সখি, ভালবাসা কারে কয়? <আগের পর্ব : পর্ব-১ । পর্ব -২ । পর্ব-৩| পর্ব-৪ | পর্ব-৫ | পর্ব -৬>
‘সখি ভালবাসা কারে কয় ?’ সিরিজের আগের পর্বগুলোতে প্রেম ভালবসা কী, এবং কতপ্রকার এর পেছনের হরেক রকম কেচ্ছা কাহিনী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই পর্বটি একটু ভিন্ন। এই পর্বে আলোচনা থাকবে ঈর্ষা নিয়ে। সমাজে প্রেম ভালবাসা যেমন আছে, তেমনি আছে ঈর্ষা। কিভাবে এবং কেন ঈর্ষাপরায়নতার মত একটি বৈশিষ্ট জৈবিকভাবে মানব সমাজে উদ্ভুত হল, এর অনুসন্ধান করাই প্রবন্ধটির উদ্দেশ্য। লেখাটির শেষ অংশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মঞ্জুরের উপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতা নিয়েও আলোচনা আসবে …
:line:
আছে ভালবাসা, আছে ঈর্ষা
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে , ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূর – আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়ো নাকো আর।
কী কথা তাহার সাথে? -তার সাথে! …
‘আকাশলীনা’ নামের কবিতায় ঈর্ষাপরায়ণ চরিত্রের এক অসাধারণ চিত্রায়ণ করেছেন কবি জীবনান্দ দাস, যে কবিতায় ঈর্ষাকাতর প্রেমিক অন্য যুবকের সাথে সুরঞ্জনার কথা বলা নিয়ে চিন্তিত, ঈর্ষান্বিত। হ্যা – প্রেম যেমন আছে, তেমনি আছে ঈর্ষাপরায়ণতা। প্রেমের মত ঈর্ষাপরায়ণতার ব্যাপারটাও বোধ হয় মানুষের মজ্জাগত। একতরফা ভাবে প্রেম কখনোই কোথাওই হয় না, প্রেমে ছলনা আছে, আছে প্রতারণা। আর ছলনা বা প্রতারণা থাকলে থাকবে ঈর্ষা, থাকবে ঘৃণা, এবং ক্ষেত্রবিশেষে জিঘাংসাও। শুনতে যতই খারাপ লাগুক না কেন- ছলনা, বিশ্বাসঘাতকতা, ঈর্ষা বা জিঘাংসার মত বৈশিষ্টগুলোর জন্মও হয়েছে প্রেমের মতই একই বিবর্তনীয় যাত্রাপথে। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের এগুলো নিয়েও সঙ্গত কারণেই গবেষণা করতে হয়। ডেভিড বাস তাঁর বই ‘ভয়ঙ্কর আবেগ : প্রেম এবং যৌনতার মধ্যে ঈর্ষাও জড়িত থাকে কেন?’ নামের বইয়ে দেখিয়েছেন, কেউ প্রেমে প্রতারণা করলে আমরা ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠি। ঈর্ষা আসলে একটি সারভাইভাল স্ট্র্যাটিজি – বেঁচে থাকার এক সুচতুর পরিকল্পণা। আসলে বিবর্তনের ধারাবাহিকতাতেই ভালবাসার মত ঈর্ষার বীজও মানুষের মনে তৈরি হয়েছে, এর পরিস্ফুটন ঘটেছে। আমাদের বর্তমান মানসিকতার মধ্যে ঈর্ষার বীজ দেখে বোঝা যায়, আমাদের পূর্বপুরুষেদের মধ্যেও ঈর্ষা যথেষ্ট পরিমাণেই ছিল। যাদের মধ্যে ঈর্ষা ছিল না তাঁরা প্রজননগতভাবে সফল ছিলো না, তারা কোন উত্তরসূরী রেখে যান নি[1]। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আমাদের সবাইকে ঈর্ষাপরায়ন হিসেবে বড় হতে হবে, আর কাউকে দেখলেই ঈর্ষান্বিত হতে হবে। ঈর্ষার ব্যাপারটা বহুলাংশেই সময় এবং পরিস্থিতি নির্ভর। বিবর্তনের কৌশল সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়, এছাড়া বিবর্তনের কৌশলজনিত যে কোন মানবিক বৈশিষ্ট্য মানুষের মধ্যে পারিসাংখ্যিক সীমায় বিস্তৃত, কারও ক্ষেত্রে কম, কারও ক্ষেত্রে বা বেশি।
চিত্র: আমাদের পূর্বপুরুষেদের মধ্যেও ঈর্ষা যথেষ্ট পরিমাণেই ছিল। যাদের মধ্যে ঈর্ষা ছিল না তাঁরা প্রজননগতভাবে সফল ছিলো না, তারা কোন উত্তরসূরী রেখে যান নি (ছবির কৃতজ্ঞতা – সায়েন্টিফিক আমেরিকান)।
তবে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন ঈর্ষা এবং প্রতারণার রকম ফের নারী-পুরুষে ভিন্ন হয়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের অনুকল্প অনুযায়ী যৌনতা সংক্রান্ত হিংসা কিংবা ঈর্ষার ব্যাপারটি আসলে জৈবিকভাবে (biologically) অনেকটাই পুরুষদের একচেটিয়া, যাকে বলে – ‘স্কেসুয়াল জেলাসি’বা যৌন-ঈর্ষা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে – কেবল পুরুষদেরই যৌন-ঈর্ষা থাকবে কেন? কারণ হচ্ছে, সঙ্গমের পর গর্ভধারণ এবং বাচ্চা প্রসবের পুরো প্রক্রিয়াটা নারীরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করে, পুরুষদের আর কোন ভূমিকা থাকে না। ফলে পুরুষরা নিজেদের পিতৃত্ব নিয়ে কখনোই ‘পুরোপুরি’ নিশ্চিত হতে পারে না। সত্যি কথা বলতে কি – আধুনিক ‘ডিএনএ’ টেস্ট আসার আগ পর্যন্ত আসলে কোন পুরুষের পক্ষে একশত ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা সম্ভব ছিলো না যে সেই তার সন্তানের পিতা। কিন্তু মাতৃত্বের ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। মাকে যেহেতু গর্ভধারণ করতে হয়, প্রত্যেক মাই জানে যে সেই তার সন্তানের মা। অর্থাৎ, পিতৃত্বের ব্যাপারটা শতভাগ নিশ্চিত না হলেও মাতৃত্বের ব্যাপারটা নিশ্চিত। এখন চিন্তা করে দেখি – আমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন বনে জঙ্গলে ছিলো অর্থাৎ শিকারী-সংগ্রাহক হিসেবে জীবন চালাতো, তখন কোন সুনিয়ন্ত্রিত একগামী পরিবার ছিলো না। ফলে পুরুষদের আরো সমস্যা হত নিজেদের ‘পিতৃত্ব’ নিয়ে। পিতৃত্বের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়, কারণ বিবর্তনের সার্থপর জিনের (selfish gene) ধারকেরা স্বার্থপরভাবেই চাইবে কেবল তার দেহেরই প্রতিলিপি তৈরি হোক। কিন্তু চাইলেই যে নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে তা তো নয়। সম্পর্কে প্রতারণা হয়। তার স্ত্রী যে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক তৈরি করে গর্ভ ধারণ করবে না, তা সে কিভাবে নিশ্চিত করবে? আদিম বন-জঙ্গলের কথা বাদ দেই, আধুনিক জীবনেও কিন্তু প্রতারণার ব্যাপারটা অজানা নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় শতকরা প্রায় ১৩ থেকে ২০ ভাগ পুরুষ অন্যের সন্তানকে ‘নিজ সন্তান’ ভেবে পরিবারে বড় করে। জার্মানীতে সেই সংখ্যা ৯ থেকে ১৭ ভাগ। সারা বিশ্বেই মোটামুটিভাবে নন-জেনেটিক সন্তানকে নিজ সন্তান হিসেবে বড় করার হার শতকরা ৯ থেকে ১৫ ভাগ বলে মনে করা হয়[2]। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় অন্যের (অর্থাৎ নন- জেনেটিক) সন্তানকে নিজ সন্তান ভেবে বড় করার এই প্রতারণাকে বলা হয় কাকোল্ড্রি (cuckoldry), যার বাংলা আমরা করতে পারি – কোকিলাচরণ[3]।
চিত্র: সারা বিশ্বেই মোটামুটিভাবে নন-জেনেটিক সন্তানকে নিজ সন্তান হিসেবে বড় করার হার (কোকালিচরণ) শতকরা ৪ থেকে ১৫ ভাগ বলে মনে করা হয়। যে সমস্ত পুরুষেরা নিজেদের পিতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান ( উপরের গ্রাফে লো কনফিডেন্স গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত) , তাদের পরিবারে নন-জেনেটিক সন্তান বেশি পাওয়া গেছে, প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ[4]।
এখন কথা হচ্ছে, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে এর প্রভাব কি? প্রভাব হচ্ছে, কাকোল্ড্রি বা কোকিলাচরণ ঘটলে সেটা পুরুষের জন্য এক ধরণের অপচয়। কারণ সে ভুল ভাবে অন্যের জিনের প্রতিলিপি নিজের প্রতিলিপি হিসেবে পালন করে শক্তি বিনষ্ট করবে। এর ফলে নিজের জিন জনপুঞ্জে না ছড়িয়ে সুবিধা করে দেয় অন্যের জিন সঞ্চালনের, যেটা ‘সেলফিশ জিন’ পরতপক্ষে চাইবে না ঘটতে দিতে। ফলাফল? ফলাফল হচ্ছে, পুরুষেরা মূলতঃ ‘সেক্সুয়ালি জেলাস’ হিসেবে বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বেড়ে উঠে। তারা নিশ্চিত করতে চায় যে, তার যৌনসঙ্গী বা স্ত্রী, কেবল তার সাথেই সম্পর্ক রাখুক, অন্য পুরুষের সম্পর্ক এড়িয়ে কেবল তার সাথেই চলুক। এইটা বজায় রাখতে পারলেই সে শতভাগ না হোক, অন্ততঃ কিছুটা হলেও নিশ্চয়তা পাবে যে, তার এই সম্পর্কের মধ্যে কোকিলাচরণ ঘটার সম্ভাবনা কম। এজন্যই ইসলামিক দেশগুলোতে কিংবা অনুরূপ ট্রেডিশনাল সমাজগুলোতে মেয়েদের হিজাব পরানো হয়, বোরখা পরানো হয়, কিংবা গৃহে অবরুদ্ধ রাখা হয়, কিংবা বাইরে কাজ করতে দেয়া হয় না – এগুলো আসলে প্রকারন্তরে পুরুষতান্ত্রিক ‘সেক্সুয়াল জেলাসি’-রই বহিঃপ্রকাশ।
চিত্র: ইসলামিক দেশগুলোতে কিংবা অনুরূপ সনাতন সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের যে হিজাব পরানো হয়, বোরখা পরানো হয়, কিংবা গৃহে অবরুদ্ধ রাখা হয় – এগুলো আসলে প্রকারন্তরে পুরুষতান্ত্রিক ‘সেক্সুয়াল জেলাসি’-রই বহিঃপ্রকাশ (ছবির কৃতজ্ঞতা – ইন্টারনেট)।
আসলে নারীকে অন্তরীণ করে, তাদের অধিকার এবং মেলামেশা সীমিত করার মাধ্যমে সে সব দেশে পুরুষেরা নিশ্চিত করতে চায় যে, কেবল তার জিনের প্রতিলিপিই তার স্ত্রীর শরীরে তৈরি হোক, অন্য কারো নয়। কারণ স্ত্রীর কোকিলাচরণ ঘটলে সেটা তার জন্য হয়ে উঠে ‘সময় এবং অর্থের অপচয়’। পুরুষালী ঈর্ষার মূল উৎস এখানেই। ডেভিড বাস তার ‘Human Mating Strategies’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে সেজন্যই লিখেছেন[5] –
‘যেহেতু মানব শুক্রাণু দিয়ে ডিম্বানুর নিষেকের পুরো প্রক্রিয়াটিই নারীর দেহাভ্যন্তরে ঘটে, পুরুষের মধ্যে নিজের সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে। অপর পক্ষে মাতৃত্ব নিয়ে একটি নারীর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই, এখানে নিশ্চয়তা শতভাগ, তা সেটা যে শুক্রাণু দিয়েই নিষিক্ত হোক না কেন! কাজেই যৌনতার ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততা কেবল একটি পুরুষের (জেনেটিক) পিতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করতে পারে, নারীর মাতৃত্ব থেকে নয়। … এ সকল কারণে, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, যৌনতার অবিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে কোন আলামত পাওয়া গেলে নারীদের চেয়ে পুরুষেরাই অধিকতর বেশি মণক্ষুন্ন হবে’।
চিত্র: অধ্যাপক ডেভিড বাস সহ অন্যান্য গবেষকেরা তাদের গবেষণায় দেখেছেন পুরুষেরা নারীদের চেয়ে অনেক বেশি ‘সেক্সুয়াল জেলাসি’তে ভোগে। যৌনতার অবিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে কোন আলামত পাওয়া গেলে নারীদের চেয়ে পুরুষেরাই অধিকতর বেশি মণক্ষুন্ন হয়।
পুরুষেরা বেশি মনক্ষুন্ন হবে কারণ, বিবর্তনীয় পরিভাষায় প্রতারিত পুরুষের সঙ্গি গর্ভধারণ করলে তাকে অর্থনৈতিক এবং মানসিকভাবে অন্যের সন্তানের পেছনে অভিভাবকত্বীয় বিনিয়োগ করতে হবে, যার মুল্যমান জৈববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে অনেক বলে মনে করা হয়। মূলতঃ তার অভিভাবকত্বের পুরোটুকুই বিনিয়োগ করতে হবে এমন সন্তানের পেছনে যার মধ্যে নিজের কোন বংশানুর ধারা বহমান নেই। স্বার্থপর জিনের দৃষ্টিকোন থেকে এটা এক ধরণের অপচয়ই বটে। নিজের পিতৃত্বের ব্যাপারে সংশয়ী থাকতে হওয়ায় বিবর্তনীয় যাত্রাপথে পুরুষের মানসপট যৌনতার ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত হয়ে গড়ে উঠেছে, কিন্তু নারীরা মাতৃত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকায়, তা হয়নি[6]।
অবশ্য স্বার্থপরভাবে নিজের জেনেটিক ধারা তার সঙ্গীর মাধ্যমে যেন বাহিত হয়, তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা মানুষ ছাড়া অন্য প্রানীর মধ্যেও দেখা যায়। যেমন, পুরুষ ভেলিড মাকড়শা (veliidae water spider) তার সঙ্গিকে কব্জা করার পর কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত শুয়ে থাকে, যাতে সঙ্গম করুক আর নাই করুক, অন্ততঃ অন্য পুরুষ মাকড়শা যেন তার সঙ্গীর দখল নিতে চেষ্টা না পারে। Plecia nearcticas নামের এক ধরণের পতঙ্গের (জনপ্রিয়ভাবে ‘লাভ বাগ’ হিসেবে পরিচিত) নিষেকের ক্ষেত্রেও পুরুষ পতঙ্গটি বেশ কয়েকদিন ধরে স্ত্রী পতঙ্গটিকে জড়িয়ে ধরে রাখে, যাতে অন্য কোন পতঙ্গ এসে এর নিষেক ঘটাতে না পারে। আবার, এক ধরণের ফলের মাছি আছে যাদের শুক্ররসের মধ্যে একধরণের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা স্ত্রী-যোনিতে গিয়ে পূর্বাপর সকল শুক্রাণুকে ধ্বংস করে দেয়, এবং প্রকারান্তরে নিশ্চিত করতে চায় যে, কেবল তার শুক্রাণু দিয়েই নিষেক ঘটুক[7]। কিছু মথ এবং প্রজাপতির ক্ষেত্রে শুক্ররসের মধ্যে বিদ্যমান কিছু রাসায়নিক পদার্থ ‘সঙ্গম রোধনী’ (copulatory plug) হিসেবে কাজ করে। এর ফলে যোনির মধ্যে শুক্রাণু ঢুকে ডিম্বানুর প্রবেশপথে অনেকটা আঁঠার মত আটকে থাকে যেন পরে অন্য কোন কোন পুরুষের শুক্রাণু সেঁধিয়ে গিয়ে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে না পারে! তবে সবচেয়ে চরম উদাহরণ আমি পেয়েছি Johannseniella nitida নামের এক ধরণের মাছির ক্ষেত্রে , সঙ্গম শেষে যাদের পুরুষের লিঙ্গ ভেঙ্গে ভিতরে রয়ে যায়। এ যেন অনেকটা সঙ্গমান্তে নারীর যোনী ছিপি দিয়ে আটকে দেয়া – যেন অন্য প্রতিযোগীরা এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে না পারে। যদিও কীট পতঙ্গের সাথে মানুষের পার্থক্য উল্লেখ করার মতই বিশাল, কিন্তু তারপরেও সঙ্গীকে নিজের অধিকারে রাখার ব্যাপারে স্ট্র্যাটিজিগতভাবে মিল লক্ষ্যনীয়[8]। দুর্ভাগ্যবশতঃ অন্য পতঙ্গের মতো মানুষের শুক্রাণুতে সঙ্গম রোধনী আঁঠাও নেই, কিংবা পুরুষাঙ্গ ভেঙ্গে যোনীতেও থেকে যায় না, তবে বিভিন্ন সমাজে পর্দা, বোরখা আর হিজাবের বেপরোয়া প্রয়োগ দেখা যায় বৈকি। এগুলো তো এক ধরণের ছিপিই বলা চলে, কারণ এর মাধ্যমে পুরুষেরা নিশ্চিত করতে চায় যে, এ নারী অন্যের কামুক দৃষ্টি এড়িয়ে কেবল তারই অধিকারভুক্ত হয়ে থাকুক।
পুরুষদের ঈর্ষার ব্যাপারটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু মেয়েদেরটা? মেয়েদেরও ঈর্ষা হয়, প্রবলভাবেই হয় – তবে, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত হল – সেটা ঠিক ‘সেক্সুয়াল জেলাসি’ নয়। মেয়েরা বিবর্তনীয় পটভুমিকায় একজন পুরুষকে রিসোর্স বা সম্পদ হিসেবে দেখে এসেছে। কাজেই একজন পুরুষ একজন দেহাপসারিনীর সাথে যৌনসম্পর্ক করলে মেয়েরা যত না ঈর্ষান্বিত হয়, তার চেয়ে বেশি হয় তার স্বামী বা পার্টনার কারো সাথে রোমান্টিক কিংবা ‘ইমোশনাল’ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে। ডেভিড বাস, ওয়েসেন এবং লারসেনের নানা গবেষনায় এর সত্যতা মিলেছে [9]। এখানে আমি আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার উল্লেখ করব। প্রাথমিক একটি গবেষনার সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৭৮ সালের একটি গবেষণাপত্রে[10]। ২০ জন পুরুষ এবং ২০ জন নারীকে নিয়ে পরিচালিত সেই গবেষণায় ঈর্ষাপরায়ণ হওয়ার বিভিন্ন উপলক্ষ্য থেকে যে কোন একটি বেছে নিতে বলা হয়। অপশন গুলোর মধ্যে তার সঙ্গীর অন্য কারো সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন থেকে শুরু করে সঙ্গীর সময় এবং সম্পদ অন্য কারো জন্য বরাদ্দ করার মতো সব পথই খোলা ছিলো।দেখা গেলো বিশ জন নারীর মধ্যে সতের জনই সেই অপশন বাছাই করেছে – যেখানে তার সঙ্গী অন্য কারো জন্য নিজের সময় এবং সম্পদ ব্যয় করছে। কিন্তু অন্য দিকে বিশ জন পুরুষ সদস্যদের মধ্যে ষোল জনই অভিমত দিয়েছে তার সঙ্গী অন্য কারো সাথে যৌনসম্পর্ক গড়ে তুললে সেটা তাকে সবচেয়ে বেশি ঈর্ষাপরায়ণ করে তুলবে। এধরনের আরেকটি গবেষণা সত্তুরের দশকে চালানো হয়েছিলো পনেরটি দম্পতির মধ্যে[11]।সে গবেষণা থেকেও একই ভাবে উঠে এসেছিলো যে, পুরুষেরা ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে উঠে যদি তার সঙ্গীর সাথে কোন তৃতীয়পক্ষের যৌনসম্পর্কের কোন আলামত পাওয়া যায়। কিন্তু মেয়েদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, তারা বেশি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে উঠে যদি তার সঙ্গী অন্য কোন মেয়ের সাথে আবেগী কিছু করলে – যেমন টাংকি মারা, রোমান্টিক সম্পর্কে জড়ানো, চুমু খাওয়া, এমনকি এগুলো কিছু না করে তার সঙ্গী পুরুষটি অন্য নারীর সাথে কেবল দীর্ঘক্ষণ ধরে কথাবার্তা বললেও সে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠে। এ গবেষণাগুলো থেকে বোঝা যায়, ছেলেরা তার সঙ্গী কার সাথে কতটুকু কথা বললো না বললো তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকে না, যতটা থাকে সঙ্গীর যৌনতার বিশ্বস্ততার ব্যাপারে। কিন্তু অন্যদিকে মেয়েদেরটা একটু ভিন্ন। তাদের সঙ্গী অন্য কোন মেয়ের জন্য কতটুকু সময় এবং সম্পদ ব্যয় করলো, তা তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলে।
এ ব্যাপারে বড় সড় গবেষণা করেছেন অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড বাস। ৫১১ জন কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে চালানো এ গবেষণায় তাদের কল্পণা করতে বলা হয় যে, তার সঙ্গী কারো সাথে যৌনসঙ্গমে প্রবৃত্ত হয়েছে কিংবা কারো সাথে মানসিক আবেগময় এক ধরণের সম্পর্ক তৈরি করেছে। কোন ব্যাপারটা তাকে বেশি ঈর্ষাকাতর করে তুলবে? প্রায় ৮৩ শতাংস নারী মনে করেছে তার সঙ্গী তাকে না জানিয়ে অন্য কোন মেয়ের সাথে আবেগময় সম্পর্ক গড়ে তুললে সেটা তাকে ঈর্ষাপরায়ণ করে তুলবে, কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটি মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ। অন্যদিকে শতকরা ৬০ ভাগ ছেলে মত দিয়েছে তার সঙ্গী তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুললে সেটা তাকে চরম ঈর্ষাকাতর করে ফেলবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা পাওয়া গেছে মাত্র ১৭ ভাগ[12]। বাসের এই ফলাফল কেবল আমেরিকার গবেষণা থেকে পাওয়া গেলেও পবর্তীতে কোরিয়া, জাপান, চীন, সুইডেন সহ অনেকে দেশেই একই ফলাফল পাওয়া গেছে বলে দাবী করা হয়েছে[13]। একই ধরণের ফলাফলের দাবী এসেছে হাঙ্গেরি, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, সোভিয়েত রাশিয়া এবং যুগোস্লাভিয়াতে চালানো সমীক্ষা থেকেও[14]। তাই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা ধারনা করেন নারী-পুরুষে এই ঈর্ষাগত পার্থক্য সমগ্র মানব জাতির মধ্যেই পারিসাংখ্যিক পরিসীমায় বিস্তৃত। ধারণা করা হয় বিবর্তনের দীর্ঘদিনের যাত্রাপথে নিজের সঙ্গীকে ধরে রাখার অভিপ্রায়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা যেভাবে ঈর্ষা প্রদর্শন করে প্রজননগত সফলতা পেয়েছিল, তার বিবিধ ছাপই দেখা যায় আজকের নারী পুরুষদের মানসপটে।বলা বাহুল্য নারী এবং পুরুষেরা ভিন্নভাবে সঙ্গি নিজেদের আয়ত্বে রাখার কৌশল করায়ত্ব করেছিলো, সেই পার্থক্যসূচক অভিব্যক্তিগুলোই স্পষ্ট হয় নারী পুরুষের ঈর্ষাকেন্দ্রিক মনোভাব ঠিকমতো বিশ্লেষণ করলে।
তবে সবাই যে অধ্যাপক বাসের এ উপসংহারগুলোর সাথে একমত পোষণ করেছেন তা নয়। যেমন করেননি নর্দার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক ডেভিড বুলার। তিনি তার বই ‘অভিযোজনরত মনন’ (Adapting Minds) বইয়ে[15] এবং বেশ কিছু প্রবন্ধে অধ্যাপক বাসের ঈর্ষা সংক্রান্ত গবেষণাগুলোর পদ্ধতিগত সমালোচনা হাজির করেছেন[16]। পুরুষেরা কেবল সঙ্গির যৌনতার ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততার সন্ধান পেলেই কেবল ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেন, অন্য কিছুতে তেমন নয় বলে বাস যে অভিমত দিয়েছেন, তা সঠিক নয় বলে বুলার মনে করেন। আমরা জীবনানন্দ দাসের আকাশলীনা কবিতায় দেখেছি সুরঞ্জনা এক অচেনা যুবকের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন নয়, কেবল কথা বলাতেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। এ ধরণের অনেক পুরুষই আমাদের চারপাশে আছে। আবার যৌনতার ব্যাপারেও উদার পুরুষের সংখ্যাও কম নয়। যেমন, অধ্যাপক বাসের গবেষণা থেকেই উঠে এসেছে যে, জার্মানি কিংবা নেদারল্যণ্ডের মতো দেশে যেখানে যৌনতার ব্যাপারগুলো অনেক শিথিল, সেখানে পুরুষেরা সঙ্গির যৌনতার ব্যাপারে অনেক কম ঈর্ষাপরায়ণ থাকেন।কোরিয়া এবং চীনের মানুষদের উপর গবেষণা করেও দেখা গেছে সেখানকার পুরুষেরা সঙ্গির যৌনতার ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততার আলামত পেলে অন্য অনেক দেশের পুরুষদের মতো খুব বেশি মনক্ষুন্ন হন না। আবার নারীদের ক্ষেত্রেও তারা কেবল সঙ্গির রোমান্টিক কিংবা ‘ইমোশনাল’ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াকে বেশি গুরুত্ব দেয়, সঙ্গির রোমান্সবিহীন যৌন সম্পর্ককে নয় বলে ঢালাওভাবে উপসংহার টানা হয়েছে – সেটাও কতটুকু নিশ্চিত সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা কিছুদিন আগেই দেখেছি ক্যালিফোর্নিয়ার ভূতপূর্ব গভর্নর এবং খ্যাতিমান অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্সনেগার এবং তার স্ত্রী মারিয়া শ্রাইভারের দীর্ঘ পঁচিশ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে। আর্নল্ড শোয়ার্সনেগার বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে তার বাসার গৃহপরিচারিকার সাথে যৌনসম্পর্ক রেখেছিলেন। এমন নয় যে, শোয়ার্সনেগার পরিচিকার সাথে কোন ‘রোমান্টিক সম্পর্কে’ জড়িয়েছিলেন। যৌনতার ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততার আলামত পাওয়াতেই মারিয়া শ্রাইভার শোয়ার্সনেগারকে ছেড়ে চলে গেছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরা সঙ্গির যৌন-অবিশ্বস্ততাকে খুব গুরুত্ব দিয়েই গ্রহণ করে, অধিকাংশ পুরুষের মতোই। তাই অধ্যাপক বুলারের মতে বিবর্তন পুরুষ নারীতে ঈর্ষার কোন ‘আলাদা মেকানিজম’ তৈরি করেনি, বরং নারী পুরুষ উভইয়ই ঈর্ষাকেন্দ্রিক একই মেকানিজমের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, কেবল এর পরিস্ফুটন পরিস্থিতিভেদে ভিন্ন হয়।
ঈর্ষার পরিনাম
এখন কথা হচ্ছে ঈর্ষার পরিণাম কীরকম হতে পারে? ছোট খাট সন্দেহ, ঝগরাঝাটি, দাম্পত্য কলহ, ডিভোর্স থেকে শুরু করে গায়ে হাত তোলা, মার ধোর থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত গড়াতে পারে, তা সবাই মোটামুটি জানেন। যেহেতু অধিকাংশ বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, ‘সেক্সুয়াল জেলাসি’ জৈবিক কারণে পুরুষদেরই বেশি, তারাই পরকীয়া কিংবা কোকিলাচরণের কোন আলামত সঙ্গির মধ্যে পেলে গড়পরতা বেশি সহিংস আচরণ করে।
সঙ্গি ‘অযাচিত’ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে এই সন্দেহ একজন ঈর্ষাপরায়ণ পুরুষের মনে দানা বাঁধলে তিনি কি করবেন? অনেক কিছুই করতে পারেন। হয়ত স্ত্রী বা সঙ্গি একা বাড়ি থেকে বেরুলে গোপনে তার পিছু নেবেন, হয়তো অফিসে গিয়ে হঠাৎ করেই ফোন করে ব্সবেন জানতে তার স্ত্রী বা সঙ্গি এখন কি ঠিক করছেন, খোঁজ খবর নেবেন মার্কেটে যাবার কথা বলে স্ত্রী আসলেই মার্কেটে গিয়েছে নাকি ঢুকে গিয়েছে তার গোপন প্রেমিকের ঘরে। তিনি চোখে চোখে রাখবেন তার সঙ্গি কোন পার্টিতে, বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গেলে কি করেন, কোথায় কার সাথে আড্ডা মারেন। সঙ্গির অবর্তমানে গোপনে তার ইমেইল পড়বেন, কিংবা সেলফোনের টেক্সটে নজর বুলাবেন, ইত্যাদি। এই আচরণগুলোর সমন্বিত একটি নাম আছে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের অভিধানে – ভিজিলেন্স (vigilance), এর বাংলা আমরা করতে পারি ‘শকুনাচরণ’। শকুন যেমন উপর থেকে নজর রাখে তার শিকারের প্রতি, ঈর্ষাপরায়ণ পুরুষের আচরণও হয়ে দাঁড়ায় তার সঙ্গির প্রতি ঠিক সেরকমের।
ভিজিলেন্সের পরবর্তী কিংবা ভিন্ন একটি ধাপ হতে পারে ভায়োলেন্স (violence) বা সহিংসতা। সহিংসতার প্রকোপ অবশ্য ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন হয়। কখনো সঙ্গির গায়ে হাত তোলা, কখনো বা সন্দেহের তালিকাভুক্ত গোপন প্রেমিককে খুঁজে বের করে করে থ্রেট করা, বাড়ি আক্রমণ করা, বেনামে ফোনে হুমকি ধামকি দেয়া, কিংবা নিজে গিয়ে কিংবা গুণ্ডা লেলিয়ে পিটানো, প্রকাশ্যে হত্যা, গুম খুন ইত্যাদি। রাষ্ট্রিয় আইনে ভিজিলেন্স বা শকুনাচরণ অপরাধ না হলেও ভায়োলেন্স বা সহিংসতা অবশ্যই অপরাধ। কিন্তু অপরাধ হলেও এটা কিন্তু অনেক পুরুষেরই মনোসঞ্জাত স্ট্র্যাটিজি, যা তারা সুযোগ পেলেই ব্যবহার করেছে ইতিহাসের যাত্রাপথে সে কথা কারো অজানা নয়।
এ ক্ষেত্রে ১৯৮০ সালের দিকে পত্রপত্রিকায় সাড়া জাগানো ক্যানাডিয়ান মডেল এবং অভিনেত্রী ডোরোথি স্ট্র্যাটেন হত্যার উল্লেখ বোধ হয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না। অনিন্দ্য সুন্দরী ডোরোথি স্ট্র্যাটেন তখন কানাডার সেন্টিনিয়াল হাইস্কুলে পড়ছিলেন, আর বাড়ির পাশে ‘ডেইরি কুইন’ নামের ফাস্ট ফুড রেস্তরায় কাজ করতেন। রেস্তরায় কাজ করতে গিয়েই পল স্নাইডার নামে এক লোকের সাথে পরিচয় হয় তার। অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের ভাবের আদান প্রদান – পরিচয় থেকে পরিণয়। ডোরোথি স্ট্র্যাটেনের বয়স তখন ১৭। আর স্নাইডারের ২৬। পরিচয়ের পর থেকেই স্নাইডার ডোরোথিকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে, ডোরোথির একটি চমৎকার সুন্দর মুখশ্রী আর আকর্ষণীয় দেহবল্লরী আছে, যা মডেল হবার জন্য একেবারে নিঁখুত। ডোরোথি প্রথমে রাজী না হলেও স্নাইডারের চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে কিছু ছবি তুলেন। স্নাইডারই তোলেন সে ছবিগুলো তার নিজস্ব ক্যামেরায়। তারপর তা পাঠিয়ে দেন হিউ হেফনারের কাছে। হিউ হেফনার প্লে বয় ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা। স্নাইডার হেফনারের কাছ থেকে উত্তর পেলেন দুই দিনের মধ্যেই।
এরপরের সময়গুলো ডোরোথি স্ট্র্যাটেনের জন্য খুবই পয়মন্ত। তিনি হিউ হেফনারের বিখ্যাত ‘প্লে বয় প্রাসদে’ গিয়ে উঠলেন স্নাইডারকে সাথে নিয়ে। শুরু হল ডোরোথির প্লে বয় মিশন। তিনি ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হলেন প্লে বয় ম্যাগাজিনের ‘মাসের সেরা প্লে মেট’ হিসেবে।, ১৯৮০ সালে তিনি হন বর্ষ সেরা। প্লেবয়ের পাঠকূল যেন আক্ষরিক অর্থেই ডোরোথির পরিস্কার চামড়া এবং প্রতিসাম্যময় দেহ, লাস্যময় কিন্তু নিষ্পাপ মুখশ্রী, আর নির্মল চাহনি দিয়ে আবিষ্ট ছিলো সেসময়। রাতারাতি ডোরোথি বনে গেলেন তারকা। আর অন্যদিকে স্নাইডারের অবস্থা রইলো আগের মতোই- চাকরীবাকরীবিহীন, হতাশাগ্রস্থ। হেফনারের কাছেও স্নাইডার তেমন কোন সহনীয় কিছু ছিলো না। একদিন প্লে বয় প্রাসাদ থেকে স্নাইডারকে তাড়িয়েই দেয়া হল। প্রাসাদরক্ষীকে বলে দেয়া হল যে, তিনি যেন স্নাইডারকে বাড়ির ত্রিসীমানায় না দেখেন।
চিত্র: ডোরোথি স্ট্র্যাটেন (১৯৬০ -১৯৮০), ছবির কৃতজ্ঞতা –এখানে।
এদিকে ডরোথিকে নিয়ে শুরু হল হেফনারের ম্যালা পরিকল্পনা। তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল হলিউডের নায়ক, নায়িকা আর খ্যাতিমান পরিচালকদের সাথে। এদের মধ্যে ছিলেন হলিউডের উঠতি পরিচালক পিটার বোগদানোভিচ। পিটার তখন ইতোমধ্যেই ‘পেপার মুন’ (১৯৭৩) আর ‘দ্য লাস্ট পিকচার শো’ (১৯৭১)’র মত জনপ্রিয় ছবি তৈরি করে ফেলেছেন। তিনি ডরোথিকে দেখেই তার ভবিষ্যৎ ছবির নায়িকা হিসেবে মনোনীত করে ফেললেন। ডরোথির জন্য এ যেন আকাশের চাঁদ পাওয়া। অবশ্য বর্ষসেরা প্লে বয় হিসেবে মনোনয়নের কারণে ইতোমধ্যেই ডরোথি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন মহলে। তিনি অভিনয় শুরু করেছেন বাক রজার্স এবং ফ্যান্টাসি আইল্যান্ডের মত টিভি সিরিয়ালে।
ডরোথির দিনকাল ভালই চলছিলো। পিটার বোগদানোভিচের ‘দে অল লাফড’ ছবিতে অভিনয় শুরু করেছেন। এটিই তার প্রথম ছবি। অন্যদিকে তার সঙ্গি পল স্নাইডার চাকরী বাকরীবিহীন। গ্ল্যামারাস ডরোথির পাশে চলচিত্র জগতে অচ্ছুৎ স্নাইডার ‘নিতান্তই বেমানান’ হয়ে উঠছেন ক্রমশঃ। কিন্তু তিনি তখনো ডরোথিকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ডরোথিও প্রথমে না করেন নি, কারণ আফটার অল – পল স্নাইডারের কারণেই প্লেবয়ের মাধ্যমে তার খ্যাতির যাত্রা শুরু হয়েছিল। ডরোথি স্নাইডারকে বিয়ে করতে রাজী হলেন বটে কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই অনিবার্যভাবে প্রেমে পড়ে গেলেন পিটার বোগদানোভিচের। স্নাইডারকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলেন ডরোথি। তার সাথে বিচ্ছেদের চিন্তা শুরু করেছেন তিনি।
বেপরোয়া পল স্নাইডার শেষবারের মতো ডরোথির সাথে দেখা করতে চাইলেন। যদিও ডরোথির বন্ধুবান্ধব তাকে স্নাইডারের সাথে সকল ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলেন, ডরোথি ভাবলেন – হোয়াট দ্য হেক, এই একবারই তো। তিনি ভাবলেন যে মানুষটার সাথে এতদিনের একটা সম্পর্ক ছিল, যার কারণে তিনি এই খ্যাতির সিড়িতে তার সাথে দেখা করে কিছুটা কৃতজ্ঞতার ঋণ শোধ করলে ক্ষতি কি!
সেই ভাবাই তার কাল হল। ১৯৮০ সালের ১৪ই অগাস্ট ডরোথি স্নাইডারের সাথে দেখা করলেন। সাথে তার হ্যান্ড ব্যাগে নিলেন এক হাজার ডলার। ভাবলেন এ টাকাগুলো স্নাইডারের হাতে তুলে দিলে স্নাইডারের রাগ ক্ষোভ কিছুটা হলেও কমবে, আর তা ছাড়া চাকরী বাকরীবিহীন স্নাইডারের টাকার দরকার নিঃসন্দেহে। কিন্তু স্নাইডারের মাথায় ছিল ভিন্ন পরিকল্পণা। তিনি তার শটগান ডরোথির মাথায় তাক করে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করলেন। হত্যা করলেন ডরোথিকে। পুলিশ পরে বাসায় এসে রক্তের বন্যায় ভেসে যাওয়া ডরোথির নিথর দেহ আবিস্কার করলেন (ছবি দেখুন এখানে। ছবিটি অত্যন্ত গ্রাফিক বিধায় সরাসরি ব্লগে দেয়া হল না)। যে নির্মল চাহনি আর নিষ্পাপ মুখশ্রী এতোদিন আবিষ্ট করে রেখেছিল ডরোথির ভক্তদের, হাজার হাজার ম্যাগাজিনের কভার পেজে যে মুখের ছবি এতোদিন ধরে আগ্রহভরে প্রকাশ করেছেন পত্রিকার প্রকাশকেরা, সেই মুখ বিদ্ধস্ত। রক্তস্নাত বিকৃত মুখ, ফেটে যাওয়া মাথার খুঁলি আর এখানে ওখানে ছড়িয়ে পড়া মগজের মাঝে পড়ে থাকা নগ্ন দেহ ডরোথির। দেহে নির্যাতন আর ধর্ষণের ছাপও ছিলো খুব স্পষ্ট।
স্নাইডারের ঈর্ষাপরায়নতার মর্মান্তিক বলি হলেন ডরোথি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস – মৃত্যুর কিছুদিন আগের এক সাক্ষাৎকারে ডরোথি তার সবচেয়ে অপছন্দনীয় বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন – ঈর্ষাপরায়নতা! মাত্র বিশ বছর বয়সেই পৃথিবীর সমস্ত রূপ রস ভালোবাসা ছেড়ে অজানার পথে পাড়ি জমাতে হলো ডরোথিকে। স্নাইডার নিজেও আত্মহত্যা করেন ডরোথিকে হত্যার পর পরই। ব্যাপারটিকে সাদা চোখে জিঘাংসার জের বলে মনে হলেও সেটি আরেকটু গভীর বিশ্লেষণের দাবী রাখে। ডোরোথি ছিলেন সুন্দরী, কিন্তু নিজের সৌন্দর্য নিয়ে তিনি তেমন সচেতন হয়তো ছিলেন না যখন তিনি ডেইরি কুইন রেস্তরায় পার্ট টাইম কাজ করতেন। প্লে বয় ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা প্লে মেট নির্বাচিত হবার পরই তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি পরিণত হয়েছেন বহু শিক্ষা দীক্ষা গুণমান সমৃদ্ধ রথী মহারথী পুরুষের হার্টথ্রবে। অর্থাৎ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে ডরোথির ‘মেটিং ভ্যালু’ বেড়ে গিয়েছিলো অনেকগুণ। আর অন্যদিকে স্নাইডার ছিলেন চাল চুলোহীন চাকবাকরী বিহীন বেকার যুবক। তিনি অর্থবিত্তে বলীয়ান সামাজিক প্রতিপাত্তিশালী হেফনার কিংবা পিটার বোগদানোভিচদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারবেন কেন? তার মেটিং ভ্যালু ছিলো পড়তির দিকে। প্রতিযোগিতায় হেরে যাবার, অর্থাৎ এতদিনের সুন্দরী সঙ্গি ‘হাত ছাড়া’ হয়ে যাবার আশঙ্কাই ঈর্ষান্বিত করে তুলেছিলো স্নাইডারকে। ভিজিলেন্স থেকে তিনি চেঁছে নিয়েছিলেন ভায়োলেন্সের পথ। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, বিবর্তনীয় যাত্রাপথে নারীরা পুরুষ সঙ্গীদের এক ধরনের ‘সম্পদ’-এর যোগান হিসেবে চিহ্নিত করে এসেছে[17]। অর্থবিত্ত, ভাল চাকরী, সামাজিক পদমর্যাদা, প্রভাবপ্রতিপত্তি পুরুষদের জন্য খুব বড় ধরণের মেটিং ভ্যালু। কাজেই চাকরী হারানো কিংবা চাকরী না থাকার মানে সম্পদের যোগান বন্ধ। মেয়েরা সঙ্গি নির্বাচনের সময় চাকরীদার এবং সামাজির প্রতিপত্তিওয়ালা ছেলেদের পছন্দ করে। এগুলো না থাকলে মেটিং ভ্যালু কমে আসবে। স্নাইডারের ক্ষেত্রে ঠিক এটিই ঘটেছিলো। ব্যাপারটাকে সামাজিক স্টেরিওটাইপিং বলে মনে হতে পারে, কিন্তু পুরুষদের জন্য চাকরী বাকরী না করে বেকার বসে থাকাটা কোন অবশনই নয় বিয়ের বাজারে কিংবা এমনিতেই সামাজিকভাবে, কিন্তু বহু সমাজেই মেয়েদের জন্য তা নয়। আমার ব্যক্তিগত জীবনের উদাহরণ টানি এ প্রসঙ্গে। স্বভাবে আমরা দু’জনেই ঘরকুনো হলেও মাঝে মধ্যে চাপে পড়ে আমাকে আর বন্যাকে মাঝে মধ্যেই কোন দেশী পার্টিতে যেতে হয় এই আটলান্টায়। অনেক সময়ই নতুন কারো সাথে দেখা হয়, পরিচয়ের এক পর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় – ‘ভাই আপনি কোথায় চাকরী করেন?’ বন্যার ক্ষেত্রে ঠিক তা হয়না। তার দিকে প্রশ্ন আসে -‘আপা/ভাবী, আপনি কি বাসায় থাকেন নাকি চাকরী করছেন?’ এ থেকে বোঝা যায় নারীদের ক্ষেত্রে চাকরী না করাটা একটা অপশন মনে হলেও ‘ভাল স্বামীর’ ক্ষেত্রে তা হয় না কখনোই, তা তিনি যতই শখের বসে বইপত্তর লিখুন কিংবা ব্লগ করুন ! সেজন্যই চাকরী না থাকলে একজন নারী যতটা না পীড়িত হয়, একজন পুরুষকে তার বেকার জীবন পীড়িত করে ঢের বেশি। তারা হয়ে উঠে হতাশাগ্রস্থ, এবং সর্বোপরি এই ভঙ্গুর সময়টাতেই তারা সঙ্গি হারানোর ভয়ে হয়ে উঠে চিন্তিত এবং ঈর্ষান্বিত। জীববিজ্ঞানী রবিন বেকার এবং মার্ক বেলিস ইংল্যান্ডে চালানো তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, একজন বিবাহিত নারী যখন অন্য কোন পুরুষের সাথে পরকীয়ায় জড়ায়, সেই পুরুষের চাকরীর স্ট্যাটাস, প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান প্রভৃতি তার বর্তমান স্বামীর চেয়ে সাধারণতঃ বেশি থাকে[18]। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, শতকরা ৬৪ ভাগ ক্ষেত্রে একজন পুরুষ তার সঙ্গিকে হত্যা করে যখন সে থাকে চাকুরীবাকুরীবিহীন একজন বেকার ভ্যাগাবন্ড[19]।
ঈর্ষার পরিনাম এবং রুমানা মঞ্জুর উপাখ্যান
সম্প্রতি একটি আলোচিত ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে এবং মিডিয়ায় আলোচনা তুঙ্গে। বৃটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি্র গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মঞ্জুর দেশে থাকাকালীন সময়ে তার স্বামী হাসান সাইদের হাতে রক্তাক্ত হয়েছেন, ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। আঁচড়ে কামড়ে নাক ঠোঁট গালের মাংস খুবলে নেয়া হয়েছে। চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তার চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। রুমানাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বাংলাদেশ এবং ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েও লাভ হয়নি, রুমানার দুটো চোখই অন্ধ হয়ে গেছে।
চিত্র : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা গত ৫ জুন স্বামী হাসান সাইদের মারাত্মক নির্যাতনের শিকার হন ( ছবির উৎসের কৃতজ্ঞতা – ইন্টারনেট)।
হাসান সাইদের এই ‘পশুসুলভ’ আচরণে স্তম্ভিত হয়ে গেছে সবাই। কী ভীষণ কুৎসিৎ মন মানসিকতা থাকলে শুধু সঙ্গিনীকে কেবল মারধোর নয়, রীতিমত নাক কান গাল কামড়ে ছিঁড়ে নেয়া যায়, আঙ্গুল ঢুকিয়ে চোখ উপড়ে নেবার চেষ্টা করা যায়। পত্রপত্রিকা, ফেসবুক আর ব্লগে আলোচনা, প্রতিবাদের ঝড়। কেউ দুষছেন পুরুষতন্ত্রকে, কেউ বা ধর্মকে, কেউ বা আবার দোষারোপ করছেন দেশের আইন কানুনকে। আবার কিছু মহল থেকে তাকে পাগল প্রতিপন্ন করার চেষ্টাও হয়েছে।
চিত্র : দু চোখ হারানো রুমানা সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলছেন (ছবির উৎসের কৃতজ্ঞতা – বিডিনিউজ২৪ ডট কম) ।
না হাসান সাইদ পাগল ছাগল কিছুই নন, বরং বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে তিনি নারীর কাছে মেটিং ভ্যালু কমে যাওয়া একজন হীনমন্য ঈর্ষাপরায়ন পুরুষ – যার শকুনাচরণ ক্রমশঃ রূপ নিয়েছিলো নিষ্ঠুর পুরুষালী সহিংসতায়। সাইদ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সে বুয়েটের পড়ালেখা সে শেষ করতে পারেনি, ইটের ভাঁটি সিএনজি সহ বিভিন্ন ব্যবসায় হয়েছে ব্যর্থ। সম্প্রতি শেয়ারেও খেয়েছে লোকশান। অন্যদিকে রুমানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সফল শিক্ষিকা, ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের শেষ পর্যায়ে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে রুমানার মেটিং ভ্যালুর পারদ ছিলো সাইদের চেয়ে অনেক উর্ধগামী। সত্য হোক মিথ্যে হোক সাথে যোগ হয়েছিল ইরানী যুবক তাহের বিন নাভিদ কেন্দ্রিক কিছু ‘রসালো’ উপাখ্যান। সঙ্গি হারানোর ভয়ে ভীত এবং ঈর্ষান্বিত সাইদ ঝগড়া বিবাদ কলহের স্তর পার হয়ে একদিন নরপশুর মতোই ঝাপিয়ে পড়েছে রুমানার উপর। হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে তার দেহ করে ফেলেছে ক্ষতবিক্ষত। মুক্তমনায় লীন রহমান ‘রুমানা মঞ্জুর ও নরকদর্শন’ শীর্ষক একটি চমৎকার লেখা লিখেছেন[20]। লেখাটিতে সামাজিক বিভিন্ন অসঙ্গতির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় বিধি নিষেধ যেগুলো নারীকে অবদমনের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলো নিয়েও প্রাণবন্ত আলোচনা ছিলো। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। বস্তুত লীনার লেখাটির সাথে সামগ্রিকভাবে একমত হয়েও লেখাটির মন্তব্যে বলতে বাধ্য হয়েছিলাম –
“রুমানার উপর অত্যাচারের পেছনে ধর্মের ব্যাপারটা কতটুকু জড়িত তা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার। ধর্মের কারণে যে অত্যাচার হয় না তা নয়, অনেকই হয়, তবে রুমানার ক্ষেত্রে ধর্মের চেয়েও প্রবলতর ব্যাপারটি হচ্ছে পুরুষালী জিঘাংসা। নারী যখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠে, শিক্ষা দীক্ষা, সংস্কৃতি এবং আর্থিক দিক দিয়ে তার সঙ্গিকে ছাড়িয়ে যায়, বহু পুরুষই তা মেনে নিতে পারে না। উচ্চশিক্ষায় রুমানার সফলতা সাঈদের ক্ষেত্রে তৈরি করেছে এক ধরনের হীনমন্যতা, ঈর্ষা আর জিঘাংসা। তারই শিকার রুমানা”।
আমার বিশ্লেষণ যে ভুল ছিলো না, তা দেখা গিয়েছে জনকন্ঠে (১৮ই জুন ২০১১) প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টে। রিমান্ডের প্রথম দিনেই সাইদ স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো – ‘নিজ হীনম্মন্যতা থেকেই রুমানার চোখ উপড়ে ফেলতে চেয়েছি’।
রুমানা এপিসোডের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এই আলোচনায় আসবে। পুলিশের হাতে দশদিন পর্যন্ত ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা এই তথাকথিত স্বামী রত্নটি রুমানার চরিত্র হননে নেমেছিল। ফাঁদা হয়েছিলো মিথ্যে প্রেমিকের সাথে এক রসালো গল্প। বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাগুলো এগুলো রসালো চাটনির মতোই পরিবেশন করেছে। রাতারাতি কিছু মানুষের সমর্থনও কুড়াতে সক্ষম হলেন সাইদ। অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে শুরু করলেন ‘এক হাতে তালি বাজে না’। নিশ্চয়ই কোন গড়বড় ছিলো। পরে অবশ্য সাইদ নিজেই স্বীকার করেছিল যে, রুমানার পরকীয়ার গল্পগুলো বানানো, মিথ্যা। আমরা আগেও দেখেছি এ ধরণের ক্ষেত্রে পুরুষদের একটাই অস্ত্র থাকে নির্যাতিত মেয়েটিকে যে কোন ভাবে ‘খারাপ মেয়ে’ হিসেবে প্রতিপন্ন করা। সেই যে – ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করেছিলো পুলিশেরা। এর পরদিন পুলিশেরা যুক্তির জাল বুনে বলেছিলো – ইয়াসমিন বেশ্যা, খারাপ মেয়ে। যেন খারাপ মেয়ে প্রমাণ করতে পারলে খুন ধর্ষণ, চোখ খুবলে নেয়া – সব জায়েজ হয়ে যায়! আসলে সত্য কথা হল সাইদ বুঝতে পেরেছিলো খারাপ মেয়ে প্রমাণ করতে পারলে ‘পুরুষতন্ত্র’কে সহজেই হাতে রাখা যায়। ওটাই ছিলো সাইদের ‘সারভাইভাল স্ট্র্যাটিজি’। সেজন্যই আমরা দেখলাম যে, রুমানাকে নিয়ে আগে বলা পরকীয়ার ব্যাপারগুলো সাইদ নিজ মুখে অস্বীকার করার আগ পর্যন্ত বেশ কিছু মানুষের সহানুভূতি আদায় করে নিতে পেরেছিলেন সাইদ। বাজারী পত্রিকা পড়ে তৈরি হওয়া জনমতের একটি বড়ো অংশ সাঈদ দোষ স্বীকারের আগ পর্যন্ত ক্রমাগত সন্দেহের তীর হেনেছে রুমানা মঞ্জুরের দিকে। শুধু পুরুষেরা নয়, এমনকি অনেক নারীও রুমানার প্রতি সন্দেহের ‘অনেক আলামত’ পেয়ে গিয়েছিলেন। এ থেকে কিন্তু বোঝা যায় পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা কেবল পুরুষদেরই আচ্ছন্ন করেনি, দীর্ঘদিনের কালীক পরিক্রমায় এটি অসংখ্য নারীর মানসপটেও রাজত্ব করেছে এবং এখনো করছে ।
হ্যা পরুষতন্ত্রকে কষে গালি দেয়া সহজ, কিন্তু কেন পুরুষতন্ত্রের মানসপট এভাবে বিবর্তিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করা তেমন সহজ নয়। সহজ নয় এটি বিশ্লেষণে আনা যে পরকীয়া শুনলেই কেন জনচেতনার সহানুভূতিতে আঘাত লেগে যায়, সবাই মরিয়া হয়ে উঠে তার বিপরীতটা প্রমাণ করতে। রুমানার কলঙ্কের কাউন্টার হিসেবে রুমানা কত নিষ্কলঙ্ক আর সতী সাধবী মেয়ে সেটা প্রমাণ করতে আবার কিছু পত্রিকা ফলাও করে প্রচার করতে শুরু করল – রুমানা কত মৃদুভাষী ছিলেন, তিনি দিনে পাঁচবেলা নামাজ পড়তেন, মাথায় কাপড় দিয়ে কানাডার প্রতিবেশীদের সাথে দেখা করতেন, সেখানে প্রতিবেশীদের সাথে কত মিষ্টি ব্যবহার তিনি করতেন, কত ভাল রান্না করে তাদের খাওয়াতেন, বিদেশ বিভূইয়ে কত ভালভাবে ইসলামী মতাদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করতেন, অন্য ছেলেদের সাথে তেমন মিশতেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষেই কানাডা থেকে স্বামী সন্তানকে ফোন করার জন্য ছুটে আসতেন, বাইরে একদমই বেরুতেন না ইত্যাদি। এ সবকিছুই আসলে সেই চীরচেনা মানসপটকে তুলে ধরে – নারীকে গড়ে উঠতে হবে পুরুষদের বানানো ছকে -কথায় বার্তায় হয়ে হবে মৃদুভাষী, চলনে বলনে শান্ত সৌম, মাথায় কাপড় টেনে চলতে হবে, স্বামী হীনমন্য কিংবা নপুংশক যাই হোক না কেন, তাকে নিয়েই থাকতে হবে, তার প্রতি থাকতে হবে সদা অনুগত। অনেকটা বাংলা সিনেমার এই গানটার মতো –
‘আমি তোমার বধু, তুমি আমার স্বামী
খোদার পরে তোমার আসন, বড় বলে জানি …
httpv://www.youtube.com/watch?v=1bSGPwVMn9E
পরকীয়া তো দূরের কথা, কোন ধরণের অবিশ্বস্ততার আলামত পেলে খুন জখম কিংবা চোখ খুবলে নেয়ার শাস্তিও সামাজিকভাবে লঘু হয়ে যায়। কারণ পুরুষেরা স্ত্রীদের অবিশ্বস্ততাকে প্রজননগতভাবে অধিকতর মূল্যবান বলে মনে করে। যেহেতু পিতৃতন্ত্রের মূল লক্ষ্য থাকে ‘সুনিশ্চিত পিতৃত্বে সন্তান উৎপাদন’ সেজন্য, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে জৈবিক এবং সামাজিক কারণেই স্ত্রীর পরকীয়াকে ‘হুমকি’ হিসেবে দেখা হয়। স্ত্রী পরকীয়ার ঘটনা প্রকাশিত হয়ে গেলে স্বামী ক্ষতিগ্রস্থ হয় মান সম্মান, সামাজিক পদপর্যাদা সহ বহু কিছুতেই। তিনি সমাজে পরিণত হন ইয়ার্কি ফাজলামোর বিষয়ে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, অনেক দেশের জন্যই সত্য। এমনকি পাঠকেরা জেনে অবাক হবেন যে, ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকার টেক্সাসে এমন আইন চালু ছিল যে, অবিশ্বস্ততার আলামত পেয়ে স্বামী যদি স্ত্রীকে হত্যা করে তবে সেটি কোন অপরাধ হিসেবে গন্য করা হবে না। প্রাচীন রোমে এমন আইন চালু ছিল যে, যদি স্বামীর নিজ গৃহে পরকীয়া বা ব্যাভিচারের ঘটনা ঘটে, তবে স্বামী তার অবিশ্বস্ত স্ত্রী এবং তার প্রেমিকাকে হত্যা করতে পারবেন; ইউরোপের অনেক দেশে এখনো সেসব আইনের কিছু প্রতিফলন দেখা যায়[21]। তিভ, সোগা, গিসু, নয়োরো, লুয়িয়া, লুয়ো প্রভৃতি আফ্রিকান রাজ্যে হত্যাকান্ডের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে, সেখানে ৪৬ শতাংশ হত্যাকাণ্ডই সংগঠিত হয় যৌনতার প্রতারণা, অবিশ্বস্ততা প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে। একইভাবে, সুদান উগান্ডা এবং ভারতেও যৌন ঈর্ষা বা ‘সেক্সুয়াল জেলাসি’ হত্যাকান্ড সংগঠিত হবার মূল কারণ বলে জানা গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যখনই স্বামী কোন পরকীয়ার আলামত পেয়েছে, কিংবা স্ত্রী যখন স্বামীকে ত্যাগ করার হুমকি দিয়েছে তখনই সেই হত্যাকাণ্ডগুলো সংগঠিত হয়েছে। সাইদের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি স্বামীর সাথে বেশ কিছুদিন ধরেই রুমানার ঝগড়াঝাটি চলছিলে। কলহের এক পর্যায়ে রুমানা উত্তেজিত হয়ে স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে অপারগতাও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর থেকেই মুলতঃ রুমানাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সাইদ। ২১শে মে বেধরক মারধোরের পর গলা টিপে রুমানাকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। এ সময় রুমানার চিৎকারে বাড়ির সবাই এগিয়ে গেলে সে যাত্রা পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। পরে পরিবারের হস্তক্ষেপে তা মিটমাট হয়। তারপর কিছুদিন পরে রুমানার মা মেহেরপুরে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেলে ৫ ই জুন আবারো হত্যার চেষ্টা চালায়। সে দিন সাইদ রুমানাকে ঘরে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এ সময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রুমানার গলা টিপে ধরে। রুমানা সজোরে আঘাত করে নিজেকে মুক্ত করে ফেলেন। এ সময় সাইদের চোখের চশমা পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে রুমানাকে বীভৎসভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাল, নাক, মুখসহ স্পর্শকাতর স্থানে কামড়াতে থাকে। সাইদ রুমানার নাকে কামড় দিয়ে ছিড়ে ফেলে। চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে …
হ্যা, আমরা সবাই সাইদের কৃতকর্মের শাস্তি চাই। কোন সুস্থ মাথার মানুষই প্রত্যাশা করবেন না যে, এ ধরণের নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে সাইদ অবলীলায় মুক্তি পেয়ে যাক, আর তৈরি করুক আরেকটি ভবিষ্যৎ-অপরাধের সুস্থিত ক্ষেত্র। বরং, তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিই কাম্য। কিন্তু সমাজে যখন নারী নির্যাতন প্রকট আকার ধারন করে, যখন নৃশংসভাবে একটি নারীর গাল নাক কামড়ে জখম করা হয়, রাতারাতি চোখ খুবলে নেয়া হয়, এর পেছনের মনস্তাত্বিক কারণগুলোও আমাদের খুঁজে বের করা জরুরী। আমাদের বোঝা দরকার কোন পরিস্থিতিতে সাইদের মত লোকজনের আচরণ এরকম বিপজ্জনক এবং নৃশংস হয়ে উঠতে পারে। আমাদের অস্তিত্বের জন্যই কিন্তু সেগুলো জেনে রাখা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরির প্রত্যাশাতেই এটা দরকার।
চলবে মনে হচ্ছে…
:line:
তথ্যসূত্র :
[1] David M. Buss , The Dangerous Passion: Why Jealousy Is As Necessary As Love and Sex, Free Press, 2000
[2] Who’s your Daddy? Is it true 10-15% of children in modern society were not sired by their putative fathers? http://www.straightdope.com/columns/read/2730/whos-your-daddy; Also see – MacIntyre S., A. Sooman., Non-paternity and prenatal genetic screening. Lancet 338:869-871, 1991; R.R. Baker & M.A. Bellis, Human Sperm Competition: Copulation, Masturbation and Infidelity, Springer,1999
[3] কাকোল্ড্রি বা কোকিলাচরণ শব্দটি এসেছে কোকিলের অন্য পাখির বাসায় ডিম পেড়ে ন্য পাখিদের সাথে প্রতারণা করার উপমা থেকে। কোকিলেরা এভাবে অন্য পাখির সাথে প্রতারণা করে ডিমে তা দেয়া কিংবা সন্তান লালন পালনের হাত থেকে অব্যহতি পায়। মানুষের ক্ষেত্রে কোকিলাচরণের মাধ্যমে অন্য পুরুষের প্রণয়াসক্ত স্ত্রীটি স্বামীর নিজের সন্তান হিসবে প্রতারিত করে সন্তান লালন পালনে প্রলুব্ধ করে।
[4] Kermyt G. Anderson, Reports : How Well Does Paternity Confidence Match Actual Paternity? Evidence from Worldwide Nonpaternity Rates, Current Anthropology 48(3):511-518.
[5] David Buss, Human Mating Strategies. Samfundsokonomen, 4, 47-58, 2002.
[6] Alan S. Miller and Satoshi Kanazawa, Why Beautiful People Have More Daughters: From Dating, Shopping, and Praying to Going to War and Becoming a Billionaire– Two Evolutionary Psychologists Explain Why We Do What We Do, Perigee Trade; Reprint edition, 2008
[7] T.R. Birkhead, and F.M. Hunter, Mechanisms of sperm competition. Trends in Ecology and Evolution. 5:48-52,1990.
[8] David M. Buss, The Evolution Of Desire – Revised 4th Edition, Basic Books, 2003
[9] Buss, D.M., Larsen, R.J., Westen, D., & Semmelroth, J. (1992). Sex differences in jealousy: Evolution, physiology, and psychology. Psychological Science , 3:251-5 দ্রষ্টব্য।
[10] M W Teismann, D L Mosher, Jealous conflict in dating couples, Psychol Rep. 1978 Jun;42(3 Pt 2):1211-6
[11] J. L. Francis, Toward the management of hetosexual jealousy, Journal of Marriage and Family, 10, 61-69, 1977
[12] David M. Buss , The Dangerous Passion: Why Jealousy Is As Necessary As Love and Sex, Free Press, 2000
[13] উদাহরণ হিসেবে দ্রষ্টব্য নীচের গবেষণাপত্রগুলো –
D.C. Geary, M. Rumsey, C.C. Bow-Thomas, & Hoard, M.K. Sexual jealousy as a facultative trait: Evidence from the pattern of sex differences in adults from China and the United States. Ethology and Sociobiology, 16, 355-383, 1995
M.W Wiederman,., & E. Kendall, Evolution, gender, and sexual jealousy: Investigation with a sample from Sweden. Evolution and Human Behavior, 20, 121-128, 1999.
[14] David M. Buss, The Evolution Of Desire – Revised 4th Edition, Basic Books, 2003
[15] David J. Buller, Adapting Minds: Evolutionary Psychology and the Persistent Quest for Human Nature, The MIT Press; 2005.
[16] David J. Buller, Sex, Jealousy & Violence: A Skeptical Look at Evolutionary Psychology, Skeptic, volume 12 number 1, On line: http://www.skeptic.com/reading_room/sex-jealousy-and-violence/
[17] এ ব্যাপারটি সঙ্গী নির্বাচনের মেটিং স্ট্র্যাটিজির সাথে জড়িত। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের সমীক্ষায় দেখা গেছে সঙ্গী নির্বাচনের সময় সময় ছেলেরা সঙ্গীর দয়া, সততা, বুদ্ধিমত্তা প্রভৃতির গুণাবলীর পাশাপাশি প্রত্যাশা করে তারুন্য এবং সৌন্দর্য। অন্যদিকে মেয়ারাও গড়পরতা ছেলেদের কাছ থেকে দয়া, বুদ্ধিমত্তা আশা করে ঠিকই, পাশাপাশি সঙ্গীর কাছ থেকে আশা করে ধন সম্পদ আর স্ট্যাটাস। এনিয়ে আলোচনা করা হয়েছে পরবর্তী অধ্যায়ে।
[18] R. R. Baker, , & , M. A. Bellis, Human sperm competition: copulation, masturbation, and infidelity. London: Chapman & Hall,1995.
[19] P. Easteal, Killing the Beloved: Homicide Between Adult Sexual Intimates, AIC, 1993.
[20] লীনা রহমান, রুমানা মঞ্জুর ও নরকদর্শন, জুন ২০th, ২০১১, মুক্তমনা
[21] Margo Wilson and Martin Daly, Homicide, Aldine Transaction, 1988
সখি, ভালবাসা কারে কয়? <আগের পর্ব : পর্ব-১ । পর্ব -২ । পর্ব-৩| পর্ব-৪| পর্ব-৫ | পর্ব-৬>
অভিজিৎ দা @ ডোরোথি স্ট্র্যাটেন এর কথা আমি অনেক আগের বেগম ম্যাগাজিন এ পড়েছিলাম। খুব বিশদ রিপোর্ট ছিল। ছবিগুলো মর্মান্তিক। বহু দিন পর আবার ডরথি এর কথা পড়লাম।
লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে,আমি অনেক কিছুই জানি না,কিন্তু আপনার লেখা বেশ বুঝতে পারি।
চমৎকার লাগল।অসাধারন একটি বিশ্লেষণী পোষ্ট।
সেক্সুয়াল জেলাসি নিয়ে কিছুটা ধারনা ছিল।তবে এই লেখাটি পড়ে আমার ধারনা অনেকখানি স্পষ্টতা পেল।ধন্যবাদ অভিদা কে।
তবে রুমানার এইরকম সহনশীল আচরনের পিছনের কারনটির উপর তেমন আলোকপাত করা হয়নি বলে আমার মনে হয়।
অধ্যাপক বুলারের অভিমতকে আমার বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে।
বিবর্তন নিয়ে আমার জ্ঞান আপনার মত বিশাল নয়।তবে আমি যতটুকু জানি বিবর্তন আমাদের আচার ব্যবহার ও প্রয়োগের উপর নির্ভর করে।
সেক্ষেত্রে ‘সেক্সুয়াল জেলাসি’ থেকে মুক্তির আদৌ কি কোনো পথ আছে?
@রাহনুমা রাখী,
ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। হ্যা বুলারের সমালোচনাগুলোকে আমারো বেশ শক্তিশালী আর যৌক্তিক মনে হয়। তবে বুলারের সমালোচনাগুলোরও আবার উত্তর দিয়েছেন বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা, তবে সেটা আবার ভিন্ন প্রসংগ।
এ নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে উপরে, আমার আল্লাচালাইনা, সফিক এবং অপার্থিবের উত্তর গুলো দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ আবারো মন্তব্যের জন্য।
মাঝে মাঝে মেয়েদেরকেও আক্রমনাত্নক আচরণ করতে দেখা যায়। কখনো কখনো তাদেরকে স্বামী অথবা প্রেমিককে হত্যা করতে দেখা যায়। কখনো কখনো তারা আত্নঘাতিনীও হ’য়ে থাকে।একবার “ক্রাইম পেট্রল” নামে একটি ইন্ডিয়ান রিয়েলিটি শোতে দেখেছিলাম, এক মহিলা পরকীয়া প্রেমে পড়ে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজ হাতে তার পাঁচ বছরের শিশু কন্যাকে হত্যা করেছে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান এ ব্যাপারে কী বলে?
@তামান্না ঝুমু,
আমি কিন্তু লেখার শুরুতেই ইঙ্গিত করেছি যে, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের ফলাফলগুলো পারিসাংখ্যিক সীমায় বিস্তৃত, কারও ক্ষেত্রে কম, কারও ক্ষেত্রে বা বেশি, এখানে ‘ওয়ান টু ওয়ান রিলেশনশিপ’ খোঁজার অবকাশ নেই। যেমন, বলা হয়েছে – পুরুষদের যৌন ঈর্ষা বা সেক্সুয়াল জেলাসি নারীর চেয়ে বেশি, তার মানে কিন্তু এই নয় যে এমন কোন পুরুষ পাওয়া যাবে না যার সেক্সুয়াল জেলাসি গড়পড়তা নারীর চেয়ে কম হতে পারে। একটা সাধারণ উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা বুঝবেন। যেমন, আপনি জানেন ছেলেদের গড়পরতা উচ্চতা মেয়েদের উচ্চতার চেয়ে বেশি, কিন্তু অবশ্যই এমন অনেকে মেয়েই আছে যে, যাদের উচ্চতা আমার উচ্চতার চেয়ে বেশি হতেই পারে। আমরা মূলতঃ বিবর্তনের ফলাফলের উল্লেখ করি তখন গড়পরতা ট্রেন্ডের কথাই বলি।
অধ্যাপক বাসের ঈর্ষা সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফলটিই দেখুন আরেকবার। প্রায় ৮৩ শতাংস নারীর ক্ষেত্রে ইমোশনাল জেলাসির সন্ধান পাওয়া গেছে, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটি পাওয়া গেছে শতকরা ৪০ ভাগ। তারমানে গড়পরতা কম হলেও অন্ততঃ শতকরা ৪০ জনের ক্ষেত্রে এমন পুরুষ পাওয়া যাবে যারা ইমশনালি জেলাস, সেক্সুয়ালি নয়। আবার শতকরা ৬০ ভাগ ছেলে মত দিয়েছে তার সঙ্গী তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুললে সেটা তাকে চরম ঈর্ষাকাতর করে ফেলবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা পাওয়া গেছে মাত্র ১৭ ভাগ। তারমানে কম হলেও ১৭ ভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রে সেক্সুয়ালি জেলাসির সন্ধান পাওয়া গেছে। কাজেই সে সমস্ত মেয়েরা যৌন ঈর্ষার বশর্বর্তী হয়ে হত্যা করতে পারবে না তা নয়। আমি ক্লারা হ্যারিস নামের এক মহিলার কথা পড়েছিলাম যিনি তার স্বামীর এডাল্ট্রির কথা জানতে পেরে গাড়ি চালিয়ে অফিসে গিয়ে গাড়ি চাপা দিয়ে তার স্বামীকে হত্যা করেছিলেন (এখানে দেখুন) । কিছুদিন আগে পত্রিকায় এসেছিল পরকীয়ার কারণে নিজের সন্তান সামিউলকেও হত্যা করেছিল এক মা। এগুলো সব সমাজেই ঘটে, কিন্তু কম পরিমাণে ঘটে। কারণ, মেয়েদের মধ্যে এ সংক্রান্ত জেলাসির প্রতিক্রিয়া কিংবা সহিংসতা গড়পরতা কম, কিন্তু তা বলে কখনোই একেবারে শুন্য নয়।
@অভিজিৎ,
বুঝতে পেরেছি, ধন্যবাদ বুঝিয়ে বলার জন্যে।
অভিজিৎদার লেখায় মন্তব্য দিয়েই মুক্তমনায় বউনি করি। 🙂
প্রথম কমেন্টে বেশি কিছু লিখছি না, সবগুলো মন্তব্যও পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে এই সিরিজটা দারুণ লাগছে, সেটা তো বলতেই হবে।
তবে একটাই ‘জ্ঞানগর্ভ’ কথা বলি, যেহেতু সেই দিকটা লেখায় দেখলাম না (পরে আসবে হয়ত)। এই ঈর্ষা থেকে, যৌনসঙ্গী/জীবনসঙ্গীকে সুপথে রাখার জন্য যেসব ভয়ডর দেখানো হয়, তার একটা অংশই কিন্তু ক্রমে ধর্মীয় অনুশাসনে রূপ নিয়েছে।
আর কথায় যে বলে, মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু, তারাই নিজের শ্রেণীর অন্যদের বিধিনিষেধের বাঁধন পরিয়ে রাখতে চায়, তার পেছনেও হয়ত এই থিওরি কিছুটা আছে – সব মেয়ে যদি তাদের নিজের নিজের স্বামীর প্রতিই কেবল অনুগত হয়, তাহলে আমার স্বামীর অন্য মেয়েদের কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা কম, এইটা হয়ত একটা মোটিভেশন যা থেকে বেশি ‘আধুনিকা’দের ‘ঘরোয়া’ মেয়েরা নিন্দা করে।
@কৌস্তুভ,
(Y) মুক্তমনায় বউনি করার শুভেচ্ছা।
কৌস্তভ দাদার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম 😛
@অভিজিৎদা,
“স্বর্গ হইতে কিচ্ছু তবু পুষ্পবৃষ্টি হইল না?” 😛
আপনাকে আমার অনেকই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কষ্ট করে আইডি বানিয়ে এখানে ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে, কিন্তু দেব না-ই ভাবছি, কারণ লং-টার্মে আরেকটা নেশা ধরালেন বলে মনে হচ্ছে :))
বন্যাপা,
আমি বলতে চেয়েছিলাম- বেশীর ভাগ ডিভোর্স ঘটে স্বল্প সময়ের সমস্যা সমাধানে, ধরুন- পরকীয়া হয়তো একটা কারণ। এটাকে কি স্বল্প সময়ের একটা সমস্যা হিসেবে দেখা যায়না? ডিভোর্সের আগে এসব বিষয়গুলো নিয়ে শুধু নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ফেসাদ না করে অভিভাবক, তথা সামাজিক কোন সংস্থা, প্রয়োজনে চিকিৎসা ইত্যাদির সাহায্য নিলে হয়তো বিষয়টা ঠিকই মিটমাট করা যায়। পরকীয়ার মত বিষয়টা কি সর্ট টার্ম সমস্যা বলা যায় না, নাকি কেউ একবার পরকীয়া করলেই সে চিরতরে নষ্ট হয়ে গেল? একগুঁয়েমি , জেদ ইত্যাদিই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ডিভোর্সের কারণ মনে হয়। অথচ ডিভোর্সের ফলে মনোদৈহিক ভাবে, পারিবারিক ( সন্তান থাকলে) তথা সামাজিক ভাবে অনেক ত্যাগই স্বীকার করতে হয়। শুধু পরকীয়া না, তুচ্ছ টাকা পয়সা নিয়ে, পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মনোমানিল্য নিয়ে ইত্যাদি অনেক বিষয়ই সর্ট টার্ম সমস্যা যা ডিভোর্স পরবর্তী সমস্যার মত হয়তো এত জটিল না অথচ এসব বিষয় নিয়েও ডিভোর্স হচ্ছে।
তবে সব ডিভোর্স যে এরকমই তা বলছি না, আবার আমি এও বলছিনা কোন কোন ক্ষেত্রে ডিভোর্সের প্রয়োজন নায়।
সমাজে এত এত উদাহরণ থাকতে ডাটার কি খুব প্রয়োজন আছে? তবে আপনার যুক্তি এর উল্টোটা হলে অথবা ডাটা থাকলে দয়া করে দিতে পারেন।
@হেলাল,
আসলে ব্যাপারটা এতো সোজা না, হেলাল। আমি জানি না আপনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামে গঞ্জে ঘটা – তালাক, তালাক, তালাক বলে তিন তালাক ধ্বনি দিয়ে ডিভোর্সের কথা বলছেন কিনা, তবে আধুনিক বিশ্বে ডিভোর্স মানে স্বল্প সময়ের হিসেব নয় কিন্তু। মুলতঃ যখন কোন দম্পতি ডিভোর্সের ফাইল করতে যায়, তাদের প্রথমে কোর্টের নির্দেশে দীর্ঘ সময় ধরে (প্রায় এক বছরের মতো) সেপারেশনে থাকতে হয়, তারপর আরো বছর খানেক ধরে কাঠখড় পুড়িয়ে ডিভোর্স করতে হয়। এর মধ্যে চাইল্ড কাস্টোডি, হ্যানো ত্যানো যুক্ত হলে আর কথাই নাই। ফলে ব্যাপারটা আপনি যেভাবে স্বল্প সময়ে রাগের মাথায় ডিভোর্স করার কথা বলছেন – তা পাশ্চাত্য আইনের প্রেক্ষাপটে অন্ততঃ সঠিক নয়। সেখানে যারা বিবাহ বিচ্ছেদে যান, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সব কিছু চিন্তা ভাবনা করেই করেন, দীর্ঘমেয়াদী সময় ধরেই সব কিছু করেন। এমনকি সেপারেশনে থাকাকালীন সময়ে ম্যারেজ কাউন্সিলরের কাছেও যান, এর মধ্যে ফেরার সুযোগ থাকলে, ফিরতে তো কোন বাধা নেই। তারপরেও যখন ডিভোর্স হচ্ছে, তখন বহুক্ষেত্রেই যৌক্তিক কারণেই বিয়ে হচ্ছে বলে ধরে নিতে হবে। অন্ততঃ আমার অবসার্ভেশন তাই। তবে হ্যা, পশ্চিমে মেয়েরা রুমানার মত দু চোখ খুবলে নেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে ডিভোর্স করে না, এটা নিশ্চিত।
জীবন মাত্রই বিবাহিত কিংবা তালাকপ্রাপ্ত(প্রাপ্তা) অথবা যুগলবন্দী হতে হবে এমন কোন কথা নেই । পৃথিবীতে দাম্পত্য অথবা যুগলবন্দী জীবনের বাইরেও বহু মানুষ স্বাচ্ছন্দে একক জীবন যাপন করছেন এবং তারা দাম্পত্য জীবনকে আক্কেল দাঁতের ব্যথার মতই মিস করেন । তাদের সংখ্যা হয়তো বা যে সকল দেশে “মধ্যয়ুগীয় সংস্কৃতি” চালু রয়েছে সেখানে নেহায়েৎ কম , কিন্তু গনতান্ত্রিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান। একজন মানুষ যখন একা স্বাচ্ছন্দ জীবন যাপন করছেন , তখন তার কি এমন দায় পড়েছে যে খাল কেটে কুমীর আমদানী করতে হবে ? এসব সহজ বিষয় বুঝতে বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই , লবন জ্ঞানই যথেষ্ঠ।
প্রতিষেধকের চাইতে প্রতিরোধক অনেক বেশী কার্যকরী । একজন মানুষকে কেন বিয়ে শাদী , সম্পর্ক বা পার্টনারশীপের নামে আরেকজনকে গলায় বেধে নিয়ে সারাদিন ঘুরতে হবে – এই প্রশ্নের উত্তর সবার আগে খোঁজা জরুরী।
@সংশপ্তক, (Y)
@সংশপ্তক,
মানুষ সবসময় চাইছে সমাজে থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে যেটা আমি একলা একলা মনপুরা দ্বীপে বসে পেতাম না। এর এই থেকেই মনে হয় পার্টনারশীপ ব্যাখ্যা করা যায়, ধরুন একটা গ্রুপ আয়ন যারা কাছাকাছি থাকতে চায়, এখন যদি a,b,c,d,e,f,g,h নামের অনুগুলো কাছাকাছি হতে গিয়ে “a” অবশ্যই খুব কাছাকাছি থাকবে অন্য আরো একটা বা দুটো অনুর। একই কথা অন্য অনুগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, আর সবচেয়ে পাশাপাশি থাকা অনুগুলোই পরিচিত হচ্ছে একে অপরের পার্টনার হিসেবে।
আমি খুব সাধারনভাবে যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো, সবগুলো অনুই যদি পার্টনার ওমিট করে তাহলে কিন্তু কোন ক্লাস্টারই তৈরী হবে না। আর এই পার্টনার হিসেবে প্রকৃতি আবার দিয়েছে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে, এর মূল উপযোগীতা মনে হয় বংশবৃদ্ধি।
এখন যেটা আমাকে ভাবায়, ধরুন ক্লাষ্টারে “a” যদিও “c” ও “e” দুইটা বিপরীত লিঙ্গের কাছাকাছি আছে কিন্তু “a” শুধুমাত্র “c” কেই কেন বেছে নিচ্ছে? তবে সরল উত্তর অভিজিৎ ভাইয়ের আগের পোষ্টগুলোতেই আছে মনে হচ্ছে।
@টেকি সাফি,
নিচ্ছে না । d , fꝾ . pĦ বা qx এর আবির্ভাব সময়ের ব্যপার মাত্র এবং তা random ভাবেই ঘটে যদি পর্যবেক্ষনের জন্য যথেষ্ট সময় দেয়া যায়। এখানে অনুঘটকের সংখ্যা অসীম।
চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা আর সেই সাথে আপনার বক্তব্য। :guru:
মন্তব্যগুলোও উপভোগ্য। (Y)
তবে…
ঠিক মানতে পারছিলাম না – ‘সেক্সুয়াল’ জেলাসি আর ‘ইমোশনাল’ জেলাসিকে এমন মোটা দাগে আলাদা করা যায় কি? তাইতো [9] নং রেফারেন্সটা একটু ঘেটে দেখছিলাম। লেখকগণ উপসংহারে এ গবেষণার সীমাবদ্ধতার যেসব দিক দেখিয়েছেন সেখান থেকেই উদ্ধৃত করছি –
ইমোশনাল আর সেক্সুয়াল জেলাসির রসায়ন একটা অন্যতম বিচার্য বিষয় হতে পারে। আমার কাছেতো মনে হয় – ইমোশনাল থেকে সেক্সুয়াল সম্পর্কে জড়ানোর হার উল্টোটার চেয়ে বেশি। তাই ইমোশনাল জেলাসিকে বরং তীব্রতর জেলাসি মনে হয়। এ ব্যাপারে অন্যদের মতামত জানতে আগ্রহী।
@প্রতিফলন,
আপনার বেশ কিছু চমৎকার মন্তব্য পড়লাম এ লেখায়। আগে উত্তর দিতে পারিনি বলে দুঃখিত। আপনি যে রেফারেন্স খুঁজে নিয়ে বাসের পেপারটা পড়েছেন সেটা খুবই অনুপ্রেরণাময়। হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন, সেক্সুয়াল’ জেলাসি আর ‘ইমোশনাল’ জেলাসিকে সব সময় যে মোটা দাগে আলাদা করা যায় তা বোধ হয় নয়। এই সংক্রান্ত গবেষণাগুলোর বেশিরভাগই থট এক্সপেরিমেন্টের আশ্রয় নিয়ে সমীক্ষাগুলো চালিয়েছে। এর পদ্ধগত সমালোচনা হাজির করেছেন ডেভিড বুলার যে আমার লেখায় আমি বলেছি। তারপরেও আমি মনে করি, নারীরা যখন গর্ভধারণের পুরো পক্রিয়া নিজেদের মধ্যে ধারণ করে, আর কোন পুরুষই শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে নিজের পিতৃত্ব প্রমাণ করতে পারে না (অন্ততঃ আধুনিক ডিএনএ টেস্টগুলো আসার আগে পারে নাই), তাই পরকীয়া আর কোকিলাচরণ সংক্রান্ত ‘এডাপ্টিভ সমস্যা’গুলো মোকাবেলা করতে পুরুষেরা অধিকতর বেশি যৌন ঈর্ষায় ভুগেছে, এটা হয়তো অত্যুক্তি নয়।
মুক্তমনায় আরো লিখুন।
@অভিজিৎ,
যতদিন কোন কিছু অভ্রান্তভাবে প্রমাণিত না হবে, ততদিন মনে হয় ‘হয়তো’ আর ‘মনে হয়’ এর উপরেই চলতে হবে। 🙂
আপনার লেখা আসলেই সুন্দর। সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
@বিপ্লবদা,
সম্পূর্ণ একমত। ডিভোর্সের ক্ষেত্রে পারিবারিক ফ্যাক্টরগুলোকে নির্দিষ্ট কোন ফ্রেমে ভাগ করা যায়না। বেশীর ভাগ ডিভোর্স ঘটে স্বল্প সময়ের সমস্যা সমাধানে ( হয়তো বিকল্প সমাধানগুলো চেষ্টাই করা হয়না, যেমন- কোন মধ্যস্থতাকারির মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা, কিছুদিন দুরে থাকা ,সামাজিক কোন সংস্থার সাহায্য এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা ইত্যাদি।) কিন্তু দেখা যায় এতে দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা ডেকে আনে।
ডিভোর্সি পুরুষ মহিলাদের মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর উপর কোন জরিপ আছে কিনা জানা নায়, তবে বাহ্যিক চোখে যা দেখা যায়, ডিভোর্সের পরের অবস্থা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে করুণই হয়।
পারিবারিক নির্যাতনকে পারিবারিক তথা সামাজিক রোগ হিসেবে দেখলেই সমস্যা সমাধান করার চিন্তা মাথায় আসবে।
@হেলাল,
আপনার এই মন্তব্যটার পিছনের ডাটাগুলো কি একটু দিতে পারবেন এখানে?
প্রেম সংক্রান্ত ব্যপারে বৈজ্ঞানিক সূত্রর ফর্মেশন আদৌ সম্ভব কি?
মেটিং ভ্যালু দেখে মেয়েরা প্রেমে পড়ে একটু বয়স কালে-কম বয়সে অধিকাংশ মেয়েদের প্রেমে পড়ার মূল কারন “ছেলেটির টাইম ইনভেস্টমেন্ট”-মেটিং এর ক্ষেত্রে রূপের ভূমিকা আছে তবে সম্পদের ভূমিকাটা খুব পরিষ্কার না।
বন্যার ডিভোর্সের ব্যপারের বক্তব্য যেটা রেখেছে-সেক্ষেত্রেও সূত্রের ফর্মেশন সম্ভব না। সবটাই পর্যবেক্ষণ। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ডিভোর্সের অন্যতম কারন। আর আমেরিকান সমাজে ডিভোর্স একদম স্টিগমালেস তাও না- ডিভোর্সের ইতিহাস না থাকলে এখানেও ফামিলি ওরিয়েন্টেড নেবারহুডে অনেক বেশী গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায় বলেই আমার ধারনা-যদিও ডীভোর্সী ফামিলিগুলিও ছেলে মেয়েদের সমান ভাল ভাবেই মানুষ করছে। ডিভোর্স না করলে, লোকটা স্টেবল, নির্ভরযোগ্য এমন ধারনা চাকরিদাতা অনেক সময় পোষন করে-প্রতিবেশীরাও করে। ছেলের স্কুলে ফাদার ডে তে গিয়ে ডিভোর্সী বাপেদের করুণ অবস্থা দেখে ডিভোর্স নিয়ে খুব উচ্চ ধারনা পোষণ করার কারন দেখি না। ডীভোর্সী কলিগদের দেখেও একই মতামত দেব। প্রাণ সংশয় না থাকলে বা খুব অত্যচারী না হলে বা ডিভিশন অব লেবার না মানলে-এই রকম একস্ট্রীম কেস ছারা ডিভোর্স করা উচিত না। মিটমাট করাই ভাল।
সমাজ খুব জটিল সিস্টেম-এখানে সূত্রের ফর্মেশন সম্ভব-তবে সেগুলিকে ধ্রুব সত্য বলে না ভাবাই ভাল।
@বিপ্লব পাল, আমি এখানে সূত্রের ফর্মেশনের কথা যেরকম বলছিলাম না, তেমনি কোন ধ্রুব সত্য নিয়েও মন্তব্য করছিলাম না। ফরিদ ভাইয়ের কথার পরিপ্রেক্ষিতে খুব সোজা একটা কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, সমাজে এই ডিভোর্সের ব্যাপারটা গ্রহণযোগ্য না হলে এই ধরণের নিপীড়ণকারী অবস্থাগুলোতেও মেয়েরা বেড়িয়ে আসতে পারবে না এবং সংখ্যাগতভাবে এখনো কম হলেও, অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের দেশের মেয়েরাও ক্রমশঃ এ ব্যাপারে বোল্ড পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এখানে ‘অধিকার’ নিয়ে কথা হচ্ছিল, ডিভোর্স করা ঠিক কী ঠিক নয়, কোন সূত্র আছে কী নেই তা নিয়ে নয়। তবে একটা কথা আমি খুব দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি যে, অধিকারটা নিশ্চিত হলে কে কোন অবস্থায় ডিভোর্স করবে সেটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় হওয়া উচিত, আমার বা তোমার ‘উচিত’ কী ‘অনুচিত’ বলার কোন অধিকার এখানে নেই। আর খুব কাছে থেকে দেখা বহু অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতেই বলছি যে, আমেরিকায় চাকরি এবং সামজিকভাবে ডিভোর্সিদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও আমি তোমার সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত নই, কিন্তু সে আলোচনায় এখন আর ঢুকতে চাই না।
@বন্যা আহমেদ,
এগুলো সংজ্ঞায়িত করা মুশকিল-একই জিনিস কারুর কাছে গ্রহনযোগ্য বা অগ্রহণযোগ্য হতে পারে। সুতরাং সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ন। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে তথ্য থেকে এটাও দেখা যাচ্ছে চীনেরা সব থেকে ভাল ছেলে মানুষ করার ক্ষেত্রে-এবং সেক্ষেত্রে ফামিলি ভ্যালুর একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে।
জীবনের পরম উদ্দেশ্য বলে কিছু থাকতে পারে না-তাই যদি ধরেই নিয়ে জৈবিক উদ্দেশ্য বা জীনের টিকে থাকার প্রেরণাটা ধরেই জীবন দর্শন এগোবে-সেক্ষেত্রে পেরেন্টিং এর ক্ষেত্রে সব থেকে সফল জাতিগোষ্ঠি চীনারা বা জাপানীরা ভীষন ভাবেই অটুট ফামিলিতেই আস্থা রাখে।
আমি নানান ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বুঝেছি আমেরিকাতেও ডিভোর্স না করে থাকতে পারলে স্যোশাল ইউটিলিটি ভ্যালু বাড়ে। মনে রাখতে হবে লোকের ধর্ম চারন থেকে সব আচরনের বিবর্তনের পেছনে স্যোশাল ইউটিলিটির বিশাল ভ্যালু আছে। আমি একটা সার্ভে থেকে দেখছিলাম, আমেরিকার যেখানে যত ভাল স্কুল ডিস্ট্রিক্ট-সেখানে ডিভোর্স রেট জাতীয় গড়ের থেকে অনেক কম। আমি এলিকট সিটিতে থাকি যেটি আমেরিকার অন্যতম ভাল স্কুল শহর ( জাতীয় বিচারে আগের বার দ্বিতীয় এবং পঞ্ছম ) -এখানে ডিভোর্সি ফামিলি আমার খুব বেশী চোখে পড়ে না-অথচ ক্যালিফোর্নিয়াতে ডিভোর্সী লোকজন খুব সাধারন ব্যাপার ছিল। ব্যাপার স্যাপার দেখেশুনে আমার যা মনে হয়েছে ফামিলি ভায়োলেন্স এবং ডিভোর্সের একটা মূল কারন যদি অর্থনীতি হয়-আরেকটা হচ্ছে বাবা মায়েরা ছেলে মেয়েদের ব্যাপারে ফোকাসড থাকে না-নিজেদের ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া কামনাকে গুরুত্ব দেয় বেশী। অর্থাৎ রিপ্রোডাক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট এ আগ্রহী কম। যে সব দম্পতি ছেলে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে খুব বেশী সচেতন, সেখানে ঈর্ষা, পরকীয়া বা ডিভোর্সের পরিমান কমে। ডিভোর্স রেট বেড়ে যাওয়ার পেছনে পিতা মাতার ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার বড় ভূমিকা আছে।
@বিপ্লব পাল, আলোচনাটাকে কেমন যেন অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি খুব একটা নির্দিষ্ট অবস্থা এবং প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সমাজে মেয়েদের ‘স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার পিছনে কী কী প্রতিবন্ধকতা কাজ করে সেই প্রসঙ্গে ডিভোর্সের কথাটা বলেছিলাম। তুমি এখানে যা টেনে নিয়ে আসছো সেটা একেবারেই অন্য আলোচনা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া সব ধারণা সবসময় নাও ঠিক হতে পারে, কারণ এখানে অনেক ধরণের ভেরিয়েবল কাজ করে। কিন্তু আগেও বলেছি, আবারো বলছি, সেই বিতর্ক বা আলোচনাগুলো এখানে টেনে আনার কোন কারণ দেখছি না বলে আপাতত এই আলোচনায় ক্ষ্যামা দিলাম।
@বন্যা আহমেদ,
ডিভোর্স এই প্রবন্ধের সাথে ভীষন ভাবে যুক্ত।
কারণ অভিজিতের তত্ত্বের সব বিশ্লেষণের মূলে আছে রিপ্রোডাক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট।
এক্ষেত্রে ডীভোর্সের কেসটা ফলসিফিকেশন অব থিওরী।
একজন পুরুষের ডিভোর্স করবে কেন? ডীভোর্স পুরুষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রিপ্রোডাক্টিভ ইনভেস্ট বিরোধি ঘটনা। সে এত দিনের ইনভেস্ট ত হারাবেই-তারপরেও নতুন বিয়ে হলে, অন্য পুরুষের সন্তানের ওপর ইনভেস্ট করতে হবে। এত রিপ্রোডাক্টিভ ইনভেস্টমেন্টের সম্পূর্ন ১৮০ ডিগ্রি বিরুদ্ধে যাচ্ছে। তাহলে পুরুষের ডিভোর্সের ক্ষেত্রে [ যেক্ষেত্রে সন্তান আছে] বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা কি? রিপ্রোডাক্টিভ ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে পুরুষত এক্ষেত্রে ১০০% লুজার!
অভিজিতের এই প্রবন্ধ সত্য বলে মানা যেত যদি আমরা দেখতাম পুরুষের ডিভোর্স করার ব্যাপারে চূড়ান্ত অরুচি (L)
@বিপ্লব পাল,
হাঃ হাঃ, তুমি মাঝে মাঝে মজার মজার সব কথা বল। ডিভোর্স করা, নতুন সঙ্গি খোঁজাও পুরুষদের একটা মেটিং স্ট্র্যাটিজি। শক্তিশালী (মানে ক্ষমতাবান) পুরুষেরা ডিভোর্স না করে বিগতযৌবনা নারী নিয়ে পরে থাকলে রিপ্রোডাকটিভ ফিটনেস বাড়বে, নাকি কম বয়সী সুন্দরী নারীকে আবার ঘরে তুলতে রিপ্রোডাকটিভ ফিটনেস বাড়বে? তোমার কি মনে হয়? আমার তো মনে হয় ২য়টার ক্ষেত্রেই পাল্লা ভারী। বড় বড় পলিটিশিয়ানদের দেখেছ? নাতনীর বয়সী বউ। বিশ্বাস না হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিন নম্বর বউয়ের চেহারা সুরৎ দেখে নাও। তাদের বয়সের ব্যবধান ২৪ বছর। প্লে বয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিউ হেফনারের কথা আর নাই বা বলি। ভদ্রোলোক প্রতিদিনই গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করছেন, নিজে যত বুড়ো হচ্ছেন, তত বাড়ছে কম বয়সী নারীদের দিকে ঝোঁক। পশ্চিমের উদাহরণ পছন্দ না হলে আমাদের দেশের হুমায়ুন আহমেদের উদাহরণও দেখতে পার। পয়সা কড়ি বাড়ার সাথে সাথে কন্যার বয়সী স্ত্রীকে ঘরে তুলেছেন। সন্তান সন্ততিও দুই ঘর মিলিয়ে ৬ খান (উনাকে দিয়ে ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর এড করানো যেতে পারে, কি বল) । আর তুমি বল নতুন সঙ্গি খুঁজলে পুরুষদের রিপ্রোডাকটিভ ফিটনেস কমে। কোন দুনিয়ায় আছো!
@অভিজিৎ,
সবাই হিউ হেফনার বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতন বিলিয়নার না। বাস্তব হচ্ছে ডিভোর্স মানে পুরুষ সন্তানের ওপর কাস্টডি হারাবে এবং সেটা কোন পুরুষই মানতে চাই না। হিউ হেফনার ও না-যার জন্যে তার দুই সন্তানের মাকে ডিভোর্সের আগে প্লে বয় মানসনের কাছে বাড়ি কিনে দিতে হয়েছিল যাতে ছেলেদের সাথে সে রেগুলার দেখা করতে পারে।
সবার ত অত টাকা নেই। বাস্তব এটাই ডীভোর্স সাধারন পুরুষের জীবনে রিপ্রডাক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট সংকট। অন্যের সন্তান মানুষ করতে হয়-নিজের সন্তানকে কাছে পায় না। এটাই সংখ্যাধিক্য পরিসংখ্যান এবং এমন কোন সাধারন পুরুষ দেখি নি যে ডিভোর্স করে ভাল আছে। এটাই বাস্তব। সুতরাং ডিভোর্স মোটেও রিপ্রোডাক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে ভাল কিছু না-টাকা থাকলে সেটা অন্য ব্যপার। ব্যতিক্রম।
@বিপ্লব পাল,
শুনতে খারাপ লাগলেও ক্ষমতা বাড়িয়ে অধিক নারীর দখল নেয়া সব সময়েই পুরুষদের স্ট্র্যাটিজি ছিল, সব যুগেই। একটা সময় বাদশাহ আকবর চেঙ্গিস খানেরা করেছেন, এখন করছেন – হেফনার বা ডোনাল্ড ট্রাম্পরা। তারা তাদের ক্ষমতা জোরে পারছেন, অধিকাংশই পারছেন না। যারা পারছেন না, তাদের একটা অংশ আবার বিভিন্ন উপায়ে সুযোগ খুঁজছে – পরকীয়া, এডাল্ট্রি, কাকোল্ড্রিতে মত্ত । আইনগত কারণে অনেকে একাধিক স্ত্রী না রাখতে পারায় আবার ‘সিরিয়াল পলিগামির’ চর্চা করছে। যেমন সি এন এন এর ল্যারি কিং ৮ টা বিয়ে ইতোমধ্যেই সেরে ফেলেছেন সিরিয়ালি, রিপ্রডাক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট সংকট বলে বসে থাকে নাই। সবই বাস্তবতা, চোখের সামনেই দেখছি।
@অভিজিৎ,
তাহলে মুহাম্মদের বহু বিবহটা অনেকটা জায়েজই বলা যায়।
@আসরাফ,
বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের (এবং মোটা দাগে বিজ্ঞানের) কাজ বস্তুনিষ্ঠভাবে মানুষের বিভিন্ন আচরণের ব্যাখ্যা দেওয়া, কোন নির্দিষ্ট মানুষের কাজকে ‘বৈধতা’ দেয়া নয়। এটা করলে ন্যাচারিস্টিক ফ্যালাসি হবে। যেমন এই লেখায় বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের আলোকে ঈর্ষা এবং জিঘাংসার অনুসন্ধান করা হয়েছে, কিন্তু তা বলে কেউ যদি মনে করেন এখানে সাঈদের চোখ উপরে ফেলার মত কাজের বৈধতা দেয়া হয়েছে – এটি মনে করলে কিন্তু ভুল হবে। ইনফ্যাক্ট আমার প্রন্ধের শেষে এজন্যই লিখেছি – “সমাজে যখন নারী নির্যাতন প্রকট আকার ধারন করে, যখন নৃশংসভাবে একটি নারীর গাল নাক কামড়ে জখম করা হয়, রাতারাতি চোখ খুবলে নেয়া হয়, এর পেছনের মনস্তাত্বিক কারণগুলোও আমাদের খুঁজে বের করা জরুরী। আমাদের বোঝা দরকার কোন পরিস্থিতিতে সাইদের মত লোকজনের আচরণ এরকম বিপজ্জনক এবং নৃশংস হয়ে উঠতে পারে”।
আরো উদাহরণ দেই – বিজ্ঞানীরা প্রানী জগতে হত্যা কিংবা ক্যানাবলিজমের ব্যাখ্যা হাজির করতে পারেন (যেমন মাকড়শা জাতীয় প্রানীর ক্ষেত্রে এটি খুবই কমন), কিন্তু তা বলে কেউ যদি বলেন, এতে করে আশির দশকে খলিউল্লাহর কবরস্থানে বসে মরা মানুষের কলিজা খাওয়াকে বৈধতা দেয়া হল, তাহলে কিন্তু ভুল অনুসিদ্ধান্তের দিকে চলে যাবে!
বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে নির্মোহভাবে আচরণ বিশ্লেষণই করা যেতে পারে, এর সামাজিক ঔচিত্য বা জায়েজ না জায়েজ নিয়ে পেরেশান করা নয়।
বরাবরের মত চমৎকার একটি লেখা। উদাহরণ হিসেবে রুমানা মঞ্জুর কেসের উল্লেখ থাকায় ব্যাপারটা বোঝা আরও সহজ হল। শুরুতে কেসটি সম্পর্কে জানার পর মনে হয়েছিল নৃশংসতাটা ধর্মীয় গোঁড়ামী আর অন্ধতারই অন্যপ্রকাশ। আপনার দেওয়া জৈবিক এবং বিবর্তনীয় ব্যাখ্যাটা জেনে দৃষ্টিকোণ বদলাল।
ধন্যবাদ এতো সুন্দর সিরিজের জন্য। বৈজ্ঞানিক লেখায় এই মাত্রায় বিনোদন আমি আগে খুঁজে পাই নি। (F)
@পাপিয়া চৌধুরী,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য। লেখক হিসেবে এটা আমার খুব বড় প্রাপ্তি!
@পাপিয়া চৌধুরী,
বিবর্তনীয় ব্যখ্যা যে যেভাবেই করুক না কেন, বিষয়টা অনেকাংশেই নৈতিকভাবে ব্যখ্যা করার দাবি রাখে। একই সাথে এ ব্যখাও থাকা দরকার যে রুমানার স্বামী ঈর্ষা বা গায়ের জোরে তার ওপর অত্যাচার করার পর সে নৈতিকভাবে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করে কি না।
আমার মনে হয় ধর্মীয় দৃষ্টি কোন থেকে সাইদ মিয়া মোটেই নৈতিকভাবে নিজেকে দোষী সাব্যাস্ত করে না বা নিজের কাছে সে অনুতপ্তও নয়, যদিও মারের চোটে পুলিশের কাছে হয়ত নানা রকম কথা বলছে এখন। আর সেটাই আসল বিষয় হওয়া উচিত।কারন পবিত্র কুরান শরীফে আল্লাহ বলছেন- যাহাদের অবাধ্যতার সম্ভাবনা দেখিতে পাও, তাহাদিগকে উপদেশ দাও, এবং তাহাদের সহিত শয্যা বন্ধ কর এবং তাহাদিগকে প্রহার কর, তারপর যদি তোমাদের নির্দেশ অনুযায়ী চলিতে থাকে, তাহা হইলে তাহাদের উপর নির্যাতনের পন্থা অবলম্বন করিও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুউচ্চ মর্যাদাশীল মহান। সূরা-৪:নিসা, আয়াত:৩৪
সাইদ মিয়া আল্লাহর বিধান মতই আচরন করেছে। সে তার স্ত্রীর মধ্যে অবাধ্যতার সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিল, তাই তাকে পিটিয়েছে। তাই সে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী কোন অন্যায় করেনি । আর পিটানোর সময় হাড় গোড় ভাংতেই পারে বা চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সাইদ মিয়া ইসলামিক স্বামীর যথার্থ আচরনই করেছে।
তাই নারীদের উচিত- তারা পুরুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার চাওয়ার আগে আল্লাহর উপরোক্ত বিধান মানে কি না। উপরোক্ত বিধানও মানবে আবার স্বামীর হাতে মারও খেতে চাইবে না – এটা বোধ হয় সম্ভব নয়। সুতরাং এটার ফয়সালাটা আগে জরুরী বলে আমি মনে করি।
@ভবঘুরে,
সাইদ রুমানাকে আক্রমণ করার আগে কোরানের এই আয়াতটি স্মরণ করেছে ব’লে মনে হয়না। আমার মনে হয় সে কাজটি করেছে ঈর্ষা পরায়ন হয়ে। সে ধীরে ধীরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হতে চলেছিল, সে জন্য পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি,ব্যবসাতেও সফলতা অর্জন করতে পারেনি। অপর দিকে রুমানা দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন এবং পেশা ও পড়াশোনাতে সর্বোচ্চ সম্মানীত আসনে অধিষ্ঠিত ও তার চেয়ে হাজার গুণ এগিয়ে, এটা সে মেনে নিতে পারেনি। তাই রুমানার উপর তারএই হিংস্র আক্রমণ ।
@তামান্না ঝুমু,
উপরে মূল মন্তব্যে আমি আপনার বক্তব্য স্বীকার করে নিয়েছি। আমার মূল বিষয় ছিল এত বড় একটা অমানবিক কাজ ঈর্ষা বশত: করার পর সাইদ মিয়া নৈতিকভাবে অনুতপ্ত বোধ করে কি না। যদি সে অনুতপ্ত বা অপরাধ বোধ না করে তাহলে তা ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে অন্যায় কিছু না, সেটাই ছিল আমার মূল বক্তব্য। ধর্মীয় কিতাব যদি স্বামীকে স্ত্রীকে মারধোর করার যথেচ্ছ অধিকার দিয়ে থাকে সেখানে স্বামী তো কখনই এ ধরনের অপরাধ করার পর নিজেকে অপরাধী মনে করবে না , এমনকি অনুতপ্ত বোধও করবে না। নারী নির্যাতনের এটাই সবচেয়ে বড় কারন বলে আমি মনে করি আমাদের সমাজে। আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন।
@তামান্না ঝুমু,
পুরোপুরি একমত। পত্র-পত্রিকায় কোথাও প্রকাশিত হয়নি যে, সাইদ খুব ধার্মিক ব্যক্তি ছিলো, কিংবা রুমানা সাইদের পরিবার খুব ধর্মপরায়ন ছিলো, বরং আধুনিক জীবনেই অভ্যস্থ ছিলেন তারা বলে জানা গেছে। তাই ধর্মের কারণে এই হিংস্রতা ঘটেছে বলে আমিও মনে করিনা, অন্ততঃ এক্ষেত্রে নয়। হ্যা ধর্মের কারণে নারী নির্যাতন হয়, অনেকই হয়, কিন্তু এই প্রেক্ষাপটে পুরুষালী ঈর্ষাটাই আমার কাছে প্রধান মনে হয়েছে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@ভবঘুরে,
আমার মনে হয় সূরা নিসা’র ৩৪ নম্বর আয়াতটি না থাকলেও হাসান সাইদ রুমানাকে ছেড়ে দিতেন না। জৈবিক ঈর্ষাপ্রসূত ক্রোধ এই ঘটনার মূল কারণ।
ডরোথিকে হত%
@পাপিয়া চৌধুরী,
আমার মনে হয় সূরা নিসা’র ৩৪ নম্বর আয়াতটি না থাকলেও হাসান সাইদ রুমানাকে ছেড়ে দিতেন না। জৈবিক ঈর্ষাপ্রসূত ক্রোধ এই ঘটনার মূল কারণ।
ডরোথিকে হত্যা করার পেছনেও ছিল স্নাইডারের এমনই এক চিন্তার প্রক্ষেপন, যা লেখক এই লেখায় উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন।
লেখক উপরোক্ত মন্তব্যে বলেছেন, রুমানা সাইদের পরিবার আধুনিক জীবনে অভ্যস্ত ছিল। তবে যতই আধুনিক হোক না কেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সুরা নিসা’র এই আয়াতটির সাহায্য নিতে হাসান সাইদ ভুলবেন না বোধ করি।
আর, এখানেই তো পবিত্র কোরানের মাহাত্ম্য!!
বিঃদ্রঃ পূর্বের মন্তব্যটি সম্পূর্ণ প্রকাশিত না হওয়ায় আবার দিতে হল।
@পাপিয়া চৌধুরী,
সেই জন্যেই আমি বলেছিলাম আরও কিছু সিরিজ লিখে ্বই আকারে পাবলিশ করলে এটা বেস্ট সেলার হবে যে কোন দেশে।
The Selfish Gene থেকে একটা লাইন তুলে দিলাম, পৃষ্ঠা ১৩৬
যে পুরুষ বা নারী সম্পর্কে অবিশ্বস্ত, তাকে বিশ্বাস করাটাই চরম বোকামী! আর যে পুরুষ সংগীনির উপর প্রভুত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার করার চেষ্টা করে, তাকে বিয়ে করা তার চেয়েও বর বোকামী। সে হোক বুয়েটের ছাত্র অথবা এমআইটির গবেষক। নারীরা বোকা, আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করি, বিবর্তন তাদের পোষাকের দিকে তাকায়ে প্রশ্রয় দিয়েছে, হৃদয়ের দিকে তাকাতে মনে থাকে না। সরকারী বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের ও অধিকাংশ মেয়েকে দেখেছি, তারা পার্টনারের ব্যাপারে মানূষটার চেয়ে প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক পরিচয়কেই বেশী গুরুত্ব দেয়। যেন হাট বাজারের সেরা গরুটাই তাদের চাই। :-Y
সখি, ভালবাসা কারে কয়? এখন মনে হচ্ছে, এ সিরিজটা পড়ার আগে আসলেই ভালবাসা কারে কয় জানতাম না। মুক্তমনায় মাঝেমাঝে হুলস্থূল পড়ে যায় কোন কোন লেখায়। এ লেখাটিও সে রকমই একটি। অনন্ত ভালবাসার ন্যায় সিরিজটিও অনন্তকাল চলুক।
এবার প্রশ্ন। ঈর্ষা যখন বেড়ে যায় তখন কোন বিশেষ হরমোন কি আছে যার পরিবর্তন হয় বা সৃষ্টি হয় এবং তা কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ?
কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক- সাঈদের মত মানসিক ভারসাম্যহীন, হীনমন্যগ্রস্থ, বেকার, অযোগ্য, বিকারগ্রস্ত লোকদের যারা নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ তথা চিকিৎসকের কাছে নিজে নিজে যাওয়ার অবস্থায় নেয়, তাদেরকে রোমানার মত ভয়াবহ কোন ঘটনা ঘটার আগে চিকিৎসা না করার অপরাধে কি তার পরিবার আংশিক হলেও দায়ী না?
আমার মতে সচেতনতা বাড়াতে সাঈদের মত লোকদের শাস্তির পাশাপাশি পরিবারের লোকদের দায়িত্ব সমন্ধেও কথা বলা দরকার। আর এক্ষেত্রে ডিভোর্সই সব সমস্যার সমধান না। এতে এক সমস্যা থেকে বাচঁতে একাধিক সমস্যায় জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
@হেলাল,
যতটুকু জানি ঈর্ষাকালীন সময়ে অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরন বেড়ে যায়।
কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
@ইফতি,
কথাটা কি ঠিক হলো ? একে তো বস্তুনিষ্ট তথা বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যথার মত ‘ঈর্ষা’ সনাক্ত করার কোন উপায় এই মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি , অন্যদিকে, এখন যেটাকে সনাক্ত করাই সম্ভব নয় ,সেখানে তার সাথে অক্সিটোসিনের মত একটা পর্যবেক্ষনযোগ্য অনুর যোগসূত্র স্থাপন কিভাবে সম্ভব ?
কৃত্রিমভাবে কেন অক্সিটোসিন নিয়ন্ত্রন করা যাবে না ? কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত অক্সিটোসিন Pitocin এবং Syntocinon দিয়ে তো সেটাই করা হচ্ছে লেবার ইন্ডাকশনে।
‘ঈর্ষা’ একটা দার্শনিক পরিভাষা যা এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে সনাক্ত , সংজ্ঞায়িত এবং পরিমাপ করা যায় না , পূর্বাভাসের কথা নাই বা বললাম।
@সংশপ্তক,
একটু ভিন্নভাবে ব্যাপারটা ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি। “পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে সনাক্ত , সংজ্ঞায়িত এবং পরিমাপ” করা না গেলেও কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই সেটা বলা যায় না। কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। লাল রঙের অস্তিত্ব বা অনুভূতি লাল রঙের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার অস্তিত্বের উপর নির্ভর করেনা । আরো একটা ভাল উদাহরণ দেই। পদার্থবিজ্ঞানে “তাপমাত্রা” (Temperature) র ধারণা কিন্তু পরিমাপ করার আগেই এসেছিল। এই ধারণার সৃষ্টির অনেক পরে এটাকে অণুর গড় গতীয় শক্তির সাথে যুক্ত করা হয়। কিন্তু আমরা তো তাপমাত্রার অস্তিত্ব অণুর গতীয় শক্তি মেপে ঠাওর করি না। মনোবিজ্ঞানের অন্য অনেক ধারণা, যেমন রাগ, ভালবাসা ইত্যাদির বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা (অর্থৎ অপারেশনাল সংজ্ঞা) না থাকলেও এগুলোর অস্তিত্ব যে নেই সেটা কি বলতে পারি? বিবর্তন মনোবিজ্ঞান তো এদের অস্তিত্বের কারণ বা ব্যাখ্যা খুঁজে বেড়াচ্ছে। আসলে হার্ড সাইন্সের ধারণা আর সফট্ সাইন্সের ধারণা একইভাবে করা হয়না বা যায় না।
@অপার্থিব,
আমরা জানি যে , তাপের প্রভাবকে ব্যখ্যা করার জন্য ‘core theory’ আছে যা The four laws of thermodynamics বলে পরিচিত । যে কেউ চাইলে একে falsify করার চেষ্টা করতে পারবে যে কোন ল্যাবে। মনোবিজ্ঞানের কি এরকম কোন ‘core theory’ আছে যা falsifiable এবং reproducible ?
ভুত প্রেত সচক্ষে দেখেছে এবং স্পর্শ করেছে এমন দাবী করার মানুষ অনেক পাওয়া যাবে । সমস্যা হচ্ছে যে এই দাবীগুলো বস্তুনিষ্টভাবে যাচাই করার জন্য কোন core theory নেই । ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য । কেউ যদি এসব যাচাই করার একটা core theory হাজির করে তখন সেটা নিয়ে বৈজ্ঞানিক scrutiny এর কথা বলা যায় । ততদিন পর্যন্ত ভুত প্রেত এবং ঈশ্বরকে দার্শনিকদের কাছে ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়।
সবশেষে ,
একজন কথিত স্বাভাবিক অথবা একজন বিবাহিত বা একজন সদ্য তালাপ প্রাপ্ত কিংবা একজন হতাশাগ্রস্থ মানুষের মস্তিষ্কে কি লক্ষনীয় কোন পার্থক্য বিদ্যমান যেটাকে ভিত্তি করে নাল হাইপোথিসিস দাঁড় করানো যায় ?
@সংশপ্তক,
আসলে আমি একটু ভিন্নভাবে পুরো ব্যাপারটিকে দেখি। আমার মতে ইভলুশনারী সাইকোলজি কোন একক থিওরী নয়, বরং একটি এপ্রোচ। এটি মানুষের ব্যবহার এবং আচরণ বুঝাবার জন্য একটি টুল। তাই যেভাবে ইভলুশনারী সাইকোলজির ফলসিফিকেশনের দাবী করা হয়, সেটা এখানে কতটুকু প্রযোজ্য তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আসলে ইভলুশনারী সাইকোলজি অনেক ধারণা এবং অনুকল্পের সমন্বয়, এবং ধারণাগুলোকে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই ইম্পেরিকাল টেস্টিং এর মধ্য দিয়েই যেতে হবে, তা যেটাই হোক না কেন (অর্থাৎ প্রতিটি ধারণা হয়তো একক ভাবে ফলসিফায়েবল, কিন্তু পুরো বিবর্তনমনোবিজ্ঞান নয়)। যেমন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা কয়েক দশক আগেই ধারনা করেছিলেন যে, নারী পুরুষের অয়াচরণে পার্থক্য থাকবে, থাকবে ঈর্ষা প্রদর্শনের ব্যাপারেও (Daly, Wilson, and Weghorst, 1982; Symons, 1979 ইত্যাদি)। পরবর্তীতে বহু স্টাডিতেই কিন্তু সেই পার্থক্যের ব্যাপারগুলো উঠে এসেছে (Becker, et el, 2004; Buss, Larsen, Westen, 1992; Buss et al., 1999; Buunk, Angleitner, Oubaid, and Buss, 1996; Miller and Maner, 2008; Schützwohl, 2008; Wiederman and Kendall, 1999 ইত্যাদি) । এ ধরণের কাজ শুরুর আগে সমাজবিজ্ঞানীরা আর মনোবিজ্ঞানীরা কেবল সমাজ এবং পরিবেশ দিয়েই ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করতেন, বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপট থেকে নয়। ছেলে মেয়েদের মেটিং স্ট্র্যাটিজি নিয়ে, তাদের বিভিন্ন আচরণ নিয়ে, সহিংসতা, হত্যা প্রভৃতি নিয়ে পদ্ধতিগতভাবে স্টাডি করা হয়েছে, যেগুলো উত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলোই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি এ প্রসঙ্গে স্টিভেন পিঙ্কারের একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি –
B and W: One reservation that I hear from rational people is the “just-so stories” aspect. That evolutionary explanations of human nature can operate the way Freud’s did: simply twist and turn to meet objections, interpret the evidence so that it fits the theory rather than adjusting the theory. Is there any merit to this idea, or is evolutionary psychology just as falsifiable as any other science?
Pinker: “Evolutionary psychology” is an approach and a set of theories, not a single hypothesis, so no single experiment can falsify it, just as no single experiment can falsify the theory of evolution or the connectionist (neural network) approach to cognition. But particular hypotheses can be individually tested, such as the ones on the relation of symmetry to beauty or the relation of logical cognition to social contracts, and tests of these are the day-to-day activity of evolutionary psychology. Journals such as Evolution and Human Behavior are not filled with speculative articles; they contain experiments, survey data, meta-analyses, and so on, hashing out particular hypotheses. And as I mentioned above, over the long run the approach called evolutionary psychology could be found unhelpful if all of its specific hypotheses are individually falsified.
আপনি যে বলেছেন, তাপের প্রভাবকে ব্যখ্যা করার জন্য ‘core theory’ আছে, সেই কোর থিওরী জানার আগেও মানুষ তাপ সম্বন্ধে জানতো। বৃষ্টির পেছনে ওয়াটার সাইকেল সম্বন্ধে জানার আগে থেকেই মানুষ জানতো যে বৃষ্টি পড়ে। প্রেম, ভালবাসা, ঘৃণা, ঈর্ষা প্রভৃতির কোর থিওরী না জানা থাকলেও সেগুলোর অস্তিত্ব যে আছে তা মানুষের তো অজানা ছিল না, ভুত প্রেতের সাথে এখানেই বোধ হয় পার্থক্য। বিবর্তন মনোবিজ্ঞান বহু আচরণের এবং প্যাটার্ণের উৎসের সন্ধান করছে, কিছু ক্ষেত্রে স্পেকুলেশন করতে হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী ব্যাখ্যা হাজিরও করছে। এই স্পেকুলেশন করার ব্যাপারটা কিন্তু শুধু বিবর্তন মনোবিজ্ঞান নয়, খোদ বিবর্তনেও হরহামেশা হয়। এমনকি জেরি কয়েন তার বিখ্যাত ‘Why evolution is true’ বইয়ে জোর দিয়ে বলেছেন, …
“Understanding the evolution of complex biochemical features and pathways is not as easy, since they leave no trace in the fossil record. Their evolution must be reconstructed in more speculative ways,…”
তাহলে সেই স্পেকুলেশন আর ব্যাখ্যার ব্যাপারটা বিবর্তনমনোবিজ্ঞানের জন্যও প্রযুক্ত হতে পারে। তবে হ্যা, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলো বহু ক্ষেত্রেই রিগোরাস নয়, আমার ধারণা সময়ের সাথে সাথে সেটা শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
@অভিজিৎ,
কোন কিছুর অস্তিত্ব প্রমান বা খন্ডন করা কিন্তু বিজ্ঞানের কাজ নয় , বিজ্ঞানের কাজ প্রাকৃতিক ঘটনাবলীকে সুসংগঠিত এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা করা। যতদিন প্রেমের মত বিষয়ের কোন বস্তুনিষ্ট ব্যাখ্যা না পাওয়া যায় , এটা নিয়ে নানা জনের নানা স্পেকুলেশন থাকবেই এবং সেটাকে বৈজ্ঞানিক বলা যাবে না ।
বিবর্তনবাদ নিজেই একটা ট্রান্সফরমেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । ফসিল রেকর্ড আর এখন তেমন গুরুত্ব বহন করে না কারন আমরা দেখেছি যে ডিএনএ নিজেই একটা চলমান ইতিহাস বই সেখানে প্রতিটা ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ আছে। যেটা আবার ডারউইন জানতেন না। বিবর্তন বলতে এখন জীবের এনাটমিক্যাল নয় বরং আনবিক কাঠামো তথা ডিএনএ , আরএনএ এবং প্রোটিনের কার্যাবলীর বিবর্তনকেই বোঝায়। এখানে স্পেকুলেশনের জায়গা কম এবং সব কিছুই ভৌতিক প্রমানের উপর নির্ভরশীল।
প্রেম ভালোবাসা , বিষন্নতার মত ন্যারেটিভগুলোকে প্রথমে দার্শনিক গন্ডী পেড়িয়ে সুসংজ্ঞায়িতভাবে বিজ্ঞানের শক্ত কাঠামোর ভেতরে আনতে হবে যদি আমরা সেগুলো নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে চাই। শরীরের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোর এক একটা সর্বজন স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক নাম আছে যা সব কিছুর জন্যেই প্রযোজ্য।
@সংশপ্তক,
আমার মতে কিন্তু বিবর্তন মনোবিজ্ঞান সেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টাই করছে। এতদিন জৈববিজ্ঞানকে বাইরে রেখে ব্যাখ্যা করতেন সমাজবিজ্ঞানী আর মনোবিজ্ঞানীরা, এখন ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। অবশ্যই মানুষ সহ প্রানীজগতের আচরণকে ব্যাখ্যার জন্য বিবর্তন ছাড়া কেউ ব্যাখ্যা দিলে সেটা এখন আর সেভাবে ‘বৈজ্ঞানিক’ নয় বলেই পরিগণিত হয়। সেদিক থেকে বিবর্তন মনোবিজ্ঞান বেশ খানিকটা দূরত্ব অর্জন করেছে বলা যায়। তবে নিঃসন্দেহে শাখাটিকে শক্তিশালী হয়ে উঠতে হলে পাড়ি দিতে হবে আরো অনেক পথ।
আপনাকে ধন্যবাদ, আলোচনার জন্য।
@সংশপ্তক,
মনে রাখতে হবে ঈর্ষাকালীন সময়ে অক্সিটোসিন বেড়ে যায় এটা শুধুমাত্র একটা পর্যবেক্ষন। হেলাল ভাইয়া জানতে চেয়েছিলেন ঈর্ষা যখন বেড়ে যায় তখন কোন বিশেষ হরমোন কি আছে যার পরিবর্তন হয় কিনা। আমি তাই ওনাকে একটা পর্যবেক্ষনের কথা বললাম।
”এখন যেটাকে সনাক্ত করাই সম্ভব নয় ,সেখানে তার সাথে অক্সিটোসিনের মত একটা পর্যবেক্ষনযোগ্য অনুর যোগসূত্র স্থাপন কিভাবে সম্ভব ?”
বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা না থাকলেও এগুলোর অস্তিত্ব তো আছে। কেন যোগসূত্র স্থাপন সম্ভব নয় ? আপনি যখন অনুভব করছেন অনুভূতি,তখন আপনার শারীরিক পরিবর্তন পরীক্ষা করা হলেই তো আপনার ভেতর কোন হরমোনের নিঃসরন বাড়ল না কমল সেটা পরিমাপ করা যাবে।
বিজ্ঞান মহলে ভালবাসার সাথে ডোপামিন হরমোনের প্রভাব ,বিষণ্ণতার সময় Serotonin আর norepinephrine হরমোনের পরিবর্তন প্রমানিত।Serotonin এই দিক থেকে খুব জনপ্রিয়। যখন পর্যবেক্ষন করা হল বিষণ্ণতার সময় Serotonin লেভেল কমে যায় ,তখন ভাবা হয় বিষণ্ণতাকালীন সময় এই হরমোনের কিছুটা প্রভাব আছে ।antidepressant হিসেবে তাই serotonin drugs (Prozac, Paxil, Zoloft) ব্যবহার করা হচ্ছে।
”কৃত্রিমভাবে কেন অক্সিটোসিন নিয়ন্ত্রন করা যাবে না ? ”
আমি আসলে এখানে হরমোন নিয়ন্ত্রনের কথা বলিনি।শুধুমাত্র হরমোনাল ব্যাপার হলে অবশ্যই নিয়ন্ত্রনযোগ্য হত। কিন্তু অনুভূতি সবসময় জটিল। এর পেছনে থাকবে অনেকগুলো হরমোন, অসংখ্য কেমিস্ট্রি, নিউরাল সিগনাল ।সীমিত মাত্রায় পর্যবেক্ষন অনুযায়ী হরমোনাল লেভেল বাড়িয়ে/কমিয়ে কিছু কাজ করা যায় যেমনটা করা হচ্ছে বিষণ্ণতার সময়।
জটিলতার কথা ভেবেই বলেছি কৃত্রিমভাবে অনুভূতিগুলো হয়ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করা যাবে না ।কারন অনুভূতিগুলোর জেনেটিক লেভেলে কোন ভিত্তি নেই। 🙂
(প্রথমবারেই মন্তব্য যাচ্ছে না।চার পাঁচ বার পোস্ট করা লাগে। :-Y )
@ইফতি,
আমি জানতে আগ্রহী ঈর্ষাকালীন সময়ে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো ঘটে বলে দাবী করা হচ্ছে সেখানে নাল হাইপোথিসিসটা (null hypothesis) কি যেটা কিনা চার জন পোস্ট-ডক্টোরাল মলিকিউলার বায়োলজিস্টের একটা টীম ল্যাবে রিপ্রডিউস করার চেষ্টা করবে ?
প্রথমবারেই মন্তব্য যাচ্ছে না।চার পাঁচ বার পোস্ট করা লাগে। :-Y )
ফায়ার ফক্সের এই একটা সমস্যা আমাকেও ভোগায়।
অন্য মহাপুরুষদের বেলায় এইটা সত্য হলেও নবীজির বেলায় কিন্তু খাটছে না।
এই জন্যই কি মেয়েরা এই বলে মেনে নেয় যে- পুরুষ মানুষ, ওরকম একটু আধটু তো করবেই।
এটা আমাদের দেশে মনে হয় ঠিক প্রযোজ্য নয়। স্ত্রী স্বাবলম্বী; স্বামীর কুকর্ম হাতে-নাতে ধরে ফেললেও মারিয়া শ্রাইভারের মত সিদ্ধান্তে আসতে জনম পার হয়ে যাবে।
কোকিলাচারণ, শকুনাচারণ- বাংলাগুলো কি আপনার নিজের করা? 🙂
@শ্রাবণ আকাশ,
আশা নিয়ে ঘর করি, আশায় পকেট ভরি, আশা রাখি পেয়ে যাব বাকি দু’ আনা! 🙂
হুমম। তবে কেমন হয়েছে তা অবশ্য জানিনা! :))
বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার জানলাম লেখাটা পড়ে। লেখা ও মন্তব্যের আলোচনা বেশ প্রাঞ্জল লাগল.. মন্তব্য ফলো করতে আগ্রহ বোধ করছি 🙂
@লীনা রহমান,
আমাদের রামগড়ুড়ের ছানা মন্তব্য অনুসরণের জন্য কি একটা লিঙ্ক যোগ করেছে। স্মাইলীগুলোর নীচে দেখুন। কাজ না করলে যথারীতি রামগড়ুড়ের ছানাের মাথায় ডলা দিয়ে আইসেন। 🙂
লেখা বরাবরের মতই ভাল হয়েছে, শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুজে পাইনা! স্বামী/স্ত্রীর কি করনীয় যদি স্বামী/স্ত্রী একজন অন্য পুরুষ/নারীর সাথে দৈহিক/প্রেমের সর্ম্পক স্থাপন করে। কারন আমরা অনেকেই জানি না কি করা উচিৎ। আজ যাকে ভাল লাগে স্বাভাবিক ভাবেই কাল তাকে ভাল নাওলাগতে পারে। কি করনীয় যদি এমন হয়?! এই ভাললাগার পরিবর্তনকে কি প্রতারনা বলা যায়??? বিয়ে, সন্তান উৎপাদনের নারী এবং পুরুষের এই সর্ম্পককে কি ভাবে দেখা উচিৎ।?? ভাল লাগল বিয়ে করলাম। ভাল লাগল না বিচ্ছেদ করেদিলাম। এটাই কি উপযুক্ত? সমাজতো চায়না পরিবর্তন আসুক, যারা ভাল আছে তারাও চায়না পরিবর্তন আসুক, সুধু যারা সমস্যা পিরিত তারাই পরিবর্তন চায়।
পল স্নাইডার বা হাসান সাইদ এর যুক্তিসংগত ভাবে কি করনীয় ছিল যখন তারা ইর্ষা বষর্বতী হয়ে সহিংসতার :guli: পথ বেছে নিয়েছিল।???
@সীমান্ত ঈগল,
ভাই আমার তো মনে হয় হিসাবটা খুব সহজ… আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি অন্য নারী/পুরুষের সাথে সম্পর্ক করে এবং তাতে যদি আপনার না পোষায় তাহলে ভদ্রভাবে আইনের আশ্রয় নিয়ে কেটে পড়লেই তো হয়। আর যাই হোক, আরেকজন মানুষের উপর নির্যাতন করার কোন অধিকার তো কারও নেই, এটুকু বুঝতে তো বিবর্তনী মনোবিজ্ঞানও পড়া লাগে না, কোন মহাত্মাও হওয়া লাগে না :))
@বন্যা আহমেদ,
জীবন কি এতই সহজ!!! হয়ত।।। 🙂
@সীমান্ত ঈগল, সহজ ভাবলে সহজ, কঠিন ভাবলে কঠিন! যার যেমন মন, লয় সে তেমন…
@শ্রাবণ আকাশ, আধুনিক মনুষ কি তবে শুধু ব্যাক্তি কেন্দ্রিক হবে। চার পাশের কার কি ভাল লাগল না লাগল তা গুরুত্বহীন। Just Me Me Me …!!! এখানে কি সর্ম্পক গুরুত্ব পূর্ণ নয়? নিজের চাহিদা পুরন করাই কি মূখ্য?
@সীমান্ত ঈগল, ভালো করে ভেবে দেখেন- “দারা-পুত্র-পরিবার, তুমি কার, কে তোমার…” টাইপের কথা “আধুনিক মানুষেরই” উপলব্দি।
আর একটা ব্যাপার দেখেন- যে সমাজে প্রাইভেসি বেশী, মানুষগুলো আত্নকেন্দ্রিক, যার যার নিজের মত থাকে, অন্যের ব্যাপারে নাক গলায় কম- তারাই কিন্তু “আধুনিক” আর সে সমাজে ঝামেলাও কম।
@শ্রাবণ আকাশ,
প্রবাদটা শুনেছি। কিন্তু এটাযে শুধুমাত্র “আধুনিক মানুষেরই উপলদ্ধি” তা জানতাম না !
অধ্যাপক রুমানা মঞ্জুর এর উপর ঘটে যাওয়া নারকীয় সহিংসতা দেখে কিন্তু যারা এর প্রতিবাদ করেছে তারা অনেকেই কিন্তু আধুনিক মানুষ বলেই আমার মনে হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর মানুষ ও বলা যেতে পারে তারপরও অন্যায় দেখে কোন ভাল সুস্থ মনের মানুষ বসে থাকতে পারে না তবে কি তারা আধুনিক মানুষ নয়?
@সীমান্ত ঈগল,
আপনি লগইন করে মন্তব্য করতে পারেন। আপনার একাউন্টে (যে ইমেইলটি আপনি মন্তব্যের সময় ব্যবহার করেছেন) লগইন তথ্য পাঠানো হয়েছে। না পেলে মডারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন।
@মুক্তমনা এডমিন,
(E) ইমেইল পেয়েছি, একাউন্টের জন্য ধন্যবাদ। (Y) (F)
@সীমান্ত ঈগল,
অবশ্যই অত সহজ না। দুইটা মানুষ যখন একসাথে থাকে তখন কেবল দুইটা মানুষ থাকে না; চারপাশের পরিবেশ, সন্তান-সন্ততি, সমাজ, সামাজিক অবস্থান, মানুষ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-সাধ… সব মিলিয়ে অবস্থা বেশ জটিলই। নিশ্চিতভাবেই হুট করে ‘না পোষানোর’ খারাপ লাগা থেকে ‘আইনের আশ্রয় নিয়ে কেটে পড়ার’ সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। তবে এ খারাপ লাগাটা সীমানা অতিক্রম করলে তা নিয়ে বসে থাকারও কোন মানে হয় না। আর এ সীমানাটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।
@প্রতিফলন,
এব্যাপারে আমিও একমত সবকিছুরই একটা সীমানা থাকতে পারে। সমস্যার কাছে জিম্মি না থেকে তার থেকে বেরিয়ে আসার সত সাহস সবারই সঞ্চয় করা উচিৎ। (Y)
কিছুক্ষন আগেই এই বিষয়ের ওপর নিচের লেখাটি শেষ করে মুক্তমনার মডারেটরদের কাছে পাঠাতে যাচ্ছিলাম।
http://tinyurl.com/3d4w4nz
কিন্তু ঢুকেই দেখতে পেলাম আপনার আরো বহুগুনে সুলিখিত লেখাটি। তারপর আর পাঠালামনা, কিন্তু এখানে মন্তব্য আকারে লিঙ্কটি রেখে যাচ্ছি। অনেক আলোচনাতে ওভারল্যাপ আছে — তার পরও কিছু কিছু বিষয় ভিন্ন বিষয় হয়ত থাকতে পারে। তবে জীবনান্দের কবিতার বিষয়টা কি করে মিলে গেল সেটাই ভাবছি — হয়ত কবিতাটি জনপ্রিয় আর বিষয়ের সাথে খুব বেশি মিলে যায় বলে। আপনার লেখাটি অনেক ভাল লাগল।
@রিয়াজ উদ্দীন,
আপনার মন্তব্যটি পেয়ে ভাল লাগল। সত্যিই আমি অবাক, জীবনানান্দ দাসের কবিতা দিয়ে আমিও শুরু করেছি, আপনার লেখাটাও দেখছি তাই। ভাগ্যিস আমি আগে লেখাটা লিখেছিলাম, আর পোস্ট করেছিলাম, নাইলে … 🙂 (ফাজলামো করলাম, সিরিয়াস নয়)। লেখার মিল দেখে চিন্তিত হবার কিছু নেই , কথায় বলে না – ‘ওয়াইজ ম্যান থিঙ্কস এলাইক’!
আপনার লেখাটি বেশ ভাল। আপনার লেখাটি দেখে বুঝলাম আপনিও বিবর্তন মনোবিজ্ঞান নিয়ে বেশ ভালই চিন্তাভাবনা করছেন। আপনিও কাকোল্ড্রির ব্যাপারটা আপনার লেখায় এনেছেন, একে নামকরণ করেছেন ‘কোকিলাক্রান্ত’ হিসেবে, আমি অবশ্য করেছি কোকিলাচরণ।
এ বিশ্লেষণগুলো যে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে সেটাই আশার কথা। আপনি মুক্তমনায় লিখলে খুব খুশি হব।
@অভিজিৎ দা, এই ধরনের বিষয়ে আপনার লেখার মান কি রকম হয় সেটা আমার জানা ছিল; কাজেই যদি জানতাম আপনি এটা লিখছেন তাহলে আমি ভুল করেও এই বিষয়ে অন্তত কিছু লেখার দুঃসাহস করতামনা :)। তবে বলতে বাঁধা নেই সকালে আপনার লেখাটা দেখে প্রথম কিছুক্ষন মেজাজ খারাপ ছিল। জীবনানন্দের কবিতার কথা নাইবা বললাম। কিন্তু আপনার লেখাটা পড়ার পর রাগ পরে গিয়েছিল। লেখাটা চমৎকার হয়েছে বলে।
আমি আমার লেখায় রুমানা আর সাইদের প্রসঙ্গ সরাসরি রিলেট করিনি কেননা প্রচারিত তথ্যের কতটা সত্যি সেটার ব্যপারে নিশ্চিত হবার কোন উপায় নেই। তবে আমার ধারনা সাইদ হয়ত রুমানাকে মেরে ফেলতে চায়নি। বিশেষ করে রুমানাকে সে যেভাবে আঘাত করেছে সেটার একটা প্যাটার্ন রয়েছে। চোখের ব্যপারটা ছিল রুমানাকে তার সাথে তুলনাযোগ্য করে তোলার চেষ্টা দু’টোই ঘটেছে তার হীনমন্যতার বোধ থেকে। আর নাকে কামড় দেবার ব্যপারটা ছিল তাকে দেখতে কুৎসিত করে দেবার চেষ্টা। এই দু’টোই সম্ভবত সে বুঝে শুনে করেছিল তার এবং রুমানার রিলেটিভ মেটিং ভ্যালুর পার্থক্য এডজাস্ট করার জন্য। এটা আমার অনুমান।
@রিয়াজ উদ্দীন,
ইমেইল চেক কইরেন। 🙂
@অভিজিৎ দা,
ইমেল পেয়েছি। প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ ছিল বলতে পারেন। প্রত্যাশা পুরোটা পুরণ না করতে না পারলেও চেষ্টা থাকবে। অনেক ধন্যবাদ।
আমি একবার সউদি আরব থকে প্রকাশিত ” Stories of Prophet Mohammad ” বলে এক টা বই পড়েছিলাম। (বইটি বাড়িতে, সাথে নাই, তাই রেফারেন্স দিতে পারলাম না)। তাতে পড়েছিলাম একবার কোন এক নারী আলুথালু কাপড়ে নবীজির সাননে এসে দাঁড়ালে নবীজি ইতস্তত বোধ করেন ও উনি তাঁর এক পত্নিকে বলেন (নাম ভুলে গেছি) ওই আলুথালু কাপড়ের আংশিক অনাবৃত নারী যেন ঢাকা সাকা কাপড় পরে নবীজির সামনে আসে।
সখি ভালবাসা কারে কয়- এই সিরিজের মধ্যে রুমানা মঞ্জুরের প্রসংগ ঢোকানতেই সব কিছু পুরিস্কার।
সন্দেহ, ভালবাসার বিভিন্ন ধরন (ব্যক্তি বিশেসে বা বলতে পারি জিন বিশেসে), ঈর্ষা, হিংসা, পতি-পত্নির না-গুরুত্ব দেয়া সম্পর্ক ইত্যাদি, ইত্যাদি, শেষ পর্যন্ত কোথায় আমাদিগকে নিয়ে যায়।
অভিজিৎ, তোমার এই সিরিজটাও কিন্তু অনবদ্য।
আগামিতে আরও কিছু সিরিজ লিখে পাবলিশ করলে (সবাই জানে) বেস্ট সেলার হবে। আমি সেই অগ্রিম অভিনন্দন কিন্তু এখনই দিয়ে রাখছি।
@সেন্টু টিকাদার, আমারও তাই মত, কিন্তু অভিনন্দন আমি ওটা পাবলিশ করার পরেই দেব 🙂
@সেন্টু টিকাদার,
ধন্যবাদ সেন্টুদা। বই বেস্ট সেলার হবার দরকার নাই, আপনাদের ভাল লেগেছে তাতেই আমি খুশি।
পুরুষরা কেন অত্যাচার করে তার বিবর্তনীয় মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা বুঝলাম। এই সাথে উচ্চ শিক্ষিত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরা কেন স্বামীর মারধর খেয়েও সংসার টিকিয়ে রাখতে চায় সেই বিষয়টার একটু ব্যাখা পেলেও মন্দ হত না। এই যে যেমন, রুমানা মঞ্জুরের তুলনায় সাইদ হাসান কিছু-ই নয়। অথচ দিনের পর দিন তিনি সাইদের হাতে মার খেয়ে গিয়েছেন। প্রতিবাদ করে শুরুতেই সাইদকে লাথি দিয়ে বের করে দিতে পারেন নাই। কেন মেয়েরা এই সাহসী কাজটা করতে পারে না? কিসের সংশয়, ভীতি আর দ্বিধা তাদেরকে এই কাজ করতে বাধা দেয়?
@ফরিদ আহমেদ,
এ প্রশ্নটার উত্তর মনে হয় খানিকটা সহজ। সামাজিকতার ভয়। পাছে লোকে কিছু বলে- এই ভয়টাকে উস্টা মারা সহজ নয় বলে। সমাজ রোমানা আর তার মেয়েকে আঙ্গুল উচিয়ে যে অশ্রাব্য বাক্য ছুড়তো সেটাকে এড়ানোর উপায় নেই বলে, সেগোলো সহনীয় নয় বলে এবং সবোর্পরি রোমানা হয়ত কল্পনাও করতে পারনি একবড় হিংস্র আক্রমন তারজন্য অপেক্ষা করছে।
@নওশের আহমেদ নিপুন,
এই উত্তরটা যে আসবে সেটা আমি জানি, তবে খুব একটা মানি না। নারীর সংশয়, নারীর ভীরুতা, নারীর দ্বিধাগস্ততা, তার পুরুষ আশ্রিত প্রবনতা, সমাজকে অগ্রাহ্য করার অক্ষমতা অথবা অনিচ্ছাকে আমরা সমাজের ঘাড়ে পুরোপুরি চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পছন্দ করি।
কল্পনা না করতে পারার কী আছে? স্বামী প্রথম যেদিন গায়ে হাত তোলে, সেদিনই মেয়েদের বুঝে ফেলা উচিত যে এই স্বামীর সাথে সংসার করা যাবে না। হিংস্র আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করাতে সমাজের দায় যতখানি, তারচেয়ে বেশি দায় বোধহয় নিজেরই।
@ফরিদ আহমেদ,
বিবর্তনী মনোবিজ্ঞান পড়ে আর আমার নিজের কিছু চিন্তা ভাবনা থেকে এর একটা বিনীত ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করছি। এখানে “কেন মেয়েরা” এর যায়গায় “কেন আমাদের/রক্ষণশীল সমাজের মেয়েরা” বললে আরও সঠিক হত। পশ্চিমা সমাজ/উদার সমাজের বেলায় এটা ততটা সত্য নয়। আমার পুরান লেখা “বিবর্তন ও ভালবাসা” আর অভিজিতের এই সিরিজের লেখায় একটা কথা বলা হয়েছে যে পুরুষের বৈবর্তনিক লক্ষ্য হচ্ছে তার বংশাণুর সর্বাধিক ছড়ানোর চেষ্টা। এখানে সংখ্যার আধিক্যই মুখ্য। অনেক বংশাণু ছড়াতে পারলে তার বংশাণু পরবর্তী প্রজন্মে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর অধিক সংখ্যায় বংশাণু ছড়ান পুরুষদের জন্য ব্যায়বহুল নয়, শুক্রাণু খুব সস্তা। প্রচুর শুক্রাণু মজুত থাকে পুরুষদের। অনেক শুক্রাণু ছড়াতে পারলে কিছু শুক্রাণু নষ্ট/ধ্বংস হলে অন্যগুলোর উদ্বর্তনের সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই পুরুষদের জন্য মানের চেয়ে সঙ্খ্যাই মুখ্য বিবেচ্য। আর পরকীয়া করে বংশাণু ছড়িয়ে পুরুষেরা ফাঁকি দিয়ে সন্তান পালনের পৈত্রিক দায়িত্ব এড়াতে পারত, কারণ সন্তান যে তারই এটা প্রমাণ করা যেতনা ডিএনএ টেস্ট আবিষ্কারের আগে। অন্যদিকে মেয়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল সন্তানকে উপযুক্তভাবে লালনপালন করে তাদের মাধ্যমে বনশাণু বিস্তার নিশ্চিত করা। মেয়েদের ডিম্বাণু ব্যায়বহুল, মাসে একটা , যেখানে পুরুষদের শুক্রাণু লক্ষ লক্ষ, সর্বদা মজুদ। কাজেই অধিক ডিম্বাণু ছড়ান মেয়েদের জন্য বিবর্তনীয়ভাবে সুবিধাজনক নয়। তাই সঙ্খ্যার চেয়ে গূনগত মান বাড়িয়ে বংশাণুকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রেরণই তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। আর এই গুণগত মানের জন্য মেয়েরা রসদ ও ভাল সঙ্গী/সন্তানের পিতার উপর অনেকটা নির্ভর করে। রসদের জন্যও সঙ্গীর উপর নির্ভর করে। এখন আসা যাক আমদের সমাজের বেলায়। এখানে সন্তানবতী মেয়েদের বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসলে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে ভাল সঙ্গী পাওয়া দুষ্কর। কারণ অধিকাংশ পুরুষই অন্যের বংশাণুধারী সন্তানদের লালন পালনে অনিচ্ছুক। আর আমাদের সামাজিক মূল্যবোধে (যা আবার বংশাণু-সংস্কৃত সহ-বিবর্তনের(Gene Culture Co-evolution) কারণে সৃষ্ট) তালাকপ্রাপ্ত মেয়েদের নীচু চোখে দেখা হয় ও তাদেরকে সামাজিকভাবে কোণঠাসা করা হয়, যার জন্য নীতিগতভাবে বিয়ে করতে আপত্তি না থাকলেও অনেক পুরুষ তাদের বিয়ে করতে সাহস পায় না। কাজেই নাবালক/নাবালিকা সন্তান নিয়ে সাহস করে বিয়ে থেকে বের হতে পারলেও সন্তানদের নিয়ে বিপাকেই পড়ে মেয়েরা। আর অনেক হীন চরিত্রের পুরুষেরাও এরকম মেয়েদের তাদের সন্তানদের দায়িত্ব নেবার ভান বা আশা দিয়ে দৈহিক সুবিধা নিয়ে পালিয়ে যায়। দুর্ভোগ আরো বাড়ে সেই মেয়ের। সমাজ তাকেই দুশ্চরিত্র মেয়ে বলবে, ছেলেটিকে নয়। তাসে উচ্চশিক্ষিত হোক বা না। আরো পরিহাসের বিষয় হল আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের দুশ্চরিত্র বলার প্রবণতা বেশি। নিঃসন্তান মেয়েদের জন্য বা যাদের ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে তাদের জন্য বিয়ে থেকে বের হয়ে আসা অপেক্ষাকৃতভাবে সহজ। রুমানা মঞ্জুরের বেলায়, যার সন্তানেরা অল্পবয়স্ক, তার জন্য এটা সহজ নয়। তবুও এটাও ঠিক যে পারিসাঙ্খ্যিক গড়বিচ্যুতির কারণে এমন মেয়েও আছে যে রুমাণা মঞ্জুরের অবস্থায় থেকেও অনেক সহজে এরকম বিয়ে থেক অনেক আগেই বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু রুমাণা মঞ্জুর বিবর্তনীয় গড়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
@অপার্থিব, (Y) :clap
@অপার্থিব, ভাল বলেছেন (Y)
@অপার্থিব,
ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার একটা ব্যাখ্যা দেবার জন্য। আপনার ব্যাখ্যাটা চমৎকার, তবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারি নি আমি। বিজ্ঞান বিষয়ে আমার বদ্ধ জ্ঞানের কারণেই এটা ঘটেছে। আপনার কোনো দায় নেই এখানে। যৌন মিলনের ক্ষেত্রে বংশানু ছড়ানোটাই পুরুষ বা নারীর মূল লক্ষ্য এই বিষয়টাকে মানতে একটু কষ্ট হয় আমার। কোনো পুরুষ যখন অসংখ্য নারীর সাথে মিলিত হতে চায়, তখন সে বংশানুবৃদ্ধির উদ্দেশ্য দ্বারা চালিত হয়, নাকি স্রেফ আনন্দলাভের পৈশাচিক ইচ্ছা থেকে মিলিত হয় সেটা নিয়ে দ্বিধায় থাকি আমি।
আমার সবসময়ই মনে হয় যে, নারীবাদী হতে গিয়ে আমরা নারীদের অনেক কিছুকেই পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করি। ঠিক নিরপেক্ষ এবং নির্মোহ বিশ্লেষণটা কারো কাছ থেকেই পাওয়া যায় না। নারীর বিপক্ষে কথা বলতে গেলে পুরুষবাদী তকমাটা গায়ে লেগে যাবে, এই ভীতিতে হয়তো অনেকেই আচ্ছন্ন থাকি। বাস্তব জীবনে আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বিরাট পুরুষবাদী, কিন্তু বাইরে কথাবলার সময় বা লেখার সময় নিজেকে নারীর বন্ধু প্রমাণের একটা সুস্পষ্ট আগ্রহ থাকে। হয়তো পুরুষবাদীর তুলনায়, নারীবাদী আখ্যাটার সামাজিক ভ্যালু বেশি, সেটাই সচেতনে বা অবচেতনে কাজ করে থাকে মনের মধ্যে। সে কারণেই নারীর সংশয়, নারীর ভীরুতা, নারীর দ্বিধাগস্ততা, অনিশ্চিত জীবনের প্রতি তার প্রবল অনাগ্রহ, তার পুরুষাশ্রিত সপ্রবনতাকে আমরা সমাজের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে উঠি। এক্ষেত্রে নারীদের কোনো দায়দায়িত্ব আছে বলে আমরা স্বীকার করতে চাই না। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা এতখানি মধ্যযুগে পড়ে নেই যে, একজন উচ্চশিক্ষিত নারীর অত্যাচারী স্বামী ত্যাগ তাঁর মান-সম্মানের জন্য বিরাট ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ বাদ দিলাম,। দেশের বাইরেই বা কয়টা উচ্চশিক্ষিত এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশি মেয়ে এই সাহসটা দেখাতে পারছে?
আমাদের সমাজে তালাকপ্রাপ্ত নারীদেরই শুধু মেটিং ভ্যালু কমে যায় তা নয়, পুরুষদেরও যায়। এই ভ্যালু কমে যাবার ভয়ে অত্যাচার-নির্যাতনকে সহ্য করাটা স্রেফ বোকামি এবং ভীরুতাই বলবো আমি। বিবাহবিচ্ছেদে ঘটালে সমাজ দুশ্চরিত্র বলবে, এই আশংকাই যদি মেয়েদের কুরেকুরে খায়, তাহলে আর আমার বলার কিছু নেই। আরো পাঁচশো বছর তাহলে আমরা অপেক্ষা করতে পারি নারী স্বাধীনতার জন্য।
মুক্তমনাতেই একবার আফরোজা আলম একটা লেখা লিখেছিলেন। সেখানে আছে একজন উচ্চশিক্ষিত নারী তাঁর যৌনবিকৃত স্বামীর বিকৃত চাহিদা মেটানোর জন্য কাজের লোকের কাপড় পড়ে স্বামীর কাছে যেতো। ওই লেখাতে সেই বিকৃতমনা পুরুষকে বেশ গালমন্দ করা হচ্ছিল। আমিই প্রথম মন্তব্য করি যে, এখানে মেয়েটারই দায় বেশি তাঁর স্বামীর তুলনায়। অনেক আগেই ওই মহিলার উচিত ছিল তাঁর স্বামীসঙ্গ ত্যাগ করে চলে আসার। আমার সেই মন্তব্যের পরে এই বলে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে, সংসার ভাঙলে নারীদেরকেই দায়ী হতে হয় সমাজে, সে কারণে নাকি মেয়েরা সংসার ভাঙতে খুব সহজে চায় না। আপনার ব্যাখ্যাটাও অনেকটা সেরকমই হলো। আমার কথা হচ্ছে যে, মেয়েরা যদি সমাজকে এতখানি গুরুত্ব দিয়ে থাকে, সামাজিক প্রথাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা না রাখে, তাহলে তাঁদের মুক্তি আসবে কীভাবে?ঠুঁঠো জগন্নাথ পুরুষতন্ত্রকে আর নখদন্তহীন সমাজকে দায়ী করে আর কতকাল চলা যাবে? তসলিমার মত আর মাত্র একটা সাহসী মেয়েও কি আমরা পাবো না আমাদের সমাজে? সমাজ কি শিক্ষিত মেয়েদের মেরুদণ্ড এতখানি-ই ভেঙে দিয়েছে? নাকি মেয়েদেরই সাহস নেই পরীক্ষা করে দেখার তাঁদের মেরুদন্ডের জোর কতখানি? (এখন কেউ কেউ দীর্ঘদিন খাঁচায় বন্দী থাকা পাখির উদাহরণ নিয়ে আসবেন, সেটাও জানি আমি। 🙂 )
মেয়েদের নির্যাতিতা হবার পিছনে সমাজ দায়ী, পুরুষতন্ত্র দায়ী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সামাজিক প্রথাকে অস্বীকার করার অক্ষমতা, এই পুরুষতন্ত্রকে কার্যকর কোনো প্রতিবাদে ছাড়া মেনে নেওয়াটাতেও আমি মেয়েদের দায় দেখি। যে অত্যাচারিত হচ্ছে সক্রোধে তাকেই প্রথম রুখে দাঁড়াতে হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সেখানে কে কী মনে করবে, সেই সংশয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। দয়াদাক্ষিণ্য যেমন ঘর থেকে শুর করতে হয়, বিপ্লবের অগ্নিস্ফূলিঙ্গও তেমনি নিজের উনুন থেকেই জ্বালাতে হয় প্রথম।
সেটাই। রুমানা মঞ্জুরের ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, মেয়েদের এই গড় থেকে বিচ্যুতির সময় এসে গিয়েছে এখন। মার খাওয়ার পিছনের হাজারো কারণকে না খুঁজে, সাহস করে পাল্টা মার দিতে শিখুক মেয়েরা। দেখবেন পালিয়ে কুল পাবে না সমাজ, পুরুষতন্ত্র নামের এই্সব জুজুগুলো।
@ফরিদ আহমেদ,
আলোচনা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। দেখি অপার্থিব কি বলে। আমি কেবল একটি বিষয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাই –
ব্যাপারটা যদি স্রেফ আনন্দলাভের জন্যও হয়ে থাকে তাহলেও আমাদের খুঁজে দেখতে হবে কেন একাধিক নারীর সাথে মিলিত হওয়াটা ‘আনন্দজনক’ মনে হচ্ছে! এটা আনন্দজনক মনে হয় কারণ, বিবর্তনগতভাবে সম্ভবতঃ এটি পুরুষদের মানসিকতায় একটা উপযোগিতা দিয়েছিলো অতীতে (ক্ষমতা বাড়িয়ে অধিক নারীর দখল নেয়া, যেটা আমি আমার আগের লেখায় বলেছি)। জেরাড ডায়মণ্ডের একটা চমৎকার বই আছে, Why Is Sex Fun?: The Evolution Of Human Sexuality।
তবে আমি আপনার সাথে একমত – রুমানা মঞ্জুরের ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, মেয়েদের এই গড় থেকে বিচ্যুতির সময় এসে গেছে । কিন্তু সেটা রাতারাতি সম্ভব কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন।
@ফরিদ ভাই, আফনের জ্বালাময়ী ‘নারীবাদী’ বক্তৃতা শুনে মন্তব্য না করে আর পারলাম না, প্রায় চার মাসের নীরবতা ভাঙতেই হল।
আপনি যে প্রগতির কথা বলছেন তা যে ঘটছে না তা কিন্তু নয়, মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা এবং সেই সাথে সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে মেয়েরা (এবং সন্তানসহ মেয়েরাও)এ ধরণের সম্পর্কগুলো থেকে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। আমার মা’দের প্রজন্মে বহু প্রফেশনাল মহিলাকে দেখেছি শুধুমাত্র সমাজ এবং ছেলেমেয়ের মুখ চেয়ে এ ধরণের সম্পর্কে সারাজীবন থেকে যেতে, কিন্তু আমার প্রজন্মে এসে এভাবে মুখবুজে অত্যাচার সহ্য করার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে, অনেক বেশী হারে মেয়েরা এ ধরণের সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। আমার চারপাশে চেনা জানা বহু মেয়েই তো বেড়িয়ে এসেছে। এখন দেশে যে হারে ডিভোর্স হয় সেটা কয়েক দশক আগেও চিন্তা করা যেত না। আর মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে শুরু করলে এ ধরণের ডিভোর্সের সংখ্যা যেমন বাড়তে বাধ্য ঠিক তেমনি সমাজের পরিবর্তনও ঘটতে বাধ্য।
আর আমরা বিবর্তনীয়ভাবে অনেক কিছুতেই আনন্দ পেতে পারি, এটা যেমন বিবর্তনীয় বাস্তবতা ঠিক তেমনি আমাদের বড় মাথাটা যে এরকম অনেক প্রাকৃতিক আনন্দে বাগড়া দিতে সক্ষম সেটাও কিন্তু বিবর্তনীয় বাস্তবতারই অংশ। সেজন্যই তো নেচার ভিয়া নারচার ( যেটা নিয়ে লিখে একসময় কোপের মুখে পড়েছিলাম… ) বিতর্কগুলো এখনো এত সোচ্চার, আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে যত এগিয়ে যাচ্ছি ততই আরো বেশী করে বুঝতে শুরু করেছি মানুষের বিবর্তনে পরিবেশের ভূমিকা আসলেই কতখানি। আমরা আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই বদলাতে সক্ষম, যেটা খুব কম প্রাণীই করতে পারে এবং আমাদের এই অমূল্য ক্ষমতাটাও বিবর্তনেরই ফসল। আমাদের বিভিন্ন ক্রিয়া-কর্মের পিছনের বিবর্তনীয় কারণগুলোকে উপেক্ষা না করে ( যেটা অনেক সমাজবিজ্ঞানী করার চেষ্টা করেন, যদিও সেই ট্রেন্ডটা আজকাল অনেক কমতে শুরু করেছে বলেই আমার বিশ্বাস, আর আপনি উপেক্ষা করার চেষ্টা করছেন তাও বলছি না কিন্তু 🙂 ) সেগুলোকে সঠিকভাবে বুঝতে পারলেই বরং আমাদের এই ‘বিচ্ছিরিরকমের’ বড় মাথাটার ব্যবহার আরও সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
@বন্যা আহমেদ,
আমরা কি এই “ডিভোর্স” দিয়েই সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে চাই নাকি অন্য কোনো বেটার অপশন আছে?
@শ্রাবণ আকাশ,
ডিভোর্স ব্যাপারতাকে ঋণাত্মক দৃষ্টিভংগীতে দেখার যৌক্তিক কারণ কি? বিয়ে মানে যদি হয় লিগাল পেপারে সাইন করে সারাজীবনের দাসত্ব, তাহলে জেনেশুনে দাসী হবে কেন, যদি তার বোঝার বোধ থাকে, আমি এই ব্যক্তিকে বিয়ে করে আসলে দ্বাসত্বের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করছি? দুজন মানুষ তখনই ডিভোর্সের দিকে আগায়, যখন তাদের মধ্যে সম্পর্কটা সুন্দর হবার আর কোন সম্ভাবনা থাকে না। এই রকম অবস্থায় বিয়েটা টিকিয়ে রাখা কার জন্য ভালো এবং কেন?
আমি ডিভোর্সড নারীদের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারাও বলেন, একা সন্তানকে লালন পালন করা কষ্টের। কথা অবশ্যই সত্য। কিন্তু রুমানা মঞ্জুর যদি বলেন, আমি এতোদিন বের হয়ে আসার চেষ্টা করিনি, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, তাতে কি কোন শুভ ফল আসলো? একটা ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলে বা মেয়ে যে মানসিক যন্ত্রণায় ভগে, একটা অশান্তিপূর্ণ পরিবারের ছেলে/মেয়ে তার চেয়ে কম যন্ত্রণায় ভগে না। বরং তাদের মাঝে সম্পর্কের ব্যাপারে ভয় কাজ করে। তারচেয়ে যদি মানসিক বা শারিরীক নির্যাতনের শিকার সন্তান সহ নির্যাতনের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতো, তাহলে সন্তান বাবার অভাব বোধ করত, আশেপাশের মানুষদের দেখে ভাবতো, আমার জীবন কেন সবার মত হল না, কিন্তু সেই সাথে অন্য অনেকশিশুর চেয়ে আগে পৃথিবীর, সমাজের কথিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাড়াতে শিখতো। আর যদি বের না হয়ে আসতো, তাহলেও কি সন্তান পিতৃস্নেহ পেত? যে পুরুষ সংগীনিকে ভালো না বেসে নির্যাতন করছে, বা অধিকার খাটিয়ে বোইবাহিক সম্পর্কের কারনে মানসিক বা শারিরীক নির্যাতন করছে, সেই পুরুষ সন্তানের প্রতি সহানুভুতিশীল হতে পারে কতটা? আর সন্তানই কি পারে চোখের সামনে বাবা মায়ের আঘাত প্রতিঘাত দেখে কিভাবে বাবা মায়ের ভালোবাসা মনের আনন্দে উপভোগ করতে?
পরিণাম যদি সেই আদরের সন্তানের মানসিক যন্ত্রণায় হয়, তাহলে ডিভোর্সই কি ভালো নয়? তবে, আমাদের দেশে নারীরা এত সহজে দিভোর্সের দিকে যেতে পারেনা, কারণ তাদের অর্থনৈতিক জোর থাকে না। শৈশব কৈশরেই মেয়েদের ব্যক্তিত্বের ডানা ভেঙ্গে দেয়া হয়। যদি একটা মেয়ের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় হয়, তবে কেন সে বিপ্লবের পথ বেছে নেবে না। নারী কি হালের গরু নাকি, জোয়ালের সাথে জুড়ে দিলেই আমৃত্যু তাকে জোয়াল টানতে হবে?
এইবার পুরুষের কথায় আসি, একজন পুরুষ যদি দেখে তার সহধর্মিনীর ধর্ম ভিন্ন আসলে, সে তাকে ভালোবাসে না, তাহলে জোর করে সেই বা কেন তাকে আটকে রাখবে? বা নারীই যদি দেখে তার পতি অন্য নারীতে আসক্ত, তাহলে সে কোন যুক্তিতে তার পতির ভালোবাসা চাইবে? সেটা মানসিক যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছু কি? বিয়ে একটা সামাজিক প্রথা, একটা সোশ্যাল ডিক্লিয়ারেশন, তার চেয়ে বেশী কিছু নয়। এই সামাজিক প্রথাকে শক্ত করে আকড়ে ধরে রাখা আর কুসংস্কারকে আকড়ে ধরে রাখা তো একই কথা!
যদি সত্যি দুজন নারী পুরুষের মধ্যে ভালোবাসা, বিশ্বাস শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকে, তাহলে তো কেউ কেবল বিল্পব ঘটানোর জন্য ডিভোর্সের পথে যায় না। আর যদি সন্তানের জন্যও ভালোবাসাটা বাবা মায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলেও নারী বা পুরুষ সংসার করতে এসে পরষ্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায় না। ডিভোর্স এড়ানোর একমাত্র সমাধান হতে পারে মানবিকতা বধ এবং ভালোবাসা, আর কিছু নয়। জোর করে সম্পর্ক চাপিয়ে দেয়া, বা পোশাকি সম্পর্ক চাপিয়ে রাখা অমানবিক ছাড়া আর কিছু নয়।
পুরুষতান্ত্রিকতার তথাকথিত ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন। প্রথাকে প্রতিষ্ঠিত করার অনেক অজুহাত পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু তাতে মানবতা বোধ, ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না।
@নীল রোদ্দুর, নাহ্ নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখি নাই। আলোচনাটা চালিয়ে যাওয়ার জন্যই একটু দৃষ্টিপাত করেছি মাত্র। 🙂
এই জিনিসটাই বের করতে চাইছিলাম। আমি যখন “বেটার অপশন” শব্দ দুইটা লিখছিলাম তখন আমার মাথায়ও এই ব্যাপারটাই কাজ করছিল।
খুব চমৎকার একটা মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, নীল রোদ্দুর।
@শ্রাবণ আকাশ, যে কোন শব্দ বা মন্তব্যকেই কান ধরে টেনে কন্টেক্সটের বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আপনার কী করে মনে হল আমি শুধু ডিভোর্স দিয়েই সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে চাই তা আমার ছোট বুদ্ধিতে বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু সে আলোচনায় গিয়ে লাভ নেই, ডিভোর্স কথাটা শুনলেই আতঁকে ওঠাটা মোটেও নতুন কিছু নয়…
আমি ডিভোর্সের প্রসঙ্গে এনেছিলাম ফরিদ ভাইয়ের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে তিনি রুমানার মত এবিউসিভ সম্পর্কগুলোতে মেয়েরা কেন বেড়িয়ে আসেনা তা নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন। চোখ তুলে নিয়ে, নাক ফাটিয়ে দিয়ে একটা মেয়েকে প্রায়-মৃত করে ফেলে দেওয়া সম্ভব যে সম্পর্কে, সেখানে ডিভোর্স ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে তা আমার জানা নেই। এখানে অনেকের অভিমত অনুযায়ী এই অবস্থায় একটা মেয়ের পরিবারের কাছে গিয়ে পায়ে পড়ে মিনতি করে বা কাউন্সেলিং করে কী ফায়দা হবে তা আমার জানা নেই, আমার মতে রুমানাদের মত মেয়েদের এই অবস্থায় পৌঁছানোর আগেই এধরনের সম্পর্কগুলো থেকে বেড়িয়ে আসা দরকার। আর হ্যা, আমি মনে করি যে কোন সমাজে মেয়েদের ডিভোর্সের অধিকার সুনিশ্চিত করাটা নারী অধিকারের অন্যতম পূর্বশর্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত মেয়েরা সমাজ থেকে নিশ্চয়তা না পাবে যে ডিভোর্সের পরে সমাজ তার এবং তার সন্তানদের নিরাপত্তা বিধান করবে, তাদের হেয় চোখে দেখবে না ততক্ষণ পর্যন্ত একজন নারীর পক্ষে এ ধরণের সম্পর্কগুলো থেকে বেড়িয়ে আসা কঠিনই হবে। তারপরে একজন মেয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসবে কী না আসবে সেটা তার সিদ্ধান্ত, কিন্তু এ ধরণের অপশানগুলো নিশ্চিত করতে না পারলে মুখে নারী অধিকার নিয়ে গলা ফাটিয়ে কোন লাভ হবে না। আর এই অধিকারগুলো অর্জন করা খুব সোজাও নয়, এর পিছনে অর্থনৈতিক সামাজিক ধর্মীয় বিশ্ব পরিস্থিতির এক জটিল সমীকরণ কাজ করে।
@বন্যা আহমেদ,
দেখেন আপনার এই লাইনটা নিয়ে কেউ উলটা দিক থেকে ব্যাখ্যা করে দিতে পারে যে মুক্তমনারা সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়াতে বলছে! 🙂
এই সুযোগটা কাউকে দিতে ইচ্ছে হয় নি বলেই প্রশ্নটা তুলেছি যাতে এখানেই আলোচনা বা ব্যাখ্যা হয়।
উপরে ব্লগার নীল রোদ্দুর সুন্দর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিয়েটা শুধু লিগাল পেপারে সাইন করে জোড়া দিয়ে নয়, প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে জোড়া হোক- এটাই সবার কাম্য।
আর উলটা হলে ডিভোর্স হওয়াটাই যুক্তিসংগত। সেক্ষেত্রে আমি ফরিদ আহমেদ-এর কথাগুলোও টানবো। যে কোনো বিপ্লবেই কাউকে না কাউকে ঝড়-ঝাপ্টা সহ্য করতে হবে প্রথমে। উনি ব্যাখ্যা করেছেন যে এটা মেয়েদেরকেই করতে হবে। কিন্তু সেটা এখনো শুরু হয়নি। কেউ সেভাবে এগিয়ে আসেনি। তসলিমা নাসরিনের মত দু-চারজন- কিন্তু মেয়েরাই এদেরকে বেশী দোষ দিয়েছে। এই ব্যাপারটায় আরো বেশী সচেতনতা দরকার।
@বন্যা আহমেদ,
ইয়ে, এইটা নিশ্চয়ই টাইপো। পুরুষবাদী কইতে চাইছো, তাই না? :-s
কালকে অভিরে কইছিলাম যে, তোমার লেখায় একটু খোঁচাখুঁচি করতাছি। দেখি নারীবাদীরা কি কয়? পিঠে ছালাও বাইন্ধা রাখছিলাম তাগো কিল ঘুষি সামলানোর লাইগা। মুক্তমনায়তো পুরুষবাদী আমি একাই। 🙁 কিন্তু, কী কারণে যেন তাগো দেখা পাইলাম না। আফসুস!! তয়, মনডা ভাল হইছে তোমারে দেইখা। সরীসৃপের মত সুদীর্ঘ শীতনিদ্রা শেষ কইরা গর্ত থেইকা বাইর হইছো। খোঁচাখুঁচিটা স্বার্থক আমার। :))
@ফরিদ আহমেদ,
বিবর্তনের আলোচনায় একটা কথা জোর দিয়ে বলা হয়, সেটা হল, বিবর্তনের লক্ষ্য (এটা বস্তুগত) আর প্রত্যেক মানুষের সচেতন লক্ষ্য (সেটা একটা অনুভূতি) এক নয়। মানুষের (বা যে কোন প্রাণীর) “আনন্দলাভের পৈশাচিক ইচ্ছা” টা বিবর্তন জনিত একটা প্রবৃত্তি, বিবর্তনের মূল লক্ষ্য (বংশাণু ছড়ান) চরিতার্থ করারা জন্যই এই প্রবৃত্তির সৃষ্টি। চিনি বা মিষ্টি স্বাদের খাবার আমাদের খেতে ভাল লাগার কারণও বিবর্তন গত। আমারা সচেতনভাবে ঠিকই মিষ্টি ভাল লাগে বলে খাই বলে মনে করি, কিন্তু আসলে সেটা বিবর্তনের দাবী মেটানর (অতীতে সেটা খুবই সত্য ছিল, শিকারী/আহরণকারী যুগের সময়ে) জন্যই খাই অবচেতনভাবে।
আর আপনার আর অভিজিতের মত আমিও একমত যেঃ
কিন্তু আসল নিয়ন্তা বিবর্তন। আমি, আপনি আর অভিজত যে এমনটি ভাবছি সেটাও বিবর্তন সৃষ্ট। আমরা সবাই তো বিবর্তনেরই উৎপাদ্য। প্রত্যেক সমাজই বিবর্তনের নিয়মেই পরিবর্তিত হচ্ছে। এর জন্য মনে হয় অধিকাংশ মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনই দায়ী। সেই মানসিকতার পরিবর্তনও বিবর্তনের নিয়মেই হচ্ছে।
বিবর্তনীয় ব্যাখ্যায় আমদের ব্যক্তিগত বিচারজ্ঞান, উচিত/অনুচিতের ভূমিকা নেই। এটা একটা কঠিন শীতল শিক্ষা। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার সাথে তীব্রভাবে সহমত পোষন করছি। ইস, মেয়েরা যদি এই সহজ সত্যিটা বুঝত। একটা ঘটনা ঘটে যাবার পরে তাহলে তা নিয়ে খোঁচাখুঁচি করতে হত না। ঘটনা ঘটার আগেই ঘুরে দাঁড়িয়ে পালটা মার দিয়ে দেয়া যেত।
নারীদের যেভাবে দ্বীতিয় শ্রেনীর জীব বানিয়ে রাখা হয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আসতে হলে নারীদের দরকার সাহস, মনের জোর, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া, আমি পুরুষের চেয়ে কোন অংশে কম মানুষ নই। তাহলে আর সাইদের মত বর্বরেরা চোখে আঙ্গুল ধুকিয়ে চখ উপড়ে ফেলতে পারবে না, বা তার চেয়ে কম বর্বর পুরুষেরা স্ত্রীর উপর মানসিক নির্যাতন করতে পারবে না।
ঘুরে দাড়াতে হলে এখনি দাঁড়াতে হবে, জীবদ্দশায়! কেন নারীরা কেবল স্বামী গর্বে গরবীনি হতে চাইবে? কেন পুরুষেরা স্ত্রী গর্বে গর্বিত হতে চাইবে না? দায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যেমন আছে, নারীর কিন্তু কম নেই একটু খানিও। পুরুষ যদি নির্যাতন কারী হয়ে থাকে, তাহলে নারীরা নির্যাতনে প্রশ্রয় দানকারী। দুজনেই একই পাপে পাপী!
ফাইট ব্যাক!
@নীল রোদ্দুর,
মানুষ ঠিক আছে কিন্তু পুরুষের সমান হতে পারলো কই? কী আছে তার? অর্থ-বিত্ত, মর্যাদা, শিক্ষা- দক্ষতা, শক্তি-সামর্থ্য? সে তো জানেই না, জানতে দেয়া হয় নি সে যে মানুষ। তাকে কি পাপী বলা যায়? পুরুষ থেকে তার জন্ম, পুরুষেই তার মৃত্যু। মহাকাশ থেকে তার জন্যে সতর্কবাণী- সে পুরুষের সমান নয়।
বললেই হলো? অস্ত্র কই? শক্তি কই? মরবার জন্যে অসম যুদ্ধে ঝাপ দিয়ে মরতে বলছেন? কৌশল অবলম্বন করতে হবে। হাতের অস্ত্রসহ নিশ্চিত মৃত্যুর চেয়ে পলায়ন ভাল,কৌশলে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার সুযোগ একদিন আসতেও পারে। পুরুষবাদীদের সুউচ্চ বিশাল অস্ত্রভান্ডার দু-একজন তাসলিমা, রুমানা উড়িয়ে দিতে পারবেনা, বরং তারা দেশছাড়া হয়ে যাবে। এখানে রুমানার দোষ খুঁজে লাভ নেই,রুমানা জানেন তার দূর্বলতাটা কোথায়। মানবতাকে বাঁচাতে হলে নারী-পুরুষ স্মমিলিতভাবে নারীর সম-অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।
লজ্জা লজ্জা লজ্জা,নারীর কাছে পুরুষের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ তাদের একজন এই পাশবিক কাজটি করতে পারলো?
@আকাশ মালিক,
জানার দায়িত্ব আমার নাকি আমাকে জানানোর দায়িত্ব অন্য কারোর? আমাকে জানার সুযোগ অন্য কারোর পক্ষে দেয়া সম্ভব। এটা সত্যি, সেই সুযোগ থেকে নারীদের চরমভাবে বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু যারা জানার সুযোগ পায়, তারাও যে আসলে খুব বেশী জানেনা, তার প্রমান রুমানা মঞ্জুর। ঘাটতিটা অন্য জায়গায়। আমি কে, এই প্রশ্নটা জানার সুযোগ পাওয়া অনেক মানুষের মাঝেই আসেনা, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নটা আসেনা। নারীবাদী সাহিত্য রচনাকারী নারীর মাঝেও আক্ষেপ দেখেছি, ইস, আমি যদি ছেলে হতে পারতাম! এর মানে হল, আমি মানি, ছেলেরা বেটার, ছেলে হলে অনেক সুযোগ বেশী পাওয়া যায়। নারীর পরাজয় সেখানেই হয়ে যায়। সে নিজের পরিচয় বদলে মুক্তি পেতে চাই। নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত করার মত মনোবল তার নেই। যে আগেই হেরে বসে আছে, তাকে জেতাবে কে?
রুমানা মঞ্জুর কি আসলেই জানে তার দূর্বলতা কোথায়? সন্তান? সমাজ? অপবাদের ভয়? নাকি স্বামীর জন্য অন্ধ ভালোবাসা? একটা ব্যাপার মনে হয় আমরা বিবেচনায় আনছি না। রুমানা মঞ্জুরের বাবা মা কি তাদের সুশিক্ষিতা কন্যাকে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন? আমি জানিনা, কিন্তু সেই স্বাধীনতা যদি তার না থেকে থাকে, তাহলে সেই স্বাধীনতা অর্জন করতে না পারার জন্য কাকে চিহ্নিত করবেন? না জেনে মন্তব্য করব না। বাস্তব উদাহরণ দেয়, আমার মা খুব খুব করে চান, আমি পড়ালেখার চিন্তা বাদ দিয়ে একটা ছেলেকে বিয়ে করে সংসারে থিতু হয়। তার সাথে মানিয়ে জীবনের পরিকল্পনা করি। বিয়ে করতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু সেই ইচ্ছাটা আমার জাগতে হবে। আমার মনে হয়, আমার নিজেকে আগে একটা সম্পর্ক চালিয়ে যাবার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, এবং সেই সাথে ব্যক্তিস্বত্তা বজায় রাখার দৃঢ়তা থাকতে হবে। তার আগ পর্যন্ত বিয়ের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া আমার কাছে অন্যায় মনে হয়। আমি আমার সিদ্ধান্ত এবং প্রস্তুতি নিজে নেব, এটাই সমর্থন করি। আমার মায়ের জোরের বিরুদ্ধে গিয়ে বলেছিলাম, ঠিক আছে, দিতে চাইলে দেন, আপনাদের শখ পূরণ হোক, তার পর আমি দুইদিনের মাথায় ডিভোর্স দিয়ে দেব। কেউ এসব জেনে বিয়ে করবে কি?
মায়ের উত্তর ছিল, তুমি এমন চিন্তা করলে জেনে রেখ, আমাদের কাছে ফেরার আর কোন পথ থাকবে না। তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিতে চাননি, কিন্তু আমিও আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে দেই না। এখন, আমি যদি আমার জীবনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র না হতে পারি, পরাজয় কি আমার না আমার মায়ের না আমার সমাজের? নিজের ব্যক্তিস্বত্তাকে নিজেরই প্রতিষ্ঠিত করতে হয়।
প্রকৃত পক্ষে আমার উপরের মন্তব্যটা ছিল তাদের জন্য, যারা শিক্ষিত হয়, প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু ব্যক্তি হয়ে ওঠে না। তাদেরকে আমি পাপে বলিনি, যাদের পাপ পূণ্য মহাকাশ থেকে নাযিল হয়। আদিম যুগে যারা রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে ভেবেছিল, ঝিকমিক করে, এগুলো কি! তাদের পর্যায়েও পৌছাতে পারেনি।
আর অস্ত্র? কৌশল? সেগুলো কি হাসান সাইদ এসে আমার হাতে দিয়ে যাবে? নাকি হাসান সাইদদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমিই প্রমাণ করব, আমার পাশে হাঁটার যোগ্যতা তোমাদের নেই? সেজন্য আমাকেই তাদের পরাস্ত করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। শিক্ষা, অর্থ, ক্ষমতা অর্জন করার সাহস আমাকেই করতে হবে। স্বামীর পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়লে কিচ্ছু হবে না। জুতোর ধুলোই মুছতে হবে। কপাল ভালো থাকলে আরো কিছু জুটবে।
মানুষ ঘুম থেকে জাগলে ঘরের দরজা, জানালাও খোলে, বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার জন্য। আর চার দেয়ালের মাঝে থাকলে শ্বাস নিয়ে বাঁচার জন্য মরার আগ পর্যন্ত দেয়াল ভাঙ্গার চেষ্টা করে যায়। ৯৯.৯৯% নারী সেটাও করতে ভয় পায়। বাঁচতে হবে, শুধু এই সহজ সত্যটা বুঝলেই হয়।
ফাইট ব্যাক। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
দারুন বলেছেন। (Y)
তবে আমার মনে হয় বিয়ে নামক চুক্তি মানে দাসত্বের চুক্তি।এই দাসত্ব মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি হলেও ছেলেরাও এ থেকে মুক্ত নয়।
ফাইট ব্যাক। 🙂
@আকাশ মালিক,
কোথাও ভুলে হচ্ছে না কি? আসুন, অবচেতন মনেও সবাইকে মানুষ ভাবি। 🙂
@আকাশ মালিক,
এই ঘটনাটা থেকে বহু কিছুই ফিগার আউট করার আছে, এবং একেকজন একেকটা জিনিষ ফিগার আউট করছে। কেউ ফিগার আউট করলো- এইটা পুরুষদের জন্য লজ্জাষ্কর, কেউ ফিগার আউট করলো নারীদের উচিত ফাইটব্যাক করা, কেউ ফিগার আউট করলো মেয়েদের হাইপারশহনশীলতা তাদের দুর্দশার জন্য বহুলাংশে দায়ী, কেউ ঘটনাটায় ফিগার আউট করলো বিবর্তনতত্ব। এই মুহুর্তে আমি ফিগার আউট করলাম উপরোক্ত সবগুলো অনুভুতিরই একটা মিশ্র জিনিষ, তবে যেই জিনিষটা আমাকে বিশেষভাবে অবাক এবং হতভাগ্য বোধ করায়, সেটা হচ্ছে- এই ঘটনাটি থেকে কিছু বঙ্গসন্তান ফিগার করেছিলো “এক হাতে তালি বাজে না!” :clap :clap উপরে আবার ফারুকেও ইতিহাস পাতিহাস ঘেটে সমস্যার সমাধানে একটি ন্যায়বিচার ফিগার আউট করল দেখা যাচ্ছে!!
@আল্লাচালাইনা,
আর সেই ন্যায়বিচারটা হলো গিয়ে মৃত্যুদন্ড। কি সাংঘাতিক!
সামান্য একটি পরকীয়ার শাস্তি মৃত্যুদন্ড কল্পনা করা যায়?
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার মন্তব্যের সাথে এতটাই একমত যে কেবল সহমত প্রকাশ করার জন্যই এ মন্তব্যটা করছি। 🙂
আমি বিশ্বাস করি – অধিকার কেউ কাউকে দিয়ে দেয় না, আদায় করে নিতে হয়। এটা নারী হিসেবে হোক, কিংবা মানুষ হিসেবে।
শকুনাচরণ শব্দটা জবর লাগল।
@রৌরব,
শকুনাচরণ, কোকিলাচরণ সবকিছুই আছে। যার যেটা পছন্দ বাছিয়া লৌন 😉
কোন কিছুকে জৈবিক বিবর্তনের আলোর নিচে ফেলার সরাসরি অর্থই দাড়ায় যে সেটার একটা জেনেটিক ভিত্তি রয়েছে যা ইমপিরিক্যালি পর্যবেক্ষনযোগ্য হতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন শাখা বৈবর্তনিক মনোবিজ্ঞানের প্রাথমিক চ্যালেন্জই হচেছ একটি নির্দিষ্ট আচরনের সাথে সম্পৃক্ত নির্দিষ্ট জিনটি চিহ্নিত করা ।
জীবের কোন আচরণকে যদি জেনেটিক বলা হয় এবং কোন জিন বা কোন অনু সেই আচরনের জন্য দায়ী – সেটা খন্ডনযোগ্যভাবে না চিহ্নিত করা যায় , তাহলে যে প্রথম প্রশ্নটি একজন জীব বিজ্ঞানীর মনে উদয় হবে , তাহলো যে প্রকৃতই আচরনটির কোন জেনেটিক তথা বৈবর্তনিক ভিত্তি আছে কি ?
যে কারনে সনাতন মনোবিদ্যা বৈজ্ঞানিক মানদন্ডে এখন পর্যন্ত কৃতকার্য হতে পারেনি , সেই একই কারনটি বৈবর্তনিক মনোবিদ্যার ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত প্রযোজ্য যদি না এই শাখাটি প্রাণীর আচরনের সুনির্দিষ্ট এবং ইমপিরিক্যালি পর্যবেক্ষনযোগ্য জেনেটিক ভিত্তি দিতে ব্যর্থ হয়। অন্যথায় সমাজ বিজ্ঞানের শাখামালায় নতুন নতুন পালক যুক্ত হতেই থাকবে অর্থনীতি, মনোবিদ্যা এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পথ ধরে।
@সংশপ্তক,
হ্যা, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের যে সমালোচনাগুলো আপনি করেছেন সেটা আমারো। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের অধিকাংশ গবেষণাই এখনো পরিসংখ্যানভিত্তিক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুব ভাল গাণিতিক মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে, তারপরেও এটা যতক্ষণ না আরো নিগূঢ় পরীক্ষণভিত্তিক এবং সর্বপোরি ‘জেনেটিক’ গবেষণাভিত্তিক বিষয়ে পরিণত হচ্ছে, ততদিন এ সমালোচনাগুলো থাকবেই। আশা করব সময়ের সাথে সাথে এটির প্রকাশ আরো সবল হবে।
গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।
@সংশপ্তক,
‘কার্গো কাল্ট সায়েন্স’ কথাটি শুনে থাকবেন বোধহয়, যেটি কিনা গ্রেইট রিচার্ড ফাইনম্যান কয়েনকৃত একটি টার্ম। এই টার্মটি তিনি উদ্ভাবনই করেন বিশেষ করে তথাকথিত মনোবিজ্ঞান কেনো সত্যিকারের বিজ্ঞান নয় সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। সমস্যা হচ্ছে মনোবিজ্ঞানকে যদি বিজ্ঞান বলতে হয়, তাহলে জ্যাক লাকা নামক এই করুণ সমাজবৈজ্ঞিনী-দার্শনিক ভাড়টিকেও একজন সত্যিকারের বিজ্ঞানী এবং সত্যিকারের পড়াশুনা জানা মানুষ হিসেবে অভিহিত করা লাগে। ও ইয়েস, সেই জ্যাক লাকা একদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে যার কিনা প্রচ্চন্ড প্রচ্চন্ড গণিত কষার শখ চাগা দেয়, এবং খাতা কলম নিয়ে বসে তিনি এক অভুতপুর্ব গণিত কষে ফেলেন। আমি নিশ্চিত মানব ইতিহাসে এইরকম গণিত এর আগে কখনও কষা হয়নি, এর পরেও কখনও কষা হবে না, হলেও হবে তার মতোই আরেকজন সুডোস্কলার দার্শনিক বিরিঞ্চিবাবা কর্তৃক! তার গণিতের ফলাফল ছিলো গিয়ে, wait for it…
এখানে উল্লেখ্য জ্যাক লাকা নিজেকে একজন সমাজবৈজ্ঞানী, মনোবৈজ্ঞানী, দার্শনিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে।
একেতো সাইকোলজি নিজেই হচ্ছে একটা কার্গো কাল্ট সায়েন্স, এরউপর যদি এর পুর্বে যুক্ত হয় ইভলিউশনারি প্রত্যয়টি, তবে অন্য কারো কথা জানিনা, আমাকে সেটা ব্যথিতই করে। কেননা, আমি কিছুটা হলেও জানি ইভোলিউশন কি এবং why it matters. আর সত্যিকারের বিজ্ঞানীরা ইভলিউশনারি সাইকোলজি করে না, ইভলিউশনারি সাইকোলজি করে গিয়ে সাতোশি কানাযাওয়ার মতো স্নেইক অয়েল সেলসম্যানেরা যারা বিজ্ঞানের মোড়কে নিজেদের মনগড়া একটা হোকাস-পোকাস আইডিওলজি মানুষের উপর চাপিয়ে দেবার ধান্দায় থাকে। একে ইভলিউশনারি বায়োলজি এমন একটা বিষয় যেটার কিনা বিরিঞ্চিবাবাক্রান্ত হবার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী। একদল ইউজেনিক্স করে ইভোলিউশনারি বায়োলজির বারোটা বাজায়, আরেকদল বারোটা বাজায় সোশ্যাল ডারউইনিজম করে- এমতাবস্থায় ইভলিউশনারি বায়োলজির ঘাড়ে ইভলিউশনারি সাইকোলজি নামক আরেকটা সিন্দাবাদের ভুত চাপানোর মানেটা কি, যেখানে এইটা কিনা কোয়াইট এভিডেন্ট যে এই ভুতটিকে পরবর্তীতে খসানো হতে যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত কঠিন? ইভলিউশনারি বায়োলজির দুই একটা বই আমি পড়েছি এবং সেগুলোতে অথারদের ইভলিউশন নিয়ে এইসব কার্গোকাল্ট সায়েন্টিস্টরা যেই ভ্যান্ডালিজম চালায় সেটা সম্পর্কে কখনই পজিটিভ হতে দেখিনি! কেউ যদি কোনকিছুকে সায়েন্স বলে তাহলে সবার প্রথমে সেইটাকে এভিডেন্স বেইজড হতে হবে, এমন একটা দাবীও করা যাবেনা যেইটার সপক্ষে কোন এভিডেন্স নাই। আমার সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা হচ্ছে, ইভোলিউশনারি সাইকোলজি যা যা বলতে চায় সেটা কেনো ইভলিউশনের ছত্রছায়ায় বলতে হবে, ইভলিউশনারি বিশেষণটা বাদ দিয়ে শুধু সাইকোলজি বললে এর গুনগত মানটা কমছে কোথায়? আর সত্যিকারের বিজ্ঞান যেইভাবে কাজ করে, সাইকোলজি কিংবা ইভলিউশনারি সাইকোলজি ক্লিয়ারলিই সেই একই পদ্ধতিতে কাজ করছে না।
@আল্লাচালাইনা,
হাঃ হাঃ, আপনার বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে আক্রোশ একেবারেই যাচ্ছে না দেখছি। ইউজিনিক্সের অপব্যবহার হয়েছিলো তা সত্যি, কিন্তু তা বলে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করা যাবে না, সেটা তো নয়। আজকের বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানীরা দাবী করেন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই তাদের গবেষণা করছেন। তারা খুব ভালভাবেই নাৎসী ইউজিনিক্স কিংবা স্পেন্সরের সামাজিক ডারউইনবাদ থেকে নিজেদের কাজকে আলাদা করতে পেরেছেন। নাৎসীরা ডারউইনবাদকে ভুলভাবে প্রয়োগ করে ইউজিনিক্স নামে অপবিজ্ঞানের চর্চা করেছিল বলেই ভবিষ্যতে ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে আর কখনোই কোন কিছু বিশ্লেষণ করা যাবে না এই দিব্যি কেউ দিয়ে যায়নি। বস্তুতঃ প্রাণিজগত যেমন – গরিলা, শিম্পাজিদের সামাজিক প্যাটার্ণ গবেষণার জন্য ডারউইনীয় বিবর্তন তত্ত্বের শ্মরণাপন্ন হওয়া ছাড়া গতি নেই। মানুষও তো প্রানীজগতের বাইরে নয়, তাহলে মানব সমাজকে ডারউইনীয় বিশ্লেষণ থেকে বাইরে রাখতে হবে কেন?
হ্যা জ্যাক লাকা কিংবা সাতোশি কানাজাওয়ার মতো কিছু নাট কেস সব শাখাতেই আছে। তা বলে পুরো শাখা তো বাতিল হয় যায় না। আপনি নিশ্চয় ‘Schön scandal’ সম্বন্ধে অবহিত; সেই জার্মান পদার্থবিদ Jan Hendrik Schön সেমিকন্ডাকটর নিয়ে ‘যুগান্তকারী’ গবেষনার ফলাফল হাজির করেছিলেন, সেগুলো প্রকাশিত হয়েছিল সায়েন্স, নেচারের মত জার্নালে। পরে দেখা গেল তার গবেষনা পুরটাই জোচ্চুরী। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি Otto-Klung-Weberbank Prize, Braunschweig Prize, Materials Research Society সহ বহু পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছিলেন। তাকে অভিহিত করা হচ্ছিল সময়ের সবচেয়ে উদীয়মান বিজ্ঞানী বলে। তার এ সমস্ত জোচ্চুরী প্রকাশিত হবার পর বিভিন্ন জার্নাল থেকে তার পেপারগুলো সরিয়ে নেয়া হয়, এমনকি তার পিএইচডি ডিগ্রীও বাতিল হবার উপক্রম হয়েছিল। এখন কথা হচ্ছে Schön এর মত এক বাটপারের জন্য কি পুরো পদার্থবিদ্যা কিংবা সেমিকন্ডাকটরের সব রিসার্চ বাতিল হয়ে গেছে? হয়নি কিন্তু। শাখাগুলো সুডোসায়েন্সেও পরিণত হয়নি। একই কথা বলা যায় বিবর্তন সম্বন্ধেও। বিবর্তনেও তো কিছু জোচ্চুরী হয়েছে – পিল্টডাউন ম্যান হোক্স, নেব্রেস্কা ম্যান হোক্স এগুলোর কথা কমবেশি সকলেই জানেন। কিন্তু সেগুলোর কারণে পুরো বিবর্তনকে বাতিল বলার চেষ্টা করেন সৃষ্টিবাদীরা। তাই সাতোশি কিংবা এরকম কারো জন্য পুরো শাখা বাতিল হতে পারে না। যদি তাদের গবেষনায় ভুল হয়, সেটা বৈজ্ঞানিকভাবেই দেখানো সম্ভব।
আরো একটা ব্যাপার হল – যারা বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের পায়োনিয়ার যেমন, জন টুবি লিডা কসমাইডস, তারা কিন্তু হার্ডকোর বিজ্ঞানীই ছিলেন। আমি যতদূর জানি টুবি প্রথম জীবনে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী, আর লিডা এন্থ্রোপলজিস্ট। এরা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞান বোঝেন, তারা সুডোসায়েন্স প্রমোট করলেন, আর দুনিয়াব্যাপী সবাই সেটা টুপ করে গিলে ফেললো, তা কিন্তু নয়। প্রতিটি নতুন শাখাকেই বিভিন্ন কাঠখড় পুড়িয়েই নিজ আসনে অধিষ্ঠিত হতে হয়। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের জন্যও সেটা সত্যি। আর বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের অনেক গবেষকই যেমন – হেলেনা ক্রনিন, সারা বাফার হার্ডি, রবিন বেকার, রিচার্ড রাংহ্যাম – এরা কিন্তু হার্ডকোর বাইয়োলজিস্ট কিংবা এন্থ্রোপ্লজিস্ট ছিলেন। কাজেই তারা জীববিজ্ঞান না বুঝেই সেটা সামাজিক জীবনে প্রয়োগ করবেন, সেটি সম্ভবতঃ সঠিক উপসংহার হবে না। ইউ টিউব থেকে জন টুবি আর লিডা কসমাইডসের একটা সংলাপভিত্তিক ডকুমেন্টরি দেয়া গেল –
httpv://www.youtube.com/watch?v=nNW_B8EwgH4
রিচার্ড ডকিন্সেরও কিন্তু ইভলুশনারী সাইকোলজি নিয়ে অনেক লেকচার আছে। তার মধ্যে এটি আমার খুব প্রিয় –
httpv://www.youtube.com/watch?v=BzJUCG7L9I4
আমার মতে, যেটা দরকার তা হল বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো দূর করা, শাখাটিকে পুরোপুরি বাতিল করা নয়।
@অভিজিৎ, বিবর্তনবাদী মনোবিদ্যা বলছে- “এইযে পুরুষেরা এতো জেলাস হয় এর অবশ্যই একটা কারণ রয়েছে, এইটা পুরুষের ফিটনেস কোন না কোনভাবে বর্ধিত করছে”। খুবই ভাল কথা, কিন্তু এইটা কি অনেকটা সেলফ ইন্টুইটিভই না যে- একটা জিনিষ টিকে থাকলে এইটাই বেশী সম্ভাবনাপুর্ণ যে সেটার কোন না কোন সিলেক্টিভ এডভান্টেইজ রয়েছে? বিবর্তন মনোবিদ্যা নতুন কি উপাত্তটা উতপাদন করলো এইখানে?
বিবর্তনবাদী মনোবিদ্যা বলছে- “কাকোল্ড্রির শিকার হয়ে পুরুষ অন্যের সন্তান মানুষ করে ফেললে সে জেনেটিকালি লুজার হয়ে যাচ্ছে, এর ফলেই জেলাস হওয়াটা তারজন্য মঙ্গলজনক”। বেশ, তো কিভাবে এইটা ভেরিফাইএবল, কি দেখলে তুমি সন্তুষ্ট হতে যাচ্ছো যে তোমার হাইপথেসিস ভুল, কিভাবে তোমার হাইপথেসিস তুমি টেস্ট করতে পারো?
সত্যিকারের সায়েন্স কিন্তু এতোটা লড়বড়ে না। একপ্রজাতির ফাঙ্গিতে প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন খুঁজে পেয়ে আমরা দেখেছি এইটা একটা বেটা ল্যাক্টাম অনু। ল্যাক্টাম রিং একটি ৪ মেম্বার্ড রিং তার উপরে একটা কার্বন এসপি২ হাইব্রিডাইজড, তার উপর প্রত্যেকটি কার্বন জড়িত হেটেরোএটমের সাথে। বেটা ল্যাক্টাম প্রচন্ড প্রচন্ড ল্যাবাইল একটা অনু যার ফলে কিনা অনেক বেটা ল্যাক্টাম এন্টিবায়োটিক গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল পথে প্র্যোগ করা যায় না, পাকস্থলীর চরম অম্লীয় পিএইচ-এ ল্যাক্টাম রিং ভেঙ্গে যায়, প্রয়োগ করতে হয় ইন্ট্রাভেনাস পথে। এইসব দেখে আমরা বলেছি- বেটা ল্যাক্টাম যখন এতোটাই ল্যাবাইল, তখন খুব সম্ভবত চার বিলিয়ন বছর ধরে সদর্পে টিকে থাকা ব্যাক্টেরিয়াতে ইতিমধ্যেই বেটাল্যাক্টামেজ এনযাইম বিবর্তিত হয়েছে এদের ল্যাক্টাম রেসিস্টেন্স দিতে, এবং খুব সম্ভবত এই বেটা ল্যাক্টামেস আমরা পেতে যাচ্ছি সেই ইকোলজিকাল নিচ দখল করে রাখা ব্যাক্টেরিয়াতেই যেই ইকোলজিকাল নিচে আমরা প্রথম পেয়েছিলাম ল্যাক্টাম উতপাদনকারী ফাঙ্গি। এবং গেস হোয়াট, আমাদের প্রেডিকশন হয়েছিলো বাস্তবতার সাথে ১০০% সঙ্গতিপুর্ণ।
তারপর আমরা বলেছি- ওয়েল, ব্যাক্টেরিয়া যেহেতু পিলির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে প্লাজমিড আদান-প্রদান করে, তাহলে এন্টিবাইয়োটিক ব্যাবহার বাড়ার সাথে সাথে বেটা ল্যাক্টামেজ জিন আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকবে সেই ইকোলজিকাল নিচ বহির্ভুত অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়াতেও। এইবারেও আমাদের অপ্রেডিকশন হয়েছে বাস্তবতার সাথে ১০০% সঙ্গতিপুর্ণ। আমরা বেটা ল্যাক্টামেজ ইনহিবিটর ডিভেলপমেন্টে মনোনিবেশ করেছি।
তারপর আমরা বলেছি অদুর ভবিষ্যতে এমন একটা নতুন এনযাইম বিবর্তিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে যেটা কিনা ল্যাক্টামেজ ইনহিবিটরের বিরুদ্ধেও রেসিস্টেন্স অর্জন করবে এবং এইটা ঘটবে কোন অনুন্নত এবং চরম চরম ঘন বসতিপুর্ণ দরিদ্র দেশে। এইবারেও আমাদের প্রেডিকশন হয়েছে ১০০% সঠিক যখন কিনা ২০০৮ সালে প্রথম আইসোলেট করা হয় নিউ দিল্লি মেটালো বেটা ল্যাক্টামেজ বা NDM-1 এক্সপ্রেসকারি নিউমোনিয়া ব্যাক্টেরিয়া। আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী আরও আছে, খুব সম্ভবত আমাদের জীবদ্দশায় আমরা দেখতে যাচ্ছি পোস্টএন্টিবায়োটিক এইজের আগমন, যখন কিনা বেঁচা থাকা প্রত্যেকটি ব্যাক্টেরিয়াই এক্সপ্রেস করবে NDM-1 বা ল্যাক্টাম রিং ভাঙ্গার অন্যকোন চরম চরম দক্ষ জিন! এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপুর্ণ হয় কিনা সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারে, ব্যক্তিগতভাবে আমি ইম্পোজ করবো এরাউন্ড ৯০% সম্ভাবনা!
সত্যিকারের বিজ্ঞানের এই ভিগরাস বিজয়ের কাছে কার্গোকাল্ট বিজ্ঞানের অবদান কতোটুকু, বাস্তবতার অসাথে এইরকম লক এন্ড কি ফিট কবে নিয়ে আসতে পেরেছে কার্গোকাল্ট বিজ্ঞান? পারেনাই কি কারণে, কারণটা আবার এইটা না তো যে- এরা বাস্তবতা সম্পর্কে কোন ড্যামই দেয় না, তারা কথা বলে মানবো প্রবৃত্তি নিয়ে বাস্তবতার বিপরীতে সেটাকে প্রোব করার, যেটাকে অ্যাসে করার কোন উপায় নেই? কার্গোকাল্ট বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এইটা মানুষ কিনে কেননা এইটা বোঝা সহজ, এইটা করা সহ্ এইটা করতে কোন স্পেশাল স্কিল লাগে না, হাড়ো ভাঙ্গা খাঁটুনী করতে হয়না, যেইজন্য এইটার নাম কিনা ফাইনম্যান দিয়েছিলো কার্গোকাল্ট বিজ্ঞান। এরা শ্রোডিঙ্গার্স ক্যাট নিয়ে হ্যাব্বি টেনশনে পড়ে যায়, তারা বলে বাক্সের ভেতর বেড়াল যতোক্ষণ রয়েছে ততক্ষণ বেড়ালটি একইসাথে জিবীত এবং মৃত। বেশ ভালো কথা, তো বাক্সটা খুলে দেখি তোমার বক্তব্য সত্য কিনা। তখন তারা বলে যে- না না বাক্স খুলে ফেললে ওয়েইভ ফাঙ্কশন কলাপ্স করবে। অর্থাত, এইটা একটি বোথ ওয়েই সোও, দুই দিক দিয়েই এইটা কাটে, যেইকারণে শ্রোডিঙ্গার নিজে কিন্তু এটাকে বলেছিলো নিছকই একটি থট এক্সপেরিমেন্ট। অপরপক্ষে শ্রোডিঙ্গারের অন্যান্য অবদান যা কিনা বাস্তবতায় ট্রান্সলেট হয় এবং মনোমুগ্ধকর নিখুঁত ফল দিতে পারে, যেমন- বর্তমানে কম্পিউটেশনাল কেমিস্ট্রিতে ব্যাবহৃত এব ইনিশিয়ো মডেলিঙ্গ, মন্টে কার্লো সিমুলেশন এবং হার্ট্রি-ফক এপ্রক্সিমেশন ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই কেননা এইগুলি বুঝতে আসলেই পড়াশুনা জানা লাগে। কার্গোকাল্ট বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ একটাই, এইটা বিজ্ঞানের প্রতি মানুষকে অশ্রদ্ধাশীল করে হযরত ফারুকের দঙ্গল জন্ম দেয়, একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।
রিচার্ড ফাইনম্যানের একটা কথা আছে, “বাস্তবতা যদি তোমার না ভাল্লাগে তাহলে অন্য কোথাও যাও, অন্য কোন মহাবিশ্বে যাও যেইখানে বাস্তবতা কিনা তোমার বোঝার পক্ষে পর্যাপ্তভাবে সহজ, তোমার চাহিদানুসারে নান্দনিকভাবে সৌন্দর্যপুর্ণ এবং তোমার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে সমঝোতাপুর্ণ। এই মহাবিশ্বের বাস্তবতা এইরকমই, এইটা কঠিন, এবং এর কাঠিন্যকে তোমার বোঝার জন্য সহজ আমি করে দিতে যাচ্ছি না। কঠিন বাস্তবতাকেই তোমার বুঝতে হবে।”
আরেকটা ব্যাপার লক্ষণীয় কার্গোকাল্ট বিজ্ঞান চলে মানুষের কথায়, এবং এরচেয়ে অবৈজ্ঞানিক আর কিছু কি হতে পারে? ১৬৪০ সালে বৃটেনে লন্ডনের সমারসেট হাউসে রাজা দ্বিতীয় চার্লসের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থাপিত হয় রয়াল সোসাইটি নামক একটি প্রতিষ্ঠান যার মটো ছিলো nunnius in verba যেটি কিনা ছিলো খুব সম্ভবত মানব সভ্যতার প্রথম সায়েন্টিফিক কমিউনিটি। সেইখানে নিউটন, হুক এবং রসায়নশাস্ত্রের একজন স্থপতি রবার্ট রয়েল সত্যিকারের বিজ্ঞান করছিলো এবং সেইসময় তাদের সমাজে ছিলো বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা এবং বাস্তবতাকে বোঝার জন্য ছিলো মানুষের ভেতর প্রেরণা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেই প্রেরণাকে বাঁচিয়ে রাখা হতো। ফলাফল? ওয়েল- ফলাফল স্টীম এঞ্জিন, ইলেক্ট্রিসিটি, উন্নত অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ, জাহাজ, সমুদ্রযাত্রা অতপর সমগ্র পৃথিবীকে নিজ পদতলে তাদের পরাভুত করা। তাদের দিগবিজয়ে তাদের একান্ত সঙ্গী হয়েছিলো সত্যিকারের বিজ্ঞান, তারা রয়াল সোসাইটিতে বসে কার্গোকাল্ট বিজ্ঞান করলে, আলকেমি এস্ট্রোলজি করলে সোমারসেট হাইসমসমেত এতোদিনে তারা হতো ফ্রেঞ্চ কলোনী। আপনার যেই প্রতিষ্ঠিত ফ্যানবেইজ রয়েছে তাদের সত্যিকারের বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তুললে সেই আগ্রহ তারা তাদের আশপাশের মানুষদের মধ্যে সঞ্চালিত করতে পারে, সঞ্চালিত করতে পারে তাদের সন্তানদের মধ্যে। এইটা তারা করলে তাদের নিজেদের, অন্যান্যের এবং কে জানে হয়তোবা সমগ্র বাংলাদেশের চেহারাই পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
@আল্লাচালাইনা, সরি একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি- nullius in verba মানে হচ্ছে on the word of no one বা ‘কারো কথাতেই নয়’।
@আল্লাচালাইনা,
বিবর্তনী মনোবিজ্ঞানে যেহেতু ক-অক্ষর বলেন আর ব-অক্ষর বলেন, এক অক্ষরও জ্ঞ্যান নাই তাই এনিয়ে মন্তব্য করতে পারছি না। অভিজিৎ ভাইয়ের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।
তবে আপনার আপত্তিটা যথার্থ জায়গায় হয়েছে তা আমি মানছি। কারন স্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে, বিভিন্ন বিজ্ঞানীর স্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে মতামত দেখে বুঝলাম তাদেরও আপত্তি ঠিক আপনারই মত। এমনকি এখানে সংশপ্তক ভাই আমাকে প্রশ্ন করেছিলো স্ট্রিং তত্ত্ব কতটুকু তত্ত্ব? নাকি শুধুই হাইপোথিসিস? তবে আমার মনে হয় স্ট্রিং তত্ত্ব কিন্তু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের মত এতটা ইনটুইটিভ না, বা হলেও স্ট্রিং তত্ত্ব কিন্তু গানিতিক ভাবে সুসংহত। ট্যাকিয়ন কিংবা গ্রাভিটনের সমস্যাও কিন্তু স্ট্রিং তাত্ত্বিকতা গানিতিকভাবে সমাধান করতে পারেন। তারপরও এঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, কারন একটাই স্ট্রিং তত্ত্ব ভবিষ্যদ্বানী করছে না। রূপম ভাই এখানে আছেন তারও দর্শন এমনই ভবিষ্যদ্বানী করতে হবে, নাহলে ফলসিফাইবল কীভাবে হবে?
আর আরেকটা ব্যাপার হলো, আমি নিজেও স্ট্রিং তত্ত্বের ব্যাপক ফ্যান (জাস্ট হাইলী ইন্টারেস্টেড 🙂 ) কিন্তু আমাকে যখন কোন বন্ধু কোন একটা ফ্যাক্ট ব্যাখ্যা করতে বলে, তখন কিন্তু আমি স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেমওয়ার্কেই বলি। যদিও থিউরি মানেই ফ্যাক্টকে ব্যাখ্যা করে, তারপরও সেখানে আমি স্ট্রিং তত্ত্বকে এখনো সেভাবে ব্যবহার করতে পারিনা। তাই অভিজিৎ ভাইয়ের কাছে আমিও প্রশ্ন রাখছি তাহলে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানকে কীভাবে ফ্যাক্ট ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করছেন?
অ.টঃ এই কমেন্টটা মোটামুটি ডেভিলস এ্যাডভোকেসী টাইপের, যাতে আমারো কিছু জানা হয়।
@আল্লাচালাইনা,
আপনি বিবর্তন মনোবিজ্ঞান নিয়ে যে আপত্তিগুলো করেছেন, সেগুলো অনেকে পুরো বিবর্তনের জন্যও প্রয়োগ করতে পারেন কিন্তু। উদাহরণ দেই। ডারউইন বর্ণিত ‘সেক্সুয়াল সিলেকশন’ এর কথাই ধরুন। ডারউইন প্রকৃতিজগৎ অধ্যয়ন করে মত দিয়েছিলেন যে, মেয়েরা হয় খুঁতখুঁতে ( choosy), অন্যদিকে পুরুষেরা হয় প্রতিযোগিতাপরায়ণ। তাদের আকার বড় হয়, তারা হয় বলশালী, আর নানা রকম আকর্ষণীয় ট্রেইট এর হদিস পাওয়া যায় (উজ্জ্বল রঙ, শিং, দ্রুতগামিতা, নৃত্য…)। ডারউইন মত প্রকাশ করেছিলেন যে, সেক্সুয়াল সিলেকশনের ফলে মুয়ুরের পেখম বিবর্ধিত হয়েছে, চিত্রল হরিণের শিং বিবর্ধিত হয়েছে ইত্যাদি। এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় সেক্সুয়াল সিলেকশন বা সর্বোপরি বিবর্তন এখানে নতুন উপাত্তটা কি উৎপাদন করলো? একটা জিনিষ টিকে থাকলে এইটাই বেশী সম্ভাবনাপুর্ণ যে সেটার কোন না কোন সিলেক্টিভ এডভান্টেইজ রয়েছে? টেকনিকালিটি না হয় বাদ দেন – প্রাকৃতিক নির্বাচনের মূল সংজ্ঞাই তো তাই – প্রতি প্রজাতির জীবে জীবে ইন্ট্রা-স্পিশিজ আর ইন্টারস্পিশিজ প্রতিযোগিতা হয়, যেটাকে ডারউইন বলেছিলান – জীবন সংগ্রাম। এই জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে যে প্রজাতিতে জীবের কোন বৈশিষ্ট বা ভ্যারিয়েশন সামান্য অতিরিক্ত যোগ্যতা বা উপযোগিতা প্রদান করে, সে পরিবৃত্তি নিয়ে জীব প্রতিযোগিতায় সফল হয়। তুলনামূলকভাবে উত্তম অভিযোজিত পরিবৃত্তিটি অধিকতর বেশি বংশধর রেখে যায়। এটাই কি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মোদ্দা কথা নয়? এই প্রাকৃতিকনির্বাচন দিয়েই তো পৃথিবীতে সকল জীবের টিকে থাকাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে – বলা হয়েছে তারা প্রাকৃতিক নির্বাচনে টিকতে পারেনি। তাই না? নতুন উপাত্তটা উতপাদন করলো কোনখানে? তেলাপোকা, বাঘ টিকে আছে, তাই তারা প্রাকৃতিক নির্বাচনে সফল, অপর পক্ষে ডায়নোসর সহ শতকরা ৯৯ ভাগ প্রজাতি টিকতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এগুলোকে যদি প্রাকৃতিক নির্বাচন, যৌনতার নির্বাচন দিয়ে যদি ব্যাখ্যা করা যায়, তবে আচরনের উপর ডারউইনীয় লজিক প্রয়োগ করলে ক্ষতি কি? এমন তো নয় যে, বিবর্তন কেবল মানুষের ঘারের কাছে উঠে থেমে গেছে , মাথা পর্যন্ত আর এগোয়নি। আগেই বলেছি – মানুষের হাতের আঙ্গুল কিংবা পায়ের পাতা তৈরিতে যদি প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং যৌনতার নির্বাচন সহ বিবর্তনের নানা প্রক্রিয়াগুলো ভূমিকা রেখে থাকে, মস্তিস্ক তৈরির ব্যাপারেও এটি ভূমিকা রাখবে এটাই স্বাভাবিক। আর মানব মস্তিস্ক গঠনের পেছনে যদি প্রাকৃতিক নির্বাচন, সেক্সুয়াল সিলেকশন সহ নানা বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া দায়ী হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রভাব পড়বে মস্তিস্কের কাজেও। মানুষের আচরণই হচ্ছে মস্তিস্কের কাজের ফসল। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা বিবর্তনের যে সূত্রগুলো শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন এবং অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য সত্যি মনে করেন, সেগুলো মস্তিস্কের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্যও ব্যবহার করতে চান। এখন সবসময় সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন সেটা বলছি না। ভুলভাবে প্রয়োগ করলে সেটাকে বৈজ্ঞানিকভাবেই খণ্ডন করা সম্ভব। এটা তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন আর সেক্সুয়াল সিলেকশনকে কেবল প্রানীজগতকে ব্যখ্যার জন্য, আর মানব সমাজ কিংবা মানব আচরণকে ডারউইনীয় ব্যাখ্যার বাইরে রাখতে হবে – এটা আমার মতে গোয়ার্তুমি।
আর আপনি এক্ষেত্রে নতুন উপাত্ত উৎপাদন করেছে কিনা জানতে চাইছিলেন। আমার মতে তা করেছে। এতোদিন ধরে আমরা বই পত্রে সাহিত্য সংস্কৃতিতে দেখে এসেছিলাম মেয়েদেরকে কামুকী, হিংসুক, ঈর্ষাপরায়ণ ইত্যাদি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। নতুন উপাত্তটা হল ডারউইনীয় লজিক প্রয়োগ করে দেখা গেছে ব্যাপারটা উলটো – পিতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ থাকার ফলশ্রুতিতে সেক্সুয়াল জেলাসি পুরুষদেরই বেশি। তার সঙ্গির অবিশ্বস্ততা নিয়ে তারাই বেশি পেরেশান থাকে, তারাই বেশি সহিংস হয়। এটা আপনার কাছে নতুন কোন দৃষ্টিকোন বা উপাত্ত মনে হল না?
আমার লেখায় বেশ কিছু রেফারেন্স দেয়া হয়েছে কিভাবে এই হাইপোথিসিস টেস্ট করা হয়েছে। আমার লেখাটির ৯, ১০, ১১, ১২ নং রেফারেন্সে দেয়া পেপারগুলোতে এ নিয়ে আলোচনা আছে। তবে হ্যা স্বীকার করছি, অধিকাংশ গবেষনাই এ মুহূর্তে সমীক্ষাভিত্তিক, তবে ভবিষ্যতে হয়তো মডেলগুলো অনেক জোরালো হয়ে উঠবে। এটা তো বিজ্ঞানের সব শাখাতেই হচ্ছে।
একটি ব্যাপার চিন্তা করে দেখুন – বিবর্তনের ছাপ নারী পুরুষের দেহের উপর পড়েছে। এমন নয় বিবর্তন-এর ক্রমধারায় নারী পুরুষের দেহ ঠিক ‘একই রকম’ ভাবে গড়ে উঠেছে। পুরুষ নারীর দেহের আকার আয়তন, দেহসৌষ্ঠব, গলার স্বর, হাটা চলা সবকিছুতেই এই পার্থক্যসূচক অভিব্যক্তিগুলোর ছাপ স্পষ্ট। এখন কেউ যদি বলেন – বিবর্তন কেবল মানুষের দেহের উপর কাজ করেছে, আচরণের উপর (মানে নারী পুরুষের মস্তিকের গঠন এবং কাজের উপর) করেনি – এটা কোন বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত নয়, আবেগী সিদ্ধান্ত। সংস্কৃতি নির্বিশেষে (হোক সেটা সমীক্ষার মাধ্যমেই) যদি পার্থক্যসূচক অভিব্যক্তিগুলো ধরা পড়ে সেটাকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার অংশ হিসেবে ধরা যাবে না কেন? যাবে নিশ্চয়।
আমি বেটা ল্যাক্টাম অনু নিয়ে আপনার সাথে টেকনিকাল আলোচনায় যাচ্ছি না। এটা আমার গবেষণার বিষয়ও নয়। কিন্তু যেটা বলতে চাইছি ‘সত্যিকারের সায়েন্স কিন্তু এতোটা লড়বড়ে না’ বলে যে স্টেটমেন্টটা দিয়েছেন, সেটা ব্যাকফায়ার করতে পারে। কেউ বলতে পারেন সত্যিকার সায়েন্সের একটা বড় ভিত্তি প্রেডক্টিবিলিটি। যেমন, ৫০ গ্রাম বস্তুর উপর আপনি ২ নিউটন বল প্রয়োগে বস্তুটা ঠিক কতদূরে যাবে আপনি খুব প্রিসাইসলি নিউটনের সূত্র দিয়ে প্রেডিক্ট করা যাবে, এবং সঠিক ফলাফল বেরিয়েও আসবে। সেজন্যই এটা শক্তিশালী সায়েন্স। এখন যদি আপনাকে বলা হয় যে, এধরণের প্রেডিক্টিবিলিটি বিবর্তনের জন্য (ম্যাক্রোবিবর্তনের জন্য) প্রয়োগ করে দেখান, যাবে কি? আপনাকে যদি বলা হয় একলক্ষ বছর পরে প্রাইমেটদের কী নতুন প্রজাতি থাকবে কিংবা মানুষের মধ্যেই কী কী নতুন বৈশিষ্টের ওভ্যদয় ঘটবে – তা কি আপনি প্রিসাইসলি বলতে পারবেন? না। কারণ বিবর্তন ঠিক নিউটনের সূত্রের মত সায়েন্স না, বিবর্তন অনেকটাই ইতিহাস আশ্রয়ী বিজ্ঞান। আমরা ততীতের ফসিল রেকর্ড দেখে, ডিএনএ গঠন, মিঊটেশনের হার প্রভৃতি দেখে সিদ্ধান্তে আসি যে অতীতের প্রজাতিগুলোর মধ্যে কি কি পরিবর্তন সংগঠিত হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতের প্রজাতিদের জন্য কোন নিখুঁত ভবিষ্যদ্বানী সব সময় করতে পারি না। জেরি কোয়েন তার ‘Why Evolution Is True’ বইয়ে বলেছেন, বিবর্তন প্রেডিকশন করেনা, মুলতঃ করে রেট্রোডিকশন (পৃঃ ১৮)। কিন্তু সেজন্য তো বিবর্তনকে স্ট্রং সায়েন্স হতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদা কিংবা প্রত্নতত্ত্বও অনেকসময় রেট্রোডিকশনের ভিত্তিতেই কাজ করে, সেগুলোও অপবিজ্ঞান হয়ে উঠেনি।
আপাততঃ এইটুকুই থাকুক, পরে আবার সময় সুযোগমত আলোচনা করা যাবে।
@অভিজিৎ, ভবিষ্যত সময় সুযোগের অপেক্ষায় আমিও এখানেই রাখতে চেয়েছিলাম আপাতত, তবে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করলেন বলে সেগুলর উত্তর দিতে বসলাম। আপাতত এইকাহেনি রাখছি, নতুন আর কোন প্রশ্ন উত্থাপন করছি না, তবে একটা অনুরোধ আমার থাকবে আপনার কাছে- বিবর্তনবাদী মনোবিদ্যা বিষয়ক আপনার পরবর্তী পোস্টটির কোথাও আপনি প্লিজ উল্লেখ করবেন বিবর্তন মনোবিদ্যার তিনটি বা পাঁচটি সবচেয়ে সাকসেসফুল, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং সবচেয়ে গ্রাউন্ডব্রেইকিং আবিষ্কার। এর কারণ হচ্ছে- আমি যদি বিবর্তনবাদী মনোবিদ্যার গুরুত্ব বুঝতে আসলেই ব্যর্থ হই, সেই ব্যার্থতা আমি ঘোচাতে চাই। ব্যাপারটা আমাদের আরেকটু নির্লিপ্তভাবে দেখতে হবে, নাহলে আমরা কোথাও পৌছুতে যাচ্ছি না।
রেফ্রেন্সগুলো দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু কিভাবে দেখবো এগুলিতো মেডলাইনে ইনডেক্সড না। সাইকোলজিকাল রিপোর্টস আর ট্রেন্ডস ইন ইকোলজি এন্ড ইভোলিউশন ছাড়া বাকী একটা জার্নালও মেডলাইনে ইনডেক্সড না।
সাইকোলজিকাল সায়েন্স, কারেন্ট ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর– ৪.২৫১; মেডলাইন ইনডেক্সিং স্ট্যাটাস– ইনডেক্সড নয়।
জার্নাল অফ ম্যারেইজ এন্ড ফ্যামিলি, কারেন্ট ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর– ১.৫৫৩ ; মেডলাইন ইনডেক্সিং স্ট্যাটাস– ইনডেক্সড নয়।
ইথোলজি এন্ড সোসিওবায়োলজি, কারেন্ট ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর– ২.৯২ ; মেডলাইন ইনডেক্সিং স্ট্যাটাস– বায়োএথিক্স ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে প্রকাশিত এই জার্নালের প্রবন্ধ মেডলাইনে ইনডেক্সড নয়।
ইভোলিউশন এন্ড হিউম্যান বিহেইভিয়ার; কারেন্ট ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর– ৩.৫৯৪; মেডলাইন ইনডেক্সিং স্ট্যাটাস– বায়োএথিক্স ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে প্রকাশিত এই জার্নালের প্রবন্ধ মেডলাইনে ইনডেক্সড নয়।
এই জার্নালগুলো কেনো ইনডেক্সড না সেটা NLM এর ওয়েবসাইটেই বলা রয়েছে ।
রাসুলুল্লাপাক হযরত হয়রান এবং অন্যান্য ছাগালাপীরা একদা এলসাফিয়ের প্রকাশনীর কোন একটা জার্নালে ‘কোরানে বহতই বিজ্ঞান রহিয়াছে’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র আবিষ্কার করে বেশ লাম্ফঝম্প করছিলো, আমরা তখন বলেছিলাম যে- সাড়ে তিন ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর পাওয়া জার্নালে কোরানে খুঁজে পাওয়া বিজ্ঞান বিষয়ে শুধু না, রোমিও-জুলিয়েট কিংবা হ্যামলেটে খুঁজে পাওয়া বিজ্ঞান বিষয়ে লেখা প্রবন্ধও প্রকাশিত হবে! এইখানে উল্লেখ্য সেই আধিভৌতিক জার্নালটিও এমনকি ছিলো মেডলাইনে ইনডেক্সড, আমার মনে আছে আমি পাবমেডের মাধ্যমে ঐ প্রবন্ধটিতে এক্সেস করেছিলাম। এখন এই উপরোক্ত চিত্রটি সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে বিবর্তন মনোবিদ্যার কথিত ক্রেডেন্সিয়ালকে কি সমর্থন করছে?
কথাটা আমি সম্পুর্ণ সঠিক মনে করিনা। রেট্রোডিকশন কোন মেশ টার্ম নয়। মেশে প্রেডিকশন শব্দটির সংজ্ঞা দেওয়া রয়েছে The prediction or projection of the nature of future problems or existing conditions based upon the extrapolation or interpretation of existing scientific data or by the application of scientific methodology. আমি একে ব্যাখ্যা করবো এইভাবে- একটি হিদার্টো আনফোরসিএবল ঘটনাকে বাস্তবতা বলে দাবী করার পর যদি আসলেই দেখা যায় সেটি বাস্তবে ঘটছে তবে একটি প্রেডিকশন কনফার্মড হয়। বিবর্তন প্রেডিকশন করেনা কথাটি হয়তো সঠিক, কেননা বিবর্তন একটি প্রসেস। প্রেডিকশন করে হচ্ছে গিয়ে এই প্রসেসটি বোঝার মধ্য দিয়ে যেই মডেল আমরা সংগঠিত করেছি, সেই মডেলটি। যেমন- জার্মলাইন কোষে এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাস সংক্রমনের ফলে জন্ম নেওয়া প্রোভাইরাল ইনসার্টশন রয়েছে মানুষের জিনোমে প্রায় ১০০,০০০; যার মধ্যে ১% K class hERVই শুধু মানুষের লিনিয়েইজে ইউনিক। এইক্ষেত্রে, ইভলিউশনারি মডেলের একটা অন্যতম প্রেডিকশন হবে যে- বাদবাকী আর সবকয়টা প্রোভাইরাল ইনসার্টশন আমাদের এবং শিম্পাঞ্জীর জিনোমে থাকবে একই লোসাইতে, একই সিকোয়েন্স সহকারে। আমাদের বনমানুষ জিনোম ৩.২ গিগাবেইসপেয়ার লম্বা। অর্থাৎ, এই ঘটনাটি ঘটার রাফ এক্সপেক্টেশন ভ্যালু প্রায় (১/৩,২০০,০০০,০০০)^১০০,০০০! তথাপিও বাস্তবতার দিকে তাকিয়ে আমরা ঠিক এই ঘটনাটাই ঘটতে দেখি। এখন, প্রেডিকশন কিংবা রেট্রোডিকশন যেই নামেই এইটাকে আমরা ডাকিনা কেনো, এইটাই কিন্তু বাস্তবতা।
সেক্সুয়াল সিলেক্সনের ব্যাপারে যা বলেছেন, সেটার সাথে মোটামুটি সহমত। এইটা এখন পর্যন্ত কোন ইউনিক উপাত্ত উতপাদন করছে না। তারপরেও আপনার ফুটুইমা ইভলিউশন যদি ২০০৫ এডিশন হয়ে থাকে তাহলে ৩৩৪-৩৩৭ পৃষ্ঠা দেখতে পারেন, দেখতে পারেন ফিশার্স রানওয়ে সিলেক্সন মডেল এবং এন্টাগ্নিস্টিক কোইভলিউশন তত্ব, এগুলো কিন্তু ইউনিক উপাত্ত ঠিকই উতপাদন করছে। বিজ্ঞান ডালপালা ছড়ায়, এটা সবার জন্য উন্মুক্ত, একজন কিছু আবিষ্কার করলো পরে আরেকজন এসে এটাকে এনরিচড করতে পারে। সর্বোপরি তাদের দাবীগুলো হয় এভিডেন্স বেইজড। আর এদের কথাবার্তাগুলোও রেপ্লিকেইবল, বড় ন্যাজ হলে বেশীবার বংশবৃদ্ধি করে ময়ুর? ওয়েল, দেন লেজ কেটে ছট করে দিয়ে দেখো বংশবৃদ্ধি কতোটা কম করছে, তুমি এসেন্সিয়ালি পেতে যাচ্ছো দাবীর পক্ষে লস অফ ফাঙ্কশন এভিডেন্স, অতপর সুতা দিয়ে নতুন একপ্রস্থ লেজ বাড়িয়ে দিয়ে দেখ কতোবার বেশী বংশবৃদ্ধি করছে, সিম্পল! এটা পৃথিবীর যেকারো জন্যই ভেরিফাইএবল। আমি আবারও বলতে চাই, সায়েন্সের কর্মপদ্ধতি হচ্ছে এসেন্সিয়ালি নুলিয়ুস ইন ভার্বা, কারো কথাতেই নয়। একজন বিজ্ঞানী হার্ডকোর, সফটকোর নাকি গঞ্জো সেইটা দেখার চেয়ে আমি কি বিজ্ঞান সে উতপাদন করলো সেইটা দেখতেই বোধহয় বেশী আগ্রহী হবো। এবে একটা কথা বলতে চাই, এই সেক্সুয়াল সিলেক্সন আমার মতে ইবলিউশনারি বায়োলজির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার নয়, বিবর্তন সম্পর্কে একও ঘন্টার একটা বক্তব্য আমি রাখলে সেটাতে সেক্সুয়াল সিলেক্সনের কথাই আসবে না কেননা ইভলিউশনারি বায়োলজির আরও বহু বহু এমন আবিষ্কার এবং উদ্বোধন রয়েছে যেগুলো কিনা চমতকারীত্ব এবং ট্রান্সলেশনাল গুরুত্বের দিক দিয়ে সেক্সুয়াল সিলেক্সনের চেয়ে অর্ডার অফ ম্যাগ্নিচিউড বেশী গুরুতবপুর্ণ, যেমন- হমোলজি কিংবা ডিপ হমোলজির ধারণা যেটার উপর কিনা দাঁড়িয়ে রয়েছে আধুনিক বায়োইনফর্মেটিক্স।
@আল্লাচালাইনা,
হুমম … এখন যদি আমাদের আলোচনা কোন জার্নালের ইম্প্যাক্ট ফ্যাকটর বেশি তার ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক সত্যতা নির্ধারণ করতে হয়, তাহলে অনেকটা পলিটিশিয়ানদের ভোটের মাধ্যমে নির্ধারনের মতোই শোনাবে। আমি যতদূর জানি বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা তাদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন Journal of Evolutionary Psychology, Behavioral and Brain Sciences , Journal of the Royal Anthropological Institute , Evolution and Human Behavior, Physiology and Behavior,Journal of Social, Evolutionary, and Cultural Psychology, Behavioral Ecology and Sociobiology প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ জার্নালেই। যেহেতু এই সমস্ত জার্নালের গবেষণার প্রকৃতি হার্ডকোর বায়োলজিকাল জার্নালের ভিন্ন, তাই সেল কিংবা সায়েন্সের মত জার্নালের ইম্প্যাকট ফ্যাকটরের সাথে তুলনা করাটা অনেকটা ‘comparing apple with orange’ এর মতোই শোনাবে। আপনাকে কম্প্যায়ার করতে হবে আগে সামাজিক গবেষণাগুলো যে সমস্ত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল, সে সমস্ত জার্নালের ইম্প্যাক্ট ফ্যাকটের সাথে।
আপনি হয়তো সেক্সুয়াল সিলেকশনকে গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার নয় বলে এক ঘন্টার প্রেজেন্টেশনে একে বাইরে রাখতে পারেন, কিন্তু ডারউইনের এই যুগান্তকারী ধারণার পর থেকে বহু জীববিজ্ঞানী, নৃতত্ত্ববিদ এবং বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরাই এ নিয়ে কাজ করেছেন; ফিশার, জাহাভি থেকে শুরু করে অনেকেই গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন, জিওফ্রি মিলার সেক্সুয়াল সিলেকশনকে উপজীব্য করে তার ‘মেটিং মাইন্ড’ বই লিখেছেন সম্প্রতি।
আমি আগেই সংশপ্তকের সাথে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছি ইভলুশনারী সাইকোলজি কোন একক থিওরী নয়, বরং একটি এপ্রোচ। এটিকে মানুষের ব্যবহার, আচরণ এবং সর্বোপরি সামাজিক প্যাটার্ণ বুঝাবার জন্য একটি টুল হিসেবে দেখলে ভাল হয়। তাই গ্রাউণ্ড ব্রেকিং কোন আবিস্কার সে করেছে কিনা, সেটা আমার পক্ষে বলা দুঃসাধ্য। আমি এই শাখার কোন গবেষক নই, নবীন পাঠকমাত্র। তবে, আমার উদ্দেশ্য ইভলুশনারী সাইকোলজিকে চোখ বুঝে ডিফেন্ড করা নয় (যেমন, ঈর্ষা সংক্রান্ত এই পর্বের আলোচনাতেও আমি বাসের ফলাফলের সমালোচনা হিসেবে ডেভিড বুলারের গবেষণার কথা উল্লেখ করেছি ইত্যাদি) , বরং যে আচরণ এবং সামাজিক প্যাটার্ণের ব্যাখ্যাগুলো আগে বিবর্তনকে বাইরে রেখে দেয়া হত, পাঠকদের জন্য একটি নতুন এপ্রোচের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া, এইটুকুই।
ভাল লাগলো আপনার সাথে এই দীর্ঘ আলোচনা করে। হয়তো ভবিষ্যতেও আলোচনা জমবে! 🙂
@আল্লাচালাইনা,
”কেননা, আমি কিছুটা হলেও জানি ইভোলিউশন কি এবং why it matters.”
আমার একডেমিক জ্ঞান অনুযায়ী , পুরো বক্তব্যের সাথে সহমত। (Y)
@সংশপ্তক,
(Y)
পোস্ট ও বিশ্লেশন ভাল লেগেছে। (Y)
ইতিহাস ঘাটতে যেয়ে দেখলাম , সবচেয়ে ন্যায় বিচারের ব্যাবস্থা ছিল ১৭০০ খৃষ্টপূর্বের হামুরাবি কোডে। সেখানে স্বামি বা স্ত্রীর পরকীয়ার শাস্তির বিধান ছিল মৃত্যুদন্ড।
আজব শাস্তির বিধান ছিল ২০০০ বছর পূর্বের জার্মানিতে। পরকীয়ায় অভিযুক্তা স্ত্রীকে নগ্ন করে স্বামি সারা গ্রাম ঘোরাত।
@ফারুক,
লেখাটি পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@ফারুক,
এই “মৃত্যুদন্ড”কে আপনার ঠিক কি কারণে আপনার কাছে “সবচেয়ে ন্যায় বিচার” বলে মনে হচ্ছে?
@শ্রাবণ আকাশ,
ভাল পয়েন্টে ধরসেন দেখি! 🙂
@শ্রাবণ আকাশ,স্বামি বা স্ত্রী দুজনের জন্যেই একি শাস্তি, কোন পক্ষপাতিত্ব বা বৈষম্য নেই। একারনেই বলে ছিলাম “সবচেয়ে ন্যায় বিচার”। আপনি যদি পুরুষবাদী হোন তাইলে অবশ্য আপনার কাছে “সবচেয়ে ন্যায় বিচার” না হওয়ারি কথা। 😛
@ফারুক, আপনি যদি আল্লার ধর্মে ধার্মিক হন তাহলে “সবচেয়ে ন্যায় বিচার” কথাটা স্ববিরোধীতায় ভরা।
@শ্রাবণ আকাশ,ঠিক বলেছেন। তবে আমার মন্তব্যটি ধার্মিক হিসাবে ছিল না , অর্থাৎ আল্লাহর আইনকে আমি হিসাবে নেই নি।
ইতিহাস থেকে যত শাস্তির উল্লেখ পেয়েছি , তার মাঝে ঐটাই আমার কাছে “সবচেয়ে ন্যায় বিচার” মনে হয়েছে।
@ফারুক, তাহলে আপনি কি বলতে চান যে আল্লার আইনের বা নবিজী যেভাবে সে আইনের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন- তার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই?
@শ্রাবণ আকাশ,আল্লাহর আইনের বর্ণনা কোরানে আছে। এটা শুধুমাত্র বিশ্বাসীদের জন্য এবং এর সাথে ইতিহাসের কোন সম্পর্ক নেই।
নবিজীর যে ইতিহাস আমরা জানি , এটার নিরপেক্ষ কোন ভিত্তি নেই বিধায় আমার গণনায় আসে নি। সত্য কথা বলতে নবিজীর ইতিহাসকে সত্য বলে মানতে আমি নারাজ।
@ফারুক, সোজা বাংলায় তার মানে বলতে চান নবিজী বলে কেউ ছিলেন না?
@শ্রাবণ আকাশ, ছিলেন তো বটেই। কোরানে তার ব্যাপারে যত্টুকু বর্ণনা আছে তার বাইরে কবে ছিলেন , কোথায় ছিলেন , কি করেছিলেন কি ছুই জানি না।
@শ্রাবণ আকাশ,
নবিজীগণ পৃথিবীতে না জন্মালেই ভাল হত। তাতে পৃথিবীর মানুষের কোন ক্ষতি হতনা বরং সংখ্য মানুষ নবিদের ধোঁকা থেকে বেঁচে যেত। তারা দুনিয়ায় এসেছিল মানব জাতির দুর্ভাগ্য স্বরুপ।
অভিদা, সিরিজটা ভালোবাসা দিয়ে শুরু হলেও ক্রমেই দেখি বিপজ্জনক সব ব্যাপারের দিকে এগুচ্ছে। ব্যাপার কী? :-s :))
হুমম। আপনি বলেছেন এখানে পুরুষের ঈর্ষাপরায়নতার কথা। স্বার্থপর জিন চাইবে তার প্রতিলিপি পরের প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ুক। তবে এখানে আমার একটি প্রশ্ন আছে। বিস্তারিত বলি।
নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন তার দেহের স্বার্থপর জিন নিজের স্বার্থ রক্ষায় অবশ্যই কাজ করবে তাই তো? ধরলাম একজন শক্ত-সামর্থ পুরুষ তার জন্য একজন যোগ্য সঙ্গী খুঁজে নিলো। স্বার্থপর জিন যেহেতু চায় তার প্রতিলিপি বহনকারী পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুস্থ-সবল হয়। তাই সে চাইবে নারী সঙ্গীটি যেন বিবর্তনীয় দিক থেকে পারফেক্ট হয়। এজন্য সে তার সঙ্গীকে নিয়ে সন্দেহপরায়ন থাকবে। এবার নারীর পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখি। নারীও তার জন্য যোগ্য সঙ্গী চাইবে। সে চাইবে তার সন্তানে যেন তার সঙ্গীর সব ভালো গুণগুলো থাকে। সে চাইবে তার সন্তান যেন অন্য সব নারীর সন্তান অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী আর গুণধর হোক। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে নারী কেন কম যৌন-ঈর্ষায় ভুগবে যেখানে তার বেশি ভোগার কথা। নারী নিশ্চয়ই চাইবে না যে তার যোগ্য স্বামীর জিন অন্য নারীর সন্তানের মধ্যে যাক। সে চাইবে তার সঙ্গীর জিন যাতে শুধুমাত্র তার সন্তানের মধ্যেই ছড়িয়ে যাক। সে নিশ্চয়ই চাইবে তার সঙ্গী শুধুমাত্র তার সঙ্গেই যৌন-সম্পর্কে থাকুক। প্রশ্নটা হয়ত ঠিকমতো করতে পারলাম না, তবু ব্যাপারটা একটু পরিস্কার করবেন কি?
একমত। এখানে আমাদের কি কিছু করার আছে? ঈর্ষার বীজ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের জিনে ঢুকে গেছে। সবার মধ্যে এর প্রকাশ হয়ত ততো জোরালোভাবে হয় না।কিন্তু দুর্বল চিত্তের মানুষ হয়ত এতে বশীভুত হয়ে সহিংস কোনো পদক্ষেপ নেবে। বিজ্ঞান কি এখানে কিছু করতে পারে। জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং? 😉
@নিটোল,
যদিও আপনার প্রশ্নটা সুপ্রিয় অভিজিৎ রায়কে উদ্দেশ্য করে করা , প্রশ্নের এই অংশটায় কিছু জিনিষ পরিস্কার করা প্রয়োজন মনে করছি বিষয়টার অতীব গুরুত্বের কারনে ।
প্রথমেই এটা জানা প্রয়োজন যে জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং বলতে আসলে কি বোঝায় । কৃত্রিম উপায়ে জীবের Recombinant DNA (rDNA) অনু ব্যবহার করে অথবা কৃত্রিম জিনের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ডিএনএ -র এবং জিনোম সিকোয়েন্সের আনবিক কাঠামোতে পরিবর্তন , পরিবর্তন কিংবা সংশোধন করার নামই জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং ।
– এটা করার জন্য প্রথমেই চিহ্নিতকরণ আবশ্যক যে, জিনের কিংবা জিনোম সিকোয়েন্সের কোন এলাকা নিয়ে কাজ করতে হবে। ঈর্ষা প্রনোদনা দানকারী কোন জিন থেকে থাকলে ( যদি আদৌ থাকে) কাজটা সেখানই করতে হবে প্রজনন প্রক্রিয়া in vitro তে শুরুর আগেই। অর্থাৎ বাবা মায়ের দানকারী শুক্রানু এবং ডিম্বানু নিয়ে কাজ করতে হবে।
এছাড়া এই সংশোধনের ফলে জন্ম নেয়া সেই শিশু কেমন হবে সেটাও ভাবনার বিষয়। সেই শিশু মানুষের মত না হয়ে সরীসৃপের মত হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মানুষ যেহেতু ধান গমের মতো উদ্ভিদ নয় , এ ধরনের “অনৈতিক গবেষণা” সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ। দেহের কার্যক্রমে বিরাট পার্থক্যের কারনে কৃষিকাজে বা উদ্ভিদ নিয়ে জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং যত সহজ প্রানী নিয়ে তত সহজ নয়। জীবের একটা প্রোটিন উৎপাদনকারী জিনে পরিবর্তন আসলে তার প্রভাব সেই জীবের অন্যান্য জৈব রাসায়নিক কার্যক্রমে পড়তে বাধ্য।
@সংশপ্তক,
চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাবছিলাম নিটোলের প্রশ্নগুলোর বিস্তৃত একটা উত্তর দেই, কিন্তু আপনি বেশ কিছু জায়গা পরিস্কার করে দিলেন। অনেক ধন্যবাদ। আরো কিছু ছোট খাট প্রশ্ন আছে, যেগুলো সুযোগ আর সময়মত পরিস্কার করা যাবে।
আপনি অনেকদিন ধরেই মুক্তমনায় লেখা দিচ্ছেন না। আপনার কিন্তু আরো বেশি করে লেখালিখি করা দরকার।
@অভিজিৎ,
জীবের আনবিক বিবর্তনের উপর একটা লেখা শুরু করেছি আমার পুর্ববর্তী সিরিজের ২য় পর্বের জন্য। আশা করছি শীঘ্রই প্রকাশ করতে পারবো।
তবে , সাপ্লাই-ডিমান্ড অনুপাতে বিচার করলে দেখা যায় যে মুক্তমনায় বর্তমানে ধর্ম , নারীবাদ এবং রাজনীতির ভিত্তিক লেখারই জয় জয়কার। :))
@সংশপ্তক,
এটা ছদ্মডিমান্ড। কারো কারো অক্রিয়তার সুযোগে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। 🙂 এর জন্য যারা দায়ী তারা সক্রিয় হলে বাজার আগের ফর্মে ফিরে যাবার কথা।
@নিটোল,
আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া হয়নি। ভাবছি এখন দেয়া যাক।
বেসিক থেকে শুরু করা যাক। পরকিয়া, কোকিলাচরণ ইত্যাদি হচ্ছে বিবর্তনের যাত্রাপথে একধরনের ‘এডাপ্টিভ’ সমস্যা, যেটা নারী পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সমাধান করেছে ইতিহাসের যাত্রাপথে। সেক্সুয়াল জেলাসির রকমফেরও নারী পুরুষভেদে ভিন্ন হয়েছে বলে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন।
আপনি ঠিকই বলেছেন যে, নারী পুরুষ উভয়েই চাইবে সঙ্গি তার সাথেই থাকুক, তার সাথেই যৌনসম্পর্ক রাখুক। অন্য কারো সাথে সম্পর্ক হলে নারী পুরুষ দুজনের জন্যই ব্যাপারটা ক্ষতিকর। কিন্তু তবুও কেন পুরুষদের যৌন ঈর্ষা বেশি বলে বলা হচ্ছে?
এর কারণ হচ্ছে সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়া, যেটা নারী কেবল নিজের মধ্যে ধারণ করে। পুরুষের মধ্যে নিজের সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে, কোন নারীর নিজের সন্তান নিয়ে সন্দেহ হয় না। মাতৃত্ব নিয়ে একটি নারীর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই, এখানে নিশ্চয়তা শতভাগ, তা সেটা যে শুক্রাণু দিয়েই নিষিক্ত হোক না কেন! এই ব্যাপারটাই পুরুষদের যৌনতার ব্যাপারে অধিকতর ঈর্ষাপরায়ন করে গড়ে তুলেছে। ব্যাপারটা পরিস্কার করা যাক।
একটি দম্পতির মধ্যে স্বামী যদি প্রতারণা করে এবং অন্য মেয়ের সাথে নন-জেনেটিক সন্তান উৎপন্ন করে, তবে তার স্ত্রীকে সেই সন্তানের ভার নিতে হয় না। যেহেতু স্ত্রীটি গর্ভ ধারণ করেনি, করেছে অন্য একটি মহিলা তাই সেই সন্তানের মাতৃত্ব নিয়ে কোন সংশয় নেই, এবং সাধারণতঃ সেই স্ত্রীকে সন্তানের ভরণপোষণের জন্য ‘অভিভাবকত্বীয় বিনিয়োগ’ (নয় মাস ধরে গর্ভ ধারণ, স্তন্য পান করানো, বাচ্চা বড় করা সহ আনুষঙ্গিক কাজ ) করতে হয় না। ফলে তার সঙ্গীর পরকীয়া নারীর জন্য ক্ষতিকর হলেও সেটা সাধারণতঃ সেক্সুয়াল জেলাসিতে রূপ নেয় না, তার মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে রিসোর্স শেয়ার নিয়ে। কারণ এই ননজেনেটিক সন্তানের জন্য এবং স্বামীর প্রেমিকার জন্য স্বামীর বড় একটি মানসিক শক্তি খরচ হবার আশঙ্কা আছে। এই ‘ইমোশনাল এটাচমেন্ট’ নিয়েই স্ত্রীর ঈর্ষা থাকে বেশি।
কিন্তু অন্যদিকে স্ত্রীর পরকীয়া আর প্রতারণা স্বামীর জন্য অনেক বেশি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। একে তো সঙ্গী পরকীয়া করছে, সেটাই যথেষ্ট, কিন্তু তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে স্বামীর অন্য কারো (অর্থাৎ নন জেনেটিক) সন্তান নিজের সন্তান হিসেবে বড় করার ভয় আছে। আমি আমার লেখায় বলেছি – বিবর্তনীয় পরিভাষায় প্রতারিত পুরুষের সঙ্গি গর্ভধারণ করলে তাকে অর্থনৈতিক এবং মানসিকভাবে অন্যের সন্তানের পেছনে অভিভাবকত্বীয় বিনিয়োগ করতে হবে, যার মুল্যমান জৈববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে অনেক বলে মনে করা হয়। মূলতঃ তার অভিভাবকত্বের পুরোটুকুই বিনিয়োগ করতে হবে এমন সন্তানের পেছনে যার মধ্যে নিজের কোন বংশানুর ধারা বহমান নেই। অর্থাৎ সঙ্গীর প্রতারণা + নন জেনেটিক সন্তান লালন পালন করার সম্ভাবনা = দুয়ে মিলে ডবল পেনাল্টি। সেজন্যই মনে করা হয় পুরুষেরা যৌনতার বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে অধিকতর ঈর্ষাপরায়ণ। অন্ততঃ ডেভিড বাস সহ অধিকাংশ বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের তাই অভিমত!
আপনার বাকি অংশগুলোর উত্তর সংশপ্তক আগেই পরিস্কার করেছেন।
@অভিজিৎ,
পুরুষের স্বভাবত বহুগামিতার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা কোনো ভূমিকা রাখে কি?
@নিটোল,
”বিজ্ঞান কি এখানে কিছু করতে পারে। জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং?”
কিছু করতে পারবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না। :-s
যেকোন অনুভতির জন্য শুধুমাত্র কোন একক জীন দায়ী থাকবে না। থাকবে অনেকগুলো। বলা হয়ে থাকে ঈর্ষার সাথে অক্সিটোসিন হরমোনের একটা ভূমিকা আছে।এই হরমোন তো এক ধরনের প্রোটিন।এখন দেখতে হবে ডিএনএ’এর কোন অংশ এই প্রোটিন কে কোড করছে। এমনিতেই বিশাল ডিএনএ’এর মাঝে ছোট্ট একটা অংশ(জীন) বের করা সহজ কাজ না,তার উপর অনেকগুলো জীন খুজতে হলে আরো জটিল হয়ে যায়। এই হয়মোনের উপর অন্য কারো প্রভাব থাকলে সেগুলোও খোজা লাগবে। সবকিছু মিলিয়ে একটা জালের মত,একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কযুক্ত। :-X
Behavioural genetics environment, circumstance আর social pressures’এর উপরও অনেকটা নির্ভরশীল। 😉
@ইফতি, হুমম। অনেক জটিল কাজ দেখছি। তবে আশা করি ভবিষ্যতে হয়ত কিছু হতে পারে। আর আমি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রসঙ্গ টানায় দেখি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার সাহেব হাজির। :)) তোমার বিষয় নিয়ে অনেকেরই জানার ইচ্ছে আছে। একটা লেখা লিখেই ফেল না কেন? অপেক্ষায় আছি। 🙂
@নিটোল,
বেশিরভাগ লেখা আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে মাথার নিউরাল নেটওয়ার্কে লিখি ।এইতো দুইদিন আগেও সেরোটোনিন নিয়ে লিখলাম।বিষয় সংশ্লিষ্ট সব তথ্য জোগাড় করে লিখা মনে মনে শেষ হবার পর কাগজে-কলমে লেখার আর আগ্রহ থাকে না। :-Y
এখনও কিন্তু লিখছি। 😉
রোমানা মঞ্জুরের ঘটনাটা জানার পর আপনার একটা লেখা আমি আশা করেছিলাম। মন মতো পেয়েছিও।
রোমানা মঞ্জুরের মতো হাজার হাজার ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে চলেছে। যা সব সময় পরিসংখ্যানে আসে না। আর তা আসলেই বেদনাদায়ক এবং কাম্য নয়।
আসলে আমার মনে হয় এই বিবর্তনীয় মনোবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলি যদি সাধারণ মানুষের কাছে সহজ সরল ভাষায় পৌছানো যেতো তাহলে মানুষ তার আচার আচরণকে অনেকখানি সংযত রাখতে পারত। আমার এই ধারণা কতটুকু সত্যি জানি না?
অভিজিৎদা, আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন, আচ্ছা আমরা যদি আমাদের আচরণ বদলানোর চেষ্টা চালাই। তা কি জেনিটিকভাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছাবে? যদি পৌঁছায় তাহলে এইভাবে একটা পরিবর্তন ঘটা সম্ভব নয় কি আজ না হোক কয়েক প্রজন্ম পরে?
@সুমিত দেবনাথ,
আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়বার আর মন্তব্য করার জন্য।
হ্যা, সেজন্যই আমি ইদানিং চেষ্টা করছি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে সামাজিক বিশ্লেষণ হাজির করতে। ব্যাপারটি বাংলায় তো বটেও এমনকি ইংরেজীতেও নতুন। তবে, যারা খোঁজ খবর রাখেন তারা জানেন, গত শেষ দশকে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে খুব ভাল কিছু কাজ হয়েছে। প্রতি বছরই বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন গবেষণার আলোকে ফলাফল হাজির করেছেন এবং এর প্রেক্ষিতে শাখাটি সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়ে উঠছে। আমার ধারণা – – একটা সময় পর ‘বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান’ বলে আলাদা কিছু আর থকবে না। পুরো শাখাটিকে স্রেফ মনোবিজ্ঞান নামেই অভিহিত করা হবে।
আর আপনি যে বলেছেন, বিবর্তনীয় মনোবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলি যদি সাধারণ মানুষের কাছে সহজ সরল ভাষায় পৌছানো যেতো তাহলে মানুষ তার আচার আচরণকে অনেকখানি সংযত রাখতে পারত – এ ব্যাপারটা আমিও সঠিক বলেই মনে করি। আন্তন চেখভের একটা চমৎকার উক্তি আছে এ প্রসঙ্গে –
Man will become better when you show him what he is like.
আমি এর সাথে পুরোপুরি একমত।
এই ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করা একটু জটিল। মানুষ আসলে ব্ল্যাঙ্ক স্লেট হয়ে জন্মায় না। জন্মায় কিছু জেনেটিক বৈশিষ্ট নিয়ে। এখন সেগুলো আপনি রদ বদল করতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করবে সেই মডিউলগুলো কতটা ‘ফ্লেক্সিবল’ তার উপর। আপনি চাইলেই কোন বৈশিষ্ট পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে দিতে পারবেন না। ল্যামার্ক এক সময় ভাবতেন যে, পরিবেশের প্রভাবে বৈশিষ্ট বোধ হয় প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেই ধারনা আসলে ভুল ছিলো। যেমন, জার্মান জীববিদ আগস্ট ভাইজমান জন্মের সাথে সাথে সাদা রঙের ছোট জাতের ইদুর ছানার লেজ কেটে দিয়ে বাইশটি প্রজন্মে সদ্য-ভূমিষ্ট ছানার লেজের দৈর্ঘ্য কমে কিনা তা মেপে দেখলেন। দেখা দেল, সদ্যভূমিষ্ট ছানার লেজের দৈর্ঘ্য কমেনি বা বাড়েনি। এ পরিক্ষা থেকে ভাইজমান পরিস্কারভাবে দেখালেন, জীবদেহে পরিবেশ দ্বারা উৎপন্ন প্রভাব বংশানুসৃত হয় না। এভাবে তিনি ল্যামার্কবাদের মূল-ভিত্তিটি ধ্বসিয়ে দেন। ভাইজম্যানের পরীক্ষাটির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন বিজ্ঞানী বস এবং শেফার্ডসও। তারাও যথাক্রমে ইদুর এবং কুকুরের কান কেটে কেটে পরীক্ষাটি চালিয়েছিলেন। তারাও একই রকম ফলাফল পেয়েছিলেন। এরকম পরীক্ষা কিন্তু মানুষ বহুকাল ধরেই করে এসেছে। যেমন, ডোবারম্যান কুকুরের লেজ কেটে ফেলা, ইহুদী এবং মুসলমান বালকদের খৎনা করা, চীনদেশে একসময় প্রচলিত প্রথা অনু্যায়ী মেয়েদের পা ছোট রাখার জন্য লোহার জুতো পড়ানো, অনেক আফ্রিকান দেশে মেয়েদের ভগাঙ্গুর কেটে ফেলা, উপমহাদেশে মেয়েদের নাকে এবং কানে ছিদ্র করা ইত্যাদি। কিন্তু এর ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আকাংকিত লক্ষণটির আবির্ভাব হয় নি। ল্যামার্কের তত্ত্ব সঠিক হলে তাই ঘটার কথা ছিলো। কিন্তু তার মানে এই নয় যে পরিবেশের কোনই ভুমিকা নেই, সব কিছুই জিনগত। বেশ কিছু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে বংশানুগুলো আমাদের মানসপটের বিনির্মাণ করলেও সেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লোহার দরাজের মত অনড় নয়, বরং অনেকক্ষেত্রেই কাদামাটির মতই নরম। পরিবেশের প্রভাবে এদের সক্রিয়করণ (activation) বা নিষ্ক্রিয়করণ (deactivation) ঘটানো যায় – অনেকটা বিদ্যুতের বাতির সুইচ অন অফ-এর মতই। যে বংশানুগুলোকে কয়েক বছর আগেও মনে করা হত একদমই অনমনীয়, মনে করা হত বংশানুর গঠনের সিংহভাগই ভ্রূণে থাকা অবস্থায় তৈরী হয়ে যায়, ভাবা হত পরবর্তীকালের পরিবেশে এদের রদবদল হয় সামান্যই, আধুনিক ‘এপিজেনেটিক্স’এর গবেষণা হতে পাওয়া ফলাফল এর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে বলেই এখন মনে করা হচ্ছে। তাই পরিবর্তন একেবারেই করা যাবেনা তা নয়, তবে সেটা পরবর্তী প্রজন্মে পৌছাবে কিনা সেতা আবার আরেক প্রশ্ন। আর এটাও মনে রাখতে হবে – মানব প্রকৃতি গঠনে জিন যেমন ভূমিকা রাখে, তেমনি রাখে পরিবেশ। অনেক সময় প্রকৃতিকে পরিবেশ থেকে আলাদাও করা যায় না; আলাদা করার চেষ্টাও হয়ত অনেক ক্ষেত্রে ভ্রান্ত। ম্যাট রিডলী তার ‘এজাইল জিন’ বইয়ে সেজন্যই বলেছেন –
‘আমার কথা আরো একবার স্পষ্ট করে বলি। আমি মনে করি, মানুষের ব্যবহার বিশ্লেষণ করতে হলে প্রকৃতি এবং পরিবেশ দুটোকেই গোনায় ধরতে হবে। … নতুন আবিস্কারের আলোকে বোঝা যাচ্ছে কিভাবে জিনগুলো মানুষের ব্যবহারকে প্রভাবিত করে, আবার কিভাবে মানুষের ব্যাবহার জিনগুলোর প্রকাশভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। কাজেই বিষয়টা আর প্রকৃতি বনাম পরিবেশ (nature versus nurture) নয়, বরং পরিবেশ দিয়ে প্রকৃতি (nature via nurture)।
ধন্যবাদ, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
@অভিজিৎ, খুবই সংহত এবং প্রান্জল লেখা হয়েছে। বিবর্তনের আলোকে সেক্সুয়াল জেলাসী নারী-পুরূষের অনেক আচরনেরই মোটাদাগের ব্যখা করতে পারে।
ইদানিং কিন্তু এপিজেনেটিক্স এর প্রতি মনো্যোগ ক্রমেই বাড়ছে। অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়াও সাইকোলজি ও সাইকোপ্যাথলজিতে এপিজেনেটিক পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। এমনকি এপিজেনেটিক পরিবর্তন গুলো পরবর্তীপ্রজন্মে প্রবাহিত হওয়ারও কিছু প্রমান মিলছে। বলা যায় ল্যামার্কের মতবাদের কিছুটা পূনর্বাসন হচ্ছে, যদিও এর জন্যে ল্যামার্কের অন্তর্দৃষ্টিকে কৃতিত্ব দেয়া মুশকিল।
সাইদের আচরন একদম ক্লাসিক বিবর্তনের সেক্সুয়াল জেলাসীর কেস। তবে বিপ্লব পালকে যেমন বলেছিলেন ‘ইজ’ এবং ‘অট’ এর পার্থক্য আমাদের বুঝতে হবে। মানুষের সভ্যতা সাংষ্কৃতিক বিবর্তনের ফল এবং সাংষ্কৃতিক বিবর্তন অতি দ্রুততায় ডারউইনীয় বিবর্তনকে ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই।
@সফিক,
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সংশপ্তককে উদ্দেশ্য করে যে কথাগুলো বলেছিলাম তা আপনার জন্যও। শুধু মন্তব্য করলে চলবে না, পাশাপাশি মুক্তমনায় লেখা দিন।
@অভিজিৎ,
এখনো গেলো না আঁধার! 🙁
—
অভিজিৎ দা’র আরেকটি চমৎকার বিশ্লেষনী লেখা। (Y)
@সফিক,
যেমন? দুই একটা সুনির্দিষ্ট উদাহারণ শুনি?
@আল্লাচালাইনা, মাত্র কয়েকদিন আগেই Slate ম্যাগাজিন এ এপিজেনেটিক্স নিয়ে একটি লেখা পড়েছিলাম।
http://www.slate.com/id/2296986/pagenum/all/#p2
আপনার যদি ডাচ এবং সুইডিশ ফেমিন স্টাডিগুলো নিয়ে আরো আগ্রহ থাকে তবে এনিয়ে ইন্টারনেটে অনেক তথ্য পাবেন।
http://www.chd.ucsd.edu/seminar/documents/Morgan.08.pdf
http://www.time.com/time/health/article/0,8599,1951968,00.html
@সফিক, তৃতীয় লিঙ্কটিতে বলা আছে সাদাম্পটন স্টাডির কথা যেইটা কিনা খুবই খুবই বিখ্যাত একটা স্টাডি, এইটা সম্পর্কে আমি ভালো করেই জানি। জেনেটিক্স হচ্ছে জীবের ট্রেইট সমুহের অধ্যয়ন, আর এপিজেনেটিক্স হচ্ছে জীবের ননহেরেডিটরি ট্রেইটগুলোর অধ্যয়ন। যা ননহেরেডিটরি সেটা কোনভাবেই ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালন হতে যাচ্ছে না। সাদাম্পটন স্টাডিতে এটা এস্টাব্লিশ করা হয় যে- অপুষ্ট, অন্ডারওয়েইট নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুদের মাথা অপেক্ষাকৃত বড় হয় এবং সেইসকল নারীরাও অপেক্ষাকৃতি বড় প্লাসেন্টা প্রসব করে থাকে; এবং এই শিশুগুলো বড় হয়ে হাইপারটেনশনে বেশী ভোগে। এর কারণ হচ্ছে- অপুষ্ট নারীর রক্তশ্রোত থেকে এম্ব্রিয়ো পর্যাপ্ত পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে না, ফলে সার্ফেস এরিয়া বাড়ানোর জন্য প্লাসেন্টা বড় হয় একই কারণে যেই কারণে কিনা পর্যাপ্ত আয়োডিন সংগ্রহ করতে না পারলে মানুষের থাইরয়েড বড় হয়ে গলগন্ড জন্ম দেয়। বড় প্লাসেন্টা তারা এই কারণেই প্রসব করে। আর শিশুর মাথা বড় হয় কেননা মাথায় কয়েকসেকেন্ড রক্তসঞ্চালন বন্ধ থাকলেই মৃত্যু কিংবা সিরিয়াস ইঞ্জুরি ঘটতে পারে বিধায় মাথার মেকানিজম রয়েছে নিজের ভাগের রক্ত ঠিকঠাক আদায় করে নেওয়ার, শরীরের অন্যান্য অংশগুলোকে অপুষ্ট রেখে। ফলে, অন্যান্য অংশগুলো শুকিয়ে পড়ে কিন্তু মাথার আকৃতি সবাভাবিক থাকে বলে মাথা বড় দেখায়। আর এই শিশুদের কার্ডিওভাস্কুলার রোগ বেশী হয় কেননা এম্ব্রিয়নিক ডিভেলপমেন্টের সময় আর্টারির ইলাস্টিসিটি নির্ধারিত হয় ব্লাডপ্রেসার দ্বারা। অপুষ্ট মাতৃগর্ভে জন্ম নেওয়া অপুষ্ট শিশু নিন্মব্লাডপ্রেসারের কারণে ডিভেলপ করে পাতলা আর্টারি যেগুলা কিনা মোটেও ইলাস্টিক নয়। হাইপারটেনশন তারা ডিভেলপ করে এইভাবেই।
এই স্টাডি ডেমন্সট্রেট করেছিলো যে- হাইপারটেনশনের জেনেটিক ভিত্তি নির্ধরণের ক্ষেত্রে শুধু জিনের কথা চিন্তা করলেই হবে না বরং যেই মাতৃগর্ভে শিশুটি বেড়ে উঠেছে সেই মায়ের স্বাস্থের কথাও চিন্তা করতে হবে।
এইটা ঠিক এপিজেনেটিক ট্রেইট হেরিটেবল হবার উদাহারন নয়। এপিজেনেটিক ট্রেইট হেরিটেবল হবার উদাহারণ হবে গিয়ে- কেউ তেত্রিশ বছর ধরে হাত ঝাপটিয়ে যদি দেখতে পায় যে হাতের যায়গায় ডানা গজিয়ে গিয়েছে এবং যদি সেই ডানা তার সন্তানেও সে ইনহেরিট করতে পারে।
@আল্লাচালাইনা,বায়োলজী আমার ফিল্ড নয় সুতরাং এবিষয়ে আপনার মতকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দেবো। কিন্তু আমার পড়ায় যতটুকু পেলাম তাতে তো transgenerational epigenetic inheritance কিছু কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে। এপিজেনেটিক ইনহেরিটেন্স নিয়ে গত ৫-৬ বছরে অজস্র পাব্লিকেশন বেড়িয়েছে। এখানে এপিজেনেটিক ইনহেরিটেন্স বলতে বোধহয় হাত ঝাপটাতে ঝাপটাতে ডানা হোয়ার মতো ক্রুড কিছু বলা হয় হচ্ছে না। বলা হচ্ছে পরিবেশগত স্ট্রেস এর কারনে জিন এর বাইরে যেসব লক্ষ লক্ষ এপিজেনেটিক মার্কার আছে সেগুলো, মিথাইলেশন এবং এরকম কিছু রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জিনের উপরে ইমপ্রিন্ট করে এবং এই জেনোমিক ইমপ্রিন্ট গুলো যে কয়েক প্রজন্মে প্রবাহিত হতে পারে তার আলামত পাওয়া গেছে। এপিজেনেটিক পরিবর্তনের সবচেয়ে আগ্রহদ্দীপক দিকটি হলো ্যে এর জন্যে অনেক জেনারেশন লাগে না, খুব দ্রুতই এই পরিবর্তনগুলি ঘটে। এই পরিবর্তন গুলি সামগ্রীক বিবর্তনে কি ভূমিকা রাখে, এটা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
আপনি যদি দ্বীতিয় লিংক (পিডিএফ) এ ইদুর এর উপরে করা স্টাডি টার ব্যপারে কিছু মন্তব্য করেন তবে আলোকিত হই। এছাড়া European Journal of Human Genetics (২০০৬) এর স্মোকার পিতা এবং তাদের পুত্রের উপরে করা স্টাডিটা নিয়েও কিছু বলতে পারেন।
এপিজেনেটিক ইনহেরিটেন্স এর উপরে আরেকটি ওভারভিউ আর্টিকেল
http://compgen.unc.edu/wiki/images/d/df/JablonkaQtrRevBio2009.pdf।
@অভিজিৎ,
অতি সুন্দর ব্যখ্যা।অতি সুন্দর।
@সেন্টু টিকাদার,
তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা উচিৎ সেটা হল, বংশাণু (Gene) পরিবর্তনীয় বা নমনীয় নয়, বংশাণুর পরিস্ফুটন (Gene expression) নমনীয়। সব মানুষেরই বংশাণু-সমষ্টি (Genome) অনন্য ও অপরিবর্তনীয়। এটাই তার এককত্বের চিহ্ণ। যেহেতু একজনের জীনোম আরেকজনের জীনোম থেকে আলাদা তাই একজনের বংশাণু পরিস্ফুটন (বা পরিস্ফুটনের হেরফের) আরেকজনের বংশাণু পরিস্ফুটন (বা পরিস্ফুটনের হেরফের) থেকে আলাদা হতে বাধ্য। কাজেই মানুষে মানুষে তফাৎটা মৌলিকভাবে বংশাণুগতই, পরিবেশগত নয়। পরিবেশের প্রভাব (বা বংশাণু পরিস্ফুটন কি হবে) সেটাও জীনোমের উপরই নির্ভর করছে।
ধুরো মিয়া আপ্নের সব পোষ্টের লিঙ্ক বারে বারে আমারে ঠিক করতে বলতে হয় ক্যান? প্রথমেই মাইনাচ! (N)
হেঃহেঃ পড়ার আগেই লিঙ্ক চেক করসি কারন জানি অভিজিৎ ভাইয়ের লিঙ্কে গন্ডগোল থাকবে :))
রাতে পড়বোনে তখন আরেকটা কমেন্ট করবো, আপাতত আগাম শুভেচ্ছা (W) এই সিরিজটা আমার খুব প্রিয় 😉
@টেকি সাফি,
ধুরো মিয়া, তোমারে নিয়া মুশকিল। পোস্ট পাব্লিশের এক মিনিটের মধ্যেই লিঙ্কগুলা ঠিক করছি, তাও দেখি তোমার শকুন চোখ এড়ায় নাই। 🙂
লেখাটা কেমন লাগলো পইড়া বইলো।
@অভিজিৎ,
বড় কষ্ট পাইলাম, ভালবাইসা একটা ইরোর রিপোর্ট করলাম আর এই প্রতিদান ;-(
লেখাটা পড়লাম, এই পর্বটা বুঝছি না, লোক খাবে ভাল বলে লিখলেন নাকি? 😀
যাক খানিক অফটপিক হলেও আমার একটা বিষয় জানতে ইচ্ছে করছে। প্রাকৃতিক নির্বচন সবসময় ভালো অপশন যে দেইনা তা জানি, আবার অপশন ভাল না হলে ধীরে ধীরে সেটা আইদার ওমিট করে অথবা এই প্রজাতির অস্তিত্ত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দেয়, এটুকু ঠিক বলেছি? যদি তাই হয় তাহলে পুরুষালী জিঘাংসার যে উৎপত্তির কথা বললেন, সেলফিস জিন তাতে আমার দ্বিমত নেই তবে আমি বুঝছিনা এই সেলফিসগিরির ঠিক উপযোগীতাটা কী?
আমি কোথাও পড়ি টড়ি নি এ নিয়ে তবে আমার ধারণা (ভূল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি :)) ) এ ব্যাপারটা এসেছে সন্তানের প্রতি “হু কেয়ারস!” ভাব ঠেকাতে মনে হয় নাকি? কারন এই সেলফিস জিন নিশ্চিত করছে আমিই বাবা (বাবা হইতে মন চায় 😛 ) তাই তখন আমার “ধুরো আমার কী” ভাব থাকবে না, এবং যেটা আমার প্রজাতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ন। ব্যাপারটা কী এরকম?
@টেকি সাফি, এইটা সঠিক ক্যারেক্টারাইজেশন না মোটেও। সেলফিস জিন তত্ব বলে- আপাত দৃষ্টিতে ইন্ডিভিজুয়াল জীবের উপর মনে হলেও সিলেক্সন কিন্তু বাস্তবে কাজ করে জীবের উপর নয় বরং জিনের উপর। এইটা ব্যাখ্যা করে রিসিপ্রোকাল অলচ্রুইজম, কিন সিলেক্সন ইত্যাদি ব্যাপার-স্যাপার, যেগুলো কিনা ইথোলজি বা বিহেইভিওরাল বায়োলজির অধ্যয়নের বিষয়। এগুলো প্রকৃতিতে দেখা যায়। অপরপক্ষে ইভলিউশনারি সাইকোলজি প্রকৃতি নিয়ে কোন আলোচনায় বসে না। তারা টেনশিত মানুষ নিয়ে, এইটা একটা হিউম্যান সায়েন্স বা হিউম্যানিটিস, এইটা কোন ন্যাচারাল সায়েন্স না। সেলফিস জিন তত্ব রিচার্ড ডকিন্সের যেটার সাথে কিনা ইভলিউশনারি সাইকোলজির সম্পর্ক আমি মনে করি সামান্যই।
@আল্লাচালাইনা,
সেলফিশ জিনের সংজ্ঞা নিয়ে মোটামুটিভাবে আপনার সাথে একমত হলেও আপনি প্রাণীজগৎ আর মানুষকে যেভাবে পৃথক করে বলেছেন রিসিপ্রোকাল অলচ্রুইজম, কিন সিলেক্সন ইত্যাদি ব্যাপার-স্যাপার কেবল বিভেভিয়রাল বায়লজির অংশ, আর ইভলিউশনারি সাইকোলজি মানুষের – এই কৃত্রিম বিভাজনের সাথে হয়তো অনেকে একমত হবেন না। প্রানীজগতের মধ্যে যে রেসিপ্রোকাল অল্ট্রুইজম এবং কিন সিলেকশনের ব্যাপার আছে, সেটা মানব সমাজের জন্যও একইভাবে সত্য (এ নিয়ে আমি লিখেছিলাম আগে একটা লেখা – বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব (১, ২)) । মানুষ তো প্রানীজগৎ থেকে আলাদা কিছু নয়, তাই ডারউইনীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রানীজগতে একরকম হবে আর মানুষের জন্য আলাদা হবে তা নয়। এমনকি রিচার্ড ডকিন্সও তার বইয়ের বড় একটা অংশে জিনগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রানীজগতের (এবং সেই সাথে মানুষের) আচরণ নিয়েই কথা বলেছেন। তার ‘হোয়াই আর পিপল’, ‘ব্যাটেল অব জেনেরেশন’, ‘ব্যাটেল অব সেক্স’, কিংবা শেষ পর্যন্ত ‘মিমস – দ্য নিউ রেপ্লিকেটরস’ সব চ্যাপ্টারগুলোই সেই জেনেটিক দৃষ্টিকোন থেকেই লেখা, মানুষের আচরণও এসেছে পাশাপাশি। ম্যাট রিডলীর রেড কুইন বইটাও তাই। আর ইভলিউশনারি সাইকোলজির সাথে সম্পর্ক আছে বলেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভ্লুশনারী সাইকোলজি পড়ান হয়, সেখানে সেলফিশ জিন সম্বন্ধেও ধারণা দেয়া হয়, এবং সেটা শুরুতেই (উদাহরণ হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ইভলুশনারী সাইকোলজির FAQ পেইজ থেকে একটা লিঙ্ক দিলাম)।
@অভিজিৎ, বাংলাদেশের কালো জঙ্গলে আপনি ভাল্লুক দেখবেন মিশমিশে কালো, আবার একই প্রজাতির জীব মেরুতে দেখবেন ধবধবে সাদা। তো এইটা দেখে আপনি বল্লেন- শিকারীর হাত থেকে বাঁচার জন্য জীবেরা চামড়া কিংবা লোমের রঙ্গ ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ রাখে, এইটা জীববিদ্যার একটি অন্যতম মৌলিক নিয়ম বিধায় এই পর্যবেক্ষীত ট্রেইটটি ভাল্লুকের একটি মিমেটিক এডাপ্টেশন। বেশ, তো কিভাবে তুমি নিজের হাইপথেসিস টেস্ট করতে যাচ্ছো? ওয়েল- আমি ভাল্লকের চামড়ার হেয়ার ফলিকল কোষে এক্সপ্রেসড পিগমেন্ট কোডকারী জিনটি আইসোলেট করতে ও অধ্যয়ন করতে চাই, খুব সম্ভবত আমি দেখতে যাচ্ছি যে বাংলাদেশী ভাল্লুকের চুলের পিগমেন্টের ক্রমোফোর সব আলো এবসর্ব করে অপরপক্ষে মেরুর ভাল্লুকেরটা কোন আলোই এবজর্ব করে না এদের জন্মের জন্য দায়ী জিনটিতে মিউটেশনের কারণে; দুটি ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের ফলে সুচীত দুটি ভিন্ন সিলেক্সন প্রেসার যেইখানে দুটি আলাদা মিউটেশনকে পজিটিভলি সিলেক্ট করেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আপনি দেখলেন যে আপনার দাবীটি বাস্তবতার সাথে সামঞ্জগ্যপুর্ণ। ব্যাস, আপনার দাবী কনক্লুড হয়ে গেলো।
এরপর আপনি সেফালোপড যেমন- অক্টোপাস, স্কুইড এবং বিশেষ করে কাটলফিসের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে তারাও যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড মিমিক করতে সক্ষম; যতো কম্পলেক্স ব্যাকগ্রাউন্ডই হোক না কেনো। এমনকি দাবার ছক যেটি কিনা সাদা-কালো (যেই দুটি রঙের মধ্যে কনট্রাস্টের পার্থক্য কিনা রাফলি সর্বাধিক) টাইলের কন্টিগুয়াস ট্যান্ডেম রিপিট, সেই দাবার ছকের উপর এদের ছেড়ে দিলে দাবার ছকও তারা তাদের চামড়ায় মিমিক করে ফেলে, এবং মোটামুটি নিখুঁত মিমিক! সো আপনি হাইপথেসিস দাড় করালেন- ওয়েল, ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে সুমুদ্রে প্রচুর প্রচুর মার্মেইড বসবাস করতো। তাদের প্রিয় খেলা ছিলো দাবা, যেটা কিনা তারা খেলতো সুমুদ্রতলপৃষ্ঠে বসে, আর প্রিয় খাবার ছিলো তাদের কাটলফিস……ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং একইভাবে আনবিক উপায়ে আপনার হাইপথেসিস আপনি যখন টেস্ট করতে গেলেন, তখন দেখলেন যে- না আপনার হাইপথেসিসটা সামান্য অল্প একটু বাস্তবতা বিচ্যুত, কাটলফিসে মাইমেটিক মেকানিজম মুলত এইরকম যে- তাদের চামড়ায় পিগমেন্ট কোষের ঘনত্ব অস্বাভাবিকভাবে বেশী যেটি কিনা প্রতিনিধিত্ব করে প্রায় ৩০০ ডিপিআই রিসোলিউশনের। পিগমেন্ট কোষগুলো হ্যাভিলি হ্যাভিলি স্নায়ুসংযোগপ্রাপ্ত এবং স্কেলিটাল মাংশপেশী সংযোগপ্রাপ্ত। চার রঙের ক্রোমোফোর রয়েছে চামড়ায় যেগুলোর প্রত্যেকটি নিউরোমাস্কুলার উপায়ে ডিফ্রেন্সিয়ালি ফুঁটে উঠাতে পারে তারা টেলিভিশন স্ক্রীনের মতো। এর কারণেই তারা যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড মিমিক করতে পারে।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাটলফিসের রঙের রহস্য যখন কিনা আপনি উদ্ধার করে ফেলছেন, তখন আপনার দাবা-মার্মেইড হাইপথেসিসটা কি দখিনা বাতাসে উড়িয়ে নিয়েই গেল না? অথবা ভাবুন যদি কাটলফিসের রঙের রহস্য আসলে আপনার এসে করার এবং প্রোব করার কোন উপায় না থাকতো, তখন আপনি কি করতেন? এটাতো আপনি বলতেই পারতেন তাই না যে- ওয়েল জীবজগতে হাজার হাজার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি মিমেটিক এডাপ্টেশন ঘটে প্রিডেশন সুচীত সিলেক্সন প্রেসারে; তাই কাটলফিসের মিমেটিক এডাপ্টেশনও কোন না কোন সিলেক্সন প্রেসারের সুচনায় সুচীত, এবং এই প্রেসারের সোর্স যদি দাবা খেলারত মার্মেইড নাও এমনকি হয়ে থাকে, দেন সেটা দাবাখেলারত সান্টাক্লজ!! এইবার কাটলফিসকে দাবার ছক থেকে তুলে লুডুর ছকের ব্যাকগ্রাউন্ডে ছাড়েন, সেই ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথেও যে নিজের গায়ের রঙ মিশিয়ে ফেলবে- সম্পুর্ণ ট্রান্সপারেন্ট থেকে সম্পর্ণ কালো হতে কাটলফিসের লাগে ২ সেকেন্ড! তো এইবার কি আপনি নতুন লুডু-মার্মেইড হাইপথেসিস দাড়া করাতে যাচ্ছেন? এইভাবে কতো হাইপথেসিসি দাড়া করানো সম্ভব?
বিবর্তনের প্রকৃতি হচ্ছে মডুলার, বিবর্তিত হয় হচ্ছে গিয়ে মডিউল। যেমন- এককালে এককোষী জীবে প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র মর্ফোলজিকাল ট্রেইট বিবর্তিত হতো একক মডিউল হিসেবে। কিন্তু, যেই মুহুর্তে বিবর্তিত হলো প্রথম বাওপ্লান যেটা কিনা এম্ব্রিয়নিক/ এক্সট্রাএম্বিয়নিক ডিভেলপমেন্টের মাধ্যমে মর্ফোলজি নিয়ন্ত্রন করতে পারে, সেই মুহুর্ত থেকে মডুলারিটি হয়ে গেল সম্পুর্ণই পরিবর্তিত, এখন আর একক মর্ফোলজিকাল ট্রেইট বিবর্তিত হয়না, বিবর্তিত হয় গিয়ে বরং নতুন নতুন বাওপ্লান! বিহেইভিয়ার স্বতন্ত্র মডিউল হিসেবে দেখা যায় অনেক জীবে, কিন্তু কাটল ফিসের রঙের মতোই ভালো একটা সম্ভাবনা আছে যে মানুষে স্বতন্ত্র বিহাইভিওরাল ট্রেইটগুল মডুলার না, মডুলার হচ্ছে বরং এর মস্তিষ্ক, যেটা কিনা সক্ষম পরিস্থিতি সাপেক্ষে বিহেইভিওর নির্দেশ করতে। এর রয়েছে এক্সেপশনালি বড় নিওকোর্টেক্স যেটা অন্য আর কারও নেই, কনকর্ডেন্টলি এই নিওকোর্টেক্সের বৃহদত্বও ডিভেলপ করে এম্ব্রিয়নিক ডিভেলপমেন্টের সর্বশেষো পর্যায়ে! এমতাবস্থায়, একটা আচরণ কিভাবে বিবর্তিত হলো সেই আলোচনাটাইয় বসার আগে আপনাকে প্রমান করতে হবে যে- বিবর্তিত হয় একটা একটা আচরণই। সেইটা করার আগ পর্যন্ততো এইটা সায়েন্স হচ্ছে না। যেমন- মুসলমানদের বাস্তবতার একটা মডেল আছে, সেই মডেলের সবগুলো দাবী বাস্তবতার সাথে রিকন্সাইল কএ শুধুমাত্র যদি তাদের একটা এভিডেন্সবিহীন দাবী আপনি মেনে নেন, সেটা কি আপনি করবেন? করবেন না কেনো, কেননা বাস্তবতাকে বুঝতে হলে এর সম্পর্কে করা প্রত্যেকটি দাবীর পক্ষেই এভিডেন্স থাকোতে হবে, একটা দাবীও এভিডেন্সবিহীন হলে চলবে না। তাই, বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানকে সায়েন্স বলে দাবী করার আগে এইটা ডেমন্সট্রেইট করা চাই যে- যেই অনুমিতির উপর এটি দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই অনুমিতিটি সঠিক, যে- মানুষের বিহেইভিয়ার মডুলারলি বিবর্তিত হয় সময়ের সাথে সাথে। এখন পর্যন্ত এই দাবীর পক্ষে একটা এভিডেন্সও নাই যেটা কিনা অন্যান্য জীবের জন্য রয়েছে। যেমন- পুরুষ ইঁদুর বয়োপ্রাপ্তির সাথেসাথেই মাউন্টিং বিহেইভিয়ার প্রদর্শন করে, ইভেন টোড অঙ্গুলেটস যেমন- হরিণ, ছাগল জন্মের সময় থেকেই স্টটিং প্রদর্শন করে; যেই পরিবেশেই এদের বড় করা হোক না কেনো কিংবা যে কোন রিজনেবলি ইনহিবিটিং স্টিমুলিই দেয়া হোক না কেনো সেটা করে। মানুষের বিহেইভিয়ার বরং দেখা যায় চরম চরম ডাইভার্স, এবং হেটেরোজিনিয়াস, প্রতিটা এইরকম বিহেইভিয়ার একবার একবার করে মডুলারলি বিবর্তিত হয়েছের চেয়ে বিহেইভিয়ার নির্ধেশকারী অঙ্গটিই একক একটি মডিউল হিসেবে উদ্ভুত হয়েছে এইটাই কি মোস্ট পার্সিমোনিয়াস হাইপথেসিস না?
@আল্লাচালাইনা,
আপনার সাথে আলোচনা করে আনন্দ আছে। গভীর তর্কে ঢোকা যায়। আমরা দ্বিমত করলেও সেটা থেকে আমরা দু’জনেই এবং সাথে অন্য সবাই উপকৃত হবেন বলে মনে করি। আপনার কাটলফিসের রঙের সাথে দাবা-মার্মেইড হাইপথেসিসটা চমৎকার, কিন্তু এটার উত্তর দিতে হলে আমাকেও এ ধরনের আরেকটা ‘চিত্তাকর্ষক’ হাইপোথিসিস দিয়ে রিফিউট করতে হবে। বক্তব্যের কাউণ্টার-প্রতি কাউন্টার চলতেই থাকবে। আপনি ধরেই নিয়েছেন বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের হাইপোথিসিসগুলো দাবা-মার্মেইড-এর হাইপোথিসিসের মতো। এখন আমি যে যুক্তিই দেই না কেন, সেটাতেই ঘুরপাক খাবে। সেটা থেকে যা হোক, আমি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বাদ দিয়ে কেবল প্রাসঙ্গিক আলোচনায় থাকছি।
আপনার এই উক্তির মধ্যে এই দাবী স্পষ্ট যে, ইঁদুর, ছাগল হরিণের সমাজের প্যাটার্ণ বায়োলজিকাল রুল দিয়ে অনুসন্ধান করা গেলেও মানুষেরটা করা যাবে না, কারণ সেটা ‘দেখা যায় চরম চরম ডাইভার্স’। কিন্তু সত্যই কি? মানব সমাজের কি কোনই প্যাটার্ণ নেই? আর সেটা কি বায়োলজিকালি বের করা যাবে না? অবশ্যই যায় অনেকক্ষেত্রেই। একটি উদাহরণ দেই। শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে নারীরা হয় বহুগামী। তারা একই দিনে একাধিক পুরুষ শিম্পাঞ্জির সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয়। অধিক সংখ্যক পুরুষের সাথে যথেচ্চার সম্ভোগের মাধ্যমে নারী শিম্পাঞ্জিরা প্রকারন্তরে নিশ্চিত করতে চায় যে, উৎকৃষ্ট জেনেটিক মালমশলাসম্পন্ন পুরুষের দ্বারাই যেন তার ডিম্বানুর নিষেক ঘটে। কিন্তু নারী শিম্পাঞ্জির এই ধরণের অভিরুচির কারণে পুরুষ শিম্পাঞ্জির জন্য ‘বংশ রক্ষা’ হয়ে যায় মাত্রাতিরিক্ত কঠিন। তাদেরকে এক অসম বীর্য প্রতিযোগিতার (sperm competition) মধ্যে নামতে হয়। নারী শিম্পাঞ্জির যোনিতে গর্ভধারণ নিয়ে বিভিন্ন পুরুষ শিম্পাঞ্জির শুক্রের মধ্যে নিরন্তর প্রতিযোগিতা চলে, সেই কারণে একটি পুরুষ শিম্পাঞ্জির পক্ষে কখনোই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না যে, যৌনসম্পর্ক হলেই তার নির্দিষ্ট বীর্য থেকেই নারী শিম্পাঞ্জিটি গর্ভধারণ করবে বা করছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায় যদি তার শুক্রাশয়ের আকার অপেক্ষাকৃত বড় হয়, আর তার শুক্রাশয় যদি সঙ্গমের সময় অঢেল শুক্রের যোগান দিতে সমর্থ হয়। এই নির্বাচনী চাপই শিম্পাঞ্জিকূলে ত্বরান্বিত করেছে বৃহৎ শুক্রাশয় গঠনের দিকে (গড়পরতা শিম্পাঞ্জির শুক্রাশয়ের ওজন তার দেহের ওজনের ০.৩ ভাগ, এবং শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ৬০ x ১০^৭)।
ঠিক উলটো ব্যাপারটি ঘটে গরিলাদের ক্ষেত্রে। নারী গরিলারা বহুগামী নয়। কেবল পুরুষ গরিলারা বহুগামী। শক্তিশালী পুরুষ গরিলারা বড় সড় হারেম তৈরির মাধ্যমে নিশ্চিত করে বহু নারীর দখল। এভাবে পুরুষ গরিলারা নিশ্চিত করে তাদের অধিনস্ত নারীর দেহে নিরাপদ গর্ভসঞ্চার। কাজেই পুরুষ গরিলাদের জন্য ব্যাপারটা কখনোই পুরুষে পুরুষে বীর্য প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বরঞ্চ হয়ে উঠে শক্তিমত্তার প্রতিযোগিতা। শক্তিশালী পুরুষ গরিলারা স্বীয় শক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ নারীর দখল নিয়ে নেয়, অধিকাংশ শক্তিহীনদের জন্য পড়ে থাকে দুর্ভাগ্য। সামাজিক অবস্থানের কারণেই গরিলাদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী চাপ তৈরি করেছে বড় সড় দেহ সমৃদ্ধ শক্তিশালী দেহগঠনের, বৃহৎ শুক্রাশয় তৈরির দিকে নয়। গরিলাদের ক্ষেত্রে বৃহৎ শুক্রাশয় গঠনের কোন উপযোগিতা নেই। নারী পুরুষের মধ্যকার সামাজিক সম্পর্কের কারণেই গরিলাদের ক্ষেত্রে দেহ অনুপাতে শুক্রাশয়ের আকার অনেক ছোট (শুক্রাশয়ের ওজন দেহের ওজনের ০.০২ ভাগ, এবং শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ৫ x ১০^৭)।
এখন মানুষের ক্ষেত্রে কি রকম পাওয়া গেছে? এক্ষেত্রে মানুষের অবস্থান হল গরিলা আর শিম্পাঞ্জির মাঝামাঝি (শুক্রাশয়ের ওজন দেহের ওজনের ০.০৪- ০.০৮ ভাগ, এবং শুক্রাণু প্রক্ষেপনের সংখ্যা প্রতি বীর্যপাতে ২৫ x ১০৭)। পুরুষ মানুষদের শুক্রাশয়ের আকার গরিলাদের মতো এত ছোট নয়, ফলে ধরে নেয়া যায় যে, মানব সমাজে নারীরা শতভাগ একগামী মনোভাবাপন্ন নয়। আবার শুক্রাশয়ের আকার পুরুষ শিম্পাঞ্জিদের শুক্রাশয়ের মতো এত বড় সড়ও নয় – ফলে আমরা এটাও বুঝতে পারি যে, মানব সমাজে নারীরা আবার শতভাগ নির্বিচারী বহুগামীও নয়। এখন প্রাইমেট হিসেবে মানুষের যৌনতার প্যাটার্ণ আপনাকে বলতে বললে কি বলবেন? এটা এত ডাইভার্স যে নির্ণয় করা সম্ভব নয় বলে ছেড়ে দেবেন, নাকি বলবেন যে মানব শুক্রাশয়ের আকার গরিলা আর শিম্পাঞ্জির মাঝামাঝি দেখে অনুমান করা যায় যে, মানুষের মধ্যে একগামিতা যেমন আছে তেমনি বহুগামিতার চর্চাও। বলবেন যে, প্রাইমেটের এই স্পিশিজটির অধিকাংশ সদস্যই ‘বিবাহ নামক ইন্সটিটিউশনের’ মনোগামিতার চর্চাকে বৈশিষ্ট হিসেবে জ্ঞাপন করলেও এর মধ্যে আবার অনেকেই সময় এবং সুযোগমত বহুগামী হয়, কাকোল্ড্রির চর্চা করে। অনেক ক্ষমতাবান পুরুষেরা (আকবর চেঙ্গিসখান প্রমুখ) আবার অধিক নারীর দখল নিতে গরিলাদের মতোই ‘হারেম তৈরি’ করে, কিন্তু বেশিরভাগই ‘সিরিয়াল মনোগামি’ অর্থাৎ, একই সময়ে কেবল একজন সঙ্গির সাথেই জীবন কাটায়। এই বায়োলজিকাল প্যাটার্ণ (তা যত ডাইভার্সই হোক না কেন) ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে তুলে ধরলে সমস্যা কি? ইঁদুর, বাঘ, ছাগল, হরিণ, খরগোশ – সব প্রানীরই কিছু না কিছু প্যাটার্ণ আছে, সে প্যাটার্ণগুলো ডারউইনীয় লজিক প্রয়োগ করে নির্ণয় করা গেছে। মানুষেরটা যতই ‘ডাইভার্স’ হোক না কেন, সেটা বায়োলজির নিয়মের বাইরের কিছু নয়, যে বিবর্তনকে বাইরে রাখতে হবে।
বুঝতে পারছি আপনার সমস্যাটা কোথায়। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা কিন্তু বলে না যে প্রতিটা বিহেইভিয়ার একবার একবার করে মডুলারলি বিবর্তিত হয়েছে। তারা একেকটা বিহেভিয়ারের বিবর্তন নিয়ে চিন্তিত নয়, বরং মানব সমাজের সামগ্রিক কিছু প্যাটার্ণ খোঁজার দিকেই লক্ষ্য থাকে তাদের । আপনি লিডা কসমাইডস আর জন টুবির ‘Evolutionary Psychology: A Primer’ লেখাটা পড়ে নিতে পারেন – যেখানে প্রবন্দটির শেষের দিকে তারা স্পষ্ট করেছেন, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য হচ্ছে মুলতঃ ‘universal, evolved architecture that we all share by virtue of being humans’ খোঁজা, আপনার কথামতো প্রতিটা বিহেভিয়ারের আলাদা আলাদা অনুসন্ধান নয়।
আর বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা আপনার কথামত মস্তিস্ককেই মডুলার মনে করেন। তারা মানব মস্তিস্ককে মডুলার সুইস নাইফের সাথে তুলনা করেছেন এ নিয়ে সেই বিখ্যাত ছবিটা আমি আমার লেখাতেও ব্যবহার করেছি-
[img]http://www.mukto-mona.com/Articles/avijit/evolutionary_psychology/tooby_leda.jpg[/img]
যাহোক মোদ্দাকথা হল – তারা মস্তিস্ককে মডুলার বলেই মনে করেন। আদিম সমাজে বিভিন্ন এডাপ্টিভ সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে মস্তিষ্কের মডিউলগুলো ভিন্ন ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে, যেটার ছাপ পড়েছে আমাদের আচরণে। যেমন, একটা সময় মানুষ জঙ্গলে থাকত, খুব কষ্ট করে খাবার দাবার সংগ্রহ করতে হত। শর্করা এবং স্নেহজাতীয় খাবার এখনকার মত এত সহজলভ্য ছিলো না। শরীরকে কর্মক্ষম রাখার প্রয়োজনেই এ ধরণের খাবারের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। আমরা এখনো অনেকেই মিষ্টি জাতীয় কিংবা তৈলাক্ত খাবারের প্রতি লালায়িত হয়ে উঠি, এমনকি সেটা দেহের জন্য ক্ষতিকর জেনেও। ঠিক একই কারণে আমাদের অনেকেই তেলাপোকা দেখলে এখনো আঁতকে উঠি, বাস ট্রামকে ভয় পাইনা, যদিও তেলাপোকা নয়, বাস চাপা পড়েই মানুষ মারা যায় ঢের বেশি। বাস ট্রাকের ব্যবহার খুব সাম্প্রতিক, মানেতিহাসের পথপরিক্রমায় সেটা বিন্দু সম- তার তুলনায় বনে –জঙ্গলে দীর্ঘদিন কাটানোর কারণে বিষধর কীটপতংগকে ভয় পাবার স্মৃতি আমরা নিজেদের অজান্তেই আমাদের মধ্যে করি। আসলে সঠিক খাবার নির্বাচন করে খাওয়া, প্রেডিটর এড়ানো, কার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে আর কাকে এড়িয়ে চলতে হবে, কিভাবে আশে পাশের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, আর সর্বোপরি কীভাবে সঠিক সঙ্গি বাছাই করতে হবে – সবগুলোই ছিলো কোন না কোন ভাবে এডাপ্টিভ সমস্যা। এই সমস্যাগুলো আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেভাবে সমাধান করে সফল হয়েছিল, তার ছাপ আমরা আমাদের মধ্যে দেখতে পাই। এটা কোন অবৈজ্ঞানিক ব্যাপার নয়।
ঠিক একই রকমভাবে পরকীয়া, কোকিলাচরণ ইত্যাদিও ছিলো বিবর্তনের যাত্রাপথে একধরনের ‘এডাপ্টিভ’ সমস্যা, যেটা নারী পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সমাধান করেছে ইতিহাসের যাত্রাপথে, নিজ সঙ্গিকে ধরে রাখার প্রয়োজনে। তাই সেক্সুয়াল জেলাসির রকমফেরও নারী পুরুষভেদে ভিন্ন হতেই পারে।
নারী পুরুষের মডুলার মস্তিস্ক তো অনেক কিছুতেই ভিন্ন। যেমন, ছেলেদের ব্রেনের আকার গড়পরতা মেয়েদের মস্তিস্কের চেয়ে অন্ততঃ ১০০ গ্রাম বড় হয়,কিন্তু ওদিকে মেয়েদের ব্রেন ছেলেদের চেয়ে অনেক ঘন থাকে। মেয়েদের মস্তিস্কে কর্পাস ক্যালোসাম এবং এন্টেরিয়র কমিসুর নামক প্রত্যঙ্গ সহ টেম্পোরাল কর্টেক্সের যে এলাকাগুলো ভাষা এবং বাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহায়তা করে বলে মনে করা হয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে সেগুলো ছেলেদের চেয়ে অন্ততঃ ২৯ ভাগ বিবর্ধিত থাকে। শুধু তাই নয়, মেয়েদের মস্তিস্কে রক্তসঞ্চালনের হার ছেলেদের ব্রেনের চেয়ে শতকরা ১৫ ভাগ বেশি থাকে। সেগুলোর কোন প্রভাব কি আচরণে পড়েনি? পড়েছে যে সেটা আপনিও জানেন। যে কোন অভিভাবককে জিজ্ঞাসা করলেই দেখবেন, তারা সবাই লক্ষ্য করেছেন, মেয়ে শিশুরা ছেলে শিশুদের চেয়ে অনেক আগে কথা বলা শিখে যায় – একই রকম পরিবেশ দেয়া সত্ত্বেও। ছেলেদের বাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রগুলো গড়পড়তা মেয়েদের মত উন্নত না হওয়ায় ডাক্তাররা লক্ষ্য করেন পরিণত বয়সে ছেলেরা সেরিব্রাল পালসি, ডাইলেক্সিয়া, অটিজম এবং মনোযোগ-স্বল্পতা সহ বিভিন্ন মানসিক রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এগুলো বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা থেকেই বেরিয়ে এসেছে। কাজেই যেটা বলতে চাইছি ‘এডাপ্টিভ’ সমস্যা সমাধানের জন্য যে কৌশলগুলো আশ্রয় নিতে হয়েছে সেগুলোর ছাপ থাকবেই শরীরে মন মানসিকতায়। এটা অস্বীকার করতে চাইলেও যাবে কি? যেমন আমরা সবাই জানি – মনোগমাস স্পিশিজে নারী পুরুষের আকার আয়তন সমান হয়, অনেক সময় পার্থক্য করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। যেমন পেঙ্গুইনের ক্ষেত্রে। নারী পেঙ্গুইন আর পুরুষ পেঙ্গুইনের আকার একেবারে সমান সমান। কিন্তু যে সমস্ত স্পিশিজে পুরুষে পুরুষে প্রতিযোগিতা হয় নারীর দখল নেবার জন্য সেখানে পুরুষের দৈহিক আকার নারীর চেয়ে বড় হয় (গরিলা, ডলফিন ইত্যাদি দেখুন)। এখন মানব সমাজের দিকে তাকালে আমরা কি দেখি? পুরুষদের দৈহিক আকার মেয়েদের চেয়ে বেশি হওয়া, শক্তিমত্তা এবং আপার বডি ম্যাস – সব কিছুই প্রমাণ করে বিবর্তনীয় পথ পরিক্রমমায় সম্ভবতঃ খুব ভায়োলেন্ট পুরুষ -পুরুষ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। এ ব্যাপারগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রকাশ করাটা নিশ্চয় অপবিজ্ঞান হবে না।
আরো একটা জিনিস বার বার বলছি, সোশিওবায়োলজির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এডওয়ার্ড ও উইলসনের মত পৃথিবী বিখ্যাত প্রানীবিজ্ঞানী, তারই উত্তরসূরী শাখা হচ্ছে বিবর্তন মনোবিজ্ঞান, যার প্রতিষ্ঠাতা এবং চর্চাকারীদের মধ্যে হার্ডকোর বায়োলজিস্টরাই অগ্রগন্য, হোমিওপ্যাথির ডাক্তাররা নন । তারা সব একজোট হয়ে অপবিজ্ঞান ছড়ানোর জন্য এমন একটি শাখা তৈরি করেছেন এটা বলা বা ইঙ্গিত করা কোন কাজের কথা নয়। হ্যা, কিছু ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতিতে দুর্বলতা থাকতে পারে, সেটা দূর করাটাই মূখ্য -তাদের সব কাজকে এক ফুঁ দিয়ে বাতিল করা নয়।