বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত একটি যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে আমাদের সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে স্বাধীনতা-উত্তর কালে রচিত বাহাত্তরের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ফিরিয়ে দিয়েছে। বহু বিলম্বে হলেও আমাদের উচ্চ আদালত একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। দু’যুগের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নয় মাসের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত যে সকল চেতনা ও মূল্যবোধ, রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসাবে সদ্যস্বাধীন দেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছিল, পঁচাত্তরের ১৫ ই আগস্টের অভূত্থানের পর ক্ষমতাসীন খন্দকার মোস্তাক এর উত্তরসুরী সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান বলে একে একে সে সকল মূলনীতি সংবিধান থেকে মুছে ফেলেছিলেন। সামরিক শাসকের এ সকল অবৈধ ও অসাংবিধানিক অপকর্মগুলোকে অক্টোবর, ১৯৭৯ ইং সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ আদালতের রায়ের ফলে যেহেতু পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়ে গেছে, সেহেতু ঐ সমস্ত মূলনীতিগুলো আবার সংধানে সন্নিবেশিত হবে; এটাই ছিল স্বাভাবিক।
কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে স্বয়ং আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই প্রথমে বিতর্ক তোলা হয়েছে- সংবিধান কি উপরোক্ত রায়ের ফলে স্বাভাবিকভাবেই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে, নাকি বর্তমান সংবিধানকে পার্লামেন্টে সংশোধন করে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে ? বিতর্কটা উদ্দেশ্যমূলক। তবে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে একটি বিষয় উপলদ্ধি করা যাবে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন এবং যারা পঞ্চম সংশোধনীর বেনিফিসিয়ারী, তারা কেউই যেন উপরোক্ত রায়ে প্রসন্ন হতে পারেন নি। যারা পঞ্চম সংশোধনীর বেনিফিসিয়ারী বা সমর্থক-যাদের পূর্বসূরীরা এ সংশোধনী করে তাদের যাবতীয় অপকর্মের সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছিল, তাদের প্রসন্ন না হওয়ার কারণ বোধগম্য, কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্ব্জাধারী, তারা কেন প্রসন্ন হল না ?
কারণ সম্ভবত এই যে, প্রথমত: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে সকল নীতিমালার মাধ্যমে প্রতিভাত হয়েছে, যেমন-সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ, ইত্যাদি, সে সকল নীতিমালা তারা এখন আর ধারণ করেন না। ফলত: আদালতের রায় তাদেরকে কেবল বিব্রত করে নি বরং এক অগ্নি পরীক্ষার মুখোমুখী করেছে। অগ্নিপরীক্ষা এ কারণে যে, হয় তাদের এ রায়ের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা যে সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক, তার প্রমাণ দিতে হবে, নতুবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে তাদের প্রকৃত মুখোশ এবার উম্মোচিত হয়ে পড়বে।
এহেন পরীক্ষা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মহাজোট সরকার পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য একটি সংসদীয় কমিটি করে দিয়েছে। অথচ আদালতের কোন রায়, সে নীতিগত বা তথ্যগত, যে বিষয়ে হউক না কেন, তা বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে আইন করার প্রশ্ন অবান্তর। আইনী দিক থেকে আদালতের রায় স্বত:স্ফূর্তভাবে কার্যকরীতা লাভ করে। বরং সংশ্লিষ্ট পক্ষ তদানুসারে কাজ না করলে আদালত অবমাননা হয়। এ ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। এখানে সরকারকে যা করতে হত, তাহল আদালতের রায় অনুসারে সংবিধানের সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে দেওয়া। তবে পঞ্চম সংশোধনী সংক্রান্ত মামলার রায়ের বহির্ভূত অপরাপর বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করার এখতিয়ার সংসদের অবশ্যই রয়েছে। সেটা ভিন্ন বিষয়।
মজার ব্যাপার হল, সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির নেতৃবৃন্দও এতদবিষয়ে এমন সব কথা বলেছেন কিংবা মন্তব্য করেছেন, যাতে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে, আদৌ তারা আদালতের নির্দেশণা মোতাবেক সংবিধানের মৌলচেতনায় ফিরে যাবেন কিনা । বিশেষভাবে সরকারের আইন মন্ত্রী সহ বিভিন্ন মন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা আগে থেকেই বলা শুরু করেন যে, সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকবে। তবে সংবিধান সংশোধন বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের বিসমিল্লাহ-প্রীতি অনেকের মধ্যে রীতিমত কৌতুকের জন্ম দিয়েছে। এ এক অদ্ভূত স্ববিরোধী কথা! কারণ প্রথমত: পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে সংবিধানের মৌলচেতনায় যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরে আসে, তাহলে সংবিধানে বিসমিল্লাহ এবং ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম থাকে কিভাবে? এ যেন সোনার পাথর বাটি ! দ্বিতীয়ত: আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা ছিল ধর্মীয় ইসলামী জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, যার চরিত্র হল ধর্মনিরপেক্ষ। তাহলে আদালতের সুস্পষ্ট রায় পাওয়ার পরও বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে কেন গড়িমসি বা কূটচালের আশ্রয় নিতে চাইছে? সরকারের কোন কোন কর্তা ব্যক্তি বলছেন, মানুষের ধর্মীয় অনভূতির কথা চিন্তা করতে হবে। এটা হল ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার কথা।
আমরা জানি, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমান বলে আমাদের সংবিধানে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” সংযুক্ত করেছেন। আবার একই উদ্দেশ্যে আরেক স্বৈরশাসক এরশাদ তার বিরুদ্ধে যখন গণঅসন্তোষ তীব্র হচ্ছিল, তখন জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র ফিরিয়ে নেওয়ার কূটকৌশল হিসাবে অস্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করার ঘোষণা প্রদান করেছিল। এটা জনগণের কোন সমস্যা বা দাবী ছিল না। বরং জনগণ সে সময় এটা নিয়ে কোন ভাবনাও করে নি। বরং ইতিহাসের মহাভাঁড় এরশাদ এ ঘোষণা দিয়ে জনগণনক বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কিংবা ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর এরশাদের যে ব্যক্তিচরিত্র জনসম্মুখে উম্মোচিত হয়েছে, তার মুখে ধর্মের জিগীর ছিল চুড়ান্ত ভণ্ডামী। স্বৈরশাসক এরশাদের যাবতীয় অপকর্মের বৈধতা দানকারী সপ্তম সংশোধনীও ইতোমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।
তাছাড়া রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টিকে ন্যূনতম যুক্তির নিরিখে দেখলে উপলদ্ধি করা যাবে, এটি একটি অবাস্তব ও হাস্যকর প্রপঞ্চ। রাষ্ট্র একটি সামাজিক সংগঠন-একটি সামাজিক বস্তু। তার (উপসনা) ধর্ম থাকে কিভাবে ? কোন বস্তুর কি কোন (উপাসনা) ধর্ম হয়? স্মর্তব্য যে, এ ধর্ম মানে উপাসনা ধর্ম (worship religion), properties অর্থে ধর্ম নয়। তাহলে রাষ্ট্রতো একটি সামাজিক সংগঠন-যা স্বর্গ কিংবা নরকে যাবে না। তাহলে তার কেন কোন না কোন ধর্ম থাকবে? একমাত্র মানুষেরই থাকতে পারে ধর্ম-যার যার বিশ্বাস মতে এবং সে ধর্ম মতে সে প্রার্থণা করে পরলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশায়। মানুষ ছাড়া হাজারো যে জীব ও উদ্ভিদ জগৎ এবং এর বাইরে সুবিশাল বস্তুজগত, তাদের কোন ধর্ম নেই এবং তারা কোন প্রার্থনাও করে না। তাই একজন হিন্দু পরম যত্নে যে গরুকে লালন-পালন করে এবং তাকে আহ্নিক পুজা দেয়, সে গরুই যখন মুসলিম মালিকের কাছে যায়, সে তাকে জবাই করে কুরবান করে। এ গরু হিন্দু না মুসলিম, সে প্রশ্ন যেমন অবান্তর, ঠিক তদ্রুপ রাষ্ট্রধর্ম অভিধাটিও অবান্তর-দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ আমজনগণকে ধোঁকা দেওয়ার প্রয়াস বৈ কিছু নয়।
এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে এটা আজ পরিস্কার যে, গুণগতভাবে সে আওয়ামী লীগ আজকের আওয়ামী লীগ নয়।
দীর্ঘ দু’যুগ ধরে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানসে যে চেতনার অঙ্কুরোদগম ও বিকাশ ঘটে, যা সদ্যস্বাধীন দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিমালা হিসাবে সন্নিবেশিত হয়েছিল, তা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কী সে চেতনা এবং কিভাবে তার তার জন্ম ও বিকাশ তা একটু খোলাসা করা দরকার।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা : জন্ম ও বিকাশ
স্বাধিকার থেকে স্বায়াত্বশাসনের আন্দোলন-সে আন্দোলনের রক্তপিচ্ছিল সোপান বেয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ-চুড়ান্ত পর্যায়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযুদ্ধের সফল সমাপ্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যূদয়-এ হলো বাঙালীর স্বাধীনতা ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত পরিক্রমা-menifestaion of the history or Facts of the history.
কিন্তু সে রক্তাক্ত ইতিহাসের মর্মবস্তু ( Essence of the History) কি ?
এ প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই আমরা খুঁজে পাবো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
ধর্মীয় দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্মের অব্যবহিত পরই বাঙালীরা বুঝতে পারল পশ্চিমা বেরাদারানে মুসলমানেরা, বস্তুতঃ রাজনৈতিক ভাবে শাসন ও অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করার জন্যই ধর্মকে নিছক বর্ম হিসাবে ব্যবহার করছে। তারা এতদাঞ্চলের মানুষকে কখনো স্বধর্মীয়, এমনকি স্ব-রাষ্ট্রীয় বলেও মেনে নিতে পারে নি। বাঙালীদের প্রতি তাচ্ছিল্যভরা উন্নাসিকতা পশ্চিমাদের আচার-আচরণে ও কথা-বার্তায় নগ্নভাবে ফুটে ওঠত। তারা পূর্ববাংলাকে তাদের একটি স্থায়ী উপনিবেশ ও এতদাঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে তাদের সেবাদাসে পরিণত করতে চেয়েছিল। ধর্মীয় ভাবাদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা রাষ্ট্র পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী যখন ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বাঙালি মুসলমানদের উপর শোষণ চালাল, তখন এতদাঞ্চলের বাঙালী জনগোষ্ঠীর বোধোদয় হল যে, কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে একটি একক জাতি হয় না, জাতি গড়ে ওঠে তার নৃ-তাত্ত্বিক ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে। এ বোধ থেকেই বস্তুত: নৃতাত্ত্বিক বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। বস্তুতঃ ধর্মীয় জাতীয়তার ব্যাপারে তখনই তাদের মোহভঙ্গ হতে শুরু করে। যেদিন পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বাঙালী সংস্কৃতির উপর আঘাত হানার চেষ্টা করল, সেদিন থেকেই বাঙালী-হৃদয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনার উম্মেষ ঘটতে থাকে। বাঙালীরা বুঝতে পারল-ধর্মভিত্তিক জাতি নয়, বাঙালী জাতি হিসাবে স্বকীয় পরিচয়ে তাদের আত্ম প্রকাশ করতে হবে। বাংলা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিত নতুন করে বিতর্ক উঠল, আমরা বাঙ্গালী না মুসলমান। ইসলামী তাহজীব তমুদ্দুন কি আমাদের সংস্কৃতি হবে, নাকি আবহমান কালের বিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সাথে গড়ে ওঠা লোকজ দেশাচার হবে আমাদের সংস্কৃতি। তখন পশ্চিমা মুসলমান ভাইদের রাজনৈতিক শাসন ও অর্থনৈতিক শোষনের বিরুদ্ধে বাঙালীরা ঐক্যবদ্ধ হলো-জাগো জাগো, বাঙ্গালী জাগো, তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা প্রভৃতি শ্লোগান তুলে। তুমি কে, আমি কে, বাঙালী, বাঙালী স্বত:স্ফূর্ত এ শ্লোগানে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিল বাঙালীর জাতীয়তাবাদী চেতনায়। বলা বাহুল্য, মুষ্ঠিমেয় বাঙালী ছাড়া সমগ্র বাঙালী জাতি এ চেতনায় শুধু উজ্জীবিত হল না, বিক্ষোভে বিদ্রোহে ছিল উদ্বেলিত। এ চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়েই বাঙালী নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তানীদের পরাস্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল।
অতএব বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদই হলো আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের মূল প্রেরণা।
এ জাতীয়তাবাদী চেতনার মধ্যেই নিহিত আছে ধর্মনিরপেক্ষতার বীজ। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বিকশিত নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদ বস্তুনিষ্টভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ। কারণ এ পরিচয়ের ক্ষেত্রে ধর্ম কোন ভূমিকা রাখেনা-হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সব ধর্মের লোক মিলিয়েই বাঙালি নৃ-গোষ্ঠী। ধর্ম পরে এ নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। তাই ধর্ম আরোপিত-পরিবর্তনশীল। কিন্তু নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তা জন্মগত এবং ফলত: অনপনেয়; অর্থাৎ যা কখনো মুছে ফেলা যায় না।
ধর্মভিত্তিক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে অর্জিত স্বাধীনতার পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত শোষনের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীর জাতীয়ভাবে প্রতিরোধের স্পৃহাই জাতীয়তাবাদী চেতনার উম্মেষ ঘটায়।
অতএব, শোষন থেকে মুক্তি তথা শোষনহীন সমাজ বিনির্মাণই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মৌল অনুপ্রেরণা। তাই স্বাধীনতার অব্যবহিত পর সমাজতন্ত্র আমাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসাবে গৃহীত হয়েছিল।
বৃহত্তর পাকিস্তানী কাঠামোর মধ্যে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুতরাং বাঙালীর স্বায়াত্বশাসন থেকে স্বাধিকার আন্দোলন ছিল মর্মগতভাবে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির শোষণ-শাসনের নাগপাশ থেকে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। ফলতঃ মর্মগতভাবেই এ আন্দোলন ছিল গণতান্ত্রিক।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি-আমাদের স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা চেতনা ও মূল্যবোধগুলোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসাবে বিকশিত হয়ে গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেতা ও জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি চার মূলনীতি হিসাবে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধানে গৃহীত হয়েছিল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বস্তুত: মুক্তিযুদ্ধের ঐ সমুদয় চেতনা আমাদের রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসাবে গৃহীত হলেও রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে তখনো তার প্রভাব বা প্রতিফলন তেমনভাবে পরিলতি হয় নি। বরং যুদ্ধবিধ্বস্থ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা একটি চুড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। তারপরও যে কথাটি স্বীকার করতে হবে, তা হল, নীতিগত ভাবে আমাদের সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে রেখেছিল।
কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের সামরিক অভ্যূত্থানের পর মতাসীন চক্র বিশেষ ভাবে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তার সামরিক ফরমান বলে সংবিধানের মৌল নীতিমালা থেকে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি নীতিমালাগুলো মুছে ফেলে এবং সংবিধানের এ সকল সংশোধনী সহ যাবতীয় সামরিক ফরমানকে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমেই চুড়ান্ত বৈধতা প্রদান করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং পরবর্তী পর্যায়ে আপীল বিভাগ উক্ত পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করে দিয়েছে। ফলত: আমাদের সংবিধানে আদালতের রায়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সে মৌল নীতিমালাগুলো আবারো সংযোজিত হল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে ইচ্ছা করলে সংবিধানের এ মৌল চেতনাগুলো সংবিধান সংশোধন করেই ফিরিয়ে আনতে পারত।
কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার সুদীর্ঘ প্রায় চার দশক পরের আওয়ামী লীগ আদর্শগতভাবে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। তারা সত্যিকার অর্থে এখন ধর্মনিরপেতা ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
বলাবাহুল্য, সময়ের প্রবাহে আওয়ামী লীগ যেমন শোষণহীন সমাজের অঙ্গীকার থেকে সরে এসেছে, ঠিক তেমনি ক্রমান্বয়ে আপোষ করেছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সাথে। সস্তা ভোটের রাজনীতির জন্য মুক্তিযুদ্ধকালীন ধর্মনিরপে আওয়ামী লীগ। বিগত নির্বাচনের সময় তারা কেবল লা ইলাহা ইল্লালাহ-নৌকার মালিক তুই আল্লা-এ শ্লোগান মুখে তুলে নেয়নি, সদা সাদা টুপি পরিহিত আওয়ামী সাংসদরা যখন সংসদে বসেন, তখন জামায়াতে ইসলামীর সাংসদদের সাথে তাদের কোন পার্থক্য চোখে পড়ে না। ওয়ান-ইলেভেন এর পূর্বে খেলাফত মজলিশ এর সাথে ফতোয়া জায়েজ করা এবং ব্লাসফেমী আইন পাশ করা সংক্রান্ত আওয়ামী লীগের চুক্তির কথা আমরা এখানে স্মরণ করতে পারি।
বস্তুত: আজ আবার ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র প্রভৃতিকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীত হিসাবে গ্রহণে তাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা গড়িমসি কোন কৌশলগত কারণে নয়, আদর্শগত কারণেই। তাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জনাব এ,কে, খন্দকার মন্ত্রীপরিষদের সভায় যখন বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেন, তখন তাকে গণতন্ত্রের মানস কন্যার তীব্র তিরস্কার ও গালি শুনতে হয় নীরবে এবং এ অপমান হজম করতে হয় মন্ত্রীত্বের জন্য!
কিন্তু এতদিন তাদের এ স্ববিরোধীতা তারা লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও আদালতের রায় এবার তাদেরকে এমন এক অগ্নি পরীক্ষায় নিক্ষেপ করেছে, যেখানে তাদের যে কোন এক দিকে পরিস্কার অবস্থানকে গ্রহণ করতে হবে-হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রত্যাবর্তন, নয়তো মুক্তযুদ্ধের চেতনার মোড়কে মোঁড়া ধর্মনিয়ে রাজনীতি করার কূটকৌশল। এর কোন তৃত্বীয় অপশন আপাতত: নেই। পরিশেষে আওয়ামী লীগ নীতি আদর্শ জলাঞ্জলী দিয়ে, লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সংবিধান সংশোধন করে একই সাথে ধর্ম নিরপেক্ষতা, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখছে, যা কেবল স্ববিরোধী নয়, ভোটের রাজনীতির কাছে নির্লজ্জ আত্মসমর্পন এবং জাতির সাথে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের রক্ত ও লক্ষ মা-বোনের হৃত সম্ভ্রমের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা!
গণফোরাম সম্পাদক সাহেব,
বর্তমানে প্রথম পৃষ্টায় আপনার যে লেখাটি আছে সেখানে মন্তব্য অপশন বোধ হয় বন্ধ করা তাই এখানে আসতে হলো। আপনার লেখা পরপর তিনটি প্রবন্ধের ভুমিকা একটা থেকে আরেকটায় কপি-পেষ্ট করা কেন বুঝলাম না। একই আঙ্গীকে লেখা একই কথা ভিন্ন শিরোনামে বলা কেন?
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী : জাতিকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নেওয়ার অভিযাত্রা
মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতায় আওয়ামী লীগ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে যাওয়া : অগ্নিপরীক্ষায় আওয়ামী লীগ
@আকাশ মালিক,
আপনার বক্তব্য সঠিক । লেখাগুলোর ভূমিকা প্রায় একই রকম, কারণ বস্তুতঃ একই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রবন্ধগুলো লেখা হয়েছে । তাই লেখার মধ্যেও অনেক বাক্যের হুবহু মিল পেতে পারেন। লেখাগুলো পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
@আকাশ মালিক,
বস্তুতঃ আমার উল্লেখিত তিনটি নিবন্ধ একই বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রেক্ষিতে বিভিন্ন আঙ্গিকে লেখা। যেমন প্রথম লেখাটি লিখি যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দিয়ে একাত্তুরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়, অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বজাদারী আওয়ামী লীগ এ সুযোগ কাজে না লাগিয়ে দোদুল্যমানতা প্রদর্শন করতে থাকে তখন, দ্বিতীয় লেখাটি লিখি যখন সংবিধান সংশোধন উপকমিটি নানা স্ববিরোধী কথা-বার্তার মাধ্যমে প্রমাণ করে দেয় যে, তারা রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ বাদ দেবে না এবং শেষ লেখাটি সংবিধান সংশোধনের পর। সব লেখাগুলোর সূত্রপাত সর্বোচ্চ আদালতের রায় থেকে, তাই ভুমিকা এক হওয়া স্বাভাবিক। তবে ভারবাটিম এক হওয়া বা পেস্ট করার কারণ পুন:লেখার কষ্ট থেকে বাঁচতে চাওয়া। যেহেতু লেখাগুলো একক কোন গ্রন্থে লেখা হচ্ছে না কিংবা পাঠক এক সাথে পড়ার সম্ভাবনা নেই, তাই এ কাজটি করেছি। তবে লিখা গুলো অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক ও পরিণতি নিয়ে। নিশ্চয় বিষয়টি এমন নয় যে, একটি লেখা ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক বার প্রকাশ করা হয়েছে। তবে শেষ লেখাটি হল সংবিধান সংশোধনী নিয়ে আওয়ামী লীগের চুড়ান্ত অবস্থান। ফলত: শেষ লেখাটি পড়ার পর পূর্বতন লেখা দুটি পড়ার আর প্রয়োজন পড়বে না। পরিশেষে আমার লেখা মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
(Y)
জামাত-শিবিরকে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার জন্য দোষ দিচ্ছি আমরা কিন্তু ধর্ম নিয়ে ব্যবসায়তো দেখছি কেউই কম যায়না ৷ এই সাহসী লেখাটির জন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ ৷
@শুভ্র,
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বিজন, পাপিয়া চৌধুরী ও রাহনুমা রাখী
দুঃখ করে, হতাশ হয়ে বা গোসসা করে লাভ নাই । ধর্ম ভীরু ও ধর্মান্ধ এক জিনিষ নয় । ধর্ম ভীরু ও অশিক্ষিত এই ৯৮% মানুষেরাই মুক্তিযুদ্ধের নায়ক । এরা মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটের জন্য তদবির করে নাই, যা মধ্যবিত্তরা করেছে । বিড়ি ফোকা এই মধ্যবিত্তরা স্বাধীনতার পর দামী সিকারেট খেতে আরম্ভ করেছে এবং আজ তারা লুটেরা কোটিপতি পর্যায় অতিক্রম করে পুজিপতি হয়েছে । এই মধ্যবিত্তরাই স্বার্থের জন্য ধর্ম ব্যবসা ও সংবিধানে ধর্ম নিয়ে আসে । সকল কুকর্মের নাটের গুরু হলো শিক্ষিত এই মধ্যবিত্ত, যাদের সাথে আমি ও আপনারা যুক্ত । আমরা এই ৯৮% মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করি না । তাদের ধর্ম ভীরুতাকে অজ্ঞ বলে কটাক্ষ করি । এই অজ্ঞ মানুষেরাই যেমন সভ্যতার চালিকা শক্তি, তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সফলতায় পৌছিয়ে দিতে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ।
সমাজ অগ্রগতি পশ্চাদ্মূখী নয়, সম্মূখমুখী । বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আঃলীঃ এর বিকল্প বিএনপি নয় । কারণ আঃলীঃ ও বিএনপির মধ্যে এখন আর কোন পার্থক্য নাই । অতএব আগামী নির্বাচনে সাধারন মানুষ অন্য বিকল্প খুঁজবে বলে মনে হয় ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
(Y)
মতিয়ার মতো এককালের সমাজতান্ত্রিক যদি বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষেও রায় দেয় সুরঞ্জিতের মতো।
এই দেশের রাজনীতির পক্ষে সবই সম্ভব।
সরকার দেশের খতনার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে ইতিমধ্যে।
এর আশংকা তখন থেকেই মনে দানা বেধেছে যখন ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করা হয় নি।
আমি চাই বাংলাদেশে খিলাপথ কায়রম করা হক। যাতে মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহন করতে পারে। আর লাষ্টে আমরা যাতে পাকিস্তান বা ইরান হতে পারি। দেশ প্রেমের জন্য ইসলামের কোন বিকল্প ন্ই।
পঁচাত্তরে আওয়ামীলীগের প্রায় সমস্ত স্তম্ভ ধ্বসে পড়ার পরও মুজিবকন্যা কি করে ৯৬’এ ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলেন তা আমার কাছে এক অপার বিস্ময়। এটাও ঠিক যে তার আগে প্রায় ১৫ বছরের সামরিক দুরাচার আর সেই সাথে আরও ৫ বছরের জন্য বিএনপি’র অপশাসন দেশের মানুষকে অধৈর্য করে তুলেছিল, পরিবর্তনের আশায় তাই আওয়ামীলীগের উপর ভরসা করেছিল। তবে ২০ বছরের প্রায় নির্বাসনের সময় দলকে সংখ্যাগতভাবে পোক্ত করতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পারিষদবৃন্দ বোধকরি মরিয়া ছিলেন। যেখানে যেভাবে পেরেছেন দলের সদস্যসংখ্যা বাড়িয়েছেন। শীর্ষারোহী কতিপয় সদস্য বাদে বাকিরা কেউ যুদ্ধকালীন বা তদপরবর্তী আওয়ামীলীগের ধ্যান-ধারণাকে লালন করে বলে মনে হয়না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বলতে হয় বাহাত্তরের সংবিধানের চার স্তম্ভ-সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ, এই শব্দগুলোর আক্ষরিক অর্থ সম্বন্ধে তারা অজ্ঞ। ক্ষমতা, লোভলালসা আর ব্যাক্তিগত স্বার্থান্বেষায় বেশীরভাগ মানুষ এইসব রাজনীতির কূটজালে ঢুকে পড়ে, দলগত নীতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ না-ওয়াকিফ থেকে। এদের ছাড়া আ.লী. এর টিকে থাকা সম্ভব না, আবার এদেরকে দিয়ে কোনোরকম মুক্তচিন্তাও সম্ভব না। এদের প্রায় সকলের কাছে ধর্ম জরুরী মনে হবে, তারা নিছক জাতীয়তাবাদের ভড়ং ধরতে দলের সাথে থাকতে পারবে না। কি করে পারবে? খামাখা বেহেস্তের সিটখানা খোয়ানোর তো মানে হয় না। এতসব নির্বোধ, উজবুক, দাঙ্গাবাজ ধার্মিক দলে রেখে আঃলীঃ এর পক্ষে কিছুতেই মৌলিক সংবিধানে ফিরে যাওয়া সম্ভব না। আর ভোটব্যাংককে জলাঞ্জলী দিয়ে, নির্বাচনের রাজনীতিকে তুচ্ছ করে যদি তা করাও হয় তো সামনের নির্বাচনে একক বা মহাজোট যে কোনো ভাবেই তাদের হার অনিবার্য। আওয়ামীর হার মানে কাদের জয় বোঝাই যাচ্ছে। তখন গিয়ে সংবিধানটার আরও কত তান্ত্রিক বারোটা যে বাজানো হবে সেটা কল্পনা করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। লাখো শহীদের মর্যাদা তখন রাজাকার মন্ত্রীর গাড়ির চাকায় পিষ্ট হতে থাকবে, যা আগেও হয়েছে।
দেশের কত শতাংশ মানুষ(শিক্ষিতদের মধ্যে) এটলিস্ট জাতীয়তাবাদের মর্মার্থ বুঝতে পারে? যে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ কথায় কথায় ধর্মানুভূতিতে আঘাত পায় সে দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান আসলেই সোনার পাথরবাটি।
@পাপিয়া চৌধুরী,
আপনার এই কথাটার সাথে আমি এক মত নই। আমার ত মনে হয় আমরা জাতিয়তা বাদই বুজি না
আদর্শের রাজনীতির বিপরীতে ক্ষমতার রাজনীতির কাছে আওয়ামি লীগ নতজানু । ৫-৭% ডানপন্থী ভোটের কিয়দংশের আশায় আওয়ামি লীগের এই নতজানু নীতি । কিন্তু দুঃখের বিষয় ডানপন্থী এই ভোট ব্যাংক ভাঙ্গা আঃলীঃ এর পক্ষে সম্ভব নয় । বিপরীতে বামপন্থী ভোট থেকে সে বঞ্চিত হবে । ফলে আগামী নির্বাচনে একক ভাবে ক্ষমতায় আসা তার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে ।
অবাক হই যখন দেখি সংসদে সংখ্যা গরিষ্টতা পাবার পরও যখন আওয়ামী লীগ ধর্মের কাছে নতজানু হয়ে, বাঙ্গালীর জাতীয়তাবোধ কে জ
@সীমান্ত ঈগল,
অবাক হই যখন দেখি সংসদে সংখ্যা গরিষ্টতা পাবার পরও যখন আওয়ামী লীগ ধর্মের কাজে নতজানু হয়ে, বাঙ্গালীর জাতীয়তাবোধ কে জলাঞ্জলি দিয়ে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্মের ধৈতা দিয়ে জামায়েত ইসলামীকে পুরুস্কৃত করে। অনেকটা বি.এন.পি সরকারের মন্ত্রী হয়ে জামায়েত নেতাদের গাড়ীতে জাতীয়পতাকা ধর্ষনের মত পরিস্থিতি। ৪০ বছর পর বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদের সংগ্রাম শেষ হইয়াও শেষ হইল না। স্বাধীনদেশে আর কতদিন বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদের জন্য সংগ্রাম করতে হবে?
বি:দ্র: আগের লেখাটা কেন দেখা যাচ্ছেনা বুঝলাম না। :-s
@সীমান্ত ঈগল,
বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বাঙ্গালীদের মধ্যে থাকলে ঠিক আছে। কিন্তু সংবিধানে তা প্রণয়ন করা হলে কি তা সংখ্যালঘু জাতিস্বত্ত্বাদের প্রতি অপমান হত না?
@আবু বকর,
রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করে, সেটা কি করা হয়নি!!!? বাংলাদেশে বসবাস কারী সকল ধর্মের লোকই বাঙ্গালী। কিন্তু সব বাঙ্গালী মুসলীম নয়, তারা বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন গোত্রের। বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদ আর ধর্ম এক নয়।
@সীমান্ত ঈগল,
কিভাবে !???
চাকমা, খাসিয়া, মণিপুরী, মান্দি, ত্রিপুরা, মারমা, হাজং, রাখাইন, সাঁওতাল, তঞ্চংগা, মুরং প্রভৃতি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষকে নিষ্চয়ই আপনি বাঙ্গালী বলছেন না।
তবে এরা সবাই বাংলাদেশী।
নিচের লিংকটি দেখতে পারেনঃ
http://www.independent-bangladesh.com/ethnic-groups/
@আবু বকর,
বঙ্গ-ভূমিতে বসবাস কারী মানেই বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ব্যাক্তি এবং আপনি যা বলছেন তা সঠিক নয় ধর্ম এবং গেত্রকে আপনি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের সাথে এক করতে পারেন না। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এরা ও বাঙ্গালী শুধু ভিন্ন গোত্রের।
সংখ্যালঘু জাতিস্বত্ত্বাদের সাথে বেঈমান করতে আওয়ামিলীগের বিকল্প নাই, জীবনে দেখি ও নাই । পার্বত্য আঞ্চলের পাহাড়ীদের সাথে শান্তি নামক একচুক্তি করে ঠকিয়েছে; বাস্তবায়নকে স্বপ্নের দোয়ারে ঝুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর মাসি-পিসির গান শুনিয়ে নিরীহ পাহাড়ীদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই সেই আওয়ামিলীগ ? ভোটের আগে আদিবাসী’র সাংবিধানিক স্বীকৃতির কথা বলে লোভ দেখিয়ে আদিবাসীদের সাথে চরমভাবে বেঈমান করতে যাচ্ছে । পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি সংসদের আসন ও এই আওয়ামিলীগের দখলে । কি আর আশা করা যাই এই আওয়ামিলীগ সরকারের কাছে থেকে ? উঠে -পড়ে লাগে পাহাড়ীদেরকে যুদ্ধাপরাধী তকমা লাগাতে ? সেলুকাস -আওয়ামিলীগ ? জয় হোক তোমার জাতিবোধ নামক সাম্প্রদায়িক মানসিকতার ।
রাষ্ট্র মানুষ সৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান । রাষ্ট্রের দায়ীত্ব হলো সকল নাগরিকের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা । কারো প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করা নয় । সংখ্যা লঘিষ্ঠ বা গরিষ্ঠ রাষ্ট্রের বিবেচ্য নয় । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিভিন্ন দল থাকে এবং তাদের উদ্দেশ্য ও আদর্শ বিভিন্ন । সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ যে দলের উদ্দেশ্য ও আদর্শের পক্ষে ভোট দেয়, সে দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়ীত্ব পায় । মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এই আদর্শই প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, যার উপর আওয়ামী লীগ কুঠারাঘাত হানছে ।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করলে সমস্যাটা কোথায়?
এমনতো না যে অন্য ধর্ম পালনে বাধা দেয়ার নিয়ম হচ্ছে।
সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকলেই বা সমস্যা কোথায়?
এতে করে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিও সম্মান দেখান হচ্ছে আবার কারো সমস্যাও হচ্ছে না।
@আবু বকর,
হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান প্রভৃতি ধর্মের মানুষ নিয়ে বাঙালি। আর বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে আরো আছে নানা উপজাতি আদিবাসী। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার আছে রাষ্ট্রের উপর। সংখ্যাগুরু মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হবে সত্য, তবে সংখ্যাগুরুর মতামত, চিন্তা, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি কিংবা ধর্ম, সংখ্যালঘুর উপর চাপিয়ে দেওয়ার বিধান আদৌ গণতান্ত্রিক নয়। তা ছাড়া যে কোন আধুনিক রাষ্ট্রকে এগিয়ে যেতে হবে বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে, ধর্মকে নয়। তাতে বরং মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণায় আমাদের ফিরে যেতে হবে, বৃদ্ধি পাবে দেশে সাম্প্রদায়িক ভেদ-বুদ্ধি, জাতি হয়ে পড়বে বিভক্ত। সংবিধান একটি রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে তার লিখিত দলিল। বিসমিল্লাহ কেবল মুসলমানেরা যে কোন কাজ করার পূর্বে পড়ে থাকে; তাও আবার বাধ্যতামূলক না। দেশের সংবিধান কেবল মুসলমানেরা পড়বে না, সকল ধর্মের নাগরিক প্রয়োজনে তা পড়বে। তা হলে অন্য ধর্মের মানুষদের বিসমিল্লাহ পড়তে হবে কেন? রাষ্ট্র ধর্মের মাধ্যমে দেশ কি একটি বিশেষ ধর্মীয়রাষ্ট্রের আলকাল্লা পড়ে পেলে না? তা যে নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় তার ব্যাখ্যা আমার নিবন্ধে আছে। কোন রাষ্ট্র কেবল সংখ্যাগুরুকে খুশী করার চেষ্টা করে না, তাহলে তা আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থাকে না। আর যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকে খুশী করার জন্য এসব করতেই হয়, তাহলে আবার ধর্মনিরপেক্ষতা কেন? তাহলেত আমাদের স্বীকার করতেই হয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুল, ভুল হয়েছিল আমাদের বাহত্তরের সংবিধান। তা মানলেতো আর বাংলাদেশের ভি্ত্তিই থাকে না। আমাদের ফিরে যেতে হয় সে পাকিস্তানী রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। তাতো আমরা যেতে পারি না।
@মোঃ জানে আলম,
সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সে চেতনা ভুল হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বাংলাদেশের মানুষের কি অধিকার নেই তাদের মতামত অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করার?
@আবু বকর,
অবশ্যই আছে। তবে তা কখনো মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বা চেতনার পরিপন্থী হতে পারে না। তা হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, লাখো শহীদের জীবন দান ও লাখো মা-বোনের সম্ভ্রম দান মিথ্যা হয়ে যায়। আজ যদি কোন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশকে সে পাকিস্তানী আদলে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে, কিংবা গণপ্রজাতন্ত্রের বিপরীতে দেশে রাজতন্ত্র চালু করে তা হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে জনগণের অংশগ্রহণ ঘটে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। সে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রায়শ: নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণের সাথে বেঈমানী করে। নির্বাচিত হয়ে তারা মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে, নারী নির্যাতন করে, হাট-বাজার, হাউড়-বাউড়, ভূমি দখল করে, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে। তখনো কি তাদের কাজকে জনগণের পরে কাজ বলা যায়? তারা যদি নিজেদের স্বার্থে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের জোরে সংবিধানে এমন কোন পরিবর্তন আনতে চায় যা দেশ ও সমাজকে সামনের পরিবর্তে পেছনে ঠেলে দেবে, তাকি মানা যায়? আমাদের দু:খকজনক অভিজ্ঞতা হল বারংবার নির্বাচিত সরকারগুলে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই জনগণ কী চায় সেটা তাদের কার্যক্রমে কখনো প্রতিফলিত হয় না।
@আবু বকর,
আর চিন্তা কইরেন না। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হইছে। সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও জায়গা পাইছে। সনাতন সেই প্রবাদটিই সত্য। জোর যার মুল্লুক তার।
ধর্ম নিরপেক্ষ কথাটির কোন মানেই রইল না। এটা সংখ্যালঘুদের সন্তুষ্ট করার একটা ভুঁয়া প্লান।
আঃ লীঃ জানে ভোটে জিততে হোলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ ছাড়া কোন গতি নাই। আঃ লীঃ সোনার পাথর বাটি বানালো।