অজানার দেশে চলে গেলেন বাংলা পপ গানের সম্রাট আজম খান। পপ গানের অনুরাগীরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় গুরু বলে ডাকতেন। সেই গুরু আর নেই। চলে গেছেন অচেনা কোনো অজানা ভূবনে।
ষাট এবং সত্তুরের দশক ছিল প্রথা না মানার সময়। শুরু হয়েছিল পশ্চিমে, কিন্তু জের গিয়ে আছড়ে পড়েছিল সুদূর বাংলাভূমিতেও। প্রথা না মানা এরকমই একদল দ্রোহী তরুণ বিদ্রোহ করেছিল রক্ষণশীল বাংলা গানের বিরুদ্ধে। পপ গানের উন্মাতাল অর্গল খুলে দিয়েছিলেন তাঁরা। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন আজম খান। দ্রোহী ছিলেন এরা, সামাজিক প্রথা ভেঙেছেন, কিন্তু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হন নি তাঁরা কখনো। সাধারণ মানুষের নাড়ির সাথে যোগাযোগটা ছিল সবসময়ই অক্ষুন্ন।
এ কারণেই আটষট্টি সালে, মাত্র সতের আঠারো বছর বয়সে দেশের মানুষের অগ্নিগর্ভ আন্দোলনের সময় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর হয়ে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গান গাইতে গিয়ে বুক কাঁপেনি তাঁর। জেলায় জেলায় ঘুরতেন তাঁরা, গান গাইতেন সরকারের বিরুদ্ধে। পুলিশের তাড়া খেয়ে অসংখ্যবার দৌঁড়ে পালিয়েছেন তিনি।
গায়কের চেয়েও আজম খানের পরিচয় আমার কাছে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেই বেশি গুরুত্ববহ। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করেছেন তিনি। একাত্তরে বর্ষা শুরুর আগেই যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঢাকা থেকে পায়ে হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যান আগরতলায়। মেলাঘরে আরো অসংখ্য আরবান গেরিলার সাথে তিনিও ট্রেনিং নেন। তাঁর অস্ত্র শিক্ষার ট্রেনার ছিল রুমি। হ্যাঁ, বিস্ময়ের কিছু নেই। এই রুমি সেই রুমি-ই, জাহানারা ইমামের ছেলে। রুমি ছিল অস্ত্রচালনায় সবচেয়ে দক্ষ। এলএমজি, রাইফেল সবকিছু চালনাই রুমির কাছ থেকে শিখেছিলেন তিনি। আজম খানের যুদ্ধে যাবার ঘটনাটা আমি আমার লেখা বিষাদেরই জল আঁখিকোণে প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলাম। সেখান থেকেই উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
বাংলা পপ গানের জীবিত কিংবদন্তী আজম খান। বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি। সেই আজম খানকে তার বাবা-মা কীভাবে যুদ্ধে যাবার অনুমতি দিলেন তা জানা যায় তার নিজের ভাষ্যে।“একাত্তরে ২৫ মার্চের পর সারা শহরে কারফিউ। আর্মিদের জ্বালায় থাকতে পারতাম না। পালিয়ে থাকতাম। বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, এভাবে নয়। মরলে যুদ্ধ করেই মরব। সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম, ভারতে গিয়ে ট্রেনিং করব। যুদ্ধ করব। যে যার মতো চলে গেল। আমি যেদিন গেলাম, সেদিন আমার সঙ্গে ছিল দুই বন্ধু শাফি আর কচি। বেলা সাড়ে ১১টা। মাকে গিয়ে বললাম, ‘মা, যুদ্ধে যেতে চাই।’ মা বললেন, ‘ঠিক আছে, তোর বাবাকে বল।’ বাবা প্রয়াত আফতাব উদ্দীন খান ছিলেন কলকাতার প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কাঁপতে কাঁপতে গেলাম বাবার সামনে। মাথা নিচু করে বললাম, আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। চিন্তা করলাম, এই বুঝি লাথি বা থাপ্পড় দেবেন। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বাবা বললেন, ‘ঠিক আছে, যুদ্ধে যাইবা ভালো কথা। দেশ স্বাধীন না কইরা ঘরে ফিরতে পারবা না।’
মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শেষে আজম খান কুমিল্লা অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া শুরু করেন। প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন কুমিল্লার সালদায়। যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে সেকশন কমান্ডার করে ঢাকা ও আশেপাশে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনার জন্য পাঠানো হয়। আজম খান যাত্রাবাড়ি-গুলশান-ডেমরা এলাকার গেরিলা অপারেশানে নের্তৃত্ব দেন।
আজম খানের উল্লেখযোগ্য অপারেশনগুলোর দুটো হচ্ছে অপারেশন তিতাস ও অপারেশন ইন্টারকন্টিনেন্টাল। তাঁর নেতৃত্বে গ্যাস সরবরাহ পাইপ লাইন ধ্বংস করে ঢাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেন গেরিলারা। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যে বোমা বিস্ফোরণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগিয়েছিল, সেটার নেতৃত্বেও ছিলেন আজম খান। তাঁর দলই এই দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছিল। আন্তর্জাতিক এ হোটেলে হামলা চালানোর কারণ ছিল, ঐ হোটেলে অবস্থানরত বিদেশীরা যাতে বুঝতে পারে দেশে যুদ্ধ চলছে।
এছাড়াও তার নের্তৃত্বে ঢাকার অদূরে মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতে ও কালিগঞ্জের সম্মুখ সমরে পাকসেনাদের হটিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। আরবান গেরিলাদের যে দলগুলো বিজয়ের অনেক আগেই ঢাকা প্রবেশ করেছিল তার মধ্যে অগ্রগন্য ছিল তার দলটা। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ২০ নভেম্বর ঢাকায় প্রবেশ করেন আজম খান।
যুদ্ধের মধ্যেও গানকে ছাড়েন নি তিনি। জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলিতেও সে কথা লেখা আছে। রুমি তার মাকে বলেছিল যে রাতের বেলা তারা মেলাঘরে আজম খানের উদাত্ত গলার গান শুনতো। শুধু ট্রেনিং ক্যাম্পেই নয়, সম্মুখসমরেও গানকে বিসর্জন দিতেন না তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রেও গান গাইতে গাইতেই লড়াই করতে তিনি। সহযোদ্ধারা নিষেধ করতো গান গাইতে। শত্রু সেনারা অবস্থান টের পেয়ে যাবে এই আশংকায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। গান যার রক্তে, তাঁর জন্য গানের আলাদা ক্ষেত্র বলে কিছু নেই। তাই যুদ্ধের ময়দানেপ গান চলতো অবলীলায়। সহযোদ্ধারা মরণের ভয় দেখাতো তাঁকে। বলতো, ‘ওই গান থামা। পাক সেনারা শুনলে বুইঝা যাইবো তুই কোথায়। তোর মরণের ভয় নাই নাকি?’ তিনি এর উত্তরে বলতেন, ‘আরে মরবোইতো একদিন। ভয় পাওয়ার কী আছে? গান গাইয়া লই।
এই গান পাগল লোকটা মরণের সময়ও গান গেয়েছিলেন কিনা, সেটা জানার খুব ইচ্ছা আমার। নিশ্চয় গেয়েছিলেন তিনি। গান আর মানুষের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা ছাড়া এই পাগলা লোকটার আর কিছু ছিল বলেতো মনে হয় না। কোন অভিমানে যে চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে, কে জানে?
অজানা কোনো অন্যভূবনে অনেক অনেক ভাল থাকুন আপনি আজম খান। অভিমান ভুলে গলা খুলে গান গান গভীর ভালবেসে আগের মত।
httpv://www.youtube.com/watch?v=_NddDEBrw5M&feature=related
আজম খানকে বিনম্র শ্রদ্ধা। (F)
—
তার আলাপচারিতার ভিত্তিতে লেখা আমার একটি পুরনো লেখা:
আমি যুদ্ধ শেষ করতে পারিনি: আজম খান [লিংক]
এত বড় মানুষ ছিল জানতামইনা।
গুরু তোমায় সেলাম… :candle:
বেশ কয়েকদিন আগে সামহ্যোয়ার-এ আজম খানের বিষয়ে কবির চৌধুরীর লেখা “আজম খানকে নৈবেদ্য – তাঁর কীর্তি সমগ্র” পড়েছিলাম। তার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে আগ্রহী পাঠক এই লিংক অনুসরণ করতে পারেন।
আজম খানের প্রতি রইলো আমার ভালোবাসার নৈবেদ্য।
আমার ধারণা ছিলো একটি অঞ্চল আক্রান্ত হলে স্বাভাবিক ভাবেই তরুণদের পক্ষ হতে রেসিস্টেন্স আসবে সেটা কম হোক কি বেশী হোক। আজমখানকে সেইরকম একটি রেসিস্টেন্সে অংশ হিসেবেই ভেবে এসেছিলাম এতোদিন। আজম খান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন জানতাম, তবে এইরকম সিরিয়াস মুক্তিযোদ্ধা, মানে কমান্ডের দায়িত্ব পালনরত, সত্যিকারের ট্রেনিং গ্রহনকারী এবং সত্যিকারের সম্মুখসমরে অংশগ্রহনকারী মুক্তিযোদ্ধা যে ছিলেন জানতাম না। এখন মনে হচ্ছে এতোদিন এইটা না জেনে থেকে একটা পাপই করে ফেললাম যেনো। তার বীরত্ব ও দায়িত্ববোধের প্রতি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেলো।
এই হামলা কি কোন হতাহতের ঘটনা জড়িত করেছিলো নাকি নিছকই ছিলো একটি শোডাউন হামলা? নিছকই একটি শোডাউন হামলা হলে যুদ্ধের মধ্যেও আজম খান ও তার বাহিনীর প্রতি ‘সিভিলয়ান হত্যা না করার’ সুপিরিয়র নৈতিক অবস্থানের জন্য তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আমার বেড়ে যাবে আরও কয়েক গুন। আর বাংলাদেশের পপ সঙ্গীতের জনক হিসেবে আলাদাভাবে যেই বিশাল বিশাল শ্রদ্ধা তার প্রাপ্য রয়েছে তার কথা নাহয় বাদই দিলাম।
পত্র পত্রিকায় এসেছিলো যে আজম খানের গলায় ক্যান্সার, কিন্তু এটা নির্দিষ্ট করে বলেনি যে ইসোফেগিয়াল, ট্রাকিয়াল নাকি ওরাক ক্যান্সার। আমি আশা করে ছিলাম ট্রাকিয়াল কিংবা ওরাল ক্যান্সারই হোক, কেননা এইগুলার প্রগ্নোসিস ইসোফেগিয়াল ক্যান্সারের চেয়ে অনেক ভালো। তবে মনে হচ্ছিলো যে ইসোফেগিয়াল ক্যান্সারই হবে কেননা ইসোফেগিয়াল ক্যান্সারের ইন্সিডেন্স ট্রাকিয়াল এবং ওরাল ক্যান্সারের চেয়ে অনেক বেশী। ইসোফেগিয়াল ক্যান্সার খুবই খারাপ একটা রোগ। লাঙ্গ ক্যান্সার, প্যাঙ্ক্রিয়াটিক ক্যান্সার (ওয়ারেন বাফেটের যেইটা) আর ইসোফেগিয়াল ক্যান্সারের রয়েছে অন্যান্য সকল ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ প্রগ্নসিস। আজম খান খুব সম্ভবত চলে যাবেন এটার জন্য প্রিপেয়ার্ড হয়ে ছিলাম, ক্রিস্টোফার হিচ্চেন্সএরও ইসোফেগিয়াল ক্যান্সার, তিনিও খুব সম্ভবত চলে যাবেন। তবে তাদের কিংবদন্তী বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে। খুব ছোট বেলায় শুনেছি আজম খানের বাংলাদেশ গানটি, তার হারিয়ে গেছে খুঁজে পাবোনা গানটি খুবই ভালো লেগেছিলো এবং এখনও লাগে। আশা করছিলাম কেউ একজন আজম খানকে নিয়ে একটা ট্রিবিউট পোস্ট লিখুক এবং ট্রিবিউট পোস্ট লেখার জন্য আপনার চেয়ে সুযোগ্য ব্যক্তি আর কে থাকোতে পারে। ইনফর্মেটিভ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ, ভালো লাগলো, ধন্যবাদ।
:candle:
এই আগুন যেন কখনই নিভে না যায় ৷ এ আলোই আমাদের পথ দেখাক ৷ লেখাটিও চমৎকার হয়েছে ৷ সুন্দর শ্রদ্ধ্যার্ঘ্য ৷
কৈশরে আজম খানের গান শুনতে শুনতে দেখতাম তার মেয়েকে নিয়ে বাজার করছেন। লম্বা শুকনো সাদাসিধে একজন মানুষ, তার মুখে কখনো অহংকারের ছাপ দেখিনি। ঈদের দিনে তার সাথে কুলাকুলি করার জন্য বহুবার জসীম উদ্দিন রোডে গিয়েছি কখনো নিরাস হইনি। তিনি বেচেঁ থাকবেন প্রতিটি বাংলা ভাষা ভাষি মানুষের হৃদয়ে তার সুরে আর গানে। বিদায় বেলায় শুধু বলে যাই, আবার যেন দেখা হয়, এদেখাই শেষ দেখা নয়।
পপসম্রাট খ্যাত সংগীতশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোকাহত।গুরুজী অমর,গুরুজী আছে আমাদের মত সকল স্বাধীনতকামী মানুষের অন্তরে।গুরুজীকে নিয়ে মন্তব্য করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। শুধু দুটি টিভি এড শেয়ার করলাম।
httpv://www.youtube.com/watch?v=5HD0tiWxYcE&feature=player_embedded#t=0s
httpv://www.youtube.com/watch?v=WgKFCAo0Cq0&feature=player_embedded#t=0s
এই লোকটা ছিল একাত্তরের আগে যে সচেতন এবং তেজী একটা প্রজন্ম তৈরি হয়েছিল তাদের একজন। আস্তে আস্তে এরা সবাই চলে যাচ্ছে। আর আমরা কিছু অসচেতন কাপুরুষেরা রয়ে যাচ্ছি, যারা এদের কথা জানি ও না। আমি নিজেই একাত্তরের দিনগুলি বইটা পড়েছি এই কিছু দিন আগে… খারাপ লেগেছে উনার মৃত্যুর কথা শুনে। উনার জীবনের ইতিহাস শুনলে আসলেই অবাক হই, এরা কতটা একটিভ আর সাহসী ছিলেন। আর উনার ব্যাপারে কাউকেই কখনো খারাপ বলতে শুনিনি এটাই সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার। শ্রদ্ধা রইল।
কাল দুপুরে bdnews24 থেকে আজম খানের মৃত্যুর সংবাদ শুনে সারাদিন তার গান শুনে গেছি। এটা অবশ্য একটা অভ্যাস। কারো মৃত্যু দিনে কিংবা জন্মদিনে তার গান কিংবা যা সে করে গেছে তার একটু ঘাটিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। সত্য কথা কি আজম খানের গানগুলো আমাকে নতুন করে অদ্ভূদ ধরণের ভাল লাগা উপহার দিল।
অনামিকা, রেললাইন, আলাল ও দুলাল। এসব গান বারে বারে ফিরে আসতে লাগল। কিন্তু কোন অসহ্যতা খুঁজে পেলাম না। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/plugins/smilies-themer/kopete/candle.gif[/img]
:candle:
আমরা যে গুটিকতক ভালো মানুষ পেয়েছি, তাদের মধ্যে আজম খান ছিলেন অন্যতম। এদের অনেকেই চলে গেছেন, আজ আজম খান তাদের পথ অনুসরণ করলেন–জাতিটা খুব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
আমার ব্যান্ড মিউজিকের দীক্ষাগুরু আজম খান। আমি এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছি, যাদের সবাই মিউজিকের সাথে জড়িত ছিলেন। আমার বন্ধুদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত গায়ক, কিংবা বাদ্যশিল্পী। মাইলস, ফিডব্যাক, ফিলিংস, এল আর বি, ওয়ার ফেস, অর্থহীন …সহ অনেক ব্যান্ডেই আমার খুব কাছের বন্ধুরা বাজাতেন কিংবা এখনো বাজান। আমার কিশোরবেলার বড় একটা সময় কেটেছে বড় বড় ব্যান্ডগুলোর প্র্যাক্টিস আর কনসার্ট দেখে। এদের সবারই গুরু ছিলেন আজম খান। আমি জানিনা এখনকার ছেলেমেরা একস্টিক গিটারে গান তোলার সময় কী করে, আমাদের সময় কেউ নতুন গীটার শিখার চেষ্টা করলে তার যাত্রা অবশ্যাম্ভাবীভাবে শুরু হত আসি আসি বলে তুমি আর এলে না, কিংবা অভিমানী দিয়ে। আজম খানের সুর না তুলে বাংলাদশে কেউ গীটার শিখেছে আমি তা ঘটতে দেখিনি।
আমার আজম খানের সবচেয়ে প্রিয় গানটার কিছু লাইন লিখছি। গানটা অভিমানী, ওরে সালেকা, ওরে মালেকা কিংবা আলাল ও দুলাল এর মত এত জনপ্রিয় নয়, কিন্তু আমার খুব পছন্দের একটা গান। আর আজকের দিনের জন্য সবচেয়ে মানানসই –
গানে ভরা এই মনটা চিরদিনের নয়
ভুবণের সব স্মৃতিগুলো রেখে যেতে হয়
আলো ভরা জীবনে আঁধার কেনো বয়,
জীবনে – মরণ কেন আসেরে
জীবনে মরণ কেন আসে।
জগতের রীতি নীতি সবাই চলে যায়
কে কখন ছেড়ে যাবে বলা বড় দায়
ঘন্টা যখন বেজে যাবে দেখবি সময় নাই
জীবনে – মরণ কেন আসেরে
জীবনে মরণ কেন আসে।
সুখ দুখ সবই আছে সুর সাধনায়
বা্রে বারে প্রাণে তাই ভালবাসা চায়
ভালবাসার মাঝে একটা দাগ রেখে যায়
জীবনে – মরণ কেন আসেরে
জীবনে মরণ কেন আসে।
গানে ভরা এই মনটা চিরদিনের নয়
ভুবণের সব স্মৃতিগুলো রেখে যেতে হয়
আলো ভরা জীবনে আঁধার কেনো বয়,
জীবনে – মরণ কেন আসেরে
জীবনে মরণ কেন আসে।…
আজম খানের মৃত্যু সংবাদটা শোনার পরই গানটা বেশ কয়েকবার শুনলাম। ইউটিউব থেকে গানটা তুলে দিচ্ছি-
httpv://www.youtube.com/watch?v=fJkFKD4z3Vw
ফরিদ ভাই মুক্তিযোদ্ধা আজমখানের যে পরিচয় তুলে ধরেছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। জাহানারা ইমামের ‘একাত্তুরে দিনগুলি’ বইয়ে রুমির গেরিলা ক্যাম্পে আজমখানের গিটার নিয়ে গান গাওয়ার এটি দৃশ্যের বর্ণ্না ছিল। চোখের সামনে ভাসছে সেটা …।
অভিমানীর মতোই এক অজানার দেশে পপ সম্রাট আমাদের ছেঁড়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন।
তাঁর প্রতি আমরন গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি রলো।
:candle:
ভালবাসা, হৃদয় নিংড়ানো অফুরন্ত ভালবাসা আজম খানের জন্য। পৃথিবী গ্রহে আজকে ফোঁটা সবকটা ফুল, আজম খান; তোমার জন্য।
সত্যিকারের সাহসী মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, তৃণমূলের মানুষ, রেল লাইনের বস্তিতে জন্মানো অকালমৃত শিশুটিকে ভালবাসার ভাল মানুষ আজম খান।
মনে রাখবো তোমাকে, আজন্ম, কথা দিলাম। (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F)
দেশের এক উজ্জল নক্ষত্র হারিয়ে গেল!
শ্রদ্ধা! ভালবাসা!
দারুন এক মানুষ তিনি।পপ গায়ক, মুক্তিযোদ্ধা, মানুষ হিসেবে সব মিলিয়েই তিনি ছিলেন দারুন।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল।
আজ অনামিকা চুপ…একদম চুপ হয়ে গেছে। 🙁
এই মানুষটার গান তেমন শুনিনি (পপ ভালো লাগে না বলে) কিন্তু তারপরেও উনাকে খুব ভাল লাগতো। কোন মানুষকেই কখনো ইনাকে নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করতে দেখিনি। কতটা ভাল হলে এরকম প্রত্যাশা করা যায়? তাও একজন সিলেব্রিটি! আব্দুল করিম চলে গেলেন, আজম খান চলে গেলেন…হাল ধরবে কে?
RIP গুরু আজম খান! :candle:
@টেকি সাফি,
আমিও ঠিক এই ব্যাপারটাতেই বিস্ময় বোধ করি। চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন।
শ্রদ্ধা রইল তাঁর প্রতি।
@টেকি সাফি,
যে লোক মাঝ বয়সে নিজের সেলিব্রেটি ইমেজকে উপেক্ষা করে পাড়ার ছোটো ছোট ছেলেপেলেদের সাথে নিয়মিত ফুটবল খেলেন বা সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার রেকর্ড করে যেতে পারেন, তিনি ভাল মানুষ না হয়ে যান কি করে। অনেকেই হয়তো জানেন না এই ঘটনাটা। গোপিবাগ ফ্রেন্ডসের হয়ে দশ বছর একটানা তিনি ক্রিকেট খেলেছেন প্রথম বিভাগে। ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। যখন শুরু করেছিলেন ক্রিকেট খেলা তখন তাঁর বয়স ৪১ বছর, শেষ যখন করেন তখন বয়স পঞ্চাশ।
@ফরিদ আহমেদ,
আজম খান ছিলেন একজন সত্যিকারের স্পোর্টসম্যান। তার বাসা বোধহয় ছিলো কমলাপুরের আশেপাশে। ওইখানে তার একটা সাঁতার শেখানোর ক্লাবও ছিলো শুনেছি, আমার এক পরিচিত ঐখান থেকে সাঁতার শিখেছে। তার মুখে গল্প শুনেছি নভিস সাঁতারুদেরকে দেওয়া আজম খানের প্রথম ট্রিটমেন্টই বলে ছিলো নির্মমভাবে মিনিট পাঁচেক পানিতে চুবানো 😀 । সত্যিকারের একজন ভাইব্রান্ট মানুষ ছিলেন আজম খান। তাকে দেখে আরেকবার শিক্ষাগ্রহন করলাম বুড়ো হওয়া যাবে না, আজম খান হয়ে যেতে হবে!
অত্যন্ত মর্মান্তিক সংবাদটা পেয়ে খুবই শোকাহত ছিলাম গতকাল। গুরুর গাওয়া আমার একটা প্রিয় গান :
httpv://youtube/hD3stg7RstE
@সংশপ্তক,
আপনার গানের লিংকটা ঠিকমত আসে নি।
@ফরিদ আহমেদ,
দেখি আবার চেষ্টা করে। আমার ব্রাউজারে জাভা স্ক্রিপ্ট নিষ্ক্রিয় থাকে বিধায় প্রিভিউ দেখারও উপায় নেই।
httpv://www.youtube.com/watch?v=hD3stg7RstE&feature=youtu.be