কি নিয়ে এত ভাবছেন? এত পেরেশানি , এত চিন্তা – সবি বৃথা। জানেন না , কুয়ান্টাম ফিজিক্স আপনার অস্তিত্বকেই নাই করে দিয়েছে। আপনার কোন চিন্তা নেই , কারন চিন্তা করার জন্য আপনার কোন শরীর বা মন বা জীবণ নেই। সকলি মায়া। চিন্তা নেই , কারন চিন্তা করার মানুষ নেই। যদি ভেবে থাকেন পাগলের প্রলাপ বকছি , তাহলে এই শতাব্দির অনেক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক , দার্শনিক ও কিছু ধার্মিক আপনাকেই পাগল ভাববে। মানুষের কোন অস্তিত্বই নেই , আধুনিক বিজ্ঞান ও গণিত এমনটিই প্রস্তাব করছে বা সম্ভাবনার কথা বলছে। আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান ও কুয়ান্টাম মেকানিক্সের যত অগ্রগতি হচ্ছে , ততই এটা পরিস্কার হয়ে উঠছে যে মানুষ হিসাবে আমাদের অস্তিত্ব একপ্রকার মায়া ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা ভেবে থাকি আমরা মানুষ , আমাদের শরীর আছে , ব্রেণ আছে যা দিয়ে চিন্তা করি। ভুল , এই ভাবনাটাই ভুল। আমরা কেউ নই। আমরা একেকজন বহুসংখ্যক মৌলিক পদার্থের অনু, পরমানু ও অন্যান্য আন্তঃআনবিক কণিকার সমষ্টি। আমাদের কল্পনাতেই শুধুমাত্র শরীর ব্রেণ ও মনের অবস্থান।

মায়া – এর সবটুকুই মায়া। এই শতাব্দির বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অথার এডিংটন কুয়ান্টাম থিওরি সম্পর্কে বলেছেন : পদার্থ বিজ্ঞানের জগতে …. আমার কনুইয়ের ছায়া একটি টেবিলের ছায়ার উপরে সেভাবেই ঠেক দিয়ে থাকে , যেভাবে কাগজের ছায়ার উপরে কালির ছায়া গড়িয়ে যায়….. বাস্তবতা হলো , পদার্থবিজ্ঞান যতই উন্নতি করছে , ততই ছায়ার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ছায়া বলতে অথার এডিংটন মায়া বা illusionকেই বুঝিয়েছেন। বিজ্ঞানের অনেক শাখা থাকলেও কণিকা বিজ্ঞান বা পার্টিকেল ফিজিক্স বাস্তবতার মৌলিক ধারনায় আঘাত করেছে এবং যত বেশি সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যাচ্ছে , ততই ‘বাস্তবতা বলে কিছু নেই’ এমনটাই মনে হচ্ছে। গত ৩০০ বছর ধরে বিজ্ঞান এমনটাই ধারনা করে এসেছে যে , সকল বস্তু ‘পরমানূ’ বা ‘এটম’ দ্বারা গঠিত। স্যার আইজাক নিউটন এই ধারনাকে আরো মজবুত করেছেন পরমানূকে বিলিয়ার্ড বলের সাথে তুলনা করে। যথেষ্ঠ সংখ্যক এই বল একটার পরে একটা রেখে একজায়গায় জড়ো করুন এবং তারপরে গুতো দিয়ে বলগুলোকে গড়িয়ে দিন। আপনি পাবেন পাথর , গাছপালা , জীবজন্তু ও মানুষ। তবে ১৯০০ সালে আইন্সটাইনের হিরো , প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক শক্তির রেডিয়েশন নিয়ে গবেষনা করার সময় কিছু অস্বস্তিকর আবিস্কার করে বসেন। সংক্ষেপে- মৌলিক লেভেলে বস্তু কঠিন/শক্ত (solid) নয় বা লাগাতার (continuous) ও নয়। কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিলিয়ার্ড বল ও নয়। একটি পরমানূকে ভাঙলে আপনি পাবেন এক বা একাধিক ইলেক্ট্রন , প্রটন এবং হয়তো বা নিউট্রন। এখন আমরা জানি এখানেই শেষ নয় , এগুলোকে ভেঙ্গে আপনি পেতে পারেন বোসন , কুয়ার্ক , টাখিওন এবং আরো বহু ‘ছায়া কণিকা’ , যেগুলো এই আছে তো এই নেই। চোখের পলকে এগুলো আবির্ভুত হচ্ছে আবার অদৃশ্য ও হচ্ছে।

এই ছায়া কণিকা যখন অদৃশ্য হয় , তখন কোথায় যায়? কোথাও যায় না , এদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়। আবার পরক্ষনেই এরা আবির্ভূত হয়। তাতে কী? এমন প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে। তাতে কিছু না , তবে কিনা আমাদের মানুষের শরীর এই সকল মৌলিক ভুতুড়ে ছায়া কণিকা দিয়ে তৈরি। তাই একটু চিন্তা হয় বৈ কি। আমাদের বেশিরভাগই পানি , আর রক্তে আছে কিছু লোহা , হাড়ে ক্যালসিয়াম ও কম বেশি অন্যান্য মৌলিক উপাদান। এই সকল উপাদানের প্রত্যেকটিই পরমানূ দিয়ে তৈরি। পরমানূগুলো আবার ভুতুড়ে ছায়া কণিকা দিয়ে তৈরি। এই আছে তো এই নেই। একমুহুর্তে বাস্তব তো পরমুহুর্তে অবাস্তব। বিজ্ঞানীরা বাস্তব ও অবাস্তবের মধ্যকার মুহুর্মুহ এই অবস্থানের পরিবর্তনকে নাম দিয়েছেন – “quantum fluctuation”. ছায়া কণিকাগুলোর দোদুল্যমানতার সাথে সাথে আপনার শরীর দোদুল্যমান হয় , সেই সাথে আপনি। আপনার ব্রেণ ও ব্রেনের ভিতরের রাসায়নিক কণিকাগুলো ও ফ্লাকচুয়েট করে। ফ্যাক্ট হলো হয়তো বা এই মুহুর্তে আপনি ‘কিছুই না'(nothingness) , তো পরক্ষনেই ‘কিছু’ একটা(somethingness)।

এমনকি সবচেয়ে কঠিন শক্ত পদার্থের পরমানূ ও কঠিন নয়। পরমানূর ৯৯.৯৯৯৯৯ ভাগই হলো শুন্য স্পেস। আমরা যদি একটি পরমানূর নিউক্লিয়াসকে পিং পং বলের সমান কল্পনা করি এবং এটাকে একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের কেন্দ্রে তথা মাঝখানে রাখি , তাহলে যে ইলেক্ট্রনটি এই নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘোরে , সেটার অবস্থান স্টেডিয়ামের বাইরের দেয়াল বরাবর। নিউক্লিয়াস ও ইলেক্ট্রনের মাঝে কী আছে? কিছুই না , শুন্য স্পেস। এই নিউক্লিয়াস ও ইলেক্ট্রন কী দিয়ে তৈরী? এগুলো আরো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকা বোসন , কুয়ার্ক , টাখিওন এবং আরো বহু ‘ছায়া কণিকা’ দ্বারা গঠিত। এগুলো কঠিন , তরল নাকি বায়বীয়? সেটা জানা না গেলেও ধারনা করা হয় এগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তি , যেটাকে স্ট্রীং বা তারের ভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সির ধ্বণির সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। তাহলে বুঝলাম একটি সোনার বার বা আপনার বাড়ি বা আপনি নিজে আসলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তি/ধ্বণির সমষ্টি এবং ৯৯.৯৯৯৯৯ ভাগ শুন্য স্পেস ছাড়া আর কিছুই না।

বুঝলাম সবি মায়া , শুন্য। এখন আমি যদি আপনাকে একটা কষে চড় মারি , তাহলে আপনি তো ব্যাথা পাবেন , নাকি এটাও মায়া?

এটার উত্তর জানতে হলে আপনাকে জানতে হবে মায়া কিভাবে কাজ করে। মায়া কিভাবে কাজ করে সেটা জানতে হলে গোডেলের অসম্পুর্ন থিওরেম( Incompleteness Theorm) , হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সুত্র (Heisenbreg Uncertainty principle) জানা লাগবে। এছাড়াও জানা লাগবে মানুষের ভাষা ও বিতর্ক কিভাবে মায়ার অংশ হয়ে আমাদেরকে মায়ার আরো গভিরে ঠেলে দিয়েছে। পাঠক আগ্রহী হলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে লিখতেও পারি।

সুত্র- অপরিচিত এক কলাম লেখকের লেখা অবলম্বনে।