আমরা** গভীরভাবে শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ । বিশিষ্ট সান্তাল আদিবাসী লেখক, সহব্লগার মিথুশিলাক মুরমু’র [লিংক] বিধবা স্কুল শিক্ষক বোন মরিয়ম মুরমুকে (৫৫) গত রোববার সন্ত্রাসীরা রাজশাহীর গ্রামের বাড়িতে গণধর্ষন ও বিভৎস শাররীক নির্যাতনের পর হত্যা করেছে। পৈশাচিক ঘটনাটি এখান্ই শেষ নয়, হত্যার পর সন্ত্রীরা আদিবাসী বোনটির নগ্ন লাশ গাছে ঝুলিয়ে রেখে প্রতিহিংসাও মিটিয়েছে। …

খুনের পর আদিবাসী নারীর লাশ গাছে বেঁধে রাখা হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী | তারিখ: ১১-০৭-২০১১

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সিমলা দীঘিপাড়া গ্রাম থেকে গতকাল রোববার সকালে বিবস্ত্র অবস্থায় গাছে বেঁধে রাখা আদিবাসী নারী মরিয়ম মুর্মুর (৫৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা তাঁর লাশ গাছে বেঁধে রাখে।

মরিয়ম মুর্মু গোদাগাড়ীর সিমলা দীঘিপাড়া গ্রামের একটি বয়স্ক শিক্ষা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এ ছাড়া আদিবাসী পরিচালিত একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর স্বামীর বাড়ি তানোর উপজেলার কমলা ইউনিয়নের চৈতপুর গ্রামে। ২০০৩ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে গোদাগাড়ীতে বাবা রাজেন মুর্মুর বাড়িতেই ছিলেন তিনি।

এলাকাবাসী জানান, রাজেন মুর্মুর বাড়ির সামনে বাঁশঝাড়ের ভেতরে থাকা একটি বরইগাছের সঙ্গে মরিয়মের লাশ গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় ঝোলানো ছিল। লাশটি ছিল বিবস্ত্র। শরীর থেকে ঝরছিল রক্ত। গতকাল ভোর ছয়টার দিকে গ্রামের অঞ্জলী মুর্মু প্রথমে লাশটি দেখতে পান। পরে তাঁর চিৎ কারে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে লাশটি কাপড়ে ঢেকে থানায় খবর দেন।

স্থানীয়রা বলেন, রাজেন মুর্মুর মাটির তৈরি দোতলা বাড়ির প্রধান দুটি দরজা সকালে খোলা পাওয়া গেছে। বাড়ির আলমারি ও ট্রাঙ্ক ছিল খোলা। এর মধ্যে থাকা কাগজপত্র, জামা-কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী বলেন, রাজেন মুর্মু একজন সাবেক জরিপকারী (সার্ভেয়ার)। তিনি তাঁর বৃদ্ধ স্ত্রী ও বিধবা মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। তাঁর অন্য চার মেয়ে ও এক ছেলে থাকেন বাইরে। মরিয়মের একমাত্র ছেলেও চাকরির সুবাদে বাইরে থাকেন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে নওগাঁর নজিপুরে।
প্রতিবেশীরা বলেন, রাজেন মুর্মু খুবই অসুস্থ। ঠিকমতো চোখে দেখতে পান না। কানেও কম শোনেন। তাঁর স্ত্রীর অবস্থাও ভালো নয়। তাই তাঁরা বাড়িতে থাকলেও ঘটনার কিছুই টের পাননি।

মরিয়মের খালাতো ভাই আন্দ্রিয়াস মুর্মু বলেন, প্রতিদিনের মতো মরিয়ম শনিবার রাতেও বাড়ির বারান্দাতেই ঘুমিয়ে ছিলেন। কিন্তু রাতে দুষ্কৃতকারীরা তাঁর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে হত্যা করেছে।

মরিয়মের ছেলে উইলসন (৩২) বলেন, তাঁর মাকে কে বা কারা আগে থেকেই মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। কিন্তু তাঁর মা কারও নাম বলতেন না। তবে তিনি বলেন, জমি নিয়ে চাচার সঙ্গে তাঁদের ঝগড়া চলছে। এর বাইরে কারও সঙ্গে তাঁদের শত্রুতা নেই।

গতকাল রাজেন মুর্মুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় পড়ে তিনি কাঁদছেন। তিনি এতটাই অসুস্থ যে উঠে মেয়ের লাশের কাছেও যেতে পারছেন না। তাঁর স্ত্রী মেয়ের লাশের পাশে বসে কাঁদছেন।

[লিংক]

এভাবে এক টুকরো জমি বা সামান্য শেষ সস্বলের জন্য আর কতো আদিবাসী নারীকে ধর্ষিত হতে হবে? প্রাণ দিতে হবে? [লিংক] আদিবাসী পর্যবেক্ষক মাত্রই জানেন, পাহাড়ে কি সমতলে সংখ্যাগুরু বাঙালি জনগোষ্ঠি ও রাষ্ট্রীয় নিস্পেষনের জাঁতাকলের নীচে সাধারণ আদিবাসী মানুষ কতো অসহায়! [লিংক]

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা চাই, এর নেপথ্যে যারাই থাকুক না কেন তাদের যেনো উপযুক্ত বিচার এবং শাস্তি হয়। আমাদের দাবি অবিলম্বে যেনো হত্যাকাণ্ডটির সুরাহা হয়, এই মামলাটি যেনো আরো সব নানান আদিবাসী নির্যাতন-নিপীড়নের মামলার স্তুপের নীচে চাপা পড়ে না যায়। আদিবাসী বাংলা ব্লগ [লিংক] ও ফেসবুক গ্রুপ ‘পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice’ [লিংক] এর পক্ষ থেকে আমরা মিথু দাকে আন্তরিক সমবেদনা জানাই। নিহত দিদি মরিয়মকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। আদিবাসী ভাই-বোনদের আহ্বান জানাই, শোককে শক্তিতে পরিনত করে আগামী দিনে আদিবাসীর মুক্তি-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার। জয় হোক মুক্তিকামী আদিবাসী মানুষের!


*সমর মাইকেল সরেণ
*বিপ্লব রহমান

অ্যাডমিন ডেস্ক,
আদিবাসী বাংলা ব্লগ [লিংক]
ফেসবুক গ্রুপ ‘পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice’ [লিংক]