যেভাবে আবিষ্কার হয় সত্য

যে শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করেছি
তুমি আর আমি,
মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পুড়িয়ে ছাই
করেছি তার দেহ।
আরও কিছু যাতে না ঘটে সেই ভয়ে
কিছুটা ছাই ভাসিয়ে দিয়েছি সমুদ্রে
কিছুটা উড়িয়ে দিয়েছি ঝড়ো বাতাসে
আর কিছুটা চাপা দিয়েছি অন্ধকারে।

শিশুটি এখন আমাদের ভেতরে আবাস
গেড়েছে, বাস করতে করতে জমাট বেধে
উঠেছে তার অসিত্মত্ব, আমাদের ভেতরের
রক্তই একটু একটু করে গাড়-ঘন করে
তুলেছে সর্বাঙ্গ।

আমাদের শরীর চিরে কোনও এক
অমাবশ্যার রাতে এক আকাশ আলো নিয়ে
জন্ম হল তার।
এভাবেই জন্ম হল আরও একটি সত্যের
আমরা যার মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলাম
সর্বান্তকরণে।
২০.৫.১১

ভরদুপুরের কাব্য

একদিন বারান্দায় প্রচুর রৌদ্রুর এসে জড় হয়েছিল
ভিড় করেছিল একদল দস্যু বাতাস
ওদের অত্যাচারে গোলাপ গাছটির প্রাণটাই যায় যায়!
বাধ্য হয়েই বারান্দায় তোমার ভেজা কাপড় মেলতে দিইনি আর-
ব্লাউজ, ব্রা, পেটিকোট আর শাড়ীর অাঁচল এখন অন্ধকারে শুকায়!

আজকাল বের হলেই রৌদ্রুর আমাকে শাসিয়ে যায়
হাত-পা বেধে রাস্তায় ফেলে দেই বাতাসের দল।
ওদের দাবি আমি বুঝি- তোমার শরীরে ভাগ বসাতে চায়।
কিন্তু যে গাছটি দেহের সমস্ত রক্ত জমাট করে
তোমার জন্য ফোটাল ঐ টুকটুকে গোলাপটি
তার হিস্যাকে অস্বীকার করি কেমন করে?
১.০৪.১১

সময়ের নস্টালজিয়া

একবার এক সন্ধ্যায়–
চোর সিপাহী খেলতে খেলতে–
আমাদের নোনা বাড়ির ছাদ থেকে
পা ফসকে পড়ে যায়।
সে কবেকার কথা…!
সেই থেকে বাড়ির কথা মনে হলেই
আমার ভয়ে গায়ে কাটা দেয় ।।
সে অনেক দিন আগের কথা
সেই নোনা বাড়ির ছাদ ইতিহাস হয়েছে কবে!

এখন মাঝে মাঝে যখন
আমি চোখ বন্ধ করে অনুভব করি
আমার ভালোলাগাকে–
আমার নোনা বাড়ির ছাদ আমাকে
ডাক দেয়
আমি ভয়ে আৎকে উঠি
দানাবাধে বেঁচে থাকার দ্বিগুণ ইচ্ছে
সেই স্যাঁতসেঁতে নোনা বাড়ির ছাদ
এখন আমার বেঁচে থাকার খোরাক যোগায় ।
১.৪.২০০২

ছায়া-কাব্য অথবা ছায়া-পাগলের কাহিনী

ক.
স্টেশনে বসে আছি ঠায়। ট্রেন এসে আবার চলে যায়। বুক পকেটের টিকিট শরীরের ভাপে ভিজে জবুথবু। কেউ আসবার কথা নই। আমি ফিরে যাব কারও কাছে এই শহরে এমন কেউ নেই। কাউকে পাঠাবনা ভেবে যে চিঠিখানা লিখেছিলাম, দলা পাকিয়ে ছুড়ে ফেলেছি পরিত্যক্ত এক পুকুরে। আর বালিকা বেশ্যার মধ্যগগণে চুমু খেয়ে উঠে এসেছি মধ্যদুপুরে, চুপিসারে। এর বেশি কিছুই রেখে যাচ্ছি না এই শহরে।
আরও একবার ভালো করে দেখে নিতে চেষ্টা করি শরীরের প্রতিটা ভাজ, হাত গলিয়ে পড়ে শূন্যে। এদিক ওদিক ভালো করে দেখি – আমি কারও ছায়া, একাকী অপেক্ষমাণ। আমার অস্পষ্ট অস্তিত্ব চোখে পড়ছে না কারও। আমি স্টেশনের প্রতিটা দেহের সাথে মিলিয়ে দেখলাম নিজেকে। বুঝলাম আমাকে রেখেই ফিরে গেছে সে, অন্য কোনও ছায়ার সন্ধানে।

বিমূর্ত আমি মূর্ত হওয়ার সন্ধানে খুঁজে ফিরি শরীর। ছয়ফিট ছিপছিপে গড়ন – একটু এদিক-ওদিক হলেও ক্ষতি নেই, কে কার ছায়া মেপে দেখে! শরীর বড় দরকার, মেয়েটি শরীর ছাড়া ভালোবাসা বোঝে না একদমই।


ট্রেন থেকে নেমেই হাঁটা দিই রাজপথের আইল ধরে। সূর্য তখন সম্মুখদিকে। ফাকা রাস্তায় পিছন ফিরে দেখি, ছায়াটি নেই সাথে। কি সর্বনাশ! দ্রুত ছুটে যাই স্টেশনে। তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম তাকে শত শত মানুষের ভিড়ে। কোনও ছায়াই মিলল না আমার সাথে – না আকার, না প্রকারে!

ফিরতি ট্রেনে ফিরে গেলাম ফেলে আসা শহরে। রাস্তায় অলিতে-গলিতে ছায়ার সন্ধানে। চলতি পথে প্রতিটি ছায়ার সাথে মিলিয়ে দেখি নিজেকে। এখন বুঝতে পারছি, ওকে চিনে ও দেখে রাখবার বড় দরকার ছিল।

শেষ পর্যন্ত না পেয়ে জনসমুদ্রের মাঝখান থেকে অন্য একটি ছায়াকে নিয়ে সটকে এসেছি নীরবে। এখন আমি ওকে চোখে চোখে রাখি। সূর্যের নীচে দাঁড়িয়ে পরখ করি ঘনঘন। মাঝে মধ্যে কথাও বলি ওর সাথে। অন্যের ছায়াকে নিজের করার চেষ্টায় এখন কেটে যাচ্ছে আমার দিন রাত্রি।

গ.
লোকটি (যার ছায়া আমি ছিনতাই করেছিলাম) এতদিনে নিশ্চয় ছিনতাই করেছে অন্য একটি ছায়া। তারপর সেই লোকটি আর এক জনের। অতঃপর ঐ লোকটি অন্য কারও কিংবা আপনার…! এই ভাবে শুরু হয়েছে ছায়া ছিনতায়ের কাহিনী। আজকাল আমি আলোর নিচে ছায়া সমেত শরীর দেখলেই জিজ্ঞেস করি – আপনার ছায়াটি আসলেই আপনার তো ? তাই আমাকে পাগল বলে কেউ কেউ, এমনি করে সমাজের চোখে আমি ‘ছায়া-পাগল’ হয়ে উঠি।

বি দ্র : সবকটি কবিতা বা অকবিতা পড়ে সময় নষ্ট করার আগেই কেটে পড়ুন। হাহা!