(১)
সেটা ২০০৮ সালের জানুয়ারী। ওবামা বনাম হিলারি যুদ্ধ তুঙ্গে। আমি হিলারি ক্যাম্পের হয়ে কাজ করতে নামি। ওবামার চেঞ্জ ব্যাপারটা তখনই কেমন গোলমেলে মিডিয়া ম্যাজিক মনে হত। ইনসিওয়ারান্স এজেন্টদের হাতের পুতুল জো বিডেনকে ভাইস প্রেসিডেন্টিয়াল রেসের জন্যে ডাকতেই বুঝলাম- ওবামা ম্যাজিক দেখে লজ্জা পেতেন জাদু সম্রাট পি সি সরকার। কি সুন্দর সবাইকে বোঝালেন আসলেই আমি তোমাদের একজন। তারপর ইরাক, আফগানিস্তান থেকে একটাও সেনা সরল না ( দেশের সরকারগুলোই নাকি চায় না)।
ওয়াল স্ট্রীটের ডাকাতদের বিরুদ্ধে দু একবার হুঙ্কার ছারলেন। ব্যাস। সেটাই চেঞ্জ! এদিকে আমেরিকাতে রিপাবলিকান অধ্যুসিত রাজ্যগুলিতে শিক্ষকদের ছাঁটাই অব্যাহত। তাদের ট্রেড ইউনিয়ান করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। ওবামা এখনো চেঞ্জ চেঞ্জ করছেন না হয়ত লজ্জায়। চেঞ্জ ফেঞ্জের রেঞ্জ ফেলে এখন তিনি পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ড্রোন দিয়ে আরো দু একটা আল কায়দা ঘায়েল করে, পরের বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফন্দি আটছেন। বুশপোলা এত সফিস্টিকেটেড ছিল না-সে ইরাক আক্রমন করেই জনপ্রিয় হওয়া পছন্দ করেছে। চেঞ্জের রেঞ্জ ফেলে শত্রুর পেছনে কাঠি নেরে,জাতিয়তাবাদি জালে যা ওঠে আর কি। চেঞ্জ ফেঞ্জ অনেক কঠিন ব্যাপার! কে যাবে ব্যাবসায়ীদের লবির বিরুদ্ধে? যদিও সেই প্রতিশ্রুতি ছিল ষোলআনা। তার থেকে দু একটা দাড়িওয়ালা মারলেই মিলে যাবে দ্বিতীয়বারের চাবি।
২০০৯ এর বিশে জানুয়ারী ছিল ওবামার অভিষেক। এমন ভীর ছিল-শপথ গ্রহনের তিন ঘন্টা আগে পৌঁছেও ঢুকতে পারলাম না ক্যাপিটল হিলে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক চেনা কংগ্রেসম্যানের কাছ থেকে অনেক কাঠখর পুরিয়ে এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চেয়েছিলাম। ওবামাকে একপলক দেখার জন্যে কত আকুতি চারিদিকে।
যাইহোক মেট্রোতে ঢোকার জন্যে সেদিন লম্বা লাইন। আমার পাশে ছিল আলাবামার এক শিক্ষক। ওবামা না জিতলে নাকি সে আমেরিকা ছেরে চলেই যেত! এতই তার বিশ্বাস ওবামা এবং “চেঞ্জের” ওপরে। সবাই দারুন খুশী।
আসল সত্য এই বুশের জমানাতে আমেরিকার তখন এত বেহাল অবস্থা-চারিদিকে চাকরী নেই-অর্থনীতি কোমাতে-আমেরিকা ওবামাকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল। বিশ্বাস না করে কোন উপায় ছিল না। ডুবন্ত মানুষের কাছে ভেসে থাকা কাঠই পরিবর্তন। সেই খরকুটো জরিয়ে ধরেই সে ভেসে থাকতে চায়। সেটাকেই সে নৌকা বলে বিশ্বাস করতে চাইবে।
(২)
বিশে জানুয়ারী ২০০৯ থেকে বিশে মে ২০১১-ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল এবার কোলকাতায়। সেদিন কোলকাতায় ছিলাম না-কিন্ত সমস্ত টিভি চ্যানেলে খুশী খুশী যেসব মুখ ভেসে উঠল-মনে করিয়ে দিচ্ছিল ২০ শে জানুয়ারীর সেই শিক্ষকের কথা। সেই জনপ্লাবন, জনউচ্ছ্বাস-মুক্তির স্বাদ, নতুন ভোরের স্বপ্ন চারিদিকে। আমি অবশ্য ঘর পোড়া গরু-তাই তাদের উচ্ছ্বাসে গা ভাসাতে গেলেই, অজান্তেই চেপে বসেছিল পা হরকানোর ভীতি। বুশের অপশাসন থেকে সেদিন যেমন লোকে মুক্তি চেয়েছে-এদিন মুক্তি চেয়েছে সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসন থেকে। তাই উচ্ছ্বাসের মাত্রা ছিল বাঁধন ছাড়া। ওবামাও যেমন একটিও ঘন্টা নষ্ট না করে প্রথম দিন থেকেই কাজে নেমে গিয়েছিলেন-মমতাও শপথ গ্রহনের পর সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন।মিডিয়া সেদিন ওবামাকে সুপ্যারম্যান সাজিয়েছিল-এখানেও মমতাকে সুপারউম্যান প্রমানের জন্যে প্রতিযোগিতাতে নেমেছে সব মিডিয়া। ওই যে বললাম ডুবন্ত মানুষ। সে বিশ্বাস করতে চাইছে ভেসে থাকা কাঠই নৌকা-মিডিয়াও সেটাই খাওয়াচ্ছে। এখানে তাও রিপাবলিকান মিডিয়া বিরোধিতা করেছে-বঙ্গে এখন সেটাও দুর্লভ। মমতা বিরোধি কেবল চ্যানেল গুলো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে! তারাও নেমেছে মমতা বন্দনাতে! নইলে বিজ্ঞাপন আসবে কোথা থেকে? যতই দেখছি-ততই অবাক। একই আবেগ, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। এখানেও সবাইকে বিশ্বাস করানো হচ্ছে মমতা তোমাদের লোক! ঠিক ওবামা ক্যাম্পেনের মতন! একই ভাবে সবাই বিশ্বাস করছে একটা শব্দে “চেঞ্জ”।
(৩)
চেঞ্জ?
তৃণমূল আসলেই একটা গণপ্রতিরোধের নাম। সিপিএমের লাল ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ। ২০০৭ সালের পর থেকে এটাই তৃণমুমের মুখ। তার আগে তারা ছিল কংগ্রেসের একটা পতিত অংশ। যা কখনো বিজেপি, কখনো কংগ্রেসের লেজুর হয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করত। কিন্ত সিঙ্গুরে সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা অগ্রণী হতেই-সাধারন মানুষ সিপিএমের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে শুরু করে। যেটা আগে দেখা যায় নি কখনো। সিপিএমের গুন্ডারাই নিয়ন্ত্রন করেছে রাজনীতি। কিন্ত বোষ্টনের বিদ্রোহ যেমন আমেরিকার কলোনীগুলোতে দ্রুত সাহস জুগিয়েছিল শতগুন শক্তিশালী বৃটিশ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে-এখানেও নন্দীগ্রামের প্রতিরোধ মানুষকে শিখিয়েছে-সিপিএমের গুন্ডা মেশিনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
সেই অর্থে ওবামাও ছিল কর্পরেট আমেরিকার বিরুদ্ধে সাধারন মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা। ওয়াল স্ট্রীটের চালে ঘর হারিয়েছে কোটি কোটি আমেরিকান। কর্পরেট আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভকে পুঁজি করেছেন ওবামা। অনেক রিপাবলিকানরাও তাকেই ভোট দিয়েছে। এখানেও অনেক অনেক বামপন্থীরাও আছেন মমতার পাশে। কারন “চেঞ্জ”। “চেঞ্জ” এ বিশ্বাস করলে অনেক কিছুই সম্ভব।
এই পরিবর্তন ছারা গণতন্ত্র অসম্ভব। এই পরিবর্তন ছারা যেকোন সিস্টেমই ফ্যাসিস্ট সিস্টেমেরর দিকে এগোবে। এই পরিবর্তন ছারা সামাজিক বিবর্তন আটকে যাবে। যা হয়েছে পশ্চিম বঙ্গে। ১৯৭৭ সালে ভারতের প্রথম সারির একটি রাজ্য, বর্তমানে শিক্ষা থেকে শিল্প-সব কিছুতেই পেছনের বেঞ্চে। অর্জন বলতে সাধারন জনতার হাতে ক্ষমতার স্বাদ-ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন সিপিএমের শাসনে হয়েছে। কিন্ত কোন রাজনৈতিক সিস্টেম উন্নততর উৎপাদন শক্তি না দিতে পারলে, তার মৃত্যু অবধারিত। তাই ভারতের বামশক্তিও মৃত্যু শয্যায়। উন্নততর বাম চিন্তা না এলে, ভারতের বামশক্তি কংগ্রেসের মাধ্যমেই টিকে থাকবে-বামনামধারি পার্টিগুলি সাইনবোর্ড হয়ে যাবে।
কিন্ত আসলেই চেঞ্জ আসবে কি? ৬ ই মে তপন দত্ত নামে তৃনমুলের এক যুবকর্মী খুন হয় হুগলীর বালিতে। সেই ছেলেটি জলাভূমি বাঁচাতে স্থানীয় লোকেদের নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল। তার খুনের পেছনে হাত প্রোমোটারদের-এবং দেখা যাচ্ছে ছেলেটি সিপিএম তৃণমুল সব নেতৃত্বের চক্ষুশুল হয়ে উঠেছিল। শশাঙ্কের মৃত্যু সিম্বলিক-নিতান্তই সাধারন ব্যাপার যে সে নেতাদের টাকাপয়সা কামানোর অন্তরায় হয়ে উঠেছিল। গত দুবছরে দলে দলে সিপিএমের গুন্ডারা তৃনমুলে যোগ দিয়েছে। আরো দেবে। এটাই বাস্তব। মমতা বা বুদ্ধ মুখোশের নাম-আসল মুখ, নেপথ্যের কুশীলবরা বদলান নি কিন্ত।
উৎপাদক এবং উৎপাদনের ব্যাবস্থার মালিকানার মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন না এলে কোন পরিবর্তন বা চেঞ্জ আসা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতেই অসম্ভব। তবুও মমতা যেটা পারবেন-সেটা হচ্ছে ভারতের উন্নত রাজ্যগুলি যেমন গুজরাট বা মহারাষ্ট্রের মতন রাজ্যের অর্থনীতিকে কিছুটা শক্তিশালী করতে পারেন। এর মধ্যে গুজরাত থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ওখানে কোয়াপরেটিভ আন্দোলন সফল। একমাত্র গুজরাতেই আমি দেখেছি সাধারন লোকজন দলে দলে উদ্যোগী হয়ে কিছু না কিছু ব্যাবসা করার চেষ্টা করে। ফলে গুজরাতের মাথাপিছু আয় পশ্চিম বঙ্গের প্রায় চারগুণ। এবং এর জন্যে টাটা আম্বানীদের লাগে নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাবসা করার চেষ্টা এবং রাজ্য স্তরে তার জন্যে সব ধরনের সাহায্যই, তাদেরকে আজ ভারতের সেরা অর্থনৈতিক রাজ্যে পরিণত করেছে। মমতা একা খেটে সব চেঞ্চ করে দেবেন এমন ভাবনাটাই ভুল।
বাঙালীর জীবনে পরিবর্তন আনতে গেলে, প্রতিটা বাঙালীকে ব্যাবসামুখী হতে হবে। মমতা ব্যবসার বাতাবরন তৈরী করতে পারেন মাত্র। নইলে বাংলা যে তিমিরে আছে সেখানেই থাকবে। পশ্চিম বঙ্গের অর্থনীতি প্রায় ৬০% মারোয়ারীদের কন্ত্রোলে। আমাকে একজন বিখ্যাত বাঙালী ডিরেক্টর বলছিলেন, কি করে ভালো বাংলা সিনেম হবে? সব টাকাত মারোয়ারীদের হাতে-আমি তাদের কিভাবে বোঝাবো বিভূতিভূষন? বাংলায় আপনি সিনেমাই করুন, বা নিউজ পেপারই খুলুন বা নিউজ চ্যানেলই খুলুন। সব কিছুতেই হাত পাততে হয় মারোয়ারীদের কাছে। সংস্কৃতিতে উন্নত নাসিকা বাঙালীর এটাই আসল পরিচয়। এর থেকে পরিবর্তন? শোষনের হাত থেকে পরিবর্তন?
আসবে না। অত চেঞ্জ কেও চাইছে বলেও মনে হচ্ছে না। মাছ ভাত খেয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারলেই বাঙালী খুশী। চেঞ্জটাও খুশী হওয়ার জন্যেই। আসল চেঞ্জ নাই বা এল-চেঞ্জ নিয়ে দু একটি গান গাইতে পারলেই বাঙালী খুশী।
পরিবর্তন তো হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিচ্ছে। প্রথমেই হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার গুলোর ওপর চোটপাট,যেন চিকিৎসার অব্যবস্থার জন্য ওঁরাই একমাত্র দায়ি।সব সমস্যা গুলোকে এমন লঘু ভাবে ওপর ওপর সমাধানই যেন এতোদিন আটকে ছিলো।আর বিপদ হয়েছে যাঁরা এ বিষয়ে মতামত দিতে পারেন তাঁরা ভয়ে কাঁটা।এতোদিন সিপিএম পেটাচ্ছিলো, এবার পেটাচ্ছে তৃণমূল,বাঃ !
সাবাস !!পরিবর্তন!!!বিপ্লবের এই লেখাটার জন্য আলাদা করে ধন্যবাদ।
বাঙালীর জীবনে পরিবর্তন আনতে গেলে, প্রতিটা বাঙালীকে ব্যাবসামুখী হতে হবে। মমতা ব্যবসার বাতাবরন তৈরী করতে পারেন মাত্র। নইলে বাংলা যে তিমিরে আছে সেখানেই থাকবে।
এই স্বচ্ছ দৃষ্টির জন্য আপনার লেখার প্রশংসা না করে পারছিনা ৷ আসল পরিবর্তনটা আসে জনতার কাতার থেকেই ৷
আসরাফ,
আপনার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জবাব দেয়া উচিত নয় । তবে প্রথম বলে উত্তর দিচ্ছি । কলিম শরাফী বা সনজিতা খাতুনের রবিন্দ্রসংগীত আমার ভাল লাগে । এই ভাল লাগার কারনে অন্যদেরকে যদি বলি এদের গান শুনে দেখুন, তবে কি তা উপদেশ বা হুকুম দেয়ার পর্যায় পড়ে ? এত হীনমনতায় ভোগেন কেন ? ব্যক্তি নয়, বিষয়ের উপর নজর দিন । এই বক্তব্য কোন পর্যায় পড়ে, উপদেশ, না হুকুমের পর্যায় ।
ডঃ পাল
আক্কেলমানকে লিয়ে ইশারা কাফি, কিন্তু আপনি ইশারাটা বুঝলেন না । দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সূত্র ধরেই ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং ইতিহাসের গতিপথের ধারা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ মার্ক্স ও এঙ্গেলস কর্তৃক প্রবর্তিত । এর মধ্যে লেনিনের খোঁজ কোথায় পেলেন, তা বোধগম্য নয় । বুঝা যাচ্ছে আপনি বেশ বিভ্রান্তিতে ভুগছেন ।
নৃপেন্দ্র সরকার
ইতিহাস সমাজ পরিবর্তনের সাক্ষী, যেমন শিকারি-খাদ্য সংগ্রহকারী সমাজ, মাতৃতান্ত্রিক সমাজে, উক্ত সমাজ আবার কৃষি সমাজে, কৃষি সমাজ আবার দাস সমাজে, দাস সমাজ আবার সামন্তবাদি সমাজে, সামন্তবাদি সমাজ আবার পুজিবাদি সমাজে রূপান্তরিত হয়েছে ।
আপনার চিন্তার প্রেক্ষাপট পুজিবাদ, আর আমার চিন্তার প্রেক্ষাপট ইতিহাস । দুইজনার মধ্যে পার্থক্য এই ।
মহিউদ্দীন
মমতার উত্থান এবং লড়াই নিয়ে সিনেমা তৈরী হচ্ছে বাংলাদেশে!
এই খবরটাই বাকী ছিল!
ডঃ পাল
ওবামা বা মমতা হলো রাজনৈতিক ব্যক্তি, পুজিবাদে বিশ্বাসী স্বস্ব দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের সংশ্লিষ্ট দল সংশ্লিষ্ট দেশের পুজিবাদের মূখপাত্র । সংশ্লিষ্ট দেশের পুজি তাদেরকে যে ভাবে নাচতে বলে তারা যেই ভাবেই নাচেন । অতএব তাদের পক্ষ থেকে পরিবর্তন আশা করাটা হলো বোকামি । ভোটে জিতলেই পরিবর্তন হয়ে যাবে এমন আশা করাটাও বোকামি ।
পরিবর্তনের চালিকা শক্তি হলো জনতা । জনতা চেলেই পরিবর্তন হবে, তার জন্য ভোটের দরকার হবে না । পুজিবাদের লেজুরবৃত্তি ছেড়ে যে দল জনতার কাতারে দাড়াতে পাড়বে, যেই দলের নেতৃত্বেই পরিবর্তন হবে । তবে একটু ধর্য্য ধরতে হবে । ইতিহাস সরল রেখায় চলে না । তার পথ আঁকাবাকা । তাই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বুঝার চেষ্টা করুন ।
মহিউদ্দীন
@আ হা মহিউদ্দীন,
হতেই পারেন আপনি জ্ঞানী এবং ভাল রাজনীতি বোঝা ব্যক্তি।
তো
এই ধরনের উপদেশ/হুকুম দেয়ার এখতিয়ার আপনি কিভাবে পেলেন??? (N)
@আ হা মহিউদ্দীন,
সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলো-যেমন নাল হাইপোথিসিস টেস্টিং কি দ্বান্দিক বস্তুবাদের বাইরে? যদি তা না হয়-বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন করা মানেই দ্বান্দিক বস্তুবাদের আসল এবং আদিরূপ ধরে বিশ্লেষন করা। খামোকা লেনিনের ভুল ভাল বিশ্লেষন কেন?
উনিত দ্বান্দিক বস্তুবাদ আর ঐতিহাসিক বস্তুবাদের মধ্যে সঠিক পার্থক্য ও করতে পারেন নি।
@আ হা মহিউদ্দীন,
পরিবর্তন হবে কিনা জানিনা, তবে সেই দলই যে ভোটে জিতবে তা ঠিক। সেই জন্য রাজনীতির মাঠে নেমে সবাই বলে আমি নিজে হতদরিদ্র তাই তাই হত দরিদ্র জনতার দলে।
বাংলাদেশে কাদের সিদ্দিকী গলায় গামছা ঝুলিয়ে কৃষক দল বানায়। বিল এবং হিলারীর আয় প্রায় দশ মিলিয়ন ডলার। বুশের আয় সে বছর প্রায় সাতশত হাজার ডলার। নির্বাচনের মাঠে বুশকে কটাক্ষ করে হিলারী বলেন, “আপনারা ধনবান প্রেসিডেন্ট ত দেখলেন, (এবারে হতদরিদ্র আমাকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আমাকে ভোট দিন।” (হাত তালি।)
এদেশে নাকি অবৈধ জনতার সংখ্যা প্রায় তিরিশ মিলিয়ন। এদেরকে বৈধ করলে এক বুলেটে তিরিশ মিলিয়ন ব্যালট। কাজেই এই বিপুল জনতাকে হাত ছাড়া করা যাবে না। বর্ডার পেরিয়ে আসুক না জনতা। ওরাও ত মানুষ। আম্রিকাতে এসে ভাল থাকার হক ওদেরও আছে।
হ্যা, এটাই বাস্তব……বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই কথাই খাটে। তবে আসল কথা হলো সবকিছুতেই এক্সপেক্টেশনটা একটু মাঝামাঝি রাখা ভাল তাহলে চেঞ্জটা একটু হলেও সহজে ধরা পরে।
ডঃ পাল
মমতার প্রতি আপনার আস্থা যে এত তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হবে তা কিন্তু আমি আশা করি নাই । মিডিয়া পুজির মূখপাত্র । মধ্যবিত্ত শ্রেনী হলো দোদুল্যমান । যখন যে দিকে সুবিধা পায়, যে দিকেই ঝুকে যায় অথবা হতাসাগ্রস্থ হয়ে পড়ে ।
গুজরাট আর পশ্চিম বাংলা এক নয় । পশ্চিম বাংলা বঙ্গের খন্ডিত অংশ । আজ হোক বা কাল হোক দুই বাংলা এক হবে । এটা আর কেউ না বুঝলেও ভারতীয় পুজিবাদ বুঝে । তাই সে পশ্চিম বাংলায় বিনিয়োগ করতে ভারত ভয় পায় ।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চাল, যাকে সেভেন সিসটার বলে, অনাগ্রসর ও দুর্গাম অঞ্চল । ভারতিয় পুজির পক্ষে যাতায়েত কষ্টকর । উক্ত অঞ্চলের মানুষেরা স্বাধীকার আন্দোলনের জন্য সোচ্চার । ঐতিহাসিক কারনে তারা বাংগালিদের সাথে যোগসূত্রে বাধা । তাই বাংলাদেশের সাথে ভারত ট্রাজিট চুক্তি করেছে এবং সেভেন সিসটারে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে ।
মার্কিন পুজি ভারতীয় পুজির মূখাপেক্ষি । ফলে বিশ্ব নেতৃত্ব মার্কিনীদের হাত থেকে ভারতের হাতে হস্থান্তরিত হতে যাচ্ছে । ভারতের শত্রু চীন । তাই চীন ও ভারতের মধ্যে বাফার ষ্টেট সৃষ্টি করতে ভারত কুন্ঠিত হবে না ।
রবিন্দ্রসংগীত গেয়েই বাংলাদেশ স্বাধীকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জন করেছে । তেমনি রবিন্দ্রসংগীত গেয়েই পশ্চিম বাংলা তার লক্ষ্যে পৌছে যাবে ।
রাজনীতি না বুঝলেও, রাজনীতির প্রতি আপনার উৎসাহের প্রশংসা করতে হয় ।
মহিউদ্দীন
@আ হা মহিউদ্দীন,
মমতার প্রতি আমার আস্থা?
ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে কোন লেখা সাধারনত আমি মুক্তমনাতে দিই না। অথচ প্রায় গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে লিখে গেছি।
এই মমতা ঝড়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই লিখতে হয়। লেখাগুলো আপনি বাংলার রাজনীতি ফোরামের নোটে পাবেনঃ
http://www.facebook.com/bengalpolitics
http://www.facebook.com/bengalpolitics?sk=notes
আপনার বাকি মন্তব্যকে সিরিয়াসলি নিলে লোকে আমাকে সন্দেহ করবে। শুধু উত্তর পূর্ব ভারতের জন্যে আপনার জানা উচিত যে আসামের ভোটে লোকেরা বিচ্ছিন্নতাবাদিদের গোহারা হারিয়েছে।
আপনার আরো জানা উচিত এই নির্বাচনে তৃBমূল এবং জয়ললিতার জয়ে এটা স্পষ্ট দিল্লীতে কেন্দ্রীয় দলগুলির ক্ষমতা গ্রাস পাচ্ছে। বিগত পাচ রাজ্যের নির্বাচনে ৭৪০ টা সিটের মাত্র ৫ টা পেয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস জাস্ট ধরে রেখেছে। সেখানে আঞ্ছলিক শক্তি গুলি আরো শক্তিশালী হচ্ছে জাতীয় রাজনীতিতে। এটাই ভারতের ঐক্য অটুট রাখবে। দিল্লী থেকে ভারত শাসন করা যাচ্ছে না। আঞ্ছলিক শক্তির ঘারে ভর করেই চলতে হবে।
এই জন্যেই গণতন্ত্র মহান। গণতন্ত্রর জন্যেই ভারত অটুট থাকবে।
প্রবন্ধটি পড়ে বেশ ভাল লাগল। বেশ চিন্তাশীল আলোচনা। কিন্তু “ড়” কে অকারণ “র” লেখার অধুনা প্রচলিত প্রবণতা একটু পীড়াদায়ক।
@সুপ্রতীক পাল,
একশত ভাগ(Y)। একটু নয়। ভাল রকম। কার কথা কে শুনে? পাঠকের কি কিছু করার আছে পীড়া ভোগ ছাড়া?
কেমন লাগে যদি আমি লিখি –> য়েকষত ভাঘ। য়েকটো ণয়। ভাল ড়কম। কাড় কথা কে ষুণে? পাঠকএড় কী কীচু কড়াড় য়াছে পিরা ভুঘ ছারা?
মুক্তমনার নীতিমালা মেনে চললে ধন্যবাদ দেওয়া হবে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
বাসার ব্যাপা্রতা অইল বিবরতনের চক্কর। ছারা ছারা কিসু কতা ক্য়া লাব নাই। ইংরেজি বানান ল’য়া ঠাট্টা করতেন? “ট” কে “চ” কইতে পারলে ‘র’ কে ‘ড়’ বলবো নে কেন! ‘ছ’ কে ‘স’ নয় ক্যানে/ যা কুসি তা লিখব আর এইডা ইলো বিবরতন।
” দিক ভেসে যায়
নোনাজলে
এক চোখে হেঁটে যায়
প্রেমান্ধ প্রভু মন।”
(“আলো আঁধারের খেয়া” থেকে নে’য়া)
(Y)
অর্জন বলতে সাধারন জনতার হাতে ক্ষমতার স্বাদ-ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন সিপিএমের শাসনে হয়েছে।
– হাঃ হাঃ আপনি অনেকদিন দেশ ছেড়ে আছেন বোঝা যাচ্ছে ।
@পিয়াল,
১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯০-৯৪ পর্যন্ত ক্ষমতার বিকেন্দ্রী করন ভালোই হয়েছে। ১৯৭৭ সালের আগে প্রতিটা গ্রামে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল স্থানীয় সম্পন্ন চাষীরা বা বড়লোকরা। এটা বদলায় দ্রুত বর্গা চালু হওয়ার সাথে সাথে।
কিন্ত ১৯৯০-৯৫ এর পর এটা আটকে গেল। কারন গ্রামে আর নতুন কোন উৎপাদন সেন্টার হল না। মাথাপিছু জমির পরিমান কমে গেল। এই ভাবে মালিকানা কমতে থাকায়, স্বাভাবিক ভাবেই তারা নির্ভরশীল হয় নানান সরকারী সাহায্যের। ফলে ওপরের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে। এবং স্থানীয় ক্ষমতাও কমতে থাকে।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনটা মালিকানার বিকেন্দ্রীকরন থেকেই দেখা ভাল।
সিপিএমে প্রতিটা জোনাল কমিটি বা স্থানীয় কমিটির যেটুকু স্বাধীনতা বা ক্ষমতা আছে, তা আজও তৃণমূলে নেই।