লিখেছেন-রাহনুমা রাখী
“নারী সম্ভবত মহাজগতের সবচেয়ে আলোচিত প্রাণী”- কথাটি ভার্জিনিয়া উলফের।হাজারো শতক ধরে তর্কে বিতর্কে নারী যতটা স্থান জুড়ে রয়েছে অন্য কোনো প্রাণী ততোটা নয়।কেনোনা নারী একটি পরাজিত সত্তা।যে ফিরে পায়নি তার যোগ্যতম অবস্থান।ফিরে পায়নি এখনও তার ঘর।
নারী কি?বাংলা অভিধান ঘাঁটলে নারীর যে সমার্থক খুঁজে পাওয়া যায়-স্ত্রী, রমণী, ললনা, অঙ্গনা, কামিনী, বনিতা, মহিলা, বামা, নিতম্বিনী, সুন্দরী প্রভৃতি।নারী সুন্দর তাই সে রমণী, সুন্দরী।নারী কামনা জাগায় তাই সে কামিনী,নিতম্বিনী।গরু থাকে গোয়ালে,মুরগি থাকে খামারে ঠিক তেমনি নারী থাকে মহলে তাই সে মহিলা।নারী মাতা,ভগিনী,স্ত্রী,সেবাদাসী।নারী নম্র ভদ্র, শরৎএর উপন্যাসের নায়িকার মতো বুক ফোটে তো মুখ ফোটে না।নারী স্ত্রী হয়ে একজন পুরুষের অধীনে বসবাস করে,ঘর গৃহ-স্থলী নিয়ে সময় কাটায়, প্রসব করবে মনুষ্য সন্তান।
সমাজে এই নারীর সংজ্ঞা!
মনুষ্য প্রজাতির দুটি সত্তা- নারী ও পুরুষ।একইরকম ২২ জোড়া অটোসোম নিয়ে ও এক জোড়া ভিন্ন সেক্স ক্রোমোসোম নিয়ে জন্ম নেয় মানুষ নামক প্রাণী।সেক্স ক্রোমোসোম আবার দুই প্রকার X ক্রোমোসোম ও Y ক্রোমোসোম।নারীর ক্ষেত্রে এই ক্রোমোসোমের বিন্যাস থাকে XX ও পুরুষের ক্ষেত্রে XY।শুধুমাত্র একটি লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোসোমX অথবা Y এর পার্থক্যের দরুনই কি একটি পুরুষ হয়ে উঠে প্রভু ও নারী হয়ে উঠে দাসী?না।আমাদের সমাজে নারী পুরুষের যে পার্থক্য স-দৃশ্যমান তা যতটুকু না প্রাকৃতিক কিংবা বৈজ্ঞানিক তার চেয়ে অনেক বেশি ঐতিহাসিক ও সামাজিক।
নারী সম্পর্কে ঠিক এই কথাটিই বলতে চেয়েছেন সিমোন দ্য বোভোয়ার-“কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে উঠে নারী”।
আর নারী তৈরি করার এই প্রক্রিয়া শুরু হয় সেই ছোটকাল থেকে।
একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন সে এই পৃথিবীকে চিনতে শিখে তার চোখ দিয়ে অনুভব করতে শিখে তার হাত দিয়ে বুঝতে শিখে তার মন দিয়ে।আর আমাদের কিছু সামাজিক অবকাঠামো যা নির্ধারণ করে নীতি,নিয়ম, প্রথা,তা ধীরে ধীরে বদলে দিতে থাকে শিশুর মন ও করে তুলে তাদেরই মতো করে।খেলার উপকরণ হিসেবে সবার প্রথম আমরা একটা শিশুর হাতে কি তুলে দেই?ছেলে শিশুর হাতে বন্দুক, পিস্তল, স্পোর্টস কার, বল, ব্যাট।এই খেলনাগুলো তার ভিতর বোধ জন্মায় ক্ষমতার, দাপটের, প্রতিযোগিতার।সে সিনেমার নায়কের মতো অভিনয় করে খেলনা বন্দুক দিয়ে উড়িয়ে দেয় ভিলেনদের।সে কল্পনা করে ক্রিকেটারের মতো ঝাপ দিয়ে লুফে নিচ্ছে ক্যাচ। আর একটি মেয়ের হাতে তুলে দেয়া হয় পুতুল, পুতুলের ঘর, বিছানা, হাড়ি পাতিল।মেয়েটি পুতুলকে সাজায়,সন্তানের মতো আদর করে, তার বিয়ে দেয়, হাড়ি পাতিল দিয়ে সে রান্না করে।এভাবেই একটি ছেলে তৈরি হয় ভবিষ্যতের পৃথিবীতে সংঘর্ষ করে বেঁচে থাকতে আর মেয়েটি সংসারের একঘেয়ে চার দেয়ালের ভিতর প্রতিদিন একই কাজের পুনরাবৃত্তি ও সন্তান লালন পালন করে জীবন কাটিয়ে দিতে।
সোনার কাঠি রুপোর কাঠি,সিন্ড্রেলা, ঘুমন্ত সুন্দরী রাজকুমারীদের কাহিনী কে না শুনেছেন!ছোটকালে এইসব রূপকথাই তো শুনে আমরা বড় হই।ডাইনীর অভিশাপে রাজকুমারী ঘুমিয়ে থাকে রাজার সাম্রাজ্যে বন্দী হয়ে।রাজকুমার ঘোড়া ছুটিয়ে আসে, সকল বাধা বিঘ্ন পেড়িয়ে উদ্ধার করে নিয়ে যায় রাজকুমারীকে।
কিংবা দয়ালু রাজার কাহিনী-রাজ্য ভ্রমণ করতে বেরিয়ে এসে এক সৎ মেয়ের সন্ধান পেয়ে তিনি পুরস্কার স্বরূপ তাকে তার ছেলের পুত্রবধূ করে বরন করেন।এইসব রূপকথা, শিশুতোষ গল্পের পুরো পাতা ধরে থাকে প্রায় একই কাহিনী।রাজকুমারী অপেক্ষায় থাকে রাজকুমারের, কবে এসে তাকে জয় করে নিয়ে যাবে তার সাথে।একটি ছেলের সাহসিকতায় যেখানে তাকে পুরস্কার দেয়া হয় রাজার অর্ধেক রাজ্য ও সবচেয়ে আদরের কন্যাটি সেখানে একটি মেয়ের সাহসিকতায় কিংবা সততায় থাকে তাকে পুত্রবধূ করে নেয়ার পুরষ্কার।শৈশবের এইসব কথা-গল্পই একটি মেয়ে শিশুর মনে স্বপ্ন জাগায় নিজেকে সাজাত, সুন্দর করে তুলতে।নিজেকে সে বারবার আয়নায় দেখে।মাকে দেখে তার অনুকরণ করার চেষ্টা চালায়।কপালে টিপ পড়তে ভালোবাসে।শাড়ি গয়না নিয়ে নাড়াচাড়া করে।দাদির কাছে রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে ঘুমোয় ও স্বপ্ন দেখে একদিন তার জীবনেও আসবে এক রাজকুমার।সে তার নিয়তি সেই অজানা পুরুষের কাছে সপে দিয়ে জাল বুনতে থাকে একটি একটি করে।
শিশু থেকে যখন বালিকা হয়ে উঠে মেয়ে।আস্তে আস্তে তার বাইরের জগত ছোট হতে থাকে।খেলাধুলোর মাঠ, দৌড় ঝাপ, পার্ক, উদ্যান তার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে।ঘরের ভিতর সে শিখতে থাকে সেলাই, রান্না বান্না, অতিথি আসলে আপ্যায়ন, ঘর গৃহ-স্থলীর কাজ।যা তার নিয়তি।সেই নিয়তি সমাজ যা নির্ধারণ করে রাখে একটি মেয়ের জন্য।
বয়ঃসন্ধিকালে ঋতুস্রাবের পর থেকে একটি মেয়ের জীবন আরো বেশি জটিল হয়ে পড়ে।সেই প্রথম শারীরিকভাবে সে নারী হয়ে উঠতে থাকে।ঋতুস্রাবের সময় তলপেটে ব্যথা, ভারী ভারী লাগা, উঠতি বুকে সামান্য ঝাকনিতে ব্যথা করা যা শরীর সম্পর্কে তাকে বিরক্ত করে তুলে।নিজের শারীরিক গঠন নিজের কাছে অস্বস্তিকর হয়ে পরে।এই অবস্থাটি প্রশমিত হতে পারত যদি তাকে খেলতে দেয়া হত, সাতার কাটতে দেয়া হত, শারীরবৃত্তিক চর্চা করতে দেয়া হত।তাহলে সে কাটিয়ে উঠতে পারত এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারত চলাফেরায়, নিয়ন্ত্রণ করা শিখে নিত নিজের শরীরকে।তা না করে আমরা করি তার উল্টো।সবার আগে আমরা তার পৃথিবীটাকে করে তুলি ছোট।তার চলাফেরার পথে আরোপ করি নানা বিধিনিষেধ।ঋতুস্রাব যেনো এক শারীরিক ব্যাধি।মা সঙ্গোপনে জানিয়ে দেয় এ নিষিদ্ধ কিছু।লুকিয়ে লুকিয়ে প্যাড বদলানো হয়।অন্য কারো সামনে এই ব্যাপারে কোনো কথা উঠানো যায় না।কথা উঠলে নিজেকে লজ্জিত হতে হয় যারা শুনে তারাও লজ্জিত হয়।দোকান থেকে ন্যাপকিন কিনে আনতে গেলে ব্রাউন পেপারে মুড়িয়ে নেয়া হয়।যেনো অবৈধ, লজ্জাকর, নিষিদ্ধ কোনো ষড়যন্ত্র চলছে নিজের দেহ নিয়ে।অথচ তার ভাইয়ের মুসলমানিতে পাড়া-সুদ্ধ লোকদের ডেকে খাওয়ানো হয়।ভাইয়ের জননাঙ্গ তখন নিষিদ্ধ হয় না।বরং তার শিশ্ন হয়ে উঠে আদরের বস্তু।আদর করে তার নাম দেয়া হয় সোনা, ধন।অপরদিকে তার জননাঙ্গ সবসময়ই নিষিদ্ধ।তাকে জানতে দেয়া হয় না,নাড়াচাড়া করতে দেয়া হয় না জননাঙ্গ নিয়ে।বিয়ের পরে অনেকবার সঙ্গমে যাওয়ার পরও নারী জানতে পারে না তার যোনী, ভগাঙ্কুরের সঠিক কাজ।যে দেহটি সে বয়ে বেড়ায় আজীবন, তা নিয়ে সে অজ্ঞই থাকে,জানতে পারে না কখনই তার ভিতর কি খনি লুকিয়ে আছে।তার বুকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় ওড়না।বুক থেকে ওড়না সামান্য খসলেই যেনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়।বাসে, ট্রেনে, ফুটপাতে এমনকি নিজের ঘরে বাবা ভাইদের সামনে খুব সাবধানে নিজেকে কাপড় দিয়ে মুড়ে চলতে হয়।শরীরের কোনো উঁচু অংশ যেনো ভুলেও না দেখা যায়।এতো কিছুর পরেও সে পারে না যৌন হয়রানি থামাতে, পারে না ধর্ষণ থামাতে।এমনকি ঘরের মানুষ যাদের সে আপন ভেবে বেড়ে উঠেছে তাদের চোখেও সে দেখে কামুক দৃষ্টি।তার মানে পুরুষের কাছে সে নিতান্তই যৌন বস্তু!তার শরীরই তার শত্রু হয়ে উঠে।সে দৌড়তে পারে না, বাসে উঠে ছেলেদের মত ঝুলতে পারে না, দৌড়ে এসে ট্রেন ধরতে পারে না।রাত বারোটার দিকেও তার ভাই ঘরে ফিরে কিন্তু সে নিজে ফিরতে পারে না।রাত হওয়ার সাথে সাথেই মুরগির খামারের মুরগির মতো তাকে ঘরে ঢুকে বসে থাকতে হয়।সিগারেট ফুকা,বন্ধুদের সাথে যেখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়া একটি ছেলের জন্য যা নিতান্তই স্বাভাবিক তার জন্য তা অস্বাভাবিক এই ভাবনাই তাকে হতাশ করে তুলে নিজের ব্যাপারে।মেয়েটি যদি উড়তে চায় তবে লোকে তাকে বেহায়া বলে গালি দেয়।সে যদি সিগারেট ফুকতে চায় কিংবা ছেলেদের মতো স্বতঃস্ফূর্ত পোশাক পরতে চায় তবে লোকেরা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।এই সবই নারীকে বুঝতে শিখায় সমাজের কাছে সে নিতান্তই একটি জড়বস্তু।একটি অক্রিয় বস্তু।ছোট ছোট এইসব আনন্দ তার জন্য নয়।তার নিজস্ব কোনো ইচ্ছে থাকতে নেই।তার আছে শুধু একটি শরীর যা দিয়ে সে তুষ্ট করবে পুরুষদের, সন্তান জন্ম দিয়ে রক্ষা করবে বংশধর।
জিহোভার ভাষায়-‘Anatomy is her destiny’। শরীরই তার নিয়তি।
মেয়েদের আড্ডায় তাই ঘুরেফিরে এই বিষয়গুলোই চলে আসে।কার কবে বিয়ে হল,কে কোন গহনা কিনল,নতুন ফ্যাশনের পোশাক পড়ল,কার স্বামী কেমন।কোন খেলোয়াড় কত সুন্দর,কোন নায়ক কত আকর্ষণীয়।সে খেলোয়াড়দের পছন্দ করে তার খেলা দেখে নয়,তরুণ রাজনীতিবিদদের পছন্দ করে তার রাজনীতি দেখে নয়।খেলোয়াড়, গায়ক, নায়ক,রাজনীতিবিদ সর্বত্র সে খুঁজে তার স্বপ্নের রাজকুমার।সে স্বপ্ন দেখে তাদের সাথে রোমান্স করার,ঘুরে বেড়ানোর,বিয়ে করার,তাদের সন্তানের মা হওয়ার।যদিও সে জানে তা সে কখনই পারবে না তবুও সে দেখে কারণ এছাড়া সে আর কিছুই শিখেনি।বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আমার সহপাঠিনীদের মাঝেও দেখেছি জীবন সম্পর্কে এক অদ্ভুত অবসাদ।ছেলেরা চিন্তা করে কতদিনে পাশ করে চাকরি নিবে।আর মেয়েরা ভাবলেশহীন।ছেলেদেরকে আমি প্রায়ই বলতে শুনি -‘তোমাদের কি!তোমরা তো ছেলে দেখে কারো গলায় ঝুলে যাবে’।আর মেয়েরাও সেই কথায় তাল দিয়ে সমর্থন যুগিয়ে যায়।ভারী ভারী যেই কোনো কাজ তারা ছেলেদের উপর সপে দিয়ে বলে-‘আমরা তো মেয়ে!আমরা তো এ করতে পারি না!’কিছু কিছু মেয়ে যদি ভাঙ্গতে চায় এই প্রথা, কাজ করতে চায় গঠনমূলক তবে তাকে কাজ করতে হয় ছেলেদের সাথেই।আর তখনই তাদের নামে শুরু হয় মুখরোচক কাহিনী।একা একটি মেয়ে দশ বারোটা ছেলের সাথে বসে চা পান করছে,সিগারেট ফুঁকছে পায়ের উপর পা তুলে,আড্ডা মারছে।নিশ্চয়ই মেয়েটার কিছু সমস্যা আছে।মেয়েটা আসলে বেশ্যা!অর্থাৎ তুমি অবলা, রমণী তাই হয়েই থাকো।সুন্দর করে সাজো, নিতম্ব কোমর দুলিয়ে হাঁটো।ছেলেদের আকৃষ্ট কর।একসময় বিয়ে করে কোনো এক ছেলের গলায় ঝুলে পড়।বিপ্লবী, প্রতিবাদী হয়ো না।ভাঙ্গতে যেও না তোমার সামনের দেয়ালটি।
বিজ্ঞাপন সংস্থায় বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন থাকে শুধু নারীর সাজ উপকরণ দিয়ে।সাবান, পাউডার, রূপচর্চার ভেষজ উপকরণ, নেইলপালিশ, লিপস্টিক, বিভিন্ন আকৃতির ব্রা যা নারীর বুকের মাপকে করবে আকর্ষণীয় প্রভৃতি।বিজ্ঞাপনের কাহিনীগুলোও প্রতিফলিত করে সমাজে নারীর সঠিক অবস্থানটি।
টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করবে মেয়ে।সব প্রস্তুতি নেয়া শেষ।আর মাত্র কয়দিন বাকি।তখনই সে খেয়াল করল তার চেহারার রঙের চেয়ে গায়ের রঙ অনুজ্জ্বল।এলো সমাধান নতুন এক ক্রিম।সেই ক্রিমের দরুন মেয়েটি হয়ে উঠল সুন্দর আর জিতে নিয়ে এলো ট্রফি!
সাইকেলের রেসে অংশগ্রহণ করে মাকে একটি বাড়ি উপহার দিতে পারবে না ঠিকই জানে মেয়ে।তাই শুরু হয় লোশন মাখামাখি।সাইকেল রেস জিতার দিন এক ফটোগ্রাফার তাকে দেয় কাঙ্ক্ষিত সুযোগ ব্যান্ড অ্যাম্বাস্যডার হওয়ার।এভাবেই পূরণ করে সে তার স্বপ্ন।
সাংবাদিকতার কাজে প্রতিদিন ঘুরতে হয় অলিগলি।পুড়তে হয় রোদে।তাই গায়ের চামড়া হয়ে পড়ে কালো।চিন্তা নেই আপনার জন্য আছে সানস্ক্রিন লোশন।পরের দিনই প্রেস কনফারেন্সে সাক্ষাৎ দিতে আসা ব্যক্তিটি সাংবাদিকদের ভিড় থেকে সেই মেয়েটিকেই সামনে এগিয়ে আসার অনুরোধ করে আর শুধু তার প্রশ্নেরই উত্তর দেয়।
বয়স ৩০ পেরুনো স্ত্রী চোখের পাশে ভাজ, অমসৃণ চামড়া নিয়ে বড়ই বিব্রত।স্বামী তাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না।এইজ মিরাকল ক্রিম ব্যবহার করে সে ফিরে পেয়েছে তার আগের যৌবন, ধরে রেখেছে তার তারুণ্য।স্বামীর প্রেম তাই আবারও জেগে উঠে।স্ত্রীকে ভালবাসতে এখন আর স্বামী কার্পণ্য করে না!
এই হল বর্তমানের বহুল প্রচলিত বিজ্ঞাপনের কাহিনী।যেগুলো বারেবারে নির্দেশ করে নারী তুমি যেই ক্ষেত্রেই বিচরণ কর, তুমি খেলোয়াড় হও কিংবা সাংবাদিক নয়ত গায়িকা তোমাকে হতে হবে সুন্দর।একটি ছেলের যোগ্যতার মাপকাঠি যেখানে তার প্রতিভা, তোমার প্রতিভার প্রধান মাপকাঠি তোমার রূপ।কারণ তুমি একটা দেখার বস্তু!দুচোখ দিয়ে গেলার বস্তু!তাই তো গাড়ির শোরুমে নতুন গাড়ির উদ্বোধনে দু পাশে দাঁড়িয়ে থাকে দুইজন সুন্দরী।এমনকি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা শুরুর আগেও কাপ প্রদর্শনের সময় বিশ্বকাপের দুইপাশে দুইজন নারী শোভা পায়।বাণিজ্যিক ক্রিকেট টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে চিয়ার্স লিডারদের রমরমা ব্যবসা।মাঠে পুরুষেরা ব্যাট বল নিয়ে যুদ্ধ করে আর পিছনে চিয়ার্স লিডারেরা নেচে গেয়ে খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা ও দর্শকদের মনোরঞ্জনে থাকে ব্যস্ত।প্রবাদে আছে-‘প্রতিটি সফল পুরুষের পিছনে থাকে একজন নারীর হাত’।এখানেও নারীর কাজ সেবামুলক।পুরুষ প্রতিযোগিতায় নামবে, পরিশ্রম করে ঘর ভর্তি করবে সাফল্যের জয়গানে।আর নারী তুমি পিছন থেকে যুগিয়ে যাবে তার অনুপ্রেরণা।মঞ্চের পর্দার পিছনেই তোমার অবস্থান।মঞ্চে তোমার আবির্ভাব কখনই হবে না।তুমি নিজে সফল কখনই হবে না।তুমি শুধু পুরুষকে করে তুলবে সফল, কর্মোদ্যম।সমাজ নারীর কাছে তাই প্রত্যাশা করে।
নারীর শিক্ষা-পদ্ধতিও থাকে ভিন্ন।মাধ্যমিক লেভেলে তাকে দেয়া হয় গার্হস্থ্য অর্থনীতি নামক একটি বিষয় যেখানে সুচারু রূপে বর্ণনা করা থাকে আদর্শ গৃহিণীর করণীয়।বিদ্যালয় পর্যায়ের, পরিবার পর্যায়ের, সমাজ পর্যায়ের তার সকল শিক্ষা দীক্ষার একটিই উদ্দেশ্য কিভাবে তাকে বিয়ের উপযুক্ত করে তোলা যায়।একটি মেয়ের বাবা মায়ের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা থাকে তার বিয়ের!কতদিনে মেয়ে ১৮ পেরুবে, একটি উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে দেয়া হবে এই চিন্তাতেই তাদের কপালের ভাজ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।উচ্চ মাধ্যমিক লেভেল পাশ করার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় পাত্র খোঁজা।পাত্র হতে হবে শিক্ষিত, সুপ্রতিষ্ঠিত, স্বাবলম্বী।অপরদিকে একটি মেয়ের কাছে কিন্তু কখনই এ আশা করা হয় না।ধরেই নেয়া হয় নারী এক বিকলাঙ্গ প্রাণী যে কখনই স্বংসম্পুর্ন নয়।যাকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে কোনো একটি পুরুষের ছায়ায় প্রতিপালিত হতে হবে।হতে পারে সে বাবা, তার স্বামী কিংবা ছেলে।বিয়ের বাজারে সুন্দরী মেয়ে তাই কড়া মূল্যে বিক্রি হয়।এদের পেতে সব ছেলের মা বাবারাই মুখিয়ে থাকে।পাত্রীর ক্ষেত্রে সুন্দর হওয়া থাকে প্রথম শর্ত।এছাড়া মেয়েকে হতে হবে নম্র, মুরব্বীদের সামনে যে চোখ নামিয়ে নিচু স্বরে কথা বলে।তার গায়ের রঙ দেখা হয়,চুলের গোছা মাপা হয়,বুকের মাপ নেয়া হয়।সুস্বাদু করে পরিবেশন করা হয় পুরুষের সামনে।যেনো বিছানায় তাকে উপভোগ করতে পারে সুখানুভূতি নিয়ে।মেয়েকে বিয়ে করে পার করিয়ে দিতে পারলেই বাবা হাফ ছেড়ে বাঁচে।আমাদের মতো সমাজে যেখানে মেয়ে শুধুই একটি বোঝা সেখানে অনেকেই বিশেষ করে গ্রামে মেয়ের পরিবার বিয়ের বয়স ১৮ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও নারাজ!তাই আজো বাল্যবিবাহ সগৌরবে তার বিজয় পতাকা উড়িয়ে চলছে বাংলাদেশে।
আমাদের দেশের তথাকথিত ‘নারীবাদী’গন যারা নারী অধিকার নিয়ে মিছিল মিটিল করেন তাদের একটাই উদ্দেশ্য থাকে ধর্ষিতা মেয়ে, পতিতা মেয়ে, নির্যাতিত মেয়ে, প্রতিবন্ধী মেয়ে যেই কোনো মেয়ে তাদের একটি গতি করা, তাদের একটি বিয়ে দেয়া।হুমায়ুন আযাদ এদের নিয়ে বলেছিলেন-“বাঙ্গলাদশে যারা নারীদের কল্যাণ চান,তারা মনে করেন নারীর কল্যাণ শুভবিবাহে,সুখী গৃহে,স্বামীর একটি মাংসল পুতুল হওয়াকেই তারা মনে করেন নারী-জীবনের সার্থকতা।স্বামী যদি ভাত-কাপড় দেয়,তার উপর দেয় লিপস্টিক নখ-পালিশ ইত্যাদি,এবং আর বিয়ে না করে করলেও অনুমতি নিয়ে করে,বা তালাক না দিয়ে চার স্ত্রীকেই দেখে ‘সমান চোখে’।তাহলেই নারীকল্যান পিপাসুরা পরিতৃপ্ত,ও তাদের আন্দোলন সফল ভেবে ধন্য বোধ করেন”।
গ্রাম্য সালিশে ধর্ষিতা মেয়ের ধর্ষণের একটাই সমাধান- আজীবন তাকে ধর্ষণ করার সুযোগ করে দেয়া ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে।অর্থাৎ নারীর পরিণতি একটাই-বিয়ে।
এগুলো সমাজের অতি সাধারণ কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু প্রতিবন্ধকতা যা নারীর পথে স্বাভাবিক ভাবেই বয়ে চলছে।পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যেই বৃত্ত তৈরি করে দিয়েছে, আবদ্ধ করে রাখতে নারীকে।নারী তা আজও পারেনি ভাঙ্গতে।কেনোনা নারী পারেনি এখনও পূর্ণ শক্তিতে জ্বলে উঠতে।নারীরা যতটুকু পেয়েছে তার প্রায় সবই পুরুষের দেয়া।নারী নিজে কিছুই অর্জন করেনি।
মার্কিন কালো শাদাদের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে জর্জ বার্নার্ড শ-এর একটি উক্তি ছিল-“মার্কিন শাদারা কালোদের ঠেলে নামিয়ে দেয় জুতোপালিশকারী বালকদের স্তরে,এবং এ থেকে তারা সিদ্ধান্ত পৌঁছে যে কালোরা জুতো পালিশ করা ছাড়া আর কিছুর উপযুক্ত নয়”।
নারী ও পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ঠিক একই স্তরের।পুরুষদের প্রায়ই যে অপবাদ দিতে শোনা যায় তা হল নারী অক্রিয়, অবলা, অপরিপক্ব।আসলে পুরুষেরা নিজেরাই নারীকে অবলা বানিয়ে রাখে।তাকে সক্রিয় করে তোলার সকল পথ বন্ধ করে বলে নারী অক্রিয়।
তাই নারীকে আজ বেঁচে উঠতে হবে।প্রতিষ্ঠিত হতে হবে একজন মানুষ হিসেবে।সমাজের পুরুষেরা ভুলে গিয়েছে নারীও মানুষ।তাদের সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।মেরি ওলষ্টোনক্র্যাফট, সিমোন দ্য বোভোয়ার, রোজা লুক্সেমবার্গ, তসলিমা নাসরিন যে পথে লড়ে চলেছেন নারীবাদীদের পক্ষে, মাদাম কুরি, আঙ সান সুচি যে পথে নারীত্বের শক্তি দেখিয়েছেন সেই পথে এখনও চলার অনেক বাকি আমাদের। “ওই গাঁয়েতে বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি ওই, তোমার বাড়ি কইগো নারী, তোমার বাড়ি কই”? নারী আজ সময় একটি ঘর খুঁজে নেয়ার।
তামিম, ভিরাট কোহলি ,জন ইব্রাহিম, শাহরুখ, শহীদ কাপুর ফেয়ারনেস ক্রীমের মডেল।।
নারীবাদী লেখকদেরকে অনুরোধ আপনারা মেয়েদেরকে দেওয়া অতিরিক্ত সুবিধার বিরুদ্ধে লেখেন।
একই পোস্টে চাকরিতে মেয়েদের কেন কম যোগ্যতা লাগে? বি সি এস পরীক্ষায় কেন স্পেশাল ব্যাচের কোটায় নারীরাও অংশগ্রহণ করতে পারে? এগুলো কি নারীদেরকে ছোট করা নয়?
(Y) চমৎকার লেখা। লিখে চলুন নিয়মিত। মুক্তমনায় স্বাগতম আপনাকে (F)
@স্বাধীন,
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
ভালো থাকুন সবসময়।
বিপ্লব রহমান ও রাহনুমা রাখী র সাথে পুরোপুরি এক্মত।রাখী,আপনি আপনার প্রতিবাদী লেখা নিয়ে এগিয়ে জান।সুন্দর পোস্ট টির জন্য ধন্নবাদ।। :guru: :clap :candle: মোমবাতির মত আপনার দীপ্তিতে দীপ্তিময় হোক ধরা।শুভকামনায় আমি।
@ঈশ্বর বিমুখ আমি,
ধন্যবাদ ঈশ্বর। (L)
ভালো লাগল আপনার অনুপ্রেরনা।
লেখায় নতুন কিছু তো খুঁজে পাইলাম না,এই বিষয় নিয়ে অনেকবার অনেকেই একই কথা ঘুরাইয়া ফিরাইয়া বলছেন। আমার আবার ইদানিং বোরিং লেখা পড়লে ঝিমানি আসে :@ (O)
@নেট পথিক,
লেখায় নতুন কিছু আসবে কিভাবে!!!গত কয়েক শতক ধরে নারীর অবস্থান তো নতুন হয়নি!
আজও বাল্যবিবাহের মত সাধারন প্রথা আটকাতে পারছি না!বাল্যবিবাহের হারে বাংলাদেশ প্রথম দশের ভিতর আছেই!
এছাড়া ধর্ষন,যৌন হয়রানি এসব তো ডাল-ভাত।
নতুন কিছু ঘটুক লেখায় নতুন কিছু পাবেন।আর আমি তেমন জ্ঞানী মানুষ নই।চারপাশে যা ঘটে তাই লিখি।এর বেশী লেখার ক্ষমতা আমার নেই।
আপনি ঘুম থেকে জেগে উঠুন।বাস্তবে ফিরুন।আপনার বোধদয় ঘটুক।
@রাহনুমা রাখী,
যাক আপনার কমেন্ট থেকে একটা কথাই প্রমানিত- যেহেতু আপনাদের এ্তো অসংখ্য এক ঘেয়ে ধরনের লেখার ফলে নারীর অবস্থায় কোন পরিবর্তন হয় নাই- তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় এই লেখার খুব একটা উপযোগীতাও নেই। তাই বলছিলাম নারীদের নিয়েই লেখেন, তবে নতুন কিছু লেখেন 🙂
@নেট পথিক,
দুঃখিত।আপনার কাছে এই লেখা পুরাতন হলেও আমার কাছে নতুন।আর শুরু যখন করেছিই তখন একেবারে গোড়া থেকেই করি।যা এতোদিন ধরে স্বাভাবিক ভাবেই চলে এসেছে তা দিয়েই আগে শুরু করি।
@রাহনুমা রাখী,
আপনার বক্তব্যের স্বচ্ছতা, সরলতা ও সরাসির উপস্থাপনা চমৎকার। লেখা ও মন্তব্যের বিনীতধরণটুকুও ভালো লাগলো। আরো লিখুন।
মুক্তমনায় স্বাগতম। চলুক। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ অসংখ্য ধন্যবাদ। :guru:
আমার পড়া অন্যতম সেরা একটি ফেমিনিস্ট লেখা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য।
তবে, আলোচনা দেখে মনে হচ্ছে অনেকেই নারীদের দমে থাকার পেছনে ন্যাচরাল সায়েন্স থেকে কিছু যুক্তি দিচ্ছে। এর কারনটা বুঝা গেল না। ন্যাচেরাল সায়েন্সের কথা মেনে চললে তো ফেমিনিজম এতটুকু পথ পাড়িই দিতে পারতো না! তাছাড়া এরকম কথা শুনা যায় সেক্সিইজম প্রমোটকারীদের মুখে।
@ আল্লাচালাইনা,
বিজ্ঞাপন সম্পর্কে এই কথাটি’র প্রভাব ভেবে বলছেন তো? আপনি সুন্দর বলে একে গ্রহনযোগ্য বলে ছাড়পত্র দিচ্ছেন আর নারী’র উপস্থিতিটিকে মনের মাধুরী মিশিয়ে উপভোগ করে শুধুমাত্র মানসিক তৃপ্তি লাভ করছেন কিন্তু একটি বাসার অশিক্ষিত দাড়োয়ান একই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার শিক্ষাহীনতার কারনে সৌন্দর্যে অবগাহন করতে যেয়ে ধর্ষক হয়ে উঠতে পারে সেটা ভেবেছেন? আপনার ক্যাপাবিলিটি’র উপর নির্ভর করে সোশ্যাল নর্ম গড়তে চাওয়া উচিৎ নয় বরং সার্বজনীন প্রেক্ষাপট মাথায় না রেখে এরকম প্রচার খারাপ ফলাফল বয়ে আনবে।
এছাড়াও অন্য কিছু বিজ্ঞাপনের উদাহরন দিয়ে যা প্রমান করতে চাইলেন আগামীতে কেউ এমন উদাহরন টেনে সমাজে আল্লাকে চালাইতে গেলে কি জবাব দিবেন?
আপনি দেখি এখনো অমুল পশ্চিমাকরনেই রয়ে গেছেন :-s নিজেই বলছেন মাত্র ৫০ বছর আগেও এমন ছিল না অবস্থা তার মানে এখন যা হচ্ছে সেটা নিউ কনস্ট্রাকশন এবং এমন ব্যাপক একটা ট্রানজিশনের আফটার ম্যাথ এখনো পরিষ্কার তো নয়ই বরং ইতিমধ্যেই নানা’ন পজিশন থেকে এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আর আপনি ৫০ বছর পার হয়েও ৫০ বছর পুরানো এবং প্রশ্নবিদ্ধ একটি ব্যাবস্থা দিয়ে আমাদেরকে সমুলে পরিবর্তন করতে বলছেন! :-X
সব শেষে রিসেন্ট ফেমিনিস্ট মুভমেন্টকে এ্যান্টি সোশ্যাল ও এ্যান্টি সায়েন্স মুভমেন্ট বলে আপনার কাঙ্ক্ষিত ওয়েস্টার্নাইজেশন যে বিপদজনক সেটাও নিজেই প্রমান করলেন কেন বলেন তো? আবার মনে রাখতে হবে যে, ফেমিনিস্টরা এরুপ চন্ডমূর্তি ধারন না করলে যেই অগ্রগতি হয়েছে সেটা আরো অন্তত ২০-৩০ বছর পিছিয়ে যেত। আপনি বলতে পারতেন পশ্চিমের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশী পার্সপেক্টিভে কাজে লাগান।
লেখিকা যা লিখেছে খুবই সঠিক লিখেছে। সমস্যা আইডেন্টিফাই হচ্ছে এবং সময়মত এর সল্যুশনও হবে। আইডেন্টিফিকেশন প্রসেসের সময়ে চুড়ান্ত মতামত প্রকাশ করে নিরুৎসাহিত করবেন না।
কর্পোরেটদের সৃষ্ঠ নর্ম ফলো করা ও ধর্মজীবিদের ধর্মগ্রন্থে’র রেফারেন্সের মত করে সায়েন্সের উদাহরন টেনে নারী’র কথা বলার সুযোগ বন্ধ করে দেয়ার প্রবনতা থেকে বুঝা গেল আপনি নিজের “ক্যালিফোর্নিয়া মেড ওয়েস্টার্নাইজেশন” কমপ্লিট করে ফেলেছেন যেটা “আই এম এ জিনিশ আর বাকী সব ফিনিশ” টাইপ আর দুঃখজনকভাবে প্রায়ই আমাদেরকে এই বস্তুতে হ্যাবিটেড হবার আহ্বান জানাবার চেষ্টা করছেন :))
@অসামাজিক,
দেশ চলে গনতন্ত্রে। গনতন্ত্র বলেছে এই এই বিজ্ঞাপন তুমি বানাতে পারো, এইটা পারো না। আমি দেখবো গাড়ির পাশে নারী কি সেই জনগনের আইনকে লঙ্ঘন করছে নাকি। আইন লঙ্ঘন না করে একজনের সেইরকম বিজ্ঞাপন বানানোর সম্পুর্ণ স্বাধীনতাই রয়েছে, যেই বিজ্ঞাপন কিনা তার পন্যের বিক্রি ম্যাক্সিমাইজ করবে। গাড়ির পাশে নারী দাড় করালে ধর্ষণের হার কতো বাড়ে এইটা কিন্তু আবার কোয়ান্টিফাইএবল, গণিত কষে আমরা নির্ধারণ করতে পারি এটা ঠিক যেইভাবে পারি প্রতিদিন তিনটা ব্ল্যাকবেরী খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কতোটুকু বাড়ে/কমে এটা কোয়ান্টিফাই করতে। সো গাড়ির পাশে নারী দাড়ানোর ফলে দাড়োয়ানদের মধ্যে ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে এই ক্লেইমটা ততোক্ষণ পর্যন্ত নিছকই একটি অপিনিয়ন যতোক্ষণ পর্যন্ত না এর সপক্ষে কোন স্ট্যাটিস্টিক্স আপনি নিয়ে আসতে পারছেন।
মন্টিপাইটনের ক্র্যাকপট রিলিজিয়নের মতো বিজ্ঞাপন দিয়ে কেউ রিলিজিয়ন বেঁচতে যদি যায়, এবং সেটি যদি আল্টিমেটলি হয় একটি সফল পন্য- তবে, আমার বিরস জীবনে কিছু বিমলানন্দের ছোঁয়া নিয়ে আসার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষকে আমি সাধুবাদ জানাবো।
ক্ষতির কিছু উদাহারণ শুনতে চাই, শুধু তাই নয় উপকার এবং ক্ষতির একটি পাশাপাশি তুলনামুলক বিশ্লেষণও চাই। নারী পুরুষ এমপ্লয়মেন্টের অনুপাতে কি এটা সমতা এনেছে; নারী পুরুষের বেতনে কি এটা গ্রহনযোগ্য সমতা এনেছে; নারী পুরুষের নির্বিশেষ ভোটাধিকার কি এটা দিয়েছে; যতো নির্জন স্থানে যতো রাতেই হোক না কেনো একটা নারীর (ও পুরুষের) যেই নিরাপত্তায় একাকী চলাফেরার স্বাধীনতা রয়েছে সেটা কি নিশ্চিত করতে পেরেছে; সেক্সুয়াল বুলিয়িং (ইভ টিজিং) কি এটা নির্মুল করতে পেরেছে? যদি পেরে থাকে তাহলেতো এটা মোটামুটি সাক্সেসফুলই। নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার লাভের ক্রম ইতিহাস মাত্র পঞ্চাশ বছরের নয়, এটার শুরু বরং শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে।
রিসেন্ট বয়কাট ফেমিনিস্টরা ফেমিনিজমকে একটি রেস্পন্সিবল অবস্থান থেকে হাইজ্যাক করে নিয়ে সেটাকে বানিয়েছে একটি এন্টিসোশ্যাল আপরোয়র! পৃথিবীর প্রোফাইলে গিয়ে পোস্টমডার্নিজম বিষয়ক তার রিসেন্ট পোস্টটা পড়ুন, উপরে রেহনুমাকে দেওয়া আমার সান্ড্রা হার্ডিঙ্গের লিঙ্কটা পড়ুন। তারা বলে ‘সায়েন্স হচ্ছে জ্ঞানার্জনের সবচেয়ে লিঙ্গবাদী একটি পদ্ধতি, লজিক হচ্ছে অবদমনের একটি টুল।’ ও ইয়েস যেই সায়েন্স তার জন্য বানিয়েছে ওয়াশিং মেশিন সে যাতে ত্রিশ বছর বয়সে কাপড় ম্যানুয়ালি কাচতে কাচতে ব্যাকপেইনের অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে অস্টিওপোরোসিস রোগীতে পরীনত না হয়। এই অজ্ঞান নারীবাদীটি কথা বলছে সেই সায়েন্সের বিরুদ্ধে যেই সায়েন্স তাকে দিয়েছে ইস্ট্রোজেন পিল এবং সিলেক্টিভ ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর মডুলেটর যার কৃপায় সে কিনা যখন খুশী তখন যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতে পারে গর্ভসঞ্চারের ভীতিহীনভাবে। এবং এইটা হচ্ছে মাত্র দুইটা উদাহারণ। এটাতো নিঃসন্দেহেই একটি এন্টিসোশ্যাল আন্দোলন, তাই না? বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী প্রযোজন হচ্ছে সায়েন্সে জনবল এবং অর্থ নিয়োজিত করা। আমি ক্যান্সার রিসার্চ সম্পর্কিত রিসেন্ট ডিভেলপমেন্টের কিছু কিছু খুব কাছাকাছি থেকে দেখেছি এবং বুঝেছি যে কতোটা কাছাকাছি রয়েছি আমরা আমাদের ক্যান্সার বিরোধী যুদ্ধে। ক্যান্সার সায়েন্টিস্ট এবং ক্যান্সার ফান্ডিং এই দুটি জিনিষ আগামী দশ কি পঞ্চাশ বছরে নির্মুল করতে সক্ষম হবে দুশো ক্যান্সারের মধ্যে অন্তত একশোটি। ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা ক্যান্সারের সংখ্যা প্রতিদশকে বাড়ছে। টেস্টিকুলার ক্যান্সারের মর্টালিটি ৯০% থেকে ১০% এ নামিয়েছে একটি মাত্র ঔষধ যেটির নাম সিসপ্লাটিন। এই স্পেসিফিক মুহুর্তটিতে বিজ্ঞানবিরোধী কথা বলার চেয়ে অমানবিক কথা আরত কোনটি বলা যেতে পারে না। তো সেইটা নারীবাদীই বলুক, সমাজবিজ্ঞানীই বলুক আর দার্শনিকই বলুক। এখানে উল্লেখ্য সান্ড্রা হার্ডিং নিজেকে পরিচয় দেয় একজন পোস্টমডার্নিস্ট, পোস্টকলোনিয়ালিস্ট, নারীবাদী সমাজবিজ্ঞানী বিজ্ঞানের দার্শনিক হিসেবে। নিজের অসততাপুর্ণ মিথ্যাচার আর সুডোস্কলারির আড়ালে এই মহিলাটি সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে নারীদেরই। এদের বিরিঞ্চিবাবাগিরি নারীদের অবস্থান কি করে উন্নত করছে আমি সেটা বুঝতে আপারগ। এমিলি ডাভিসন এস্কটে রাণীর ঘোড়ার নীচে আত্নাহুতী দিয়ে ব্রিটিশ মেয়েদের জন্য নিয়ে এসেছিলো ভোটাধিকার; এমিলি যদি সারাজনম বসে কন্সপিরেসি থিওরী ফেঁদে যেতো আর করে যেতো সুডোস্কলারী, বৃটিশ নারীদের ভটাধিকার আনয়নে কতোটুকু ভুমিকা পালন করতো সেটা?
আমি কোথায় এটা করেছি বুঝলাম না! সায়েন্সের কি উদাহারণ টানলাম আমি? অভিজিত আর আমাকে গুলাচ্ছেন বোধহয়। সায়েন্স নিয়ে বলেছে অভিজিত। সায়েন্সের উদাহারণ টেনে কারও মুখ বন্ধ করা যায়নাতো। ক্রিয়েশনিস্টদের মুখ কি সায়েন্স বন্ধ করেছে, নাকি বন্ধ করেছে হোমিওপ্যাথদের মুখ? সান্ড্রা হার্ডিং যদি সায়েন্সমুক্ত বিশ্ব চায় সেটা সে চাইতেই পারে, তার মুখ বন্ধ করার ক্ষমতা কার আছে?
চুড়ান্ত কোন মততো আমি প্রকাশ করিনি। লেখক ফিডব্যাক পাওয়ার জন্যই লেখাটা লিখেছে। আমি আমার ফিডব্যাক দিয়েছি। নির্দিষ্টভাবে কোন মতামতটা চুড়ান্ত হলো শুনি?
@আল্লাচালাইনা,
পশ্চিমা নারীবাদ একটা স্টেটাস কো ফোর্সে পরিণত হওয়ার তার মধ্যে একটা “নেই-কাজ-খই-ভাজ” ব্যাপার চলে এসেছে, তার মধ্যে এই এন্টি-সায়েন্স উন্মাদনাও একটি। তবে আমাদের দেশে নারীদের অবস্থা এতই শোচনীয় যে বাংলাদেশী নারীবাদ রেডিকাল ফেমিনিজম-এ রূপ নেবে আগামী ৩০ বছরে এর সম্ভাবনা বোধহয় বেশ কম।
@অসামাজিক,
পুরোপুরি একমত।বন্দুকধারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বন্দুক নিয়ে নামতে হয়।
নরম থেকে তো দেখা হল কাজ হয়নি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ekhane ki link load deya jayna!!!
http://www.amarbornomala.com/post6127.html
শ্রদ্ধেয় আপু
আমার পোস্টের ভুমিকা যেহেতু দেখেবেন তাই আর বাড়তি ভুমিকা নিষ্প্রয়োজন। সরাসরি আপনার পোস্টের ব্যাপারে আমার অভিমত জানাচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে রক্ষণশীল মানেই নারীবিদ্বেষী নয়, কিন্তু মুক্তমনাদের নারীবাদের কট্টর সমালোচক। আপনি যদিও প্রত্যক্ষভাবে ইসলামের নাম নিয়ে কথা বলেননি কিন্তু আপনার আলোচনায় উঠে এসেছে আমাদের রক্ষণশীল সমাজ আর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, আপনি মডেল/আদর্শ হিসেবে তসলিমা নাসরিন, হুমায়ূন আজাদদেরকে রেখেছেন। এমনকি ইসলামের প্রতি আপনার বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতাও দেখা যায়নি। তাই আমাকেও ধরে নিতে হচ্ছে আপনি প্রচলিত রক্ষণশীলতা বলতে ইসলামকেই এনেছেন। আপনার উপর আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই কথাগুলো লিখলাম। আমার সমাজে আমি নারীদেরকে সম্মানিত স্থানেই দেখে আসছি, এখনও নারীদেরকে সম্মান করার চেষ্টা করি। কিন্তু সম্মানের নামান্তর যদি মুক্তমনাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা হয় তবে আমি মনে করিনা এটা নারীদের কল্যানে কিছু করবে, শুধু তাদেরকে সস্তা বিনোদনের বস্তুতে পরিণত করা ছাড়া।
আমার পোস্ট এখানে
@শিমুল,
কেনো দেখাতে যাবো?আমি তো বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞ নই এ ধর্মের প্রতি।
শুধু ব্যক্তি স্বাধীনতা নয় সবরকমের স্বাধীনতাই পারে মানুষকে মানুষ হিসেবে বাঁচিয়ে তুলতে।
ধন্যবাদ।
দিবারাত্রি স্মৃতি সম্বল করে সারাক্ষণ আড়ালে বসে থাকা। প্রকৃ্তি কত নির্বোধ বেদনায় গাঢ় আপ্রকাশিত মন পেছনে ঘোরে সর্বদা সর্বক্ষণ। চকিতে দেখে কেউ আমার অস্থিরতা এলোমেলো ভাবনা আর, নিশীথে ফুঁপিয়ে কান্না।
@iqbal,
কবিতার স্বাদ ঘোলে না মিটিয়ে যা বলার সরাসরি বলুন।
@রাহনুমা রাখী,
শক্তিশালী একটি লেখার জন্য ধন্যবাদ। খুবই যুক্তিপুর্ন ছিলো মন্তব্যকারীদের প্রতি দেওয়া আপনার উত্তরগুলো।
দেখুন এই যদি হয় কনসেপ্ট যে
সাম্য বলতে গেলেই বুঝতে হবে নারীদের নগ্ন দেহ, সুতরাং নারীদের হেজাব পরিয়ে রাখার উদ্দেশ্য কি তা বুঝতে কোন অসুবিধা হয়না।
চিন্তাধারা যদি এমনটাই হয় (জানিনা কোন পরিসংখ্যান অনুযায়ী) তাহলে নারীদের কেন সমাজে ক্ষমতাধরদের হাতে সুপরিকল্পিতভাবে শোষিত ও নিগৃহিত হতে হয় তা বোধগম্য।
@ব্রাইট স্মাইল্,
ব্রাইট স্মাইল বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনি সত্যিই ব্রাইট!!!
উনাদের নিজেদের আপত্তিতেই লুকিয়ে আছে স্বৈরাচারিতা!
আপনারা কেও কি প্রথম আলোর নারীমঞ্চ পাতাটি খেয়াল করেছেন।
সেখানে সবসময় বিজ্ঞাপন থাকে মুখের রঙ ফর্সাকারী cream “fair and lovely”
বরই মজার,পাতার নাম নারীমঞ্চ,বিজ্ঞাপন “fair and lovely”
@মন্টি ব্যারেট,
শুধু প্রথম আলোতেই নয় প্রতিটি নারী পাতায় কমপক্ষে একটা আর্টিকেল থাকে মুখ ফর্সাকারী, চুল ঘনকারী উপকরন ও পদ্ধতি দিয়ে।
আপনার পোস্টের বেশীরভাগ পয়েন্টের সাথেই একমত। অনুন্নুত বিশ্বে বিশেষত প্রাচ্যে এবং আফ্রিকায় মেয়েরা অনেক অনেক অপ্রেসড নিঃসন্দেহে। যেমন- বেড়ে ওঠা সম্পর্কে যেটা বললেন, হাড়ি-পাতিল, পুতুলের বিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি, এইটা নিঃসন্দেহে একটি ব্যাড প্রাকটিস। ছেলে শিশুর হাতে খেলনা বন্দুক তুলে দেওয়া রিতীমতো অসুস্থতা। বর্তমানে শিক্ষিত বিশ্বে যতোটুকু দেখেছি বন্দুক ছুরি কাচি ছেলে শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়না। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে একটি শিশুর হাতে খেলনা তুলে দিতে হলে সবার প্রথমে আমি সম্ভবত তুলে দিবো ছবির বই এবং ইলাস্ট্রেটেড গল্পের বই। আর পুতুল যেমন- টেডি বিয়ার ইত্যাদি নিয়েতো দেখি ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সকল শিশুই খেলে। স্নোহোয়াইট, পোকাহন্টাস ইত্যাদি রুপকথা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই; এই রুপকথাগুলোতে আমি অভিযোগ করার মতো কিছু খুঁযে পাইনি। এখনও এই গল্পগুলো আমাকে আমার শিশুকালে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
জেনিটালিয়া নিয়ে যা বলেছেন এটার সাথে মোটামুটি একমত। তবে এইটাও আমি বলবো শুধুই পিছিয়ে থাকা বিশ্বের জন্যই কার্যকর, শিক্ষিত বিশ্বের জন্য নয়। আচরণের স্বাধীনতা যেমন পোশাক-আশাক, সোশ্যালাইজিং, নাইট আউট বা ডে আউট ইত্যাদির স্বাধীনতাও উপমহাদেশীয় মেয়েদের প্রায় নেই বললেই চলে, এই ব্যাপারে আপনার সাথে একমত।
বিজ্ঞাপনের যেই চারটা সিনারিও বললেন এর মধ্যে প্রথম তিনটি নিয়ে আমি অভিযোগ করার মতো কিছু পাইনি, চতুর্থটা নিঃসন্দেহে ছ্যাবলামী। প্রথম তিনটির প্যাটার্নের বিজ্ঞাপন সারা বিশ্বেই বানানো হচ্ছে। গাড়ির পাশে নারী থাকাটাতেও আমি অভিযোগ করার কিছু দেখছি না। এইটা কোনভাবে মেয়েদেরকে ডিগ্রেইড করছে বলেও মনে করিনা। বাংলাদেশে মেয়েদের পড়ানো গার্হস্থ অর্থনীতি একটা সিকেনিং সাবজেক্ট এই ব্যাপারে একমত।
আমি মনে করি আমাদের সংস্কৃতিতে মেয়েদের যেই ম্যালট্রিটমেন্ট এটার উতস হচ্ছে প্রস্তরযুগীয় ধর্মভিত্তিক, অনগ্রসরতাভিত্তিক এবং ফোকলোরভিত্তিক মুল্যবোধ। আমি মনে করি এই সমস্যাটার একমাত্র সমাধান হচ্ছে আমূল ওয়েস্টার্নাইজেশন। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও হয়তো এমনকি ইউরোপেও ঘুরে বেড়াতো ভিক্টোরিয়ানিজমের ভুত, সেই ভুতকে তারা ঝেঁটিয়ে বিলুপ্ত করেছে আমূল ওয়েস্টার্নাইজেশনের মধ্য দিয়ে, আমি মনে করি আমাদেরকেও ঠিক সেইটাই করতে হবে। আমরা যেই মুল্যবোধ সমুন্নত করি সেটা সর্বদিকদিয়ে করোসিভ, এইটা এই অবস্থায় চলতে দেওয়া অনুচিত, রিফর্ম কাম্য। তবে, সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত না হলে কিন্তু চাইলেও ওয়েস্টার্নাইজেশন আসবে না তাই না, ধনী পরিবারের একটা বাঙ্গালী মেয়ে বলাই বাহুল্য আপনার বর্নীত অনেক সমস্যা থেকেই মুক্ত।
ফাইনালি আপনাকে মুক্তমনায় স্বাগতম। (D)
@আল্লাচালাইনা,
আপনার মন্তব্যটির সাথে প্রায় পুরোপুরি একমত শুধু এইটুকু ছাড়া-
প্রথম তিনটি একেবারেই আবাল প্রকৃতির।সাংবাদিকতা, খেলোয়াড় হিসেবে সুন্দর চেহারার কি কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করবেন কি!!!
গাড়ির সাথে নারী দেহের কি সম্পর্ক?নারীকে রাখার কি প্রয়োজন!আমি তো তাই খুঁজে পাচ্ছি না।
অর্থনীতিক অবস্থা উন্নতি অবশ্যই প্রয়োজন।ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ক্ষত্রেও কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন অর্থনীতিক স্বাধীনতা।কিন্তু কয়টা মেয়েকে পড়ানো হয় সুযোগ দেয়া হয় ক্যরিয়ার গড়ে নেয়ার।আর কয়টা মেয়ে সেই সুযোগ গ্রহন করে!!!
ধন্যবাদ।শুভকামনা।
@রাহনুমা রাখী, হয়তোবা আবাল প্রকৃতির, মানবো কর্মকান্ডের আরও কতো ফ্যাসেটইতো আবাল প্রকৃতির। যে কোন কিছুই, কোন পন্য বা মতাদর্শ বা হোয়াটএভার যদি আপনি অন্যকে বেঁচতে চান আপনার বিজ্ঞাপনটিকে হতে হবে গ্লামারাস! এইটা ইহচ্ছে বাস্তবতা। নিডো দুদুর গ্লাসে একও চুমুক দিয়েই ফলে দেখা যাবে শিশু ট্রান্সফর্মড হয়ে গিয়েছে একটি বাচ্চা সুপারম্যানে। এরোমেটিক সাবান দিয়ে গোসল করার ফলে ক্রিকেটের মাঠে গিয়ে পুরুষ পেটালো ধুমধুমাধুম বেশ কয়েকটি ছক্কা। প্রাসঙ্গীকতাটাইতো কঞ্জুমার সাইকোলজির সবকিছু না তাই না? আপনি কোনকিছু বেঁচতে বসেন আপনাকেও আপনার পন্যের গ্লামারাস বিজ্ঞাপন দিতে হবে, আপনার পন্যটি ব্যাবহার করে আপনার টার্গেট কঞ্জুমারের মুল্য কিভাবে কিভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে এটা যতোভাবে সম্ভব ততোভাবে দেখাতে হবে, প্রাসঙ্গীকতা/অপ্রাসঙ্গীকতা নির্বিশেষে। সাধেই কি আর স্মার্ট ও কনফিডেন্ট না হলে বুদ্ধি যতোই থাকুক এমপ্লয়মেন্ট পেতে এতো অসুবিধা হয় জগতে?
আর স্মার্ট গাড়ির দুই দরজার পাশে দুটি স্মার্ট নারী দৃশ্যটির এস্থেটিক আপিল আমার কাছে অনন্ত! হাইপারপুরুষবাদীতার জন্য দুঃখপ্রকাশপুর্বকই এই ঘোষণা দিচ্ছি। এটাকে নারীর প্রতি কোন ডিগ্রেইডিং ট্রিটোমেন্ট মনে করিনা আমি। যেটা ডিগ্রেইডিং নয় কিন্তু দেখতে সুন্দর তার প্রতি বিষোদ্গার কেনো করবো?
আপনাকে পাওয়ারফুল লেখক বলেই মনে হলো, আপনার আরও লেখা চাই। উপামহাদেশীয় নারীবাদের স্ট্রেইনটির প্রতি যথেষ্ট সমব্যাথি হলেও আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে কিন্তু পাশ্চাত্যে বর্তমানে নারীবাদের যেই স্ট্রেইনটির চল চালু হয়েছে সেটির প্রচন্ড প্রচন্ড বিরোধীতা করি। উপমহাদেশে নারীবাদীদের আন্দোলন আসলেই সমতাবাদের আন্দোলন, যেখানে কিনা পাশ্চাত্যের নারীবাদী আন্দোলন একটি পোস্টমডার্ন, এন্টিসোস্যাল, এন্টিসায়েন্স, ইউসলেস এবং ফ্রুটলেস সমাজবিজ্ঞানগিরির আন্দোলন। এরা মডার্ন সায়েন্সের প্রতি প্রদর্শন করে এদের হৃদয় নিংড়ানো কনটেম্পট। এই লিঙ্কটা পড়ুন http://www.jacweb.org/Archived_volumes/Text_articles/V15_I2_Hirsh_Olson_Harding.htm । শুধু নারীবাদই না এরা বেশ কয়েকটি এন্টিসোশ্যাল এবং এন্টিসায়েন্স মুভমেন্টের একীভুত একটি অঙ্গ, নেইমলি- এনিমল রাইটস মুভমেন্ট, গ্রীন মুভমেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি! সত্তর দশকপুর্ব ইউরোপীয় নারীবাদের কাছ থেকে বাংলাদেশীয় নারীবাদের অনেক কিছু নেওয়ার থাকলেও, আধুনিক কালের ইউরোপীয় এন্টিসায়েন্স এবং এন্টিসোশ্যাল নারীবাদের বিষ যেনো বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সে দিকেও নজর রাখবেন কিন্তু।
@আল্লাচালাইনা,
চমৎকার প্রসঙ্গ। এ বিষয়ে মুক্তমনায় কিছু আলোচনা দেখলে মন্দ লাগত না।
@রৌরব, অলরাইট, আলোচনায় উতসাহী একজন যখন পাওয়া গেলো আলোচনা তখন হবে, দেখি আগামী উইকেন্ডে।
@আল্লাচালাইনা,
স্মার্ট আর কনফিডেন্টের সাথে ফর্সা চেহারা গুলিয়ে ফেললেন নাকি!!!ভেবে দেখবেন।বিজ্ঞাপনে অপ্রাসঙ্গিক গল্পের উপস্থিতি আমি সমর্থন করি না।আপনি যদি টিনএজ কোনো মেয়েকে উপস্থাপন করে ছেলেকে আকর্ষন করতে গিয়ে ফর্সা কারী ক্রিম ব্যবহার করা দেখাতেন কিংবা মডেল,নায়িকা হওয়ার সাধ নিয়ে সাজ উপকরন নিয়ে বিজ্ঞাপন চালাতেন তাতে আমার আপত্তি ছিল না।
বলুন তো একটি ছেলেকে নিয়ে কেনো এইরকম বিজ্ঞাপন হয় না!কেনো দেখানো হয় না ছেলেরও প্রয়োজন সুন্দর হওয়া খেলোয়ার হতে গেলে সাংবাদিক হতে গেলে!
তবে কি বলতে চাচ্ছেন পুরুষ সুন্দর নয়???পুরুষকে কেনো সাজিয়ে রাখে না?
নারীদের বিউটি কন্টেস্ট নিয়ে আমার আপত্তি নেই।সুন্দর তা দৈহিক অথবা মানসিক তা প্রদর্শন ও উপভোগ করতে আমার আপত্তি নেই।কিন্তু গাড়ীর দুপাশে মেয়ে শরীর মানে পণ্য বানিয়ে উপস্থাপন করা।
পাশ্চাত্যের নারীবাদী আন্দোলনের কিছু বিষয়বস্তু আমারও এখনো হজম হয়নি।কিন্তু আমি পুরোপুরি বাতিলের খাতাতেও ফেলে দেইনি।এ ব্যপারে আরো বেশি পর্যবেক্ষন ও চিন্তা করার আছে বলে মনে হয় আমার।তবে আশা রাখব এ ব্যপারে আপনার যুক্তিতর্ক বিষদ আকারে আমাদের জানাবেন পোষ্টের মাধ্যমে।
ধন্যবাদ।শুভকামনা।
আপনার লেখা দারুন ভালো লাগলো ৷ মন্তব্য গুলোও পড়লাম ৷ এরকম সাহসী উচ্চারনের সাহস যেন আপনার চিরদিনের সাথী হয় ৷ (Y)
@শুভ্র,
ধন্যবাদ।আপনার এই শুভকামনা যেনো সবসময় আমার সাথে থাকে।
ভালো থাকবেন।
মুক্তমনায় স্বাগতম রাহনুমা রাখী। শক্তিশালী লেখাটির জন্যও অনেক ধন্যবাদ। লেখাটি নিয়ে আপনার আলোচনাগুলো আরো ভাল লাগল।
যদিও শরীরবৃত্তীয় বেশ কিছু পয়েন্টে আমার দ্বিমত আছে। আমি মনে করিনা কেবল মিডিয়ার কিংবা বিজ্ঞাপনের কারণে নারীকে নারী বানিয়ে রাখা হয়, বরং আমি বলব – মিডিয়া মানুষের এই ইউনিভার্সাল সাইকোলজিটা ব্যবহার করে মাত্র। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানগত বিভিন্ন গবেষণাতেই দেখা গেছে নারীদের ক্ষমতা বা স্ট্যাটাসের চেয়ে সৌন্দর্য এবং তারুণ্যের প্রতি পুরুষেরা লালায়িত বেশি হয়, সেজন্যই বিয়ের সময় অধিকাংশ (সবাই নয় যদিও) পুরুষের চাহিদা থাকে ‘সুন্দরী বউ’ খুঁজে পাওয়া – এই ইউনিভার্সাল ট্রেন্ড দেশ নিরপেক্ষভাবে একই রকম পাওয়া গেছে। আবার অন্যদিকে নারীদেরও বেশ কিছু প্যাটার্ন আছে। অধিকাংশ নারীই প্রেম করার তার পার্টনার হিসেবে কিংবা বিয়ের সময় স্বামী হিসেবে তার চেয়ে লম্বায় ছোট ছেলে পছন্দ করে না, করেনা আমার মত কাপুরুষকে পছন্দ – ইত্যাদি 🙂 । এটাও ইউনিভার্সালি সব দেশের জন্য সত্য। মিডিয়া কেবল ব্যাপারটাকে ব্যবহার করেছে মাত্র। সহজ একটা উদাহরণ দেই। ক্ষুধা একটি জৈবিক প্রবৃত্তি। সেই প্রবৃত্তিকেই কাজে লাগায় বিভিন্ন বিজ্ঞাপন – বিজ্ঞাপিত করে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের কিংবা রেস্তারার এড সামনে এনে। বিজ্ঞাপনের কারণেই নারী কেবল নারী থাকছে বলাটা অনেকটা বার্গার কিং এ দেয়া বার্গারের বিজ্ঞাপনের কারণে আমরা ক্ষুধার্থ হয়ে উঠছি বলার মত শোনায়। আমি বুঝতে পারছি আপনি ভার্জিনিয়া উলফের, বোভায়্যা কিংবা মেরি ওলস্টনক্র্যাফটের লেখা দিয়ে অনুপ্রাণিত। তারা যখন লেখাগুলো লিখেছিলেন তখন নারী পুরুষের মানসিক গঠন সংক্রান্ত আধুনিক গবেষণাগুলোর অস্তিত্ব ছিলো না। “কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে উঠে নারী” -শুনতে চমৎকার শোনালেও উক্তিটা বৈজ্ঞানিক কি? আমি আমার সমকামিতা (শুদ্ধস্বর, ২০১০) নিয়ে বইটি প্রকাশ করার সময় জেন্ডার ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম। মারিয়া কিংবা ডেভিড রেইমারের বিয়োগান্তক পরিণতি নিয়েও লিখেছিলাম। আমি বলেছিলাম – “আগে মনে করা হত, মানুষের প্রবৃত্তি কিংবা জেন্ডারর গঠনে জিন কিংবা হরমোনের কোন প্রভাব নেই, পুরোটাই পরিবেশ নির্ভর। কিন্তু রেইমারের ঘটনার পর এই সংক্রান্ত চিন্তাধারা অনেকটাই বদলে গেছ। এর প্রভাব পড়েছে নারীবাদী, সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামীদের আন্দোলনেও”। দুর্ভাগ্যক্রমে আধুনিক এ গবেষণাগুলোর কথা কিংবা ফলাফলের রদবদলগুলো আপনার লেখায় সেভাবে আসেনি। এটা অবশ্য আপনার ব্যর্থতা নয়, এমনকি হুমায়ুন আজাদের মত বরেন্য লেখকেরাও আজকে নারীবাদী বই লিখতে গিয়ে আজকের দিনে র্জিনিয়া উলফের, বোভায়্যা কিংবা মেরি ওলস্টনক্র্যাফটের লেখাগুলোকে প্রাইম সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। আমাদের উচিৎ আরেকটু সামনে তাকানো।
আপনার পয়েন্টগুলোর সাথে দ্বিমত করার মানে এই নয় যে আপনার লেখাটির সাথেও আমার দ্বিমত রয়েছে। বরং আপনার লেখাটির সাথে সাম্পগ্রিকভাবেই আমি একমত। শক্তিশালী এ লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আরো লেখা চাই আপনার কাছ থেকে ভবিষ্যতে।
@অভিজিৎ,
পুরোপুরি একমত।মিডিয়া তাই বানায় যা পাবলিক খাবে।আর তাই বিজ্ঞাপনগুলো কিন্তু আমাদের বাস্তবকে ঘিড়েই তৈরি হয়।
নারীকে নারী বানানোর ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনই দায়ী তা নয়।কিন্তু কিছুটা ভুমিকা তো আছে।মিডিয়া কিন্তু অনেক শক্তিশালী ভুমিকা পালন করে সমাজে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে।
আমার মনে হয় এই উক্তিটির অন্য রকম ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।নারী বলতে যদি শুধুই লৈঙ্গিক পার্থক্যকে ইঙ্গিত করা হত তাহলে সমস্যা হত না।কিন্তু নারীর অর্থ কিন্তু লৈঙ্গিক পার্থক্য থেকেও অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।
যেমন নারী মানেই বলা হচ্ছে অবলা যার জন্য বাসে নির্দিষ্ট সিটের প্রয়োজন।কেনো কারন সে দুর্বল সে পুরুষের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।আসলে কিন্তু তা না নারীও পারে।তাকে বসিয়ে রেখেই বলা হচ্ছে সে অবলা।বাসে বলাই থাকে নারী-শিশু-প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন।অর্থাৎ নারী এখন শিশু ও প্রতিবন্দীর কাতারে!এ শুধু একটি উদাহরন।এইরকম হাজারো উদাহরন দেওয়া যায় যা নারীকে তার আসল সংজ্ঞা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।সেই তথাকথিত ‘নারী’ কেই বোভোয়ার এখানে দুষেছেন।
উভকামী,সমকামী সম্পর্কে আমার ধারনা এখনও শক্ত ভিতের উপর দাড়ায়নি।এই ব্যপারে আমার জ্ঞান খুব বেশি না।তাই এর ধারে কাছেও আমি যাই নি।
ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে এ নিয়ে কাজ করার।
আপনার অনুপ্রেরনার জন্য অনেক অনেক বেশি ধন্যবাদ।
শুভকামনা।
অনেকদিন পর নারী প্রসংগে চমতকার একটি লেখা পড়লাম। লেখিকাকে ধন্যবাদ। আমি লেখাটি আমার অনেক বন্ধুকে পাঠিয়ে দিলাম পড়বার জন্য। আমার মনে হয়েছে অনেক সহজ করে উপস্থাপিত কথাগুলো সবার জন্যই বুঝতে সুবিধা হবে।
@কবির বিটু,
কথাগুলো কিন্তু আমাদের সমাজের, পরিবেশের নিতান্তই সাধারন কিছু কথা।যা বহুকাল ধরে চলে এসেছে।আর নষ্ট করছে নারী ও পুরুষকে।
তাই কথাগুলো এতো সহজ।
ধন্যবাদ।
শুভকামনা সতত।
দারুন শক্তিশালী লেখা আমাদেরকে উপহার দিলেন।
স্বাগতম মুক্তমনার ভূবনে (F) (F) (F) (F) (F)
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
অনেক ধন্যবাদ মামুন।
ভালো থাকবেন।
সাইটটার নাম মুক্তমনা, কিন্তু বেশিরভাগ মন্তব্য আমার মুক্তমনাদের মতো লাগলো না। এখানেও এতো মিসোজিনিস্ট আছে জানতাম না। অবশ্য আমার এমনিতেই মুক্তমনাতে কম আসা হয়- কালেভদ্রে আসি। কিন্তু যে পজিটিভ ধারণাটা আমার ছিলো, আজকে সেটার মুখে একটা চড় পড়লো ঈ-লেখার নিচের মন্তব্যগুলো পড়ে। রাখীকে ফুল সাপোর্ট কোরছি। মিসোজিনিস্টরা পৃথিবীতে চিরকালই ছিলো, এবং হয়তো চিরকালই থাকবে। তাদের কথায় কান দেবেন না। দিলে কান দিতে দিতেই ছোট্ট জীবনটা চলে যাবে, কাজের কাজ আর কিছু ক’রে উঠতে পারবেন না। তসলিমা নাসরিনের একটা কবিতার শেষ লাইনক’টা মনে পড়ছে-
“কিছু বিষ্ঠা পৃথিবীতে চিরকাল থাকেই,
কিছু দূর্গন্ধ নির্যাস।”
@তমসো দীপ,
পুরোপুরি একদম দাদা।
আসলে নারীর স্বাধীনতার কথা আসলেই মুক্ত মন সব লাফিয়ে উঠে।নারীর মন মুক্ত হোক কেউই চায় না।
বিষ্ঠা তো রইবেই ধরাতে।কিন্তু তাকে ঝেটিয়ে বিদায় করারো কাউকে থাকতে হবে।
মানুষতো সুন্দরের পূজারী। আচ্ছা এমন কি হয় যে নারীরা সুন্দর ছেলেদের পছন্দ করে না(!)
ভাল বলেছেন।আজ থেকে শত বর্ষ কিংবা কয়েক দশক পূর্বে নারীরা কেমন ছিল ? নিশ্চয় আজকের থেকে ভাল নয়।তাহলে এই বর্তমান পর্যায়ে নারীদের আনার জন্য যাদের অবদান সবচেয়ে বেশী,তারা কিন্তু পূরুষ।এই তো সেদিনও যখন তসলীমা নাসরিন কে মুরতাদ ফতোয়া দিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল,তখন এবং এখনও ক’জন নারী তার পক্ষে এগিয়ে এসেছিল বা এসেছে।বরং কিছু নারীবাদী পুরুষরাই ওই মোল্লাদের প্রতিবাদ করেছিল, আজও করছে। বোরকা পরিহিত ক’জন মহিলাকে বোরকা পরিয়েছে পূরুষ? অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই বোরকা পরতে আগ্রহী।
নিজেদের উন্নতি নিজেদেরই করতে হবে।পূরুষকে প্রতিপক্ষ বানানো যুক্তিযুক্ত নয়।
@বোকা বলাকা,
মানুষ সুন্দরের পূজারী।কিন্তু সুন্দরের সংজ্ঞাটা কি!!!সুন্দর কি শুধুই বাহ্যিক!নারীও সুন্দর ছেলে পছন্দ করে কিন্তু আমাদের সমাজে সুন্দর ছেলের দাম নেই আছে সুন্দর মেয়ের।
আমি কি শুধু পুরুষকে এখানে প্রতিপক্ষ করে তুলেছি!!!
আমি যত নারীবাদী মানুষ তার ভিতর পুরুষই অধিক।যতটা মুক্তমনা মানুষের পরিচয় পেয়েছি তার ভিতর পুরুষই বেশী।
নারী কেনো কম তাই আমি এখানে দেখাতে চেয়েছি।ছোটকাল থেকে কিভাবে নারীকে ‘নারীত্ব’ শেখানো হয় তাই আমি দেখাতে চেয়েছি।এবং এর সূত্রপাত কিন্তু কিছু পুরুষের দ্বারাই শুরু হয়েছে।এবং তারা এতে দারুনভাবে সফল।
যেই অপবাদ পুরুষকে দিয়েছি তা নারীর ক্ষেত্রেও আমি বলেছি যে তারা কখনই চেষ্টা চালায় নি।
বলাকা সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ এর গভীরে পৌছে তার শিকড়কে খুঁজে বের করা।তাই নারীবাদী হওয়া মানে পুরুষের প্রতিপক্ষ হওয়া নয়।নারী কেনো এমন তা খুঁজে বের করাই ছিল এই পোষ্টের বিষয়।
আশা করি আপনাকে বোঝাতে পেড়েছি।ধন্যবাদ।
পুরনো আর সত্য কথাগুলো নতুন ভাবে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ…নারীর সবচেয়ে বড় শ্ত্রু নারীই…নিজের ভেতরকার মননের পরিস্ফুটন না হলে শত রঙ ফরসাকারী ক্রিম দিয়েও কাজ হয়না…
@অরণি,
ধন্যবাদ অরণি।নিজের অর্জন নিজেকেই করে নিতে হয়।এই কথা নারী নিজে যে কবে বুঝবে!
ভালই বলেছেন। মেয়েদের এই বন্ধি দশা থেকে মুক্তির রাস্তা নিজেদের খুজে বের করতে হবে। ইউরোপের মাটিতে পা রেখে আমি বিরাটা ধাক্কা খাই কিছু মেয়ের জীবন যাত্রা দেখে। তাদের পরিহিত শর্ট প্যান্ট বা মিনি স্কার্ট কিংবা দৃশ্যমান বুকের উপরের খোলা অংশ দেখে ও নয় বরং ধাক্কাটা আমি খেয়েছি মেয়েদের এই অবাধ স্বাধীন দেশে চোখ দুটি ছাড়া সমস্ত শরীর আবৃত দেখে অবশ্য অনেকে আবার চোখ দুটিও নিরাপদ মনে না করে ঢেকে রাখে। সম্প্রতি ফ্রান্সে আইন করেছে বোরখা পড়া যাবে না, কাউকে পড়তে বাধ্য ও করা যাবে না। এই আইনের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে প্রতিবাদের ঝড়। এই ঝড় বেগমান করেছে মেয়েরাই। ইংল্যান্ডে স্কুলের এক ছাত্রিকে হিজাব পড়ে স্কুলে আসতে নিষেধ করাতে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় সে আশ্রয় নিয়েছে আদালতের।
এভাবে যদি মেয়েদের বেহাল অবস্থা নিজেরাই তৈরী করে তাহলে প্রতি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ভরা পৃথিবীতে তারা মুক্তির আশা করবে কি ভাবে? কিভাবে তারা স্বপ্ন দেখে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার? :-Y
@রাজেশ তালুকদার,
আমিএ ঠিক এই কথাটিই বলতে চেয়েছি।সাথে এও দেখানোর চেষ্টা করেছি নারী কেনো এমন!
হিজাব মেয়েদের কোনো নিরাপত্তা দিবে না এই সহজ কথাটা মেয়েরা কেনো বুঝে না।কারন তাদের এই শিখিয়েই বড় করা হয়েছে যে তাকে শরীর ঢেকে চলতে হবে।আর নারী তাই শিখিয়েছে।প্রতিবাদ করেনি।
ধন্যবাদ রাজেশ।
আপনার লেখাখানি মনযোগ সহকারে পড়লাম। দেখুন নারী তার অধিকার পেতে গেলে তার নিজের সচেতনতা বেশী প্রয়োজন। শুধু বিছিন্নভাবে আমি অধিকার পেলাম না বা পুরুষ আমাকে দাবীয়ে রাখল এই চিৎকার দিয়ে লাভ নেই। হ্যাঁ, এটা আমি একশো বার স্বীকার করি যে নারীরা সমস্ত পৃথিবী জোড়ে লাঞ্চিত, অপমানিত, নির্যাতিত। কিন্তু তার জন্য পুরুষের উপর বিদ্বেষ ছড়ালাম তাতে কি হবে জানেন? পুরুষরাও মেয়েদের উপর আরও বিদ্বেষী হয়ে উঠবে। তাতে কি সমস্যার সমাধান হবে, না আরও বাড়বে? আমার জীবনের একটি বাস্তব ঘটনা বলি – আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন আমাদের বাংলা বিষয়ের একজন শিক্ষিকা ক্লাস করাতে এসেছেন। আর আমরা যে স্কুলে পড়তাম সেটা ছিল ছাত্র-ছাত্রী কম্বাইন্ড। তো সেই শিক্ষিকা ক্লাস নিতে নিতে কোন একটা প্রসঙ্গে ক্লাসের ছাত্রীদের প্রতি লক্ষ্য করে মন্তব্য করতে লাগলেন, যে সমস্ত পৃথিবী জোরে নারীরা নির্যাতিত আর তার জন্য পুরুষরা দায়ী, সেই আলোচনায় আমরা ছাত্ররা হলাম অপরাধী, উনি ছাত্রীদের এই কথা বলছেন আর আড় চোখে আমাদের দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাছিলেন। এতে কি হল জানেন? এই যে আমরা ছাত্ররা ছিলাম এই শিক্ষিকার প্রতি শুধু নয়, সমস্ত নারীদের প্রতিও আমাদের মধ্যে একটা বিদ্ধেষ মূলক মানসিকতার সৃষ্টি হয়ে গেলো। কিন্তু তিনি যদি সেই আলোচনায় আমাদের অর্থাৎ ছাত্রদের আসামীর কাঠগড়ায় দাড় না করিয়ে আমাদেরও সেই আলোচনায় অংশ নিতে দিতেন এবং অভিমত জানার চেষ্টা করতেন তাহলে এই ছাত্ররাও সেই সমস্যাকে উপলব্দি করতে পারতো এবং পরবর্তী জীবনে তারা সমাজে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারতো। নারী-পুরুষ উভয়কে নিয়ে সমাজ। নারী ছাড়া যেমন পুরুষ সম্ভব নয় তেমনি পুরুষ ছাড়া নারীও সম্ভব নয়। তাই নারীর সমস্যা পুরুষের সমস্যা আলাদা করে দেখার কোন মানে নেই। বরং সম্মুখীন যে কোন সমস্যাকে উভয়ে একত্রে সমাধানের চেষ্টা করাই মনুষ্যত্বের পরিচয়। নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহানুভূতিই একমাত্র পারে নারী-পুরুষের সামাজিক বৈষম্য দূর করতে। আসুন, ‘আমরা সবাই মানুষ’ – এই পরিচয় নিয়ে এগিয়ে যাই। ভাল থাকবেন এবং মুক্তমনায় আপনার আরও বেশী লেখা আশা করি।
@সুমিত দেবনাথ,
ভালোমত পরে থাকলে এই ব্যপারটিও নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন আমি দোষ শুধু পুরুষের উপরেই দেই নি।
পুরুষের দোষের সাথে আমি এও স্বীকার করেছি নারী চায় নি তাই পারে নি।
আপনার বক্তব্যের সাথে আমিও একমত।
আমরা কখনই চাইনি পুরুষদের রেখে এগিয়ে যেতে বরং পুরুষেরা তাই করছে।তাই চেয়েছি একসাথে চলার।
ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন আপনিও।
আপনাদের দুই নেত্রীই নারী। এখন পশ্চিম বঙ্গের সর্বময় কত্রীটিও নারী। তাও নাই নাই করে চেঁচাচ্ছেন কেন? গরীব পুরুষরা কি কিছু কম শোষিত?
@বিপ্লব পাল,
আমাদের দুই নেত্রীই নারী পশ্চিম বঙ্গেও নারী।জি আসলেই তাই।
কিন্তু সমস্যা হল তাতে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না।ক্ষমতার আসনে অনেকেই বসে থাকেন কিন্তু আসল ক্ষমতার মালিক পিছনে বসে কলকাঠি নাড়ে বলে কেউ দেখতে পারে না।
আমাদের দুই নেত্রীই এসেছেন রাজনৈতিক পরিবার থেকে।নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে নয়।
তার মানে কি বলতে চাচ্ছেন গরীব নারীরা শোষিত নয়?
@রাহনুমা রাখী,
মমতা ব্যানার্জি নিজের উৎকর্ষতা এবং প্রতিভার জোরেই আজ সর্বময়ী নেত্রী। এবং মিডিয়া সহ জনগণ এখন তার সাথে। স্বাধীনতার পর আর কোন নেতা এত ক্ষমতা পান নি, যেটা আজ মমতার হাতে রয়েছে। কেন্দ্রও আজকে ক্ষমতায় থাকার জন্যে তার কথা শুনে চলে। এত ক্ষমতা থাকার পর তার ভূমিকা কি? মহিলা প্রতিনিধি বিলের তিনি বিরুদ্ধে ছিলেন যেহেতু মুসলিমরা তার বিরোধিতা করছিল।
নারী পুরুষের থেকেও আরো বেশী ক্ষমতা পাগল এবং ক্ষমতার জন্যে তারা পুরুষের থেকেও নীচে নামতে পারে। এটাই বাস্তব।
@বিপ্লব পাল,
মমতার যেই আসনে আজ আছেন তাতে তিনি সফল না ব্যর্থ সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কি এসেছে!!!তিনি তো মাত্রই শুরু করেছেন।
ক্ষমতার পাগল সবাই।সবাই মানে মানুষ।মানুষ মানে নারী ওপুরুষ।আর এর অপব্যবহারও করে মানুষ।আরেকবার মনে করিয়ে দেই মানুষ মানে নারী ও পুরুষ।
ভবিষ্যতে নারী যদি পুরুষের অবস্থানে আসে তাহলে সে যে ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না তা তো বলিনি।
কিন্তু আগে আসতে তো দেন!ক্ষমতার অপব্যবহার যখন পুরুষ থাকলেও হচ্ছে নারী থাকলেও হবে।তবে নারীকে কেনো সুযোগ দেয়া হবে না!!!
আমার পোষ্ট থেকে কিছু কথা-
আসলেই তা নারী ক্ষমতায় আসলে পুরুষ থেকে বেশি ক্ষমতার অপব্যবহার করবে তাই তাকে ক্ষমতা দেয়া হবে না।
খেলা শুরু না হতেই কে হারবে কে জিতবে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন!
তসলিমা নাসরিন এবং হুমায়ুন আজাদে অনেক আগেই মোটামুটি এ কথাগুলো পড়েছিলাম। এতো সুন্দর একটা সারাংশ পেয়ে খুব ভালো লাগলো। 🙂
@তমসো দীপ,
ধন্যবাদ দাদা।একই কথা বারবার বলেও লাভ হয় না।মাথায় ঢুকে না!!!
নারীদের জেগে উঠতে হবে-কিন্তু,কে জাগাবে নারীদের?নারীরা নিজেরাই কী নিজেদের জাগাবে?তাদের কী মানুষ হওয়ার জন্য নারীবাদি হতে হবে?পুরুষবাদীরা কি মানুষ?যদি পুরুষবাদী সভ্য মানুষের কাতারে না পড়ে তবে নারীবাদি কীভাবে সভ্য মানুষের কাতারে পড়বে?
নারীবাদ নিয়ে গোটা ইউরোপে বিগত দুই দশক ধরে যে আন্দোলন হয়েছে তার ফল হল এই যে তা সাধন করেছে চরম নারীবাদের বিকাশ।ইউরোপের নারীবাদিদের অধিকাংশই মগ্ন সমকামিতায়।সমকামিতা নিয়ে আমার আপত্তি নেই;কিন্তু এর চূড়ান্ত রুপ তো আমরা দেখেছি।বিজ্ঞান এখনো এত উন্নত হয়নি যে নারী ও পুরুষের সাহায্য ছাড়া সন্তান উৎপাদন সম্ভব।এখন চরম নারীবাদি যদি সন্তান ধারণ করাকে জরায়ুর দাসত্ব মনে করেন তবে এই বাস্তবতায় আমি তার এই চেতনাকে বিকৃতই বলবো।সিমন দ্য বুভোয়া-আধুনিক নারীবাদিদের পীর, যে দার্শনিক( অস্তিত্ববাদী ধারা যেখানে নারীকে আদার হিসেবে বুভোয়া সংজ্ঞায়িত করেছেন) ও আদর্শিক ধারা লালন করেন তা ইউরোপের ক্ষয়িঞ্চু সমাজেরই চলমান চিত্রের প্রতিফলন।ওরিয়ানা ফাল্লাচ্চি যেভাবে পুরুষ বিষেদাগার করেছেন তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
পুরুষ কী নারীকে অবদমিত করে রেখেছে?এর উত্তর একই সাথে হ্যাঁ এবং না।প্রাগৈতিহাসিক রেকর্ড আমাদের কাছে নেই।তবে ধারণা করা হয় যে কৃষিভিত্তিক সভ্যতা শুরু হওয়ার সাথে সাথে নারী পুরুষের সাম্য ভেংগে পড়ে।এর আগে কখনো নারীতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হয় নি।সভ্যতার সূচনাই হয় নারীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে।মাতৃতান্ত্রিক সমাজ মানে এই না যে পুরুষ সেখানে অবদমিত-মাতৃতন্ত্রও পুরুষতন্ত্রের এক বিশেষ উপজাত।
যাই হোক এখনকার সমাজ কী পুরুষতান্ত্রিক?এমন কোন উদাহরণ কী নেই যে বাসার মহিলা মালিক পুরুষ মালি,চাকর ড্রাইভারের উপর অত্যাচার করছে?অশ্লীল ও অশালীন ব্যবহার করছে?এ উদাহরণও কী আমাদের নেই যে, ক্ষমতাধর মহিলা বসের কাছে নত মাথায় হুজুর হুজুর করছে পরাক্রমশালী পুরুষটি?এ রকম শত শত উদাহরণ আছে আমাদের চারপাশ জুড়ে।তাহলে এ সমাজ যতখানি পুরুষতান্ত্রিক তার চেয়েও বেশী ক্ষমতাতান্ত্রিক।
এখন যদি আমাদের নারীবাদিরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি পুরুষের বিরূদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে তাহলে তা সাম্যের বদলে অসাম্যই ডেকে আনবে।ক্ষমতাতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে হবে নারী পুরুষ উভয়কেই।মনে রাখতে হবে এই দুটো পরিচিতি পরস্পরবিরোধী কোন শত্রুপক্ষের নয়।নারী ও পুরুষের সাম্য পুরুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে কখনোই আসতে পারে না-এ রকম নারীবাদ পুরুষতন্ত্র আর ক্ষমতাতন্ত্রকেই টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
তসলিমা নাসরীনকে যারা নারীবাদের ইমাম হিসেবে ভাবছেন তাদেরকে বলি তসলিমার এ রকম প্রচারণা,যেমন নারী ধর্ষণের জবাব স্বরূপ পুরুষ ধর্ষণ করা, প্রকারান্তরে পুরুষতন্ত্রকেই জিইয়ে রাখে।পুরুষ এখানে বিকৃত কাম খুঁজে পায়।আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী
এ নিয়ে ব্যবসা করে,প্রচার পায়।
বেগম রোকেয়া কতখানি সঠিক ছিলেন?তাঁর ‘সুলতানাস ড্রীম’ পড়লেই দেখা যায় চরম নারীবাদের বিকৃত আস্ফালন।পুরুষবিহীন বিশ্ব তৈরীর মাধ্যমে যে নারীরা নারীদের মুক্তি খুঁজে তাদের নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়ার আস্ফালন এত বেশী হওয়ার কারণ এই যে এর মধ্য দিয়ে কিছুদিনের জন্য পত্রিকা,বিজ্ঞাপন-ইত্যাদি ইত্যাদির ব্যাবসা করা যায়।
মনে রাখতে হবে নারী ও পুরুষ উভয়েই মানুষ।যোগ্যতা দু জনেরই সমান।এই সামানাধিকার অর্জনের জন্য আমাদের ভাংতে হবে ক্ষমতার কাঠামোকে,যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে যারা এ কাঠামো টিকিয়ে রাখতে চায়।তবেই নারী পুরুষের সাম্য আসবে।নারী ফিরে পাবে তার সামাজিক,জৈবিক আর সব রকম স্বাধীন অধিকার।সেই সাথে শোষিত বঞ্চিত পুরুষও পাবে বেঁচে থাকার, সংগী নিবাচনের সব রকম স্বাধীনতা।আলাদা আলাদা যে কোন পুরুষতন্ত্র কিংবা নারীতন্ত্র প্রাকৃতিক নিয়মের বিরোধী-আর সে জন্যই তা বিকৃত।
@Imran Mahmud Dalim,
প্রথমেই আপনাকে জানিয়ে রাখি নারীবাদী তারাই যারা নারী ও পুরুষের সাম্যে বিশ্বাসী।নারীবাদী মানে পুরুষের বিরুদ্ধে ডাকা যুদ্ধ নয় বরং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সুবিধাবাদী পুরুষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
আমরা বারেবারেই বলেছি আমরা কাজ করতে চাই পুরুষের সাথে একই ক্ষমতা ও একই সম্মানের সাথে।
এঙ্গেলস বলেছেন সম্পত্তির উত্তরাধীকারের ধারনা থেকেই নারীর পরাজয়ের শুরু।সভ্যতার সূচনা হয় নারীর পরাজয় দিয়েই আর তাই নারী আজও পরাজিত।আর যাকে আপনি সভ্যতা বলছেন তাকে সভ্যতা বলতে নারাজ।সাম্য ছাড়া কিসের সভ্যতা!
এইরকম উদাহরন আছে।কিন্তু খুবই নগন্য।আপনি যখন বিচার করবেন কোনো কিছু তা কি সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখে করবেন না!
রাষ্ট্র তখনই সাম্যে পৌছবে যখন নারী ও পুরুষ এই দুই সত্তা সাম্যে পৌছবে।আর তাই সবার আগে প্রয়োজন নারীর উন্নয়ন এবং পুরুষের সাথে একই কাতারে উঠা।এরপরই আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি রাষ্ট্রের ও সমাজের সাম্যের।
বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া ও তসলিমা এই দুইজনই একমাত্র উদাহরন নারীবাদীর।উনারা কটাক্ষ করেছেন পুরুষের আধিপাত্যের প্রতিবাদ করেছেন শৃঙ্খলার।আর তাতেই অনেকের আঁতে ঘা লেগেছে।কেনোনা নারীর মুখে ভিরুতার কথা ভালোবাসার কথাই মানায়।বিপ্লবী মার্কা কথা মানায় না।
একজন বন্দুকধারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হলে আপনাকেও বন্ধুক ধরতে হবে।এছাড়া যুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না।
ধন্যবাদ।
@রাহনুমা রাখী,
নারী ও পুরুষের সাম্যে আপনি বিশ্বাসী ভালো কথা।সাম্য বলতে কী বুঝাতে চান?ইউরোপের মত নারীদের অনাবৃত ও নগ্ন,এবং পুরুষদের আঁটোসাঁটো পোষাকের,চলাফেরা-এই ধরণের কোন সাম্য?এই সাম্য আসলে কর্পোরেট পুঁজির বিকৃত প্রচার বাদে আর কিছু নয়।আপনি যদি মনে করেন নারীবাদের নামে আপনি যা বলছেন তা নারীবাদের মূল কথা তাহলে বলব আপনি ঙ্কমতাতন্তের তৈরী নারীবাদ তোতা পাখির মত আউড়াচ্ছেন।পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সুবিধাবাদী পুরুষ কয়জন?অধিকাংশই কি?আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে আমি বলব যে আপনি সমাজের বাস্তব অবস্থা সম্বন্ধে অজ্ঞ।আপনি যদি ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকেন তবে আপনার কথিত নারীবাদের সুফল আপনি ভোগ করতে পারবেন।আপনার যদি তথাকথিত অবৈধ সন্তানও থাকে, কোন মোল্লার সাহস নেই ওটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার।ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা নারী ও পুরুষ উভয়েই ভোগ করে এ সমস্ত স্বাধীনতা।আর ক্ষমতাহীন নারী ও পুরুষ দু জনেই সমান।দয়া করে আমাদের দেশের বস্তিগুলো কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে দেখুন।ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাহীন নারী-পুরুষেরাই কেবল মাত্র এ সমাজে স্বাধীন।এখানে মধ্যবিত্তরাই কেবল ভোগে তথাকথিত নৈতিকতার রোগে;অথবা মধ্যবিত্তীয় নারীবাদে।
আপনার কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।পেটে ভাত থাকলেই আমরা যৌন অধিকার নিয়ে আস্ফালন কবি।দয়া করে অধিকাংশ গরীব নারীর মুখে ভাত যেন জোটে সে আন্দোলন করুন।অবশ্য গরীব নারীরা আপনার এ সমস্ত নারীবাদ নিয়ে মোটেও চিন্তিত না-তাদের সমস্ত রকম যৌন চাহিদা তাদের ইচ্ছে মতোই পূরণ হচ্ছে।মুখে আগে খাবার তোলার ব্যবস্থা করুন দেখবেন নারীরা তাদের অন্যান্য দাবি নিয়ে আপনার সাথে মাঠে নামছে।
নগন্য!!মধ্যবিত্তে এ রকম উদাহরণ প্রচুর আছে।উচ্চবিত্তে তো কথাই নাই।
বিন লাদেন কী বিপ্লবী?বিপ্লব বলতে যদি আমূল পরিবর্তন বুঝেন প্রগতির দিকে, তবে তা আপনার তথাকথিত নারীবাদিদের শত্রু শত্রু খেলার মধ্য দিয়ে হবে না।
পুরুষের সাথে সাম্য বলতে আপনারা যে ধোঁয়াশা আমাদের দেখান তা সত্যিই বিভ্রান্তিকর।পুরুষ কোথায় স্বাধীন যে তার মত করে সাম্য খুঁজছেন?সবাই তো ক্ষমতা বলয়ের দাস।কেউ কম,কেউ বেশী।আপনি কী কম মাত্রার দাস হতে চাচ্ছেন,নাকি দাস প্রথা থেকে মুক্তি চাচ্ছেন?
নারীর জরায়ুর অধিকার,যৌন অধিকার,কাপড় ইচ্ছামাফিক পরার অধিকার(এটা কিন্তু পুরুষেরও নেই-আমাদের সিনেমাতে নারীরাই অতি খোলামেলা থাকে,পুরুষ অতখানিও কাপড় খুলতে পারে না)-সব সব কিছু থাকুক আমিও চাই।কিন্তু মূল সমস্যা সমাধান না করে ডাল পালা ধরে টানাটানি করলে ডাল হয়ত আপনার শক্তির জোরে ভেংগে পড়তে পারে,কিন্তু ক্ষমতা ও শোষণকেন্দ্রের শেকড় ঠিকই বয়ে যাবে।
@Imran Mahmud Dalim,
সাম্যের কথায় আসলে আপনাদের চোখ কেনো পোষাকে চলে যায়।একজন নারী তাই পড়বে একজন পুরুষ তাই পড়বে যা তার ইচ্ছে।পুরুষ কিন্তু উন্মুক্ত হচ্ছে তাদের পোশাক আমাদের থেকে যথেষ্ট আরামদায়ক ও চলাফেরার ক্ষেত্রে উপযুক্ত।এবং আমরা চাই ঠিক তাই আমাদের উপযুক্ত পোষাক।তা নগ্ন হবে নাকি বুক খোলা ওইরকম কোনো শর্ত রাখছি না।
একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু অধিকার আমার প্রাপ্য তা আমি পেতে চাই।বাক স্বাধীনতা, যৌণ স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, চিন্তা স্বাধীনতা। সব রকমের স্বাধীনতা।আর এই স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পুরুষ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে আমরা পিছিয়ে রয়েছি।ওই পার্থক্যটুকু সরিয়ে ফেলতে চাই।সাম্য বলতে আমি তাই বুঝিয়েছি।
তারা ক্ষমতার স্বাধীনতায় ভুগেন।এছাড়া অনেক স্বাধীনতা রয়ে গিয়েছে প্রাপ্তির।মধ্যবিত্তরা ঝামেলা এড়িয়ে চলে।আর নারীবাদী তো সংঘর্ষের পথ!
গরীব নিয়েও আন্দোলন করব।কিন্তু শুধু গরীব নারীদের জন্য কেনো পুরুষদের জন্য নয় কেনো।আন্দোলন যদি হয় তবে গরীব মানুষদের জন্যই হবে।
গরীব নারীদের তাদের যৌন চাহিদা পূরন হচ্ছে!তাই!!!আপনি ঘরে ঘরে গিয়ে খবর রাখেন!ওরা নিজেরাই কি জানে তারা শোষিত হচ্ছে!!!এই সচেতনতাই তো ওদের নেই।তা যৌন হোক আর অযৌন হোক!
আমাদের সিনেমাতে নায়িকারা খোলামেলা হয় তাও পুরুষের জন্য।পুরুষের চোখ দিয়ে গেলার জন্য।
দ্বিমত।ক্ষমতা ও শোষনকেন্দ্র কি শুধু পুরুষদেরই ভোগাচ্ছে!!!নারীকে নয়।
কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে কিন্তু বেশি কেনোনা আজ পুরুষ ক্ষমতায় ও শোষন করছে নারীকে।তাই সবার আগে এই শোষন বন্ধ করতে হবে।এরপর না হয় একসাথে লড়া যাবে।
@রাহনুমা রাখী,
পোষাকে চলে যায় এ কারণে যে আপনার সাম্যের রূপরেখা পরিষ্কার না। আপনি অর্থনৈতিক সাম্য চান;কিন্তু এটা আপনার প্রধানতম ইস্যু নয়।আপনি সব রকম সাম্য চান কোন রকম সাম্যের ইশতেহার বা এজেন্ডা ঠিক না রেখে।এবং হঠাৎ আমার মনে হল,এখানে আরেকজন তথাকথিত আধুনিকের আস্ফালন দেখে, যে আপনি নারী কতৃক সম্পাদিত যৌন-সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে বিশ্বাসী।আপনারটা বিপ্লবের কোন রকম সংজ্ঞাতেই পড়ে না-কেননা বিপ্লব মানে হল সুপরিকল্পিত এবং সুস্পষ্ট আদর্শিক পরিবর্তন।
এ রকম মিথ্যা কথা ছড়িয়ে আপনাদের ভুল পথে চালিত করছে পুরুষবাদী নারীরা।বেগম রোকেয়া তো বাস্তবিক পরিস্থিতি না বুঝে দিবাস্বপ্ন দেখতেন।আর তসলিমা নাসরিনের লেখা পড়ে পুরুষেরা পেয়েছে নারীকে যৌন নির্যাতনের স্বাদ, আধুনিক স্টাইলে।দয়া করে ‘ক’ বইটি আবার পড়ে দেখুন।দেখুন কীভাবে তসলিমা দেহ সঁপে দিচ্ছে নিতান্ত অনিচ্ছায়।ধর্ষণের কাহিনী যারা রসালো করে লিখেন তার কতখানি নারীবাদী তা আমার সামান্য জ্ঞানে ধরা পড়ছে না।
তাহলে কী আপনি ঘরে ঘরে গিয়ে খবর রাখেন যে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ হচ্ছে না!!!আপনিই শুধু বুঝেন যে ওরা শোষিত হচ্ছে।আর অন্য কেউ এটা বুঝে না-এগুলো আপনার পাতি বুর্জোয়া চেতনাকেই প্রকাশ করে।ওদের মাঝে কাজ করতে আসুন।দেখবেন ওরা কতখানি সচেতন-আপনার থেকে যে সচেতন সেটা আমি জানি।নিখাদ তত্ত্ব না ছেড়ে একবার প্রয়োগের দিকে আসুন।
@Imran Mahmud Dalim,
আপনার এহেন মনোভাবের কারনটি পরিষ্কার নয়।সাম্য মানে সাম্য এর ক্লাসীফিকেশন মানি না।বুঝি না।সাম্য চাই সর্বত্র সবার জন্য।
ধর্ষনের বিরুদ্ধে লেখা যদি রসালো লাগে আপনার তাহলে সেটা আপনার সমস্যা!একটি ঘটনার অনেক বাক থাকে গর্ত থাকে।ঘটনা সম্পর্কে পাঠকদের সম্যক ধারনা দিতে আর পাঠককে সেই ঘটনার ভিতর নিয়ে যেতে হলে বিশদ বর্ননা তো দেয়াই লাগে!!!একে যদি রসালো বর্ননা বলেন তাহলে আমি বলব এই বক্তব্য বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একজন পুরুষের বক্তব্যকেই রিপ্রেজেন্ট করে।নারী নিপীড়নেই পুরুষের সুখ।
তাই নাকি!!!ঠিকই বলেছেন ওদের ওখানে মধ্যবিত্তের ফালতু নৈতিকতা চর্চা হয় না।তাই তারা কিছুটা বেশি স্বাধীন।ওরাও ট্রেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে সিগারেট ফুকে।কিন্তু মাথা ঘামায় না।জামাইয়ের সাথে গলায় গলা মিলিয়ে ঝগরা করে।কিন্তু এরাই আবার যৌতুকের ফাসিতে মরে।এসিডে মুখ পুড়িয়ে ঘরে বসে থাকে। কেনোনা সেখানে সচেতনতা নেই।ওরা নির্যাতিত হলেও বুঝে না প্রগতশীল কোনো কর্মকান্ডের ভিতরে কাজ করলেও বুঝে না।আর না বুঝে যেই কাজ তার কোনো কার্যকারিতা আমি দেখি না।তাতে নারী কিছুটাও এগিয়ে যায় না।
এটা যথেষ্ট শক্তিশালী অকপট একটা লেখা। নারী বিষয়ে যতটা সম্ভব সরাসরি রচনাই অনেক বেশী লেখা প্রয়োজন।
খুব ভাল হয়েছে।
স্বাগতম (F)
@কাজী রহমান,
আসলেই নারী সম্পর্কে সবকিছুই যেনো অশ্লীল ও নিষিদ্ধ।তাই এ সম্পর্কে সরাসরি কথা বলতে অনেকেই নারাজ।
ধন্যবাদ আপনাকে।