সেই বিষয়গুলো কাছাকাছি রকম ভাবে এখানে বলা হচ্ছে দেখে কিছুটা সস্তি পেলাম।
তবে মূল প্রসঙ্গে আসি। চিন্তার ভেতর এখন “ব্ল্যাঙ্ক স্লেট বনাম সামাজিক প্রভাব” — “বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বনাম সামাজিক মনোবিজ্ঞান” এই দ্বৈততাগুলি ঘুরছে। সেই দিক দিয়ে মনে হয়েছে এই ভিডিওতে সৌন্দর্যবোধের ওপর সমাজ এবং সংস্কৃতির ভেতরে নিহিত ব্যখ্যার বিপরীতে বিবর্তনীয় ব্যখ্যার ডিফেন্স করা হয়েছে। এইখানেও ইউনিভার্সাল গ্রামারের মত একটা ফ্রেমওয়ার্ক প্রযোজ্য বলে আমার মনে হচ্ছে। মানে এক যায়গা বা সংস্কৃতির শিল্পকে আরেকযায়গার মানুষের কাছে অর্থবহ হতে গেলে কিছু ট্রান্সলেশানের দরকার পরে হয়ত। যেমনটা নিচের ভিডিওতে নিউরোসাইন্টিস্ট রামচন্দ্রকে করতে দেখা যাচ্ছে। যেখানে তিনি ইন্ডিয়ান আর্ট সম্পর্কে পশ্চিমাদের মধ্যে একরকমের ধারনা দেয়া হচ্ছে। হয়ত শিল্পের ব্যকরন ভাষার ব্যকরনের তুলনায় কম কাঠামোগত পার্থক্য ধারন করে। কিন্তু শিল্পের অবয়বে আন্তঃ-সংস্কৃতিক পার্থক্য আছে সেটা আমরা স্বাভাবিক ভাবেই পর্যবেক্ষন করি। ডাটনের লেকচারে মূলত কমনালিটি গুলো তুলে এনে মিল গুলো দেখানোর দিকে বেশী গুরুত্ব ছিল (সামাজিক মনোবিজ্ঞানের বিপরীতে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের কেস দাড় করানোর লক্ষ্যে)।
httpv://www.youtube.com/watch?v=7ZTvHqM-_jE
সিনেস্থেসিয়া সম্পর্কে রামচন্দ্রের বক্তৃতাগুলো হয়ত দেখেছেন। আমি চমৎকৃত হয়েছিলাম।
@রিয়াজ উদ্দীন, এবারে রামচন্দ্রের লেকচারটি আবার শুনতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম এখানে ইউনিভার্সাল গ্রামারের কথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে — ২৫ মিনিটের পর ২-৩ মিনিট শুনলেই পাবেন। ডাটনের বক্তৃতার সাথে অনেকটাই মিল আছে অবশ্য বক্তব্যে, কিন্তু কম ডিটারমিনিস্টিক এবং সংস্কৃতির প্রভাবকে যথেষ্ট যায়গা দেয়া হুয়েছে রামচন্দ্রের বক্তৃতায়।
যতো কথাই বলুন, এটাই হচ্ছে সত্যি- নারীরা চাম্পা -কলার চেয়ে সাগর কলা বেশি পছন্দ করেন যেমন পুরুষেরা লালমাই পাহাড়ের চেয়ে কেওক্রাডাং বেশি পছন্দ করেন।
@মোহিত,
খাইসে আপনে দেখি রিয়েল কলা বিশেষজ্ঞ 🙂 । আপনার ফাইন্ডিং এর ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য নাই।
আল্লা……একেবারে প্রথম পাতার সর্বোচ্চে নাকের ডগায় আমাকে উতসর্গ করা পোস্ট ঝুলতে দেখে লজ্জা টজ্জা পেয়ে গেলাম কিন্তু! আপাতত জানিয়ে যাচ্ছি যে- দেখেছি, সাথে আছি। কালকেই যোগদান করতে পারতাম বিবর্তন মনোবিজ্ঞান বিষয়ক এই বিস্তৃত পোস্টে, কিন্তু ওইদিকে ফেইসবুকে ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানের অধ্যয়নযোগ্য এক বিষয়বস্তু আমার সম্পুর্ন রোববার এঙ্গেইজ করে রেখেছিলো দেখে থাকবেন হয়তো, তাই দেরী হল। পড়া শেষ করিনি এখনও, পড়ে বিস্তারিত মন্তব্য করছি। আরও কয়েকটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া বাকি রয়ে গেছে অন্যান্য পোস্টে ওগুলো নিয়েও বসছি তার পর পরই।।
@আল্লাচালাইনা,
আমি দেখিয়াছি 😀 😀 😀 :hahahee: :hahahee: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :)) :)) :))
এ ধরনের লেখার কোন পয়েন্ট নিয়ে গভীর প্রশ্ন করার কিংবা সমালোচনা করার যে পড়াশোনা দরকার তার সামান্যটুকুও আমার নেই তাই ওদিকে আর গেলাম না। আমি শুধু অভিজিৎদাকে অভিনন্দন জানাবো এমন জনপ্রিয় একটি সিরিজের সফল সমাপ্তির জন্য। :clap :clap
এই সিরিজ থেকে অনেক কিছুই জানলাম এবং শিখলাম যা নিজের জীবনে ভালোমতো প্রয়োগ করতে পারব বলে আশা রাখি! :)) আপনি ভালোবাসার সাপ্লাই বন্ধ করে দিলেও আশা করি অন্য কেও হয়ত এর ঝুড়ি নিয়ে এগিয়ে আসবে। 🙂
ও হ্যাঁ, একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। এ পর্বটাতে একেবারে ‘ফাটায়ে ফেলছেন’। একেবারে পারফেক্ট এন্ডিং। :guru:
@নিটোল,
খাইসে! ফাটানোর চোটে যে নিজেই ফেটে যাই নাই তাতেই রক্ষা :))
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। লেখাটা আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগলো।
অভিনন্দন অভিজিৎ দা! খুব মজারু একটা সিরিজ শেষ হয়ে গেল। তাই আপনার জন্য একটা :-[
জলদি আরেকটা মজারু কিছুর অপেক্ষায় আছি…
ভাইয়া, মাল্টিভার্স, প্যারালাল ইউনিভার্স বা পদার্থবিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয় জিনিসপত্র বহুদিন আপনার কাছ থেকে পাইনা। এক শাফি ছাড়া আর কেউ পদার্থ ঘাটাচ্ছেনা আজকাল। তেষ্টায় যে বুকটা শুকিয়ে গেল… :-X
@নীল রোদ্দুর,
পদার্থবিজ্ঞানের এই আকাল দেখিয়া আমি খুবই হতাস 🙁 এখানে নাকি এককালে পদার্থবিজ্ঞানের স্বর্নযুগ ছিলো, সেইটা আবার ফিরে আসুক (O)
@অভিজিৎ ভাই হ্যা, এবার পদার্থবিজ্ঞানে ফিরে আসুন পিলিজ :)) দুনিয়ায় কত আজীব আজীব জিনিষ ঘটতাসে একটু আমাদের ব্যাখ্যা পিতেস করেন… সিপি ভাইয়োলেশনে সিমেট্রি ফিরায়া আনতে নতুন তত্ত্ব আমদানী করা হয়েছে গ্যালাকটিক টুইষ্টের হিসেব নিকেশ এখানে দেখুন
শুনলাম হিগস বোসন কনার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, দুই দিন ধরে আমার কী আনন্দ, যদিও আল্লায় জানে হিগস পাইলেই আমার বাবার কী না পাইলেই আমার বাবার কী :)) পরে শুনলাম সব গুজব 🙁 তো এই হিগস নিয়া এত মাতামাতি এ নিয়া কিছু জানাইলে খুশ হইতাম।
সীন ক্যারলের বইয়ের আলোকে (বইটা ভালো লেগেছে) “টাইম” নিয়ে খানিক আলোচনাও মন্দ হয়না, একদম র ফিজিক্স।
আরো হাজার খানিক দাবী এখানে জানাতে পারি, সব বাদ দিয়ে বলি এবার পদার্থবিজ্ঞান 😀
পোলাপান তো, তাই এখনো রসকসের মর্ম বুঝিল না! শুধুই পদার্থবিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞান করিতেছে। ইহাদের জন্য বড়ই আফসোস হয়। :))
@শ্রাবণ আকাশ,
:))
@নীল রোদ্দুর,
[img]http://www.freesmileys.org/smileys/smiley-dance013.gif[/img]
এবারে আপনি বরং একটা সিরিজ শুরু করেন!
বিজ্ঞানীরা যেভাবে যৌনতা নিয়ে গবেষণা শুরু করছে তাতে কিনা শেষ পর্যন্ত যৌনতার আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। :))
আরেকটা জিনিস বেশ ভাবাচ্ছে– এইসব যৌনবিজ্ঞানীরা নিজেদের যৌনকার্য সম্পাদনের সময়ও কি এসব বিজ্ঞান নিয়ে ভাবেন? তাদের সঙ্গীরাও যদি বিজ্ঞানী না হয় তাহলে তো বিজ্ঞানীর খবর হয়ে যাবার কথা। :-s :-s
নতুন কোন পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
@সন্ন্যাসী,
হ্যা, আমিও তাই বলি। আমি নিশ্চিত আসল সময় এই সব বিজ্ঞানীরা ‘প্রাকৃতিক পদ্ধতি’ই শ্রেয় মনে করবেন, আর এই সব ছাই পাশ আপনাদের গেলাবেন অবসর সময়ে, যখন হাতে কোন কাজ কাম নাই। এরকম ঘটুক, কে চাইবেন বলুন! :))
তবে নিরাশ হবার কারণ নেই, দেখুন এখানে। 🙂
অভিজিৎদা,
ব্যাপারটা অনেকটা সাংঘাতিক উত্তেজনাকর কোন ছবি দেখার মতো। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় ডুবে থাকা কোন দর্শককে হঠাৎ ছবিটির ‘শ্যুটিং’ অথবা ‘স্পেশাল ইফেক্ট’-এর মেকানিকাল ব্যপারগুলো দেখানো হলে দর্শকের উত্তেজনা আর আনন্দ নিমিষেই উবে যাবে। আপনার লেখার মাধ্যমে ‘সেক্স’-এর গোপন রহস্যগুলো যাদের মাথায় ঢুকেছে, তাদের ক্ষেত্রে একই রকম ঘটার আশংকা নেইতো?
ধরা যাক একজন পূরুষ তার ”সঙ্গির পরিস্কার চামড়া, ঘন চুল, কমনীয় মুখশ্রী, প্রতিসাম্যময় দেহ, পিনোন্নত স্তন, সুডোল নিতম্ব আর ক্ষীন কটিদেশ” দ্বারা আকৃষ্ট হলো, কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হলো এসবই হলো “গর্ভধারণ ক্ষমতা তথা উর্বরতার প্রতীক”, যা আকর্ষণের মোড়কে তার কাছে হাজির হয়েছে, তাহলে ভালবাসার স্বর্গীয় সুখ প্রাপ্তিতে কোন বিঘ্ন ঘটবে কিনা?
বরাবরের মতই আপনার লেখা অসাধারণ হয়েছে। যদিও আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই, প্রকৃতির রহস্য জানার কৌতূহল আমার অসীম। অনেক বইও কিনেছি; কিন্তু আপনার ‘সহজপাঠ’ই আমি সবচেয়ে বেশি নিতে পেরিছি। ‘সময়ের প্রহেলিকা’-র অপেক্ষায় আছি।
@কাজি মামুন,
হাঃ হাঃ বলা মুশকিল। আমি যখন রিচার্ড ডকিন্সের সেলফিশ জিন পড়ে শেষ করেছিলাম, তখন আমার কাছে দুনিয়াদারীর চেহারাই পালটে গিয়েছিল। কোন সুন্দরী মেয়ে সামনে দিয়ে গেলেই মনে হত, হুমম… একে সুন্দরী লাগছে কারণ বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে এর দেহের এস্ট্রোজেনের পরিমাপ ….. সবই ঘুরে ফিরে স্বার্থপরভাবে জিনপুল রক্ষা আর বিস্তৃত করার তাগিদ :))। আমি ভেবেছিলাম শুধু আমারই এরকম হয়েছিল। পরে আমাজনে দেখি ডকিন্সের বইটার রিভিউ করতে গিয়ে একই রকম কথা লিখেছে একজন পাঠক। তবে এটা ঠিক আপনি যদি মানব সমাজে ইউনিভার্সাল এট্রাকশনের বিষয়গুলো বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখেন, আপনার প্রেমে পড়া বন্ধুর দিওয়ানা হয়ে যাওয়াটা এর পেছনের কারণটা বুজতে পারে দেখে আপনি নিঃসন্দেহে নিজের মনে একচোট হেসে নিতে পারবেন। আর হাসি সবসময়ই স্বাস্থ্যকর! :))
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
এই সিরিজের এটাই সবচেয়ে সফল।
@আসরাফ,
ধন্যবাদ।
সত্যিই চমত্কার একটা লেখ । প্রথমে ছাব্বিশ পেজ দেখে ভাবলাম এখন কিছুটা পড়ি, বাকিটা পড়ে পড়ব । কিন্তু শ্রাবণ আকাশ ভাইয়ার মতো আমারও বারটা বেজে গেল (১২:৩০)। তবুও পুরো লেখাটা পড়ে শেষ না করে উঠতে পারলাম না । পরবর্তী সিরিজের আপেক্ষায় …………
@ছদ্মবেশী,
ছাব্বিশ পেজ দেখে যে নিরাশ হয়ে ঘুমাতে চলে যাননি এটাই বড় প্রাপ্তি। আপনার মন্তব্যের জন্যও অনেক ধন্যবাদ।
হুম লিঙ্ক ঠিক আছে! (আরো আগে চেক করা দরকার ছিলো ) :))
আর আমি লেখা পোষ্ট করলেই আপনি ঘাড়ের উপর ভালাবাসা পোষ্ট কইর্যা দেন, আমি চিপাত পইড়্যা যায়। মাইনাস এবং ভালবাসা নিপাত যাওয়াতে আমি ব্যাপক খুশি :))
এখনো পড়া হয়নি, পড়ে টড়ে আবার কমেন্ট করবো (W)
@টেকি সাফি,
আগে চেক কইরাও লাভ হইতো না। আমি তোমার ভয়ে লিঙ্কগুলাই চেক করসি বারবার। বার বার বকা কে খাইতে চায়। 🙂
ওহ তাই নাকি! সত্যই দুঃখিত। এইটা আসলেই খেয়াল করি নাই। আমি আসলে আমাদের উইকেন্ড প্ল্যান কইরা লেখা ছাড়ি। শনি রবিবার এখানে ছুটি। অফিসের দিনগুলাতে লেখা নিয়ে গুতাগুতি করার সময় পাইনা। তোমার লগে সেমটাইম হয়ে যায় খেয়াল করি নাই।
আমিও :))
ঠিক আছে অপেক্ষায় থাকলাম।
এতো তথ্য বহুল চমৎকার সিরিজটা শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। তবে ভবিষ্যতে আরো সুন্দর সিরিজের অপেক্ষায় থাকলাম। লেখক কে
অভিনন্দন (F)
@আফরোজা আলম,
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
মুক্তমনায় নিয়মিত লিখুন।
লাইনে লাইনে জিজ্ঞাসা! কিন্তু পড়তে গিয়ে এমনিতেই ঘুমের ১২টা (১১:২৭) বেজে গেল। সকালে আবার শুরু করব।
@শ্রাবণ আকাশ,
ঘুমের বারোটা বাজলেও লেখাটার জন্য যে নির্ঘুম থাকতে হল না সেটাই আনন্দের। ভাল ছেলের মতো ঘুমাতে চলে গেছেন! :))
সকালে পড়ে বইলেন কেমন লাগলো।
@অভিজিৎ,
:hahahee: :hahahee:
@অভিজিৎ, ঘুমাতে চলে গেছি- তা কখন বললাম! পড়তে পড়তে তো ঘুমের ১১:২৭ বেজে গেল 🙂
২৪ ঘন্টা বা ১২ ঘন্টা আগে দিলেও লাইন বাই লাইন প্রশ্ন তুলতে পারতাম। কিন্তু পরে বুঝলাম উইকএণ্ডে নিজের কাজ সেরে এখন উইকজুড়ে আমাদের ঘুমের ১২টা বাজাবেন। 🙂
আর ঘুম থেকে উঠেই মানডে! কার ভালো লাগে 🙁
এই লেখায় রাধা-কৃষ্ণের আসা উচিত ছিল। পরে বলতেছি।
@অভিজিৎ, মনে হচ্ছে তিনটা ভিন্ন ভিন্ন পোস্ট হতে পারত। টেকিসাফ যাই বলুক না কেন, তিনটা পোস্ট হলেই মনে হয় ভালো হত। প্রতিটি বিষয় আরো বিস্তারিত হতে পারত।
আমাদের দেশে এখনো পারিবারিক ভাবেই বেশীর ভাগ বিয়ে হয়ে থাকে। এখানে নিজেদের ভালোলাগা না লাগার কোনো মূল্য নেই। বাসর ঘরে গিয়ে একে অন্যকে পছন্দ হোক বা না হোক, সারাজীবন একসাথে কাটাতে হবে- এমন একটা জোরাজুরিই সবার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এইগুলো কি এক ধরনের নির্যাতন নয়? সেক্সবম্ব-এর ব্যাপাটা ঠিক হলে আমাদের দেশে এটার কার্যকারিতা কতটুকু?
আবার চেহারার দিক দিয়ে বললে আমাদের দেশে কয়টা মেয়ের ঐরকম ফিগার বা সৌন্দর্য আছে? তারপরও তো তাদের প্রেমে কেউ না কেউ পড়ছে। Seinfeld-এর একটা এপিসোডে খোদ আমেরিকার ৯৫% মেয়েকেই undateable বলছে।
সেক্সের ব্যাপারে মানে যখন সেক্সের ইচ্ছা পুরাই জাগ্রত হয় তখন পুরুষদের বিশেষ করে আমাদের কালচারের পুরুষদের মনে হয় কোনো বাছ-বিচার থাকে না। কেননা নারী-পুরুষ উভয়েই লাইক ইট হোয়েন ইট ইজ ডার্ক! 🙂
দীর্ঘ-বিচ্ছেদ, শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি- এসব দেখলে মনে হয় মানুষ শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্যই মিলিত হয়। কিন্তু এর বাইরেও তো অনেকে শুধু দৈহিক-মানসিক সুখের জন্য সেক্স করে। আবার অনেক দম্পত্তিকে দেখা গেছে যারা ইচ্ছা করেই কখনোই সন্তান না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- এটাই বা কেন?
ভালোবাসা এত কথা হলো- অথচ শেষ পর্যন্ত এসে এটাই মনে হচ্ছে যে আসলে “পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই…” 🙂
তবুও বিয়ের পর কেউ ইচ্ছে করে বিচ্ছেদের দিকে যেতে চায় না। সেটা আমাদের দেশে তো বটেই, বিদেশেও নয়। আর যেসব বিচ্ছেদ হয়, তাতে মনে হয় না সেক্স ব্যাপারটা খুব বেশী একটা কারন।
সমস্যা হলো পোস্টের বেশীভাগ তথ্যই পশ্চিমা সমাজের ভিত্তিতে। তাই আমাদের সমাজ নিয়ে খুব একটা কিছু বলা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত তথ্য নেই।
তো বিদেশে যেটা দেখা যায়- বিয়ের আগে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এক বা একাধিক বার শারীরিক সম্পর্ক থাকবেই। অনেকে একসাথে অনেকদিন থাকার পরও আবার বিয়ে করে না।
আমাদের দেশে অনেকদিনের প্রেম থেকে একসময় সেক্স হওয়ার পর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে বলেই কি মেয়েরা সাধারণত বিয়ের আগে সেক্সের সম্পর্কে যেতে যায় না? আর এই ঝুঁকি আসলেই বেশি? হ্যাঁ হলে কেন বেশী?
আমার কাছে খুব বড় একটা প্রশ্ন, যেটা নিয়ে মাঝে মাঝেই ভাবি- সেক্সের পরে প্রেম নাকি প্রেমের পরে সেক্স- কোন সম্পর্কটা বেশী টেকসই?
এবার একটু রাধা-কৃষ্ণের ব্যাপারে আছি। ধারনা করা হয়, রাধার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সে ভার্জিন ছিল, কৃষ্ণের সাথে সম্পর্ক হওয়ার আগ পর্যন্তও। রাধার প্রতি কৃষ্ণের কোনো প্রেম-ভালোবাসা ছিল বলে মনে হয় না। সেক্সের সম্পর্ককের আগে রাধারও ছিল না। তো একে একে দুজনে অনেকবার মিলিত হয়। ধীরে রাধার মনে প্রেম-ভালোবাসার জন্ম হয়। আর কৃষ্ণ তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সেটা আরো বেশী হয়- বিচ্ছেদের সময়গুলোতে রাধার আচরণই যার প্রমান।
কৃষ্ণের কামকেলীর নলেজের তুলনা ছিল না। রাধার প্রতি কৃষ্ণের অনেক অবহেলার পরেও এটাই কি রাধাকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে? তো এই যে সেক্সের পরে প্রেম-বিয়ে, তারপর আবার প্রায় ৫০%-এর মতো ডিভোর্স হয়ে যায় পশ্চিমে (আমেরিকায়)। কিন্তু এদের বাকি ৫০% কিন্তু আজীবন সুখেই থাকে বলে আমার ধারনা। এ ব্যাপারে কার কি মত?
@শ্রাবণ আকাশ,
ভাল একটা মন্তব্য করেছেন। দেখি দু চারটি পয়েন্টের উত্তর দেয়া যায় নাকি।
হ্যা আমাদের দেশে পারিবারিকভাবেই বিয়ে দেয়া হয়, বিয়ের আয়োজন করা হয়, যদিও ইদানিং ছেলে মেয়েদের স্বাধীনভাবেই নিজেদের পছন্দ অপছন্দ করার রীতি বাড়ছে। কিন্তু পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়া হলে যে নারী পুরুষের মেটিং স্ট্র্যাটিজি যে কাজ করে না তা নয়, আমার মতে খুব ভাল করেই করে। ছেলের জন্য আপনার বাবা মা পাত্রী দেখতে গেলে প্রথমেই দেখে কনের দেহে কোন খুঁত আছে কিনা। শুনেছি অনেক সময় নাকি হাটিয়ে টাটিয়েও দেখা হয়, কথা বলতে পারে কিনা (মানে বোবা কালা কিনা) যাচাই করে নেয়া হয়। মেয়ে ফর্সা আর সুন্দরী হলে পাত্রীর বাবা মাকে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। এগুলো থেকে কি কোন আলামত পাওয়া যায়? পাওয়া যায় যে, ছেলেরা বিয়ের সময় কিংবা সঙ্গি খোঁজার সময় সব সময়ই মেয়েদের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয়, এমন মেয়ে স্ত্রী হিসেবে বেছে নিতে চায় যে গর্ভধারণ ক্ষমতা তথা উর্বরতার প্রতীক। আবার অন্য দিকে মেয়েদের বাবা মাও চায় ছেলের স্ট্যাটাস সম্বন্ধে জেনে নিতে, অর্থাৎ কোথায় চাকরী করে, কি রকম পয়সাকড়ি উপার্যন করে ইত্যাদি। পাত্রীপক্ষ ছেলের চেহারা নিয়ে খুব বেশি পেরেশান করে না, যতটা না করে ছেলের চাকরী বাকরী আছে কিনা তা নিয়ে। কিন্তু ছেলেদের কাছে স্ত্রীর সৌন্দর্যের ব্যাপারটা বহু সময়ই মূখ্য হয়ে উঠে।
এ ব্যাপারটা শুধু আমাদের সংস্কৃতিতে নয়, কম বেশি সব সংস্কৃতিতেই একই রকম পাওয়া গেছে বলে দাবী করা হয়। ডেভিড বাসের গবেষণার ফলাফলগুলো মনে করুন, এটা নিয়ে আমি কোন এক পর্বে লিখেছিলাম। তিনি ৩৩ টি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, সঙ্গী নির্বাচনের সময় ছেলেরা গড়পরতা দয়া, বুদ্ধিমত্তা আশা করে, কিন্তু পাশাপাশি প্রত্যাশা করে তারুন্য এবং সৌন্দর্য। অন্যদিকে মেয়ারাও গড়পরতা ছেলেদের কাছ থেকে দয়া, বুদ্ধিমত্তা আশা করে ঠিকই, পাশাপাশি সঙ্গীর কাছ থেকে আশা করে ধন সম্পদ আর স্ট্যাটাস। অধ্যাপক বাস প্রথমে আমেরিকায় সমীক্ষা চালালেন। দেখা গেল, আমেরিকায় মেয়েরা যত ভাল চাকরীই করুক না কেন, তারা আশা করে তার স্বামী তাদের চেয়ে বেশি রোজগার করবে – নাইলে ব্যাপারটা ‘এনাফ কুল্’ হবে না। ম্যাচ ডট কম –এর মত সাইটগুলোতে দেখা যায় মেয়েরা তার হবু সঙ্গীর স্ট্যাটাস এবং প্রতিপত্তির প্রতি আগ্রহী হয় ছেলেদের চেয়ে ১১ গুন বেশি। এমনকি একটি পরীক্ষায় অধ্যাপক বাস একই লোককে কখনো বার্গার কিং বা ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মীর পোষাক পরিয়ে, কখনোবা বিরাট কোন কোম্পানির সিইও সাজিয়ে পরীক্ষা করলেন । দেখা গেল, নিম্ন স্ট্যাটাসের পোশাক পরা লোকের সাথে মেয়েরা প্রাথমিকভাবে কোন ধরণের সম্পর্ক করতেই রীতিমত অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। অথচ একই লোককে বড় স্ট্যাটাসের কোন পোশাক পরিয়ে বাইরে নেয়া হলেই মেয়েরা তার প্রতি উৎসুক হয়ে উঠছে। কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে সেরকম প্রবণতা লক্ষ করা যায়নি। অর্থাৎ, ছেলেরা সঙ্গি নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেয়েদের স্ট্যাটাস নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয়, যতটা তারা উদ্বিগ্ন একটি মেয়ের দৈহিক সৌন্দর্যের ব্যাপারে। প্রথমে যখন বাসের ফলাফল বৈজ্ঞানিক সাময়ীকিতে প্রকাশিত হল, সেটা উড়িয়ে দেয়া হল এই বলে – আরে ওটা আমেরিকার পঁচে যাওয়া ভোগবাদী সংস্কৃতির নিদর্শন। অন্য জায়গায় নিশ্চয় এরকম হবে না। অন্য জায়গার ঘটনা বুঝতে বাস ইউরোপীয় দেশগুলোতে তার সমীক্ষা চালালেন। সেখানেও একই ধরণের ফলাফল বেড়িয়ে আসলো – ছেলেরা মেয়েদের সৌন্দর্যের প্রতি বেশি মনোযোগী, আর মেয়েরা ছেলেদের স্ট্যাটাসের- তা সে হল্যান্ডেই সমীক্ষা চালান হোক, অথবা জার্মানীতে। এবারে বলা হল ইউরোপীয় সংস্কৃতি অনেকটা আমেরিকার মতই। সেখানে তো এরকম ফলাফল আসবেই। এরপর অধ্যাপক বাস ছয়টি মহাদেশ এবং পাঁচটি দ্বীপপুঞ্জের ৩৭ টি ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা ১০০৪৭ জন লোকের উপর সমীক্ষা চালালেন – একেবারে আলাস্কা থেকে শুরু করে সেই জুলুল্যান্ড পর্যন্ত। প্রতিটি সংস্কৃতিতেই দেখা গেল মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে আর্থিক প্রতিপত্তিকে অনেক বেশী গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করে । জাপানে এই পার্থক্য সবচেয়ে বেশী পাওয়া গেল আর হল্যান্ডে সবচেয়ে কম – কিন্তু তারপরেও সংস্কৃতি নির্বিশেষে নারী-পুরুষের চাহিদার পার্থক্য কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। আমাদের মত সনাতন সংস্কৃতিতে বরং এই ব্যাপারগুলো আরো প্রবল।
এই ব্যাপারটা একটা ইভলুশনারি পাজেল। কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক বিহেভিয়ার, কিছু ক্ষেত্রে গেম থিওরীর আলোকে সম্পদ বনাম সন্তানের রেখচিত্রের মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব করা হলেও আমার কাছে কোনটিই কম্পেলিং মনে হয়নি। কেন মানুষ নিঃসন্তান থাকতে ভালবাসে, কিংবা কেন ক্ষেত্র বিশেষে নিজ সন্তানকে হত্যা করে, কিংবা কখনো নিজেও আত্মহত্যা করে – এগুলোর কোন বিবর্তনীয় সমাধান নেই, কিংবা থাকলেও আমার জানা নেই। তবে এটুকু বলা যায় যে, এগুলো সবই এক্সট্রিম কেস, জনপুঞ্জ টিকে থাকতে হলে এগুলো কখনোই মেইনস্ট্রিম ট্রেন্ড হয়ে উঠবে না। আর আমরা তো দেখেছিই বিবর্তনে সমকামিতার ট্রেন্ড সহ নানা ধরণের ভ্যারিয়েশন থাকেই, এগুলো কিছু না কিছু থাকবেই, তবে কম হারে। এর বাইরে আর কেউ কিছু জানলে মতামত দিতে পারেন।
এটার কারণ ছেলেদের অভিভাবকত্বীয় বিনিয়োগটা বিবর্তনের দৃষ্টি থেকে কৃত্রিম এবং আরোপিত বলা যায়। জীববিজ্ঞানের দিক থেকে দেখলে – পুরুষের স্পার্ম বা শুক্রাণু উৎপন্ন হয় হাজার হাজার, আর সেতুলনায় ডিম্বানু উৎপন্ন হয় কম। ডিম্বানুর আকার শুক্রানুর চেয়ে বড় হয় অনেক। অর্থাৎ, জৈববৈজ্ঞানিকভাবে চিন্তা করলে স্পার্ম সহজলভ্য, তাই কম দামী, আর সে তুলনায় ডিম্বানু অনেক মূল্যবান। ‘স্পার্ম অনেক চিপ’ বলেই (সাধারণভাবে) পুরুষদের একটা সহজাত প্রবণতা থাকে বহু সংখ্যক জায়গায় তার প্রতিলিপি ছড়ানোর। সেজন্য তথাকথিত আধুনিক একগামী সমাজেও দেখা যায় পুরুষেরাই বেশি প্রতারণা করে সম্পর্কে, আর আগেকার সময়ে রাজা বাদশাহদের হারেম রাখার কিংবা শক্তিশালী সেনাপতিদের যুদ্ধ জয়ের পর নারী অধিকারের উদাহরণগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। পর দিকে ‘এগ ভালুয়েবল’ বলেই প্রকৃতিতে নারীরা যৌনসঙ্গি নির্বাচনের ব্যাপারে থাকে অপেক্ষাকৃত খুঁতখুঁতে, কারণ তারা নিশ্চিত করতে চায় কেবল উৎকৃষ্ট জিনের দ্বারাই যেন তার ডিম্বানুর নিষেক ঘটে। আমি একটা পর্বে রবার্ট ট্রাইভার্সের ‘অভিভাবকীয় বিনিয়োগ’ (parental investment) অনুকল্পের কথা বলেছিলাম। যেহেতু নারীরা অভিভাবকীয় বিনিয়োগের সিংহভাগে জড়িত থাকে, তারা যৌনসঙ্গি নির্বাচনের ব্যাপারে হয়ে উঠে অধিকতর হিসেবী এবং সাবধানী। একজন নারী সব সময়ই জানে একটি পুরুষ যৌন সঙ্গম করে পালিয়ে যেতে পারে; কারণ সেক্স করে সন্তানের দায়িত্ব না নিয়ে সরে পড়তে পারলে সেটা পুরুষকে একধরনের বাড়তি সুবিধা দেয়, কিন্তু অন্যদিকে একটি পুরুষ সেক্সে করে পালিয়ে গেলে গর্ভধারনের এবং সন্তানকে পালনের ঝামেলা পোহাতে হয় নারীকেই। তাই একটি নারী চায় যততক্ষণ পর্যন্ত পুরুষটিকে যৌনসঙ্গম থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে (delaying tactics) যতক্ষন পর্যন্ত না বুঝতে পারে সে নারীটির এবং তার ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য কমিটেড। এ ব্যাপারটি একদিনে তৈরি হয়নি, সঙ্গি নির্বাচন এবং সঙ্গি ধরে রাখার ব্যাপারে মেটিং স্ট্র্যাটিজি গড়ে উঠেছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের নানা ধরণের ক্রমিক পরীক্ষা নিরীক্ষায়। হিউম্যান পেয়ার বণ্ডিং এর ভিত্তি গড়ে উঠেছে এভাবেই। যারা এই স্ট্র্যাটিজিতে সফল হয়েছে তারাই অধিকহারে উত্তরসূরী রেখে গেছে। আর বোকা সোকা মেয়েরা যারা সহজেই প্রতারিত হয়েছে, তাদের সন্তান মারা গেছে অধিকহারে।
আপাতত এইটুকুই থাকুক। হাপিয়ে গিয়েছি। 🙂
@অভিজিৎ, মেয়েদের সুন্দরের চেয়ে টাকা-পয়সাওয়ালা ছেলেদের প্রতি আকর্ষণের কারণ আমার মনে হয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থা । এটা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে ।আগে মেয়েরা একদম ই অর্থনৈতিক কাজ করত না ।মেয়েরা মনে করে রাখত যে ছেলেরা তাদের “দেখে রাখবে”, “ভরণপোষণ” করবে । কপর্দকহীন এক ছেলে তাকে খাইয়ে বাঁচিয়েই রাখতে পারবে না, সন্তান, সেক্স তো পরের কথা । তাই তাদেরকে সেদিকে চিন্তা করা লাগে । বেচে থাকার গুরুত্ত আগে। তাই সেক্সি ছেলের চেয়ে ধনী ছেলে তারা প্রেফার করে । অনেক বছরের এই নিয়মের কারনে “পুরুষ সুপেরিওর”- এটা সমাজের সবার সাথে তাদের মাথায় ও গেঁথে গেছে ।তাই এখনও নিজেরা কর্মক্ষম হলেও তারা চায় সঙ্গী আর টাকা কামাক । এটা সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে চেঞ্জ হয়ে যাবে বলে আমার ধারনা ।